অধ্যায় ৮৪ – উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ক্ষমতার ভ্রান্তি
১৩৮ থেকে ২২২ সালের মাঝে মার্কাস অরেলিয়াস এক বহুলপ্রচলিত রাজকীয় প্রথা ভঙ্গ করেন এবং হান রাজবংশের পতন হয়।
হাড্রিয়ানের শান্তিকামী শাসনের মাঝে ১৩৮ সালে তিনি অ্যান্টোনিয়াস পিয়াস নামের এক মধ্যবয়সি রাজনীতিবিদকে দত্তক নিয়ে তাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচন করেন। তিনি কনসাল ও গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার বয়স ছিল ৫২। তার পালক পিতার বয়স ৬২।
একইভাবে অগাস্টাস টাইবেরিয়াসকে এবং ক্লডিয়াস নিরোকে দত্তক নিয়েছিলেন। এখানে লালন-পালনের কোনো বালাই ছিল না। এটি আইনের মাধ্যমে ‘রক্ত-সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠা করার একটি প্রক্রিয়া ছিল। হান রাজবংশের খোজারাও এভাবে নিজেদের মধ্যে গোত্র তৈরি করতেন।
রোমান সম্রাটদের জন্য এটা ছিল বিশেষ সুবিধা। একাধারে পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর হত, আবার অপরদিকে ‘যোগ্য মানুষের কাছেই ক্ষমতা যাচ্ছে”, এই কথা বলে প্রজাতন্ত্রের ধ্যানধারণাকেও টিকিয়ে রাখা যেত।
এই দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রোমান সম্রাটরা ‘সন্তানের’ বদলে ‘সন্তান হিসেবে যাকে চাইতেন’, তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারতেন।
হাড্রিয়ানের মতো পিয়াসের শাসনামলও ছিল নিরুত্তাপ। ১৪৮ সালে রোমের ৯০০তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা ছিল তার সবচেয়ে বড় সাফল্য। পিয়াস দুইজন ‘উত্তরাধিকারী’কে দত্তক নিয়েছিলেন : তার ভাইপো মার্কাস অরেলিয়াস ও তার চেয়ে নয় বছরের ছোট লুসিয়াস ভেরাস।
১৬১ সালে পিয়াস মারা যান। তখন মার্কাস অরেলিয়াসের বয়স ছিল ৪০। তবে তিনি রাজনীতির চেয়ে দর্শনে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তিনি রোমের সম্রাট হতে চাননি। ফলে, তার ছোটভাই লুসিয়াস ভেরাসকে (তৎকালীন কনসাল) তিনি সহ-সম্রাটের দায়িত্ব দিলেন।
প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই এই দুই সম্রাটকে যুদ্ধে যেতে হল। চতুর্থ ভলোগাসেসের নেতৃত্বে পার্থিয়ানরা আবারও রোমের জন্য হুমকির সৃষ্টি করেছিল। তিনি সহজেই আর্মেনিয়া দখল করেন এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে হামলা চালান।
পার্থিয়ানরা সিরিয়ায় ইহুদিদের সহায়তায় রোমান সেনাদের পরাজিত করেন। লুসিয়াস ভেরাস রোমান সেনাবাহিনী নিয়ে পূর্বে যুদ্ধযাত্রা করলেন। মার্কাস অরেলিয়াস রোমের সুরক্ষা নিশ্চিত করলেন।
১৬২ সালে লুসিয়াস সিরিয়া এসে পৌঁছালেন এবং পার্থিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। তিনি নিজে আর্মেনিয়া দখল করলেন। তার অপর এক সেনাপতি দক্ষিণ-পশ্চিমে আরেক ডিভিশন সেনা নিয়ে মেসোপটেমিয়ায় হামলা চালিয়ে তেসিফন দখল করলেন।
চতুর্থ ভলোগাসেস পিছু হটলেন। রোমানরা তার প্রাসাদ দখল করে সেটা ধ্বংস করে দিল।
১৬৬ সালে বীরের বেশে রোমান সেনারা দেশে ফিরলেও তারা সঙ্গে করে মহামারির জীবাণু নিয়ে এসেছিল।
রোগটি ছিল গুটিবসন্ত। ৩ বছর ধরে এটি চলতে থাকে। প্রতিদিন দুই হাজার করে মানুষ মারা যাচ্ছিল।
এই অসুস্থতার মাঝে রোমে সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পোড়ে। দানিউবের তীরের গোত্রগুলো এই সুযোগে রোমে হামলা চালাতে এল।
উভয় সম্রাট এই হুমকির জবাব দিতে গেলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ভেরাসের খিঁচুনি হতে লাগল। তাকে রোমে ফিরিয়ে নেওয়ার আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
মার্কাস অরেলিয়াস দেশে ফিরে তার পাতানো ভাইয়ের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করলেন। এরপর তিনি দানিউবে ফিরলেন। তার শাসনামলের বাকি সময়টুকু তিনি সেখানেই কাটিয়ে দেন। শুধু গুরুতর প্রয়োজনে রোমে এবং একবার পূর্বসীমান্তে জার্মান প্রদেশের তথাকথিত বিদ্রোহ দমন করতে তিনি এ অঞ্চল ত্যাগ করেন।
মার্কাস রোমে বেশি সময় না-কাটালেও শাসক হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। তার ১৪টি সন্তান ছিল। তবে শুধু কমোডাস ৪ বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। ১৭৬ সালে কমোডাসের পাঁচ বছর বয়সে তাকে তার উত্তরাধিকারী এবং ১৫ বছর বয়সে সহ-শাসক হিসেবে নির্বাচন করেন। ক্যান্সার-আক্রান্ত মার্কাস আর বেশিদিন বেঁচে ছিলেন না। ১৮০ সালে মাত্র সাতদিনের অসুস্থতায় তিনি মারা যান।
১৯ বছর বয়সি সম্রাট কমোডাস জার্মানদের সঙ্গে সন্ধি করে এই যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে রোমে ফিরেন।
ডমিশিয়ানের পর তিনিই প্রথম বৈধ সন্তান হিসেবে বাবার ছেড়ে যাওয়া সিংহাসনের দখল পান।
যোগ্য ব্যক্তিকে উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচন ও দত্তক নেওয়ার প্রথা ভেঙেছিলেন মার্কাস। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্তে রোমে বিপর্যয় নেমে আসে।
অভিষেকের দিন থেকেই কমোডাস উদ্ভট আচরণ করতে থাকেন। রোমে ফেরার পথে তিনি তার পুরুষ-প্রেমিককে রথে নিয়ে আসেন এবং সবার সামনে তাকে চুমু খান। রোমে সমকামিতা অস্বাভাবিক না হলেও এটাকে ‘গ্রিকদের’ বদভ্যাস হিসেবে দেখা হত।
তার একের পর এক অদ্ভুত কাজ কালজয়ী উপাখ্যানে পরিণত হয়। তিনি ৩০০ ছেলে ও ৩০০ মেয়ে নিয়ে একটি হারেমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে লড়তে পছন্দ করতেন। তিনি তার এক বোনকে হত্যা করেন এবং আরেক বোনের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি নারীদের পোশাক পরে রোমে ঘুরে বেড়াতেন।
রোমের মানুষ নিশ্চিত হল, এই ‘পিশাচ’ মার্কাস অরেলিয়াসের মতো মহান ব্যক্তির রক্ত হতে পারে না—সম্ভবত তার মা কোনো গ্ল্যাডিয়েটরের সঙ্গে শুয়েছিলেন, যার ফলে তার জন্ম হয়। ১৯২ সালে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
তার মৃত্যুর পর দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে যায়।
যুদ্ধশেষে দানিউব ফ্রন্টের সেনাপ্রধান সেপটিমাস সেভেরাস শাসকের দায়িত্ব পান।
অন্য অনেক সম্রাটের মতো তিনিও রোমে এসে তার নিজের ফ্রন্টের সেনাদের প্রিটোরিয়ান গার্ডের সদস্য করে আগের সদস্যদের ভাগিয়ে দেন।
তিনিও গতানুগতিকভাবে পার্থিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়েন, ব্রিটেনে যেয়ে স্কটদের ওপর হামলা চালান এবং সীমান্তে প্রতিরক্ষা দেন।
১৯৮ সালে তিনি তার বড়ছেলে কারাকাল্লাকে উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেন।
২০৯ সালে তিনি তার ছোটছেলে গেতাকে বড়ভাইয়ের সঙ্গে সহ-শাসক বানান।
কারাকাল্লা ইতোমধ্যে তার শ্বশুরকে হত্যা করেন, স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেন এবং নিজের পিতাকে হত্যার চেষ্টা করেন। তা সত্ত্বেও, বাবার চোখে তিনিই ছিলেন প্রথম পছন্দ।
মার্কাস অরেলিয়াসের ভুলের বোঝা রোম তখনও বহন করছিল। ক্যালিগুলা ও তার পরের সম্রাটদের অত্যাচারে রোম সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী—এমনটাই ভেবেছিলেন সবাই। কিন্তু রোমানরা সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াল। অসম্ভব মনে হলেও, রোমানরা সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থার সঙ্গে প্রজাতান্ত্রিক উপকরণের যোগসূত্র ঘটাতে সক্ষম হল, এবং একই সঙ্গে পরিবারতন্ত্রকেও টিকিয়ে রাখল, যা চীনের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
১৮৪ সালে হলুদ পাগড়ি বিদ্রোহ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেল।
এই যুদ্ধে ঝাং পরিবারের তিন ভাই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন : জিয়াও (জু), বাও ও লিয়াং। প্রাচীন চীনা সাহিত্য ‘রোমান্স অব দ্য থ্রি কিংডমস’-এ তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে। তাদের নীতি ছিল, ‘হান (পরিবার) ধ্বংস হয়েছে, বিদ্রোহ জী উঠবে; বিশ্বে উন্নয়ন আসুক!’
তারা চাইতেন ধনীদের থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে দরিদ্রদের মাঝে তা বণ্টন করতে।
একাদশ শতাব্দীতে চীনা শিক্ষাবিদ ও কূটনীতিক সিমা গুয়াং “জিঝি টংজিয়ান’ নামে একটি ইতিহাস বই লেখেন। সেখানে হলুদ পাগড়ি বিদ্রোহ সম্পর্কে সবচেয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
হোয়াংহো নদীর দক্ষিণে শাংডং উপদ্বীপে যুদ্ধ শুরু হয়। শুরুতে হলুদ পাগড়ি বিদ্রোহীদের সরকারি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য করে।
১৮৪ সালে হান কর্মকর্তারা ‘শান্তি অর্জিত হয়েছে’ বলে ঘোষণা দেন, কিন্তু বিদ্রোহীরা হাল ছাড়েনি। ১৮৯ সালে রাজধানী লোইয়াং পর্যন্ত বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে যায়।
সে বছরের মে মাসে সম্রাট লিংদি মারা যান। তিনি কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। তার অবর্তমানে তার বিধবা স্ত্রী ও খোজা নেতা জিয়ান শির ঘাড়ে এই দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি জিয়ান শিকে লোইয়াং-এর সশস্ত্র বাহিনীর নেতা নির্বাচন করেন, যার ফলে এই খোজা দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষে পরিণত হন।
লিংদির ১৫ বছর বয়সি ছেলে শাওদিকে সিংহাসনে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এবার ক্ষমতাবান জিয়ান শী তার নিজের অবস্থানকে আরও বলিষ্ঠ করতে হানের প্রধান সেনাপতিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
এ সংবাদ পেয়ে যান প্রধান সেনাপতি—জবাবে তিনি প্রাসাদের সব খোজাকে হত্যার প্রক্রিয়া শুরু করেন। খোজারা এই খবর পেয়ে গেলে প্রাসাদে উভয়পক্ষের মাঝে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে খোজারা প্রধান সেনাপতিকে ধরে তার শিরশ্ছেদ করতে সক্ষম হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অপর এক সেনাপতি প্রাসাদের সব তোরণ বন্ধ করে গণহারে খোজাদের মারতে শুরু করেন। সিমা গুয়াং বলেন, ‘সব মিলিয়ে দুই হাজার মানুষ মারা যায়। তাদের মধ্যে অসংখ্য সাধারণ মানুষ ছিল, যাদেরকে ভুল করে হত্যা করা হয়।’
এই গোলযোগের সুযোগ নেন প্রাসাদের বাইরে থাকা অপর এক হান সেনাপতি। তুং চো হলুদ পাগড়িদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়ে প্রাসাদ-অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি রাজার বিধবা স্ত্রীকে আটক করেন এবং নিজেই মন্ত্রী নিয়োগ দিতে শুরু করেন। সেনাবাহিনীকে নিজের কাজে লাগান তিনি ১৫ বছর বয়সি সম্রাট ও তার ছোটভাই প্রাসাদ ছেড়ে পালালেন। কিন্তু পরে আবার ফিরে এসে তুং চাওর কাছে আশ্রয় চাইলেন। তুং চো ১৫ বছর বয়সি শাওদিকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে হত্যা করলেও ছোটভাই জিয়ানদিকে রেহাই দিলেন।
ইতোমধ্যে সাও সাও নামে অপর এক সেনাপতি চাং’আন নামক অবস্থানে তুং চোকে হত্যা করেন।
সাও এরপর জিয়ানদিকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
সাও তার নিজের মেয়ের সঙ্গে তরুণ সম্রাটের বিয়ে দেন।
২০৫ সালে অবশেষে হলুদ পাগড়িরা সাওর কাছে পরাজিত হল। তবে বেশ কয়েক দশকের দুঃশাসন ও অব্যবস্থাপনায় চীনের পরিস্থিতি ততদিনে নাজুক। জিয়ানদি লোইয়াং-এ ফিরে সিংহাসনে বসলেন, কিন্তু তার হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা ছিল না। পুরো সাম্রাজ্যজুড়ে অসংখ্য ‘রাজার’ মাঝে সংঘাত শুরু হয়।
সাও উত্তরাঞ্চলের দখল নিতে পারলেও হানদের সমগ্র ভূখণ্ডকে একীভূত করতে ব্যর্থ হলেন।
২০৮ সালে বড় পরাজয়ের মুখে পড়েন সাও।
চীনকে একীভূত করার স্বপ্ন ভেঙে যায়। তিনি পালিয়ে গেলেন এবং শুধু উত্তরাঞ্চলই হান রাজার কাছে থেকে যায়।
২২০ সালে জিয়ানদি মারা যাওয়ার আগে সাও’র ছেলের কাছে ক্ষমতা দিয়ে যান। ৪২৬ বছর পর এভাবেই হান রাজবংশের সমাপ্তি আসে।
চীন ততদিনে একাধিক অংশে বিভক্ত হয়েছে। সাওর ছেলে সাও পেই উত্তরের প্রাচীন হান ভূখণ্ড শাসন করছিল। দক্ষিণে সাওর দুই প্রতিপক্ষ শাসন করছিল। ইয়াংজি উপত্যকায় সান চুয়ান (উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা) এবং দক্ষিণ- পশ্চিমে লিউ পেই, শু হান রাজবংশের প্রথম রাজা। হান রাজবংশকে প্রতিস্থাপন করল এই ‘থ্রি কিংডমস’ বা তিন রাজবংশ। পরবর্তী ৩০০ বছর চীনে যুদ্ধ ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি।
পশ্চিমে সেপটিমাস সেভেরাস মারা গেছেন। তার দুই ভাই কারাকাল্লা ও গেতা সহ-শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। গেতাকে হত্যা করে তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন কারাকাল্লা।
পিতার মৃত্যুর পর প্রিটোরিয়ান গার্ডদের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় করতে বেগ পেতে হয় কারাকাল্লার। তারা গেতার মৃত্যুকে সহজভাবে নেয়নি।
তবে টাকার জোরে তিনি সেই সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন।
তিনি সব জায়গা থেকে গেতার নাম মুছে ফেলেন। এমনকি, তার জন্মদিন পালনও হয়ে পড়ে ব্রাত্য একটি বিষয়।
তারপর তিনি ঘোষণা দিলেন, সাম্রাজ্যের সব মুক্ত মানুষকে রোমের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
৩০০ বছর আগে এ-ধরনের এক প্রস্তাবে রোমে যুদ্ধ লেগে গিয়েছিল, যখন ইতালীয় শহরগুলোকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ আসে। কিন্তু এবার কোনো ঝামেলা ছাড়াই এই আইন পাস হল।
ততদিনে সব মিলিয়ে রোমের নাগরিকত্ব তার অর্থ হারিয়েছে। রোমানদের ক্ষেত্রে ভোটাধিকার কোনো বিষয় ছিল না।
কারাকাল্লার হাতে রোমান-পরিচয়ের তিনটি অর্থ ছিল। প্রথমত আপনাকে সম্রাটের অনুগত থাকতে হবে। বাকি সব রোমান নাগরিকের মতো আপনারও কিছু অধিকার থাকছে। আপনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে রোমের কাছে আপিল করতে পারবেন (গণহত্যার শিকার হলে ভিন্ন কথা)। আপনার বিয়ে আর অন্যান্য চুক্তিগুলো রোমের যেকোনো আদালতে বৈধতা পাবে। আপনার শিশুরা নিশ্চিতভাবে উইল অনুযায়ী আপনার প্রয়াণের পর সম্পত্তির মালিকানা পাবে। বিনিময়ে আপনাকে সরকারি কর পরিশোধ করতে হবে। কারাকাল্লার কাছে অর্থ ছিল না। ঘুস দিয়ে তিনি কোষাগার খালি করে ফেলেন। তার আরও বেশি ‘নাগরিক’ দরকার ছিল, যাতে করের পরিমাণ বাড়ে।
রোমের নাগরিকত্বের মূল অর্থ ছিল কর-পরিশোধের বিনিময়ে আইনি সুরক্ষা পাওয়া।
২১৬ সালে পার্থিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যান কারাকাল্লা।
২১৭ সালের এপ্রিলে হামলা চালানোর আগে কারাকাল্লার হঠাৎ পেট খারাপ হয়। তিনি তার এক দেহরক্ষীর সঙ্গে যাত্রা করার সময় পেটে ব্যথা হলে ঘোড়া থেকে নেমে সড়কের পাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। সেসময় কী কারণে কেউ জানে না, সেই দেহরক্ষী তাকে পেছন থেকে হত্যা করেন।
কিছু দূরে থাকা ঘোড়সওয়ার সেনারা এই আততায়ীকে জ্যাভেলিন (বল্লম) ছুড়ে হত্যা করেন। কারাকাল্লার মরদেহ ভস্মীভূত করে তার ছাই রোমে পাঠানো হয়। ২৯ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে তিনি ছয় বছর রোম শাসন করেন।
পূর্ব লেজিওনের সেনাপতি ম্যাকরিনাস নতুন সম্রাট হলেন। ২১৭ সালের বসন্তে তিনি পার্থিয়ান সীমান্তে যুদ্ধ করেন। কিন্তু পার্থিয়ার রাজা পঞ্চম আরতাবানাস তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যুদ্ধে জিততে না পেরে ম্যাকরিনাস তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।
কিন্তু একজন সেনাপতি-সম্রাটের এহেন আচরণে সেনাবাহিনীতে ক্ষোভ দানা বেধে উঠল। কারাকাল্লার চাচাতো ভাই এলাগাবালুস (যিনি দেখতে কারাকাল্লার মতোই ছিলেন এবং গুজব মতে, তিনি তার অবৈধ সন্তান) সিংহাসনের নতুন উত্তরাধিকারী হিসেবে আবির্ভূত হলেন। তিনি ছিলেন লম্বা, দেখতে সুন্দর এবং তার বয়স ছিল ১৪।
১৬ মে সেনারা ম্যাকরিনাসের বদলে এলাগাবালুসকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেয়।
ম্যাকরিনাস থ্রেসে পালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করতে যেয়ে আটক ও নিহত হন।
এলাগাবালুস সম্রাট হিসেবে তেমন সুবিধার ছিলেন না। খুব অল্পদিনেই তার ভোগ-বিলাস ও উদ্ভট কাজের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে সেনাবাহিনী।
২২২ সালে প্রিটোরিয়ান গার্ডরা সম্রাটের পদের জন্য আরেকজন ব্যক্তিকে খুঁজে পায়। এলাগাবালুসকে খুঁজে বের করতে যান তারা। খবর পেয়ে এক গণশৌচাগারে লুকিয়ে থাকেন এলাগাবালুস, কিন্তু তারা তাকে সেখান থেকে বের করে এনে হত্যা করে এবং তার লাশ নর্দমায় নিক্ষেপ করে। তারপর যথারীতি তার মরদেহ তিবার নদীতে ছুড়ে ফেলা হয়।