রাত্রি বারোটা। শীতের রাত্রি যেন ঘুম-ভারাক্রান্ত। কোথাও এতটুকু হাওয়া নেই। চারিদিক নীরব নিথর। কিরীটী নিঃশব্দে কাঠের প্যাকিং কেসের ওপরে বসে আছে।
রাত্রি দেড়টা।
ছাদের ওপর কার নিঃশব্দ চাপা পায়ে চলাচলের আভাস। কিরীটী উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে।
পায়ের শব্দ ক্রমেই এগিয়ে আসছে…হ্যাঁ, এগিয়ে আসছে এই ঘরের দিকেই। খুট করে একটা শব্দ হল শিকল খোলার। কিরীটী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
মাথায় স্বল্প ঘোমটা, সারাদেহ বস্ত্রাবৃত কে যেন ঘরে এসে প্রবেশ করল। ফস্ করে দেশলাই জ্বালাবার শব্দ হল। আগন্তুক একটা মোমবাতি জ্বালালে। মোমবাতির আলোয় ঘরটা যেন সহসা জেগে উঠল।
মোমবাতিটা হাতে করে আগন্তুক এগিয়ে বাগানের দিকে জানালার ওপরে মোমবাতিটা বসালে। তারপর নিঃশব্দে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রইল।
এক মিনিট দু মিনিট কেটে গেল। কিরীটীও তেমনি চুপচাপ, আগন্তুকও নিঃশব্দ। এমনি করে আধ ঘণ্টা কেটে গেল। সহসা এমন সময় আগন্তুক সেই ধূলিমলিন মেঝের ওপর লুটিয়ে কাঁদতে শুরু করলে।
কিরীটী এবার এগিয়ে এল।
ভূলুণ্ঠিতা নারীর সর্বাঙ্গ কান্নার বেগে ফুলে ফুলে উঠছে। এলোচুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।
ধীরে ধীরে কিরীটী ডাকলে, পিসিমা?
কে? ত্রস্তে পিসিমা উঠে মোমবাতিটা হাতে নিয়ে পেছনদিকে তাকালেন, তাঁর অবস্থা দেখে মনে হয় যেন আচমকা পথের মাঝে ভূত দেখেছেন! কপাল বেয়ে তখনও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
পিসিমা উঠে বসুন। ভয় নেই আপনার, আমি কিরীটী।
পিসিমা যেন বিস্ময়ে একেবারে হতবাক হয়ে গেছেন। কিরীটী এই সময়–এত রাত্রে–এইখানে? সমস্ত কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।