৩১. আড়াই বৎসর পর

আড়াই বৎসর পর।

সাত-আনির বাঁড়ুজ্জেদের বাড়িখানার অবস্থা হইয়াছে নির্বাসিত-শিখা প্রদীপের মত। প্রদীপের ধাতুময় অঙ্গের মত তাহার অঙ্গরাগের দীপ্তি এক বিন্দু কমে নাই, তাহাতে আলো জ্বলে না। বাড়িখানা প্রায় নিস্তব্ধ নিঝুম শূন্যপুরীর মত হইয়া গিয়াছে। প্রাণের কোলাহল আর শোনা যায় না। পিসিমা সেই কাশী গিয়াছেন, ফিরিয়া আসা দূরে থাক, চিঠি দিলেও তাহার উত্তর পর্যন্ত আসে না। গৌরীও কলিকাতায় গিয়া আর আসিবার নাম করে নাই। তাহার কোল জুড়িয়া এখন একটি শিশুপত্র, তাহাকে লইয়াই গৌরী এ বাড়ির স্মৃতি ভুলিয়াছে। শিবনাথ ময়ূরাক্ষীর তীরে চরভূমির উপর একটি কৃষিক্ষেত্র লইয়া মাতিয়া আছে। মাটির বুকে ধূলিধূসরিত মানুষের সহিত সে কারবার খুলিয়াছে। রাত্রিশেষে বাউল টহলদারের মত সে তাহাদের ডাক দিয়া ফেরে। চরের। ওই কৃষিক্ষেত্রটিকে কেন্দ্ৰ করিয়া একে একে পাঁচ-সাতখানি গ্রামে তাহার কর্মধারাকে প্রবাহিত। করিয়া দিয়াছে। নাইট-স্কুল, জনতিনেক হাতুড়ে ডাক্তার লইয়া তিনটি ডাক্তারখানা, দুইখানা। গ্রামে বহু চেষ্টায় দুটি ধর্মগোলাও প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। চারিদিকে শূদ্ৰ শূদ্ৰ আর শূদ্র। বশিষ্ঠের। মত আত্মাহুতি দিয়াও বিশ্বামিত্রের গলায় উপবীত দিবার তাহার সঙ্কল্প। সম্প্রতি সে চরকা ও তাত প্রবর্তন করিতে আরম্ভ করিয়াছে। সমগ্র ভারতের বুকে কালের রথের চূড়ায় ১৯২১-এর ধ্বজা দেখা দিয়াছে।

 

সন্ধ্যার মুখে শিবনাথ ময়ূরাক্ষীর বালুকাগর্ভের উপর দাঁড়াইয়া ছিল।

তাহার কৃষিক্ষেত্রের কোলেই ময়ূরাক্ষী নদী। এখানে ময়ূরাক্ষী প্রায় মাইলখানেক ধরিয়া একেবারে সরলরেখার মত সোজা বহিয়া গিয়াছে। নদীর বুকের বালির উপর দাঁড়াইয়া ময়ূরাক্ষীর গতিপথের দিকে চাহিয়া দেখিলে মনে হয়, ময়ূরাক্ষী চক্ৰবাল সীমায় অবনমিত আকাশের বুক হইতে নামিয়া আসিতেছে—আকাশগঙ্গার মত।

সন্ধ্যার অন্ধকারও আকাশ হইতে কালিমার বন্যার মত নামিয়া ময়ূরাক্ষীর ধূসর বালুগর্ভ। বিলুপ্ত করিয়া দিয়া শিবনাথের দিকে আগাইয়া আসিতেছিল। শিবনাথ প্ৰতি সন্ধ্যায় ময়ূরাক্ষী।

গর্ভের উপর এমনই করিয়া দাঁড়াইয়া থাকে।

দিগন্তের কোলে ঘনায়িত অন্ধকার; কিন্তু নিকটে আশপাশে চারিদিকে অন্ধকারের মধ্যেও এখনও অস্পষ্ট আলোর রেশ একটা আবছায়ার মত জাগিয়া আছে। অস্পষ্টতার মধ্যে একটা রহস্য আছে, সন্ধ্যার ছায়ান্ধকারে সব যেন রহস্যময় হইয়া উঠিয়াছে। এখানকার প্রতিটি চেনাজানা। বস্তুও এই রহস্যের আবরণের মধ্যে অজানা অচেনা হইয়া উঠিতেছে। চিনিতে ভুল হয় না কেবল আকাশস্পর্শী শিমুলগাছটিকে, সকলের ঊর্ধ্বে তাহার মাথা জাগিয়া থাকে, তাহার উন্নত মহিমা যেন রহস্যেরও উপরে প্রতিষ্ঠা পাইয়াছে। এক-একটা মানুষ এমনই করিয়া অতীতকালের বিস্মৃতির অন্ধকারের মধ্যেও মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়া থাকে; বিগত কাল যত দীর্ঘ হউক, বিস্মৃতি যত প্রগাঢ় হউক, সে মিলাইয়া যায় না। তাহার মনের মধ্যেও এমনই কয়েকটি মানুষ সকল। বিস্মৃতিকে ছাপাইয়া মহিমান্বিত মূর্তিতে পঁড়াইয়া আছে। সহসা তাহার এ চিন্তাধারা বাধা পাইয়া ছিন্ন হইয়া গেল। তাহার চাষ-বাড়ি হইতে কে একজন তাহারই দিকে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। আলো-অন্ধকারের সংযোগ-রহস্যের মধ্যে মানুষটির গতিশীলতাই শুধু তাহাকে মানুষ বলিয়া চিনাইয়া দিতেছিল, নহিলে চারিপাশের গাছপালা হইতে মানুষের অবয়বের পার্থক্য ওই আবছায়ার মধ্যেই বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। শিবনাথ বুঝিল, কোনো সংবাদ আছে; নতুবা এ সময়ে তাহার লোকজনেরা কেহ সাধারণত তাহার কাছে আসিয়া বিরক্ত করে না। হয়ত কোনো গরু-মহিষের অসুখ করিয়াছে, নয়ত চাষের কোনো যন্ত্রপাতি ভাঙিছে, অথবা গ্রামের কোনো লোকের গরু-ছাগল আসিয়া ফসল খাইয়াছে, কিংবা বাড়ি হইতে লোক আসিয়াছে। কোনো জরুরি কাজের জন্য রাখাল সিং নিজেও আসিয়া থাকিতে পারেন। মধ্যে মধ্যে তিনি আসেন। আজ আড়াই বৎসর এমনিই চলিয়াছে, আড়াই বৎসর সে বাড়ি যায় নাই। পিসিমা কাশীতে, গৌরী সন্তান লইয়া কলিকাতায়, সে এখানে নির্জনে নদীতীরে একমাত্র মাটিকে অবলম্বন করিয়া দিন কাটাইয়া চলিয়াছে।

মাটির ভিতর সে মাকে প্রত্যক্ষভাবে দেখিতে চাহিয়াছিল। দেখিতেও পাইয়াছে, কিন্তু যে মূর্তিতে সে মাকে দেখিতে চাহিয়াছিল, এ মূর্তি সে মূর্তি নয়। মায়ের এ মূৰ্তি যেন গৃহস্থবধূর। মূর্তি, ক্ষুদ্র গণ্ডি ঘেরা একখানি বাড়ির ভিতর এ মা সন্তান পালন করেন, স্নেহে বিগলিত শান্ত সলজ্জভাবে পরম মমতায় সন্তানকে বুকে অ্যাঁকড়াইয়া শুধু ধরিয়া রাখেন। তাহার মনে পড়িয়া যায়—সাত কোটি সন্তানের হে বঙ্গজননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ কর নি। এ মা, সেই মা। বিরাট মহিমায় যে মা সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে আপন মহিমার দীপ্তিতে আকাশ-বাতাস জলস্থল ঝলমল করিয়া দাঁড়াইবেন, সে মূর্তিতে মা কবে দেখা দিবেন? সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল।

দ্রুততম গতিতে পৃথিবীর সকল দেশে বিপ্লব ঘটিয়া চলিয়াছে, রাশিয়ার স্বৈরাচারতন্ত্র নিশ্চিহ্ন হইয়া গেল গণবিপ্লবের কালবৈশাখীর ঝঞাতাড়নায়; তুর্কিতে বিপ্লবের কালো মেঘ দেখা দিয়াছে; সারা ইউরোপে সামাজিক জীবনে একটা বিপ্লব বহিয়া চলিয়াছে। ভারতবর্ষে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাটি রক্তাক্ত হইয়া গেল। কলিকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন, তারপর নাগপুর কংগ্রেসের ফলে চৈত্র মাসের উত্তপ্ত দ্বিপ্রহরের ক্ষীণ ঘূর্ণির মত জাগিয়া উঠিয়াছে অসহযোগ আন্দোলন। অহিংসা ও সত্য তাহার মূলমন্ত্র। শিবনাথ গ্রামের মধ্যে চরকা তাত লইয়া কাজ আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। কিন্তু চারিদিকে শুধু শূদ্ৰ শূদ্ৰ আর শূদ্র। সমগ্র জাতিটাই যেন শূদ্ৰত্ব প্রাপ্ত হইয়াছে। মাতৃদেবতার পূজাদেবীর সম্মুখেও তাহাদের পূজার অধিকার আছে, এ কথা মনে মনে স্বীকার করিতেও পারে না, ভয়ে আসিতেও চায় না। সে আপন মনেই ভাবাবেগকম্পিত কণ্ঠে সেই রহস্যময় অন্ধকারের মধ্যে আবৃত্তি করিল—

বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্ৰুধারা
এর যত মূল্য সে কি ধরার ধুলায় হবে হারা?
স্বৰ্গ কি হবে না কেনা
বিশ্বের ভাণ্ডারী শুধিবে না
এত ঋণ?
রাত্রির তপস্যা সে কি আনিবে না দিন?

যে লোকটি তাহার দিকে আসিতেছিল, সে নিকটে আসিয়া পড়িল, তবু শিবনাথ তাহাকে চিনিতে পারি না, সে আবৃত্তি বন্ধ করিল। চারিদিকে ঘনায়মান অন্ধকারের আবরণের উপরেও আগন্তুকের সর্বাঙ্গে আচ্ছাদনের বাধা তাহাকে চিনিতে দিল না। লোকটির আপাদমস্তক একখানা জীর্ণ মলিন চাদরে ঢাকা। মাথার উপর হইতে কপালের আধখানা পর্যন্ত অবগুণ্ঠনের ভঙ্গিতে আবৃত। শিবনাথ তাহার মুখের দিকে ঈষৎ ঝুঁকিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখিতে ৫ খিতে প্ৰশ্ন করিল, কে?

মাথার আবরণ টানিয়া খুলিয়া ফেলিয়া আগন্তুক বলিল, আমি সুশীল।

সুশীলদা! শিবনাথ চমকিয়া উঠিল, আরও খানিকটা তাহা মুখের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া তাহাকে ভাল করিয়া দেখিয়া বলিল, উঃ! এ কী চেহারা হয়েছে আপনার সুশীলদা?

সত্যই সুশীলের শীর্ণ শরীর, দাড়ি-গোফে মুখ ভরিয়া উঠিয়াছে, দীর্ঘ রুক্ষ চুলে মাথা বেমানান রকমের বড় মনে হইতেছে।

অন্ধকারের মধ্যে অস্পষ্ট হইলেও শিবনাথ দেখিল, সুশীলের মুখে হাসির রেখা। হাসিয়া সুশীল বলিল, আজ ছ মাস পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ফিরছি। আমি এখন অ্যাব্সকন্ডার; উপস্থিত দেড়শো মাইল হেঁটে আসছি। চেহারার আর দোষ কী, বল?

দেড়শো মাইল! শিবনাথ শিহরিয়া উঠিল।

মৃদুস্বরে নিতান্ত নিরুচ্ছসিতভাবেই সুশীল বলিল, হবে বৈকি। বেশি হবে, তবু কম হবে না। কলকাতা থেকে এখানকার নিয়ারেস্ট স্টেশন হল বোধহয় একশো পঁয়ত্রিশ মাইল। তাও রেললাইন এসেছে সোজা। আমি নিবিড় পল্লীগ্রাম দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আসছি। দেড়শো মাইলের অনেক বেশি হবে। চল, এখন তোমার আস্তানায় চল তো। ভয়ঙ্কর ক্ষিদে পেয়েছে, আর চায়ের তৃষ্ণায় প্রায় মরে যাচ্ছি।

শিবনাথ ব্যস্ত হইয়া উঠিল, বলিল, আসুন। পথে চলিতে চলিতে শিবনাথ ব্যগ্ৰভাবে প্ৰশ্ন করিল, পূর্ণবাবু কোথায়?

পূর্ণ নেই!

নেই! আৰ্তস্বরে শিবনাথ বলিয়া উঠিল, নেই, পূর্ণ নেই।

সুশীল সংযত মৃদুস্বরে বলিল, এমন চিৎকার করে নয় শিবনাথ, আর বিচলিত হলেও চলবে না। পূর্ণ ডায়েড এ গ্লোরিয়াস ডেথ গৌরবের মৃত্যু, সে যুদ্ধ করে মরেছে। পুলিশের সঙ্গে ওপেন ফাইট।

শিবনাথ একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল। তাহার মনে শত প্ৰশ্ন উদগ্রীব হইয়া উঠিতেছিল, কিন্তু সে প্রশ্ন উত্থাপন করিতে তাহার সঙ্কোচ হইল। এ কাহিনী জানিবার তাহার অধিকার নাই। সে স্বেচ্ছায় এ অধিকার ত্যাগ করিয়াছে।

সুশীল বলিল, গুলি খেয়েও পূর্ণ তিন দিন বেঁচে ছিল। হাসপাতালে যখন তার জ্ঞান হল, পুলিশ এসে তাকে জিজ্ঞেস করলে, তোমার নাম কী? উত্তর সে দিলে না; বারবার প্রশ্ন করাতে সে বললে, আমাকে বিরক্ত কোরো না, শান্তিতে মরতে দাও, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি প্লিজ, লেট মি ডাই ইন পিস। বলে নি নাম। পুলিশ তাকে এও বলেছিল, দেখ, আমরাও ভারতবাসী, আমরাও কামনা করি যে, ভারত একদিন স্বাধীন হবে। সেদিন যখন স্বাধীন ভারতের ইতিহাস লেখা হবে, তখন উজ্জ্বল অক্ষরে তোমার নাম লেখা থাকবে। বল, তোমার নাম বল। কিন্তু তার সেই এক উত্তর, ডোন্ট ডিস্টার্ব মি প্লিজ, লেট মি ডাই ইন পিস। আসাঙ, আল্যামেন্টেড, আরেকগনাইজড সে চলে গেল।

 

ছোট একখানি মেটে খোঁড়া বাঙলোয় শিবনাথের থাকিবার স্থান। মাত্র দুইখানি কুঠুরি; কুঠুরি দুইটির সম্মুখে টানা একটি প্রশস্ত বারান্দা। সুশীল একেবারে শিবনাথের বিছানার উপর। গড়াইয়া পড়িয়া বলিল, নরম বিছানায় শুয়ে ভারি আরাম লাগছে শিবনাথ।

শিবনাথ বলিল, এখন যেন তা বলে ঘুমিয়ে পড়বেন না। আগে স্নান করে ফেলুন, তারপর গরম জলে পা ড়ুবিয়ে বসুন কিছুক্ষণ। তারপর খেয়েদেয়ে যাবেন।

খানিকটা চা খাওয়াও দেখি আগে।

দাঁড়ান, আমি নিজেই চা করে নিয়ে আসি। এখানকার লোকজনের চা খাওয়া তো জানেন না। খায় না তো খায়ই না, সর্দি-টর্দি হলে চা যেদিন খাবে, সেদিন জলের বদলে দুধ ফুটিয়ে তাতে চা দেবে, এতখানি গুড় বা চিনি দেবে, তারপর দেড় সের দু সেরী একটা বাটিতে চা নিয়ে বসবে।

শিবনাথ বাহির হইয়া গেল, সুশীল একে একে গায়ের আবরণগুলি খুলিয়া ফেলিতে আরম্ভ করিল। চাদর ও জামা খুলিয়া কোমর হইতে একটা বেল্ট খুলিয়া সযত্নে বিছানার উপর রাখিল। বেল্টটার দুই পাশে দুইটা রিভলবার।

কিছুক্ষণ পর চায়ের কাপ লইয়া শিবনাথ ঘরে প্রবেশ করিয়া বলিল, স্নানের জল রেডি। ফুটবাথের জল চড়িয়ে দিয়েছি। চা খেয়ে আপনি সর্বাগ্রে কামিয়ে ফেলুন সুশীলদা, বলেন তো গ্রাম থেকে নাপিতটাকে ডেকে পাঠাই, চুলগুলোও কেটে ফেলুন।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সুশীল বলিল, উঁহুঁ।

বেশ, তবে কাল সকালেই হবে।

উঁহুঁ।

কেন? বাউল বৈরাগী, কি মুসলমান ফকির, কি শিখ—এদের কি চুল-দাড়ি-গোঁফ না থাকলে চলে?

শিবনাথ এবার হাসিয়া বলিল, ও।

 

খাওয়াদাওয়া শেষ করিয়াই সুশীল বিছানায় গড়াইয়া পড়িল এবং কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই অগাধ ঘুমে ড়ুবিয়া গেল। শিবনাথ তাহাকে ডাকিল না, একখানা মাদুর টানিয়া লইয়া মেঝের উপর বিছাইয়া শুইয়া পড়িল। পরদিন প্ৰভাতে উঠিয়া দেখিল সুশীল তখনও ঘুমাইতেছে। চা তৈয়ারি করিয়া লইয়া আসিয়া দেখিল, সুশীলের ঘুম তখনও ভাঙে নাই। এবার বাধ্য হইয়া সে ডাকিল, সুশীলদা, উঠুন। চা হয়ে গেছে।

বিছানার উপর উঠিয়া বসিয়া সুশীল বলিল, ঘুম যেন এখনও শেষ হয় নি ভাই শিবনাথ। এখনও ঘুমুতে ইচ্ছে করছে।

বেশ তো, চা খেয়ে আবার শুয়ে পড়ুন।

চা খাইয়া সুশীল সত্য সত্যই আবার শুইয়া পড়িল। শিবনাথ কাজকর্মের অজুহাতে বাহির হইয়া গেল। সমস্ত কাজ আজ তাহার বিস্বাদ তিক্ত বোধ হইতেছিল। সুশীলের এই দুর্দান্ত অভিযানের তুলনায় এ তাহার কী, কতটুকু? পৈতৃক সম্পত্তি হইতে এক পয়সা সে গ্রহণ করে না, সে অর্থে প্রয়োজনমত প্রজার সাহায্য হয়, বাকি জমিতেছে। জমিয়া প্রচুর হইলে তাহা হইতে একটা বড় কাজ হয়ত হইবে, প্রজাদের গ্রামে গ্রামে সমবায় ব্যাংক স্থাপন করিতে পারিবে। সেই বা কতটুকু? আর এই চাষীদের মধ্যে কর্মপ্রচেষ্টার ফলে তাহার কল্পনার গণআন্দোলন, গণবিপ্লব, সে কি কোনোদিন সত্য হইবে? চিন্তা করিতে করিতে তাহার মনে পড়িল, রাওলাট রিপোর্ট, রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগ, কলিকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন, নাগপুর কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত হইতে চলিয়াছে। ধীরে ধীরে মন আবার আশায় ভরিয়া উঠিল। সে কল্পনা করিল, এই গ্রাম হইতে একদিন ভাবী পুরুষের দল সারি বাঁধিয়া অভিযান করিয়া চলিয়াছে গণআন্দোলনকে পুষ্ট করিতে; অহিংসা তাহার মূলমন্ত্র। শিবনাথ উৎসাহিত হইয়া একজন তদবিরকারক চাষীকে ডাকিয়া বলিল, তুমি একবার যাও দেখি, যেসব লোক চরকা নিয়েছে, তাদের বলে এসো যে, সুতো বড় কম হচ্ছে। আরও বেশি সুতো হওয়া দরকার।

লোকটি চলিয়া গেল, সে নিজে বাহির হইল তাঁতিদের বাড়ির দিকে, কাপড়ের কাজ বড়। কম হইতেছে। রাশি রাশি কাপড় চাই–রাশি রাশি কাপড় চাই।

তাঁতিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়া যখন সে ফিরিল, তখন বেলা প্রায় দুইটা। সুশীল তখনও ঘুমাইতেছে। ঠাকুর বলিল, বাবু উঠেছিলেন একবার,–স্নান করে খেয়ে আবার শুয়েছেন।

স্নান-আহার শেষ করিয়া শিবনাথ ডেক-চেয়ারখানা বারান্দায় বাহির করিয়া তাহারই উপর শুইয়া পড়িল। তাহারও চোখে ঘুম ধরিয়া আসিয়াছিল, কিন্তু কাহার ভারী পদশব্দে চোখ মেলিয়া সে দেখিল, সুশীল আসিয়া বাহিরে দাঁড়াইয়াছে। শিবনাথ ঈষৎ হাসিয়া বলিল, ঘুম ভাঙল সুশীলদা?

সুশীল হাসিয়া বলিল, ভাঙল।

শরীর সুস্থ হয়েছে?

তাজা রেস-র্সের মত। আরও একশো মাইল আবার কভার করতে পারব। কিন্তু চা বানাও ভাই। তারপর চল, একটু বেড়িয়ে আসি নদীর ধারে ধারে।

 

সেই রহস্যময় প্রদোষালোকের মধ্যে নদীর বালুকাগর্ভের উপর বসিয়া সুশীল এই কয় বৎসরের উন্মাদনাময় বিপ্লবপ্রচেষ্টার কথা বলিয়া কহিল, আরব্য উপন্যাসের একাধিক সহস্ৰ রজনীর গল্পের মত রাত্রির পর রাত্রি বলে গেলেও এ ইতিহাস নিখুঁত করে বলে শেষ হবে না শিবনাথ। দেশের লোক জানলে না, কিন্তু বিদেশী গভর্নমেন্ট জেনেছে, তারা লিখে রেখেছে। রাওলাট রিপোর্টে এর ইতিহাস রয়ে গেল। যথাসাধ্য বিকৃত করেছে, কিন্তু ভাবীকালের

ঐতিহাসিকের সায়েন্টিফিক মনের কাছে তার সত্য স্বরূপ লুকোনো থাকবে না।

শিবনাথ নীরবে অন্ধকারের দিকে চাহিয়া বসিয়া ছিল। সে শুধু একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল। সুশীলের আবেগ তখনও শেষ হয় নাই, সে আবার বলিল, একটা বিরাট উদ্যম, পাঞ্জাব থেকে বাংলা পর্যন্ত বিপ্লবের একটা ধারা ব্যর্থ হয়ে গেল!

শিবনাথের মনে পড়িয়া গেল অতি সাধারণ আকৃতির অসাধারণ মানুষটির কথা, না পূর্ণ, বাস্তবতার দিক দিয়েও এ অসম্ভব, এ হয় না। সে এবার বলিল, এ কথা একজন জানতে পেরেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন সুশীলদা।

বাধা দিয়া সুশীল বলিল, হত শিবনাথ, হত। সামান্য ভুলের জন্যে সব পণ্ড হয়ে গেল। দেশের লোক একটু সাহায্য করলে না।

শিবনাথ সুশীলের কথার প্রতিবাদ করিল না। সে তাহাকে জানে, তাহার মত তাহার পথ। তাহার কাছে অভ্রান্ত। তাহাতে এতটুকু আঘাত সে সহ্য করিতে পারে না। সে মনে মনে সেই দিনের আরও কয়েকটা কথা স্মরণ করিল, ব্ৰহ্মণ্যধর্মের জন্মভূমি ভারতবর্ষের বুকে চারিদিকে শূদ্ৰ আর শূদ্ৰ—অনার্য আর অনার্য। সে নিজেও এ কথা প্রত্যক্ষ করিয়াছে, তাদের মধ্যে আসিয়া তাহাদের অন্তরলোক পর্যন্ত তনুতন্ন করিয়া দেখিয়াছে, স্বাধীনতা তাহাদের কাছে একটা দুর্বোধ্য শব্দ ছাড়া কিছু নয়। সাহায্য তাহারা করিবে কোন্ প্রেরণায়?

সুশীল আবার বলিল, কিন্তু তুমি এ কী করছ শিবনাথ? এতে কী হবে?

শিবনাথ বলিল, তেত্ৰিশ কোটি লোকের স্বাধীনতার জন্যে ছেষট্টি কোটি হাত উদ্যত করবার সাধনা আমার সুশীলদা, গণবিপ্লব।

সুশীল একটু চিন্তা করিয়া বলিল, সে কি কোনো কালে হবে?

গভীর বিশ্বাসের সহিত শিবনাথ বলিল, হবেদি ডে ইজ ডনিং, এই নন-কো-অপারেশনের মত আন্দোলন পাঁচ বছর আগেও কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল সুশীলদা? এই শুকনো বালির মরুভূমির উপর আমরা বসে আছি, ওই কোথায় একধারে খানিকটা জল ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে। একদিন এরই বন্যায় দিদিগন্তর একেবারে ভেসে যায়, ড়ুবে যায়। কিন্তু সে বন্যা একবারে আসে না, প্রথমে এই বালি ঢাকে, তারপর কূল পর্যন্ত ভরে, তারপর কূল ভাসায়।

সুশীল বলিল, তোমার কল্পনা বাস্তবে পরিণত হোক শিবনাথ, কিন্তু আমি ওতে বিশ্বাস করতে পারলাম না।

শিবনাথ মুহূর্তে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল, বলিল, তুমি বিশ্বাস কর না সুশীলদা, আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি, আমার সাধনা আমার জীবনেই হয়ত সিদ্ধ হবে না; কিন্তু সাধনার সঞ্চয় হারাবে না, সে থাকে; আবার একজন এসে তাকে পরিপুষ্ট করে। অহিংসায় আমি বিশ্বাস করি, গণআন্দোলন আমি প্রত্যাশা করি; বিশ্বাস করি আমি মানুষকে। ক্ষুদ্র হোক, হীন হোক, দীন হোক, তাদের ক্ষুদ্র হীনতা দীনতা সমস্ত কিছুর মধ্য দিয়েই, তুমিও যেখানে যেতে চাও, তারাও চায় সেইখানে যেতে—এক পরম লক্ষ্যে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে জীবনের এই বিশৃঙ্খল উন্মত্ত যাত্রায় মানুষ দিগভ্রান্তের মত ছুটছে, অপমৃত্যুর সংখ্যা নেই। তাদের ঘোষণা দেবার কণ্ঠস্বর চাই সুশীলদা, জীবনকে যাত্রাপথে আহ্বান জানাবার ভাষা চাই, মানুষের চিরন্তন সাধনাই তো এই। স্বাধীনতা লাভ করলেই কি সব পেয়ে যাবে তুমি, সুশীলদা? জীবনের সকল দ্বন্দ্বেরই কি অবসান হবে?

সুশীল স্থির দৃষ্টিতে শিবনাথের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, কোনো উত্তর দিল না। শিবনাথ কিছুক্ষণ পর আবার বলিল, উত্তর দিলে না তুমি। কিন্তু আমি বলছি, সব পাবে না। দ্বন্দ্বের অবসান হবে না। ওতে তুমি চরম প্রাপ্তি পাবে, প্রম প্রাপ্তি নয়। চরমের মধ্যে প্রাচুর্য আছে, কিন্তু সে অফুরন্ত নয়, তার ক্ষয় আছে, ওটা সাময়িক, পরম হল অফুরন্ত, অক্ষয়, চিরন্তন।

সুশীল এবার হাসিয়া বলিল, তা হলে তো স্ন্যাসী হলেই পারতে, গুহার মধ্যেই তো পরম তত্ত্বের সন্ধান মেলে বলে শুনেছি।

হাসিয়া শিবনাথ উত্তর দিল, রাগাতে আমায় পারবে না সুশীলদা। তুমি যা বললে, সেও আমি বিশ্বাস করি, কিন্তু ওই গুহাটির সন্ধান করতেও যে আলোর সাহায্য চাই। স্বাধীনতা চাই আগে, তবে তো মুক্তি।

কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া সুশীল বলিল, যাক, তোমার কাজ তুমি কর, আমার পথে আমি চলে যাব। আজ রাত্রেই আমি রওনা হব শিবনাথ।

আজ রাত্রেই? কোথায়?

সুশীল হাসিয়া বলিল, প্রথম প্রশ্নের উত্তর, হ্যাঁ, আজ রাত্রেই। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর আমিও নির্দিষ্টরূপে জানি না। তবে চলেছি পেশোয়ারের পথে, চেষ্টা করব ভারতবর্ষের বাইরে চলে যেতে। এখন আর দেশে থেকে কাজ করা সম্ভব নয়, দেশের বাইরে থেকে কাজ করতে হবে।

শিবনাথ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, আপনার মা, দীপা–এঁরা?

বেশ তো তুমি তুমি হচ্ছিল, আবার আপনি কেন?

শিবনাথ হাসিয়া বলিল, সহজ অবস্থায় কেমন বাঁধছে। যাক, এখন কথার উত্তর দিন।

বাড়িতে রইলেন।

কিন্তু তাদের দেখবেন কে?

নিজেরাই দেখবেন। ভগবান থাকলে ভগবান দেখবেন।

কিন্তু–

বাধা দিয়া এবার সুশীল বলিল, থাক্ ও কথা শিবনাথ। এখন তোমার কাছে কেন এসেছি শোন। কিছু অর্থসাহায্য করতে পার?

বেশি টাকা তো আমার কাছে নেই, একশো টাকা মাত্র হতে পারে।

যথেষ্ট, যথেষ্ট। তাই দাও তুমি।

 

রাত্রি তখন প্রায় দ্বিপ্রহর। চারিদিক স্তব্ধতায় যেন নিথর হইয়া পড়িয়াছে। কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি, আকাশে আকাশ-ভরা তারা, পৃথিবীর বুকের উপর জমাট অন্ধকার।

সুশীল ও শিবনাথ ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল। সুশীলের গায়ে একটা আলখাল্লা, গলায় একবোঝা ফকির-কাঠি অর্থাৎ রঙিন পাথরের মালা, কাঁধে একটা ঝোলা, মাথায় মুসলমানী টুপি। সে হাসিয়া বলিল, ছালাম বাবুছাহেব, হজ করতি চললাম।

শিবনাথ কিন্তু কথার উত্তর দিতে পারি না, টপটপ করিয়া কয় ফোঁটা জল তাহার চোখ হইতে ঝরিয়া পড়িল। সুশীল আবার বলিল, আমার কাপড়চোপড় যা পড়ে রইল, সেগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করে দিও। তারপর আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিয়া বলিল, ঠিক আছে।

শিবনাথ এতক্ষণে প্রশ্ন করিল, কী?

বৃশ্চিক রাশিটাকে দেখে নিলাম, ওই দেখ। ওই আমার দিকনির্ণয় যন্ত্ৰ।

শিবনাথ আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিল, আকাশের প্রায় একাংশ জুড়িয়া বৃশ্চিকের দীর্ঘ বঙ্কিম পুচ্ছরেখা জ্বলজ্বল করিতেছে।

সুশীল বলিল, চলি তা হলে। একলা চল রে।

শিবনাথ কথা বলিল না, হেঁট হইয়া সুশীলের পা ছুঁইয়া প্ৰণাম করিল। মাথা তুলিয়া উঠিয়া সে দেখিল, সুশীল দ্রুতপদে আগাইয়া চলিয়াছে। কয়েক মুহূর্ত পরেই আর তাহাকে দেখা গেল না, গভীর অন্ধকারের মধ্যে বৃশ্চিকের বঙ্কিমপুচ্ছনির্দিষ্ট পথে দূর-দূরান্তরে যেন মিলাইয়া গিয়াছে।

 

সমস্ত রাত্রি শিবনাথের ঘুম হইল না। রক্তের ধারায় ধারায় উত্তেজনার প্রবাহ বহিয়া চলিয়াছে। মনের মধ্যে একটা গ্লানি যেন তীক্ষ্ণমুখ সুচের মত তাহাকে বিদ্ধ করিতেছিল। আন্দোলনের নির্যাতনময় ঘনীভূত যুদ্ধক্ষেত্রের আহ্বান যেন তাহার কানে আসিয়া পৌঁছিতেছে। সংবাদপত্রের সংবাদগুলি তাহার চোখের ওপর প্রত্যক্ষ হইয়া ফুটিয়া উঠিতেছে। দলের পর দলে স্বেচ্ছাসেবকেরা চলিয়াছে, পুলিশ প্রেপ্তার করিতেছে। কারাচীরের অন্তরাল হইতে তাহাদের কণ্ঠধ্বনি ভাসিয়া আসিতেছে। পুলিশের বেটনের আঘাতে অহিংসযুদ্ধের সৈনিকের মুখ রক্তে ভাসিয়া গেল। দেশের মাটির বুকে সেই রক্ত ঝরঝর করিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে, মাটি শুষিয়া লইতেছে।

সে বিছানা হইতে উঠিয়া পড়িল।

আবার বারান্দায় বাহির হইয়া আসিয়া সে দাঁড়াইল। পৃথিবীর বুকজোড়া নির অন্ধকারের মধ্যে বহু বহু উৰ্ব্বলোকে নক্ষত্রখচিত আকাশ। মাটির বুকে অসংখ্য কোটি কীটপতঙ্গের সম্মিলিত সঙ্গীতধ্বনি। সহসা তাহার যেন মনে হইল, ওই সঙ্গীতের ভাষা স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছে। নক্ষত্রের আলোক-সঙ্কেতের মধ্যেও যেন একই ভাষা রূপায়িত হইতেছে—

যাত্রা কর, যাত্রা কর, যাত্রীদল
এসেছে আদেশ–
বন্দরের কাল হল শেষ!

সত্যই তো, এই যাত্রার আদেশই তো মহাকালের চিরন্তন আদেশ! যে যাত্ৰা করিয়াছে, সে-ই পরমকে পাইয়াছে; যে মধ্যপথে থামিয়াছে, সে পায় নাই; কিন্তু চলা যাহার থামে নাই, সে কবে বঞ্চিত হইয়াছে। যাত্রার সঙ্কল্প সে স্থির করিয়া ফেলিল। আর নয়, বন্দরের কাল শেষ হইয়াছে।

পাশের ঘরে প্রবেশ করিয়া হারিকেনের শিখাটা সে বাড়াইয়া দিল। একদিকে তাহার বই, অন্যদিকে সুতা ও খদ্দর কাঠের শেফের মধ্যে থাকে থাকে সাজানো রহিয়াছে। সম্মুখের দেওয়ালের গায়ে একখানি ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা, অতি সযত্নে চারিদিকে আলপিন দিয়া আবদ্ধ করিয়া টাঙানো। সে সসম্ভ্ৰমে পতাকাটিকে অভিবাদন করিয়া দেওয়াল হইতে খুলিয়া লইয়া মাথার উপর তুলিয়া ধরিল।

কালই সে কলিকাতায় রওনা হইবে, স্বেচ্ছাসেবকের দলের সেবকরূপে সে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ঝাপ দিয়া পড়িবে। সহসা তাহার মনে পড়িল আপন গ্রামের কথা। দেশের সর্বত্র যখন জীবনের ধ্বনিতে মুখর হইয়া উঠিতেছে, তখন কি তাহার জন্মভূমিই নীরবে মাথা হেঁট করিয়া থাকিবেন? সে সঙ্কল্প দৃঢ় করিয়া ফেলিল, কলিকাতা নয়, তাহার আপন গ্রামে যেখানে সে জন্মগ্রহণ করিয়াছে, সেইখানে তার সকল শক্তি নিঃশেষ করিয়া যুদ্ধ করিবে। উত্তেজনার আবেগে সর্বাঙ্গ তাহার থরথর করিয়া কাঁপিতে আরম্ভ করিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *