2 of 3

০৭।০৬ সপ্তম কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক

ষষ্ঠ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : রম্যং গৃহম
[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : গৃহ, বাস্তোষ্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

 উর্জং বিভ্র বসুনিঃ সুমেধা অঘোরেণ মিত্রিয়েণ। গৃহানৈমি সুমনা বন্দমানো রমধ্বং যা বিভীত মৎ। ১ইমে গৃহা ময়োভুব ঊর্জন্তঃ পয়স্বন্তঃ। পূর্ণা বামেন তিষ্ঠন্তস্তে নো জানৰ্বায়তঃ ॥ ২॥ যেষামধ্যেতি প্রবস যেষু সৌমনসসা বহুঃ। গৃহানুপ হুয়ামহে তে নো জানত্ত্বায়তঃ ॥ ৩॥ উপহৃতা ভূরিধনাঃ সখায়ঃ স্বাদুসংমুদঃ। অক্ষুধ্যা অতৃষ্যা শু গৃহা মাম্মদ বিভীতন ॥ ৪৷৷ উপহৃতা ইহ গাব উপহৃতা অজাবয়ঃ। অথো অন্নস্য কীলাল উপহুতো গৃহেযু নঃ ॥ ৫৷৷ সূতাবন্তঃ সুভগা ইরাবন্তো হসামুদাঃ। লামুদা। অতৃষ্যা অক্ষুধ্যা স্ত গৃহা মাস্মদ বিভীতন ॥ ৬৷৷ ইহৈব স্ত মানু গাত বিশ্বা রূপাণি পুষ্যত। ঐষ্যামি ভদ্রেণা সহ ভূয়াংসো ভবতা ময়া ॥ ৭৷

বঙ্গানুবাদ –আমি মিত্র ভাবযুক্ত স্নেহময় নেত্রে দর্শন করতে করতে, অন্নকে ধারণ করে, ধন-ধারণশালী হয়ে, শোভন বুদ্ধিতে ধন ইত্যাদি সম্পত্তির দ্বারা প্রসন্ন হয়ে স্তুতি করতে করতে আপন গৃহে আগমন করছি। হে গৃহসমুদায়! আমি হেন গৃহস্বামীর সাহচর্যে তোমরা সুখী হও। দেশান্তর হতে আগমনশালী আমা হতে ভয় প্রাপ্ত হয়ো না ॥১॥

অন্ন, রস, দুগ্ধ ইত্যাদির দ্বারা সমৃদ্ধ এই সুখদায়ক গৃহগুলি প্রবাস হতে আগমনশালী আমাদের আপন স্বামীরূপে জ্ঞাত হোক৷৷২৷৷

গৃহ হতে দূরে গমনকারী (প্রবাসী) জন আপন যে সুন্দর পদার্থের দ্বারা সম্পন্ন গৃহকে স্মরণ করে থাকে, আমরা সেই গৃহসমূহকে পুনরায় প্রাপ্ত হতে ইচ্ছা করি। সেই ঘর প্রবাস হতে আগমনশালী আমাদের জ্ঞাত হোক (বা মান্য করুক) ॥ ৩৷৷

হে গৃহসমূহ! তোমরা বহু ধন ও মধুর পদার্থের দ্বারা সমৃদ্ধ হও। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তোমরা ব্যাকুলতা প্রাপ্ত হয়ো না। অনুজ্ঞার নিমিত্ত প্রার্থিত হয়ে গিয়ে এর তোমাদের মধ্যে অবস্থানকারী মনুষ্য ধন ইত্যাদির দ্বারা সম্পন্ন থাকুক। তোমরা প্রবাস হতে আগমনশালী আমাদের হতে ভয়ভীত হয়ো না। ৪।

আমাদের গৃহে মেষী, ছাগী, গাভী, অন্ন ইত্যাদি সকল উপভোগ্য বস্তু অনুজ্ঞার নিমিত্ত উপহূত (অর্থাৎ প্রার্থিত) হোক ৫

হে গৃহাবলি! তোমরা সুন্দর ভাগ্যশালী হও; অন্ন ও ধনের দ্বারা সমৃদ্ধ হও; তোমাদের উদ্দেশে কথিতা বাণী সত্যযুক্ত ও প্রিয় হোক। তোমাদের মধ্যে নিবাসকারী জন হর্ষ ও হাস্যে থাকুক। তোমাদের মধ্যে নিবাসকারী মনুষ্যগণের কেউ যেন ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত না থাকে। তোমরা প্রবাস প্রত্যাগত আমাদের হতে ভয়ভীত হয়ো না ॥ ৬।

 হে গৃহ সমুচয়! তোমরা প্রবাসী আমাদের অনুগামী হয়ো না; তোমরা এই প্রদেশেই স্থিত থাকো। তোমরা (আমাদের) পুত্র ইত্যাদিকে পুষ্ট (বা পালন) করো। আমি দেশ-দেশান্তর হতে কল্যাণ-করণশালী ধনরাশি উপার্জন করে পুনরায় আগমন করবো। তোমরা সেই ধনের সাথে তেজস্বী (বা বহুগুণে বর্ধন-প্রাপ্ত) হয়ো ॥ ৭ ৷৷

.

দ্বিতীয় সূক্ত : তপঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

যদগ্নে তপসা তপ উপপ্যামহে তপঃ। প্রিয়াঃ তস্য ভূয়াস্মায়ুষ্মন্তঃ সুমেধসঃ ॥১॥ অগ্নে তপস্তপ্যামহ উপ প্যামহে তপঃ। শ্রুণি শৃন্বন্তো বয়মায়ুষ্মন্তঃ সুমেধসঃ ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! সমিধাদান ইত্যাদির দ্বারা তোমার যে কর্ম করণীয়, তা আমরা তোমার নিকট করবো। কৃচ্ছ্বচান্দ্রায়ণ ইত্যাদি তোমার তপস্যা সম্পর্কিত কর্ম আমরা তোমার সেবা করে সম্পন্ন করছি। (অর্থাৎ তোমার পরিচর্যার মাধ্যমে আমরা তপস্যাগত ফল অর্জন করছি)। আমরা সেই কর্মের দ্বারা শোভন ধারণা শক্তিশালী, বেদ-শাস্ত্র ইত্যাদি অধ্যয়নশীল, প্রসন্ন মনঃসম্পন্ন এবং দীর্ঘায়ু হবো ১

হে অগ্নিদেব! তোমার নিকট আমরা শরীরশোষণরূপ এমন তপঃ সাধিত করছি, যার দ্বারা আমরা অধীত বেদশাস্ত্র ইত্যাদি শ্রবণ পূর্বক স্মৃতি ও ধারণা শক্তিতে সমৃদ্ধ ও দীর্ঘায়ুশালী হবো৷ ২৷৷

.

তৃতীয় সূক্ত : শত্রুনাশনম্

[ঋষি : মরীচ কাশ্যপ দেবতা : অগ্নি ছন্দ : জগতী]

অয়মগ্নিঃ সৎপতিবৃদ্ধবৃষ্ণ্যো রথীব পত্তীনজয়ৎ পুরোহিতঃ। নাভা পৃথিব্যাং নিহিত দবিদ্যুতদ্ধম্পদং কৃণুতাং যে পৃতণ্যবঃ ॥১॥

 বঙ্গানুবাদ –এই গার্হপত্য অগ্নি প্রবৃদ্ধ বলের সাথে যুক্ত। ইনি হবিদানের দ্বারা মহান মহান এ দেবতাগণকে পার্লন করে থাকেন। ইনি সচরাচর বিশ্বের স্বামী ঋত্বিকগণের দ্বারা অগ্রে স্থাপিত হয়ে থাকেন। যেমন রথবান পুরুষ প্রজাবৃন্দকে আপন অধীনস্থ করতে সক্ষম হন, তেমনই ইনি প্রজাবৃন্দকে আপন অধীন করে থাকেন। পৃথিবীর নাভিস্থানীয় এই উত্তরবেদিতে বিরাজমান অগ্নি আমার সংগ্রামেচ্ছু শবৃন্দকে পদদলিত করুন (অথবা আমাদের পদতলে পাতিত করুন)। ১৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ঊর্জং বিভ্রৎইতি আদ্যে সূক্তে আদিতঃ ষড়ঋচং দেশান্তরাৎ আগতঃ স্বগৃহং দৃষ্টা সমিধো গৃহীত্বা প্রজপণ স্বগৃহং আগত্য হস্তস্থাঃ সমিধো বামেন হস্তেন ধৃত্ব বলীকতৃণানি দক্ষিণেন হস্তেন স্পৃষ্টা ষড়ঋচং জপিত্বা গৃহং প্রবিশ্য আহিতেহগ্নেী অনেন ষড়ঋচেন তাঃ সমিধঃ পুষ্টার্থং আদধ্যাৎ। সূত্রিতং হি।..ইহৈব স্ত ইত্যনয়া প্রবাসং করিষ্য স্বকীয়ান গৃহান পুত্ৰাদীংশ্চাবেক্ষেত।…আগ্রহায়ণ্যাং যৎ অগ্নে তপসা ইতি দ্বাভ্যাং ঋভ্যাং ক্ষীরৌদনপুরোডাশরসানাং অন্যতমং সম্পত্য অভিমন্যু মেধাকামঃ অশ্নীয়াদ অগ্নিং উপতিষ্ঠেত বা।…তথা উপনয়নে অগ্নিকার্যে আভ্যাং ঋভ্যাং অগ্নিং পরিসমূহেৎ।…আবসথ্যাধানে অয়ং অগ্নি ইতোষা মহাশান্তিগণে আবপনীয়া।..ইত্যাদি৷৷ (৭কা, ৬অ. ১-৩সূ)৷৷

টীকা— উপযুক্ত প্রথম সূক্তের প্রথম ছটি মন্ত্র দেশান্তর হতে প্রত্যাগত গৃহস্বামী কর্তৃক আপন গৃহ দর্শন পূর্বক সমিধ গ্রহণ করে সূত্রোক্তপ্রকারে জপ করে গৃহে প্রবেশ করার নিমিত্ত বিনিযুক্ত হয়। সপ্তম মন্ত্রটিতে প্রবাস হতে প্রত্যাগত হয়ে পুত্র ইত্যাদির মাঙ্গল্য চিন্তার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় সূক্তের মন্ত্রদ্বয় মেধাকামনায় সূত্রানুসারে অগ্নির উপাসনায় বিনিযুক্ত হয়। এই মন্ত্র দুটি উপনয়নে অগ্নিকার্যেও বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। তৃতীয় সূক্তের মন্ত্রটি মহাশান্তিগণে আবপনীয় ॥(৭কা, ৬অ. ১-৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : দূরিতনাশনম্

[ঋষি : মরীচি কাশ্যপ দেবতা : জাতবেদা ছন্দ : জগতী]

 পৃতনাজিতং সহমানমগ্নিমুকথৈহামহে পরমাৎ সধস্থাৎ। সঃ নঃ পর্ষদতি দুর্গাণি বিশ্বা ক্ষামৎ দেবোহতি দুরিন্যগ্নিঃ ॥১॥

বঙ্গানুবাদ –যজমান প্রদত্ত হবির্ভাগকে দেবতাগণের নিমিত্ত তাদের সহাবস্থানে বহনকারী, শত্রুগণের উপর বিজয় লাভকারী, দুলোকে নিবাসকারী অগ্নিদেবকে আমরা উথ স্তোত্রের দ্বারা আহূত করছি। তিনি আমাদের বিপত্তিসমূহ হতে উত্তীর্ণ করুন এবং দুর্গতি প্রদানশীল পাপসমূহকে পূর্ণভাবে ভস্ম করে ফেলুন ॥১॥

.

পঞ্চম সূক্ত: পাপমোচনম

[ঋষি : যম দেবতা : আপ, অগ্নি ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী ]

ইদং যৎ কৃষ্ণঃ শকুনিরভিনিষ্পন্নপপতৎ। আপো মা তস্মাৎ সর্বম্মাদ দুরিৎ পাহসঃ ১। ইদং যৎ কৃষ্ণঃ শকুনিরবাক্ষন্নিঋতে তে মুখেন। অগ্নিৰ্মা তম্মদেনসো গাহপত্যঃ প্র মুঞ্চত্ ॥ ২॥

বঙ্গানুবাদ –গগন মার্গ হতে আগত (বা পতিত) কৃষ্ণবর্ণশালী কাকপক্ষী আমার এই অঙ্গে তার পক্ষের দ্বারা আঘাত, করেছে; সেই কারণে প্রাপ্ত (বা সঞ্জাত) দুর্গতিপ্রদ পাপ হতে এই অভিমন্ত্রিত জল আমাকে রক্ষা করুক ॥ ১৷৷

 হে মৃত্যু (নির্ঋতি দেবতা)! তোমার মুখের দ্বারা কাক আমার এই অঙ্গে আঘাত করেছে। (কাকঃ স্বচথুপুটেন মদীয়ং অঙ্গং নোপহতবান কিং তু মৃত্যুমুখেনেতি কাকস্পর্শনদোষঃ অতিকষ্ট ইতি জ্ঞাপয়িতুং নির্ঋতিমুখেন অভিমৰ্শনবচনং–অর্থাৎ কাক তার আপন চঞ্চপুটে আঘাত করলেও তার স্পর্শদোষ অতিকষ্টের কারণ হয় বলে ঐ আঘাতকে মৃত্যুমুখের আঘাত বলে অভিহিত করা হচ্ছে)। এই কাকস্পর্শনজনিত পাপ হতে গার্হপত্য অগ্নি আমাকে মুক্ত করুন। ২।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : দূরিতনাশনম্

 [ঋষি : শুক্র দেবতা : অপামার্গ ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

প্রতীচীনফলো হি ত্বমপামার্গ রুরোহিথ। সর্বান্ মচ্ছপখাঁ অধি বরীয়ো যাবয়া ইতঃ ॥ ১। যদ দুষ্কৃতং যচ্ছমলং যৎ বা চেরিম পাপয়া। ত্বয়া তৎ বিশ্বতোমুখাপামার্গাপ মৃত্মহে ॥ ২॥ শ্যাবদতা কুনখিনা বনে যৎ সহাসিম। অপামার্গ ত্বয়া বয়ম্ সর্বং তদপ মৃত্মহে ॥ ৩॥

 বঙ্গানুবাদ –হে অপামার্গ (পাপাপমার্জনসাধন ইঘপ্রকৃতিভূত কাষ্ঠবিশেষ)! তুমি প্রতীচীনফলত্ব প্রাপ্ত হয়ে উৎপন্ন হয়েছো। (অর্থাৎ অগ্র হতে আরম্ভ করে ফলের মূল পর্যন্ত আত্মাভিমুখী স্পর্শে কণ্টকরহিত হওয়ায় একে প্রতীচীনফল বা প্রত্যঙুখানি ফলানি যস্য বলা হয়েছে)। তুমি আমার সকল শপথজনিত দোষ (শপথা দোষা) পূর্ণভাবে স্খলন (বা পৃথক) করে দাও ॥১॥

হে বিশ্বতোমুখ (অর্থাৎ বিস্তৃত শাখাশালী) অপামার্গ! যে মলিন পাপ আমাদের দ্বারা আচারিত হয়ে গিয়েছে, দুষ্টপ্রবৃত্তির দ্বারা আমরা যে দুঃখদায়ক পাপকে অর্জন করে ফেলেছি, সেগুলি আমরা সবদিক দিয়ে তোমার সাহচর্যে অপসারিত করছি ॥ ২৷৷

স্বভাবতঃ কৃষ্ণবর্ণ দন্তযুক্ত, কুৎসিত নখশালী এবং ব্যাধিগ্রস্ত বা নপুংসক (পণ্ড) পুরুষের সাথে একত্রে ভোর্জন ইত্যাদি ব্যবহারমাত্রে যে পাপ উৎপন্ন করে ফেলেছি, তা তোমার দ্বারা অপমার্জন (বা নিবারণ) করছি ৷ ৩৷৷

.

সপ্তম সূক্ত : ব্রহ্ম

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : ব্রাহ্মণম্ (ব্রহ্ম) ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 যদ্যন্তরিক্ষে যদি বাত আস যদি বৃক্ষেষু যদি বোলপেযু। যদব পশব উদ্যমানং তৎ ব্রাহ্মণং পুনরম্যানুপৈতু ॥ ১।

বঙ্গানুবাদ— মেঘাচ্ছন্ন অন্তরিক্ষে (মেঘলা দিনে) যে বেদ পঠিত হয়েছে, কিংবা তীক্ষ্ণ ঝড়ের মধ্যে বা বৃক্ষের নীচে (অর্থাৎ ছায়ায়) বা হরিৎ শস্যের নিকটে (ধান্য ইত্যাদি শস্যক্ষেত্রের সন্নিকটে) অথবা গ্রাম্য বা আরণ্য পশুর নিকটে যে বেদবাক্য কথিত বা শ্রুত হওয়ায় (অর্থাৎ নিষিদ্ধ কালে ও স্থলে বেদের প্রচলন-জনিত কারণে) আমাদের নিকট হতে যে বেদ (বা বেদ-সম্পর্কিত পুণ্যপ্রভাব) চলে গিয়েছে, আমরা বেদপাঠকগণ সেই বেদকে পুনরায় ফলসহ যেন প্রাপ্ত হই ॥ ১৷৷

.

অষ্টম সূক্ত : আত্মা

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : আত্মা ছন্দ : বৃহতী ]

পুনমৈত্বিন্দ্ৰিয়ং পুনরাত্মা দ্রবিণং ব্রাহ্মণং চ। পুনরগ্নয়ো ধিষ্ণ্যা যথাস্থাম কল্পয়ামিহৈব। ১। বঙ্গানুবাদ –আমার ইন্দ্রিয়সমূহ পুনরায় আমার প্রাপ্ত হোক, জীবাত্মা পুনরায় আমাতে প্রবেশ করুক, ধন পুনরায় আমার লভ্য হোক, মন্ত্ৰব্ৰাহ্মণাত্মক বেদও পুনরপি আমাতে ব্যাপ্ত হোক। হবন-বেদি সমূহের বিহৃতপ্রদেশে বিহারকারী অগ্নিসমূহ পুনরায় সমৃদ্ধ হোন ॥১॥

.

নবম সূক্ত: সরস্বতী

 [ঋষি : শন্তাতি দেবতা : সরস্বতী ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী]

সরস্বতী ব্রতেষু তে দিব্যেষু দেবি ধামসু। জুষস্ব হব্যমাহুতং প্রজাং দেবি ররাস্ব নঃ ॥১॥ ইদং তে হব্যং ঘৃতবৎ সরস্বতীদং পিতৃণাং হবিরাস্যং যৎ। ইমানি ত উদিতা শংমানি তেভিবয়ং মধুমন্তঃ স্যাম ॥ ২॥ শিবা নঃ শংতমা ভব সুমৃডীকা সরস্বতী। মা তে যুয়োম সংদৃশঃ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে দেবী সরস্বতী! তুমি গার্হপত্য ইত্যাদি স্থানসমূহে আহুত হব্যের সেবন করো। এবং আমাদের পুত্র ইত্যাদি প্রদান করো। ১।

 হে শারদা (বর্ণপদাদিরূপেণ প্ৰসরণবতি হে দেবি)! তোমার নিমিত্ত যে ঘৃতযুক্ত হবিঃ হুত হচ্ছে, তা পিতৃগণকে প্রেরিত করো। তোমার নিমিত্ত প্রদত্ত মঙ্গলময় হবির সৌজন্যে আমরা মধুময় অন্নের দ্বারা সমৃদ্ধ হবো। ২।

 হে সরস্বতী (বর্ণপদাদিরূপেণ প্ৰসরণবতি হে বাক্-দেবতা)! আমরা তোমার দর্শন হতে (বা তোমার স্বরূপ জ্ঞান হতে) যেন কখনও বঞ্চিত না হই। তুমি আমাদের নিকট সর্বসুখরূপা হও (অর্থাৎ আমাদের শোভন সুখ প্রদানশালিনী হও); তুমি আমাদের রোগ ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে নিবারণশালী হও ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আবসথ্যাধানে মথনাথং যজমানঃ অরণ্যং পৃতনাজিতং ইতি ঋচা অগ্নিং আহয়েৎ।…শরীরে কাকাভিঘাতদোষশাস্ত্যর্থং ইদং যৎ কৃষ্ণঃ ইতি দ্বাভ্যাং ঋভ্যাং উকং অভিমন্ত্র কাকোপহতশরীরং প্রক্ষালয়েৎ।…কাকস্পর্শনদোষশাস্ত্যর্থং শ্যাবদ ইতি মন্ত্রোক্তরোগশান্তয়ে চ প্রতীচীনফলঃ ইতি ত্রিভিঃ অপামার্গসমিধ আদধ্যাৎ। তৎ উক্তং সংহিতাবিধৌ।…বিবাহে কুমাৰ্যাঃ স্নাপনানন্তরং যৎ দুষ্কৃতং ইতি দ্বাভ্যাং ঋভ্যাং অঙ্গানি বাসস্য প্রমার্জয়েৎ…যদ্যরিক্ষে পুনমৈত্ত্বৈন্দ্ৰিয়ং ইত্যনয়া প্রতিগ্রহদোষশান্তয়ে প্রতিগ্রাহ্যং বস্তৃভিমন্ত্ৰা গৃহীয়াৎ। তথা নিত্যনৈমিত্তিক কামেষু কর্মসু পাকতন্ত্রে চ কর্মসমাপনানন্তরং নাতিরেকদোষশান্তয়ে অনয়া আত্মানং অনুমন্ত্রয়েত। সূত্রিতং হি।…চাতুর্মাস্যে বৈশ্বদেবপর্বণি সারস্বতগং সরস্বতী ব্রতেষু ইতি ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত।..ইত্যাদি ॥ (৭কা, ৬অ, ৪-৯সূ)।

টীকা— উপযুক্ত চতুর্থ সূক্তের মন্ত্রটি যজমান কর্তৃক মন্থনের নিমিত্ত অরণিস্থিত অগ্নির আহ্বানে বিনিযুক্ত হয়। শরীরে কাকাভিঘাতজনিত দোষের শান্তির নিমিত্ত পঞ্চম সূক্তটির বিনিয়োগ দেখা যায়। কাকস্পর্শনদোষ শান্তির নিমিত্ত প্রতীচীনফলল হি ইত্যাদি সূক্তটি অপমার্গসমিধের নিমিত্ত বিনিযুক্ত হয়। বিবাহে কুমারীর স্নানের পরে বস্ত্রের দ্বারা অঙ্গ-মার্জনায় ঐ সূক্তের যৎ দুষ্কৃতং ও শ্যাবদতা এই মন্ত্র দুটি বিনিযুক্ত হয়। প্রতিগ্রহদোষ শান্তির নিমিত্ত সপ্তম ও অষ্টম সূক্তের বিনিয়োগ বিহিত আছে। তথা নিত্যনৈমিত্তিক কাম্যকর্মে ও পাকতন্ত্রে কর্মসমাপ্তির পরে সামান্যমাত্ৰ দোষ অতিরিক্ত থাকলেও তার শান্তির নিমিত্ত ঐ অষ্টম সূক্তটির বিনিয়োগ বিহিত আছে। চাতুর্মাস্যে বৈশ্বদেবপর্বে সারস্বত যুগে ব্রহ্মা (ঋত্বিক) কর্তৃক সরস্বতী ব্রতেষু সূক্তটির অনুমন্ত্রণ-বিহিত আছে ॥(৭কা, ৬অ. ৪-৯সূ)।

.

দশম সূক্ত : সুখম

 [ঋষি : শন্তাতি দেবতা : সুখম্ ছন্দ : পংক্তি]

শং নো বাতো বাতু শং নস্তপতু সূর্যঃ। অহানি শং ভবন্তু নঃ শং রাত্রী প্রতি। ধীয়তাং শমুষা নো ব্যুচ্ছতু। ১৷৷

বঙ্গানুবাদ –বায়ু আমাদের সুখকর হয়ে বিচরণ করুক। সূর্য অর্থাৎ সুষ্ঠু সকলের প্রেরক।  আদিত্য আমাদের সুখদায়ক তাপদানশীল হোন (অর্থাৎ সন্তাপদায়ক না হোন)। দিনসমূহ আমাদের এ সুখ প্রদান করুক; রাত্রিগুলিও যথায় আমাদের সুখ তথায় প্রতিষ্ঠিত হোক; উষাসমূহও আমাদের যথায় সুখ, তথায় প্রকাশিত হোক। (অর্থাৎ দিন, রাত্রি ও উষা–সকলেই আমাদের সুখ প্রদান করুক) ১

.

একাদশ সূক্ত : শত্রুদমনম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা: শ্যেন, দেবগণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী, অনুষ্টুপ]

যৎ কিং চাসৌ মনসা যচ্চ বাঁচা যজ্ঞৈতহাতি হবি যজুষা। তমৃত্যুনা নিঋতিঃ সংবিদানা পুরা সত্যাদাহুতিং হস্য ॥১॥ যাতুনা নির্ঋতিরাদু রক্ষন্তে অস্য ঘৃত্বতেন সত্য। ইন্দ্রেষিতা দেবা আজ্যমস্য মন্তু মা তৎ সং পাদি যদসৌ জুহোতি ॥ ২॥ অজিরাধিরাজেী শ্যেনৌ সম্পাতিনাবিব। আজং পৃতন্যতো হতাং যো নঃ কশ্চাভ্যঘায়তি ॥ ৩৷৷ অপাঞ্চেী ত উতভা বাহু অপি নহ্যামাস্যম। অগ্নের্দেবস্যমন্তনা তেন তেহবধিষং হরিঃ ॥ ৪৷ অপি নহ্যামি তে বাহু অপি নহ্যামাস্য। অগ্নেঘোরস্য মন্যুনা তেন তেহবধিষং হবিঃ ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –ঐ যে দূরস্থিত শত্রু অভিচার মন্ত্রের দ্বারা হোম করছে, যে আমাদের প্রতি হিংসার সঙ্কল্প করছে, তবে সেই শত্রুর মন বাক্য ও দেহের দ্বারা ক্রিয়মাণ অভিচার কর্ম সত্য (অর্থাৎ ফলপ্রসূ হবার পূর্বেই পাপদেবতা নির্ঋতি মৃত্যুর সহযোগে তাকে বিনাশ করে দিক ॥১॥

পরপীড়াকারিণী নিকৃষ্টগমনা পাপরাক্ষসী নির্ঋতি ও রাসক্ষসসমূহ সেই শত্রুর দ্বারা কৃত অভিচার কর্মের যথার্থ ফলকে অসত্য (অর্থাৎ নিষ্ফল) করে দিক। আমাদের শত্রুর আজ্যসাধন হোমকর্মগুলি ইন্দ্রের দ্বারা প্রেরিত দেবতা বিনষ্ট করে দিন এবং আমাদের প্রতি হিংসান্বিত (অর্থাৎ আমাদের বধের নিমিত্ত) যে কর্ম তারা অনুষ্ঠিত করছে, তা যেন সম্পন্ন না হয় (অর্থাৎ-ফলপ্রদ ন ভবতি বা অঙ্গবিকলং ভবতু) ॥ ২॥

অজির ও অধিরাজ নামক দুই মৃত্যু-দূত যুদ্ধাকাঙ্ক্ষী শত্রুর হোমক্রিয়াকে বিনষ্ট করে দিক, যেমন আকাশপথ হতে অতর্কিতে নেমে এসে (নিষ্পতিত হয়ে) শ্যেনপক্ষী তার দ্বেষ্যপক্ষীকে বিনাশ করে থাকে। যে শত্রু আমাদের সম্মুখে আগত হয়ে আমাদের প্রতি হিংসারূপ কর্ম সাধন করতে আকাঙ্ক্ষা করে, তাদের ঘৃতযুক্ত কর্ম অসত্য (নিষ্ফল) করে দিক ॥ ৩৷৷

হে অভিচার কর্মে প্রযুক্ত শত্রু! বহন ইত্যাদি কর্মে যুক্ত তোমার হস্ত দুটিকে তোমার পৃষ্ঠভাগে বন্ধন পূর্বক তোমার হোমসাধনভূত মন্ত্রোচ্চারণশীল মুখটিকেও বন্ধন করে রাখছি। এইভাবে হস্তদ্বয় ও মুখ বন্ধ হয়ে যাবার পর, আমি তোমার কর্মকেও (বা হোতব্য দ্রব্যসম্ভারকেও) অগ্নির কোপে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দেবো ॥ ৪

হে অভিচার কর্মে প্রযুক্ত শত্রু! পৃষ্ঠভাগে বন্ধনপ্রাপ্ত তোমার হস্তদ্বয় আর হোমকর্ম সাধনে সক্ষম হবে না। তোমার মুখ বন্ধনপ্রাপ্ত হওয়ায় আর আভিচারিক মন্ত্র উচ্চারণে সক্ষম হবে না। ভয়ঙ্কর অগ্নির তেজঃ প্রভাবে যজ্ঞীয় দ্রব্য বিনষ্ট হওয়ায় হোম কর্মও বিনাশপ্রাপ্ত হবে। (অর্থাৎ হবিঃসমূহের দ্বারা সিদ্ধ হওনশীল তোমার অভীষ্টকেও আমি অগ্নির বিকরাল ক্রোধের দ্বারা বিনষ্ট করে দেবো॥ ৫

.

দ্বাদশ সূক্ত : অগ্নিঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 পরি স্বাগ্নে পুরং বয়ং বিপ্রং সহস্য ধীমহি। ধৃষদ্বর্ণং দিবেদিবে হন্তারং ভঙ্গুরাবতঃ ॥ ১৷

বঙ্গানুবাদ –হে মথনের (বা বলের) দ্বারা নিষ্পন্ন অগ্নি! তুমি যজ্ঞ ইত্যাদির বাধক রাক্ষসবৃন্দকে প্রতিদিন হনন করে থাকো। অতএব রাক্ষসসমূহকে হননের নিমিত্তই আমরা তোমা হেন মেধাবীকে সর্বদিক হতে ধারণ করছি। ১।

.

ত্রয়োদশ সূক্ত : ইন্দ্রঃ

  [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

 উৎ তিষ্ঠাতাব পশ্যতেন্দ্রস্য ভাগমৃত্বিয়ম্। যদি শ্রাতং জুহোতন যদ্যশ্রাতং মমওন ॥ ১। শ্রাতং হবিরো ম্বিন্দ্ৰ প্ৰ যাহি জগাম সূরো অধ্বনো বি মধ্যম্। পরি স্বাসতে নিষিভিঃ সখায়ঃ কুলপা ন ব্রাজপতিং চরন্তম ॥ ২॥ শ্রাতং মন্য ঊধনি শ্রাতমগ্নৌ সুশৃতং মন্যে তদৃতং নবীয়ঃ। মাধ্যন্দিনস্য সবনস্য দধুঃ পিবেন্দ্র বজি পুরুকৃঞ্জুষাণঃ ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে ঋত্বিকবর্গ! উপবিষ্ট হয়ে থেকো না। উথিত হয়ে বসন্ত ইত্যাদি ঋতুতে অনুষ্ঠিতব্য যজ্ঞে ইন্দ্রের ভাগ নিরীক্ষণ করো। যদি তা পক (রন্ধিত) না হয়ে থাকে, তবে যতক্ষণ তা পর্ক হচ্ছে ততক্ষণ ইন্দ্রদেবকে স্তুতির দ্বারা তৃপ্ত করতে থাকে এবং পক্ক হয়ে যায় তো তা অগ্নিতে ইন্দ্রের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করো ॥১॥

 হে ইন্দ্র! দধিঘর্ম নামক তোমার হবিঃ পক হয়ে গিয়েছে, অতএব শীঘ্র এইস্থানে আগমন করো। অর্ধ হতে কিছুটা কম পথে সূর্য উপনীত হয়েছে। টি (অর্থাৎ মধ্যাহ্নকাল সমুপস্থিত); অভিযুত সোমকে অর্ঘ্যরূপে গ্রহণ করে ঋত্বিৰ্গ, বংশধর পুত্রগণ কর্তৃক গৃহপতির পরিচর্যার মতো, তোমারই উপাসনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। ২।

 এই দধিঘর্ম নামক হবিঃ দুগ্ধরূপে গাভীর স্তনে পক্ক হয়ে রয়েছে বলে মনে করি। এই সময়ে দধির অবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার নিমিত্তও তা অগ্নিতে পাক হচ্ছে। আমি জানি যে, এই দধিঘর্ম ঠিক রকমে পক্ক হয়েছে। অতএব তা সত্যস্বরূপ নবতর হয়েছে। হে কর্মবান্ বর্জি! তুমি প্রীতমাণ হয়ে মধ্যন্দিনে অনুষ্ঠিত সবনে অভিযুত সোমের দধি (অর্থাৎ দধিঘর্মাখ্য হবিঃ) পান করো ॥৩॥

.

চতুর্দশ সূক্ত : ঘর্মঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ঘর্ম, অশ্বিন্দ্বয় ছন্দ : জগতী, বৃহতী, ত্রিষ্টুপ]

 সমিদ্ধো অগ্নিবৃষণা রথী দিবস্তপ্তো ঘৰ্মো দুহ্যতে বামিষে মধু। বয়ং হি বাং পুরুদমাসো অশ্বিনা হবামহে সধমাদেমু কারবঃ ॥ ১৷৷ সমিদ্ধো অগ্নিরশ্বিনা তপ্তো বাং ঘর্ম আ গত৷ দুহ্যন্তে নূনং বৃষণেহ ধেনবো দম্রা মদন্তি বেধসঃ ॥ ২॥ স্বাহাকৃতঃ শুচির্দেবেষু যজ্ঞো যো অশ্বিনোশ্চমসো দেবপানঃ। তমু বিশ্বে অমৃতামো জুষাণা গন্ধর্বস্য প্রত্যাস্না রিহন্তি ॥৩॥ যদুস্রিয়াস্বাহুতং ঘৃতং পয়োহয়ং স বামশ্বিনা ভাগ আ গত মাধ্বী ধর্তারা বিদথস্য সৎপতী তপ্তং ঘর্মং পিবতং নোচনে দিবঃ ॥ ৪৷৷ তপ্তো বাং ঘৰ্মো নক্ষতু স্বাতা বামধ্বর্যশ্চরতু পয়স্বান্। মধোর্দুগ্ধস্যাশ্বিনা তনয়া বীতং পাতং পয়স উস্রিয়ায়াঃ ॥৫॥ উপ দ্রব পয়সা গোধুগোষমা ঘর্মে সিঞ্চ পর উসিয়ায়াঃ। বি নাকমখ্যৎ সবিতা বরেণ্যোহনুপ্রয়াণমুষসস বি রাজতি ॥ ৬৷৷ উপ হয়ে সুদুঘাং ধেনুমেং সুহস্তো গোধুগুত দোহদেনাম। শ্রেষ্ঠং সবং সবিতা সাবিষম্নোহভীদ্ধো ঘর্মস্তদু যু প্র বোচৎ ॥৭॥ হিষ্কৃতী বসুপত্নী বসূনাং বৎসমিচ্ছন্তী মনসা ন্যাগ। দুহামশ্বিভ্যাং পয়ো অগ্নেয়ং সা বর্ধতাং মহতে সৌভগায় ॥৮॥ জুষ্টো দমূনা অতিথিদুরোণ ইমং নো যজ্ঞমুপ যাহি বিদ্বান্। বিশ্বা অগ্নে অভিযুজো বিহত্য শক্রয়তমা ভরা ভোজনানি ॥ ৯৷ অগ্নে শর্ধ মহতে সৌভগায় তব দুম্ন্যুত্তমানি সন্তু। সং জাম্পত্যং সুষমমা কৃণুম্ব শক্রয়তামভিতিষ্ঠা মহাংসি ॥ ১০৷ সুযবসাদ ভগবতী হি ভূয়া অধা বয়ং ভগবন্তঃ স্যাম। অদ্ধি তৃণময়ে বিশ্বদানীং পিব শুদ্ধমুদমাচরন্তী ॥ ১১।

বঙ্গানুবাদ –হে বৃষণা (অর্থাৎ অভিমতফলের বর্ষণকারী) অশ্বিদ্বয়! তোমরা আকাশে অবস্থানকারী দেববর্গের নেতাস্বরূপ। এক্ষণে অগ্নি সন্দীপ্ত হয়েছে। মহাবীর নামক পাত্রে রক্ষিত ঘৃত (ঘ) উত্তম প্রকারে পক্ক হয়ে গিয়েছে। এবং অধ্বর্যগণ তোমাদের নিমিত্ত দুগ্ধও দোহন করে নিয়েছেন। এখন আমরা হোতারূপ স্তোতৃবর্গ তোমাকে হবির দ্বারা পূর্ণ যজ্ঞসমূহে আহূত করছি৷৷ ১।

হে অশ্বিদ্বয়! অগ্নি প্রদীপ্ত হয়ে গিয়েছে, তোমাদের নিমিত্ত মহাবীরপাত্রে রক্ষিত ধৃত (আজ) তার দ্বারা তপ্ত হয়ে গিয়েছে; এই নিমিত্ত হবিঃ ভক্ষণার্থে তোমরা এই স্থানে আগত হও। হে ইচ্ছিত ফলবৰ্ষক অশ্বিদ্বয়! এই কর্মে গাভীসমূহ প্রভূত পরিমাণে দুগ্ধ প্রদান করছে। তোমাদের স্তুতি করতে করতে হোতৃগণ আনন্দে বিভোর হয়ে রয়েছেন ২।

 স্বাহাকৃত দীপ্ত যজ্ঞ প্রবর্গ নামক অশ্বি প্রভৃতি দেবতাগণের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অশ্বিনীকুমারযুগলের পানের (বা ভক্ষণের) নিমিত্ত যে চমস রূপ পাত্র আছে, তা সকল অমবর্ণধর্মী (অমৃতাসঃ) দেবতার প্রিয়। তারা ঐ হবিঃ অগ্নির (বা গন্ধর্ব আদিত্যের) মুখ হতে লেহন (বা ভক্ষণ) করে থাকেন। ৩।

 হে অশ্বিদ্বয়! দুগ্ধের নিবাসস্থানভূত গাভীতে বর্তমান ঘৃতের ন্যায় ক্ষরণশীল বা ঘৃতের উৎপাদক যে দুগ্ধ যজ্ঞীয় মহাবীরপাত্রে প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে (বা ঢেলে দেওয়া হয়েছে), তা তোমাদের ভাগ। এই নিমিত্ত তোমরা এই স্থানে আগমন পূর্বক যজ্ঞের পূর্ণতা সম্পাদনশালী হও। হে মধুসম্বন্ধিনী বিদ্যায় পারদর্শী ও দেবগণের পালকদ্বয়! দ্যুলোকের প্রকাশক অগ্নিতে তপ্ত ঘৃত পান করো। ৪

 তোমাদের দুজনের উদ্দেশে হোতা কর্তৃক সম্যক অভিষ্ঠুত, মহাবীরপাত্রে রক্ষিত এই তপ্ত ঘৃত (আজ) ব্যাপ্ত হোক। অধ্বর্য নামক ঋত্বিক তোমাদের হবিঃ প্রদান করুন। তোমরা দুগ্ধ, দধি এবং ঘৃত দিয়ে সমান তৃপ্ত-করণশালী দুগ্ধ পান করো ॥৫॥

হে অধ্বর্য! তুমি ঘর্মদুঘা গাভীর দুগ্ধকে তপ্ত ঘৃতে নিক্ষেপ করো (অর্থাৎ ঢেলে দাও)। বরণ করার যোগ্য সূর্যদেব দুঃখরহিত স্বৰ্গকে প্রকাশময় করেছেন, তিনি উষার গমনকে লক্ষ্য রেখে অত্যন্ত তেজস্বী হয়ে উঠেছেন। (অতএব দুগ্ধ (পায়স) সহ আগত হও এবং আগত হয়ে সেই দুগ্ধ ঘর্মে নিক্ষেপ করো (আসিঞ্চ)।–এই কথা এইস্থানে হোতা অধ্বর্যকে বলছেন) ॥ ৬।

 আমি উত্তম প্রকারে বা সহজে দোহনযোগ্যা (সুদুঘা) পুরোবর্তিনী ধেনু আহ্বান করছি, মঙ্গলময় হস্তশালী অধ্বর্য তাকে (অর্থাৎ এই গাভীকে) দোহন করুন। সর্বপ্রেরক সবিতা দেব ঐসব উপনামশালী দুগ্ধকে আমাদের প্রদান (বা প্রেরণ) করুন। (ঘর্ম সুষ্ঠুভাবে তপ্ত হয়েছে, তাতে দুগ্ধ নিক্ষেপ করো–এই কথা পরোক্ষে হোতা অধ্বর্যকে বলছেন)। ৭।

ধনের পোষণশালিনী গাভী বৎসের কামনায় যুক্ত হয়ে হিং শব্দ করে আগতা হোক এবং অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নিমিত্ত দুগ্ধ দোহন করতে দিক। এই গাভীও আমাদেরও ঐশ্বর্যের নিমিত্ত সমৃদ্ধি প্রাপ্ত করাক ॥ ৮ ৷

হে অগ্নি! তুমি সকল যাজ্ঞিকের গৃহে গমন করে থাকো। সকলেই তোমার সেবা-করণে যত্নশীল। তুমি আমার ভক্তির দিকে লক্ষ্য করে আগমন করো এবং শত্রু-সেনাগণকে বিনষ্ট করে তাদের ধনরাশি আমাদের নিমিত্ত আনয়ন করো ॥ ৯৷

হে অগ্নি! আমাদের প্রভূত ঐশ্বর্য প্রদান করার নিমিত্ত তুমি উদার চিত্তসম্পন্ন হও। তোমার তেজঃ উচ্চগামী হোক, (অর্থাৎ অন্ধকার দূরীভূত করুক)। আমরা পতি-পত্নী যাতে সমানভাবে তোমার পরিচর্যা-কর্মে নিয়োজিত থাকতে পারি, সেইরকম অনুগ্রহ করো; অধিকন্তু শত্রুর তেজঃকে পরাভূত করো। ১০।

হে ঘর্মদ্ঘা (ধেনু)! তুমি সুন্দর তৃণ ভক্ষণ করে ধনবতী বা ভাগ্যবতী হয়ে ওঠো। অনন্তর আমরাও ধনবন্ত হয়ে উঠবো। হে অদ্য (অর্থাৎ বধের অযোগ্যা) গাভী! তুমি সর্বদা তৃণ ভক্ষণ পূর্বক বিচরণ এ করতে থাকো এবং শুদ্ধ জল পান করতে থাকো। ১১।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— শং নো বাতো বাতু শিবা নঃ ইত্যনয়োবৃহঙ্গণে পাঠাৎ শান্তুদকাভিমন্ত্রণাদৌ বিনিয়োগঃ…অভিচারকর্মণি যৎ কিং চাসৌ ইতি পঞ্চর্চেন মধ্যমপলাশেন ফলীকরণা জুহুয়াৎ। দর্শপূর্ণমাসয়োর পরিত্বাগ্নে পুরং বয়ং ইত্যনয়া তণ্ডুলানাং পর্যাগ্নিকরণং কুর্যাৎ। সোমযাগে মাধ্যন্দিন সব ধিষ্ণাগ্নিং অবলোকয় পরি ত্বাগ্নে পুরং বয়ং ইতি ব্রহ্ম যজমানশ্চ জপেৎ।…সোমযাগে প্রবর্গে ঘর্মধুদ্দোহাৰ্থং উত্তিষ্ঠিতঃ অধ্বর্যাদী উত্তিষ্ঠতাব পশ্যত ইত্যনয়া ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত।…অগ্নিষ্টোমে প্রবর্গে হৃয়মানং আজ্যং সমিদ্ধো অগ্নিবৃষণা রথী ইতি সূক্তেন ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত।…প্রবর্গে দুহ্যমানাং ধর্মদুঘাং উপ হ্রয়ে ইতি ব্রহ্মা অনুমন্ত্রয়েত। বৈতানে সূত্রিতং।…ইত্যাদি ॥ (৭কা, ৬অ. ১০-১৪সূ)।  টীকা –উপযুক্ত দশম সূক্তটি (এবং পূর্ববর্তী নবম সূক্তের শেষ মন্ত্রটি) শান্তুদকে অভিমন্ত্রণ ইত্যাদি কর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। অভিচার কর্মে একাদশ সূক্তের পাঁচটি মন্ত্রের দ্বারা মধ্যমপলাশের দ্বারা ফলীকরণে যাগ করণীয়। দ্বাদশ সূক্তের মন্ত্রটির দ্বারা দর্শপূর্ণমাসে তণ্ডুলের দ্বারা পর্যাগ্নিকরণে বিনিযুক্ত হয়। সোমযাগে মাধ্যন্দিন সবনে অগ্নিকে অবলোকন পূর্বক ব্রহ্মা (ঋত্বিক) ও যজমান এই মন্ত্রটি জপ করবেন। সোমযাগে প্রবর্গে এয়োদশ সূক্তের মন্ত্রগুলি ব্রহ্মা কর্তৃক অনুমন্ত্ৰণীয়। অগ্নিষ্টোমে প্রবর্গে হুয়মান আজ্য চতুর্দশ সূক্তের দ্বারা ব্রহ্মা কর্তৃক অনুমন্ত্ৰণীয় ॥ (৭কা.৬অ. ১০-১৪সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *