উমেশবাবু স্বয়ং কোনো কাজ করেন না, বড় ছেলেই সব দেখে শোনে, তবে ছেলে এমন যে বাবার মত ছাড়া এক পা চলে না। বর্তমান যুগেও পিতা হিসেবে উমেশবাবুর গর্ব করার মতো তার ছেলেরা। গিন্নিও নিজের পূজা পার্বণ নিয়ে থাকেন ওদিকে বড়বৌ সব দেখাশোনা করে কিন্তু মাধুরীর বিয়ের কথাটা উমেশবাবুকে আর গিন্নিকে ভাবতে হয়।
মেয়ে বড় হয়েছে, এবার যোগ্যপাত্রে তাকে সম্প্রদান করা দরকার। কুমার নৃপেন্দ্র নারায়ণ অবশ্য বাড়িতে আসেন পাত্র হিসাবে যতেষ্ট যোগ্যতা তার। কিন্তু মাধুরী তার কাছে ঘেঁষে না অতএব উমেশবাবু ও কথা ভাববেন না। হঠাৎ সেদিন অন্য একটি ছেলে এল ছেলেটি যতীনের বন্ধু নাম সুশীল বড় লোকের ছেলে এম. এ. পাস, ভালো গাইতে পারে। মাঝে মাঝে আসে এখানে গান গায় ব্রিজ খেলে। হঠাৎ এলো সে বিকাল বেলা। কুশলাদি প্রশ্নের পর রতীন তাকে নিয়ে বসলো নিজের গান বাজনার ঘরটায়। মহেন্দ্র বাড়ি নাই, কোথায় গেছে কে জানে, অতএব মেজবৌদি, মেজদা রতীন আর সুশীল ব্রীজ খেলতে বসলো সন্ধ্যার পর গান হবে। খেলা চলছে, অকস্মাৎ মাধুরী এসে ঢুকলো বৈকালিক প্রসাধন সেরে! চা দেবে সকলকে। সুশীল তাকে দেখে নমস্কার জানিয়ে বলল……..
: তাস আর খেলা চলে না, এবার মাধুরী দেবী একটা গান শোনান।
ফরমাস করলেই আমি গাইতে পারি নে, অত সস্তা গলা নেই আমার, চা খাবেন তো আসুন সবাই এই বারান্দায় বলে সে ওদিকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল চায়ের সরঞ্জাম সমেত চাকরটাকে নিয়ে।
বেশ, চা খেতে খেতে গানের মুড আসবে তো? বলতে বলতে ওরা এলো বারান্দায়।
: আমার গান হুড চাপা আছে ও এখন খুলবে না এখানে হুড মানে হড়পী, যাতে সাপ থাকে ওকে তুবড়ী বাজিয়ে খুলতে হয়, আসুন, চা খান। এখানে আছে গোখরা সাপ বলে চা ঢেলে চলে যাচ্ছে, বড়দা এসে ঢুকলো বললো–
আমায় এক কাপ দে ছোটদি।
: দিই মাধুরী কোমল হয়ে উঠল। বড়দাকে সে অত্যন্ত ভক্তি করে, বললো আজ দমদমার বাগানটা দেখে এলাম বড়দা, ওখানে একটা গোশালা করলে হয় না? আমি না হয় দেখবো?
: গো শালা? কেন রে?
: দেশে বিস্তর গরু, রাখবার জায়গা নেই আমি কতকগুলো রাখতাম।
: বিস্তর গরু কোথায়? গরুরই অভাব বাংলাদেশে।
না বড়দা গরু অনেক আছে, তবে সেগুলো দুধ দেয় না ওদের খোয়াড়ে পুড়ে ভালো করে খাওয়াতে হবে!
চা দিয়ে গেল মাধুরী। ওর কথা কেউ ধর্তেব্যের মধ্যে আনে না তাই রক্ষে নইলে সুশীল হয়তো অপমান বোধ করতো তথাপি সে লাল হয়ে উঠলো মাধুরীর ছেলে মানুষ রসিকতায়। কিন্তু কিছু করবার নেই। মাধুরীর কথা বরাবরই এমনি কাউকে সে খাতির করে না।
মেজবৌদি উঠে গেল ভেতরে, মাধুরীকে ধরলো এসে মাঝ পথে বললো শোন ছোটদি, সুশীলকে গরু বানিয়ে ছাড়লি তুই।
: গরু খুব দামী জানোয়ার ওর অহঙ্কার হওয়া উচিত ওকে তো সম্মান করলাম।
: হ্যাঁ গাধা বলিসনি, এই ঢের।
মেজবৌদির পিছনে মেঝদা মাধুরীর কথাটা শুনতে পেলো কঠিন ভাবে বললো মানুষকে অত হতশ্রদ্ধা কেন করিস মাধুরী।
: ও মা, হতশ্রদ্ধা কই করলুম। গরু আমাদের পূজোর দেবতা, যজ্ঞের বলি, ওর গোবর অবধি মাথায় রাখি।
কথাগুলো এমন গভীর ভাবে বললো মাধুরী মেজদা, মেজবৌদি দুইজনেই হেসে ফেললো। অতঃপর হাসি সামলে মেজদা বললো
: বাড়িতে অতিথি এলে তাকে সম্মান করতে হবে বোনটি, এখন বড় হয়েছিস। উনি অতিথি নাকি? আমি ভেবেছিলাম আপনার লোক। তাহলে মাফ চাইছি গিয়ে বলে সটান ফিরে এসে সুশীলকে বললো।
: শুনুন সুশীলবাবু, আমি আপনার সঙ্গে রসিকতা করছিলাম আপনার লোক মনে করে, কিন্তু মেজদা বললেন, আপনি শুধু অতিথি, তাই ক্ষমা চাইতে এলাম, কিছু মনে করবেন না, বলেই চলে গেল।
: অবস্থাটা কিভাবে এনে কোথায় ঘোরাল, ভালো করে কেউ অনুভব করবার পূর্বেই সুশীল বললো, ওতো ঐ রকমই বলে, আপনি আবার ওকে ধমকাতে গেলেন কেন মেজদা। হাসি ফুটল সুশীলের মুখে, অর্থাৎ মাধুরী তাকে আপনার লোক ভেবে রসিকতা করেছে এটা সে বুঝে আনন্দ পাচ্ছে, বড়দা চা খেতে খেতে শুনলো সব, উঠে গেল ভেতরে। মাধুরী মার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে।
বড়দা এসে ওর পিঠে হাত দিয়ে বললো—
লক্ষী দিদি সুশীলকে তোর কি রকম লাগে বল তো?
উনি অতিশয় ভাল ছেলে।
: অতিশয় কথাটা কেন বললি?
: মানে রূপে, গুণে, কুলে শীলে, আভিজাত্যে অহঙ্কারে আর—
: আর কি কি?
: আর মাধুরী আমতা আমতা করে আর তোমার এই বোনটিকে ক্যাপটিভিট করবার ক্যাঙালপনায়, বলেই বড়দার কোল ঘেঁষে দাঁড়ালো। তুমি আমাকে একটা অপদার্থ ধনীর ঘরের পুতুল সাজাতে ছাইছ বড়দা, বাপের টাকার সুট পরে ব্রীজ খেলতে এলেই মানুষ মহাপুরুষ হয় না, এম. এ. পাস করলেও চতুর্ভুজ হয় না। ওই তুলতুলে ননীর শরীর দিয়ে কুটোটি কাটবার যার শক্তি নেই, তাকে বিয়ে করে খাঁচায় পুরে রাখবার মত খাঁচা আমি পাই কোথা বড়দা, তুমি আমাকে ও কথা বল না।
: না না, তোর যাকে ইচ্ছে বিয়ে করবি, না হয় না করবি। বড়দা ওর মাথায় সস্নেহে হাত বুলাতে লাগলো।
বড়বৌদি বললো বিয়ে তোকে এবার করতেই হবে মাধু সুশীল হোক আর দুঃশাসন আমায় তোমরা তাড়াতে চাও বৌদি। মাধুরী অভিমান ভরে বললো কথাগুলো।
: আর না বড়দা বললে করবে না ও বিয়ে কি তার বয়ে যাবে? একটা মাত্র বোন ওর যা খুশি করবে কারো কিছু বলবার নেই তোমাদের। বলে বড়দা ওকে আরো কাছে টেনে আদর করে বললে, যেমন ইচ্ছে থাক, যখন খুশি যাকে খুশি বিয়ে করবি বলে বড়দা চলে গেল।
: কেমন হল। মাধুরী বড়বৌদির পানে চেয়ে বিদ্রূপ করলো।
: আচ্ছা দেখা যাবে বিয়ে না করে কদিন থাকতে পারিস। দাদাদের আদুরে বোন হয়ে চিরকাল চলে নারে ছোটদী, মেয়েদের দরকার সবল আশ্রয়।
: সেটা তোমার মত লতার জন্যে।
: আ তুই কি বনস্পতি শালবৃক্ষ নাকি।
: শাল না হতে পারি কোন আশ্রয় দরকার হবে না, আমি শালও নই, শৈবালও নই। আমি শ্মশানবাসিনী শ্যামা, বুঝলে?
বেশ তো, বৌদি হেসে বললো শিবঠাকুরটি এলেই তো হয়।
: আমার শিবঠাকুর ‘আসেন না তিনি নেশা করে শ্মশানে পড়ে থাকেন তাকে পেতে হলে সাধনা করতে হয়।
আচ্ছা দেখা যাবে তুই কি রকম সাধনা করিস।
দেখবে দেখিয়ে দেব।
হাসি আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল মাধুরীর মুখে। কিন্তু এখানে আর দাঁড়ানো চলে না কেমন যেন লজ্জা করছে। চলে এল রায় বাড়িতে। সন্ধ্যায় গানের আসর বসবার আয়োজন করছে ছোটদা, মাধুরী তফাৎ থেকে দেখেই সরে পড়লো সুশীলবাবুর দিকে সে আর যেতে চায় না, লন এ মেজবৌদি খেলা আরম্ভ করেছে, অতএব ওখানে যেতে ইচ্ছে নেই, বড়দার অফিসে এল। টাইপে বসা মেমসাহেব ওকে দেখে গুড আফটারনুন জানিয়ে বাংলাতেই বললো আজকাল ছোটদির দেখা পাওয়া যায় না খুব ব্যস্ত আছেন বুঝি?
: না, ব্যস্ত কিসের, মাধুরী বললো জবাবে আজকাল তুমি মহীনদের সঙ্গে গল্প কর কিনা, তাই আমি আসি না তোমাদের গল্পে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনা।
: মহীনদা। না, উনি গল্পতো করেন না। নিদারুণ কাজের লোক বলে একটু হাসলেন। মেমসাহেব বয়সের তুলনায় বড়ো। নো রোমান্স ইন হিম।
: তুমি মেমসাহেব একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর গাধা, প্রথম হলেও কথা ছিল।
: কেন? মেমসাহেবের চোখে হাসি ফুটে উঠলো।
মহীনদাকে তুমি কি বুঝবে। আমাকেই সাতঘাটের পানি খেতে হয়। ওর রোমান্স শাড়ি ব্লাউজ সেণ্ডেলের কাছে ঘেঁষে যায় না হাইহিল রুজ লিপস্টিকেও না, ওর প্রেম অন্তরের গভীরে ঝঙ্কার তোলে যে আঁধার পাথরতলে রাজকন্যা রূপোর কাঠির ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে আছে?
বুঝতে পারলাম না ছোটদি বলে মেমসাহেব হাসলো।
: থাকগে ও তোমার না বুঝলেও চলবে আচ্ছা, চলোম।
মাধুরী চলে এলো ওখান থেকে। মহীন এখানো ফেরেনি। গেল কোথা? গল্পটা দিতে গেছে হয়তো, কিম্বা নতুন কোন প্লট খুঁজতে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। কোথায় কোন বাবা কাকা তার শিশুর জন্য লাটিম খুঁজে ফিরছে তার গল্প কিন্তু এতো করুণ এতা অপরূপ! এই অতি তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ভাল সাহিত্য সৃষ্টি হয়? আশ্চর্য মাধুরী আপন মনে গুঞ্জন করলো।
তুমি কেমন করে কর হে গুণী।
আমি অবাক হয়ে
শুনি, কেবল শুনি।
আসেন মহেন্দ্ৰ মুখোনা হাসিতে উজ্জ্বল। জুতোটা খুলতে খুলতে মাধুরী বললো ব্যাপার কি? অত খুশি খুশি।
: আন্দাজ করো।
: নতুন গল্প বেরিয়েছে?
: না।
: নতুন প্লট?
: না।
: তাহলে কোথাও কিছু টাকা পেয়ে থোকনের জন্য কিছু কিনেছ?
: তা নয় চাকর বনে এলেম।
: মানে চাকুরি পেয়েছে। কোথায়? কি চাকুরি?
: চাকরি পেলাম একটা সওদাগরী অফিসে। ওদের সাপ্লাই এর কাজ মাইনে ষাট টাকা।
: মাত্র ষাট। ওতে কি হবে?
: হয়ে যাবে। মাগগি ভাতা ইত্যাদি শ’খানেক চালিয়ে দেব কোন রকমে। এককাপ চা দাও মাধু, দাদাকে একখানা চিঠি লিখে দেই সুসংবাদ দিয়ে।
: এইটা নাকি সুসংবাদ। এতো আত্মহত্যার সামিল। মাধুরীর কণ্ঠে রুদ্ধ ক্রন্দন যেন।
: না এটা আত্মাকে আবিষ্কার করার সাধনা। আপনাকে খুঁজে পাওয়ার যোগাসন যেখানে
আমি সত্যিকার সেখানেই আমায় যেতে দাও মাধুরী।
: যাবে। মাধুরীর কণ্ঠ মলিন। ঐ সাধনা পীঠে সমাধি যেন না হয়।
: হবে না তো কি হবে।
: না। তীক্ষ্ণ তীব্র প্রতিবাদে মাধুরী, ও তোমার যাওয়া নয় বদরীকা যাবার পথে ওটা চটি মাত্র এ আমি জানি, জানি–
চলে গেল মাধুরী, মহেন্দ্র পোস্টকার্ড আর কলম নিয়ে বসেই রইল অনেকক্ষণ। চাকর দিয়ে চা খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে মাধুরী নিজে সে এল না। ও ঘরে ছোট দার গানের আসর চলছে, হয়তো মাধুরী সেখানে আছে মহেন্দ্র চিঠি লিখে ডাকে দেবার ব্যবস্থা করে চাকুরি পাওয়ার খবরটা উমেশবাবুকে দিল গিয়ে! বৃদ্ধ খুব খুশি হলেন না, কিন্তু মহীন বললো আপাততঃ এইটা ধরা যাক, মেসও সে একটা ঠিক করে এসেছে শ্রীগোপাল মল্লিক লেনে চিলেকোঠার একটি ঘর। সকালেই সেখানে চলে যাবে। বড়দা এবং বড়বৌদিও কথাটা শুনলো। বড়দা হয়তো কিছু বলতো কিন্তু বড়বৌদি চোখ ইসারা করে তাকে থামিয়ে দিল।
নিজের ঘরে এসে মহীন লিখতে বসলো একটা গল্প। মাধুরীরর সঙ্গে ওর আর দেখা হয়নি কে জানে, কোথায় আছে। কিন্তু গল্পটা আর ভাল হচ্ছে না। ভাব ভাষা সব কেমন আড়ষ্ট বোধ হচ্ছে চাকরি পাওয়ার আনন্দটা নাকি। হবে, সাহিত্য দুঃখের আনন্দময় প্রকাশ, বেদনার অনুভূতি মুর্ত না হলে সাক্ষাৎ মেলেনা, মহেন্দ্ৰ কাগজ কলম গুটিয়ে পড়তে বসলো রবীন্দ্রনাথ। বড়দৌদি এসে ঢুকলো, বললো, এখানকার ভাত বিস্বাদ লাগছে ঠাকুরপো। এত তাড়াতাড়ি নাই মেসে গেলে। অফিসটা এখান থেকে করলে কি ক্ষতি ছিল?
এখানে থেকে অভ্যাসটা আর খারাপ করতে চাই না বৌদি। যেতেই যখন হবে–
: যেতেই হবে, এমন কথা ভাবছো ঠাকুরপো?
: মানুষকে ঘোয়া ভরে আকাশে তোলা যায় বৌদি, কিন্তু তার ঠাই আকাশে মানুষের বুদ্ধি থাকলে সে আকাশে উড়তো না?
: মানুষ আকশে উঠে আমাদের কিছু আনন্দ তো দেয় ঠাকুরপো।
: হ্যাঁ দেয়, কিন্তু তার নিজের সর্বনাশ করে, অঙ্গ জলে যায় আগুনে, বৌদি যার যেখানে ঠাই তাকে সেখানেই যেতে দিন।
: আমি জানি ঠাকুরপো কেন তুমি যেতে চাও, তোমার মতন বুদ্ধিমান ছেলে আমি জীবনে দেখিনি, কিন্তু আগুন যখন লাগে তখন পালিয়ে যেতে নেই, জল ঢেলে তাকে নিভাতে। হয়।
: হ্যাঁ বৌদি। কিন্তু আগুন না হয়ে ভূমিকম্প হলে পালিয়ে যাওয়াই বিধি।
: কথায় আমি পারবো না ঠাকুরপো। আমার অত বিদ্যে বুদ্ধি নেই, কিন্তু তোমার এ বাড়ি ছেড়ে না গেলেই ভাল হত।
: কেন বৌদি? মহন্দ্রে সাগ্রহে প্রশ্ন করলো।
বৌদি চলে গেল। মহেন্দ্র ওপরে গিয়ে খেয়ে এল। মাধুরী ছিল না ওখানে। ওর কলেজ খুলেছে পড়াশুনা করছে হয়তো। খেয়ে এসে মহেন্দ্র শুলো। সকালে উঠে চা খেয়ে যাবার আয়োজন করতে গিয়ে দেখলো মাধুরী কোত্থেকে একসেট বিছানা বালিশ একটা সুটকেস একটিন মাখন যোগাড় করে মহেন্দ্রের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। সে যেতেই বললো, তোমার মেসের নম্বরটা কত? আমার মাঝে মাঝে তো যেতে হবে সেখানে।
: যাবে বৈকি। বলে মহেন্দ্র নম্বরটা বলে দিল।
: শনি রবিবার এখানে আসবে তো?
: হ্যাঁ তা তো আসবোই।
সব গোছগাছ করে মাধুরী ক্লান্ত মুখ মুছে বললো, মাখন একটু করে খাবে দু’বেলা। কিসে যাবে ট্যাক্সিতে?
: না রিক্সাতে।
আচ্ছা, ওরে কেষ্ট একটা রিক্সা ডাক।
মহেন্দ্র ইতিমধ্যে উমেশবাবু এবং গিন্নীকে প্রণাম করে এল। এসে দেখলো রিকসায় তার বিছানাপত্র তুলে মাধুরী হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বললো ওদের অফিসে ফোন আছে?
হ্যাঁ, বলে মহীন রিক্সাতে উঠলো।
আচ্ছা এসো তাহলে। মাধুরী একটা প্রণাম পর্যন্ত করলো না মহেন্দ্রকে।
উঠতে দেরী হয়েছে খোকনের আজ। কাল অনেক রাত পর্যন্ত গান শিখে ছিল। আজকাল বাড়িতেই গানের আসর হয়, শেখবার কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু বাবা নিজে শেখাচ্ছেন না, যদু কাকা শেখায় এতে খোকনের মন ভরে না। যন্ত্রগুলো প্রায় সব সারানো হয়েছে, বাকি আছে শুধু খোল আর অতি পুরাতন এককানা সেতার ঘেরাটোপের মধ্যে বন্দি হয়ে একধারে পড়ে আছে সেটা। খোলটা নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় বলে সারায়নি, আজও। সেতার খান দেননি দেবেন্দ্র সারাতে। ঐ সেতারটি ওর বাবা ক্ষেত্ৰনাথ বাজাতেন, দেবেন্দ্র বাজিয়েছেন এবং মহেন্দ্রও ওতেই শিখেছে। ওতে পরের দানের স্পর্শ দেবেন্দ্র ঘটাবেন না বলে লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু গ্রামের লোকেরা একটা হারমোনিয়াম এনেছে, বেহালা আর দুটো ফুট বাঁশি যে ক’দিন এখানে গান বাজনা চলেছে তার মধ্যে দেবেন্দ্র কোন যন্ত্র কোনদিন স্পর্শ করেন নি, যতটুকু সম্ভব মুখে বলেন, কিম্বা চুপ করে বসে শোনেন তাদের সঙ্গীত চর্চা।
: মানুষকে ঘোয়া ভরে আকাশে তোলা যায় বৌদি, কিন্তু তার ঠাই আকাশে নয়, মানুষের বুদ্ধি থাকলে সে আকাশে উড়তো না?
: মানুষ আকশে উঠে আমাদের কিছু আনন্দ তো দেয় ঠাকুরপো।
: হ্যাঁ দেয়, কিন্তু তার নিজের সর্বনাশ করে, অঙ্গ জলে যায় আগুনে, বৌদি যার যেখানে ঠাই তাকে সেখানেই যেতে দিন।
: আমি জানি ঠাকুরপো কেন তুমি যেতে চাও, তোমার মতন বুদ্ধিমান ছেলে আমি জীবনে দেখিনি, কিন্তু আগুন যখন লাগে তখন পালিয়ে যেতে নেই, জল ঢেলে তাকে নিভাতে হয়।
: হ্যাঁ বৌদি। কিন্তু আগুন না হয়ে ভূমিকম্প হলে পালিয়ে যাওয়াই বিধি।
: কথায় আমি পারবো না ঠাকুরপো। আমার অত বিদ্যে বুদ্ধি নেই, কিন্তু তোমার এ বাড়ি ছেড়ে না গেলেই ভাল হত।
: কেন বৌদি? মহন্দ্রে সাগ্রহে প্রশ্ন করলো।
বৌদি চলে গেল। মহেন্দ্র ওপরে গিয়ে খেয়ে এল। মাধুরী ছিল না ওখানে। ওর কলেজ খুলেছে পড়াশুনা করছে হয়তো। খেয়ে এসে মহেন্দ্র শুলো। সকালে উঠে চা খেয়ে যাবার আয়োজন করতে গিয়ে দেখলো মাধুরী কোত্থেকে একসেট বিছানা বালিশ একটা সুটকেস একটিন মাখন যোগাড় করে মহেন্দ্রের জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। সে যেতেই বললো, তোমার। মেসের নম্বরটা কত? আমার মাঝে মাঝে তো যেতে হবে সেখানে।
: যাবে বৈকি। বলে মহেন্দ্র নম্বরটা বলে দিল।
: শনি রবিবার এখানে আসবে তো?
: হ্যাঁ তা তো আসবোই।
সব গোছগাছ করে মাধুরী ক্লান্ত মুখ মুছে বললো, মাখন একটু করে খাবে দু’বেলা। কিসে যাবে ট্যাক্সিতে?
: না রিক্সাতে।
আচ্ছা, ওরে কেষ্ট একটা রিক্সা ডাক।
মহেন্দ্র ইতিমধ্যে উমেশবাবু এবং গিন্নীকে প্রণাম করে এল। এসে দেখলো রিকসায় তার বিছানাপত্র তুলে মাধুরী হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বললো ওদের অফিসে ফোন আছে?
হ্যাঁ, বলে মহীন রিক্সাতে উঠলো।
আচ্ছা এসো তাহলে। মাধুরী একটা প্রণাম পর্যন্ত করলো না মহেন্দ্রকে।
উঠতে দেরী হয়েছে খোকনের আজ। কাল অনেক রাত পর্যন্ত গান শিখে ছিল। আজকাল বাড়িতেই গানের আসর হয়, শেখবার কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু বাবা নিজে শেখাচ্ছেন না, যদু কাকা শেখায় এতে খোকনের মন ভরে না। যন্ত্রগুলো প্রায় সব সারানো হয়েছে, বাকি আছে শুধু খোল আর অতি পুরাতন এককানা সেতার ঘেরাটোপের মধ্যে বন্দি হয়ে একধারে পড়ে আছে সেটা। খোলটা নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় বলে সারায়নি, আজও সেতার খান দেননি দেবেন্দ্র সারাতে। ঐ সেতার ওর বাবা ক্ষেত্ৰনাথ বাজাতেন, দেবেন্দ্র বাজিয়েছেন এবং মহেন্দ্রও ওতেই শিখেছে। ওতে পরের দানের স্পর্শ দেবেন্দ্র ঘটাবেন না বলে লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু গ্রামের লোকেরা একটা হারমোনিয়াম এনেছে, বেহালা আর দুটো ফুট বাঁশি যে ক’দিন এখানে গান বাজনা চলেছে তার মধ্যে দেবেন্দ্র কোন যন্ত্র কোনদিন। স্পর্শ করেন নি, যতটুকু সম্ভব মুখে বলেন, কিম্বা চুপ করে বসে শোনেন তাদের সঙ্গীত চর্চা।
দুপুরে টোল বসে, খোকন তখন স্কুলে যায়, আজ তার উঠতে দেরী হয়েছে ভাল করে পড়া করা হোল না। ভাত খেয়ে স্কুলে চলে গেল, গিয়েই শুনলো কি একটি কারণে আজ ছুটি থাকবে। ওর জামা জুতো সোয়েটার, গত মাসে এসেছে সেই সব পরে স্কুলে যায়, বড় লোকের ছেলের মতোই দেখায় ওকে আজকাল, কিন্তু বাবা ঐ জামা জুতোগুলো পছন্দ করছে। না। বাড়ি ফিরে খোকন এগুলো খুলতে খুলতে মাকে বললো, আজ পড়াটা আগে করে নিবি তারপর গান শিখবি। হয়নি মা। ভাগ্যিস, ছুটি হয়ে গেল, না হলে বকুনী খেতাম।
: গানটা ওতো পড়ার মধ্যে মা, বাবা বলে গানের থেকে বড় বিদ্যে নেই।
: জ্যাঠামি রাখ, পড়া না শিখে যে গান শিখতে যায়, সে গাঁজা খায় তার পলাতে গাধাতে গান গায়, লোকে তার পিঠে দুমাদুম কাপড় কাঁচে। দে ওগুলো।
খোকনের ছাতা জামাজুতো গুছিয়ে রাখতে রাখতে অর্পণা আবার বলল, ভাল না হলে। কাকু বকবে এসে।
: হ্যাঁ মা পড়া তো ভালোই হচ্ছে, জাড় লাগছে, একটা গেঞ্জী টেঞ্জী দাও।
: দিই, অর্পনা একটা ছেঁড়া গেঞ্জী পরিয়ে দিচ্ছে খোকনকে। খোকন বলল, এটা ছেঁড়া মা। ঐটাই দাও না, বাবা তো আর দেখতে পাবেন না।
–ছিঃ খোকন। বাবা মার সঙ্গে লুকোচুরি করবি। মুখে সে বললো, কিন্তু অন্তর জুড়ে একটা বেদনার বাম্প উঠেছে। বললো–
: আর এমন কথা বলিস না কখনো।
: না মা, আর কখনো বলবো না মা, মা তুমি রাখ না, ওগুলো রেখে দাও, ও জামা, আমি পরবোই না, আর কাকু জামা আনলে পরবো মা–
: হ্যাঁ, কাকুর রোজগারের টাকাতে জামা কিনে দেব, কেমন?
হ্যাঁ মা, হ্যাঁ এ টাকা বুঝি, কাকু চেয়ে পাঠায়?
অর্পণার আহত দারিদ্র আবার আহত হোল, অসাধারণ সহ্যশক্তি তার। কিন্তু দুধের বালাক কিছুটা বোঝে না, বার বার সে তাই আঘাত করছে মায়ের অন্তরকে। অর্পনা একটু কঠোর স্বরে বললো–
: এ বংশের মানুষ না খেয়ে মরে তবু কারো কিছু চায় না, এই সত্যিটা শিখে রাখ, এমন কথা বলিসনে আর।
: না মা, আর বলবো না।
খোকন খালি গায়েই চলে গেল বাইরে, ছেঁড়া গেঞ্জীটা হাতে অর্পণা নিঃশব্দে বসে রইল খানিকক্ষণ, চোখে জল। ঠিক সেই সময় দেবেন্দ্রের বহু দিন না শোনা আনন্দময় কণ্ঠের আহ্বান এলো।
: অর্পণা ছুটে এসে, মহীন টাকা পাঠিয়েছে তার নিজের রোজগারের টাকা অর্পণা ঘেঁড়া গেঞ্জীটা হাতেই বাইরের ঘরে এসে দেখল সাগর পিওন চৌদ্দটা টাকা দিচ্ছে দেবেন্দ্রের হাতে। কুপনটা সাগর পড়েছে, তুমি আর একবার পড়তো অর্পণা। অর্পণা কুপনটা হাতে নিয়ে পড়লো?
শ্রীচরণেষু দাদা, আপনার চরণমুলে এই আমার প্রথম অর্ঘ্য এই টাকা কয়টি আপনার মহানের রোজগারের। অনন্ত প্রণাম গ্রহণ করবেন। মহীনের টাকাগুলো পরম আদরে বুকে চেপে অন্ধ দেবেন্দ্র অশ্রুপ্লাবিত চোখে ডাকলেন এই নাও, অর্পণা, দুহাত পেতে নাও বুকে করে নিয়ে লক্ষ্মীর হাঁড়িতে তোল। অর্পণার দু’চোখে জল, হাত পেতে টাকা নিয়ে নিঃশব্দে উঠে গেল। সাগর পিওন প্রতি মাসে পঞ্চাশটা করে টাকা এই বাড়ি দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনোদিন এতটুকু আনন্দের স্ফুরণ দেখেনি, আজ বিস্মিত হয়ে অন্ধ দেবেন্দ্রর অশ্রুসজল মুখোনা দেখতে দেখতে প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে গেল দেবেন্দ্র ডাকলেন, খোকন।
: যাই বাবা, খোকন খালি গায়ে এসে দাঁড়ালো।
: তোর দয়াল দাদাকে ডাক, বল বাবার সেতারটা সারিয়ে আনতে হবে, আর তোর একখানা মোটা জামা, যা ডেকে আনতো বাবা।
খোকন নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল, দেবেন্দ্রের চোখে জল, মুখে হাসি। ঘরটায় পায়চারী করতে লাগলেন, আপন মনে গাইছেন–
নিবিড় আঁধারে মা
তোর চমকে অরূপরাশি
তাই যোগ্য ধ্যান
ধরণে হয়ে গিরিগুহাবাসী
অনন্ত আঁধার কোলে
মহা নির্বাণ হিল্লোল,
চিরশান্তি পরিমল অবিরত যায় ভাসি—
দয়াল নিঃশব্দে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শুনেছে গানটা। সুরের অসাধারণত্ব ঘরের আকাশকে যেন স্নিগ্ধ করে তুলেছে দু’হাত জোড় করে দয়াল নমস্কার জানালো এই আত্মভোলা সুর সাধককে।
মেসে ঠাই পাওয়া খুবই শক্ত আজকাল, কিন্তু মহীনের সৌভাগ্য ওদের অফিসের বড়বাবু একটা মেসের মালিক। তিনিই মহীনকে জায়গা দিলেন, চিলেকোঠার পাশের ঘরটায়। ঘর নয়, একটা গুদাম তবে খোলা, আলো হাওয়া প্রচুর, মস্ত ছাদটা পড়ে রয়েছে। লেখবার সুবিধা হবে মহীনের। মেস বলতে যে নোংরা অন্ধকার আবাস বুঝায় এখানে উঠে এলে তা মনে হয় না। কিন্তু ঘরখানা অত্যন্ত ছোট মাত্র একটা জানালা, ছাদটা টালীর। ওতেই মাধুরির দেয়া তোষক, চাদর–বালিশ বিছিয়ে ফেললো মহেন্দ্র। বইগুলো একপাশে রাখলো খবরের কাগজ পেতে, অতঃপর তালা চাবি দিয়ে অফিসে গেল।
বড় অফিস, বহুলোক কাজ করে ভারতের নানাস্থানে এদের শাখা অফিস আছে। কাজের ক্ষমতা দেখাতে পারলে মহেন্দ্র যথেষ্ট উন্নতি করতে পারবে। এখানে কাজটি শুধু টাইপ করা, তার জন্য ওদের আরো লেডী টাইপিষ্ট আছে, মহেন্দ্রকে টাইপ তো করতেই হবে চিঠিপত্রের ব্যাপারে বড়বাবুকে সাহায্যও করতে হবে।
পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করলো মহেন্দ্র, শরীরটা কেমন যেন ক্লান্ত বোধ হচ্ছে হয়তো এক নাগাড়ে এতখানি খাটা অভ্যাস নেই অভ্যাস হয়ে যাবে ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরলো। ঘঁদের ঐ ঘরটায় আলো ছিল না, মিস্ত্রি ডেকে লাইন করিয়ে নিতে হবে, কিন্তু আজ আর। হয়ে উঠলো না মহেন্দ্র এক কাপ চা মাত্র খেয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
শীতে রাত সাড়ে নটার পূর্বে মেসে খাওয়া হবে না ততক্ষণ মহেন্দ্র শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো অন্ধকার ঘরে। আলো থাকলে কিন্তু লিখতে বা পড়তো। ভাবছে খোকনকে এই ঘরে এনে রাখবে তার কাছে, কাছের কোন স্কুলে ভর্তি করে দেবে। সকাল সন্ধ্যা নিজে পড়াবে আর গান শেখাবে। কিন্তু গান শেখাবে কি? যন্ত্র নেই। কিন্তু কেন? মহেন্দ্র কিনে নেবে একটা যাহোক কিছু যন্ত্র অথবা বাড়ি থেকে একটা এনে সারিয়ে দেবে। অপরের দেয়া যন্ত্রে কেন সে গান শেখাতে যাবে খোকনকে?
খিদে পেয়েছে, এতক্ষণ রান্না হল হয়তো, মহেন্দ্র উঠে এলো। আকাশ ভর্তি জ্যোৎস্না সুন্দর হয়ে উঠেছে, একটা বাঁশি পেলে বাজাতো মহেন্দ্র কিন্তু থাক সিঁড়ি দিয়ে নীচে এসে দেখলো বাবুরা খেতে বসেছে, ঘরে আর জায়গা নেই। নিরুপায় মহেন্দ্র পাশের ঘরে একজনের খাটে বসে রইল দ্বিতীয় ব্যাচ বসবার অপেক্ষায়। অতঃপর খেল, মেসের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলো এবং বড়বাবুকে জানালো যে, আলোটা আজও হয়নি। তারপর উপরে এসে শুলো। ক্লান্তিতে সর্বাঙ্গ ভেঙ্গে পড়ছে। এই গুদামটায় আগে যে সমস্ত জীব বাস করত তারা এতক্ষণ কোথায় ছিল, এসে উপদ্রপ আরম্ভ করেছে, এরা সংখ্যায় বহু। ইঁদুর এবং আরশোলা তো আছেই, একটা বিছাও দেখলো মহেন্দ্র মোমবাতির আলোতে। সর্বনাশ এ ঘরে কি করে শোয়া যায়। কিন্তু ওর অভ্যাস আছে। ওদের প্রাচীন বাড়ীতে বিছা ইঁদুর আরশোলা প্রচুর। মহেন্দ্র মশারীটা ভাল করে গুঁজে শুয়ে পড়লো ঘুমিয়ে গেল।
সকালে বড়বাবু ওর ঘরে আলো ঠিক করে সারিয়ে দিলেন এবং ঘরখানা ধুয়ে দিলেন। লেডি হিসাবে এটা কর্তব্য। তবে কোন শিল্পী নাকি এই ঘরে থাকতেন তিনি ক্লে মডডিং অর্থাৎ মাটির মূর্তি গড়তেন, ঘরের এক কুলঙ্গীতে তাঁর হাতের তৈরি একটি হরগৌরীর মূর্তি রয়েছে। চমৎকার মূর্তিটি শিবের বিশাল বক্ষে আশ্রিতা উমা যেন বিরাট আকাশের কোলে বনানীর বিরস্নিগ্ধ হরিদ্রাভা। মহেন্দ্র মূর্তিটি সযত্নে রেখে দিল। মেসের বাবুর সঙ্গে আলাপ এবং কয়েকজন সমবয়সীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হোল মহেন্দ্রের। অতঃপর ভালই চলেছে এবং চলতো কিন্তু তৃতীয় দিনে অফিসের টেলিফোনে ডাক পড়লো মাধুরী কথা বলছে, অন্য কোন কথা না বলে হুকুম করলো,
: আজ সন্ধ্যায় এখানে আসতে হবে।
: আমার ছুটি হতেই ছয়টা বেজে যায় মাধুরী, কখন যাব।
: আচ্ছা, আমি ছয়টার পর মেসে গাড়ী পাঠাব রাত্রে এখানেই খাবে।
ফোন ছেড়ে দিল মাধুরী যেন সম্রাজ্ঞীর আদেশ। কিন্তু মহেন্দ্র কেন জানিনা যেতে চায় , যথেষ্ট সাহায্য এই আড়াই মাস ওদের কাছ থেকে নিয়েছে সে, আর নয়। কিন্তু কোন সাহায্য সে নিচ্ছে না এ শুধু নিমন্ত্রণ। হয়তো বিশেষ কোন ব্যাপার আছে আজ ওখানে তাই যেতে হবে। মহেন্দ্র কয়েক মিনিট আগেই মেসে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে তৈরী হচ্ছে। মেসের গলিতে গাড়ী এসে দাঁড়াল। নামলো স্বয়ং মাধুরী। নেমেই সামনে যে বাবুটিকে পেল। তাকেই শুধলো–মহীনদা কোন ঘরে থাকেন, মহেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
–যে বাবুটি নুতন এসেছেন?
–হ্যাঁ নিশ্চয় তাকে চেনেন আপনি। যেন না চিনলে ওর অপরাধ হবে হ্যাঁ চিনি বৈকি। আপনি দাঁড়ান আমি ডেকে দিচ্ছি তিনি থাকেন ছাদে।
: ছাদে, মাধুরী চোখ কপালে তুললো। ছাদে কি করে মানুষ থাকে মশাই?
: ছাদে, মানে ছাদের ঘর, ঘর তো নয় পায়রার খোপ।
: ও আচ্ছা অনেক ধন্যবাদ ডাকতে হবে না যাচ্ছি বলে মাধুরী তর তর বেগে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল। মেসের চার পাঁচজন বাবু দেখলো ঐ গতিশীল উল্কাকে। বাইরে তাকিয়ে দেখলো বিরাট গাড়ীখানা দাঁড়িয়ে।
মলীন ধুতিখানা পরে গায়ে গেঞ্জী চড়াচ্ছে মাধুরী উঠে এসে বললো–বাঃ পায়রার খোপ নয়তো চড়াইয়ের বাসা?
মহেন্দ্র মহাব্যতীব্যস্ত হয়ে শুধলো মেসে কেন এলে তুমি মাধুরী।
কেন? মেসে তুমি থাকতে পার আর আমি আসতে পারি না?
কেন। বলে মাধুরী, ঘরখানা ভাল করে দেখতে লাগলো দীর্ঘক্ষণ ধরে। মহেন্দ্র জামা গায়ে দিয়ে বললো, চলো কোথায় যেতে হবে?
হ্যাঁ, চলো। ঐ মূর্তিটি কার?
–কোন এক শিল্পী এখানে থাকতেন তারই ছিল। এখন আমার, তুমি ইচ্ছে করলে নিতে পার।
না, এই অন্ধকার বাড়িটায় ঐ ছোট্ট প্রদীপটুকু জ্বলে থাক। জানলে ওর জন্যে ফুলের মালা আনতাম।
মহেন্দ্র মৃদু হাসলো কথাটা শুনে, ঘরের দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে বেরুলো দুজনে। কিন্তু মাধুরী বাড়িখানা ভাল করে দেখলো। স্নানাগার, শৌচাগার সবই সে ঘুরে দেখলো, অবশেষে রান্না ঘরে এসে দেখলো, শীত কালে কলকাতায় যখন প্রচুর তরকারী, কপি, মটরশুটি, মাংস তখন এই মেসে রান্না হচ্ছে বেগুন আলু আর টমেটোর চাটনী। কিছু বললেন , কিন্তু কত যে বলছে তার চোখ সেই জানে। নিঃশব্দে মহীনকে নিয়ে গাড়ীতে উঠলো, তখনো মেসের বাবুরা এই জলন্ত অগ্নিশিখাবৎ মেয়েটাকে দেখছে নানা জায়গা থেকে। গাড়ী ছাড়তেই মাধুরী বললো, আচ্ছা মহীনদা, এই কাঙ্গাল মেসে থেকে তুমিও কাঙ্গাল হয়ে যাবে না তো?
সবাই খেটে খায় মাধুরী। কাঙ্গাল কেন হবে ওরা?
টাকার কাঙ্গাল নয়, রূপের কাঙ্গাল, আমাকে দেখবার কি নিদারুণ ওদের চেস্টা, অর্থাৎ তুমি যে রূপসী জানতে চাইছো, কথাটা বললো মহীন হাল্কা ভাবেই।
–মহীনদা, মাধুরী যেন গর্জন করে উঠলো, এই তিন দিনেই তুমি ভিখারী হয়ে গেছ। ছিঃ। আমি যদি তোমার কাছে আসতাম তো ব্যাপারটা অন্যরকম দাঁড়াতো।
–মাধুরী! আমার নিদারুণ ভুল হয়ে গেছে মাধুরী, মহীনের চোখে মার্জনা ভিক্ষার আকুতি।
–আচ্ছা, এ রকম আর বলো না, মাধুরী হেসে দিল।
–তোমাকে না বুঝেতে পারি তো ক্ষতি হবে মাধুরী, কিন্তু ভুল যেন না বুঝি আকশকে বুঝা যায় না তাতে আকাশের ম র্যাদা কমে না।
–অত বাড়িও না মহীনদা, আমার বিদ্যেটুকু সব তোমার দান, তুমি আসার আগে কেউ ওভাবে আমার রূপের প্রশংসা করলে আমিই খুশী হতাম।
–ওটা কি রকম কথা হোল মাধুরী
–আমি যেন নীল শান্ত আকাশ তা জানতাম না, আমার ঝরা মেঘটা তুমি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলে–
চাকুরে বাবু হয়ে এই মহেন্দ্র এল এ বাড়িতে, এখানে ও কোনদিন অসম্মানিত হয়নি, কিন্তু ওর যে এখানে বিশেষ একটা সম্মান আছে, তা যেন আজই বুঝতে পারলো। বিশেষত্ব কোন নিকট আত্মীয় যেন দীর্ঘকাল পরে এসেছে, এই রকম ভাব সকলের, চাকরগুলো পর্যন্ত বারংবার নমস্কার জানাল ওকে। ব্যাপারটা আর কিছু নয় ছোটদাকে আশীর্বাদ করতে এসেছেন লক্ষ্ণৌ থেকে সেই ব্যবসাদার ভদ্রলোক, ইনি সঙ্গীতে বিশেষ অনুরক্ত এবং রতীনের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আপনার একমাত্র কন্যাকে দান করতে চান তার হাতে। মেয়েটিও খুব সঙ্গীত অনুরাগিনী। ওঁকে গান শোনাবার জন্য একটা আসর বসাতে বলেছেন উমেশবাবু এবং এই জন্য মহেন্দ্রকে আনলো মাধুরী।
অনেকগুলি নিমন্ত্রিত ভদ্রলোক। অনেকেই কিছুনা কিছু গাইলেন, মাধুরীও একটা রবীন্দ্র সজীত গাইল। অতঃপর মহীনের পালা। মহীন অতুল প্রসাদের একটা গান ধরলো :–
ওগো সাখী, মম সাখী আমি সেই পথে যার সাথে
যে পথে বন্ধুত্ব দেশ বন্ধুত্ব সাথে।
যে পথে কাননে পাশে ফুলদল, যে পথে কুসুমের পরিমল,
যে পথে উষার হয়
অভিসার অরুণ কিরণ, মাঝে—
গানের ভাষা এবং ভাব এমনই অপরূপ যে শ্রোতারা মুহ্যমান হয়ে শুনেছে নির্বাক নিষ্পন্দ। মাধুর হাতে সেতারখানা যেন কথা কইছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাইলে মহেন্দ্র, ও নিজেই মগ্ন হয়ে গেছে তসরের ভাবে মুছনায়, সঙ্গীতে সমাধিস্থ হয়ে গেছে যেন।
গান শেষ হল লক্ষ্ণৌ এর ভদ্রলোক শুধু বললেন, সার্থক সাধনা তোমার। মহেন্দ্র ওকে প্রণাম করলো। তিনি অল্পক্ষণ ওর পানে তাকিয়ে হেসে বললেন তুমি আমার ওখানে দিনকয়েক থাকবে বাবা শরীরটা সারিয়ে দেব, ওখানকার জল হাওয়া খুব ভাল।
: আমি চাকরী করি ছুটি পাব না তো এখন।
: ও আচ্ছা ছুটি পেলে, যেও আমার ওখানে একবার।
মহেন্দ্র মাথা নামানো মাত্র, অতঃপর গানের আসর আর জমলো না। প্রচুর সুখাদ্য খেয়ে মহীন যখন মেসে ফিরছে মাধুরীকে খুঁজে পেল না।
বড়বৌদি বললো এবার তোর একটা আর মাধুরীর একটা–
–কি বৌদি, মহীন বোকার মত প্রশ্ন করলো—
বি–য়ে বড়বৌদি টান করে বললো–বুঝেছ?
না বৌদি মেট্রিকেই আটকে গেলাম, বি, এ আর হলো কৈ। মহীন সংক্ষেপে জানালো।
: বিদ্যালয়ের বি. এ. নয় এটা অবিদ্যালয়ের বিয়ে, বুঝলে মুগ্ধ। বৌদি হাসল আবার এস শীগগীর।
সঙ্গীতের আসরে যে ক’জন ছিল, তার মধ্যে মাধুরীর বিশেষ বান্ধবী মেনকা অন্যতম। সুন্দরী, তরুণী ধনী কন্যা এবং সঙ্গীত ও নৃত্যে পটু। পরদিন কলেজে দেখা হতেই মেনকা বললো তোর মহীনদাকে দেখলাম মাধু অমন রোমান্টিক ছেলে অত দরদ দিয়ে গান গাইল কিন্তু মেয়েদের সম্বন্ধে ও যেন বড্ড ভাল।
–তোর মত মুখ আর দেখিনি, মাধুরী বললো মহীনদা সামাধিস্থ শিব। তাঁর ধ্যান ভাঙতে মদন ভস্ম–অত সাজসজ্জা করে নাইবা যেতিস।
–সবাই যেমন যায় তেমনি গিয়েছিলাম তাই বলে মেনকা একটু থেমে বললো উনি বুঝি ওসব পছন্ন করেন না?
ওর কিছু এসে যায় না একে যে চাইবে তাকে কক্কবাসা উমা হতে হবে, তপস্যা করতে হবে কন্যাকুমারিকায়–
–ওরে বাবা ঐ কেরানীটার জন্যে।
–শিবকে চাইলে শুশান মেনে নিতে হয়। সম্পদ চাইলে ইন্দ্র, চন্দ্র আছেন অনেক—
–শিব বুঝি আর নেই।
–না, মাধুরী যেন ধমক দিল। তিনি এক মেধাদ্বিতীয়ম।
–চলে গেল মাধুরী। মেনকা ওর নির্বুদ্ধিতায় হাসলো আপন মনে বললো, সৃষ্টি ছাড়া মেয়ে একটা।
কে রে? গীতা এসে দাঁড়ালো।
–ঐ মাধুরী অত বড় লোকের মেয়ে ধনমান কুল শীল রূপ যৌবন কিছুই অভাব নেই, কিন্তু ও ভালবাসছে একজন কেরানীকে।
–যাঃ। ওর সেই মহীনদা তো? ভালবাসে না করুণা করে, ওদের আশ্রিত জীব একটা পোষা কুকুর যার যেমন মায়াও তাই।
–তুই জানিস কচু। ছেলেটাকে কাল দেখলাম, সে মোটে কুকুর নয়, বাঘ।
–পুষতে চাস তো দেখ না? হাসলো গীতা।
–ও পোষা যায় না। একদম জঙ্গলের ব্যাপার মাধুকেই ভাল।
দু’জনেই খুব হাসলো নিজেদের রসিকতায়। কলেজ ছুটি হয়েছে বারান্দা থেকে দেখলো। গাড়ীতে উঠে মাধুরী বাড়ি চলে যাচ্ছে।
বাড়ি ফিরে মাধুরী কলেজের বেশ ত্যাগ করলো, তারপর বাবার কাছে গেল বারান্দায় একধারে তিনি একা বসে চা খাচ্ছিলেন, মাধুরী গিয়ে বসলো, তারপর বললো, বড়দাকে এ মাসেও আমি পঞ্চাশ টাকা পাঠিয়ে দিলাম বাবা কিন্তু আসছে মাস থেকে আর পাঠাব না?
-–কেন মা কেন? উমেশবাবু উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন।
–তুমি এতোকাল তোমার বন্ধুর ছেলের খোঁজ নাওনি বাবা, সে ভুল আর শোধরানো যাবে না। কাটা কাপড় জোড়া দেওয়া যায়, কি শেলাইয়ের দাগ থাকে বড়দার আত্মম র্যাদা বোধ হয়তো আমরা ক্ষুণ্ণ করছিলাম বাবা, এই টাকা পাঠিয়ে।
–সে কি মা? বৃদ্ধ যেন অতি বিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি বুঝলে?
হ্যাঁ বাবা, নিরুপায় হয়ে তিনি এই টাকা গ্রহণ করেন। মহীনদাকে লেখা তাঁর চিঠিতে বিশেষ কিছু বোঝা না গেলেও আমি আন্দাজ করতে পেরেছি, তার দৈন্যের আগুনে এ টাকায় জল ঢালা হচ্ছে না, ঘি তেল দেয়া হচ্ছে। তাকে দুঃখ দিয়ে তো আমাদের লাভ নেই।
উমেশবাবু নির্বাক বসে রইলেন কথাটা শুনে। মাধুরী আবার চা দিয়ে বললো, তোমাকে দুঃখ দেবার জন্য আমি কথাটা বলছি না বাবা, অন্ধ অসহায় আমাদের এক নিকট আত্মীয়কে দুঃখ দেব না এই বললাম।
এ রকম কেন যে ভাবছ মা? উমেশবাবু ধীরে ধীর বললেন!
ভাবনার যথেষ্ট কারণ আছে বাবা, দীর্ঘ ষোল বছর তুমি তাদের খবর নাওনি। মহীনদা এখানে না এলে হয়তো কোনদিন নিতে না। তোমাকে একান্ত আপনার বলে স্বীকার করতে আজ তার মন চাইবে কেন বাবা? তোমার বন্ধুর ঐ পরিবারটি বাইরে যতই দীন হোন, অন্তরে রাজাধিরাজ।
এ ভুল শোধরানো যাবে না মাধুরী?
শোধরানোর চেষ্টা করাই ভাল বাবা, স্বার্থন্বেষী সাধারণ কোন মানুষ হলে তোমার এই দানকে দাবী বলে মনে করতো। চেষ্টা করতো আরও বেশী আদায় করবার, এরা কিন্তু পাথরের মূর্তি বাবা, তোমার টাকার মুঠো ওঁর গায়ে গেলে দাগ কেটে দেয়, স্নেহের ধারা দিতে তুমি ষোল বছর দেরী করেছো বাবা, সে আর দেয়া যায় না–
মাধুরীর গভীর কালো চোখের পানে চাইলেন উমেশবাবু, চকচক করছে জল যেন কিন্তু মুখে হাসি এনে মাধুরী বললো, তুমি ভেবো না বাবা, এবার থেকে মহীনদা তার রোজগারের টাকা পাঠাবেন।
–সে কি কিছু বাঁচাতে পারবে মাধুরী।
হ্যাঁ বিশ পঁচিশ টাকা বাঁচবে এ কথা আর কাউকে জানিও না বাবা। তুমি আর আমি বাপ–বেটিতে জানলাম যা হোক।
–হ্যাঁ মা আমার এই ষোল বছরের ভুলটা মহীনও ক্ষমা করতে পারে না।
–ক্ষমার কথা উঠে না এটা ভুল নয় অকর্তব্য। তোমার কর্তব্যের যে ত্রুটি তার জন্য তোমাকে দুঃখ পেতে হলো বাবা, কিন্তু গৌরব বোধ করতে পারবে।
–কেন মা? কিসের গৌরব আর।
–তোমার বন্ধুর ছেলের চরিত্র মহিমার জন্য। মানুষ কত কঠিন আর কত কোমল হতে পারে, দেবেন্দ্রনাথ তার প্রমাণ।
ক্ষেত্রর কাছে আমি ঋণী হয়ে গেলাম মাধুরী।
–না বাবা, ঋণ দেবে না ওরা। সেবা করেন প্রতিদানের আশা না রেখে। শুধু ভালবাসার জন্য তোমার প্রতি তার ভালবাসাটাকে ঋণ ভেবে খাটো করো না বাবা।
মাধুরী ওর মাথার চুলে হাত বুলাচ্ছিল, আরো কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেল। পিতাপুত্রীর এই কথোপকধন কেউ শুনলো না, কেউ জানলো না এমন অনেক গভীর গোপন কথা উমেশবাবুর সঙ্গে হয় মাধুরীর।
অতঃপর মাধুরী এসে ঢুকলো মহীনের পরিত্যক্ত ঘরটায়, ঘরখানা তালাবদ্ধ ছিল। খুলে ভেতরে এসে মাধুরী দেখলো। সেই পুথি দু’খানা মহেন্দ্র নিয়ে যেতে ভুলেছে নিজের মনে খানিকটা উলটালো। কয়েকটা ছেঁড়া কাগজ পড়ে আছে দেখলো তারপর জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তাকালো পশ্চিম দিকে সূ র্যাস্ত দেখা যায় না। দেখা যায় একটি ছোট পরিবার, এক তরুণী বধু তার স্বামী আর বছর খানেকের এক খুকী। একখানা মাত্র ঘর নিয়ে ওরা থাকে ভাগের কল ভাগের পায়খানা। বধুটি উনুনে রুটি সেকছে, স্বামীর বৈকালিক জলখাবার নিশ্চয়, আলু ভেজে রেখেছে একটু গুড়ও আছে দেখতে পেল বাচ্ছা মেয়েটা হানা দিয়ে এসে সেই গরম আলু ভাজা মুখে পুরে দিল এবং সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার। তার মাও সঙ্গে সঙ্গে দুটো চাপড় দিল ওর পিঠে কারণ আলুভাজার বাটিটা উলটে সব ছড়িয়ে গেল। গরম আলুভাজা মুখে মেয়েটার শাস্তি তারপর মার খেয়ে সজোরে কান্না জুড়ে দিল মাধুরী বলতে চাইল মারল কেন? কিন্তু কিছুই বলতে হল না। ওর মাই মেয়েকে কোলে নিয়ে মাই দিতে লাগলো। মাধুরী হেসে ফেললো মহীনের কথাটা মনে পড়ে গের, বিশ্বে যেখানে যত মা আছে সবারই। চেহারা একই সত্যি তাই।