2 of 3

১১।২ একাদশ কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক

দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ওদনঃ
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : বার্হস্পতৌদন ছন্দ : গায়ত্রী, পংক্তি, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, জগতী, বৃহতী, ত্রিষ্টুপ]

তসৌদস্য বৃহস্পতিঃ শিবরা ব্ৰহ্ম মুখম্ ॥১॥ দ্যাবাপৃথিবী শ্রোত্রে সূর্য চন্দ্রমসাবক্ষিণী সপ্তঋষয়ঃ প্রাণাপানাঃ ॥ ২ চক্ষুসলং কাম উল্খলম ॥ ৩ দিতিঃ শূপমদিতিঃ শূর্পগ্রাহী বাতোহপাবিন ॥৪॥ অশ্বাঃ কণা গাবন্তভুলা মশকাস্তুষাঃ ॥৫॥ কব্রু ফলীকরণাঃ শরোহভ্রম্ ॥ ৬। শ্যামময়োহস্য মাংসানি লোহিতমস্য লোহিত ॥৭॥ এপু ভস্ম হরিতং বর্ণঃ পুষ্করমস্য গন্ধঃ ॥৮॥ খলঃ পাত্রং স্ক্যাবংসাবীষে অনূক্যে ॥৯॥ আন্ত্রাণি জবো গুদা বরত্রাঃ ॥১০৷৷ ইয়মেব পৃথিবী কুন্তী ভবতি রাধ্যমিনস্যেদিনস্য দৌরপিধানম। ১১। সীতাঃ পৰ্শবঃ সিকতা ঊধ্যম৷৷১২। ঋতং হস্তাবনেজনং কুল্যোপসেচন ॥১৩। ঋচা কুম্ভ্যধিহির্বিজ্যেন প্রেষিতা ॥১৪ ব্ৰহ্মণ পরিগৃহীতা সামা পর্যা॥১৫৷ বৃহদাযবনং রথন্তরং দর্বিঃ ॥১৬। ঋতবঃ পক্তার আর্তবাঃ সমিন্ধতে ॥১৭৷ চরুং পঞ্চবিলমুখং ঘর্মোহভীন্ধে। ১৮। ওদনেন যজ্ঞবচঃ সর্বে লোকাঃ সমাপ্যাঃ ॥১৯৷৷ যস্মিৎসমুদ্ৰো দৌভূমিস্ত্রয়োহবরপরং শিতাঃ ॥২০৷৷ যস্য দেবা অকল্পন্তোচ্ছিষ্টে ষড়শীতয়ঃ ॥২১৷৷ তং বৌদস্য পৃচ্ছামি যো অস্য মহিমা মহান্ ॥২২৷ স য ওদস্য মহিমানং বিদ্যাৎ ॥ ২৩৷৷ নাল্প ইতি ব্রয়ান্নানুপসেচন ইতি নেদং চ কিং চেতি। ২৪ যাবদ দাতাভিমনস্যেত তন্নাতি বদেৎ ॥ ২৫৷৷ ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্তি পঞ্চমোদনং প্রাশীঃ প্রত্যঞ্চামিতি ॥ ২৬। ত্বমোদনং প্রাশীস্তুমোদনা ইতি ॥ ২৭৷৷ পরাঞ্চং চৈনং প্রাশীঃ প্রাণাস্তা হাস্যন্তীত্যেনমাহ। ২৮ প্রত্যঞ্চং চৈনং প্রাশীরপানাস্থা হাস্যন্তীত্যেনমাহ ॥ ২৯৷৷ নৈবাহমোদনং ন মামোদনঃ ॥ ৩০৷ ওদন এবৌদনং প্রাশীৎ॥৩১।

 বঙ্গানুবাদ –এই বিরাডাত্মক ভাবনীয় ওদনের শির হলো বৃহস্পতিদেব। তারও কারণভূত যে ব্রহ্ম, তিনি এর মুখ ॥১॥

আকাশ ও পৃথিবী এই ওদনের দুই কর্ণস্বরূপ; সূর্য ও চন্দ্র এর দুই নেত্রস্বরূপ এবং মরীচি, অত্রি প্রমুখ সপ্তর্ষিগণ তার প্রাণ ও অপান বায়ুস্বরূপ। (এখানে প্রাণবায়ু অর্থে নিশ্বাস ও অপানবায়ু অর্থে প্রশ্বাস)। ২৷

এই ওদনের উপাদান রূপ ব্রীহিবহনের জন্য যে মুসল (টেকির মোনা) নির্মিত, তা হলো তার চক্ষুরিন্দ্রিয় এবং উদূখল (উলুখল অর্থাৎ ধান্য ইত্যাদি কণ্ডনের নিমিত্ত পাত্রবিশেষ) এর কাম (অর্থাৎ অভিলাষ)। (উদূখলে ধান রেখে মুসলপ্রহারে পরিষ্কার করা হয়) ৷৷ ৩৷৷

অসুরমা দিতিই শূর্প (অর্থাৎ কুলা) এবং যিনি সেই শূর্পকে ধারণকারিণী (বা চালনকারিণী), তিনি দেবমাতা অদিতি। এবং বায়ু হলো ধান ও চাউলের বিবেচয়িতা (অর্থাৎ পৃথকারী)। ৪৷

ওদনের কণা হলো অশ্ব, ওদনের উপাদানভূত তণ্ডুল হলো গো এবং পৃথকীকৃত হয়ে যাওয়া তুষ হলো ক্ষুদ্রজন্তু মশকস্বরূপ। ৫।

 ফলীকরণ হলো কব্রু বা ক। (যে প্রাণীর মস্তক ও জ্বর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় না, সেইরকম প্রাণীর ভাবনীয় হলো ফলীকরণ)। অন্তরিক্ষে সঞ্চরণশীল মেঘ এর শির। ৬।

শ্যামবর্ণ যে লৌহ অর্থাৎ খনিত্ৰ ইত্যাদি উপাদান তা এই বিরাডাত্মক ওদনের মাংস এবং লোহিত বর্ণ যে তাম্ৰাত্মক ধাতু এই লোকে দেখা যায়, সেই সবই এই ওদনের রক্ত ৷৷ ৭৷

ওদন পাকের পর যে ভস্ম থেকে যায়, তা হচ্ছে আপু অর্থাৎ সীসা; ওদনের যে হেম বৰ্ণ তা-ই স্বর্ণ। ওদনেলর গন্ধ হলো কমল। ব্রীহি ইত্যাদি ধান্যের খড়গুলিকে পৃথক করার স্থানই হলো এর পাত্র; ধান্য ধারণের শকটের দুটি অবয়ব এর অংস (বা স্কন্ধ), ঈষাদ্বয় (অর্থাৎ লাঙ্গলের দণ্ডদ্বয়) এর অনূক্য (অর্থাৎ স্কন্ধের বা দেহের সন্ধি); ওদন-সম্বন্ধি শকটে যোজিত বৃষভের কণ্ঠে আবদ্ধ রঞ্জুগুলি এর অন্ত্র (নাড়ীভুড়ি) এবং শকট লাঙ্গল যোজনের চর্মময় রঞ্জুদ্বয় এর দুই গুহ্যস্থান (লিঙ্গ ও পায়ু)। ৮-১০৷

এই পরিদৃশ্যমান পৃথিবী (অর্থাৎ বিস্তীর্ণা ভূমি) রাধ্যমান (অর্থাৎ রন্ধন করা হচ্ছে, এমন) ওদনের কুম্ভী (অর্থাৎ পাকার্থ হাঁড়ি বা স্থালী); আকাশ এই কুম্ভীমুখের আচ্ছাদন-পাত্র (ঢাকনা বা সরা)। ১১।

 সীতা (অর্থাৎ কর্ষণোৎপন্না বীজবপনার্থ লাঙ্গল-পদ্ধতিসমূহ) এই ওদনের পার্শ্বস্থ অস্থি এবং নদীসমূহের বালুকারাশি তার অধজীর্ণ তৃণাত্মক উদরগত শকৃৎ (অর্থাৎ বিষ্ঠা)। ১২।

 লোকে বিদ্যমান জলসমূহ এই ওদনের প্রক্ষালনের জন্য, এবং ক্ষুদ্রকায় নদীসমূহের সমস্ত জল এর উপসেচন (অর্থাৎ মিশ্রণসাধনরূপ) ॥১৩।

 উদীরিতলক্ষণা এই ওদনের পাকের নিমিত্ত কুম্ভী ঋগ্বেদের দ্বারা অগ্নিতে স্থাপিতা, সেই সম্পর্কিত কর্ম-প্রতিপাদকের দ্বারা (অর্থাৎ যজুর্বেদের দ্বারা) তা প্রেরিতা, ব্রহ্মবেদের দ্বারা (অর্থাৎ আথর্বণের দ্বারা) সর্বতোভাবে পরিগৃহীতা এবং সামবেদের দ্বারা অঙ্গারে পরিবেষ্টিতা (অর্থাৎ কুম্ভীর চতুর্দিকে অঙ্গার সংযুক্ত হয়ে আছে)। ১৪-১৫৷

বৃহৎ সাম হলো জলে প্রক্ষিপ্ত তণ্ডুলসমূহের মিশ্রণসাধন কাষ্ঠ (অর্থাৎ তণ্ডুলে ও জলে মিশ্রিত করণের নিমিত্ত কাষ্ঠনির্মিত যজ্ঞীয় খন্তী) এবং রথন্তর সাম হলো ও ওদন উদ্ধারসাধন দর্বি (যজ্ঞীয় হাতা)। ১৬৷৷

 বসন্ত ইত্যদি ঋতু সমুদায় এই ওদনের পাকক্রিয়ার কর্তা। ঋতুসম্বন্ধি অহোরাত্রগুলি বা সেই সেই ঋতুতে জায়মান প্রাণীবিশেষ একে সন্দীপিত করছে। (ঋতুগণই এই ওদনের পাক-কর্তা; কারণ সর্বজগদাত্মকৌদন-পাকস্য কালাধীনত্বাৎ নান্যঃ পং শক্লোতীত্যর্থঃ–সায়ণাচার্য)। ১৭ ৷৷

(চরু শব্দে ওদন কিংবা ওদনপাকের স্থালীও বোঝায়)–এই চরুর পাঁচটি বিভিন্ন মুখ। (কারণ এটি গো-অশ্ব-মনুষ্য মেষ-ছাগ এই পাঁচটি পশুর উৎপত্তির হেতুভূত-১১/১/৫)। অতএব এই হেন চরু বা স্থালীকে তেজস্বী আদিত্য তাপিত করছেন। ১৮

অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞের দ্বারা যে লোক-প্রাপ্তির কথা বলা হয়ে থাকে, সেই সব লোক এই মহাপ্রভাবশালী পক্ক ওদনের দ্বারা সম্যক প্রাপ্তি সম্ভব হয়ে থাকে। ১৯৷

 যে ওদনের নিম্নে ও উপরে পৃথিবী, সমুদ্র ও আকাশ স্থিত হয়ে আছে, এ ওদন তা-ই। ২০৷

যে ওদনের উচ্ছিষ্টে অর্থাৎ যাগাবশিষ্ট অংশে ষড়গুণিতাশীতিসংখ্যক (৪৮০ সংখ্যক) দেবতা বীর্যবন্ত হয়েছেন, হে গুরুদেব! সেই ওদনের যে মহিমা তা আমি আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করছি। ২১-২২৷

উদীরিত লক্ষণ এই ওদনের মহিমাকে যে গুরু জ্ঞাত আছেন, তিনি উপদেশ দেওয়ার সময়ে এর মহিমাকে অল্প বলেন না এবং এও বলেন না যে, এই ওদনে দুগ্ধ, ঘৃত, দধি ইত্যাদির অবশ্যকতা নেই। এটির পুরোবর্তীত্ব নির্দেশ করেন না, আবার এটিকে অনির্দিষ্টরূপেও বলেন না। (অর্থাৎ কেবল এটির মাহাত্ম্যটুকুই বলে থাকেন)। ২৩-২৪।

 সব যজ্ঞের অনুষ্ঠানকারী দানী যেমন অভিমত ফলের কামনা করেন, তার অধিক বলেন না। ২৫৷

ব্ৰহ্মবাদী মহর্ষিগণ পরস্পর বলে থাকেন-হে দেবদত্ত! তুমি এই ওদনপরাজুখে (অর্থাৎ প্রতিকূল রূপে) অথবা আত্মাভিমুখে (অর্থাৎ আপন অনুকূল রূপে) ভক্ষণ করেছে। যদি তুমি পরাজুখরূপে (পশ্চাতে স্থিত) এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে প্রাণবায়ু তোমা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমন কথা প্রাশিতকে (ভক্ষণকারীকে) বলা উচিত। যদি তুমি প্রতিমুখ-স্থিত এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তা হলে অপানবায়ু তোমাকে ত্যাগ করবে–এই রকম কথা প্রাশিতকে বলা প্রয়োজন। ২৬-২৯

ওদনকে ভক্ষণ আমি করিনি, এবং ওদন আমাকে ভক্ষণ করেনি। ভোক্তৃভোক্তব্য (ভক্ষক ও ভক্ষণীয়) প্রপঞ্চাত্মক (মায়াময়) এই ওদনই ওদনের কর্তারূপে ভক্ষণীয় ওদনকে ভক্ষণ করেছে। এ (ওদন এব কর্তা ওদনং স্বাত্মানং প্রাশিতবা) ॥ ৩০-৩১৷৷.

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –দ্বিতীয়েনুবাকে ষট্‌ সূক্তানি। তসৌদনস্য ইত্যাদি সূক্তএয়ং অর্থসূক্তং। তেন বৃহস্পতিসবাখ্যে সবযজ্ঞে হবিরভিমৰ্শনসম্পাতদাতৃবাচনদানাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ। তথা অভিচারকর্মণি সববিধানেন ওদনং পল্কা পৃষাতকেন উপসিচ্য অনেন অর্থসূক্তেন অভিমৃশ্য সম্পত্য অভিমন্যু দ্বেষ্যায় প্রযচ্ছেৎ…ইত্যাদি। (১১কা, ২অ. ১সূ.)।

 টীকা –দ্বিতীয় অনুবাকের মোট ছটি সূক্তের মধ্যে এইটি এবং এর পরবর্তী দুটি সূক্ত অর্থসূক্ত। এই তিনটি সূক্তের দ্বারা বৃহস্পতিসব নামক সবযজ্ঞে হবি-অভিমৰ্শন, সম্পাত, দাতৃবাচন ইত্যাদি কর্মসমূহ অনুষ্ঠেয়। তথা অভিচার কর্মে সববিধানের দ্বারা ওদন পাক করে পৃষাতকের দ্বারা উপসেচন (জল দিয়ে নরম করে) পূর্বক এই অর্থসূক্তের দ্বারা অভিমৰ্শন সম্পাতিত ও অভিমন্ত্রিত করে দ্বেষকারীর প্রতি নিক্ষেপ করণীয়।…ইত্যাদি। (১১কা, ২অ. সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : ওদনঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্ত ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী, জগতী, অনুষ্টুপ, পংক্তি, বৃহতী, উষ্ণিক]

ততশ্চৈনমন্যেন শীষ্ণা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। জ্যেষ্ঠতস্তে প্রজা মরিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। বৃহস্পতিনা শীষ্ণা। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১। ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং শ্রোত্ৰাভ্যাং শীর্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। বধিররা ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। দ্যাবাপৃথিবীভ্যাং শ্রোত্ৰাভ্যাং। ভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপুরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ২॥ ততশ্চৈনমন্যাভ্যামক্ষীভ্যাং শীর্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। অন্ধো ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চম। সূর্যাচন্দ্রমসাভ্যামক্ষীভ্যাম্। ভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপুরুঃ সর্বত। সর্বাঙ্গ এব সর্বপুরুঃ সর্বতঃ সং ভবর্তি য এবং বেদ ॥ ৩৷৷ ততশ্চৈনমন্যেন মুখেন প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। মুখতস্তে প্রজা মরিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ। ব্ৰহ্মণা মুখেন। তেনৈনং প্রাশিষং তৌননমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ৷৷ ৪৷৷ ততশ্চৈনমন্যয়া জিয়া প্ৰাশীৰ্ষয়া চৈতং পর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। জিহ্বা তে মরিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। অগ্নেৰ্জিহুয়া। তয়ৈনং প্রাশিষং তয়ৈনমজীগম। এব বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৫৷৷ ততশ্চৈনমন্যৈদন্তেঃ শীর্ষেশ্চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। দন্তাস্তে শস্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চ ঋতুভিদন্তৈঃ। তৈরেনং প্রাশিষং তৈরেনমজীগম। এষবা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৬৷৷ ততশ্চৈনমন্যৈঃ প্রাণাপানৈঃ শীর্ষৈশ্চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রাশন। প্রাণাপানাস্তু হাস্যন্তীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। সপ্তর্ষিভিঃ প্রাণাপানৈঃ। তৈরেনং প্রাশিষং তৈরৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৭৷৷ ততশ্চৈনমন্যেন ব্যচসা শীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। রাজযক্ষ্মা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। অন্তরিক্ষেণ ব্যচসা। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতনূঃ। সর্বাঙ্গ এব, সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৮৷৷ ততশ্চৈনমন্যেন পৃষ্ঠেন শীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। বিদজৎ ত্বা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। দিবা পৃষ্ঠেন। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনূঃ। সর্বাঙ্গঃ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ৯৷ ততশ্চৈনমন্যেনোরসা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। কৃষ্যা ন রাৎস্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। পৃথিব্যোরসা। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গঃ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১০ ততশ্চৈনমন্যেনোদরেণ প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্বং ঋষয়ঃ প্রশ্ন। উদরদারস্তুা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। সত্যেনোদরেণ। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১১। ততশ্চৈনমন্যেন বস্তিনা প্রাশীর্ষেন চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। অষ্ণু মরিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। সমুদ্রেণ বস্তিনা। তেনৈনং প্রাশিষং তেনৈনমজীগমম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনূঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১২। ততশ্চৈনমন্যাভ্যামূরুভ্যাং শীর্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। ঊরূ তে মরিষ্যত ইত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। মিত্রাবরুণয়োরূরুভ্যাম্। তাভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ১৩ ৷৷ ততশ্চৈনমন্যাভ্যামষ্ঠীবদ্ভ্যাং শীর্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। শ্ৰামো ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। ত্বরষ্ঠীবদ্ভ্যাং। ভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বনূঃ। সবার্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তঃ সং ভবতি য এবং বেদ। ১৪। ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং পাদাভ্যাং শীর্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। বহুচারী ভবিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। অশ্বিনোঃ পাদাভ্যাং। ভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ১৫৷৷ ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং প্রপদাভ্যাং শীর্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। সর্পা হনিষ্যতীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। সবিতুঃ প্রপদাভ্যাং। ভ্যামেনং প্রাশিষং তাভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতনুঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ১৬ ততশ্চৈনমন্যাভ্যাং হস্তাভ্যাং প্ৰাশীৰ্ষাভ্যাং চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। ব্রাহ্মণং হনিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নাৰ্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। ঋতস্য হস্তাভ্যাং। ভ্যামেনং প্রাশিষং ভ্যামেনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গঃ এব সর্বপরুঃ সর্বর্তনুঃ সং ভবতি য এবং বেদ ৷৷ ১৭ ৷৷ ততশ্চৈনমন্যয়া প্রতিষ্ঠয়া শীর্ষয়া চৈতং পূর্ব ঋষয়ঃ প্রশ্ন। অপ্রতিষ্ঠানোহনায়তনো মরিষ্যসীত্যেনমাহ। তং বা অহং নার্বাঞ্চং ন পরাঞ্চং ন প্রত্যঞ্চং। সত্যে প্রতিষ্ঠায়। তয়ৈনং প্রাশিষং তয়ৈনমজীগম। এষ বা ওদনঃ সর্বাঙ্গঃ সর্বপরুঃ সর্বতঃ। সর্বাঙ্গ এব সর্বপরুঃ সর্বতঃ সং ভবতি য এবং বেদ ॥ ১৮

বঙ্গানুবাদ— পূর্বে অনুষ্ঠানকারী ঋষিগণ যে শিরের দ্বারা (অর্থাৎ ওদনের যে শিরোভাগ হতে) এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তার অতিরিক্ত অন্য শিরের দ্বারা যদি তুমি এই ওদনকে ভক্ষণ করে থাকো, তবে জ্যেষ্ঠ ইত্যাদি ক্রমে তোমার প্রজা অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদি মরণপ্রাপ্ত হতে থাকবে।–এই রকমই অভিজ্ঞজনেরা ভক্ষণকারীকে প্রতিজ্ঞার সাথে বলে থাকেন।-আমি সেই ওদনকে অভিমুখ পরাঙ্খ ও আত্মাভিমুখ হওয়ার পরও ভক্ষণ করিনি। পূর্ব ঋষিগণ বৃহস্পতির দ্বারা সম্বন্ধিত যে শিরের দ্বারা একে ভক্ষণ করেছিলেন, আমি ওদন-সম্বন্ধী সেই শিরের দ্বারা সেই রকমেই ভক্ষণ করেছি। (অর্থাৎ এইভাবে ভক্ষণ পূর্বক আমি গন্তব্য দেশ প্রাপ্ত হয়েছি)। (অথবা আমাকে ওদন ভক্ষণ করেছে)। এই প্রকার ভক্ষিত এই ওদন সকল অবয়বসন্ধির দ্বারা যুক্ত হয়ে (অর্থাৎ সম্পূর্ণশরীরশালী হয়ে) সর্বাঙ্গ ফল লাভ পূর্বক এই সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিকে স্বর্গ ইত্যাদি লোকে উপনীত করে থাকে। ১।

 পূর্ব ঋষিগণ যে শ্রোত্রের দ্বারা ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, সেই বিধির অতিরিক্ত অন্য লৌকিক শ্রোত্রের দ্বারা যদি ওদন ভক্ষণ করে থাকে, তবে তুমি বধির হবে।–এই রকমই অভিজ্ঞজনেরা ভক্ষণকারীকে প্রতিজ্ঞার সাথে বলে থাকেন।–আমি সেই ওদনকে অভিমুখ, পরাজুখ ও আত্মাভিমুখ হয়ে ভক্ষণ করিনি। পূর্ব ঋষিগণ বৃহস্পতির দ্বারা সম্বন্ধিত যে শ্রোত্রের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, সেই দ্যাব-পৃথিবীরূপ শ্রোত্রদ্বয়ের দ্বারা আমি এই ওদন ভক্ষণ অথবা আমাকে ওদন ভক্ষণ করেছে)। এই প্রকারে ভক্ষিত এই ওদন সকল অবয়বসন্ধির দ্বারা যুক্ত হয়ে (অর্থাৎ সম্পূর্ণশরীরশালী হয়ে) সর্বাঙ্গ ফল লাভ পূর্বক এই সম্পর্কে জ্ঞাত জনকে স্বর্গলোকে উপনীত করে থাকে। ২।

 পূর্ব ঋষিগণ যে নেত্রের দ্বারা ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি তার অতিরিক্ত লৌকিক নেত্রের দ্বারা যদি ভক্ষণ করে থাকো, তবে তুমি অন্ধ। হয়ে যাবে।–এই রকমই অভিজ্ঞজনেরা ভক্ষণকারীকে প্রতিজ্ঞার সাথে বলে থাকেন।–আমি সেই ওদনকে অভিমুখ, পরাজুখ ও আত্মাভিমুখ হয়ে ভক্ষণ করিনি। পূর্ব ঋষিগণ বৃহস্পতির দ্বারা সম্বন্ধিত যে নেত্রের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, সেই সূর্য-চন্দ্ররূপ নেত্র দুটির দ্বারা আমি এই ওদন ভক্ষণ করেছি। (অথবা আমাকে ওদন ভক্ষণ করেছে)। এই প্রকারে ভক্ষিত এই ওদন সকল অবয়বসন্ধির দ্বারা যুক্ত হয়ে (অর্থাৎ সম্পূর্ণশরীরশালী হয়ে) সর্বাঙ্গ ফল লাভ পূর্বক যিনি এই সম্পর্কে জ্ঞাত হন তাঁকে স্বর্গলোকে উপনীত করে থাকে ৷ ৩৷৷

পূর্বে অনুষ্ঠানকারী ঋষিগণ যে ব্ৰহ্মাত্মক মুখের দ্বারা ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি তার অতিরিক্ত লৌকিক মুখের দ্বারা যদি ওদন-ভক্ষণ করে থাকো, তবে (শিরের দ্বারা ভক্ষণের মতো) তোমার প্রজা বা পুত্র ইত্যাদি মরণ প্রাপ্ত হবে।–এই রকমই অভিজ্ঞ জনেরা ভক্ষণকারীকে প্রতিজ্ঞার সাথে বলে থাকেন।–আমি সে ওদন অবাজুখে, পরাজুখে অথবা আত্মাভিমুখে ভক্ষণ করিনি। আমি জগকারণ ব্রহ্ম বা বেদান্তক মুখের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি। (অথবা এই ওদন আমাকে ভক্ষণ করেছে, অর্থাৎ আমার প্রাপ্ত হয়েছে)। এই প্রকারে ভক্ষিত এই ওদন সকল অবয়বসন্ধির দ্বারা যুক্ত হয়ে (অর্থাৎ সম্পূর্ণ শরীরশালী হয়ে) সর্বাঙ্গ ফল লাভ পূর্বক এই সম্পর্কে জ্ঞাত জনকে স্বর্গলোকে উপনীত করে থাকে। ৪।

পূর্বে অনুষ্ঠানকারী ঋষিগণের বিধির অতিরিক্ত লৌকিক জিহ্বার দ্বারা যদি তুমি এই ওদনকে ভক্ষণ করে থাকে, তবে তোমার জিহ্বা প্রাণত্যাগের মাধ্যমে স্বকার্যক্ষমতাহীন হয়ে যাবে। –এই রকমই অভিজ্ঞজনেরা ভক্ষণকারীকে বলে থাকেন। আমি অবাঙ্গুখে, পরাজুখে অথবা আত্মাভিমুখে সেই ওদনকে ভক্ষণ করিনি। আমি অগ্নির অবয়বভূত জিহ্বার দ্বারা এই ওদনকে ভক্ষণ করেছি। এই প্রকারে ভক্ষিত এই ওদন…… ৫

পূর্ব ঋষিগণের বিধির অতিরিক্ত লৌকিক দন্তের দ্বারা যদি তুমি ওদন ভক্ষণ করে থাকো তবে তোমার দন্তসকল বিশীর্ণ হয়ে পাতিত হয়ে যাবে।……আমি এই ওদন………ভক্ষণ করিনি। আমি বসন্ত-গ্রীষ্ম ইত্যাদি ঋতুরূপ, দন্তের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি, এই প্রকারে কৃত ভক্ষণ সর্বাঙ্গ ফল দান করে। যিনি এই ভক্ষণকে এই প্রকারে জ্ঞাত হন, তিনি সর্বাঙ্গ ফল প্রাপ্ত হয়ে স্বর্গ ইত্যাদি লোকে স্থিত হয়ে থাকেন ৷ ৬।

 যে ঋষ্যাত্মক প্রাণ ও অপানের দ্বারা পূর্বে অভিজ্ঞ জনেরা ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি তার অতিরিক্ত লৌকিক প্রাণাপানের দ্বারা যদি ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে তোমার প্রাণপানাত্মিকা অর্থাৎ মুখ্য প্রাণের বৃত্তিসমূহ তোমাকে ত্যাগ করে যাবে।…….। আমি সে ওদন.. ভক্ষণ করিনি। আমি সপ্তর্ষিরূপ প্রাণাপানের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি। এই রকমে এই ওদন সকল অবয়সন্ধির দ্বারা যুক্ত হয়ে সর্বাঙ্গ ফল লাভ করে। যিনি এই ওদন-ভক্ষণকে জ্ঞাত হন, তিনি সর্বাঙ্গ ফল লাভ পূর্বক স্বর্গ ইত্যাদি লোকসমূহে স্থিত হয়ে থাকেন। ৭।

যে বিধির দ্বারা অর্থাৎ সর্বশরীরবর্তী যে ব্যাপ্তির দ্বারা পূর্ব ঋষিগণ এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি যদি তা ব্যতীত অন্য কোন বিধির দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করে থাকে, তবে তোমাকে রাজযক্ষ্মা নামক ক্ষয়রোগ বিনাশ করে দেবে।………। –আমি সে ওদন………ভক্ষণ করিনি। আমি অন্তরিক্ষাত্মক বিধির দ্বারা সেই ওদন ভক্ষণ করেছি। এইরকম ওদন……….সর্বাঙ্গ ফল লাভ করে। যিনি এই………স্থিত হয়ে থাকেন ॥ ৮

 পূর্ব ঋষিগণ দজলোকাত্মক যে পৃষ্ঠের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তা ভিন্ন। শরীরের অন্য কোন অংশের দ্বারা যদি তুমি এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে বিদ্যোমানা অশনি তোমাকে হনন করবে।……..।–আমি………ভক্ষণ করিনি। আমি দজলোকাত্মক শরীরের অপর ভাগের দ্বারা একে ভক্ষণ করেছি।……….এইরকম ওদন……….সর্বাঙ্গ ফল লাভ করে। যিনি এই……..স্থিত হয়ে থাকেন। ৯৷

পূর্ব ঋষিগণ যে বক্ষের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, সেই বক্ষ ব্যতীত স্তনমণ্ডলের উপরিবর্তী অর্থাৎ পুরোভাগস্থ অবয়বের দ্বারা যদি তুমি ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে কৃষিতে তুমি সফলতা প্রাপ্ত হবে না (অর্থা ব্রীহি, যব ইত্যাদি ফসলে সমৃদ্ধ হতে পারবে না।…….–আমি সে ওদন……ভক্ষণ করিনি। আমি পৃথিবীরূপ (পৃথিবীত্ব ভাবমান) বক্ষের দ্বারা সেই ওদন ভক্ষণ করেছি। এইরকম ওদন………ফল লাভ করে। যিনি এই…….স্থিত হয়ে থাকেন। ১০৷

পূর্ব ঋষিগণ যে উদরের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তার ব্যতিরিক্ত অন্য উদরের দ্বারা যদি এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তাহলে উদর বিদীর্ণকারী (দরণাত্মক) অতিসার নামক ব্যাধি তোমাকে গ্রাস পূর্বক বিনাশ করে দেবে।…….। আমি সে ওদন……….ভক্ষণ করিনি। আমি সে ওদন যথার্থকথনাত্মক (অর্থাৎ সত্যস্বরূপ) উদরের দ্বারা ভক্ষণ করেছি। এই রকম ওদন………সর্বাঙ্গ ফল লাভ করে। যিনি এই………স্থিত হয়ে থাকেন ৷৷ ১১।

 পূর্বে ঋষিগণ যে বস্তি বা মূত্রাশয়ের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি যদি সেই বস্তি ব্যতিরেকে অন্য বস্তির দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করে থাকে, তবে তুমি জলেতেই (অর্থাৎ জলে নিমজ্জিত হয়েই) মৃত্যুপ্রাপ্ত হবে।–এই কথা………বলে থাকেন।-আমি সে ওদন……… ভক্ষণ করিনি। আমি সমুদ্ৰাত্মক বস্তির দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি এবং এইভাবেই আমি একে লাভ করেছি। এইরকম ওদন………..সর্বাঙ্গ ফল লাভ করে। যিনি এই………..স্থিত হয়ে থাকেন / ১২।

পূর্বে ঋষিগণ যে ঊরু দুটির দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি যদি তার অতিরিক্ত অন্য ঊরুদ্বয়ের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করে থাকে, তবে তোমার দুটি ঊরু ত্যক্তপ্রাণবৎ বিশুষ্ক হয়ে যাবে।–এই কথা……… বলে থাকেন।–আমি সে ওদন………ভক্ষণ করিনি। আমি মিত্র ও বরুণ সম্বন্ধী উরুদ্বয়ের দ্বারা সেই ওদন ভক্ষণ করেছি এবং তার দ্বারা এই ওদন আমাকে ভক্ষণ করেছে (অর্থাৎ ওদনই ওদনকে ভক্ষণ করে প্রাপ্ত হয়েছে)। এই প্রকারে ভক্ষিত এই ওদন……… সর্বাঙ্গ ফল দান করে। যিনি এই………স্থিত হয়ে থাকেন ॥ ১৩

পূর্বে ঋষিগণ উরুর নিম্নদিকস্থ যে দুই অস্থিমন্ত অবয়বের দ্বারা (অর্থাৎ দুই জানুর দ্বারা) ওদনকে ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি যদি তা ভিন্ন অন্ন জানুর দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে তোমার জঙ্ঘয় (অর্থাৎ পায়ের গোড়ালি থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ দুটি) শুষ্ক হয়ে যাবে।–এই কথা……….বলে থাকেন।-আমি এ ওদন…….ভক্ষণ করিনি। আমি তৃষ্টাদেবের জঘাদ্বয়ের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি এবং তার দ্বারা…….করেছে।–এই প্রকারে………স্থিত হয়ে থাকেন। ১৪।

 পূর্বে ঋষিগণ জঙ্ঘার নিম্নবর্তী যে দুই পাদের (অর্থাৎ চরণের) দ্বারা এই ওদনকে ভক্ষণ করেছিলেন,সেই দুই পাদদ্বয় ব্যতিরেকে অন্য পাদদ্বয়ের দ্বারা যদি তুমি এই ওদনকে ভক্ষণ করে থাকো, তবে তুমি বহুচারী (অর্থাৎ সর্বদা অধিক ভ্রমণশীল বা প্রবাসশীল) হয়ে যাবে। এই কথা……..বলে থাকেন।–আমি………ভক্ষণ করিনি। আমি অশ্বিযুগলের পাদ সমূহের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি এবং তার দ্বারা…….. করেছে।–এই প্রকারে……স্থিত হয়ে থাকেন। ১৫।

পূর্বে ঋষিগণ যে দুইপাদাগ্রভাগের দ্বারা এই ওদন ভক্ষন করেছিলেন, তা ব্যতীত অন্য পাদাগ্রভাগের দ্বারা যদি তুমি এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে সর্পগণ তোমাকে দংশন করবে।–এই কথা……বলে থাকেন।-আমি এ ওদন………ভক্ষণ করিনি। আমি সর্বপ্রেরক সবিতাদেবের দুই প্রপদের (অর্থাৎ চরণপ্রান্তের) দ্বারা এ ওদন ভক্ষণ করেছি এবং তার দ্বারা……….করেছে।–এই প্রকারে………স্থিত হয়ে থাকেন। ১৬।

পূর্বে ঋষিগণ যে দুই হস্তের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, যদি তুমি তা ব্যতীত অন্য হস্তদ্বয়ের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করে থাকে, তবে তোমার ব্রহ্মহত্যা (ব্রাহ্মণ হননরূপ) পাপ অর্জন করা হবে।–এই কথা……….বলে থাকেন।-আমি এ ওদন……..ভক্ষণ করিনি। আমি পরব্রহ্মের সম্বন্ধিত সত্যস্বরূপ হস্তদ্বয়ের দ্বারা এই ওদন ভক্ষণ করেছি এবং…….. করেছে।–এই প্রকারে এই ওদন………স্থিত হয়ে থাকেন। ১৭।

সত্যব্রহ্মাত্মিকা যে প্রতিষ্ঠার দ্বারা প্রাচীন ঋষিগণ এই ওদন ভক্ষণ করেছিলেন, তুমি যদি তার বিপরীতে এই ওদন ভক্ষণ করে থাকো, তবে তুমি প্রতিষ্ঠা রহিত হবে। (অর্থাৎ উপবেশনের যোগ্য ভূমিও প্রাপ্ত হবে না)।–এই কথা………বলে থাকেন।-আমি এই ওদন……….ভক্ষণ করিনি। আমি সর্বজগৎকল্পনাস্পদ ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই ওদন ভক্ষণ করেছি এবং……….করেছে।–এই প্রকারে এই ওদন………স্থিত হয়ে থাকেন। ১৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ– অর্থ উত্তরৈ পর্যায়ে ওদনস্যৈব ডোক্তৃত্বং ভোজ্যত্বং চ বিপক্ষে বাধপুরঃসরং সমথ্যতে। তত্র প্রথমং তসৌদস্য বৃহস্পতিঃ শিবঃ ইতি য উক্তং বিপক্ষে বাধপুরঃসরং তস্য প্রয়োজনং প্রথমেন পর্যায়েনাহ। (১১কা, ২অ, ২সূ)।

টীকা –প্রথম সূক্তে বিপক্ষে বাধপুরঃসর ওদনের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত হয়েছিল। এই দ্বিতীয় সূক্তে ওদনের ডোক্তৃত্ব ও ভোজ্যত্বের বিপক্ষে বাধপুরঃসর সমর্থন করা হয়েছে। এর বিনিয়োগ ইত্যাদি পূর্ব সূক্তে উল্লিখিত ৷ (১১কা, ২অ, ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : ওদনঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : মন্ত্রোক্তা (মন্ত্রে উক্ত) ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, ত্রিষ্টুপ, বৃহতী]

এতদ বৈ ধস্য বিষ্টপং যদোদনঃ ॥১॥ ব্ৰধুলোকো ভবতি ব্ৰধস্য বিষ্টপি শ্ৰয়তে য এবং বেদ। ২৷ এতস্মাদ বা ওদনাৎ ত্রয়স্ত্রিংশতং লোকান্ নিরমিমীত প্রজাপতিঃ ৷ ৩৷৷ তেষাং প্রজ্ঞানায় যজ্ঞমসৃজত ৷ ৪৷৷ স য এবং বিদুষ উপদ্রষ্টা ভবতি প্রাণং রুণদ্ধি। ৫৷৷ ন চ প্রাণং রুণদ্ধি সর্বজ্যানিং জীয়তে। ৬।ন চ সর্বজ্যানিং জীয়তে পুরৈনং জরসঃ প্রাণো জহাতি। ৭৷

বঙ্গানুবাদ –পূর্বোক্ত মহিমার সাথে যুক্ত (মহিমোপেত) ঐ ওদন আপন মহিমায় বিশ্বের রচয়িতা এবং সূর্যমণ্ডলে বর্তমান ঈশ্বরের স্বরূপ: (অর্থাৎ এ ওদন সূর্যমণ্ডলাত্মক)। ১।

যে পুরুষ সূর্যমণ্ডলাত্মক ওদনের রূপকে জ্ঞাত হন (অর্থাৎ মণ্ডলাভিমানী সূর্যরূপে ওদনের উপাসনা করেন), তিনি ব্ৰধুলোক (অর্থাৎ সূর্যলোক) প্রাপ্ত হন (অর্থাৎ সূর্যের মতো লোকনীয় বা দর্শনীয় হন)। তিনি সূর্যের বিষ্টপি অর্থাৎ মণ্ডলাত্মক স্থানের সেবা করেন (অর্থাৎ সূর্যাত্মক হয়ে যান)। ২।

 প্রজাপতি এই সূর্যাত্মক ওদনের দ্বারা অষ্টবসু (আপ, ধ্রুব, সোম, অনল, অনিল, ধর, প্রত্যুষ ও প্রভাব), এ একাদশরুদ্র (অজ, একপাৎ, অহিব্ৰধু, পিণাকি, অপরাজিত, ত্র্যম্বক, মহেশ্বর, বৃষাকপি, শম্ভু, হরণ ও ই ঈশ্বর), দ্বাদশ-আদিত্য (ধাতা, মিত্র, অর্যমা, রুদ্র, বরুণ, সূর্য, ভগ, বিবস্বান, পূষা, সবিতা, ত্বষ্টা ও বিষ্ণু), প্রজাপতি ও বষট্‌কার-এই তেত্রিশ দেবতাকে সৃষ্টি পূর্বক তাদের অধিষ্ঠানও (লোকসমূহও) নির্মাণ করেন। ৩।

সেই দেবলোকসমূহকে প্রকৃষ্টরূপে জানার জন্য (অর্থাৎ সেই সেই লোকের উপভোগ্য সুখের সাক্ষাৎকারের নিমিত্ত (তত্তলোকোপভোগ্যসুখসাক্ষাৎকারায়) তাদের সাধনত্বরূপে এই যজ্ঞের সৃষ্টি (বা বিধান) করেন। ৪

এই প্রকার জ্ঞাতশীল উপাসককে যে পুরুষ উপদ্রষ্টা (সাক্ষাৎকর্তা) হন, সেই উপরোধক নিক আপন শরীরস্থ প্রাণের গতিকে রুদ্ধ করে দিতে পারেন। ৫।

শুধু প্রাণের গতিই অবরুদ্ধ হয় না, বরং সেই নিন্দাকারী জনের সন্তান, পশু ইত্যাদি অভিমত সকল বস্তুরও হানি ঘটে। ৬।

 শুধু সর্বস্ব হানি হয় এমন নয়, তার সাথে তাঁর প্রাণও বৃদ্ধাবস্থার পূর্বেই তাকে পরিত্যাগ করে যায় (অর্থাৎ তার অকালমরণ ঘটে)। ৭।

টীকা –এই সূক্তের বিনিয়োগ ইত্যাদি প্রথম সূক্তে উল্লেখিত হয়েছে ॥ (১১কা, ২অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : প্রাণঃ

[ঋষি : ভার্গব বৈদর্ভি দেবতা : প্রাণ ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী]

প্রাণায় নমো যস্য সর্বমিদং বশে। যো ভূতঃ সর্বস্যেশ্বররা যস্মিসর্বং প্রতিষ্ঠিতম৷৷ ১। নমস্তে প্রাণ ক্রন্দায় নমস্তে স্তনয়িত্নবে। নমস্তে প্রাণ বিদজতে নমস্তে প্রাণ বৰ্ষতে। ২। যৎ প্রাণ স্তনয়িনাভিক্ৰত্যোষধীঃ। প্রবীয়ন্তে গর্ভান্ দধতেহথো বহুীর্বি জায়ন্তে ৷৷ ৩ যৎ প্রাণ ঋতাবাগতেহভিক্রন্দত্যোধীঃ। সর্বং তা প্রমোদতে যৎ কিং চ ভূম্যামধি ॥ ৪৷৷ যদা প্রাণে অব্যবৰ্ষীদ বর্ষেণ পৃথিবীং মহীম্। পশবস্তৎ প্র মোদন্তে মহো বৈ নো ভবিষ্যতি ॥ ৫অভিবৃষ্টা ওষধয়ঃ প্রাণেন সমবাদির। আয়ুর্বৈ নঃ প্রাতীতরঃ সর্বা নঃ সুরভীরকঃ ॥ ৬। নমস্তে অস্ত্রায়তে নমো অস্তু পরায়তে। নমস্তে প্রাণ তিষ্ঠত আসীনায়োত তে নমঃ ॥ ৭। নমস্তে প্রাণ প্রাণতে নমো অপানাতে। পরাচীনায় তে নমঃ প্রতীচীনায় তে নমঃ সর্বস্মৈ ত ইদং নমঃ ॥৮॥ যা তে প্রাণ প্রিয়া তনূর্যো তে প্রাণ প্রেয়সী। অথো য ভেষজং তব তস্য নো ধেহি জীবসে। ৯। প্রাণঃ প্রজা অনু বস্তে পিতা পুত্ৰমিব প্রিয়। প্রাণো হ সর্বস্যেশ্বররা যচ্চ প্রাণতি যচ্চ ন ৷ ১০৷

বঙ্গানুবাদ— সকল প্রাণধারীগণের শরীরে ব্যাপ্ত (অর্থাৎ সমষ্টিশরীরাভিমানী) হিরণ্যগর্ভরূপ সেই প্রাণকে নমস্কার। সেই সগুণব্রহ্মাত্মক, যাঁর বশে এই সংসার (অর্থাৎ চরাচরাত্মক জগৎ) বর্তমান, যিনি অতীতকাল হতে অবিচ্ছিন্ন, যিনি প্রাণীবর্গের ঈশ্বর, যে উদীরিতলক্ষণ প্রাণে (অর্থাৎ পরমব্রহ্মাত্মকে) সমগ্র জগৎ প্রতিষ্ঠিত, এমনই সেই প্রাণের উদ্দেশে নমস্কার। ১।

হে প্রাণ! তুমি ধ্বনি উৎসারণশালী, তুমি মেঘজালে প্রবিষ্ট এবং গর্জনশীল, এই হেন তোমাকে প্রণাম। তুমি, বিদজরূপে বিদ্যোতমান, তোমাকে প্রমাম। তারপরে বৃষ্টি-সৃষ্টিকারী তোমাকে প্রণাম ॥ ২॥

 যখন জগৎপ্রাণভূত সূর্যরূপী দেবতা মেঘধ্বনির ব্রীহি যব ইত্যদি গ্রাম্য ও, আরণ্য ঔষধি সমুদায়কে অভিলক্ষিত করে গোযূথমধ্যে বৃষভের ন্যায় গর্জন করতে থাকেন, তখন ঔষধি ইত্যাদি গর্ভধারণে সমর্থ হয়ে থাকে; অনন্তর বিবিধরূপে জাত (উৎপন্ন) হয়৷ ৩৷৷

বর্ষা-ঋতুকে প্রাপ্তির পর প্রাণদেব যখন ঔষধিসমূহের প্রতি গর্জন করেন, তখন সকলে হর্ষিত হয়। ভূমির উপরে (অর্থাৎ পৃথিবীর) সকল প্রাণীজাত আনন্দে পূর্ণ হয়ে যায়৷ ৪

যখন প্রাণদেব পৃথিবীর বিস্তীর্ণ ভূমিকে বর্ষায় সর্বদিকে সিক্ত করেন, তখন গো ইত্যাদি পশুসকল উৎসবানন্দে নৃত্য করতে থাকে। (কারণ বৃষ্টির পর পৃথিবীতে প্রভূত শস্য উৎপন্ন হলে তার দ্বারা তারা পুষ্টিলাভ করবে)। ৫৷৷

 প্রাণদেবের দ্বারা অভিসিক্ত ঔষধিসকল তাকে বলতে থাকে–হে প্রাণ! তুমি আমাদের সুন্দর গন্ধশালিনীরূপে সৃজন করো এবং আমাদের জীবনকে বর্ধিত করো ॥ ৬

হে প্রাণ! সম্মুখে আগমনশীল তোমাকে নমস্কার, এবং বিমুখে গমনশীল তোমাকে নমস্কার। যে স্থানেই তুমি অবস্থান করো, সেই স্থানেই তোমাকে নমস্কার। তোমাকে উপবিষ্ট অবস্থাতেও নমস্কার ॥ ৭৷

হে প্রাণদেব! প্রাণবায়ুর কর্মকরী (প্রাণব্যাপারং কুর্বতে) তোমাকে নমস্কার। তথা অপানবায়ুর কর্মকরী (অর্থাৎ অপানবৃত্ত্যাত্মক) তোমাকে নমস্কার। অভিমুখে গমন-স্বভাব (অর্থাৎ দেহের বাহিরে অবস্থিত) তোমাকে নমস্কার, দেহের মধ্যে অবস্থিত (প্রতিমুখং অঞ্চতে) তোমাকে নমস্কার। ৮

হে প্রাণ! তোমার প্রীতিবিষয়ক যে দুই শরীর আছে, সেই প্রাণ ও অপান বৃত্তিদ্বয়াত্মক বা অগ্নি-সোমাত্মক প্রেয়সীদ্বয় এবং তোমার সম্বন্ধি যে অমৃতপ্রাপক ঔষধি আছে, সেই সকলের নিকট হতে আমাদের জীবনের নিমিত্ত অমৃত-গুণ দানশালী ভেষজ গ্রহণ করে আমাদের প্রদান করো। ৯

প্রাণদেব দেব, তির্যক প্রাণী ও মনুষ্য ইত্যাদি প্রজাগণকে ক্রমানুসারে (নাড়ীর দ্বারা) আচ্ছাদিত করে (ব্যাপ্ত হয়ে আছেন, যেমন পিতা তার স্নেহের পাত্ৰভূত পুত্রকে নিজে (বস্ত্রের দ্বারা) আচ্ছাদন করে থাকেন। যারা জঙ্গমাত্মক বস্তুপ্রাণন ব্যাপারশালিনী, এবং যারা বস্তুপ্রাণন ব্যাপার হতে রহিত, পরন্তু প্রাণ তাদের মধ্যে নিরুদ্ধগতির দ্বারা বাস করেন, এই সকল জঙ্গম-স্থাববের সাথে যুক্ত জগৎসংসারের ঈশ্বর বা স্বামী প্রাণই। ১০

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –প্রাণায় নমঃ ইত্যাদি সূক্তত্ৰয়ং অর্থসূক্তং। অনেন উপনয়নকর্মণি মাণবকস্য নাভিং সংস্পৃশ্য আচার্য জপেৎ। উপনয়ন প্রক্রম্য সূত্রিতং…(কৌ. ৭/৬)। তথা আয়ুষ্কামঃ অনেনার্থসূক্তেন দক্ষিণং কর্ণং অনুমন্ত্রয়েত। তথা ঋষিহস্তে আয়ুষ্কামস্য শরীরং অভিমন্ত্রয়েত। সূত্রিতং হি।…(কৌ. ৭/৯)। তথা অস্যার্থসূক্তস্য আয়ুষ্যগণে পাঠাৎ…..বিনিয়োগগাহনুসন্ধেয়।–ইত্যাদি। (১১কা, ২অ. ৪সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ও এর পরবর্তী দুটি সূক্ত অর্থসূক্ত। এই সূক্তের দ্বারা উপনয়নকর্ম, আয়ুষ্কামী জনের কর্ম, আয়ুষ্যগণে পাঠ, মহাশান্তি কর্মে ব্রীহিযবময় মণিবন্ধন, গ্ৰহযজ্ঞে শনৈশ্চরের উদ্দেশে সমিধাদান বা উপস্থান করণ, শান্তির নিমিত্ত লক্ষহোমে এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়ে থাকে ॥ (১১কা, ২অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : প্রাণঃ

[ঋষি : ভার্গব বৈদর্ভি দেবতা : প্রাণ ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী]

প্রাণে মৃত্যুঃ প্রাণস্তা প্রাণং দেবা উপাসতে। প্রাণো হ সত্যবাদিনমুত্তমে লোক আ দধৎ। ১। প্রাণো বিরাট প্রাণো দেন্ত্রী প্রাণং সর্ব উপাসতে। প্রাণো হ সূর্যশ্চন্দ্ৰমাঃ প্রাণমাহুঃ প্রজাপতি। ২৷৷ প্রাণাপানৌ ব্রীহিযবান প্রাণ উচ্যতে। যবে হ প্রাণ আহিতোহপানো ব্রীহিরুচ্যতে ॥ ৩৷৷ অপানতি প্রাণতি পুরুষো গর্ভে অন্তরা। যদা ত্বং প্রাণ জিম্বস্যথ স জায়তে পুনঃ ॥ ৪ প্রাণমাহুর্মাতরিশ্বানং বাতো হ প্রাণ উচ্যতে। প্রাণে হ ভূতং ভব্যং চ প্রাণে সর্বং প্রতিষ্ঠিত ॥ ৫৷৷ আথবণীরাঙ্গিরসীর্দৈবীৰ্মনুষ্যজা উত। ওষধয়ঃ প্র জায়ন্তে যদা ত্বং প্রাণ জিম্বসি। ৬। যদা প্রাণো অভ্যবর্ষী বর্ষেণ পৃথিবীং মহীম্। ওষধয়ঃ প্র জায়ন্তেহথো যাঃ কাশ্চ বীরুধঃ ॥ ৭৷৷ যস্তে প্রাণেদং বেদ যস্মিংস্টাসি প্রতিষ্ঠিতঃ। সর্বে তস্মৈ বলিং হরানমুষ্মিংল্লোক উত্তমে। ৮। যথা প্রাণ বলিহৃতস্তুভ্যং সর্বাঃ প্রজা ইমাঃ। এবা তস্মৈ বলিং হরা যা শৃণবৎ সুশ্রবঃ ॥ ৯। অন্তৰ্গৰ্ভশ্চরতি দেবতাস্বাভূত ভূতঃ স উ জায়তে পুনঃ। স ভূতো ভব্যং ভবিষ্যৎ পিতা পুত্রং প্র বিবেশা শচীভিঃ ॥ ১০৷

 বঙ্গানুবাদ –প্রাণই শরীর হতে বহির্গত হয়ে মৃত্যু উপস্থিত করে থাকে বলে সর্বপ্রাণীর মরণের কর্তা। প্রাণই জীবনের কষ্টদায়ক জ্বর ইত্যাদি রোগ। দেহমধ্যবর্তী সেই প্রাণকে ইন্দ্রিয়রূপী দেবগণ উপাসনা করে থাকে। সেই প্রাণই সত্য-আচরণ-শীল মহানুভব জনকে উদ্ধৃষ্টতম লোকে স্থাপন করে থাকে। ১।

প্রাণ হেন দেব বিরাট অর্থাৎ স্থলপ্রপঞ্চাভিমানী ঈশ্বর। প্রাণই দেন্ত্রী অর্থাৎ আপন আপন ব্যাপারে সকলের প্রেরয়িত্রী পরদেবতা। সেই হেন প্রাণকে আপন অভিলষিত ফলসিদ্ধির নিমিত্ত সর্ব জন সেবা করে থাকে। প্রাণই সূর্য অর্থাৎ সকলের প্রেরক আদিত্য, প্রাণই চন্দ্রমা অর্থাৎ অমৃতময় সোম। (এই কারণেই প্রাণের অগ্নীষোমাত্মকত্ব উক্ত হয়)। তথাবিধ এই প্রাণকেই অভিজ্ঞ জনগণ প্রজাপতি অর্থাৎ প্রজাগণের স্রষ্টা বলে অভিহিত করেন। ২।

প্রাণ ও অপান প্রাণেরই প্রধানভূত বৃত্তিবিশেষ, তারাই ব্রীহি ও যব। যা বৃত্তিমা (মুখ্য) প্রাণ, তা-ই অনড্রান (বৃষ বা বলদ) নামে কথিত। (কারণ কর্ষণের দ্বারা ব্রীহিও যবের উৎপাদকরূপে অনডুহ প্রাণের স্বরূপ)। স্রষ্টাদেব যবের মধ্যে প্রাণবৃত্তি ও ধান্যের মধ্যে অপানবৃত্তিশালী বায়ুকে স্থাপিত করেছেন। এই উভয়ের দ্বারাই সকল প্রাণী আপন কার্য সাধিত করে থাকে। অতএব লোকরক্ষণের কারণে প্রাণই ব্রীহি-ব-অনড্রান (ধান্য-ব-বলদ) রূপে কথিত হয় ৷৷ ৩৷৷

প্রাণের অন্নাত্বকত্ব উক্ত হয়েছে। হে প্রাণ! অন্নরসের পরিণামরূপ শরীর ধারণশালী মনুষ্য স্ত্রীর গর্ভে তোমাকে প্রবিষ্ট করিয়েই অপানন ব্যাপার ও প্রাণন ব্যাপার করিয়ে থাকে। তুমি গর্ভস্থ শিশুকে মাতা কর্তৃক ভোজন-কৃত আহরের দ্বারাই পুষ্ট করে থাকো। পুনরায় সেই পুরুষ (অর্থাৎ শিশু) পুণ্য-পাপের ফল ভোগের নিমিত্ত ভূমির উপর জন্ম গ্রহণ করে। (অন্নই পুরুষশরীরে শুক্ররূপে উৎপন্ন হয়ে মাতৃ-শোনিতে মিশ্রিত হয়ে মাতৃগর্ভে সন্তানের উৎপাদক)। ৪

মাতরিশ্বা বায়ুকে প্রাণ বলা হয়। জগৎ সংসারের আধারভূত বায়ুই প্রাণ। সেই বায়ুরূপ প্রাণে অতীতকালে উৎপন্ন জগৎসংসার ও ভবিষ্যৎকালে উৎপাদিতব্য জগৎসংসার আশ্রয় রূপে বিদ্যমান থাকে। অধিকন্তু সেই প্রাণে এই সম্পূর্ণ বিশ্বই আশ্রিত হয়ে রয়েছে ॥ ৫॥

হে প্রাণ! যখন তুমি বর্ষার দ্বারা সকলকে তৃপ্ত করে থাকো, তখন অথবা মহর্ষির দ্বারা ও অঙ্গিরা ঋষির দ্বারা সৃষ্ট (অর্থাৎ আথবণ ও আঙ্গিরস গোত্রীয় ঋষিগণের দ্বারা সৃষ্ট), এবং দেবতাগণের দ্বারা রচিত, তথা মনুষ্যগণ কর্তৃক প্রকটনশালী সকল প্রাণী ও ঔষধিসমূহ উৎপন্ন হয় ৬

যখন প্রাণ বৃষ্টিরূপে পৃথিবীর উপর বর্ষণ করতে থাকে, তখনই ব্রীহি, যব ইত্যাদি গ্রাম্য ঔষধিগুলি এবং লতারূপিণী অন্যান্য আরণ্য ঔষধিগুলি উৎপন্ন হয়ে থাকে। ৭।

 হে প্রাণ! তুমি যে বিদ্বানের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে থাকো এবং যিনি তোমার উক্ত মহিমাকে মান্য করে থাকেন, সকল দেবতা সেই বিদ্বানকে শ্রেষ্ঠ লোকে (অর্থাৎ স্বর্গে) অমৃতত্ব প্রদান করে থাকেন। ৮।

 হে প্রাণ! দেবতা, তির্যক প্রাণী, মনুষ্য ইত্যাদি সকল প্রজা যে প্রকারে তোমার উপভোগের যোগ্য বলি (অর্থাৎ বলকারক অন্ন) প্রদান করে থাকে, তেমনই তোমার মহিমাজ্ঞ বিদ্বানের উদ্দেশেও করুক। ৯৷

 শুধু মনুষ্যের মধ্যেই নয়, দেবতাগণের মধ্যেও প্রাণ গৰ্ভরূপে বিচরণ করে থাকে। সকল দিকে ব্যাপ্ত হয়ে নিত্যবর্তমান সেই প্রাণ পুনরায় ভূতকালাবচ্ছিন্ন বস্তুতে ও ভাবিকালাবছিন্ন বস্তুতে প্রবিষ্ট হয়, যেমন পিতা আপন পুত্রের মধ্যে আপন অবয়বের দ্বারা প্রবেশ করেন। (অর্থাৎ প্রাণই পিতারূপে আপন আত্মজের মাধ্যমে পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হয়)। ১০।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ ইত্যাদি চতুর্থ সূক্তে উক্ত হয়েছে ৷ (১১কা, ২অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : প্রাণ:

 [ঋষি : ভার্গব বৈদর্ভি দেবতা : প্রাণ ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী]

একং পাদং নোৎখিদৃতি সলিলাদ্ধংস উচ্চর। যদঙ্গ স তমুৎখিদেন্নৈবাদ্য ন শ্বঃ স্যান্ন। রাত্রী নাহঃ স্যান্ন ব্যুচ্ছেৎ কদা চন॥১॥ অষ্টাচক্রং বৰ্তত একনেমি সহস্রাক্ষরং প্র পুরো নি পশ্চা। অর্ধেন বিশ্বং ভুবনং জজান যদস্যার্ধং কতমঃ স কেতুঃ। ২। যো অস্য বিশ্বজন্মন ঈশে বিশ্বস্য চেষ্টতঃ। অন্যেষু ক্ষিপ্রধন্বনে তস্মৈ প্রাণ নমোহস্তুতে৷ ৩৷ যো অস্য সর্বজন্মন ঈশে সর্বস্য চেষ্টতঃ। অতন্দ্রো ব্ৰহ্মণা ধীরঃ প্রাণো মানু তিতু। ৪ ঊর্ধ্বঃ সুপ্তেম্ভ জাগার ননু তির্য নি পদ্যতে। ন সুপ্তমস্য সুপ্তেম্বনু শুশ্রাব কশ্চন ॥ ৫॥ প্রাণ মা মৎ পর্যাবৃতো ন মদনন্যা ভবিষ্যসি। অপাং গর্ভমিব জীবসে প্রাণ বমি ত্বা ময়ি ॥ ৬৷৷

 বঙ্গানুবাদ –জগৎপ্রাণভূত সূর্য হংসস্বরূপ (হন্তি গচ্ছতীতি হংসঃ)। এই সূর্য সলিল হতে উত্থিত হয়ে একটি পাদ নিশ্চলরূপে রক্ষা করে অন্য পাদে পরিভ্রমণ করছেন। হে দেবদত্ত (অঙ্গ)! সূর্য যদি নিহিত পাদ ক্ষেপণ করতেন (উৎখিদেৎ), তবে যত্রতত্র গমন করতে পারতেন। তাহলে কালপরিচ্ছেদক সূর্যের পরিস্পন্দনের অভাবে অদ্য, আগামী কল্য, রাত্রি, দিবা এইরকম বিভিন্ন ব্যবহার হতে পারতো না। সূর্যোদয়ের অসম্ভাব্যমানে তার পুরোভাবিনী উষাও উদিত হতো না। (অর্থাৎ জগৎসংসার অন্ধকারাবৃত হয়ে যেতো)।–অথবা সকল শরীরে ব্যাপ্ত প্রাণও হংস নামে কথিত। (হন্তি গচ্ছতি কৃৎস্নশরীরং ব্যাপ্য বৰ্তত ইতি হংস)। ঐ সলিল-উপলক্ষিত, পঞ্চ-ভূতাত্মক দেহ প্রাণবৃত্তিরূপ এক পাদের দ্বারা উপরে উত্থিত হয়ে অপানবৃত্তিশালী অপর পাদকে ক্ষেপণ করে না (ননাৎক্ষিপতি)। যদি প্রাণ সেই অপানবৃত্তিশালী পাদকে শরীর মধ্য হতে উৎক্ষেপণ করে (উৎক্ষিপেৎ), তবে কৃৎস্ন শরীর হতে প্রাণ নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলে মৃত শরীরের কালবিভাগ থাকে না। কদাপি তার অন্ধকারেরও. নিবৃত্তি ঘটে না। (এই কারণে জগৎকে সজীব রাখতে আপন এক পাদকে, স্থির রাখে)। ১।

(রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্র এই সপ্তধাতু এবং ওজঃ অর্থাৎ বল নিয়ে মোট অষ্টধাতু। শরীরস্থ এই) অষ্টধাতুরূপ যে চক্র আছে, তাতে যুক্ত প্রাণ এক নেমি। (এখানে শরীরকে রথের সাথে তুলনা করা হয়েছে। রথের অষ্টচক্র যেমন একটি নেমির দ্বারা যুক্ত শরীরও তেমনই অষ্টধাতুরূপ চক্র ও প্রাণরূপ নেমি সমন্বিত)। এই চক্র সহস্র অর্থাৎ বহু অক্ষের দ্বারা যুক্ত। (শরীরও তেমনই প্রাণপরিষ্পবশে বহুবিধ শব্দের সাথে যুক্ত)। এমনই রথাত্মক শরীর প্রথমে পূর্বভাগে প্রবর্তিত অর্থাৎ নিয়োজিত বা চালিত হয়, পরে অপর ভাগে নিবর্তিত অর্থাৎ প্রত্যাবর্তিত হয়। (অর্থাৎ প্রাণ প্রাণীর শরীরে প্রবিষ্ট হয়ে প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির সৃষ্টি করে। এই প্রাণ আপন অর্ধাংশের দ্বারা সকল ভূতজাতের শরীরে প্রাণবায়ুরূপে প্রবেশ করে থাকে। এবং তার অপর অংশ অপরিচ্ছিন্ন। এইট কিরকম? এটি নির্ধারণ করা যায় না। (কারণ, ঐ অবশিষ্ট স্বরূপ পরব্রহ্মাত্মক অর্থাৎ অনন্ত)। ২।

যে প্রাণ জন্মধারণ করণশীল সচরাচর বিশ্বের অধিপতি, সে দেহধারীগণের দেহে শীঘ্রতার সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। এমনই মহিমাশালী, হে প্রাণ! তোমাকে নমস্কার ৷৩৷

 যে প্রাণ জগৎসংসারের অধিপতি, সে প্রমাদরহিত হয়ে অনবচ্ছিন্নরূপে আমাতে– বর্তমান থাকুক। ৪

হে প্রাণ! তুমি নিদ্রা হতে উত্থিত হয়ে নিদ্ৰাপরবশ প্রাণীবর্গকে তাদের রক্ষণার্থে সচেতন হও। সুপ্ত প্রাণী তির্যবস্থিত হয়ে (অর্থাৎ বক্রভাবে অবস্থিত হয়ে) শায়িত থাকে। (অতএব তাদের জাগ্রত করো)। (হিন্দী ভাষ্যকারের উক্তি–প্রাণী শয়ন করে, পরন্তু প্রাণের শয়ন ও কখনও শ্রুত হয় না)। ৫৷৷

হে প্রাণ! তুমি আমার প্রতি বিমুখ হয়ো না। আমা হতে অন্যত্র হয়ে আমি জীবনের নিমিত্ত তোমাকে আপন শরীরে ধারণ করছি। ৬। টীকা –উপযুক্ত সূক্তটিও চতুর্থ সূক্তের ন্যায় বিনিয়োগ করণীয় ॥ (১১কা, ২অ, ৬সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *