1 of 2

২৫. দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন

দীনের দাওয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)–এর আরব গোত্ৰসমূহ গমন

ইবন ইসহাক বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) মক্কা আগমন করলেন। তাঁর সমাজের লোকজন এখন তার বিরোধিতা ও তার দীন প্ৰত্যাখ্যানে জঘন্য ষড়যন্ত্রকারী। মাত্র অল্প সংখ্যক দুর্বল ও শক্তিহীন ঈমানদার লোক তাঁর পক্ষে ছিল। হজ্জের মওসুমে তিনি বিভিন্ন আরব গোত্রের মধ্যে উপস্থিত হতেন এবং তাদেরকে বলতেন যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত পুরুষ প্রেরিত রাসূল। তারা যেন তাকে সত্য বলে মেনে নেয় এবং বিরোধী পক্ষের অত্যাচার-নিযতিন থেকে যেন তাঁকে রক্ষা করে তিনি তাদের পতি সেই অনুরোধ জানাতেন। যাতে করে আল্লাহ তা’আলা যা নিয়ে তাকে প্রেরণ করেছেন তা সকলের নিকট পৌছিয়ে দিতে পারেন।

ইবন ইসহাক বলেন……. রাবীআ ইবন আববাদ বলেন, আমি আমার পিতার সাথে মিনাতে অবস্থান করছিলাম। তখন আমি বয়সে নবীন যুবক। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তখন আরবের

বিভিন্ন গোত্রের তাঁবুতে উপস্থিত হচ্ছিলেন আর বলছিলেন, “হে অমুক গোত্র! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রাসূল। আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা যে সব দেবদেবীর পূজা করছ, তা বর্জন কর। তোমরা আমার প্রতি ঈমান আনয়ন কর এবং আমাকে সত্য বলে মেনে নাও। আর তোমরা আমার শক্ৰদেরকে প্রতিহত করা যাতে করে আল্লাহ তা’আলা আমাকে যে দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন আমি তা সকলের নিকট পৌছাতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পিছে পিছে একজন লোক উপস্থিত হত। সে ছিল ফর্সা মুখ, কুয়োর মত বড় বড় চোখ বিশিষ্ট, তবে টেরা চোখের লোক। তার পরিধানে ছিল আন্দনী জামা ও চাদর। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর বক্তব্য শেষ করলে ওই ব্যক্তিটি দাঁড়িয়ে বলত, “হে অমুক গোত্ৰ! এই লোক তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছে যাতে তোমরা লাত ও উষযা দেবীকে বর্জন কর। আর বনু মালিক ইবন আকিয়াশ গোত্রের জিন মিত্রদেরকে ছেড়ে তোমরা যেন তার নব। উদ্ভাবিত গোমরাহীর পথে যাও। খবরদার! তোমরা তার আনুগত্য করো না এবং তার কথা শ্রবণ করো না। বর্ণনাকািবী বলেন, আমি তখন আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, পিতা! এই যে লোকটি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পিছে পিছে ছুটছে আর তার বিরোধিতা করে চলেছে, সে লোকটি কে? আমার পিতা বললেন, সে হল আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আবদুল উযযা— আবু লাহাব। সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর চাচা।

ইমাম আহমদ. রাবীআ ইবন আব্বাদ থেকে বর্ণিত। তিনি জাহিলী যুগের লোক ছিলেন। পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বললেন, আমি জাহিলী যুগে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে যুল-মাজায বাজারে দেখেছিলাম। তিনি তখন বলছিলেন :

يايا الناس قولوا لا الله الأ اللَّهُ تُفلحوا–

“হে লোক সকল! তোমরা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বল, তাহলে সফলকাম হবে।” লোকজন তার নিকট সমবেত ছিল। তার পেছনে ছিল বড় বড় চোেখওয়ালা ফর্সা চেহারার একজন টেরা লোক। তার দুটি ঝু’টি ছিল। সে বলছিল, ওই লোকটি ধর্মত্যাগী ও মিথ্যাবাদী। রাসূলুল্লাহ (সা) যেখানেই যাচ্ছিলেন, লোকটিও সেখানে উপস্থিত হচ্ছিল। আমি লোকটির পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে বলা হল যে, সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর চাচা আবু লাহাব!

বায়হাকী.. রাবীআ দুওয়ালী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে

আল্লাহর দিকে আহবান করছিলেন। তার পেছনে গৌর বর্ণের একজন টেরা চোখের লোক ছিল। সে বলছিল, হে লোকসকল! এই মানুষটি যেন তোমাদেরকে নিজ নিজ ধর্ম ও পিতৃধৰ্ম সম্পর্কে প্রতারিত করতে না পারে। আমি বললাম, এই লোকটি কে? উপস্থিত লোকেরা বলল, সে আবৃ লাহাব। আবু নুআয়ম “আদি-দালাইল” গ্রন্থে ইবন আবু যি’ব ও সাঈদ ইবন সালামা সূত্রে মুহাম্মদ ইবন মুনকাদির থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

এরপর বায়হাকী শুবা৷……… কিনানা গোত্রের এক লোক থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বলেছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে দেখেছিলাম যুল-মাজায বাজারে। তিনি বলছিলেন, “হে লোক

সকল তোমরা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বল, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।” তখন আমি দেখতে পাই যে, অন্য একজন মানুষ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি ধূলি নিক্ষেপ করছে। সে ছিল আবু জাহল। আবু জাহল বলছিল, হে লোক সকল! এই মানুষটি যেন তোমাদেরকে তোমাদের দীনের ব্যাপারে প্রতারিত করতে না পারে। সে চায় যে, তোমরা লাত ও উযযার উপাসনা ত্যাগ কর। এ বর্ণনায় আছে যে, পেছনের ব্যক্তিটি ছিল আবু জাহল। এটি বর্ণনাকারীর ভ্রান্তিও হতে পারে। অথবা এমনও হতে পরে যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্যে তাঁর পেছনে কখনো থাকত আবু জাহল আর কখনো থাকত আবু লাহাব। উভয়ে পালা করে তাকে কষ্ট দিত।

ইবন ইসহাক বলেন, ইবন শিহাব আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, দীনের আহবান নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা) কিন্দা গোত্রের তাঁবুতে উপস্থিত হন। সেখানে তাদের দলপতি মালীহ উপস্থিত ছিল। তিনি ওদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন এবং নিজেকে তাদের নিকট পেশ করলেন। তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানাল।

ইবন ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবন আবদুর রহমান ইবন হুসাইন আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) কালিব গোত্রের বানু আবদুল্লাহ নামক উপগোত্রের তাঁবুতে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিলেন এবং তাকে নিরাপত্তা দানের অনুরোধ জানালেন। তিনি বললেন, হে বনু আবদুল্লাহ! আল্লাহ তা’আলা তো তোমাদের গোত্রীয় পিতাকে একটি সুন্দর নাম দিয়েছেন। তারা তার দাওয়াত গ্ৰহণ করেনি এবং তার অনুরোধ রক্ষা করেনি। আমাদের এক সঙ্গী আবদুল্লাহ ইবন কাআব ইবন মালিকের উদধূতি দিয়ে আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বনু হানীফা গোত্রের তাঁবুতে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে আল্লাহর প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন এবং তাঁকে নিরাপত্তা দানের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। উত্তরে তারা যে কদৰ্য ভাষা ব্যবহার করে আরবের অন্য কেউ তা করেনি।

রাবী বলেন, যুহরী আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) আমির ইবন সা’সাআহ গোত্রের নিকট উপস্থিত হয়ে তাদেরকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং তাকে নিরাপত্তা দানের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বুহায়রা ইবন ফিরাস নামের তাদের একজন প্রত্যুত্তরে বলেছিল, আল্লাহর কসম, কুরায়শের এই যুবকটিকে যদি আমি আমার অধীনস্থ করতে পারতাম, তবে তার মাধ্যমে আমি সমগ্র আরব ভূখণ্ডে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারব। তারপর সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলল, আচ্ছা আমরা যদি আপনার মতাদর্শ মেনে আপনার অনুসরণ করি, তারপর আপনি আপনার বিরোধীদের উপর বিজয় লাভ করেন, তাহলে আপনার পর আমরা কি রাজত্বের মালিক হব? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, কর্তৃত্ব ও রাজত্ব মূলত আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে চান তা দান করেন। তখন বুহায়রা বলল, এ কেমন কথা যে, আপনাকে রক্ষার জন্যে আমরা আরবদের আক্রমণের মুখে বুক পেতে দেব। আর আপনি বিজয়ী হলে রাজত্ব যাবে। অন্যের হাতে! যাকগে আপনার অনুসরণ করার আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। তারা তার অনুরোধ প্ৰত্যাখ্যান করল।

হজ্জের মওসুম শেষে লোকজন নিজ নিজ দেশে ফিরে গেল। বনু আমির গোত্রের লোকেরা তাদের এক বয়ােবৃদ্ধ নেতৃস্থানীয় লোকের নিকট উপস্থিত হল। বার্ধক্যের কারণে তিনি হজ্জে যেতে পারেননি। প্রতিবছর হজ্জ থেকে ফিরে গিয়ে তারা ওই বছর মক্কায় সংঘটিত বিষয়সমূহ তাকে জানাতো। এবার তার নিকট উপস্থিত হওয়ার পর এই মওসুমে সংঘটিত ঘটনাবলী সম্পর্কে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, কুরায়শ বংশের বনী আবদুল মুত্তালিবের এক যুবক আমাদের নিকট এসেছিল। সে দাবী করে যে, সে নবী। তাকে রক্ষা করার জন্যে, তাকে সাহায্য করার জন্যে এবং তাকে আমাদের দেশে নিয়ে আসার জন্যে সে আমাদেরকে অনুরোধ করে। একথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, হে আমির গোত্ৰ! তোমাদের জন্যে কি ধ্বংস এসে গেল? যে সুযোগ তোমরা হাতছাড়া করেছ তা কি আর ফিরে পাবে? অমুকের প্রাণ যার হাতে তার কসম করে বলছি। ইসমাঈলের বংশধরেরা তো এমন বানোয়াট কথা বলে না। তিনি যা এনেছেন তা তো নিশ্চিত সত্য। তোমাদের বিবেক-বিবেচনা তখন কোথায় ছিল?

মূসা ইবন উকবা যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন, ওই বছরগুলোতে রাসূলুল্লাহ্ (সা) প্রতি হজ্জ মওসুমে আরব গোত্রদের নিকট উপস্থিত হতেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকদের সাথে তিনি কথা বলতেন। আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দেয়ার সাথে তাদের নিকট তিনি তার নিজের নিরাপত্তা প্রদানের প্রস্তাব পেশ করতেন। তিনি বলতেন যে, আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে জবরদস্তি করব না। আমার পেশকৃত কথা যার ভাল লাগবে, সে তা গ্ৰহণ করবে। যার ভাল লাগবে না, আমি তার উপর তা চাপিয়ে দেবাে না। আমি চাই যে, আমাকে হত্যার যে ষড়যন্ত্র চলছে তোমরা তা থেকে আমাকে রক্ষা করবে যাতে আমি আমার প্রতিপালকের রিসালাত সকলের নিকট পৌছিয়ে দিতে পারি এবং আমার ব্যাপারে এবং আমার সাখীদের ব্যাপারে। আল্লাহর ফায়সালা পূর্ণ হয়। কিন্তু তাদের কেউই তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। যে গোত্রের নিকটই তিনি উপস্থিত হয়েছেন, সে গোত্রই বলেছে যে, একজন মানুষ সম্পর্কে তার স্বগোত্রীয় লোকজনই ভাল জানে। তোমরা কি মনে করছ যে, যে লোকটি নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেছে যার ফলে তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে সে কী করে আমাদেরকে সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করবে? মূলত তাকে আশ্রয় দেয়ার দায়িত্বটি আল্লাহ তা’আলা। আনসারদের জন্যে নির্ধারিত করে রেখেছিলেন এবং এর মাধ্যমে তিনি তাদেরকে মৰ্যাদাবান

করেন।

হাফিয আবু নু আয়ম … আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলেছিলেন, আমি তো আপনার নিকট এবং আপনার স্বগোত্রীয়দের নিকট আশ্রয় ও নিরাপত্তা পাচ্ছি না। আপনি কি আমাকে আগামীকাল বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন যাতে করে আমি অন্য গোত্রের লোকজনের নিকট গিয়ে থাকতে পারি? বাজার ছিল আরবদের মিলন-মেলা। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি তাকে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, এটি কিন্দাহ গোত্রের তাঁবু। ইয়ামান থেকে যারা হজ্জ করতে আসে, তাদের মধ্যে এরা শ্রেষ্ঠ। এটি বকর ইবন ওয়াইল গোত্রের তাঁবু। আর এগুলো হলো আমির ইবন সাসাআ গোত্রের তাঁবু। এগুলো

থেকে যে কোন একটি তুমি নিজের জন্যে বেছে নাও। তিনি প্রথমে কিন্দা গোত্রের নিকট গেলেন। বললেন “আপনারা কোন দেশের লোক? তারা বলল, আমরা ইয়ামানের অধিবাসী। ইয়ামানের কোন গোত্ৰ? তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, কিন্দা গোত্রের লোক। তিনি বললেন, কিন্দা গোত্রের কোন শাখার অন্তর্ভুক্ত আপনারা? তারা বলল, “আমির ইবন মুআবিয়াহ শাকার অন্তর্ভুক্ত। তিনি বললেন, “আপনারা কি কল্যাণ চান? তারা বলল, কেমন কল্যাণ? তিনি বললেন, আপনারা এই সাক্ষ্য দিবেন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আর নামায আদায় করবেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে যা এসেছে তাতে বিশ্বাস করবেন।

আবদুল্লাহ ইবন আজলাহ বলেছেন যে, আমার পিতা তাঁর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকদের বরাতে আমাকে জানিয়েছেন যে, কিন্দা গোত্রের লোকেরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলেছিল, “আপনি যদি বিজয়ী হন, তাহলে আপনার পর রাজতু আমাদেরকে দেবেন তো? তিনি বললেন, :

أن الملك للّه يجعله حيت يشاء“রাজত্ব আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করবেন।” তখন তারা বলল, যদি তাই হয়, তবে আপনি যা নিয়ে এসেছেন তা দিয়ে আমাদের কোন দরকার নেই। কালবী বলেছেন যে, তারা বলেছিল, আপনি কি আমাদেরকে আমাদের উপাস্যগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে আরবদের মুকাবিলায় আমাদেরকে যুদ্ধে জড়াতে এসেছেন? আপনি বরং আপনার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে যান, আপনার আনীত দীনে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। তিনি তাদের নিকট থেকে ফিরে এলেন।

এরপর তিনি গেলেন বকর ইবন ওয়াইল গোত্রের লোকজনের নিকট। তুমাপনারা কোন গোত্রের লোক? তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, বকর ইবন ওয়াইল গোত্রের লোক। তিনি বললেন, বকর ইবন ওয়াইল গোত্রের কোন শাখার আপনারা অন্তর্ভুক্ত? তারা বলল, কায়স ইবন ছালাবা শাখার। তিনি বললেন, আপনাদের সংখ্যা কেমন? তারা বলল, প্রচুর ধুলোবালির সংখ্যার ন্যায়। তিনি বললেন, আপনাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন? তারা বলল, আমাদের নিজস্ব কোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। পারস্য সম্রাট আমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। সুতরাং ওদেরকে বাদ দিয়ে আমরা কাউকে রক্ষা করতে পারব না এবং ওদেরকে ডিঙ্গিয়ে আমরা কাউকে আশ্রয় দিতে পারব না। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তবে আপনারা আল্লাহর সাথে এই ওয়াদায় আবদ্ধ হন যে, তিনি যদি আপনাদেরকে বঁচিয়ে রাখেন, তারপর আপনারা ওই পারসিকদের স্থান দখল করতে পারেন, তাদের স্ত্রীদেরকে বিবাহ করতে পারেন এবং তাদের ছেলেদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করতে পারেন, তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবেন। ওরা বলল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল। এরপর তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। তার চলে যাবার পর আবু লাহাব সেখানে উপস্থিত হল। কালবী বলেন, তার চাচা আবু লাহাব তাঁর পেছনে লেগে থাকত এবং লোকজনকে বলত। তোমরা তার কথা গ্ৰহণ করো না। বস্তৃত আবু লাহাব ওখানে উপস্থিত হওয়ার পর লোকজন তাকে বলল, আপনি কি ওই

লোকটিকে চিনেন? আবু লাহাব বলল, হ্যা আমি তাকে চিনি। সে আমাদের মধ্যে সন্ত্রান্ত ব্যক্তি। তোমরা তার সম্পর্কে কি জানতে চোচ্ছ? রাসূলুল্লাহ (সা) ওদেরকে যে বিষয়ে দাওয়াত দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে তারা আবু লাহাবকে জানাল এবং তারা বলল যে, সে নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করে। আবু লাহাব বলল, তার কথা গ্ৰহণ করে তোমরা তাকে উপরে তুলে দিও না। সে একজন পাগল, মাথায় যা আসে তাই বলতে থাকে। তারা বলল, তা বটে, আমরা তাকে পাগল বলেই মনে করেছি, যখন সে পারসিকদের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয়ের কথা বলেছে।

আমার নিকট বর্ণনা করেছে যে, তারা বলেছে, আমরা উকায মেলায় ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, আপনারা কোন সম্প্রদায়ের লোক? আমরা বললাম, আমরা আমির ইবন সাসাআ গোত্রের লোক। তিনি বললেন, আপনারা আমির ইবন সাসাআ গোত্রের কোন শাখার অন্তর্ভুক্ত? তারা বলল, বনু কাআব ইবন রাবীআ শাখার। তিনি বললেন, আপনাদের মধ্যে নিরাপত্তা লাভের পরিবেশ কেমন? আমরা বললাম, আমরা যা বলি, তার প্রতিবাদ করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারে না। আর মেহমানদের আপ্যায়নের জন্যে আমাদের জ্বালানো আগুন কখনো নিভানো হয় না। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, “আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমি আপনাদের নিকট এসেছি এ জন্যে যে, আপনারা আমাকে আশ্রয় দেবেন যাতে করে আমি আমার প্রতিপালকের দেওয়া রিসালাতের বাণী মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে পারি। আপনাদের কারো উপর আমি কোন বিষয়ে জবরদস্তি করব না। তারা বলল, আপনি কুরায়শের কোন শাখার লোক? তিনি বললেন, বনু আবদুল মুত্তালিব শাখার। তারা বলল, তা হলে আবদ মানাফ গোত্রের লোকদের মধ্যে আপনার অবস্থান কেমন? তিনি বললেন, তারাই তো সর্বপ্রথম আমাকে প্রত্যাখ্যান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলল, আমরা আপনাকে তাড়িয়ে দেবো না। আবার আপনার প্রতি ঈমােনও আনিব না। আমরা আপনাকে নিরাপত্তা দেবো। যাতে করে আপনি আপনার প্রতিপালকের রিসালতের বাণী পৌছিয়ে দিতে পারেন। বস্তৃত তিনি তাদের সাথে বসবাস করতে লাগলেন। তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করছিল। ইতোমধ্যে বুহায়রা ইবন ফিরাস কুশায়রী তাদের নিকট আগমন করে। সে বলল, তোমাদের মধ্যে এই লোকটি কে? আমি তো তাকে চিনতে পারছি না। ওরা বলল, তিনি হলেন মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ কুরায়শী। সে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের সাথে তার সম্পর্ক কী? তারা বলল, সে তো নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করে। সে আমাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছে আমরা যেন তাকে নিরাপত্তা দিই যাতে সে তার প্রতিপালকের দেয়া রিসালাতের বাণী প্রচার করতে পারে। বুহায়রা বলল, তোমরা তাকে কি উত্তর দিয়েছ। তারা বলল, আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা তাকে আমাদের দেশে নিয়ে যাব এবং তাকে নিরাপত্তা দেবো। যেমন করে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করি। বুহায়রা বলল, এই মেলা থেকে তোমরা যে কঠিন দায়িত্ব নিয়ে যাচ্ছে অন্য কেউ তত কঠিন কিছু নিয়ে যাচ্ছে বলে আমার জানা নেই। তোমরা তাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে বিপর্যয়ের সূচনা করছে। তারপর তোমরা অন্যান্য মানুষের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে শেষপর্যন্ত আরবরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে তোমাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে। সবাই তোমাদের

বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তার সম্প্রদায় তার সম্পর্কে অধিকতর ওয়াকিফহাল। সে যদি কোন কল্যাণ নিয়ে আসে, তবে তা গ্রহণ করে ওরা শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। তোমরা কি একজন অবাঞ্ছিত লোককে সাথে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা করছে যার সম্প্রদায় তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাকে প্ৰত্যাখ্যান করেছে। তোমরা কি তাকে আশ্রয় দিতে ও সাহায্য করতে চাও? তোমাদের মনোভাব কতইনা মন্দা!

বুহায়রা এবার রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দিকে ফিরে তাকাল। সে বলল, “তুমি তোমার সম্প্রদায়ের নিকট চলে যাও। আল্লাহর কসম, এখন তুমি যদি আমার সম্প্রদায়ের নিকট না হয়ে অন্য কোথাও হতে, তবে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর উটনীর পিঠে সওয়ার হলেন। খবীছ বুহায়রা এসে উটনীটির চলার পথ রোধ করে দেয়। ফলে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নিয়ে উটনীটি লাফিয়ে উঠে এবং তাঁকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়।

বনু আমির গোত্রের নিকট তখন আমির ইবন কুরাত-এর কন্যা দাবা’আ অবস্থান করছিল। মক্কায় যে সকল মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের একজন। গোষ্ঠীর লোকদের সাথে দেখা করার জন্যে তিনি এখানে এসেছিলেন। তিনি বললেন, হে আমিরের বংশধর! এখন তো আমির জীবিত নেই। তোমাদের সামনে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে অথচ তোমরা কেউ তাকে রক্ষা করছি না? এবার তার তিন চাচাত ভাই বুহায়রাকে আক্রমণ করার জন্যে উঠে দাঁড়াল। অপর দু’জন প্ৰস্তৃত হল বুহায়রাকে সাহায্য করার জন্যে। ফলে উভয়পক্ষের একেকজন তার প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পক্ষের প্রত্যেক লোক তার প্রতিপক্ষকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার বুকের উপর উঠে বসিল এবং তাদেরকে চপেটাঘাত করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা) দুআ করে বললেন, হে আল্লাহ! এই তিনজনকে বরকত দিন আর ওই তিনজনকে লা’নত দিন। এই তিন জন যারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সাহায্য করেছিলেন তাঁরা পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাহলের দু’পুত্ৰ গাতীফ এবং গাতফান আর তৃতীয়জন হলেন আবদুল্লাহ ইবন সালামা-এর পুত্র উরওয়া কিংবা উযরা।

হাফিয সাঈদ ইবন ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ উমাবী তার মাগাষী গ্রন্থে তাঁর পিতার বরাতে উক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। অপর তিনজন ধ্বংস হয়েছিল। ওরা হল বুহায়রা ইবন ফিরাস, হাযান ইবন আবদুল্লাহ ইবন সালামা ইবন কুশােয়র এবং আকীল গোত্রের মুআবিয়া ইবন উবাদা। তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত। এটি একটি বিরল বর্ণনা! সে জন্যে আমরা এটি উদধূত করলাম। আল্লাহই ভাল জানেন

আমির ইবন সাসাআ-এর ঘটনা বর্ণনা এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি ওদের অশালীন প্রত্যুত্তর বর্ণনা উপলক্ষে হাফিয আবু নুআয়ম কাআব ইবন মালিক (রা) থেকে উক্ত হাদীছের সমর্থক একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে আবু নুআয়ম, হাকিম ও বায়হাকী (র) প্রমুখ আবান ইবন আবদুল্লাহ বাজালী…… আলী ইবন আবু তালিব সূত্ৰে যেটি বর্ণনা করেছেন সেটি এর চেয়েও দীর্ঘ এবং আশ্চর্যজনক। আলী ইবন আবু তালিব বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তার রাসূলকে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন আরবের বিভিন্ন গোত্রের নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত

দেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) মিনার পথে বের হলেন। সাথে আবু বকর (রা) এবং আমি। আমরা

আরবদের এক মজলিসে উপস্থিত হই। আবু বকর (রা) এগিয়ে গিয়ে ওদেরকে সালাম দিলেন।

সকল ভাল কাজে হযরত আবু বকর (রা) আমাদের মধ্যে অগ্রগামী থাকতেন। বংশ-পরিচিতি

সম্পর্কে তার ব্যাপক জনাশুনা ছিল। তিনি বললেন, আপনারা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা

বলল, রাবীআ সম্প্রদায়ের লোক। তিনি বললেন, মূল রাবীআ গোত্রের, না শাখা গোত্রের? তারা বলল, মূল রাবী’আ গোত্রের। আবু বকর (রা) বললেন, তবে কোন মূল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত? তারা

বলল, যুহল-ই-আকবর গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের মধ্যে কি

আওফ আছেন, যার সম্পর্কে বলা হয় যে, আওফের উপত্যকায় উত্তাপ নেই? তারা বলল, না।

আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের মধ্যে কি বুসতাম। ইবন কায়স আছে, যার উপাধি

পতাকাবাহী এবং যিনি গোত্রের উৎস। তারা বলল, না, নেই। আবু বকর (রা) বললেন,

তোমাদের মধ্যে কি হাঁওফাযান ইবন শুরায়ক আছে, যার উপাধি রাজার হস্তা ও আত্মরক্ষাকারী? তারা বলল, না, নেই। আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের মধ্যে কি জাসসাস ইবন মুররা ইবন

যুহল আছে, যার উপাধি হল আত্মসংযমী ও প্রতিবেশীদের হিফাযতকারী? তারা বলল, না, নেই। আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের মধ্যে কি মুযদালফ আছেন, যিনি তুলনাহীন একক শিরস্ত্ৰাণের অধিকারী? তারা বলল, না, তাই তিনি বললেন। তবে তোমরা কি কিনদা-রাজাদের

মাতুল বংশ? তারা বলল, না, তা নয়। তিনি বললেন, তবে তোমরা কি লাখামী রাজাদের শ্বশুর।

গোত্র? তারা বলল, না। তা নয়। এবার হযরত আবু বকর (রা) তাদেরকে বললেন, তবে

তোমরা উধ্বতন যুহলের গোত্রভুক্ত নও, বরং তোমরা অধস্তন যুহলের বংশধর।

বর্ণনাকারী বলেন, তখনই দাগফাল ইবন হানযােলা যুহালী নামের এক যুবক লাফিয়ে এসে হযরত আবু বকর (রা)-এর উত্তীর লাগাম চেপে ধরল এবং বলল :

ان على ساتلنا أن نسألة–والعبء لا نعرفة أو نجهلة – যিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন আমরা নিশ্চয়ই তাকে তার বংশ পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব। পোশাক দেখে আমরা তাকে চিনতে পারছি না কিংবা তার সম্পর্কে আমরা

অজ্ঞ।

হে আগন্তুক! আপনি তো আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আপনাকে জানালাম। আমাদের কিছুই আমরা গোপন রাখিনি। এবার আমরা আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। আপনার পরিচয় কি? হযরত আবু বকর (রা) বললেন, আমি কুরায়শ বংশের লোক। যুবকটি বলল, বাহ বাহ আপনি তো নেতৃত্ব দানকারী আরবের অগ্রগামীও শীর্ষ স্থানীয় বংশের অন্তর্ভুক্ত। সে এবার বলল, আপনি কুরায়শের কোন শাখার অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন। তায়ম ইবন মুররা শাখার অন্তর্ভুক্ত। সে বলল, আপনি কি শত্রুপক্ষের বক্ষ লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করতে পারেন? কুসাই ইবন কিলাব কে আপনাদের গোত্রভুক্ত? যিনি মক্কা দখলকারীদের অধিকাংশকে হত্যা আর অবশিষ্টদেরকে দেশান্তরিত করেছিলেন? নিজের সম্প্রদায়ভুক্ত লোকদেরকে বিভিন্নস্থান থেকে এনে মক্কায় পুনর্বাসন করেছিলেন। তারপর ওই জনপদের কর্তৃত্ব গ্রহণ

8–

করেছিলেন? কুরায়শ বংশকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছিলেন। এ জন্যে আরব জাতি তাকে মুজাম্মি’ বা “একত্রকারী” নামে আখ্যায়িত করেছে। তাঁর সম্পর্কে জনৈক কাবু বলেছেন :

أليس أبو كُمْ كان يُذهى مجيعا–بمجمع اللّة القبائل من فهر –

“তোমাদের পূর্বপুরুষ কি একত্রকারী উপাধিতে ভূষিত ছিলেন না? তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা ফিহর গোত্রের সকল শাখাকে একত্রিত করেছেন।”

হযরত আবু বকর (রা) বললেন, না, তা নয়। যুবক বলল, আপনাদের মধ্যে কি আবদ মানাফ আছেন, যিনি সকল ওসীয়্যতের কেন্দ্ৰবিন্দু এবং সকল নেতার নেতা? আবু বকর (রা) বললেন না, নেই। যুবক বলল, তবে আপনাদের মধ্যে কি আমর ইবন আবদ মানাফ হাশিম আছেন, যিনি নিজ গোত্র ও মক্কাবাসীদের জন্যে রুটি ছারীদ খাওয়াতেন? তার সম্পর্কে কবি

বলেছেন :

عمر العلا هاشم الثريد لقومه – ورجال مكة مشتتون عجافا

উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আমার নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের ছারীদ দিয়ে আপ্যায়িত করেছেন। মক্কার লোকেরা তখন ছিল ক্ষুধার্ত, নিরন্ন ও শীর্ণকায়।

سعوا اليه الراحلتين كليهما – عند الشتاء ورحلة الأصياف – তারা শীত ও গ্ৰীষ্ম উভয় ঋতুতে তাঁর নিকট আসার জন্যেই কাফেলা পরিচালনা করত।

كانت قريش بيضة فتفقت – فالمج خالصة لعبد منافকুরায়শ বংশ ছিল একটি শিরস্ত্রাণের ন্যায়। এরপর সেটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল। সেটির শীর্ষ অংশ নির্ধারিত থাকলে একান্ত ভাবে আবদ মানাফ গোত্রের জন্যে।

الرانشین ولیس بغرف رایش–و القانلین هلم للاضلیاف–আবাদ মানাফ গোত্রের লোকেরা সকলেই সৎকর্মশীল। তাদের ন্যায় সৎকর্মশীল লোক সচরাচর দেখা যায় না। তারা মেহমানদের উদ্দেশ্যে বলে থাকে— আসুন আসুন আতিথ্য গ্ৰহণ

করুন

والضاربين الكبش يبرق بيضة – والمانعين البيض بالأسياف – চমৎকার ও চিত্তাকর্ষক রংয়ের ভেড়াকে তারা বিনা-দ্বিধায় মেহমানদের জন্যে যবাহ করে দেয়। তরবারি দ্বারা শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করে তারা নিজেদের শিরস্ত্রাণ ও মুকুট রক্ষা করে ॥১

للّه ذرك لو نزلت بدارهم – منغوك من أزل ومن أقرافي– খোশ আমদেদ, আপনি যদি তাদের মহল্লায় যান। তবে, তারা সকল প্রকারের অপমান-লাঞ্ছনা ও মিথ্যা অপবাদ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।২

১. সাদা লোমের মধ্যে কালো চুল।। ২ J, সংকট, বিপদ, উপবাস

হযরত আবু বকর (রা) বললেন, না, তিনি আমাদের লোক নন। যুবক বলল, আপনাদের মধ্যে কি আবদুল মুত্তালিব আছেন, যিনি শায়বাতুল হামদ বা সকল সুনামের যোগ্য পাত্ৰ, যিনি মন্ধী কাফেলার নেতা, যিনি শূন্যে বিচরণকারী পাখী এবং মাঠে-প্ৰান্তরে বিচরণকারী জীব জন্তুকে খাদ্য দানকারী, যার মুখমণ্ডল অন্ধকার রাতে চকচক করে মোতি বিকিরণ করতো। হযরত আবু বকর (রা) বললেন, না তিনি আমাদের গোত্ৰভুক্ত নন। যুবকটি বলল, তাহলে কি আপনারা আরাফাতের অধিবাসী? হযরত আবু বকর (রা) বললেন, না, তা নয়। সে বলল, আপনি কি বায়তুল্লাহ শরীফের তত্ত্বাবধানকারীদের গোত্ৰ? তিনি বললেন না, তা নয়। সে বলল। তবে আপনি কি নাদওয়া ও পরামর্শদাতা সদস্যদের দলভুক্ত? তিনি বললেন, না, তাও নয়। সে বলল, তবে কি হাজীদের পানি পরিবেশনকারীদের গোত্ৰভুক্ত? তিনি বললেন, না, তাও নয়। সে বলল, তবে কি হাজীদের সেবাকারীদের দলভুক্ত? তিনি বললেন, না, তাও নয়। সে বলল, তবে কি আপনি হাজীদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব পালনকারীদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, না। তা নয়। এবার হযরত আবু বকর (রা) যুবকের হাত থেকে তাঁর উটের লাগাম টেনে নিলেন। যুবকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল :

صادف در السیبل در یدافعهٔ–یهیضهٔ حینا و حینا یرفغه“বন্যায় ভেসে আসা ঝিনুক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অপর ঝিনুকের সাথে। প্রবাহ কখনো এটিকে উপরে উঠায় কখনো বা নীচে নামায়।” তারপর সে বলল, আল্লাহর কসম, হে কুরায়শ

ংশীয় লোক! আপনি যদি একটু অপেক্ষা করেন, তবে আমি আপনাকে সম্যক বলে দিতে পারবো যে, আপনি কুরায়শের মূল বংশের অন্তর্ভুক্ত—শাখা গোত্রের নয়।

বর্ণনাকারী বলেন, এবার রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের দিকে তাকালেন মুচকি হেসে। হযরত আলী (রা) বলেন, আমি বললাম, হে আবু বকর! বেদুঈন আরব যুবকের সম্মুখে আপনি এক মস্ত ঝামেলায় পড়েছিলেন বটে। তিনি বললেন, হে হাসানের পিতা! তা-ই, বিপদের উপর বড় বিপদ এবং সংকটের উপর মহাসংকট থাকে। কথায় বিপদ টেনে আনে।

বর্ণনাকারী হযরত আলী (রা) বলেন, তারপর আমরা একটি মজলিসে উপস্থিত হলাম। সেটি একটি গুরু-গম্ভীর ও শান্ত মজলিস। সেখানে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতৃস্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। হযরত আবু বকর (রা) এগিয়ে গিয়ে ওদেরকে সালাম দিলেন। বস্তৃত সকল ভাল কাজেই হযরত আবু বকর অগ্রগামী। হযরত আবু বকর (রা) বললেন, আপনারা কোন সম্প্রদায়ের লোক? ওরা বলল, বনু শায়বান ইবন ছালাবা গোত্রের লোক। আবু বকর (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোন, ওদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ওদের চেয়ে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কেউ নেই। এক বর্ণনায় আছে যে, ওদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ওরা ছাড়া এমন কেউ নেই, যাদের ওযর গ্রহণ করা যায়। এরাই তাদের সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়। ওই মসলিসে মাফিরূক ইবন আমর, হানী ইবন কুবায়সা, মুছান্না ইবন হারিছা, নুমান ইবন শুরায়ক প্রমুখ নেতা ছিলেন। মাফরূক ইবন আমরের সাথে হযরত আবু বকর (রা)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বাগিতা ও ভাষা সৌকর্যে মাফরূক ছিল তাদের মধ্যে অগ্রণী। তার চুলের দুটো বেণী ঝুলে থাকত বুক পর্যন্ত। সে বসেছিল হযরত

আবু বকর (রা)-এর নিকটে। আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের সংখ্যা কত? সে বলল, আমাদের লোকসংখ্যা এক হাজারের উপরে। এ সংখ্যাকে কম মনে করো না। আমাদের হাজার লোকের এই দল কখনো পরাজিত হয় না। আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের নিরাপত্তা পদ্ধতি কেমন? সে বলল, আমরা অভাব-অনটনে আছি। তবে আমাদের প্রত্যেকেই কঠোর পরিশ্রমী এবং নিজ নিজ নিরাপত্তা রক্ষায় সচেষ্ট। আবু বকর (রা) বললেন, তোমাদের মাঝে এবং তোমাদের শক্ৰদের মাঝে যুদ্ধ–বিগ্রহের ফলাফল কেমন? মাফরূক বলল, আমরা যখন ক্রদ্ধ হই, তখন আমরা প্ৰচণ্ডভাবে শক্রর মুকাবিলা করি। আমরা ছেলে মেয়েদের চাইতে বলিষ্ঠ অশ্বদলকে প্রাধান্য দেই। দুগ্ধবতী উস্ত্রীর চাইতে যুদ্ধান্ত্রকে সাহায্য তো আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। কখনো আমরা বিজয়ী হই, কখনো হই পরাজিত। আমার মনে হয় আপনি কুরায়শ গোত্রের লোক। হযরত আবু বকর (রা) বললেন, তোমরা শুনে থাকতে পাব যে, আল্লাহর রাসূল এসেছেন। এই যে, ইনি সেই রাসূল। মাফরূক বলল, আমরা অবশ্য শুনেছি যে, তিনি তা বলে থাকেন। এবার সে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দিকে তাকাল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বসে পড়লেন। আবু বকর (রা) নিজ কাপড় দ্বারা তাকে ছায়া দিতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, “আমি তোমাদেরকে আহবান করছি যাতে তোমরা সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক-লা শরীক। আর একথা সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল। তোমরা আমাকে। যেন আশ্রয় দাও এবং সাহায্য করা যাতে আল্লাহ আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তা

আল্লাহর রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সত্য বাদ দিয়ে মিথ্যার মধ্যে ডুবে আছে। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি প্রশংসাহ।।

মাফিরূক বলল, হে কুরায়শী ভাই! আপনি আর কোন বিষয়ে দাওয়াত দেন? উত্তরে–রাসূলুল্লাহ্ (সা) তিলাওয়াত করলেন :

قل تعلوا أنَّلُو ماحرم ربكم عليكم آلاً تُشنركوا به شيئا وبالوالدين احسانا

LS HSSS CS S E LC S LLS S SS SS SSL L H S SSSS C ولا تقتلوا أولادكم من الملاق বল, এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে যা নিষিদ্ধ করেছেন তোমাদেরকে তা পাঠ করে শুনাই। তা এইঃ তোমরা তার কোন শরীক নির্ধারণ করবে না। পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। দারিদ্র্যের আশংকায় তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে এবং তাদেরকে রিযিক দিয়ে থাকি। প্ৰকাশ্য হোক কিংবা গোপন হোক অশ্লীল আচরণের নিকটেও যাবে না, আল্লাহ যা হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন যাতে তোমরা অনুধাবন করা। ইয়াতীম বয়প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সুন্দুদ্দেশ্য ছাড়া তার সম্পত্তির নিকটবতী হবে না এবং পরিমাণ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত ভার

অর্পণ করি না। যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ন্যায্য কথা বলবে স্বজনের সম্পর্কে হলেও এবং আল্লাহ প্রদত্ত অংগীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন

তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর এবং এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ করবে এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না। করলে সেটি তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও” (৬ : ১৫১-১৫৩)।

মাফরূক বলল, হে কুরায়শী লোক! আপনি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি আহবান করেন? আল্লাহর কসম, এটি তো দুনিয়ায় বসবাসকারী কারো কথা নয়। তাদের কারো কথা হলে আমরা অবশ্যই তা জানতাম। এবার রাসূলুল্লাহ্ (সা) তিলাওয়াত করলেন : أن اللّه يأمر بالعذل والاخستان وايتاء ذى القربى وينهى عن الفحشاء

و المنکر و البغی یعظگم لافلگم نذگرون .

“আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎ কার্য ও সীমালংঘনে, তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষাগ্ৰহণ করা। (১৬ : ৯০)

মাফরূক বলল, হে কুরায়শী ভাই! আপনি তো বড় সুন্দর চরিত্র এবং মহৎ কাজের দিকে আহবান করেন। যারা আপনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আপনার বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তারা নিশ্চয়ই আপনার প্রতি অপবাদ দিয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যে, হানী ইবন কাবাসীকে সে এই আলোচনায় শামিল করতে চাচ্ছিল। বস্তুত সে বলল, ইনি হানী ইবন কাব্বীসােহ। আমাদের বয়োজ্যষ্ঠ ও ধর্মীয় প্রধান। হানী বলল, হে কুরায়শী ভাই! আমি আপনার বক্তব্য শুনেছি। আপনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন। তবে শুধু একটি মজলিসে বসেই আপনার পেশকৃত বিষয় যাচাই-বাছাই না করে আমরা যদি আপনার এবং আপনার ধর্মের অনুসরণ শুরু করি, তবে তা হবে আমাদের পদস্থািলন ও ত্রুটিপূর্ণ মতামত প্ৰদান। তা হবে আমাদের স্থূলবুদ্ধি ও অপরিণামদৰ্শিতার পরিচায়ক। চট-জলদি কাজ করলে ক্ৰটিই হয়। আমরা ছাড়া আমাদের নিজ এলাকায় অনেক লোক আছে। ওদের উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে আমরা চাই না। বরং এবারের মত আমরাও ফিরে যাই, আপনিও ফিরে যান। আপনিও অপেক্ষা করুন, আমরাও অপেক্ষা করি। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়। মনে হচ্ছিল যে, সে মুছান্না ইবন হারিছাকে আলোচনায় শরীক করতে চায়। সে বলল, ইনি মুছান্না আমাদের প্রবীণ ব্যক্তি ও সামরিক নেতা। মুছান্না বলল, হে কুরায়শী লোক। আপনার বক্তব্য আমি শুনেছি। তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। হানী ইবন কাব্বীসা আপনাকে যে উত্তর দিয়েছে আমার উত্তরও তাই। আপনার সাথে একটি বৈঠক করেই যদি আমরা আমাদের দীন-ধর্ম ত্যাগ করে আপনার অনুসরণ শুরু করি, তবে তা হবে। আমাদের নিবুদ্ধিতা। আমাদের অবস্থান দুটো জনপদের মধ্যখানে। একটি ইয়ামামা অপরটি সামাওয়া। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ওই দুটো কী? সে বলল, একটি উন্মুক্ত মরু প্ৰান্তর ও আরব ভূখণ্ড আর অপরটি পারস্য সাম্রাজ্য ও তথাকার জলাভূমি, আমরা এখন পারসিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছি। পারস্য সম্রাটের সাথে আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে যে, আমরা যেন নতুন কোন পক্ষের সাথে যোগ না দেই এবং নতুন মতবাদ প্রচারকারী কাউকে যেন আমরা আশ্রয় না দিই। আপনি যে মতামত প্রচার করছেন, তার অনুসরণকারীরা নিশ্চয়ই

রাজা-বাদশাহদের কোপানলে পড়বে। বস্তৃত আরব অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় কেউ এ কাজ করলে সে দোষের ক্ষমা পাবে এবং তার ওযর গ্রহণ করা হবে। পক্ষান্তরে পারসিক অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় যে আপনার ধর্মমতের অনুসরণ করবে। তার অপরাধ ক্ষমা করা হবে না এবং তার ওযর-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। আপনি যদি চান, তবে আরব অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় আমরা আপনাকে সাহায্য করব এবং আপনার নিরাপত্তা বিধান করব।

রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সত্য কথা বলে আপনারা মন্দ করেননি। বস্তৃত যে ব্যক্তিই আল্লাহর দীন প্রচারে নেমেছে, তার উপর চারিদিক থেকে নির্যাতন নেমে এসেছে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আচ্ছা আপনারা বলুন তো অল্পকিছু দিন পর আল্লাহ্ তা’আলা যদি ওদের ধন-সম্পদগুলো আপনাদের হাতে দিয়ে দেন এবং ওদের কন্যাদেরকে আপনাদের শয্যাসঙ্গিণী বানিয়ে দেন, তবে কি আপনারা মহান আল্লাহর তাসবীহ পাঠ ও পবিত্ৰতা বর্ণনা করবেন? নুমান ইবন শুরায়ক বলল, হে কুরায়শী লোক! তেমন পরিস্থিতি কী আর হবে? রাসূলুল্লাহ (সা) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন :

أنا أرسلناك مساهذا ومبشيرا ونذيرا وداعيا ألى اللّه باذنه وسراجا منيرا.

“হে নবী! আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে (৩৩ : 8७)।

“এরপর হযরত আবু বকর (রা)-এর হাত ধরে রাসূলুল্লাহ (সা) সেখান থেকে উঠে গেলেন। আলী (রা) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাদের প্রতি তাকিয়ে বললেন, হে আলী! জাহিলী যুগে আরবরা কোন মহান চরিত্রের মাধ্যমে পরস্পর দ্বন্দু-সংঘাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করত? এবার আমরা আওস ও খাযরাজ গোত্রের মজলিসে উপস্থিত হলাম। তারা কালবিলম্ব না করে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করল। আলী (রা) বলেন, ওরা ছিলেন সত্যবাদী ও ধৈর্যশীল। ওই সকল লোকদের বংশ-পরিচয় সম্পর্কে হযরত আবু বকর (রা) অবগত ছিলেন বলে রাসূলুল্লাহ (সা:) খুশী হলেন। এর কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ (সা) তার সাহাবীগণের নিকট ফিরে গেলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা বেশী বেশী আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা কর। কারণ, আজ রাবী আর বংশধরগণ পারসিকদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছে। তারা ওদের রাজা বাদশাহদেরকে অবিলম্বে হত্যা করবে, তাদের সৈন্যদের রক্তপাত বৈধ জ্ঞান করবে এবং আমার বদৌলতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ ঘটনা ঘটেছিল যুকারের পার্শ্ববতী কারাকির নামক স্থানে। এ সম্পর্কে কবি আশা বলেন, :

বনু যুহল ইবন শায়বান গোত্র যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মুখোমুখি হয়ে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে, তার জন্যে আমার উল্পী ও উষ্ট্রীর আরোহী তাদের প্রতি উৎসর্গ হোক।

هم ضر بوا با لحن و حنو قراقری–مقدمة الهامروز حتی تولت

শত্রুপক্ষকে তারা আক্রমণ করেছে কারাকির অঞ্চলে। শত্রুদের নেতৃত্বে ছিল হামরূয। শেষ পর্যন্ত তারা পালিয়ে গিয়েছে ॥১

فللّه عينا من رأى من فوارس – كذهل بن شيبان بها حين ولتওদের পালিয়ে যাওয়ার সময় যুহল ইবন শায়বানের মত অশ্বারোহীকে যারা দেখেছে তাদের দু’ চোখ সার্থক বটে।

فثاروا وتُرنا والمودّة بيننا – وكانت عليناء غمرة فتجلتওরাও আক্রমণ করেছে আমরাও আক্রমণ করেছি। আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়েছে। এক সময় আমাদের প্রতি শক্রিতা ও বিদ্বেষ ছিল। এখন সে অবস্থা দূর হয়েছে।

এটি একটি অত্যন্ত বিরল বর্ণনা। এটি আমরা এজন্যে উল্লেখ করলাম যে, এতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওয়াতের প্রমাণ, তার অনুপম চরিত্র অনিন্দাসুন্দর আদর্শ এবং আরবদের ভাষা সৌকর্যের অনেক তথ্য রয়েছে।

অন্য সনদেও এটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে যে, অ্যাওস ও খাযরাজ গোত্র যখন পারসিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হল এবং ফুরাত নদীর নিকটবতী কারাকির অঞ্চলে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল, তখন তারা মুহাম্মদ (সা) নামটিকে তাদের পতাকা বানােল। ফলে তারা পারসিকদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করল। পরবতীকালে তারা ইসলাম গ্রহণ করেন।।

ওয়াকিদী বলেন, আবদুল্লাহ ইবন ওয়াবিস আবাসীর তাঁর পিতার বরা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) মিনায় আমাদের তাঁবুতে এসেছিলেন। আমাদের তাঁবু ছিল মাসজিদের খায়ফ-এর পাশে জামরাতুল উলা-এর বিপরীতে। রাসূলুল্লাহ (সা) এলেন তার সওয়ারীতে আরোহণ করে। পেছনে বসিয়েছিলেন যায়দ ইবন হারিছা! (রা)-কে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) আমাদেরকে দাওয়াত দিলেন এবং আল্লাহর প্রতি আসার জন্যে আহবান জানালেন। আল্লাহর কসম, আমরা তার ডাকে সাড়া দেইনি। হায়, আমাদের কল্যাণ আমাদের ভাগ্যে নেই। তার কথা এবং তার আহবান আমরা হজ্জের মওসুমে শুনেছি। তিনি আমাদের নিকট এসে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। আমরা তার আহবানে সাড়া দেইনি। মায়সারা ইবন মাসরুদ্ধক আবাসী আমাদের সাথে ছিলেন। মায়সারা বললেন, আমরা যদি এই ব্যক্তিকে সত্য বলে মেনে নিই এবং আমাদের সাথে করে স্বদেশে নিয়ে যাই, তবে তা হবে আমাদের বিচক্ষণতার পরিচায়ক। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তার দীন ছড়িয়ে পড়বে এবং অবশ্যই সর্বত্র পৌছে যাবে। লোকজন বলল, থাক বাপু, র্যাকে আয়ত্তে আনার সামর্থ আমাদের নেই, তাকে আপনি আমাদের সাথে জড়াবেন না। রাসূলুল্লাহ্ (সা) মায়সারার প্রতি আকৃষ্ট হলেন এবং তার সাথে কথা বললেন। মায়সারা বলল, আপনার কথা কতই না। সুন্দর। কতই না দীপ্তিময়। কিন্তু আপনার বিষয়ে আমার স্বজাতি আমার বিবোধিতা করছে। বস্তৃত স্বজাতির লোকজনকে নিয়েই ব্যক্তির অবস্থান। সম্প্রদায়ের লোকজন সহযোগিতা না করলে ব্যক্তি হয়ে পড়ে সমাজচ্যুত— একঘরে।

১. এই পংক্তি এবং পরবতী পংক্তি কবি আশার কাব্য গ্রন্থে পাওয়া যায়নি।

এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) সেখান থেকে চলে গেলেন। লোকজন নিজ নিজ পরিবারের নিকট ফিরে গেল। মায়সারা ওদেরকে বললেন, চল, সকলে ফাদাক নামক স্থানে যাই। সেখানে কতক ইয়াহুদী আছে। এই লোক সম্পর্কে আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করি। তারা ইয়াহুদীদের নিকট গেল। ইয়াহুদীরা তাদের সম্মুখে একটি লিপি পেশ করে তা পাঠ করতে লাগল। তাতে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উল্লেখ ছিল যে, তিনি উক্ষ্মী ও আরব বংশীয় নবী। তিনি গাধার পৃষ্ঠে আরোহণ করবেন। সামান্য খাবারে সন্তুষ্ট থাকবেন। খুব লম্বাও নন, একেবারে বেঁটেও নন। তার চুল খুব কোকড়ানােও নয়, একেবারে সোঝাও নয়। তাঁর দু’চোখে সূর্যোদয়কালীন লালিমা। ইয়াহদীরা এও বলে দিল যে, তোমাদেরকে যিনি আহবান জানাচ্ছেন তিনি যদি এই লিপিতে বর্ণিত ব্যক্তি হন, তবে তোমরা তার ডাকে সাড়া দাও এবং তার দীন গ্রহণ কর। আমরা তাকে হিংসা করি। আমরা তাঁর অনুসরণ করব না। তার কারণে আমরা বড় বিপদগ্ৰস্ত। আরবের লোক দু’ভাগে বিভক্ত হবে। একদল তার অনুসরণ করবে। অপর দল তার বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তোমরা অনুসরণকারীদের দলে থেকে।

এবার মায়সারা বললেন, হে আমার সম্প্রদায়। জেনে রেখো, এ বিষয়টি এখন সুস্পষ্ট। তার লোকজন বলল, তবে আগামী হজ্জ মওসুমে আমরা আবার মক্কায় যাব এবং তার সাথে সাক্ষাত করব। তারা তাদের দেশে ফিরে গেল। মায়সারা তাদের এই আচরণ সমর্থন করলেন না। বস্তৃত তাদের কেউই এ যাত্রায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অনুসরণ করেনি বা ইসলামও গ্রহণ করেনি।

এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) হিজরত করে মদীনায় এলেন। পরে বিদায় হজ্জ সম্পাদন করলেন। তারপর একদিন তার সাথে মায়সারা-এর সাক্ষাত হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তখন তাকে চিনতে পারেন। মায়সারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, যেদিন আপনি আমাদের নিকট এসেছিলেন সেদিন থেকে আমি আপনার অনুসরণ করার জন্যে উদগ্ৰীব হয়ে আছি। কিন্তু যা হবার তা হয়ে গেছে। আমার ইসলাম গ্রহণে বিলম্ব হয়ে গেল। আমার সাথে তখন যারা ছিল তাদের শেষ বাসস্থান কোথায় হবে ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মানুসারী হয়ে যার মৃত্যু হবে সে জাহান্নামে যাবে। মায়সারা বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। এরপর মায়সারা ইসলাম গ্ৰহণ করলেন এবং সুন্দর ভাবে ইসলামী জীবন যাপন করলেন। হযরত আবু বকর (রা) তাকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখতেন।

ওয়াকিদী পৃথক পৃথক ভাবে সকল গোত্রের আলোচনা করেছেন। বনু আমির গোত্র,

হাওয়াযিন, বনু ছালাবা ইবন ইকবা কিনদাহ, কালব, বনু হারিছ ইবন কাআব, বনু আযরা, বনু কায়স ইবন হাতীম ও অন্যান্য গোত্রের নিকট রাসূলুল্লাহ (সা) উপস্থিত হয়েছিলেন। ওয়াকিদী তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। তা থেকে কতক বিশুদ্ধ বর্ণনা আমরা উদধূত করেছি। সকল প্রশংসা আল্লাহর।

ইমাম আহমদ বলেন, আসওয়াদ… জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজ্জের মওসুমে আরাফার ময়দানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) দীনের দাওয়াত দিয়ে বলতেন,

এমন কেউ আছ কি, যে আমাকে তার সম্প্রদায়ের নিকট নিয়ে যাবে? কুরায়শরা তো আমাকে আমার প্রতিপালকের বাণী প্রচারে বাধা দিচ্ছে। একদিন হামাদান অঞ্চলের এক লোক তার নিকট এল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে বললেন, “আপনি কোন অঞ্চলের লোক? সে বলল, আমি হামাদান অঞ্চলের লোক। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আপনার সম্প্রদায়ের লোকজন কি আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবে? সে বলল, জী হাঁ্যা পারবে। পরীক্ষণে লোকটির আশংকা হলো, না জানি তার সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তা-চুক্তি ভঙ্গ করে। তাই সে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট ফিরে এসে বলল, এ যাত্ৰা আমি আমার সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট গিয়ে আপনার কথা বলি। তারপর আগামী বছর আমি আপনার নিকট আসব। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তবে তাই হোক। লোকটি চলে গেল। এদিকে রজব মাসে আনসারদের প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হল।

সুনানে আরবাআ তথা প্ৰসিদ্ধ চারটি সুনান হাদীছ গ্রন্থের সংকলকগণ ইসরাঈলের বরাতে এ হাদীছটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী বলেছেন, এটির সনদ হাসান ও সহীহ।

আনসারদের মক্কায় আগমন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাতে বায়আত গ্ৰহণ

এ ঘটনার বর্ণনাকারী হলেন সুওয়াইদ,১ ইবন সামিত ইবন আতিয়্যা ইবন হাওত ইবন হাবীব। ইবন আমর ইবন আওফ ইবন মালিক ইবন আওস। তার মাতার নাম লায়লা বিনত আমার নাজারিয়্যা। লায়লা ছিলেন আবদুল মুত্তালিবের মা সালমা বিনত আমরের বোন। এ হিসাবে সুওয়াইদ হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিবের খালাত ভাই।

মুহাম্মদ ইবন ইসহাক ইবন ইয়াসার বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এভাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন যে, হজ্জের মওসুমে লোকজন একত্রিত হলে তিনি তাদের নিকট যেতেন এবং তার নিকট আগত হিদায়াত ও রহমতের কথা তাদের নিকট পেশ করতেন। আরবের কোন নামী-দামী ও গুরুত্বপূর্ণ লোক মক্কায় এসেছে শুনলে তিনি তার নিকট উপস্থিত হতেন এবং

সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন যে, বনু আমর ইবন আওফ গোত্রের সুওয়াইদ ইবন সামিত হজ্জ কিংবা উমরা উপলক্ষে মক্কায় এসেছিলেন। আপন সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি সুওয়াইদ “আল কামিল” নামে পরিচিত ছিলেন। তার শক্তি-সামৰ্থ, বুদ্ধি, বিবেচনা এবং মর্যাদার নিরিখে তারা তাকে এ নামে ডাকত। তিনি বলেন :

آلار با من تداع و صدیقا و لوتری–مقالته بالغیب سماءالت مایفریসাবধান, এমন বহু লোক আছে তুমি যাকে সত্যবাদী বলে মনে কর। তার গোপন কথাবার্তা যদি তুমি জানতে, তবে তার মিথ্যাচার তোমাকে পীড়া দিত।

مقالته كالشهد ماكان شاهدا – وبالغيب ما ثور على ثغرة التحر – তার কথা শুনে মনে হয় সে যেন উপস্থিত, আসলে সে উপস্থিত নয়। আর তার অনুপস্থিতি কালে তার কথাবার্তা যেন বক্ষে ছুরিকাঘাত।

১. সুহায়লী বলেছেন— সুওয়াইদ ইবন সালত ইবন হাওত।

OG–

یاسر لت بادله و تحت آدیمم–تمیمهٔ غش، تبترین عقیب الظهار

প্রতারণার মাদুলী, যা তোমার পিঠকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিবে।

تبين لك العينان ماهو كاتم – من الغل والبغضاء بالتظر الشيزر – অন্তরে সে যে শক্রতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে তার হিংস্র দৃষ্টির মাধ্যমে তার দা চক্ষু তা প্ৰকাশ করে দেয়।

فرشانی بخیر طالبا قدیریتنی–و خیرالموالی من یریش و لایبریতুমি তো দীর্ঘদিন আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছ, এবার একটু আমার কল্যাণ সাধন কর। উত্তম বন্ধু তো সে-ই যে কল্যাণ সাধন করে— ক্ষত-বিক্ষত করে না।

বস্তৃত তার মক্কায় আগমনের সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার নিকট গেলেন এবং তাকে আল্লাহর–প্রতি ও ইসলামের প্রতি আহবান জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উদ্দেশ্যে সুওয়াইদ বললেন, আমার নিকট যা আছে আপনার নিকটও সম্ভবত তাই আছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার নিকট কী আছে? সে বলল, আমার নিকট লুকমানের লিপি অর্থাৎ লুকমানের প্রজ্ঞাময় বাণী আছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তা আমার নিকট পেশ কর। সুওয়াইদ তাই করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এ তো চমৎকার বাণী। তবে আমার নিকট যা আছে তা এর চাইতে উত্তম। আমার নিকট আছে কুরআন মজীদ। আল্লাহ তা’আলা সেটি আমার প্রতি নাযিল করেছেন। সেটি জ্যোতি ও পথ-প্রদর্শক। এ পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তার নিকট কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করলেন এবং তাকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানালেন। তখনই সুওয়াইদ বললেন, এটি তো সুমহান বাণী। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) চলে এলেন। সুওয়াইদ ফিরে গেলেন মদীনায় তার নিজ সম্প্রদায়ের নিকট। তার অল্প কিছু দিনের মধ্যে খাযরাজ গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। তার সম্প্রদায়ের লোকজন বলত যে, আমরা দেখেছি সুওয়াইদ মুসলমান অবস্থায় নিহত হয়েছেন। বুআছ। যুদ্ধের পূর্বে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। বায়হাকী (র) হাকিম……. ইবন ইসহাক সূত্রে এই বর্ণনাটি আরো সংক্ষিপ্ত আকারে উদধূত করেছেন।

ইয়াস ইবন মুআয-এর ইসলামগ্রহণ

ইবন ইসহাক বলেন, হুসাইন ইবন আবদুর রহমান…… মাহমুদ ইবন লাবীদ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক সময় আবুল হায়সার আনাস ইবন রাফি” মক্কায় আগমন করে। আবদুল আশাআল গোত্রের একদল যুবক ছিল তার সাথে। তাদের একজন ইয়াস ইবন মুআয। তারা এসেছিল খাযরাজ গোত্রের আক্রমণ থেকে নিজেদের সম্প্রদায়কে রক্ষার লক্ষ্যে কুরায়শদের সাথে মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করতে। তাদের আগমনের সংবাদ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট পৌছে। তিনি তাদের নিকট এসে বসেন এবং বলেন, তোমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছ তার চাইতে অধিক ভাল একটি ব্যবস্থা কি তোমরা গ্ৰহণ করবে? ওরা বলল, সেটা কী? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি আমি তাঁর প্রেরিত রাসূল।

আমি তাদেরকে আহবান জানাই তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তার সাথে কাউকে শরীক না। করে। আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের নিকট ইসলামের পরিচয় তুলে ধরেন এবং তাদের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করেন। তখন ইয়াস ইবন মুআয বললেন, তিনি তখন একজন নবীন যুবক) হে আমার সম্প্রদায়, আপনারা যে উদ্দেশ্যে এসেছেন তার চাইতে এটি অধিকতর উত্তম ও কল্যাণকর ৷ একথা শুনে দলনেতা আবুল হায়সার আনাস ইবন রাফি” এক মুঠো কাকরযুক্ত মাটি নিয়ে ইয়াস ইবন মুআয-এর মুখে নিক্ষেপ করে। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উদ্দেশ্যে সে বলে, আপনি চলে যান, আপনার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা অন্য কাজে এসেছি। ইয়াস চুপ হয়ে গেল। রাসূল (সা) উঠে এলেন। ওরা মদীনায় ফিরে গেল। ইতোমধ্যে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে বুআছ। যুদ্ধ সংঘটিত হল। অল্প কিছু দিনের মধ্যে ইয়াস-এর মৃত্যু হয়। মাহমুদ ইবন লাবীদ বলেন, ইয়াসের সম্প্রদায়ের লোকজন আমাকে বলেছে যে, ওরা তাকে দেখেছে যে, সে সব সময় সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবর ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করতো। আমৃত্যু সে নিয়মিত এগুলো পাঠ করেছে। সে যে মুসলমান রূপে মৃত্যুবরণ করেছে তাতে কারো সন্দেহ নেই। ওই মজলিসে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মুখে সে যা শুনেছে তাতেই সে ইসলামের মর্ম উপলব্ধি করে এবং ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

বুআছ। যুদ্ধের ব্যাখ্যায় আমি বলি যে, মদীনার একটি স্থানের নাম বুআছ। সেখানে একটি প্ৰচণ্ড ও ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে। উভয় গোত্রের বহু সন্ত্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ওই যুদ্ধে নিহত হয়। মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন নেতা জীবিত ছিল। ইমাম বুখারী (র) তাঁর সহীহ গ্রন্থে উবায়দ ইবন ইসমাঈল… আইশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, বুআছ। যুদ্ধের দিনটি একটি উল্লেখযোগ্য দিন ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মিশনের সাফল্যের পটভূমিরূপে আল্লাহ তা’আল ওই দিনটি দান করেছেন। এই যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আগমন করেন। যুদ্ধের ফলে তখন মদীনার নেতারা ১ পরষ্পর বিচ্ছিন্ন ও সম্পর্কহীন ছিল। ইতোমধ্যে ওদের বড় বড় নেতারা নিহত হয়েছিল।

পরিচ্ছেদ আনসারগণের ইসলামগ্রহণের সূচনা

ইবন ইসহাক বলেন, যখন আল্লাহ তা’আলা তার দীনকে বিজয়ী করার, নবীকে সম্মানিত করার এবং নবীকে দেয়া তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করার ইচ্ছা করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) হজ্জের মওসুমে কতক আনসারী লোকের সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। তখনও তিনি অন্যান্য বারের ন্যায় নিজেকে আরব গোত্রগুলোর নিকট পেশ করলেন। এক সময় তিনি আকাবায় এসে উপস্থিত হলেন। সেখানে খাযরাজ গোত্রের কিছু লোকের সাথে তার সাক্ষাত হয়। আল্লাহ তা’আলা ওই লোকগুলোর কল্যাণ চেয়েছিলেন। নিজ সম্প্রদায়ের বয়ােবৃদ্ধ লোকদের সূত্রে আসিম ইবন উমর ইবন কাতাদ আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সাথে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাক্ষাত হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, আপনারা কোন গোত্রের লোক? তারা বললেন, আমরা খাযরাজ গোত্রের লোক। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ইয়াহুদীদের মিত্র? তারা

বললেন হ্যা, তা বটে। তিনি বললেন, তবে একটু বসবেন কি? আমি কিছু কথা বলতে চাই। তাঁরা বললেন, হ্যা, বসতে পারি। তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট বসলেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিলেন এবং ইসলামগ্রহণের অনুরোধ জানালেন। তিনি তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের ইসলামগ্রহণের পরিবেশ আল্লাহ তা’আলা এভাবে তৈরী করলেন যে, তাদের দেশে এক সাথে ইয়াহুদীরা বসবাস করত। ইয়াহদীরা আসমানী কিতাবধারী এবং জ্ঞান-সমৃদ্ধ লোক ছিল। আর খাযরাজ গোত্রের লোকেরা ছিল মুশরিক ও মূর্তিপূজারী। ইয়াহুদীদের সাথে প্রায়ই মুশরিকদের যুদ্ধ-বিগ্ৰহ সংঘটিত হত। দ্বন্দু-সংঘাতের সময় ইয়াহদীরা এ বলে ওদেরকে ভয় দেখাত যে, অবিলম্বে একজন নবী প্রেরিত হবেন। আমরা তার অনুসরণ করব এবং তার সাথী হয়ে তোমাদেরকে হত্যা ও ধ্বংস করব। যেমন ধ্বংস হয়েছিল ‘আদি ও ছামূদ সম্প্রদায়। এ যাত্রায় রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন খাযরাজী লোকদের সাথে আলাপ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান জানালেন, তখন তারা নিজেরা বলাবলি করলো, হে লোক সকল, তোমরা বুঝতেই পারছি যে, ইনি সেই নবী— ইয়াহদীরা যার কথা বলে তোমাদেরকে ভয় দেখাত। শুনে নাও, ওরা যেন তোমাদের আগে এই নবীর ঘনিষ্ঠ হতে না পারে। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আহবানে সাড়া দিলেন, তার প্রস্তাব গ্রহণ করলেন, তাকে সত্যবাদী রূপে মেনে নিলেন এবং ইসলামে দীক্ষিত হলেন। তারা বললেন, আমরা তো আমাদের কতক লোককে দেশে রেখে এসেছি। আমাদের লোকজনের মধ্যে পরস্পর যেরূপ শক্ৰতা রয়েছে। সচরাচর সেরূপ শক্ৰতা অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যায় না। আমরা আশা করছি যে, আপনার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা আমাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে দিবেন। আমরা অবিলম্বে তাদের নিকট ফিরে যাব এবং আমরা যে দীন গ্ৰহণ করলাম। ওই দীন গ্রহণের জন্যে আমরা তাদেরকে আহবান জানাবো। আল্লাহ তা’আলা ওদেরকেও যদি আপনার সাথে জোটবদ্ধ করে দেন, তবে আপনার চাইতে শক্তিশালী অন্য কেউ থাকবে না। বস্তৃত ঈমান আনয়ন করে এবং সত্য লাভ করে তারা নিজ দেশে ফিরে গেলেন।

ইবন ইসহাক বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, সে অনুযায়ী ওই দলে ছিলেন ছয় জন লোক। তাঁরা সকলে খাযরাজ গোত্রের লোক। তারা হলেন(১) আবু উমামা আসআদি ইবন

নুআয়ম বলেন, কারো কারো মতে আবু উমামা হলেন খাযরাজ গোত্রের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী আনসারী ব্যক্তি। আর আওস গোত্রের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি হচ্ছেন আবুল হায়ছম ইবন তায়হান ॥১ মতান্তরে আওস গোত্রের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হলেন রাফি’ ইবন মালিক ও মুআয ইবন আফরা (রা)। আল্লাহই ভাল জানেন (২) আওস ইবন হারিছ ইবন রিফাআ ইবন সাওয়াদ ইবন মালিক ইবন গানাম ইবন মালিক ইবন নাজ্জার। ইনিও আফরার পুত্র। দু’জনই নাজার গোত্রভুক্ত। (৩) রাফি’ ইবন মালিক ইবন আজলান ইবন আমর ইবন যুরায়ক যুরাকী। (৪) কুতবা ইবন আমির ইবন হাদীদ ইবন আমর ইবন গানাম ইবন সাওয়াদ ইবন গানাম ইবন

১. মূল আরবী গ্রন্থে এখানে তাহয়ান মুদ্রিত রয়েছে। ২. মুল কিতাবে রয়েছে সাওয়াহ ইবন যায়দ। সেটি ভুল। সীরাতে ইবন হিশামে আছে সারিদা ইবন ইয়াখীদ।

জাশাম ইবন খাযরাজ সুলামী সাওয়াদী। (৫) উকবা ইবন আমির ইবন নাবী ইবন যায়দ ইবন হারাম ইবন কাআব ইবন সালামা সুলামী আল হারামী। (৬) জাবির ইবন আবদুল্লাহ ইবন রিঅ্যাব ইবন নুমান ইবন সিনান ইবন উবায়দ ইবন আব্দী ইবন গানাম ইবন কাআব ইবন সালামা সুলামী উবায়দী। তাদের সকলের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন। ইমাম শা’বী ও যুহরী প্রমুখ এরূপ বলেছেন যে, ওই রাতে ইসলাম গ্রহণকারী ছয়জনই খাযরাজ গোত্রের লোক ছিলেন।

মূসা ইবন উকবা যুহরী ও উরওয়া ইবন যুবােয়র সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে প্রথম সাক্ষাতের সময় তারা ছিলেন ৮জন। (১) মুআয ইবন আফরা (২) আসআদ ইবন যুরোরা (৩) রাফি’ ইবন মালিক (৪) যাকওয়ান ইবন আবদ কায়স (৫) উবাদা ইবন সামিত (৬) আবু আবদুর রহমান ইয়ামীদ ইবন ছালাবা। (৭) আবু হায়ছাম ইবন তায়হান। (৮) উওয়ায়ম ইবন সাইদা (রা)। তারা ওই মজলিসে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং পরের বছর পুনরায় আগমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেলেন এবং ওদেরকে ইসলামের দিকে আহবান জানালেন। মুআয ইবন আফরা ও রাফি’ ইবন মালিককে তারা এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট পাঠালেন যে, আমাদের নিকট একজন শিক্ষক প্রেরণ করুন— যিনি আমাদেরকে দীন শিক্ষা দিবেন। রাসূলুল্লাহ (সা) মুসআব ইবন উমায়ার (রা)-কে পাঠালেন। তিনি আসআদি ইবন যুরোরা (রা)-এর বাড়িতে গিয়ে উঠলেন। অবশিষ্ট ঘটনা তাই, যা মূসা ইবন উকবা সূত্রে ইবন ইসহাক অবিলম্বে বর্ণনা করবেন। আল্লাহই

ইবন ইসহাক বলেন, তারা মদীনায় নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এলেন। তাদের নিকট রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কথা আলোচনা করলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। ফলে মদীনায় ব্যাপক ভাবে ইসলাম প্রচারিত হল। কোন বাড়ি-ই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আলোচনা থেকে খালি ছিল না। পরবতী বছর হজ্জের মওসুমে ১২ জন আনসারী লোক রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হন। তারা হলেন (১) পূর্বোল্লিখিত আবু উমামা আসআদি ইবন যুরোরাহ, (২) পূর্বোক্ত আওফ ইবন হারিছ, (৩) তাঁর ভাই মুআয, তারা দু’জনে আফরার পুত্র, (৪) পূর্বোক্ত রাফি’ ইবন মালিক, (৫) যাকওয়ান ইবন আবদুল কায়স ইবন খালদা ইবন মাখলাদ ইবন আমির ইবন যুরায়ক যুরাকী। ইবন হিশাম বলেন, ইনি একই সাথে আনসারী এবং মুহাজির, (৬) উবাদা ইবন সামিত ইবন কায়সা ইবন আসরাম ইবন ফিহর ইবন ছ’লাবা ইবন গানাম ইবন আওফ ইবন আমর ইবন আওফ ইবন খায়বাজ, (৭) তাদের মিত্র আবু আবদুর রহমান ইয়ায়ীদ ইবন ছ’লাবা ইবন খাযামা ইবন আসরাম আল বালাভী, (৮) আব্বাস ইবন উবাদ ইবন নাযিলা ইবন মালিক ইবন আজলান ইবন ইয়ামীদ ইবন গানাম ইবন সালিম ইবন আওফ ইবন আমর ইবন আওফ ইবন খাযরাজ আজলানী। (৯) উকবা ইবন আমির ইবন নাবী পূর্বোল্লিখিত। (১০) কুতবা ইবন আমির ইবন হাদীদা পূর্বোল্লিখিত। এই দশজন ছিলেন খাযরাজ গোত্রের। আওস গোত্রের ছিলেন দু’জন। তারা হলেন (১) উওয়াইম ইবন সাইদা এবং

১. মূল কিতাবে রয়েছে সাওয়াহ ইবন যায়ীদ। সেটি ভুল। সীরাতে ইবন হিশামে আছে সারিদা ইবন ইয়াযীদ }

(২) আবুল হায়ছম মালিক ইবন তায়হান। ইবন হিশাম বলেন, তায়হান এবং তায়্যিহান দু’ভাবেই পাঠ করা যায়। যেমন মােয়তুন ও মায়্যিতুন।

আতীক ইবন আমর ইবন আবদুল আ’লাম ইবন আমির ইবন যাউন ইবন জাশাম ইবন হারিছ ইবন খাযরাজ ইবন আমর ইবন মালিক ইবন আওস। তিনি বলেন, কারো মতে তিনি ইরাশী আবার কারো মতে তিনি বালাভী। ইবন ইসহাক এবং ইবন হিশাম, কেউই ওই ব্যক্তির বংশ তালিকা উল্লেখ করেননি। সুহায়লী বলেন, হায়ছম শব্দের অর্থ ছোট্ট ঈগলছােনা এবং এক

প্রকারের ঘাস।

মোদ্দাকথা, এই বারজন লোক ওই বছর হজের মওসুমে মক্কায় উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত করার জন্যে সিদ্ধান্ত নেন। অনন্তর আকাবা নামক স্থানে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং তার হাতে বায়আতি করেন। এই বায়আত ছিল মহিলাদের বায়আত গ্ৰহণ সম্পর্কে নাযিল হওয়া আয়াতের নিয়মানুসারে। এই বায়আত “আকাবার প্রথম শপথ” নামে পরিচিত।

আবু নুআয়ম বলেন, এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (সা) সূরা ইবরাহীম-এর এ আয়াতটি তাদের সম্মুখে পাঠ করলেন :

“যখন ইবরাহীম বলল, হে আমার প্রতিপালক! এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিদেরকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন। সূরা ইবরাহীম : ৩৫ ৷৷

ইবন ইসহাক বলেন, ইয়ায়ীদ ইবন আবু হাবীব……. উবাদা ইবন সামিত (রা) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আকাবায়ে উলা বা আকাবার প্রথম শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা ছিলাম বারজন। মহিলাদের অঙ্গীকার গ্রহণের জন্যে আল্লাহ তা’আলা যে বিষয়গুলো নির্ধারিত করে দিয়েছেন আমরা সেই বিষয়গুলোর অঙ্গীকার করেছি— বায়তমাত করেছি। এটি ছিল যুদ্ধ ও জিহাদ ফরয হওয়ার পূর্বের ঘটনা। আমরা বায়আতি করেছি যে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করব না, চুরি করব না, যেনা করব না, সন্তান হত্যা করব না, অপবাদ রটনা করব না এবং সৎকর্মে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর অবাধ্য হব না। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, তোমরা যদি অঙ্গীকার পালন কর, তবে জান্নাত পাবে। আর যদি এর কোনটিতে সত্য গোপন কর, তবে তোমাদের ফায়সালা আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে শাস্তি দিবেন, চাইলে ক্ষমা করবেন। ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) এই হাদীছ এভাবে বর্ণনা করেছেন— লায়ছ ইবন সাআদ সূত্রে ইয়াখীদ ইবন আবু হাবীব থেকে।

প্রথম শপথের রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর হাতে বায়আত করেছি যে, আমরা আল্লাহর

সাথে কাউকে শরীক করবো না, চুরি করবো না, যেন করবো না, সন্তান হত্যা করবো না, অপবাদ রটাবো না এবং সৎকর্মে তাঁর অবাধ্য হবো না। তিনি বলেছেন, তোমরা যদি এগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন কর, তবে তোমাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত। আর এর কোনটি অমান্য করলে যদি দুনিয়াতে তার শাস্তি ভোগ করে থােক, তবে তা হবে তার কাফফারা স্বরূপ। আর যদি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তা গোপন রয়ে যায়, তবে তার ফায়সালা আল্লাহর হাতে, তিনি চাইলে শাস্তি দেবেন। চাইলে ক্ষমা করবেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে এ হাদীছ যুহরী থেকে এরূপ বর্ণিত হয়েছে।

হাদীছে–“….।| 1,,,,, (মহিলাদের বায়আত প্রসঙ্গে) দ্বারা এ কথা বুঝানাে হয়েছে যে, আকাবার শপথের পরে হুদায়বিয়ার বছরে মহিলাদের বায়আতি নেয়ার যে বিধান আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি নাযিল করেছেন আকাবার শপথ সে অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বস্তৃত আকাবার শপথের নিয়ম ও বিষয় অনুযায়ী পরে মহিলাদের বায় আতের নিয়ম বিষয়ক বিধান নাযিল হয়েছে। পূর্বে অনুষ্ঠিত বায়আতের বিষয় অনুযায়ী পরে কুরআনের আয়াত নাযিল হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। কারণ, একাধিকবার হযরত উমর (রা)-এর আগ্রহের সপক্ষে কুরআন নাযিল হয়েছে। হযরত উমর (রা)-এর জীবনী গ্ৰন্থ এবং কুরআনের তাফসীর গ্রন্থে আমরা তা আলোচনা করেছি। বস্তৃত আকাবার আলোচ্য বায়আত ওহী গাইর মাতলু (অপঠিত ওহী)-এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইবন ইসহাক বলেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত শেষে লোকজন যখন মদীনায় ফিরে যায়, তখন তিনি তাদের সাথে মুসআব ইবন উমায়ার ইবন হাশিম ইবন আবদ মানাফ ইবন আবদুন্দদার ইবন কুসাই-কে পাঠান। ওদেরকে কুরআন পড়ানো, ইসলাম শিক্ষা দেয়া এবং দীনের জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার জন্যে তিনি তাঁকে নির্দেশ দেন। বায়হাকী (র) ইবন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন যে, আসিম ইবন উমর ইবন কাতাদা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মদীনাবাসিগণ একজন প্রশিক্ষক পাঠানাের জন্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট চিঠি দেয়ার পর তিনি মুসআব ইবন উমােয়র (রা)-কে পাঠান। মূসা ইবন উকবাও সেরূপ বর্ণনা করেছেন, যেমনটি ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। অবশ্য তিনি দ্বিতীয় বার প্রেরণকে প্রথম বার প্রেরণ বলে উল্লেখ করেছেন। বায়হাকী বলেন, ইবন ইসহাকের সনদ পূর্ণাঙ্গ। ইবন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর (রা) বলতেন, আকাবার প্রথম শপথ কি, তা আমি জানি না। এরপর ইবন ইসহাক বলেন, হ্যা, আমি শপথ করে বলতে পারি, আকাবার শপথ একাধিকবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সকল বর্ণনাকারী বলেন, এরপর মুসআব ইবন উমােয়র গিয়ে উঠেন। আসআদ ইবন যুরোরাহ-এর নিকট। মদীনায় তিনি “মুকরী” (প্ৰশিক্ষক) নামে পরিচিত ছিলেন। ইবন ইসহাক বলেন, “আসিম ইবন উমর ইবন কাতাদা আমাকে জানিয়েছেন যে, মুসআব ইবন উমায়ার নামাযে তাদের ইমামতি করতেন। কারণ, আওস এবং খাযরাজ গোত্র চাইতো না যে, তাদের এক গোত্রের লোক অন্য গোত্রের ইমামতি করুক। মহান আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি

সন্তুষ্ট হোন।

ইবন ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবন আবু উমামা…….. আবদুর রহমান ইবন কাআব ইবন মালিক বলেন, আমার পিতার দৃষ্টিশক্তি হারানাের পর আমি তাকে নিয়ে জুমুআয় যেতম। জুমুআর জামাআতে উপস্থিত হলে তিনি যখন আযান শুনতেন, তখন আবু উমামা আসআদ ইবন যুরারার জন্যে দু’আ করতেন। বহু সময় তাঁর এভাবে কেটেছে যে, জুমুআর আযান শুনলেই তিনি আবু উমামার জন্যে দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আমি মনে মনে বললাম, এর কারণটা কি আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারি না? একদিন আমি বললাম, আব্ববাজােন! আপনি জুমুআর আযান শুনলে আবু উমামার জন্যে দু’আ করেন, তার কারণটা কি? উত্তরে তিনি বললেন, বৎস! তিনি মদীনায় সর্বপ্রথম আমাদেরকে নিয়ে জুমুআর নামায আদায় করেছেন। বনু বিয়াদাহ গোত্রের পাথুরে অঞ্চল হাযমুন নাবীত নামক পাহাড়ে তিনি আমাদেরকে নিয়ে জুমআ আদায় করেছেন। ওই স্থানটিকে ১ “বাকী আল-খাদামাত” বলা হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তখন আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, :০জন ছিলাম। ইমাম আবু দাউদ এবং ইবন মাজাহ (র) মুহাম্মদ ইবন ইসহাক থেকে উক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইমাম দারাকুতনী (র) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) জুমুআ আদায়ের নির্দেশ দিয়ে মুসআব ইবন উমায়রকে (রা) চিঠি লিখেছিলেন। অবশ্য এই হাদীছটি একক ভাবে বর্ণিত। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইবন ইসহাক বলেন, উবায়দুল্লাহ ইবন মুগীরা ইবন মুআয়কীব ও আবদুল্লাহ ইবন আবু বকর ইবন মুহাম্মদ ইবন আমর ইবন হাযম বলেছেন, আসআদি ইবন যুরোরা (রা) মুসআব ইবন উমােয়র (রা)-কে সাথে নিয়ে বনু আবদুল আশাহাল এবং বনী যুফার গোত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। সাআদ ইবন মুআয (রা) ছিলেন আসআদি ইবন যুরোরা (রা)-এর খালাত ভাই। তারা দু’জনে বনু যুফার গোত্রের প্রাচীরঘেরা এক বাগানের মধ্যে মারাক নামের কুয়োর নিকট গিয়ে বসলেন। ইসলাম গ্ৰহণকারী লোকজন ওখানে গিয়ে তাদের নিকট জমায়েত হয়েছিলেন। সাআদ ইবন মুআয এবং উসয়দ ইবন হুযায়র। তখন তাদের সম্প্রদায় আবদুল আশাহাল গোত্রের নেতা ছিলেন। দু’জনেই তখন মুশরিক ছিলেন। তাদের আগমন সংবাদ শুনে সাআদ উসায়দকে বললেন, আমাদের এলাকায় আদমনকারী ওই লোক দু’জনের নিকট যাও তো! তারা এসেছে আমাদের দুর্বল লোকদেরকে বোকা বানানোর জন্যে। তুমি তাদেরকে ধমক দিয়ে দিবে এবং আমাদের এলাকায় আসতে বারণ করে দেবে। আসআদ ইবন যুরোরা আমার খালাত ভাই না হলে আমি নিজেই তা করতাম, তোমাকে বলতাম না। সে তো আমার খালাত ভাই। আমি তার উপর মাতব্বরী করতে পারি না। উসায়দ ইবন হুযায়র তার বর্শা হাতে তুলে নিলেন এবং ওই দু’জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। তাকে দেখে আসআদ ইবন যুরোরা মুসআব (র)-কে বললেন, ইনি তাঁর সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তিনি আপনার নিকট এসেছেন, আল্লাহর সত্য পরিচয়

আপনি তাঁর নিকট বর্ণনা করুন। মুসআব (রা) বললেন তিনি বসলে আমি তার সাথে কথা বলব ২। গালমন্দ করতে করতে উসয়দ তাদের নিকট দাড়ালেন এবং বললেন, আমাদের

১. সীরাতে ইবন হিশামে আছে নাকী আল খাদামাত। ২. La “…”,–গালি-গালাজকারী।

দুর্বল লোকদেরকে বোকা বানানোর জন্যেই কি তোমরা দু’জন এসেছ? প্ৰাণে বঁাচতে চাইলে

তাড়াতাড়ি আমাদের এলাকা ছেড়ে যাও। বর্ণনাকারী মুসা ইবন উকবা বলেন, এরপর আসআদ ইবন যুরোরাহকে বলল, আমাদের দুর্বল লোকদেরকে বোকা বানানোর জন্যে এবং বাতিলের দিকে ডেকে নেয়ার জন্যে তুমি এই সমাজচ্যুত পরদেশী লোকটিকে নিয়ে কেন এসেছো?

জবাবে মুসআব (রা) বললেন, আপনি কি একটু বসবেন এবং আমার কথা শুনবেন? বিষয়টি আপনার পসন্দ হলে আপনি গ্রহণ করবেন, অন্যথায় আপনি তা থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। উসায়দা বললেন, ঠিক আছে তুমি ইনসাফের কথা বলেছে। এবার তিনি আপন বর্শাটি মাটিতে গেড়ে দাড় করিয়ে তাদের দু’জনের নিকট বসে পড়লেন। এবার মুসআব (রা) তার নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন এবং কুরআন পাঠ করলেন। তারা দু’জনে বললেন, আল্লাহর কসম, ইসলাম সম্পর্কে তার নমনীয় মনোভােব ব্যক্তি করার পূর্বেই আমরা তার চোখে-মুখে ইসলামের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কতই না সুন্দর, কতই না ভাল এটি! এই দীনে প্ৰবেশ করার জন্যে কী করতে হয়? তারা বললেন, ইসলাম গ্রহণ করতে হলে আপনি গোসল করবেন, পবিত্র হবেন, আপনার জামা-কাপড় পাক করবেন এবং তারপর কালেমায়ে শাহাদত উচ্চারণ করবেন এবং নামায আদায় করবেন। তাদের কথা মত উসায়দ ইবন হুযায়র উঠে দাড়ালেন, গোসল করলেন, তার পরনের জামা-কাপড় পাক করলেন, কালেমা শাহাদত উচ্চারণ করলেন, তারপর দী রাকাআত নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি ওই দু’জনকে বললেন, আমার পেছনে একজন লোক আছে সে যদি আপনাদের অনুসরণ করে, তবে তার সম্প্রদায়ের কেউই আপনাদের অনুসরণ করা ব্যতীত থাকবে না। অবিলম্বে তাকে আমি আপনাদের নিকট পাঠাচ্ছি। তিনি হলেন সাআদ ইবন মুআয। উসয়দ ইবন হুযায়র তার বর্শা হাতে সাআদ ইবন মুআয ও নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনের নিকট ফিরে গেলেন। তারা সবাই মজলিসে বসা ছিলেন। তাকে আসতে দেখে সাআদ ইবন মুআয তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম, উসায়দ যে চেহারা নিয়ে তোমাদের নিকট থেকে গিয়েছিল এখন অন্য চেহারা নিয়ে ফিরে এসেছে। মজলিসে উপস্থিত হওয়ার পর সাআদ ইবন মুআয হযরত উসায়দ (রা)-কে লক্ষ্য করে বললেন, কী সংবাদ? তিনি বললেন, আমি ওই দু’জন লোকের সাথে কথা বলেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাঁদের মধ্যে দূষণীয় কিছু দেখিনি। আমি ওদেরকে ওই কাজে বারণ করেছি। তারা বলল, ঠিক আছে আপনি যা ভাল মনে করেন, আমরা তাই করব। তবে আমি জানতে পেরেছি যে, বনু হারিছা গোত্রের লোকজন আসআদ ইবন যুরোরাহকে হত্যা করার জন্যে পথে নেমেছে। আর তার কারণ হল তারা জানতে পেরেছে যে, সে তোমার খালাত ভাই। তাকে হত্যার মাধ্যমে তারা তোমাকে অপমানিত করতে চায় বনু হারিছা গোত্র সম্পর্কে এই ংবাদ শুনে রাগে-ক্ষোভে অগ্নিশৰ্মা হয়ে সাআদ ইবন মুআয বেরিয়ে পড়লেন। তার হাতে ছিল বর্শা। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি আমার কোন উপকার করতে পেরেছ বলে আমি মনে করি না। সাআদ আসআদি ইবন যুরোরাহ ও মুসআব ইবন উমােয়র (রা)-এর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেখানে পৌছে তাদেরকে শান্ত ও নিরুদ্বেগ দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে, ওই দু’জনের কথা শোনার জন্যে উসায়ীদ (রা) এমন সংবাদ দিয়েছেন। গাল-মন্দ ও বকাঝকা করতে করতে তিনি তাদের সম্মুখে দাড়ালেন। তারপর আসআদি ইবন যুরোরাহ (রা)-কে লক্ষ্য

OV –

করে বললেন, আল্লাহর কসম হে আবু উমামােহ!! আল্লাহর কসম, আমার আর তোমার মাঝে যে আত্মীয়তা তা যদি না থাকত, তবে তুমি আমার থেকে যা আশা করছি তা করতে পারতে না। আমরা যা ঘূণা করি তা প্রচার করার জন্যে তুমি আমাদের এলাকায় এসেছ? আসআদ ইবন যুরোরাহ (রা) মুসআব ইবন উমােয়র (রা)-কে বললেন, আল্লাহর কসম, ইনি আপনার নিকট এসেছেন, ইনি তার কওমের নেতা। তাঁর পেছনে তাঁর পুরো সম্প্রদায় রয়েছে। ইনি যদি আপনার অনুসরণ করেন, তবে তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন দু’জন লোকও থাকবে না, যারা আপনার বিরোধিতা করবে। বরং সকলেই আপনার অনুসরণ করবে।

সাআদ ইবন মুআয্যের উদ্দেশ্যে মুসআব (রা) বললেন, আপনি একটু বসুন, আমার বক্তব্য শুনুন, আপনার ভাল লাগলে গ্রহণ করবেন নতুবা আপনার অপসন্দের বিষয় আমরা আপনার থেকে সরিয়ে রাখব। সাআদ বললেন, আপনি ন্যায্য কথা বলেছেন। এরপর মাটিতে বর্শাটি গেড়ে দাঁড় করিয়ে তিনি বসে পড়েন। হযরত মুসআব (রা) তার নিকট ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করেন এবং কুরআন পাঠ করে শুনান। মূসা ইবন উকবা উল্লেখ করেছেন যে, তার নিকট সূরা যুখরুফ-এর প্রথম দিকের আয়াত পাঠ করা হয়েছিল। তাঁরা বলেন, ইসলাম গ্রহণে তার : নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করার পূর্বেই আমরা তার চেহারায় ইসলামের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। তারপর তিনি বললেন, আপনারা যখন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দীনে প্রবেশ করেন, তখন কী করেন? তাঁরা দু’জনে বললেন, তাহলে আপনাকে গোসল করতে হবে, পবিত্ৰতা অর্জন করতে হবে, কাপড় দুটো পাক করে নিতে হবে এবং সত্য সাক্ষ্যের ঘোষণা দিতে হবে। তারপর দু’ রাকাআত নামায আদায় করতে হবে। সাআদ উঠে দাঁড়ালেন। গোসল করলেন। জামা-কাপড় পাক করলেন, কালেমা শাহাদত উচ্চারণ করলেন এবং দু’রাকাআত নামায আদায় করলেন। তারপর বর্শা হাতে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকজনের নিকট ফিরে গেলেন। উসায়দ ইবন হুযায়র (রা) তার সাথে ছিলেন। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকজন বলল, সাআদ যে চেহারা নিয়ে তোমাদের কাছ থেকে গিয়েছিলেন এখন ভিন্ন চেহারা নিয়ে ফিরে এসেছেন। তাদের নিকট এসে সাআদ (রা) বললেন, হে বনু আবদ আশহাল গোত্ৰ, তোমাদের মধ্যে আমার অবস্থান ও গুরুত্ব কেমন বলে মনে কর? তারা বলল, আপনি তো আমাদের নেতা, সর্বাধিক বিচক্ষণ ও সর্বোত্তম পরিচালক। তিনি বললেন, তোমরা যতক্ষণ আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান না আনবে, ততক্ষণ তোমাদের নারী-পুরুষ সকলের সাথে আমার কথা বলা হারাম। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সন্ধ্যা নাগাদ বনু আশাহাল গোত্রের সকল পুরুষ ও মহিলা ইসলাম গ্ৰহণ করে। সাআদ (রা) ও মুসআব (রা) ফিরে আসেন আসআদি ইবন যুরোরাহ (রা)-এর বাড়িতে। তারা সেখানে অবস্থান করে লোকজনকে ইসলামের দিকে ডাকতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি গোত্র ব্যতীত আনসারদের সকল গোত্ৰই ইসলাম গ্ৰহণ করে। যে সকল শাখা গোত্র ইসলাম গ্রহণ করেনি, সেগুলো হল বনু উমাইয়া ইবন যায়দ গোত্র, খুতামাহ গোত্র, ওয়াইল গোত্র এবং ওয়াকিফ গোত্র। এরা সকলে আওস গোত্ৰভুক্ত। তারা আওস ইবন হারিছার বংশধর। তারা ইসলাম গ্রহণ করেনি। কারণ, তাদের মধ্যে আবু কায়স ইবন আসলাত নামে এক কবি ছিল। সে তাদেরকে ইসলাম গ্ৰহণ থেকে বিরত রেখেছিল। তার মূল নাম সায়ফী। যুবােয়র ইবন বাক্কার বলেন, তার নাম ছিল হারিছ। কেউ বলেছেন তার নাম

ছিল উবায়দুল্লাহ। তার পিতার নাম ছিল আসলাত আমির ইবন জাশাম ইবন ওয়াইল ইবন যায়দ ইবন কায়স ইবন আমির ইবন মুররা ইবন মালিক ইবন আওস। ঐতিহাসিক কালাবীও তার এই বংশপরিচয় বর্ণনা করেছেন। সে ছিল ওই সব গোত্রর কবি ও নেতা। ওরা তার কথা শুনাত ও তাকে মান্য করত। সে তাদেরকে ইসলাম গ্ৰহণ, থেকে বিরত রেখেছিল। খন্দক যুদ্ধের পর পর্যন্ত সে তাদেরকে ইসলাম থেকে বাধা দিয়ে রেখেছিল। আমি বলি, ইবন ইসহাক আলোচ্য আবু কায়স ইবন আসলাতের কতগুলো কবিতা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো “বা” (৩) অন্ত্যমিল বিশিষ্ট। উমাইয়া ইবন সালত ছাকাফীর কবিতার সাথে সেগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে।

ইবন ইসহাক বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দীনের দাওয়াত আরবে ছড়িয়ে পড়ল। শহরে শহরে তা পৌছে গেল। তখন মদীনাতেও তার কথা আলোচিত হ্রতে লাগল। তবে আওস ও খাযরাজ গোত্র রাসূলুল্লাহ্ (সা) সম্পর্কে যত বেশী অবগত ছিল আরবের অন্য কোন গোত্র ততটুকু ছিল না। ইয়াহুদী পণ্ডিতদের মুখে তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিবরণ শুনত বলে এমনটি হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আলোচনা যখন মদীনায় গিয়ে পীেছল এবং কুরায়শদের সাথে তাঁর মত বিরোধের ঘটনা যখন মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল, তখন বানু ওয়াকিফ গোত্রের কবি আবু কায়স ইবন আসলাত নিম্নের কবিতাটি রচনা করেছিল। আবু কায়সের পরিচযা বর্ণনা করে সুহায়লী বলেন, সে হল আবু কায়স সারমা ইবন আবু আনাস কায়স ইবন সারমা ইবন মালিক

أحل لكم ليلة الصيام الرفيش الى نسائكم ك66 * * * ق FRIH616ة كك على 148ى (TI) (২ : ১৮৭) আয়াত নাযিল হয়েছিল।–بر “من مي a

ইবন ইসহাক বলেন, সে কুরায়শ সম্প্রদায়কে ভালবাসত। ওদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। আরনাব বিনত আসাদ ইবন আবদুল উষযা ইবন কুসাই ছিল তার স্ত্রী। নিজের স্ত্রীকে নিয়ে সে বহু বছর মক্কায় বসবাস করেছে। কুরায়শরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বিরোধিতা করছে। এ সংবাদ পেয়ে সে হারাম শরীফের মর্যাদা বর্ণনা করে তাদেরকে সেখানে যুদ্ধ-বিগ্ৰহ সৃষ্টি থেকে বারণ করে একটি কাসীদা রচনা করে। ওই কাসীদায় সে কুরায়শদের সম্মান ও বুদ্ধিমত্তার কথা, তাদের উপর প্রেরিত আল্লাহর দেয়া বিপদাপদের কথা, তাদেরকে হস্তী বাহিনী থেকে রক্ষা করার কথা এবং মহান আল্লাহর কর্ম-কৌশলের কথা উল্লেখ করে। তদুপরি ওই কাসীদায় সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বিরত থাকার জন্যে তাদেরকে পরামর্শ দেয়। সে বলেছে :

آببار اکبا اما عرضشت فبلغن–مغلغلهٔ عزی لوی بن غالبহে সওয়ারী! তুমি যদি কখনো তার নিকট পৌঁছতে পোর, তবে লুওয়াই ইবন গালিবের গোত্ৰকে আমার পক্ষ থেকে একটি চিঠি পৌছিয়ে দিও।

رسول امری قدر اعهٔ ذات بینگم – علی النای محزون یذاللت ناصبহে সওয়ারী তুমি এমন এক লোকের দূত হিসেবে তাদের নিকট গমন কর, যে ওদের থেকে দূরে অবস্থান করছে। ওদের পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে এবং তাদের এই অবস্থার কারণে সে দুশ্চিন্তগ্রস্ত ও অসুস্থ।

و قد کان عندی للهموم معر س–و لم آقض منها حاجتی و ماربی দুঃখ-ব্যথা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া ও বিশ্রাম নেয়ার স্থান আমার নিকট রয়েছে। অথচ আমি তা থেকে কোনভাবেই উপকৃত হই না।

تُبينكم شرجين كل قبيلة – لها أزامل من بين مذكر و حاطب–আমি তো তোমাদেরকে রাতের বেলা দেখতে পাচ্ছি যে, তোমরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে। পড়েছি। প্রত্যেক গোত্রে রয়েছে আগুন প্রজুলনকারী ও কাঠ সংগ্ৰহকারীর হৈ হুল্লোেড়।

اعیذ گم باللّه مين شرصتصنعگم–وشر تبا نمیغنگھ ود سري العقارب – আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর আশ্রয়ে প্রার্থনা করছি তোমাদের কর্মের অকল্যাণ থেকে, তোমাদের পরস্পর বিদ্রোহ ও সীমালংঘন থেকে এবং বিছুর দংশন থেকে।

واظهار أخلاق وتجوائى سقيمة – كوخز الأشافى وقعها حق الصائب – চরিত্রের প্রকাশ ঘটানো থেকে এবং অসুস্থ কানা-কানি ও গোপন পরামর্শ থেকে। সেগুলো তো সূচের ফোড়ের মত, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না।

فذكرهم باللّه أول وهلة – واحلال احرام الظباء الشوازبতুমি তাদেরকে আল্লাহর নামে উপদেশ দাও বিপদের সূচনাতেই এবং ক্ষীণকায় শিকার-নিষিদ্ধ হরিণীর শিকার বৈধ করা থেকে।

و قلا لهم و اللهٔ یحگمحگمهٔ–ذروا الحراب تذهب عنگام فی المر اجبতুমি ওদেরকে বল যে, আল্লাহ তাঁর ফায়সালা বাস্তবায়ন করবেনই। তোমরা যুদ্ধ-বিগ্ৰহ ত্যাগ কর, তাহলে পরাক্রান্ত শক্ৰদের থেকে তোমরা রক্ষা পাবে।

م له مه او د مير

متى تبعثوها تبعثوها ذميمة – هى الغول للاقصين أو للاقارب – তোমরা যদি যুদ্ধকে প্ররোচিত ও উত্তেজিত কর, তবে খুব মন্দভাবেই সেটিকে উত্তেজিত করবে। মূলত যুদ্ধ হল ধ্বংস সাধনকারী ঘনিষ্ঠজনদের জন্যে দূরবতীদের জন্যে।

تقطع أرحاما وتهلك أمة – وتبرى السيديف من سنام وغاربيএই যুদ্ধ আত্মীয়তা বন্ধনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় এবং জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। উটের ঘাড় ও কুঁজ থেকে চর্বিকে আলাদা করে দেয়।

وت تتبدلوا ஃபு ܝتحمية بغدها–شليلاً واصداء ثياب المحارب – এবং যুদ্ধ তোমাদের ইয়ামানী মূল্যবান মিহি কাপড়ের পরিবর্তে তোমাদেরকে দিবে। হাল্কা-পাতলা নিম্নমানের কালো যুদ্ধের পোশাক।

وبالمسك والكافور غير اسوابغاكأن قتيريها عيون الجنادب

১. এই পংক্তি এবং পরবতী পংক্তি কবি আশার কাব্য গ্রন্থে পাওয়া যায়নি।

যুদ্ধে লিপ্ত হলে তোমরা মিশক ও কপূরের পরিবর্তে বিশাল আকারের বালিস্তুপ পাবে। ওই বালি প্রবাহ যেন লবণের ঝর্ণাধারা।

فایاگم و الحربلا تغلقنگم – و حوضها وخیم الماء مر المشاربنসুতরাং তোমরা যুদ্ধ থেকে দূরে থােক। যুদ্ধ যেন তোমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে। তোমরা দূরে থাক এমন কুয়ো থেকে যার পানি দূষিত, যার পানি তিক্ত।

تزين للاقوام ثم يرونها – بعاقبة اذ بيتات أم صاحب – যুদ্ধ নিজেকে সুসজ্জিত ও অলংকৃত করে লোকজনের নিক। শেষ পর্যন্ত রাত্রি যাপনকালে তারা সেটিকে নিজের মায়ের ন্যায় দেখতে পায় অর্থাৎ হারাম ও নিষিদ্ধ বলে দেখতে পায়।

تحرق S تخوی طضہ د.ضعیفاوتتنتح. ●–ذوی العز منگم بالحتؤف الصوائبএই যুদ্ধ দুর্বলদেরকে ভাজা করে ছেড়ে দেয় না। বরং পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আর মর্যাদাবান ও শক্তিশালীদেরকে গলা টিপে হত্যা করে।

الم تغلموا ماکان فی حراب داحس–فتغتبر وا آوکان فی حرب احاطب দাহিস যুদ্ধে কী ভয়ানক বিপর্যয় ঘটেছে তা কি তোমাদের জানা নেই? তা থেকে তোমরা শিক্ষা গ্ৰহণ কর। হাতিব যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের কথাটাও বিবেচনা কর।

وكم ذا أصابت من شريف مسود – طويل العماد ضيفه غير خائبকত কত শরীফ ও সম্মানিত লোক এই যুদ্ধের বলি হয়েছে! যারা ছিল সমাজের উচ্চস্তরের নেতা, যারা ছিল অতিথি-পরায়ণ। যাদের দরজা থেকে মেহমান–মুসাফির কখনো নিরাশ হয়ে ফিরে যায়নি।

عظیم رمادالنار یاحمد آمارهٔ–وذی شیمة محاضر کریم المضاربنএই যুদ্ধের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে এমন সব লোককে যাদের ছাইয়ের স্তুপ অনেক বড় বড়। যাদের কাজকর্ম সদা প্রশংসাযোগ্য। যারা চরিত্রবান ও প্রচুর नानाभीक्ल। *

و ماء هريق فى الضلال كأنما – أذاعت به ريح الصبا والجنائب – যুদ্ধে বিনষ্ট হয়েছে বহু পানির কুয়ো। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে ওই পানি লক্ষ্যহীন ভাবে। উত্তরা ও দক্ষিণী হাওয়া যেন ওই পানিকে উড়িয়ে নিয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে।

بخيركم عنها امرء حق عالم–بأيامها والعلم علم التجارب – যুদ্ধ সম্পর্কে যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভকারী একজন লোক তোমাদেরকে যুদ্ধ সম্পর্কে অবগত করাচ্ছে। বস্তৃত অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান।

فبيعوا الحراب ملمحارب وأذكروا – حسابكم واللّة خير محاسب –

সুতরাং তোমাদের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে দাও অন্যান্য যুদ্ধবাজ লোকদের নিকট। আর নিজেদের হিসাব দেয়ার কথা স্মরণ করা। মহান আল্লাহ উত্তম হিসাব গ্রহণকারী।

ولی امری فاختار دینا فلایکن–علیکم رقیب غیر رابی الثواقبআল্লাহ তা’আলা হলেন মানুষের সাহায্যকারী। তিনি একটি দীন মনােনীত করেছেন। সে দীন গ্রহণ করলে নক্ষত্ররাজির মালিক আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন প্ৰভু থাকবে না।

اقيموا لنا دينا حنيفا فانتهوا–لنا غاية قد يهتدى بالذوائبআপনারা আমাদের জন্যে একটি দীন-ই-হানীফ ও সরল দীন প্রতিষ্ঠা করে যান এবং আমাদেরকে এমন চূড়ান্ত অগ্রগতির সাথে সম্পৃক্ত করে যান, যা শুধুমাত্র নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ পেয়ে থাকেন।

وانتم لهذا التاس نور وعصمة – تؤمون والأحلام غير عوازب – আপনারা তো এই জনসাধারণের জন্যে আলো ও প্রতিরক্ষণকারী। নেতৃস্থানীয় এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তিবর্গ কখনো লক্ষ্য অর্জনে ব্যৰ্থ হয় না।

. . . .,o •ܫ

وأنتم اذا ما حصل الناس جوهر – لكم سرة البطحاء شم الأرانبমানুষের কৃতিত্ব যখন হিসেব করা হয়, তখন আপনারা তাদের মধ্যে মণি-মুক্তা বলে গণ্য হন। আরবের নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব আপনাদের জন্যেই সংরক্ষিত।

تصو نون انسابا كراما عتيقة – مهذبة الإنساب غير أشائب – মর্যাদাবান, সুপ্রাচীনকাল থেকে আভিজাত্যপূর্ণ ও কুলীন বংশ-মর্যাদা আপনারা রক্ষা করে। চলেছেন। আপনাদের বংশ সন্ত্রান্ত, ভদ্র এবং নির্ভেজাল। কোন প্রকারের অভদ্র মিশ্রণ আপনাদের বংশে নেই।

یری طالب الحاجات نحو بیوتگم–عصائب هلکی تهتدی بعصائب–অভাবী ও সাহায্যপ্রার্থী লোকজন দেখতে পায় যে, অসহায় ও দুর্বল লোকজন সাহায্যের আশায় আপনাদের বাসস্থানের প্রতি অগ্রসর হচ্ছে। তাদেরকে দেখে অন্যান্য সাহায্যপ্রার্থীরাও আপনাদের বাড়ির পথ খুঁজে পায়।

لقد علم الاقوام آن سارات گم – علی کلی حال خیر آهل الجباجبসব লোক জানে যে, আপনাদের গোত্রগুলো সর্বাবস্থায় সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ।

و آفضله رایا و اعلاه سانتهٔ–و آقوله للحق وسط المو اکب

||।S| سنا م . S।| * آb السدیف .د

–میں ا مہ ی! نہ آRT(Ti <Fi۶> آتحمية .8 چڑT}؟ غار ب.9

আপনাদের লোকজন সর্বোত্তম রায় প্রদানকারী, সর্বশেষ্ঠ রীতিনীতির অনুসারী, সর্বাধিক সত্য বক্তব্য প্রদানকারী এবং মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।

فقوموا فصلُوا ربكم وتمسحوا – بأركان هذا البيت بين الأخاشيبيসুতরাং আপনারা উঠুন, আপনাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং মক্কায় পর্বতদ্বয়ের মাঝে অবস্থিত এই গৃহের স্তম্ভগুলো চুম্বন করুন, স্পর্শ করুন।

فعند گم منهٔ بلاء و مصدق–غد اة آبی یکسوم هادی الکتائب–আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি নিআমন্ত ও অনুগ্রহ রয়েছে। আপনাদের প্রতি বিপদ

নেমে এসেছে। বিশেষত সেদিন, যেদিন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করে সেনাপতি আবু ইয়াকসুম আপনাদের উপর আক্রমণ করেছিল।

کتیبته بالساهل تمشی و در جلهٔ–علی القاذفات فی را از سالمناقبতার সাধারণ সেনাবাহিনী সমতল ভূমি অতিক্রম করছিল। আর তার পদাতিক বাহিনী ছিল পর্বতের চূড়ায় পাহাড়ী পথে। • AA فلما أتاكم نصر ذى العرش ردّهم – جنود المليك بين ساف وحاصبযখন আপনাদের নিকট আরাশের মালিক মহান আল্লাহর সাহায্য এল, তখন মহান মালিকের সেনাবাহিনী আবু ইয়াকসূমের অনুসারীদের পরাজিত করে দিল। ফলে ওদের কতক ধ্বংস হল আর কতক দ্রুত পালিয়ে গেল।

فولو اسراعا هاربين ولم يؤب – الى أهلم ملحبشي غير عصائب ওরা সকলে দ্রুত পলায়ন করে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলো। মাত্র কয়েকজন ছাড়া ওই হাবশী

فان تهلکوانهالت و تهلن–مواسم یعاش بها قول امری غیر کاذب. এখন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে যদি আপনারা ধ্বংস হয়ে যান, তবে আমরাও ধ্বংস হয়ে যাব এবং মক্কায় অনুষ্ঠিত হজ্জ সমাবেশ ও অন্যান্য মেলাগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। এসব হল একজন সত্যবাদী লোকের কথা–যে মিথ্যাবাদী নয়।

আবু কায়স তার কবিতায় যে দাহিস যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছে, সেটি জাহিলী যুগের একটি প্রসিদ্ধ যুদ্ধ। আবু উবায়দ মা’মার ইবন মুছান্না ও অন্যান্যদের বর্ণনা অনুযায়ী সেটির কারণ এই কায়স ইবন যুহায়র ইবন জুযায়মা ইবন রাওয়াহা গাতফানীর একটি ঘোড়া ছিল। সেটির নাম ছিল দাহিসী। অপরদিকে হুয়ায়ফা ইবন বদর ইবন আমর ইবন জুবা গাতফানীর একটি ঘোড়া ছিল। সেটির নাম ছিল গাবরা। একদিন উভয় ঘোড়ার মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় দাঁহিস। ক্ষোভে-দুঃখে হুযায়ফা তার প্রতিপক্ষ ঘোড়া দাহিসকে থাপ্পড় মারার জন্যে নির্দেশ দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মালিক ইবন যুহায়র উঠে হুযায়ফার ঘোড়া “গাবরার” মুখে চপেটাঘাত করে।

হুযায়ফার ভাই হামল ইবন বদর এস মালিকের মুখে চপেটাঘাত করে। পরে এক সময়ে আবু জুনদুব আব্বাসী হুযায়ফার পুত্র আওফকে বাগে পেয়ে খুন করে। বনু ফাযারা গোত্রের এক লোক কায়সের ভাই মালিককে খুন করে। এরপর বনু আব্বস ও বনু ফাযারা গোত্রের মধ্যে নিয়মিত যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধে হুযায়ফা ইবন বদর তার ভাই হামল ইবন বন্দরসহ বহু লোক নিহত হয়। এ যুদ্ধ নিয়ে তারা বহু কবিতা রচনা করেছে, যা এখানে উল্লেখ করলে গ্রন্থের কলেবর বেড়ে যাবে।

ইবন হিশাম বলেন, কায়স দাঁহিস ও গাবরা নামক দুটো ঘোড়া প্রেরণ করেছিল আর হুযায়ফা প্রেরণ করেছিল খাতার ও হানাফা নামক ঘোড়া দুটো। তবে প্রথমোক্ত বর্ণনা বিশুদ্ধ।

হাতিবের যুদ্ধ সম্পর্কে তিনি বলেন যে, হাতিব ইবন হারিছ ইন্ধন কায়সা ইবন হায়শা ইবন হারিছ ইবন উমাইয়া ইবন মুআবিয়া ইবন মালিক ইবন আওস ইবন অ্যােমর ইবন আওফ ইবন মালিক ইবন আওফ একদিন এক ইয়াহুদীকে হত্যা করেছিল। ওই ইয়াহুদী ছিল খাযরাজ গোত্রের প্রতিবেশী। হত্যাকারী হাতিবকে খুন করার জন্যে খাযরাজ গোত্রের একদল লোক নিয়ে পথে বের হয় যায়দ ইবন হারিছ ইবন কায়স ইবন মালিক ইবন আহমার ইবন হারিছা ইবন ছ’লাবা ইবন কাআব ইবন মালিক ইবন কাআব ইবন খাযরাজ ইবন হারিছ ইবন খাযরাজ। যায়দ ইবন হারিছের ডাকনাম ছিল ইবন কাসহাম। নিজ দলের লোকদেরকে নিয়ে সে হাতিবকে খুন করে। ফলে আওস এবং খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। উভয় গোত্রের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত খাযরাজরা বিজয়ী হয়। এই যুদ্ধে আসওয়াদ ইবন সামিত আওসী নিহত হয়। তাকে হত্যা করে বনু আওফ ইবন খাযরাজ গোত্রের মিত্ৰ মুজাযিযর ইবন যিয়াদ। এরপর দীর্ঘদিন যাবত তাদের মধ্যে যুদ্ধ চলেছিল। মোট কথা, প্রচুর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তা দ্বারা আবু কায়স ইবন আসলাত নিজে উপকৃত হতে পারেনি। সে নিজে ঈমান আনয়ন করেনি। হযরত মুসআব ইবন উমােয়র (রা) যখন মদীনায় এলেন এবং মদীনার অধিবাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন, তখন বহু লোক ইসলাম গ্ৰহণ করেন। এমন কোন পাড়া ও মহল্লা ছিল না যেখানে অন্তত দু’চার জন মুসলিম নারী-পুরুষ ছিলেন না। কিন্তু আবু কায়সের গোত্র বনু ওয়াকিফের মহল্লা ছিল এর ব্যতিক্রম। সে তার মহল্লার লোকদেরকে ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত রেখেছিল। সে বলেছিল?

أرب الناس أشباء ألمت – يلف الصغلب منها بالذلول – হে মানব জাতির প্রতিপালক! এ কি ঘটনা ঘটল? এমন কিছু বিষয় নেমে এল যেখানে কঠোরতা আর কোমলতা একাকার হয়ে যায়।

أرب الناس أما أن ضللأنا – في سيرنا لمعروف السبيل হে ম্যানব জাতির প্রতিপালক! আমরা যদি পথভ্রষ্ট হয়ে থাকি, তবে আমাদের জন্যে সুপথ সুগম করে দিন।

فلولار بنا کنایهودا–و مادین الیهود بذی شکول–

আমাদের প্রতিপালক না থাকলে আমরা ইয়াহুদী হয়ে যেতাম ইয়াহুদী ধর্ম বহুরূপী ও জগাখিচুড়ি নয়।

ولولا ربنا كن نصارى – مع الرهبان فى جبل الجليل – ” আমাদের প্রতিপালক না থাকলে আমরা খৃস্টান হয়ে যেতাম আর অরণ্যচারী হয়ে যাজকদের সাথে পাহাড়ে-পর্বতে ঘুরে বেড়াতাম।

তবে আমাদের যখন সৃষ্টি করা হয়েছে তখন সত্যপন্থী ও সরলপন্থীরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের দীন-ধর্ম সকল প্রকারের বক্রতা ও ভেজাল থেকে মুক্ত।

نسوق الهدى ترأسفاً. مذعنات – مكشفة المناكب فى الجلول – আমরা মিনাতে যাবাহ করার জন্যে পশু নিয়ে যাই। সেগুলো অনুগত ভাবে এগিয়ে যায় দুৰ্গম পথে ও সেগুলো ঘােড় উচু করে চলতে থাকে।

তার বক্তব্যের মূল কথা হল, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আবির্ভাবের সংবাদ শুনে সে কিংকৰ্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। তাই নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সত্ত্বেও সে ইসলামগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। প্রথমত, আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালুল তাকে ইসলামগ্রহণে বাধা দেয়। আবু কায়স নিজে আবদুল্লাহ ইবন উবাইকে বলেছিল যে, এ রাসূল তো সেই রাসূল। ইয়াহুদীরা যার আগমনের সুসংবাদ দিতো। ইবন উবাই কৌশলে তাকে ইসলাম গ্ৰহণ থেকে বিরত রাখে। ইবন ইসহাক বলে, মক্কা বিজয়ের দিবস পর্যন্ত আবু কায়স ও তার ভাই ইসলামগ্রহণ করেনি। সে শেষ পর্যন্ত ইসলাম গ্ৰহণ করেছে এমন মন্তব্য যুবােয়র ইবন বাক্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ওয়াকিদীর অভিমতও অনুরূপ। ওয়াকিদী বলেন, রাসূলুল্লাহ প্রথম তাকে যখন ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন সে ইসলামগ্রহণের সংকল্প করেছিল। এরপর আবদুল্লাহ ইবন উবাই এরূপ সংকল্পের জন্যে তাকে ভৎসনা করে। তখন সে শপথ করে যে, এক বছর পর্যন্ত সে ইসলাম গ্ৰহণ করবে: না। ওই যুলকা’দা মাসে তার মৃত্যু ঘটে।

ইবনুল আহীর তাঁর উসদুল গাবা গ্রন্থে উদধূত করেছেন, কেউ কেউ বলেছেন যে, আবু কায়সের মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, তখন রাসূলুল্লাহ তাকে ইসলামগ্রহণের দাওয়াত দেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ তাকে বলতে শুনেছেন যে, সে বলছে— ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’।

ইমাম আহমদ… আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এক অসুস্থ আনসারী লোককে দেখতে গেলেন। তিনি বললেন, মামা বলুন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। সে বলল, আপনি কি আমাকে চাচা ডাকেন, নাকি মামা ডাকেন? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন মামা-ই তো। সে বলল, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা কি মামার জন্যে অধিক কল্যাণকর হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হ্যা, তা কল্যাণকর হবে। ইমাম আহমদ এককভাবে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইকরামা ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন যে, আবু কায়সের মৃত্যুর পর তার পুত্র আবু কায়সের বিধবা স্ত্রী মান ইবন আসিমের কন্যা কাবীসকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কাব্বীসা তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহকে জানায়। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন :

VO Գ

a s a ولا تنكحوا ما نكح اباؤكم من النساء “নারীদের মধ্যে তোমাদের পিতৃপুরুষ যাদেরকে বিয়ে করেছে তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না। পূর্বে যা হয়েছে হয়েছেই। এটি অশ্ৰীল, অতিশয় ঘূণ্য এবং নিকৃষ্ট আচরণ।”

ইবন ইসহাক এবং মাগায়ী গ্রন্থের লেখক সাঈদ ইবন ইয়াহিয়া উমাভী উল্লেখ করেছেন যে, আলোচ্য আবু কায়স জাহিলী যুগে সন্ন্যাসব্রত গ্ৰহণ করেছিল। সে চট পরিধান করতো। মূর্তি-পূজা বর্জন করে চলতো। নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে গোসল করতো। মহিলাদের জন্যে হাইয্য ও ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের ব্যবস্থা করতো। খৃস্টধর্ম গ্রহণের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তারপর তা থেকে বিরত থাকে। সে তার একটি গৃহে প্রবেশ করে এবং সেটিকে মসজিদ রূপে নির্ধারণ করে। কোন ঋতুমতী মহিলা এবং কোন নাপাক ব্যক্তির সেখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। সে বলেছিল, আমি ইবরাহীম (আ:)-এর মা’বুদ ও ইলাহ-এর ইবাদত করব। তিনি মূর্তিপূজাকে ত্যাগ করেছিলেন এবং তার প্রতি ঘূণা প্রকাশ করেছিলেন। সে এভাবেই ইবাদত করে যাচ্ছিল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করলেন। সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সে নিষ্ঠার সাথে ইসলামী জীবন যাপন করে। সে ছিল বয়ােবৃদ্ধ ব্যক্তি। সদা সর্বদা সত্য কথা ব্যক্তকারী। জাহিলী যুগেও সে আল্লাহ্র প্রতি শ্ৰদ্ধা-সম্মান নিবেদন করত। এসব বিষয়ে সে কতক সুন্দর কবিতা রচনা ও আবৃত্তি করেছে :

يقول أبو قيس وأصبح عاديا –الا ما استطغتم من وصاتى فافعلوا– আল্লাহমুখী হয়ে আবু কায়স বলছে, তোমাদের সাধ্য মুতাবিক তোমরা আমার উপদেশ কার্যকর কর।

فأوصيكم باللّه والبر والتُقى – واعراضكم والبر باللّه أول:–আমি তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছি। আরো উপদেশ দিচ্ছি। সৎকর্মের, খোদাভীতির এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকার আর সর্বাগ্রে মহান আল্লাহর আনুগত্য করার।

%3 حمیمہ زہ سمی

وان قومكم سادوا فلا تحسدئهم – وان كنتم أهل الرئاسة فاعد لواতোমাদের সম্প্রদায়ের লােকজন নেতা মনােনীত হলে তোমরা ওদেরকে হিংসা করো না।

وان نزلت احدى الدواهى بقومكم – فأنفسكم دون العشيرة فاجعلواতোমাদের সম্প্রদায়ের উপর কোন বিপদ নেমে এলে নিজেদের সম্প্রদায়ের লোককে রক্ষা করার জন্যে নিজেরাই তা মুকাবিলা করবে।

وان ناب غار م فادح فارفقوهم – وما حملو گم فی الملمات فاحمملو اতোমাদের সম্প্রদায়ের উপর যদি ঋণের বোঝা এসে পড়ে, তবে তোমরা তাদের প্রতি সদয়

ও নম্র আচরণ করবে। আর তোমাদের উপর যদি কোন দায় চাপিয়ে দেয়া হয়, তবে তোমরা সেই দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করো।

وان أنتم آمنعز ثم فتعففوا – وان كان تضل الخير فيكم فافذ لوا– যদি তোমরা দরিদ্র ও অভাবী হয়ে যাও, তবে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিজেকে রক্ষা কর। যদি তোমাদের কোন সম্পদ থাকে, তবে তোমরা তা থেকে দান করবে।

আবু কায়স আরো বলেছে :

ب. نوا الله شرق گل صباح–کی..” ان ک” نه و گل هلال–তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো—তার তাসবীহ পাঠ কর প্রতি সকালে যখন সূর্য উঠে এবং প্রতি সন্ধ্যায় যখন চন্দ্ৰ উদিত হয়।

عالم السير والبيان جميعًا – ليس ما قال ربنا بضلاًل – মহান আল্লাহ প্ৰকাশ্য-অপ্ৰকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আমাদের প্রতিপালকের কোন বাণী ও কথা-ই অসত্য নয়।

و له ا لطير تستزيد و تأوی–فی و گور من امانات لجبال–পক্ষীকুল তারই। সেগুলো বেরিয়ে যায়। আর সন্ধ্যা বেলায় পর্বতের নিরাপদ স্থানে নিজ নিজ কুলায় ফিরে আসে—আশ্রয় নেয়।

وله الوحش بالفلاة تر ها–فی حقاف و فی ظلال الر مالیপ্রান্তরের বন্য জন্তু তারই। তুমি দেখতে পাবে যে, সেগুলো মাঠে-ময়দানে, প্রান্তরে-উপত্যকায় বিচরণ করে এবং বালি পাহাড়ের ছায়ায় অবস্থান করে।

ولة هودت يهود ودانت – كل دين مخافة من عضال–ইয়াহুদিরা তাঁরই অভিমুখী হয়েছে এবং সকল প্রকারের অকল্যাণের আশংকায় অকল্যাণ থেকে বীচার জন্যে পরিপূর্ণভাবে দীনের অনুসরণ করেছে।

ولهٔ شمس النصاری و قاموا–گل عید لر بهم و احتفالنখৃস্টানরা তাঁরই জন্যে রৌদ্র দিবস উদযাপন করে এবং তাদের সকল ঈদ-উৎসব ও সমাবেশ তারই উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে।

ولهٔ الر اهب الحبیست تر اه–رهان بوسروکان انعم بالا তুমি দেখতে পাও আত্মসংযমী সংসারত্যাগী খৃস্টান ধর্মযাজককে। সে দীন-হীন ভাবে-দুঃখ কষ্টে জীবন যাপন করে। বস্তৃত পূর্বে সে ছিল বিলাসবহুল জীবন যাপনকারী।

یا بنی الار حام لا تقتقطعوها – وصلوها قدقصيرة من طوال – হে আমার আত্মীয়গণ আত্মীয়তা ছিন্ন করো না। ছোট-বড় সকল আত্মীয় রক্ষা করো। আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রোখ।

واتفوا اللّه فى ضعاف الأيتامى – وبما يستحل غير الخلال –

আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদের সাথে সেই আচরণ করো, যা হালাল ও বৈধ ৷ অবৈধ ও হারাম আচরণ করো না।

واعلموا أن لليتيم وليا – عالما يهتدى بغير سؤال – স্মরণ রেখো, ইয়াতীমদের একজন অভিভাবক আছেন, যিনি সর্ব বিষয়ে অবগত। কাউকে জিজ্ঞেস মাত্র না করেই তিনি যথাযোগ্য কাজটি করেন।

ثم مال اليتيم لا تا گلو–ان مال الیتیم یر عاهٔ والیতোমরা ইয়াতীমের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করো না। একজন শক্তিমান তত্ত্বাবধায়ক ইয়াতীমের সম্পদের তত্ত্বাবধান করেন।

يابنى التخوم لا بجزلوها – ان جزل التخوم ذو عقال–হে প্রতিবেশী পুত্ররা, প্রতিবেশীত্বকে লাঞ্ছিত করো না, অপমানিত করো না। যে ব্যক্তি প্রতিবেশীত্ব রক্ষা করে, প্রতিবেশীর হক আদায় করে নিঃসন্দেহে সে বুদ্ধিমান ব্যক্তি।

یا بنی الایام لا تا منوها–واحذر وامگرها ومر اللّیالیহে কাজের সন্তানরা! যুগ-চক্রকে নিরাপদ মনে করো না, যুগের বিপদ সম্পর্কে শংকাহীন থেকে না। তার চাল সম্পর্কে সজাগ থেকে।

واعلموا أن أمرها لنفاد – الخلق ما كان من جديد وبالى – স্মরণ রেখো যে, যুগের কাজই হল জগত ধ্বংস করা, পুরাতন নতুন, সব কিছুকে সে শেষ

করে দেয়।

وأجمعُوا أمركم على البر و التقوی وترك الخنا وأخذ الحلال–তোমরা তোমাদের কাজগুলোকে গুছিয়ে নাও এবং পরিচালিত করা সৎকর্মের ভিত্তিতে। তাকওয়া অর্জন, পাপাচার বর্জন ও হালাল গ্রহণের ভিত্তিতে।

ইবন ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা’আলা ইসলাম প্রদানের মাধ্যমে এবং তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে প্রেরণের মাধ্যমে কুরায়শদের প্রতি যে কৃপা ও অনুগ্রহ দান করেছেন,

তাদেরকে সম্মানিত করেছেন আবু কায়স সারমােহ সেগুলো উল্লেখ করে আরো কবিতা রচনাকরেন।

তিনি (রাসূলুল্লাহ) দশ বছরের অধিক সময় কুরায়শ গোত্রের মধ্যে অবস্থান করেছেন। এই সময়ে তিনি উপদেশ প্ৰদান করতেন। যদি কোন বন্ধুর বা আগন্তুকের দেখা পেতেন। পরের দিকে পূর্ণ কবিতা উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *