2 of 3

১৯।১ ঊনবিংশ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতা ঊনবিংশ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : যজ্ঞঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : যজ্ঞ ছন্দ : বৃহতী, পংক্তি]

সং সং সুবন্তু নদ্যঃ সং বাতাঃ সং পতত্ৰিণঃ। যজ্ঞমিমং বর্ধয়তা গিরঃ সংস্রাব্যেণ হবিষা জুহোমি। ১৷ ইমং হোমা যজ্ঞমবতেমং সংস্রবণা উত। যজ্ঞমিমং বর্ধয়তা গিরঃ সংস্রাব্যেণ হবিষা জুহোমি। ২৷৷ রূপংরূপং বয়োবয়ঃ সংরভ্যৈনং পরি স্বজে। যজ্ঞমিমং চতস্রঃ প্রদিশো বর্ধয়ন্তু সংস্রাব্যেণ হবিষা জুহোমি। ৩ ৷৷

বঙ্গানুবাদ –নিম্নগামিনী নদীগুলি (নদ্যঃ) সম্যক্ প্রবাহিত হোক, বাতাসও আমাদের আনুকূল্যে বহমান হোক, পক্ষী ইত্যাদি সকলেও (পতত্ৰিণঃ) আমাদের আনুকূল্যে উড্ডীয়মান হোক (সংসং স্রবন্তু)। (অর্থাৎ আমাদের অভীষ্ট প্রদানশীল হোক)। হে স্থূয়মানগণ অর্থাৎ দেবতাসকল (গিরঃ)! যে হবিঃপ্রদ যজমানের দ্বারা.এই পুণ্য ইত্যাদি শান্তিকর্ম অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই ফলস্বামী যজমানকে পশু পুত্র ইত্যাদির দ্বারা সমৃদ্ধ করো- এই ক্ষরণশীল আজ্য ইত্যাদির সাথে সংস্রবযুক্ত হবিঃ দেবতাগণের উদ্দেশে অগ্নিতে আহুতি প্রদান করছি (জুহোমি)। ১।

হে আহুতিসমূহ (হোমাঃ)! তোমরা প্রবর্তমান আহুতিসমুদায়াত্মক কর্মের (ইমং যজ্ঞং) রক্ষণ করো (অবত)। এবং হে ক্ষরণশীলগণ (সংস্রবণাঃ) অর্থাৎ আজ্য দুগ্ধ প্রভৃতিবৃন্দ! তোমরা এই যজ্ঞের রক্ষণ করো। অথবা হে হোতব্য দেবতাগণ। (হোমাঃ)! তোমরা ফলকামী যজমানকে রক্ষা করো। এঁকে পশু পুত্র ইত্যাদির দ্বারা সমৃদ্ধ করো। আমি এই ক্ষরণশীল আজ্য ইত্যাদির সাথে সংস্রবযুক্ত হবিঃ দেবতাগণের উদ্দেশে অগ্নিতে আহুতি প্রদান করছি ॥ ২॥

হে দেবগণ! আমি এই ফলকামী যজমানের নিমিত্ত পশু পুত্র ইত্যাদি সমস্ত অভিলষিত ফল সংগৃহীত করছি এবং এই কর্ম-প্রযোজয়িতা যজমানকে সেই পশু পুত্র ইত্যাদি ফলের দ্বারা সম্বন্ধিত করছি–এই কথা প্রযোক্তা বলেন। প্রকৃষ্ট প্রাচী ইত্যাদি মহা দিকস্থ জনগণ (চতঃ প্রদিশঃ) এই যজমানকে (ইমং যজ্ঞং) বর্ধিত করুন। আমি এই ক্ষরণশীল আজ্য ইত্যাদির সাথে সংস্রবযুক্ত হবিঃ দেবতাগণের উদ্দেশে অগ্নিতে আহুতি প্রদান করছি ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ–…তত্র সং সং স্রবন্তু ইতি প্রথমং সূক্তং সর্বপুষ্টিকর্মণি সম্পাতাভিমন্ত্রিত। মৈশ্ৰধান্যচরুপ্রাশনে দধিমধুমিশ্রসক্তৃমন্থপ্রাশনে চ বিনিযুক্তং। সূত্রিতং হি।–ইত্যাদি। (১৯কা, ১অ. ১সূ.)।

টীকা— ঊনবিংশ কাণ্ডের উপযুক্ত প্রথম সূক্তটি সর্বপুষ্টিকর্মে মৈশ্ৰধান্যচরুপ্রাশনে ও দধিমধুমিত্র- এ সক্মন্থপ্রাশনে বিনিযুক্ত হয়। লক্ষ্মীকরণে অর্থাৎ সৌভাগ্য প্রাপ্তির নিমিত্ত কর্মেও এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়।

[ঊনবিংশ কাণ্ড মহাশান্তিসাধারণভূত কমেও নদী, হ্রদ ইত্যাদি থেকে সমাহৃত জল এই মন্ত্ৰত্রয়ের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করণীয়। কৌশিক সূত্রে ও নক্ষত্রকল্পে এই বিনিয়োগগুলি উল্লিখিত আছে। (১৯কা, ১অ. ১সূ.)]

.

দ্বিতীয় সূক্ত : আপঃ

[ঋষি : সিন্ধুদীপ দেবতা : আপঃ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

শং তে আপো হৈমবতীঃ শমু তে সন্তুৎস্যাঃ। শং তে সনিষ্যদা আপঃ শমু তে সন্তু বর্ষাঃ ॥১॥ শং তে আপো ধন্বন্যাঃ শমু তে সপ্যাঃ। শং তে খনিত্রিমা আপঃ শং যা কুম্ভেভিরাভূতাঃ ॥ ২॥ অনভ্ৰয়ঃ খনমানা বিপ্রা গম্ভীরে অপসঃ। ভিষগভ্যো ভিষক্তরা আপো অচ্ছা বদামসি ॥ ৩৷৷ অপামহ দিব্যানামপাং স্রোতস্যানা। অপামহ প্রণেজনেহশ্বা ভবথ বাজিনঃ ॥ ৪৷৷ তা অপঃ শিবা অপোইক্ষুঙ্করণীরপঃ। যথৈব তৃপ্যতে ময়স্তাস্ত আ দত্ত ভেষজীঃ ॥ ৫৷৷

বঙ্গানুবাদ –[শান্তিকর্মকর্তা ঋত্বিক কর্তৃক প্রযোজয়িতা ফলকামী যজমানকে সম্বোধন ]-হে যজমান! হিমালয় পর্বত (হৈমবতীঃ) হতে আগত জলসমূহ তোমার সুখকারী হোক (শং); তথা প্রস্রবণ (উৎস্য) হতে সদা প্রবাহিত (সনিষদাঃ) জলরাশিও তোমার কল্যাণকরী হোক (শং)। অধিকন্তু (উ) বর্ষায় (বৰ্য্যা) উৎপন্ন জলরাশিও তোমার পক্ষে মঙ্গলময় হোক (তে শংসন্তু)। ১।

মরুদেশে স্থিত (ধন্বনা) জলরাশি তোমার কল্যাণকারী হোক (তে শং সন্তু); জলসমৃদ্ধ দেশে (অনূপ্যা) অর্থাৎ যে দেশে জল অনুগত, সেই স্থানস্থায়ী) জলরাশি (আপঃ) তোমার সুখকারী হোক (তে শং সন্তু), খননের দ্বারা নির্বর্তিত অর্থাৎ নিষ্পদিত (খনিত্রিমা) কূপ তড়াগ ইত্যাদির জলরাশি তোমার পক্ষে মঙ্গলপ্রদ হোক (তে শং ভবন্তু) এবং কুম্ভে আহৃত জলরাশিও (কুম্ভেভিঃ আভৃতাঃ যা) তোমার সুখকর হোক (শং ভবন্তু) ॥ ২॥

খননসাধন কোদাল ইত্যাদি (অনভ্ৰয়ঃ) ব্যতিরেকে, কাষ্ঠ-হস্ত-পদ ইত্যাদি খননশীল (খনমানা) সামগ্রীর দ্বারাও যা অসাধ্য বা দুঃসাধ্য, সেই উভয় তটের বিদারণকারী জলরাশিকে মন্ত্রবলে সাধিত করেন ঋত্বিকবৃন্দ (বিপ্রাঃ)। এই জলরাশি মহাহ্রদ ইত্যাদির অগাধ স্থানে ব্যাপ্ত। এই হেন ব্যাপনশীল জলরাশি লৌকিক বৈদ্য (ভিষভ্যঃ) অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ (বৈদ্য) (ভিষতরা)। এমন অত্যন্ত হিতকারিণীরূপা জলরাশিকে আমরা স্তুতি করছি ৷৷ ৩ ॥

[ এই মন্ত্রটি ঋত্বিকগণ, পরস্পর বলছেন, অথবা যজমান ঋত্বিকগণকে বলছেন]–দ্যুলোকে উৎপদ্যমান (দিব্যানাং) জলরাশি ও প্রবাহে উৎপদ্যমান (স্রোতস্যানাং) জলরাশি, এই উভয় ব্যতিরিক্ত জলরাশির শোধন বিষয়ে (প্রণেজনে) অশ্বের ন্যায় (অশ্বা) বেগবন্ত (বাজিনঃ) হও (ভবথ)। (অথবা  আমার নিমিত্ত ব্যাপ্রিয়মান তোমরা শান্তু্যদকর্মে ত্বরান্বিত হও) ৪

[এই মন্ত্রটিও প্রযোজকের বাক্য ]-যে জলরাশি কল্যাণকারিণী (আপঃ শিবা), যে জলরাশি অরোগকারিণী (অযক্ষ্মঙ্করণীঃ য। অপঃ), সেই (তা) ভেষজরূপে হিতকরিণী (ভেষজীঃ) জলরাশি তোমরা আনয়ন করো (আ দত্ত)। (জলরাশি অনয়নের ফল কি? না) সুখ (ময়) যে প্রকারে (যথৈব) অধিক (তৃপ্তং) হয়; (অর্থাৎ অধিক সুখলাভের নিমিত্ত শান্তুদক আনয়ন করো–এটাই বক্তব্য) ॥ ৫॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –শং ত আপঃ ইতি সূক্তেন তন্ত্রভূতমহাশান্তৌ নদ্যাদিসমাহৃতং জলং অভিমন্ত্রয়েত। সূত্রিতং হি নক্ষত্রকল্পে।…ইত্যাদি৷ (১৯কা, ১ম, ২সূ.)৷৷

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের মন্ত্রগুলির দ্বারা তন্ত্রভূত মহাশান্তি কর্মে নদী ইত্যাদি হতে সমাহৃত জল অভিমন্ত্রিত করণীয়। নক্ষত্রকল্পে (২০) এই সম্পর্কে বলা হয়েছে-নদী কিংবা হ্রদ কিংবা অপর কোন পুণ্যস্থান হতে সম্যক প্রবহমান জল ঋত্বিকগণ কর্তৃক অভিমন্ত্রিত করণীয়।–হিমালয় পর্বত হতে নিম্নে প্রবাহিত জলরাশিও শাস্ত্যদক কর্মে গৃহীতব্য ॥ (১৯কা, ১ম, ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : জাতবেদাঃ

[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভুরিক]

দিবম্পৃথিব্যাঃ পর্যন্তরিক্ষাৎ বনস্পতিভ্যো অপধ্যাষধীভ্যঃ। যত্রযত্র বিভৃত্যা জাতন্দোস্তত স্তুতে জুষমাণে ন এহি৷৷ ১যস্তে অঙ্গু মহিমা যো বনেষু য ওষধীষু পশুধন্তঃ। অগ্নে সর্বান্তঃ সং রভম্ব তাভির্ন এহি দ্রবিণোদা অজস্রঃ ॥ ২॥ বস্তে দেবেষু মহিমা স্বর্গো যা তে তনুঃ পিতৃবিবেশ। পুষ্টির‍্যা তে মনুষ্যেষু পথেইগ্নে তয়া রয়িমম্মাসু ধেহি৷৷ ৩৷৷ শুল্কৰ্ণায় কবয়ে বেদ্যায় বচোভির্বাকৈরূপ যামি রাতি। যতো ভয়মভয়ং তন্নো অস্তুব দেবানাং যজ হেড়ো অগ্নে ॥৪॥

 বঙ্গানুবাদ— হে জাতবেদা (অগ্নি)! আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে (স্তুতঃ) তুমি যথায় যথায় অবস্থান করে বিশিষ্ট পূর্ণতাশালী হয়েছে (যতযত্র বিস্তৃতঃ) সেই সেই স্থান হতেই আমাদের প্রসন্নতার নিমিত্ত (জুষমাণে) আগমন করো। আকাশ (দিবঃ), পৃথিবী ও মধ্যমলোক হতে (অন্তরিক্ষাৎ), পুষ্পরহিত ফল দানকারী বৃক্ষ (বনস্পতি) এবং ফলপাকান্ত বৃক্ষ-লতা (ওষধিভ্যঃ) ইত্যাদি হতে (উৎপন্ন হয়ে) তুমি আমাদের নিকট আগমন করো। ১।

 হে অগ্নি! তোমার যে মহিমা জলে (বড়বাগ্নি রূপে) বিদ্যমান (যস্তে অঙ্গু মহিমা), বনে (দাবাগ্নি রূপে) (যে মহিমা বিদ্যমান) (যো বনেষু), ওষধীতে (ফলপাকনিমিত্তভূত) (যে মহিমা বিদ্যমান) (যঃ ওষধীষু), সর্বপ্রাণীতে (বৈশ্বানররূপে) (যশ্চ পশু-পশুপলক্ষিত) (যে মহিমা বিদ্যমান), অন্তরিক্ষের জলে (অল্প অন্তঃ) (বিদ্যুঞ্জপে অর্থাৎ বৈদ্যুতাত্মনা) (যে মহিমা বিদ্যমান), সেই সকল তনু (সর্বা তন্বঃ) সঙ্কলিত করো (সং রভস্ব) (অর্থাৎ ) বিভক্ত তনুগুলি একত্র করো)। (কি জন্য একত্র করো? না–) সেই সকল তনুগুলির সাথে আমাদের (নঃ) অজস্র অর্থাৎ অনবরত ধনদাতারূপে (দ্রবিণোদা) আগমন করো (এহি আ)। ২।

হে অগ্নি! তোমার স্বর্গ-গমন রূপ যে মহিমা দেবতাগণের মধ্যে বিদ্যমান আছে (যস্তে দেবেষু মহিমা স্বর্গঃ) (অর্থাৎ যজমান কর্তৃক দত্ত হবিঃ স্বর্গলোকে বহন পূর্বক দেবতাগণকে প্রদানের যে তনু আছে), যে তনুর দ্বারা তুমি পিতৃগণে বা পিতৃলোকে প্রবিষ্ট হয়েছে (যা তে তনুঃ পিতৃষ্ণু আবিবেশ) (অর্থাৎ স্বধাকারে প্রদত্ত কব্য নামক হবিঃ সহ তুমি তোমার যে তনুর দ্বারা পিতৃগণের নিকট সঞ্চারিত হয়ে থাকো), তোমার যে পোষণকর্ম মনুষ্যে বর্তমান থেকে (পুষ্টির‍্যা তে) (অর্থাৎ মনুষ্যোপলক্ষিত সকল চরাচরাত্মক প্রাণীতে) ভক্ষণ, পান ইত্যাদির সাধন হয়ে থাকে (পপ্রথে), সেই সকল তনুর সাথে আগমন পূর্বক আমাদের ধন প্রদান করো (অস্মাসু রয়িং ধেহি) ৷ ৩৷৷

হে অগ্নি! তুমি আমাদের স্তুতিশ্রবণে সমর্থ কর্ণশালী (শুল্কৰ্ণায়), ক্রান্তদর্শী (কবয়ে) (অর্থাৎ অতীন্দ্রিয়ার্থদর্শী), সকলের জ্ঞাতা (বেদ্যায়) বা বেদাহ্ (জ্ঞানযোগ্য), এই হেন গুণাবশিষ্ট তোমার নিকট অভিলষিত ফলদানের জন্য (রাতিং) মন্ত্ররূপ বাক্যের দ্বারা (বচোভিঃ) যাজ্ঞা করছি (উপযামি)। (অভিলষিত ফল কি?) আমাদের যত কিছু ভয় আছে (যতঃ ভয়ম), তা হতে আমাদের ভয়রাহিত্য করো (অভয়ং নঃ অস্তু)। (অথবা আমাদের যত ভয় আছে, সেই সকল ভয়ের কারণসমূহকে দূর করো)। তুমি আমাদের প্রতি ক্রোধ-করণশীল দেবতাগণকে (দেবানাং হেড়ঃ) তিরস্কার করো (অব যজ); (অর্থাৎ আমাদের প্রতি যারা ক্রোধী, তাদের ক্রোধ নিবারণ করো– এটাই বক্তব্য)। ৪

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— দিবহৃথিব্যাঃ ইতি সূক্তদ্বয়ং মেধাজননকর্মণি বিনিযুজ্যতে। এতেন সূক্তদ্বয়েন মেধাকামঃ সুপ্তোখায় মুখং হস্তেন প্রক্ষালয়তি। সূত্রিতং হি)–ইত্যাদি। (১৯কা, ১অ. ৩সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি এবং পরবর্তী ৪র্থ সূক্তটি মেধাজনন কর্মে বিনিয়োগ হয়। এই দুই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা মেধাকামী জন নিদ্রা হতে উত্থিত হয়ে হস্তের দ্বারা মুখ প্রক্ষালন করে থাকেন। এই মন্ত্রগুলির দ্বারা দধি ও মধু অভিমন্ত্রিত পূর্বক ভক্ষণ করলে তেজঃসম্পন্ন হওয়া যায়। এটি ক্ষত্রিয়গণের পক্ষে বিশেষ প্রযোজ্য। তেজস্কামী বৈদ্য, শূদ্র ইত্যাদি জন কেবল অন্নমিশ্রিত দধি ও মধু এই মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত পূর্বক ভক্ষণ করলে তেজঃলাভ করবেন।…এই সবই কৌশিক সূত্রে বিস্তৃতভাবে উল্লেখিত আছে।- ইত্যাদি৷ (১৯কা. ১অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : আকূতিঃ

[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

যামাহুতিং প্রথমামথর্বা যা জাতা যা হব্যমকৃণোজ্জাবেদাঃ। তাং ত এতাং প্রথমো জোহবীমি তাভিষ্ট্রপ্তা বহতু হব্যমগ্নিরগ্নয়ে স্বাহা ॥১॥ আকৃতিং দেবীং সুভগাং পুরো দধে চিত্তস্য মাতা সুহবা নো অস্তু। যামাশামেমি কেবলী সা মে অস্তু বিদেয়মেনাং মনসি প্রবিষ্টাম ২ আক্ত্যা নো বৃহস্পত আক্ত্যা ন উপা গহি। অথো ভগস্য নো ধেহ্যথথা নঃ সুহবো ভব ॥ ৩॥ বৃহস্পতির্ম আকৃতিমাঙ্গিরসঃ প্রতি জানাতু বাচমেতাম। যস্য দেবা দেবতাঃ সম্বভূবুঃ স সুপ্রণীতাঃ কামো অন্বেত্বস্মন্ ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ –(অগ্নির তিনটি ত–দেবতারূপ, হবিঃপ্রাপকদূতরূপ ও হবিঃপ্রক্ষেপা ধারাঙ্গরূপ)।–হে অগ্নি! সর্ব সৃষ্টির প্রাক্কালে (প্রথমাং) অথবৰ্শব্দবাচ্য, পরমাত্মা (অথবা) আপন সৃষ্টি দেবতাগণের প্রীতিসাধনের নিমিত্ত যে আহুতি প্রদান করেছিলেন (যাং আহুতিং অকৃপণাৎ), জাতমাত্রেরই জ্ঞাতা (জাতবেদাঃ) অগ্নি সেই আহুতি (যাং) দেবতাগণের নিকট যথাভাগে প্রদান করে দিয়েছিলেন; সকল যজমানের পূর্বভাবীরূপী আমি (তা এতাং প্রথমঃ) সেই আহুতিকে তোমার আস্যে (মুখমধ্যে) উৎসর্জন করছি (জোহবীমি)। তুমি তোমার সেই তিনটি তনুসহ স্তোতৃগণের দ্বারা স্তুত হয়ে দেবগণের পরিগ্রহণীয় হবিঃ দেবগণের নিকট বহন করে তাদের প্রাপ্ত করাও (তাভিঃ স্তুতঃ হব্যং বহতু)। অগ্নিশব্দের দ্বারা প্রতিপাদ্য অগ্নিত্ৰয়েব (অগ্নয়ে) উদ্দেশে এই হবিঃ সুহুত হোক (অর্থাৎ স্বাহা মন্ত্রে নিবেদিত হোক)। ১।

[এইটি এবং এর পরবর্তী ঋকটিতে বাক্-দেবী সরস্বতীর নিকট প্রার্থনা জ্ঞাপন করা হচ্ছে]।-তাৎপৰ্যরূপা (আকুতিং) (অর্থাৎ লৌকিক-বৈদিক সর্ব বাক্য প্রতিপাদ্যা), দ্যোতমানা (দেবীং), শোভন ভাগ্যযুক্তা বাক্-দেবতাকে পূর্বে পরিচর‍্যা করছি (পুরো দধে); (অর্থাৎ সর্বাভীষ্ট-কর্মে প্রথমেই দেবী সরস্বতীর অনুধ্যান করছি). (অনর্থনিবারণের নিমিত্ত লোকে যেমন আপ্ত জনের আশ্রয় গ্রহণ করে, অর্থাৎ পুত্র যথা মাতৃবশে অবস্থান করে) আমরাও তেমনই আমাদের মনের নিয়ময়ন্তী (চিত্তস্য মাতা) বাক্-দেবীকে সুষ্ঠুভাবে আহ্বান করছি (সুহবা নো অস্তু); (অর্থাৎ আমাদের আহ্বানের দ্বারা তিনি আমাদের অনুকূলা হোন)। অধিকন্তু ফল বিষয়ে আমি যে কামনা প্রাপ্ত করছি (যাং আশাং এমি) আমার (মে) সেই কামনা আসাধারণী হোক (সা কেবলী অস্তু); (শুধু অসাধারণীই নয়, কিন্তু আমি ব্যতীত অপরে কেউ যেন কামনা করতে না পারে–এটাই বক্তব্য)। আমার মনে সর্বদা নিহিত ফলবিষয়ক কামনা যেন ফলপৰ্যবসায়িনী হয় (বিদেয় এনাম্ মনসি প্রবিষ্টা)। ২।

 হে বৃহস্পতি (বৃহতাং অর্থাৎ দেবগণের হিতোপদেষ্টুত্বের দ্বারা পিতা বা পালকরূপে অভিহিত দেবতা)! সর্ববাক্যের তাৎপৰ্যরূপা বাক্য সহ (আকুভ্যা) বাক-দেবতাকে আমাদের অনুকূলান্বিতা করার নিমিত্ত আগমন করুন (ন উপাগহি)। অধিকন্তু (অথো) আমাদের সৌভাগ্য (নঃ ভগস্য) প্রদান পূর্বক সুষ্ঠু আহ্বানমাত্র আমাদের অনুকূল হও (সুহবঃ হ্রাতব্য ভব) ৷ ৩৷

[ সরস্বতীকে, প্রাপ্তির নিমিত্ত বৃহস্পতির নিকট প্রার্থনা]–অঙ্গিরস ঋষির পুত্র বৃহস্পতিদেব। (আঙ্গিরসঃ বৃহস্পতি) সকল অভিপ্রায় স্বরূপ (আকূতিং) (সকল শ্রুতি-পুরাণ ইত্যাদি প্রসিদ্ধ) এই বাক্যকে (এং বাচঃ) (অর্থাৎ প্রসিদ্ধ বাণীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতাঁকে) আমাদের প্রাপ্ত করানোর নিমিত্ত স্মরণ করুন (মে প্রতি জানাতু)। স্ত্রী-পুরুষাত্মক সকল দেবতা (দেবাঃ দেবতাশ্চ) ঐকমত প্রাপ্ত হয়ে (সম্বভূবুঃ) যে বৃহস্পতির বশে অবস্থান করেন (যস্য সুপ্রণীতাঃ), সেই কাম্যমান- ফলপ্রদাতা বৃহস্পতি (সঃ কামঃ) কাময়মান আমাদের (অ) অভিমুখে আগমন করুন (অনু এতু)। ৪

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যামাহুতিং ইতি সূক্তস্য মেধাজননকর্মণি বৰ্চস্যকর্মণি ৮ বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তেন সহ উক্তঃ ৷৷ (১৯কা, ১অ, ৪সূ.)৷৷

টীকা –মেধাজনন-কর্মে (অর্থাল বুদ্ধিবৃত্তি বা স্মৃতিশক্তি লাভের নিমিত্ত যাগক্রিয়ায়) এবং বচস্য-কর্মে (অর্থাৎ তেজ বা কান্তি লাভের নিমিত্ত যাগক্রিয়ায়) পূর্ব সূক্তের ন্যায় বিনিয়োগ হয়ে থাকে৷ (১৯কা, ১অ. ৪সূ)

.

পঞ্চম সূক্ত : জগতো রাজা

[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 ইন্দ্রো রাজা জগতশ্চর্ষণীনামধি ক্ষমি বিষুরূপং যদস্তি। ততো দদাতি দাশুষে বসূনি চোদ্দ রাধ উপস্তুতশ্চিদৰ্বাক্ ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ— ত্রিলোকে বাসকারী মনুষ্য ও দেবতা-সম্বন্ধীয় প্রজাগণের প্রভু (জগতঃ চর্ষণীনামধি রাজা) পরমৈশ্বর্যসম্পন্ন দেব (ইন্দ্র) হবিঃ-দানকারী জনগণকে (দাশুষে) তত কিছুই ধন প্রদান করুন, পৃথিবীতে যত কিছু ধন আছে। সেই দেব (ইন্দ্র) আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে তিনি আমাদের অভিষ্টুত ধন (উপস্তুত) আমাদের অভিমুখে প্রেরণ করুন (অর্বাক্ রাধঃ চোদ্দৎ) ॥১॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইন্দ্রো রাজা ইতি একর্চেন সূক্তেন ধনকামঃ ইন্দ্রং যজেত উপতিষ্ঠেত বা। (১৯কা, ১অ. ৫সূ.)।

টীকা— পূর্ববর্তী সূক্তে যেমন বুদ্ধিবৃত্তি বা স্মৃতিশক্তি লাভের নিমিত্ত কিংবা তেজঃ বা কান্তি লাভের নিমিত্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত আছে, উপযুক্ত একমাত্র ঋক্‌-সম্বলিত সূক্তটি তেমনই ধনাকাঙ্ক্ষী যজমানের দ্বারা ইন্দ্রের উদ্দেশে যজ্ঞক্রিয়ায় বা উপাসনায় বিনিযুক্ত হয়। (১৯কা, ১অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : জগদ্বীজঃ পুরুষঃ

 [ঋষি : নারায়ণ দেবতা : পুরুষ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

সহস্রবাহুঃ পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ। স ভূমিং বিশ্বততা বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ দশাঙ্গুলম্ ॥১॥ ত্রিভিঃ পদ্ভিদ্যামবরাহৎ পাদস্যেহাভবৎ পুনঃ। তথা ব্যক্ৰামদ বিঙশনানশনে অনু ॥ ২॥ তাবন্তো অস্য মহিমানস্ততে জ্যায়াংশ্চ পুরুষঃ। পাদোহস্য বিশ্ব ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি ॥৩॥ পুরুষ এবেদং সর্বং যদ ভূতং যচ্চ ভাব্যম্। উতামৃতত্বস্যেশ্বররা যদন্যেনাভবৎ সহ ৷৷ ৪৷৷ যৎ পুরুষং ব্যদধুঃ কতিধা ব্যকল্পয়ন। মুখং কিমস্য কিং বাহু কিমূরূ পাদা উচ্যেতে ॥৫॥

বঙ্গানুবাদ –অনন্ত ভুজশালী (সহস্রবাহুঃ), অনন্ত অক্ষিশালী (সহস্রাক্ষঃ) ও অনন্ত পাদশালী (সহস্রপাৎ) যে পুরুষ যজ্ঞানুষ্ঠাতা নারায়ণ নামে আখ্যাত, তিনি আপন মহিমায় সপ্ত সিন্ধু ও দ্বীপ সমন্বিতা পৃথিবীকে (ভূমিং) সর্বতোভাবে ব্যাপ্ত করে (বিশ্বতঃ বৃত্ব) দশাঙ্গুলি পরিমিত স্থান (হৃদয়াকাশ) অতিক্রম পূর্বক অবস্থান করছেন (অত্যতিষ্ঠৎ)। (অর্থাৎ পূর্বে হৃদয়াকাশে পরিচ্ছিন্ন স্বরূপে অবস্থিত থেকে, পরে স্বানুষ্ঠিত ক্রতু সামর্থ্যে সেই পরিচ্ছিন্নাকারতা পরিত্যাগ পূর্বক সর্বাতিশায়ি-স্বরূপে অবস্থিত রয়েছেন–এটাই বক্তব্য) ॥১॥

 সেই যজ্ঞানুষ্ঠাতা নারায়ণ-পুরুষ আপন তিন পদে বা পাদবিক্ষেপে (ত্রিভিঃ পদ্ভিঃ) স্বর্গলোকে আরোহণ করেছেন (দ্যাং আরোহৎ); তার চতুর্থ পাদ বা পদবিক্ষেপ (পাদঃ) এই ভূমণ্ডলে পুনঃ পুনঃ প্রকটমান হচ্ছে (পুনরাভবৎ)। এই পাদে ভোজনজীবী সকল মনুষ্য ও পক্ষী ইত্যাদি তির্যক প্রাণী (অশনা) এবং দেব-বৃক্ষ ইত্যাদি (অনশনা) সর্বতো ব্যাপ্ত বা বিক্ৰান্তবান হয়ে রয়েছে (বিম্ব ব্যক্ৰামৎ)। ২।

(সম্পূর্ণ বিশ্বই (অর্থাৎ দেব-তির্যক-মনুষ্যাত্মক যত কিছু জগৎ আছে, তা সকলই) সেই যজ্ঞানুষ্ঠাতা পুরুষের মহিমা অর্থাৎ স্বকীয় সামর্থবিশেষ)) এই মহিমা (তাবন্তো মহিমান) হতেও সেই (মহিমাধার) পুরুষ প্রবৃদ্ধ (জ্যায়া)। এঁর চতুর্থ পাদ (অস্য) স্থাবর-জঙ্গমাত্মক সকল ভুবনে (বিশ্বা ভূতানি) ব্যাপ্ত। এঁর চতুর্থ পাদ (অস্য) স্থাবর-জঙ্গমাত্মক সকল ভুবনে (বিশ্বা ভূতানি) ব্যাপ্ত। এঁর তিনটি পদ (অস্য ত্রিপাৎ) অমরণধর্মক হয়ে (অমৃতং) স্বর্গলোকে (দিবি অর্থাৎ দুলোকে) স্থিত হয়ে আছে ॥ ৩॥

বিগত (অতীত বা ভূত), ভবিষ্যৎ (ভাব্যং) ও বর্তমান সঙ্গত প্রত্যক্ষের দ্বারা দৃশ্যমান বা ব্যক্ত স্থাবর জঙ্গমাত্মক জগৎ–এই সব কিছুই সেই পুরুষের রূপ। এই পুরুষ দেবতাগণেরও (অমৃতত্বস্য) স্বামী (ঈশ্বরঃ)। যত কিছু জীব অন্নরস ইত্যাদি ভোগের দ্বারা জীবিত থাকে, ইনি তাদেরও ঈশ্বর। (অর্থাৎ ইনি অযোনিজ দেবগণের ও মর্তবাসী জীবনগণের ঈশ্বর)। ৪

[এই মন্ত্রে ব্রাহ্মণ ইত্যাদির সৃষ্টি বিষয়ে ব্রহ্মবাদীগণের প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। তাদের প্রশ্ন–সাধ্য নামক দেবগণ ও বসুগণ ] যখন সেই পুরুষকে অর্থাৎ যজ্ঞপুরুষকে বিশেষভাবে বিস্তারিত করেছিলেন (বি অধুঃ) তখন সেই পুরুষকে কত প্রকারে (কতিধা) বিবিধ কল্পনা করা হয়েছিল (ব্যকল্পয়ন) (অর্থাৎ ভাগ করা হয়েছিল)? (এটি সামান্যরূপ প্রশ্ন। এরপর বিশেষ প্রশ্নাবলী)–এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের মুখ। ছিল কোন বস্তু (কিমস্য মুখং)? বাহু ছিল কোন্ বস্তু? কোন বস্তু ঊরু, এবং কোন্ বস্তু তাঁর পাদ বলে কথিত (কিম্ ঊরু পাদা উচ্যেতে) ॥ ৫৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সহস্রবাহুঃ পুরুষঃ ইতি সূক্তদ্বয়ং পুরুষমেধে ক্ৰতৌ পুরুষপশ্বনুমন্ত্রণে বিনিযুক্তং।…তথা এতস্য সূক্তদ্বয়স্য শনৈশ্চরগ্রহদেবত্য-হবিরাজ্য হোমে সমিদাধানোপস্থানরোশ্য বিনিয়োগঃ।….সৌবর্ণভূমিদানেপি এতৎ সূক্তদ্বয়ং আজ্যহোমে বিনিযুক্তং।… সর্বাতিশায়িত্বসর্বভূতাত্মকত্ব কামেন নারায়ণাখ্যেন পুরুষেণ অনুষ্ঠিতস্য পুরুষমেধক্রততঃ প্রতিপাদকত্বাৎ জগৎকারণস্য আদিনারায়ণ পুরুষস্য প্রতিপাদকত্বৎ বা এতৎ পুরুষসূক্তং ইতি উচ্যতে। অতঃ অস্য সূক্তস্য দ্বিবিধোর্থঃ আধিযাজ্ঞিক একঃ আধ্যাত্মিকোপরঃ। পুরুষমেধবিধায়কং বাজসনেয়কব্রাহ্মণ এবং আয়তে।…ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ১অ. ৬সূ)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ও পরবর্তী সূক্তটি মূলতঃ একটি সূক্তেরই দুটি অংশ। দুটিই জগদ্বীজঃ পুরুষ নামে অভিহিত। এই সূক্তদ্বয় পুরুষমেধ যজ্ঞে পুরুষপশু-অনুমন্ত্রণে বিনিযুক্ত হয়। (বৈতান সূত্রে, ৭২, এগুলির নির্দেশ পাওয়া যায়। শনৈশ্চর গ্রহদেবতার আজ্যহোমে ও সমিদাধান-উপস্থানে এই দুটি সূক্তের বিনিয়োগ শান্তিকল্পে সূত্রিত, ১৫)। সুবর্ণ ও ভূমিদানেও এই সূক্ত দুটি আজ্যহোমে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। (পরিশিষ্ট ১০/১)। সর্বাতিশায়িত্ব ও সর্বভূতাত্মকত্ব কামনায় নারায়ণ নামে আখ্যাত পুরুষের দ্বারা অনুষ্ঠিত এই ক্রতুর প্রতিপাদকত্বের কারণে বা জগকারণ আদি নারায়ণ পুরুষের প্রাতিপাদকত্বের কারণে এই দুটি সূক্তই পুরুষসূক্ত (জগদ্বীজঃ পুরুষ) নামে কথিত। একই সূক্তের এই দুটি ভাগেরই দুরকম অর্থ আছে। এক, আধিযজ্ঞিক; অপর, আধ্যাত্মিক। পুরুষমেধ-বিধায়ক বাজসনেয়কব্রাহ্মণে (শুক্লযজুর্বেদে) এই রকমই আখ্যাত আছে। শতপথ ব্রাহ্মণে (১৩।৬।১১) অর্থাৎ যজুর্বেদের অংশবিশেষেও আধিযজ্ঞিকের সাথে আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণও পাওয়া যায়। আমাদের প্রকাশিত শুক্ল যজুর্বেদের মধ্যে উভয় অর্থ প্রদত্ত থাকলেও, এই স্থানে সায়ণাচার্য কৃত আধিযজ্ঞিক ব্যাখ্যাই অনুদিত হয়েছে৷৷ (১৯কা, ১অ. ৬সূ.)।

.

সপ্তম সূক্ত : জগদ্বীজঃ পুরুষঃ

[ঋষি : নারায়ণ দেবতা : পুরুষ ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 ব্রাহ্মণোহস্য মুখমাসী বাহু রাজনন্যাহভবৎ। মধ্যং তদস্য যদ বৈশ্যঃ পদ্ভ্যাং শূদ্রো অজায়ত ॥১॥ চন্দ্ৰমা মনসো জাতশ্চক্ষোঃ সূর্যো অজায়ত। মুখাদিন্দ্রশ্যাগ্নিশ্চ প্রাণাৎ বায়ুরজায়ত ॥ ২॥ নাভ্যা আসীদন্তরিক্ষং শীষ্ণো দৌঃ সমবর্তত। পদ্ভ্যাং ভূমিদিশঃ শ্রোত্রাৎ তথা লোক্টা অকল্পয়ন ॥৩৷৷ বিরাগ্রে সমভবৎ বিরাজো অধি পুরুষঃ। স জাতো অত্যরিচ্যত পশ্চাদ ভূমিমথো পুরঃ ॥৪॥ যৎ পুরুষেণ হবিষা দেবা যজ্ঞমতন্বত। বসন্তো অস্যাসীদাজ্যং গ্রীষ্ম ইন্মঃ শরদ্ধবিঃ ॥ ৫তং যজ্ঞং প্রাবৃষা প্রৌক্ষন পুরুষং জাতমশঃ। তেন দেবা অযজন্ত সাধ্যা বসবশ্চ যে ॥ ৬৷৷ তস্মাদশ্বা অজায়ন্ত যে চ কে চোভয়াদতঃ। গাবো হ জজ্ঞিরে তস্মাৎ তম্মাজ্জাতা অজাবয়ঃ ॥৭৷৷ তস্মাৎ যজ্ঞাৎ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে। ছন্দো হ জজ্ঞিরে তস্মাদ যজুস্তম্মাদজায়ত ॥ ৮৷ তস্মাদ যজ্ঞাৎ সর্বহুতঃ সভৃতং পৃষদাজ্য। পস্তাংশ্চক্রে বায়ব্যানারণ্যা গ্রাম্যাশ্চ যে ॥৯॥ সপ্তাস্যাস পরিধয়স্ত্রিঃ সপ্ত সমিধঃ কৃতাঃ। দেবা যদ যজ্ঞং তন্বনা অবধু পুরুষং পম্ ॥১০ মূর্ধা দেবস্য বৃহততা অংশবঃ সপ্ত সপ্ততীঃ। রাজ্ঞঃ সোমস্যাজায়ন্ত জাতস্য পুরুষাদধি ॥ ১১।

বঙ্গানুবাদ –[পূর্ব সূক্তের শেষ মন্ত্রে কতিধা ব্যকল্পয়ন অর্থাৎ কত রকমে ভাগ করা হয়েছিল–এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর পরবর্তী মন্ত্রগুলিতে প্রদত্ত হয়েছে। এই প্রথম মন্ত্রে মুখ ইত্যাদি বিশেষ প্রশ্নে উত্তর দেওয়া হচ্ছে ]। এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের মুখ ছিল ব্রাহ্মণ (ব্রাহ্মণো অস্য মুখং আসীৎ), (অর্থাৎ ব্রাহ্মণজাতি বিশিষ্ট পুরুষ এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের মুখ বা মুখমণ্ডল হতে উৎপন্ন হয়েছিল); এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের বাহু দুটি ছিল রাজন্য বা ক্ষত্রিয় (বাহু রাজন্য অভবৎ), (অর্থাৎ এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের ভুজদ্বয় হতে ক্ষত্রিয়-জাতি-বিশিষ্ট পুরুষ উৎপন্ন হয়েছিল); এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের মধ্যাঙ্গ অর্থাৎ বক্ষ হতে ঊরুদ্বয় পর্যন্ত ছিল বৈশ্য (মধ্যং তদস্য য বৈশ্যঃ), (অর্থাৎ এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের উরুদ্বয় পর্যন্ত হতে বৈশ্য-জাতি-বিশিষ্ট পুরুষ উৎপন্ন হয়েছিল); এই যজ্ঞাত্মন পুরুষের পাদদ্বয় হতে শূদ্ৰজাতি উৎপন্ন হয়েছিল (প্যাং শূদ্রো অজায়ত)। ১।

সেই যজ্ঞাত্মন পুরুষের মন হতে আহ্বদকর চন্দ্র [(চন্দ্ৰং আ) হ্রদং] জাত হয়েছিলেন; চক্ষু দুটি হতে সূর্য জন্মলাভ করেছিলেন (চক্ষোঃ সূর্যঃ অজায়ত)। সেই যজ্ঞাত্মন পুরুষের মুখ বা বাগিন্দ্রিয় হতে (মুখাৎ) ইন্দ্র ও অগ্নির উৎপত্তি হয়েছিল। এবং তার প্রাণ বা ঘ্রাণেন্দ্রিয় হতে (প্রাণাৎ) বায়ু জাত হয়েছিল। ২৷

এই যজ্ঞপুরুষের নাভি হতে অন্তরিক্ষ, শিরোদেশ হতে (শীষ্ণঃ) স্বর্গলোক (দৌঃ বা দ্যুলোক বা আকাশ), এবং চরণ দুটি হতে ভূলোক (পৃথিবী) সম্ভবিত হয়েছিল। (নাভিশিরপাদেভ্যঃ অন্তরিক্ষদ্ভূময়স্ত্ৰয়ো লোকাঃ সমভবন)। সেই যজ্ঞাত্মক পুরুষের শ্রোত্রেন্দ্রিয় হতে প্রাচী ইত্যাদি দশ দিক সৃষ্ট হয়েছে; (অর্থাৎ দিসমূহ শ্রোত্ররূপে কর্ণদ্বয়ে প্রবিষ্ট হয়)। (এই প্রকারে সাধ্য নামক দেবগণ সেই যজ্ঞ পুরুষ হতে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় ইত্যাদি বর্ণ চতুষ্টয় ও অন্তরিক্ষ ইত্যাদি লোকত্রয় সৃষ্টি করেন) ৷ ৩৷৷

(পুর্বে যে পুরুষ হতে ব্রাহ্মণ ইত্যাদির সৃষ্টি কথিত হয়েছে, এইবার তার সৃষ্টি সম্পর্কে কথিত হচ্ছে)।–সৃষ্টির আদিতে (অগ্রে) বিবিধ রাজান্ত বস্তু নিয়ে যাতে সন্নিবিষ্ট ছিল, সেই বিরাট (বিরা) নামক (ব্রহ্মাণ্ডরূপ দেহধারী) পুরুষ সম্ভবিত হয়েছিলেন। (সহস্রবাহুঃ পুরুষঃ ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা উপবর্ণিত আদিপুরুষ বা মহাপুরুষ হতে বিরাট-সংজ্ঞক পুরুষের উৎপত্তি)। সেই বিরাট-পুরুষ হতে অতিরিক্ত পুরুষের উৎপত্তি (অত্যরিচ্যত)। তিনিই যজ্ঞাত্মা-পুরুষ। তিনি জাতমাত্র এই ভূমি ইত্যাদি লোকসমূহে প্রথমে (পুরঃ) ব্যাপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন এবং পরে (পশ্চাৎ) জীবসমূহের দেহ রচনা করেছিলেন। ৪

সাধ্য নামক দেবগণ (দেবাঃ) যখন অশ্বরূপের দ্বারা বা পুরুষরূপ হবির দ্বারা (পুরুষেণ হবিষা) যজ্ঞ করেছিলেন (অতন্বত) তখন বসন্ত (অর্থাৎ রসের উৎপাদক ঋতু) স্বমহিমায় এই যজ্ঞের (অস্য) আজ্য হয়েছিল, গ্রীষ্ম (অর্থাৎ শোষক ঋতু) ই (অর্থাৎ অগ্নিসমিন্ধন-সাধনভূত একবিংশতি দারুময়াত্মক পদার্থ) হয়েছিল; শরৎ (ওষধিসমূহের পক্ককালরূপ ঋতু) যজ্ঞিয় চরু-পুরোডাশ ইত্যাদি হবিরূপ হয়েছিল। (পুরুষরূপ হবিঃ অর্থে অশ্বমেধ যজ্ঞের হবিঃ অথবা মুখ্য পুরুষ এবং পুরুষমেধে পশু) ॥ ৫॥

সৃষ্টি সাধনযোগ্য সাধ্য নামক দেবগণ ও বসুগণ (প্রাণসমূহ ও ইন্দ্রিয়সমূহের দেবগণ) সেই যাগযোগ্য (তং যজ্ঞং) পুরুষকে বা সৃষ্টির আদিতে জাত অশ্বভূত পুরুষকে বর্ষা (প্রাবৃষা) ঋতুর দ্বারা প্রোক্ষণ (প্রৌক্ষন) করেছিলেন। (বর্ষা ঋতুকে সেচনসাধন উদকরূপে সঙ্কল্প করেছিলেন, এটাই বক্তব্য–প্রাবৃটকালং প্রোক্ষণসাধনোদকরূপত্বেন সঙ্কল্পিতবন্ত ইত্যর্থঃ)। ৬।

(এইবার পশুসৃষ্টি বিষয়ে বলা হচ্ছে) সেই যজ্ঞাত্মন পুরুষ হতে অশ্ব জাত হয়েছিল (তস্মাৎ অশ্বাঃ অজায়ন্ত) এবং অব্যতিরিক্ত গর্দভ ও অশ্বতর (যে কে চ) এবং উভদন্তশালী (উভয়াদঃ) অর্থাৎ উধ্ব ও অধোভাগে দন্তপাটী-সমন্বিত প্রাণীগণ উৎপত্তি লাভ করেছিল। সেই যজ্ঞপুরুষ হতে (তস্মাৎ) গাভীগণ প্রাদুর্ভূত হয়েছিল (গাবো হ জজ্ঞিরে) এবং তার হতেই জাত হয়েছিল ছাগ, মেষ ইত্যাদি (তস্মাৎ জাতাঃ অজাবয়ঃ)। ৭।

আশ্বমেধিকের সর্বহুত (অর্থাৎ সর্বাঙ্গই হোমযোগ্য, এমন) অশ্বভূত সেই যজ্ঞ-পুরুষ হতে পাদবদ্ধ মন্ত্ররাশি (ঋচঃ বা ঋ-বেদ) ও গীতিমূলক মন্ত্রাবলী (সামানি বা সামবেদ) প্রাদুর্ভূত হয়েছিল। সেই দেবপুরুষ হতে ঋক ইত্যাদির অধিষ্ঠান স্বরূপ ছন্দসমূহ প্রাদুর্ভূত হয়েছিল এবং তার হতেই (তস্মাৎ) এশ্লিষ্ট-পাঠাত্মক মন্ত্র সমুদয় (যজুর্বেদ) জাত হয়েছিল (অজায়ত! ৮

সেই সর্বহুত (অর্থাৎ আশ্বমেধিকের অশ্বভূত যজ্ঞপুরুষ) হতে সম্পাদিত (সস্তৃতং) যা কিছু দ্রব্যজাত সৃষ্ট হয়েছিল, সেগুলি পৃষদাজ্য নামে অভিহিত হয়। সেই সাধ্য নামক বায়ুদেবগণ (বায়ব্যা) আরণ্য (দ্বিখুর, পদ, পক্ষী, সরীসৃপ, হস্তি, মর্কট ইত্যাদি ও আরও বহুরকমের অরণ্যচরী) পশুগণকে এবং গ্রাম্য (গো, অশ্ব, অজ, অবি, গর্দভ, উষ্ট্র ও আরও বহুরকমের গ্রামোব) পশুদের সমূহরূপে (পশূন তান চক্রে উৎপন্ন করেছিলে। ৯।

 সাধ্য দেবগণ যখন অশ্বমেধ বা পুরুষমেধ যজ্ঞ করেছিলেন (তন্বনাঃ), তখন সেই যজ্ঞে পুরুষ পশু অথবা অশ্বভূত মুখ্য পুরুষকে যুপে বদ্ধ করেছিলেন (অব)। সেই সময়ে তারা (অর্থাৎ সাধ্য নামক দেবগণ) যজ্ঞের সপ্তসংখ্যক ছন্দ (গায়ত্রী ইত্যাদি), একবিংশতি সংখ্যক পরিধি (ত্রিঃ সপ্ত পরিধয়ঃ) এবং সমিধ সম্পাদন করেছিলেন ॥ ১০৷৷

[সকল যজ্ঞের সোমসাধ্যত্বের জন্য এই যজ্ঞেও পরম্পরাগত ভাবে সোমের সম্বন্ধ দর্শাবার উদ্দেশে এই শেষ মন্ত্রে সোমের স্তুতি করা হচ্ছে]–সেই যজ্ঞাত্মন বা বিরাট পুরুষ হতে (পুরুষাৎ অধি) নিষ্পন্ন (জাতস্য) সোম রাজার (সোমস্য রাজ্ঞ) একোনপঞ্চাশ সংখ্যক (সপ্ত সপ্ততীঃ–সপ্তগুণিতাঃ সপ্ততয়ঃ) কিরণরাশি (অংশবঃ) নহৎ (বৃহতঃ) দ্যোতনাত্মকের (দেবস্য) (অর্থাৎ সহস্রবাহু পুরুষ ইত্যদির দ্বারা নিরূপিত আদি পুরুষের) মস্তক হতে (মুধুঃ) উদ্ভুত (অজায়ন্ত)। [এই মন্ত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে–সোম দুরকমের-লতারূপ ও দেবতারূপ (বল্লীরূপো দেবতারূপশ্চেতি)। এর মধ্যে লতারূপ সোমের সংখ্যা প্রকৃতি-বিকৃতি ভেদে নানা (প্রকৃতিবিকৃত্যাদিভেদেন নানাসংখ্যাকা)। ইত্যাদি। দ্যুলোকে কলারূপ সোমের একোনপঞ্চাশ (৪৯) সংখ্যক কিরণ নিষ্পন্ন হয়। পক্ষান্তরে সূর্যের সহস্ৰকিরণ, কিন্তু সোমের চারিশত নব্বই (৪৯০) সংখ্যক (দশোনপঞ্চশতসংখ্যাকা) কিরণ আদিপুরুষের মস্তক হতে উৎপন্ন হয়েছে] ৷ ১১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ব্রাহ্মণণাস্য মুখং আসীৎ ইতি সূক্তস্য পুরুষমেছে উৎসৃজ্যমানপুরুষপশ্বনু মন্ত্রণে শনৈশ্চরগ্রহদেবত্যহবিরাজ্যহামে চ পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ ৷৷(১৯কা, ১অ. ৭সূ.)।

টীকা –এই সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্বসূক্তে উল্লিখিত হয়েছে। পুরুষমেধে উৎসর্গীকৃত পুরুষপশুর অনুমন্ত্রণে ও শনৈশ্চর গ্রহদেবতার হবিরাজ্য হোমে এই সূক্ত-মন্ত্রগুলি পূর্বসূক্তের সাথে বিশেষভাবে বিনিয়োগ হয়।উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রটিতে যজ্ঞাত্মক পুরুষের মুখ হতে ব্রাহ্মণ বর্ণের উদ্ভব ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। ঐ মন্ত্রে তাঁর পাদদ্বয় হতে শূদ্র-বর্ণের উদ্ভব প্রসঙ্গে অনেকেই শূদ্রবর্ণের প্রতি ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অবজ্ঞা সূচিত হয়েছে বলে মনে করেন। ব্যাপারটি আদৌ তা নয়। আমরা যজুর্বেদে সমপর্যায়ভুক্ত মন্ত্রের বিশ্লেষণে দেখিয়েছি যে, আপন শ্রমের দ্বারা বিশাল সমাজকে সেবাদ্বারা বহন করার যোগ্যতার কারণে বিরাট পুরুষের পাদদ্বয় হতে শূদ্র-বর্ণীয়দের উৎপত্তি স্বীকার করা হয়েছে। মানবদেহকে বহন ও চালিত কন্তু সামর্থ্য একমাত্র পাদযুগলেরই আছে। এতে অবমাননার পরিবর্তে সুখ্যাতিই পরিলক্ষিত হয়। (১৯কা, ১অ ৭সূ.)।

.

অষ্টম সূক্ত : নক্ষত্রাণি

 [ঋষি : গার্গ্য দেবতা : নক্ষত্র সমুদয় ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভুরিক]

 চিত্রাণি সাকং দিবি রোচনানি সরীসৃপাণি ভুবনে জবানি। তুর্মিশং সুমতিমিচ্ছমানো অহানি গীর্ভিঃ সপর্যামি নাকম ১সুহবমগ্নে কৃর্তিকা রোহণী চাস্তু ভদ্রং মৃগশিরঃ শমাদ্রা। পুনর্বসূ সূতা চারু পুষ্যো ভানুরাশ্লেষা অয়নং মঘা মে। ২। পুণ্যং পূর্বা ফন্তুন্যৌ চাত্র হস্তশ্চিত্ৰা শিবা স্বাতি সুখখা মে অস্তু। রাধে বিশাখে সুহবানুরাধা জ্যেষ্ঠা সুনক্ষত্ৰমরিষ্ট মূলম্ ॥ ৩৷৷ অন্নং পূর্বা রাসতাং মে অষাঢ়া ঊর্জং দেবত্তরা আ বহন্তু। অভিজিন্মে রাজতাং পুণ্যমেব শ্রবণঃ বিষ্ঠাঃ কুর্বতাং সুপুষ্টিম ॥৪॥ আ মে মহচ্ছতভিষ বরীয় আ মে দ্বয়া প্রোপদা সুশর্ম। আ রেবতী চাশ্চযুজৌ ভগং ম আ মে রয়িং ভরণ্য আ বহন্তু ॥৫॥

 বঙ্গানুবাদ –নানা রূপশালী বা বর্ণ-বিশিষ্ট (চিত্রাণি) যে নক্ষত্র সমুদায় দ্যোতমান স্বর্গের সাথে (দিবি সাকং) দীপ্যমান (রোচনানি), যারা অন্তরিক্ষে পুনঃপুনঃ আবর্তমান (ভুবনে সরীসৃপানি জবানি), সেই স্বর্গলোকে (নাক–সুখদুঃখহীন লোকে) অবস্থিত নক্ষত্ররাজির উদ্দেশে (অহানি) স্তুতিরূপ বাক্যের দ্বারা বা মন্ত্ৰকৃত হবির দ্বারা পরিচর‍্যা করছি (গীর্ভি সপর্যামি)। (কিজন্য? কেননা) আমরা নক্ষত্রগুলির হিংসানিবারণী বা দুঃখনাশিনী অনুগ্রহবুদ্ধির জন্য কাময়মান হয়েছি (তুর্মিশং সুমতিম্ ইচ্ছমানঃ)। (এইভাবে এই মন্ত্রে সকল নক্ষত্রসঙ্রে উদ্দেশে প্রার্থনা প্রজ্ঞাপিত হয়েছে। অতঃপর পরবর্তী চারটি মন্ত্রে কৃত্তিকা ইত্যাদি প্রত্যেক নক্ষত্রের উদ্দেশে প্রার্থনা করা হচ্ছে)। ১।

 হে অগ্নি! কৃত্তিকা (অশ্বিনী ইত্যাদি সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের তৃতীয় নক্ষত্র কৃত্তিকার আগ্নেয়ত্বের কারণে অগ্নি সম্বোধন) আমাদের সুষ্ঠু আহ্বানের যোগ্যা হোক (সুহব অস্তু), (অর্থাৎ আপন দোষাংশ পরিত্যাগ পূর্বক আমাদের অনুকূল হোক)। হে প্রজাপতি দেবতা! রোহিণী (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের চতুর্থ নক্ষত্র রোহিণীর অধিপতি প্রজাপতি দেবতা হওয়ার কারণে প্রজাপতি সম্বোধন) আমাদের সুষ্ঠু আহ্বানের যোগ্যা হোক, (অর্থাৎ আপন দোষাংশ পরিত্যাগ পূর্বক আমাদের অনুকূলা হোক)। হে সোম! মৃগশিরা (মৃগের শিরের ন্যায় প্রতীয়মান পঞ্চম নক্ষত্রের অধিপতি সোম হওয়ার কারণে সোম সম্বোধন) আমাদের মঙ্গলপ্রদা (ভদ্রং) হোক। হে রুদ্র! আড্রা (ষষ্ঠ নক্ষত্র আদ্রার অধিপতি রুদ্র হওয়ার কারণে রুদ্র সম্বোধন) আমাদের সুখকারিণী (শং) হোক। হে অদিতি! পুনর্বসু (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের সপ্তম নক্ষত্র পুনর্বসুর অধিদেবতা অদিতি) আমাদের প্রিয়সত্যাত্মিকা (সুনৃতা) বা প্রদান করুক। হে পুষ্যা নক্ষত্রের অধিপতি বৃহস্পতি! (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের সপ্তম) পুষ্যানক্ষত্র আমাদের শ্রেয়ঃপ্রদা (চারু) হোক। হে অশ্লেষা নক্ষত্রের অধিপতি সর্পদেবতা! (নবম নক্ষত্র) অশ্লেষা আমাদের দীপ্তি (ভানুঃ) প্রদায়িকা হোক। হে পিতৃদেবগণ! মঘা (দশম নক্ষত্র মঘার অধিপতি পিতৃদেবগণ : হওয়ায় পিতৃদেবগণের উদ্দেশে সম্বোধন) আমার (মে) গন্তব্য স্থান (অয়নং) হোক ॥ ২॥

হে অর্যমা! পূর্বফনী নক্ষত্র (অশ্বিনী ইত্যাদি সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের অন্তর্গত একাদশ নক্ষত্র) আমাদের পুণ্যস্বরূপা (পুণ্যং) হোক। হে ভগদেব! উত্তরফল্গুনী নক্ষত্র (অশ্বিনী ইত্যাদি সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের দ্বাদশ নক্ষত্র) আমাদের পুণ্যস্বরূপা হোক। হে সবিতা (সাবিত্রঃ)! হস্তা (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের মধ্যে ত্রয়োদশ নক্ষত্র) আমাদের পুণ্যপ্রদা হোক। হে ইন্দ্র! (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের মধ্যে অন্যতম) চিত্রানক্ষত্র মঙ্গলকারিণী (শিবা) হোক। হে বায়ুদেব! স্বাতি নক্ষত্র আমার সুখস্বরূপ হোক (সুখো মে অস্তু)। হে ইন্দ্ররূপ অগ্নি! রাধা ও বিশাখাসংজ্ঞক একই নক্ষত্র আমাদের সুষ্ঠু আহ্বানের যোগ্য হোক (সুহবা)। হে মিত্রদেবতা! অনুরাধা (সপ্তদশ নক্ষত্র) সুষ্ঠু আহ্বান আহ্বান-যোগ্যা হোক। ইন্দ্রের জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রও আমার নিমিত্ত কল্যাণকারিণী হোক। অরিষ্টের নিদানভূত পিতৃদেবগণের মূলানক্ষত্র আমার শোভন-নক্ষত্র অর্থাৎ শ্রেয়ঃপ্রদা হোক, (অরিষ্টনিদানং মূলসংজ্ঞকং পিতৃদেবভ্য সনক্ষত্রং শোভননক্ষত্রং মম শ্রেয়ঃপ্রদ ভবতু) ৩

হে জলদেবতা! আপনাদের আধিপত্যাধীনা পূর্বাষাঢ়া (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের মধ্যে বিংশ নক্ষত্র) আমাকে সুভক্ষ্য অন্ন প্রদান করুক, (পূর্বাষাঢ়াঃ অব্দেবত্যা মে মহ্যং অনংরাসতাং)। হে বিশ্বদেবগণ! উত্তরাষাঢ়া (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের একবিংশতিতম নক্ষত্র) আমাদের অভিমুখে বলকারক অন্নরস (উর্জং) প্রেরণ করুক (আ বহন্তু)। হে ব্রহ্মদেব! অভিজয়সাধন অভিজিৎ (খগোলকের দক্ষিণ দিকে নিরীক্ষিত নক্ষত্র) আমাকে পুণ্য প্রদান করুক (পুণ্যমেব রাসতাং)। হে বিষ্ণুদেবতা! আপনার শ্রবণা (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের দ্বাবিংশতম নক্ষত্র) ও হে বাসুদেবতা আপনাদের ধনিষ্ঠা বা বিষ্ঠা (ত্রয়োবিংশতিতম নক্ষত্র) আমাকে সুপুষ্টি অর্থাৎ পশু-পুত্র ইত্যাদির সাথে পালন করুক। হে ইন্দ্রদেবতা! শতবিশাখা অর্থাৎ শতভিষা নক্ষত্র (যেটি সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের চতুর্বিংশতম) আমার নিমিত্ত প্রভূত (বরীয়ঃ) ফল (অর্থাৎ পুণ্যফল) বহন করুক (আ বহৎ)। হে অজৈকপাদ দেবতা! আপনার পূর্বভাদ্রপদা (সপ্তবিংশতি নক্ষত্রের মধ্যে পঞ্চবিংশতম নক্ষত্র) এবং হে অহিব্রপ্ন দেবতা! আপনার উত্তরভাদ্রপদা (ষড়বিংশতম নক্ষত্র) আমার নিমিত্ত সুশৰ্ম অর্থাৎ শোভন সুখ বা গৃহ বহন করুক (আ বহৎ)। হে পূষা দেবতা! আপনার রেবতী নক্ষত্র এবং অশ্বিদেবতাযুগলের অশ্বিনী নক্ষত্র (অশ্বযুজ) আমার নিমিত্ত সৌভাগ্য (ভগং) বহন করুক! হে যমদেব! ভরণী (দ্বিতীয় নক্ষত্র) আমাকে ধনৈশ্বর্যে প্রতিষ্ঠিত করুক ॥ ৫॥

 সূক্তস্য বিনিয়োগ— চিত্রাণি সাকং ইতি যানি নক্ষত্রাণি ইতি সূক্তয়োনক্ষত্রদেবতাজহোমে তদ্ধবিহোমে চ বিনিয়োগঃ…ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ১অ. ৮সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্ত ও পরবর্তী সূক্ত নক্ষত্রদেবতার আজহোমে বিনিযুক্ত হয়। নক্ষত্র কল্পে (১ ও ৬) এর উপচার বলা হয়েছে–যেমন, কৃত্তিকার জন্য ঘৃত, অশ্বিনীর নিমিত্ত ক্ষীরিবৃক্ষাঙ্কুরা, ভরণীর জন্য ঘৃত ও মধুমিশ্রিত কৃষ্ণতিল ইত্যাদি। নক্ষত্র কল্পে (১২) এই সম্পর্কে আরও তথ্য সন্নিবিষ্ট আছে ৷ (১৯কা, ১অ. ৮সূ.)।

.

নবম সূক্ত : নক্ষত্রাণি

[ঋষি : গার্গ্য দেবতা : নক্ষত্র সমুদায় ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

যানি নক্ষত্রাণি দিব্যন্তরিক্ষে অষ্ণু ভূমৌ যানি নগেষু দিক্ষু। প্রকল্পয়ংশ্চন্দ্রমা যান্যেতি সর্বাণি মমৈতানি শিবানি সন্তু ॥১॥ অষ্টাবিংশানি শিবানি শগ্লানি সহ যোগং ভজন্তু মে। যোগং প্র পদ্যে ক্ষেমং চ ক্ষেমং প্র পদ্যে যোগং চ নমোহহোরাত্ৰাভ্যামস্তু৷৷ ২৷৷ স্বস্তিতং মে সুপ্রাতঃ সুসায়ং সুদিবং সুমৃগং সুশকুনং মে অস্তু। সুহবমগ্নে স্বস্ত্যমর্তং গত্বা পুনরায়াভিনন্দন্ ॥ ৩, অনুহবং পরিহবং পরিবাদং পরিক্ষব। সর্বৈর্মে রিক্তকুম্ভান্ পরা তাসবিতঃ সুব॥৪॥ অপপাপং পরিক্ষবং পুণ্যং ভক্ষীমহি ক্ষম। শিবা তে পাপ নাসিকাং পুণ্যগশ্চাভি মেহতাম ৷৷ ৫৷৷ ইমা যা ব্ৰহ্মণপতে বিমূচীর্বাত ঈরতে। সচীরিন্দ্র তাঃ কৃত্বা মহ্যং শিবতমাস্কৃধি ॥ ৬। স্বস্তি নো অস্তৃভয়ং নো অস্তু নমোহোরাত্ৰাভ্যামস্তু ॥৭॥

 বঙ্গানুবাদ— যে নক্ষত্রসমূহকে আকাশ (দিবি), মধ্যলোকে (অন্তরিক্ষে), জলে (অ), পৃথিবীতে (ভূমৌ), পর্বতে (নগেষু) এবং দিকসমূহে দেখা যায়, এবং চন্দ্রমা যে নক্ষত্রগুলিকে প্রকর্ষের দ্বারা প্রদীপ্ত করে প্রকট হয়ে আসেন (প্রকল্পয়ন্ চন্দ্রমা), সেই সকল নক্ষত্রই (যানি এতি সর্বাণি) আমার সুখকর হোক (মম শিবানি সন্তু) ॥১॥

সুখদর্শন ও সুখপ্রদ (শিবানি শশ্মানি) অষ্টাবিংশতি সংখ্যক নক্ষত্রসমূহ আমাকে ফল দানের নিমিত্ত ঐকমত্য প্রাপ্ত হোক (সহ যোগং ভজন্তু মে)। আমি তাদের সহযোগে (যোগং) যেন অলভ্যবস্তু-প্রাপ্তিরূপ যোগ ও লব্ধবস্তুর পরিপালনরূপ ক্ষেম প্রাপ্ত হতে পারি (প্র পদ্যে যোগং চেতি)। দিবা ও রাত্রির উদ্দেশে নমস্কার (নমঃ অহোরাত্রাভ্যাম অস্তু)। (দিবা রাত্রে নক্ষত্রসমূহের সঞ্চার ঘটে; সুতরাং তাদের আনুকূল্য করণের নিমিত্ত দিবা ও রাত্রির উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করা হয়েছে। বস্তুতঃ, নভোমণ্ডলে দিবারাত্ৰব্যাপী নক্ষত্রসঞ্চারের ফলেই রাশিচক্রে তার প্রভাবে ভালো-মন্দ ঘটে থাকে) ॥ ২॥

প্রাতঃকালগুলি সুকারিত্বের দ্বারা সমৃদ্ধ হোক, (অর্থাৎ আমাদের শোভন সুখ প্রদান করুক) (সুপ্রাতঃ)। সায়ংকালগুলিও আমাদের সুখে সমৃদ্ধ হোক। আমাদের দিবা-রাত্র সুখ-সমৃদ্ধ হোক (দিবং–অহোরাত্রপরঃ)। মৃগগণ ও পক্ষীগণ সুখ-সমৃদ্ধ হোক (সুমৃগং সুশকুনং মে অস্তু), (অর্থাৎ অনুকূল নক্ষত্রে গমনকারী আমার ভাবিফলসূচকত্বের নিমিত্ত মৃগ ইত্যাদি পশুগণ ও কাক ইত্যাদি পক্ষীগণ অনুকূলগতিচেষ্টাযুক্ত হোক)। (এইভাবে নক্ষত্রগুলির দ্বারা সুখসমৃদ্ধি প্রাপ্তির ইচ্ছায় নক্ষত্রাধিপতি দেবতার নিকট প্রার্থনা জ্ঞাপিত হচ্ছে)–হে অগ্নি! (কৃত্তিকানক্ষত্রের দেবতা অগ্নিকে উপলক্ষ করে সকল নক্ষত্রদেবতাকেই সম্বোধন) সুষ্ঠু আহ্বানযোগ্য (সুহব) অমরণধর্মা (অমর্তং) লোকে (দ্যুলোকে) ক্ষেমের দ্বারা গমন করে হবিপ্রদাতৃ হয়ে পুনরায় আমাদের হৃষ্ট করণের নিমিত্ত আগমন করো (অভিনন্দন্ পুনঃ আয়)।–অথবা (কেবল অগ্নিকেই সম্বোধন)–হে অগ্নি! সুষ্ঠু হবিঃ (সুহবং) (অর্থাৎ যথাযথ দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত হবিঃ) অমরণধর্মা (অমর্তং) অর্থাৎ সেই সেই অমর নক্ষত্রদেবতার নিকট ক্ষেমের সাথে গমন পূর্বক (স্বস্তি) অর্থাৎ সেই সেই হবিঃ (প্রেরণ পূর্বক) পুনরায় আমাদের হৃষ্ট করার নিমিত্ত আগমন করো (পুনঃ আয় অভিনন্দ) ৩

(অনুকূল নক্ষত্রে ধনার্থে গমনকারী পুরুষের ভাবী কার্য-প্রতিবন্ধকগুলি নিবাবণের নিমিত্ত আশা করা হচ্ছে)–হে সবিতাদেব! সম্মুখগামী পুরুষের নাম গ্রহণপূর্বক পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত পুরুষের দ্বারা আহ্বান (অনুহবং–পিছুডাক), পার্শ্বদ্বয়, হতে আহ্বান (পরিহবঃ), পরুষ অর্থাৎ কর্কশ ভাষণ (পবিবাদং), সর্বতঃ হাঁচি (পরিক্ষব) বা হাঁচিবর্জন, শূন্য কলস (রিক্তকুম্ভা), ইত্যাদি দুর্নিমিত্ত দোষসমূহ (তান) সকল নক্ষত্রদেবের সাথে (সর্বৈঃ) আপনি কার্যার্থে গমনকারী আমার দূর করুন (মে পরা সুব) ॥ ৪৷

(এখানেও দুর্নিমিত্তদোষ পরিহারের আশা করা হচ্ছে)–অহিত-নিমিত্ত পরিক্ষব (ক্ষতিকারক হাঁচি) আমি যেন পরিহার করতে পা; কেবল অহিতনিবারণই নয়, পরন্তু দুর্নিমিত্তরূপ ক্ষুতের (হাঁচির) শ্রেয়স্করতা যেন লাভ করতে পারি (পুণ্যং ভক্ষীমহি)। (পরবর্তী অর্ধাংশ ঋত্বিক বচন)-ধনাৰ্থে গমনকারী হে পুরুষ! তোমার গমন পথে শৃগালগমন বা শৃগালদর্শন বা বিরুদ্ধ শব্দায়মান শৃগাল (শিবা) তোমার দুর্নিমিত্তদোষনিবারক (পাপ নাসিকাং) হোক। তথা নপুংসক, পুরুষের (পণ্ডকঃ) দর্শন-স্পর্শন ইত্যাদি (অশুভ ব্যাপার) পরিহার করে তোমার কার্যসিদ্ধানুকূল হোক ৫

হে ব্ৰহ্মণস্পতি! (পরবর্তী অর্ধাংশে ইন্দ্র নির্দেশ করা হয়েছে, এইটি তারই বিশেষণ। ব্ৰহ্মণঃ অর্থে মন্ত্রসঙ্রে এবং পতি অর্থে স্বামী-সৰ্বৰ্মন্ত্রের প্রতিপাদ্য ইন্দ্র)। এই পরিদৃশ্যমান (ইমাঃ) পূর্ব ইত্যাদি দিকে (যাঃ) বাত্যারূপ বায়ু (বাতঃ) দিক-বিদিকশূন্য হয়ে পরিভ্রমণ করছে (বিষুচীঃ ঈরতে) (অর্থাৎ ঝঞ্ঝাবাতে সব দিক অন্ধকারে আচ্ছন্ন একাকার হয়ে যাচ্ছে),৬

 হে ইন্দ্র! তাদের (তা) যথাস্থিত-প্রদেশে অবস্থায়িনী করে (সস্ত্রীচীঃ কৃত্বা) আমার নিমিত্ত (মহ্যং) অত্যধিক সুখকারিণী করো (শিবতমাঃ কৃধি)। আমাদের অবিনাশী মঙ্গল হোক (নঃ স্বস্তি অস্তু), আমাদের ভয়রাহিত্য হোক (নঃ অভয়ং অস্তু), দিবা ও রাত্রিকে নমস্কার (নমঃ অহোরাত্রাভ্যাম্ অস্তু)। (এই মন্ত্রটি যজুঃরূপে পঠনীয়) ৭

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যানি নক্ষত্রাণি (ইতি) সূক্তস্য নক্ষত্ৰহোমে পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ৷৷ (১৯কা, ১অ. ৯সূ.)৷৷

.

 দশম সূক্ত : শান্তিঃ

[ঋষি : শন্ততি দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : বৃহতী, অনুষ্টুপ প্রভৃতি ]

শান্তা দৌঃ শান্তা পৃথিবী শান্তমিদমুবন্তরিক্ষম। শান্তা উন্বতীরাপঃ শান্তা নঃ সন্তোষধীঃ ॥১॥ শান্তানি পূর্বরূপাণি শান্তাং নো অস্তু কৃতাকৃত। শান্তং ভূতং চ ভব্যং চ সর্বমেব শমস্তু নঃ ॥ ২॥ ইয়ং যা পরমেষ্ঠিনী বাগ দেবী ব্রহ্মসংশিতা। যয়েব সসৃজে ঘোরং তয়ৈব শান্তিরস্তু নঃ ॥ ৩॥ ইদং যৎ পরমেণ্ঠিনং মনো বাং ব্রহ্মসংশিত। যেনৈব সসৃজে ঘোরং তেনৈব শান্তিরস্তু নঃ ॥ ৪৷৷ ইমানি যানি পঞ্চেন্দ্রিয়াণি মনঃষষ্ঠানি মে হৃদি ব্ৰহ্মণা সংশিনি। যৈরেব সসৃজে ঘোরং তৈরেব শান্তিরস্তু নঃ ॥ ৫শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং বিষ্ণুঃ শং প্রজাপতিঃ। শং ন ইন্দ্রো বৃহস্পতিঃ শং নো ভবত্বমা ॥ ৬৷ শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ শং বিবস্বাংছমন্তকঃ। উৎপাতাঃ পার্থিবান্তরিক্ষাঃ শং নো দিবিচরা গ্রহাঃ ॥৭॥ শং নো ভূমিরেপ্যমানা শমুল্কা নিৰ্হতং চ যৎ। শং গাবো লোহিতক্ষীরাঃ শং ভূমিরব তীর্যতীঃ ॥ ৮নক্ষত্রমুল্কাভিহতং শমস্তু নঃ শং নোহভিচারাঃ শমু সন্তু কৃত্যাঃ। শং নো নিখাতা বল্লাঃ শমুল্কা দেশোপসৰ্গাঃ শমু নো ভবন্তু ॥৯৷৷ শং নো গ্রহাশ্চান্দ্রমসাঃ শমাদিত্যশ্চ রাহুণা। শং নো মৃত্যুধূমকেতুঃ শং রুদ্রাস্তিৰ্গতেজসঃ ॥১০৷ শংরুদ্রাঃ শং বসবঃ শমাদিত্যাঃ শমগ্নয়ঃ। শং নো মহর্ষয়ো দেবাঃ শং দেবাঃ শং বৃহস্পতিঃ ॥১১। ব্ৰহ্ম প্রজাপতির্ধাতা লোকা বেদাঃ সপ্তঋষয়য়াহগ্নয়ঃ। তৈর্মে কৃতং স্বস্ত্যয়নমিন্দ্রো মে শৰ্ম যচ্ছতু ব্রহ্মা মে শৰ্ম যচ্ছতু। বিশ্বে মে দেবাঃ শৰ্ম যচ্ছন্তু সর্বে মে দেবাঃ শৰ্ম যচ্ছ ৷ ১২৷৷ যানি কানি চিচ্ছান্তানি লোকে সপ্তঋষয়ো বিদুঃ। সর্বাণি শং ভবন্তু মে শং মে অস্কৃভয়ং মে অস্তু ॥১৩৷৷ পৃথিবী শান্তিরন্তরিক্ষং শান্তির্দেীঃ শান্তিরাপঃ শান্তিরোষধয়ঃ। শান্তির্বর্নম্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বে মে দেবাঃ শান্তিঃ সর্বে মে দেবাঃ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিভিঃ। তাভিঃ শান্তিভিঃ সর্ব শান্তিভিঃ শময়ানমোহহং যদিহ ঘোরং যদিহ রং যদিহ পাপং তচ্ছান্তং তম্বিং সর্বমেব শমন্তু নঃ ॥১৪৷৷

 বঙ্গানুবাদ — (এই সূক্তে সর্বতঃ শান্তি প্রতিপাদিত হচ্ছে। শান্তি অর্থে অনিষ্ট পরিহারের দ্বারা সুখকারিরূপতা। এখানে শান্তিকারী পদার্থবিশেষ দ্যুলোক ইত্যাদি)–আপন কারণে উৎপন্ন দোষাবলী বা উপদ্রবসমূহকে শমন বা দমন করে দুলোক শান্ত হোক, অর্থাৎ আমাদের সুখ প্রদান করুক (শান্তা দ্যৌঃ); পৃথিবী অর্থাৎ এই প্রথিতা ভূমি শান্ত হোক, অর্থাৎ আমাদের সুখ প্রদান করুক (শান্তা পৃথিবী); এই পরিদৃশ্যমান বিস্তীর্ণ (ইদং উরু) অন্তরিক্ষ বা মধ্যমলোক শান্ত হোক, অর্থাৎ আমাদের সুখ প্রদান করুক (শান্তম্ অন্তরিক্ষম); সমুদ্র শান্ত হোক, অর্থাৎ সুখ-প্রদান করুক (শান্তা উন্বতী), জলসমূহ শান্ত হোক, অর্থাৎ আমাদের সুখ প্রদান করুক (তা আপঃ শান্তা সন্তু) এবং ওষধিসমূহ শান্ত হোক, অর্থাৎ আমাদের সুখ প্রদান করুক (নঃ সন্তু ওষধীঃ)। ১৷

কারণাবস্থাপন্ন বস্তু নিয়ে (পূর্বরূপাণি–কার্যাপেক্ষয়া পূর্বরূপাণি), কৃত অর্থাৎ কার্যজাত ও অকৃত অর্থাৎ অনিষ্পন্ন নিত্যকর্মগুলি (কৃতাকৃতম) আমার নিমিত্ত শান্ত হোক (শান্তং নো অস্তু)–অথবা–আমার দুষ্কৃতফলভূত প্রাক্তন জন্মসমূহ (মদীয়ানি পূর্বাণি রূপাণি প্রাক্তনানি জন্মানি) শান্ত হোক (শান্তানি সন্তু)। (পূর্বজন্মের কর্মফলের মধ্যে যা কিছু অনিষ্টকর, অর্থাৎ তির্যক ইত্যাদি যোনীতে জন্মভোগ, পরিহারের নিমিত্ত শান্তির প্রার্থনা করা হচ্ছে)। আমার অতীত জন্মের বা কালের যা কিছু অনিষ্ট, তা শান্ত হোক (শান্তং ভূতং); আমার ভাবী জন্মের বা কালের যা কিছু অনিষ্ট, তা শান্ত, হোক (শান্তং ভব্যং)। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ–এই কালক্ৰয়াবচ্ছিন্ন উক্ত (কথিত) ও অনুক্ত (অকথিত) সব কিছু দোষ শমিত হোক (সবর্ম) এব শমস্তু নঃ), (অর্থাৎ সুখপ্রদায়ক হোক)। ২।

পরম স্থানের নিবাসিনী বা পরমেষ্ঠি ব্রহ্মার পত্নী (পরমেষ্ঠিনী), ব্রহ্মমন্ত্রে সম্যক উত্তেজিতা অর্থাৎ সকল বৈদিক বাক্যের প্রতিপাদিস্বরূপা (ব্রহ্মসংশিতা) এই যে স্বাত্মভূতের দ্বারা সম্যক্ অনুভূয়মানা (ইয়ং যা) বাক্‌-দেবী, তার দ্বারা শাপ ইত্যাদি রূপ যে ক্লেশদায়ক বাক্য সৃষ্ট হয়, (যয়ৈব সসৃজে ঘোরং) সেই বাক্যের দ্বারাই আমাদের শান্তি হোক (তয়ৈব শান্তিঃ অস্তু নঃ)। (অর্থাৎ তার যে বাক্যের দ্বারা অনিষ্ট উৎপন্ন হয়েছে, তিনিই তার স্বকৃত অনিষ্ট পরিহার করুন–এটাই বক্তব্য)। ৩।

পরম উৎকৃষ্ট স্থানে নিবাসকারী (পরমেষ্ঠিনং) যে ব্রহ্মার দ্বারা সৃষ্টি বিষয়ে তীক্ষীকৃত (ব্রহ্মসংশিতং) সর্বজগতের মূল কারণরূপ যে মন বিদ্যমান, যে মনের দ্বারা ঘোর বা নিদারুণ অনিষ্টকর কর্মসমূহের সৃষ্টি হয়েছে (সসৃজে), সেই মনের দ্বারাই আমাদের মনে উৎপন্ন অনিষ্ট-কর্মসমূহের শান্তি হোক (তেনৈব শান্তিঃ অস্তু নঃ) ॥ ৪

যষ্ঠেন্দ্রিয় মনের সাথে (মনঃষষ্ঠানি) যে পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় (ইমানি যানি পঞ্চ ইন্দ্রিয়াণি–অর্থাৎ চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা-জিহ্বা-ত্বক) আমাদের হৃদয়প্রদেশে স্থিত আছে, (হৃদয়ই হলো আত্মনিবাসের স্থান; সুষুপ্তিকালে আপন আপন কারণরহিত সকল ইন্দ্রিয় আত্মায় লীন হয়–এটাই হৃদি শব্দের তাৎপর্য); যে ইন্দ্রিয়সমূহ চেতন আত্মার দ্বারা (ব্ৰহ্মণা) আপন আপন ব্যাপারে অর্থাৎ বিষয়-প্রবণত্বের কারণে নিয়ন্ত্রিত হয় (সংশিনি), যে ইন্দ্রিয়সমূহের দ্বারা (যৈরেব) নিদারুণ পাপাবহ কর্ম সৃষ্টি হয়েছে (ঘোরং সসৃজে), (অর্থাৎ আমাদের ইন্দ্রিয়গুলির দ্বারা আমরা যে-সকল অপরাধমূলক কার্য সাধিত করেছি), আমাদের ইন্দ্রিয়-সৃষ্ট সেই ঘোর কর্মসমূহের (তৈরেব) শমন হোক (শান্তিঃ অস্তু নঃ)।৫৷

 মিত্র (অর্থাৎ দিনের অভিমানী দেবতা সূর্য), বরুণ (রাত্রির অভিমানী দেবতা), বিষ্ণু (ব্যাপক দেবতা), প্রজাপতি (প্রকর্ষের সাথে জায়মান দেব-মনুষ্য ইত্যাদি প্রজার পালক), ইন্দ্র (পরমৈশ্বর্যসম্পন্ন দেবতা), বৃহস্পতি (বৃহতের অর্থাৎ বাক্যের বা দেবতাগণের পতি, যিনি হিতকারিত্বের দ্বারা পালন করেন) ও অৰ্যৰ্মদেবতা আমাদের পক্ষে শান্তিদায়ক হোন (শং, শান্ত্যৈ ভবন্তু)। (বাক্যভেদের জন্য শং পদের প্রতিবাক্যে প্রয়োগ হয়েছে)। ৬।

মিত্রদেব ও বরুণ দেবতা আমাদের শান্তি প্রদান করুন (শং নো মিত্রঃ শং বরুণঃ)। বিবস্বান অর্থাৎ সূর্যদেব (অন্ধকার নাশক দেবতা) ও অন্তক (সকল প্রাণীর অবসানকারী দেবতা) আমাদের শান্তি প্রদান করুন (শং বিবস্বান্ শং অন্তকঃ)। পৃথিবী ও অন্তরিক্ষে ঘটিতব্য উৎপাত সমূহ প্রশমিত হোক (উৎপাতাঃ পার্থিবা আন্তরিক্ষাঃ শম্)। দ্যুলোকে সঞ্চরণশীল গ্রহগণ (দিবিচরা গ্রহাঃ) আমাদের দোষশমকারী অর্থাৎ সুখকর হোক (শং নো) ॥ ৭।

কম্পমানা পৃথিবী আমাদের নিমিত্ত শান্তিকারিণী তোক (শং নো ভূমিঃ বেপ্যমানা); (অথবা–প্রাণীসংহারক কালের দ্বারা কম্প্যমানা সেই ভূমি আমাদের কম্পদোষ পরিহারের নিমিত্ত হোক)। উল্কার দ্বারা (আয়ত জ্বালারূপে আকাশ হতে পতিত অগ্নিপিণ্ডে) দগ্ধীভূত যা কিছু (উল্কা নিঃহত চ যৎ) তা শান্তিপ্রদ হোক (তচ্চ শং অস্তু)। লোহিতের ন্যায় দুগ্ধদাত্রী গাভীগণ দোষশূন্যা বা মঙ্গলপ্রদা হোক (শং গাবঃ লোহিতক্ষীরাঃ); (অর্থাৎ আমাদের যে পাপের কারণে গাভীগণের দুগ্ধ লোহিতময় হয়ে যাচ্ছে, সেই পাপের উপশম ঘটুক)। অবদীমানা ভূমি মঙ্গলদায়িনী হোক (শং ভবতু); (অর্থাৎ আমাদের যে দোষের কারণে ভূমিকম্পে ভূমি বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে বা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, সেই দোষের শান্তি হোক) ॥ ৮৷

 উল্কার দ্বারা অভিহত হয়ে আকাশ হতে পতিত নক্ষত্রসমূহ আমাদের শান্তিপ্রদ হোক (নক্ষত্রম্ উল্কা অভিহতম শং), (অর্থাৎ উপপ্লব বা উল্কাপাত ইত্যাদির উপদ্রব শান্ত হোক)। মারণার্থে শত্রুগণের ক্রিয়মাণ কর্মগুলি আমাদের শান্তিপ্রদ হোক (অভিচারাঃ শম), এবং সেই অভিচারকর্মের ফলে উৎপাদিত পিশাচীগণও উপদ্রব শমনের নিমিত্ত হোক (উম ইতি সন্তু কৃত্যাঃ)। ভূমিতে নিখাতিত বক্সাগুলি (অর্থাৎ অপরের পীড়াৰ্থে ভূমির নীচে এক বাহু সমান গর্তে নিখন্যমান অস্থি অস্থি-কেশ ইত্যাদি বেষ্টিত, বিষবৃক্ষ ইত্যাদির দ্বার নিমিত্ত পুত্তলীগুলি) আমাদের শান্তিকর হোক। (অর্থাৎ শত্রুর দ্বারা কৃত আমাদের ক্ষতিকর অভিচার কর্মগুলি যেন ব্যর্থ হয়ে আমাদের মঙ্গলকর হয়)। আকাশ হতে পতিত আয়তজ্বালা উল্কাদর্শনজনিত আমার নিজের পাপ ও জনপদে যত কিছু উপদ্রব শান্ত হোক, (শম্ উল্কাঃ দেশোপসৰ্গাঃ….ভবন্তু) ৯

চন্দ্রমণ্ডলের ভেদক বা সঙ্ক যে মঙ্গল ইত্যাদি গ্রহ আছে, সেগুলি আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোক, (শং নঃ গ্রহাঃ চান্দ্রমসাঃ)। এবং রাহু-গ্রহের দ্বারা গ্রস্ত সূর্য শান্তির নিমিত্ত হোক, (শম্ আদিত্যঃ চ রাহুণা)। তথা মৃত্যু অর্থাৎ মারক ধূমকেতুর অনিষ্টকর দোযাবলী দূর হয়ে তা আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোক (শং নঃ মৃত্যুঃ ধূমকেতুঃ), (অর্থাৎ শাস্ত্রে উল্লিখিত ধূমকেতুর উদয়ে বিশেষ অনিষ্ট ঘটে থাকে; সুতরাং সেই অনিষ্ট বিনষ্ট হয়ে বরং মঙ্গলপ্রদ হয়ে ওঠে)। তীক্ষ্ণতেজঃ-সম্পন্ন রুদ্র নামক দেবগণ আপন তেজের সন্তাপক-উপদ্রব পরিহার করে মঙ্গল সাধিত করুন, (শ রুদ্রাঃ তিগৃতেজসঃ) ১০

রুদ্রগণ (রুদ্রাঃ) (অর্থাৎ অজৈকপাদ, অহিব্রধ, বিরুপাক্ষ, সুরেশ্বর, জয়ন্ত, বহুরূপ, এ্যম্বক, অপরাজিত, বৈবস্বত, সাবিত্র ও হর–এই একাদশ রুদ্র) শান্তির নিমিত্ত হোন (শং)। বসুগণ (বসবঃ) (অর্থাৎ ভব, ধ্রুব, সোম, বিষ্ণু অনল, অনিল, প্রভূষ ও প্রভব–এই অষ্ট গণদেবতা) শান্তির নিমিত্ত হোন, (শং)। আদিত্যগণ (আদিত্যাঃ) (অর্থাৎ ধাতা, মিত্র, অর্যমা, রুদ্র, বরুণ, সূর্য, ভগ, বিবস্বান, পূষা, সবিতা, ত্বষ্টা ও বিষ্ণু–এই দ্বাদশ আদিত্য) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শ)। অগ্নিগণ (অগ্নয়ঃ) (অর্থাৎ দক্ষিণ, গার্হপত্য, আহবনীয়, সত্য ও আবসথ্য–এই পঞ্চ অগ্নি) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শ)। দ্যোতমান তেজোরূপা মহর্ষিগণ (মহর্ষয়ে দেবাঃ) (অর্থাৎ মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ঠ–এই সপ্ত ঋষি) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শং নো)। দেবতাগণ (দেবাঃ) (অর্থাৎ ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাগণ আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শং)। বৃহস্পতি (অর্থাৎ দেবগণের পুরোহিত বা গুরু) আমাদের শান্তির নিমিত্ত হোন (শ)। ১১ ॥

 ব্রহ্ম (অর্থাৎ দেশকালের অতীত সচ্চিদানন্দ-লক্ষণ পরম ব্রহ্ম), প্রজাপতি (অর্থাৎ প্রজাগণের পালক তথা সর্বনিয়ন্তা সর্বান্তর্যামী), ধাতা (অর্থাৎ সকলের ধারণকর্তা চতুর্মুখ ব্রহ্মা), লোকসমূহ (অর্থাৎ ভুঃ-ভুবঃ-স্বঃ-মহঃ-জন-তপঃ-সত্য-উপরিস্থ এই সাতটি লোক), বেদ সমুদায় (সাঙ্গ অর্থাৎ শিক্ষা-কল্প-ব্যাকরণ-নিরুত্তছন্দ ও জ্যোতিষ সহ বেদ চতুষ্টয়), সপ্ত-ঋষিবর্গ (অর্থাৎ মরীচি ইত্যাদি সপ্তর্ষিগণ) ও দক্ষিণাগ্নি ইত্যাদি অগ্নিবর্গ (অগ্নয়ঃ)–এঁরা সকলে আমার স্বস্ত্যয়ন (মঙ্গল প্রাপ্তির কর্ম) করুন (তৈঃ মে কৃতম্ স্বস্ত্যয়ন); ইন্দ্র আমাকে সুখ (শর্ম) প্রদান করুন; ব্রহ্মা আমাকে সুখ প্রদান করুন, বিশ্বদেবগণ আমাকে সুখ প্রদান করুন (বিশ্বে মে দেবাঃ শৰ্ম যন্তু); সকল দেবগণ 2 আমাকে সুখ প্রদান করুন (সর্বে মে দেবাঃ শৰ্ম যচ্ছন্তু)। ১২।

অতীন্দ্রিয়ার্থদ্রষ্ট সপ্ত-ঋষিবর্গ (সপ্তঋষয়ঃ) সর্ব লোকে যা কিছু বস্তু (যানি কানি চিৎ) শান্তিকারক বলে জ্ঞাত হয়েছেন (শান্তানি বিদুঃ) সে সবই আমাদের সুখের নিমিত্ত হোক (সর্বাণি শং ভবন্তু মে)। (এবার সূক্তের প্রতিপাদ্য অর্থ-সংগ্রহের নিমিত্ত বলা হচ্ছে)–সর্বতঃ আমাদের সুখ বা মঙ্গল হোক, আমাদের অভয় তোক (শং মে অস্তু অভয়ম মে অস্ত)। ১৩

পৃথিবী শান্তি প্রদান করুন, অন্তরিক্ষ শান্তি প্রদান করুন, দ্যুলোক শান্তি প্রদান করুন, জলরাশি (আপঃ) শান্তি প্রদান করুন, ওষধিসমূহ শান্তি প্রদান করুন, বনস্পতিরাজি শান্তি প্রদান করুক, বিশ্বদেবগণ আমাকে শান্তি প্রদান করুন (শান্তির্বিশ্বে মে দেবাঃ), সকল দেবতা আমাকে শান্তি প্রদান করুন। তাদের প্রদত্ত শান্তি সমূহের দ্বারা এই কর্মে (যজ্ঞে) যদি কিছু ভয়ঙ্কর (ঘোর) অর্থাৎ বিপরীত অনুষ্ঠানের কারণে বিপরীত ফল-প্রাপক কর্ম হয়ে থাকে তার শান্তি (অর্থাৎ উপশম) হোক; (যদি কিছু) কূর কর্ম হয়ে থাকে, তার শান্তি হোক; (যদি কিছু) পাপ হয়ে থাকে তবে তার শান্তি হোক; সেগুলি মঙ্গলদায়ক হোক (শিব); এইভাবে সেগুলি সবই আমাদের শান্তির নিমিত্ত থোক (এব শম অস্তু নঃ)। ১৪।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –প্রত্যহং কর্তব্যে রাজ্ঞো বাসগৃহপ্রাপণকর্মাণি শর্করাপ্রক্ষেপনান্তরং শান্তা দৌঃ ইতি শান্তিসূক্ত জপেৎ।–ইত্যাদি। (১৯কা, ১অ. ১০সূ.)। টীকা— উপযুক্ত সূক্তটির নাম শান্তি সূক্ত। রাজা কর্তৃক বাসগৃহপ্রাপণ কর্মসমূহে যেমন এই সূক্তটির বিনিয়োগ রয়েছে, তেমনই যে কোন শান্তিকর্মে এই মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ পিষ্টরাত্রিকল্পে (প. ৬/৫) নির্ধারিত আছে। এই সূক্তটি শান্তিগণে পঠনীয়। নক্ষত্র কল্পেও (১৮) এর বিনিয়োগ দ্রষ্টব্য। (১৯কা, ১অ. ১০সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *