৪.৪৮ পরান্নভোজী তুফেনের কাহিনী

একদিন খলিফা ওয়ালিদ রবাহুত পরান্নভোজী তুফেনের সঙ্গে খানাপিনা করছিলেন। যেখানেই ভালোমন্দ খানাপিনার। গন্ধ পেত সেখানেই সে হাজির হতো। সারা কুফা শহরে তার এই গায়ে পড়ে সেধে নিমন্ত্রণ খেতে। যাওয়ার ব্যাপারটা তখন লোকের মুখে মুখে মুখরোচক গল্প হয়ে ফিরতো।

খেতে সে ভীষণ ভালোবাসতো, এক কথায় পেটুক বলা যায়। কিন্তু গোগ্রাসে গিলতে সে পারতো না। মজার মজার রঙ্গ-রস করে মজলিস মাতিয়ে তুলতেও সে অদ্বিতীয় ছিলো।

এই সময় রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

 

নয়শো বিরাশিতম রজনী।

আবার সে বলতে থাকে–

একদিন এক সম্ভ্রান্ত আমিরের বাড়িতে ভোজসভায় শহরের তাবৎ গণ্যমান্য ব্যক্তি সমবেত হয়ে আহারে বসেছে। এমন সময় দরজার কাছে দরোয়ানদের সঙ্গে বচসা করতে শোনা গেলো তুফেনকে।

তুফেনের গলার আওয়াজ পাওয়া মাত্র নিমন্ত্রিতরা আতঙ্কিত হয়ে উঠলো।

—এই সেরেছে, তুফেন যখন হানা দিয়েছে, তখন আর কাউকে পেট ভরে খেতে হবেনা। ও একাই সেরা সেরা খানাগুলো সাবাড় করে দেবে।

একজন বললো, এক কাজ করা যাক, বড় মাছটাকে ঘরের ওপাশে ঢাকা দিয়ে রেখে দাও। আর সামনে সাজিয়ে রাখ ছোটখাটো চুনো-পুঁটিগুলো। খেয়ে যখন সে বিদায় নেবে, তখন আমরা বের করবো ঐ বড় মাছটা।

তার কথায় সকলেই সায় দিলো। বড় মাছটাকে একটা বারকোষের ওপর রেখে ঢাকা চাপা দিয়ে একটু দুরে এক পাশে সরিয়ে রাখা হলো। আর সামনে সাজিয়ে দেওয়া হলো ছোট মাছের থালাগুলো।

তুফেন ঘরে ঢুকেই সবাইকে স্বাগত সম্ভাষণ জানিয়ে খাবারের টেবিলের দিকে এগিয়ে এলো।

সকলে তাকে শুকনো অভ্যর্থনা জানিয়ে বললো, আরে, এসো এসো তুফেন সাহেব, তোমার জন্যেই আমরা হাত তুলে বসে আছি। এসো এসো, তুলে নাও একটা থালা।

তুফেন টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে চুনোমাছের বেকাবী সাজানো আছে কয়েকখানা। একজন বললো, খুব ভালো মাছ, একটু মুখে দিয়ে দেখ।

তুফেন ঠাণ্ডা গলায় বলে, আমার বাবা সমুদ্রের পানিতে ডুবে মরার পর থেকে মাছে আর তেমন কোনও আসক্তি নাই। তোমরাই খাও, ভাই সাব।

অন্য একজন বললো, সে কি কথা! এ যে ভুতুড়ে কথা শুনছি তোমার মুখে! একবার একটা তুলে চেখেই দেখ না, বড় ভালো হয়েছে।

অনিচ্ছা সত্ত্বে একটা ছোট চারাপোনা দু আঙ্গুলে তুলে সে নাকের কাছে ধরে। তারপর আবার যথাস্থানে নামিয়ে রেখে দেয়।

-কী হলো, খাবে না? সকলে অবাক হয়ে সমস্বরে প্রশ্ন করে। তুফেন অনাসক্তের মতো বলে, নাঃ।

কারণ?

তুফেন বলতে থাকে, এই খুদে মাছটাকে খাবো বলে মুখের কাছে ধরতেই ও কি বললো জানো? বললো, আমাকে কেন খাচ্ছো মালিক, তোমার বাবাকে তো আমরা কেউ খাইনি। যে খেয়েছিলো সেও অবশ্য আমাদের সঙ্গেই উপস্থিত আছে এই ভোজসভায়। তাকে যদি উদরস্থ করতে পার, তবে তোমার বাবার হত্যার প্রতি যোগ্য প্রতিশোধ নেওয়া হবে। আমি অবাক হয়ে বললাম, কিন্তু তেমন বড় মাপের মাছ তো এখানে নজরে পড়ছে না?

ঐ মাছটাই আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, ঐ—ঐ যে বারকোষটায় ঝুড়িচাপা রয়েছে, ঐ রাঘব বোয়ালটাই তোমার বাবাকে আস্ত গিলে খেয়ে ফেলেছিলো। এখন আমার গায়ের রক্ত টগবগ করে ফুটছে। ব্যাটাকে পেলে আমি আস্ত গিলে খাবো।

এই বলে তুফেন দ্রুতপায়ে কোণে ঢাকা দিয়ে রাখা বারকোষের কাছে এগিয়ে যায় এবং লেজাটা ধরে টেনে তুলে ধরে নাকের সামনে।

-ওঃ, তোফা, খেতে হবে, কী বলো? তবে শয়তান তুই আমার বাবাকে খেয়েছিলি? আর আজ কী হবে? তোকে আমি খেয়ে ফেললে তোর কোন বাপ ঠেকাতে আসবে এখানে?উ-ই-ই, ওসব নাকি কান্না আমার ঢের শোনা আছে।না, কিছুতেইনা, তোকে আস্ত আমার পেটে ঢোকাতে

পারলে আমার গায়ের ঝাল যাবে না।

এই বলে ঐ বিরাট মাছটাকে তুফেন একাই খেয়ে সাবাড় করে দিলো। উপস্থিত অভ্যাগতরা তার এই অভিনব ফিকির দেখে হেসে গড়িয়ে পড়লো সকলে।

—আরে তুফেন ভাই। অমন গোগ্রাসে খেও না, গলায় আটকে যাবে যে! এর পর যুবকটি আর এক কাহিনী বলতে শুরু করলো :

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *