1 of 2

৭৪. রোমান স্বাধীনতাকামী ও সেলেউসিদ দখলদার

অধ্যায় ৭৪ – রোমান স্বাধীনতাকামী ও সেলেউসিদ দখলদার

খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে ১৬৮ সালের মাঝে রোমান ও সেলেউসিদদের মাঝে সংঘাত হয়। গ্রিসের বাষ্ট্রিয়া ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং লাতিন প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাষার মর্যাদা পায়।

৫০ বছর বয়সে তৃতীয় অ্যান্টিওকাস সেলেউসিদ সাম্রাজ্যে তার শাসনামলের ৩২তম বছর পার করছিলেন। তার সাফল্যের মাঝে অন্যতম ছিল পুরনো মিশরীয় ভূখণ্ড দখল, পার্থিয়া ও বাষ্ট্রিয়ার মাঝে শান্তি প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীতে এসব অর্জনের জন্য তিনি ‘মহান অ্যান্টিওকাস’ খেতাব পান। এরপর তিনি পশ্চিমে যেয়ে এশিয়া মাইনরের কিছু অংশ এবং হেলেসপন্ট পেরিয়ে থ্রেস দখল করতে চেয়েছিলেন।

কার্থেজীয়দের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর রোমান সেনারা পূর্বদিকে নজর দিচ্ছিল। তখন সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র প্রতাপশালী রাজত্ব হিসেবে সেলেউসিদ টিকে ছিল। হ্যানিবলের পরাজয়ে তৃতীয় অ্যান্টিওকাস রোমের নতুন শত্রুতে পরিণত হলেন।

রোমানরা নিশ্চিত ছিলেন, মেসিডোনিয়ার রাজা পঞ্চম ফিলিপ গ্রিস দখল করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু রোম চায়নি গ্রিক উপদ্বীপ একজন সেলেউসিদপন্থী রাজার দখলে যাক। তাই রোমান সেনারা পঞ্চম ফিলিপের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করল।

১৯৭ সালে বেশ দ্রুতই দ্বিতীয় মেসিডোনীয় যুদ্ধের অবসান হল। সাইনোস্কেফালিতে এই যুদ্ধ হয়। ফিলিপের সেনারা এতটাই পর্যুদস্ত হল যে তিনি তার নিজের দেশের স্বাধীনতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তবে পরবর্তী এক দশক গ্রিক শহরগুলোর বিরুদ্ধে লড়ার কোনো ইচ্ছে রোমের ছিল না। রোম নতুন একটি ‘শান্তি প্রস্তাব’ উত্থাপন করল। পঞ্চম ফিলিপ মেসিডোনিয়াতেই থাকতে পারবেন, কিন্তু গ্রিক শহর দখলের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হবে তাকে। মেসিডোনিয়াকে তাদের সব যুদ্ধজাহাজ আত্মসমর্পণ করতে হবে, জরিমানা দিতে হবে এবং গ্রিক সাম্রাজ্য থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। মেসিডোনিয়ায় রোমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন কনসাল ফ্লামিনাস। তিনি মেরোদাক-বালাদান/নেপোলিয়ন/দ্বিতীয় সার্গন/সাইরাস কার্ড খেললেন—বড় করে ঘোষণা দিলেন, গ্রিসের সব শহরকে মেসিডোনিয়ার শোষণ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। ডিক্রিতে বলা হল, ‘এশিয়া ও ইউরোপে গ্রোসের বাকি সব শহরগুলো এখন মুক্ত। তারা নিজ নিজ আইন দ্বারা শাসিত হতে পারবে।’

সব চুক্তি সাক্ষর হতে-না-হতেই উত্তরে আবির্ভূত হলেন তৃতীয় অ্যান্টিওকাস। ১৯৬ সাল নাগাদ এশিয়া পেরিয়ে তিনি হেলেসপন্টে এসে পৌঁছালেন। সেখানে তিনি থ্রেসের দখল নিলেন। তিনি রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে আগ্রহী ছিলেন, মূলত হ্যানিবলের কারণে। কার্থেজ থেকে পালিয়ে সেলেউসিদ রাজসভায় উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন হ্যানিবল। কার্থেজের প্রতি ভালোবাসা হারালেও রোমের প্রতি ঘৃণা একবিন্দুও কমেনি হ্যানিবলের।

১৯১ সালে থার্মোপিলিতে দুই সেনাবাহিনী একে অপরের মুখোমুখি হল। রোমানরা অ্যান্টিওকাসের সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করল। হাজারো সেনা নিহত হল এবং এই উপদ্বীপ ছেড়ে চলে গেলেন অ্যান্টিওকাস।

এই পরাজয়ের মাধ্যমে মহান অ্যান্টিওকাসের পতনের শুরু। পিছু হটার সময় এশিয়া মাইনরের কিছু ভূখণ্ডের দখল হারালেন তিনি। আর্মেনিয়ার সাতরাপ প্রথম আরতাজিয়াস নিজেকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন।

ধীরে ধীরে অন্যান্য সাতরাপরাও বিদ্রোহ করতে লাগলেন। ১৮৭ সালে অ্যান্টিওকাস পূর্বাঞ্চলের এক বিদ্রোহী সাতরাপ দমন করতে গেলে নিহত হন। তার সন্তান চতুর্থ সেলুকাস সিংহাসনে বসলেন।

পৃষ্ঠপোষকের প্রয়াণে হ্যানিবল আবারও পালাতে বাধ্য হলেন। প্লুটার্ক জানান, তিনি অবশেষে কৃষ্ণসাগরের উপকূলে একটি ছোট, অজানা শহরে থিতু হলেন। রোমের আততায়ীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সাতটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ তৈরি করলেন।

১৮২ সালে, ৬৫ বছর বয়সে স্থানীয় রাজার সঙ্গে দেখা করতে এসে এক রোমান সিনেটর হ্যানিবলকে চিনে ফেলেন। সিনেটর রাজাকে হুমকি দিলেন, রোমের শত্রু হ্যানিবলকে আশ্রয় দিলে তাদেরকে পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেই রাজা হ্যানিবলের পালিয়ে যাওয়ার সাতটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন। কিন্তু আততায়ীর হাতে ধরা না দিয়ে আত্মহনন করলেন হ্যানিবল। প্লুটার্ক জানান, বিষ খাওয়ার আগে হ্যানিবলের শেষ কথা ছিল, ‘আসুন আমরা রোমানদের নিরন্তর ভয়ভীতির অবসান ঘটাই।’

সেলেউসিদ আগ্রাসনের ভয় কমে যাওয়া পূর্বের বাষ্ট্রিয়ানরা তাদের নিজেদের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের সুযোগ পেয়ে গেলেন। তাদের তৎকালীন রাজা, প্রথম ডিমেট্রিয়াস ছিলে গ্রিক-বাষ্ট্রিয়ান। তার নজর ছিল দক্ষিণ-পূর্বে ভারতের দিকে।

তখন ভারত বেশ ঐশ্বর্যশালী হলেও বিদেশি আগ্রাসন ঠেকাতে সক্ষম, এমন কোনো বলিষ্ঠ নেতা ছিল না তাদের। অশোকের মৃত্যুর পর তার সন্তানরা নিজ ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ২৪০ সালে অশোকের মৃত্যুর পরবর্তী ৫০ বছরে সাতজন মৌর্য রাজা এই ক্ষয়িষ্ণু অঞ্চলে রাজত্ব করেন।

তাদের সর্বশেষ রাজা ছিলেন বৃহদ্রথ। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ছিলেন। সত্যের সন্দানে তিনি এক হাজার দিন তপস্যা করতে উদ্যত হন। সেসময় তার জ্যেষ্ঠপুত্রের কাছে রাজ্যভার দিয়ে যান তিনি। ১৮৫ সালের আশেপাশে তার প্রধান সেনাপতি তাকে হত্যা করেন। পুষ্যমিত্র শুঙ্গ নামের এই হিন্দুধর্মাবলম্বী সেনাপতি সাম্রাজ্যে বাকি যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, তার দখল নিলেন। তিনি হিন্দু আধিপত্য স্থাপনে বিশ্বাসী ছিলেন এবং বৌদ্ধদের অপছন্দ করতেন বলে প্রাচীন বৌদ্ধ নথিতে বলা হয়েছে।

এসময় খাইবার পাস ধরে পাঞ্জাবের দিকে এগিয়ে এলেন প্রথম ডিমেট্রিয়াস। পরবর্তী আগ্রাসনের কোনো লিখিত বর্ণনা নেই। ফেলে যাওয়া মুদ্রা ও অন্যান্য সূত্র ধরে ইতিহাসের এই অংশটি পুনর্নির্মাণ করেছেন ইতিহাসবিদরা। প্রতিটি অঞ্চলে নতুন কোনো রাজা শাসনভার গ্রহণ করলে তাদের মুখাবয়ব-সম্বলিত মুদ্রা ছাড়তেন। সুতরাং, কোনো এক রাজা বা তার রাজত্ব সম্পর্কে আর তেমন কিছু জানা না-গেলেও মুদ্রায় অঙ্কিত ছবি দেখে তাদের চেহারা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এসব তথ্য থেকে যতদূর জানা যায়, প্রথম ডিমেট্রিয়াস পুরুষাপুরা ও তক্ষশিলা দখল করেন। ১৭৫ সাল নাগাদ তিনি পাঞ্জাবে এসে পৌঁছান।

৭৪.১ বাষ্ট্রিয়া ও ভারত

ইতোমধ্যে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ দখল করে নিয়েছেন।

ফিলিপের মৃত্যুর পর পারসিউস মেসিডোনিয়ার রাজা হলেন। তিনি রোমের কাছে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠালেন। কিন্তু মনে মনে তিনি আরও একবার গ্রিসে হামলা চালানোর কথা ভাবছিলেন।

তার এই উদ্দেশ্য আরও ভালো করে প্রকাশ পায় যখন তিনি চতুর্থ সেলুকাসের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তবে কিন্তু খুব শিগগির সেলেউসিদদের কাছ থেকে সাহায্যের আশায় গুড়ে বালি পড়ল, উল্লিখিত বিয়ের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর হাতে নিহত হলেন চতুর্থ সেলুকাস। চতুর্থ সেলুকাসের শিশু সন্তান রাজা হল এবং তার রিজেন্টের দায়িত্ব পেলেন রাজার ছোটভাই চতুর্থ অ্যান্টিওকাস (পরবর্তীতে অ্যান্টিওকাস এপিফেনিস নামে পরিচিত)। রিজেন্ট হয়েই শিশুরাজাকে হত্যা করলেন তার এই চাচা।

অপরদিকে, পারসিউস রোমের সন্দেহ না-জাগিয়ে গ্রিস দখলের অভিযানে নামলেন। পলিবিয়াস জানান, তিনি গ্রিসের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে যেয়ে ‘তাদের ভরসা’ আদায় করতে লাগলেন। এক্ষেত্রে তিনি ‘কোনো যুদ্ধ বা ক্ষয়ক্ষতি’ এড়িয়ে চললেন।

প্রায় তিন বছর তার এই কৌশল গোপন রইল। অবশেষে এশিয়া মাইনরের পারগামাম শহরের শাসক ইউমেনেস পারসিউসের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সরাসরি রোমে যেয়ে তার বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউমেনেসকে হত্যা করতে আততায়ী পাঠালেন পারসিউস। তবে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল এবং পারসিউসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও গ্রহণযোগ্যতা পেল।

১৭১ সালে ১৭ হাজার রোমান সেনা মেসিডোনিয়ার দিকে রওনা হল। এর মাধ্যমে তৃতীয় মেসিডোনীয় যুদ্ধের সূত্রপাত হল। পারসিউস রোমে দূত পাঠিয়ে কৈফিয়ত চাইলেন। তার দূত রোমের সিনেটের কাছে জানাল, পারসিউস এহেন আচরণে মর্মাহত হয়েছেন। তবে এসব কথায় পাত্তা না দিয়ে রোম থেকে জানানো হল, খুব শিগগির একজন কনসাল সেনা নিয়ে মেসিডোনিয়ায় হাজির হবেন। পারসিউসের যা যা প্রশ্ন আছে, তার কাছেই যেন তা পেশ করে—জানাল রোমান সিনেট।

তৃতীয় মেসিডোনীয় যুদ্ধ তিন বছর স্থায়ী হয়। পিদনার যুদ্ধে মেসিডোনিয়াকে শায়েস্তা করে রোম। ১৬৮ সালে পারসিউসকে আটক করে রোমে নিয়ে আসা হয়। মেসিডোনিয়াকে চার ভাগে ভাগ করার প্রক্রিয়াটির দায়িত্বে ছিলেন এক রোমান কনসাল। এভাবেই বড় সাম্রাজ্য হিসেবে আলেকজান্ডারের জন্মভূমি মেসিডোনিয়ার অস্তিত্ব বিলীন হল।

রোমের দূতরা অ্যান্টিওকাস এপিফেনিসের দরবারে এসে জানতে চেয়েছিলেন তারা পারসিউসকে সমর্থন জানাবেন কি না। উত্তরে অ্যান্টিওকাস জানান, রোমের বিরুদ্ধাচরণ করার কোনো ইচ্ছে তার নেই। বরং তিনি মিশরে অভিযান চালাতে আগ্রহী।

তরুণ মিশরীয় রাজা ষষ্ঠ টলেমি তার উপদেষ্টাদের প্ররোচনায় সেলেউসিদ সাম্রাজ্যের কাছে পশ্চিমা সেমাইট ভূখণ্ডের দখল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। মহান অ্যান্টিওকাস টলেমি রাজবংশের কাছ থেকে ইসরায়েল, সিরিয়া, জুদাহ ও এর আশেপাশের কিছু প্রাচীন রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। এসব অঞ্চলকে কোয়েলে সিরিয়া’ নামের এক বৃহত্তর সাতরাপির আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং মিশর তা ফিরে পেতে চেয়েছিল।

ফিরিয়ে দেওয়া তো দূরে থাক, অ্যান্টিওকাস এপিফেনিস তার সেনাবাহিনী নিয়ে আলেকজান্ড্রিয়ায় হামলা চালান। সেসময় রোম মেসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তবে এই আগ্রাসন রোমের সিনেটের নজর এড়ায়নি। এক রোমান দূত অ্যান্টিওকাসের শিবিরে চিঠিসহ হাজির হলেন। চিঠিতে অ্যান্টিওকাসকে বলা টলেমিদের বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করে তাৎক্ষণিকভাবে মিশর ছেড়ে যেতে। অ্যান্টিওকাস সময় চাইলেন; বললেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ করবেন। কিন্তু রোমের দূতরা (লাইভির দেওয়া তথ্যমতে) অ্যান্টিওকাসের চারপাশে একটি চক্র এঁকে দিয়ে বললেন, ‘এই চক্র ছেড়ে বের হওয়ার আগে রোমের সিনেটের জন্য জবাব দিয়ে যেতে হবে, নচেৎ…।’ কিছুক্ষণ ইতস্তত করলেও তিনি জবাব দিলেন, ‘সিনেট যা ভালো মনে করে, আমি তাই করব’। তখনো তিনি রোমের বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো শক্তিমত্তা বা সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি।

৭৪.২ প্ৰতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সাতরাপি

রোমের কাছে হেনস্তা হয়ে অ্যান্টিওকাস তার রাগ ঝাড়লেন কোল সিরিয়ার সাতরাগিগুলোর ওপর। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি মিশরের সঙ্গে মিত্র, এমন সব জাতি ও গোত্রের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালাতে লাগলেন। এর মাঝে ছিল জেরুজালেমের অসংখ্য বাসিন্দা।

ইহুদিদের মন্দির জ্বালিয়ে পুড়িয়ে লুট করলেন তিনি। তবে এতে ধর্মীয় কারণের চেয়ে ধনসম্পদের লোভ বেশি জোরালো ছিল। কপর্দকহীন অ্যান্টিওকাসের জন্য এই সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে পরায় ইসরায়েলের ইহুদিরা পালিয়ে বাঁচলেন। অ্যান্টিওকাস ইহুদি ধর্মপালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। শূকরের মাংস খেতে কেউ অস্বীকার করলেন (ইহুদি ধর্মে এটি নিষিদ্ধ) অথবা ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থসহ কাউকে পাওয়া গেলে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত।

ইহুদিরা প্রায় এক বছর এ-ধরনের বর্বরতা সহ্য করলেন। এরপর তাদের মাঝে জ্বলে উঠল বিদ্রোহের আগুন। পুরনো এক পূজারি পরিবারের বংশধর পাঁচ ভাই এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। সবচেয়ে বড়ভাই জুডাস এতে সেনাপতির ভূমিকা পালন করেন। প্রায় ছয় হাজার ইহুদিকে একত্র করে তিনি গেরিলাযুদ্ধ শুরু করেন। তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করে ‘জুডাস মাকাবিউস’ বা ‘জুডাস দ্য হ্যামার (হাতুড়ি জুডাস)’ নাম দেওয়া হল। এই যুদ্ধের নাম হল ম্যাকাবিয়ান যুদ্ধ।

এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলার পেছনে বড় কারণ ছিল জুডাসের সঙ্গে রোমের বন্ধুত্ব। রোম সবসময় সেলেউসিদের ক্ষমতা খর্ব করার যেকোনো উদ্যোগের বিষয়ে আগ্রহী ছিল। এই জোট বেশিদিন না টিকলেও রোমের পৃষ্ঠপোষকতায় জুডাস প্রায় চার বছর এই যুদ্ধ চালিয়ে যান।

একপর্যায়ে অ্যান্টিওকাস এপিফানেসের মৃত্যু হল এবং প্রাচীন আমলে এ- ধরনের ঘটনায় যা ঘটে, তাই হল। তার উত্তরাধিকারী নিয়ে গোলযোগ দেখা দিল। জেরুজালেমে সেনা পাঠানোর মতো ধৈর্য আর কারও থাকল না, আর এই সুযোগে জুডাস নিজেকে জেরুজালেমের রাজা হিসেবে ঘোষণা দিলেন। তিনিই হলেন জেরুজালেমের হাসমোনিয়ান রাজবংশের প্রথম রাজা।

ইতোমধ্যে, রোমের তখন সুদিন চলছে। ১৮০ সালে কামপানিয়ার শহর কুমাই তাদের নিজেদের আনুষ্ঠানিক ভাষা ওসকান বদলে লাতিন করার অনুমতি চেয়েছে।

জোটের অধীনে কুমাই শহরের বাসিন্দারা মোটামুটি রোম সাম্রাজ্যের অংশই ছিল। কিন্তু এবার তারা বিষয়টিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাইছিল।

রোম এই অনুরোধ রেখেছিল। তবে তখনো তারা তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা, রীতিনীতি তাদের অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়নি।

তবে রোম একের পর এক সাম্রাজ্য জয় করতে লাগল, আর একপর্যায়ে রোমের আদি বাসিন্দারাই বিরল হয়ে পড়ল-সাম্রাজ্যে বিদেশির সংখ্যা বাড়তে লাগল। ১৬৮ সাল থেকে সব বিদেশে জন্ম নেওয়া মানুষদের একটি আলাদা গোত্রের মানুষ হিসেবে দেখা হল।

তারা চাইলে রোমান হতে পারতেন। তবে তারা সংখ্যায় যত বড়ই হোক না কেন, তাদের ভোট কখনো স্থানীয় রোমানদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করত না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *