2 of 3

১৯।২ ঊনবিংশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক

দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : শাস্তিঃ
[ঋষি : বসিষ্ঠ দেবতা : মন্ত্রোক্ত দেববর্গ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

শং ন ইন্দ্রাগ্নী ভবতামবোভিঃ শং ন ইন্দ্রাবরুণা রাহব্যা। শমিন্দ্রাসোমা সুবিতায় শং যোঃ শং ন ইন্দ্রাপূষণা বাজতৌ ॥১॥ শং নো ভগঃ শমু নঃ শংসো অস্তু শং নঃ পুরন্ধিঃ শমু সন্তু রায়ঃ। শং নঃ সত্যস্য সুষমস্য শংসঃ শং নো অর্যমা পুরুজাতে অস্তু ॥ ২॥ শং নো ধাতা শমু ধর্তা নো অস্তু শং ন উরূচী ভবতু স্বধাভিঃ। শং রোদসী বৃহতী শং নো অদ্রিঃ শং নো দেবানাং সুহবানি সন্তু ॥ ৩শং নো অগ্নিৰ্জোতিরনীকো অস্তু শং নো মিত্রাবরুণাবশ্বিনা শম্। শং নঃ সুকৃতাঃ সুকৃতানি সন্তু শং ন ইষিরো অভি বাতু বাতঃ ॥৪॥ শং নো দ্যাবাপৃথিবী পূর্বহুতৌ শমন্তরিক্ষং দৃশয়ে নো অস্তু। শং ন ওষধীর্বনিনো ভবন্তু শং নো রজসম্পতিরস্তু জিষ্ণুঃ ॥৫ শং ন ইন্দ্রো বসুভির্দেবো অস্তু শমাদিত্যেভিরুণঃ সুশংসঃ। শং নো রুদ্রো রুদ্রেভির্জলাষঃ শং নষ্টা গ্লাভিরিহ শৃণোতু৷ ৬ ৷৷ শং নঃ সোমমা ভবতু ব্ৰহ্ম শং নঃ শং নো গ্রাবাণঃ সমু সন্তু যজ্ঞাঃ। শং নঃ স্বরূণাং মিতয়ো ভবন্তু শং নঃ প্রস্বঃ শম্বস্তু বেদিঃ ৭শং নঃ সূর্য উরুচক্ষা উদেতু শং নো ভবন্তু প্রদিশশ্চতঃ। শং নঃ পর্বতা ধ্রুবয়ো ভবন্তু শং নঃ সিন্ধবঃ শমু সন্ত্ৰাপঃ ॥ ৮৷৷ শং নো অদিতির্ভবতু ব্ৰতেভিঃ শং নো ভবন্তু মরুতঃ স্বর্কাঃ। শং নো বিষ্ণুঃ শমু পূষা নো অস্তু শং নো ভবিত্রং শম্বস্তু বায়ুঃ ॥৯॥ শং নো দেবঃ সবিতা ত্ৰায়মাণঃ শং নো ভবন্তুষসসা বিভাতীঃ। শং নঃ পর্জন্যো ভবতু প্রজাভ্যঃ শং নঃ ক্ষেত্রস্য পতিরস্তু শম্ভুঃ ॥ ১০৷৷

 বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র ও অগ্নিদেব! আপনারা রক্ষা-বুদ্ধির দ্বারা অববাভিঃ) আমার বা আমাদের সকল দুঃখের নিবারণের নিমিত্ত হোন (নঃ শম্ ভবতা)। যজমান-প্রদত্ত হবিঃ প্রাপ্ত হয়ে (রাতহবৌ) ইন্দ্র ও বরুণদেব আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শম্ নঃ)। ইন্দ্র ও সোমদেব আমাদের সুষ্ঠু প্রাপ্তব্য মঙ্গলের নিমিত্ত হয়ে রোগ, ভয় ইত্যাদির উপশম করুন (শম্ সুবিতায় শম যোঃ)। ইন্দ্র ও পূষাদেব যুদ্ধে বা অন্নলাভে (বাজতৌ ) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শম্ নঃ) ॥১॥

ভজনীয় (ভগ নামক) দেবতা আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (নঃ শম্)। সকলের দ্বারা স্কৃয়মান (নরাশংস নামক) দেবতা আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোন (শঃ এব নঃ অস্তু)। আমাদের পূর্ণা বুদ্ধি (পুরমধিঃ) মঙ্গলের নিমিত্ত হোক (শং নঃ অস্তু)। ধনসমূহ (রায়ঃ) সুখের নিমিত্ত হোক (সুখায়ৈব সন্তু)। আমাদের সুষ্ঠু যন্তব্য বা শোভন-সংযমযুক্ত সত্যবচন (সুমস্য সত্যস্য শংসঃ) সুখের নিমিত্ত হোক। [ পাতঞ্জল অনুসারে (পা, সূ. ২৩০) যম শব্দের স্বরূপ অহিংসা, সত্য, অস্তেয় অর্থাৎ চৌর্যাভাব, ব্রহ্মচর্য, অপরিগ্রহ অর্থাৎ অন্যদত্ত বস্তুর অগ্রহণ বিহিত আছে]। পুরুজাত অর্থাৎ বহুভাবে বা বহুরূপে প্রাদুর্ভূত অর্যমাদেব আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শং নোস্তু)। ২

সকলের বিধাতা (ধাতা) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (নঃ শং অস্তু)। পুণ্য ও পাপসমূহের ধারণকর্তা (ধর্তা-বিধারয়িতা) বরুণ আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শং এব নঃ অস্তু)। বিস্তীর্ণগমনা বা বিবর্তগমনা পৃথিবী (উরূচী) অন্নের সাথে (স্বধাভিঃ) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন। বৃহতী দ্যাবাপৃথিবী (রোদসী) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন। পর্বত (অদ্রিঃ) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক। দেবগণের উদ্দেশে স্তুতিসমূহ আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোক (নঃ দেবানাং সুহবানি শং সন্তু) ॥ ৩॥

 জ্যোতির্মুখ (জ্যোতি অনীকে অর্থাৎ মুখে যার–জ্যোতিরনীকঃ) অঙ্গনাদিগুণযুক্ত দেবতা (অগ্নি) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শম্ নঃ অস্তু)। মিত্র (সূর্য) ও বরুণ দেবতা আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন। অশ্বিদ্বয় দেবতা (অশ্বিনা) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন। পুণ্যকর্মের (সুকৃতাং) পুণ্যসমূহ (সুকৃতানি) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক, (অর্থাৎ আমরা যে পুণ্যকর্ম করি তার ফল আমাদের মঙ্গলকর হোক)। গমনশীল বায়ু (ইষিরঃ বাঃ) শান্তির নিমিত্ত আমাদের অভিলক্ষ্যে প্রবাহিত হোক (শং নঃ অভি বাতু) ॥ ৪

দ্যাবাপৃথিবী দেবগণের উদ্দেশে প্রথম স্তুতির নিমিত্ত অথবা পূর্বজাত দেবগণের উদ্দেশে যজ্ঞের নিমিত্ত (পূর্বহূতৌ) আমাদের  কল্যাণপ্রদ হোক। অন্তরিক্ষ অর্থাৎ মধ্যমলোক দর্শনের নিমিত্ত (দৃশয়ে) আমাদের হিতকরী হোক। (শং নো অস্তু)। ওষধী ও বনরূপ সমুদায় বৃক্ষরাজি (বনিনঃ) আমাদের শুভপ্রদ হোক। লোকপালক (রজসঃ পতিঃ) জয়শীল ইন্দ্র (জিষ্ণুঃ) আমাদের ক্ষেমকর হোন (শং নোস্তু) ৫

বসুদেবগণের সাথে ইন্দ্র আমাদের কল্যাণকরী হোন (ইন্দ্রো দেবঃ বসুভিঃ শং ন অস্তু)। শোভন-স্তুতিশালী (সুশংসঃ) বরুণদেব আদিত্যগণের সাথে আমাদের শুভদায়ক হোন (শং নোস্তু)। সুখকর (জলাষঃ) রুদ্র দেবতা রুদ্রগণের সাথে আমাদের মঙ্গলকারক, হোন (রুদ্রঃ রুদ্রেভিঃ শং নোস্তু)। ত্বষ্টাদেব (সর্বপ্রাণীর রূপস্রষ্টা দেবতা) দেবপত্নীগণের সাথে (গ্নাভিঃ) আমাদের মঙ্গল বিধান করুন এবং এই কর্মে (ইহ) আমাদের স্তুতিসমূহ শ্রবণ করুন (শৃণোতু)। ৬।

লতারূপ অভিমৃয়মাণ সোম আমাদের মঙ্গলদায়ক হোক। ব্রহ্ম অর্থাৎ স্তোত্রশস্ত্রাত্মক সোম আমাদের মঙ্গলদায়ক হোক। ব্রহ্ম অর্থাৎ স্তোত্রশস্ত্রাত্মক বেদজ্ঞান আমাদের কল্যাণকর হোক। গ্রাবাণঃ অর্থাৎ অভিষব-সাধনভূত প্রস্তরগুলি আমাদের শুভদায়ক হোক। সোমরসসাধ্য ক্রতুগুলি (যজ্ঞাঃ) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক। যূপসমূহ অর্থাৎ যজ্ঞীয় পশুবন্ধন স্তম্ভগুলি (স্বরূণাং-স্বরূমতাং) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক। প্রকর্ষের সাথে জায়মান (প্রস্বঃ) চরুপুরোশ-সম্পাদিকা ওষধিসমূহ আমাদের মঙ্গলকারক হোক (শং নঃ সন্তু)। বেদি (যজ্ঞ সাধনের নিমিত্ত পরিষ্কৃত উচ্চ ভূমি) মঙ্গলের নিমিত্ত হোক (শমেবাস্তু) ৭

বিস্তীর্ণতেজঃসম্পন্ন বা বহুরূপে দৃশ্যমান (উরুচক্ষাঃ) সূর্যদেব আমাদের শান্তির নিমিত্ত উদিত হোন (নঃ শং উদেতু)। চারিটি মহান্ দিক্ (চতস্রঃ প্রদিশঃ) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক (শং নো ভবন্তু)। স্থির পর্বতসমূহ (ধ্রুবয়ঃ পর্বঃ ) আমাদের নিমিত্ত মঙ্গলকর হোক। বেগবান্ নদীগুলি (সিন্ধবঃ) আমাদের শান্তিপ্রদ হোক। এইরকমে জলরাশিও আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোক (শং এব সন্তু আপঃ) ॥ ৮

অখণ্ডনীয়া দেবমাতা (অদিতিঃ) কর্মসমূহের সাথে (ব্রতেভিঃ) আমাদের সুখ-সম্পাদন করুন। উৎকর্ষময় স্তুতিসম্পন্ন (সু অর্কাঃ) মরুৎ-গণ আমাদের মঙ্গলসাধন করুন। বিষ্ণুদেব (ব্যাপক দেবতা) আমাদের হিতসাধন করুন; এই রকমে পালক দেবতা পূষাও আমাদের হিতের নিমিত্ত হোন। জল অথবা অন্তরিক্ষ (ভবিত্রং) আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক। বায়ু আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোক (শং–শান্ত্যর্থমেবাস্তু)। ৯।

 ভয় হতে রক্ষাকারী (ত্ৰায়মাণঃ) কলের প্রেরক দেবতা সবিতা আমাদের মঙ্গলবিধায়ক হোন। প্রকাশিকা (বিভাতী) উষাভিমানিনী দেবীগণ আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (উষসঃ শং নো ভবন্তু)। বৃষ্টিপ্রদায়ক পর্জন্য দেবতা আমাদের প্রজাবর্গের মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শং ভবতু)। সুখের ভাবয়িতা ক্ষেত্ৰপতি শম্ভু আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শম্ নঃ অস্তু শম্ভুঃ) ॥ ১০৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— দ্বিতীয়েনুবাকে একাদশ সূক্তানি। তত্র শং ন ইন্দাগ্নী ইতি প্রথম সূক্তত্রয়স্য অহরহঃ পুরোহিতেন কর্তব্যে রাজ্ঞ শয্যাগৃহপ্রবেশনকর্মণি শান্ত্যর্থজপে বিনিয়োগঃ… ইত্যাদি৷ (১৯কা, ২অ. ১সূ.) ৷৷

টীকা— একাদশ সংখ্যক সূক্ত-সমন্বিত দ্বিতীয় অনুবাকের উপযুক্ত প্রথম সূক্তটি এবং তার সাথে পরবর্তী শং নঃ সত্যস্য ও উষা অপ স্বসুস্তমঃ সূক্ত দুটি রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশ কর্মে পুরোহিত কর্তৃক সর্বদা শান্তির নিমিত্ত জপে বিনিযুক্ত হয়। এইসঙ্গে উল্লেখ্য যে, প্রথম অনুবাকের ১০ম সূক্তটিও (শান্তা দৌ ইত্যাদি) এইসঙ্গে জপনীয়। তুলাপুরুষমহাদানেও ঐটি এবং দ্বিতীয় অনুবাকের প্রথম তিনটি সূক্ত আজ্যহোমে বিনিযুক্ত হয়। শান্তিপ্রতিপাদকত্বের নিমিত্ত দ্বিতীয় অনুবাকের প্রথম তিনটি সূক্ত পঠনীয় (ন.ক.১৮)।… ইত্যাদি। (১৯কা, ২অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : শান্তিঃ

[ঋষি : বসিষ্ঠ দেবতা : মন্ত্রোক্ত দেবগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

শং নঃ সত্যস্য পতয়ো ভবন্তু শং নো অবন্তঃ শমু সন্তু গাবঃ। শং ন ঋভবঃ সুকৃতঃ সুহস্তাঃ শং নো ভবন্তু পিতরো হবে ॥১॥ শং নো দেবা বিশ্বদেবা ভবন্তু শং সরস্বতী সহ ধীভিরস্তু। শমভিষাচঃ শমু রাতিষাচঃ শং নো দিব্যাঃ পার্থিবাঃ শং নো অপ্যাঃ ২শং নো অজ একপা দেবো অস্তু শমহিবুঃ শং সমুদ্রঃ। শং নো অপাং নপাৎ পেরুস্তু শং নঃ পৃশ্নিৰ্ভৰতু দেবগোপা। ৩ আদিত্য রুদ্রা বসবো জুষামিদং ব্রহ্ম ক্রিয়মাণং নবীয়ঃ। শৃন্বন্তু নো দিব্যাঃ পার্থিবাসো গোজাতা উত যে যজ্ঞিয়াসঃ। ৪যে দেবানামৃত্বিজো যজ্ঞিয়াসো মনোৰ্যজত্রা অমৃতা ঋতজ্ঞাঃ। তে নো রাসন্তামুরুগায়মদ্য ঘূয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ ॥৫৷৷ তদস্তু মিত্রাবরুণা তদগ্নে শং যোরস্মভ্যমিদমস্তু শস্তম্। অশীমহি গাধমুত প্রতিষ্ঠাং নমো দিবে বৃহতে সাদনায় ॥ ৬।

বঙ্গানুবাদ –সত্যর পালক অর্থাৎ সত্যশীলগণ (সত্যস্য পতয়ঃ) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন, (অর্থাৎ সত্যশীল দেবতাগণ আমাদের মঙ্গল বিধান করুন। অশ্ব (অবঃ) আমাদের হিতসাধক হোক। এইরকমে ধেনুগণও আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক (শং এব সন্তু গাবঃ)। সুকৃতকর্মা (সুকৃতঃ) অর্থাৎ সুকর্মের দ্বারা দেবত্বপ্রাপ্ত এবং কুশলহস্ত (সুহস্তাঃ) অর্থাৎ শোভনহস্তে যজ্ঞীয় পাত্রধারী ঋভু নামক দেবগণ আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শম্ নঃ ঋভবঃ)। (বক্তব্য এই যে, সুকৃতিসম্পন্ন ঋভুগণ আমাদের অনিষ্ট দূর করুন)। পিতৃপুরুষগণ (পিতরঃ) স্তোত্রে বা যজ্ঞে (হবে) আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোন (শ নঃ ভবন্তু)। ১৷

 বিশ্বদেবগণ অথবা বহুস্তোত্রশালী ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণ (দেবাঃ বিশ্বদেবাঃ) আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোন। বর্ণপদবাক্যাত্মিকা বাগ্নেবী (সরস্বতী) স্তুতির সাথে বা কর্মের সাথে (ধীভিঃ) শান্তির নিমিত্ত হোন। যজ্ঞের অভিমুখে। বা নিকটে সম্মিলিত দেবগণ (অভিযাচঃ) মঙ্গলের নিমিত্ত হোন। এইরকমে দানের নিমিত্ত সমাগত দেবগণ (রাতিষাচঃ) মঙ্গলের নিমিত্ত হোন (শম্ এব)। দ্যুলোকস্থ দেবগণ (দিব্যাঃ), পৃথিবীস্থ দেবগণ (পার্থিবাঃ) ও অন্তরিক্ষস্থ দেবগণ (অপাঃ) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন। ২

অজায়মান এক পাদ স্থাবরজঙ্গমাত্মক যার অর্থাৎ অজৈকপাদ নামক দেবতা (একাদশ রুদ্রের অন্যতম) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন। অহন্তব্য মূল যার অর্থাৎ অহিবু নামক দেবতা (একাদশ রুদ্রের অন্যতম) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন। সমুদ্র আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোক। অপাং নপাৎ নামক দেবতা (অর্থাৎ জলের পৌত্র) আমাদের শান্তির নিমিত্ত দুঃখের পারয়িতা হোক। মরুৎ-বর্গের মাতা (মরুতাং মাতা), দেবগণের রক্ষাকারিণী (দেবগোপা-দেবা গোপয়িতাররা) দেবী পৃশ্নি আমাদের শুভের নিমিত্ত হোন ॥ ৩

অদিতির পুত্র দুঃস্থানস্থ দেবগণ (আদিত্যাঃ), অন্তরিক্ষস্থ রোদনকারক রুদ্র নামক দেবগণ (রুদ্রাঃ), ও পৃথিবীস্থ বসু নামক দেবগণ ইদানীং (ইদং) ক্রিয়মাণ নবতর (নবীয়ঃ) স্তোত্রের (ব্রহ্ম) সেবা করুন (জুষং) এবং অন্য দেবগণ আমাদের স্তোত্র শ্রবণ করুন (শৃথন্তু)। (কে তাঁরা?-না) অন্তরিক্ষস্থ (দিব্যা) দেবগণ, পৃথিবীস্থ (পার্থিবাসো) দেববর্গ, পৃশ্নিজাত মরুৎদেব-সমূহ (গোজাতা) ও যজ্ঞাহঁ (যজ্ঞিয়াসঃ) দেববৃন্দ; (তারা আমাদের স্তোত্র শ্রবণ করুন) ৷ ৪৷৷

দেবানাং ঋত্বিজঃ অর্থাৎ যথা ঋতুতে বা কালে দেবগণের যাগকারী, যাগযোগ্য (যজ্ঞিয়াসঃ), প্রজাপতির যজনাহ (মনোঃ যজত্রাঃ), অমরণধর্মা (অমৃতাঃ), সত্যভূত যজ্ঞে জ্ঞানবান্ (ঋতজ্ঞা) যে দেবতাগণ আছেন, সেই দেবতাগণ ইদানীং (অদ্য) আমাদের (নঃ) প্রভূতা কীর্তি প্রদান করুন (উরুগায়ম রাসন্তা)। হে দেবগণ! আপনারা আমাদের সদা (যুয় নঃ সদা) অবিনাশী ক্ষেমংকর উপায়ের দ্বারা রক্ষা করুন (স্বস্তিভিঃ পাত)। ৫।

হে মিত্রাবরুণ (মিত্র ও বরুণ, যথাক্রমে দিবা ও রাত্রির অভিমানী দেবতাদ্বয়)! আমাদের সেই বক্ষ্যমাণ ফল হোক (তৎ অস্তু)। হে অগ্নি (প্রাতঃ ও সায়ংকালের অভিমানী দেবতা)! সেই বক্ষ্যমাণ ফল হোক (তৎ অস্তু)। (বক্ষ্যমাণ অর্থে পরে যা বলা হচ্ছে)। (তা কি?-না)-যা রোগের উপশমকারী এবং যা ভয় হতে আমাদের পৃথককারী (শং যো); অধিকন্তু (উত), যা ধনলাভ ও ক্ষেত্রাদিরূপ প্রতিষ্ঠা বিস্তার করেছে (গাধং অশীমহি প্রতিস্থা); এমন উক্ত ফল (ইদং) আমাদের (অস্মভ্যং) প্রশস্ত বা সমীচিন (শস্তম্) হোক (অস্তু)। দ্যুলোকের উদ্দেশে (এবং) সকলের মহান নিবাসস্থানের উদ্দেশে (অর্থাৎ পৃথিবীর উদ্দেশে) নমস্কার (দিবে বৃহতে সদনায় নমঃ) ৷ ৬ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— শং নঃ সত্যস্য ইতি সূক্তস্য রাত্রীকল্পাদিষু শান্ত্যর্থজপে পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ ৷ (১৯কা, ২অ. ২সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ববর্তী সূক্তের সাথে রাত্রিকল্প ইত্যাদিতে শান্তির নিমিত্ত জপে বিনিয়োগ হয়। পরবর্তী সূক্তের বিনিয়োগও একই প্রকার ৷ (১৯কা, ২অ, ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : শান্তিঃ

[ঋষি : বসিষ্ঠ দেবতা : উষা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

উষা অপ স্বসুস্তমঃ সং বর্তয়তি বর্তনিং সুজাততা। অয়া বাজং দেবহিতং সনেম মদেম শতহিমাঃ সুবীরাঃ ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ— উষাকালাভিমানিনী দেবতা (উষা) তার আপন ভগ্নীরূপা (স্বসুঃ) রাত্রির অন্ধকার অপসারিত করছেন (তমঃ অপ), (উষার আগমন ও রাত্রির অপসরণ, দুটিই পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। এই জন্য উষা ও রাত্রিকে ভগ্নীদ্বয়রূপে কল্পনা করা হয়েছে); অতঃপর সুষ্ঠু প্রাদুর্ভাবের দ্বারা অর্থাৎ সম্যক্ প্রকাশ করণের দ্বারা (সুজাততা) লৌকিক ও বৈদিক মার্গের (বর্তনিং) সম্যক্‌ নিবর্তন করছেন (সং বর্তয়তি), (উষা কালে সকল প্রাণীজাত আপন আপন কর্ম সম্পাদনের ব্যাপারে মার্গ দর্শন করে থাকে, এটি লৌকিক মার্গ সন্দর্শন। আবার এই উষাকালেই বৈদিকগণও অগ্নিহোত্র ইত্যাদি কর্মমার্গ দর্শন করে থাকেন, এটি বৈদিক সন্দর্শন)। এই উষা কর্তৃক (অয়া) দেবতাগণের দত্ত বা নিহিত (দেবহিতং) অন্ন (বাজ) লাভ করবো (সনেম); অনন্তর সুকর্মকুশল পুত্রপৌত্র ইত্যাদি সমেত (সুবীরাঃ) শত হেমন্তকাল অর্থাৎ শত সম্বৎসরব্যাপী হর্ষান্বিত থাকবো (শতহিমাঃ মদেব) ॥১॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –উষা অপ স্বসুঃ ইতি একচস্য সূক্তস্য রাত্রিকল্পে শান্ত্যর্থজপে শান্তা দ্যৌ ইত্যাদি সূক্তত্রয়েন সহ উক্তো বিনিয়োগ। (১৯কা, ২অ. ৩সূ.)।

টীকা –এই সূক্তটির বিনিয়োগ সম্পর্কিত নির্দেশ এই অনুবাকের প্রথম সূক্তের সূক্তস্য বিনিয়োগঃ অংশের টীকায় বলা হয়েছে ৷ (১৯কা, ২অ, ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : একবীরঃ

[ঋষি : অপ্রতিরথ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 ইন্দ্রস্য বাহু স্থবিরৌ বৃষাণৌ চিত্রা বৃষভৌ পারয়িষ্ণু। তৌ যোক্ষে প্রথমে যোগ আগতে যাভ্যাং জিতমসুরাণাং স্বর্যৎ ॥১॥ আশুঃ শিশানো বৃষভো ন ভীমো ঘনাঘনঃ ক্ষোভণশ্চর্ষণীনা। সংক্রন্দনোহনিমিষ একবীরঃ শতং সেনা অজয়ৎ সাকমিঃ ॥ ২॥ সংক্রন্দনেনাহনিমিষেণ জিষ্ণুনাহয়োধ্যেন দুশ্চ্যবনেন পৃষ্ণুনা। তদিণে জয়ত তৎসহধ্বং যুথোনর ইমুহস্তেন বৃষ্ণা ॥ ৩. স ইমুহস্তৈঃ স নিষঙ্গিভির্বশী সংস্রষ্টা স যুধ ইন্দ্রো গণেন। সংসৃষ্টজিৎ সোমপা বাহুশধুগ্রধন্বা প্রতিহিতাভিরস্তা ॥ ৪৷৷ বলবিজ্ঞায়ঃ স্থবিরঃ প্রবীরঃ সহস্বান্ বাজী সহমান উগ্রঃ। অভিবীরো অভিষত্বা সহোজিজ্জৈত্রমিন্দ্র রথমা তিষ্ঠ গোবিদ ॥৫॥ ইমং বীরমনু হর্ষধ্বমুগ্রমিং সখায়ো অনু সং রভধ্বম্। গ্রামজিতং গোজিতং বজ্ৰবাহুং জয়ন্তমজ্ঞ প্রমৃণন্তমোজসা ৷ ৬ ৷ অভি গোত্রাণি সহসা গাহমানোহদায় উগ্রঃ শতমরিঃ। দুশ্চ্যবনঃ পৃতনাষাডয়োধ্যোহস্মাকং সেনা অবতু প্র যুৎসু৷ ৭, বৃহস্পতে পরি দীয়া রথেন রক্ষোহামিত্র অপবাধমানঃ। প্রভঞ্জংছত্রু প্রমৃণন্নমিত্রানস্মাকমেধ্যবিতা তনূনা ॥৮॥ ইন্দ্র এষাং নেতা বৃহস্পতিদক্ষিণা যজ্ঞঃ পুর এতু সোমঃ। দেবসেনানামভিভঞ্জতীনাং জয়ন্তীনাং মরুততা যন্তু মধ্যে ॥৯৷৷ ইন্দ্রস্য বৃষ্ণো বরুণস্য রাজ্ঞ আদিত্যানাং মরুতাং শর্ধ উগ্র। মহামনসাং ভুবনচ্যবানাং ঘোযো দেবানাং জয়তামুদস্থাৎ ১০। অস্মাকমিন্দ্রঃ সমূতেষু ধ্বজেস্মাকং যা ইষবস্তা জয়ন্তু। অস্মাকং বীরা উত্তরে ভবস্মন্ দেবাসোহবতা হবে ॥১১।

বঙ্গানুবাদ— [এই সূক্তে শত্রুদমনসমর্থ ইন্দ্রের স্তুতি করা হয়েছে]-পরমৈশ্বর্যসম্পন্ন ইন্দ্রের স্থূল বা পুষ্ট (স্থবিরো), অভিমতফলষণকারী বা শস্ত্র-অস্ত্র-বর্ষণকারী (বৃষাণো), সকলের শ্লাঘনীয় বা কটক-অঙ্গদ-ইত্যাদি আভরণযুক্ত (চিত্রা), পরিদৃশ্যমান (ইমা), বৃষভতুল্য প্রক্রান্ত শত্ৰুহননকর্মশালী (বৃষভৌ পারয়িষ্ণু) দুটি বাহু বর্তমান, আমি সেই দুটি বাহুকে (তৌ) সকল উপাসকের পূর্বভাবী হয়ে অর্থাৎ সকলের আগে (প্রথমঃ) পূজা করছি (যক্ষে)। (কি জন্য?–না) অপ্রাপ্য বস্তুর প্রাপ্তির (যোগে) এবং ক্ষেম অর্থাৎ প্রাপ্ত বস্তুর পরিরক্ষণের নিমিত্ত, (আগতে)। (সেই দুটি বাহু), যার দ্বারা (যাভ্যাং) অসুরগণের (অসুরাণাং) স্বর্গ বা সেখানকার নিবাসী দেববর্গের বাধকত্বের নিমিত্ত প্রাপ্ত শারীরিক ও সেনালক্ষণ বীর্য বা বল (স্বঃ যৎ) নিরস্ত হয়েছে (জিতং)। ১।

 শীঘ্নকারী বা ব্যাপক (আশুঃ), আপন অভিমত সম্পাদনে ব্যগ্র (শিশানঃ), বৃষভের ন্যায় ভয়ঙ্কর (বৃষভো ন ভীমঃ), সতত শত্রুঘাতক (ঘনাঘনঃ), মনুষ্যগণের ক্ষোভয়িতা (চর্ষণীনাং ক্ষোভণঃ) (অর্থাৎ বর্ষা ইত্যাদির দ্বারা কৃষকগণের বা যুদ্ধে পরসেনার বিক্ষোভ সৃষ্টিকারী), যুদ্ধে শত্রুগণকে আহ্বানকারী বা তাদের ক্রন্দন বা শব্দ সৃষ্টিকারী (সংক্রন্দনঃ), অনিমেষচক্ষু (অনিমিষঃ) (অর্থাৎ অত্যন্ত তীক্ষ্ণদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ায় যাঁর পলক পড়ে না), একবিক্রান্ত অর্থাৎ কারো সহায় ব্যতিরেকে একাকীই আপন প্রতাপে কর্মসমর্থ (একবীরঃ), শত শত শত্রুসেনাকে একসঙ্গে জয়কারী (শতং সেনা অজয়ৎ সাক) আপন ইষ্টসিদ্ধির নিমিত্ত এই হেন ইন্দ্রের আশ্রয় গ্রহণ করো (তস্মাৎ তমেবায়ত ইষ্টসিদ্ধ্যর্থং ইতি শেষঃ)। ২।

শত্রুদের আহ্বানকারী বা ক্রন্দয়িতা (সংক্রয়িা ) ও অনিমেষচক্ষু (অনিমিষচক্ষুষা), জয়শীল (জিষ্ণু), যুদ্ধাসক্ত (যোধ্য), দুঃখে অবিচল (দুঃ-চ্যবন), প্রকৃষ্ট সহনশীল (খৃষ্ণু), বাণধারী (ইমুহস্ত), কামবর্ষয়িতা অর্থাৎ শরণার্থীর বাঞ্ছা পূরণে অকৃপণ (বৃষ্ণা)–এই হেন যথোক্তগুণসম্পন্ন ইন্দ্রের সহায়তায়, হে মনুষ্যগণ (নরঃ)! হে যোদ্ধাগণ (যুধঃ)! তোমরা (যুদ্ধে) জয়লাভের সামর্থ্য লাভ করো (জয়ত) এবং সেই শত্রুদের অভিভব করা (তৎ সহধ্ব) ৷ ৩৷

সেই বাণধারী (ইমুহস্ত), সেই ধনুর্ধর বা খঙ্গ ইত্যাদি ধারণকারী (নিষঙ্গী), বশবর্তী অনুচরগণের সাথে সংযোজনশীল (বশী সংস্রষ্টা), সেই যোদ্ধা ইন্দ্ৰ আপন সামর্থ্যে পরকীয় সৈন্যের নিমিত্ত একীভবনশীল (যুধ ইন্দ্র গণেন)। তিনি কেবল অনুচরগণের সাথে সংযুক্তই নন, অধিকন্তু তিনি সংসৃষ্টজিৎ অর্থাৎ সঙ্ীভূতভাবে তাঁর অভিমুখে আগত শত্রুদের জেতা। সেই সোমরক্ষক (সোমপাঃ), বাহুবলবান বা বাহুদ্বয়ের দ্বারা অভিভবকারী (বাহুস্পর্ধী), ভয়ঙ্কর ধনুযুক্ত (উগ্রধ), শত্রুদেহে বাণক্ষেপনকারী (প্রতিহিতাভিঃ অস্তা)। এতাদৃশ গুণণাপেত ইন্দ্রের সাহায্যে জয়লাভ করো এবং শত্রুদের অভিভব করো ৷ ৪৷৷

পরের বল সম্পর্কে অভিজ্ঞ অর্থাৎ সকলের বলভূত (বলবিজ্ঞায়), মহান্ বা পুরাতন (স্থবিরঃ), প্রকৃষ্ট বীর বা পরাগত বলও যাঁর শৌর্যে পরাহত (প্রবীরঃ), অভিভবন-শক্তিশালী (সহস্বান), অন্নবান্ বা বেগবান্ (বাজী), শত্রুবর্গের অভিভবনে পারঙ্গম (সহমানঃ), উমূর্ণ বলশালী (উঃ), সর্বদিকে বলবন্ত অনুচর সমন্বিত হয়ে শত্রুসেনাভিমুখে গমনশীল (অভিবীরঃ অভিষত্বা), শবর্গীয় বলের জয়কর্তা (সহোজিৎ), পরকীয় ধেনুকে স্বকীয়ত্বে আনয়নকারী (গোবিদ), এমন গুণবিশিষ্ট হে ইন্দ্র! আমাদের নিমিত্ত বিজয়াত্মক রথে আরোহণ করো (ইন্দ্র জৈত্ৰং রথং আতিষ্ঠ) ৫

হে সমান-বুদ্ধি-কর্মসম্পন্ন যোদ্ধাগণ (সখায়ঃ)! তোমরা শত্রুধর্ষণসমর্থ বিক্রান্ত (ইমং বীরং), অতএব এই উনূর্ণবল ইন্দ্রের পশ্চাতে অবস্থান পূর্বক তুষ্ট হও (অনু হর্ষধ্বং); (অর্থাৎ ইন্দ্ৰ হেন বীরকে অগ্রে রক্ষা পূর্বক তোমরা তাঁর পশ্চাৎ হতে উৎসাহিত হও)। তথা শক্ৰহননের নিমিত্ত উদ্যোগবন্ত ইন্দ্রের পশ্চাতে অবস্থান পূর্বক তোমরা নিজেরাও উদ্যোগী হও (ইন্দ্রং অনু সংরভধ্বম)। (এই ইন্দ্র) শত্রুসঙ্রে জেতা অথবা শত্ৰুপুরী জয়কারী (গ্রামজিতং), শত্রুর গাভীগুলির জেতা (গোজিত), বাহুদ্বয়ে বজ্রধারী (বজ্রবাহং), যুদ্ধক্ষেত্রে জয়লাভকারী বা শত্রুদের মর্দনকারী (জয়ন্ত অজ্ঞ), আপন পরাক্রমে শত্রুসৈন্যের প্রকৃষ্ট হিংসক (ওজস্য প্রমৃণন্তং) ॥.৬

 বলের দ্বারা (সহসা) যুদ্ধক্ষেত্রসমূহে (গোত্রাণি) প্রবেশপূর্বক নিদয়রূপে অবস্থানকারী (অদায়ঃ), উম্পূর্ণ বলশালী বীর (উগ্রঃ), বহুবিধ ক্রোধসমন্বিত (শতমন্যুঃ), যুদ্ধক্ষেত্র হতে কেউই যাঁকে অপসারিত করতে অক্ষম (দুঃ-চ্যবনঃ), শত্রুসেনার অভিভবিতা অর্থাৎ শত্রুগণকে পরাভূতকারী (পৃতনাষাট), শত্রুগণ যাঁকে প্রহার করতে অক্ষম (অযোধ্যঃ),–এই হেন ইন্দ্র যুদ্ধে আমাদের সেনাবর্গকে প্রকর্ষের সাথে রক্ষা করুন (যুৎসু অস্মাকং সেনাঃ প্রাবতু)। ৭।

 হে দেবগণের পালক বৃহস্পতি! তুমি রাক্ষসগণের হন্তা অর্থাৎ শত্রু (রক্ষোহা অমিত্রা); তুমি শত্রুদের প্রকর্ষের সাথে মর্দনের নিমিত্ত (অপবাধমানঃ শত্রু প্রভঞ্জন) সর্বতো গমন করো। তুমি শত্রুর প্রকৃত হিংসা হতে আমাদের শরীরের রক্ষার নিমিত্ত হও (অমিত্রা প্রমৃণন অস্মাকং তনূনাং অবিতা এধি)। ৮৷৷

ইন্দ্র আমাদের অমিতাবর্গকে মর্দনের নিমিত্ত (অভিভঞ্জতীনাং) জয়শীল (জয়ন্তীনাং) দেবসেনাগণের নেতা হোন (আসাং দেবসেনানাং ইন্দ্রো নেতা অস্তু)। বৃহস্পতি সম্মুখে আগমন করুন; এবং দক্ষিণা, যজ্ঞ ও সোম সম্মুখে আগমন করুন। (এখানে দক্ষিণা শব্দে যজ্ঞে দীয়মানা গোরূপা দক্ষিণা বিবক্ষিত)। তথা মরুৎ দেবতাগণ দেবসেনাগণের মধ্যে অর্থাৎ মধ্যভাগে গমন করুন (মরুতো দেবসেনানাং মধ্যে যন্তু)। ৯।

কামসমূহের বর্ষণকারী বা শাস্ত্ৰাস্ত্র-প্রক্ষেপকারী (বৃষ্ণঃ) ইন্দ্রের, শনিবারক রাজনশীল (রাজ্ঞঃ) বরুণের, অদিতিপুত্র আদিত্যগণের ও মরুৎ-বর্গের উল্লীর্ণ ও শত্ৰুপ্ৰসহনসমর্থ বল (উগ্রং শর্ধ) উত্তিষ্ঠিত বা আবির্ভূত হোক (উৎ অস্থাৎ)। তারপর অদীনমনা (মহামনসাং), সর্বভুবন বা সর্বলোক, হতে শক্রবর্গকে বিতাড়নে সমর্থ (ভুবনচ্যবানা), শত্রুর বিনাশকারী (জয়তাং) দেবগণের জয়ধ্বনি (ঘঘাষঃ) উত্তিষ্ঠিত হোক (উৎ অস্থা) ॥ ১০

ধ্বজাশোভিত সংগ্রাম সমুপস্থিত হলে (ধ্বজেষু সমৃতেষু) ইন্দ্র আমাদের রক্ষাকারী হোন। আমাদের প্রেরিত শরগুলি (যা ইষবঃ) জয়লাভ করুক (জয়ন্ত), (অর্থাৎ শত্রগণকে জয় করুক) অথবা (ইষু শব্দে ইষুমন্ত যোদ্ধা ধরলে অর্থ হয়)–আমাদের ধনুর্বাণধারী যোদ্ধাগণ জয়লাভ করুক। আমাদের সম্বন্ধীয় বিক্রান্তকর্মা পুরুষগণ (বীরাঃ) জয়ের দ্বারা উৎকৃষ্ট হয়ে উঠুক (উত্তরে ভবন্তু)। হে দেবগণ (দেবাসঃ)! আপনারাও সেই সংগ্রামে আমাদের রক্ষা করুন (তেষু অস্মন্ অবত), যে সংগ্রামে যোদ্ধাগণ পরস্পরকে আহ্বান করে (হবে)। ১১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইন্দ্রস্য বাহু ইতি চতুর্থ সূক্তং অপ্রতিরথসংজ্ঞকং।-ইত্যাদি। (১৯কা, ২অ. ৪সূ.)।

 টীকা— উপযুক্ত সূক্তটি মূল পুঁথিতে একবীরঃ নামে উল্লিখিত হলেও বৈতানে (রৈ, ৩৩) ও পরিশিষ্ট ইত্যাদি (পৃ. ৬৪) অনুসারে সায়ণাচার্য এটিকে অপ্রতিরথসংজ্ঞকং বলে অভিহিত করেছেন। উক্ত সূত্রানুসারে যেখানে যেখানে অপ্রতিরথসংজ্ঞান্বিত বিনিয়োগ আছে সেখানে সেখানে উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ কর্তব্য। বস্তুতঃ এই সূক্তের ঋষি হলেন অপ্রতিরথ। আমরা প্রথমেই উল্লেখ করেছি যে এই সূক্তটিতে শত্রুদমনসমর্থ ইন্দ্রের স্তুতি করা হয়েছে ৷ (১৯কা, ২অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : অভয়ম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : দ্যাবাপৃথিবী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

ইদমুচ্ছুয়োহবসানমাগাং শিবে মে দ্যাবাপৃথিবী অভূতাম্। অসপত্নঃ প্রদিশো মে ভবন্তু ন বৈ ত্বা দিষ্মে অভয়ং নো অস্তু ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –কৰ্মাবসানে প্ৰাপণীয় শ্রেষ্ঠ ফল আমরা লাভ করেছি (অবসানং ইদং উৎশ্রেয়ঃ আগাং)। দ্যাবাপৃথিবী অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবী আমাদের শ্রেয়ঃপ্রদ অর্থাৎ সৌভাগ্যদায়ক হোক (মে শিবে অভূতা); তথা প্রাচী ইত্যাদি মহান্ দিমূহ আমাদের শত্রুরহিত অর্থাৎ বাধকত্বের হেতুভূত উপদ্রবরহিত হোক (মে প্রদিশঃ অসপত্না ভবন্তু)। হে শত্রু অথবা দেবগণ! আমরা আপনাদের বিদ্বেষ করি না, অতএব আমাদের ভয়বাহিত্য হোক (ন বৈ ত্বা দ্বিষ্মে অভয়ং নঃ অস্তু)। ১।

সূক্তস্য বিনিয়োগ –ইদমুচ্ছুয়োহবসানং ইতি একর্চেন সূক্তেন সাগ্নিপত্নীক আহিতাগ্নিঃ প্রয়াণে পর্যবসিতে আজ্যং জুহুয়াৎ৷৷ (১৯কা, ২অ. ৫সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত এক-ঋক্‌-সম্বলিত সূক্তটির দ্বারা আহিতাগ্নির প্রয়াণ পর্যবসিত হলে অগ্নিকর্তা কর্তৃক পত্নী সমভিব্যাহারে আজ্য হোম করণীয় ৷ (১৯কা, ২অ. ৫.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : অভয়ম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র মন্ত্রোক্ত উদ্দিষ্টগণ ছন্দ : বৃহতী, জগতী, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ]

যত ইন্দ্র ভয়ামহে ততো নো অভয়ং কৃধি। মঘবঞ্জপ্পি তব ত্বং ন ঊতিভিৰ্বি দ্বিমো বি মৃধো জহি১॥ ইন্দ্রং বয়মনূরাধং হবামহেনু রাধ্যাস্ম দ্বিপদা চতুষ্পদা। মা নং সেনা অরুষীরুপ গুর্বিসূচীরিন্দ্র হো বি নাশয় ৷৷ ২৷৷ ইন্দ্রস্রাতোত বৃত্ৰহা পরস্ফানো বরেণ্যঃ। স রক্ষিতা চরমতঃ স মধ্যতঃ স পশ্চাৎ স পুরস্তান্নো অস্তু ॥৩৷৷ উরুং নো লোকমনু নেষি বিদ্বাস্তুজ্জ্যোতিরভয়ং স্বস্তি। উগ্রা ত ইন্দ্র স্থবিরস্য বাহু উপ ক্ষয়েম শরণা বৃহন্তা। ৪অভয়ং নঃ করত্যন্তরিক্ষমভয়ং দ্যাবাপৃথিবী উভে ইমে। অভয়ং পশ্চাদভয়ং পুরস্তাদুত্তরাদধরাদভয়ং নো অস্তু ॥৫॥ অভয়ং মিত্রাদভয়মমিত্রাদভয়ং জ্ঞাতাদভয়ং পুরো যঃ। অভয়ং নক্তমভয়ং দিবা নঃ সর্বা আশা মম মিত্রং ভবন্তু ॥৬॥

বঙ্গানুবাদ –হে অভয়ঙ্কর ইন্দ্র! যথা হতে আমরা ভীতি প্রাপ্ত হয়েছি (ভয়ামহে), সেই ভয়ের হেতুভূত স্থান হতে আমাদের অভয় বা ভয়রাহিত্য করো, অর্থাৎ উপদ্রব পরিহার করিয়ে দাও (অভয়ং কৃধি)। আরও, হে ধনবান্ (মঘব) ইন্দ্র! তোমার সম্বন্ধিনী রক্ষণের বা পালনের দ্বারা তুমি আমাদের রক্ষা করতে সমর্থ (উতিভিঃ শগ্ধি)। অনন্তর তুমি আমাদের দ্বেষ্টা অর্থাৎ শত্রুগণকে (দ্বিষঃ) সংগ্রামে বিশেষভাবে বিচ্ছিন্ন করো (বি জহি) এবং বিশেষভাবে বিনাশ করো (মৃধঃ বি জহি)। অথবা–(দ্বিষো মৃধঃ শব্দদ্বয়ের দ্বারা বাহ্যাভ্যন্তররূপা দ্বিবিধ শত্রু বিবক্ষিত হলে, অর্থ হয়) আমাদের বাহ্য ও অন্তরের সন্নিহিত বা অসন্নিহিত শত্রুদের বিনাশ করো ॥ ১।

যে হেন ইন্দ্র পর্যায়ক্রমে পূজনীয় (অনুরাধং), আপন ইষ্টসিদ্ধির নিমিত্ত তাকে আমরা আহ্বান করছি (হবামহে)। ইন্দ্রের নিকট এই প্রার্থনার দ্বারা আমরা দ্বিপদা অর্থাৎ পুত্রভৃত্য ইত্যাদি এবং চতুস্পদা অর্থাৎ গো-অশ্ব ইত্যাদির দ্বারা পর্যায়ক্রমে সমৃদ্ধ হবো (অনু রাধ্যাস্ম), (অর্থাৎ পুত্ৰভৃত্য-গবাদিরূপ অভিমত ফলসমৃদ্ধ হবো)। অধিকন্তু, অভিমত ফলের প্রতিবন্ধক (অররুযীঃ) সেনাগণ যেন আমাদের না প্রাপ্ত হয় (নঃ মোপ গুঃ), (অর্থাৎ যেন আমাদের নিকটে না আগমন করতে পারে)! কেবল সমীপস্থ হতে না পারাই নয়, কিন্তু হে ইন্দ্র! সর্বতো ব্যাপ্ত (বিসূচীঃ) শত্রুসেনাদের (দ্রুহঃ) বিশেষভাবে বিনাশ করো। ২।

বৃত্রহা অর্থাৎ আবরক অসুর বা মেঘের হন্তা ইন্দ্র আমাদের ত্রাণকারী (ত্রাতা) হোন। বরেণ্য ইন্দ্ৰ অপরের হাত হতে বা পরে আমাদের রক্ষাকর্তা (পরস্ফানঃ) হোন! সেই ইন্দ্র (সঃ) অন্তে (চরমতঃ), মধ্যদেশে (মধ্যতঃ), পৃষ্ঠভাগে (পশ্চাৎ), পুরোভাগে (পুরস্তাৎ) (অর্থাৎ সর্বত্র) আমাদের রক্ষাকারী হোন (নঃ রক্ষিতা অস্তু)। ৩

হে সর্বজ্ঞ (বিদ্বা) ইন্দ্র! আমাদের বিস্তীর্ণ লোক (উরুং লোকং) অনুক্রমে প্রাপ্ত করিয়ে দিন (অনু নেষি)। আপনি সর্বত্রগামী বা সর্বত্রব্যাপ্ত আদিত্যাখ্য অবিনাশী সত্তা (স্বঃ যৎ জ্যোতিঃ)। আপনি ভয়ের হেতুভূত উপদ্রবের পরিহারক ও ক্ষেম ইত্যাদি সকল অভীষ্টের প্রদায়ক হোন (অভয়ং স্বস্তি)। হে ইন্দ্র! আমরা আপনার মহৎ বা পুরাতন (স্থবির), উসূর্ণবল (উগ্ৰা), শত্রুবিনাশসমর্থ বা সকলের রক্ষাকারী (শরণা), বৃহৎ (বৃহন্ত) বাহুযুগলের (বাহ্) শরণ গ্রহণ করছি। ৪।

 অন্তরিক্ষ অর্থাৎ মধ্যমলোক আমাদের ভয়রাহিত্য করুক (অভয়ং করতি), এই সর্বপ্রাণীর নিবাসস্থানভূত অর্থাৎ পরিদৃশ্যমান দ্যাবাপৃথিবী (উভে ইমে) আমাদের অভয় করুক। তথা পশ্চিম দিশা (পশ্চাৎ) আমাদের অভয়প্রদ হোক; পূর্ব দিশা (পুরস্তাৎ), উত্তর দিশা (উত্তরা) ও দক্ষিণ দিশা (অধরা) আমাদের অভয়প্রদায়ক হোক (নঃ অভয়ং অস্তু) ৫

মিত্র অর্থাৎ সুহৃর্গ হতে আমাদের ভয়রাহিত্য হোক; (সর্বদা হিতকরী পুরুষ হলেন মিত্র; তার হতে ভয় থাকে না। তবে কি নিমিত্ত ভয়রাহিত্য আশা করা হচ্ছে? আসলে, তাদের নিকট হতে ভয়ব্যতিরিক্ত হিতফল সর্বদা প্রার্থনা করা হচ্ছে)। অমিত্র অর্থাৎ শত্রুবর্গের নিকট হতে আমাদের অভয় হোক (অভয়ং মিত্রাৎ অভয়ং অমিত্রাৎ)। পরিজ্ঞাত শক্ত হতে অপরিজ্ঞাত অর্থাৎ গূঢ় শত্রু হতে আমাদের অভয় হোক (জ্ঞাতাৎ অভয়ম্ পুরঃ যঃ)। রাত্রি ও দিবা আমাদের অভয় হোক (অভয়ং নক্ত অভয়ং দিবা), (অহোরাত্ৰব্যাপী অভয় প্রার্থনার দ্বারা কালনিবন্ধন ভয় পরিহারের প্রার্থনা করা হচ্ছে)। সর্ব দিশা (আশা) সর্বদা অভয়কামী আমার মিত্রবৎ হিতকরী হোক (মম মিত্রং ভবন্তু) ॥ ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যত ইন্দ্র ভয়ামহে ইত্যস্য সূক্তস্য অভয়গণে পাঠাৎ।–ইত্যাদি৷ (১৯কা, ২অ. ৬সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি অভয়গণে পঠিত হয়। নক্ষত্র কল্পে (১৮), শান্তি কল্পে (১৬) ও পরিশিষ্ট ইত্যাদিতে (৫৩) এই সূক্তটির গণপ্রযুক্ত বিনিয়োগ পাওয়া যায় ৷ (১৯কা, ২অ. ৬সূ.)।

.

সপ্তম সূক্ত : অভয়

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : অনুষ্টুপ, শক্করী]

 অসপত্নং পুরস্তাৎ পশ্চাদ্যে অভয়ংকৃত। সবিতা মা দক্ষিণত উত্তরাত্মা শচীপতিঃ ॥১॥ দিবো মাদিত্য রক্ষন্তু ভূম্য রক্ষগ্নয়ঃ। ইন্দ্রাগ্নী রক্ষং মা পুরস্তাদর্শ্বিবভিতঃ শৰ্ম যচ্ছতাম। তিরস্টীনঘ্ন্যা রক্ষতু জাতবেদা ভূতকৃত মে সর্বতঃ সন্তু বর্ম৷৷ ২৷৷

বঙ্গানুবাদ –পূর্বদিক আমাদের সপত্নরাহিত্য (অসপত্নং) অর্থাৎ শত্রুজনিত বাধা পরিহার করুক। পশ্চিম দিক (পশ্চাৎ) আমাদের অভয় দান করুক। সকলের প্রেরক হে সবিতাদেব! দক্ষিণ দিকে আপনি আমাকে রক্ষা করুন। হে শচীপতি (অর্থাৎ ইন্দ্রাণীর পতি ইন্দ্রদেব)! আপনি আমাকে উত্তর দিক্ হতে রক্ষা করুন ॥১॥

 আদিত্যগণ (অর্থাৎ অদিতির পুত্র সকল দেবগণ) দ্যুলোক হতে (দিবঃ) আমাকে রক্ষা করুন। (অর্থাৎ বজ্র ইত্যাদি দৈবী আপদ হতে রক্ষা করুন)। অশ্বিদ্বয় (অর্থাৎ সূর্যপুত্র দেববৈদ্য নাসত্য ও দস্র নামক দেবযুগল) আমাদের সর্বত্র সুখ প্রদান করুন (অভিতঃ শর্ম যচ্ছতা)। অঙ্গনশীল গার্হপত্য ইত্যাদি অগ্নিক্রয় ভূমি হতে রক্ষা করুন (ভূম্যা রক্ষন্তু), (অর্থাৎ ভূমি সম্বন্ধীয় উপদ্রব পরিহার করুন)। ইন্দ্র ও অগ্নিদেব (ইন্দ্রাগ্নী) আমাকে পূর্বদিকে হতে পালন করুন (পুরস্তাৎ মাং রক্ষতা)। জাতবেদা (অর্থাৎ জাতমাত্রকেই জ্ঞাতা বা জাতমাত্ৰতেই বিদ্যমান অগ্নিদেব বক্রগামী বা বিদিশগামী (তিরস্টী) আমাদের বধের অযোগ্যরূপে (অগ্ন্যা) রক্ষা করুন। (অর্থাৎ আমরা বিপথগামী হলে তিনি যেন আমাদের সুপথে আনয়ন করেন)। প্রাণীবর্গের নির্মাতা দেবগণ বা গ্রহপিশাচ ইত্যাদি ভূতসমূহের হিংসক দেবগণ (ভূতকৃতঃ) সর্বত্র আমার সুরক্ষক কবচ হোক (বর্ম সন্তু)। ২।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অসপত্নং পুরস্তাৎ উতি সূক্তচতুষ্কস্য রাত্রৌ পুরোহিতকর্তব্যে রাজ্ঞঃ শয্যাগৃহপ্রবেশ কর্মণি অভিমন্ত্রিতশর্করায়া প্রতিদিশং প্রদক্ষিণং প্রক্ষেপে বিনিয়োগঃ-ইত্যাদি। (১৯কা, ২অ. সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পরবর্তী তিনটি সূক্ত সহ রাত্রে রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশকর্মে শর্করা অভিমন্ত্রিত করে প্রতি দিকে প্রদক্ষিণ পূর্বক প্রক্ষেপে বিনিযুক্ত হয়। পরিশিষ্টে (৪/৫) এর বিধান আছে। অতএব এই অর্থসূক্তটি আথবণ কর্তৃক ব্যবহার হয় ৷ (১৯কা, ২অ. ৭সূ.)।

.

অষ্টম সূক্ত : সুরক্ষা

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : জগতী, শক্করী]

অগ্নিৰ্মা পাতু বসুভিঃ পুরস্তাৎ তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংচ্ছুয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥১॥ বায়ুর্মান্তরিক্ষেণৈতস্যা দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংচ্ছুয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তম্মা। আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥২ সোমো মা রুদ্রৈর্দক্ষিণায়া দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংচ্ছুয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥৩ বরুণো মাদিত্যৈরেতস্যা দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংজ্জ্বয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তম্মা। আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥৪॥ সূর্যো মা দ্যাবাপৃথিবীভ্যাং প্রতীচ্যা দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংচ্ছুয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা। আত্মানং পরি ঈদে স্বাহা ॥আপো মৌষধীমতীরেতস্যা দিশঃ পান্তু তাসু ক্রমে তাসু শ্রয়ে তাং পুরং প্রৈমি। তা মা রক্ষন্তু তা মা গোপায়ন্তু তাভ্য আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥ ৬ বিশ্বকর্মা মা সপ্তঋষিভিরুদীচ্যা দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংছুঁয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥৭ ইন্দ্রো মা মরুত্বানেতস্যা দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংচ্ছুয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥ ৮ ৷৷ প্রজাপতির্মা প্রজননবাৎসহ প্রতিষ্ঠায়া ধ্রুবায়া দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংচ্ছুয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা। আত্মানং পরি দর্দে স্বাহা ॥৯৷৷ বৃহস্পতির্মা বিশ্বৈর্দেবৈরূধ্বায়া বায়া দিশঃ পাতু তস্মিন্ ক্রমে তস্মিংহূয়ে তাং পুরং প্রৈমি। স মা রক্ষতু স মা গোপায়তু তস্মা। আত্মানং পরি দদে স্বাহা ॥১০৷

 বঙ্গানুবাদ –পৃথিবীস্থ অগ্নিদেব বসু নামক দেববর্গের সাথে পূর্বদিকে (পুরস্তাৎ) আমাকে রক্ষা করুন (অগ্নিঃ মা পাতু)। যেস্থানে পাদপ্রক্ষেপ করবো (ক্রমে), সেই (তস্মি) আশ্রয়ে বা অবস্থানে (শ্রয়ে); যে শয্যাগৃহে গমন করবো (তাং পুরং প্রৈমী), সেই সর্বত্র অগ্নিদেব আমাকে রক্ষা করুন (অগ্নিঃ মা পাতু)। (অথবা–সেই অগ্নিদেব আমার রক্ষাকর্তা হলে পাদপ্রক্ষেপ করবো, সেই অবস্থান গ্রহণ করবো, সেই শয্যাগৃহে গমন করবো)। সেই বসুমান্ (অর্থাৎ ধনসম্পন্ন) অগ্নি আমাকে রক্ষা করুন (মা রক্ষতু), সেই অগ্নি আমার অহিতনিবারণ রূপ রক্ষণ ও হিতকরণরূপ পালন দান করুন (মা গোপায়তু)। আমি সর্বতোরক্ষক সেই বসুমান্ অগ্নির অধীনে নিজেকে স্বাহা সহকারে রক্ষণার্থে বা সমর্পণ দান করছি (আত্মানং পরি দদে স্বাহা) ॥১॥

অন্তরীক্ষস্থ বায়ুদেব স্বাধিষ্ঠিত মধ্যমলোকের সাথে পূর্বদিকে (এতস্যাঃ দিশঃ–অর্থাৎ পূর্বৰ্মত্রে উল্লিখিতপুরস্তাৎ বা প্রাচ্য দিকে) আমাকে রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী মন্ত্রবৎ; কেবল অগ্নিদেব স্থলে বায়ুদেব পঠনীয় ] ॥২৷৷

সোমদেব রোদনকারক রুদ্ৰনামক দেবগণের সাথে দক্ষিণ দিকে আমাকে রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রের মতো; কেবল অগ্নিদেব স্থলে সোমদেব পঠনীয়] ৷ ৩৷৷

 বারক দেবতা বরুণ অদিতিপুত্র আদিত্য নামক দেবগণের সাথে দক্ষিণ দিকে (এতস্যা দিশঃ–অর্থাৎ পূর্বৰ্মন্ত্রে উল্লিখিত দক্ষিণায়া দিশঃ বা দক্ষিণ দিকে) আমাকে রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রের মতো; কেবল অগ্নিদেব স্থলে বরুণদেব পঠনীয়] ৷৷ ৪

সূর্যদেব অর্থাৎ সর্বপ্রেরক আদিত্য দ্যাবাপৃথিবীর পশ্চিম দিকে (প্রতীচ্য দিশঃ) আমাকে রক্ষা করুন।[পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রের মতো; কেবল অগ্নিদেব স্থলে সূর্যদেব পঠনীয় ৷৷ ৫

জলদেবীগণ (আপঃ বা অপাং) ওষধীসমূহের সাতে (ওষধীমতী) আমাকে পশ্চিম দিকে (এতস্যা দিশঃ–অর্থাৎ পূর্ব মন্ত্রে উল্লিখিত প্রতীচ্য দিশঃ) রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুরূপ; কেবল অগ্নিদেব স্থলে আপঃ বা জলদেরীগণ পঠনীয়] ৷৷ ৬ ৷

সকলের সৃজনকর্তা বা বিশ্বজগতের কারণভূত পরমাত্মা দেব বিশ্বকর্মা তার আপন মনঃসৃষ্ট সপ্তর্ষিগণের সাথে আমাকে উত্তর দিকে (উদীচ্যাঃ দিশঃ) রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রবৎ; কেবল অগ্নিদেব স্থলে বিশ্বকর্মা পঠনীয়)। ৭৷৷

ইন্দ্রদেব মেঘবর্গের (মরুত্বান) অর্থাৎ মরুৎ-গণের সাথে উত্তর দিকে (এতস্যা দিশঃ) আমাকে রক্ষা করুন। পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুরূপ; কেবল অগ্নিদেব স্থলে মরুৎ-বর্গ পঠনীয় ] ॥ ৮৷

 সকল জগতের উৎপাদনসাধক অর্থাৎ প্রকর্যের সাথে জায়মানা মনুষ্য ইত্যাদি সহ চরাচরাত্মিকা প্রজাগণের পতি বা স্রষ্টা দেব প্রজাপতি সর্বজগতের আধারভূতা স্থির ভূমির দিকে অর্থাৎ নিম্ন দিকে (ধ্রুবায়াঃ দিশঃ) আমাকে রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রের মতো; কেবল অগ্নিদেব স্থলে দেব প্রজাপতি পঠনীয় ] ৯।

দেবগণের পতি দেব বৃহস্পতি (বৃহঃ পতি) সকল দেবতা সহ (বিশ্বৈ দেবৈ) উপরিস্থিত দিকে অর্থাৎ আকাশের দিকে (উধায়াঃ দিশঃ) আমাকে রক্ষা করুন। [পরবর্তী অংশ প্রথম মন্ত্রবৎ; কেবল অগ্নিদেব স্থলে দেব বৃহস্পতি পঠনীয় ]। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অগ্নিৰ্মা পাতুইতি সূক্তদ্বয়স্য রাত্রৌ রাজ্ঞ শয্যাগৃহপ্রবেশনার্থং পুরেহিতেন কর্তব্যে পিষ্টময়রাত্রিপ্রতিমাদিসমৰ্চনকর্মণি প্রতিদিশং শর্করাচতুষ্টময়প্রক্ষেপানন্তরং রাজানং অধিষ্ঠাপিয়াঃ পঞ্চম্যাঃ শর্করায়াঃ প্রতিদিশং প্রক্ষেপে বিনিয়োগ :–ইত্যাদি। (১৯কা, ২অ. ৮সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ববর্তী সূক্তের ন্যায় রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশকর্মে শর্করা অভিমন্ত্রিত পূর্বক প্রতি দিকে প্রক্ষেপে বিনিয়োগ হয়। পরিশিষ্টে (৪৩, ৪৪) এর বিধান দেওয়া আছে৷(১৯কা, ২অ, ৮সূ.)।

.

নবম সূক্ত : সুরক্ষা

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]

অগ্নিং তে বসুবন্তমৃচ্ছন্তু। যে মাঘায়বঃ প্রাচ্যা দিশোহভিদাসাৎ ॥১॥ বায়ুং তেহরিক্ষবন্তমৃচ্ছন্তু। যে মাঘায়ব এতস্যা দিশোহভিদাসাৎ ॥ ২॥ সোমং তে রুদ্রবন্তমৃচ্ছ। যে মাঘায়বো দক্ষিণায়া দিশোহভিদাসাৎ ॥৩॥ বরুণং ত আদিত্যবন্তমৃচ্ছ। যে মাঘায়ব এতস্য দিশোহভিদাসাৎ ॥৪॥ সূর্যং তে দ্যাবাপৃথিবীবন্তমৃচ্ছন্তু। যে মাঘায়বঃ প্রতীচ্যা দিশোহভিদাসাৎ ॥৫৷৷ অপস্ত ওষধীমতীঋচ্ছন্তু। যে মাঘায়ব এতস্যা দিশোহভিদাসাৎ ॥৬॥ বিশ্বকর্মাণাং তে সপ্তঋষিবন্তমৃচ্ছন্তু। যে মাঘায়ব উদীচ্যা দিশোহভিদাসাৎ ॥৭৷৷ ইন্দ্রং তে মরুত্বমৃচ্ছ। যে মাঘায়ব এতস্যা দিশোহভিদাসাৎ ৮ প্রজাপতিং তে প্রজননবমৃচ্ছন্তু। যে মাঘায়বো ধ্রুবায় দিশোহভিদাসাৎ ॥৯॥. বৃহস্পতিং তে বিশ্বদেববন্তমৃচ্ছন্তু। যে মাঘায়ব ঊর্ধ্বায়া দিশোহভিদাসাৎ ১০

বঙ্গানুবাদ –হিংসালক্ষণ যে পাপ অর্থাৎ জিম্ৰাংসু যে শত্ৰুবর্গ (অঘায়বঃ) পূর্বদিক হতে (প্রাচ্যাঃ দিশঃ) আগত হয়ে আমাকে সর্বতো হিংসা করবে (অভিদাসাৎ), সেই শত্রুবর্গ বসুদেবগণের সমভিব্যাহারী (বসুবন্তম) অগ্নিকে মরণার্থে প্রাপ্ত হোক (ঋচ্ছ)। ১।

 যে হিংসক শত্রুগণ পূর্বদিক হতে (এতস্যাঃ দিশঃ) আগত হয়ে আমাকে সর্বতো হিংসা করবে, তারা মরণের নিমিত্ত অন্তরীক্ষে অধিষ্ঠিত বায়ু দেবতার নিকট গমন করুক৷ ২৷

 যে হিংসক শত্রুবর্গ দক্ষিণ দিক হতে (দক্ষিণায়াঃ দিশঃ) আমাকে সর্বতো হিংসা করবে, তারা রুদ্রগণ সমভিব্যাহারী (রুদ্রবন্তম) সোমদেবতার নিকট মরণার্থে গমন করুক ॥ ৩

যে হিংসক শত্রুবর্গ দক্ষিণ দিক হতে (এতস্যাঃ দিশঃ) আগত হয়ে আমাকে সর্বতো হিংসা করবে, তারা মরণের নিমিত্ত আদিত্যগণ সমভিব্যাহারী (আদিত্যবন্তম) অরিষ্টনিবারক বরুণ দেবতার সমীপে গমন করুক। ৪

যে হিংসক শত্রুবর্গ পশ্চিম দিক হতে (প্রতীচ্যাঃ দিশঃ) আগমন পূর্বক আমাদের সর্বতো হিংসা করবে, তারা দ্যাবাপৃথিবী সমভিব্যাহারী (দ্যাবাপৃথিবীবন্তম) সূর্যদেবের সকাশে মরণের নিমিত্ত গমন করুক ॥ ৫॥

 যে হিংসক শত্রুবর্গ পশ্চিম দিক হতে (এতস্যাঃ দিশঃ) আগত হয়ে আমাদের সর্বতো হিংসা করবে, তারা ওষধীমতী জলসমূহের (অর্থাৎ জলদেবীগণের) নিকট মরণের নিমিত্ত গমন করুক৷ ৬ ৷

যে হননেচ্ছু শত্রুবর্গ উত্তর দিক হতে (উদীচ্যাঃ দিশঃ) আমাদের সর্বতো হিংসা করবে, তারা সপ্তর্ষি সমন্বিত (সপ্তঋষিবন্তং) বিশ্বজগতের কারণভূত দেব বিশ্বকর্মার সম্মুখে মরণের নিমিত্ত গমন করুক। ৭৷

যে হিংসক শত্রুগণ উত্তর দিক হতে (এতস্যাঃ দিশঃ) আমাদের সর্বতে হিংসা করবে, তারা মরুৎগণ সমভিব্যাহারী ইন্দ্রদেবের নিকট মরণের নিমিত্ত গমন করুক ॥ ৮

যে অনিষ্টসাধনেচ্ছু শবর্গ স্থির ভূমির দিকে অর্থাৎ নিম্ন দিক হতে (ধ্রুবায়াঃ দিশঃ) আগমন পূর্বক আমাদের সর্বতো হিংসা করবে, তারা চরাচরাত্মকা প্ৰজাগণের পতি প্রজাপতি দেবতার নিকট মরণের নিমিত্ত গমন করুক। ৯।

যে বধাভিলাষী শত্রুগণ ঊর্ধ্ব দিক্ হতে (উধ্বায়াঃ দিশঃ) আগমন পূর্বক আমাদের সর্বতো হিংসা করবে, তারা সকল দেবতা সমন্বিত (বিশ্বদেববন্তং) বৃহস্পতি দেবতার নিকট মরণের নিমিত্ত গমন করুক। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অগ্নিং তে বসুমন্তং ইতি সূক্তস্য পিষ্টরাত্ৰীসমর্চনে কর্মণি শর্করাপ্রক্ষেপে পূর্বসূক্তেন সহ উক্ত বিনিয়োগঃ।–ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ২অ. সূ.)৷৷

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ববর্তী সূক্তের সাথে রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশকর্মে পিষ্টময়-রাত্রির সমৰ্চনে শর্করা প্রক্ষেপে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। পূর্ববর্তী সূক্তটিতে পূর্ব ইত্যাদি দিকের রক্ষক বসুমান অগ্নি, মধ্যমলোক সমভিব্যাহারী বায়ু ইত্যাদির নিকট তাদের অধিষ্ঠিত দিক্ সমূহ হতে আমাদের প্রতি আগত শত্রুগণের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রার্থনা প্রজ্ঞাপিত হয়েছে। উপযুক্ত সূক্তে সেই সেই দিক্ হতে শত্রুগণ সেই সেই দিকের অধিপতি দেবতার মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে মরণপ্রাপ্ত হোক–এই প্রার্থনাই প্রতিপাদিত হয়েছে।  (১৯কা, ২অ. ৯সূ.)।

.

দশম সূক্ত : শর্ম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : বৃহতী, পংক্তি]

 মিত্রঃ পৃথিবোদামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু॥১॥ বায়ুরন্তরিক্ষেপণাদামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু। ২। সূর্যো দিবোক্রামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু। ৩ চন্দ্রমা নক্ষত্রেরুদক্রামৎ তাং পুরং প্র য়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু৪ সোম ওষধীভিরুদক্রামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু। ৫৷৷ যজ্ঞো দক্ষিণাভিরুদক্রামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু ৷৷ ৬ ৷৷ সমুদ্রো নদীভিরুদামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু॥৭৷৷ ব্ৰহ্ম ব্রহ্মচারিভিরুদক্রামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু। ৮ ৷৷ ইন্দ্রো বীর্যেপোদক্রামৎ তাং পুরং প্রণমামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু ॥৯॥ দেবা অমৃতেনোক্রামংস্তাং পুরং প্র য়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু ॥ ১০৷৷ প্রজাপতিঃ প্রজাভিরুদামৎ তাং পুরং প্রণয়ামি বঃ। তামা বিশত তাং প্র বিশত সা বঃ শৰ্ম চ বর্ম চ যচ্ছতু।১১।

 বঙ্গানুবাদ –মিত্র অর্থাৎ আহবনীয় ইত্যাদি রূপে প্ৰণীয়মান অগ্নিদেব স্বনিবাসস্থানভূত পৃথিবীলোকের সাথে যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান (উৎ অক্রামৎ) হয়েছেন, সেই পৃথিবীলোকের অভিমানী দেবতা অগ্নি কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজ!), তোমাদের প্রকর্ষের সাথে প্রাপ্ত করাচ্ছি (নয়ামি)। সেই পুরী বা শয্যগৃহের অভিমুখে প্রবেশোন্মুখ হও (আ বিশত); অতঃপর সেই পুরী বা শয্যাগৃহে অন্তঃপ্রবিষ্ট হও (প্র বিশত)। (অর্থাৎ সেই শয্যাস্থানে বা আপন সৌধে নিবিষ্ট হও)। সেই শয্যাগৃহ বা পুরী প্রবিষ্ট বা অভিনিবিষ্ট ; তোমাদের সুখ (শর্ম), কবচ বা পরের অভেদ্যত্বলক্ষণ আবরণ (বর্ম) প্রদান করুক (যচ্ছতু) ১

বায়ু অর্থাৎ মাতরিশ্বা দেব আপন নিবাসস্থানভূত মধ্যমলোকের সাথে (অন্তরিক্ষেণ) যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান্ হয়েছেন, সেই অন্তরিক্ষলোকের অভিমানী দেবতা বায়ু কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন!)….[অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রবৎ ]। ২।

 সূর্য অর্থাৎ সর্বপ্রেরক আদিত্যদেব স্বনিবাসস্থানভূত দ্যুলোকের সাথে (দিবা) যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান্ হয়েনে, সেই দ্যুলোকাভিমানী দেবতা সূর্য কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজ!)….[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের ন্যায় ] ৩

চন্দ্রমা অর্থাৎ সর্ব লোকের আহ্বদকর চন্দ্রদেব তার উপভোগ্য অশ্বিনী ইত্যাদি নক্ষত্রগণের সাথে যে পুরী রক্ষা করতে উক্রান্ত হয়েছেন, সেই নক্ষত্রাধিপতি চন্দ্রমা কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধা নগরী, (হে রাজন!)..[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুরূপ ]। ৪

সোম অর্থাৎ তরু-গুল্ম ইত্যাদি ওষধীগণকে রসপ্রদানের দ্বারা পোষক দেবতা তাঁর স্বপোষ্যগণের সাথে যে পুরী রক্ষা করতে উক্রান্ত হয়েছেন, সেই ওষধী ইত্যাদির অভিমানী দেবতা কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন!)… [ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের সমতুল ] ॥ ৫৷

যজ্ঞ অর্থাৎ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি প্রকৃতি-বিকৃত্যাত্মক সকা ঐতু তার বিহিত যথোক্ত দক্ষিণার সাথে যে পুরী রক্ষা করতে উক্রান্ত হয়েছেন সেই দক্ষিণাভিমানী দেবতা কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন!)…[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুসরণীয়] ৬

সমুদ্র অর্থাৎ নদমশীলা নদীসমূহের পতি তার অধীনস্থ অম্বুরাশির সাথে (নদীভিঃ) যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান্ হয়েছেন, সেই নদীপতি সমুদ্র কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধা নগরী, (হে রাজন!)…[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুরূপ ] ৷৷ ৭৷

ব্ৰহ্ম অর্থাৎ সাঙ্গ বা সর্বাবয়ববিশিষ্ট বেদ (সংহিতা, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ ইত্যাদি সমন্বিত অপৌরুষেয় বেদ) বেদবিহিত যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মকুশল ব্রহ্মচারিগণের সাথে (ব্রহ্মচারিভিঃ) যে পুরী রক্ষা করতে উক্রান্ত হয়েছেন, সেই শ্রৌতস্মার্ত-কর্মকারীগণের বা সাঙ্গবেদাধ্যায়ীগণের উপাস্য ব্রহ্ম কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন!)…[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুরূপ ] ॥ ৮।

ইন্দ্র অর্থাৎ পরমৈশ্বর্যশালী সমস্ত-দেবতাধিপতি দেবতা বীরকর্মসমূহ বা আপন বাহুশৌর্যের (বীর্যের্ন) সাথে যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান্ হয়েছেন, সেই সেনালক্ষণ বলের অভিমানী দেবতা ইন্দ্র কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন্!)…[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রবৎ] ৯

দেবগণ (দেবাঃ) অর্থাৎ দ্যোতনশীল অমরগণ অমরণসাধন সুধারসের সাথে (অমৃতেন) যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান হয়েছেন, সেই অমৃতাভিমানী দেবগণের দ্বারা রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন!)… [ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রের অনুরূপা। ১০।

প্রজাপতি অর্থাৎ প্রজাগণের পতিরূপ দেবতা প্রকর্ষের সাথে জায়মান মনুষ্য ইত্যাদির সাথে (প্রজাভিঃ) যে পুরী রক্ষা করতে উক্ৰান্তবান্ হয়েছেন, সেই প্রজাবর্গের অভিমানী দেবতা কর্তৃক রক্ষিত পুরী বা শয্যাগৃহলক্ষণ প্রসিদ্ধ নগরী, (হে রাজন!)…[ অবশিষ্ট অংশ প্রথম মন্ত্রবৎ]। ১১..

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –মিত্রঃ পৃথিব্যোদমাৎ ইতি সূক্তেন পুরোহিতৌ রাত্রে রাজানং শয্যাগৃহং প্রবেশয়েৎ। পরিশিষ্টং তু পূর্বমেব উদাহৃতং। রাজ্ঞো নূতননগরপ্রবেশনকর্মণি চ বিনিয়োগঃ। (১৯কা. ২অ. ১০সূ.)।

 টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ববর্তী সপ্তম ও অষ্টম সূক্তের মতো রাত্রিকালে রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশকর্মে পুরোহিতগণের দ্বারা বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। পরিশিষ্টে পূর্বের ন্যায় এর উদাহরণ দেওয়া আছে। তবে এই সূক্তের বিশেষত্ব এই যে, এটি কেবল রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশকর্মেই নয়, রাজা কর্তৃক নূতন নগরে প্রবেশকমেও বিনিয়োগ হয় ৷ (১৯কা, ২অ. ১০সূ.)।

.

একাদশ সূক্ত : সুরক্ষা

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : বৃহতী, পংক্তি]

অপ ন্যধুঃ পৌরুষেয়ং বধং যমিন্দ্রাগ্নী ধাতা সবিতা বৃহস্পতিঃ। সোমমা রাজা বরুণো অশ্বিনা যঃ পূষাম্মা পরি পাতু মৃত্যোঃ ॥১॥ যানি চকার ভূবনস্য যম্পতিঃ প্রজাপতির্মাতরিশ্বা প্রজাভ্যঃ। প্রদিশো যানি বসতে দিশশ্চ তানি মে বর্মাণি বহুলানি সন্তু ॥ ২॥ যৎ তে তনুম্বনহ্যন্ত দেবা রাজয়ো দেহিনঃ। ইন্দ্রো যচ্চত্রে বর্ম তদন্মান্ পাতু বিশ্বতঃ ॥ ৩৷৷ বর্ম মে দাবাপৃথিবী বর্মাহবর্ম সূর্যঃ।. বর্ম মে বিশ্বে দেবাঃ ক্রন্ মা মা প্রাপৎ প্রতীচিকা ॥ ৪৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমাদের প্রতি হিংসান্বিত হয়ে যে বধসাধন কর্ম (যং বধম) (বলগলক্ষণ অর্থাৎ চলমান বা শস্ত্ৰাস্ত্র ইত্যাদিরূপ হননসাধন আভিচারিক ক্রিয়া) আমাদের শত্রুগণ গূঢ়ভাবে (অপ ন্যধুঃ) আমাদের অভিমুখে প্রেরণ করেছে, সেই অপ্রকাশ্য শত্রুর দ্বারা প্রেরিত মৃত্যুসাধন বা মৃত্যুরূপা কর্ম হতে (মৃত্যোঃ ) আমাদের বা আমাদের কবচধারী রাজাকে ইন্দ্র ও অগ্নি (ইন্দ্রাগ্নী), ধাতা, সবিতা, বৃহস্পতি, রাজা সোম, বরুণ, অশ্বিযুগল (অশ্বিনা), যম ও পূষা সর্বতঃ রক্ষা করুন (পরি পাতু–পরিতঃ পান্তু) ॥১॥ ভুতজাতের পতি বা পালক (ভুবনস্য পতিঃ) যে প্রজাপতি মাতরিশ্বা (অর্থাৎ সূত্ৰাত্মা বায়ু)-রূপে বিরাজমান, তিনি আপন প্রজাগণের রক্ষণার্থে যে বর্ম বা কবচসমূহের দ্বারা আচ্ছাদন করেছিলেন (বসতে), প্রজাপতির দ্বারা নির্মিত যে বর্ম বা কবচ প্রাচ্য ইত্যাদি মহা-দিসমূহ ও অবান্তর দিসকল (প্রদিশঃ) ধারণ করেছিল, সেই বর্ম বা কবচ যুদ্ধাভিলাষী আমার বা আমাদের (মে) প্রভূত সংখ্যায় প্রাপ্তি হোক (বহুলানি সন্তু)। (অর্থাৎ সেই কবচসমূহ সর্ব দিক্ হতে আমাদের রক্ষাকারী হোক)। ২।

 দ্যুলোকে রাজমান শরীরী (রাজয়ঃ) দেবতাগণ অসুরযুদ্ধে আপন দেহরক্ষার্থে যে বর্ম পরিধান বা ধারণ করেছিলেন (অনহ্যন্ত), এবং ইন্দ্রদেব যে বর্ম শত্ৰুবিজয়ার্থে (যৎ চক্রে) ধারণ করেছিলেন, তাঁদের দ্বারা ধারিত সেই কবচ যুদ্ধোদ্যত আমাদের (অস্মা) সর্বতঃ (বিশ্বতঃ) শক্রকৃত প্রহার হতে রক্ষা করুক (পাতু)। ৩।

 দ্যো অর্থাৎ স্বর্গলোক ও পৃথিবী (দ্যাবাপৃথিবী) উভয়ে আমার (নিমিত্ত) কবচ (বর্ম) (নির্মাণ বা প্রেরণ) করুন। অগ্নি আমার (নিমিত্ত) কবচ (বর্ম) (নির্মাণ বা প্রেরণ) করুন। ইন্দ্র প্রমুখ সকল দেবতা যুদ্ধাভিলাষী আমার বা আমাদের রাজার (নিমিত্ত) কবচ (বর্ম) (নির্মাণ বা প্রেরণ) করুন (ক্র)। শত্রুসেনা অজ্ঞাতকুলাঞ্চনা হয়ে অর্থাৎ গুপ্ত-রীতিতে (প্রতীচিকা) যেন যুদ্ধোদ্যত কবচধারী আমাকে না প্রাপ্ত হয় (মা মা প্রাপৎ)। (বক্তব্য এই যে, কবচধারণের দ্বারা দৃপ্ত আমি হেন দেবানুগৃহীতের সম্মুখে শত্রুবর্গ প্রকাশ্যে আগমন করুক, আমি তাদের হননে সমর্থ হবো)। ৪ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অপ ন্যধুঃ পৌরুষেয়ং ইতি সূক্তেন যুদ্ধোদ্যতং রাজানং কবচেন পুরোহিতং সন্নহ্যেত ৷ (১৯কা, ২অ. ১১সূ.)।

টীকা— রাজা যুদ্ধে গমনের কালে রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে থাকেন। সেই সময় অস্ত্রশস্ত্র ব্যতীতও তাঁকে কবচ বা বর্ম অর্থাৎ তনু-ত্রাণ পরিধান করতে হয়। উপযুক্ত সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা পুরোহিত রাজাকে কবচযুক্ত করে থাকেন। (১৯কা, ২অ. ১১সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *