মনের মধ্যে প্রলয়কাণ্ড চলছিল পীরজাদার। একবার মনে হচ্ছে, রজনীকে সাহায্য করা উচিত ছিল তার; আবার ভাবছে, নিজেকে রজনীর কাছ থেকে শত হস্ত দূরে রাখার সিদ্ধান্তই সঙ্গত। আসলে, রজনীর প্রতি তার হৃদয় যে ভীষণ রকমে আকৃষ্ট, এ সত্য থেকে মুক্তি পাবার জন্যেই এ মানসিক দ্বন্দ্বের অবতারণা।
মানব চরিত্র খুব কম বোঝে সে, নিজেকে তো আরো নয়। পীরজাদা সে অভাব চিরকাল এক অবোধ দুরন্ত অভিমান দিয়ে ভরিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে।
রজনীকে লালা স্বরাজের হাতে তুলে দিয়ে তক্ষুনি বেরিয়ে পড়া—- এটাও সেই অভিমানেরই কীর্তি। কিন্তু বাইরে এসেও মুক্তি পাওয়া গেল না। মন বসলো না কোথাও। রজনী, মাথার মধ্যে রজনীর মুখ সম্রাজ্ঞীর মতো আঁকিয়ে বসে আছে। এ যন্ত্রণা সুরাপানে মিটল না। এসেলশিয়রে বসে বসে সে পন্থায় ব্যর্থ হলো সে, তখন এলো মেট্রোপলে। কায়রোর মোহিনী নর্তকী রাজিয়া শহরে এসেছে। তার নন্দিত যৌবনের ছবি আজকের কাগজে দেখেছিল পীরজাদা। আজ মেট্রোপলে তার নাচের প্রথম রাত।
স্ত্রীর বীভৎস মৃত্যুর পর এক রজনী ছাড়া অন্য কাউকে দেখে বিচলিত হয়নি পীরজাদা। এটা অন্যায় মনে হয়েছে তার কাছে। এবং তাই এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, নর্তকী রাজিয়ার দেহ। প্রদর্শনী দেখে যদি এতটুকু চঞ্চল হয় তার স্নায়ু, তাহলে পাপবোধের বোঝাটা খানিক হাল্কা হবে। এ যেন নিজেকে শাস্তি দেয়া; রজনী ছাড়া অন্য কাউকে ভালো লাগবে না কেন—-মনকে এ রকম একটা ধমকানি দেয়া।
বেয়ারা এসে সালাম করল। ডিনারের অর্ডার দিল পীরজাদা। ডিনারে কী পছন্দ করবে সে? তার জবাবে বলল, তোমার রাধুনির আজ যা সেরা, তার সমারোহ দেখতে চাই আমার টেবিলে।
সে ছিল অভিজ্ঞ বেয়ারা। তার নিজের পছন্দের ওপর ছেড়ে দেয়াতে লোকটা গর্বিত হলো, এবং এমন এক স্মিত হাস্যের সঙ্গে প্রস্থান করল যার অর্থ কোনটা সেরা তা আমি জানি, আর আমি যে জানি তা আপনিও স্বীকার করবেন একটু পরেই।
ঠিক তখন আলো স্তিমিত হলো। এক মুহূর্তের ব্যবধানে রণিয়ে উঠলো সঙ্গীত। মৃদু বিচ্ছুরিত নীল আলোচক্রের মধ্যে এসে অভিবাদন জানালো স্বল্পবাস পরিহিতা প্রায় নগ্ন রাজিয়া। তার চোখে নীল সুরমা, মৎসপুচ্ছের অনুকরণে অঙ্কিত তার আঁখিকোণ। রক্তিম বুকের ঊর্ধ্ব থেকে উন্মুক্ত নাভিমূল অবধি এক সূক্ষ্ম সুরমা রেখার কারুকাজ। পীরজাদা তার বিক্ষিপ্ত মন। কেন্দ্রীভূত করবার চেষ্টা করল। ঐ বিদ্যুতের মত সঞ্চরণশীল শরীরে তার একাগ্র দৃষ্টি স্বর্ণ সন্ধানীর মতো ভ্রমণ করতে লাগল।
খাবার সাজিয়ে দিয়ে গেছে বেয়ারা। সে খেতে শুরু করল। সেখানেও চেষ্টা করল একাগ্র হতে, খাদ্যের স্বাদ পূর্ণ উপলব্ধি করতে।
স্রোতোধারার মতো হিল্লোলিত হচ্ছে, রাজিয়ার মর্মর শুভ্র কাঁধ। কাঁধ থেকে স্পন্দিত তরঙ্গ নেবে আসছে মরুভূমির জ্যোছনা মাখা বিশাল বালুবীথির মতো দুই স্তনে, সেখানেও স্থির থাকছে না তরঙ্গ, গিয়ে পৌঁছুচ্ছে চিতাবাঘের বুকের মতো দুই ঊষর উরুতে। সেখানে মূর্হিত হচ্ছে এবং পর মুহূর্তে আবার কাঁধ থেকে তার পুনরাবৃত্তি চলছে। চক্রাকারে ঘুরে উঠছে নাভি, যেন তার মধ্য থেকে এখুনি উৎক্ষিপ্ত হবে কামনার ফুল। পরক্ষণে তা স্তম্ভিত হচ্ছে। তখন পদ্মদলের মতো সঙ্গীতের ওপর ভাসছে রাজিয়া। সে লুটিয়ে পড়ছে, তার দুই বাহু শৃঙ্খলিত বন্ধনের ভঙ্গিতে বিলাপ করছে দয়িতের স্পর্শ কামনা করে।
কিন্তু তবু রজনীকে ভোলা যাচ্ছে না। এক মুহূর্তের জন্যে যেন ঘোর লেগেছিল। সেটা স্থায়ী হতে পারল না। খাদ্য বিস্বাদ ঠেকল।
রাজিয়া তার পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পড়েছে। মেঝেয় গড়াচ্ছে তার সুতনু। ঝড়ে উৎক্ষিপ্ত গোলাপ পথিকের পায়ে পিষ্ট হতে চায় যেন এই তার সুখের মরণ। একেবারে নিকট থেকে নারী দেহের অনাবৃত জীবন্ত মসৃণতা তার চোখ আচ্ছন্ন করে ফেলল। চোখের সমুখে যেন কোটি কোটি রক্তমুখ রোমকূপ ছাড়া আর কিছুই সে দেখতে পেল না। হাত বাড়াতে গেল পীরজাদা। ঠিক তখন তীরের মতো উৎক্ষিপ্ত হলো রাজিয়ার দেহ। চোখের পলকে অপসৃত হলো দূরতম কোণে।
পীরজাদা উঠে দাঁড়াল। না, এসবে কিছু হবে না। বমি করতে ইচ্ছে করছে তার। গাড়িতে এসে বসলো। এর চেয়ে হোটেলে ফিরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কেমন হয়?
অন্ধকারে স্ফটিক প্রাসাদের মতো দাঁড়িয়ে আছে হোটেল কোলামবাস। শহরের এ দিকটা এমনিতেই নির্জন, বাত বারোটা বাজেনি, এরি মধ্যে চলে গেছে সবাই। করিডর, হল, সিঁড়ি, ফুলের টব হঠাৎ বড় হয়ে গেছে যেন।
পীরজাদা অবাক হয়ে ভাবল, মানুষের উপস্থিতি কী দাম্ভিক, সমস্ত কিছুকে তার সমুখে। সংকুচিত হয়ে থাকতে হয়ে।
শূন্য করিডর দিয়ে যেতে যেতে ডাইনিং হলের পাশে থমকে দাঁড়াল পীরজাদা। নিস্তব্ধ বিশাল হলের শেষ প্রান্তে দুটি মানুষ তখনো বসে আছে। সারা ঘরে আর কেউ নেই। দূর থেকে এতটুকু দেখাচ্ছে তাদের, যেন স্বপ্নের মধ্যে একটা ছবি।
ওরা রজনী, রজনী আর লালা স্বরাজ। রজনী বসে আছে তার দুকনুই টেবিলে তুলে যুক্ত করতলের কাপে চিবুক রেখে। অপরূপ তার সজ্জা। তাতে উগ্রতা নেই, স্নিগ্ধতা আছে। ঐশ্বর্য নেই, দীপ্তি আছে। দুপুরে দেখা রজনীর সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। যেন মলিন ফুলদানি মার্জিত হয়ে ঝকঝক করছে।
বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো পীরজাদা। লালা স্বরাজের ধীর ফিসফিস কণ্ঠ ভেসে আসছে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তার প্রতিক্রিয়া রজনীর চোখে মুখে ফুটে উঠছে। আগ্রহ এবং লজ্জার এক অপরূপ সমন্বয় রজনীর মধ্যে প্রত্যক্ষ করল সে।
লালা স্বরাজের সান্নিধ্যে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কী করে এমন পরিবর্তন ঘটলো রজনীর তা মাথায় ঢুকলো না পীরজাদার। নিজের ঘরে এসে দেখল স্বরাজের চিরকুট পড়ে আছে। তার লেখা মাথার মধ্যে আগুন ছড়ালো। কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলে দিল চিরকুটখানা। রজনীর স্বামীকে খুঁজে বার করবার কোনো দায় নেই তার। ঈর্ষার ভীষণ আগুনে দন্ধে মরতে লাগল সে।
পীরজাদার ভাগ্য বলতে হবে। কারণ ডাইনিং হলে তখন লালা স্বরাজ রজনীকে যা বলেছিল সেটি একটি কবিতা রবীন্দ্রনাথের কবিতা। লালা স্বরাজ তার বাংলা সাহিত্যজ্ঞানের মুখস্ত পরিচয় দিচ্ছিল রজনীকে। তার এক বর্ণ বুঝলেও পীরজাদার ঈর্ষার মাত্রা সহস্রগুণে বাড়তো। সন্দেহ নেই। তবে তাতে করে রজনীর মুখে লজ্জা এবং আগ্রহের মিশ্রিত প্রকাশটি কেন, তা বোঝা যেত। লালা স্বরাজ আবৃত্তি করছিল।
তোমার স্বপ্নের দ্বারে আমি আছি বসে
তোমার সুপ্তির প্রান্তে, নিভৃত প্রদোষে
প্রথম প্রভাত তারা যবে বাতায়নে
দেখা দিল। চেয়ে আমি থাকি একমনে
তোমার মুখের পরে। স্তম্ভিত সমীরে
রাত্রির প্রহর শেষে সমুদ্রের তীরে
সন্ন্যাসী যেমন থাকে ধ্যানাবিষ্ট চোখে
চেয়ে পূর্বতট পানে, প্রথম আলোকে
স্পর্শ মান হবে তার এই আশা ধরি
অনিদ্র আনন্দে কাটে দীর্ঘ বিভাবরী
তব নবজাগরণী প্রথম যে হাসি
কনক চাঁপার মতো উঠিবে বিকাশি
আধো খোলা অধরেতে, নয়নের কোণে
চয়ন করিব তাই, এই আছে মনে।
রজনী একদিকে অবাক হয়ে গিয়েছিল লালা স্বরাজের বিদেশী জিহ্বা থেকে বাংলা কবিতা শুনে, অন্যদিকে তার মনে হচ্ছিল, এ কবিতার অর্থ কী আর ইঙ্গিতই বা কী লোকটা তা ভালো করে জানে না। যদি জানতো তাহলে অমন নিঃসকোচে আবৃত্তি করে শোনাতে পারত না তাকে। যত স্বচ্ছন্দ পুরুষই হোক না কেন, পয়ারের চোদ্দ লাইন বলে যেতে যে সময় লাগে ততক্ষণ ধরে প্রেমের অমন আকুতি জানানো যায় না। রজনীর কল্পনাক্ষমতা অসীম। সে যেন এতকাল মনে মনে এই নিবেদনেরই ধ্বনি শুনতে চেয়েছিল। লালা স্বরাজের সোনার মতো ভাগ্য। সে নিজের অজান্তে রজনীকে তৃপ্ত করলো। ফলে আবৃত্তি শেষে যখন সে শুধালো, আমার উচ্চারণ কেমন? তখন রজনী আকাশ থেকে পড়ল। স্বপ্নভঙ্গের দুঃখে খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো সে। লালা স্বরাজ সে চুপ করে থাকার ব্যাখা করল, পরীক্ষায় তার ডাহা ফেল হয়েছে। বলল, আবৃত্তি শুনে হেসে ফেলেননি, কঠিন মনোবল আপনার। আজ থেকে আমি আপনার ছাত্র। এ কবিতার কোথায় ত্রুটি হলো মনে রাখবেন, শুধরে দিতে হবে।
রজনী হেসে বলল, আচ্ছা। এবারে উঠুন।
ভাগ্যকে চিনতে শিখেছে রজনী। এটুকু তার উপলব্ধি হয়েছে, পরম বন্ধুও বন্ধু নয়। মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে রজনী এখন এত পরিবর্তিত যে তাকে দেখে আর চেনা যাবে না।
অবশ্যি মাথার ওপর দিয়ে ঝড় গেছে। যে গাছটা এতকাল ফুলে ফলে পল্লবিত সবুজ, কালবোশেখীর পর তার পত্রহীন রূপ দেখে অবাক হতে হয়। রজনীর এখন সেই দশা। বেঁচে থাকার দুরন্ত তাগিদে রাতারাতি যেন নতুন পাতার কিশলয় দেখা যাচ্ছে।
হোটেল কোলামবাসের ম্যানেজারকে বুদ্ধি করে লালা স্বরাজ নিজেই জানিয়ে দিয়েছিল, মহসিনকে জরুরি কাজে ঢাকা যেতে হয়েছে। রজনী কিছুকাল থাকবে। ম্যানেজারের কাছ থেকে জানা গিয়েছিল প্রায় সাতশ টাকা বাকি। লালা স্বরাজ মনে মনে হিসেব করেছিল, রজনীর ঢাকা ফিরে যেতে লাগবে আরো দুশ কিছু। অর্থাৎ এক হাজার টাকার ধাক্কা।
কথাটা রজনীকে জানাতেই তার মুখ শাদা হয়ে গেল। তার ধারণা ছিল, এবং স্বরাজকেও বলেছিল, গায়ের গহনা বিক্রি করে সব খরচা মোকাবেলা করা যাবে। হাতে তার খুব বেশি হলে ছিল গোটা তিরিশেক খুচরো টাকা। নিজের প্রচুর খাদ মেশানো হার আর কগাছা চুড়ি আংটির বদলে বড়জোর তিনশ টাকা আসতে পারে। বাকি টাকা পাবে কোথায়?
তার ভয়ার্ত মুখ লক্ষ্য করে লালা স্বরাজ ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল। পরামর্শ দিয়েছিল বাড়িতে চিঠি লিখতে। তারা নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করতে পারবে। কিন্তু রজনী সেদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি, বাড়িতে চিঠি সে কোনদিনও লিখতে পারবে না। তার চেয়ে গলায় দড়ি দেয়া বরং অনেক সহজ ও সুলভ। প্রসঙ্গ এড়ানোর জন্যে উত্তর করেছিল, হ্যাঁ, সে বাড়িতেই চিঠি লিখবে।
তারপর দুদিন লালা স্বরাজ জিগ্যেস করেছে, বাড়িতে সে চিঠি লিখেছে কিনা? রজনী উত্তর করেছে, হ্যাঁ লিখেছে।
এত সহজে, মুখে কোন চিহ্ন না ফুটিয়ে, মিথ্যে বলার ক্ষমতাটা রজনীর একেবারেই নতুন পাওয়া। ঢাকা সে কোনকালেও ফিরে যেতে পারবে না। ফিরে গেলেও বাড়িতে তার স্থান হবে কিনা সে সম্পর্কে প্রচুর সন্দেহ আছে। স্থান হলেও কপালে যা জুটবে তা মনে করেও শিউরে উঠতে হয়। এদিকে, করাচিতে এমন করেই বা থাকা চলে কদ্দিন? একটা করে মুহর্ত যায় আর রজনীর মনে হয় জীবন থেকে একটা নিরাপদ মুহূর্ত ব্যয়িত হয়ে গেল। করাচিতেই কি তার মৃত্যু হবে? মহসিন চলে যাবার দ্বিতীয় রাতে সে স্থির করল, না, ঢাকাতেই ফিরে যাবে রজনী। তবু বাংলাদেশ। বাবা মায়ের দেশ। নাইবা উঠল সে বাবার কাছে। এই একটা দিনে তার এতটুকু জ্ঞান হয়েছে যে, নারীর একেবারে নিজস্ব অস্ত্রগুলো দিয়ে বিপদের অনেক ব্যুহ ভেদ করাই সম্ভব। ঢাকায় ফিরে গিয়ে নিজের একটা আশ্রয় খুঁজে পাওয়া হয়ত একেবারে কঠিন হবে না। জীবনে তার বড় কিছু চাইবার নেই—- নিরাভরণ সামান্য হলেই তার স্বর্গ।
কিন্তু আদৌ সে যেতে পারছে কী করে? এই নির্বান্ধব শহরে এক হাজার টাকা তাকে কে দেবে? মনে করে দিশে পেত না রজনী। তখন মন থেকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলে দুশ্চিন্তা।
তখন লালা স্বরাজের সান্নিধ্য ভালো লাগত। লালা স্বরাজের ঐ একটা গুণ, তার সঙ্গ পেয়ে সব কিছু ভুলে থাকা যায়। অনেকক্ষণ ধরে এই বিভ্রান্তিটা থাকে যে, তার কিছুই হয়নি। তার সব আছে। তার সংসারে আনন্দের প্রস্রবণ বইছে। এবং এই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্বরাজের সঙ্গে শহরের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত অবধি ঘুরে বেড়ানো চলছে, কখনো বসছে ক্লিফটনের সেই রেস্তোরাঁর দোতলায়, কখনো এলফিনস্টোনের আলোক মুখরিত বিপণির দরোজায় দাঁড়িয়ে জিনিস এবং মানুষের সমারোহ দেখা হচ্ছে, সেজানের রাত্রিতে টেবিলের দুই প্রান্তে বসে বেহালায় হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উৎসারিত কান্নার মতো সুর শুনতে শুনতে খাওয়া পড়ে থাকছে, লালা স্বরাজের মুখে স্পন্দিত আবৃত্তি শুনে তার আজীবন স্বপ্নের প্রতিবাস সৃষ্টি হচ্ছে—-এ সব মিলিতভাবে তার আড়াল, তার সংকোচ, তার আশংকা সমস্ত কিছুকে কখন তুচ্ছ করে দিয়েছে তা রজনীও ভালো করে বলতে পারবে না।
অন্য দিকে লালা স্বরাজ তার বাংলা প্রীতির তোড়ের মুখে এরকম নিখাদ একটি বাঙ্গালি মেয়ের সঙ্গ পেয়ে উদ্দাম হয়ে উঠেছে। রজনীকে নিয়ে সে এরই মধ্যে তার বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে আচমকা হানা দিয়েছে অবাক করে দেবার জন্যে। পার্টিতে, সিনেমায়, ফেলর শো–তে নিয়ে গেছে রজনীকে জাহির করবার জন্যে। মধ্যযুগের উদ্ধত কিন্তু নারীর কাছে বিনীত সেনানায়কের মতো সে রজনীর ক্ষীণ কটি আভাসে একহাতে বেষ্টন করে বিজয়গর্বে বিচরণ করেছে এ শহরের অভিজাত আড্ডায়।
ফলটা হলো এই, তিনদিন যেতে না যেতে গুজব রটলো, লালা স্বরাজ এক বাঙালিনীর প্রেমে পড়েছে। গুজবটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কানে পৌঁছুলো স্বরাজের। বন্ধুরা জ্বালিয়ে মারল টেলিফোনে। বান্ধবীরা মুখ গোল করে বিস্ময় প্রকাশ করল, অবশেষে বাঙালিকে? গুজবটা পল্লবিত হয়ে এ রকম আকার ধারণ করল—-লালা স্বরাজ গত এক বছর ধরে এ মহিলাকে ভালোবাসছিল, তার প্রমাণ—-গত এক বছর থেকে তাকে বাংলা শিখতে এবং বাংলা গান গুনগুন করতে শোনা গেছে। এতকাল চুপ করে থাকার ব্যাখা তারা করল স্বরাজ সাংবাদিক মানুষ, সংবাদ স্কুপ করে তাক লাগানো যার স্বভাব, তার পক্ষে এই–ই তো। স্বাভাবিক। মোটকথা, সত্য মিথ্যে যাই হোক, দ্রুত প্রচারিত এ গুজব তার কাছে নেহাৎ মন্দ লাগল না। চতুর্থ দিনে সে অ্যামপিজ–এর দোতলায় বসে খাখা দুপুরে কফি পান করতে করতে রজনীকে তার জীবন কাহিনী বলে ফেলল। সে ইতিহাস শুনে চোখ ছলছল করে উঠলো রজনীর। হয়ত তার নিজের বাবার কথা মনে পড়ে গেছে আচমকা। আঁচল তুলে চোখ মুছতে যাবে, লালা স্বরাজ তার হাত ধরে ফেলল, বলল, একী তুমি কাঁদছ?
মাথা নাড়তে গিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল রজনীর। স্বরাজ তার শাদা রুমালে সে অশ্রু ধরে রেখে সযত্নে পকেটে পুরল। বলল, আমাকে করুণা না করে যে গৌরব তুমি দিয়ে গেলে তার যোগ্য নই। আমি হরিজনের ছেলে, আমার জন্যে অশ্রু হতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি।
রজনী তার উত্তরে বলল, এক সাধারণ মেয়ের অশ্রুকে এত বড় করে দেখলে অহঙ্কারের পাখায় ভর করে সে আকাশে উড়তে থাকবে। সেখান থেকে যদি কোনদিন তাকে মাটিতে নেমে আসতে হয় তো হতভাগিনীর আর দুঃখের অবধি থাকবে না।
এক মুহূর্ত চুপ করে রইলো লালা স্বরাজ। পরে বলল, সে দুঃখ কোনদিন আসবে না। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।
যেন সাপের মাথায় পা পড়েছে, সন্ধ্যের সময় বার থেকে ঘরে এসে শরীর শুদ্ধ চমকে উঠলো রজনীর। খাটের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে মহসিন নিঃশব্দে হাসছে। অধঃপতিত একটা মানুষের অহংকার হলে যেমন হয়, হাসিটা তেমনি।
উনিশ দিন পরে এই লোকটাকে দেখে রজনীর কী রাগ হলো, না আনন্দ হলো, না বিস্ময়, না ভয়, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। শুধু বিমূঢ়ের মতো তাকিয়ে রইলো সে।
মাথার চুল রুক্ষ, মুখ মলিন, চোখের কোলে কালিমা, এক গাল খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গায়ের কাপড় ধোঁয়া পড়েনি কয়েকদিন। সব মিলিয়ে করুণার উদ্রেক হতে পারতো। কিন্তু সেটাও সম্ভব হলো না গা জ্বালানো ঐ নিচুস্তরের নিঃশব্দ হাসিটার জন্যে।
হাত তুলে রজনী বলল, বেরিয়ে যাও।
নিজের কথা নিজের কানে পৌঁছুতেই চমকে উঠলো রজনী। আজ মহসিনকে একথা বলতে হচ্ছে, এর চেয়ে অবিশ্বাস্য অপ্রত্যাশিত যেন আর কিছু হতে পারে না। এক পলকের জন্যে অনুতাপও হলো। হাতটা নামিয়ে আনলো সে আস্তে আস্তে। অবসন্ন কণ্ঠে উচ্চারণ করল, যাও।
মহসিন মুখ থেকে হাসি সরালো। আপাদমস্তক রজনীকে দেখল অনেকক্ষণ সময় নিয়ে। তারপর উঠে এসে তার সম্মুখে একেবারে মুখের কাছে মুখ স্থাপিত করে, শরীর দিয়ে শরীরকে প্রায় ছুঁয়ে দাঁড়াল। ভয়ে চোখ বুজলো রজনী। ভয় করছে কেন? টের পেল, মহসিন আবার ফিরে গেল। চোখ মেলে দেখল, ফিরে গিয়ে লোকটা চেয়ারের পরে অধোবদনে বসে আছে।
এ উনিশ দিন কোথায় ছিল মহসিন, কিভাবে ছিল, খুব একটা ভালো ছিল না, এসব কথা মনে করে মন খারাপ করল তখন। কিন্তু অবাক হয়ে রজনী তার মনের দিকে তাকিয়ে দেখল, মহসিনের জন্যে ভালোবাসার এতটুকু আর অবশিষ্ট নেই এ হৃদয়ে। যে লোকটার কথায় একদিন অন্ধের মতো সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিল, যে লোকটার মধ্যে তার আশ্রয়, ভবিষ্যত, সুখ, সম্পদ সমস্ত কিছু দেখেছিল সেই একই লোক এই উনিশ দিনে তার জীবনে তুচ্ছের চেয়েও মূল্যহীন হয়ে গেছে। তাকে ফেলে চলে গেছে বলে রাগ হচ্ছে না, দুঃখ হচ্ছে না, কেনই বা হবে? রজনী নিজেও যেটা বুঝতে পারছে না তা হচ্ছে, লালা স্বরাজের অন্তরংগ আন্তরিকতা তাকে এমন করে ঘিরে ফেলেছে যে মহসিন কোনো অস্ত্র দিয়েও সে ব্যুহ ভেদ করতে পারবে না।
বরং মহসিনকে দেখে রজনীর অন্তর চমকে উঠেছিল। তার সুখের দিন বুঝি ফুরালো। লালা স্বরাজ যে পৃথিবীর সন্ধান তাকে দিয়েছে, এত গভীরভাবে সে সেটাকে বিশ্বাস করেছে, যে মহসিনের হঠাৎ আবির্ভাবে অমঙ্গলের সম্ভাবনায় রজনী এখন বিচলিত।
মহসিন হঠাৎ মাথা তুলে বলল, রজনী, আমাকে কিছু টাকা দাও।
কথাটা এত অপ্রত্যাশিত যে রজনীর মনে হলো সে ভুল শুনেছে। সে জিগ্যেস করল, কী? টাকা। নেই?
রজনী বিস্মিত হলো। বুঝতে পারল না তার কাছে মহসিন টাকা চাইছে কেন? মহসিন তো ভালো করেই জানে, তার হাতে একটা পয়সাও নেই। যে গোটা তিরিশেক টাকা ছিল সেটা অনেক বুদ্ধি করে আদায় করা। মহসিন তার ঢাকা থেকে আনা টাকা নিজের কাছেই রেখেছে, নিজে খরচ করেছে। সে টাকা এ দেড় মাস ধরে খরচ হয়েছে। টাকা সম্পূর্ণ খরচ হয়ে গেছে, অথচ কাজের কোন আশা না দেখেই যে সে একদিন পালিয়ে গেছে এ কথাটাও ওর চলে যাবার পরদিনেই বুঝতে পেরেছিল রজনী। বরং সে তার পরম সম্পদ, তার লজ্জা, রাতের পর রাত হরণ করে পালিয়েছে। একটিবার ভাবেনি তার কী হবে। সে কথা মনে করে ভীষণ আক্রোশ হলো রজনীর। সে যদি গলায় দড়ি দিত, তার মৃত্যুর জন্যে দায়ী হতো মহসিন। এত বড় সর্বনাশ করবার পরও লোকটা আবার এসেছে তার কাছে, টাকা চাইছে, শুনে গা জ্বলতে লাগল রজনীর। মহসিন যে স্পষ্টই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে, পশুর মতো কোথাও পড়ে রাত পার করছে—- এটা তার চেহারায় লেখা দেখা যাচ্ছে। তবু রজনীর দয়া হলো না এতটুকু। সে বলল, আমি কোথায় টাকা পাবো?
কেন, লালা স্বরাজের কাছ থেকে।
হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেল রজনীর। হাতে চাবুক থাকলে পশুপেটা করত লোকটাকে। নেই বলে অসহায় দুহাত মুঠো হয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল তার। বেরিয়ে যাও, আমি চিৎকার করবো নইলে। পশু একটা পশু। তোমার কিছুতে বাধে না, কিছুতে আটকায় না।
থামলে কেন?
আর কিছু বলার প্রবৃত্তি আমার নেই।
আমার আছে।
কী বলবে?
দাঁড়াও।
মহসিন একটা সিগারেট বের করে ধরাল। প্রচুর একটা টান দিয়ে ওটাকে নিরীক্ষণ করল। তারপর বলল, জানতাম তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবে। তাই ফেলে গিয়েছিলাম। একটা কথা কী জানো, মেয়েমানুষ হয়ে জন্মালে সুবিধে অনেক। শালার। একেক সময় ভাবি মেয়ে হয়ে জন্মালাম না কেন? লালা স্বরাজের মতো পাঁঠার কাছ থেকে একটা পয়সাও খসাতে পারোনি এটা কেমন কথা? বোকার মতো রাতে শুয়ে থাকলেই হলো? মালকড়ি বানাবার এইতো বয়স। কিছু পয়সা ছাড়ো। তারপর হাই তুলে বলল, দুদিন গোসল হয়নি। একটু হাত পা ছড়িয়ে গা ধুয়েনি। কী বল? শ খানেক হলেই আপাতত আমার চলে যাবে। বলে মহসিন বাথরুমের দিকে গেল। দরোজা খুলে কী ভেবে মুখ ফিরিয়ে বলল, পীরজাদার তো বেশ লোভ ছিল তোমার ওপর। তার নাকে দড়ি দিতে পারলে গ্র্যাণ্ড হতো। ব্যাটাছেলের প্রচুর টাকা। যা ওড়ায়।
দুম্ করে বন্ধ হয়ে গেলে বাথরুমের দরোজা। মিনিট খানেক পরে অঝোর ধারে পানি পড়া শব্দ।
রজনী একবার ভাবলো, নিচে গিয়ে ম্যানেজারকে ডেকে নিয়ে আসে। পরক্ষণেই মনে হলো, সে ভদ্রলোক মহসিনকে তার স্বামী বলে জানে, জানে সে ঢাকা গেছে। স্বামীর আবার অনধিকার প্রবেশ কী?
অবাক হলো এই ভেবে, কারো চোখে না পড়ে মহসিন হোটেলে তার কামরায় এসে ঢুকলো। কী করে? রজনী লালা স্বরাজের কথা চিন্তা করল। তাকে গিয়ে বললে কেমন হয়? মহসিনকে দেখে লালা স্বরাজ হয়ত বিনীতভাবে বিদায় নেবে। একদিনেই রজনীর জানা হয়ে গেছে, ভেতরে বাইরে স্বরাজ খাঁটি ভদ্রলোক; ঘরে চোরকে দেখে পেটানোর বদলে দরোজা খুলে দিয়ে বলবে, আপনি ভুল করে অন্য কামরায় ঢুকেছেন।
মহসিনকে দেখলেই লালা স্বরাজ নিশ্চিত ধরে নেবে, তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। মহসিন রজনীকে তার আগে ভালোবেসেছে, অতএব অগ্রাধিকার তারই।
মহসিনের মুখে পীরজাদার উল্লেখে লোকটার কথা বেশ কদিন পর মনে পড়ল। স্বরাজের সঙ্গ পেয়ে সে ভুলে গিয়েছিল এ লোকটার অস্তিত্ত্ব। এক কারণহীন অপরাধবোধে ভরে উঠল তার মন। মনে হলো, পীরজাদাকে সে প্রতারিত ও ক্ষুণ্ণ করেছে।
রজনী ঠায় বসে রইলো সোফার পরে। বাথরুম থেকে অবিরাম জলধারার শব্দ ভেসে আসছে। আজ সারাটা দুপুর তার কেটেছে লালুখেতে স্বরাজের এক বন্ধুর বাসায়। সেখানে তাদের দুজনের ছিল দুপুরের খাবার নেমন্তন্ন। সাজানো গোছানো দুটি মানুষের সেই সোনার সংসারে বিকেল অবধি কাটিয়ে রজনীর মন স্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলো। তারও সংসার হবে, এমনি সংসার, আর লালা স্বরাজ। বলতে গেলে, লালা স্বরাজকে তার জীবন মৃত্যুর বন্ধু হিসেবে কল্পনায় আজ এই প্রথম স্পষ্ট করে সে এঁকেছে। সে ছবি এখন একটা উদ্যত কুৎসিত হাতে যে কোনো মুহূর্তে আর্তনাদ করে পড়বে মাটিতে।
মহসিন বেরিয়ে এলো। সে শুধু গোসলই করেনি, তার পরিত্যক্ত রেজার ব্লেড বের করে দাড়ি কামিয়েছে, একটু সুগন্ধও মেখেছে বুঝি, মৃদু বাস দিচ্ছে। তার দিকে তাকিয়ে নিজেকে বড় ক্লান্ত লাগল রজনীর। অসহায় চোখ মেলে তাকিয়ে রইল তার দিকে।
মহসিন তাকে চকিতে দেখে নিয়ে বলল, ভয় পাওয়া তোমার শোভা পায় না রজনী। তুমি অযথা ভয় পেয়েছ। তোমার সুখে বাদ সাধতে আসিনি। চলে গিয়েছিলাম পরোক্ষভাবে সেটা মঙ্গলের কারণ হয়েছে। তার জন্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে নিশ্চয়ই।
চুপ করো। চেঁচিয়ে উঠল রজনী।
মহসিন বলল, সবটা শোনো। অন্তত করাচি আসবার প্লেন ভাড়াটা আমাকে দাও।
করাচি আমি আসতে চাই নি।
হাসল মহসিন।
না এলে আমার কী সাধ্য ছিল জোর করে আনি। এতবড় মেয়েকে লজেন্স দেখিয়ে ভোলানো যায় না, হাত ব্যাগে পুরেও হাওয়া হওয়া যায় না।
তুমি যাবে?
টাকা দিলেই যাবো।
কিসের টাকা?
বাহ, তুমি থাকবে সুখে। আর আমি না খেয়ে রাস্তায় পড়ে মরবো?
তাই মরো।
কথাটায় মহসিন কানও দিল না। বলে চলল, ভালোই হয়েছে। কী বল?
কী ভালো হয়েছে?
এই তুমি যা করছ।
কী করছি আমি? কী করছি? বলো কী করছি?
চটে গেল মহসিন। মুখ বিকৃত করে বলল, ন্যাকা। কিছু বোঝো না? জিগ্যেস কর নিজেকে কী করছ। কাপড় খুলে দ্যাখো কী করছ। আরো বলতে হবে? দাও, টাকা দাও।
নেই।
নেই?
থাকলেও দেব না।
তাহলে আছে?
তোমার লজ্জা করে না?
লজ্জা তো তোমারও করতে পারত। সে যাক, লালা স্বরাজকে নাচাচ্ছ নাচাও। ও বোধহয় জানেও না। তোমার পেটে আমার ছেলে বড় হচ্ছে। জানে?
মুখ শাদা হয়ে গেল রজনীর। ঠোঁট কেঁপে উঠল মৃত্যুর মুখে প্রজাপতির মতো। কিন্তু কিছু বলবার মতো শক্তি পেল না। স্পষ্ট সে বুঝতে পারল, এ লোকটা তার সর্বনাশ করতে উদ্যত, যদি সর্বনাশের আরো কিছু বাকি থাকে। বোকার মতো যে প্রাসাদ সে কল্পনায় গড়ে তুলেছিল, এই একটা কথার উচ্চারণে তা ধূলোয় মিশে যাবে। ভয় হলো স্বরাজকে গিয়ে এখুনি হয়ত সে বলবে। স্বরাজের কাছে সে যে বলে বসে আছে, মহসিন তার স্বামী নয়, কেউ নয়। স্বরাজ যে জানেও না, রজনী মিথ্যে করে বলেছে মহসিন তার দেহস্পর্শ করেনি বলেছে, সে পবিত্র।
রজনী মাতালের মতো টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। কোনো রকমে গলা থেকে হার খুলে হাতে দিয়ে বলল, তুমি যাও।
চট করে হারখানা পকেটে পুরে মহসিন দরোজা খুলে গলা লম্বা করে দেখল ডানে বামে। তারপর সুরুত করে বেরিয়ে গেল।
রজনী বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে কাঁদতে লাগল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।
ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝি। মাথার পরে হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ মেলে দেখে চোখ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে লালা স্বরাজ। এত ভালো লাগল, চোখ বুজলা, আবার। কয়েক মুহূর্ত পরে বোধ করি ফিরে আসতেই ধড়মড় করে উঠে বসলো সে। স্বরাজ বলল, দরোজায় নক করে সাড়া পেলাম না। খেতে হবে না? সাড়ে নটা রাত হয়েছে।
ম্লান হাসল রজনী। শাড়ি মুখ কুন্তল দ্রুত সংযত করতে করতে উঠে গেল। স্বরাজ বলল, সাড়া না পেয়ে হঠাৎ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কী হলো? দরোজা খুলে দেখি ঘুমিয়ে আছে। যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।
বসুন।
রজনী বাথরুমে ঢুকলো মুখ মার্জনা করতে। স্বরাজের কথা কানে বাজতে লাগল। পাশাপাশি মনে হলো মহসিনের কথা। একটা মানুম থেকে আরেকটা মানুষ কত বিপরীত পশু আর দেবতা। বেরিয়ে এসে রজনী বলল, আমাকে এ হোটেল বদল করতে হবে।
কেন?
স্বরাজ বিস্মিত হয়ে তাকাল তার দিকে।
কেন? কী হয়েছে?
স্বরাজ যে এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে তা ভাবেনি সে। তাকে যে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যেই তখন হাসল রজনী। বলল, কিছু হয়নি তো। এমনি। এমনিতেই ভালো লাগছে না।
কেউ কিছু বলেছ?
স্বরাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কারণ অনুসন্ধান করতে লাগল রজনীর মুখে। তার হঠাৎ মনে পড়ল পীরজাদার কথা। পীরজাদা তো কিছু অঘটন করে রাখেনি? স্বরাজের আরো সন্দেহ হলো এই ভেবে যে, পীরজাদাকে এ তিন সপ্তাহ ধরে খুব কম দেখা যাচ্ছে, ঘরে টেলিফোন করে জবাব পাওয়া যাচ্ছে না, তার সমুখে পড়লে এড়িয়ে যাচ্ছে, কিছু জিগ্যেস করলে আমতা আমতা করছে, এবং রজনীর কথা সে একবারও জানতে চাইছে না। যে রজনীকে পীরজাদা নিজে এনে দিয়েছিল তার কাছে, রজনীর প্রসঙ্গে সেই পীরজাদারই পাথরের মতো নীরবতা লালা স্বরাজকে ভাবিয়ে তুলেছিল। সরাসরি সে রজনীকে জিগ্যেস করে বসল, পীরজাদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল?
রজনী আয়নার সমুখ থেকে প্রসাধন শেষ করে তার কাছে এসে বলল, না না, উনি কি বলবেন? ওঁর মত মানুষ হয় না। কেউ আমাকে কিছু বলে নি।
চিন্তিত হয়ে বসে রইলো লালা স্বরাজ। রজনীর জন্যে কী করা যেতে পারে ভাবতে ভাবতে কখন তার কপালে কুঞ্চন রেখা জেগে উঠেছে তা সে নিজেও জানে না। সেটা চোখে পড়ল রজনীর। সে বুঝলো তার চলে যাওয়ার কথা শুনে স্বরাজ হয়ত ভাবছে, এ তাকে এড়িয়ে যাওয়ার একটা ছল, সত্য কথার দ্ৰ পোশাক। তাই তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে সিগারেট নিয়ে অ্যাশট্রেতে নিবিয়ে দিল। লাইটারটা তুলে দিল। বলল, একটা কথা বললে এমন করে ভাবতে থাকেন, আমার আর কথা বলাই চলে না। আপনি বললে, এখানেই থাকব। ভাবছিলাম শুধু শুধু কত খরচ। সস্তা কোথাও হলে ঋণটা কমতো।
আজ সকালে রজনীর হোটেলের বিল সম্পূর্ণ শোধ করে দিয়েছিল সে। ইঙ্গিতটা তারই। লালা স্বরাজ উঠে দাঁড়িয়ে শুকনো গলায় বলল, তোমার মনটা আজ ভালো নেই রজনী। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনও মেঘে ভরে গেল। ঋণের কথা তুললে কেন?
রজনী শুনে অপ্রতিভ হলো। ডাইনিং হলের জন্য বেরিয়ে এলো দুজন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনস্থির করল স্বরাজ। এই মেয়েটার কোথায় যে কী কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না, কী করলে বোঝা যাবে তাও ঠাহর করতে পারছে না। সে বলল, রজনী, চলো আজ আমরা বাইরে যাই।
কেন, বাইরে কেন? সারাদিন তো বাইরেই কাটলো।
তাতে কী? জানো রজনী, করাচিতে রাতের একটা খুব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ আছে, ভারী সুন্দর, এখন তোমাকে বলব না, চলো আজ দেখাবো। অনেকদিন আগে একদিন অধিক রাত্তিরে মোটরে করে আসতে আসতে আবিষ্কার করেছিলাম। কাজ করে ফিরছিলাম।
তার কথার ধ্বনিতে শিশুর মতো এক আগ্রহ রণিয়ে উঠলো। ছড়িয়ে পড়ল তা রজনীর মধ্যে। উজ্জ্বল চোখে সে বলল, কী সুন্দর হবে! না?
বীচ লাক্সারিতে বসে খেলো ওরা। দূরে সমুদ্রের গর্জন পৃথিবীর আলো কোলাহলের মধ্য দিয়ে অবিরাম পার হতে হতে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে এসে ভেঙে পড়ছে তাদের চারধারে। সমুদ্রের তীরে এখানে ওখানে গাছপালার ভেতর দিয়ে একটা দুটো করে বাতি জ্বলছে। নোনা হাওয়া দিচ্ছে মুখের পর।
হঠাৎ কাঁটা রেখে স্বরাজ শুধালো, তোমার গলার হার কই?
গলায় অজান্তে হাত ওঠালো রজনী। পরক্ষণে সে নামিয়ে নিল। মৃদু গলায় বলল, খুলে রেখেছি।
অলংকার তোমার ভালো লাগে না?
এইতো ভালো।
রজনীর লাজুক উত্তরটা মধুর লাগলো তার কাছে। চারদিকের জলুস ভরা মুখরা মেয়েদের পাশে রজনীকে অনেক রমণীয় অনেক দীপ্তিময় মনে হচ্ছে। স্বরাজ বলল, এইতো সত্যি ভালো। তুমি আমার ভেতরটাকে এমন করে বদলে দিচ্ছ রজনী, মনে হচ্ছে এতকাল যা জানতাম, বুঝতাম, সব মিথ্যে। আমি কিছু দেখিনি, বুঝিনি—- তোমার মধ্যে নতুন করে সব দেখলাম, বুঝলাম।
মনে মনে শিউরে উঠল রজনী। তার হারের ইতিহাস যদি কোন রকমে টের পায় স্বরাজ, প্রলয় কাণ্ড হয়ে যাবে।
সেখান থেকে বেরিয়ে ট্যাসি নিল ওরা। ড্রাইভারকে স্বরাজ বলল, গুরু মন্দিরের দিকে চলো।
পেছনের সিটে গা ঘেসে বসল দুজন। মুখের পর এই আলো এসে পড়ছে, ঐ পড়ছে না; একটা মোড়ে এসে অনেকক্ষণ দাঁড়াচ্ছে, তখন মাথার উপর বিজ্ঞাপন বাতি থেকে লাল–সবুজ আলো পালা করে রজনীকে ভিজিয়ে দিচ্ছে, দিচ্ছে না, দিচ্ছে—-যেন একটা বিরাট মঞ্চের পর নাটকের চরিত্রে সে; তিনটে মাকরানী জোয়ান হেঁটে যাচ্ছে অলস পায়ে, তাদের একজনের কাঁধে টিয়ে পাখি, পাখিটা চলার তালে তালে দুলে দুলে উঠছে, একটা বোরকা পরা মেয়ে রাস্তার মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছে ভূতের মতো; আরেকটা মোড়ে আণ্ডারগ্রাউন্ড করিডরের মুখে রেলিং ঘেরা ফাঁকা স্কোয়ারে শুয়ে আছে ভিখিরি ভবঘুরে; দুটো লোক খাঁটিয়া টেনে এনে বসে অন্ধকারে ফুকছে সিগারেট; দাঁড়ানো খালি স্কুটারে উঠলো এক পাঠান, ড্রাইভার হাত বাড়িয়ে মিটারের ফালগ নামিয়ে দিল; তাদের ট্যাকসি মোড় নিল, মোড় নিতে গিয়ে আরেকটা পাখিকে চকিতে পাশ কাটাতেই রজনী টাল সামলাতে পারল না। স্বরাজের কাঁধের ওপর তার শরীর গিয়ে পড়ল। কোথা দিয়ে কী হলো বুঝতে পারল না রজনী। তার মনে হলো স্বরাজ তাকে দুহাতে ধরে ফেলল। স্বরাজের ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ঝংকৃত হয়ে উঠল রজনীর গাত্র সুবাস।
ঠোঁট থেকে ঠোঁট বিচ্ছিন্ন করে রজনী তার কাঁধের পর মুখ রেখে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলল। স্বরাজ বাহু দিয়ে তাকে বেষ্টিত করে কোনো কথা না বলে তাকিয়ে রইলো দ্রুত অপসৃয়মাণ দালান ল্যাম্পপোস্ট ফুটপাথের দিকে। যেন তারা ঝড়ের মধ্য দিয়ে অতি নিরাপদে একটা জাহাজে চড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে।
ডানে, ডান দিকে যাও।
রজনী চোখ বুজে শুনলো স্বরাজ তাদের ট্যাসিকে থেকে থেকে নির্দেশ দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর রজনীকে জড়ো করে তুলে সে বলল, দ্যাখো।
রজনী তাকিয়ে দেখে তারা চওড়া নির্জন রাস্তা দিয়ে দুধারে অগুনতি প্রাসাদের মতো বাড়ি ফেলে ছুটে চলেছে। আকাশে অনেক তারা উঠেছে। স্বরাজ বলল, এটা হচ্ছে শহিদ—এ–মিল্লাত রোড, বন্দর রোড থেকে ড্রিগ রোডে গিয়ে পড়েছে। সমুখে দ্যাখো, যা তোমাকে দেখাবো বলেছিলাম, আসছে।
পাথরের উঁচু নিচু অসমতল কেটে গড়ে উঠেছে সারাটা এলাকা। ট্যাসি ছুটছে বাতাস কেটে। দৃশ্যপটের মতো তারায় ভরা আকাশ নেবে এসেছে উইণ্ডস্ক্রীন ভরে। দুদিকে অন্ধকার। যেন সোজা ছুটে চলেছে তাদের ট্যাকসি ঐ তারার দিকে।
স্বরাজ বলল, ঐ রজনী।
ঠিক সেই মুহূর্তে অপসারিত হলো আকাশ; ঘটলো ইন্দ্রজাল; নক্ষত্রের বদলে উইণ্ডস্ক্রীনের ভেতর দিয়ে দেখা গেল পায়ের নিচে আলো জ্বলা এক শহর ছবির মতো অপরূপ বিছিয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়া শিবিরের মতো দেখাচ্ছে। আসলে এতক্ষণ তারা যে সমতল ধরে আসছিল তা এখানে এসে হঠাৎ ঢালু হয়েছে। পাহাড়ের গা বেয়ে বানানো পথ দিয়ে নামছে তারা। সে পাহাড়ের গায়ে গায়ে উঠেছে দালান, একেবারে দূরে নিচে ঐ সানুদেশ অবধি। যেন জাদুবলে গুহার দরোজা খুলে সঞ্চিত বিক্ষিপ্ত হীরক–ঐশ্বর্যের মধ্যে গিয়ে পড়েছে তারা। যেন একটা রুদ্ধ দুয়ার কার পরশে মন্ত্রবলে গেছে খুলে। এই বিশাল দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে রজনীর হৃদয় প্রথম হলো স্তম্ভিত। পরে মনে হলো তার ভেতরটা এত বিশাল হয়ে উঠেছে যে সমস্ত পৃথিবীর, জীবনের সব ভালো–মন্দ, জয়–পরাজয়, করুণা–প্রীতি, তুচ্ছ–মহৎ সব কিছুর স্থান হবে সেখানে।
স্বরাজ বলল, এই পথটার এরূপ প্রথম যে রাতে দেখলাম, আমার ভেতরটা এত বদলে গেল, তার এক কণাও বলে বোঝাতে পারব না। মনে হলো, আমি সব পেয়েছি। আমার দুঃখ নেই, মালিন্য নেই, স্বার্থের আর্তনাদ আমার তুচ্ছ, জীবনের বিচিত্র বিরাট আমার সমুখে। যেন আমার নতুন জন্ম হলো। এমন করে আর কখনো কারু জন্ম হয়নি। যেন আমার তীর্থে আমি পৌঁছেছি। আমার ধর্মে প্রভু জেসাস যে শান্তিময় পৃথিবীর প্রতিজ্ঞা বারবার করে গেছেন, মনে হলো সে পৃথিবী আমার পায়ের নিচে, একেবারে হাতের কাছে। মনে হলো হাত বাড়িয়ে গেলেই ছুঁতে পারবো। মনে হলো, প্রতিটি দীপ আমার জন্যে জ্বলছে। মনে হলো, প্রতিটি ঘর আমার ঘর।
লালা স্বরাজের এ রূপ আগে দেখেনি রজনী। একেবাবে অন্তর থেকে হেঁকে তোলা একটা অনুভূতিকে এত কাছে থেকে এর আগে প্রত্যক্ষ করেনি সে। যেন তার হৃদয়ের মধ্যে মুখ রেখে ফিসফিস করে কথা বলছে স্বরাজ। তার সঙ্গে এতটুকু দূরত্ব নেই আর। চন্দনে কুসুমে কখন ভাগ করে নিয়েছে স্বর্গের সোনা।
স্বরাজ তার কণ্ঠের পরে হাত রেখে বলল, তুমি আমাকে বিয়ে করবে রজনী?
.
বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ে। সে রাতের একদিন পরেই। এত তাড়াতাড়ি কিছু ছিল না, কিন্তু রজনীর প্রয়োজন ছিল। তার ভয় হচ্ছিল আবার যে কোনদিন মহসিনের আবির্ভাব ঘটতে পারে।
বিয়ের পরই তারা চলে যাবে এ হোটেল থেকে। বাসা নেবে। রজনী তার সংসার সৃষ্টি করবে। বৃহস্পতিবার সকালে কোর্টে বিয়ে হয়ে গেলে পর তারা আর ফিরবে না হোটেলে। এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কটেজ আছে হকস বে’তে। সেখানে হবে তাদের মধুচন্দ্রিমা।
মাঝের এই একটা দিন স্বপ্নের মধ্যে কেটেছে রজনীর। এ দিনটা সে ইচ্ছে করেই দেখা করেনি লালা স্বরাজের সঙ্গে। এটা তাদের বোঝাঁপড়া হয়ে ছিলো যে, এ দিনটা আর দেখা হবে না। স্বরাজ নেবে ছুটি, নিজেকে সে প্রস্তুত করবে। আর রজনী থাকবে তার কামরায় একাকী, সেখানে সে বিশ্রাম নেবে—-আত্মার, শরীরের। দুজনের কাছেই ভারী ভালো লাগছিল এই সিদ্ধান্তটা। যেন একটা দিন দূরে থেকে, অদর্শনের মধ্য দিয়ে, পরস্পরের জন্যে অধীরতাটুকু আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছুবে।
সারাটা বুধবার শান্ত সুন্দর হয়ে রইলো রজনীর অন্তর। প্রচুর অবসর যেন তার হাতে, শ্রীমণ্ডিত নির্ভর যেন তার সমুখে, রাণীর ঐশ্বর্য তার দুহাতের মধ্যে। সকালে উঠে অনেকক্ষণ শুয়ে রইলো সে বিছানায়। কতদিন পরে গান গাইতে ইচ্ছে করল তার। ছোটবেলায় মার। মুখে গুনগুন করতে শোনা সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা মনে পড়ে মনের মধ্যে রণিয়ে রণিয়ে উঠতে লাগল তার সুর। উঠে এসে সোফার ওপর উপুড় হয়ে অপটু গলায় অনেকক্ষণ ধরে সেটা গাইলো। শুয়ে শুয়ে খেলো ব্রেকফাস্ট। তারপর জানালা। খুলে পায়ের নিচে উজ্জ্বল ব্যস্ত শহর দেখল। পাম গাছের দীর্ঘ ছায়া খাটো হতে হতে একেবারে শেকড়ের চারপাশে এসে যখন বন্দি হলো তখন নাইতে গেল রজনী। নেয়ে উঠে নতুন স্নিগ্ধতায় ভরে উঠলো মন। দেহ থেকে প্রসাধনীর মৃদু সুবাসে আচ্ছন্ন হয়ে রইলো ইন্দ্রিয়।
বিকেলে আবার গিয়ে দাঁড়াল জানালার পারে। কোথাও বেরুবে না, তবু প্রসাধিত সজ্জিত করল নিজেকে। কাল সকাল দশটার এখনো অনেক বাকি। তবু কাল কিভাবে সজ্জা করবে, কেমন করে বেরুবে এই ভাবনা ভাবতে বসলো তার মন।