অনন্তর দেশ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কোনো এক গ্রামে। বছরে সে দু-বার মাত্র ছুটি নিয়ে বাড়ি যায়। এবং খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার, সে দশ দিনের ছুটি নিয়ে গেলে ঠিক দশ দিন বাদেই ফিরে আসে। এমন আর দেখা যায় না। প্রমিতার চেনাশোনা আত্মীয়স্বজনের সব বাড়ির কাজের লোক একবার ছুটি নিলে আর সহজে ফেরে না। অনেকে ছুটির নাম করে পালিয়ে যায়। ছোটোমাসির বাড়ির কাজের লোক অর্থাৎ চাকরটি দেশে তার মায়ের অসুখ বলে ছুটি নিয়ে গেল। দু-দিন বাদেই দেখা গেল সে লেকে কুকুর নিয়ে বেড়াচ্ছে। ছোটোমাসির ছেলেকে দেখে সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সে কেয়াতলায় অন্য এক বাড়িতে কাজ করছে।
প্রমিতার দিদির বাড়ির কাজের লোকটি কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, কারণ ওবাড়িতে টেলিভিশন নেই। প্রমিতার জামাইবাবু টেলিভিশন কিনতে পারেন ঠিকই কিন্তু ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনো নষ্ট হবে বলে কিনছেন না। প্রমিতার দিদি এখন রোজই বলেন, টেলিভিশন না কিনলে আর বাড়িতে ঝি-চাকর টিকবে না।
সেদিক থেকে অনন্ত সত্যিই ব্যতিক্রম। শৈবালের টিভি নেই, অনন্ত তবু তো কাজ ছেড়ে চলে যায়নি!
প্রমিতা ফিসফিস করে শৈবালকে বলল, তুমি ওকে ওর দেশে পৌঁছে দিয়ে এসো।
শৈবাল আকাশ থেকে পড়ল! অনন্তকে দেশে পৌঁছে দিয়ে আসব! কেন?
প্রমিতা বলল, বাড়িতে দুটো ছেলে-মেয়ে রয়েছে, আর এখানে একটা পক্সের রুগি রাখা যায় নাকি? কর্পোরেশনের লোক খবর পেলে তো ওকে এমনিতেই ধরে নিয়ে যাবে। তুমি বরং ওকে দেশে দিয়ে এসো।
প্রমিতা বেশ উচ্চশিক্ষিতা, কিন্তু পৃথিবীর অনেক কিছুরই খবর রাখে না। কলকাতায় কর্পোরেশন বলে কিছু আর নেই, আছে কিনা নির্বাচনের এক জিনিস, তার নাম পুরসভা, তারা পক্সের রুগি তো দূরের কথা, রাস্তার পাগলা কুকুরও ধরে না।
শৈবাল বলল, বিশ্বাসী লোকটাকে তুমি গ্রামে পাঠাবে, ওখানে ওর চিকিৎসা হবে কী করে?
তা বলে এমন একটা রুগি– বাড়িসুদ্ধু সবাই মরবে?
শৈবাল ধীরস্বরে বলল, ওর হয়েছে চিকেন পক্স তাতে মানুষ মরে না।
তুমি কী করে জানলে?
স্মল পক্স পৃথিবী থেকে উঠে গেছে।
তুমি ছাই জানো!
ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে নাও।
চিকেন পক্সই-বা কম কীসে? জ্বর হবে, ভোগাবে, দুর্বল করে দেবে–তুমি তো ছেলে মেয়ের কথা একদম ভাবো না
শোনো, চিকেন পক্স তো শুধু অনন্তর একলার হয়নি। ও একটা হাওয়া আসে। একবার হতে শুরু করলে অনেকের হয়, ওর থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না।
মোটকথা আমি বাড়িতে পক্সের রুগি রাখব না।
আমার পক্স হলে তুমি আমাকেও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে?
প্রমিতা এবার অসম্ভব রেগে উঠে বলল, বাজেকথা বলবে না বলছি! ওরকম বড়ো বড়ো কথা সবাই বলতে পারে। সংসারটা আমায় সামলাতে হয়, ছেলে-মেয়ের অসুখ হলে কে দেখবে? সামনে রিন্টুর পরীক্ষা
শৈবাল চুপ করে গেল। এসব ক্ষেত্রে নীরবতাই স্বর্ণময়।
তুমি কাল সকালেই ওকে পৌঁছে দিয়ে এসো।
এবার শৈবালের রেগে ওঠার পালা।
তুমি বলতে চাও, আমি ওকে সঙ্গে করে ট্রেনে সেই পাথরপ্রতিমা না কোথায় যাব? শুনেছি, ট্রেনের পর লঞ্চ, তার থেকে নেমেও আবার মাইলতিনেক হাঁটতে হয়। সেই রাস্তাটা কি আমি ওকে কোলে করে নিয়ে যাব?
তুমি না গেলে কে যাবে বলো?
আমার অফিস-টফিস নেই, কাজকর্ম নেই, আমি চাকরকে বাড়ি পৌঁছোতে যাব?
একদিন অফিসের ছুটি নিতে পারনা?
শোনো প্রমিতা, একটা সাধারণ কথা বোঝার মতন বুদ্ধি তোমার নেই কেন? আমি যদি ওকে বাড়ি পৌঁছোতে যাই, ট্রেনে লঞ্চে ওর কাছাকাছি থাকি, তাহলে ওর ছোঁয়াচ লেগে তো আমারও পক্স হতে পারে।
তাহলে অন্য কারুকে দিয়ে পাঠানো যায় না?
কাকে দিয়ে পাঠাব বলো?
অন্য কোনো ফ্ল্যাটের কাজের লোক, যারা ওর বন্ধু-টন্ধু, তাদের কারুকে যদি ডেকে একটু বলল, কিছু টাকা দেওয়া হবে তাকে।
আমি এখন অন্য বাড়ির চাকরদের ডেকে ডেকে অনুরোধ করতে যাই আর কী! ওসব আমার দ্বারা হবে না।
প্রমিতা উঠে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে এমন জোরে দরজাটা বন্ধ করল, সেটা ভেঙে পড়বার উপক্রম।
শৈবাল অনন্তকে দেখার জন্য বারান্দার কাছে গিয়ে উঁকি মারল। ছেলেটা একটা চাদর মুড়ি দিয়ে আছে। শৈবাল দু-একবার ডাকল নাম ধরে। অনন্ত শুধু উ উ শব্দ করল। মনে হয় ছেলেটার খুব জ্বর।
চিকেন পক্স একবার বাড়িতে ঢুকলে সকলকে না-শুইয়ে ছাড়বে না। তবে অনন্তরই যে কেন আগে হতে গেল! আগে যদি এ বাড়ির অন্য কারুর হত, তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকত না–
দু-একটা টুকিটাকি কাজ সারবার জন্য শৈবালকে বেরোতে হল একটু। ফিরে এসে দেখল, এর মধ্যেই প্রমিতা অনেকখানি ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
অনন্ত ফ্ল্যাটে কোথাও নেই। তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে একতলার সিঁড়ির নীচে। জায়গাটা খুবই ছোটো, একজন মানুষ কোনোক্রমে গুটিশুটি মেরে শুতে পারে।
সন্ধ্যে বেলা হয়তো অনেকে নজর করবে না। সকাল বেলা ওখানে একজন পক্সের রুগিকে দেখলে বাড়ির অন্যান্য লোক নিশ্চয়ই চেঁচামেচি শুরু করে দেবে।
প্রমিতার এমনিতে বেশ দয়ামায়া আছে। অনন্তর প্রতি তার স্নেহের অভাব ছিল না। তবু সে অনন্তকে ওরকম একটা ঘুপসি অন্ধকার অস্বাস্থ্যকর জায়গায় পাঠাল?
ছেলে-মেয়ের চিন্তায় প্রমিতা আর সবকিছু ভুলে যায়। ছেলে-মেয়ে একদিকে, আর সারাপৃথিবী অন্য দিকে।
এই পরিবারের মধ্যে শুধু প্রমিতারই একবার চিকেন পক্স হয়ে গেছে ছেলেবেলায়। সুতরাং আর তার ভয় নেই বোধ হয়। চিকেন পক্স সকলের একবার করে হলেই চুকে যায় ঝঞ্ঝাট। এদেশে সকলের একবার-না-একবার তো হবেই।
শৈবাল ভাবল, তার নিজের এখন চিকেন পক্স হয়ে গেলে বেশ হয়। তাহলে আর অনন্তকে সরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন উঠবে না। সে নিজেও কিছুদিন অফিসের কাজ থেকে বিশ্রাম পাবে। এমনিতে তো ব্যাটারা কিছুতেই ছুটি দেবে না।
প্রমিতা টেলিফোন করায় ব্যস্ত। যেরকম লম্বা সময় টেলিফোন চলছে, তাতে এক দিকের কথা শুনেই শৈবাল বুঝল যে, বাক্যালাপ চলছে ইরার সঙ্গে।
রিন্টু আর বাবলি খুব মন দিয়ে পড়াশুনো করছে দেখে শৈবাল একটা ইংরেজি গোয়েন্দা নভেল খুলে বসল। কিন্তু তার শান্তি বিঘ্নিত হল অচিরেই।
টেলিফোন ছেড়ে এসে প্রমিতা বলল, তুমিই তো এর জন্য দায়ী।
শৈবাল চোখ বিস্ফারিত করে তাকাল। তার মাথা থেকে তখনও গোয়েন্দা গল্পের ঘোর কাটেনি। কী ব্যাপার?
তুমিই তো মেয়েটাকে রাখতে দিলে না!
কোন মেয়েটাকে?
মেয়েটা থাকলে এখন কত উপকারে লাগত। এখন একহাতে আমি কতদিক সামলাই? তুমি বলতে লাগলে, মেয়েটাকে তাড়াও, তাড়াও।
আমি মেয়েটাকে তাড়ালাম। ওই হেনা না, কী যেন মেয়েটা? তুমি তো এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ খুলে বাড়ি বাড়ি মেয়েটাকে পাঠাতে লাগলে
মোটেই না, আমি বলেছিলাম আর দু-একদিন থাকুক। ইরাকে ফোনে সব জানালাম, ভাবলাম, ইরা যদি মেয়েটাকে ফেরত দেয়।
ইরা তো মেয়েটিকে পছন্দ করেনি। কাজকর্ম ভালো পারে না বলছিল, তা ওর কাছ থেকে ফেরত নিয়ে এসো-না।
ইরা ফেরত দিলে তো। আমার অসুবিধের কথা বুঝলই না, এখন একেবারে মেয়েটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
তাহলে একটা নারীহরণ করা যাক। ইরার বাড়ি থেকে ওই হেনাকে আমি জোর করে আনি।
কী বললে?
বলছি যে, ওবাড়ি থেকে ওই হেনাকে আমি ফুসলে কিংবা জোর করে নিয়ে আসব?
তুমি সবটাতেই ইয়ার্কি করবে?
শৈবাল বুঝল যে ব্যাপার বেশ গুরুতর। আর হালকা সুরে কথা বলতে গেলে প্রমিতার মেজাজ এমনই হয়ে যাবে যে, তখন ধাক্কা সামলাতে হবে শৈবালকেই। সে এবার খানিকটা সহানুভূতির সুরেই বলল, এত লোককে কাজের লোক সাপ্লাই করো, এখন তোমার এই বিপদের সময় কেউ সাহায্য করবে না?
প্রমিতা ছোট্ট করে বলল, দেখোনা।
তোমার মাকে খবর দাও না। তিনি যদি কোনো লোক পাঠাতে পারেন।
প্রমিতা আবার কণ্ঠস্বর উগ্র করল। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, তোমার যেমন বুদ্ধি! মা যদি শোনেন যে অনন্তর পক্স হয়েছে, আর তবুও তাকে আমি এবাড়িতে রেখেছি, তাহলে আমায় এমন বকুনি দেবেন। তোমার মতন তো সবাই না, আর সবাই বাড়ির লোকের ভালো-মন্দ বিষয়ে চিন্তা করে।
শৈবাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, সবাই যদি শুধু নিজের বাড়ির লোকের ভালো-মন্দ বিষয়েই চিন্তা করবে, তা হলে অনন্তর মতন যারা বাড়ি ছেড়ে দূরে কাজ করতে এসেছে, তাদের জন্য চিন্তা করবে কে?
প্রমিতা বলল, আজ রাত্তিরে বাইরে খাব। অনেক দিন তো আমাদের কোথাও নিয়ে যাওনি। রিন্টুটা এত চীনে খাবার ভালোবাসে! প্রায়ই বলে মা, সুইট অ্যাণ্ড সাওয়ার ডিশ খাব।
তার মানেই একগাদা টাকা গচ্চা। প্রমিতার রান্না করার ইচ্ছে উধাও হয়ে গেছে। সেইজন্য হোটেলে খেতে হবে। অথচ না বলাও চলবে না। তাহলেই প্রমিতা তাকে কৃপণ বলে গঞ্জনা দেবে। অন্যের উদাহরণ দিয়ে খোঁচা মারবে। হাতের কাছেই তো জামাইবাবু অর্থাৎ মণিদা রয়েছেন। প্রমিতা বলল, মণিদা প্রায়ই দিদি আর বাচ্চাদের বাইরে খাওয়াতে নিয়ে যান, তুমি নিজে থেকে একদিন…
শৈবালও যে মাঝে মাঝে প্রমিতাদের নিয়ে চীনে দোকানে খেতে গেছে, সেকথা এখন প্রমিতার মনেই পড়বে না।
অনেক মেয়ে টাকার ব্যাপারটা কিচ্ছু বোঝে না। কোথা থেকে টাকা আসে, সৎভাবে উপার্জন করতে গেলে যে কত মাথার ঘাম পায়ে ঝরাতে হয়, সে-সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। যখন যেটা দরকার, তখন সেটা পেতেই হবে। এইসব মেয়েরা বেশিদিন সুন্দরী থাকে। তাদের কপালে ভাঁজ পড়ে না। স্ত্রীকে বেশি দিন সুন্দরী রাখার জন্য শৈবালকে আরও কষ্ট করে টাকা রোজগার করতে হবে।
মুখে একটা কৃত্রিম খুশির ভাব ফুটিয়ে সে বলল, গুড আইডিয়া। তাহলে আর বেশি রাত করে লাভ নেই, তোমরা তৈরি হয়ে নাও।
কোথাও বেরোতে গেলেই প্রমিতা আগে একবার বাথরুমে ঢুকে গা ধুয়ে নেয়। প্রমিতার স্নান করতে লাগে পাক্কা এক ঘণ্টা দশ মিনিট, আর সন্ধ্যের পর গা ধুতে পঁয়তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিট। অনেকক্ষণ ধরে বাথরুমের মধ্যে কোনো জলের আওয়াজ থাকে না, নিথর, নিস্তব্ধ, সেইসময় মেয়েরা বাথরুমে কী করে তা জানবার জন্য শৈবালের দারুণ কৌতূহল। এক-একসময় সে ভাবে, বাথরুমের দরজায় একটা ছোট্ট ফুটো করে সে ভেতরটা দেখবে সেইরকম সময়।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে প্রমিতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রসাধন সেরে নিচ্ছে। চীনে দোকানে খেতে গেলে সাজগোজ করে যাওয়াই নিয়ম। বাথরুম থেকে বেরোবার ঠিক পরের সময়টায় প্রমিতাকে খুব ঝকঝকে তকতকে দেখায়।
ঠিক সেই সময় প্রতিবারেই শৈবালের খুব ইচ্ছে করে প্রমিতাকে নিবিড়ভাবে আদর করতে। এমনকী শুয়ে পড়তে। কিন্তু উপায় নেই। জড়িয়ে ধরতে গেলেই প্রমিতা আপত্তি জানায়। তার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। বিবাহিতা মেয়েদের সাজসজ্জা মোটেই তাদের স্বামীদের জন্য নয়। অন্যদের জন্য। অন্যরা দেখবে। তবু বেচারি স্বামীদের দামি শাড়ি দিতে হয়। এবং স্নো-পাউডার, পারফিউম ইত্যাদি।
খুব আলতোভাবে প্রমিতার ঘাড়ে একটা চুমু খেয়ে শৈবাল বলল, তোমায় একটা বুদ্ধি দেব?
কী?
তোমার বান্ধবী ইরাকে ফোন করে একটা গল্প বলো। ওকে বলল যে, তোমার একটা সোনার দুল চুরি গেছে। এবং তোমার দৃঢ় বিশ্বাস ওই হেনা নামে মেয়েটাই নিয়েছে।
তার মানে? হঠাৎ একথা বলব কেন?
ইরা তো ভীষণ ভুলোমন। ওর সবসময়ই কিছু-না-কিছু জিনিস হারায়। তোমার কথা শুনলেই ওর কোনো হারানো জিনিসের কথা মনে পড়ে যাবে। আর ভাববে, হেনাই সেটা চুরি করেছে। ইরা যখন-তখন রেগেও যায়। একবার ওই মেয়েটাকে সন্দেহ করলে অমনি মেয়েটার ওপর খুব রেগে যাবে, আর পত্রপাঠ তাকে বিদায় করবে। আর আমরা অমনি মেয়েটাকে লুফে নেব।
প্রমিতা এবার মুখ ফিরিয়ে হেসে ফেলে বলল, তোমার যতসব উদ্ভট কথা। তুমি ইরার চরিত্রটা ভালো স্টাডি করেছ তো।
ভালো বুদ্ধি দিয়েছি কি না বল?
ধ্যাৎ! আমি মোটেই ওরকম মিথ্যেকথা বলতে পারব না।
তাহলে আমি বলি?
না। শুধু শুধু একজনের নামে দোষ চাপাবে? তোমার লজ্জা করে না? আমি এসব একদম পছন্দ করি না।
একজনের নামে চুরির অপবাদ দেওয়া যদি দোষের হয়, তাহলে একজন বিশ্বস্ত কাজের লোককে সামান্য চিকেন পক্স হওয়ার অপরাধে তাড়িয়ে দেওয়া দোষের নয় কেন, তা বোঝা শৈবালের অসাধ্য।
চীনে দোকানে খাওয়ার পর্ব বেশ ভালোভাবেই চুকল। শুধু শেষের দিকে ঘুমিয়ে পড়ল রিন্টু। তাকে কোলে নিতে হল শৈবালকে। রিন্টু এখন বেশ বড়ো হয়েছে, তাকে বেশিক্ষণ কোলে নিলে শৈবাল হাঁপিয়ে পড়ে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সহজে ট্যাক্সি পাওয়া যায় না। রিন্টুকে কাঁধে নিয়ে সেই অবস্থায় শৈবালকে ট্যাক্সির পেছনে দৌড়াদৌড়ি করতে হল অনেকক্ষণ। চৌরঙ্গি পাড়ায় এমন ন্যাবড়া- জ্যাবড়াভাবে ঘোরা একটা বিশ্রী ব্যাপার, অফিসের কেউ হঠাৎ দেখে ফেললে কী ভাববে?
মোটের ওপর শৈবাল মনে মনে বেশখানিকটা বিরক্ত হলেও মুখে তা প্রকাশ করল না। ঠোঁটে তার হাসি আঁকা রইল।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আগামী কালও যদি কোনো রান্নার লোক না পাওয়া যায় আর প্রমিতা রান্নার ব্যাপার নিয়ে গজগজ করে, তাহলে সে নিজেই রাঁধতে শুরু করবে। শৈবাল এক সময়ে বয় স্কাউট ক্যাম্পে এমন মুসুরির ডাল রেঁধেছিল যে সবাই ধন্য ধন্য করেছিল এবং মেরিট ব্যাজ দেওয়া হয়েছিল তাকে।
নাহয় মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দাখিল করে অফিস থেকে ছুটিই নেবে সাত দিন। তা বলে রোজ রোজ তো বাইরের হোটেলে সপরিবারে খেয়ে সে সর্বস্বান্ত হতে পারে না।
প্রমিতা যে রান্না জানে না তাও নয়। ভালোই জানে। যেকোনো একটা আইটেম রান্নায় তার হাত খুব চমৎকার। চিকেন স্টু, দই-পোনামাছ কিংবা নারকেলবাটা-চিংড়ি তার হাতে অপূর্ব। কিন্তু ভাত, ডাল, ছেঁচকি, তরকারি, মাছের ঝোল–এইসব রান্না তার কাছে অসহ্য। যদি বাধ্য হয়ে রাঁধতেই হয়, তাহলে তার এমন মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে যে, তার ঠেলা সামলাতে শৈবালকে অন্তত আড়াইশো টাকা দামের শাড়ি কিনে দিতে হবে। রোজ রোজ তো আর কেউ চিকেন স্টু কিংবা দই-পোনামাছ খেয়ে কাটাতে পারে না!
মাঝরাতে ঘুমন্ত শৈবালকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলে প্রমিতা উৎকণ্ঠিতভাবে বলল, এই, এই শোনো।
শৈবাল ধড়মড় করে উঠে বলল, কী? কী হয়েছে?
একবার পাশের ঘরে এসো তো।
কেন?
এসো-না!
আরে কেন বলবে তো? কী মুশকিল।
দেখো তো রিন্টুর জ্বর হয়েছে কি না। মনে হচ্ছে যেন গা-টা ছ্যাঁক ছ্যাঁক করছে।
এবার ভালো করে ঘুম ভাঙল শৈবালের। খাট থেকে নেমে পড়ে বলল, কই, চলো তো দেখি।
পাশের ঘরে পাশাপাশি দু-খানি খাটে ঘুমোচ্ছে রিন্টু আর বাবলি।
প্রমিতা রিন্টুকেই বেশি ভালোবাসে। দুই ভাই-বোনে ঝগড়া হলে প্রমিতা ঠিকমতন বিচার না করে বেশিরভাগ সময়েই বকে বাবলিকে।
সেজন্যই বোধ হয় বাবলির প্রতি শৈবালের বেশি টান।
প্রমিতা বলল, আমি দু-বার উঠে এসে এসে দেখলাম।
শৈবাল রিন্টুর কপালে হাত রাখল। একেবারে স্বাভাবিক তাপ। না না, কিছু হয়নি।
থার্মোমিটার দিয়ে দেখব?
কোনো দরকার নেই। আমি বলছি তো ঠিকই আছে।
রিন্টুর কপালে একটা কাল্পনিক ফুসকুড়ির ওপর হাত রেখে প্রমিতা আবার ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, দেখো তো, এখানে একটা গোটা উঠছে না?
শৈবাল রিন্টুর কপালে ভালো করে হাত বুলিয়ে কোথাও কিছু পেল না।
প্রমিতা রিন্টুর জামার বোতাম খুলে বুকে হাত বুলিয়ে ফুসকুড়ি খুঁজতে লাগল। দৃশ্যটা হঠাৎ খুব ভালো লেগেছে শৈবালের। প্রমিতা এখন খাঁটি মাতৃমূর্তি। মায়ের প্রাণ সন্তানের জন্য অকারণে উদবিগ্ন। বাবারা এতটা পারে না।
শৈবাল একবার বাবলিরও কপালে হাত দিয়ে দেখল। না, বাবলির জ্বর আসেনি!
প্রমিতার পিঠে হাত দিয়ে সে কোমল গলায় বলল, চলো, ঘুমোবে চলো। কিছু হয়নি ওদের। তা ছাড়া হলেই-বা কী? বলেছি তো, চিকেন পক্স হলেও ভয়ের কিছু নেই।
ছেলে-মেয়েদের ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে প্রমিতা তার স্বামীর বুকে মাথা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
.
০৬.
শৈবাল যা আশঙ্কা করেছিল সকাল বেলাতেই ঠিক তাই ঘটল।
রিন্টু বাবলি কারুরই জ্বর হয়নি বা শরীরে গোটা বেরোয়নি, ওরা দু-জনেই তৈরি হচ্ছে স্কুলে যাওয়ার জন্য। প্রমিতার মনটা খুশি খুশি আছে।
আজ প্রমিতা ঘুম থেকে উঠেছে সকলের আগে, আর চা বানিয়েছে সে নিজে। প্রমিতার চায়ের হাতটা বেশ মিষ্টি।
বাবলি বাথরুমে ঢুকেছে তাই শৈবাল খবরের কাগজটা পড়ছিল। সামনে তার দ্বিতীয় কাপ চা। মাঝে মাঝে হেঁকে উঠছে, বাবলি, তাড়াতাড়ি করো।
এমন সময় তিন তলার ভাড়াটে হিমাংশুবাবুর প্রবেশ।
হিমাংশুবাবুর বয়স শৈবালের চেয়ে কিছু বেশি। রোগা, লম্বাটে চেহারা। সকাল বেলাটা উনি পাজামার ওপর হাওয়াই শার্ট পরে থাকেন। ওই সাজেই তিনি খুব ভোরে বাজারে যান।
শৈবালের মতো এক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করতেন হিমাংশুবাবু। কিছুদিন হল সে, চাকরি ছেড়ে স্বাধীন ব্যাবসা শুরু করেছেন। খুব তাড়াতাড়িই সে-ব্যাবসাতে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। মনে হয়, কেন না, গতমাসে তিনি একটা সেকেণ্ডহ্যাণ্ড গাড়ি কিনেছেন।
শৈবাল হিমাংশুবাবুকে দেখে তাড়াতাড়ি টেবিল থেকে পা নামিয়ে বলল, আরে, এই যে আসুন! আসুন!
হিমাংশুবাবু চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বললেন, অফিস যাবেন না?
শৈবাল বলল, হ্যাঁ। এইবার তৈরি হব।
আপনাদের অফিসের সেনগুপ্ত শুনলাম ব্রিটিশ কেবলসে জয়েন করেছে?
এখনও করেনি, তবে সেইরকমই শুনছি।
একদিন একটু সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হয়েই থেমে গেল। আবার গরম। এই সময়টা খুব খারাপ।
হুঁ।
তার ওপর আবার লোডশেডিং! ওঃ।
শৈবাল আড়ষ্ট হয়ে রইল। হিমাংশুবাবু নিশ্চয়ই এইসব এলোমেলো কথা বলতে আসেননি। অফিসের দিনে সকাল বেলা কেউ এ-রকম আমড়াগাছি গল্প করতে আসে না। হিমাংশুবাবুও তো চাকরি করতেন।
এক কাপ কফি খাবেন নাকি?
থাক, আপনার আবার দেরি হয়ে যাবে।
আরে না না, এক কাপ কফি খাবেন, তাতে আর কী দেরি।
শৈবাল সতর্ক হয়েই চায়ের বদলে কফির কথা বলেছে। চা বানাতে দেরি লাগে আর কফি তো একটু গরম জলে নেসকাফে গুলে দিলেই হয়। প্রমিতা ব্যস্ত থাকলে শৈবাল নিজেই বানিয়ে দিতে পারবে।
হিমাংশুবাবু বললেন, কফি আমার ঠিক সহ্য হয় না। চা হলে খেতে পারি।
প্রমিতা মিথ্যেকথা বলা পছন্দ করে না। কিন্তু শৈবাল অফিসে চাকরি করে, প্রায়ই নানা কারণে তাকে মিথ্যে বলতে হয়। প্রমিতা কাছাকাছি নেই দেখে সে মুখে দারুণ একটা লজ্জিত ভাব ফুটিয়ে বলল, এই রে, বাড়িতে যে আর চা নেই। লাস্ট কাপ আমিই খেয়ে ফেললাম!
থাক, থাক তাহলে।
চা বানাতে গেলে হিমাংশুবাবুর সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলতে হত। সেটা এড়ানো গেল। এবার আসল কথা। শৈবাল ব্যগ্রভাবে তাকিয়ে রইল হিমাংশুবাবুর মুখের দিকে।
আপনার এখানে যে কাজ করে, অনন্ত নাম না? অনন্তকে দেখলাম সিঁড়ির নীচে শুয়ে আছে।
শৈবাল শঙ্কিতভাবে চুপ করে রইল।
ওর সারামুখে গোটা…পক্স হয়েছে?
হ্যাঁ। চিকেন পক্স।
সুযোগ পেলে অনেকেই দয়ালু এবং মানবদরদি সাজতে চায়। শৈবালের দিকে একটা ভর্ৎসনার দৃষ্টি দিয়ে হিমাংশুবাবু বললেন, সিঁড়ির নীচে ওইটুকু জায়গা, তারমধ্যে ঘুচিমুচি হয়ে শুয়ে আছে ছেলেটা, জ্বরে কোঁকাচ্ছে, ওকে ওইভাবে ফেলে রেখেছেন?
শৈবাল অপরাধীর মতন চুপ করে রইল।
হাজার হোক একটা মানুষ তো। ঝি-চাকর…ওরা আমাদের বাড়িতে কাজ করে, আমরাও যদি ওদের না দেখি…
ওকে ডাক্তার দেখিয়েছি ওষুধও খাওয়ানো হচ্ছে।
তা বলে ওইরকম একটা অন্ধকার অস্বাস্থ্যকর জায়গায় ফেলে রাখবেন!
এইবার শৈবাল পালটা চাল দিল। সে বিনীতভাবে বলল, কী করা যায় বলুন তো! কোনো হাসপাতালে নেবে না। ফ্ল্যাটের মধ্যে এনে রাখাও সম্ভব নয়, আমার ছোটো ছেলে-মেয়ে আছে।
এবার হিমাংশুবাবু স্বমূর্তি ধরলেন। একটু উগ্রভাবে বললেন, তাবলে কমন প্যাসেজের কাছে ওকে ফেলে রাখবেন? সারাবাড়িতে রোগ ছড়াবে! আপনার ফ্ল্যাটে ছোটো ছেলে-মেয়ে আছে, আমার ফ্ল্যাটে নেই। আমার ছোটো মেয়েটার আবার সামনেই পরীক্ষা!
অর্থাৎ মানবদরদ-টরদ কিছু না, নিজেদেরও রোগ হওয়ার ভয়।
এই সময় শয়নকক্ষ থেকে প্রমিতা এসে সেখানে দাঁড়াল।
প্রমিতা যাতে চায়ের প্রস্তাব দিয়ে না বসে, সেইজন্য শৈবাল তাড়াতাড়ি বলে উঠল, হিমাংশুবাবু কফি-টফি কিছু খাবেন না বলছেন।
হিমাংশুবাবু প্রমিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, অনন্তর কথা বলছিলাম। সিঁড়ির নীচে পড়ে আছে, দেখতেও খারাপ লাগে, সারাবাড়িতে রোগ ছড়াবে। কাজরির সামনেই পরীক্ষা, এখন পক্স-টক্স হলে কী হবে বলুন তো!
প্রমিতা নিজের দায়িত্ব সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে অম্লান মুখে বলল, দেখুন-না। আমিও সেই কথাই বলেছিলাম ওকে, একটা কিছু ব্যবস্থা না করলে
শৈবাল শুকনো গলায় বলল, কী ব্যবস্থা করা যায় শুনি?
প্রমিতা এবং হিমাংশুবাবু প্রায় একইসঙ্গে বলে উঠলেন, ওকে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দিন।
শৈবাল বলল, ওর বাড়ি অনেক দূর। এই অবস্থায় ও তো একা যেতে পারবে না, সঙ্গে কারুর যাওয়া দরকার। কে যাবে?
এবার প্রমিতা চুপ করে গেল। হিমাংশুবাবু বললেন, সে একটা কিছু উপায় তো করতেই হবে। এ-রকম ভাবে তো ফেলে রাখা যায় না। সারাবাড়ির একটা রিস্ক। এবাড়িতে আরও অনেক লোক থাকে।
অর্থাৎ তোমার বাড়ির চাকর, সুতরাং তার সব দায়িত্ব তোমার। আমরা তা নিয়ে মাথা ঘামাতে যাব কেন?
রাগ চাপবার জন্য শৈবাল ফস করে একটা সিগারেট ধরাল।
হিমাংশুবাবু আফশোসের সুরে বললেন, বাজার যাওয়ার পথে আমি ওকে লক্ষই করিনি। বাজারে আজ বড়ো বড়ো মাগুর মাছ উঠেছে, দামও তেমন চড়া নয়, এক কিলো কিনে ফেললাম। কী কান্ড বলুন তো? এখন সে মাছ কে খাবে? বাড়িতে পক্স হলে মাছ-মাংস কিছুই খেতে নেই। আমরা ছেলেবেলা থেকে দেখছি, বাড়িতে পক্স হলে বাপ-মা আমাদের নিরামিষ খাওয়াতেন।
প্রমিতা যেন লজ্জায় একেবারে মাটিতে মিশে গেল।
শৈবাল মনে মনে হিমাংশুবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি একটি গর্দভ, তোমার মাথায় গোবর পোরা!
একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে শৈবাল পড়েছে যে, পক্সের সময় বেশি করে মাছ-মাংস খেতে হয়। আগেকার দিনে গ্রামের লোক যে-পুকুরে পক্সের রুগির কাপড়চোপড় ধুতো, সেই পুকুরের মাছ খেতো না! কলকাতার বাজারে সব মাছ আসে ভেড়ি থেকে, সে মাছের কিছু দোষ নেই। বেশি করে প্রোটিন খেলে পক্স আটকানো যায়। যারা গোরু-শুয়োরের মাংস বেশি খায়, তাদের সচরাচর পক্স হয় না। শৈবাল নিজেই তো ভেবেছিল, আজ নিউ মার্কেট থেকে ফেরবার পথে এক কিলো গোরুর মাংস কিনে আনবে। গোরুর মাংসে বেশি প্রোটিন থাকে। প্রমিতাকে অবশ্য বলত, ভেড়ার মাংস।
হিমাংশুবাবু তাঁর এক কিলো মাগুর মাছ এ ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিলে শৈবাল খেয়ে বাঁচত। মাগুর মাছ তার খুব পছন্দ। পঁচিশ টাকা কেজি বলে সে প্রাণেধরে কিনতে পারে না। কিন্তু সেকথা হিমাংশুবাবুকে মুখ ফুটে বলা যাবে না।
হিমাংশুবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তাহলে তাড়াতাড়ি একটা কিছু ব্যবস্থা করুন। আমাদের সকলের স্বার্থে।
হ্যাঁ, স্বার্থে। স্বার্থের কথাই যখন বলতে এসেছিলেন তখন গোড়ায় লম্বা লেকচার মারছিলেন কেন?
শৈবাল গম্ভীরভাবে বলল, হ্যাঁ, দেখছি। আমি অফিস যাওয়ার আগেই একটা-কিছু ব্যবস্থা করছি।
হিমাংশুবাবু চলে গেলে প্রমিতা বলল, তোমার আজ অফিস না-গেলে চলে না?
ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে তো ফোন করে একটা-কিছু বলতে হবে। এমনি এমনি তো ডুব মারা যাবে না। তা ফোন করে কী বলব চাকরের পক্স হয়েছে বলে আমি আজ অফিসে যেতে পারছি না। উনি যদি হেসে ওঠেন?
তোমার তাহলে যা-খুশি তাই করো। শুনলে তো অনন্তকে ওখানে ফেলে রাখা যাবে না।
শোনো প্রমিতা। ধরা যাক, অনন্তকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেল। কিন্তু এই অবস্থায় সেটা তো তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার মতন একটা ব্যাপার। তারপর সুস্থ হয়ে সে যদি আর এখানে ফিরে আসতে না চায়? ধরো, আর এল না? তাহলে?
তাহলে কী? না এলে কী করা যাবে! ও ছাড়া কি আর কাজের লোক নেই? ওরকম আরও পাওয়া যাবে।
আমাকেও আমার অফিস থেকে যদি এইরকমভাবে কোনো দিন তাড়িয়ে দেয়? আমি চাকরি করি, সে-ও তো চাকরেরই কাজ। অনন্ত যেমন চাকর, আমিও তেমনি চাকর।
ফের ওইরকম বড়ো বড়ো কথা! তোমার একটুও প্র্যাকটিক্যাল সেন্স নেই। আর শোনো, তোমাকে আর-একটা কথা বলি। সবার সামনে ওদের অমনি চাকর চাকর বলবে না। শুনতে ভারি খারাপ শোনায়। আজকাল সবাই কাজের লোক বলে।
সবার সামনে কোথায় বললাম? শুধু তো তুমি আছ! তারপর আপনমনে সে বলল, ওরা কাজের লোক, আর আমরা অকাজের লোক।
রিন্টু একসময় এসে জিজ্ঞেস করল, বাবা, অনন্তদা সিঁড়ির তলায় শুয়ে কেন?
শৈবাল বলল, ওর অসুখ করেছে।
বাবা, জানো, সিঁড়ির তলায় ওই জায়গাটায় একদিন একটা তেঁতুলে বিছে বেরিয়েছিল, এই অ্যা–ত-তো বড়ো! অনন্তদাই দেখতে পেয়েছিল সেটা।
খবরের কাগজে চোখ নিবদ্ধ রেখে শৈবাল অন্যমনস্কভাবে বলল, তারপর?
অনন্তদা আমার পা থেকে জুতো খুলে নিয়ে সেই জুতো দিয়ে বিছেটাকে চিপটে চিপটে মারল। একদম মারা গেল বিছেটা।
বাঃ বেশ!
বাবা, আর-একটা বিছে যদি অনন্তদাকে কামড়ে দেয়?
দেবে না।
যদি দেয়?
অনন্তদা ওখানে থাকবে না। আজই চলে যাবে।
কোথায়? অনন্তদা কোথায় চলে যাবে?
এবার শৈবাল এক ধমক দিয়ে বলল, তখন থেকে কেন আমায় বিরক্ত করছ? দেখছ না, কাগজ পড়ছি। সকাল থেকে মন দিয়ে কাগজ পড়ারও উপায় নেই। ব্যাগ গুছিয়েছ? স্কুলে যেতে হবে না?
ধমক খেয়ে রিন্টু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। অনন্ত ওর খেলার সঙ্গী। যেসব দিনে শৈবাল আর প্রমিতা একসঙ্গে সন্ধ্যের শো-তে ইংরেজি অ্যাডাল্ট সিনেমা দেখতে যায়, বাবলি যায় নাচের স্কুলে, সেসব সন্ধ্যে বেলা রিন্টু অনন্তর তত্ত্বাবধানে থেকেছে! অনন্ত নানারকম খেলা দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছে ওকে।
অনন্ত কোথায় যাবে, তার উত্তর তো শৈবাল নিজেই জানে না। সুতরাং ছেলেকে ধমক দেওয়া ছাড়া উপায় কী? তবে ধমকটা একটু বেশি জোরে হয়ে গেছে।
শৈবাল তাকিয়ে দেখল, অদূরে দাঁড়ানো প্রমিতার দু-চোখে জলভরা মেঘ।
বাড়িতে শৈবালের একটু প্রাণ খুলে রাগ করারও উপায় নেই। আগেই প্রমিতা কান্না শুরু করে দিয়ে জিতে যায়। খবরের কাগজটা মাটিতে ফেলে দিয়ে শৈবাল উঠে দাঁড়াল। এবার তাকে একটা কিছু করতেই হবে।
শৈবাল মনে মনে আদর্শবাদী এবং মার্ক্সীয় মতে সমাজতন্ত্রবাদে বিশ্বাসী। কিন্তু সে ততখানি আদর্শবাদী কিংবা ততবেশি সমাজতান্ত্রিক নয় যে, গৃহভৃত্যের পক্স হলে তাকে নিজের বাড়িতে রেখে সেবা-শুশ্রূষা করবে, কিংবা তাকে সঙ্গে নিয়ে সুদূর গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দিয়ে আসবে অফিস কামাই করে। অর্থাৎ সেও অধিকাংশ মধ্যবিত্ত বাঙালির মতন একজন ভন্ড, মুখে যা বলে, কাজে তা করে না। কিংবা অন্যের যে-দোষ দেখে সে সমালোচনা করে, নিজেও ঠিক সেই দোষটিই করে।
কিছু টাকা দিয়ে যদি ব্যাপারটার একটা সুরাহা করা যেত, তাহলেই শৈবাল তার বিবেকের খোঁচাটুকু সামলে নিতে পারত। টাকা দিয়ে অনন্তকে কোথাও রাখা যায় না? অনন্তর মতন একজন বিশ্বাসী কাজের লোককে হারানোর প্রশ্নটাও তার মনে উঁকি মারছে। যতদিন পর্যন্ত আর-একটি এইরকম লোক পাওয়া না যায় ততদিন বাড়িতে শান্তি থাকবে না।
শৈবাল দ্রুত চিন্তা করতে লাগল। সাধারণ হাসপাতালে পক্সের রুগি নেয় না। শৈবালের মনে পড়ল, তার অফিসের এক কলিগের ছেলের টিটেনাস হবার পর তাকে বেলেঘাটার দিকে একটা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেটার নাম আই ডি হসপিটাল। সেখানে ছোঁয়াচে রুগিদের নেয়।
শৈবাল আই ডি হসপিটালে ফোন করতে গেল।
অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর, টেলিফোন লাইন যদিও-বা পেল, সেখান থেকে তার প্রশ্নের উত্তরে তাকে শুনতে হল ব্যঙ্গবিদ্রূপভরা এক বিচিত্র উত্তর।
কে একজন ভদ্রলোক বললেন, হাসপাতালে এমনিতেই তিলধারণের জায়গা নেই। নতুন রুগি নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া চাকরের চিকেন পক্স হয়েছে বলে শৈবাল তাকে হাসপাতালে ভরতি করতে চাইছে, এজন্য তার লজ্জা করে না? কলকাতার চতুর্দিকে এখন চিকেন পক্স হচ্ছে। এটা একটা বিরক্তিকর নিরীহ অসুখ। তবু সবাই যদি চিকেন পক্স হলেই হাসপাতালে থাকার বিলাসিতা করতে চায়, তাহলে সারাদেশে অন্তত এক হাজারটা নতুন হাসপাতাল খোলা দরকার।
শৈবাল দুম করে রেখে দিল ফোনটা।
এরপর তিনতলারই আর-একজন ভাড়াটে সুখেন্দুবাবু এসে বললেন, ও মশাই, আপনাদের চাকরের নাকি
শৈবাল বলল, যাচ্ছি যাচ্ছি, এখুনি ব্যবস্থা করছি।
দরজার কাছে এসে সে তিক্ত গলায় প্রমিতাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, শুনুন সুখেন্দুবাবু, আজকাল চাকর বলতে নেই, বলবেন কাজের লোক। চাকর শুধু আমরাই, যারা অফিসে কাজ করি!
এ-রকম কথায় বেশ কাজ হল। সুখেন্দুবাবু কেটে পড়লেন তৎক্ষণাৎ।
দু-টি অ্যাসপিরিন-জাতীয় ট্যাবলেট খুঁজে বার করে, তারপর শৈবাল নিজেই এক গেলাস জল গড়িয়ে নিয়ে পা বাড়াল বাইরে।
প্রমিতা জিজ্ঞেস করল, ও কী, জল নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
শৈবাল কোনো উত্তর দিল না।
তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে শৈবাল অনন্তর কাছে উবু হয়ে বসল। এই গরমের মধ্যেও অনন্ত একটা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। অন্য দিন এইসময় অনন্ত অনবরত ছুটোছুটি করে। ভোরে উঠেই দুধ আনা, তারপর বাজার করা, তারপর রিন্টু বাবলির খাবার। তাদের টিফিনের কৌটো গুছিয়ে দেওয়া, তারই মধ্যে শৈবালের জন্য ভাত
আজ এখন সে প্রায় অসাড়, নিস্পন্দ। মুখখানা কুঁচকে আছে।
শৈবাল আস্তে আস্তে ডাকল, অনন্ত, অনন্ত!
অনন্ত মুখ না ফিরিয়েই বলল, উঁ?
এখন কেমন আছিস?
উঁ?
কেমন আছিস? জ্বর কমেছে?
ব্যথা! গায়ে খুব ব্যথা।
নে, এই ওষুধটা খেয়ে নে।
ওষুধ দুটো আর জলের গেলাস নামিয়ে রেখে সে সরে গেল একটু দূরে। অনন্ত বিনা বাক্যব্যয়ে ওষুধ ও জল খেয়ে শুয়ে পড়ল আবার। বেশ-একটু আত্মপ্রসাদ বোধ করল শৈবাল। সে অনন্তকে নিজের হাতে সেবা করেছে।
অনন্ত শোন, তুই তো এখানে শুয়ে থাকতে পারবি না। এ-রকম অন্ধকার ঘুমোটের মধ্যে…তাতে আরও খারাপ হবে। তোর এখন কিছুদিন বিশ্রাম দরকার, চুপচাপ শুয়ে থাকা দরকার। এই অসুখের তো আর তেমন কোনো চিকিৎসা নেই, শুধু বিশ্রাম। তুই বরং ক-দিন ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যা–এই অনন্ত!
অনন্ত যেন শুনতেই পাচ্ছে না, কোনো সাড়াশব্দ নেই।
শৈবাল একটু গলা চড়িয়ে ডাকল, এই অনন্ত! ওঠ। এবারে উঠে বোস।
এবার অনন্ত উঠে বসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে শৈবালের দিকে তাকাল। স্থিরদৃষ্টি। সে দৃষ্টিতে কোনো রাগ, দুঃখ, অভিমান কিছুই নেই। নিছক ভাষাহীন, ম্লানভাবে চেয়ে থাকা চোখ দুটি ঈষৎ লালচে, ঘোলাটে।
কী বলছেন, দাদাবাবু?
তুই বাড়ি চলে যেতে পারবি না? যদি একটা রিকশায় তুলে দিই।
বাড়ি?
হ্যাঁ, তোর বাড়ি। ক-দিন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নে। দেখবি, গ্রামের খোলামেলা হাওয়ায় তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠবি। তোকে রিকশায় তুলে দেব এখান থেকে, তারপর বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পড়বি। কী রে পারবি না?
অনন্ত ঘাড় হেলাল।
শৈবাল আর দ্বিরুক্তি না করে দৌড়ে উঠে গেল ওপরে। টেবিলের ড্রয়ার খুলে এক খামচা টাকা নিয়ে আবার নেমে এল নীচে। ভাগ্যিস মাসের প্রথম, তাই উটকো খরচ করা যায়।
অনন্তর এক মাসের অতিরিক্ত মাইনের সঙ্গে শৈবাল আরও দশ টাকা যোগ করল। একটু দ্বিধা করে আরও দশ। তারপর টাকাটা গোল্লা করে পাকিয়ে অনন্তর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে শৈবাল বলল, নে, তোর সব জিনিসপত্তর গুছিয়ে নে।
অনন্ত আবার চোখ বুজে ঝিম মেরে বসে আছে।
শৈবাল তাড়া দিয়ে বলল, নে নে, গুছিয়ে নে সব, আমি রিকশা ডেকে আনছি।
সকাল বেলা স্কুলের সময়টাতে ট্যাক্সির মতনই রিকশাও দুর্লভ। বেশিরভাগ রিকশাওয়ালার এইসময় বাঁধা কাজ থাকে। বালিগঞ্জ স্টেশন কাছেই, এক টাকার বেশি ভাড়া হয় না। দেড় টাকা কবুল করে শৈবাল ধরে আনল একজন রিকশাওয়ালাকে।
অনন্ত তখনও গোছগাছ করেনি দেখে শৈবাল মৃদু ধমক দিয়ে বলল, কী রে, চুপ করে আছিস যে? বাড়ি যাবি না? বললাম যে
অনন্ত বলল, ও–। তারপর সে হাত বাড়িয়ে কম্বল আর কাপড়চোপড় পুঁটলি করতে লাগল।
অন্যদিন অনন্ত কত চটপটে থাকে। আজ যেন তার হাত চলছেই না। তার গা থেকে যেন জ্বরের তাপ ঠিকরে বেরোচ্ছে। শৈবাল অনন্তর দিকে চেয়ে থাকতে পারছে না। তার গা শিরশির করছে।
যদি রিকশাওয়ালা চলে যায়! কিংবা অনন্ত মত বদলে ফেলে। শৈবাল আর ধৈর্য রাখতে পারছে না।
বাড়িতে গিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম নিলেই তুই সেরে উঠবি। এই যে, ওষুধ দিলাম। দেখবি। ওতেই কাজ হয়ে যাবে।
অনন্তর মুখে কোনো কথা নেই। সে একা দাঁড়াল অতি কষ্টে।
অনন্তর টিনের সুটকেসটাও প্রমিতা নীচে রেখে গিয়েছিল, সেটা শৈবাল নিজেই তুলে দিল রিকশায়। অনন্তও নড়বড়ে পায়ে হেঁটে গিয়ে রিকশায় উঠল।
রিকশাওয়ালারা পক্সকে বলে হৈজা। ওরা হৈজাকে খুব ভয় পায়! যদি বুঝতে পারত অনন্তর হৈজা হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই রিকশাতে তুলতই না। এই রিকশাওয়ালাটি বোধ হয় একটু বোকা বোকা ধরনের, সে খেয়াল করল না অত কিছু। তাড়াতাড়ি করার জন্য সে ঠং ঠং শব্দ করতে লাগল অধীরভাবে।
শৈবাল অনন্তকে জিজ্ঞেস করল, কি রে যেতে পারবি তো?
মুখে কোনো উত্তরের শব্দ না করে অনন্ত ঘাড় হেলাল।
রিকশাওয়ালার দেড় টাকা ভাড়া শৈবালই দিয়ে দিল আগে। তারপর আরও দু-টি টাকা। রিকশাওয়ালার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ইসকা বোখার হ্যায়, ইসকো ট্রেনমে উঠা দেগা, সমঝা? হোড়া দেখভাল করনা?
যেটুকু বিবেকের খোঁচা অবশিষ্ট ছিল, তা ওই দু-টাকা দেওয়ায় একেবারে নির্মূল হয়ে গেল।
ব্যাপারটা যে এত সোজা, তা শৈবাল আগে বুঝতেও পারেনি। সে একটু বেশি বেশি বাড়িয়ে তুলছিল। সে ভেবেছিল, কেউ সঙ্গে করে পৌঁছে না দিলে অনন্ত যেতেই পারবে না। এই তো স্বেচ্ছায় অনন্ত দিব্যি চলে গেল। তাকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়াও হয়নি। ওরা গ্রামের লোক, ওরা অনেক কিছু সহ্য করতে পারে।
অনন্ত রিকশাতে উঠেই ঘাড় কাত করে শুয়ে রইল এক পাশে। এই সব কাজের লোকেরা সবসময়ই ব্যস্ত থাকে বলে, এদের নির্জীব অবস্থায় দেখলে যেন কেমন অদ্ভুত লাগে। শৈবাল এর আগে কোনো ঝি-চাকরের অসুখ দেখেনি। তার কেমন যেন ধারণা ছিল, ওদের অসুখ হয় না। সবসময় এক্সসারসাইজ করে কিনা।
ছেলেটা আবার ফিরে আসবে তো? সত্যিই কাজের ছেলে ও।
ভালো হয়ে গেলে চলে আসিস কিন্তু?
রিকশাটা চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে হুস করে একটা ফিয়াট গাড়ি এসে থামল এই বাড়ির সামনে। আর-একটু হলে রিকশাটাকে ধাক্কা মেরে দিচ্ছিল আর কী।
গাড়ি চালাচ্ছে ইরা।
পিছনের দরজা খুলে দিয়ে ইরা ব্যস্তভাবে বলল, নাম, নাম, শিগগির কর।
শৈবাল যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। ইরার গাড়ি থেকে নামছে হেনা নামের সেই মেয়েটি, তার হাতে কাপড়ের পোঁটলাপুটলি!
সেই মেয়েটি নামতে-না-নামতেই ইরা আবার গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছে!
ইরার সবসময়ই ব্যস্তসমস্ত ভাব। সর্বক্ষণই যেন ছুটছে।
কাছে এগিয়ে এসে শৈবাল জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার?
ইরা দারুণ ছটফট করে বলল, একদম সময় নেই, এখন নেমে কথা বলতে পারছি না…প্রমিতাকে বলবেন দুপুরে ফোন করব, তখন সব জানাব, ও মেয়েটিকে আমাদের বাড়িতে রাখা যাবে না। ওকে এখানে রেখে গেলাম…ওঃ, দেরি হয়ে গেছে, ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট…পরে সব জানাব, চলি।
যেমন এসেছিল, তেমনিই দ্রুতবেগে বেরিয়ে গেল ফিয়াট গাড়িটা।
শৈবালের ইচ্ছে হল, সেখানে দাঁড়িয়েই হুর রে বলে চেঁচিয়ে ওঠে।
এক মিনিটের মধ্যে একসঙ্গে দুটি সমস্যার সমাধান হয়ে গেল! শৈবালের মতন নাস্তিককেও তো তাহলে দেখেছি ভগবানে বিশ্বাস করতে হয়।