এর পরও জাহাজে পাসপার্তুর সঙ্গে ফিক্সের অনেকবার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু তার রকম-শকম দেখে ফিক্স আর তার কাছ থেকে কোনো খবর বার করবার কোনো চেষ্টাই করেননি। কিন্তু তবুও ব্যাপারটা আর সোজাভাবে নিতে পারলো না পাসপার্তু। সে ভাবতে লাগলো : আমরাও যেখানে যাই, ফিক্সকেও সেখানে দেখা যায়! ব্যাপারটা বড্ড ঘোরালো ঠেকছে তো! নিশ্চয়ই ও-ব্যাটা একটা স্পাই। ফগ সত্যি-সত্যিই পৃথিবী ঘুরছেন কি না, নিশ্চয়ই তা-ই ও গোপনে দেখে যাচ্ছে। সে বড় চটে উঠলো। ফিলিয়াস ফগের মতো একজন ভদ্রলোকের পিছনে টিকটিকি লাগানো। সে মনে-মনে ঠিক করলে : আচ্ছা, আমিও দেখবো ফিক্স কত শক্তি ধরেন, আর রিফর্ম ক্লাবই বা কত বড়ো ক্লাব?
এই আবিষ্কার সে মনে-মনে খুশিই হয়ে উঠলো। ঠিক করলে যে, যখুনি সুবিধে পাবে, তখুনি টিকটিকি-সাহেবের সঙ্গে মোলাকাত করে নেয়া যাবে। দেখা যাবে, তিনি কতটা বাহাদুর।
তিরিশে অক্টোবর বুধবার বিকেলবেলা রেঙ্গুন মলাক্কা প্রণালীতে ঢুকলো। পরদিন ভোর চারটের নির্দিষ্ট সময়ের বারো ঘণ্টা আগেই পৌঁছুলো সিঙ্গাপুরে। জাহাজের লোকজন কয়লা তুলতে লাগলো জাহাজে। ফিলিয়াস ফগ হাতে কিছু সময় পেয়ে খুশি হয়ে শহরটা দেখবার জন্যে আউদাকে নিয়ে বন্দরে নামলেন। ফি অবশ্যি তাদের পিছু নিতে ছাড়েননি। পাসপার্তু ফিক্সকে পিছু নিতে দেখে মনে-মনে বেশখানিকটা হেসে নিলে।
বেলা এগারোটার সময় রেঙ্গুন কয়লা তোলা শেষ করে নোঙর তুললো। কয়েকঘণ্টা বাদেই জাহাজের আরোহীদের দৃষ্টি থেকে মলাকার উঁচু পাহাড়গুলো দিগন্তে বিলীন হয়ে গেলো। হংকং তখনও তেরোশো মাইল দূরে। ফিলিয়াস ফগ মনে-মনে হিশেব করে নিলেন যে, দিন-ছয়েকের ভিতরেই হংকং পৌঁছুনো যাবে, আর ছয়ই নভেম্বরের ভিতরে অনায়াসেই ইয়োকাহামার উদ্দেশে রওনা হওয়া যাবে।
এতদিন অব্দি ভালোই ছিলো আবহাওয়া। হঠাৎ অল্প-অল্প ঝড় শুরু হলো। জাহাজের গতি দ্বিগুণ করা হলো। তরতর করে জল কেটে এগিয়ে চললো রেঙ্গুন। কিন্তু তুফানও তার সঙ্গে তাল রেখে বেড়েই চললো। তুফান সামলে চলতে গিয়ে রেঙ্গুনের গতি কিছুটা কমে এলো। পেনিনসুলার অ্যাণ্ড ওরিয়েন্টাল কম্পানির জাহাজিরা কিন্তু খুব ওস্তাদ। ওস্তাদ নাবিকেরা তাদের যতটুকু সাধ্যে কুলোয় তার চেয়েও বেশি করতে লাগলো। পাসপার্তু কিন্তু তা সত্ত্বেও জাহাজের ক্যাপ্টেনকে মনে-মনে গাল পাড়তে লাগলো। আউদাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কিন্তু ফিলিয়াস ফগের নির্বিকার। ভাবলেশহীন মুখে চিন্তার কোনো ছাপই দেখা গেলো না।
ওদিকে ফিক্স কিন্তু তার গোয়েন্দাগিরি কখনও ছাড়েননি। একদিন ফিক্স কথাপ্রসঙ্গে পাসপার্তুকে শুধোলেন : কী হে! হংকং-এ পৌঁছুবার জন্যে তোমরা দেখি বড্ড
বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে! কী ব্যাপার বলো তো! অত তাড়া কেন?
পাসপার্তু মনে-মনে চটে উঠে ছোট্ট করে একটা জবাব দিলে: তা, তাড়া একটু আছে বৈ কি। গন্তব্য যদি কিছু থাকে তবে সেখানে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়াই ভালো।
মিস্টার ফগ কি সেখান থেকেই ইয়োকোহামার জাহাজ ধরবেন? সেজন্যেই বুঝি তিনি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন?
পাসপার্তু এবারে ছোট্ট করে জবাব দিলে : হ্যাঁ। আচ্ছা-হে, এই রহস্যময় পৃথিবী-ভ্রমণের কথা কি তোমার বিশ্বাস হয়?
নিশ্চয়ই বিশ্বাস হয়। কেন? আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না?
মোটেই না।
পাসপার্তু রেগে উঠে বললে : হুঁ, সেয়ানা কুকুর!
তার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলেন ফিক্স। তাহলে কি আমি যে ডিটেকটিভ সেখবর প্রকাশ হয়ে গেছে নাকি? কিন্তু কেউ তো জানে না যে আমি ডিটেকটিভ! তাহলে লোকটা জানলে কী করে? সেদিন আর-কোনো কথা জিগেস করতে তার আর সাহসে কুলোললা না।
কিন্তু পাসপার্তু নাছোড়বান্দা। আরেকদিন সে নিজেই শুধধলে : তাহলে, মিস্টার ফিক্স, হংকং-এও কি আপনাকে আমাদের পেছনে দেখবার সৌভাগ্য হবে?
তার কথা বলার ধরন দেখে ফিক্স একটু কিন্তু-কিন্তু করলেন। পাসপার্তু বললে : আপনি যদি বরাবর আমাদের সঙ্গে থাকেন-উঃ, তাহলে কী খুশিটাই না হবো চলুন
আমাদেরই সঙ্গে। পেনিনসুলার অ্যাণ্ড ওরিয়েন্টাল কম্পানির এজেন্টের পক্ষে মাঝপথে থেমে যাওয়াটা কি ভালো দেখায়? আপনার লক্ষ্য তো গোড়ায় ছিলো বম্বাই অব্দি, এখন তো দেখছি চিনেই এসে পড়েছেন প্রায়। আর ঐ-তো আমেরিকা! আর সেখান থেকে ইওরোপ? সে-তো ব্যাঙের লাফের একলাফ!
ফিক্স তীব্র চোখে তার দিকে তাকালেন, কিন্তু তার চোখে সন্দেহজনক কিছু দেখতে–পেয়ে বললেন : তা…হা-ও, না-ও। এ-চাকরিতে ভালো-খারাপ দুই-ই আছে।… তুমি নিশ্চয়ই আঁচ করতে পেরেছে যে আমি নিজের পয়সায় শখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছি না।
পাসপার্তু হেসে বললে : সে আর আপনাকে বলতে হবে না।
ওকে আর ঘাঁটানো সুবিধের মনে না-করে ফিক্স নিজের ক্যাবিনে এসে ঢুকলেন। রাজ্যের ভাবনা-চিন্তা এসে তাকে বিব্রত করে তুললো। তাহলে ও আমাকে চিনে ফেলেছে-এ-কথা ভাবতে-ভাবতে তার মাথায় এক বাহাদুর মৎলব খেলে গেলো। ও যখন আমাকে চিনেই ফেলেছে, তখন হংকং-এ নেমেই আমার সব কথা ওকে খুলে বলবো। হয়তো ও ঐ চোরটার কীর্তি-কাহিনী জানে না। তার কাণ্ড-কীর্তির কথা শুনলে তাকে পুলিশে দিতে ও আমাকে নিশ্চয়ই সাহায্যই করবে।
ওদিকে ফিলিয়াস ফগ তখন স্থির চোখে ঝড়ে-মেতে-ওঠা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যাত্রার মধ্যে এ-রকম বিঘ্ন দেখা দিলে বিচলিত হয়ে পড়ারই কথা বিশেষ করে এ-রকম কোনো বেপরোয়া বাজির ব্যাপারে। কিন্তু ফগের মুখে চিন্তার কোনো চিহ্নই দেখা গেলো না, বরং দেখা গেলো কঠিন আত্মবিশ্বাসের সুস্পস্ট লক্ষণ।
ওদিকে পাসপার্তু কিন্তু খুব অস্থির হয়ে পড়লো। সে রেঙ্গুনের নাবিকদের সাধ্যাতীত সাহায্য করতে লাগলো–পারলে সে একাই হয়তো দশজনের কাজ করে দিতে। তার কর্মপটুতা দেখে সকলেরই তাক লেগে গেলো। আউদাও ফিলিয়াস ফগের এ-বিপদে খুব ঘাবড়ে গেলেন।
তুফান অবিশ্যি শেষ অব্দি একসময় থেমে গেলো, কিন্তু রেঙ্গুন গিয়ে হংকং পৌঁছুলো নির্দিষ্ট সময়ের পুরো একদিন পরে। ইয়োকোহামার জাহাজ বুঝি ছেড়ে গিয়েছে! পাসপার্তু আর খবর-টবর নিতে সাহস করলে না। যদি শোনা যায় যে ছেড়ে দিয়েছে, তবে উপায়? এর চেয়ে বরং জাহাজঘাটায় না-গিয়ে মনে-মনে আশা পুষে রাখাই ভালো। দুঃসংবাদ শুনতে-পাওয়ার চেয়ে কোনো সংবাদ না-জানাই তার কাছে ভালো বলে মনে হলো। ফিক্স অবিশ্যি ওদের এই দুরবস্থায় খুশি হয়ে মনে-মনে প্রার্থনা করতে লাগলেন যে ইয়োকাহামার জাহাজ যেন ওরা পৌঁছুবার আগেই ছেড়ে দেয়।
বন্দরের পাইলট জাহাজে উঠলে একটুও বিচলিত না-হয়ে অতীব-শান্ত সুরে ফিলিয়াস ফগ জিগেস করলেন : ইয়োকোহামার জাহাজ কি চলে গিয়েছে?
না। জাহাজের বয়লার খারাপ হয়ে গিয়েছিলো বলে সময়মতো ছাড়তে পারেনি।
কখন ছাড়বে তাহলে?
কাল সকালে জোয়ার এলে ছাড়বে।
ফিলিয়াস ফগ শুধালেন : জাহাজটার নাম কী?
পাইলট জবাব দিলে : কর্নাটিক।
ফগ তাকে ধন্যবাদ জানালেন। পাসপার্তু তো আহ্লাদে আটখানা, আনন্দে তার হাত সজোরে চেপে ধরে বললে : পাইলট, আপনি খুব ভালোমানুষ?
পাইলট এভাবে আচমকা সম্মানিত হবার কোনো কারণ বুঝতে না-পেরে অবাক হলো বটে, কিন্তু কারণ জানবার অপেক্ষা না-করেই শিস দিতে-দিতে তার কাজে চলে গেলো। বেলা একটার সময় রেঙ্গুন জেটিতে এসে লাগলো। যাত্রীরা সব ওঠা-নামা করতে লাগলো।
অদৃষ্ট যে ফিলিয়াস ফগের উপর খুব খুশি, এ-কথা কোনোমতেই অস্বীকার করার উপায় নেই। জাহাজের বয়লারটা যদি খারাপ না-হতো, তবে জাহাজ দিতো ছেড়ে, আর তার পরের জাহাজের অপেক্ষায় সময় নষ্ট হতে আটদিন। এ-কথা অবিশ্যি সত্যি যে তাঁকে চব্বিশ ঘণ্টা দেরি করে আসতে হয়েছে, কিন্তু সেজন্যে বিশেষ কোনো লোকশান হবে না। যে-জাহাজ ইয়োকোহামা থেকে সান-ফ্রান্সিসকো যাওয়া-আসা করে, হংকং-এর জাহাজ না-পৌঁছুলে পর তার ছাড়বার নিয়ম ছিলো না। কেননা সে এই জাহাজের যাত্রীদের নিয়েই মার্কিন মুলুক যায়। যদিও এই পঁয়ত্রিশদিনে ফগ তার হিশেবের চেয়ে একদিন বেশি সময় লাগিয়েছেন, তবু প্রশান্ত মহাসাগরের বুকের উপর দিয়ে বাইশদিনের। যাত্রায় সেটুকু পুষিয়ে নেবার ভরসা আছে।
পরদিন ভোর পাঁচটার আগে কনাটিক তো হংকং ছাড়বে না, কাজে-কাজেই শহরে যেটুকু কাজ ছিলো সেটুকু সেরে নেয়ার জন্যে সবশুদু ষোলো ঘণ্টা সময় পাওয়া গেলো। সোজাকথায়, আউদার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্যে ফগ যোলো ঘণ্টা সময় হাতে পেলেন।
জাহাজ জেটিতে লাগার সঙ্গে-সঙ্গেই আউদাকে নিয়ে ফিলিয়াস ফগ নামলেন জাহাজ থেকে। তারপর একটা ভালো হোটেলের খোঁজ করে গেলেন সেখানে। সেখানে পাসপার্তুকে তার না-ফেরা পর্যন্ত হোটেলে থাকবার নির্দেশ দিয়ে তিনি চললেন স্টকএকচেঞ্জের সন্ধানে। তিনি ভেবেছিলেন যে জিজিভাইয়ের ভাগ্নে যখন খুব-বড়ো ব্যবসায়ী, তখন সেখানে নিশ্চয়ই তাঁর শুলুকসন্ধান পাওয়া যাবে।
খবর অবিশ্যি ফিলিয়াস ফগ পেলেন, কিন্তু দেখা পেলেন না। অঢেল টাকা-পয়সা কামিয়ে নিয়ে তিনি বছর-দুই আগে ইওরোপ চলে গেছেন। ওলন্দাজদের সঙ্গে তার কারবার ছিলো, খুব-সম্ভব তিনি চিন থেকে নেদারল্যাণ্ডস-এই গিয়েছেন।
তক্ষুনি হোটেলে ফিরে ফিলিয়াস ফগ আউদাকে সব খুলে বললেন। সব শুনে তো আউদা খানিকক্ষণ মুহ্যমান হয়ে রইলেন। তারপর গালে হাত দিয়ে আরো খানিকক্ষণ ভেবে নিয়ে কাপাগলায় তিনি শুধোলেন : তাহলে, মিস্টার ফগ? আমার উপায়?
এ-তো খুব সহজ ব্যাপার। ফিলিয়াস ফগ জবাব দিলেন : চলুন-না ইওরোপেই।
কিন্তু..কিন্তু তাতে আপনার এতটা অসুবিধে..
না, না! ও-কী বলছেন? আপনি থাকলে আমার সময়সূচির কোনো ক্ষতিই হবে। এই বলে তিনি পাসপার্তুকে ডাকলেন। বললেন : কাটিক জাহাজের তিনটে ক্যাবিন রিজার্ভ করে এসো, শিগগির। চটপট।
পাসপার্তু তক্ষুনি হালকা মনে শিস দিতে-দিতে টিকিট কাটতে রওনা হলো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে শহর দেখতে-দেখতে এগিয়ে চললো ভিক্টরিয়া বন্দরের দিকে। রাস্তায় চিনা, জাপানি, আর ইওরোপিয়দের ভিড়। হংকং অনেকটা বম্বাই, কলকাতা কিংবা সিঙ্গাপুরের মতন সে-হিশেবে। বিশ্বের প্রায় সবদেশেরই লোক সেখানে এসে আস্তানা গেড়েছে।
পাসপার্তু ক্যান্টন নদীর মুখে ভিক্টরিয়া বন্দরে এসে হাজির হলো। যে-জেটি থেকে কর্নাটিক ছাড়বে, পাসপার্তু সেখানে এসে দেখলো, ডিটেকটিভ ফিক্স কেমন যেন হালছাড়াভাবে ভাঙামনে পায়চারি করছেন। পাসপার্তু মনে-মনে বললে : হু! রিফর্ম ক্লাবের ভদ্রলোকের গতিক-সতিক দেখে তো বিশেষ সুবিধের মনে হচ্ছে না। সে হাসতে-হাসতে সরাসরি ফিক্সের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে।
ফিক্স কিন্তু বিনাকারণে ওভাবে কাচুমাচু মুখভঙ্গি করে পায়চারি করছিলেন না। তখনও বিলেত থেকে ওয়ারেন্ট এসে পৌঁছোয়নি। কয়েকদিন হংকং-এ অপেক্ষা করে–থাকলে ওয়ারেন্ট পাবার কোন সম্ভাবনাই নেই। হংকং হচ্ছে ইংরেজের দখলে এদিককার শেষ জায়গা—কাজেই হংকং-এ দস্যুকে ধরতে না-পারলে তাকে এর পরে আর ধরবার সুযোগ নেই। অতএব ফি তখন সেই মহাসংকটে পড়ে কী অস্থির চিন্তায় পাগলের মতো হয়ে উঠেছিলেন, তা কেবল তার মতো ভুক্তভোগী ধুরন্ধর গোয়েন্দা ছাড়া আর-কেউ বুঝতে পারবে না।
পাসপার্তু সেদিকে খেয়াল না-করে একগাল হেসে শুধোলে : কী খবর, মিস্টার ফিক্স? আপনি তাহলে আমাদের সঙ্গেই আমেরিকা যাচ্ছেন?
দাঁত কিড়মিড় করে কোনোমতে রাগটা চেপে ফিক্স বললেন : হ্যাঁ।
অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লো পাসপার্তু : আসুন, আসুন! আমি কি আগেই বলিনি, আপনি কিছুতেই আমাদের সঙ্গ ছাড়তে পারবেন না। আসুন, আসুন-আপনার প্যাসেজ বুক করে নিন।
দু-জনে তখন কম্পানির আপিশ-ঘরে গিয়ে চারখানা কামরা রিজার্ভ করে এলো। কেরানিবাবু তাদের বললে যে, কর্নাটিকের মেরামত শেষ হয়ে গেছে, কাজে-কাজেই মিথ্যে আর জেটিতে সময় না-কাটিয়ে পরদিন ভোরে জাহাজ না-ছেড়ে সেদিনই সন্ধে আটটার সময় জাহাজ ছাড়বে।
পাসপার্তু বললে : তাহলে তো খুবই ভালো হলো। মিস্টার ফগের সময়সূচির সঙ্গে চমৎকার খাপ খাবে এ। যতটা সময় নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছিলেন, বাস্তবে তার খানিকটা এতেই পুষিয়ে যাবে। যাই, গিয়ে সুখবরটা জানিয়ে আসি।
আর নয়, সেই মুহূর্তেই মন ঠিক করে ফেললেন ফিক্স। ভাবলেন, এইমুহূর্তে পাসপার্তুকে সবকিছু খুলে বলবেন, নইলে এ-জীবনে আর ব্যাংক-দস্যুকে পাকড়াবার সুযোগ হবে না। পথে বেরিয়ে জাহাজ-ঘাটার কাছে একটা রেস্তোরাঁ দেখে ফিক্স বললেন : এসো-হে, কিছু জলযোগ করে নেয়া যাক! পাসপার্তু কোনো দ্বিরুক্তি না-করে তার সঙ্গে গিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকলো।
রেস্তোরাটা বেশ বড়োসড়ো। তারা দুজনে একটা সুসজ্জিত ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে। ঘরটার একপাশে একটা ক্যাম্প-খাট। পাসপাড়ু দেখলে কতগুলো তোক সেই বিছানায় লম্বা হয়ে চিৎপাত পড়ে আছে, সবাই ঘুমিয়ে কাদা। আরো-জনাকয়েক লোক ছোটো-ছোটো টেবিলের চারপাশে বসে কেউ বিয়ার বা পোর্ট, কেউ ব্র্যান্ডি, কেউ-বা অন্য-কোনো পানীয় গলাধঃকরণ করতে-করতে গল্প করছিলো। অনেকে মাটির তৈরি লাল-রঙা বড়ো-বড়ো নলচেতে গোলাপজলে ভিজোনো আফিং-এর গুলি ভরে ধূমপান করছিলো। যারা আফিং-এর নেশায় জ্ঞান হারিয়ে টেবিলের নিচে পড়ে যাচ্ছিলো, ওয়েটাররা তাদের ধরাধরি করে ক্যাম্প-খাটে শুইয়ে দিচ্ছিলো। পাসপার্তু দেখলে, জনাকুড়ি লোক সেই বিছানায় ওভাবে নেশায় বুদ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে পাশাপশি শুয়ে রয়েছে।
ফিক্স আর পাসপার্তু সব দেখে-শুনে বুঝতে পারলে এটি রেস্তোরাঁ নয়, চিনেদের একটা গুলির আড়া। চিনা গবর্মেন্ট অনেক চেষ্টা করেও এই নরককুণ্ডগুলোকে বন্ধ করে দিতে পারেনি। তারা দুজনে দুটো চেয়ার দখল করে বসলো। পাসপার্তুর কাছে জাহাজের ক্যাবিন রিজার্ভ করার পর আর বাড়তি টাকাকড়ি ছিলো না। ও ফিক্সের বন্ধুত্বের খাতিরেই এখানে এসেছিলো।
দু-বোতল পোর্টের হুকুম দিয়ে ফিক্স গাসপার্তুকে নানান ধরনের লম্বাই-চওড়াই গল্প শোনাতে লাগলেন। পাসপার্তু বোতলকে-বোতল একাই সাবাড় করে দিলে ফিল্ম চালাকি করে ওকে বেশি মদ খাইয়ে নিজে নামমাত্র ছুঁলেন কি না-ছুঁলেন। হঠাৎ পাসপার্তুর খেয়াল হলো যে জাহাজ ছাড়বার সময় বদলে গিয়েছে আর সেটা তার কর্তা জানেন না। সে তক্ষুনি উঠে পড়ে বললে: জাহাজ তো সন্ধের সময় ছাড়বে। আমি উঠি। গিয়ে কর্তাকে খবর দিতে হবে।
ফিক্স তাকে বাধা দিয়ে বললেন : সবুর, সবুর, একমিনিট অপেক্ষা করো।
কেন? কোনো দরকার আছে?
তোমার সঙ্গে একটা সাংঘাতিক জরুরি ব্যাপারে কথা বলতে চাই।
সাংঘাতিক জরুরি ব্যাপার? সে-কী? তা বেশ। আপনিও তো আমাদের সঙ্গে চলেছেন, কাল সকালেই এ নিয়ে আলাপ করা যাবেখন। আজ আর আমার সময় নেই।
থামো। ফিক্স এবারে কড়াসুরে বললেন : কাল শুনলে চলবে না। কথাটা জরুরি, আর তোমার কর্তার সম্বন্ধেই।
ফিক্সের গলার স্বরে এমন কড়া ধাতানির ভাব লক্ষ করে খানিকটা অবাক হয়ে তীব্ৰদৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকালে পাসপার্তু। কর্তার সম্বন্ধে? বেশ, বলুন। আবার সে চেয়ারে বসলো।
ফিক্স পাসপার্তুর হাত ছুঁয়ে নিচুগলায় বললেন : আমি কে, তুমি কি তা বুঝতে পেরেছো?
মুচকি হাসলো পাসপার্তু। নিশ্চয়ই পেরেছি। মনে-মনে বললে, তুমি যে একটা মিচকে শয়তান, তা কি আমার আর বুঝতে বাকি আছে।
সবকিছুই আমার জানা আছে। না, না, মিস্টার ফিক্স, একে বুদ্ধিমানের কাজ বলা চলে না মোটেই। আচ্ছা, বলুন, কী বলবেন। কিন্তু তারা যে আপনাকে পাঠিয়ে খামকা হয়রান হচ্ছেন আর এত টাকা গচ্চা দিচ্ছেন।
খামকা! ফিক্স উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। তাহলে বেশ বোঝা যাচ্ছে কত টাকার মামলা, তা তুমি জানো না।
পাসপার্তু জবাব দিলে : জানি কত টাকা। তিন লাখ টাকা মানে কুড়ি হাজার পাউণ্ড তো?
ওর হাতে সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে ফিক্স বললেন : পঞ্চান্ন হাজার পাউণ্ড!
কী? পাসপার্তু আর নিজেকে সামলাতে পারলে না, গলাছেড়ে চেঁচিয়ে উঠলো। কী বললেন? পঞ্চান্ন হাজার? তাহলে তো এখানে আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট করাও অন্যায়। সে উঠে দাঁড়াতেই ফিক্স আবার তাকে ধরে টেনে বসিয়ে বললেন : হ্যাঁ, পঞ্চান্ন হাজার পাউণ্ড। পাসপার্তুর দিকে মদের গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন তিনি। পঞ্চান্ন হাজার পাউণ্ড। আর আমি যদি সফল হই তাহলে পাবো দু-হাজার পাউণ্ড। তুমি যদি আমাকে সাহায্য করো, তাহলে তোমাকেও পাঁচশো দেবো।
আপনাকে সাহায্য করবো? অবাক হয়ে কেমন হতভম্বভাবে তার দিকে তাকালে পাসপার্তু। তার মানে?
হ্যাঁ, সাহায্য করবে। যাতে মিস্টার ফগ এখানে কয়েকটা দিন আটকে পড়ে থাকেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কী? চেঁচিয়ে উঠলো পাসপার্তু। এ আপনি বলছেন কী? আমার মনিব ভালোমানুষ মিস্টার ফগের পিছনে স্পাই লাগিয়েও তাদের তৃপ্তি হয়নি, আবার যাতে ঠিক সময়ে লণ্ডনে পৌঁছতে না পারেন, তার ব্যবস্থাও করতে চান? ছি-ছি-ছি।
তোমার কথা তো আমি বুঝতে পারছিনে!
উঃ! কী ছোটোনজর! পাসপার্তু বলে চললো। তাহলে তো তারা দেখছি মিস্টার ফগের পকেট মারতেও পেছ-পা হবে না!
আমরা তো ঠিক তা-ই করত চাচ্ছি।
নির্জলা মদ পাসপার্তুকে ক্রমশ উত্তেজিত করে তুলছিলো। এ তাহলে ভয়ংকর একটা ষড়যন্ত্র! আবার তারাই মিস্টার ফগকে বন্ধু বলে পরিচয় দেয়, ভদ্রলোক হিশেবে পরিচিত হয়!
তার কথা শুনে ফিক্স বড় গোলে পড়লেন। তার কথা ফিক কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। সব কী-রকম একটা হেঁয়ালির মত ঠেকছিলো তাঁর কাছে।
পাসপার্তু রেগে বলে চললো : এরাই কি-না বন্ধু! এরাই আবার রিফর্ম ক্লাবের সভ্য! মিস্টার ফিল্ম, আপনি কি এখনও কর্তাকে চিনে উঠতে পারেননি? তার মতো মহৎ লোক ক-টা দেখছেন আপনি? তিনি যে-বাজি ধরেছেন, তা তিনি সৎপথেই জিতে নেবেন, কোনো ফেরেব্বাজি করবেন না। তিনি তো আর ঠগ-জোচ্চোর-জালিয়াত নন।
পাসপার্তুর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ফিক্স বললেন : আমি যে কে, তা কি তুমি ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছো?
আপনি! পাসপার্তু বললে : আপনি রিফর্ম ক্লাবের একটা স্পাই, খোচর। মিস্টার ফগকে পথে আটকে রাখবার জন্যেই আপনি আমাদের পিছু-পিছু কুকুরের মতো ছুটে এসেছেন। আমি তো অনেক আগেই আপনাকে চিনেছি, নেহাৎ মনে দুঃখ পাবেন বলেই মিস্টার ফগকে কিছু বলিনি! এবার দেখছি বললেই ভালো করতুম!
ফিক্স ভড়কে গিয়ে তাড়াতাড়ি শুধোলেন তাহলে মিস্টার ফগ আমার কথা কিছুই জানেন না?
মদের গ্লাসটা এক-চুমুকে শেষ করে পাসপার্তু বললে : না। তিনি এর কিছুই জানেন না।
ধুরন্ধর ডিটেকটিভ ফিক্স দু-হাতে কপাল টিপে ধরে পলকের মধ্যেই নিজের কর্তব্য ভেবে নিলেন। তিনি দেখলেন পাসপার্তু খুব সরল শাদাসিধে মানুষ, নিশ্চয়ই ব্যাংকলুঠে মিস্টার ফগের সাহায্য করেনি। ফিক্স ভাবলেন, যদি তা-ই হয়, তাহলে আমার সত্যিকার পরিচয় পেলে ও নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে। বেশি ভাববার সময়ও তখন ছিলো না। যে-করেই হোক মিস্টার ফগকে হংকং-এ আটকে রাখতে হবেই। তক্ষুনি তার কর্তব্য ঠিক করে নিয়ে ফিক্স বললেন : শোনো, তুমি যা ভাবছো, আমি আসলে তা নই।
অবাক হয়ে গেলো পাসপার্তু। বিস্ময়ে তার চোখ ছানাবড়া। সে কী? তার মানে?
আমি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ডিটেকটিভ। কী? বিশ্বাস হচ্ছে না? এই দ্যাখো আমার কার্ড।
ফিক্স মুহূর্তের মধ্যে তার কার্ড বের করে সেই হতভম্ব ফরাশির সামনে তুলে ধরে বলতে লাগলেন, বাজি ধরার একটা মিথ্যে অছিলা তৈরি করে মিস্টার ফগ তোমাকেও ঠকিয়েছেন, আর রিফর্ম ক্লাবের সভ্যদেরও ফাঁকি দিয়েছেন। তুমি যাতে কিছু বুঝতে না-পেরে তার সাহায্য করো, এই হচ্ছে তার মৎলব।
তার মানে? চেঁচিয়ে উঠলো পাসপার্তু। এভাবে ফাঁকি দিয়ে তার কী লাভ?
লাভ হচ্ছে এই–গত আঠারোই সেপ্টেম্বর ব্যাংক অভ ইংল্যাণ্ড থেকে যে পঞ্চান্ন হাজার পাউণ্ড চুরি যায় তা কার কাণ্ড জানো? মিস্টার ফগেরই। দস্যুর যে-ফোটো পাওয়া গেছে, মিস্টার ফগের চেহারার সঙ্গে তার হুবহু মিল আছে।
সজোরে টেবিল চাপড়ে উঠলো পাসপার্তু।অসম্ভব! এ হতেই পারে না! মিস্টার ফগের মতো সজ্জন দুনিয়ায় দুর্লভ।
আরে, তুমি আর জানবে কী করে? যেদিন মিস্টার ফগ তার খ্যাপা বাজি ধরে ছুতো করে বেরিয়ে পড়েন, তুমি তো সবে সেদিনই তার কাছে চাকরি নিয়েছিলে। মনে করো দেখি, সেদিন তার সঙ্গে কী ছিলো? কোনো জিনিশপত্র সঙ্গে ছিলো কী? কেবল একটা ব্যাগ, আর তার মধ্যে অজস্র ব্যাংক-নোট! তাছাড়া আশিদিনে কি সারা পৃথিবী ঘুরে আসা যায়? তুমিই বলো দিকিনি এ-একটা খ্যাপার কাণ্ড, না অন্যকিছু? এখনও তুমি ওঁকে সাধু-পুরুষ বলতে চাও? আসিসির সন্ত ফ্রানসিস?
পাসপার্তু কলের পুতুলের মতো বললে : আঁ-অ্যাঁ-তারপর?
দস্যুকে সাহায্য করেছে বলে তুমিও কি জেলে পচতে চাও?
পাসপার্তু দু-হাতে তার কপালের রগ টিপে ধরলে। চোখের সামনে সারা পৃথিবী ঘুরতে লাগলো। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। হতবাক হয়ে সে ভাবতে লাগলো : কী অসম্ভব কথা! ফিলিয়াস ফগ একজন দস্যু! সেই নির্ভীক বীরপুরুষ একটা সামান্য চোর! চোর? না-না, এ অসম্ভব! কোনোমতেই এ হতে পারে না। কিন্তু ফিক্সের কথাও তো একেবারে উড়িয়ে দেবার মতো নয়। ফিলিয়াসের ফগের হাবভাব আচারআচরণ বেশ-একটু রহস্যময়ই-তার সবকিছুই যেন কুহেলিঘেরা। কিন্তু—কিন্তু তবুও এ অসম্ভব! রুদ্ধকণ্ঠে সে ফিক্সকে শুধোলে : তাহলে আপনি আমায় এখন কী করতে বলছেন?
আমি এতদূর অব্দি তাকে অনুসরণ করে এসেছি। ফিক্স বললেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে পাঠিয়েছি, কিন্তু আজও সেই ওয়ারেন্ট এসে পৌঁছোয়নি। তোমাকে শুধু এই ব্যবস্থাই করতে হবে মিস্টার ফগ যাতে কোনোমতেই হংকং ছেড়ে যেতে না-পারেন।
কিন্তু…
বাধা দিয়ে ফিক্স বললেন : যদি পারো তবে তোমাকে একহাজার পাউন্ড দেবো।
না, না-এ কাজ আমি করতে পারবো না। পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠলো পাসপার্তু–চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না উঠতে-চেয়ারে যেন তার গোটা শরীরটাই আটকে গেছে। জড়ানো গলায় সে শুধু বললে, মিস্টার ফিক্স, আপনার কথা যদি সত্যিই হয়, মিস্টার ফগ যদি দস্যুই হন—তবু আমি তার সঙ্গে বেইমানি করতে পারবো না। আমি এখনও বিশ্বাস করি, তিনি নির্দোষ, সাধু। আমি নেমকহারামি করতে পারবো না। অসম্ভব! সে আমি কোনোমতেই পারবো না। আমি আর যা-খুশি তা-ই হতে পারি, কিন্তু ইতর-কোনো বেইমান নই।
তাহলে তুমি রাজি নও? ফিক্স তাকিয়ে দেখলেন পাসপার্তু প্রায়-মাতাল হয়ে পড়েছে। তিনি বললেন : বেশ, তাহলে আমাদের মধ্যে যে-সব কথাবার্তা হলো, সেসব ভুলে যাও। এসো, আমাদের বন্ধুতার চিহ্ন হিশেবে আরেক গ্লাস করে ব্র্যান্ডি খাওয়া যাক।
এই অপ্রত্যাশিত আঘাতে আর এত মদ খেয়ে পাসপার্তুর অবস্থা শুধু বেশামালই নয়, রীতিমত কাহিল হয়ে এসেছিলো। ফিক্স ঠিক করলেন, তাকে কোনোমতেই ফগের কাছে যেতে দেয়া চলবে না। টেবিলের উপরেই আফিংভরা সেই লালরঙা নলচেগুলো পড়ে ছিলো। ফিক্স তারই একটা তুলে দিলেন পাসপার্তুর হাতে! এমনিতেই কাহিল হয়ে পড়েছিলো পাসপার্তু, অনভ্যস্তভাবে নলে কয়েকবার জোর টান দেবার সঙ্গে-সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো মেঝের উপর।
অবশেষে! সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলেন ফিক্স। এবার ফিলিয়াস ফগকে বাগে পেয়েছি। কর্নাটিক জাহাজ ছাড়ার সময় যে বদলে গেছে, সে-কথা ফিলিয়াস ফগ আর জানতেও পারবে না! এবার তাকে দেখে নেবো!
দাম চুকিয়ে দিয়ে ফিক্স চণ্ডখানা ছেড়ে রাস্তায় বেরুলেন।