1 of 2

৪৯. কিতাবুল মাগাযী

কিতাবুল মাগাযী

ইমাম মুহাম্মদ ইবন ইসহাক তাঁর সীরাত গ্রন্থে ইয়াহুদী ধর্মযাজক, ইসলাম এবং ইসলামের অনুসারীদের প্রতি তাদের দুশমনী তথা হিংসা-বিদ্বেষ এবং যাদের সম্পর্কে কুরআন মজীদের আয়াত নাযিল হয়েছে, তাদের কথা আলোচনা করার পর বলেন : তাদের মধ্যে রয়েছে হুয়াই ইবন আখতাব এবং তার দুই ভাই আবু ইয়াসির ও জুদী, সাল্লাম ইবন মিশকাম, কিনানা ইবন রাবী’ ইবন আবিল হুকায়ক। সাল্লাম ইবন আবুল হুকায়ক এ-ই ছিল সেই কুখ্যাত আবু রাফি” হিজায্যের বাসিন্দাদের সাথে যার বাণিজ্য ছিল— খায়বর ভূমিতে সাহাবীরা এ ব্যক্তিকে হত্যা করেন, যার আলোচনা পরে করা হবে। রাবী’ ইবন রাবী’ ইবন আবুল হুকায়ক, আমর ইবন জাহহাশ, কাআব ইবন আশরাফ— যে ছিল বনু তাঈ গোত্রের বৃহত্তর বনু নাবহান গোষ্ঠীর অন্যতম সর্দার এবং তার মা ছিল বনু নায়ীর গোত্রের। সাহাবীরা আবু রাফি’ হত্যার পূর্বে একে হত্যা করেন, যে সম্পর্কে পরে আলোচনা আসছে। আর হুলায়ফা আল-হাজাজ ইবন আমর এবং কারদাম ইবন কায়স। এদের প্রতি আল্লাহর লা’নত-এরা সকলেই ছিল বনু নায়ীর গোত্রের লোক। আর বনী ছালাবা ইবন ফাত্য়ুনের অন্তর্ভুক্ত ছিল আবদুল্লাহ ইবন সূরিয়া। পরবতী কালে হিজাযে তার চাইতে বড় তাওরাতের জ্ঞানী আর কেউ ছিল না।

আমি বলি, কথিত আছে যে, ইনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আর ইবন সালুবা এবং মুখায়রীক উহুদ যুদ্ধের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন— এ সম্পর্কে বর্ণনা আসছে। ইনি ছিলেন তার জাতির ধর্মযাজক। আর বনু কায়নুকা’র মধ্যে যায়দ ইবন লিসীত, সাআদ ইবন হানীফ, মাহমুদ ইবন শায়খান (মতান্তরে সুবহান), উদ্যায়য। ইবন আবু উদ্যায়য, আবদুল্লাহ ইবন যাইফ, সুয়ায়দ

শাশ ইবন আদী, শাশ ইবন কায়স, যায়দ ইবন হারিছ, নুমান ইবন উমােয়র (মতান্তরে আমর), সিকীন ইবন আবী সিকীন, আদী ইবন যায়দ, নুমান ইবন আবু আওফা আবু উনস, মাহমুদ

ভাই), খালিদ ও আযার ইবন আবু আযার। ইবন হিশাম বলেন, আযর ইবন আবু আযরাও বলা হয়। রাফি’ ইবন হারিছা, রাফি’ ইবন হুরায়মিলা, রাফি’ ইবন খারিজা, মালিক ইবন আওফ, রিফাআ ইবন যায়দ ইবন তাবৃত এবং আবদুল্লাহ ইবন সালাম।

আমার মতে, ইনি ইতোপূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইবন ইসহাক বলেন, ইনি ছিলেন তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম আলিম। তাঁর নাম ছিল হুসাইন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর নামকরণ করেন আবদুল্লাহ। ইবন ইসহাক বলেন, বনু কুরায়যার মধ্যে ছিল যুবােয়র ইবন বাতা ইবন ওয়াহাব, আযাল ইবন শ্যামওয়াল— কাআব ইবন আসাদ, এ ব্যক্তি খন্দকের যুদ্ধের বছর তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তি লংঘন করে। শামুয়েল ইবন যায়দ, জাবাল ইবন আমর ইবন

নাফি’, আবু ইবন যায়দ, হারিছ ইবন আওফ, কারদাম ইবন যায়দ, উসামা ইবন হাবীব, রাফি” ইবন যামীলা, জাবাল ইবন আবী কুশায়র, ওয়াহাব ইবন য়াহ্যা। তিনি বলেন, বনী যুরায়কের মধ্যে লবীদ ইবন আসাম— এ ব্যক্তিই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জাদু করেছিল। আর বনী হারিছার ইয়াহুদীদের মধ্যে কিনানা ইবন সূরিয়া এবং বনী আমর ইবন আওফের ইয়াহুদীদের মধ্যে কারদাম ইবন আমার এবং বনী নাজ্জারের ইয়াহুদীদের মধ্যে সিলসিলা ইবন বারহাম।

ইবন ইসহাক বলেন : এরা হলো ইয়াহুদী আলিম এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতি বৈরিতা ও বিদ্বেষ পোষণকারী এবং রাসূলের সাহাবীদের প্রতিও বিদ্বেষ পোষণকারী। আর এরা ছিল প্রশ্নকর্তা। এরা হিংসা-বিদ্বেষ, শক্ৰতা আর কুফরাবশত রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নানারূপ প্রশ্ন করে বিব্রত করার প্রয়াস পেতো। ইসলামকে নির্বাপিত করার লক্ষ্যে এরা এসব করতো। তবে আবদুল্লাহ ইবন সালাম এবং মুখায়রীক ছিলেন এর ব্যতিক্রম। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবন সালাম এবং তার চাচী খালিদা (বিনতুল হারিছ)-এর ইসলাম গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করেন, যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। উহুদ যুদ্ধের দিন মুখায়রীকের ইসলাম গ্রহণের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন, যে সম্পর্কে পরে আলোচনা আসছে। এ ব্যক্তি তার জাতির লোকজনকে সাবত দিবস তথা শনিবারে বলেছিলেন– হে ইয়াহুদী সমাজ!! আল্লাহর কসম, তোমরা নিশ্চিতভাবে জান যে, মুহাম্মদের সাহায্য করা তোমাদের অবশ্যকর্তব্য। তারা বললো, আজতো শনিবার দিন। তিনি বললেন–তোমাদের জন্য কোন শনিবার নেই। এ কথা বলে তিনি অস্ত্ৰ হাতে বেরিয়ে পড়েন এবং পেছনে তার জাতির লোকজনকে ওসীয়াত করে যান— আজ আমি যদি মারা যাই, তবে আমার সম্পদের মালিক হবেন মুহাম্মদ, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তিনি তা ব্যবহার করবেন। তিনি ছিলেন অনেক ধন-সম্পদের অধিকারী। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে যোগ দিয়ে জিহাদ করতে করতে শহীদ হয়ে যান। আল্লাহ তাঁর প্রতি প্ৰসন্ন হোন! তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, মুখায়রীক ছিলেন ইয়াহুদীদের মধ্যে উৎকৃষ্ট ব্যক্তি।

অনুচ্ছেদ এরপর ইবন ইসহাক তাদের কথা উল্লেখ করেন যে, আওস এবং খাযরাজের যেসব মুনাফিক এসব ইয়াহুদীর প্রতি ঝুকে পড়েছিল আর এসব ইয়াহুদী ছিল পরস্পর বিরোধী চরিত্রের

অধিকারী এবং মুসলিম বিদ্বেষী। এদের মধ্যে আওস গোত্রের লোক ছিল যাবী ইবন হারিছ, জাল্লাস ইবন সুওয়ায়দ ইবন সামিত আল-আনসারী, যার সম্পর্কে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে :

তারা আল্লাহর কসম করে বলে যে, তারা বলেনি; তারা অবশ্যই কুফুরী কালেমা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর কুফুরী করেছে (৯ : ৭৪)। আর ঘটনা এই যে, তাবুক যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পর সে বলেছিল যে, এ লোকটি (নবী স্য) সত্যবাদী হয়ে থাকলে আমরা তো গাধার চেয়েও অধম। তার স্ত্রীর পুত্ৰ উমােয়র ইবন সাআদ এ কথাটা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জানিয়ে দেন এবং জাল্লাস তখন কসম করে অস্বীকার করলে তার সম্পর্কে আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন। ইবন ইসহাক বলেন, ঐতিহাসিকদের ধারণা যে, লোকটি তাওবা করেছিল এবং তার তাওবা ছিল উত্তম তাওবা, এমনকি তার ইসলামগ্রহণ ও ধর্মপরায়ণতা সুবিদিত ছিল। ইবন ইসহাক আরো বলেন যে, তার ভাই ছিল হারিছ ইবন সুওয়ায়দ, যে উহুদ যুদ্ধের দিন মুজাযযার ইবন যিয়াদ আল-বালবী এবং বনী যবীআর অন্যতম সদস্য কায়সা ইবন যায়ীদ (রা)-কে হত্যা করেছিল। আসলে এ ছিল মুনাফিক; কিন্তু যুদ্ধে মুসলমানদের সঙ্গে যোগদান করে এবং লোকজনের সঙ্গে মিশে গিয়ে এদের দু’জনকে হত্যা করে; এরপর কুরায়শের সঙ্গে মিশে যায়।

ইবন হিশাম বলেন, : জাহিলী যুগের কোন এক যুদ্ধে মুজাযযার তার পিতা সুওয়ায়দ ইবন সামিতকে হত্যা করেছিলেন। উহুদ যুদ্ধের দিন সে পিতৃহত্যারই প্রতিশোধ গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে ইবন ইসহাক উল্লেখ করেন যে, সুওয়ায়দ ইবন সামিতকে হত্যা করেছিলেন মুআয ইবন আফরা। তা কোন যুদ্ধের ঘটনা নয়, বরং বুআছ। যুদ্ধের পূর্বে তীর নিক্ষেপ করে তিনি তাকে হত্যা করেছিলেন। হারিছের কায়সা ইবন যায়দকে হত্যা করার কথাও ইবন হিশাম অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ইবন ইসহাক উহুদ যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে তার নাম উল্লেখ করেননি।

ইবন ইসহাক বলেন, : রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) উমর ইবন খাত্তাবকে নির্দেশ দান করেন যে, কায়স ইবন যায়দকে বাগে পেলে তিনি যেন তাকে হত্যা করেন। হারিছ তার ভাই জাল্লাসের নিকট তাওবার ব্যবস্থা করার আবদার জানিয়ে লোক প্রেরণ করে, যাতে সে স্বজাতির মধ্যে ফিরে যেতে পারে। ইবন আব্বাস সূত্রে আমার নিকট যে রিওয়ায়াত পৌঁছেছে, সে মতে এ সম্পর্কেই

আল্লাহ কিরূপে হিদায়াত করবেন। সেসব লোককে যারা ইসলাম কবুল করার পর কুফৱী অবলম্বন করে; অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) সত্য এবং তাদের নিকট স্পষ্ট

প্ৰমাণ-নিদর্শনও উপস্থিত হয়েছিল। আর আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত দান করেন না। (৩ : ৮৬)। এখানে দীর্ঘ কাহিনী আছে। ইবন ইসহাক বলেন : বাজাদ ইবন উছমান ইবন আমির এবং নাবৃতাল ইবন হারিছ, যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :

যে ব্যক্তি শয়তান দেখা পসন্দ করে, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে। আর লোকটি ছিল। মোটা-তাগড়া, কৃষ্ণকায় দীর্ঘাঙ্গধারী, মাথার চুলগুলো উষ্ণুখুষ্ক, লাল তামাটে চক্ষুদ্বয় এবং গাল দু’টি কুচকুচে কালো। সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বাণী শ্রবণ করে তা মুনাফিকদের নিকট গিয়ে লাগাতো। এ লোকই বলেছিল :

انما مسحمد اذن مسن حد نه بیشی ء صدفهমুহাম্মদ তো আস্ত কান, কেউ তাকে কোন কথা বললে তিনি তা সত্য বলে মেনে নেন। তার সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেন :

ومنهم الذين يؤذون النبى ويقولون هو أذنতাদের (মুনাফিকদের) মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবী (সা)-কে পীড়া দেয় এবং বলে যে, সে তো কর্ণপাতকারী। (৯ : ৬১)।

প্রতিষ্ঠাতা এবং ছালাবা ইবন হাতিব এবং মুআত্তাব ইবন কুশােয়র–এরা হল সেই দু’ব্যক্তি যারা আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করেছিল যে, আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ দান করলে আমরা অবশ্যই সাদকা করবো। এরপর তারা সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। তাদের সম্পর্কেই উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়। আর মুআত্তাব হল সে ব্যক্তি, যে উহুদ যুদ্ধের দিন বলেছিল :

لوكان لنا من الأمر شىء ما قتلنا ههنا“এ ব্যাপারে আমাদের কোন অধিকার থাকলে আমরা এখানে মারা পড়তাম না।” তার সম্পর্কে আয়াতটি নাযিল হয়। আর এ হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে আহব্যাব যুদ্ধের দিন বলেছিল : মুহাম্মদ আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, আমরা কায়সার-কিসারার ধনভাণ্ডারের অধিকারী হবে–অথচ অবস্থা এই যে, আমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি শৌচাগারে যেতেও নিরাপদ বোধ করছে না। তার সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয় :

আর স্মরণ কর, মুনাফিক এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা বলেছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয় (od 3 SR)।

ইবন ইসহাক বলেন, আরো ছিল হারিছ ইবন হাতিব। ইবন হিশাম বলেন : মুআত্তাব ইবন কুশােয়র এবং ছালাবা ও হারিছ-এরা দু’জন ছিল হাতিবের পুত্র। আর এরা ছিল বনী উমাইয়া

ইবন যায়দ-এর লোক, যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং এরা মুনাফিক ছিলেন না। নির্ভরযোগ্য জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাকে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, : ইবন ইসহাক ছ’লাবা এবং হারিছকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বনী উমাইয়া ইবন যায়দের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন।

ইবন ইসহাক বলেন : সাহল ইবন হানীফের ভাই আব্বাদ ইবন হানীফ এবং ইয়াখরাজ— এরা ছিল মসজিদে ফিরারের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। আরো ছিল আমার ইবন হারাম, আবদুল্লাহ ইবন নাবৃতাল, জারিয়া ইবন আমির ইবন আতাফ এবং তাঁর দু’ সন্তান ইয়াখীদ ও মুজান্মা”— এরা দু’জন জারিয়ার পুত্র। আর এরা সকলেই ছিল মসজিদে যিরার-এর উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত। আর মুজান্মা” ছিল উদীয়মান তরুণ, অধিকাংশ কুরআন সে মুখস্থ করেছিল এবং ঐ মসজিদে সে নামাযে ইমামতী করতো তাবুক যুদ্ধের পর মসজিদে যিরার ধ্বংস করা হলে— যার বিবরণ পরে দেওয়া হবে–কুবাবাসীরা হযরত উমরের খিলাফতকালে তাঁর নিকট এ মর্মে আবেদন জানান যে, মুজাম্মা যেন তাদের ইমামতী করেন। হযরত উমর বললেন, না, আল্লাহর কসম, তা কিছুতেই হতে পারে না। সে কি মসজিদে যিারারে মুনাফিকদের ইমাম ছিল না? লোকটি আল্লাহর কসম খেয়ে বলে, মুনাফিকদের ব্যাপারে আমার কিছুই জানা ছিল না; ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, খলীফা উমর তাকে ছেড়ে দেন এবং পরে সে কুবার লোকদের ইমামতী করে। তিনি আরো বলেন : ওয়াদীআ ইবন ছাবিতও ছিল মসজিদে যিরার প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। এ হল সে ব্যক্তি, যে বলেছিল?–14, La, 2, 3, …& _ %। —আমরা তো কেবল আলাপসালাপ আর ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম। তার সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয় :

আর তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলবে, আমরা তো কেবল আলাপ-সালাপ আর ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম। তুমি বল, তবে কি তোমরা আল্লাহ, তার আয়াত–নিদর্শন এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে বিদ্রুপ করছিলে? (৯ : ৬৫)।

ইবন ইসহাক আরো বলেন, খুযাম ইবন খালিদও হল তাদের অন্যতম। আর এ হল সে ব্যক্তি, যে মসজিদে যিরার প্রতিষ্ঠার জন্য তার বাড়ীতে স্থান করে দিয়েছিল। ইবন হিশাম ইবন ইসহাকের মত খণ্ডন করে বলেন যে, আওস গোত্রের বনী নাবীত খান্দানের বাশার এবং রাফি”ও ছিল মুনাফিক। ইবন ইসহাক বলেন, : তাদের মধ্যে মুরব্বা ইবন কায়ষীও ছিল; আর সে ছিল অন্ধ। এ ব্যক্তির বাগান দিয়ে রাসূলের গমনকালে সে বলেছিল, তুমি নবী হয়ে থাকলে আমি তোমাকে আমার বাগানের ভেতর দিয়ে গমন করার অনুমতি দিতাম না। এ কথা বলে হাতে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে সে বলেছিল?

و الله لو اعلم انی لا اصیب بها غیر لک لرمیتلک بها : “আমি যদি জানতাম যে, তা কেবল তোমার মাথায়ই পড়বে, তাহলে আমি অবশ্যই তা

নিক্ষেপ করতাম।” এ কথা শুনে লোকেরা তাকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :

دعوه فهذا الاعمی اعمی القلب و اعمی البصر–“তোমরা লোকটাকে ছেড়ে দাও! সেতো চোখেরও অন্ধ আবার অন্তরেরও অন্ধ।” সাআদ ইবন যায়দ আল-আশাহালী ধনুকের আঘাতে তাকে অন্ধ করেন। তিনি (ইবন ইসহাক) আরো বলেন, : তার ভাই আওস ইবন কায়ষীও তাদের অন্তর্ভুক্ত। আর এ আওস ইবন কায়ষী খন্দক যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসূল (সা)-কে বলেছিল :,,, (,, ”, …। —আমাদের বাড়ি-ঘর অরক্ষিত। আল্লাহ্ তা’আলা তার এ কথা বাতিল করে দিয়ে বললেন, :–

و ما هی بعورة. ان يريدون y فرارا(আসলে) সেগুলো অরক্ষিত নয়। মূলত পলায়ন করাই তাদের উদ্দেশ্য (৩৩ : ১৩)। ইবন ইসহাক বলেনঃ হাতিব ইবন উমাইয়া ইবন রাফিও ছিল তাদের অন্যতম। সে ছিল অতিবৃদ্ধ এবং মােটাসোটা ব্যক্তি। জাহিলিয়াতের যুগেই সে অতিবৃদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তার সন্তান

ছিলেন। আহত অবস্থায় তাকে বনী যাফরের বসতিতে আনা হয়। আসিম ইবন উমর ইবন

হয়ে (তাকে সান্তুনা দেয়ার জন্য) বলতে থাকে, হে হাতিব তনয়! জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। ইবন ইসহাক বলেন : এ সময় তার পিতার মুনাফিকী উন্মোচিত হয়। হ্যা, হারমাল-এর বাগান আর কি!! আল্লাহর কসম, তোমরা এই নিরীহ লোকটাকে মনের দিক থেকে ধোকা দিয়েছ। তিনি বলেন, তাদের অন্যতম হলেন বুশােয়র ইবন উবায়রিক আবু তু’মা, ২টি বর্মচোর, যার সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে?

ولا تُجادل عن الذين يختانون أنفسهم – যারা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করে, তুমি তাদের পক্ষে বাদ-বিসম্বাদ করবে না, (৪ : ১০৭)। তিনি আরো বলেন, : বনু যাফরের মিত্ৰ কাযমানও ছিল তাদের অন্যতম। এ ব্যক্তি উহুদ যুদ্ধের দিন ৭ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। আঘাতে কাতর হয়ে অবশেষে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুকালে সে বলে যায়, কেবল নিজ জাতির গৌরব রক্ষার্থেই আমি লড়াই করেছি। একথা ক’টি বলার পর সে মারা যায়। তার প্রতি আল্লাহর লা’নত।

ইবন ইসহাক বলেন, : বনু আবদুল আশাহালে কোন মুনাফিক নারী-পুরুষ ছিল না; তবে দহহাক ইবন ছাবিত মুনাফিকীর অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল। ইয়াহুদীদের প্রতি ভালবাসার অভিযোগেও সে অভিযুক্ত ছিল। আর এরা সকলেই ছিল আওস গোত্রের লোক। ইবন ইসহাক বলেন, : খাযরাজ গোত্রের মধ্যে ছিল রাফি’ ইবন ওয়াদীআ। যায়দ ইবন আমর, আমর ইবন কায়স, কায়স ইবন আমর ইবন সাহল এবং জাদ ইবন কায়স–এ হল সে ব্যক্তি, যে বলেছিল (হে মুহাম্মদ) আমাকে অনুমতি দাও, ফিতনায় ফেলো না। আবদুল্লাহ ইবন উবাই ইবন সালুল–এ লোকটি ছিল মুনাফিকদের নেতা এবং আওস ও খাযরাজ গোত্রের প্রধান ব্যক্তি। জাহিলী যুগে তাকে বাদশাহ বানাবার ব্যাপারে সকলেই একমত হয়েছিল। এর আগেই আল্লাহ

Q8 –

তাদেরকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করলে দুষ্ট লোকটি ভীষণ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়। এ লোকই বলেছিল :

لئن رجعُنا الى المدينة ليخرجن الأعز منها الاذل

তার সম্পর্কে কুরআন মজীদের অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। বনু আওফের জনৈক

ওদী”আ, মালিক ইবন আবু কাওকাল, সুওয়ায়দ এবং দাইস— এসব লোকেরা তলে তলে বনু নাষীরের প্রতি বুকে পড়লে এদের সম্পর্কে নাযিল হয় :

لئن أخرجوا لأي خرجون معهم – “ওদেরকে বের করে দেয়া হলে ওদের সঙ্গে এরা বের হবে না।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *