পঞ্চসপ্ততিতম অধ্যায় – ত্রিপুরার মন্ত্র রহস্য
ভগবান্ বলিলেন,–সাধক অভিলষিত কামপ্রাপ্তির নিমিত্ত বর্ণানুক্রমে তিন লক্ষ, ছয়লক্ষ, নবলক্ষ এবং দ্বাদশলক্ষ মন্ত্র জপদ্বারা পুরশ্চরণ করিবে। ১
জাতিপুষ্প, বকুল, মালতীপুষ্প, নন্দ্যাবর্ত, পাটল, সিতপদ্ম, আজ্য, অন্ন, পায়স, দধি, ক্ষীর, মধু, লাজ, শর্করা এই চতুর্দশ প্রকার দ্রব্য ত্রিপুরাদেবীর পুরশ্চরণ সম্ভার বলিয়া কীর্তিত হইয়াছে। ২-৪
দ্বাদশ লক্ষবার জপ করিয়া এই সকল দ্রব্যদ্বারা উজ্জ্বল অগ্নিতে হোম করিবে। ৫
যে ব্যক্তি নক্ষত্র মন্ত্র জপ করিয়া পুরশ্চরণ করে, তাহার কর্পূরের সহিত আজ্যদ্বারা চতুঃশতবার হোম করা উচিত। নবলক্ষ জপ করিলে দশপ্রকার দ্রব্যদ্বারা পুনশ্চরণ করিবে। ৬
ষট্লক্ষ জপ করিলে অষ্ট প্রকার দ্রব্য দ্বারা হবন করিবে, সর্বত্র সকলেই এইরূপ করিবে। বালা এবং মধ্যা ত্রিপুরার কুণ্ড তিন অঙ্গুলাধিক একহস্ত পরিমিত এবং ষটকোণবিশিষ্ট হইবে। ৭
ত্রিপুর-ভৈরবীর কুণ্ডের পরিমাণ হস্তদ্বয় এবং চতুষ্কোণ বৈষ্ণবীর কুণ্ড ইহা অপেক্ষা আট অঙ্গুল অধিক। ৮
হে পুত্র! কামাখ্যাদেবীর কুণ্ড জ্যোতিষ্টোমাদির মত জানিবে। ৯
অনল প্রজ্বলিত হইলে প্রথমে ত্রিপুর ভৈরবীর উদ্দেশে চতুর্দশ দ্রব্য দ্বারা চতুর্দশ আহুতি দান করিবে। ১০
তাহার পর মূলমন্ত্র দ্বারা তিনশত আট বার হোম করিবে, এক একশত জপের অন্তে ছয়বার বা দ্বাদশবার জপ হোম করিবে। ১১
জপের অন্তে বলিদান করিবে, ঐ বলিদানের প্রকার বৈষ্ণবীর বলিদানের মত; রত্ন, কর্পূর এবং সুবর্ণভিন্ন বস্তু গুরুদক্ষিণা দিবে। ১২
অন্য বস্তু না মিলিলে দধি, পুষ্প এবং লাজদ্বারা দেবীর পুরশ্চরণ করিবে। এবং লাভ হইলে চতুর্দশ দ্রব্যদ্বারা বিধিপূর্বক হবন করিবে। ১৩
হে বেতাল ও ভৈরব! এক্ষণে ত্রিপুরার মন্ত্র এবং রহস্যের বিষয় শ্রবণ কর। কারণ মন্ত্রদ্বারা মনুষ্য অভিলষিত বস্তু লাভ করে। ১৪
ষটকোণ মণ্ডল করিয়া ঊর্ধ্বে তিনটি কোণ লিখিবে, তাহার অধোভাগে ত্রিপুরা দেবীর মন্ত্রান্তর্গত বর্ণত্রয় লিখিবে। ১৫
মধ্যার বীজত্রয় পীঠযন্ত্রে লিখিয়া আদ্যা ত্রিপুরার তিনটী বীজ লিখিবে। ১৬
সকল প্রকার মাতৃকাবর্ণ দ্বারা অধোভাগ তিনবার বেষ্টন করিবে। অনন্তর ঐ কবচ লাক্ষারস দ্বারা লিখিয়া লৌহদ্বারা তিনবার বেষ্টন করিবে। ১৭
ঐ কবচ মস্তকে ধারণ করিলে সর্বত্র বিজয়ী, রূপবান, গুণবান, বাগ্মী, সৰ্ব্বদা ধন ও রত্নযুক্ত, দীর্ঘায়ুঃ, কামভোগী এবং সুপ্রজ হয়। ১৮
মধ্যার বীজ লিখিয়া একটি মস্তকে, আর একটি তাহার নীচে ধারণ করিবে। আদ্যা ত্রিপুরা এবং ভৈরবী ত্রিপুরারও এইরূপ জানিবে। ১৯
হে বেতাল ও ভৈরব! এই ছয় প্রকার মন্ত্র পূর্বের মত লিখিয়া এবং ত্রিলৌহ দ্বারা সংবেষ্টন করিবে। ২০
বাম বা দক্ষিণ বাহুতে, হৃদয়ে, কণ্ঠে, করতলে এবং মস্তকে ধারণ করিলে ক্রমশঃ সম্পৎ, সৌভাগ্য, সংস্তম্ভ, বশীকরণ, মোহন এবং কবিত্ব এই সকল ফল লাভ হয়, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ২১-২২।
হে ভৈরব! ত্রিপুরার যন্ত্রমন্ত্র তন্ত্র মন্ত্র সমূহদ্বারা ত্রিগুণ করিলে ছয় হাজার পাঁচ হয়। ২৩
পূজক ইহা বিজ্ঞাত হইলে পরকালে বা ইহকালে অবসন্ন হয় না। ২৪
হে বেতাল ও ভৈরব! ত্রিপুরার কবচ গ্রহণ কর, যাহা জ্ঞাত হইলে মন্ত্রবিৎ পূজার সম্যক্ ফল প্রাপ্ত হয়। ২৫-২৬
পূর্বোক্ত পূজায় যে সকল উপচার উক্ত হইয়াছে এবং নিত্যপূজায় যে সকল প্রতিপত্তির বিষয় বলা হইয়াছে, এ স্থলে সেই সকল সেইরূপ জানিবে। ২৭
কবচের মাহাত্ম্য আমি, ব্ৰহ্মা, কেশব এবং সহস্রজিহ্ব অনন্তও কখন বলিতে সক্ষম নহেন। ২৮
রাক্ষসের ভয়, অগ্নিভয় এবং জলবিপ্লব উপস্থিত হইলে এই কবচ স্মরণ করিয়া সকল প্রকার কল্যাণ লাভ হয়। ২৯
এই ত্রিপুরা কবচের দক্ষিণ ঋষি, চিত্রা, ছন্দ, দেবতা, ত্রিপুরভৈরবী এবং ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষের সাধনে বিনিয়োগ। ৩০
আদ্য ত্রিপুরার বাগভবাদি বীজগণের প্রত্যেকের নাম করিয়া আমি পূর্বে কীৰ্ত্তন করিয়াছি। ৩১
ত্রিপুর-ভৈরবীরও বীজসকলের নাম কীর্তন করিয়াছি,যথা–বাগভব, কামবীজ, ত্রৈলোক্যমোহন। ৩২
পঞ্চকৃত্য দ্বারা গদিত মন্ত্রের সহিত এই মন্ত্র আমার উগ্রতেজ বর্ধিত করুক। ৩৩
সেই তেজোময় রূপে নিত্য নিমগ্ন মন্ত্রকে নমস্কার। আমার প্রশস্ত সুবুদ্ধির বিস্তার করুক। ৩৪
বাগভব আধারে রক্ষা করুক, কামরাজ হৃদয়ে রক্ষা করুক, জ্বর মধ্যে এবং মস্তকে ত্রৈলোক্যমোহন রক্ষা করুক। ৩৫
সকল কুলকলাজ্ঞা সকল লোকের মাতা ত্রিপুর-ভৈরবী নামে যে কামিনী আছেন, সেই গণপতিবনিতা আমার নাভিপদ্মে এবং কুক্ষিতে রোগহানি ও সুখ বিতরণ করুক। ৩৬
যিনি যোগদ্বারা সমস্ত জগতকে যেন মোহিত করিয়া ত্রিপুরভৈরবভাবিনী রূপে সৰ্ব্বদা জাগ্রত, সেই পঞ্চতারকরূপিণী ত্রিপুরা আমার নাসা, অক্ষি, কর্ণ এবং রসনাদ্বয়ে রক্ষা করুন। ৩৭
আদ্য ত্রিপুরা কামদায়িনী, মধ্যা ত্রিপুরা এবং ত্রিপুরভৈরবী এই তিন মূর্তি আমাকে নিত্য রক্ষা করুন। ৩৮
বালা ত্রিপুরা পূর্বদিকে আমাকে রক্ষা করুন, মধ্যা ত্রিপুরা দক্ষিণ দিকে আমার মঙ্গল বিধান এবং সুন্দরী ত্রিপুরভৈরবী পশ্চিম দিক ও বায়ুকোণের মধ্যে আমাকে নিত্য রক্ষা করুন। ৩৯
মহামায়া মহাযোনি এবং সৰ্ব্বদা বিশ্বযোনি সেই ত্রিপুরাসুন্দরী ভৈরবী নিত্য আমাকে রক্ষা করুন। ৪০
ললাটে সুভগা দেবী, পূৰ্বদিকে কামদায়িনী ত্রিপুরা সুন্দরী নিত্য রক্ষা করত অবস্থান করুন। ৪১
জ্বর মধ্যে এবং অগ্নিকোণে ত্রিপুরাভগমাতা ত্রিপুরা ভগগণের বর্ধন করত আমাকে রক্ষা করুন। ৪২
মুখে এবং দক্ষিণদিকে ভগসর্পিণী ত্রিপুরা যমদূত প্রভৃতি বারণ করিয়া আমাকে রক্ষা করুন। ৪৩।
কর্ণ এবং পশ্চিমদিকে অযোনিজা জগদযোনি বালা ত্রিপুরা আমাকে রক্ষা করুন। ৪৪
কণ্ঠে এবং পশ্চিমদিকে মহেশ্বরী, অনঙ্গকুসুমা, সুন্দরী, ত্রিপুরভৈরবী মাতা নিত্য রক্ষা করুন। ৪৫
হৃদয় এবং বায়ুকোণে অনঙ্গ মেখলাদেবী রক্ষা করুন এবং নাভি ও উত্তর দিকে মাতঙ্গী-ত্রিপুরা আমাকে রক্ষা করুন। ৪৬
ঈশানকোণে এবং লিঙ্গে মদবিভ্রমমন্থরা বাগ্বাদিনী ত্রিপুরভৈরবী আমাকে রক্ষা করুন। ৪৭
অপানদেশ এবং মেঢ্রের অন্তরে ত্রিপুর-ভৈরবী রতি রক্ষা করুন এবং হৃদয়ের অন্তরে প্রীতিনাম্নী ত্রিপুর-ভৈরবী রক্ষা করুন। ৪৮
ভ্রূ এবং নাসার মধ্যভাগে মনোভবা নিত্য রক্ষা করুন। দ্রাবণ নামে বাণ দুর্গের মস্তকে শত্রু হইতে আমাকে রক্ষা করুক এবং অভয়-প্রদ ক্ষোভণ নামে বাণ ক্রব্যাদগণ হইতে আমাকে রক্ষা করুক। ৪৯-৫০
বশীকরণনামক বাণী আমাকে অগ্নি হইতে এবং রাজগণ হইতে রক্ষা করুক এবং আকর্ষণনামক বাণ শস্ত্রাঘাত হইতে আমাকে রক্ষা করুক। ৫১
মোহননামক বাণী নিত্য উত্তম অভিলাষ প্রদান করত আমাকে সকল প্রকার ভূত, পিশাচ ও যম হইতে রক্ষা করুক। ৫২
মালা আমাকে জ্ঞান বিধানে এবং শাস্ত্রবাদে সৰ্ব্বদা রক্ষা করুক এবং পুস্তক মনের সঙ্কল্প বৃদ্ধি করত আমাকে রক্ষা করুক। ৫৩
বর সর্বদা ধাম ও তেজ বর্ধন করত আমার গৃহে রক্ষা করুক। এবং ভূতিভাবন অভয়ও আমাকে অভয় প্রদান করিয়া রক্ষা করুক। ৫৪
হ নিত্য আমার হৃদয়ে, স শীর্ষদেশে, র গুহ্যদেশে এবং সৌঃ কণ্ঠে ও পার্শ্ব দেশে রক্ষা করুক। ৫৫
রকার আমার সকল প্রকার নাড়ীতে, এবং সৌ: আমার মস্তকে রক্ষা করুক। আকাশে ইন্দ্র রক্ষা করুন এবং ব্রহ্মা সৰ্ব্বত্র রক্ষা করুন। ৫৬
বিদ্যা ও অবিদ্যার ভাবিনী, কামরূপা, আদিমায়া এবং মায়াবশে স্থূল ও সূক্ষ্মাকারে অনুভূয়মানা ব্ৰহ্ম ও ইন্দ্রাদি দেবগণকর্তৃক অর্চিতা এবং ভূতিদাত্রী ভৈরবী সর্বত্র আমায় রক্ষা করুন ৫৭-৫৮
তুমি ব্ৰহ্মাণী, তুমি ভবানী, তুমি বিশ্বভাবনের লক্ষ্মী, রতি, যোগিনী, তুমি বাগ্মী, সুভগা তোমার মন্ত্র সংক্ষেপত ধরিলেও দুই অযুত। ৫৯
ঐ সকল মন্ত্রের বর্ণ তোমার শরীরে অবিচলিত হইয়া রহিয়াছে, তুমি কামিনী এবং কামদা। হে দেবি ত্রিপুরে! তুমি আমার নির্মল কবিত্ব এবং উচ্চ সৌভাগ্য বর্ধন কর। ৬০
দেবীর এই কবচ যে জ্ঞাত হয়, সেই মন্ত্রবিৎ, তাহার কখনই আধি ব্যাধি বা ভয় হয় না। ৬১
এই অতিশয় গুহ্য কামাখ্যাকবচ তোমার নিকট কীৰ্তন করিলাম; হে মহাভাগ! তুমি ইহার সেবা কর, তাহা হইলে সিদ্ধি প্রাপ্ত হইবে। ৬২
ইহা পরম পবিত্র, পুণ্য এবং কীর্তির বর্ধন। ত্রিমূর্তি ত্রিপুরার এই কবচ আমি তোমাকে বলিলাম। ৬৩
যে ব্যক্তি প্রাতঃকালে উঠিয়া এই কবচ পাঠ করে, সে মনোগত ফল প্রাপ্ত হয়। ৬৪
যে মন্ত্রজ্ঞ ব্যক্তি লিখিত কবচ কণ্ঠে গ্রহণ করে, হে ভৈরব! যুদ্ধে শক্র সকল তাহার শরীর ছেদ করে না। সংগ্রামে বা শাস্ত্রীয় তর্কে তাহার জয় হয়, সে বিষয়ে সংশয় নাই। এই কবচ না জানিয়া যে ব্যক্তি ত্রিপুরার পূজা করে, সে শস্ত্রাঘাত প্রাপ্ত হয়। ৬৬-৭৬
হে পুত্র ভৈরব! এই তোমায় সংক্ষেপে সকল কথা বলিলাম, তুমি পরম সিদ্ধিলাভ করিয়া নিজেই ইহার বিস্তার করিবে। ৭৭
সেই মহামায়ার আরাধনা দ্বারা গণের আধিপত্য লাভ করিয়া কল্পমন্ত্রসমূহ এবং তন্ত্রের স্বয়ং বিস্তারক হইবে। এই ত্রিপুর-ভৈরবী দেবীর যে সকল শুক্লরূপ, তাহা সারস্বত বলিয়া প্রসিদ্ধ, মন্ত্রও ঐরূপ জানিবে। ৭৮-৮০
যে সরস্বতী দেবী বীণাপুস্তকধারিণী, শুক্ল কমণ্ডলুহস্তা,দক্ষিণে শুক্লবর্ণধারিণী, মহাচলপৃষ্ঠস্থা, শ্বেতবর্ণপদ্মোপরিস্থিতা, শুক্লবস্ত্রা, শুক্লবর্ণা, শুক্লাভরণভূষিতা। ৮১-৮২
তাহার দ্বিতীয় নেত্রবীজ-সংযোগে বাগভবাদি দ্বারা মন্ত্ৰ পূৰ্বে প্ৰতিপাদিত হইয়াছে। ৮৩
বরদা, অভয়হস্তা মালাপুস্তকধারিণী, শুক্লপদ্মাসনগতা, বাকরূপা সরস্বতী। ৮৪
দ্বিরুক্ত সার্ধচন্দ্র বালা-বীজাদ্যক্ষর ইহার সামান্য মন্ত্র বলিয়া কথিত হইয়াছে। ৮৫
বৃদ্ধা সরস্বতী রক্তবর্ণা, মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তাহার মন্ত্র পূর্বে বলা হইয়াছে। ৮৬
হে ভৈরব! ইহার মন্ত্রযন্ত্র ত্রয়োদশে নিরূপিত হইয়াছে। ইহারা সকলে কবিত্ব শাস্ত্রৌঘ এবং তত্ত্ববাদের বিনিশ্চায়ক, আর সুখসম্পদকর বলিয়াও উক্ত হইয়াছে। শুক্লরক্তাদিভেদে এবং ব্যস্ত সমস্তরূপে ইহাদের মূর্তি চৌষট্টিপ্রকার, সকলই ত্রিপুরার অন্তর্গত। ৮৭-৮৮
মহামায়া যোগনিদ্রা, জগৎপ্রসবিনী, মূলপ্রকৃতি, জগতের মাতা, জগতের ধাত্রী এবং বিদ্যা-অবিদ্যাত্মিকা। ত্রিপুরাদি দেবী সমূদয় তাহারই অংশ, ইহা হইতে তাহারা সকলে উৎপন্ন হইয়াছেন। ৮৯-৯০
হে পুত্র! এই তোমার নিকট মহাদেবীর বামদাক্ষিণ্য মনোহর রহস্যের কথা বলিলাম, এক্ষণে মন্ত্রসিদ্ধির কথা শ্রবণ কর। ৯১-৯২
পঞ্চসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭৫