১১. পিসিমার একাগ্র সতৃষ্ণ দৃষ্টি

পিসিমার একাগ্র সতৃষ্ণ দৃষ্টি ভুল হইবার কথা নয়, ভুলও হয় নাই। সত্যই শিবনাথ বড় হইয়া উঠিয়াছে, তাহার দেহের একটা সুস্পষ্ট পরিবর্তন আজ সহজেই চোখে পড়ে। তাহার বাল্যরূপ যেন ভাঙিয়া কে নূতন ভঙ্গিতে নূতন রূপে গড়িয়া তুলিতেছিল। দেহখানি দীর্ঘ ভঙ্গিমায় ঈষৎ শীর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, সর্ব অবয়বের মধ্যে দৃঢ়তার প্রতিবিম্ব ধীরে ধীরে প্রভাতের প্রথম দণ্ডের সূর্যকিরণের মত ক্রমবিকাশমান। বাল্য ও কৈশোরের সন্ধিক্ষণে এ পরিবর্তন সকলের মধ্যেই প্রকাশ পায়, পাঁচ বৎসর হইতে পনের বৎসরের মধ্যে মানুষের পরিবর্তন কখনও চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু তাহার পরই কয় মাসের মধ্যেই এমন সুস্পষ্ট পরিবর্তন দেখা দেয় যে, চারিপাশের মানুষ বিস্মিত না হইয়া পারে না।

শিবনাথের আচরণের মধ্যেও পরিবর্তন দেখা দিয়াছিল। চোখের দৃষ্টিতে, পদক্ষেপের ভঙ্গিতে, কথা বলার ধারার মধ্যে গাম্ভীর্য মন্থরগতিতে আত্মপ্রকাশ করিতেছিল। প্রথম বর্ষার গৈরিকবর্ণ জলধারায় আধভরা ছোট নদীর রূপের সঙ্গে এ রূপের একটা সাদৃশ্য আছে। খেলার ছলে আর তাহাকে অতিক্রম করা যায় না; সমভরে নিজেকে প্রস্তুত রাখিয়া সে জলে নামিতে হয়।

তাহার ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হইয়া গিয়াছে। বিপুল অবসরে সে আবার বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ লইয়া বসিল।

সেদিন পিসিমা বলিলেন, হ্যাঁ রে শিবু, তুই মাঠে গিয়ে একা বসে বসে কী ভাবিস বল তো?

শিবনাথ হাসিয়া বলিল, কে বললে তোমাকে?

যেই বলুক, সঙ্গী-সাথী বাদ দিয়ে একা কী করি?

কী আর করব? মাঠ দেখি, নদী দেখি, আকাশ দেখি।

তার মানে? ঘোড়াও আর চড়িস না?

ভাল লাগে না পিসিমা।

পিসিমার মুখ ভারী হইয়া উঠিল। মাও সেখানে আসিয়া দাঁড়াইয়া ছিলেন। শিবনাথ মাকে বলিল, আমার একটা জিনিস করে দেবে মা?

পিসিমা বলিলেন, তোমার কাজে বড় ঢিল পড়েছে রতন, গেছ বেলা দুটোর সময় আর এলে এই সন্ধে লাগিয়ে! এর মানে কী বাছা?—বলিতে বলিতেই তিনি বাহির হইয়া চলিয়া গেলেন।

রতন কোনো উত্তর দিল না, শুধু বলিল, কার উপর চটল ঠাকরুন আজ?

মা বলিলেন, মাঠে একা কী ভাবিস শিবু, পিসিমা তোর বলছিল আমায়?

শিবু মায়ের দিকে চাহিয়া বলিল, আনন্দমঠের সেইখানটা মনে আছে মামা যা ছিলেন, মা যা হইয়াছেন? আমি তাই দেখতে চেষ্টা করি মা।

মা ছেলের মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন, চোখে তাহার একটি শুভ্ৰ হৰ্ষোজ্জ্বল দীপ্তি।

শিবনাথ বলিল, বুঝতে পারি না মা। সেই মূৰ্তিও কল্পনা করতে পারি না। সেই আকাশ, সেই নদী, সেই মাঠ, সেই ফসল

মা বলিলেন, দেশ কি মাটি শিবনাথ? দেশকে খুঁজতে হয় গ্রামের বসতির মধ্যে, শহরের মধ্যে। তুই আমাদের পটো-পাড়াটা দেখেছিস শিবু?

আর তো পটোরা নেই; সব মরে গেছে, কজন ছিল পালিয়ে গেছে।

আমার বিয়ের পরও আমি দেখেছি শিবু, ওই পটো-পাড়ার কী চলতি! বড় বড় জোয়ান পট দেখিয়ে গান করত, মাটির পুতুল বেচত মেয়েরা। যে জায়গা দিনরাত্রি হাসি গান আনন্দে মুখর হয়ে থাকত, লক্ষ্মীর কৃপায় সুন্দর হয়ে থাকত, সেই জায়গা আজ কী হয়েছে। ওইখানে। ভেবে দেখ, মা কী ছিলেন, কী হয়েছেন।

শিবু মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।

কেষ্ট সিং আসিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, ঘোড়ায় জিন দেওয়া হয়েছে, পিসিমা দাঁড়িয়ে আছেন। কাছারিতে।

শিবনাথ রুক্ষ দৃষ্টিতে কেষ্ট সিংয়ের দিকে চাহিয়া বলিল, খুলে দিতে বল জিন।

মা বলিলেন, না। যাও কেষ্ট, বাবু যাচ্ছেন।

কেষ্ট চলিয়া গেল।

শিবু বলিল, কেমন পাগল বল তো!

মা বলিলেন, গুরুজন সম্বন্ধে শ্রদ্ধা করে বলতে হয় শিবু। যাও গায়ে জামা দিয়ে চলে যাও। পিসিমা তোমার আমার চেয়েও বড়, তাঁর মনে দুঃখ দিও না।

শিবনাথ আর কথা কহিল না, উঠিয়া জামা গায়ে দিবার জন্য চলিয়া গেল।

রতন বলিল, হল কী গো মামীমা?

পাচিকা হইলেও রতন এ বাড়ির মেয়ের মত, তাহার মা এই বাড়িতে কাজ করিয়া গিয়াছেন, তাহার মৃত্যুর পর সে কাজ করিতেছে। রতনের মা শৈলজা-ঠ কুরানীকে বলিতেন দিদি, শিবনাথের পিতাকে বলিতেন দাদা। সেই সূত্ৰেই রতন এ বাড়ির ভাগ্নী, শৈলজা-ঠাকুরানী তাহার মাসিমা, শিবনাথের মাকে সে বলে মামীমা।

শিবনাথের মা বলিলেন, হয় নি কিছু, মাঝে মাঝে তে মনখারাপ হয় ঠাকুরঝির, সেই রকম কিছু হয়েছে। একটু তিনি ঘুরাইয়া বলিলেন।

রতন বলিল, ওই নাও, আবার পেয়াদা এসে হাজির।

সতীশ চাকর আসিয়া দাঁড়াইয়া ছিল, সে বলিল, আজ্ঞে বাবুকে ডাকছেন পিসিমা। নায়েববাবুকে বকছেন, মুহুরীবাবুকে বকছেন, বাবুকে কাগজপত্র দেখানো হয় না বলে।

শিবনাথ বলিল, চল চল, আর বক্তৃতা করতে হবে না।

বৈঠকখানায় পিসিমা নায়েবকে সত্য সত্যই তিরস্কার করিতেছিলেন, নায়েব নতমস্তকে দাঁড়াইয়া সমস্ত সহ্য করিতেছিলেন। শিবনাথ আসিতেই পিসিমা বলিলেন, তুমি আর ছোট ছেলে নও শিবনাথ, আপনার বিষয় আপনি এইবার দেখেশুনে নাও। আমি আর পারব না।

শিবনাথ সে কথার জবাব দিল না, সে বলিল, এই, ঘোড়া নিয়ে আয়।

সহিস ঘোড়া আনিয়া কাছে দাড় করাইতেই শিবনাথ সওয়ার হইয়া বসিয়া বলিল, ঘোড়াটাকে নাচাব, দেখবে পিসিমা?

পিসিমা বলিলেন, না। তোমাকে সকালে বিকেলে কাছারিতে বসতে হবে কাল থেকে শিবনাথ।

তারপর সতীশ চাকরকে বলিলেন, কাছারি-ঘর পরিষ্কার কর সতীশ। শিবনাথ কাল থেকে টিপ সই করে দেবে, তবে টিপ মঞ্জুর হবে নায়েববাবু।

শিবনাথ তখন ঘোড়ায় চড়িয়া বাহির হইয়া গিয়াছে। পিসিমা বলিলেন, ওকে এইবার গড়ে তোলবার ভার আপনার সিংমশায়।

নায়েব হাসিয়া বলিলেন, কাটার মুখে শান দিয়ে ধারালো করতে হয় না মা, আপনি সব ঠিক হয়ে যাবে।

 

পরদিন সকালে পিসিমা নিজে শিবনাথের হাত ধরিয়া কাছারি-ঘরে বসাইয়া দিলেন। কাছারি-ঘর ঝাড়া-মোছা হইয়াছে, ফরাসের উপর সাদা চাদরের পরিবর্তে আজ রঙিন ছাপানো চাদর শোভা পাইতেছিল, তাকিয়াগুলিরও ওয়াড় পালটানো হইয়াছে। তেপায়ার উপর রুপার ফরসি সযত্ন মার্জনায় ঝকমক করিতেছিল। এ টেবিলের উপর একখানি আলুন্দের রঙিন চাদর বিছানো। তক্তপোশের উপর মধ্যস্থলে ছোট একখানি গালিচা দিয়া শিবনাথের আসন প্রস্তুত হইয়াছিল, সম্মুখে প্রাচীনকালের কাঠের হাতবাক্স। বাক্সটির দক্ষিণ দিকে বিচিত্র গঠনের রুপার একটি দোয়াতদানিতে দোয়াত ও কলম রক্ষিত ছিল। শিবনাথকে বসাইয়া দিয়া পিসিমা বলিলেন, দুটি কথা মনে রেখো, কারও কাছে মাথা নিচু কোরো না, আর পিতৃপুরুষের কীর্তি বৃত্তি লোপ কোরো না।

তিনি আর দাঁড়াইলেন না, দ্রুতপদে বাহির হইয়া চলিয়া গেলেন, ভাল করিয়া তাহার মুখ কেহ দেখিতে পাইল না। শিবনাথ আসনে বসিয়া চারিদিকে একবার চাহিয়া দেখিল। নায়েব সম্মুখে দাঁড়াইয়া ছিলেন, ভূমিষ্ঠ হইয়া তাহাকে প্রণাম করিয়া বলিলেন, এই টিপটা সই করে দিন।

টিপটি নানা দেবতার পূজার খরচের ফর্দ, শিবনাথ বলিল, এত পুজো হঠাৎ?

নায়েব বলিলেন, আপনি আজ প্রথম কাছারিতে বসবেন, তারই জন্যে পুজোর ব্যবস্থা।

কেষ্ট সিং আসিয়া নত হইয়া অভিবাদন জানাইয়া বলিল, ২১৯ নম্বরের মোেড়ল প্রজারা এসেছে।

নায়েব প্রশ্ন করিলেন, ৫৯ নম্বরের প্রজারা আসে নি এখনও?

আজ্ঞে না, তবে এসে পড়ল বলে।

বাহিরের বারান্দায় কতকগুলি পদশব্দ শুনিয়া কেষ্ট দরজার বাহিরে আসিয়া ফিরিয়া গিয়া। বলিল, আজ্ঞে, ৫৯ নম্বরেরও সব এসে পড়েছে।

নায়েব বলিলেন, ডাক সব।

শিবনাথ প্ৰশ্ন করিল, প্রজারা কেন নায়েববাবু?

নায়েব উত্তর দিবার পূর্বেই দুই তৌজির দশজন মণ্ডল আসিয়া প্ৰণাম করিল। শিবনাথও হাত তুলিয়া প্রতিনমস্কার জানাইল।

যোগীন্দ্র মণ্ডল বলিল, অনেকদিন পরে কাছারি-ঘরে আমাদের রাজাকে দেখলাম হুজুর।

শিবনাথের মনের মধ্যে কেমন একটা উত্তেজনা জাগিয়া উঠিতেছিল; মুখ প্রদীপ্ত, চোখ জ্বলজ্বল করিতেছিল।

৫৯ নম্বরের তৌজির নগেন্দ্ৰ বলিল, আমরা পিতৃহীন হয়েছিলাম, এতদিন পরে আজ বাপ পেলাম।

এইবার তাহারা নজর হাজির করিল।

শিবনাথের দেহের সমস্ত রক্ত দ্রুতবেগে মাথায় উঠিতেছিল। ওই সব তাহার বেশ ভাল। লাগিতেছিল; শুধু তাই নয়, তাহার মন অহঙ্কারের নামান্তর আত্মপ্রসাদে ভরিয়া উঠিল। তাহার মনে হইল, সত্যই সে যেন একটি রাজা, এই প্রজাগুলির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা; তাহার একবিন্দু হাসির পুরস্কারে উহারা কৃতার্থ হইয়া যায়, হয়ত তাহাদের মঙ্গলও হয়। সে গম্ভীরভাবে নায়েবকে বলিল, মোলদের জলখাবারের ব্যবস্থা করে দিন।

নায়েব বলিলেন, সতীশ বাড়ির মধ্যে গেছে।

আবার একটু মৃদু হাসিয়া শিবনাথ বলিল, তোমরা আজ এখানে খেয়ে তবে যাবে, এ তো তোমাদেরই ঘর।

সত্যই প্রজারা যেন কৃতার্থ হইয়া গেল।

নায়েব বলিলেন, আজ্ঞে হ্যাঁ, তা তো বটেই।

যোগীন্দ্র বলিল, আপনার অনেই তো বেঁচে আছি হুজুর।

নগেন্দ্ৰ বলিল, মায়ের গর্ভ থেকে আপনার মাটিকেই আশ্রয় করেছি আমরা, আপনার বাড়ির পেসাদ তো আমাদের ভাগ্যের কথা।

বেলা দশটার সময় শিবনাথ বাড়িতে ফিরিল সংযত সমপূর্ণ পদক্ষেপে, মর্যাদাপূর্ণ গাম্ভীর্যের অনভ্যস্ত আবরণ অতি সাবধানতার সহিত সে রক্ষা করিয়া চলিয়াছিল। কালো কাঠের হাতবাক্সটি সতীশ কাঁধে করিয়া পিছন পিছন আসিতেছিল। শিবনাথ একেবারে আপনার ঘরের মধ্যে গিয়া উঠিল। টেবিলের উপর তাহার প্রিয় বই দুইখানি পড়িয়া আছে–আনন্দমঠ ও আঙ্কল টমস্ কেবিন। অকস্মাৎ নিদ্ৰাভঙ্গ সচকিতের মত সে টেবিলের নিকট দাঁড়াইয়া গেল। নিচে মা কী বলিতেছিলেন, তাহার কানে কথাগুলি আসিয়া পৌঁছিল।

একটি ভিক্ষে চাইব ঠাকুরঝি তোমার কাছে। কী, বল?

আজ থেকে শিবুকে সংসারের মধ্যে টেনে নিয়ে এসোনা ভাই, ওকে লেখাপড়া শিখতে দাও।

শিবনাথ রুদ্ধশ্বাসে কান পাতিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পর পিসিমা বলিলেন, এতে কি পড়ার ক্ষতি হবে বউ?

হবে।

বেশ, তবে শিবনাথের পড়াই শেষ হোক। তোমার ছেলে আমি কেড়ে নিতে চাই না ভাই।

ও কথা বলছ কেন ঠাকুরঝি? শিবনাথ তো তোমারই। আমার!

শিবনাথ পিসিমার মুখে এক বিচিত্ৰ হাসি কল্পনা করিয়া লইতে পারি, সে হাসি পিসিমা মাঝে মাঝে হাসেন। পিসিমা আবার বলিলেন, কেনা পুতুল মনের মত হয় না ভাই বউ, সে। পরের হাতে গড়া।

শিবনাথ একটা দীৰ্ঘনিশ্বাস ফেলিল। কোনো একটা সুনির্দিষ্ট ব্যথিত কারণ যে ইহার মূলে ছিল তাহা নয়, তবুও তাহার মা ও পিসিমার কথাগুলি শুনিয়া সে দীর্ঘনিশ্বাস না ফেলিয়া পারিল না। ক্যানভাসের ইজিচেয়ারখানায় সে চোখ বুজিয়া শুইয়া পড়িল।

কিশোর মন তাহার শরতের আকাশের বলাকার মত পক্ষবিস্তার করিয়া এক সুদীর্ঘ যাত্রায় যেন উড়িয়া চলিয়াছে। উত্তরোত্তর উর্ধ্বে উঠিয়া সে বোধকরি নিরন্তর সন্ধান করিতেছিল, কোথায় মানসলোক। মধ্যে মধ্যে এক অজ্ঞাত আকর্ষণে তাহার মন আজিকার কাছারি-ঘরখানির দিকেও আকৃষ্ট হইতেছিল।

হঠাৎ তাহার মনে পড়িয়া গেল গৌরীকে। ছোট চঞ্চল গৌরী আজ যদি থাকিত, তবে বড়। ভাল হইত। সে সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে তাহার আজিকার মর্যাদাময় রূপের দিকে চাহিয়া থাকিত। আবার ধীরে ধীরে তাহার মনবলাকা উত্তর-দিগন্তের মানসের দিকে নিবদ্ধ হইল।

তাহার স্থূল দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল স্বামী বিবেকানন্দের ছবির দিকে। সে আলমারি খুলিয়া স্বামীজীর বীরবাণীখানি বাহির করিয়া খুলিয়া বসিল।

এই বীরবাণীর কয়েকটি বাণী কার্পেটের উপর বুনিয়া দিবার জন্যই মাকে কাল সে বলিতে চাহিয়াছিল—আমার একটি জিনিস করে দেবে মা? কিন্তু সে কথা বলিতে পিসিমা অবসর দেন নাই। আজ সে নিজে ভুলিয়াছিল, আবার সেই কথাটা তাহার মনে পড়িল। মায়ের হাতে রচিত এই বাণী তাহার চোখের উপর অহরহ সে জাগাইয়া রাখিবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *