2 of 3

০৭।০৮ সপ্তম কাণ্ড : অষ্টম অনুবাক

অষ্টম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : অগ্নিঃ
[ঋষি : শৌনক (সম্পৎকামঃ) দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, বৃহতী, জগতী ]

অভ্যৰ্চত সুষ্ঠুতিং গব্যমাজিমশ্বাসু ভদ্রা দ্রবিণানি ধত্ত। ইমং যজ্ঞং নয়ত দেবতা নো ঘৃতস্য ধারা মধুমৎ পবন্তাম্ ॥১॥ ময্যগ্রে অগ্নিং গৃহামি সহ ক্ষত্রেণ বৰ্চসা বলেন। ময়ি প্রজাং ময্যায়ুর্দধামি স্বাহা ময্যগ্নিম ॥ ২॥ ইহৈবাগ্নে অধি ধারয়া রয়িং মা নি ক্রন পূর্বচিত্তা নিকারিণঃ। ক্ষত্রেণাগ্নে সুষমমস্তু তুভ্যমুপসত্তা বর্ধতাং তে অনিষ্টতঃ ॥ ৩৷৷ অগ্নিরুষসামগ্রমখ্যদন্থহানি প্রথমো জাবেদাঃ। অনু সূর্য উষসো অনু রশ্মীননু দ্যাবাপৃথিবী আ বিবেশ ॥ ৪৷৷. প্রত্যগ্নিরুষসামগ্রমখ্যৎ প্রত্যহানি প্রথমে জাতবেদাঃ। প্রতি সূর্যস্য পুরুধা চ রশ্মী প্রতি দ্যাবাপৃথিবী আ ততান ॥৫৷৷ ঘৃতং তে অগ্নে দিব্যে সধস্থে ঘৃতেন ত্বাং মনুরদ্যা সমিন্ধে। ঘৃতং তে দেবীপ্ত্য আ বহন্তু ঘৃতং তুভ্যং দুতাং গাবো অগ্নে। ৬।

বঙ্গানুবাদ –হে গো-সকল! সুন্দর স্তুতির যোগ্য অগ্নির পূজা করো। (অর্থাৎ গোসঙ্ ইত্যাদি লাভার্থে স্তয়মান অগ্নির সেবা করো–অথবা আজি শব্দের দ্বারা বিজিগীষু বা জয়াভিলাষীগণের লক্ষ্য দেশ বোঝানো হচ্ছে)। আমাদের মধ্যে মঙ্গলময় ধনরাশিকে প্রতিষ্ঠিত করো। এই যজ্ঞে অগ্নি প্রমুখ দেবতাগণকে আনয়ন করো। ঘৃতের মধুর ধারাসমূহ সেই দেবতাগণের লব্ধ হোক। ১।

অগ্রে ক্ষাত্ৰবল ও ক্ষত্ৰতেজঃ লাভের নিমিত্ত আহুতি সমুদায়ের আধার অগ্নিকে ধারণ করছি। (অর্থাৎ শারীরিক বল প্রাপ্তির নিমিত্ত অগ্নিকে আপন অধীন করে নিচ্ছি)। এর ফলে আমি প্রজা অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদি সমন্বিত লক্ষণ ধারণ করছি। আরোগ্যের নিমিত্ত বৈশ্বানর অগ্নিকে ধারণ করছি। অগ্নিতে এই সমিধসমূহ উত্তমভাবে সুহূত হোক। ২।

হে অগ্নি! আমরা তোমার পরিচারণশীল। আমাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য প্রতিষ্ঠিত করো। আমাদের দ্বেষ-করণশালী যারা, তারা যেন যাগের মাধ্যমে তোমাকে তাদের অধীন করে নিতে না পারে। তুমি আপন রূপে আপন বলের সাথে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হও, যাতে আমরা তোমার অনুগ্রহ লাভে ধন্য হতে পারি। তোমার সেবক এই যজমানও কারো অপেক্ষা নূন না হয়ে (বা হিংসিত না হয়ে) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোন ॥৩

তাবৎ উষার মুখেই অগ্নি প্রদীপ্ত হয়ে থাকেন। দিবাভাগেও এই জাতবেদা (অর্থাৎ জাতমাত্রকেই জ্ঞাত) অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে থাকেন এবং তিনি সূর্যরূপী হয়ে উষাকেও প্রকাশিত করে থাকেন। এই সূর্যরূপশালী অগ্নিদেব আকাশ ও পৃথিবীর সর্বত্রই প্রকাশিত হয়ে থাকেন। ৪

এই অগ্নি প্রত্যেক উষাকালে প্রকাশিত হয়ে থাকেন, প্রত্যেক দিবাভাগে জাতবেদা অগ্নি প্রকাশিত হয়ে থাকেন। ইনি সূর্যরূপের দ্বারা রশ্মিসমূহেও স্বয়ং ব্যাপ্ত হয়ে থাকেন। ক্রমে ক্রমে ইনি আকাশ ও পৃথিবীতে আপন প্রকাশ বিস্তার করে থাকেন। ৫।

হে অগ্নি! তোমার ঘৃত দেববর্গের নিবাসস্থান আকাশে রয়েছে। মনু নামক রাজর্ষি আজিও (এখনও) অগ্নিকে আজাহুতির দ্বারা সম্বর্ধিত করছেন। হে অগ্নি! তোমার নপ্তা (অর্থাৎ পৌত্র) জলসমূহ আজ্যকে তোমার সম্মুখে বহন করে আনয়ন করুক এবং গাভীগণ তোমার উদ্দেশে ধৃতকে দোহন করুক৷ ৬ ৷৷

.

দ্বিতীয় সূক্ত : পাশমোচনম

[ঋষি : শুনঃশেপ দেবতা : বরুণ ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ]

অল্প তে রাজন্ বরুণ গৃহহা হিরণ্যয়ো মিথঃ।। ততো ধৃতব্রতো রাজা সর্বা ধামানি মুঞ্চত্ ॥১॥ ধামোধান্নে রাজমিতো বরুণ মুঞ্চ নঃ। যদাপো অগ্ন্যা ইতি বরুণেতি যদূচিম তততা বরুণ মুঞ্চ নঃ ২৷৷. উদুত্তমং বরুণ পাশমম্মদবাধমং বি মধ্যমং শ্ৰথায়। অধা বয়মাদিত্য ব্রতে তবানগসো অদিতয়ে স্যাম ॥ ৩॥ প্ৰাম্মৎ পাশান বরুণ মুঞ্চ সর্বান য উত্তমা অধমা বারুণা যে। দুম্বপ্ন্যং দুরিতং নি স্বাস্মদথ গচ্ছেম সুকৃতস্য লোক ॥ ৪

বঙ্গানুবাদ –হে রাজন, হে সকল দেবতার স্বামী, হে পাপনিবারক বরুণদেব! জলের অভ্যন্তরে তোমার অসাধারণ সুবর্ণময় যে গৃহ আছে, তা অন্য কারো দ্বারা অভিগম্য নয়। অতএব ধৃতব্রত (অর্থাৎ সত্যধর্মা) রাজা বরুণ আমাদের মধ্যে স্থাপিত আপন স্থানগুলিকে পরিত্যাগ করুন। (জলোদর ইত্যাদি রোগসমূহ বরুণ কর্তৃক সৃষ্ট জলের মধ্যে তারই নিবাসস্থান রয়েছে। অতএব তিনি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে জলোদর ইত্যাদি ব্যাধিস্থানগুলি পরিত্যাগ করে অসীম জলরাশির মধ্যে আপন গৃহে বাস করুন–এটাই বক্তব্য)। ১।

হে রাজন, হে বরুণ! আমাদের শরীরে অবস্থিত সকল রোগস্থান হতে আমাদের মুক্ত করো। আমাদের অর্জিত পাপ হতেও আমাদের মুক্ত করো। আমরা জলসমূহ, গাভীসমূহ ও বরুণ প্রমুখ দেবতার নামোচ্চারণ পূর্বক যে সকল শপথবাক্য উচ্চারণ করে তা রক্ষা করিনি, সেই শপথকরণজনিত পাপ হতেও আমাদের মুক্ত করো। ২৷৷

হে বরুণ! আমাদের শরীরের ঊর্ধ্বভাগে স্থিত, নিম্নের ভাগে স্থিত এবং মধ্যভাগে স্থিত তোমার পাশ বহিস্কৃত করে বিনষ্ট করে দাও। অনন্তর, হে আদিত্য (অদিতি-পুত্র) বরুণ! তোমার ব্রতকর্মে যাগযোগ্যতা সিদ্ধির কারণে আমরা সকল পাপ হতে বিমুক্ত হয়ে অবিনাশময় স্থিতিতে স্থিতিশালী হবো॥ ৩।

হে বরুণ! সকল পাপ-পাশ হতে আমাদের তুমি মুক্ত করে দাও। তোমার যে উত্তম ও অধম পাশ আছে, সেগুলি হতে আমাদের মুক্ত করো। দুঃস্বপ্নযুক্ত পাপরাশি হতে আমাদের রক্ষা করো। এর পরে আমরা পুণ্যলোভে প্রয়াণ করবো॥ ৪।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ– অত্র অভ্যৰ্চত ইতি আদ্যে সূক্তে ষডুচেন সম্পৎকামঃ সর্বফলকামো বা রে অগ্নিং যজেত উপতিষ্ঠেত বা।…ব্রহ্মচারিণঃ স্বাগ্নিশপ্রায়শ্চিত্তার্থং ময্যগ্রে ইতি পঞ্চর্চেন পঞ্চসমিধ আদধ্যাৎ। সুত্রিতং হি।…জলোদরভৈষজ্যার্থং নদ্যোঃ সঙ্গমে মণ্ডপং কৃত্বা অসু তে রাজ ইতি চতুঋচেন উষ্ণোদকং সম্পত্য অভিমন্যু পিঞ্জুলীভিস্তস্মিন্ মণ্ডপে ব্যাধিতং আপ্লাবয়েৎ। তথা অনেন চতুঋচেন অভিমন্ত্রিতশীতোদকেন তস্মিন মণ্ডপে ব্যাধিতং পিঞ্জুলীভিঃ সহ অবসিঞ্চেদ বা। সূত্রিতং হি।…পশুতন্ত্রে হৃদয়শূলোদ্বাসনানন্তরং অল্প তে রাজন ইত্যস্য জপে বিনিয়োগঃ!…তথা শবসংস্কারানন্তরং উদ্ৰকসমীপে ব্রহ্মা উদুত্তম ইতি জপেৎ। অন্ত্যেষ্ট্যাদিষু স্বস্ত্যয়নার্থং স্মৎ পাশা ইতি জপেৎ৷৷ (৭কা, ৮অ. ১-২সূ)।

টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তের ছয়টি মন্ত্র সম্পষ্কামী বা সফলকামী কর্তৃক অগ্নির উদ্দেশে যাগ বা উপাসনায় বিনিয়োগ হয়। ময্যগ্রে ইত্যাদি পাঁচটি মন্ত্র স্বাগ্নিক ব্রহ্মচারীর অগ্নিনাশের প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্ত বিনিযুক্ত হয়। জলোদর ব্যাধির ভৈষজ্যের নিমিত্ত নদীর সঙ্গমে মণ্ডপ নির্মাণ পূর্বক অসু তে রাজন্ ইত্যাদি চারটি মন্ত্রের দ্বারা উষ্ণজল বা শীতলজল অভিমন্ত্রিত করে ব্যাধিতকে সেই মণ্ডপে স্নান বা অভিসিঞ্চন করণীয়। পশুতন্ত্রে হৃদয়শূল উদ্বাসনের পর দ্বিতীয় সূক্তটি জপে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। শবসংস্কারের পর ব্রহ্মা (ঋত্বিক) কর্তৃক উদুত্তম ইত্যাদি (৩য়) মন্ত্রটি জপনীয়। অন্ত্যেষ্টি ইত্যাদি স্বস্ত্যয়ন কর্মে শেষ মন্ত্রটি জপনীয় ॥ (৭কা, ৮অ. ১-২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : ক্ষত্রভৃদগ্নিঃ

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : অগ্নি, ইন্দ্র ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

অনাদৃষ্যো জাতবেদা অমর্তো বিরাডগ্নে ক্ষত্রভূদ দীদিহীহ। বিশ্বা অমীবাঃ প্রমুঞ্চ মানুষীভিঃ শিবাভিরদ্য পরিপাহি নো গয়ম্ ॥১॥ ইন্দ্র ক্ষত্রমভি বামমোজোহজায়থা বৃষভ চর্ষণীনাম। অপানুদো জনমমিত্রায়ন্তমুরুং দেবেভ্যো অকৃপোরু লোক। ২। মৃগো ন ভীমঃ কুচরা গিরিষ্ঠাঃ পরাবত আ জগম্যাৎ পরস্যাঃ। সৃকং সংশায় পবিমিন্দ্র তিগ্মং বি শত্রু তাঢ়ি বি মৃধো নুদস্ব ৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তুমি অনাধৃষ্য (অর্থাৎ দুর্দমনীয়); তুমি জাবেদা (অর্থাৎ জাত। প্রাণীমাত্রেরই জ্ঞাতা)। তুমি অমরণশীল; তুমি বলের ধারণশালী। তুমি এই কর্মে প্রদীপ্ত হয়ে ওঠো এবং মানুষের মঙ্গলময় রক্ষা সাধনের দ্বারা সকল ব্যাধি হতে প্রকর্ষের সাথে মুক্ত করে আমাদের রক্ষা করো ৷৷ ১।

 হে ইন্দ্র! তুমি ক্ষয় হতে রক্ষা-করণশালী বলের সাথে প্রকট হয়েছে। হে অভীষ্টবৰ্ষক অগ্নি! তুমি প্রকট হয়ে শত্রুর সমান ব্যবহার-করণশীল পুরুষগণকে নাশ করে দিয়েছো এবং দেবতাগণকে নিবাসযোগ্য স্বর্গলোক প্রাপ্ত করিয়েছে। ২।

কুৎসিতচরণ, পর্বতবাসী সিংহের ন্যায় বিকরাল সেই ইন্দ্র স্বর্গ হতে আগমন করুন। হে ইন্দ্র! তুমি আপন তীক্ষ্ণ বজ্রের দ্বারা আমাদের শত্রুগণকে বিনাশ করো যুদ্ধের নিমিত্ত প্রস্তুত শত্রুগণকে অবদমিত করো (বা বিতাড়িত করে দাও)। ৩।

.

চতুর্থ সূক্ত : অরিষ্টনেমিঃ

[ঋষি : অথর্বা (স্বস্ত্যয়নকামঃ) দেবতা; তার্ক্ষ্য ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

ত্যমু যু বাজিনং দেবহৃতং সহোবানং তরুতারং থানা। অরিষ্টনেমিং পৃতনাজিমাশুং স্বস্তয়ে তাক্ষ্যমিহা হুবেম ॥ ১।

 বঙ্গানুবাদ –আমরা তৃপুত্র সুপর্ণকে স্তুতির (বা মঙ্গলের) নিমিত্ত এই কর্মে আহ্বান করছি। দেবতাগণ এঁর নিমিত্তই সোমকে আনয়ন করেছিলেন; ইনি অন্নবস্ত বা বলবন্ত (অর্থাৎ অভিভবনশক্তিমন্ত), শত্রুগণের পরাভবকারী, সোম আহরণকালে শীঘ্র তরণকারী (তরীতারং)। ইনি নমনশীল আয়ুধ সদৃশ (অর্থাৎ ইনি অতিরস্কৃত আয়ুধশালী) ॥১॥

.

পঞ্চম সূক্ত : ত্রাতা ইন্দ্রঃ

[ঋষি : অথর্বা (স্বস্ত্যয়নকামঃ) দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

ত্রাতারমিন্দ্রমবিতারমিন্দ্রং হবেহবে সুহবং শারমিন্দ্র। হুবে নু শক্রং পুরুতমিং স্বস্তি ন ইন্দ্রো মঘবান কৃণোতু ॥১॥

বঙ্গানুবাদ— প্রাপ্ত ও প্রাপ্তব্য ভয়ের ত্রাতা (অর্থাৎ রক্ষক) ইন্দ্রকে আমি আহূত করছি। সকল যুদ্ধে সহজে আহ্বানীয় বীর ইন্দ্রকে আহ্বান আহূত করছি। শত্রু (শক্ত বা সমর্থ), পুরুহুত (সর্বত্র আহূত) ইন্দ্রকে ক্ষিপ্রতার সাথে আহ্বান করছি। সেই মদ্যবান্ (ধনবান) ইন্দ্র আমাদের অবিনাশী মঙ্গল সাধিত করুন। ১৷৷

.

ষষ্ঠ সূক্ত: ব্যাপকো দেবঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : রুদ্র ছন্দ : জগতী ]

 যো অগ্নৌ রুদ্রো যো অস্বন্তর্য ওষধীবীরুধ আবিবেশ। য ইমা বিশ্বা ভুবনানি চাপে তস্মৈ রুদ্রায় নো অগ্নয়ে ॥ ১।

 বঙ্গানুবাদ –যে রুদ্রদেব যজ্ঞাহরূপে অগ্নিতে, বরুণরূপে জলে এবং সোমরূপে লতাসমূহে প্রবিষ্ট, তিনি এই নামরূপাত্মন পরিদৃশ্যমান সকল ভুবন ও ভূতসমূহকে সৃষ্টি করতে সমর্থ। সেই সর্বজগৎস্রষ্টা, সর্বজগতে অনুপ্রবিষ্ট রুদ্ৰাত্মক অগ্নিকে নমস্কার। অথবা অঙ্গনাদিগুণবিশিষ্ট রুদ্রায় নমোস্তু।১।

.

সপ্তম সূক্ত : সর্পবিষনাশনম্

[ঋষি : গরুত্মান দেবতা : তক্ষক ছন্দ : বৃহতী]

অপেহ্যরিরস্যরিবা অসি। বিষে বিষমপৃথা বিষমিদ বা অপৃথাঃ। অহিমেবাভ্যপেহি তং জহি। ১।

বঙ্গানুবাদ –হে বিষ! তুই এই দংশিত পুরুষ হতে গমন কর। তুই সকলের শত্ৰু, এই কারণে বিষশালী সপেই প্রবেশ কর। হে বিষ! তুই যে যার বিষ, সেই সর্পকেই প্রাপ্ত হয়ে তাকে বিনষ্ট কর ॥১॥

.

অষ্টম সূক্ত : দিব্যা আপঃ

 [ঋষি : সিন্ধুদ্বীপ দেবতা : অগ্নি ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

অপো দিব্যা অচায়িষং রসেন সমপৃহি। পয়স্বানগ্ন আগমং তং মা সং সৃজ বচসা ॥ ১। সং মাগ্নে বচসা সৃজ সং প্রজয়া সমায়ু। বিদ্যুর্মে অস্য দেবা ইন্দ্রে বিদ্যাৎ সহ ঋষিভিঃ ॥ ২॥. ইদমাপঃ প্র বহতাবদ্যং চ মলং চ যৎ। যচ্চাভিদুদ্ৰোহামৃতং যচ্চ শেপে অভীরুণম ॥ ৩॥ এখোহস্যেধিষীয় সমিদসি সমেধিষীয়। তেজোহসি জেতো ময়ি ধেহি। ৪।

বঙ্গানুবাদ –আমি দিব্য জলসমূহকে স্নানার্থে সংগ্রহ করছি, তাতে ঔষধি-রস সম্মিলিত করছি। এই রসে সম্যক সিক্ত হয়ে তেজস্বী হয়ে উঠবো। হে অগ্নি! আমি হবির্যাগের উদ্দেশে দুগ্ধ সহ তোমার নিকট আগত হয়েছি; সমীপাগত সেই আমাকে তুমি আপন তেজের সাথে যুক্ত করো। ১

হে অগ্নি! আমাকে বলের সাথে যুক্ত করো, পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি প্রজা তথা জীবনের (অর্থাৎ আয়ুর) সাথে যুক্ত করো। দেববর্গ আমাকে পূত বলে জ্ঞাত হোন; তথা ঋষিগণ বা অতীন্দ্রিয়দশী মুনিবর্গ সহ ইন্দ্রও আমাকে পূত বলে জ্ঞাত হোন, অথবা এমন যে আমি, আমার অভিমত ফল সাধনের নিমিত্ত জ্ঞাত হোন। ২৷

হে জলরাশি! আমার পাসমূহকে বিদূরিত করো। যা নিন্দারূপ এবং যা কলঙ্ককর (দুরিত), পিতা ইত্যাদি গুরুজনের উচিত আদর অকরণজনিত স্লোহচারিতা, ঋণ গ্রহণ করে উত্তমর্ণকে তা পরিশোধ না করে শপথ-করণজনিত মিথ্যাচারিতা, অথবা অন্য অসৎ আচরণের ফলরূপ পাপসমূহকে আমা হতে অপনোদিত করো। ৩।

 হে অগ্নি! তুমি হবির দ্বারা যেমন প্রবৃদ্ধ হয়েছে (অথবা সমিদাধানের দ্বারা যেমন প্রদীপ্ত হয়ে থাকো), তেমনই আমিও ফলের দ্বারা তেজস্বী হবো। হে অগ্নি! তুমি দীপ্তিমান বা তেজঃসাধনভূত, আমাতেও তাদৃশ তেজঃ সংস্থাপিত করো। ৪

.

নবম সূক্ত : শত্ৰুবলনাশনম্

 [ঋষি : অঙ্গিরা দেবতা : মন্ত্রে উক্ত ছন্দ : গায়ত্রী, বৃহতী, জগতী]

অপি বৃশ্চ পুরাণব ব্ৰততেরিব গুষ্পিত। ওজো দাসস্য দম্ভয় ॥ ১। বয়ং তদস্য সদ্ভুতং বস্কিন্দ্রেণ বি ভজামহৈ। স্লাপয়ামি ভজঃ শিং বরুণস্য ব্ৰতেন তে। ২। যথা শেপো অপায়াতৈ স্ত্রী চাসদনাবয়াঃ। অবস্থস্য কুদীবতঃ শাঙ্কুরস্য নিততদিনঃ যদাততমব তৎ তনু যদুত্ততং নি তৎ তনু ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— হে অগ্নি! প্রাচীন শত্রুর ন্যায় ইদানীন্তন (বা নূতন) এই জাররূপ শত্রুকে ব্রততীর (অর্থাৎ লতার) শাখাসমূহের মতো ছিন্নভিন্ন করে দাও। জাররূপী শত্রুর প্রজনন-সামর্থ্যকে (বা বীর্যকে)-ও নষ্ট করে দাও। ১৷

আমরা ঐ পুরোবর্তী জাররূপী শত্রুর একত্র সম্পাদিত (সস্তৃতং) ধনসমূহ ইন্দ্রের বলের দ্বারা ভাগ করে গ্রহণ করবো। হে দুষ্ট জার! তোমার অপত্যপ্রজননসমর্থ, শ্বেতবর্ণ রেতঃকে আমি বরুণের শস্ত্রের (বা ব্রতকর্মের) সাহায্যে ক্ষীণ করে দেবো৷৷ ২

এই দুষ্ট জারের পুং-প্ৰজনম ইন্দ্রিয় (শেপঃ) অপগত হয়ে যাক, তার পরনারী সম্ভোগের ক্ষমতা সম্পূর্ণ তিরোহিত হয়ে যাক। হে দেব! এমন করো ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অনাদৃষ্যো জাতবেদাঃ ইতি প্রথমায়া ঋচঃ অগ্নপস্থানে লৈঙ্গিকো বিনিয়োগঃ। ইন্দ্ৰমহাশ্যে উৎসবে ইন্দ্ৰ ক্ষত্ৰং ইত্যনয়া হবিজুহুয়াৎ। ত্যমূ যু ত্রাতারং ইত্যয়য়াঃ স্বস্ত্যয়নগণে পাঠাদ উপাকর্মণি আজ্যহোমে বিনিয়োগ।…তথা অন্ত্যেষ্ট্যাদিষু স্বস্ত্যয়নার্থং ত্যমূ যু ত্রাতারং ইতি জপেৎ।…স্বস্ত্যয়নকামঃ যো অগ্নৌ ইতি ঋচা রুদ্ৰান্ যজেত উপতিষ্ঠেত বা।..দর্শপূর্ণমাসয়ো যো অগ্নৌ ইত্যনয়া আগ্নীখ্রঃ সন্মার্গং অগ্নৌ নিক্ষিপেৎ। উক্তং বৈতানে।…তথা অগ্নিষ্টোমে শালাদহনানন্তরং যো অগ্নৌ ইত্যনেন অগ্নয়ে নমস্কারং কুর্যাৎ…সর্ববিষভৈষজ্যার্থং অপেহি ইতানয়া তৃণানি প্রজ্বাল্য সর্পাভিমুখং প্রক্ষিপেৎ। দষ্টস্থানে নিক্ষিপে বা। সূত্রিতং হি।…তথা বেদব্রতাদিষু অপো দিব্যা ইতি দ্বচেন এধোসি ইত্যনয়া চ তিঃ সমিধ আদধ্যাৎ। সূত্রিতং হি।…তথা আচার্যৰ্মরণে তৎসংস্কারানন্তরং অপো দিব্যাঃ ইতি চতুভিঃ ব্রহ্মচারী স্নায়াৎ! ত উক্তং কৌশিকেন।…অগ্নিকার্যে। ব্রহ্মচারী ইদং আপঃ ইতি হস্তৌ প্রক্ষালয়েৎ..তেজোসি ইতি মন্ত্রেণ মুখং বিমৃজ্যাৎ। সূত্রিতং হি।…জারোচ্চাটনার্থং অপি বৃশ্চ ইতি তৃচেন জারং দৃষ্টা বদেৎ। তথা অনেন পাষাণং অভিমন্ত্র জারসঙ্গমস্থানে প্রক্ষিপেৎ। সূত্রিতং হি। ….ইত্যাদি। (৭কা, ৮অ. ৩-৯সূ)। টীকা –উপযুক্ত তৃতীয় সূক্তের প্রথম মন্ত্রটি অগ্নির উপস্থাপনে বিনিয়োগ হয়। দ্বিতীয় মন্ত্র ইন্দ্ৰমহাখ্য উৎসবে হবির্যাগে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। চতুর্থ ও পঞ্চম সূক্তদ্বয় স্বস্ত্যয়নগণে পঠিত আজ্যহোমে বিনিয়োগ হয়। অন্ত্যেষ্টি ইত্যাদি স্বস্ত্যয়নার্থেও এই দুটি জপনীয়। স্বস্ত্যয়নকামীর পক্ষে ষষ্ঠ সূক্তটি রুদ্রের উদ্দেশে যাগ-করণে বা উপাসনায় বিনিযুক্ত হয়। এতদ্ব্যতীত এই সূক্তমন্ত্রটি দর্শপূর্ণমাসে আগ্নীর্ধের অগ্নি-পূজনে অবলম্বনীয় এবং অগ্নিষ্টোমে শালাদহনের পর এই মন্ত্র অগ্নির নমস্কারে প্রযোজ্য। সর্ববিষভৈষজ্যের নিমিত্ত সপ্তম সূক্তের মন্ত্রের দ্বারা তৃণ প্রজ্বলিত পূর্বক সৰ্পাভিমুখে প্রক্ষেপ বা দষ্টস্থানে নিক্ষেপ করণীয়। বেদব্রত ইত্যাদিতে অষ্টম সূক্তের প্রথম তিনটি মন্ত্র সমিধ আহরণে প্রযুক্ত হয়। এই অষ্টম সূক্তের চারটি মন্ত্রই আচার্যের মরণে তার সংস্কারের পর ব্রহ্মচারীর স্নানকর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। অগ্নিকর্মে ইদং আপঃ মন্ত্রে ব্রহ্মচারী তার হস্তদ্বয় প্রক্ষালন করেন, তেজোসি মন্ত্রে তিনি মুখ মার্জন করেন। নবম সূক্তটি জার-উচ্চাটন কর্মে সূত্রোক্তপ্রকারে বিনিয়োগ করণীয়। (৭কা.৮অ.৩-৯সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *