2 of 2

৭২. কামাখ্যা-কবচ

দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায় – কামাখ্যাকবচ

ভগবান্ বলিলেন, হে বেতাল ও ভৈরব। এক্ষণে তোমাদের নিকট সাঙ্গ এবং সরহস্য কামাখ্যা দেবীর মাহাত্ম্য এবং কবচ বলিতেছি শ্রবণ কর। ১

কোন কালে বিষ্ণু গরুড়ের উপর আরোহণ করিয়া আকাশপথে যাইতে যাইতে নীলগিরিস্থিত কামাখ্যা দেবীকে প্রাপ্ত হইলেন। ২

সেই গিরিশ্রেষ্ঠ প্রাপ্ত হইয়াও বিষ্ণু অবজ্ঞাপূর্বক (সেখানে দর্শন না করিয়া) চল চল বলিয়া গরুড়কে যাইতে প্রেরণ করিলেন। ৩

তখন জগৎপ্রসবিনী মহামায়া কামাখ্যা দেবী গরুড়ের সহিত সেই বিষ্ণুকে আকাশপথেই স্তম্ভিত করিলেন। ৪

গরুড় যাইতে যাইতে মহামায়ার মায়ায় বিমোহিত হইয়া সহসা গমন ও প্রত্যাগমন কিছুই না করিতে সমর্থ হইয়া স্তম্ভিতভাবে দাঁড়াইয়া রহিল। ৫।

তখন গরুড়াসন নারায়ণ গরুড়কে গমনে অশক্ত দেখিয়া ক্রোধান্বিত হইয়া সেই পতঙ্গশ্রেষ্ঠ গরুড়কে নড়াইতে উদ্যত হইলেন। ৬

অনন্তর জগৎপতি বিষ্ণু দুই হস্তদ্বারা সেই পৰ্ব্বতকে জড়াইয়া ধরিয়া অল্পও নড়াইতে সক্ষম হইলেন না। ৭

এদিকে কামাখ্যা দেবী ক্রোধে অধীর হইয়া সেই পৰ্বত চালাইতে উদ্যত বিষ্ণুকে গরুড়ের সহিত সিদ্ধসূত্র দ্বারা বদ্ধ করিলেন। ৮

গ্রাহের ন্যায় উগ্ররূপ সিদ্ধসূত্র দ্বারা তাহাকে আবদ্ধ করিয়া দেবী কামাখ্যা অবলীলাক্রমে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিলেন, তাহাতে তিনি সাগরমধ্যে ভূতলে পতিত হইলেন। ৯

সেই সাগরতল-স্থিত বিষ্ণুকে পুনর্বার নিজের মায়া দ্বারা আবদ্ধ করিয়া সাগরতলেই তাহাকে আক্রমণ করিলেন। ১০

তিনি অতিশয় যত্ন করিয়া উত্থান করিতে ইচ্ছা করিলেন এবং উঠিবার নিমিত্তও বারংবার যত্ন করিতে লাগিলেন। ১১

তখন, কামাখ্যাদেবী তাহার নড়নচড়ন ও জ্ঞানোগমের নিরোধ করিলেন। ১২

তাহাতে সেই বিষ্ণু জ্ঞান ও চেষ্টাশূন্য হইয়া গরুড়ের সহিত সেই সমুদ্রতলে অনেকক্ষণ শীর্ণের মত অবস্থান করিলেন। ১৩

এমন সময় ব্রহ্মা তাহাকে খুজিতে খুঁজিতে সাগরে মনুষ্যের মত বিশীর্ণ ভাবে অবস্থিত দেখিলেন। ১৪

লোকপিতামহ ব্রহ্মা গরুড়ের সহিত তাহাকে সেই ভাবে অবস্থিত দেখিয়া দুই হাতে করিয়া তুলিতে ইচ্ছা করিলেন। ১৫

লোকপিতামহ ব্রহ্মা নিজে দেবীর মায়ায় আবদ্ধ হইয়া তাহাকে উঠাইতে সমর্থ হইলেন না, তাহাতে তিনি বিস্ময়াবিষ্ট হইলেন। ১৬

অনন্তর শত্রু আদিদেবতা ব্ৰহ্মা এবং বিষ্ণু এই দুইজনকে খুজিতে খুঁজিতে অনেক কালের পর গভীর জলমধ্যে দেখিতে পাইলেন। ১৭

সেই শত্রু আদি দেবগণ তাহাদিগকে প্রাপ্ত হইয়া তাহাদিগকে উঠাইতে যত্ন করিলেন, কিন্তু অসমর্থ হইলেন। ১৮

তাহার পর সেই দেবগণ মায়া দ্বারা অতিশয় মোহিত হইয়া বিধাতা এবং বিষ্ণু যেখানে সেই ভাবে অবস্থান করিতেছিলেন, সেই স্থানে সেই ভাবে অবস্থান করিলেন। ১৯

অনন্তর দেবগুরু বৃহস্পতি সেই সকল দেবগণকে অন্বেষণ করিতে হিমালয়ের সান-প্রদেশে অবস্থিত মহাদেবের নিকট অবস্থিত হইয়া সেই ত্রিপুরারি দেবকে যথাবিধি স্তব এবং প্রণাম করিয়া দেবগণের বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন। ২০-২১

হে জগদ্ধাম জগৎকারণের কারণ মহাদেব। আমি শক্ৰাদিদেবগণকে অন্বেষণ করিতে আপনার নিকট উপস্থিত হইলাম। ২২

ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু ইহরা ব্ৰহ্মসদনে বা স্বর্গে? যেমন অন্য সময় তাহারা সেই সেই স্থানে লক্ষিত হইতেন। ২৩

অতএব হে দেব! সংশয়চ্ছেদন করুন, দেবতা সকলে এক্ষণে কোথায় অবস্থিত এবং কেনই বা তাহারা সেইরূপ অবস্থিত? ২৪

হে প্রভো! আমি আপনার উপদেশ অনুসারে সেই সকল দেবতার অনুসরণ করিব। আপনার যদি দয়া থাকে, তাহা হইলে সেই দেবতারা কোথায় বলিয়া দিন। ২৫

তাহার এইরূপ বাক্য শুনিয়া আমি দেবতাদিগের সেই সকল কার্যের উল্লেখ করিলাম, যে জন্য তাহারা মহামায়া কর্তৃক আবদ্ধ হইয়াছেন। ২৬

জগন্ময়ী মহাদেবী মহামায়াকে বিষ্ণু অবজ্ঞা করিয়াছেন বলিয়া তাহার মায়াদ্বারা আবদ্ধ হইয়া সাগরে অবস্থান করিতেছেন। ২৭

সেই বিষ্ণুর অন্বেষণে তৎপর ব্রহ্মা আদি দেবগণ আবার মায়াবশে দৃঢ়রূপে আবদ্ধ হইয়া তাহার নিকটে বাস করিতেছেন। ২৮

অতএব যদি তুমি আমাকে সঙ্গে না লইয়া তাহাদিগের অন্বেষণ করিতে সেই স্থানে গমন কর তাহা হইলে তুমিও মায়ার দ্বারা আবদ্ধ হইয়া থাকিবে। ২৯

আর আসিতে সমর্থ হইবে না। অতএব যেখানে নারায়ণ এবং ব্রহ্মাদি দেবগণ অবস্থান করিতেছেন, সেই স্থানে আমিও গমন করিব এবং ক্রমশ তাহাদিগকে মোচনও করিব। ৩০

এই কথা বলিয়া ভগবান মহাদেব বৃহস্পতির সহিত একত্র যেখানে সমুদয় দেবগণ অবস্থান করিতেছিলেন, সেই স্থানে গমন করিলেন। ৩১

মহাদেব সেই স্থানে গমন করিয়া বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার সহিত শিষ্টালাপ করিয়া সকল দেবতাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, তোমরা এইস্থানে অবস্থান করিতেছ। ৩২

তোমাদের নড়ন চড়নের শক্তি নাই, জড়ের মত জ্ঞানশূন্য হইয়া অবস্থান করিতেছ, এ সকল কেন হইয়াছে, এক্ষণে আমার নিকট বল। ৩৩

তখন কেশব মহাদেবের সেই বাক্য শুনিয়া ব্রহ্মাদির সম্মুখে আস্তে আস্তে মহাদেবকে বলিলেন। ৩৪

আমি গরুড়ের উপর আরোহণ করিয়া নীলগিরির শৃঙ্গের উপর দিয়া আকাশমার্গে গমন করিতেছিলাম, এমন সময় গরুড়ের গতিরোধ হওয়াতে আমি হস্ত দ্বারা মহাগিরি নীলকে ধারণ করিলাম। ৩৫

সেই স্থলে আমার অংশরূপা কামরূপিণী যোগনিদ্রা মহামায়া কামাখ্যা দেবী আমাকে ধরিয়া সাগরগর্ভে নিক্ষেপ করিলেন। ৩৬

হে অন্ধকসূদন! তাহার পর আমি বাহনের সহিত সমুদ্রের তলে পতিত হইয়া অনেককাল এই স্থানে বাস করিতেছি। ৩৭

হে মহেশ্বর! আমি কতদিন এই সাগরের জলে বাস করিতেছি, কিন্তু সেই মহামায়া অদ্যাপি আমাকে দয়া করিতেছেন না। ৩৮

আমার নিমিত্ত আগত ব্ৰহ্মাদি সমস্ত দেবগণ সহসা মহাদেবীর পাশ দ্বারা আবদ্ধ হইয়া রহিয়াছেন। ৩৯

অতএব আপনি আমাদের উপর অনুগ্রহ করিয়া, আমাদিগকে শিবালয়ে লইয়া যাউন। আমরা হিংসত্বশূন্য হইয়া, সেই দেবীকে প্রসন্ন করাইব। ৪০

হরির সেই বাক্য শ্রবণ করিয়া, আমি করুণাযুক্ত হইলাম এবং প্রীতিপূর্বক ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে বলিলাম। ৪১

অতএব তোমরা আমার মুখ হইতে কবচ শ্রবণ কর। এই কবচ পাঠ করিলে, পরমেশ্বরীর সাক্ষাৎ দর্শন লাভ হইবে। আমার সঙ্গে থাকায় বৃহস্পতি তোমাদের মত বদ্ধ হন নাই। ৪২-৪৩

এই কামাখ্যা-কবচের ঋষি বৃহস্পতি, কামেশ্বরী দেবতা এবং ছন্দ অনুষ্টুপ। এই কামাখ্যা-কবচের সকল সিদ্ধির নিমিত্ত প্রয়োগ হইয়া থাকে। হে দেবগণ! তোমরা ইহা শ্রবণ কর। ৪৪-৪৫

কামেশ্বরীদেবী আমার মস্তক, কামাখ্যা চক্ষুদ্বয়, শারদা কর্ণদ্বয়, ত্রিপুরা বদন, মহামায়া কণ্ঠে এবং কামেশ্বরী হৃদয়ে রক্ষা করুন। ৪৬

কামাখ্যা আমার জঠরে, শারদা নাভিদেশে, ত্রিপুরা পার্শ্বদ্বয়ে এবং মহামায়া লিঙ্গে রক্ষা করুন। ৪৭

অপানদেশে কামেশ্বরী, ঊরুদ্বয়ে কামাখ্যা, জানুদ্বয়ে শারদা এবং জঙ্ঘাদ্বয়ে ত্রিপুরা রক্ষা করুন। ৪৮

কামদায়িনী মহামায়া নিত্যপাদযুগলে রক্ষা করুন এবং দীর্ঘিকা কোটী শ্বরী নাভিদেশে রক্ষা করুন। ৪৯

ভৈরবী আমার দন্তসমূহে এবং মাতঙ্গী স্কন্ধদ্বয়ে রক্ষা করুন। বাহুদ্বয়ে ললিতা এবং করতলে বনবাসিনী রক্ষা করুন। ৫০

বিন্ধ্যবাসিনী অঙ্গুলী-নিচয়ে, শ্রীকামা নখকোটিতে রক্ষা করুন এবং গুপ্তকামনা সমুদয় রোমকূপে রক্ষা করুন। ৫১

পাদাঙ্গুলী এবং পার্ষ্ণিভাগে আমাকে ভুবনেশ্বরী রক্ষা করুন। জিহ্বায় সেতু এবং কণ্ঠাভ্যন্তরে ক রক্ষা করুক। ৫২

ন বক্ষের অন্তরে এবং ট জঠরান্তরে রক্ষা করুক। অর্ধচন্দ্র বস্তিদেশে এবং বিন্দু উহার ভিতর রক্ষা করুক। ৫৩

ক আমার কেশে এবং সৰ্ব্বদা আমার অস্থিতে রক্ষা করুক। মকার সমুদয় নাড়ীতে এবং ইকার সমুদয় সন্ধিপ্রদেশে রক্ষা করুক। ৫৪

অর্ধচন্দ্র আমার স্নায়ুতে এবং বিন্দু মজ্জাতে রক্ষা করুক। ৫৫

পূৰ্বদিক্‌, অগ্নিকোণ, দক্ষিণদিক্‌, নৈর্ঋতকোণ, পশ্চিমদিক্‌ বায়ুকোণ, উত্তর-দিক্‌ এবং ঈশানকোণে বৈষ্ণবী মন্ত্রান্তর্গত অকারাদি অষ্ট অক্ষর সর্বদা নিত্য বৃদ্ধির নিমিত্ত রক্ষা করুক এবং স্থিতি করুক। ৫৬

শারদা-মন্ত্ৰান্তৰ্গত নয়টী অক্ষর আমার ঊর্ধ্ব অধঃ এবং নেত্ৰদ্বয় সর্বদা রক্ষা করুক। ৫৭

নয়টী স্বর সর্বদা আমার নাসিকাদিতে রক্ষা করুক এবং ত্রিপুরার অক্ষয়ত্রয় আমাকে বাত, পিত্ত এবং কফ হইতে রক্ষা করুক। ৫৮

উহারা ভূত ও পিশাচগণ হইতে নিত্য আমাকে রক্ষা করুক। দিবাকর গুলফদেশে এবং রাক্ষসগণ হইতে আমাকে রক্ষা করুন। ৫৯

মহামায়া জগন্ময়ী কামেশ্বরী দেবীকে নমস্কার করি। এই কাম্যা দেবীই প্রকৃতিরূপে সমুদয় জগৎ বিস্তার করিতেছেন। ৬০

যাহার হস্তে অক্ষমালা, অভয়, বর এবং সিদ্ধসূত্র, যিনি শ্বেতবর্ণ প্রেতের উপর অবস্থিত মণি-সুবর্ণ-শোভিত, কুঙ্কুমতুল্য ঈষৎ পীতবর্ণা, জ্ঞান ও ধ্যানে প্রতিষ্ঠিতা, বিনয়বতী আদি সৃষ্টিকালে ব্ৰহ্মানামে প্রসিদ্ধ এবং অর্ধচন্দ্র বিন্দু অন্ত মন্ত্র যাঁহার অতিশয় প্রিয়, সেই রতিক্রীড়ায় বর্তমান কামাখ্যা দেবীকে নমস্কার করি। ৬১

যাহার মধ্যদেশে সর্বদা হারাবলী বিগলিত হইয়াছে, যিনি লোকের লীলা-স্বরূপ সকলগুণশালিনী, ব্যক্তরূপা বিনম্র, বিদ্যারূপা, বিদ্যাহেতু শান্ত মূর্তি, যমের দমনকারিণী, মঙ্গলকর্ত্রী এবং সুন্দরাননা, আর যাঁহার হস্তে পবিত্র প্রণব অবস্থিত, সেই কামেশ্বরী দেবী আমাদিগকে রক্ষা করুন। ৬২

হে হরে! এই কবচ শরীরে থাকিয়া যমভয় এবং দুর্দৈবের শান্তি করে, এই কবচ গ্রহণ করিয়া অমরগণের সহিত মুক্তি লাভের নিমিত্ত চেষ্টা করে। ৬৩

যে পণ্ডিত কামাখ্যার এই কবচ একবারমাত্র পাঠ করে, সে অনন্তকালের নিমিত্ত মহাদেবীর শরীরে প্রবেশ করে। ৬৪

তাহার আধি বা ব্যাধি অথবা রাক্ষসগণ হইতে ভয় হয় না। অগ্নি, জল, রিপু এবং রাজা হইতে ভয় হয় না। ৬৫

সে দীর্ঘায়ুঃ, বহুভোগী এবং পুত্র-পৌত্রযুক্ত হইয়া শতবার জন্মগ্রহণ করিয়া অন্তে দেবীর মন্দিরে আনন্দ উপভোগ করে। ৬৬

সংগ্রামে বা অন্যত্র যে কোনরূপেই বদ্ধ হউক, এই কবচের স্মরণ করিলে তৎক্ষণাৎ মুক্তি লাভ হইবে। ৬৭

ঈশ্বর বলিলেন, তখন হরি, ব্রহ্মা, ইন্দ্র এবং অপর দেবগণ এই কবচ শ্রবণ করিয়া নিজ নিজ দেহে পৃথক পৃথক্ কবচ ধারণ করিলেন। ৬৮

তাহারা কবচ ধারণ করিবামাত্র মহামায়ার প্রভাবে সাগরগর্ভ হইতে উত্থিত হইয়া পৃথিবী প্রাপ্ত হইলেন। ৬৯

অনন্তর সেই ব্রহ্মা বিষ্ণু আদি দেবগণ পৃথিবীতল প্রাপ্ত হইয়াই পৰ্বতে কামাখ্যা দেবীকে দেখিতে গমন করিলেন। ৭০

সেই স্থানে কেশরিস্থিত জগন্ময়ী কামাখ্যা দেবীকে দেখিয়া এবং তাহার প্রভাব অবগত হইয়া এই কথা বলিলেন। ৭১

তুমি প্রকৃতি, তুমি পৃথিবী ও জল, তুমি জগতের মাতা এবং তুমি জগন্ময়ী। তুমি জগতের কর্ত্রী, তুমি বিদ্যা, তুমি মুক্তিদায়িনী, তুমি পরাপরস্বরূপা এবং স্থল, সূক্ষ্ম ও লঘুরূপিণী। ৭২-৭৩

হে মহাদেবি! প্রসন্ন হও, হে চতুৰ্বর্গ প্রদায়িনি পাপরহিতে! তুমি প্রসন্ন হইলে সকল দেবগণ প্রসন্ন হন। ৭৪

মহাত্মা কেশবের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া কামাখ্যাদেবী প্রত্যক্ষগোচর হইয়া হরিকে সম্বোধন করিয়া এই কথা বলিলেন। ৭৫

হে কেশব! ব্রহ্মা এবং অপর দেবগণের সহিত আমার যোনিস্থিত সলিলে স্নান ও সেই জল পান কর। ৭৬

তাহাতে তুমি অহঙ্কারশূন্য হইয়া এবং বিশেষ বাৰ্য্যলাভ করিয়া গরুড়ারোহণ পূর্বক ব্রহ্মার সহিত স্বর্গে গমন করিবে। ৭৭

মহাদেবী এই কথা বলিলে কেশব ব্রহ্মার সহিত যোনিমণ্ডলস্থিত জলে স্নান ও তাহা পান করিলেন। ৬৮

অনন্তর কেশব ও দেবগণ স্নান করিয়া দেবীর অনুমতিক্রমে প্রহৃষ্টান্তঃকরণে স্বর্গে গমন করিলেন। ৭১

ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং দেবগণ গমন করিতে করিতে আকাশস্থিতা কামাখ্যা দেবীকে দর্শন করিলেন। ৮০

নীলকূট সহস্র যোনিদ্বারা সঙ্গত হইয়া উৰ্দ্ধ এবং অধোদেশ ব্যাপিয়া অবস্থিত দেখিলেন। ৮১

তখন সেই দেবতাগণ তৎক্ষণাৎ তাহার প্রত্যেক পৰ্বতে উঠিয়া যোনিমণ্ডলের সলিলে স্নান ও তাহা পান করিয়া অতুল প্রীতিলাভ করিলেন। ৮২

তাহার পর নিরাপদে বিস্ময়ান্তঃকরণে কামাখ্যার যোনিমণ্ডলের স্তব করিতে করিতে গমন করিলেন। ৮৩।

অনন্তর দেবগুরু বৃহস্পতি আমাকে স্তব করিয়া এবং আমাকর্তৃক অনুজ্ঞাত হইয়া হর্ষোৎফুল্ললোচনে স্বর্গে গমন করিলেন। ৮৪

হে ভৈরব! সেই কামাখ্যা দেবীর মাহাত্ম্য ঈদৃশ, এই তাঁহার কবচও কথিত হইল, এক্ষণে এই কবচ আপনার ইচ্ছানুসারে ধারণ করিয়া সুখী হও। ৮৫

কামাখ্যা দেবীর মাহাত্ম্যের বিষয় তোমাকে আর অধিক কি বলিব, যাহার যোনিশিলার সম্পর্কে লৌহ স্বর্ণত্ব প্রাপ্ত হয়। ৮৬

একবার মাত্র এই কামাখ্যার যোনিমণ্ডলে স্নান ও তাহার জল পান করিয়া মনুষ্য আর জন্মপ্রাপ্ত হয় না, একবারে নির্বাণপ্রাপ্ত হয়। ৮৭

দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭২

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *