2 of 2

৭৮. নৈর্ঋতাদিভাগের নির্ণয়

অষ্টসপ্ততিতম অধ্যায় – নৈর্ঋতাদিভাগের নির্ণয়

মহারাজ সগর মহাত্মা বেতাল ভৈরব ও শঙ্করের পরস্পর এই কথোপকথন শ্রবণ করিয়া অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে পুনর্বার মহাদ্যুতি ও ঔর্ব মুনিকে অতিশয় প্রিয় বচনে জিজ্ঞাসা করিলেন। ১-২

হে ভগবন মুনিসত্তম! আপনি কামরূপপীঠের সংস্থান ও নির্ণয় বিষয়ে অতি বিচিত্র কথা বলিলেন। ৩

হে মহামতে! আমি পুনৰ্বার বায়ব্য মধ্য এবং পূৰ্বভাগের নির্ণয় শ্রবণ করিতে ইচ্ছা করি। ৪

হে মুনিশার্দূল! সেখানে মহাদেব এবং অম্বিকা কি ভাবে অবস্থিত, তাহা আমাকে বিস্তারপূর্বক কীৰ্ত্তন করুন, আমার শুনিতে বড় উৎসাহ হইতেছে। ৫

ঔর্ব বলিলেন,–হে নৃপসত্তম! বায়ব্য ভাগেরও নির্ণয় উক্ত হইয়াছে, এক্ষণে নৈর্ঋত, উত্তর এবং মধ্যাদির নির্ণয় শ্রবণ কর। ৬

বহুরোকা করতোয়া নামে উত্তরস্রাবিণী যেখানে প্রদক্ষিণ ভাবে আছে, সেই সকল ক্ষেত্ৰ কামরূপের অন্তর্গত। ৭

কামরূপের মধ্যে সুরস নামে পৰ্বত আছে, তাহা হইতে এই ধৰ্মপ্ৰদা বহুরোকা নামে নদী নিঃসৃত হইয়াছে। ৮

সুরসের সমীপে মহাবৃষ নামে একটি শিবলিঙ্গ আছে, সেই স্থানে যোনিমণ্ডলরূপিণী মহেশ্বরী দেবীও অবস্থান করেন। ৯

বহুরোকা নদীতে স্নান ও সুরথ পৰ্বতে আরোহণ করিয়া মহাবৃষ এবং মহেশ্বরী দেবীকে পূজা করিলে সকল পাপ বিনষ্ট হয়। ১০

স্বর্গ প্রাপ্তি হয়, পুনর্বার আর যোনিমণ্ডলে জন্ম হয় না এবং সেই মহাবৃষ দেব চতুর্ভুজ, বৃষারূঢ়, বর, অভয় এবং শূলধারী। তাঁহার শরীরকান্তি শুদ্ধ স্ফটিকের মত, পরিধানে চৰ্ম্ম এবং মস্তক জটাভারে মণ্ডিত। ১১

অঘোর মন্ত্রদ্বারাই ইহার পূজা পরিকীর্তিত হইয়াছে। ১২

মাহেশ্বরী ও কামেশ্বরীর স্বরূপ একই প্রকার। তাহাদের উভয়ের পূজাও একরূপ এবং উভয়েই সমান ফল প্রদান করেন। ১৩

সেই স্থানে বসিষ্ঠমুনি নির্মিত একটি বসিষ্ঠ কুণ্ড আছে, যে স্থানে বসিঠঋষি নরককর্তৃক কামরূপ গমনে অবরুদ্ধ হইয়াছিলেন। ১৪

বসিষ্ঠ নীল পর্বতে যাইতে না পারিয়া সেই নরককে শাপ দিয়াছিলেন। ১৫

তিনি আপনার স্নানের নিমিত্ত সেই স্থানেই দেবগণের পূজ্য একটী কুণ্ড নির্মাণ করিয়াছিলেন। এই কুণ্ডে যথেচ্ছাক্রমে স্নান করিলেও মনুষ্য স্বর্গে গমন করে। ১৬

সুরসের পূর্বদিকে কৃত্তিবাসা নামে একটি পর্বত আছে। সেস্থানে পূর্বে কৃত্তিবাস সতীর সহিত বাস করিয়াছিলেন। ১৭

সেই স্থানে চন্দ্রিকা নামে একটি নদী আছে। ১৮

মনুষ্য ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে চন্দ্রিকা নদীতে স্নান করিয়া কৃত্তিবাস মহাদেবকে পূজা করিলে কলঙ্কশূন্য হয়। ১৯

সেই সরিৎশ্রেষ্ঠা চন্দ্রিকা সৰ্ব্বদা উত্তর স্রাবিণী। ২০

চন্দ্রিকার অনতিদূরে পূর্বদিকে শতানন্দা নামে একটি নদী আছে। ২১

ঐ নদী ব্রহ্মার দুহিতা এবং গঙ্গা পৰ্বত হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। ২২

মনুষ্য ফেনিলায় ফাল্গুনমাসে পূর্ণিমার দিন স্নান করিলে নরক জয় করিয়া স্বর্গ প্রাপ্ত হয়। ২৩

তাঁহার পূর্বদিকে উত্তরগামিনী সিতা নামে নদী আছে, যেখানে মনুষ্য চৈত্রমাসে পূর্ণিমায় স্নান করিয়া গঙ্গাস্নানের ফল লাভ করে। ২৪

তাঁহার পূর্বে যোজনদ্বয়ের মধ্যে সুমদনা নামে নদী আছে, মহারাজ জনক বৃষভধ্বজের আরাধনা করিয়া ভৈরবের হিতের নিমিত্ত সুতীক্ষ্ণ পৰ্বত হইতে এই নদীকে অবতারিত করিয়াছেন। ২৫-২৬

মাঘ মাসে শুক্ল চতুর্থীর দিন সুতীক্ষ্ণ পৰ্বতে আরোহণ এবং সুমদনার জলে স্নান করিয়া মনুষ্য সকল কাম প্রাপ্ত হইয়া শিবলোকে গমন করে। ২৭

কামরূপের নৈর্ঋত কোণে এই সকল উত্তরবাহিনী নদী আছে, ত্রিপুরা দেবীর পূজার পীঠ তাঁহার পূর্বদিকে। ২৮

হে রাজন্! যেখানে শম্ভু এবং অম্বিকা সর্বদা অবস্থিত, কামরূপের সেই পুণ্যপ্রদ নৈর্ঋত প্রদেশের বিষয় বলিলাম। ২৯

হে ভূপতে! হে মহারাজ! হিমালয় হইতে প্রসূত যে সকল দক্ষিণবাহিনী নদী কামরূপে বর্তমান আছে, ক্রমশঃ তাহাদের বিষয় শ্রবণ কর। ৩০

অগদনামক নদের উর্দ্ধে ভদ্রা নামে একটি মহানদী আছে, যে নদীতে ভাদ্র মাসের শুক্লচতুর্দশীতে স্নান করিলে মনুষ্য স্বর্গে গমন করে। ৩১

তাঁহার পূর্বদিকে সর্বদা পুণ্যতমা সুভদ্রা নামে নদী আছে, যাহাতে বৈশাখমাসের শুক্লতৃতীয়া তিথিতে স্নান করিলে স্বর্গ প্রাপ্তি হয়। ৩২

তাঁহার পর মানসা নামে আর একটী পুণ্যতমা নদী আছে। ঐ নদীকে তৃণবিন্দু ঋষি মানস সরোবর হইতে অবতারিত করেন। ৩৩

সমস্ত বৈশাখ মাস ঐ নদীতে স্নান করিলে মনুষ্য স্বর্গে গমন করে। তাঁহার পর বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হইয়া মোক্ষ প্রাপ্ত হয়। ৩৪

হিমালয় পর্বতের নিকট বিভ্রাট নামে একটি বড় পর্বত আছে, যে স্থানে ভূতনাথ মহাদেব সৰ্ব্বদা ভৈরবরূপে বাস করেন। ৩৫

সেই পৰ্বত হইতে শুভরূপ ভৈরবী নামে নদী মানসার পূর্বদিকে প্রবাহিত হইতেছে, ইহা গঙ্গার মত ফলপ্রদা। ৩৬

ঐ নদীতে বসন্ত সময়ে স্নান করিলে স্বর্গ লাভ হয়। যেখানে কামাখ্যা দেবীর পূজা করিয়া আপনার অভিলষিত বস্তু প্রাপ্ত হয়, সেই স্থানে মহামায়ার পূজা করিয়া দ্বিগুণ ফল লাভ করে। ৩৭

সেই দেবগঙ্গার উর্ধ্বে হিমালয় প্রসূত বর্ণ নামে একটা নদী আছে, উহা নিত্য মানসাবীর তুল্য ফল প্রদান করে। ৩৮

সুভদ্রাদি বর্ণান্ত যে সকল নদী কথিত হইল, ইহারা সকলে হিমালয় হইতে প্রসূত এবং উত্তরবাহিনী সুমদনার পূর্বে এবং ব্রহ্মক্ষেত্রের পশ্চিমে মহাক্ষেত্র নামে একটী ক্ষেত্র আছে, সেই স্থানে আদিত্য দেব সর্বদা বাস করেন। ৩৯-৪১

তাঁহার পূর্বদিকে ত্রিস্রোতা নামে নদী আছে, পশ্চাদ্ভাগে কাপোত এবং করুন নামে দুইটী কুণ্ড আছে। ৪২

কাপোত এবং করণ কুণ্ডে স্নান ও সেই পৰ্বতে আরোহণপূর্বক দিবাকর সূৰ্যের একবারমাত্র পূজা করিলে মনুষ্য সূৰ্য্যলোকে গমন করে। ৪৩

হে কাপোত ও করণ! তোমরা সূৰ্য্যরশ্মি হইতে সমুদ্ভূত এবং অমৃত। তোমাদের জল অতি পবিত্র। ‘আমার পাপ নাশ কর’। ৪৪

এই মন্ত্র পাঠ করিয়া কাপোতপুষ্করে স্নান এবং করণের জলে আচমন করিয়া পৰ্বতোপরি সূৰ্য্যদেবের পূজা করিবে। ৪৫

প্রথমে ত্রিবিধ ব্ৰহ্মবীজ, তাঁহার পর চতুর্থ্যন্ত ‘সহস্র রশ্মি’ এই পদ, তাঁহার পর ‘দেবী জয়া’ ইহা আদিত্যের অঙ্গবীজ এবং কামপ্রদ। ৪৬

সূৰ্য্য সদা পদ্মাসনে উপবিষ্ট, হস্তে পদ্মধারী, পদ্মের গর্ভের মত দীপ্তিমান, সপ্তাশ্ব সপ্তরজ্জু এবং দ্বিভুজ। ৪৭

সূর্যের মণ্ডল বর্তুলাকার এবং অষ্ট দলযুক্ত। অঙ্গুষ্ঠাদি অঙ্গুলীর হৃদয়াদি ষট অঙ্গের অঙ্গ মন্ত্র দ্বারা ন্যাস করিবে। ৪৮

উপান্তে বহ্নিসংযুক্ত অঙ্গমন্ত্র (শ্র এই রূপ মন্ত্রই অঙ্গ মন্ত্র) সকল প্রকার ন্যাসে বিহিত হইয়াছে, ইহা সকল প্রকার ফল দান করে। ৪৯ 

হৃদয়, মস্তক, শিখা, কবচ, নেত্র। আস্য, উদর, পৃষ্ঠ, বাহুদ্বয়, করতলদ্বয়, জঙ্ঘাদ্বয়, পাদদ্বয় এবং জঘন–এই সমস্ত অঙ্গে যথাক্রমে মন্ত্রের অক্ষর ন্যাস করিবে। উত্তর-তন্ত্রে পূজার যে ক্রম উক্ত হইয়াছে, সূর্যের পূজাতেও সেইরূপ ক্রম জানিবে। ৫০-৫১

ঈশানকোণে সূর্যের বিসৰ্জন করিবে এবং বিদ্যা আদি আটটি সূর্যের শক্তি, ইহার নির্মাল্যধারিণী উগ্রচণ্ডা এবং মাঠর আদি পার্ষ্ণি। ৫২

উত্তর তন্ত্রে ইহার বীজ পূর্বেই প্রতিপাদিত হইয়াছে। হে পুত্র! যে নরোত্তম, এইরূপ বিধানে সূর্যের পূজা করে, সেই শ্রেষ্ঠ মনুষ্য ইহলোকে সমুদয় অভিলষিত প্রাপ্ত হইয়া সুখী হয় এবং মরণান্তে ভাস্করের উদয়স্থানে গমন করে। ৫৩-৫৪

ভাস্করের অনতিদূরে শুভাচল অবস্থান করে, তাঁহার উৰ্দ্ধ সানূতে একটি উত্তম শিবলিঙ্গ আছে। ৫৫

অত্যন্ত বীৰ্য্যশালী মহাত্মা মানব সকল সেই শিবলিঙ্গকে বেষ্টন করিয়া অবস্থান করত পূজা করে। ৫৬

ত্রিস্রোতা নদীতে স্নান করিয়া যে মনুষ্য সেই শুভাচলস্থিত মহাত্মা শঙ্করকে অবলোকন করে, সে আপনার ইষ্টকাম প্রাপ্ত হয়। ৫৭

তাঁহার পূর্বে কুসুমমালিনী নামে দেবনদী, তাঁহার পর ক্ষীরোদাখ্যা নদী; এই উভয় নদীই দক্ষিণবাহিনী। ৫৮

এই নদীদ্বয়ে স্নান করিয়া মনুষ্য শঙ্করের আলয়ে গমন করে। তাঁহারও পূর্বদিকে নীলা নামে আর একটি নদী আছে। মনুষ্য মহামাঘীতে ঐ স্থানে স্নান করিয়া শিবলোক প্রাপ্ত হয়। ৫৯-৬০

তাঁহার পূর্বে শিবাচণ্ডী বা চণ্ডিকা নামে একটী মহানদী আছে। মনোহর ধবলনামক পৰ্বত হইতে উহা নির্গত হইয়াছে। ৬১

তাঁহার অনতিদুরে দুইটি শিবলিঙ্গ অবস্থিত। তাঁহার মধ্যে একটির নাম গোলোক, অপরটির নাম শৃঙ্গী, ইহাদের উভয়ের মধ্যে এক ক্রোশ ব্যবধান মাত্র। ৬২

মনুষ্য, চণ্ডিকা নদীতে স্নান ও ধবলেশ্বর পর্বতের উপর আরোহণ করিয়া দক্ষিণ সাগর, গোলোক নামক শিবলিঙ্গ দর্শন করিবে। ৬৩

তাঁহার পর সেই স্থান হইতে অবতীর্ণ হইয়া ভূমিতলস্থ শৃঙ্গী নামক মহেশ্বরে শিবপূজা বিধানানুসারে পূজা করিবে। ৬৪

এইরূপ করিলে মনুষ্য অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল এবং সকল প্রকার অভীষ্ট প্রাপ্ত হইয়া মরণান্তে শিবত্ব প্রাপ্ত হয়। ৬৫

এই যে সকল নদী কথিত হইল, ইহারা সকলে দক্ষিণবাহিনী। ঈশানকোণে গন্ধমাদন নামে যে পৰ্বত আছে, সেই স্থানে ভৃঙ্গেশ নামে শিবের একটি মহৎ লিঙ্গ আছে। ৬৬-৬৭

ক্ষেত্রের পশ্চিমে যে প্রান্ত নামে পৰ্বত আছে, সেই স্থানে দেবী কুলগামিনী হইয়া ব্ৰহ্মশিলা ধারণ করিয়াছিলেন। ৬৮

গন্ধমাদনের অন্তে ভৃঙ্গেশের দুইটি পদ আছে, উহা হইতে গঙ্গাজল নিঃসৃত হইতেছে, সেই স্থানে অন্তরালক নামে একটি কুণ্ড আছে। ৬৯

অন্তরালক কুণ্ডে স্নান ও তাঁহার জলপান পূর্বক ভৃঙ্গেশের পদযুগল দর্শন করিয়া মহাভৃঙ্গকে পূজা করিলে গণাধিপত্য লাভ হয়। ৭০

হে অন্তরাল! তুমি শম্ভুপাদ হইতে উদ্ভুত এবং ধৰ্ম্মের আকর। হে মহা বৃষ! তুমি বৃষধ্বজ পদদ্বয়কে সংযোজিত কর। ৭১

এই মন্ত্র পাঠপূৰ্ব্বক অন্তরালজলে স্নান করিয়া কুজ-পীঠবাসী ভৃঙ্গদেবের দর্শন করিবে। ৭২

মণিকুট এবং গন্ধমাদন পৰ্ব্বতের মধ্যে ব্ৰহ্মপুত্ৰ লৌহিত্যনদ বহন করিতেছে। ৭৩

বর্ণাশা নদীর দক্ষিণদিকে লৌহিত্য নামে সাগর আছে। তাঁহার পূর্বে মণিকূট পর্বত, এইখানে হয়গ্রীব বিষ্ণুর প্রতিমূর্তি আছে। ৭৪

বিষ্ণু হয়গ্রীবরূপে জরাসুরকে এবং হয়গ্রীবকেও হত করিয়া ক্রীড়ার নিমিত্ত সেই স্থানে অবস্থিত হইয়াছেন। ৭৫

জরাসুরকে বিনাশ করিয়া সুরাসুর মনূজদিগের হিতের নিমিত্ত বিষ্ণু সেই স্থানে অবস্থান করিতেছেন। ৭৬

বিষ্ণু জ্বর কর্তৃক পীড়িত হইয়া এবং জরাসুরকে বধ করিয়া সৰ্বলোকের হিতের নিমিত্ত সেই স্থলে অগদস্নান করিয়াছিলেন। ৭৭

সেই অগদস্নান হইতে একটি বৃহৎ শব্দ উত্থিত হইয়াছিল। এই জন্য হয়গ্রীব বিষ্ণু সেই তীর্থের নাম অপুনর্ভব রাখিলেন। ৭৮

যেহেতু সেই স্থানে স্নান করিলে মনুষ্যের আর পুনর্বার জন্ম হয় না, এই নিমিত্ত উহা অপুনর্ভব নামে কীর্তিত হয়। ৭৯

মণিকুট পৰ্বতে বিষ্ণু, হয়গ্রীবরূপে অবস্থান করিতেছেন, ঐ তীর্থের বিস্তার শত ব্যাম। ৮০

তাঁহার পূর্বে ভদ্রকাম, উহা সকল প্রকারে ত্রিকোণ; এই স্থানে কালহয় নামে শিবলিঙ্গ অবস্থিত। ৮১

তাঁহার দক্ষিণে অপুনর্ভব নামে একটা কুণ্ডও দৃষ্ট হয়। সেই অপূনর্ভব কুণ্ডের তীরে ভদ্রকাম নামক পৰ্বতে হয়গ্রীবা নামে ব্ৰহ্মস্বরূপিণী একখানি শিলা আছে। সেই স্থানে যোগজ্ঞ যোগী মহাদেব ধ্যানাসক্ত হইয়া অবস্থান করেন। ৮২-৮৩

ইহাকে দেখিয়া মনুষ্য মরণান্তে মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। ৮৪

সেই শিলাতেই গোকর্ণনামক একটি শিবমূর্তি আছে; কারণ ঐ স্থানে মহাদেব অন্ধকের বন্ধু গোকর্ণনামক অসুরকে নিহত করেন। ৮৫

গোকর্ণের ঈশানকোণে কেদার নামে মহাদেব আছেন। তিনি কমলাকার স্বরূপধারী। ৮৬

যে পৰ্বতে কেদার বাস করেন, তাঁহার নাম মদন। সেই স্থানেই লয়প্রদ মহাত্মা কমলও অবস্থিত। ৮৭

অপুনর্ভবের জলে স্নান করিয়া এবং গোকর্ণ পৰ্বতস্থিত কেদার ও কমলকে দেখিয়া পরে মাধবকে দেখিয়া মুক্ত হইবে। ৮৮

তাঁহার পর কামদেবকে দর্শন করিবে। কাম দর্শন করিয়া পুনৰ্বার অপুনর্ভবকে দর্শন করিবে। ৮৯

এইরূপ নিয়মে পূর্বোক্তক্রমে পীঠযাত্রা করিয়া উর্ধ্বতন সপ্ত, অধস্তন সপ্ত, এবং আপনাকে উদ্ধার করিয়া স্বর্গে লইয়া যায়। ৯০

‘হে মহোদধি! তুমি বিষ্ণুর স্নান হইতে উদ্ভূত অপুনর্ভব হরি এবং ঈশ্বর স্বরূপ। ৯১

তুমি স্বর্গের হেতু, আমাকে স্বর্গ দান কর।’ এই মন্ত্র পাঠ করিয়া পণ্ডিত অপুনর্ভবে স্নান করিবে। ৯২

হয়গ্রীবের তন্ত্ৰ পূৰ্বেই প্রতিপাদিত হইয়াছে। এক্ষণে যে স্বরূপে তাঁহার ধ্যান করা হয়, সেই স্বরূপ শ্রবণ কর। ৯৩

তাঁহার বর্ণ, কর্পূর এবং কুন্দের ন্যায় ধবল, তিনি শ্বেতপদ্মের উপর উপবিষ্ট, চতুর্ভুজ, কুণ্ডলাদি নানা অলঙ্কারে অলঙ্কত। ৯৪

বামদিকের হস্তদ্বয়ে বর এবং অভয়দানকারী দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে পুস্তক এবং শ্বেত-পদ্ম-ধারী। ৯৫

বক্ষঃস্থলে শ্রীবৎস এবং কৌস্তুভদ্বারা সমুজ্জ্বল, শোভাশালী এবং কখন কখনও বা গরুড়াসনে উপবিষ্ট। উত্তরতন্ত্রে যেরূপ পূজার ক্রম উক্ত হইয়াছে, এই স্থানে তাহাই গ্রহণ করিবে। ৯৬

তাঁহার নির্মাল্যধারী হয়ারি জানিবে এবং বিসর্জনও ঐ নিয়মে করিবে। গরুড়ধ্বজ শ্রীকৃষ্ণ গন্ধৰ্ব্বদিগের সহিত ক্রীড়াচ্ছলে লোকের হিতের নিমিত্ত সৰ্ব্বদা শিলারূপে প্রতিচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছেন। ৯৭

হয়গ্ৰীবের মন্ত্র দ্বিলক্ষবার জপ করিলেই সিদ্ধি হয়। আজ্য এবং যাবক পায়স দ্বারা হোম করিয়া ইহার পুরশ্চরণ করিতে হয়। ৯৮

হে রাজেন্দ্র! একবার মাত্র পুরশ্চরণ করিলেই ইহলোকে যাবৎ অভিলষিত বস্তুর লাভ এবং অন্তে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হয়। ৯৯

পূজক ব্রাহ্মণ পূর্বোক্ত মন্ত্রের দ্বারা তৎপুরুষাদি পঞ্চবক্ত্রের কামাদিপঞ্চ মূর্তির পূজা করিবে। কাম ও তৎপুরুষ এক, যোগী ও ঈশান এক। ১০০-১০১

অঘোর গোকর্ণরূপী, বামদেব কেদারস্বরূপ এবং সদ্যোজাতই কমলরূপে অবতীর্ণ। ইহাদিগকে পূর্বোক্ত মন্ত্ৰচতুষ্টয়দ্বারা পূজা করিবে। ১০২

উহাই কৈলাসপৰ্বত এবং কালিকাই শিব-গঙ্গা। হয়গ্ৰীবের পূৰ্বে এবং কেদারের পশ্চিমে ছায়াভোগ নামক স্থান আছে। ১০৩

সেই স্থানে ভোগবতী নামে একটি পুরী আছে। যে ব্যক্তি কৌতুকবশতঃ অপুনর্ভব মণিকুটে গমন করে, সে সকল তীর্থযাত্রার ফল লাভ করে। ১০৪-১০৫

জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা বা অষ্টমীতেই অপুনর্ভব জলে স্নান করিয়া যে বিধিপূৰ্ব্বক নারায়ণকে দর্শন করে, সে সমুদয় কুশল লাভ করিয়া বিষ্ণুলোকে বিষ্ণুর সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়। ১০৬

যে, সমস্ত জ্যৈষ্ঠ মাস নারায়ণকে দর্শন করে, সে নিজের নিখিলকুল-জনের সহিত বিষ্ণুতে লীন হয়। ১০৭

এই মণিকুটনামক স্থান অতি পবিত্র, ইহা বারাণসী হইতেও অধিক পবিত্র, সিদ্ধ এবং বিদ্যাধরগণ কর্তৃক অর্চিত। ১০৮

যে ব্রাহ্মণ মণিকূট নির্ণয়ের কথা শ্রবণ করে, সে সমুদয় বেদ শ্রবণের ফল প্রাপ্ত হয়, এ বিষয়ে কোন সংশয় নাই। ১০৯ অষ্টসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭৮

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *