1 of 2

৭৬. প্রচলিত ব্যবস্থার বিনির্মাণ

অধ্যায় ৭৬ – প্রচলিত ব্যবস্থার বিনির্মাণ

খ্রিস্টপূর্ব ১৫৭ থেকে ১২১ সালের মাঝে রোমানরা কার্থেজ ধ্বংস করে, দাসদের বিদ্রোহ দমন করে এবং প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বানচাল করে।

ততদিনে রোমের সঙ্গে কার্থেজের বাণিজ্য আবারও শুরু হয়েছে। উত্তর- আফ্রিকার শহরটি স্বর্ণ-রুপা, মদ ও যবের ভালো উৎস ছিল। ফলে দুই শহরের মধ্যে অস্বস্তিকর হলেও কার্যকর শান্তি বজায় ছিল।

তবে দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধ শেষে কার্থেজের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। যুদ্ধের শর্তমতে নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী হারিয়ে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এই শহর, বিশেষত অন্যান্য হানাদারের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভীতিকর ছিল আফ্রিকার নুমিদিয়া রাজ্য। কার্থেজের নিচে, উত্তর-আফ্রিকার উপকূলে এই শহরের অবস্থান ছিল।

নুমিদিয়ার রাজা মাসিনিসা ছিলেন রোমের মিত্র। তিনি কার্থেজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেনা-সহায়তা পাঠিয়েছিলেন। বিনিময়ে রোম তাকে তার উত্তর- আফ্রিকার রাজত্ব বিস্তারে সাহায্য করে। যেহেতু শর্তমতে কার্থেজ রোমের কোনো মিত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে পারত না, সে-সুযোগে ধীরে ধীরে কার্থেজীয় ভূখণ্ড দখল করে নিচ্ছিলেন মাসিনিসা।

১৫৭ সালে বর্ষীয়ান রোমান কূটনীতিক মার্কাস কাতোর নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধি উত্তর-আফ্রিকায় যেয়ে নুমিদিয়াসকে হুঁশিয়ারি দেন—কার্থেজকে নাজেহাল না করতে। তবে কাতো ছিলেন চরম কার্থেজ-বিরোধী। তিনি কার্থেজ সফর থেকে ফিরে এসে জানান, কার্থেজ আবারও অস্ত্র, ঐশ্বর্য জোগাড় করে শক্তি সঞ্চয় করছে। ভবিষ্যতে তারা রোমের জন্য আবারও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে রোমের সব সিনেট সদস্য কাতোর দাবিতে সুর মেলাননি। তারা মত দিলেন, ৮০ বছর বয়সি কাতো আগের দিনের আতঙ্ক আবারও জাগিয়ে তুলতে চাইছেন। কিন্তু কাতো বাকি সিনেটরদের বিরক্ত করতে শুরু করলেন। তার সব বক্তব্যের শেষে বলতেন, ‘পরিশেষে, আমি বলতে চাই, কার্থেজকে পুরোপুরি ধ্বংস করা উচিত।’

কিছুটা বাধ্য হয়েই সিনেট বাধ্য হল বারবার কার্থেজকে তাদের বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে বলতে। অবশেষে, একপর্যায়ে রোম দাবি করল কার্থেজীয়দেরকে তাদের পুরনো শহর ছেড়ে চলে যেতে, অন্তত ১০ মাইল দূরে নতুন করে শহর নির্মাণ করে নিতে।

স্বভাবতই এই অন্যায় দাবি মেনে নেয়নি কার্থেজ। ১৪৯ সালে উত্তর- আফ্রিকার উপকূলের উদ্দেশে রোমান জাহাজ রওনা হল—তাদের নেতৃত্বে ছিলেন স্কিপিও অ্যামেলিয়াস; আমাদের অতিপরিচিত স্কিপিও আফ্রিকানাসের নাতি।

তিন বছরের যুদ্ধ শুরু হল। এই যুদ্ধকে কখনো কখনো তৃতীয় পিউনিক যুদ্ধ বলা হয়। এই যুদ্ধের শুরুর দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে কাতো মারা যান। অনেক রোমান তাকে স্মরণ করেন এভাবে, ‘ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি কার্থেজের বিরুদ্ধে তৃতীয় ও শেষ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন।’

কার্থেজই রোমের একমাত্র সমস্যা ছিল না। স্পার্টা আগের মতো প্রভাবশালী ছিল না। আচাইয়ান লিগের অন্যান্য শহরগুলো তাদেরকে বেশ ঝামেলায় ফেলছিল। লিগের সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে স্পার্টা সরাসরি রোমের কাছে আপত্তি জানানোর সিদ্ধান্ত নিল। ততদিনে গ্রিক উপদ্বীপে খুব সম্ভবত প্রকৃত শক্তিমত্তার একমাত্র উদাহরণ ছিল রোম। তবে লিগের বাকি দেশগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আইন পাস করল—রোমের কাছে কোনো আবেদন জানানোর এখতিয়ার থাকবে শুধু লিগের, কোনো সদস্য-দেশ আলাদা করে আবেদন করতে পারবে না।

স্পার্টা এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাল। তারা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধের হুমকি দিল। রোমে দুইপক্ষের কাছ থেকে বেশকিছু চিঠি গেল। রোমের এক দূত মেসিডোনিয়ায় একটি সমস্যা সমাধান করছিলেন। তিনি দুইপক্ষকে চিঠি দিয়ে অপেক্ষা করার আদেশ দিলেন। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। ১৪৮ সালে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।

পরের বছর রোমের কূটনীতিকরা পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এলেন। তারা করিন্থ শহরে আলোচনার আয়োজন করে স্পার্টার পক্ষে রায় দিলেন। এতে করিন্থিয়ানরা প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়ল। তারা স্পার্টানদের মতো দেখতে যে- কাউকে নির্বিচারে হত্যা করা শুরু করল। রোমের কর্মকর্তারাও এই গোলযোগের মাঝে পড়ে পিটুনি খেলেন।

স্বভাবতই, রোমান দূতরা বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখেননি। দেশে ফিরে এমনভাবে এই মারধরের বর্ণনা দিলেন, যা শুনে সবাই ধরে নিল, তাদেরকে হত্যার চক্রান্ত করেছিলে অ্যাথেন্সবাসী।

প্রতিক্রিয়ায় রোমান নৌবহর গ্রিসের উদ্দেশে যাত্রা করল। সঙ্গে ছিল ২৬ হাজার সেনা, তিন হাজার ৫০০ ঘোড়সওয়ার। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কনসাল মুমিয়াস। আচাইয়ান লিগের শহরগুলো তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারল না। এক করিন্থীয় সেনাপতির আওতায় তারা যুদ্ধ করলেও খুব শিগগির রোমান আগ্রাসনে তারা সবাই পালিয়ে করিন্থ শহরে চলে গেলেন। মুমিয়াস করিন্থে আগুন ধরিয়ে দিলেন আর রোমান সেনারা তাদের সেনাবাহিনীকে পদদলিত করল।

পরিশেষে রোম সমগ্র গ্রিসকে দখল করে নিল।

পলিবিয়াসের মতে, গ্রিক শহরগুলোই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।

যেখানে এককালে কার্থেজের অবস্থান ছিল, সেখানে রোমের প্রদেশ ‘উত্তর-আফ্রিকায়’ সৃষ্টি করা হল। রোম তার নাগালের মধ্যে থাকা সব প্রাচীন ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যকে গ্রাস করে নিয়েছিল— পার্থিয়া, মিশর এবং সেলেউসিদের যা অবশিষ্ট ছিল।

তবে সাম্রাজ্য আরও বাড়ানোর আগে রোমের অভ্যন্তরীণ কিছু কোন্দল মেটানোর প্রয়োজন দেখা দিল। নানা যুদ্ধের সাফল্যে রোমে হাজারো বিদেশি বন্দি এসে হাজির হয়েছিল। এরা রোমের বিভিন্ন প্রদেশে দাস হিসেবে অবস্থান করছিল।

রোমে এই দাসদের বিরুদ্ধে খুবই নির্দয় আচরণ করা হত। যদিও আইন মতে, দাসদের মালিক তাদেরকে মুক্তি দিলেই তারা রোমের নাগরিক হয়ে যেতেন, কিন্তু আদতে এ-ধরনের ঘটনা তেমন একটা হতোই না।

একপর্যায়ে দাসরা বিদ্রোহ করে বসল। প্রথম এন্না শহরের ৪০০ দাস একত্রিত হয়ে তাদের মালিককে হত্যা করল। মালিক ছিলেন অত্যন্ত নির্দয়। তারা সেই মালিকের বাড়ির সব সদস্যকে হত্যা করল—শিশুসহ। শুধু একটি মেয়ে প্রাণে বেঁচে গেল, কারণ সে তার পিতার দাসদের প্রতি দয়া দেখিয়েছিল।

এ ঘটনার পর তারা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজনকে নেতা হিসেবে নির্বাচন করল। ইউনুস নামের এই দাস-নেতা তিনদিনের মাঝে (ডিওডোরাস বলেন) ছয় হাজারের বেশি দাসকে অস্ত্রে সজ্জিত করলেন। তার অধীনে প্রায় ১০ হাজার দাস যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। এবার তিনি রোমান সেনাপতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার কথা বিবেচনা করতে লাগলেন।

খুব শিগগির এই বিদ্রোহে অন্যান্য দাস-নেতারাও সেনাপতি হিসেব যোগ দিতে লাগলেন। প্রথম দাসযুদ্ধে প্রায় ৭০ হাজার থেকে দুই লাখের মতো দাস যোগ দিল। রোমের অন্যান্য অংশে এবং বেশ কয়েকটি গ্রিক শহরেও এই বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠল।

অনেকে এই বিদ্রোহের সুযোগ নিয়েছিল, বিশেষত সিসিলিতে, যেখানে দাসরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিলেন। প্রায় তিন বছর ধরে চলে এই বিদ্রোহ।

শুধু সিসিলি নয়, রোমের বেশিরভাগ প্রদেশেই ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্পদে আকাশ-পাতাল ফারাক দেখা দিয়েছিল। রোম প্রায় সারাক্ষণই যুদ্ধ-বিগ্রহে মেতে ছিল। ফলে প্রতি বছর হাজারো পদাতিক সেনা যুদ্ধে যেতেন। যুদ্ধশেষে খুব অল্প পরিমাণ অর্থ নিয়ে এবং অনেকক্ষেত্রে বিকলাঙ্গ হয়ে ফিরতেন তারা। পরবর্তীকালে এসে আর চাষাবাদে ফিরতে পারতেন না। ঋণ-দেনায় কাটত তাদের জীবন।

অপরদিকে বণিকরা নতুন বাণিজ্যপথের সুবিধা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব ভালো করছিলেন। সরকারি কর্মকর্তারাও নতুন নতুন ভূখণ্ডের কর থেকে পাওয়া অর্থে আগের তুলনায় বেশি বেতন পাচ্ছিলেন।

অধিকৃত ভূখণ্ডের ব্যবস্থাপনায় রোম যে কৌশল অবলম্বন করছিল, তা খুব একটা উন্নত ছিল না। প্রায় ২০০ বছর পর ‘সিভিল ওয়ারস’ নামের বইতে ইতিহাসবিদ আপিয়ান ইতালীয় ভূখণ্ডের অধিকৃত ভূখণ্ড শাসনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত লেখেন।

রোমানরা একের পর এক ইতালীয় গোত্রকে পরাভূত করে তাদের ভূখণ্ডের অংশবিশেষ দখলে নেয়। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো বিক্রি বা ইজারা দেওয়ার সময় ছিল না তাদের হাতে। এ-ধরনের ভূখণ্ডই পরিমাণে বেশি ছিল। তড়িঘড়ি করে রোমানরা আইন তৈরি করল, যারা এ-ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করে সেখানে উৎপাদন করতে চায়, তারা তা করতে পারে—শর্ত হল, মোট উৎপাদনের বা উপার্জনের একটি অংশ রোম সরকারকে দিতে হবে। ধনীরা অর্থ ও পেশিশক্তি কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে এ-ধরনের পতিত জমিগুলোর দখল নিয়ে নেয়।

এসব ক্ষতিগ্রস্ত জমিকে ফসল ফলানো বা অন্যান্য কাজের উপযোগী করে তুলতে ভূমি-মালিকদের অনেক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল। তবে রোমান আইন বলছে, এরকম নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের যেকোনো সময় সেনাবাহিনীতে ডাকা হতে পারে। তবে এই আইনের ব্যতিক্রম ছিল দাসরা। আপিয়ান বলেন, ‘এ কারণেই ধনীরা বেশি করে দাস কিনে নিয়ে বা সংগ্রহ করতে লাগল, আর দেশজুড়ে দারিদ্র্য, করের বোঝা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা বাড়তে লাগল।’

এই দুর্বল পরিকল্পনাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন টাইবেরিয়াস সেমপ্রোনিয়াস গ্রাচ্চাস নামে এক ট্রিবিউন। তিনি এই পুরো ব্যবস্থাকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করতে লাগলেন। তিনি জনসম্মুখে দেওয়া বিভিন্ন বক্তৃতায় উল্লেখ করলেন, ‘একদিকে রোমান জেনারেলরা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ মাতৃভূমির জন্য লড়তে বলছেন আর অপরদিকে সেই একই সেনারা তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি হারাতে বসেছেন দারিদ্র্যের কশাঘাতে। তারা যুদ্ধ করছে, মারাও পড়ছে, কিন্তু তা শুধু অন্যদের ধনসম্পদকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। তাদেরকে বিশ্বের প্রভু বলা হচ্ছে, কিন্তু আদতে তারা তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতাটুকুও অর্জন করতে পারছে না।

টাইবেরিয়াস গ্রাচ্চাস কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিলেন। স্বভাবতই, তা ধনীদের বিপক্ষে গেল। তারা টাইবেরিয়াসের এই প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার জন্য অন্যান্য ট্রিবিউনদের অনুপ্রাণিত করলেন। এতে কোনো বাধা ছিল না। হালের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মতো এই ট্রিবিউনদেরও যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা ছিল।

এক্ষেত্রে টাইবেরিয়াস প্রথম ট্রিবিউন হিসেবে রোমের সংবিধান লঙ্ঘন করলেন। তিনি বেশকিছু সরকারি সেবা বন্ধ করে দিয়ে বললেন, তার প্রস্তাবে ভোট দেবে দেশের জনগণ। দেশের ভালোর জন্য এ-কাজ করলেও তিনি এক বিপজ্জনক উদাহরণ সৃষ্টি করছিলেন। তিনি তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সংবিধানকে কাঁচকলা দেখাচ্ছিলেন। গণভোটে এই প্রস্তাব পাস হল। তিনি তার শ্বশুর ও ছোটভাইকে এই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলেন।

তবে শুধু তার সহকর্মী ট্রিবিউন নয়, দেশের সাধারণ মানুষও তাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। মূলত, ট্রিবিউনদের নিয়োগ দেওয়া হয় দেশের মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য। কিন্তু সেই ট্রিবিউনরা যদি স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন বা আইনের ঊর্ধ্বে চলে যান, তাহলে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ট্রিবিউনরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।

এই পরিস্থিতিতে ট্রিবিউনদের পুনর্নির্বাচনের দিন বড় আকারে গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৩২ সালে তার বিরুদ্ধে একধরনের বিপ্লব, বিদ্রোহ বা বিক্ষোভ দেখা দেয়। নিজের সহকর্মী, সাধারণ মানুষ ও অন্যান্যরা টাইবেরিয়াসকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। ৩১ বছর বয়সি ট্রিবিউন টাইবেরিয়াসের পাশাপাশি এই ঘটনায় আরও প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হন।

টাইবেরিয়াস গ্রাচ্চাসসহ সবার মরদেহ তিবার নদীতে ছুড়ে ফেলা হয়। আপিয়ান বলেন, ‘তিনি প্রাণ হারালেন। কারণ তিনি একটি অসামান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আইনকে হেয় করেছিলেন।’

৭৬.১ দাস বিদ্রোহ

একই বছরে সিসিলির প্রথম দাস বিদ্রোহের অবসান ঘটে। কনসাল পাবলিয়াস রুপিলিয়াস নির্দয়ভাবে এই বিদ্রোহ দমন করেন। তিনি তাউরোমেনিয়াম শহরে বিদ্রোহীদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে শহরবাসীরা আত্মসমর্পণ করেন। তা সত্ত্বেও রুপিলিয়াস দাসদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করেন এবং তাদেরকে পাহাড়ের ওপর থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন। তিনি দাসদের রাজা ইউনুসকে আটক করে সিসিলির এক কারাগারে আটকে রাখেন। সেখানে তিনি পচে গলে মারা যান।

টাইবেরিয়াস গ্রাচ্চাসের মৃত্যুর ৮ বছর পর তার ভাই গাইয়াস গ্রাচ্চাস (বয়সে ৯ বছর ছোট) ট্রাইবুন হওয়ার নির্বাচনে অংশ নেন।

জুনিয়র ট্রাইবুন হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচিত হয়েই তিনি তার ভাইয়ের মতো কিছু সংস্কারের প্রস্তাব আনেন, যা আরও অনেক বেশি সাহসী ছিল। তিনি প্রস্তাব করেন, সব সরকারি জমিগুলোকে দরিদ্রদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হোক। এছাড়া, সব পদাতিক সেনাকে সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক দেওয়া, ইতালীয়দের রোমের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার দেওয়া এবং আরও প্রায় অর্ধ-ডজন বৈপ্লবিক সংস্কারের কথা বলেন গাইয়াস, যেগুলো প্রচলিত রোমান প্রথা থেকে যোজন যোজন দূরে।

কিন্তু কনসালরা এসব সংস্কারে রাজি হননি। বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ গাইয়াস তার নিজের সমর্থকদের জমায়েত করে ‘কনসালদের বাধ্য’ করতে উদ্যত হলেন। ফলে দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিল।

গাইয়াস গ্রাচ্চাস এই খণ্ডযুদ্ধে নিহত হলেন। হত্যাকারীরা এক কনসালের কাছে তার ছিন্নমস্তক এনে হাজির করলেন। ট্রফির মতো সাজিয়ে রাখা হল তার মাথা। এই রায়টে আরও তিন হাজার রোমান নিহত হলেন। এবারও মরদেহগুলো তিবারে নিক্ষেপ করা হল।

টাইবেরিয়াস গ্রাচ্চাসের মৃত্যু হয়েছিল গদা ও কাঠের তক্তার লড়াইয়ে। কিন্তু তার ভাই মারা গেলেন তরবারি-যুদ্ধে।

দুই পক্ষ ভবিষ্যতের সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *