সোলেথ তার নিজের দেয়াল ঘেরা পদ্ম পুকুরের পাশে বসেছিল। যখন হারেমের একজন রক্ষক টাইটাকে তার কাছে নিয়ে এল তখনও সে উঠল না।
হিকস্-রা তাদের পুরোনো রীতি এতোটাই ছেড়ে দিয়ে মিশরীয় রীতি গ্রহণ করেছে যে তারা এখন তাদের স্ত্রীদের অন্দর মহলে আবদ্ধ করে রাখে না। খোঁজারা এখনো তাদের পূর্ব ক্ষমতা রাজ মহিলাদের উপর অনেকটা প্রয়োগ করে, কিন্তু যখন সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করা হয় তারা অনেক স্বাধীনতা পায়। তারা বিদেশ যেতে পারে, নদীতে তাদের আনন্দের জন্য নৌকা ভাসাতে পারে, ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে তাদের পণ্য দেখাতে অথবা ভোজে আসতে পারে, গান, নৃত্য এবং তাদের বন্ধুদের সাথে খেলাধূলা করতে পারে।
টাইটা নিজেকে সোলেথ এর কাছে একটি কাল্পনিক নামে পরিচয় দিয়ে একটা মর্যাদাপূর্ণ সম্ভাষণ জানাল। সেও অনুসরণ করল এবং ভ্রাতৃত্বের চিহ্ন চিনতে পেরে তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলদ্বয় বাঁকালো এবং তাদের এক সাথে স্পর্শ করল। সোলেথ বিস্ময়ে চোখ পিট পিট করল এবং তার চোখ টাইটার বাঁকানো গঠনের নিচের দিকে গেল; কিন্তু একজন খোঁজার মতো দেহাকৃতি বা মুখাবয় তার নেই। তবুও সে টাইটাকে ইশারায় তার বিপরীতে রাখা আসনে বসতে বলল। টাইটা একজন দাসের পরিবেশন করা শরবতের বাটি নিল এবং তুচ্ছ বিষয়ে তারা কথা বলল কিছুক্ষণ। দ্রুতই তাদের ভ্রাতৃত্বে টাইটা তার প্রমাণ এবং সাধারণ পরিচয় স্থাপন করল। ওরকম না করে, সোলেথ টাইটার অবয়ব পর্যবেক্ষণ করতে লাগল চিন্তিত ভাবে, নেকাবের ও কালো করা চুলের দিকে তাকাতে লাগল বারবার। ধীরে ধীরে তার চোখে ফুটে উঠল অতি চেনা অবয়ব এবং অবশেষে সে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল, আপনার যাত্রা পথে নিশ্চয়ই বিখ্যাত ম্যাগোসের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে, দুই রাজ্যেই যিনি বিখ্যাত এবং তার বাইরেও, টাইটা তার নাম?
টাইটাকে আমি ভালো করেই চিনি। টাইটা বলল।
সেই সাথে সম্ভবত আপনি আপনার নিজেকেও? সোলেথ জিজ্ঞেস করল রহস্যময় কণ্ঠে।
কমপক্ষে যতোটুকু আমার নিজেকে জানা দরকার ততটুকু। টাইটা দৃঢ়ভাবে বলল এবং সোলেথের গোলগাল চেহারায় একটা হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।
আর কোন কথা বলার প্রয়োজন নেই। এখন বলুন আপনার কি সেবায় আমি আসতে পারি? মুখ ফুটে শুধু একবার বলুন।
*
ঐ সন্ধ্যায় নেফার, ম্যারন ও হিল্টো কার্পেট ভরা ওয়াগনে চড়ল, আর কাঁচ ক্যাচ শব্দ করা ওয়াগনটার চালকের আসনে উপবিষ্ট হলো টাইটা। ওয়াগনের ত্রুটিপূর্ণ পিছনের চাকাটা ভারসাম্যহীনভাবে এপাশ ওপাশ দুলছিল। প্রাসাদের ফটকের পাশেই নিচু সরু স্থানে একদল বাজে লোক ঘুরে বেড়াচ্ছিল। টাইটা একজনকে ডেকে গাড়ি পাহাড়া দেওয়ার জন্য একটা কপারের আংটি দিল; তারপর তার লাঠির গোড়া দিয়ে ফটকে উচ্চ শব্দে আঘাত করল। তৎক্ষণাৎ ফটকটা খুলে গেল কিন্তু এক দল প্রহরীর তাক করা বর্শার মুখোমুখি হলো তারা। অন্দর মহলের প্রবেশ দ্বার খুব সুরক্ষিত। টর্ক তার ছোট হরিণীর ভালো যত্নই নিচ্ছে।
সোথে তাকে অভিবাদন জানানোর জন্য ওখানে ছিল না, নিশ্চিত সে তার নাক পরিষ্কার করছে। তবে সে তার অধীনস্থন একজনকে পাঠিয়েছে। একজন কালো দাস, টাইটাকে রক্ষীদের থেকে নিয়ে যেতে ও গাইড হিসেবে কাজ করতে এসেছে। যদিও টাইটার হাতে প্যাপিরাসের ক্রৌলটা ছিল যা সোথ তাকে দিয়েছে তবুও রক্ষীদের দল নেতা তাদের যাওয়ার পূর্বে তল্লাশি নিতে জোর করল। হিল্টোকে কার্পেট খুলতে আদেশ দিল এবং প্রতিটি ভাজ তার বর্শার ডগা দিয়ে খোঁচা দিয়ে দেখল, অবশেষে সে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের যেতে দিল।
বৃদ্ধ দাস তাদের আগে আগে চলল, তারা সরু বারান্দার এক গোলক ধাঁধার মধ্য দিয়ে চলছিল যেন। আরো এগুতেই চারপাশ বিস্তৃত হয়ে গেল, তারা বিশাল এক চন্দন কাঠের দরজার সামনে এসে থামল যার সম্মুখে দুজন বিশালদেহী খোঁজা পাহাড়া দিচ্ছে। বৃদ্ধ দাসটি তাদের সাথে ফিসফিস করে কথা বলল, তারপর রক্ষী দুজন একপাশে সরে গিয়ে টাইটা ও অন্যদের একটি খোলামেলা বাহারী ফুলের এবং যুবতী নারীদের লোভনীয় সুগন্ধে ভরপুর কক্ষে প্রবেশ করতে দিল। সেখানে একটা ছোট স্কুল ছাদ ছিল যেখান থেকে ভেসে আসছে বীণা ও নারী কন্ঠের আওয়াজ।
বৃদ্ধ দাস ছাদে উঠে গেল। মহামান্য; সে কম্পিত কণ্ঠে বলল, আপনার অনুগ্রহ পেতে এক ব্যবসায়ী সামার কান্দের সুন্দর সিল্কের কার্পেট নিয়ে অপেক্ষা করছে।
আমি এক দিনের জন্য অনেক আবর্জনা দেখেছি। একটি মেয়ে কণ্ঠ জবাব দিল এবং নেফার ঐ পরিচিত অতি প্রিয় কণ্ঠে শিহরিত হলো এবং তার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে এল। তাদের চলে যেতে বলো।
রক্ষী পিছনে টাইটার দিকে তাকিয়ে চেহারাটা তুলে হাত নেড়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করল। হঠাৎ নেফার জোরে আওয়াজ করে তার কাঁধে থাকা কার্পেটের রোল টাইলসের মেঝেতে ফেলে দিল এবং দুপদাপ শব্দ করে ছাদের প্রবেশ দ্বারের দিকে এগিয়ে গিয়ে থামল। সে ছেঁড়া কাপড় পড়েছে এবং নোংরা কাপড় তার মাথার চারপাশে জড়ানো যা তার মুখের নিমাংশ ঢেকে রেখেছে। শুধু তার চোখ দেখা যাচ্ছিল।
পায়ের কাছে দুজন দাস নিয়ে মিনটাকা পাঁচিলের উপর বসেছিল। সে তার দিকে তাকাল না বরং আবার গান শুরু করল। এটা বানর ও গাধার গান এবং নেফার তার হৃদয়ে ঐ শব্দগুলোর হাহাকার অনুভব করল। সে তার মিষ্টি বাঁকানো চিবুকটা ঘুরিয়ে রেখেছে এবং ঘন কালো চুল যা তার পিঠের নিচে ঝুলে আছে শুধু তা দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ মিনটাকা গান থামিয়ে তার দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকাল। ওখানে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকো না, গেয়োভূত। ধমক দিয়ে বলল।
তোমার জিনিস তুলে নাও এবং চলে যাও।
আমায় ক্ষমা করুন, মহামান্য। ক্ষমার ভঙ্গিতে সে হাত তুলল। আমি ডাব্বার নেহাত বোকা ছাড়া কিছু নই।
মিনটাকা চিৎকার করে উঠল, হাত থেকে তার বীণাটা পড়ে গেল, তারপর দুই হাতে নিজের মুখ ঢাকল সে।
এক পুচ্ছ গোলাপি আভা দেখা দিল তার গালে এবং সে তার সবুজ চোখের দিকে চেয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। কৃষ্ণ দাস তার ছোরা বের করে দৃঢ়ভাবে ছোট ছোট পায়ে নেফারকে আঘাত করতে এগোচ্ছিল। মিনটাকা নিজেকে ফিরে পেল সাথে সাথে। না, তাকে ছেড়ে দাও। সে তার ডান হাত তুলে জোড়ালো কণ্ঠে আদেশ করল। তুমি চলে যাও। আমি অসভ্য লোকটির সাথে কথা বলব। দাসকে হতভম্ব ও ইতস্তত: দেখাল, মুক্ত চাকুটা এখনো নেফারের পেট বরাবর নিশানা করা।
তোমাকে যা বলা হয়েছে তা করো। মিনটাকা সিংহীর মতো গর্জন করল। যাও, বোকা যাও! দ্বিধান্বিত দাস তার ফলা খাপে ভরে ফিরে গেল। মিনটাকা এখনো নেফারের দিকে চেয়ে আছে। তার চোখ বড় ও কালো, তার সঙ্গী মেয়েরা বুঝল না তার কি হল। তারা শুধু বুঝতে পারছে অদ্ভুত কিছু একটা হয়েছে। দাসটি চলে যেতেই দরজার পর্দা আবার পড়ে গেল। নেফার তার মাথা ঢেকে রাখা কাপড়টা খুলতেই তার কোঁকড়া চুলগুলো কাঁধের উপর ছড়িয়ে পড়ল।
আবার চিৎকার করে উঠল মিনটাকা। ওহ্ হাহোর, তুমি! সত্যি তুমি! আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আর কখনো আসবে না। সে প্রায় উড়ে তার কাছে ছুটে গেল। আলিঙ্গনে ঢেকে দিল তাকে। দীর্ঘক্ষণ তারা একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরে রইল। অসঙ্গতভাবে একজন আরেকজনের প্রতি ভালোবাসার কথা ও তারা একে অন্যকে কতখানি অনুভব করছে চেষ্টা করল বলার। দাসী মেয়েরা তাদের বিস্মিত অবস্থা থেকে নিজেদের ফিরে পেতেই হাততালি দিয়ে নাচতে লাগল তাদের চতুর্দিকে। আনন্দ ও উত্তেজনায় কান্না করল যতোক্ষণ না টাইটা তাদেরকে তার লাঠির কয়েকটি দুপদুপ আওয়াজ দিয়ে শান্ত করাল।
ঐ বোকার মত চেঁচামেচি থামাও। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তাহলে সব রক্ষীর এখানে চলে আসবে। সে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার পর হিল্টো ও ম্যারনের দিকে ঘুরে সবচেয়ে বড় কার্পেটটি টাইলসের উপর ছড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিল।
মিনটাকা আমার কথা মনযোগ দিয়ে শোন, এ সবের জন্য পরে অনেক পাওয়া যাবে।
মিনটাকা তার দিকে ঘুরল কিন্তু হাতটা তার নেফারের কাঁধের উপর রইল।
তুমিই তাহলে আমায় ডেকে ছিল, তাই না? আমি তোমার কণ্ঠ অনেক স্পষ্ট শুনেছি। যদি তুমি আমাকে না থামাতে তাহলে আমি হয়তো…
আমার মনে হয় এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার চাইতে বেশি জ্ঞানীর কাজ হবে এ বুঝা যে সবাই অনেক বিপদের মধ্যে রয়েছি। টাইটা তাকে তার কথা শেষ করতে দিল না।
আমরা তোমাকে প্রাসাদ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কার্পেটের মধ্যে লুকাতে যাচ্ছি। এখন তাড়াতাড়ি কর।
আমি কি তৈরি হতে সময় পেতে পারি …
না। টাইটা বলল। আমার কথা শুনা ছাড়া তোমার কাছে আর কিছুর কোন সময় নেই।
সে আরেক বার নেফারকে চুমু খেল, একটা দীর্ঘস্থায়ী আলিঙ্গন তারপর দৌড়ে এসে নিজেকে পুরোপুরি কার্পেটের উপর ছড়িয়ে দিল। সে তার সঙ্গী মেয়েদের দিকে তাকাল যারা অবাক হয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। টাইটা যা বলে তা তোমরা করো।
আপনি আমাদের ছেড়ে যেতে পারেন না, মালকিন, তার প্রিয় টিনিয়া আর্তনাদ করল। আপনাকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না।
এটা বেশি দিনের জন্যে নয়। মিনটাকা বলল, আমি ওয়াদা করছি আমি তোমাকে নিতে পাঠাবো। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত সাহস রাখো টিনিয়া এবং আমাকে নিরাশ করো না। মিনটাকাকে লাল কার্পেটটায় পাচাতে নেফার হিল্টো এবং ম্যারনকে সাহায্য করল। একটা লাল বড় জলজ উদ্ভিদের এক প্রান্ত তার দুই ঠোঁটের মাঝে রাখল এবং অন্য প্রান্তের ভারি কাপড় তার থেকে কয়েক ইঞ্চি বের করে রাখল যা তাকে দম নিতে সহায়তা করবে।
ইতোমধ্যে টাইটা কান্নারত দাসী মেয়েগুলোকে নির্দেশনা দিল। টিনিয়া তোমাকে শোবার কক্ষে যেতে হবে এবং দরজা লাগিয়ে দিবে। নিজেকে লিনেনের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখবে যেন সবাই বুঝে তুমি তোমার মালকিন। আর বাকিরা এখানেই থাকবে সবার দৃষ্টির মাঝে। যতোই বলা হোক তোমরা দরজা খুলবে না। যে কাউকে বলে দিবে তোমাদের মালকিন অসুস্থ এবং কারো সাথে দেখা করতে পারবে না। তোমরা কি বুঝেছ? টিনিয়া ভগ্ন হৃদয় নিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। গলা থেকে তার কথা বের হতে চাইছে না। যতোটা পাররা তাদের দেরি করাবে। কিন্তু যখন তারা তোমাদের আবিষ্কার করবে এবং আর গোপন থাকতে পারবে না তখন তারা যা জানতে চায় তা বলে দিও। অযথা যন্ত্রণা ভোগ করার কোন দরকার নেই। তোমাদের মৃত্যু বা শাস্তি আমাদের গোপন রাখতে খুব কমই কাজে আসবে কেননা তারা শিকারীদের মতো এক সময় জানবেই কি ঘটতে যাচ্ছে, তোমাদের রাণী কোথায় গিয়েছে।
আমি কি রাণীর সাথে যেতে পারি? টিনিয়া বোকার মত বলল। আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
তুমি নিশ্চয়ই শুনেছছা তোমার মালকিন ওয়াদা করেছে। একবার সে নিরাপদ হয়ে গেল সে তোমাকে নিতে পাঠাবে। এখন আমরা চলে যবার পর পিছনের দরজা লাগিয়ে দাও। তারা যখন রোল করা কার্পেট তাদের কাঁধে বহন করে বের হলো বৃদ্ধ দাসটি তখনও বারান্দায় অপেক্ষা করছিল।
আমি দুঃখিত আমি তোমাদের জন্য আমার সর্বোত্তম কাজটা করতে পারিনি যেমনটা সসাথে আমাকে বলেছিল। রাণী মিনটাকা এক সময় দয়ালু ও সুখী ছিল। সে তাদের বলল, কিন্তু এখন আর নেই। তার বিবাহের পর থেকে সে দুঃখিত ও রাগান্বিত হয়ে গেছে। সে তাদের ইশারায় তাকে অনুসরণ করতে বলল এবং তাদের অন্দর মহলের গোলক ধাঁধাময় রাস্তা দিয়ে নিয়ে চলল যতোক্ষণ না অবশেষে তারা ছোট পাশের ফটকে এসে পৌঁছল। রক্ষীদের সার্জেন্টের সাথে তাদের আরেক বার মোকাবিলা হল।
ঐ কার্পেটগুলোকে খোল। সে আদেশ দিল রূঢ় কণ্ঠে।
টাইটা তার ঘনিষ্ঠ হলো এবং তার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল। সাথে সাথে সার্জেন্টের শত্রু ভাবাপন্ন অভিব্যক্তি ক্ষীণ হয়ে গেল। তাকে নরম ও দ্বিধান্বিত দেখাল। আমি দেখতে পারছি সন্তুষ্ট, তুমি সন্তুষ্টি ও সুখ অনুভব করছ। টাইটা নরম ভাবে বলল এবং একটা ধীর দাঁত বের করা হাসি লোকটির কুৎসিত কুঞ্চিত অবয়বে ছাড়িয়ে পড়তে দেখল সবাই। খুব খুশি, টাইটা বলল এবং তার হাত আলতো করে লোকটির কাঁধে রাখল।
খুব খুশি, সার্জেন্টও বলল সম্মোহিত হয়ে।
আপনি ইতোমধ্যে কার্পেট তল্লাশি করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চান না, তাই না?
আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাই না। সার্জেন্ট ঘোষণা করল যেন এটা তার নিজের ধারণা।
আপনি চান আমরা চলে যাই।
যান, সার্জেন্ট বলল। আমি চাই আপনারা চলে যান। এবং সে এক পাশে সরে দাঁড়াতেই তার একজন লোক দরজার খিড়কি খুলে দিল ও তাদের ভোলা জায়গায় বেরিয়ে যেতে দিল।
যখন দরজা বন্ধ হচ্ছিল তখন তারা শেষবার সার্জেন্টকে দেখল, সে তাদের পিছনে সহৃদয় ভাবে দাঁত বের কর হাসছে।
ওয়াগনটা সেখানেই আছে যেখানে তারা ঐ লোকদের পাহারা দেবার জন্য রেখে গিয়েছিল। ওয়াগনের বিছানার উপর তারা কার্পেটটি আলতো করে রাখল এবং নেফার শান্ত কণ্ঠে মুখের কাছে গিয়ে ডাকল। মিনটাকা, আমার হৃদয়, তুমি কি ঠিক আছে?
গরম ও শ্বাসরুদ্ধকর, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। তুমি আমার কাছে আছো এটাই বড় কথা। তার কণ্ঠস্বর চাপা। নেফার গোল করা কার্পেটের নিচে হাত বাড়াল এবং তার মাথার উপরের দিক স্পর্শ করল।
তুমি সিংহীর ন্যায় সাহসী। বলে সে হামাগুড়ি দিয়ে ওয়াগনের বাক্সের নিকট টাইটার পিছনে এসে দাঁড়াল। তারপর ঘোড়াগুলোকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিল।
রাত নামছে, শহরের রাস্তা শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাবে তাই টাইটা ঘোড়াগুলোর উপর চাবুক চালাল। যখন মিনটাকার পালিয়ে যাবার ঘটনাটা আবিষ্কার হবে তখন প্রথম যে কাজটা তারা করবে তা হল তারা শহর বন্ধ করে দিবে। প্রতিটি ভবন ও যান তল্লাশি করবে এবং দেয়ালের ভেতর নিয়ে সব অপরিচিত ব্যক্তিকে জেরা করবে।
পূর্ব দিকের ফটকের চওড়া রাস্তার দিয়ে তারা দ্রুত নেমে এল। যখন তারা আরো সামনে গেল দেখল অন্যান্য গাড়ি ও রথ ফটকের সামনের রাস্তায় সারি করে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে এবং সবাই মিছিল করে যাচ্ছে। এরা ছিল পূজারী ও উৎসবের অংশ নেওয়া ব্যক্তিবর্গ যারা অ্যাভারিসের চারপাশের দূরবর্তী তাদের গ্রামে ফিরছে। তাদের এগিয়ে চলাটা খুবই ধীর।
দেয়ালের ওপাশে ইতোমধ্যে সূর্য ডুবে গেছে এবং আলো ক্ষীণ হচ্ছে। কিন্তু তাদের সামনে তখনো দুটি যান, যখন রক্ষীদের দল নেতা ফটকের ঘর থেকে বেড়িয়ে এল এবং তার লোকদের উদ্দেশ্যে চেঁচালো, যথেষ্ট হয়েছে, সূর্য ডুবে গছে। ফটক বন্ধ করে দাও।
ভ্রমণকারীদের মধ্যে প্রতিবাদের গুঞ্জন উঠল। সবাই বেড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
আমার একটি অসুস্থ বাচ্চা আছে। আমাকে অবশ্যই তাকে বাড়ি নিতে হবে।
আমি আমার টোল দিয়েছি, আমাকে যেতে দিন। আমার মাছ পচে যাবে।
একটা তুলনামূলক ছোট ওয়াগন সামনে এগোলো ইচ্ছে করে এবং রক্ষীদের ফটক বন্ধ করার চেষ্টায় বাধা দিল। ছোট-খাটো একটা দাঙ্গা বেধে গেল। চিৎকাররত রক্ষীরা ভয় দেখাতে তাদের গদা উপরে তুলে নাচালো, ভয়ার্ত নাগরিকেরা চিৎকার দিয়ে তাদের কাছ থেকে পিছু সরল এবং ভীত ঘোড়াগুলো চিৎকার ও মৃদু হেষাধ্বনি করে উঠল। দেয়ালের ওপাশে হৈ-চৈ শোনা গেল হঠাৎ। জোরালো কণ্ঠগুলো ভ্রমণকারীদের সাথে সাথে রক্ষীদের কণ্ঠও ডুবিয়ে দিল।
ফারাও এর জন্য রাস্তা করে দাও। ফারাও টর্ক উরুক এর জন্য রাস্তা পরিষ্কার করো।
যুদ্ধ ড্রামের গুম গুম আওয়াজ আদেশটা জোরালো করল। ফটক বন্ধ করার চেষ্টায় বিরতি দিল রক্ষীরা। এর পরিবর্তে তাড়া দ্রুত তা পুরোপুরি খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, বাইরের দাঁড়ানো যুদ্ধ রথের দল যেন সহজে প্রবেশ করতে পারে। সবার সামনের রথের উপর লাল সিংহের ছোট পতাকা উড়ছে। পাদানির উপর লম্বা হয়ে যে দাঁড়িয়ে তার ব্রোঞ্জের হেলমেট চকচক করছিল এবং তার দাড়ি তার এক কাঁধের উপর ঝুলে আছে। সে আর কেউ নয়–ফারাও টর্ক উরুক। তার দস্তানা পরিহিত হাতে চাবুক ও লাগাম ধরা।
ফটক পুরোপুরি খুলে গেলে সে তার চার ঘোড়ার গাড়ি রাস্তায় দাঁড়ানো লোকজন ও ওয়াগনের মধ্য দিয়ে চালাল, সেই সাথে যে তার পথে দাঁড়িয়ে ছিল অবলীলায় তার উপর চাবুক চালাল। তার লোকেরা সামনে দৌড়ে গেল, যান সরালো যা তার রাস্তা আটকে দিয়েছে। তারা একটা মাছ ও শাকসবজির গাড়ি একপাশে টেনে সরিয়ে ময়লার নালাতে ফেলে দিল।
ফারাও এর জন্য রাস্তা ছেড়ে দাও। তারা চেস্টালো আরো জোরে।
দলটি টাইটার যানের কানে পৌঁছে টর্কের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে ওটার মাথা ধরে টানতে লাগল। টাইটা উঠে দাঁড়াতেই তারা তাদের দিকে চাবুক চালাল। কিন্তু আঘাতটা তার হেলমেট ও ব্রোঞ্জের বর্মের উপর পড়ল। তারা তাকে উপহাস করে এক সাথে জোরে ধাক্কা দিল। ধাক্কায় ওয়াগনটা সরে গেলে ওয়াগনের মেঝেতে থাকা কার্পেটের রোল পিছলে গেল এবং উল্টে যাওয়া গাড়ির নিচে তা চাপা পড়তে যাচ্ছে প্রায়।
আমাকে সাহায্য করো। নেফার চিৎকার করে লাফিয়ে পিছনে গেল কার্পেটের পতন রোধ করতে। হিল্টো এক পাশ ধরল এবং সে ধরল অন্য প্রান্ত। যখন ওয়াগনটা কাঠের গুঁড়ি ভাঙ্গার আওয়াজ নিয়ে পাশে ভেঙ্গে পড়ল তখন তারা মিনটাকাকে টেনে রাখল যে তখনও রোলের মধ্যে প্যাচিয়ে আছে। একটুর জন্য কাছের ভবনের দেয়ালের সাথে টক্কর লাগা থেকে রক্ষা পেল সে।
ফারাও উরুক তাদের ভাঙ্গা রথ ও ছড়ানো মালপত্রের মধ্য দিয়ে তার যান। চালিয়ে চলল। তাদের মাথার উপর চাবুক ঘোরাল ও তার যুদ্ধের ঘোড়াগুলোকে আদেশ দিল চিৎকার করে।
চল! চল! ঘোড়াগুলো যুদ্ধে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তার চিৎকারে ওগুলো ডেকে ওঠল এবং চলার পথে ব্রোঞ্জের খুর দিয়ে যাকে পেল তাকে আঘাত করে গেল। নেফার দেখল এক বৃদ্ধ মহিলা দ্রুত উড়ন্ত খুরের নিচে সোজা চলে যাচ্ছে। সাথে সাথে তার মাথা ফেটে ভাগ হয়ে গেল। সেই সাথে তার দাঁত তার মুখ থেকে সাদা। শিলা পিন্ডের বিস্ফোরণের ন্যায় উড়ে গেল। খোয়া বিছানো পথে ওগুলো ছড়িয়ে পড়ল এবং সেও টর্কের রথের সামনে পড়ে গেল।
তারপর তার রথের ব্রোঞ্জের চাকার কিনারা বৃদ্ধাটির দেহের উপর উঠে গেল। নেফার আত্মরক্ষার জন্য গুটিসুটি মেরে মিটাকার কার্পেটের রোল নিয়ে বসে আছে। খুব কাছ দিয়ে যাবার সময় মুহূর্তের জন্যে তারা এক একজন অন্যজনের চোখে চোখে তাকাল। মাথায় কাপড় প্যাচানো থাকায় টর্ক তাকে চিনল না। কিন্তু সহজাত নিষ্ঠুরতায় সে নেফারের কাঁধে চাবুক দিয়ে আঘাত করল। চাবুকের ধাতব ডগা কাপড় কেটে বসে গেল এবং উজ্জ্বল রক্তের একটা দাগ পড়ল সেখানে। আমার রাস্তা থেকে সর চাষি! টর্ক ঘোত ঘোত করল। নেফার পাদানিতে উঠে টর্ককে তার দাড়ি ধরে টেনে ফেলতে উদ্যত হল, এই সে পশু যে মিনটাকাকে সংকটে ফেলেছে এবং রাগে নেফারের চেহারা লাল হয়ে গেল।
টাইটা তাকে তার কাধ ধরে থামাল। শেষ হতে দাও। কার্পেটটি ফটকের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। আমরা এখানে আটকা পড়ব, বোকা। নেফার তার মুঠি থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা করল এবং টাইটা তাকে জোরে ঝাঁকি দিয়ে বলল, তুমি কি তাকে এতো তাড়াতাড়ি আবার হারাতে চাও?
সাথে সাথে নেফার তার মেজাজের উপর তার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল। সে ঝুঁকে কার্পেটের এক প্রান্ত ধারল এবং অন্যরা তাকে সাহায্য করল। তারা দৌড়ে ফটকের দিকে এগিয়ে গেল, কিন্তু রথের বহর তখনও সেখানে ছিল এবং রক্ষীরা কাঠের দরজাটা দোলাচ্ছিল বন্ধ করার উদ্দেশ্যে। টাইটা দৌড়ে এগিয়ে গেল এবং তার লাঠি দিয়ে রক্ষীদের ধাক্কা দিল। একজন দ্বার রক্ষক তার মাথার উপর একটা গদা উঠাতেই টাইটা ঘুরে সম্মোহনী চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। লোকটি এমন করে গুটিয়ে গেল যেন কোন নর খাদকের সামনে পড়েছে।
কার্পেট সহ তারা প্রায় বন্ধ হওয়া ফটকের মাঝ দিয়ে কোন রকমে বেরিয়ে শহরের দেয়ালের নিচের ক্যাম্পে বরাবর ছুটল। তাদের পিছনে রাগান্বিত চিৎকার শুনা গেল তখনও। এক সময় তারা রক্ষীদের দৃষ্টির আড়ালে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল। একটি ছাগলের খোয়াড়ের দেয়ালের পিছনে এসে বোঝাটি মাটিতে নামিয়ে তা খুলতেই প্রায় শ্বাসরুদ্ধকর মিনটাকা উঠে বসল। সে নেফারকে দেখে তৃপ্তির হাসি দিল যে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। তারা একজন অপর জনের দিকে হাত বাড়াল এবং আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরল দীর্ঘক্ষণ ধরে।
টাইটার কথায় তারা বাস্তবে ফিরল। টর্ক অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে এসেছে, সে মিনটাকাকে বলল। তুমি নেই এটা আবিষ্কার করতে তার বেশি সময় লাগবে না। সে টেনে মিনটাকাকে দাঁড় করাল। আমরা ওয়াগনটা হারিয়েছি। সামনে আমাদের পায়ে হেঁটে অনেক পথ যেতে হবে। আমরা যদি এখনই রওনা না দিই তবে মরুদ্যানে যেখানে রথ রেখে এসেছি সেখানে পৌঁছতে আমাদের আগামীকাল সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
সঙ্গে সঙ্গে গম্ভীর হয়ে গেল মিনটাকা। আমি প্রস্তুত। সে বলল।
টাইটা তার পায়ের পাতলা স্বর্ণের স্যান্ডেলের দিকে এক নজর দেখল যা কচ্ছপের ঘুন্টি দ্বারা সাজানো। কোন কিছু না বলে সে কুটিরের মধ্যে চলে গেল। কয়েক মিনিট পর সে ফিরল একজন অসংবৃত বৃদ্ধ মহিলাকে সাথে নিয়ে। বৃদ্ধাটি এক জোড়া পুরানো কিন্তু শক্ত চাষির স্যান্ডেল পড়ে আছে। আমি তোমার গুলোর সাথে এগুলো বিনিময় করছি। সে বৃদ্ধার স্যন্ডেল দেখিয়ে বলল। মিনটাকা প্রতিবাদ করল না বরং সুন্দর স্যান্ডেল জোড়া খুলে সে বৃদ্ধ মহিলাকে দিল। তড়িঘড়ি করে বৃদ্ধা তা হাতে নিল, পাশে কেউ ওগুলো ফিরিয়ে নেয়। তারপর মিনটাকা উঠে দাঁড়াল। আমি প্রস্তুত। সে বলল। কোন পথে, ম্যাগোস।
নেফার মিনটাকার হাত ধরল। চেয়ে দেখল তারা টাইটার পিছনে পড়ে গেছে, কেননা ততোক্ষণে ম্যাগোস বড় বড় পায়ে মরুর দিকে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে।
*
ধুলোয় মাখা ঘোড়াগুলোকে উঠানে রেখে টর্ক প্রাসাদের ফটক পেরিয়ে তার নিজের সুসজ্জিত কোয়ার্টারের এল। সিংহ দলের সদস্য এবং তার বিশেষ সঙ্গীরা তাদের অস্ত্র ও বর্ম দিয়ে ঠনঠন শব্দ করে শ্লোগান দিতে দিতে ভোজন কক্ষে এল তার পিছু পিছু। প্রাসাদের দাসরা ফারাওকে স্বাগত জানাতে এক ভোজের আয়োজন করেছে। টর্ক এক বাটি মিষ্টি লাল মদ এবং বন্য শূকরের পশ্চাদদেশের সিদ্ধ মাংস নিল।
খাবার ও পানীয় ছাড়া আমার আরো কিছু দরকার। সে তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে চোখ টিপ মারল। তারা অট্টহাসি দিয়ে একে অন্যকে কুনই দিয়ে গুতো মারল। টর্ক জানে আর্মিদের মধ্যে তার বিয়ের বিষয়টি মুখরোচক এবং যেভাবে নতুন স্ত্রী তার সাথে আচরণ করে তা সত্যিই সম্মান হানিকর। দক্ষিণের বিদ্রোহ দমন এবং কঠোর বিজয় সত্ত্বেও সে তাদের কাছে এমন একজন হয়ে আছে যেন সে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আর আজ রাতেই সে তা বদলে দিতে সংকল্প বদ্ধ।
দুইটা বলদের চেয়ে অধিক খাবার আছে এবং একটা জল হস্তি ডোবার চাইতে বেশি মদ। টর্ক কলরব রত লোকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল। তোমাদের যতো মন চায় উপভোগ কর, কিন্তু আমাকে কাল সকালের আগে পাচ্ছে না। আমাকে একটা জমিতে চাষ করতে হবে এবং একটা অসাধ্য হুঁকড়িকে আমার ইচ্ছায় ভাঙতে হবে।
একটা হাড় শুদ্ধ মাংস হাতে তুলে কামড় দিতে দিতে সে বেরিয়ে গেল এবং মুখ ভর্তি চর্বি যুক্ত শূকরের মাংস গিলে ঢেঁকুর তুলল। দুইজন দাস আগে আগে মশাল নিয়ে অন্দর মহলের উদ্দেশ্যে তার রাস্তা আলোকিত করতে এগিয়ে চলল। মিনটাকার কক্ষের সামনে খোঁজা রক্ষীরা তার পদধ্বনি শুনল যা এগিয়ে আসছে। তারা তাকে সজোরে স্যালুট করল বুকের উপর আড়াআড়ি করে অস্ত্র রেখে।
খোল? শূকরের হাড়টা একপাশে ফেলে দিয়ে টর্ক আদেশ করল ও চর্বি মাখা হাতটা নিজের স্কার্টের কাপড়ে মুছল।
মহামান্য! একজন রক্ষী তাকে পুনরায় স্যালুট করল ভয়ার্ত ভাবে। দরজায় খিল দেওয়া।
কার আদেশে? টর্ক হিংস্রভাবে জানতে চাইল।
মহামান্য রাণী মিনটাকার আদেশে।
সেথের কসম, আমি এসব একদম পছন্দ করি না। ওই অহংকারী বাজে মেয়েটা জানে আমি এখানে। তীব্র রাগ প্রকাশ করে টর্ক তলোয়ার বের করে তলোয়ারের মাথা দিয়ে দরজায় আঘাত করল। কোনো উত্তর না পেয়ে সে চেষ্টা চালাল আবার। আঘাতের শব্দ নিরব বারান্দায় প্রতিধ্বনি তুলল কিন্তু তবুও দরজার ওপাশে কোন জীবনের সাড়া মিলল না। অগ্যতা পিছু সরে কাঁধ দিয়ে সে সজোরে দরজায় ধাক্কা দিল। ওটা কাপল কিন্তু ভাঙল না। রাগে কাছাকাছি দাঁড়ানো রক্ষীর হাত থেকে বর্শা নিয়ে দরজাটা সে কোপাতে লাগল, কাঠের ছোট টুকরো সমূহ ফলার আঘাতে ভাঙতে লাগল একে একে। আরো কয়েক আঘাতে সেখানে একটা চওড়া গর্ত তৈরি হল। টর্ক তার মধ্য দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দরজার অন্য প্রান্তে থাকা খিল খুলে ফেলল। তারপর লাথি মেরে দরজা খুলে মার্চ করে ঘরে প্রবেশ করল। ভয়ার্ত দাসীরা আতংকিত হয়ে তখন অন্য পাশের দেয়ালের সাথে সেটে আছে। তোমাদের মালকিন কোথায়?
তারা অসংলগ্ন প্রলাপ বকল। কিন্তু তাদের দৃষ্টি ছিল শোবার ঘরের দরজার দিকে। টর্ক সে দিকে এগোতেই মেয়েরা চিৎকার দিয়ে উঠল।
তিনি অসুস্থ।
তিনি আপনার সাথে দেখা করতে পারবেন না।
তিনি এখন ঋতুবতী।
টর্ক হাসল। সে প্রায়শ ঐ একই বাহনা করে। বলেই সে দরজায় সজোরে আঘাত করল। যদি রক্ত থাকেই তাহলে তা রক্তের নদী হয়ে যাওয়া ভালো মানাসির ময়দানে যতো রক্ত আমি ঝড়িয়েছি তার চেয়ে বেশি। সেথের কসম, আমি তাকে তাতে ভাসিয়ে সুখের সিংহদ্বারে পৌঁছে দেবো। বলেই শোবার ঘরের দরজায় সে লাথি মারল। খোল, ছোট ডাইনী! তোমার স্বামী তোমাকে তার দায়িত্ব ও সম্মান দেখাতে এসেছে।
পরবর্তী লাথিতে দরজা পুরোপুরি খুলে গেল এবং টর্ক সশব্দে ভেতরে প্রবেশ করল। খাঁটিয়াটা আফ্রিকার আবলুস কাঠের তৈরি এবং রুপা ও মুক্তোয় খচিত। তার উপর লিনেন চাদরের নিচে তার স্ত্রী-র শরীর ঢাকা এবং কিন্তু একটা ছোট পা বেরিয়ে আছে। টর্ক তার তলোয়ারের বেল্ট মেঝেতে ফেলে দিয়ে তাকে ডাকল, আমাকে কি তুমি খুব মনে করেছ, আমার ছোট্ট গোলাপ? তুমি কি আমার ভালোবাসার বন্ধনের প্রতীক্ষা করছো?
সে তার নগ্ন পা ধরে মেয়েটিকে চাদরের নিচ থেকে সোজা টেনে বের করল। এসো আমার মিষ্টি ভেড়ীর বাচ্চা। তোমার জন্য আমার কাছে আজ একটি অন্য রকম উপহার আছে। এতো বড় ও শক্ত যে তুমি তা এবার আর বিক্রি করতে বা কাউকে দিতে পারবে না। সে কথা বলতে বলতে থেমে গেল এবং নাকি কান্নারত ভয়ার্ত মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।
টিনিয়া, নোংরা ক্ষুদ্র বেশ্যা, তুই তোর মালকিনের বিছানায় কি করছিস? উত্তরের অপেক্ষা না করেই টর্ক তাকে মেঝেতে ফেলে দিল এবং উত্তেজিত ভাবে ঘরে ছোটাছুটি করল, পর্দা উঠিয়ে মিনটাকাকে খুঁজে দেখল। তুমি কোথায়? সে বাথরুমের দরজায় লাথি মারল, বেরিয়ে এসো। এই ছেলেমানুষীপনার জন্যে তোমাকে একটু বেশি মূল্য দিতে হবে।
মিনটাকা যে লুকিয়ে নেই তা নিশ্চিত হতে তার মাত্র কয়েক মুহূর্ত লাগল, তারপর দৌড়ে টিনিয়ার কাছে গিয়ে তার চুল ধরল। তাকে মেঝের উপর টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, সে কোথায়?। বলেই টিনিয়ার পেটে লাথি বসাল একটা। মেয়েটি আর্তনাদ করে গড়িয়ে তার ধাতুর জুতা থেকে রক্ষা পেতে চাইল। আমি এটা তোর শরীরে ভাঙ্গব, আমি তোর শরীরের প্রতি ইঞ্চি ছাল তুলে নেবো।
তিনি এখানে নেই। টিনিয়া চিৎকার করল। তিনি চলে গিয়েছেন।
কোথায়! টর্ক আবার তাকে লাথি দিল। তার যুদ্ধ জুতায় ব্রোঞ্জের নখর লাগানো, ওগুলো তার নরম মাংসের মধ্য দিয়ে চাকুর ফলার ন্যায় প্রবেশ করল। কোথায়?
আমি জানি না। চেঁচিয়ে বলল।লোক এসেছিল এবং তাকে নিয়ে গেছে।
কোন লোক? সে আবার তাকে লাথি মারল এবং বলের মতো টিনিয়া গড়িয়ে গেল। তার সারা শরীর কাঁপছে।
আমি জানি না। টাইটার নির্দেশ সত্ত্বেও সে তার প্রিয় মালকিনকে থোকা দিতে পারে না। অপরিচিত লোক আমি তাদের পূর্বে কখনো দেখি নি। তারা তাকে একটি কার্পেটে পেঁচিয়ে বয়ে নিয়ে চলে গেছে।
তাকে শেষ একটা নিষ্ঠুর লাথি মেরে টর্ক দরজার দিয়ে বের হলো দ্রুত। সে খোঁজা রক্ষীদের উদ্দেশ্যে চেঁচাল। সোলেথকে খোঁজ করো, এখনই মোটা কীটটাকে এখানে নিয়ে এসো।
সোলেথ তার মসৃণ সুডৌল হাত নুইয়ে ডলতে ডলতে এল। মহান ফারাও! প্রভুদের মধ্যে সবচেয়ে মহান, এই মিশরের মহা ক্ষমতাধর! টর্কের পায়ের কাছে সে তার নিজেকে সমর্পণ করল।
টর্ক তার সুসজ্জিত বুট দিয়ে তাকে লাথি মারল। এই লোক কারা যাদের তুমি আন্দর মহলে ঢুকতে দিয়েছিলে।
আপনার আদেশে, মহান ফারাও, আমি সব সুন্দর পণ্য প্রদর্শনের জন্য রাণীর সম্মুখে যে কোন ব্যবসায়ীকে ঢুকতে দিয়েছি।
কোন কার্পেট বিক্রেতা ছিল? যে সর্ব শেষে এই মহলে প্রবেশ করে।
কার্পেট বিক্রেতা? সোলেথ এই প্রশ্নে ভয়ে বিস্মিত হল।
টর্ক আবারও তাকে লাথি মারল সজোরে। হ্যাঁ, সোলেথ, কার্পেট! তার নাম কি?
আমার এখন সব মনে পড়ছে। কার্পেট ব্যবসায়ীটা এসেছিল সামারকাদের কার্পেট নিয়ে। তার নামটা আমি ভুলে গেছি।
আমি তোমার মনে করার ব্যাপারে সাহায্য করছি। বলেই সে রক্ষীদের আদেশ দিল, তাকে বিছানায় শক্ত করে ধরো।
সাথে সাথে তারা তাকে জোরে বিছানায় চিৎ করে শুইয়ে মাথাটা নিচের দিকে চেপে ধরল। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা তলোয়ারের বেল্ট থেকে তার অস্ত্রটা তুলে নিল টর্ক। জামা খুল। রক্ষীদের একজন সাথে সাথে আদেশ পালন করল। আমি জানি প্রাসাদের অর্ধেক প্রহরী এ পথ দিয়ে আসা যাওয়া করে। টর্ক তার তলোয়ারের আগা দিয়ে সোলেথের মলদ্বার স্পর্শ করে বলল। কিন্তু তাদের কারো এতো সাহস বা স্পর্ধা নেই। এখন বলল কার্পেট ব্যবসায়ীটা কে ছিল।
আমি আমার জীবিকা ও নীলের পবিত্র জলের কসম খেয়ে বলছি আমি তাদের চিনি না।
তোমার জন্য তা সত্যি খুব করুণ। কথাটা বলেই টর্ক তর্জনী সমপরিমাণ তলোয়ারে চোখা প্রান্ত তার মল নালিতে প্রবেশ করিয়ে দিল। সোলেথ জোরে কম্পিত গলায় আর্তনাদ করে উঠল।
এটা শুরু, মাত্র অগ্রভাগ ঢুকিয়েছি; টর্ক তাকে সর্তক করল। যদি তুমি তা খুব উপভোগ কর তাহলে ব্রোঞ্জের পুরো ফলাটা তোমার গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিতে পারি।
টাইটা ছিল। সোলেথ চিৎকার করে জানাল। ফিনকি দিয়ে তার শরীর থেকে রক্ত বের হল। টাইটা তাকে নিয়ে গেছে।
টাইটা। টর্ক বিস্ময়ে বলে উঠল এবং ঝাঁকি দিয়ে ফলাটা বের করল। টাইটা, ম্যাগোস! তার কণ্ঠে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভয় ফুটে উঠল।
তারপর দীর্ঘ সময়ের জন্যে জন্য চুপ হয়ে গেল সে। অবশেষে রক্ষীদের যারা সোলেথকে ধরে ছিল তাদের সে আদেশ দিল, ওকে ছেড়ে দাও।
সোলেথ ফেঁফাতে ফেঁফাতে উঠে বসতেই বুদবুদ করে পয়নালি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে সজোরে গ্যাস বের হলো তার পেট থেকে।
সে তাকে কোথায় নিয়ে গেছে? শব্দ ও অস্বস্তিকর দুর্গন্ধটা এড়িয়ে টর্ক প্রশ্ন করল, যা ইতোমধ্যে কক্ষটা দূষিত করে দিয়েছে।
সে আমাকে তা বলে নি। লিলেন চাদর বাধতে বাধতে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে জানাল সোলেথ। রক্ত থামানোর জন্য সে দুই পায়ের মধ্যে কাপড় খুঁজে দিল। টর্ক তলোয়ারের তীক্ষ্ণ প্রান্ত উঠিয়ে তা তার একটি নগ্ন স্তনে ঠেকাল, সোলেথ কাতর কণ্ঠে কেঁদে উঠল এবং আবার বায়ু নিসর্গণ করল। সে আমাকে তা বলে নি। তবে আমরা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিসের মধ্যকার রাজ্য নিজে কথা বলেছিলাম। হতে পারে সে রাণীকে সেখানে নিয়ে গেছে।
টর্ক বিষয়টা নিয়ে ভাবল। এটা যুক্তিসঙ্গত। হয়তো টাইটা এখন মিশর ও পূর্ব রাজ্যেগুলোর খারাপ সম্পর্কের কথা জানে। সম্ভবত সে জানে যে সেখানে সে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা পাবে। অবশ্য যদি ততদূর পর্যন্ত সে পালাতে পারে। স্বর্ণ ও ধন-সম্পদের প্রতি টাইটা তার নির্লোভের জন্য পরিচিত। এ ঘটনা কোন কুরুচিপূর্ণ উদ্দেশ্যে হতে পারে না। যেহেতু সে একজন বৃদ্ধ খোঁজা সেহেতু টাইটা শারীরিক সম্পর্কে সামর্থ নয়। তবে কি তা বৃদ্ধ লোক ও মেয়েটার বন্ধুত্বের খাতিরে? সে কি তাকে অনুরোধ করেছে তাকে অ্যাভারিস থেকে এবং বিবাহ থেকে, যা তার জন্য খুব যন্ত্রণাদায়ক তা থেকে পালাতে সাহায্য করতে? এটা নিশ্চিত, তার সাথে মিনটাকা নিজ ইচ্ছায় গিয়েছে এবং খুব সম্ভবত আনন্দের সাথে। যেভাবে তার দাস মেয়েরা তার পালিয়ে যাওয়াটা গোপন করতে চেয়েছে ব্যাপারটা তাই পরিষ্কার প্রমাণ করে। সে কোন চিৎকার করেনি, কারণ যদি সে তা করত তাহলে রক্ষীরা তা শুনত।
দুইজন কর্নেল এখনো ভোজ কক্ষে রয়েছে, খাবার ও মদ গিলছিল, যদিও তারা আর বেশিক্ষণ এখানে পানের জন্য থাকবে না।
মাঝ রাতের পূর্বে পূর্ব দিকে যেতে আমরা কয়টি রথ চালোনার লোক পেতে পারি? টর্ক জানতে চাইল। তাদের হতভম্ব দেখাল, কিন্তু তারা ছিল যোদ্ধা এবং তার রাগান্বিত মেজাজের প্রতি সতর্ক সাড়া দিল।
কর্নেল টলমা মুখ ভর্তি মদ যা প্রায় সে গিলতে যাচ্ছিল তা ফেলে দিল এবং লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল, শুধু একটু টলল এই যা। দুই ঘণ্টার মধ্যে আমার পঞ্চাশটি রাস্তায় পেতে পারেন? বোকার মতো বলল সে।
মাঝ রাতে পূর্বে একশটা আমার নিয়ন্ত্রণে আনবো। কর্নেল যানদার লাফিয়ে উঠল, আরো আধিক্ষেত্যা দেখিয়ে বলল, এবং আরো একশটি ভোরে আগে পূর্বে দিকে ছুটবে।
*
পূর্ণিমার এক দিনের আগের চাঁদের আলোতে টাইটা তাদের পথ দেখাল। তার লাঠির অগ্রভাগ পাথুরে রাস্তার ঠক ঠক শব্দ করে চলল এবং তার ছায়া তার আগে একটা দানব কালো বাদুরের ন্যায় ফুরফুর করে চলছিল। অন্যেরা তাকে অনুসরণ করে গেল, তার সাথে তাল মেলাতে তাদের পা দ্রুত টানতে হচ্ছে।
মধ্য রাতের পর মিনটাকা ক্রমশ দুর্বল হতে লাগল। সে খুব খোড়চ্ছিল এবং পিছিয়ে পড়ছিল ধীরে ধীরে। নেফার তাকে সঙ্গ দিতে পদক্ষেপ ছোট করল। কিন্তু সে মিনটাকার কাছ থেকে এমনটা আশা করে নি। সে ভালো করেই জানে স্বাভাবিক সময়ে সে যে কোন বালকের মতই শক্তিশালী এবং তাদের অধিকাংশকে দৌড়ে ছাড়িয়ে যাবার সামর্থ রাখে। সে বিড়বিড় করে তাকে উদ্বুদ্ধ করল, টাইটা কানে না পৌঁছানোর মতো জোরে বলল। সে চাইছে ম্যাগোস যেন মিনটাকার দুর্বলতাটা না বুঝে এবং অন্যদের সামনে তাকে লজ্জা দিক।
আর বেশি দূর নয়। সে তাকে বলল এবং তার হাত টেনে নিল তাকে দ্রুত চালতে সাহায্য করতে। বে আমাদের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত করে রাখবে। আমরা ব্যাবলিয়নের বাকি পথ রাজকীয় ভাবেই যাবো।
মিনটাকা হাসল। কিন্তু তা ছিল জোর করা ও যন্ত্রণাকর এক শব্দ। আর ঠিক তখনই সে বুঝল যে তার কোন একটা সমস্যা হয়েছে।
কি তোমায় যন্ত্রণা দিচ্ছে? সে জানতে চাইল।
কিছু না। মিনটাকা বলল। আমি প্রাসাদে অনেক দিন ধরে বন্দী ছিলাম। আমরা পা নরম হয়ে গিয়েছে।
নেফার এটা আশা করেনি। সে তাকে টেনে নিয়ে রাস্তার পাশে পাথরে তাকে জোর করে বসাল। তারপর একটা পা তুলে স্যান্ডেলের ফিতা খুলে দিল। মিনটাকা স্বস্তি পেয়ে তাকে আঁকড়ে ধরতেই নেফার বলল; হায় হুরাস! তুমি কিভাবে এটা দিয়ে এতো কদম চললে?
শক্ত বেঠিক স্যান্ডেল তার পায়ের পাতার ছাল তুলে তাকে মারাত্মক আহত করেছে। চাঁদের আলোয় পায়ের রক্ত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। সে অন্য পা তুলল এবং আলতো ভাবে স্যান্ডেল খুলে দিল। জুতার সাথে করে এবার চামড়া ও মাংসের এক খন্ড উঠে এল।
আমি দুঃখিত। সে ফিসফিস করে বলল, চিন্তা করো না আমি খালি পায়ে যেতে পারব।
রাগান্বিত হয়ে সে রক্তমাথা পাদুকাদ্বয় পাথরের দিকে ছুঁড়ে দিল। তোমার উচিত ছিল আরো আগে আমাকে বলা। সে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে দাঁড় করাল এবং তার পিঠটা তার দিকে ঘুরিয়ে তাকে তোলার জন্য বাঁকা করল নিজেকে। হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরো এবং লাফিয়ে পিঠে ওঠো। তাকে পিঠে নিয়ে তারপর সে অন্যদের পিছু ধরল যারা ইতোমধ্যে বেশ সামনে চাঁদনি মরুতে কালো ছায়ার মতো চলছে।
মিনটাকার মুখ নেফারের কানের কাছাকাছি ছিল। নেফার তাকে অমনোযোগী করতে ও সহজ করে দেয়ার চেষ্টায় ফিসফিসিয়ে বলল, তোমার কেমন অনুভূতি হয়েছিল যখন তুমি আমার মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদটা শুনেছিলে?
আমি মরতে চেয়েছিলাম যাতে আমি তোমার সাথে ঐ জগতে থাকতে পারি। তারপর সে তাকে হাযোরের যাজিকার কথা বলল এবং জানালো কি ভাবে সে তার কাছে সর্প নিয়ে এসেছিল। নেফার এতোটা চমকে গেল যে সে তাকে মাটিতে নামাল এবং রাগন্বিত ভাবে তাকে গালমন্দ করল।
ওটা ছিল বোকামি। রাগে সে তার কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিল রুক্ষভাবে। এ ধরনের কিছু আর কখনো ভাববে না, ভবিষ্যতে যাই ঘটুক না কেন।
তুমি জান না আমি তোমাকে কতো নিচু, আমার প্রিয়! তুমি কল্পনা করতে পারবে না আমার কেমন লেগেছে যখন আমি শুনেছি তুমি নেই।
আমাদের অবশ্যই একটা চুক্তি করতে হবে। আমরা অবশ্যই আজ থেকে সামনের দিন গুলিতে একে অন্যের জন্য বাঁচবো। আমরা আর কখনোই মরার কথা ভাববো না যতোক্ষণ না তা আপন নিয়মে আসবে। আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করো।
আমি তোমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম। এখন থেকে আমি একমাত্র তোমার জন্যেই বেঁচে থাকবো। সে বলল এবং তর্কের সমাপ্তি টানতে তাকে চুমু খেল। সে তাকে তার কাঁধে তুলে নিয়ে চলতে লাগল আবার।
প্রতি কদমে তার ওজন মনে হল যেন বাড়ছে। যেখানে রাস্তা নরম ও বালুময় সে তাকে সেখানে নামাল এবং মিনটাকা তার উপর ঝুঁকে রক্তাক্ত পা নিয়েই তার পাশে খুঁড়িয়ে চলল। ভূমিটা আবার রুক্ষ ও পাথুরে হতেই সে তাকে পুনরায় কাঁধে তুলে সামনে বাড়ল তখন। মিনটাকা তখন তাকে বলল কিভাবে টাইটা তাকে দূর থেকে দেখেছে এবং তাকে তার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত থেকে রক্ষা করেছে। এটা ছিল অসাধারণ অনুভূতি; সে জানাল, যেন সে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং পরিষ্কার কণ্ঠে আমার সাথে কথা বলছিল। সে আমাকে বলল যে তুমি এখনও জীবিত। কত দূরে ছিলে তোমরা যখন সে আমায় দেখছিল?
আমরা তখন দক্ষিণে গেবেল নাগার ছিলাম। অ্যাভারিস থেকে পনের দিনের পথ।
সে এতো দূরে পৌঁছাতে পারে? মিনটাকা অবিশ্বাস্য ভাবে প্রশ্ন করল। তার ক্ষমতার কি কোন শেষ নেই?
অন্ধকারে আরো একবার তারা বিশ্রামের জন্য থামল। তখন মিনটাকা তার কাঁধে মাথা রেখে ফিসফিস করে তাকে বলল,
আমার ও টর্কের বিয়ের রাতের ব্যাপারে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই …
না! সে দ্রুত বলে উঠল। আমি তা শুনতে চাই না। তুমি কি ভেবেছো যে আমি নিজেকে এই চিন্তায় প্রতি দিন কষ্ট দিই নি?
তোমাকে অবশ্যই আমার কথা শুনতে হবে, আমার হৃদয়। আমি কখনোই তার স্ত্রী ছিলাম না। যদিও সে আমাকে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে। আমি তাকে প্রতিরোধ করতে পেরেছি। তোমার ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার শক্তি দিয়েছিল আমাকে।
আমি শুনেছি সে প্রাসাদে জনতার উদ্দেশ্যে ভেড়ার গালিচায় লাল দাগ দেখিয়েছে। শব্দগুলো তার কাছে যন্ত্রণাদায়ক ছিল এবং সে তার মুখ ঘুরিয়ে নিল।
হ্যাঁ, তা আমার রক্ত ছিল; সে বলল এবং সে তার আলিঙ্গন থেকে সরে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু সে তাকে ধরে রাখল বন্ধনে। ওটা আমার কুমারীত্বের রক্ত ছিল না। তা ছিল আমরা নাক ও মুখের রক্ত। আমাকে বাধ্য করার জন্য টর্ক তা মেরে বের করেছিল। দেবীর জন্য আমার যে ভালোবাসা আছে এবং তোমার পুত্র ধারণের আশার নামে আমি শপথ করে বলছি যে আমি এখনো কুমারী এবং ততোদিন থাকবো যতোদিন না তুমি আমার ভালোবাসার প্রমাণ দিতে আমার কুমারীত্ব আমার কাছ থেকে গ্রহণ করবে।
নেফার তাকে সজোরে জড়িয়ে ধরল এবং চুমু খেল। স্বস্তি ও আনন্দে তার চোখে জল এল এবং সেও তার সাথে কাঁদল।
কিছুক্ষণ পর নেফার দাঁড়িয়ে তাকে তার পিঠে তুলে নিল পুনরায়। তার শপথ যেন তাকে নতুন শক্তি দিল এবং আরো অধিক শক্তি নিয়ে চলতে লাগল দুজন।
মধ্যরাতের পর বাকিরা বুঝল যে তাদের কিছু একটা হয়েছে এবং তাদের খুঁজতে এল তারা। টাইটা মিনটাকার পা বেঁধে দিল এবং পরে হিল্টো এবং ম্যারন তাকে বহন করল পালা করে। তারা দ্রুত চলল কিন্তু তারাগুলো মলিন হয়ে যাচ্ছিল এবং ঊষার আলো ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছিল পূর্ব আকাশে। অবশেষে তারা শেষ পর্যন্ত মরুদ্যানে পৌঁছল যেখানে বে ঘোড়া নিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।
তারা সবাই পরিশ্রান্ত কিন্তু টাইটা তাদের বিশ্রামের অনুমতি দিল না। শেষ বারের মতো তারা ঘোড়াগুলোকে পানি খাওয়ালো এবং পানির থলেগুলো পূর্ণ করল যতোটুকু সম্ভব বেশি করে।
তারা যখন এসব করছিল টাইটা তখন কূপ থেকে এক বালতি পানি তুলে মাথায় ফেনাময় বিলেপন পদার্থ মেখে চুল ধূয়ে চলল। যতোক্ষণ পর্যন্ত না তা আবার তার সাবেক রূপালি চকচকে বর্ণ ধারণ করল ততোক্ষণ সে পানি ঢালল এক নাগারে।
সে প্রতিবার তার চুল এ ভাব বোয় কেন? ম্যারন বুঝতে পালল না।
সম্ভবত এটা তার কিছু শক্ত পুন সঞ্চয় করতে সাহায্য করে যা সে হারিয়ে ছিল যখন তা সে রং করেছিল। মিনটাকা পরামর্শ দিল এবং আর কেউ প্রশ্ন করল না।
তার যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলে টাইটা তাদের কুয়া থেকে পানি করতে জোর করল। সবাই পেট ভরে পানি পান করল। এসবের মাঝে টাইটা শান্ত ভাবে বে-এর সাথে কথা বলল। তুমি কি তা অনুভব করতে পারছ?
বে ভ্রুকুটি করে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। এটা বাতাসে স্পষ্ট এবং আমি আমার পায়ের তলায় তার পুনঃপুন কম্পন অনুভব করতে পারছি। তারা আসছে।
সময়ের আবশ্যকতা এবং হাতের কাছে শত্রুর বিপদ সত্ত্বেও টাইটা মিনটাকার পায়ের চিকিৎসা করার শেষ সুযোগটা নিল। কাঁচা ও ক্ষত স্থানে ওষুধের প্রলোপ দিয়ে আবার ওগুলো ব্যান্ডেজ করল সে। তারপর সবাইকে আদেশ দিল দ্রুত ঘোড়ায় চড়তে।
টাইটা ম্যারনকে প্রথম রথে তার বর্শা বাহক হিসেবে নিল। নেফার মিনটাকার সাথে গেল, সে ড্যাশ বোর্ডের উপর ঝুলে রইল পা থেকে তার ওজন সরানোর জন্যে। হিল্টো ও বে শেষ রথে পশ্চাৎ রক্ষী হলো।
অ্যাশিরিয়ান ব্যবসায়ী যে তাদের কাছে কার্পেট বিক্রি করেছিল সে তার চাকর ও দাসদের নিদের্শনা দিচ্ছিল এবং তারা নির্দেশে ওয়াগন ও টানা প্রাণীগুলোতে মালপত্র বোঝাই করছিল। যখন তারা অতিক্রম করল সে তাদের দেখার জন্য ঘুরল এবং টাইটাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাল। কিন্তু তার আকর্ষণটা আরো দ্রুততর হলো যখন দেখল রথে একটা মেয়ে রয়েছে। এমনকি ধুলোময় কাপড় ও এলোমেলো চুলেও মেয়েটির আকর্ষণীয় চেহারাটা ঢাকতে পারছিল না। সে তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল যখন তারা শেষ উত্থানে উঠল ও বনের ভেতর অদৃশ্য হল তখনও। পূর্ব দিকে ক্যারাভানের রাস্তার বরাবর তারা চলল যা তাদের সবশেষে লোহিত সাগরের তীরে নিয়ে যাবে।
*
টর্ক যখন তার সৈন্য বাহিনী শহরের ফটকের সামনে সবার জড়ো হওয়ার অপেক্ষা করছিল তখন সে কর্নেল টলমাকে আদেশ দিল যেন সে তার লোকদেরকে অ্যাভারিসের দেয়ালের বাইরে ভিক্ষুক ও বিদেশিদের ক্যাম্পে তল্লাশির নিতে পাঠায়। প্রতিটি কুঁড়ে ভেঙে ফেল। নিশ্চিত কর যে রাণী মিনটাকা ওগুলোর কোনটায় লুকিয়ে নেই। টাইটা, ওয়ারলককেও খুঁজো। প্রতিটি লম্বা, শুকনা বৃদ্ধ যাদের তোমরা পাবে আমার কাছে নিয়ে আসবে। আমি নিজে তাদের প্রশ্ন করবো।
কুঁড়েগুলোর মধ্য থেকে চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ, দরজা ভাঙার আওয়াজ ও পাতলা দেয়ালগুলো গুঁড়িয়ে ফেলার শব্দ ভেসে এল। টলমার লোকেরা তার আদেশ পালন করছে যথাযথভাবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দল দুটি ফিরে এল। সাথে করে। তারা একজন খিটখিটে বৃদ্ধা বেদুঈনকে নিয়ে এল টানতে টানতে। টর্কের রথের পাশে তাকে দাঁড় করানো হলো। মহিলাটি রক্ষীদের উদ্দেশ্যে পাগলের মতো গালি দিচ্ছিল সেই সাথে সে তাদের লাথি মারল ও তাদের মুঠির মধ্য থেকেই লড়াই করার চেষ্টা করল।
এ কে, সৈন্য? টর্ক জানতে চাইল যখন তারা মহিলাটিকে তার পায়ের কাছে নিক্ষেপ করল। সৈন্যটি একজোড়া সুন্দর সোনার জুতা ধরে আছে, কচ্ছপের নাল দিয়ে সাজানো যা টর্চের আলোক জ্বলজ্বল করছে। মহামান্য, আমরা এগুলো তার কুঁড়ের ভেতর পেয়েছি।
ওগুলো চিনতেই টর্কের চেহারা রাগে কালো হয়ে গেল এবং সে মহিলাটির পেটে লাথি বসাল সজোরে। তুমি এগুলো কোথা থেকে চুরি করেছ, নোংরা বৃদ্ধা বেবুন?
কখনো আমি কিছুই চুরি করি নি, মহান ফারাও; সে আর্তনাদ করল। সে আমাকে ওগুলো দিয়েছে।
সে কে ছিল? আমাকে সরাসরি উত্তর দাও, নইলে আমি তোমার মাথা তোমার পাছার ভেতর ঢুকিয়ে দিব।
বৃদ্ধ লোকটি, সে ওগুলো আমায় দিয়েছে।
আমার কাছে তার বর্ণনা দাও।
সে লম্বা ছিল এবং শুকনোও।
বয়স কতত হবে?
মরুর পাথরের মতই বৃদ্ধ সে। সে লোকটাই ওগুলো আমায় দিয়েছে।
আরো তিনজন লোক ছিল এবং একটা সুন্দরী ছোট বেশ্যা, সে সুন্দর একটা কামিজ পড়ে ছিল এবং মুখে প্রসাধন ও চুলে তার ফিতা বাঁধা ছিল।
টর্ক তাকে এক ঝটকায় টেনে দাঁড় করাল এবং তার হতভম্ব চেহারার উপর ঝুঁকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল; তারা কোথায় গেছে, কোন পথে?
কাঁপা হাতে মহিলাটি রাস্তা দেখাল যা পাহাড় ও মরু বরাবর চলে গেছে।
কখন? টর্ক জানতে চাইল।
চাঁদের অতোখানি সময় ধরে; সে বলল, আকাশের একটা স্থান নির্দেশ করল যা চাঁদের চার ঘণ্টা বা পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ।
তাদের সাথে কতগুলো ঘোড়া ছিল? টর্ক উচ্চ শব্দে জিজ্ঞেস করল। রথ? ওয়াগন? তারা কিভাবে ভ্রমণ করছিল?
কোন ঘোড়া ছিল না। সে উত্তর দিল। তারা পায়ে হেঁটে গেছে, কিন্তু খুব দ্রুত।
টর্ক তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। সে টলমার উদ্দেশ্যে দাঁত বের করে হাসল যে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তারা পায়ে হেঁটে বেশি দূর যেতে পারবে না। আমরা তাদের এতোটাই জলদি পাব যতোটা তাড়াতাড়ি তুমি তোমার অলস বদমাশগুলোকে তাদের বিছানায় পাও এবং ঘোড়ায় চড়ো।
*
টর্ক যখন মরুদ্যানের পাহাড়ের চূড়ায় বনের গোরটে উঠল সূর্য তখন অর্ধ আকাশে এবং তার তেজ ছড়াতে শুরু করেছে। চার সারিতে দুশ রথ তাকে অনুসরণ করছে। আরো পাঁচ মাইল পিছনে, উজ্জ্বল সূর্যালোকে আরো একটা ধুলোর মেঘ স্পষ্ট দেখা গেল, যানদার আরো দুইশ রথ নিয়ে এগিয়ে আসছে। প্রতিটি যান দুই জন ভারি অস্ত্রধারী সৈন্য বহন করছে এবং পানির থলে, বর্শা, বল্লম ও তীরের খাপে তা বোঝাই।
তাদের নিচে তারা ক্যারাভানের মাথার কুয়া থেকে অ্যাশিরিয়ান ব্যবসায়ীর দলকে খাজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখল। টর্ক তাদের সাথে কথা বলতে এগুলো এবং দূর থেকে থামার সংকেত দিল। দেখ হয়ে ভালোই হলো, আগন্তুক! কতো সময় হল এখানে এসেছে এবং তোমাদের ব্যবসাটা কী?
ব্যবসায়ীটি উত্তেজিত ভাবে এই যোদ্ধার ন্যায় অতিথির দিকে তাকাল, তার উদ্দেশ্যের বিষয়ে ঠিক নিশ্চিত হতে পারল না। টর্কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্বোধন অল্পই কাজ করল। মেসোপটেমিয়া থেকে দীর্ঘ যাত্রায় তাদের সাথে অসংখ্য দস্যু, ডাকাত ও যুদ্ধ বাজদের সাক্ষাৎ হয়েছে।
টর্ক ব্যবসায়ী দলনেতার সামনে লাগাম টেনে রথ থামাল। আমি সেই মহান মহামান্য ফারাও টর্ক উরুক, নিম্ন রাজ্যে স্বাগতম। ভয় পেয়ো না। তুমি আমার নিরাপত্তায়।
ব্যবসায়ী হাঁটুগেড়ে বসে তার আনুগত্য প্রকাশ করল। এক মুহূর্তের জন্য টর্ক তাকে দেওয়া সম্মানে অধৈর্য হলো এবং সে লোকটির কথা সংক্ষেপ করে দিল। দাঁড়াও এবং কথা বলে, আমার সাহসী প্রজা। যদি তুমি আমার প্রতি আনুগত হও তবে জবাব দাও যা আমি জানতে চাই। আমি তোমাকে আমার রাজ্য জুড়ে কর ছাড়া ব্যবসা করার অনুমতি দেবো এবং দশটা রথ সহযোগে তোমাকে অ্যাভারিসের ফটক পার করে দিব।
ব্যবসায়ীটি তার পায়ের উপর কাঁপতে লাগল এবং তার গভীর আনুগত্য প্রকাশ করতে লাগল, যদিও সে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে জানে এরকম রাজ সৌজন্য স্বাভাবিকভাবে দামী। টর্ক তার কথা সংক্ষেপ করল। আমি একদল উদ্বাস্ত সন্ত্রাসীদের খুঁজছি। তুমি কি তাদের দেখেছ?
আমি পথে সংখ্যক ভ্রমণকারীদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। অ্যাশিরিয়ান ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল। দয়া করে কি মহামান্য আপনি এই সন্ত্রাসীদের বিষয়ে একটু ইঙ্গিত দিবেন? আমি আমার সর্বোত্তম চেষ্টা করবো তাদের বিষয়ে তথ্য দিতে।
সংখ্যায় সম্ভবত তারা চার কি পাঁচজন হবে। পূর্ব দিকে যাচ্ছে। তাদের সাথে একজন তরুণী রয়েছে এবং বাকিরা পুরুষ। তাদের নেতা একজন বৃদ্ধ লোক। লম্বা ও পাতলা, সে তার চুল হয় কালো অথবা বাদামি রং করেছে।
টর্ক তার বর্ণনা আরও দীর্ঘায়িত করার পূর্বেই অ্যাশিরিয়ানটা উত্তেজিত ভাবে বলে উঠল, মহামান্য আমি তাদের ভালো করেই জানি, কিছুদিন আগে বৃদ্ধ লোকটি তার রং করা চুল নিয়ে আমার কাছ থেকে কার্পেট ও পুরানো কাপড় কিনে ছিল। সেই সময় মেয়ে লোকটি তাদের সাথে ছিল না। সে তার ঘোড়াগুলো ও তিনটা রথ মরুদ্যানের ঐ ওখানে রেখে গিয়েছিল, একটি কুৎসিত বদমায়েশের দায়িত্বে। সে অন্যদের সাথে নিয়ে পুরানো একটা ওয়াগনে কার্পেট তুলে যা আমি তাদের কাছে বিক্রি করেছিলাম। তারা এই প্রধান রাস্তা দিয়ে গিয়েছিল যেখানে এখন আমরা অ্যাভারিসের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি?
টর্ক দাঁত বের করে বিজেতার হাসি দিল। এটাই আমি চাই। তুমি তাদের কখন দেখেছো? তারা কি রথগুলো নিতে ফিরেছিল?
সে ও অন্য তিনজন আজ খুব ভোরে পায়ে হেঁটে অ্যাভারিস-এর দিক থেকে ফিরে এসেছিল। আর তাদের সাথে তরুণী মেয়েটাও ছিল যার কথা আপনি জিজ্ঞেস করলেন। মনে হচ্ছিল সে কোন ভাবে ব্যথা পেয়েছে কারণ তারা তাকে বহন করছিল।
তারা কোথায় গিয়েছে, প্রজা? কোন দিকে? টর্ক ব্যাকুলভাবে জানতে চাইল, কিন্তু অ্যাশিরিয়ান-এর তাড়া ছিল না।
যুবতী মেয়েটা, যদিও সে আহত ছিল এবং খুব কষ্টে একটু হাঁটতে পারছিল পড়নে ছিল তার সুন্দর কাপড়। সে নিশ্চিত অভিজাত কেউ, সুন্দর লম্বা কালো চুলে তাকে তেমনই মনে হয়েছে।
যথেষ্ট হয়েছে। আমি তোমার বর্ণনা ছাড়াও তাকে ভালো করেই জানি। মরুদ্যান ছাড়ার পর তারা কোন পথে গিয়েছে?
তারা তিনটা রথে ঘোড়া বেঁধেছে এবং দ্রুত ছেড়ে গিয়েছে।
কোন দিকে, প্রজা? কোন পথ তারা নিয়েছিল?
পূর্বদিকে ক্যারাভানের রাস্তা ধরে।
সে আঁকাবাকা পথ নির্দেশ করল যা নিচু পাহাড়ের উপর দিয়ে বালিয়াড়ির মধ্য দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু লোকটির চুল তখন রং করা ছিল না। যখন তাকে আমি
শেষ দেখেছিলাম তখন তা গ্রীষ্মের আকাশের শেষ মেঘের ন্যায় জ্বলছিল।
তারা কখন রওনা হয়েছিল?
সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পর, মহামান্য।
তাদের ঘোড়াগুলোর অবস্থা কেমন ছিল?
যথেষ্ট পানি পান করানো এবং বিশ্রাম নেওয়া। তারা মরুদ্যানে তিন দিন ছিল এবং তারা তাদের সাথে গবাদি পশুর খাবারের একটা গাড়ি এনেছিল যখন তারা প্রথম আসে। আর আজ সকালে রওনা দেবার কালে তারা তাদের পানির থলেগুলো কুয়ার পানিতে পরিপূর্ণ করছিল এবং মনে হচ্ছিল তারা সমুদ্রে দীর্ঘ যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তাহলে তারা আমাদের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা এগিয়ে; টর্ক অতিরঞ্জন করল। ভালো করেছ প্রজা, তুমি আমার মন জিতে নিয়েছ। আমার অনুলিপি তোমাকে ব্যবসার অনুমতি দিবে। আর কর্নেল টলমা তোমাকে একজন রক্ষী দিয়ে অ্যাভারিস পাঠাবে। তোমাকে আরো পুরুস্কার দেয়া হবে যখন আমি আসামীদের ধরে নিয়ে শহরে ফিরবো। তাদের বিচারে দর্শকের সারিতে তোমাকে একটি সুন্দর আসন দেওয়া হবে। ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার শুভ যাত্রা ও আমার রাজ্যে তোমার অনেক মুনাফা কামনা করছি।
সে ঘুরে কর্নেল টলমাকে আদেশ দিয়ে বলল, এই লোকটিকে একটি ব্যবসার লাইসেন্স দাও এবং অ্যাভারিস পর্যন্ত একজন রক্ষী দাও। কুয়া থেকে পানির থলেগুলো পূর্ণ কর এবং ঘোড়াগুলোকে পর্যাপ্ত পানি পান করাও। কিন্তু দ্রুত টলমা! দুপুরের আগে আবার রওনার জন্য প্রস্তুত হও। আর এর মাঝে তোমার যাদুকর ও সেনাদলের যাজকদের আমার কাছে পাঠাও।
সৈন্যরা প্রতি বারে বিশটি করে ঘোড়া কূপের কাছে নিয়ে গেল পানি পান করাতে। যারা এ কাজে ব্যস্ত ছিল না তারা তাদের যানের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিল এবং রুটি ও শুকনো মাংস দিয়ে হালকা নাস্তা সারল যা সেনাদের আদর্শ খাবার।
টর্ক কুয়ার কাছের তেঁতুল গাছটার ছায়ায় বসেছিল। যাদুকর ও পবিত্র ব্যক্তিরা তার ডাকে সামনে এসে হাজির হল এবং তাকে ঘিরে দাঁড়াল। তারা সংখ্যায় চার জন, তাদের মধ্যে দুজন ছিল ন্যাড়া, সেথের যাজকেরা ছিল কালো পোশাক পরিহিত। যাদের একজন নুবিয়ান ছলকারী হাড়ের তৈরি কারুকাজ করা নেকলেস পড়ে আছে এবং অপর জন একজন যাদুকর যে পূর্ব থেকে এসেছে, ইশতার দি মেডি নামে অধিক পরিচিত সে। ইশতার-এর একটা চোখ এবং তার রক্তাভ চেহারায় লাল বর্ণের বলয় ও বৃত্ত আঁকা।
আমরা যে লোকের পিছু করছি সে ঐন্দ্রজালিক শিল্পে দক্ষ একজন ব্যক্তি। টর্ক তাদের সতর্ক করল। সে আমাদের ব্যর্থ করতে তার সব শক্তি প্রয়োগ করবে। এটা জেনে রাখা দরকার যে সে লুকানোর মন্ত্র জানে এবং সে প্রতিচ্ছবি তৈরি করতে পারে যা আমাদের সৈন্যদের আতংকিত করতে পারে। তোমাকে তার যাদু কাটার কাজ করতে হবে।
কে এই বিশেষ ব্যক্তি? ইশতার দি মেডি জিজ্ঞেস করল। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন সে আমাদের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে টিকতে পারবে না।
তার নাম টাইটা। টর্ক উত্তর দিল। ইশতারকে তার পরিচয়ে কোন হতাশ দেখাল না। আমি টাইটাকে শুধু নামে চিনি; সে বলল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা ছিল।
ঠিক আছে তোমার যাদুর চাল শুরু করো। টর্ক আদেশ দিল।
সেথের যাজকেরা একটু দূরে সরে গেল এবং তাদের অলৌকিক ফাঁদ বালির উপর রাখল। তারা নরম সুরে মন্ত্র পড়তে লাগল এবং তাদের উপর দিয়ে তাদের যন্ত্র কাঁপতে লাগল ঝনঝন করে।
কূপের চারপাশে পাথরের মধ্যে কিছু খুঁজল নুবিয়ানটা, ওগুলোর একটার নিচে সে একটি বিষধর শিংওয়ালা সর্প পেল। সে ওটার মাথা কেটে তার রক্ত নিজের মাথায় ফোঁটায় ফোঁটায় ফেলল, যা তার গাল বেয়ে নেমে এল এবং তার নাকে ডগা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ল এক এক করে। সে তখন বড় কালো ব্যাঙের মত বৃত্তাকারে লাফাতে লাগল। প্রতিবার ঘূর্ণি পূর্ণ করে সে মুখ ভরা থু থু পূর্ব দিকে নিক্ষেপ করল যেখানে টাইটা শুয়েছিল।
ইশতার কুয়ার কাছাকাছি একটা ছোট আগুন তৈরি করে তার নিকট আসন করে বসল। সে গোড়ালির উপর দুলতে দুলতে মার, ডুকের উদ্দেশ্যে বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়ল, যে ছিল মেসোপটেমিয়ার হাজার দশজন প্রভুদের মধ্যে সবচেয়ে, শক্তিশালী।
টর্ক তার কাজ দেখতে গেল। তুমি এখানে কি যাদু তৈরি করছো? শেষ পর্যন্ত সে-জিজ্ঞেস করল। ইশতার তার কব্জির শিরা কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত আগুনের হিসহিস্ শিখায় নিক্ষেপ করল।
এটা আগুন ও রক্তের যাদু। আমি টাইটার পথে বাধা ও কষ্ট স্থাপন করছি? আমি তার অনুসারীদের মন বিভ্রান্ত ও দ্বিধান্বিত করছি।
টর্ক অবিশ্বাসে ঘোঁত ঘোঁত শব্দ করল; কিন্তু গোপনে সে প্রভাবিত হল। সে পূর্বে ইশতারের কাজ দেখেছে। সে হেঁটে একটু রাস্তা বরাবর এগিয়ে পূর্ব দিকে পাহাড়ের সারির দিকে এক নজর দেখল। তাদের ধাওয়া করতে সে উদগ্রীব এবং এ দেরি মানতে চাইছে না। পক্ষান্তরে একজন জেনারেল হিসেবে সে জানে এ দীর্ঘ রাতের ভ্রমনের পর ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম ও পানি পান করানোও প্রয়োজন।
সে ভালো করেই সামনের পথের অবস্থা জানে, রথের একজন তরুণ দল নেতা হিসেবে সে ওখানে অনেক বার বহু উপলক্ষে গিয়েছে। সে কোমল শিলার বিছানাটা পার হয়েছে যা পাতলা ছুরির ন্যায়, ঘোড়ার খুর ও মধ্য সন্ধি কেটে দেয় এবং বালিয়াড়ির ভয়ানক তাপ ও তৃষ্ণা সেই সাথে সহ্য করতে হয়।
সে হেঁটে তার রথের নিকট ফিরে আসছিল এমন সময় থামতে বাধ্য হল। পিঠ ঘুরিয়ে দেখল একটি আকস্মিক ধুলার শয়তায় হলুদ ভূমি দিয়ে স্ফীত হয়ে আসছে, নিজের মধ্যে ঘূর্ণনরত এবং বাতাসে কয়েকশ কিউবিট পর্যন্ত উপরে ঘুরপাকে খাচ্ছে। ঘূর্ণিটা তাকে অতিক্রম করে গেল। বাতাস এতো তপ্ত যেন তা ব্রোঞ্জের চুল্লি হতে বের হচ্ছে। হাতের কাপড় দিয়ে সে তার নাক ও চোখ ঢাকতে বাধ্য হল এবং কাপড়ে ভিতর দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে উড়ন্ত বালি ঝেড়ে ফেলল। ঘূর্ণিটা দ্রুত অতিক্রম করে গেল এবং ঘুরে গরম মাটি অতিক্রম করল। একজন হারেমের নর্তকীর মাধুর্যতা নিয়ে সে কাশতে কাশতে তার চোখ মুছল বারেবার।
তখন দুপুরের একটু আগ এবং মাত্র তার পানি পানের কাজটা শেষ করেছে এমন সময় কর্নেল যানদারের নেতৃত্বে রথের সারি তাদের সাথে যোগ দিল। প্রথম সারির যেমটা পানির দরকার ছিল তাদেরও তেমটাই দরকার এবং এখন মরুদ্যানে এ নিয়ে কাড়াকাড়ির বিপদ আছে। ইতোমধ্যে পানি কমে গেছে এবং তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এখন প্রয়োজন মেটাতে মূল্যবান পানির থলে ব্যবহার করতে হবে।
টর্ক কর্নেল যানদার এবং টলমার সাথে একটা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করল। তার পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্যটা তাদের ব্যাখ্যা করল সে। টাইটাকে সে মুচড়ে রেড়িয়ে যেতে কিংবা তার বিছানো জাল থেকে ঘুরে বেড়িয়ে যেতে দিতে চায় না। রেজিমেন্টের কমান্ডারদের যে কোন যাদুর ফাঁদের ব্যাপারে সর্তক করে দাও যা দিয়ে টাইটা তাদের দ্বিধান্বিত করতে পারে। সে কথা শেষ করল। ইশতার একটি গুরুত্বপূর্ণ যাদু চালছে। তার প্রতি আমার বিশ্বাস অনেক। পূর্বে সে কখনো আমাকে নিরাশ করেনি। যদি আমরা ওয়ারলকের চাতুরির বিষয়ে পুরোপুরি সজাগ থাকতে পারি তাহলে আমরা সফল হবই। সর্বোপরি বলো সে কিভাবে এই রকম একটি বিন্যাস থেকে বাঁচবে? হাতের ইশারায় সে তার রথ ও ঘোড়া এবং সেনা বাহিনীর বিশাল সমাবেশ নির্দেশ করল। না! সেথের নিঃশ্বাসের কসম, আগামী কাল এই সময়ে আমি টাইটা ও মিনটাকাকে আমার রথে পিছনে বেঁধে অ্যাভারিস ফিরিয়ে নিয়ে যাবো।
সে সামনের সারিকে ঘোড়ায় চড়ার আদেশ দিল। চারটি রথ পাশাপাশি এবং এক সারিতে, অর্ধ ক্রোশ দীর্ঘ বনের দিকে এগিয়ে চলল সবাই। সামনের নরম বালু মাটিতে সেনাবাহিনীর চাকার দাগ স্পষ্টভাবে অংকিত হল।
*
টাইটা ইশারায় দুটি যানকে থামতে নির্দেশ দিল, সেগুলো তাকে অনুসরণ করছিল। তারা রক্তবর্ণ ছায়ায় থামল যা বালির উপর একটি লম্বা বাঁকা বালিয়াড়ির দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে, বিশাল সামুদ্রিক শামুকের বৃহৎ বাকের আকৃতির মতো যা।
ঘোড়াগুলো ইতোমধ্যে অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। প্রাণীগুলা তাদের মাথা ঝুলিয়ে রাখল এবং নিঃশ্বাস নেবার সময় তাদের বুক উঠানামা করছে দ্রুত। ঘাম শুকিয়ে লবণে পরিণত হয়ে তাদের ধুলোয় ঢাকা চামড়ায় তা সাদা হয়ে জমে আছে।
সর্তক ভাবে তারা পানির থলে থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি চমড়ার বালতিতে ঢালতেই ঘোড়াগুলো তা ব্যাকুলভাবে পান করতে লাগল। টাইটা মিনটাকার পায়ে মনোযোগ দিল এবং ক্ষতটা গম্ভীর হচ্ছে না দেখে স্বস্তি পেল। পুনরায় ব্যান্ডেজ বাঁধা শেষে সে বে-কে এটুকু দূরে নিয়ে যাতে অন্যরা শুনতে না পায় এভাবে বলল,
আমাদের দূর থেকে দেখা হচ্ছে। সে বলল। একটা অশুভ প্রভাব ধীরে ধীরে আমাদের উপর পড়ছে।
আমিও তা অনুভব করেছি। যে সম্মত হল, এবং আমি তা প্রতিহত করা শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু ওটা যথেষ্ট শক্তিশালী।
আমরা ওটাকে প্রতিহত করতে পারি যদি আমরা আমাদের শক্তি ওটার বিরুদ্ধে একত্রিত করি।
আমাদের অন্যদের ব্যাপারেও সর্তক থাকতে হবে। তারা বেশি অরক্ষিত।
আমি তাদের নিজেদের ব্যাপারে সর্তক থাকতে বলব।
টাইটা হেঁটে ফিরে এল, অন্যেরা মাত্র পানি খাওয়ানো শেষ করেছে।
যাত্রার জন্য প্রস্তুত হও। সে নেফারকে বলল। বে ও আমি সামনের রাস্তা পরীক্ষার জন্য যাচ্ছি। আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরব।
অভিজ্ঞ দুই দক্ষ ব্যক্তি পায়ে হেঁটে সামনে গেল এবং বালির দেয়ালের বাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল তারা। তাদের দৃষ্টি সীমার বাইরে গিয়ে থামল তারা। তুমি কি জান টর্কের সাথে কে আছে যে এই রকম শক্তিশালী যাদু করতে পারে।
তার সেনাবাহিনীর সাথে তার যাজক ও যাদুকর আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল ইশতার দি মেডি।
আমি তাকে চিনি। টাইটা মাথা ঝাঁকাল। সে আগুন ও রক্ত দিয়ে কাজ করে। আমাদেরকে অবশ্যই তার যাদু তারই উপর ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করতে হবে।
বে ঘোড়ার শুকনো গোবরে একটা ছোট আগুন জ্বালাল এবং যখন তা স্থির হয়ে। জ্বলতে লাগল তখন তারা তাদের বৃদ্ধাঙ্গুল ফুটো করে চিপে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের করে আগুনে ফেলল। পোড়া রক্তের দমকা গন্ধে বাতাসে তারা শত্রুর মুখোমুখি হল। কারণ তারা অনুভব করল যে প্রভাবটা পশ্চিমাংশ তারা যে পথে এসেছে সে পথ দিয়ে আসেছে। তারা তাদের মিলিত শক্তি প্রয়োগ করল এবং কিছুক্ষণ পর অনুভব করল তা হ্রাস পাচ্ছে ও আগুনের ধোঁয়ার মতো হারিয়ে যাচ্ছে।
তারপর কাজ শেষে যখন বালি দিয়ে আগুনটা তারা নিচ্ছিল তখন বে নরম সুরে বলল, ওটা এখনো আছে।
হ্যাঁ। টাইটা বলল। আমার ওটা দুর্বল করেছি, কিন্তু ওটা এখনো বিপদ জনক, বিশেষ করে তাদের জন্যে যারা জানে না কিভাবে তা প্রতিরোধ করতে হয়।
কম বয়েসী কেউ সবচাইতে ক্ষতি গ্রস্থ হবে। বৈ পরামর্শ দিল। দুই বালক, ফারাও ম্যারন এবং মেয়েটি।
তারা যেখানে রথ অপেক্ষা করছি সেখানে ফিরে এল। পুনরায় যাত্রার পূর্বে টাইটা অন্যদের উদ্দেশ্য কথা বলল। সে জানে তারা ভয় পাবে যদি সে প্রকৃত কারণুটা বলে। তাই সে বলল, আমার বালিয়াড়ির সবচাইতে খারাপ ও বিপদজন অঞ্চলে প্রবেশ করছি। আমি জানি তোমরা সবাই ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত, যাত্রার কষ্টে পরিশ্রান্ত, কিন্তু একটু অসতর্ক হওয়া তোমাদের যে কারো জন্যে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঘোড়াগুলোকে দেখবে ও সম্মুখের পথ লক্ষ্য করবে শুধু। নিজেকে কোন অদ্ভুদ শব্দ, অস্বাভাবিক দৃশ্য বা কোন পাখি কিংবা প্রাণী দ্বারা অমনোযোগী করবে না। সে থামল এবং সরাসরি নেফারে দিকে তাকাল। বিশেষভাবে তোমার জন্যে এটা বেশি প্রযোজ্য, মহামান্য। সব সময় নিজের ব্যাপারে সর্তক থাকবে।
নেফার সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল এবং এই প্রথম সে কোন তর্ক করল না। অন্যদেরও গম্ভীর দেখাল। বুঝল তাদের সর্তক করার পিছনে টাইটার বিশেষ কোন কারণ রয়েছে।
যখন তারা আবার উঁচু বালিয়াড়ির মধ্যকার উপত্যকা দিয়ে সামনে এগুল তখন মনে হলো রথের চাকার প্রতি ঘূর্ণনে তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলগা বালির দেয়ালগুলো দুই পাশে উঠে গেছে নানা বর্ণ ধারন করে, লেবুর মতো হলুদ ও সোনালি, রক্ত বর্ণ ও নীল, শিয়ালের ন্যায় তামাটে, সিংহ বাদামী বর্ণের…। বালিয়াড়ির জায়গায় জায়গায় হিম শীতল অভ্র এর আকা বাঁকা রেখা কিংবা কালো বালির দাগ যা তেলের প্রদীপের ঝুলের মতো দেখতে দেখা গেল। মাথার উপরে আকাশ উষ্ণ ও হিংস্র হয়ে উঠল। আলোর ধরন পরিবর্তন হয়েছে; ওটা হলুদ ও খয়েরি হয়ে গেছে। দূরের জিনিস দ্বিধান্বিত ও বিকৃত দেখাল। নেফার আকাশের ঝিকঝিক করা তীব্রতার মধ্য দিয়ে তাকাল। তা এতো কাছে মনে হল যে যেন চাবুকের শেষ প্রান্ত দিয়ে তা স্পর্শ করা যাবে। এই সময় ৫০ কিউবিট দূরে সামনে টাইটার যানটাকে মনে হল কালির কোন ফোঁটা হয়ে গেছে এবং দূর দিগন্তে তার অবস্থান।
তাপ চেহারা ও দেহের উন্মুক্ত ত্বক ঝলসে দিল। নেফার অনুভব করল এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করছে। এর কোন কারণ ছিলনা, কিন্তু সে তা তাড়াতে পারল না।
যখন মিনটাকা তার সাথে ধাক্কা খেল এবং তার চাবুক ধরা হাত শক্ত করে ধরল সে বুঝল সেও এরকম অনুভব করছে। বাতাসে মহাঅশুভ কিছু বিরাজ করছে। সে টাইটাকে ডাকতে চাইল, কিন্তু তার কণ্ঠ ধুলো ও তাপে পুরোপুরি বন্ধ। গলা থেকে কোন আওয়াজ বের হল না।
হঠাৎ সে অনুভব করল মিনটাকা শক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং চাবুক ধরা হাতের আঙ্গুলগুলো তাকে যন্ত্রণাদায়ক ভাবে খামচে ধরেছে। সে তার চেহারা দিকে তাকাল এবং দেখল সে ভীত। মুক্ত হাত দিয়ে সে পাগলের মতো বালিয়াড়ির চূড়ার দিকে দেখাল যা মনে হচ্ছিল তাদের উপর ঝুলে পড়বে।
কিছু একটা প্রকাণ্ড ও কালো ঐ উঁচু থেকে আলাদা হয়ে তাদের দিকে হুড়মুড় করে চেপে আসতে লাগল। এরকম সে কখনো আর দেখে নি। পানির থলের মতোই জিনিসটার গঠন, ভারি থলথলে দৈত্যাকৃতির, কিন্তু এতো বড় যে পুরো বালিয়াড়িটা ঢেকে ফেলতে পারবে। বলতে গেলে ওটি শুধু তিনটা রথ নয় এবং পুরো সেনাবাহিনী ঢেকে ফেলবে। যখন গড়িয়ে প্রায় কাছাকাছি এল তখন ওটা তার গতি বাড়িয়ে দুলতে দুলতে কম্পিত হয়ে ও নিরবে লাফিয়ে তাদের উপর নেমে এল। মরুর আকাশে তা সৃষ্টি করল হলুদ বর্ণ। তাপের ওপর ওটা হঠাৎ এক শীতল নিঃশ্বাস ঝাড়লো যা তাদের ফুসফুস থেকে তাদের দম টেনে নিল যেন। তাদের মনে হল তারা কোনো উঁচু পর্বতের ঝর্ণার পুকুরে ডুবে যাচ্ছে।
ঘোড়াগুলোও তা দেখল: বন্য আচরণে প্রাণীগুলো আগপিছ করতে করতে দ্রুত নিচের উপত্যকা বরাবর ছুটল, ভয়ংকর অপচ্ছায়াটা থেকে বাঁচার চেষ্টা করল প্রাণীগুলো। একটা কালো লাভার পাথর ঠিক তাদের সামনে এবং তারা তার দিকে সোজাসুজি দৌড়ে যাচ্ছে। নেফার বিপদটা বুঝল এবং প্রাণীগুলোর মাথা ঘোরাতে চাইল কিন্তু তখন তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সে যখন লাগামের সাথে যুদ্ধ করছিল মিনটাকা তখন তার পাশে চিৎকার করছিল।
নিশ্চিত তারা কালো অপচ্ছায়াটা দ্বারা মোহিত। নেফার তার কাঁধের উপর দিয়ে দেখল। সে আশা করল ওটা তাদের উপর আবছাভাবে আবির্ভূত হবে কারণ সে তার ঘাড়ের পিছনে ঠাণ্ডা প্রবাহ অনুভব করছিল, কিন্তু কোন কিছু দেখতে পেল না। বালিয়াড়ির সামনের অংশ শূন্য, মসৃন ও নীরব। তাদের উপরের হলুদ আকাশটাও শূন্য ও উজ্জ্বল। অন্য দুটি রথ খাজের নিচে থেমে পড়েছে, ঘোড়াগুলোও শান্ত এবং নিয়ন্ত্রণে। টাইটা ও অন্যরা তাদের দিকে চেয়ে আছে, বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে।
ওয়াও! নেফার পলায়ন রত দলটার উদ্দেশ্যে চিৎকার করল এবং তার পুরো ওজন লাগামের উপর ফেলে থামাতে চেষ্টা করল কিন্তু ঘোড়াগুলো শুনল না। পূর্ণ গতিতে ওগুলো লাভার পাথরের মধ্যে দিয়ে যেন উড়ে চলছিল। থাম্ সে আবার চিৎকার করল। থাম! দোহাই। থাম্।
ঘোড়াগুলো ভয়ে উদ্ভ্রান্ত, নিয়ন্ত্রণের উর্ধ্বে। লাগামের টানে ওগুলো তাদের ঘাড় বাঁকা করল ও দীর্ঘ লাফ দিচ্ছে, সেই সাথে প্রতি পদক্ষেপে বিরক্তি সূচক শব্দ করছে।
শক্ত করে ধরো, মিনটাকা! নেফার চেঁচিয়ে বলল এবং একটা হাত তার কাঁধের উপর রেখে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করল, আমরা ধাক্কা খেতে যাচ্ছি।
কালো পাথরগুলো বাতাস বাহিত বালিতে অদ্ভুত আকৃতি ধারণ করেছে। কয়েকটার আকৃতি মানুষের মাথার ন্যায় এবং অন্যগুলো তাদের রথের মতই বড়। নেফার উন্মাদ ঘোড়াগুলোকে কোনভাবে পাথটার দিকে চালাল কিন্তু ওগুলো দুটি সবচেয়ে বড় পাথরের মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে চলল। ফাঁকটা এতো সরু ছিল যে ওরা বেরিয়ে যেতে পারল না। পিছনের চাকা স্পোক পাথরের আঘাত লেগে ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেল এবং বাকিটা উড়ে বাতাসে নিক্ষিপ্ত হল। গাড়িটা অক্ষ দন্ডের উপর ভেঙে পড়ল ও পিছনের ঘোড়াকে টেনে ভূপাতিত করল। যা পরবর্তী পাথরে নিক্ষিপ্ত হল। নেফার প্রাণীটার সামনের পাগুলো লাকড়ির টুকরোর ন্যায় মটমট করে ভাঙতে শুনল, যদিও সে ও মিনটাকা ততোক্ষণে ওটা থেকে লাফিয়ে নেমে গেছে।
তারা পরম বালিতে লাফিয়ে পড়ে কোন রকমে পাথরের আঘাতটা এড়াতে পেরেছে যা ঘোড়াটাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। একটু দাঁড়ানোর অবস্থা হলে নেফার অনুভব করল তখনও সে মিনটাকাকে তার বাহুতে ধরে রেখেছে। সে তার পতন রক্ষা করেছে এবং একটা দম নিয়ে জানতে চাইল, তুমি ঠিক আছো? তুমি কি ব্যথা পেয়েছো?
না, সাথে সাথে সে জবাব দিল। তুমি?
নেফার হাঁটুগেড়ে বসে ভাঙ্গা রথ ও ঘোড়াটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।
হায়! হুরাস। সে চিৎকার করে বলল, আমরা শেষ, রথটা ভর্তা হয়ে গেছে। ঠিক করার আর কোন আশাই নেই, একটা ঘোড়া চির দিনের জন্য শেষ, ওটার সামনের পা গুড়ো হয়ে গেছে। অন্যটা তখনো দাঁড়িয়ে আছে, মোহ গ্রস্থ ও রথের একটি কুবর গলায় লাগানো তার, কিন্তু একটা পা ওটার সরে যাওয়া বাঠ থেকে আলতো ভাবে ঝুলছে।
অস্বস্তিকরভাবে নেফার তার পায়ের উপর দাঁড়াল এবং তারপর মিনটাকাকে টেনে তুলল। তার এক জন অন্য জনকে জড়িয়ে ধরে রইল যতক্ষণ না টাইটা রথ চালিয়ে তাদের কাছে এল। ম্যারনের হাতে লাগাম দিয়ে সে লাফ দিয়ে পাদানি থেকে নিচে নেমে বড় পদক্ষেপে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে? ঘোড়াগুলোর পালানোর কারণ কি?
তুমি কি ওটা দেখেছ? নেফার জিজ্ঞেস করল, এখনো সে কাঁপছে এবং হতভম্ব।
কি ছিল ওটা? টাইটা জানতে চাইল।
একটা বস্তু, কালো ও বিশাল বড় পর্বতের মতো। বালিয়াড়ি দিয়ে গড়িয়ে তা আমাদের উপর এল। নেফার অন্ধের মত শব্দ খুঁজল কি দেখেছে তা বর্ণনা করতে।
ওটা হাথোরের মন্দিরের মতোই বড় ছিল। মিনটাকা বলল সায় জানিয়ে।
ভয়ংকর ছিল। তুমিও নিশ্চয় ওটা দেখেছে।
না, টাইটা উত্তর দিল। এটা তোমার মন ও দৃষ্টির ভ্রম। আমাদের শত্রুরা ওখানে কিছু করেছে।
ডাইনী বিদ্যা! নেফার হতবুদ্ধি হয়ে গেল। কিন্তু ঘোড়াগুলো তা দেখেছে।
টাইটা তাদের থেকে সরে এসে হিল্টোকে ডেকে আদেশ করল, ওই হতভাগ্য জগুলোকে মেরে ফেলে। সে আহত ঘোড়াগুলোকে নির্দেশ করল। তাকে সাহায্য কর, নেফার। টাইটা তাকে দুর্ঘটনাটা ও তার ফলাফল থেকে অমনোযোগী করতে চাইল।
ভারাক্রান্ত মনে নেফার পড়ে থাকা ঘোড়ার মাথাটায় আদর করল। তারপর সে জটার কপালে আঘাত করল এবং ওটার চোখ তার রুমাল দিয়ে বেঁধে দিল যাতে নিজের আসন্ন মৃত্যু প্রাণীটা দেখতে না পায়।
হিল্টো একজন পুরনো যোদ্ধা এবং যুদ্ধের ময়দানে এই দুঃখের কাজ সে বহু বার করেছে।
সে চাকুর তীক্ষ্ণ প্রান্ত প্রানীটার কানের পিছনে ঢুকিয়ে দিল এবং যা এক ধাক্কায় প্রাণীটির মাস্তিষ্কে পৌঁছে গেল। ঘোড়াটা শক্ত হল, কাপল এবং তারপর স্থির হয়ে গেল। তারপর তারা দ্বিতীয় প্রাণীটার কাছে গেল। হিল্টোর এক আঘাতেই ওটা পড়ে গেল এবং আর নড়ল না।
টাইটা ও বে এক সাথে দাঁড়িয়ে এই করুণ মর্ম-বিদারী কাজ দেখছিল। বে নরম স্বরে বলল, আমি যতোখানি ভেবেছিলাম তার চাইতে দেখছি মেডি বেশি শক্তিশালী। সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি খুঁজে বের করেছে এবং তার শক্তি তাদের দিকে চালনা করেছে।
তার সাথে তার শক্তি বাড়াতে টর্কের অন্য যাদুকরেরাও রয়েছে। এখন থেকে সামনের পথটায় আমাদের হিল্টো ও ম্যারনের উপর দৃষ্টি রাখতে হবে। টাইটা সম্মত হল। যতোক্ষণ না আমি আমার নিজের শক্তি একত্রিত করতে পারছি ইশতারের সাথে ততোক্ষণ লড়াইতে আমরা মহা বিপদে থাকছি।
সে বে-এর পাশে থেকে সরে এল। তাদের দুজনকে এক সাথ গোপনে আলোচনা করতে দেখলে তা অন্যদের সমস্যা করতে পারে। এখন তাদের মনন শক্তি উজ্জীবিত রাখা হল সবচেয়ে জরুরি কাজ। পানির থলেগুলো আনো, টাইটা আদেশ করল। ধাক্কায় একটা ফেটে গেছে এবং অন্য দুটা অর্ধ পূর্ণ। তারা ওগুলো বাকী রথের সাথে বেঁধে নিল।
এখন থেকে সামনে থাকবে ম্যারন আর হিল্টো বে এর সাথে যাবে। আমি মহামান্যদের আমার সাথে নেবো।
পানির মশক ও অতিরিক্ত যাত্রীর ওজনে রথগুলো এখন অতিরিক্ত বোঝাই করা। যখন ঘোড়াগুলো সামনে বাড়ল মনে হল যেন তারা তীব্র তাপে আঁট সঁট হয়ে গেল, গনগনে সূর্যটা অদ্ভুত হলুদ আলোতে অস্পষ্ট।
টাইটা লসট্রিসের স্বর্ণের কবজটা তার ডান হাতে নিয়ে বিড় বিড় করে কোমল সুরে মন্ত্র পড়তে লাগল, অশুভ প্রভাবটা প্রতিহত করার চেষ্টায় সে ব্যস্ত যা তাদের চারপাশে ভারি হচ্ছিল। পিছনের রথে বে-ও গুন গুন করছে, একটি একঘেয়ে পুরো স্তবক।
তারা রাস্তার একটা ভাগে এল যেখানে বাতাস অন্য ক্যারাভান ও ভ্রমণকারীদের চাকার দাগ মুছে দিয়েছে। অনুসরণ করার মতো কোন চিহ্ন নেই শুধু মাত্র পথ নির্দেশক পাথরের স্তূপটা ছাড়া, যা মাঝ বরাবর স্থাপিত। ঘটনাক্রমে ওগুলোও ক্রমে শোষিত হয়ে গিয়েছে এবং তারা চিহ্ন বিহীন বালির মধ্য দিয়ে চলল। তারা এখন টাইটার অভিজ্ঞতা, মরু জ্ঞান এবং তার গভীর সহজাত প্রকৃতির উপর ভরসা করে চলছে।
অবশেষে তারা দুটি উঁচু বালিয়াড়ি পেরিয়ে বেরিয়ে এল সমতল ভূমিতে। এখানে বালি মসৃণ ও সমান, কিন্তু টাইটা কিনারে এসে থেমে গেল এবং ভালোভাবে তা পরখ করল। সে পাদানি থেকে নেমে বে এর উদ্দেশ্যে ইশারা করল। কৃষ্ণকায় বে তার পাশে আসতেই এক সাথে তারা নিবিড়ভাবে ভূমিটা পরীক্ষা করল।
আমার আদৌ এটা সুবিধের ঠেকছে না। টাইটা বলল। এই ভূমির পাশ দিয়ে আমাদের অবশ্যই অন্য পথ নিতে হবে। এখানে কিছু একটা আছে।
শক্ত সমতল বালিতে কিছু দূর বে একটু হাঁটল এবং গরম বাতাস শুঁকে দেখল। দুবার থুথু ফেলল এবং থুথুর আকৃতিটা পর্যবেক্ষণ করল। তারপর সে টাইটার কাছে ফিলে এল, আমি এখানে সমস্যার কিছু পেলাম না। যদি আমরা অন্য কোন ঘুর পথ খুঁজতে যাই তবে তাতে আমাদের কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। অনুসারীরা বেশি দূরে নেই। আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনটা সবচেয়ে বিপদ জনক।
কিছু একটা আছে। টাইটা আবার বলল, তোমার মত আমিও এখান দিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছি। অনুভূতিটা খুব শক্তিশালী ও অযৌক্তিক। মেডি আমাদের মনে এসব স্থাপন করেছে।
মহান ম্যাগোস; বে তার মাথা নাড়ল। এই ব্যাপারে আমি আপনার সাথে এক মত নই। আমাদের অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে এবং উপত্যকা পেরোতে হবে। নইলে রাত নামার পূর্বেই টর্ক আমাদের ধরে ফেলবে।
টর্ক তার কাঁধে হাত রাখল ও তার কালো চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। সে দেখল কিছু একটা অস্পষ্টতা ওখানে যেন সে ভাং এর ধূয়া গ্রহণ করেছে?
মেডি তোমার বর্ম ভেদ করে প্রবেশ করেছে। সে বলল এবং কবজটা বে এর কপালে রাখল। বে চোখ পিট পিট করে দৃষ্টি প্রসারিত করল। টাইটা দেখতে পেল সে প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসার লড়াই করছে। সে তার নিজের ইচ্ছা প্রয়োগ করল তাকে সাহায্য করার জন্য।
অবশেষে বে কেঁপে উঠল ও তার দৃষ্টি পরিষ্কার হল। আপনি ঠিক; সে ফি ফিস্ করে বলল। ইশতার আমাকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই জায়গায় অনেক বিপদ।
তারা নিচের সরু উপত্যকার দিকে তাকাল। একটা হলুদ বালির নদীর মতো তা দেখতে, যার কোন শুরু বা শেষ নেই। অপর তীর যা সবচেয়ে সরু ও কাছাকাছি, তা কম পক্ষে তিন ক্রোশ হবে এবং টর্কের বাহিনী খুব নিকটে তাদের পিছনে।
দক্ষিণ না উত্তর? বে জিজ্ঞস করল। আমি কোন ঘুর পথ দেখতে পারছি না।
টাইটা তার চোখ বন্ধ করে তার সব শক্তি প্রয়োগ করল। হঠাৎ ভয়ানক নিরবতার মাঝে একটা শব্দ হল। একটা ক্ষীণ উঁচু কান্না। সবাই উপরে তাকাল এবং দেখল একটা রাজ বাজ পাখির ক্ষুদ্র আকৃতি হিংস্র হলুদ আকাশের উপর উঠে যাচ্ছে। পাখিটা দুবার ঘুর চক্কর দিল, তারপর উপত্যকা বরাবর দক্ষিণে গতি তুলে পাতলা কুয়াশায় অদৃশ্য হয়ে গেল।
দক্ষিণে, টাইটা বলল। আমরা বাজ পাখিটাকে অনুসরণ করবো। দুজন আলোচনায় এতো মনোযোগী ছিল যে তাদের কেউ লক্ষ্য করেনি কখন হিল্টো তার রথটা তারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার কাছাকাছি এসে থামিয়েছে। সে ও ম্যারন ড্যাশবোর্ডর উপর ঝুঁকে তাদের আলোচনা শুনছে। হিল্টো অধৈর্য্যে ভ্র-কুঞ্চিত করে চিৎকার করে উঠল, যথেষ্ট হয়েছে! সামনের পথ পরিষ্কার। আর দেরি করা সম্ভব না। আপনি কি অনুসরণ করতে সাহস পাবেন যদি হিল্টো পথ দেখায়?
সে তার ঘোড়াগুলোর পিঠে চাবুক চালাল। চমকে উঠে ঘোড়াগুলো লাফিয়ে সামনে গেল। ম্যারন এ হঠাৎ গতিতে প্রায় পাদানি থেকে পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু শক্ত করে হাত ধরে রাখায় ছুটন্ত যানটায় রয়ে গেল কোন রকমে।
টাইটা হিল্টোর উদ্দেশ্যে সতর্ক চেঁচালো। সরে এসো! তুমি কু-মন্ত্রে মোহিত। তুমি জান না তুমি কি করছ।
বে পিছনের ঘোড়ার হার্নেস ধরার জন্য লাফ দিল কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে; রথ তাকে অতিক্রম করে বেড়িয়ে গেল সমতল ভূমি বরাবর। গতি তুলে হিল্টো বিদ্রুপাত্মক একটা হাসি দিল। পথ খোলা, মসৃণ ও গতিময়।
নেফার তার স্থির যানের লাগাম টান দিয়ে চিৎকার করে বলল, আমি তাকে থামাবো, ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি।
না, টাইটা পিছনে ঘুরে নিষেধ করল। দ্রুত হাত তুলে বলল, ওখানে বেড়িয়ে যেও না। ওখানে বিপদ। থামো! নেফার।
কিন্তু নেফার তা অবজ্ঞা করল। মিনটাকাকে পাশে নিয়ে সে ঘোড়াগুলোর পিঠে চাবুক চালাল এবং শক্ত মসৃণ বালিতে চাকা নামল। সে হিল্টোকে ধরতে এগিয়ে চলল দ্রুত।
ওহ, মহান হুরাস। টাইটা আর্তনাদ করে উঠল। চাকাগুলো দেখ।
রূপালি বালির সুন্দর দানা পালকের ন্যায় হিল্টোর রথের ঘূর্ণায়মান চাকার পিছন থেকে উঠছিল। ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে তারা দেখল পালকসমূহ পুরু নরম হলুদ কাদার পুচ্ছে পরিণত হচ্ছে, তারপর আরো নরম চোরা কাদার পুকুর সম্মুখে তার। ঘোড়াগুলোর গতি ধীর হল, তাদের মধ্যসন্ধি পর্যন্ত তাতে ডুবে গেল এবং কাদার পিন্ড তাদের ছুটন্ত খুর থেকে অনেক ফিরে আসার কোন চেষ্টা করল না এবং কর্দমাক্ত খন্দের আরো গভীরে তারা হরিয়ে যেতে লাগল ক্রমশঃ।
চোরাবালি। টাইটা তিক্ত কণ্ঠে চিৎকার করল। এটা মেডির কাজ। প্রকৃত রাস্তাটা সে আমাদের কাছে লুকিয়ে রেখেছে এবং আমাদের এই ফাঁদে এনে ফেলেছে।
হঠাৎ যাত্রী দল নিমাংশের প্রতারক ভেজা চূড়া ভেঙে নিচে প্রবেশ করল। চাকার কিনারা পর্যন্ত পড়ে গেলে রথটা এমন আকস্মিকভাবে থামল যে হিল্টো ও ম্যারন ড্যাশাবোর্ডের উপর ছিটকে পড়ল। তারা নিষ্পাপ স্তরের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলল। যখন তারা থামল এবং দাঁড়াতে চেষ্টা করল দেখল তাদের দেহ দুর্গন্ধময় হলুদ কাদায় ঢেকে গেছে এবং সাথে সাথে তারা তাদের হাটু পর্যন্ত তাতে গেড়ে গেল।
ঘোড়াগুলোর পুরোটাই কাদার ডুবে গেছে। শুধু তাদের মাথা ও সামনের অংশ মুক্ত ছিল। কিন্তু যখন ভয়ে তারা মৃদু হ্রেষাধ্বনি তুলল এবং নড়ল তখন আরো গভীরে তারা ডেবে যেতে লাগল।
নেফার হতভম্ব হয়ে গেল এবং চোখের সম্মুখে ঘটা বিপদে খুব ধীর প্রতিক্রিয়া দেখাল। সে ঘুরে যাওয়ার প্রয়াস নিল কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার রথের চাকা কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত ডুবে গেছে এবং দুটি ঘোড়াই কাঁধ পর্যন্ত কাদায় ডুবে গেছে। সে তাদের সাহায্য করতে লাফিয়ে নামল। হার্নের্স খোলার এবং তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে আঠালো কাদার ফাঁদে আটকা পড়ল, হাঁটু অবধি সে ডুবে গেল এবং তারপর কোমর পর্যন্ত। দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করো, মিনটাকা তাকে পাগলের মতো সতর্ক করল। এটা তোমাকে নিচে নিয়ে যাবে, নিজেকে চিৎ কর ও সাঁতার কাট।
মিনটাকা নিজেকে ডুবন্ত যান থেকে অধোমুখে নিক্ষেপ করল এবং কম্পমান কাদার সমতলে পড়ল। এইভাবে নেফার, আমি যেমন করছি।
সে তার বুদ্ধি ফিরে পেল এবং উপরি ভাগে সমতল হয়ে হাত পা ছড়িয়ে দিল। একটা অস্বস্তিকর সাঁতারের চেষ্টা করল সে যার গতিবেগ শিক্ষারত শিশুর হাঁটার মতো। রথটা পুরোপুরি চোরাবালিতে অদৃশ্য হবার আগে সে ওটার নিকট গেল। ছুরি দিয়ে চামড়ার রশিটা কেটে কাঠের পাদানিটা খুব দ্রুত উপরে ছিঁড়ে আনল এবং ওগুলো নিক্ষেপ করে ভাসিয়ে দিল। পাদানিটা বালির উপরি স্তরে ভেসে রইল, আর ভারি রথটা ততোক্ষণে নিপুণভাবে স্তরের নিচে পিছলে গেল এবং ঘোড়াগুলোকেও তার সাথে টেনে নিয়ে নিল। কয়েক মিনেটের মধ্যে সেখানে বালিয়াড়ির রং এর সমতলে এক ক্ষুদ্র পুচ্ছ রইল শুধু তাদের দুর্দশা চিহ্নিত করতে।
হিল্টোর রথও নিচে চলে গেছে এবং সেই সাথে তার ঘোড়াও। সে ও ম্যারন বৃথা চেষ্টা করছে, ভয়ে চিৎকার করছে, কোন রকমে শুধু তাদের কাদায় মাখা মাথা ও কাঁধ জাগিয়ে তারা ভেসে আছে।
নেফার একটা তক্তা মিনটাকার দিকে ঠেলে দিল। এটা ব্যবহার কর! যে তাকে আদেশ দিল এবং সাথে সাথে মিনটাকা হামগুড়ি দিয়ে ওটার উপর চড়ে বসল।
সে অন্য একটা তক্তা চামড়ার রশি ধরে টেনে নিয়ে কোন রকমে কাদার ফাঁদ গলে নিজেকে হিল্টো ও ম্যারনের কাছাকাছি নিক্ষেপ করার মত নিকটে গেল। অবশেষে তারা নিজেদের কাদার ক্ষুধার্ত থাবা থেকে টেনে বের করল একে অন্যের সাহায্য নিয়ে। চারজনের সবাই কঠোর সাঁতার কেটে ফিরতে লাগল। টাইটা ও বে শক্ত ভূমি থেকে ভয়ে ভয়ে তাদের দেখছে।
টাইটা তার হাত নেড়ে সতর্ক চিৎকার করল, তোমাদের এখনো অর্ধেক পথ বাকি। এখানে ফিরে এসো না। চালিয়ে যাও। অন্য পাশ দিয়ে অতিক্রম কর।
নেফার সঙ্গে সঙ্গে তার কথার ইঙ্গিতটা বুঝল। তারা দুরের অন্য তীরের দিকে ঘুরল। ধীর ও কষ্ট সাধ্য ছিল কাজটা। কারণ কাদা তাদের বাহু ও পা এবং তার তল দেশে শক্ত করে আটকে থাকতে চায়। মিনটাকা তার হালকা ওজন কাজে লাগাল এবং অন্যদের চেয়ে এগিয়ে গেল। প্রথমে সে শক্ত মাটিতে পৌঁছে নিজেকে চোরাবালির কবল থেকে মুক্ত করল। অবশেষে নেফার, হিল্টো ও ম্যারন তাকে অনুসরণ করল। তারা প্রায় নিঃশেষিত। পূর্ব দিকের বালিয়াড়ির পাদদেশে পৌঁছে তারা গা ছেড়ে বসল অবশেষে।
তারা পেরোতেই তাদের দুর্দশা নিয়ে টাইটা তার চিন্তা করার সময়টা পেল। এটা মনে হচ্ছিল আশাতীত। তারা দুই ভাগে ভাগ হল, তাদের মাঝে দুইশ কিউবিট প্রশস্ত উপসাগর। তারা তাদের অস্ত্র ও মালপত্র হারিয়েছে কিন্তু সবচইতে বেশি খারাপ যা তা হল মূল্যবান পানির থলেও। বে তার বাহু স্পর্শ করে ফিসফিস করে বলল, শুনুন!
বাতাসে একটা চাপা গুঞ্জন, অনেক দূরে। মাঝে মাঝে ক্ষীণ হচ্ছে, তারপর। আবার জোরালো হচ্ছে। একটি দূরবর্তী প্রতি ধ্বনি বালিয়াড়ির দেয়াল ঘেষে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। যদিও ক্ষীণ তবুও তা নির্ভুল; এক সারি যুদ্ধ রথের বহর এগিয়ে আসার শব্দ তা।
উপত্যকার অন্য তীরে কাঁদায় ঢাকা তিনটি অবয়বও শব্দটা শুনল এবং উঠে দাঁড়াল। তারা সবাই বালিয়াড়ির ভেতর দিয়ে পিছনে চেয়ে রইল এবং টর্ক ও তার লোকদের দ্রুত এগিয়ে আসতে শুনল। হঠাৎ করে মিনটাকা চোরা বালির কিনারে দৌড়ে গেল যেখানে তারা তক্তাগুলো ছেড়ে এসেছিল, যা তাদের বয়ে এনেছে। নেফার তার পিছনে তাকিয়ে রইল, তার ইচ্ছা বোঝার চেষ্টা করছে। মিনটাকা তক্তাগুলো একত্রিত করল এবং হাঁটু পর্যন্ত নেমে চামড়ার রশি ধরে তার পিছন পিছন টেনে আনল।
নেফার হঠাৎ করেই বুঝল সে কি করছে, কিন্তু তাকে থামাতে তার বেশি দেরি হয়ে গেল। মিনটাকা নিজেকে একটা তক্তার উপর সমতলে ফেলে হলুদ কাদায় ভেসে এগুতে শুরু করল। নেফার তাকে থামাতে কোমর পর্যন্ত নামতে বাধ্য হল কিন্তু ততোক্ষণে সে তার আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে।
ফিরে এসো; সে তাকে পিছন থেকে ডাকল, আমিও যাবো।
আমি তোমার চেয়ে হালকা ও দ্রুতগামী। সে বলল। নেফারের শত অনুনয় সে অবহেলা করে তার সব দম ও শক্তিকে ব্যবহার করল সামনে ভেসে যাওয়ার জন্যে।
রথের আওয়াজ জোরালো হল এবং মিনটাকা আরো জোরে চেষ্টা করল এগিয়ে যেতে। তার এ ধরনের কাজ দেখে তার নিরাপত্তার কথা ভেবে নেফারের রাগ হলো, কিন্তু তার চেয়ে বেশি গর্ব হলো তার অহংকার ও তার সাহসের জন্য। তার হৃদয় একজন যোদ্ধা ও একজন রাণীর হৃদয়ের মতোই। নেফার ফিসফিস করে বলল। অবশেষে মিনটাকা অন্য তীরের কাছাকাছি পৌঁছে গেল।
এখন তারা অনুসারীদের কণ্ঠ, চাকার মড় মড় আওয়াজ ও অস্ত্রের ঝন ঝন শব্দ শুনতে পাচ্ছে, বালিয়াড়ির নীরবতায় তা আরো জোড়ালো শোনাচ্ছিল।
হাত মুক্ত করতে টাইটা তার হাতে থাকা লঠিটা বেল্টে খুঁজে নিল; তারপর সে ও বে তার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য নেমে এল। প্রত্যেকে মিনটাকার কাছ থেকে একটা করে তা নিয়ে নিজেদের প্রতারক কাদার স্তরে ভাসিয়ে দিল। তিন জন। এক ভিন্ন সাঁতার কাটতে কাটতে পূর্ব তীরের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাল। বালিয়াড়ি থেকে বেরিয়ে আসা তাদের পিছনে অনুসারী রথগুলোর সারির মাথা দেখা গেল তখন। টর্কের নির্ভুল অবয়ব অগ্রগামী রথে ছিল এবং তার কর্কশ ভারি কণ্ঠে বিজয়ের গর্জন বালিয়াড়ির দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হল। ঔ যে সামনে! ধররা!
রথের অগ্রবর্তী দলটি দ্রুত এগিয়ে এল এবং চোরবালির কিনারে এল। তিন ফেরারী হলুদ কাদার উপর পাগলের মত নিজেদের দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের পিছনে রথীদের চিৎকার জোরালো হলো আরো তখন।
টর্কের ভারি ওজন অন্য যানের থেকে তার চাকাগুলোকে নরম বালিতে অন্যদের চেয়ে আরো বেশি ডুকতে বাধ্য করল এবং যদিও চাবুকের আঘাতে তার ঘোড়াগুলো সর্বাধিক চেষ্টা চালাল, সে ধাওয়া করা প্রথম সারির পিছনে পড়ে গেল। প্রধান দলের অন্য তিনটা রথ অধোমুখে চোরাবালিতে দৌড়ে গেল এবং অন্য যানের ন্যায় দ্রুত ডুবতে লাগল। এর ফলে টর্ক বিপদের ব্যাপারে সচেতন হয়ে গেল। সে তার নিজের দলকে কোন রকমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বেরিয়ে এল কাদা থেকে।
সে তার বাঁকানো ছোট ধনুকটা তাক থেকে নিয়ে লাফিয়ে নামল। তার পিছনে অন্য রথগুলোও ততোক্ষণে থেমে গেছে এবং দূর থেকে বিশাল স্তূপ লাগছিল সবগুলোকে দেখতে। ধনুক? টর্ক চিৎকার করল, তাদের দিকে তীরের বৃষ্টি বর্ষণ করো। পালিয়ে যেতে দিও না। তীর দিয়ে হত্যা করো।
তীরন্দাজরা দৌড়ে এগোলো এবং চোরাবালির কিনারে এসে সারি গঠন করল। তাদের পিঠে তীর ভর্তি খাপ এবং তীরের গুণ শক্ত করে বাঁধা।
মিনটাকা আরো একবার তার সঙ্গীদের থেকে এগিয়ে গিয়েছে। ইতোমধ্যে সে অর্ধেক পথ পেরিয়ে এসেছে এবং যদিও তারা পাগলের ন্যায় দাঁড় বাইছে তবুও টাইটা ও বে পিছনে পড়ে যাচ্ছে বারেবার।
টর্ক লম্বা পদক্ষেপে সারির সামনে এসে দাঁড়াল, তারপর আদেশ দিল, তীরন্দাজরা তোমাদের তীর লক্ষ্য স্থির কর! দেড়শ তীরন্দাজ ধূন টেনে তাদের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করল।
ছেড়ে দাও! টর্ক চিৎকার করল এবং এক সাথে অনেক সংখ্যক তীর ছুটে গেল। তীরগুলো কালো মেঘ বরাবর উঠে গেল। ওগুলো রক্তিম আকাশ বরাবর উঠে গেল, পর্বতের চূড়া সমপরিমাণ এবং কাদা ভেজা তিনটি ক্ষুদ্র অবয়বের দিকে নিচু হয়ে পড়তে লাগল। টাইটা ওগুলো আসতে শুনল এবং পিছনে আকাশের দিকে তাকাল। ভয়ংকর মেঘটা তাদের দিকে ছুটে আসছে, উড়ন্ত বন্য রাজহাসের পাখার হিসহিস আওয়াজের ন্যায় মৃদু ছন্দ তুলে।
কাদার ভিতরে! সতর্ক করে বলল টাইটা। তিন জন দ্রুত তক্তা থেকে পিছলে নেমে পুরু কাদায় ডুবে তক্তাটি তুলে ধরে রইল, যতোক্ষণ না তীরগুলো তাদের পেরিয়ে গেল। তীরগুলো শিলাবৃষ্টির পুরু হয়ে তাদের আশেপাশে পড়ল। একটা তীর একটি তক্তার উপর গভীর ভাবে গেথে গেল যার উপর কয়েক সেকেন্ড আগেও শুয়ে ছিল মিনটাকা।
সামনে, টাইটা আদেশ দিতেই তারা নিজেরদের আবার তক্তায় টেনে তুলল এবং পুনরায় দাঁড় বেয়ে সামনে এগুল। বাতাস আবার তীরের গুন গুন আওয়াজে পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তারা কয়েক গজ এগিয়ে গেল এবং নিজেদের আবার আগের মতই হলুদ কাদার প্রতিরক্ষায় নিক্ষেপ করল তারা।
আরো তিনবার একই ভাবে তক্তা থেকে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হল তারা, তবে প্রতিবারে তীরন্দাজদের থেকে তাদের দূরত্বটা বেড়ে গেল এবং লক্ষ্যের নির্ভুলতা কমতে লাগল। মিনটাকা আগের চেয়েও দ্রুত চলছিল এবং আয়ত্তের বাইরে চলে গেল শীঘ্রই।
টর্ক সজোরে তার লোকদের তীর ছুঁড়তে উদ্বুদ্ধ করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ল এক সময়। তীরগুলো তাদের আশে পাশে কাদায় টুপ করে পড়ছিল, কিন্তু তাদের পতন ছিল ভুল।
টাইটা বে-কে দেখতে মাথা ঘুরাল, তার বিশাল দাগওয়ালা মাথা কাদা ও ঘামে জ্বলছে। তার লাল চোখটা কোঠরের ভেতর স্ফীত হয়ে আছে এবং মুখ সম্পূর্ণ খোলা, সারিবদ্ধ দাঁতগুলো হাঙ্গরের দাঁতের ন্যায় দেখতে তীক্ষ্ণ।
সাহস রাখ, বে। টাইটা উৎসাহ দিয়ে বলল, আমরা প্রায় পেরিয়ে এসেছি। বলেই সে বুঝল শব্দগুলো যেন প্রভুদের উদ্দেশ্যে সরাসরি একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল।
তাদের পিছনে তীরে দাঁড়িয়ে টর্ক দেখল তার হাত থেকে শিকার ধীরে ধীরে পিছলে যাচ্ছে। তার সৈন্যরা অপেক্ষাকৃত খাটো ও কম শক্তিশালী তীর ব্যবহার করছে যা চলন্ত রথ থেকে ছোঁড়ার জন্য তৈরি করা। এগুলো সর্বোচ্চ ২০০ কিউবিট পর্যন্ত যেতে পারে। টর্ক ঘুরে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তার বর্শা বাহকের দিকে তাকাল, যে তখন দলের ঘোড়াগুলোকে সামাল দিচ্ছিল।
আমার যুদ্ধ ধনুকটা আন। সে চিৎকার করে আদেশ দিল, পুরো বাহিনীতে একমাত্র টক-ই কেবল তার রথে লম্বা ধনুক বহন করছে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তার বাহিনীর বাকিদের যুদ্ধ ধনুকে অস্বাভাবিক দৈর্ঘ্য ও অতিরিক্ত শক্তি আয়ত্তের জন্য ঠিক হবে না।
যাই হোক টর্কের অনেক শক্তি ও তার লম্বা হাতের দক্ষতা নিচু লোকদের অভিযোগের ঊর্ধ্বে। সে অধিকাংশ পরিস্থিতিতে খাটো বাঁকানো তীর ব্যবহার করে। তথাপি সে তার রথে তার পাশে একটি বিশেষ তাক বানিয়েছে যেখানে অধিক শক্তিশালী ও অতিরিক্ত দৈর্ঘ্যের অস্ত্র রাখা থাকে।
তার বর্শা বাহক দৌড়ে এসে তার বিশাল ধনুকটা তার হাতে দিল। সে বিশেষ তীরে পূর্ণ খাপটাও এনেছে, সিংহের চিত্র খোদই করা যা দীর্ঘ হাতের টর্কের জন্য মানান সই।
টর্ক সামনের সারির তীরন্দাজদের কাঁধ দিয়ে ঠেলা মেরে তার রাস্তা করে নিল এবং তারাও সরে তাকে রাস্তা করে দিল। একটা লম্বা তীর ধূনে লাগিয়ে অধবোজা চোখ দিয়ে দূরত্ব পরিমাপ করল তারপর সে।
হলুদ কাদায় দুজন সাঁতারুর মাথা ক্ষুদ্র কালো ফোঁটার মতো দেখা গেল। তার আশে পাশে লোকেরা এখানে দ্রুত তার সাথে তীর নিক্ষেপ করছে কিন্তু তারা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হচ্ছিল, অযথা কাদায় সব পড়ছে। মনে মনে টর্ক হিসেব কষে পা সামনে এগিয়ে তার সঠিক অবস্থান নিল। একটা গভীর দম নিয়ে বাঁ হাত সোজা রেখে গুন টান দিল, যতোক্ষণ না গুনটা তার বাঁকানো নাক স্পর্শ করল। ধনুকটা তার শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করল যেন। তার নগ্ন বাহুর মাংসপেশীটা তখন মনে হলো দৃপ্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সে এক হৃদস্পন্দন পর্যন্ত দম ধরে রাখল। নগ্নভাবে তার লক্ষ্য স্থির করল। তারপর তা ছেড়ে সে দিল এবং বিশাল ধনুকের বেড়িটা বেঁকে গেল ও তার হাতে জীবন্ত প্রাণীর মতো মনে হল লম্বা তীরটা। লেজার মিসাইলের ন্যায় মেঘ বরাবর উপরে সব পিছনে ফেলে উঠে গেল তীরটি। তার সর্বোচ্চ সীমায় উঠে একটা অবনত বাজ পাখির ন্যায় নেমে আসতে লাগল তারপর।
কাদার মধ্যে থেকে টাইটা পতনের তীক্ষ্ণ কর্কশ আওয়াজ শুনল এবং উপরে তাকাল। দেখল একটি তীর ঠিক তার দিকে ছুটে আসছে এবং তীর এড়ানোর জন্যে আগের পদ্ধতি অবলম্বন ও মাথা নিচু করার কোন সময় তখন ছিল না তার।
সে ধ্যান মগ্নের ন্যায় তার চোখ বন্ধ করল, তীরটা তার এতো ঘেঁষে চলে গেল যে সে অনুভব করল ওটার গতির ঝাঁপটায় তার চুল নড়ল। তারপর সে একটা আঘাতের শক্ত ধপাস শব্দ শুনল।
চোখ খুলে সে শব্দের দিকে তার মাথা ঘোরালো। দীর্ঘ তীরটা বে-কে বিদ্ধ করেছে, ওটা তার নগ্ন পিঠের মধ্য দিয়ে ঢুকে দেহে ওখানেই গেঁথে রয়েছে। আর তার পাতলা মাথাটা সে তক্তায় যেখানে সে শুয়েছিল সেখানেই হেলে পড়ে আছে।
বে-র মুখটা তার নিজের দেহ থেকে মাত্র এক হাত দূরে। টাইটা তার গভীর কালো চোখের ভেতর দিয়ে তাকাল এবং দেখল মৃত্যু যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করেছে। বে কিছু বলতে তার মুখ খুলল। কিন্তু ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে তাজা রক্তের দ্রুতো সব শব্দ ডুবিয়ে দিল তার। অনেক কষ্টে সে তার গলার নেকলেসের দিকে হাত বাড়াল এবং তা খুলে ফেলল। তারপর সে হাত বাড়িয়ে টাইটাকে মালাটা দিল, তার শেষ উপহার, অমূল্য স্মৃতিচিহ্ন যা তার নখরযুক্ত আঙ্গুলে প্যাচিয়ে আছে।
টাইটা আলতোভাবে শক্ত আঙুল থেকে ওটা খুলে নিল এবং নিজের গলার বাঁধল। সে অনুভব করল এক অদ্ভুত শক্তি তার নিজের মধ্যে প্রভাবিত হচ্ছে; তার শক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বে এর মাথা সামনে ঝুলে পড়ে গেল, কিন্তু তীরটা তাকে তক্তা থেকে গড়িয়ে পড়া থেকে রোধ করল। টাইটা তীরের ডগায় খোদাই করা সিংহটা চিনতে পারল এবং বুঝল কে এটা নিক্ষেপ করেছে। সে আড়াআড়ি পৌঁছে দুটি আঙ্গুল বে-এর কণ্ঠনালীতে রাখল এবং তার চলে যাওয়ার মুহূর্তটা অনুভব করল। বে চলে গেল এবং তার কোন চেষ্টা তাকে ধরে রাখতে পারল না। অগ্যতা টাইটা তাকে ছেড়ে যেখানে নেফার ও মিনটাকা দাঁড়িয়ে তাকে সাহস দিচ্ছে সে দিকে সাঁতরে এগুতে লাগল। আরো চারটা তীর তার আশপাশে কাছাকাছি এসে পড়ল। কিন্তু এদের কোনটাই তাকে স্পর্শ করতে পারল না এবং ধীরে ধীরে সে তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে এল। নেফার এগিয়ে এসে তাকে পুরু কাদায় দাঁড়াতে সাহায্য করল। নিজেকে কাদা থেকে বের করে শক্ত ভূমিতে দাঁড়াতে লাঠিটা ব্যবহার করল টাইটা। তারপর ধপাস করে বসে সে হাঁফাস হাঁফাস করে দম নিল। এক মিনিট পরেই সে উঠে বসল এবং চোরাবালির উপর দিয়ে অন্য তীরে যেখানে টর্ক দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে চেয়ে রইল। টর্ক হাত কোমরে বাঁকিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে, চেহারায় রাগ ও হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে তার স্পষ্টত। তারপর টর্ক তার হাত মুখে রেখে চিৎকার করল, ভেবো না তুমি আমার কাছ থেকে পালিয়ে গেলে, ওয়ারলক! আমি তোমাকে চাই, সেই সাথে আমার স্ত্রী কুকুরটাকেও। আমি তোমাদের দুজনকেই পাব। আমি তোমাকে পিছু নিয়ে ধরবোই। কখনোই আমি গন্ধটা হারাবো না।
মিনটাকা সামনে হেঁটে গেল যতোটা পারল। সে জানে ঠিক কোথায় সে সব চাইতে দুর্বল এবং কিভাবে তার লোকদের সামনে তাকে করুণ ভাবে তিরস্কার করা যায়। প্রিয় স্বামী, তোমার হুমকি তোমার দেহের মতই থলথলে ও শূন্য। তার উচ্চ মিষ্টি কণ্ঠ পরিষ্কার ভাবে বাতাস বহন করল এবং দুই শত হিকস্ যোদ্ধা এর প্রতিটি শব্দ শুনল। একটা শোকাহত নীরবতা নেমে এল চারপাশে এবং তারপর সৈন্য বাহিনী থেকে উপহাসের হাসির গর্জন ভেসে এল। এমনকি তার নিজের লোকেরাও তার তিরষ্কারে আনন্দ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে চায় না। টর্ক তার ধনুক মাথার উপর তুলে আন্দোলিত করে অসহায়ভাবে পা দাপাল। তারপর ঘুরে সে তার লোকদের প্রতি ঘোঁত ঘোত করতেই সাথে সাথে তারা চুপ হয়ে গেল, নিজেদের হঠকারিতায় তারা বিব্রত।
এ নিরবতার মাঝেই টর্ক চিৎকার করে ডাক দিল, ইশতার! ইশতার দি মেডি, সামনে এসো!
*
চোরা বালির কিনারে অন্য প্রান্তের ক্ষুদ্র দলটার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইশতার। তার চেহারা বিভিন্ন ট্যাটুতে ঢাকা। চোখের চারপাশে লাল গোলাপি চিত্র অংকন করা; টেরা চোখ রূপালি থালার ন্যায় জ্বল জ্বল করছে। বিন্দু বিন্দু লাল দাগের দুই সারি তার নাকের নিচ পর্যন্ত নেমে এসেছে।
তার চিবুক ও গালে ফার্ণের মতো রূপরেখা অংকিত। তার চুল লাল গালা পাতা যুক্ত লম্বা শক্ত কীলক দিয়ে আটকনো। ইচ্ছাকৃত ভাবে সে তার শরীরের কাপড় খুলে ফেলল এবং তা বালিতে পড়ে যেতে দিল।
সে সম্পূর্ণ নগ্ন দাঁড়িয়ে রইল এবং তার পিঠ ও কাঁধ সিংহের ব্যাজ দিয়ে ঢাকা। তার পেটে বিশাল একটি লাল তারা অংকিত এবং স্বর্ণ ও রূপোর ক্ষুদ্র ঘণ্টা ঝুলছে তার শূন্যে। সে টাইটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ম্যাগোসও তাকে মোকাবেলা করতে সামনে অগ্রসর হল। তাদের মধ্যকার দূরত্ব মনে হল কমে গেল যখন তারা একজন অন্যজনের দিকে চেয়ে রইল এক দৃষ্টে।
ধীরে ধীরে ইশতারের বিশেষ অঙ্গটা স্কীত হল। ঘণ্টাগুলো টুংটাং শব্দে বাজল যখন ওটা শক্ত হয়ে ভারি খাড়া দন্ডে পরিণত হল। সে তার নিতম্ব সামনে বাড়িয়ে দিল, রাগান্বিত লাল মাথাটা টাইটার দিকে নির্দেশ করে। এটা একটা সরাসরি চ্যালেঞ্জ নির্দেশ করে–যা দিয়ে টাইটার খোঁজা অবস্থা এবং ইশতারের পুরুষত্ব তার উপর প্রয়োগ করে।
টাইটা তার লাঠিটা উঠিয়ে মেডির লিঙ্গ বরাবর তাক করল। অনেকক্ষণ ধরে কেউ নড়ল না, নিক্ষিপ্ত বর্শার মতো তাদের শক্তি একে অপরের উদ্দেশ্য তারা প্রয়োগ করে চলল।
হঠাৎ ইশতার ঝাঁকিয়ে উঠে বীর্যপাত করে বসল, সব বীজ বালিতে ছড়িয়ে পড়ল তার। বিশেষ অঙ্গটি সাথে সাথে কুচকে ছোট হয়ে গেল। ভাজ পড়ল ও আর্যকর হয়ে গেল। ইশতার হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে দ্রুত তার কাপড় তুলে নিল নিজের অপমান ঢাকতে। ওয়ারলকের সাথে তার প্রথম মোকাবেলায় সে হেরে গেছে। সে টাইটার দিকে তার পিঠ ঘুরিয়ে পা টেনে টেনে যেখানে সেথের যাজক ও নুবিয়ান ছলকারীরা আসন করে বসে আছে সেখানে ফিরে গেল। তাদের দলে যোগ দিয়ে হাতে হাত ধরে মন্ত্র পড়তে লাগল।
তারা কি করছে? নেফার বিচলিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
আমার মনে হয় তারা বালিয়াড়ির চারপাশের রাস্তা জানার চেষ্টা করছে। মিনটাকা ফিসফিসিয়ে বলল।
টাইটা তাদের থামাবে; নেফার বলল, তবে ততোটা আত্মবিশ্বাস সে অনুভব করল না। ইশতার লাফ দিয়ে তখন উঠে দাঁড়াল নতুন শক্তি নিয়ে। সে দাঁড় কাকের মতো কর্কশ ভাবে একটা চিৎকার দিল এবং দক্ষিণের বালির উপত্যকা দিকে নিদের্শ করল।
সে ঐ রাস্তাটা খুঁজে নিয়েছে যা বাজ পাখিটা আমাদের কাছে প্রকাশ করেছিল। শান্ত কণ্ঠে বলল টাইটা। আমরা এখানে নিরাপদ নই।
টার্কের সৈন্যরা ঘোড়ায় চড়ে বসল। ইশতার টর্কের পাশে প্রধান রথে চড়ে দক্ষিণ দিকে ভয়ানক কাদার নদী অনুসরণ করে চলল। তারা যখন অতিক্রম করছিল তখন সৈন্যরা চিৎকার করে হুমকি ও অবজ্ঞা প্রকাশ করল বিপরীত তীরে দাঁড়ানো নিঃসঙ্গ দলটিকে উদ্দেশ্য করে।
ধুলোর ঝড় শান্ত হওয়ার পর তারা দেখল পাঁচটি রথ ও দশ জন মানুষের একটা ছোট দলকে টর্ক অন্য পাড়ের বালিয়াড়ির ক্যাম্পে রেখে গেছে, যারা তাদের পর্যবেক্ষণে রাখবে। শীঘ্রই বাকি অনুসারী দলের শেষ রথটা হলুদ তাপের পর্দার মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেল এবং উপত্যকার ফাঁকে দেয়ালের ভেতর লুকিয়ে গেল যেন।
রাতের আগেই টর্ক আমাদের পাশে আসার রাস্তাটা পেয়ে যাবে; টাইটা ভবিষ্যৎ বাণী করল।
আমাদের এখন কি করা। নেফার জিজ্ঞেস করল।
টাইটা তার দিকে ঘুরল তখন। তুমি ফারাও। তুমি দশ হাজার রথের অধিকারী। আমাদের তোমার আদেশ দাও, মহামান্য।
নেফার তার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে রইল, এই বিদ্রুপে সে একেবারে ভাষা হীন। নিশ্চিত টাইটা তাকে বিদ্রূপ করছে। তারপর সে তার ঐ প্রাচীন বহু চেনা চোখের ভেতরে গভীর ভাবে তাকাল এবং দেখল ওখানে কোন উপহাস নেই। রাগে তার কণ্ঠ নালী পর্যন্ত উঠে এল তিক্ত স্বাদের একটা সেঁকুর।
সে প্রায় প্রতিবাদ করে উঠল, নির্দেশ করে বলল যে সে তার সব কিছু হারিয়েছে, খাদ্য ও পানির থলে সব কিছু। তাদের সামনে একটা জ্বলন্ত মরুভূমি এবং তাদের পিছু তাড়া করছে নির্মম অনুসারী সৈন্য দল, কিন্তু মিনটাকা তার বাহু স্পর্শ করে তাকে স্থির করল। সে এক দৃষ্টিতে টাইটার চোখে চেয়ে রইল। আর ঠিক তখন তার মধ্যে একটা স্পৃহা জাগল যা এল সেখান থেকে।
সে তার পরিকল্পনা তাদের খুলে বলল, এবং শেষ করার পূর্বেই হিল্টো তা শুনে দাঁত বের করে হাসতে লাগল এবং সম্মতি সূচক মাথা দোলালো। ম্যারনও হাসল, তার হাতটা অপর হাতে এক সাথে এনে ঘষতে লাগল উত্তেজনায়। মিনটাকাও তার আরো কাছে এসে তার পাশে দাঁড়াল দাম্ভিক ভঙ্গিতে।
এরপর সে তার আদেশ যখন দিল, টাইটা সম্মতিতে মাথা নাড়ল। এটাই একজন সত্যিকার ফারাও-এর যুদ্ধের পরিকল্পনা। সে বলল। তার কণ্ঠ নিরস ও আবেগহীন কিন্তু চোখে অনুমোদের স্ফুলিঙ্গ। অবশেষে বুঝতে পারছে লসট্রিস তাকে যে দায়িত্ব অর্পন করেছে তা শীঘ্রই শেষে হবে। আর নেফারও প্রায় প্রস্তুত তার নতুন লক্ষ্যের দায়িত্ব নিতে।
*
যখন ইশতার সামনে নির্দেশ করল তখনও তারা কয়েক ক্রোশের বেশি অতিক্রম করেনি। টর্ক তার বাহিনীকে থামাল এবং অদ্ভুত হলুদ আলো ও ঝিক ঝিক করা তাপের পাতলা কুয়াশায় তার চোখ টন টন করে উঠল। চোরা বালির সামনের উপত্যকা সঁচালোভাবে সরু।
ওটা কি? টর্ক জানতে চাইল। মনে হচ্ছিল যেন কোন সামুদ্রিক দৈত্য ওটার ফাঁকা দিয়ে সাঁতার কাটছে। এটার পৃষ্ঠ চূড়া হয়ে হলুদ কাদা থেকে দাম্ভিক ভাবে উঠে এসেছে, কালো ও তীক্ষ্ণ প্রান্ত ওয়ালা।
এটা আমাদের সেতু। ইশতার তাকে বলল। ভাসমান একটা শিলা সুউচ্চ ভূমির এক তীর থেকে অন্য তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের এটা পাড়ি দিতে হবে।
টর্ক তার দুজন বিশ্বস্ত লোককে পায়ে হেঁটে শিলার সেতু পরীক্ষা করতে পাঠাল। তারা হালকাভাবে দৌড়ে পার হল এবং শুকনো স্যন্ডেল নিয়ে অন্য প্রান্তে পৌঁছল। জোরে চেঁচিয়ে টর্কের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল। ইঙ্গিত পেয়ে টর্ক তার ঘোড়াগুলোর পিঠে চাবুক মারল এবং তাদের অনুসরণ করল। এক সারিতে দলের বাকিরা তার পিছু পিছু পার হল একে একে।
সবাই নিরাপদে অন্য প্রান্তে গেলে টর্ক উত্তর দিকে ঘুরে উপত্যকাটা দেখল যেখানে তারা শেষবার টাইটার ফেরারী দলকে দেখেছিল।
মলিন মেঘের হলদে কুয়াশা বদলে যাবার পূর্ব পর্যন্ত তারা নির্দিষ্ট দূরত্বের অর্ধেকের কম অতিক্রম করতে পারল। একটু আগে ভাগেই রাত নামল। উপত্যকায়। মিনিটের মধ্যেই শেষ আলোটুকুও নিভে গেল এবং গভীর অন্ধকার বাহিনীটাকে থামাতে বাধ্য করল।
ঘোড়াগুলো ক্লান্ত। রাতে থামার সিদ্ধান্তে একটা বীরত্বপূর্ণ চেহারা রাখার চেষ্টা করল টর্ক, যখন তার সঙ্গীরা তার আদেশের জন্য তার চারপাশে জমা হল।
ওগুলোকে পানি দাও এবং লোকদের বিশ্রাম নিতে দাও। আমরা প্রথম আলোয় রওনা দিব। ওয়ারলক পায়ে হেঁটে ও পানি ছাড়া বেশি দূর যেতে পারবে না। আমরা কাল দুপুরের আগেই তাদের ধরে ফেলবো।
*
মিনটাকার পা খুলে সম্ভষ্ট চিত্তে মাথা নাড়ল টাইটা। তারপর সে পা দুটোকে চোরবালির অ্যালাকইলের জলে ধুয়ে এবং পুনরায় ব্যান্ডেজ করে দিল। তার আপত্তি সত্ত্বেও নেফার তাকে তার নিজের স্যান্ডেলটা পরতে বাধ্য করল। ওগুলো তার পায়ের তুলনায় অনেক বড়, কিন্তু ব্যান্ডেজের কারণে কিছুটা খাপ খেয়ে গেল।
তাদের সাথে বহন করার মতো কিছু নেই, না পানি না খাবার, কোন হাতিয়ার অথবা মাল পত্র কিছুই না, শুধু ডুবে যাওয়া রথের তক্তাগুলো সঙ্গী তাদের। অন্য প্রান্তে কৌতূহল নিয়ে হিকস্ সৈন্যরা তখনও তাদের দিকে চেয়ে আছে। নেফার উঁচু বালিয়াড়ির দিকে পথ দেখাল, পূর্ব দিকে। হাফাতে হাফাতে তারা অবশেষে চূড়ায় পৌঁছল। ইতোমধ্যে তৃষ্ণা প্রচন্ড যন্ত্রণা দিতে লাগল সবাইকে।
নেফার শেষ বারের মতো চোরাবালির দিকে তাকাল। টর্কের সৈন্যরা অন্য তীরে তাদের ঘোড়াগুলোর হার্নেস খুলে ফেলেছে, শিবির করছে এবং তাদের মশাল জ্বালাচ্ছে। নেফার তাদের উদ্দেশ্যে একটু নিষ্ঠুর স্যালুট দিয়ে দলের অন্যদের প্রস্তুত হতে বলল। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টির আড়ালে গেলে তারা একটু জিরিয়ে নিল। প্রতিটি প্রয়াস আমাদের প্রিয় কিছুর হারাতে বাধ্য করবে। আমরা আরো অনেক ঘণ্টা পানি পাবো না।
যখন তাপ দাহে বসে তারা হাপাচ্ছিল তখন উদগ্রীব ভাবে লোকজন ও রথের আওয়াজ শুনল। মনোযোগ দিল। মিনটাকা তাদের ভয়ে আশা দিল, সকলে প্রভুদের কাছে প্রার্থনা করুন যেন টর্ক সেতুটা খুঁজে না পায় এবং রাতের আগে আমাদের খুঁজে না পায়।
পুনরায় শক্তি সঞ্চয় হতেই নেফার সবাইকে মধ্যবর্তী বালিয়াড়ি এবং চোরাবালির উপত্যকার সমান্তরাল ধরে তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। কিন্তু তাপদাহের কারণে তারা অল্প দূর যেতে পারল। আবার বিশ্রাম নিতে বসে পড়ল সবাই। তবে সন্ধ্যা নামার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করার মতো তাদের বেশি সময় ছিল না।
রাত নামলে তাপ থেকে তারা নিস্তার পেল। তারা বালিয়াড়ির চূড়ায় উঠতেই দেখতে পেল নিচে উপত্যকার অন্য পাড়ে অনেকগুলো মশাল জ্বলছে। ঐ শিখাগুলো হিকস্ ক্যাম্প নির্দিষ্ট করার জন্যে যথেষ্ট।
শক্রর রথগুলো শূন্য, চতুর্কোণে থামানো ও ঘোড়াগুলো চাকার সাথে বাঁধা। দুজন সৈন্য আগুনের ছায়ায় তাদের শোবার মাদুরে শুয়ে আছে। তারা আমাদের পূর্বে দিকে যেতে দেখেছে। আমরা অবশ্যই আশা করি তারা বিশ্বাস করে যে আমরা এখানে পূর্ব দিকেই যাচ্ছি এবং আমরা তাদের পিছু তাড়া থেকে মুক্ত। নেফার তাদেরকে বালির নিচে পিছলে নামতে ইশারা করে বলল। তারা ক্যাম্প থেকে কয়েকশ কিউবিট নিচের উপত্যকায় এসে পৌঁছেছে।
তাদের নড়াচড়া ও তাদের যে কোন শব্দ ঢাকার পক্ষে যথেষ্ট দূর তা।
রাস্তা দেখার জন্যে তারা ক্যাম্পের আগুনের হালকা আলো ব্যবহার করে চলল, হাতে হাত ধরল যাতে কেউ অন্ধকারে রাস্তা না হারায় এবং তারা চোরাবালির কিনারে যাওয়ার রাস্তাটা হাতড়ে ফিরল। একত্রে কাছাকাছি থেকে তারা ক্যাম্পের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগোলো এবং ঠিক আগুনের আলোর বৃত্তের বাইরে গুটিসুটি মেরে বসে রইল। দুজন প্রহরী ছাড়া মনে হল পুরো শত্রু শিবির ঘুমাচ্ছে। ঘোড়াগুলো শান্ত ছিল এবং একমাত্র শব্দ ছিল আগুনের শিখার ক্রমাগত পটপট আওয়াজ। হঠাৎ একজন প্রহরী উঠে দাঁড়াল এবং যেখানে তার সঙ্গী বসে আছে। ওখানে হেঁটে গেল। দুজন নিচু গলায় কিছু কথা বলল। এই দেরিতে নেফার অস্থির হয়ে পড়ল এবং প্রায় টাইটার সাহায্যের জন্য বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু বৃদ্ধ লোকটি তার অজান্তেই তাকে সাহায্য করল। সে তার লাঠিটা ঐ দুটি কালো অবয়বের দিকে নির্দেশ করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের কণ্ঠ নেশাগ্রস্তের মতো শোনাল এবং অবশেষে একজন প্রহরী উঠে দাঁড়াল, প্রসারিত হল এবং হাই তুলে মন্থর গতিতে নিজের আগুনের কাছে ফিরে গেল। নিজের কোলে সে তার তলোয়ার নিয়ে বসল আরাম করে।
টাইটা তার দিকে দন্ডটি ধরে নাড়াতেই ধীরে ধীরে লোকটির মাথা সামনে ঝুঁকে গেল, চিবুকটা তার নিজের কাঁধের উপর স্থির হল। আগুনের অন্য প্রান্ত থেকে মৃদু নাক ডাকার শব্দ এল তখন। লোক দুটো দ্রুত ঘুমের অতলে হারিয়ে গেল। নেফার হিল্টো ও ম্যারনকে স্পর্শ করল। প্রত্যেকে তারা তাদের দায়িত্ব জানে। তারা টাইটা ও মিনটাকাকে রেখে আগুনের কুন্ডলী দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগোলো।
নেফার সবচেয়ে কাছের প্রহরীর পিছনে এল। প্রহরীর তলোয়ারটা তার কোল থেকে পিছলে গিয়ে পাশেই বালিতে পড়ে আছে। অস্ত্রটা তুলে নিয়ে সে লোকটির কপালের এক পাশে তলোয়ারের বাট দিয়ে সজোরে আঘাত করল। কোন শব্দ ছাড়াই প্রহরীটি মরে গেল এবং টান হয়ে আগুনের পাশে পরে রইল।
তারপর তলোয়ারটা হাতে শক্ত করে ধরে নেফার আগুনের অন্য পাশটার দিকে তাকাল সতর্ক দৃষ্টিতে। হিল্টো ও ম্যারন ইতোমধ্যে প্রহরীটির ব্যবস্থা করে ফেলেছে। হিল্টোর হাতে তলোয়ার। তিনজন দৌড়ে সামনে বাড়ল এবং সবচেয়ে কাছের রথের নিকট পৌঁছল। পাশের পাত্রে বল্লমগুলো তখনো রয়েছে। নেফার একটা তুলে ধরল। একটু ভারি লাগল তবে তার মুঠোয় মানান সই। ম্যারন এরও নিজের অস্ত্র হয়েছে। হঠাৎ একটি ঘোড়া মৃদুভাবে ডেকে উঠল এবং খুর দাপাল। নেফার জমে গেল। মুহূর্তের জন্য সে ভাবল বুঝি কেউ তাদের দেখে ফেলেছে। আর তখনই রথের ও পাশ থেকে একটা ঘুমন্ত কণ্ঠ ডেকে উঠল।
নূসা, ওটা কি তুমি? তুমি কি জেগে আছো?
আগুনের আলোয় হেঁটে একজন সৈন্য এল, এখনও অর্ধ ঘুমন্ত, নিম্নংশে শুধু কাপড় ছাড়া আর গায়ে কিছু নেই। তার ডান হাতে সে একটি তলোয়ার ধরা।
হঠাৎ থেমে প্রহরীটি স্থির দৃষ্টিতে নেফারের দিকে চেয়ে রইল। তুমি কে? তার কণ্ঠ চড়ে গেল বিপদের আভাসে।
ম্যারন সাথে সাথে একটা বল্লাম নিক্ষেপ করল যা লোকটির বুকের আঘাত করল। হাত তুলে প্রহরীটি ধাপস করে বালিতে পড়ে গেল। ম্যারন লাফ দিয়ে সামনে এগিয়ে তার পড়ে থাকা তলোয়ারটা তুলে নিল। উন্মাদ জিনের মতো চিৎকার করে তারা তিন জন তার উপর দিয়ে লাফ দিল ও দৌড়ে ছুটল রথগুলোর উদ্দেশ্যে। তাদের চিৎকার বড় দ্বিধায় ফেলে দিল সদ্য জাগ্রত লোকগুলোকে। এদিকে তাদের তিন জনের অস্ত্র তখন সদ্য জাগা লোকগুলোর উপর ছন্দে উঠা নামা করতে লাগল। ফলাগুলো রক্তে ভিজে উঠল।
একজন মাত্র শুধু গালি গালাজ করল এবং তাদের উপর চড়াও হল। লোকটি একটা মানুষ নামে বিশাল পশু এবং সে তাদের পিছু হটাল, আঘাত খেয়ে আহত সিংহের ন্যায় গর্জে উঠল। সে নেফারের মার্থা বরাবর লক্ষ্য স্থির করল এবং যদিও নেফার তা শক্ত ভাবে ঠেকালো, কিন্তু তার বাহু থেকে কাঁধ পর্যন্ত তা অসাড় করে দিল। ফলাটা হাত থেকে পড়ে গেল তার।
নেফার অস্ত্রহীন এবং শক্র তার তলোয়ারটা উপরে তুলে দোলাতে লাগল এবং তাকে শেষে করার জন্যে তার মাথা বরাবর তা তাক করল। টাইটা তখন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে পিছনে এসে তার লাঠি দিয়ে লোকটার মাথায় হালকা দ্রুত আঘাত করতেই লোকটি ধপাস করে পড়ে গেল। নেফার তার অচেতন আঙ্গুল থেকে তলোয়ারটা কেড়ে নিল মাটিতে তা পড়ার আগে।
লড়াই শেষ। বেঁচে থাকা পাঁচজন মাথা নিচু করে হাতে ভর দিয়ে বসে ছিল, হিল্টো ও ম্যারন তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিনটাকা ও টাইটা আগুন পুনরায় জ্বালাল এং শিখার আলোয় তারা আবিস্কার করল যে তিনজন সৈন্য মৃত এবং অন্য দুজন মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত।
টাইটা যখন তাদের আঘাত চিকিৎসা করছিল তখন অন্যরা রথ থেকে অতিরিক্ত দড়ি এনে বন্দীদের হাত ও পা বাঁধল শক্ত করে। তারপর তারা পানির . থলে থেকে ইচ্ছে মতো পানি পান করল, রুটির থলে থেকে রুটি নিল এবং শুকনা মাংসের টুকরো খেল পরম তৃপ্তিতে। তাদের খাওয়া ও পান করা যখন শেষ হল তখন নতুন দিনের আলো জোরাল হচ্ছিল। এটা আরো একটা আশংকাপূর্ণ রক্তিম লাল সকাল এবং ইতোমধ্যে তাপ তার দহন শুরু করে দিয়েছে। নেফার তাদের টানার জন্যে তিনটা রথ এবং সর্বোত্তম ঘোড়া বাছাই করল। বাছাইকৃত রথ থেকে তারা সব অপ্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র ফেলে দিল, যেমন সৈন্যদের ব্যক্তিগত ব্যাগ এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত অস্ত্র ইত্যাদি। অতিরিক্ত ঘোড়াগুলোকে নেফার ছেড়ে দিল এবং অজানায় তাড়িয়ে দিল।
প্রতি মুহূর্তে রহস্যজনক ভোরের লালাভ আলো শক্তিশালী হচ্ছিল এবং তারা দ্রুত রথে চড়ল। যাবার আগে নেফার বন্দীদের দলের কাছে গেল।
তোমরা মিশরীয়, যেমন আমরাও। আমাকে তা গভীর ভাবে কষ্ট দিচ্ছে যে আমারা তোমাদের কিছু সঙ্গীদের হত্যা করেছি এবং আঘাত করেছি। এটা আমাদের না পছন্দ, না খুশির। অত্যাচারী উরুক এটা করতে আমাদের বাধ্য করেছে।
সে বিশাল লোকটার পাশে আসন করে বসল যে তাকে প্রায় হত্যা করতে বসেছিল। তুমি একজন সাহসী লোক। আমি আশা করি একদিন আমরা এক সাথে কোন এক শত্রুর সাথে পাশাপাশি যুদ্ধ করব। নেফারের স্কার্টটা বাতাসে উড়ছিল যখন সে বসল তখন তার ডান উরুর মসৃণ মাংসপেশীর দিকে গেল বন্দীর চোখ। তার মুখ হা হয়ে খুলে গেল। ফারাও নেফার সেটি মৃত। কেন তুমি তাঁর রাজকীয় স্মারক বহন করছো? সে প্রশ্ন করল।
নেফার চিহ্নটা স্পর্শ করল যা টাইটা অনেক আগে সেখানে এঁকেছিল।
অধিকারের কারণে আমি এটা বহন করি। নেফার বলল। আমি ফারাও নেফার সেটি।
না! না! বন্দীটি উত্তেজনা ও ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল। মিনটাকা লাফ দিয়ে রথ থেকে নেমে তাদের নিকট এল। সে লোকটির সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ কণ্ঠে কথা বলল। তুমি জান আমি কে?
আপনি মহামান্য রাণী মিনটাকা। আপনার পিতা ছিল আমার প্রভু ও কমান্ডার। তাকে আমরা খুব ভালোবাসতাম। তাই আমি আপনাকে নিচু ও সম্মান করি।
মিনটাকা খাপ থেকে ছুরি বের করে তার বাধন কেটে দিল, হ্যা; সে বলল, আমি মিনটাকা এবং এ হচ্ছেন ফারাও নেফার সেটি যে আমার বাগদত্ত। একদিন আমরা মিশরে ফিরবো আমাদের জন্মধিকার দাবি করতে এবং ন্যায় ও শান্তিতে শাসন করতে।
নেফার ও মিনটাকা উঠে দাঁড়াল এবং সে বলে চলল, এই বার্তা তোমার সহ যোদ্ধাদেরকেও দিও। লোকদের বলল যে আমরা জীবিত এবং আমরা এই মিশরে ফিরে আসছি।
লোকটি হাঁটু দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগিয়ে তার পায়ে চুমু খেল এবং তারপর সে নেফারের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে গেল এবং তার একটি পা নিয়ে সে ওটা তার মাথার উপর রাখল।
আমি আপনার প্রজা। সে বলল, আমাদের কাছে শীঘ্রই ফিরে আসুন, মহান ফারাও।
অন্য বন্দীরা আনুগত্যের ভালোবাসায় দৃঢ়ভাবে তার সাথে যোগ দিল। জয়, ফারাও, আপনি হাজার বছর বাঁচুন ও শাসন করুন।
নেফার ও মিনটাকা তাদের দখল করা রথে উঠল এবং মুক্ত হওয়া বন্দীরা তখন চিৎকার করে উঠল, বাক-হারা! বাক-হারা!
ধ্বংস প্রাপ্ত ক্যাম্প থেকে তিনটা যান বেরিয়ে গেল। টাইটা যানে একা, কারণ সে ইশতারের কুমন্ত্রণা প্রতিহত করতে সবচেয়ে সামর্থ পূর্ণ এবং সেই সাথে সঠিক রাস্তা আবিষ্কার করতে যা তাদের কাছে লুকায়িত। নেফার ও মিনটাকা কাছাকাছি থেকে তাকে অনুসরণ করল এবং হিল্টো ও ম্যারন পিছনে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত। যে পথে এসেছে সে পথ অভিমুখেই তারা চলল।
তারা চোরা বালির উপত্যকার একটু পথ গিয়েছে মাত্র এবং ক্যাম্পটা এখনো দৃষ্টি গোচর তখন টাইটা থামল ও পিছনে তাকাল। অন্য দুটো যানও তার পিছনে থামল। কি হয়েছে? নেফার জিজ্ঞেস করল এবং টাইটা তার হাত উঠাল। স্তব্ধতায় তারা দূরে অন্য তীর বরাবর টর্ক বাহিনীর আগমন শুনল। তারপর হঠাৎ ভোরের শেষ হতে যাওয়া লাল আভায় তারা দূরবর্তী বালিয়াড়িতে তার বাহিনীকে উদয় হতে দেখল।
অগ্রবর্তী যানে টর্ক তীব্রভাবে লাগাম টেনে ইশতারের উদ্দেশ্যে চেঁচালো, সেথের রক্ত ও বীজের নামে, ওয়ারলক তোমাকে আবার বোকা বানিয়েছে। তুমি কি আগেই দেখনি যে তারা ফিরে আসতে পারে ও আমাদের প্রহরী দল থেকে রথ কজা করবে?
আপনি কি এটা আগে দেখে ছিলেন? ইশতার তার উদ্দেশ্যে ঘোঁত ঘোত করল, আপনি মহান সেনাপতি।
টর্ক তার এই ধৃষ্টতায় তার উল্কি আঁকা মুখের চাবুক মারার জন্যে চাবুক ধরা হাতটা তুলল, কিন্তু যখন মেডির কালো চোখে চোখ পড়ল তখন সে আবো ভালো কিছু চিন্তা করল এবং চাবুক নামাল। এখন কি, ইশতার? তুমি কি তাদের বাধা বিহীন ভাবে পালিয়ে যেতে দিবে?
তাদের ফিরে যাওয়ার একটাই রাস্তা আছে এবং যানদার দুই শত রথ নিয়ে সে পথে আসছে। তাদের এখনও আপনি শান পাথরের মাঝে পাবেন। ইশতার গম্ভীর কণ্ঠে বলল। টর্কের মুখ একটা বন্য হাসিতে উজ্জ্বল হল। রাগে সে প্রায় যানদারকে ভুলে গিয়েছিল।
সূর্য মাত্র উদিত হয়েছে। এখনও আপনার হাতে নরম শিলার সেতুটা পার হওয়ার জন্য সারা দিন রয়েছে এবং তাদের অনুসরণ করার, ইশতার বলে চলল। আমার নাসিকায় তাদের গন্ধ পাচ্ছি। আমি আমার যাদুর জাল বিছাবো তাদের ফাঁদে ফেলতে এবং একটি বিশ্বস্ত কুকুরের ন্যায় আমি আপনাকে শিকারের কাছে নিয়ে যাবো।
টর্ক তার ঘোড়া বাড়িয়ে জলার কিনারের শক্ত ভূমি দিয়ে এগিয়ে অন্য তীরের তিনটি রথের বিপরীত দিক দিয়ে দাঁড়ালো। সে কোন রকমে একটু হাসি, যাকে বন্য হাসি বললে ভুল হবে না তা দিয়ে বলল,
আমি তোমাদের চেয়ে এটা বেশিই অনুভব করছি, আমার বন্ধুরা। প্রতিশোধ হল এমন খাবার যা ঠান্ডা খেতেই সর্বাধিক মজা! সেথের কসম, আমি এর স্বাদ নেবো।
তোমাকে অবশ্যই রান্না করার পূর্বে তোমার খরগোশ ধরতে হবে। মিনটাকা প্রতিত্তর করল।
আমি তা-ই করবো। নিশ্চিত থাকো। এখানে কিছু বিস্ময় রয়ে গেছে তোমাদের আনন্দ দিতে। তার হাসি মলিন হল যখন তিনটা রথ বালিয়াড়ির মধ্যে দিয়ে সামনে চলতে শুরু করল। মিনটাকা উচ্ছ্বাসে তার দিকে হাত নাড়ল। যদিও টর্ক জানে এটা সে করেছে তাকে রাগাতে, তবুও এটা তার নিকট এতো বেশি আবমাননাকর মনে হল যে রাগে তার নাড়িভূড়ি পর্যন্ত গরম ও তিতা হয়ে গেল।
ফিরে চল; সে তার লোকদের উদ্দেশ্যে চেঁচালো। সেতুটা পার হয়ে ফিরে চল।
*
যখন তারা চলছিল তখন টাইটা বার বার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিল। তার অভিব্যক্তি গম্ভীর ও চিন্তিত। সে সালফারের মেঘটি মাটির কাছাকাছি নেমে আসতে দেখল।
আমি কখনো এমন আকাশ দেখি নি; হিল্টো বলল, যখন পূর্বাহের মাঝামাঝি সময়ে তারা ঘোড়াগুলোকে পানি খাওয়াতে থামল। প্রভুরা নারাজ।
তাদের কাছে এটা অদ্ভুত লাগল যখন নির্দ্বিধায় তারা সঠিক রাস্তাটা খুঁজে পেল। বিভক্তিটা যেখানে তাদের দ্বিধায় ফেলেছিল এখন তা দূর থেকে দেখতে সমতল দেখাচ্ছে। মনে হল তারা সম্ভবত লম্বা পাথরটা এবং লোহিত সাগরের প্রধান রাস্তা, যেখান দিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করে, আরো গভীরভাবে তা মাড়ানো; দৃশ্যত হালকা দাগের রাস্তা দিয়ে তারা চোরাবালির উপত্যকায় অনুসরণ করেছে।
ইশতার আমাদের অন্ধ করে দিয়েছিল; রাস্তার সংযোগ স্থলের দিকে এগুতে এগুতে নেফার বিড়বিড় করে বলল। কিন্তু এবার অন্তত অতো সহজে বোকা হচ্ছি না। তার পর সে অস্বস্তিতে আকাশের দিকে তাকাল এবং শয়তানের বিরুদ্ধে চিহ্ন আঁকল। যদি প্রভুরা দয়ালু হন।
শুধু মাত্র হিল্টো তার যুদ্ধের চোখ দিয়ে তাদের সামনের ধুলার মেঘটা দেখতে পেল। নিচু, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ওটাকে অস্পষ্ট করে রেখেছিল। হিল্টো গতি তুলে টাইটার রথের পাশে এসে চিৎকার করে তাকে বলল, ম্যাগোস! আমাদের সামনে ওগুলো রথ এবং সংখ্যায় অনেক।
তারা লাগাম টানল এবং সামনে তাকিয়ে রইল। তারা যখন তা পর্যবেক্ষণ করছিল ধুলোর মেঘ তখন নড়ছিল।
কতটা সামনে? টাইটা জিজ্ঞেস করল।
অর্ধ ক্রোশ কিংবা তারও কম।
তোমার কি মনে হয় টর্কের পিছনে তার দ্বিতীয় সেনাদল আসছে?
আমার চেয়ে আপনি ভালো জানেন, ম্যাগোস, যে এটা হিকস্দের একটা সাধারণ কৌশল। আপনার কি ডামেন এর যুদ্ধে কথা মনে নইে? কিভাবে অ্যাপেপি আমাদেরকে তাদের দুই বাহিনীর মাঝে চেপে ধরেছিল?
তারা আমাদের ধরার পূর্বেই কি আমরা রাস্তার সংযোগ স্থলে যেতে পারবো? টাইটা জিজ্ঞেস করল এবং হিল্টো তার চোখ সরু করল।
হয়তো পারব। কিন্তু এটা হবে প্রতিযোগিতাপূর্ণ।
টাইটা ঘুরে পিছন দেখল। টর্ক ইতোমধ্যে আমাদের পিছনের রাস্তায় ধেয়ে আসছে। আমরা তার কজায় ফিরে যাবার সাহস করি না।
রাস্তা ত্যাগ করে বালিতে প্রবেশ করাটাও হবে নিশ্চিত বিপর্যয়। আমরা তাদের জন্য আমাদের অনুসরণ করার একটি পরিষ্কার চিহ্ন ছেড়ে এসেছি। ঘোড়াগুলোও দিনের শেষে ব্যর্থ হবে।
কোন ভুল নেই টর্ক আমাদের উপহাস করবে। মিনটাকা তিক্ত ভাবে বলল।
আমরা আরেক বার মাইনকা চিপায় পড়তে যাচ্ছি। ম্যারন সম্মত হল।
আমাদের অবশ্যই এ থেকে বাঁচতে হবে। নেফার সিদ্ধান্ত নিল।
আমাদেরকে অবশ্যই রাস্তার সংযোগ স্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে এবং তাদের আগে মূল রাস্তায় যেতে হবে। এটাই আমাদের একমাত্র পালানোর পথ।
আমাদের সর্বোচ্চ গতিতে, এমনকি যদি ঘোড়াগুলোকে এই কাজে নিঃশেষিত করতে হয় তবুও, হিল্টো সম্মতি জানাল।
তারা তিনজন একসাথে সামনে গতি তুলল। রথগুলো প্রতিবাদ করে উঠল কিন্তু ঘোড়াগুলো ভালোই যাচ্ছে। সামনের ধূলোর মেঘ তারো ভয়ংকর হয়ে গেল যখন তারা ওটার দিকে ধেয়ে গেল। মনে হল পাথরের স্তূপটা কখনোই আর কাছে আসবে না। বাঁক থেকে তখনো তারা ৫০০ কিউবিটের চেয়ে বেশি দূরে যখন কাছে আসা সেনাবাহিনীর প্রথম রথটা দৃষ্টি গোচর হল, ধুলোয় ও ভয়ানক হলুদ আলোয় অস্পষ্ট।
রথের সারি থামল, ধাবমান যানগুলোর অনিশ্চিত পরিচয় জানতে, যা তারা তাদের দিকে আসতে দেখল।
টাইটা শেষ বারের মতো ঘোড়াগুলোর গতি তোলার চেষ্টা করল কিন্তু অনুভব করল ক্লান্তি তাদের ছেয়ে ফেলছে।
তারা সম্ভাব্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধরে রাখল, কিন্তু শত্রুরা তাদের মুখোমুখি আসছে এবং তারা পূর্বের রাস্তার মোড়ে পৌঁছাতে পারবে না। অবশেষে টাইটা তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে থামার নির্দেশ দিল। যথেষ্ট! সে চিৎকার দিল, আমরা কখনোই এই দৌড়ে জিততে পারবো না।
তারা পথে উপর থেমে পড়ল, ঘোড়াগুলো ঘামে একাকার এবং ঘন নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যে ফোঁসছে। রথীরা ধুলায় বিবর্ণ হয়ে গেছে, তাদের দেহ ধূলোয় ঢেকে আছে এবং হতাশা তাদের চোখে স্পষ্টত।
কোন দিকে, ফারাও? হিল্টো চিৎকার করল। তারা ইতোমধ্যে নেতৃত্বের জন্যে নেফারের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে।
একটা মাত্র রাস্তাই খোলা। যে পথে এসেছি সে পথে ফেরা। এবং তারপর এতো আস্তে পরের কথাটা বলল যে শুধু মিনটাকা তা শুনতে পেল।
টার্কের নাগালে। এটা কমপক্ষে আমাকে তার সাথে মোকাবেলার একটা শেষ সুযোগ দিবে। টাইটা সম্মতিতে মাথা ঝাঁকালো এবং সে-ই প্রথম তার রথ পুরো গতিতে ঘুরালো। সে তাদের চোরাবালি বরাবর রাস্তার দিকে নিয়ে চলল। অন্যরা তার পাশে চলল ধুলো অনুসরণ করে। প্রথম দিকে ধুলা তাদের দৃষ্টি অনুসরণে বাধা দিচ্ছিল কিন্তু তারপর গরম বাতাসের এক ঝাঁপটা যখন দক্ষিণ দিকে তা সরিয়ে দিল তখন তারা দেখল ইতোমধ্যে সবাই রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে।
তারা সামনে এগোল কিন্তু নেফার বুঝল তার ঘোড়াগুলো প্রায় নিঃশেষ হতে চলেছে। তাদের চলন ভারি হয়ে আসছে, পাগুলো এলোপাথারি ভাবে পড়ছে এবং তাদের খুর কাত হয়ে পড়তে শুরু করেছে। নেফার জানত এটা প্রায় শেষ। সে একহাতে মিনটাকার কোমর জড়িয়ে ধরল। আমি তোমায় প্রথম যখন দেখেছি তখন থেকেই নিচু। আমি তোমাকে অনন্তকাল ভালোবাসবো।
যদি তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো তবে তুমি আমাকে আবার টর্কের হাতে পড়তে দেবে না। সর্ব শেষে এটাই হবে আমার জন্য তোমার ভালোবাসা প্রমাণের পথ।
নেফার তাকে দেখার জন্য ঘুরল, হতভম্ব। আমি বুঝলাম না। সে বলল এবং পাশে রাখা তলোয়ারটা স্পর্শ করল।
না! সে প্রায় চিৎকার করে উঠল এবং তার সব শক্তি দিয়ে তাকে সে তার দিকে জড়িয়ে ধরল।
তোমাকে এটা আমার জন্য অবশ্যই করতে হবে, আমার হৃদয়! তুমি আমাকে টর্কের কাছে ফিরিয়ে দিতে পার না। আমার নিজের এটা করার সাহস নেই, তাই তোমাকে আমার জন্য শক্ত হতে হবে।
আমি পারব না; সে আর্তনাদ করে উঠল। এটা হবে দ্রুত ও ব্যথাহীন। অন্যপথ…
নেফার এতোটাই হতাশার মধ্যে ছিল যে সে প্রায় টাইটার রথের পিছনে ধাক্কা খাচ্ছিল যখন ওটা হঠাৎ থামল তাদের সামনের রাস্তায়। টাইটা সামনে নির্দেশ করল।
টর্ক! এমনকি দূর থেকেও তারা তার ভালুক দেহটাকে প্রথম সারির সম্মুখে চিহ্নিত করতে পারল। তাদের দিকে সে সোজা আসছে। তারা পিছনে দেখল এবং অন্য শক্রর দলটাও দ্রুত কাছাকাছি হচ্ছে।
একটা শেষ যুদ্ধ! হিল্টো খাপ থেকে তার তলোয়ারটা বের করল। প্রথমটি সবচাইতে খারাপ। দ্বিতীয়টাও একই রকম। আর শেষ খেলাটা সর্বোত্তম। এটা যুদ্ধের ময়দানে একটা প্রবোচন এবং সে প্রকৃত মনোবাসনা নিয়েই কথাটা বলল।
টাইটা পিত্ত রঙের আকাশটার দিকে তাকাল এবং বাতাসের একটা ঝটকা তার চুলের উপর বয়ে গেল, রূপালি ঘাসের মাঠের মধ্যে দিয়ে যেমন বাতাস বয়।
মিনটাকা নেফারের বাহু চেপে ধরল। আমাকে কথা দাও! সে ফিসফিস করে বলল এবং তার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠেছে।
আমি তোমাকে ওয়াদা করছি; সে বলল এবং শব্দগুলো তার মুখ ও গলাকে দগ্ধ করল যেন, এবং তারপর আমি নিজে হাত টর্ককে খুন করবো। যখন তা শেষ করবো, আমি তোমার পিছনে খুব কাছে থেকে অন্ধকার যাত্রায় তোমাকে অনুসরণ করব।
টাইটা জোরে কথা বলল না কিন্তু তা সবার কাছে পৌঁছে গেল: এই পথে, আমার চাকার দাগ সবাই ভালোভাবে চিহ্নিত কর ও বিশ্বস্ততার সাথে অনুসরণ কর।
তাদের অবাক করে দিয়ে টাইটা রাস্তা থেকে ডান দিকে বালিয়াড়ির বরাবর রথটা ঘোরালো, নেফার ভেবেছিল সঙ্গে সঙ্গে চাকার কেন্দ্রমূল পর্যন্ত ঢেবে যাচ্ছে। কিন্তু হয়তো কোন ভাবে সে নরম উপরিভাগের নিচে শক্ত স্তরটা খুঁজে পেয়েছে। সে দৃঢ় ভাবে দুলকি চালে এগুলো এবং তারা তাকে খুব কাছে থেকে অনুসরণ করল, যদিও তারা জানে এটাই শেষ, ভাগ্য পরীক্ষা। পিছনে তাকিয়ে নেফার তখনো পূর্ব ও পশ্চিম থেকে তাদের অভিমুখে আগত দুই শত্রু বাহিনীর ধুলোর মেঘ দেখতে পারল। একটুও সুযোগ নেই, তারা তাদের নাগাল পাবেই; যদি না টাইটা লুকিয়ে থাকার একটা যাদু ব্যবহার করে ইশতারকে বোকা বানায়। কিন্তু ওটা এক হতাশ জনক সুযোগ। ইশতার প্রমাণ করেছে যে সে এই রকম ডাইনী বিদ্যা দ্বারা সহজে প্রভাবিত হয় না এবং টর্ক তার নিজের চোখ দিয়ে অবশ্যই দেখতে থাকবে যে তারা রাস্তা থেকে একপাশে ঝাঁপ দিয়েছে।
তারপর সে সামনে তাকাতেই দেখল টাইটা লসট্রিসের স্বর্ণের কবজ ডান হাতে ধরে রেখেছে এবং কোমরে ঝুলিয়ে রেখেছে নেকলেসটা যা বে-এর উপহার। সে তার অনুসারীদের দিকে ফিরে দেখল না, কিন্তু তার চেহারা ভীতিকর, আকাশের দিকে তোলা এবং অভিব্যক্তি বিমোহিত। তাদের মনে হল আশাহীন কিন্তু নেফার একটা অযৌক্তিক ও উল্টো আশার আলো অনুভব করল। সে বুঝল কোন রহস্যজনক ভাবে, বে-এর উপহার বিজ্ঞ বৃদ্ধ লোকটির দুর্জেয় শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। টাইটার দিকে তাকাও, সে ফিসফিসিয়ে মিনটাকাকে বলল। সম্ভবত এখনই এটা শেষ নয়। সম্ভবত আমাদের জন্য বাও এর গুটির আরেক চাল বাকি আছে, খেলার ফলাফল এখনও বাকি।
*
টর্ক দ্রুত গতি তুলে সেই স্থানে এল যেখানে সে শত্রুর রথ তিনটিকে এদিকে ঘুরে বালিয়াড়িতে চলে যেতে দেখেছে। তাদের চাকার দাগ বালিতে গভীর ভাবে বসেছিল। আর ঠিক তখন যানদার বিপরীত দিক থেকে কলামের সম্মুখে এসে উপস্থিত হল।
ভালো করেছ! তুমি শিকারকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমরা, তাদের এখন পেয়েছি, টর্ক তার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল।
এটা একটা ভালো তাড়ানো হয়েছে, কর্নেল যানদার গর্জন করল। আপনি এখন আমার কাছ থেকে কি রকম বিন্যাস চান?
আবারও পেছনের রক্ষী হও। চার সারিতে। আমাকে অনুসরণ করো। সে আসামীদের অনুসরণ করতে ঘুরল, তার দুটি রথের ডিভিশন পিছনে পড়ে গেল। সে সম্মুখে তাকাল। টাইটা তার ক্ষুদ্র দলসহ এরই মাঝে উঁচু বালির পাহাড়ের চুঙ্গির আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেছে। তাদের মধ্যকার গভীরতা অন্ধকার ও ছায়াময় নিচু হওয়া আকাশ ঢেকে রেখেছে। সে ২০০ কিউবিটও যায়নি তার সারির বাইরের রথগুলো নরম বালিতে আটকে গেল। তখন সে বুঝল কেন টাইটা এরকম দৃঢ় বিন্যাস বজায় রেখে এগিয়েছে। একমাত্র মাঝের লাইনটা একটি রথের ভার বহনের জন্য যথেষ্ট শক্ত।
এক লাইন করে আগে বাড়ো! সে তার বিন্যাস পাল্টাল। আমার পথে থাকো। দুটি যৌথ বাহিনী অর্ধ ক্রোশের চেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে প্রসারিত হয়ে অচেনা পথে টর্ককে অনুসরণ করল। সৈন্যরা সচকিত ভাব নিয়ে উঁচু বালির দেয়াল ও কদাকার আকাশের দিকে তাকাল। টর্ক তার ঘোড়াগুলোকে মরণাপন্ন গতির জন্যে জোর করল না এবং তারা হাঁটার গতিতে নেমে এল। কিন্তু সে চাকার দাগ ট্রাক করতে পারল যা টাইটা তাদের জন্য ফেলে গেছে, তাই সে আরো ধীরে চলছে।
তারা আরো এক ক্রোশ পথ চলল তারপর আকস্মিক ভাবে আগের ভূমিটা বদলে গেল। নরম বালির ঢেউ থেকে তারা একটি কালো পাথরের দ্বীপ উঠে এল। এটা ছিল ছোট শিল্প-কর্মের ন্যায় বালিয়াড়ি যা সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। এটার পাশগুলো গুহায় পূর্ণ এবং সহস্র বছরের বালি ঝড়ে ও ভারি বাতাসের ঘর্ষণে ক্ষয়ে গেছে। কিন্তু চূড়াটা কোন পৌরণিক দৈত্যের দাঁতের ন্যায় তীক্ষ্ম।
চূড়ার উপর, দূরত্বের কারণের ক্ষুদ্র, পাতলা ও লম্বা রূপালি চুলের বন্য ঝোঁপ নিয়ে একটা নির্ভুল অবয়ব এগিয়ে চলছে যা অদ্ভুত ও ভয়ার্ত আলোতে রহস্যময় দেখাচ্ছে।
ওটা ওয়ারলক, টর্ক ইশতারের দিকে চোখ ছোট করে তাকাল। তারা পাথরে আশ্রয় নিয়েছে। আমি আশা করি তারা সেখানে আমাদের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করবে। তারপর সে তার যুদ্ধবাদককে বলল, যুদ্ধের বাজনা বাজাও।
*
যখন নেফার ও মিনটাকা পাথরের স্তূপটাকে সম্মুখে আবছাভাবে স্পষ্ট হতে দেখল, দুজন তখন অবাক হল। টাইটা কি আগে থেকেই জানতো এটা ওখানে ছিল? মিনটাকা জিজ্ঞেস করল।
সে কিভাবে জানবে? উত্তরে বলল নেফার।
তুমি একবার আমায় বলেছিলে সে সব জানে। নেফার চুপ হয়ে গেল। নিজের অনিশ্চয়তা ঢাকার জন্য পিছনে তাকাল সে এবং খুব কাছের অনুসারীকে দেখল। সূর্যহীন আকাশ হলুদ আভার সাথে মিশে উঠছে।
এটা কোন ব্যাপারই না। ওটা আমাদের কি উপকারে আসবে? নেফার প্রশ্ন করল। আমরা হয়তো কিছু সময়ের জন্য ঐ পাথরগুলোতে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো, কিন্তু টর্কের লোক শত শত। আমরা প্রায় শেষ। সে পানির মশকটা স্পর্শ করল যা তার পাশে দন্ডটার সাথে ঝুলানো।
মশকটা প্রায় শূন্য, এমনকি ঘোড়াগুলোকে আরো একদিন বাঁচিয়ে রাখার মতোও কোন পানি নেই।
আমাদের অবশ্যই টাইটাকে বিশ্বাস করতে হবে, মিনটাকা বলল, নেফার তিক্ত ভাবে হাসল।
মনে হচ্ছে প্রভু আমাদের ছেড়ে গিয়েছেন। টাইটা ছাড়া আর কে আছে এ মুহূর্তে বিশ্বাস যোগ্য?
তারা সামনে এগোল, ঘোড়াগুলোকে প্রায় জোর করে চালাতে হচ্ছে। তাদের পিছনে তারা তাদের অনুসরণকারীদের ক্ষীণ আওয়াজ শুনল। দল নেতা তার সৈন্য বাহিনীকে এক লাইনে আসতে বলছে। খোলা অস্ত্রের আওয়াজ ও গোঙানি এবং শুকনো চাকার ক্যাচ ক্যাচ ধ্বনি জোরালো হচ্ছিল প্রতি নিয়ত।
অবশেষে তারা কালো ও ধূসর রঙের পাথরের পাহাড়ের কাছে এসে পৌঁছল। উচ্চতায় পাথরটা একশ ফুট প্রায় উঁচু, তাপের কিরণে তার গা থেকে বাষ্প উদগিরিত হচ্ছে। কোন উদ্ভিদ পাথটির গায়ে নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় নি কিন্তু বাতাস ওটার গায়ে চিড় ও খাজের সৃষ্টি করেছে। রথগুলোকে পর্বতের কাছাকাছি নিয়ে এসো, টাইটা আদেশ দিল এবং তারা নির্দ্বিধায় তা মানল। এবার ঘোড়া গুলোকে মুক্ত করে তাদের এই পথে আনো। পাথর মুখের কোনার পাশে নিজের দলটাকে নিয়ে গিয়ে টাইটা দেখিয়ে দিল কোথায় আসতে হবে। এখানে পাথরের মধ্যে খাজ গভীর চিড় তৈরি করেছে।
এই পথে। সে তাদের পথ দেখাল, যতো দ্রুত সম্ভব তারা এগুল গভীর খাজের বালির মেঝে দিয়ে। এখন ঘোড়াগুলোকে শুইয়ে দাও। সকল যুদ্ধের ঘোড়াগুলোকে এ কৌশল রপ্ত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকে। তাদের চালকের উৎসাহে তারা নিজেদের হাঁটু ভেঙে বসল এবং তারপর নাক দিয়ে আওয়াজ করল ও নিশ্বাস ছাড়ল। তারা মেঝেতে এক পাশে হয়ে শুয়ে রইল।
এই ভাবে! টাইটা তাদের বলল। সে রথ থেকে একটা বিছানার রোল এনেছে। ওটা থেকে কাপড় টুকরো করে সে ঘোড়াগুলোর চোখ বেঁধে দিল তাদের শান্ত ও চুপ রাখার জন্য। তারপর নরম মাটিতে সে একটা বলুম গেঁথে ওটাকে খুঁটি রূপে ব্যবহার করল। পোতা খুঁটিটা ঘোড়াগুলোকে আবার উঠা থেকে রোধ করবে। সবাই তার উদাহরণ অনুসরণ করল।
এখন পানির যতোটুকু বাকি আছে তা নিয়ে এসো। এটা করুণ সে ঘোড়াগুলোকে শেষ বিন্দু পান করানোর মত যথেষ্ট নেই কিন্তু আমাদের নিজের প্রতিটি ফোঁটা দরকার হবে।
যেন সে ওটার অস্তিত্বের কথা জানত, কেননা টাইটা তাদের পবর্তের একটি অগভীর তাকের কাছে নিয়ে গেল। তাকের নিচে প্রধান কক্ষটি এতো নিচু যে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করলে হাত ও হাঁটুতে ভর দিয়ে বসতে হবে।
পর্বতের খোলা পাথর ব্যবহার করে এটাকে ভিতর থেকে বন্ধ করে দাও।
একটা জেবরা দেয়াল? নেফারকে হতাশ দেখাল। আমরা এই স্থানটাকে রক্ষা করতে পারব না। একবার আমরা গুহায় ঢুকে গেলে আর দাঁড়াতে পারব না। অস্ত্র চালানোর কথা তো বাদই দিলাম।
তর্ক করার কোন সময় নেই। টাইটা তার দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকাল। যেমন বলছি কর।
মিনটাকার জন্যে নেফারের ভয় হল এবং গত কয়েক দিন যেভাবে তারা কষ্ট করে বাস করেছে তাতে সে ক্লান্ত। সে টাইটার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। অন্যেরা কৌতূহল নিয়ে দেখল তা। তরুণ ষড় একটি বৃদ্ধ ষাঁড়কে চ্যালেঞ্জ করছে। কয়েক সেকেন্ড চলে গেলে হঠাৎ নেফার তার বোকামিটা বুঝল। একমাত্র এই একজন ব্যক্তিই তাদের রক্ষা করতে পারে এবং সে আত্মসমর্পণ করল। নিচু হয়ে খোলা পাথরের স্তূপ থেকে একটি বড় পাথর তুলে নিয়ে টলমল পায়ে অগভীর গুহার দিকে চলল সে। জায়গামতো ওটা রেখে সে আরেকটার জন্যে দৌড়ে এল। অন্যরাও কাজে যোগ দিল, এমন কি কাজে ভাগ বসাতে শিলার এক টুকরা বহন করল মিনটাকাও। দেয়ালের পিছনের সংকীর্ণ জায়গাটা বন্ধ করে দেয়ার পূর্বে দেখা গেল তার হাতের চামড়াটা ছিঁড়ে গেছে।
আমরা এখন কি করব? নেফার জোর গলায় জিজ্ঞেস করল, এখনও ম্যাগোসের সাথে তর্ক করতে তার দ্বিধা হচ্ছে।
পান কর। টাইটা জবাবে বলল।
নেফার পানির থলে থেকে একটি চামড়ার মগে পানি ঢেলে তা মিনটাকার দিকে এগিয়ে দিল। সে কয়েক চুমুক খেয়ে তা টাইটাকে সাধল।
টাইটা মাথা নেড়ে বলল, পান কর এবং গভীরভাবে।
তারা পেট ভরে পান করার পর নেফার আবার টাইটাকে জিজ্ঞেস করল, এখন কি?
এখানে অপেক্ষা করো। টাইটা আদেশ করল এবং তার লম্বা লাঠিটা তুলে নিয়ে সে পাথরের খাজ বেয়ে চড়তে শুরু করল।
এই জেবরার কি হবে? নেফার তার পিছনে চিৎকার করে বলল। এটা কি উদ্দেশ্যে করা হল?
টাইটা তাদের থেকে ৩০ ফুট উপরে সংকীর্ণ তাকের উপর থেমে নিচে তাকাল। সময় হলেই মহামান্য তা জানবেন। টাইটা আবার চড়তে শুরু করল।
একটি লুকানোর স্থান? একটি কবর, সম্ভবত? নেফার তাকে ব্যঙ্গ করল কিন্তু টাইটা কোন উত্তর দিল না কিংবা ফিরেও তাকাল না।
বিশ্রাম কিংবা না থেমেই টাইটা এক নাগারে চড়ে গিরির চূড়ায় পৌঁছল। সেখানে সে দাঁড়িয়ে যে দিক থেকে টর্ক আসতে পারে সে দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে।
গিরি শৈলীর পাদদেশ থেকে ছোট দলটাকে দেখতে লাগল–কিছু হতাশা, কিছু আশা নিয়ে এবং কিছুটা রাগান্বিত হয়ে।
নেফার নিজেকে তুলল। রথ থেকে বলুম ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে এসো। নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যেখানে তারা রথ রেখে এসেছে সে দিকে দৌড়ে সবাই। সে হাত ভর্তি বল্লম নিয়ে ফিরল এবং ম্যারন ও হিল্টো তার পিছনে একই ভাবে অনুসরণ করল। টাইটা কি করছে? সে মিনটাকাকে জিজ্ঞেস করল। সে চূড়ার দিকে নির্দেশ করে বলল,
সে নড়েছে না।
তারা অস্ত্রগুলো সাজিয়ে রেখে রুক্ষ পাথরের আশ্রয়ে প্রবেশ মুখে বসল। সবার চোখ আবার টাইটার দিকে গেল।
ভয়ংকর সালফার আকাশের নিচে সে একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা যেন। কেউ কথা বলল না। কেউ নড়ল না। যতোক্ষণ না তারা সেই ভয়ংকর শব্দটা আবার শুনল। প্রচন্ড ভয় নিয়ে তারা শত শত রথের চাকার, মানুষের কোলাহল, ক্ষীণ ঝন ঝন ও কিচির মিচির শব্দ শোনার জন্যে তাদের মাথা ঘুরালো, কখনো তা বালিয়াড়িতে চাপা পড়ছিল, কখনও পরিষ্কার ও ভীতিকর শুনালো।
ধীরে ধীরে টাইটা তখন তার দুহাত তুলে আকাশের দিকে নির্দেশ করল। সে গতিটা অনুসরণ করল সকলের চোখ। ডান হাতে সে তার লাঠিটা ধরে আছে আর বা হাতে ধরে রেখেছে লসট্রিসের কবজ এবং গলায় সে পরিধান করে আছে বে-এর দেওয়া উপহারটা।
সে এখন কি করছে? হিল্টো জিজ্ঞেস করল, ভয়ার্ত কণ্ঠে। কেউ তাকে জবাব দিল না। টাইটা এমন ভাবে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল যেন তাকে পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। তার মাথা পিছনে হেলানো, আর চুলগুলো তার কাঁধের উপর রুপার সুতোর ন্যায় ছড়িয়ে আছে। তার পোশক উপরে উঠানো যার ফলে তার সরু জঙ্গ বেরিয়ে আছে। তাকে নীড়ে থাকা বৃদ্ধ পাখির মতো দেখাচ্ছে।
আকাশটা নিচু, ভারি মেঘে একটা ঘূর্ণি খেয়ে গেল। আলো ক্ষণস্থায়ী হয়ে মলিন হচ্ছে ক্রমশ। হঠাৎ লুকানো সূর্যটা আরো ভারি ভাবে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। মেঘমালা পাতলা হয়ে থোয়া উদ্গীরণ করতে লাগল।
তখনো টাইটা নড়ল না, তার লাঠিটা আকাশের গর্ভপূর্ণ পেটের দিকে স্থির করা। আগমনরত বাহিনীর অস্ত্রের ঝনঝন আওয়াজ আরো স্পষ্ট হল এবং হঠাৎ দূরে রাম হর্ণের তুর্য ধ্বনি বেজে উঠল।
এটার যুদ্ধের ডাক। টর্ক টাইটাকে দেখে ফেলেছে, মিনটাকা শান্ত কণ্ঠে বলল।
*
টর্ক তার তুর্য বাদকের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে উৎসাহ দিল, আরো বাজাও! কিন্তু মনে হল যুদ্ধের শব্দটা শূন্য মরু ও নিচু রাগান্বিত আকাশ সব গিলে ফেলবে।
থামো? ইশতার দি মেডি বলল। সে পাথরের পাহাড়ের উপর টাইটার ক্ষুদ্র দেহটা দেখতে পেয়েছে। থাম!
ওটা কি? টর্ক জানতে টাইল।
এখনও আমি তা বুঝতে পারি নি। ইশতার জবাবে বলল, ওয়ারলকের উপর থেকে তার দৃষ্টি না সরিয়ে। কিন্তু এটা ব্যাপক ও শক্তিশালী।
যুদ্ধ বাহিনী থেমে গেল, ভয়ে প্রত্যেকে চূড়ার উপরস্থ অবয়টার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। একটা ভয়ংকর নিরবতা নেমে এল মরুতে। সামান্য কোন শব্দও ছিল না। এমনকি ঘোড়াগুলোও স্থির, অস্ত্র-শস্ত্রের কোন ঝন্ঝনানি বা রুন রুন শব্দটা পর্যন্তও নেই।
শুধু মাত্র আকাশ নড়ল। এটা ম্যাগোসের মাথার উপর একটা ঘূর্ণিঝড় তৈরি করল, ধিক ধিক করে জ্বলা মেঘের বিশাল ঘূর্ণিচাকা। তারপর ধীরে ধীরে ঘূর্ণি ঝড়টির কেন্দ্রস্থল খুলে একটা জাগ্রত দৈত্যের চোখে পরিণত হল। ঐ স্বর্গীয় চোখ থেকে চোখ ধাঁধানো আলোর একটি বান ফেটে পড়ল।
হুরাসের চোখ! ইশতার দম নিল, সে প্রভুকে ডেকেছে। ইশতার প্রতিরক্ষার একটা চিহ্ন আঁকল এবং তার পাশে টর্ক নিরব ও শক্ত হয়ে আছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভয়ে।
চমকপ্রদ আলোর বজ্রটা চূড়ায় আঘাত করল এবং ওয়ারলকের অবয়বকে আলোকিত করে দিল ঠিক অন্ধকারে চমকানো বজ্রপাতের ভারি তীরের মতো। এটা তার মাথার চারপাশে জ্যোতি চক্রের হয়ে ঘুরল। সে তার লম্বা লাঠি দিয়ে একটি ধীর চক্র অতিক্রম করল এবং হিকস্ রথীরা চাকের নিচে অসভ্য কুকুরের মত নুইয়ে পড়ে তার প্রভাবে। তারপর মেঘ প্রশস্ত হয়ে গেল এবং আকাশ হয়ে গেল পরিষ্কার। সূর্যালোক বালিয়াড়ির উপর নেচে উঠল যেন এবং তাদের চোখে তা পলিশ করা ব্রোঞ্জের শীটের ন্যায় প্রতিফলিত হল, চিক চিক করল ও তাদের অন্ধ করে দিল। ঐ অদ্ভুত রশ্মি থেকে নিজেদের চোখ রক্ষা করতে তারা তাদের ঢাল ও হাত তুলল মুখের উপর। কিন্তু তারা কোন আওয়াজ করল না।
চূড়ার উপর টাইটা তার লাঠি দিয়ে আরেকটি ইচ্ছাকৃত বৃত্ত রচনা করল এবং অবশেষে আওয়াজ হল। দীর্ঘশ্বাসের ন্যায় তা ঐ আকাশ থেকে নিঃসৃত হল। সবাই উৎসটা খুঁজতে মাথা ঘুরাল।
আরো একবার টাইটা ইশারা করতেই চাপা শব্দটা শশন্ ধ্বনি, একটা কোমল শীষে পরিণত হল। ওটা পূর্বে থেকে আসছে এবং সবার মাথা ওদিকে ঘুরে গেল ধীরে ধীরে।
ঐ অদ্ভুতের বাইরে, মেঘহীন প্রভা, তারা দেখল; ওটা আসছে। ওটা ছিল শক্ত মেঠো বর্ণের বালির দেয়াল যা মাটি থেকে উঠে আকাশের উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
খামসিন! টর্ক ফিসফিসিয়ে ভয়ংকর শব্দটা বলল।
বাতাস বাহিত বালির দেয়ালটা তাদের দিকে ভয়ংকর ধীরতা নিয়ে এগিয়ে আসছে। জীবন্ত প্রাণীর ন্যায় ওটা দোলল ও স্পন্দিত হল এবং ওটার কণ্ঠ বদলে গেল। এখন আর ফিসফিসানি নেই। গর্জনে পরিণত হয়েছে তা। এক শয়তানের কণ্ঠ।
খামসিন? শব্দটা রথ থেকে রথে ধ্বনিত হল। কোন যোদ্ধার আর যুদ্ধ করার মতো উৎসাহ নেই এখন। ছোট ভয়ার্ত এই ঝড়টা মানব, শহর ও সভ্যতা ধ্বংস কারীর চেহারায়, বিশ্ব খাদকের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে।
রথের সারি শৃংখলা হারিয়ে ফেলল এবং ছোট ছোট হয়ে ভেঙে গেল। তারপরও রথীরা চাকা ঘুরিয়ে ওটা থেকে পালানোর চেষ্টা করল প্রাণপনে।
যখনই তারা শক্ত ভূমির সরু রাস্তা থেকে সরে গেল বালির তাদের চাকাগুলোকে টেনে ধরল। লোকজন ককপিট থেকে লাফিয়ে নামল এবং তাদের যান ছেড়ে দিল, ঘোড়াগুলোকে বাঁধা অবস্থাতেই ফেলে পালাতে লাগল। সহজাত প্রবৃত্তিতে ঘোড়গুলো বিপদ বুঝতে পারল এবং পিছনে তাকাল এবং চিৎকার করল, পালানোর চেষ্টা করছে, লাথি মেরে নিজেদের লাগাম থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করল।
খামসিনটা নির্মম ভাবে আঘাত হানল তাদের উপর। ওটার কষ্ঠ গর্জন থেকে হুংকারে পরিণত হয়েছে এখন। নির্মম যন্ত্রণায় লোকগুলো ওটার আগে ছুটল জীবন বাজি রেখে।
তারা পিছলে গেল এবং নরম বালিতে আছড়ে পড়ল, নিজেদের আবার টেনে তুলে দিল দৌড়। পিছনে তাকিয়ে দেখল বিশাল ঝড়টা দ্রুত এগিয়ে আসছে, পাগলা দৈত্যের ন্যায় গর্জন করতে করতে নিজের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে, বালির পর্দাটা বারবার পাকিয়ে উঠছে। সূর্যালোক যেখানে তাদের উপর পড়ছিল সে স্থানটা চকচক করে উঠছিল। বাকি অংশটুকু ছিল পিঙ্গল ও অন্ধকার। টাইটা তার হাত ও লাঠি প্রসারিত করে দাঁড়াল এবং তার নিচে সেনাবাহিনীকে বন্দী হতে দেখল। সে দেখল টর্ক ও ইশতার এখানে একজোড়া মূর্তির মতো সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে আছে, এবং তারপর, যখন ঝড়টার সামনের দিকে তাদের কাছে পৌঁছে গেল, তারা যাদুর দ্রুততা নিয়ে চলে গেল। তারা এবং তাদের সকল লোক, রথ ও ঘোড়াগুলো খামসিনের ঘূর্ণনরত ঢেউ-এ ঢুকে গেল।
টাইটা তার হাত নামিয়ে দৈত্যটার দিকে তার পিঠ ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে গিরি থেকে নামতে শুরু করল। তার দীর্ঘ পাগুলো বন্ধুর স্থানটির এক পাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত প্রসারিত হল এবং সে তার লাঠির উপর ঝুঁকে কিনার থেকে কিনারে পা এলিয়ে এগিয়ে চলল।
নেফার ও মিনটাকা পর্বতের পাদদেশে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তারা তাকে বিমোহিত অভিব্যক্তি নিয়ে স্বাগত জানাল এবং মিনটাকার কণ্ঠ চাপা ও অবিশ্বাসী। সে জিজ্ঞেস করল, আপনি ঝড়টা ডেকে এনেছেন।
এটা গত কয়েক দিন যাবৎ সৃষ্টি হচ্ছিল; টাইটা বলল। তার চেহারা অভিব্যক্তিহীন এবং কণ্ঠ দ্ব্যর্থ। তোমরা তাপ ও বিষাদময় হলুদ কুয়াশাটা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছ।
না; নেফার বলল। এটা প্রকৃতিতে ছিল না। এটা তুমি, তুমিই সব জানতে ও বুঝেছিলে। তুমি ওটাকে ডেকে এনেছে এবং আমি এ বিষয়ে তোমাকেই সন্দেহ করছি।
এখন নিরাপদ আশ্রয়ে যাও; টাইটা বলল। এটা প্রায় আমাদের উপর–আসছে। তার কণ্ঠ খামসিনের বেসুর আওয়াজে হারিয়ে গেল। মিনটাকা পথ। দেখিয়ে এগুগো, নিচু সরু গুহার মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে রুক্ষ দেয়ালের খোলা মুখ দিয়ে ঢুকল। অন্যরা তাকে অনুসরণ করল, ক্ষুদ্র জায়গায় গাদাগাদি হয়ে অবস্থান নিল সবাই। ভেতরে ঢোকার ঠিক পূর্বে হিল্টো প্রায় খালি হয়ে যাওয়া পানির থলেটা তুলে নিল এক হাতে।
শেষে, শুধুমাত্র টাইটা আশ্রয় স্থানের বাইরে রইল। প্রায় যেন ঝড়টা তার সৃষ্টি এমনভাবে তার চেহারা অভিব্যক্তিহীন রইল এমনকি যখন তা তার উপর আবছা ভাবে পড়ল তখনও। এতো জোরে ঝড়টা আঘাত হানল যে তাদের আশপাশের পাথরগুলোকে মনে হল যেন দুলে উঠল ও কেঁপে উঠল এবং টাইটা এর ভেতরে ঢুকে গেল, তার লম্বা অবয়বটা তার মাঝে উধাও হয়ে গেল। প্রথম ঝটকা করে কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হল ঝড়টা। কিন্তু যখন তান্ডব শেষ হল দেখা গেল টাইটা তখনও সেখানে অনড় ও স্থির। ঝড়টা ক্ষিপ্ত দ্বৈতের ন্যায় গর্জন করে নিজেকে সমর্পণ করল এবং ওটা তার সমস্ত ভয়ংকর শক্তি তাদের উপর সজোরে নিক্ষেপ করল। টাইটা, গুহার খোলা মুখ দিয়ে নিচু হয়ে ভেতরে ঢুকে তার পিঠ ভেতরের দেয়ালে লাগিয়ে বসে রইল।
এটা বন্ধ করে দাও, সে বলল এবং ম্যারন ও হিল্টো প্রবেশ পথটা তাদের হাতের কাছে থাকা পাথর দিয়ে বন্ধ করে দিল।
তোমাদের মাথা ঢাকো; টাইটা বলল এবং হাতের কাপড় দিয়ে তারা চেহারা ঢাকল। চোখ বন্ধ কর, নইলে তোমরা তোমাদের দৃষ্টিশক্তি হারাবে। সর্তকভাবে তোমাদের মুখ দিয়ে নিশ্বাঃস টেনে নাও নইলে ভেতরে বালি টেনে নেবে।
*
ঝড়টা এতো শক্তিশালী ছিল যে ওটা প্রথম টানে টর্কের রথ তুলে নিল এবং ঘোড়াগুলোসহ পাকিয়ে তা ধ্বংস করে দিল, আর্তনাদ করতে করতে প্রাণীগুলো লুটিয়ে পড়ল।
টর্ক দূরে নিক্ষিপ্ত হল। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যে সে লড়াই করল। কিন্তু আবার তাকে আঘাত করল ঝড়টা, কোন রকমে সে নিজেকে দাঁড় করাল তার সকল পশুর শক্তি ব্যবহার করে, কিন্তু সে চলার পথের সকল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। যখন সে তার চোখ খোলার চেষ্টা করল, বালিতে সে অন্ধ হয়ে গেল। সে জানল না কোন দিকে সে যাচ্ছে কিংবা কোথায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। ঝড়টার কর্কশ গতি তার গাল ও ঠোঁট থেকে ঘষা দিয়ে শক্ত চামড়া তুলে ফেলল যতোক্ষণ না সে ওগুলো তারহাতের কাপড় দিয়ে ঢাকল রক্ষা করতে।
বালি ও বাতাসের ঘূর্ণনের মাঝে টর্ক চিৎকার করে উঠল, আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও, ইশতার! আমি তোমাকে তোমার সর্বোচ্চ লোভনীয় স্বপ্নের চাইতেও বেশি পুরস্কার দেবো।
এই কান ফাটানো গর্জনের মধ্যে তার কথা কেউ যে শুনবে এটা অসম্ভব। আর ঠিক তখন সে অনুভব করল ইশতার তার হাত ধরেছে এবং সজোরে ধরে তাকে সর্তক করতে চাচ্ছে।
তারা হোঁচট খেয়ে পড়ল, মাঝে মাঝে হাঁটু পর্যন্ত বালিতে ডুবে যাচ্ছিল যা পানির মতো প্রবাহিত হচ্ছে। একটা বাঁধায় পা আটকে টর্ক হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল এবং ইশতারের সাথে সংযোগ হারিয়ে ফেলল। সে আতংকে তাকে অন্ধের মতো খুঁজল। তখন সে ঐ বস্তুটি স্পর্শ করল যা তাকে ফেলে দিয়েছে এবং বুঝল এটা একটা ফেলে যাওয়া রথ তার পাশে পড়ে আছে। সে ইশতারের উদ্দেশ্যে চিৎকার করল, চক্রাকারে টলমল পায়ে ঘুরল। ইশতার হাত দিয়ে তার দাড়ি আকড়ে ধরে তাকে পথ দেখাল। সে বালিতে প্রায় ঝলছে যাচ্ছে, অন্ধ হবার উপক্রম এবং বালিতে ডুবে যাচ্ছে।
সে হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গেল এবং ইশতার তাকে আবার টেনে তুলল, এতে তার এক মুঠো দাড়ি ছিঁড়ে গেল। টর্ক কথা বলার চেষ্টা করল কিন্তু মুখ খুলতেই বালি দ্রুত মুখের ভেতর ঢুকে পড়ল এবং তার দম আটকে গেল। সে অনুভব করল যেন সে মারা যাচ্ছে, কোন মানুষের পক্ষে এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে বাঁচা সম্ভব না। মনে হল এটা সীমাহীন, এ যেন তাদের লক্ষ্যহীন এক যন্ত্রণাদায়ক কোনো যাত্রা। তারপর আচমকা সে অনুভব করল বাতাসের বেগ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু গর্জন তখনো থামে নি–পক্ষান্তরে মনে হল তা তখনো চড়াও হচ্ছে। তাদের অবস্থা মাতালের মতো, হেলে দুলে এক জন অন্যজনের সাথে ঠেস খাচ্ছে যেন দুজন মাতাল একে অপরকে সরাইখানা থেকে বাড়ির পথ দেখানোর চেষ্টা করছে। বাতাসের শক্তি পড়তির দিকে। একটা অনিশ্চিত ও দ্বিধান্বিত পথে, টক ভাবল কোন ভাবে ইশতার তাদের রক্ষা করার জন্য কোন যাদু চেলেছে, কিন্তু তখন একটি আকস্মিক ঝাঁপটা তাকে প্রায় শূন্যে তুলে ফেলে দিল এবং তাদের বন্ধন ভেঙে দিল যা ইশতার ও তার দাঁড়ির মধ্যে স্থাপিত ছিল। সে একটা পাথরে দেয়ালের উপর এতো জোরে গিয়ে পড়ল যে তার মনে হল বুঝি তার ঘাড়ের হাড় ভেঙে গেছে। সে তার হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল এবং পাথরে ঝুলে রইল, একটি শিশু যেমন তার মাতৃ দুগ্ধে ঝুলে থাকে। কীভাবে ইশতার তাদের এখানে নিয়ে এসেছে সে তা জানে এবং এর তোয়াক্কাও করে না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে তাদের উপর পূর্বের ঝড়টি পূর্ণ গতিতে ভেঙে পড়েছে। সে অনুভব করল ইশতার তার পাশে হাঁটু ভর দিয়ে বসে আছে এবং কাপড় তুলে তার মাথা ঢেকে দিল সে। তারপর ইশতার তাকে পর্বতের আশ্রয়ে ধাক্কা দিয়ে সমতলে শুইয়ে দিয়ে তার পাশে শুয়ে পড়ল।