1 of 2

৪২. শ্যাংদের পতন

অধ্যায় ৪২ – শ্যাংদের পতন

চীনে খ্রিস্টপূর্ব ১০৭৩ থেকে ১০৪০ সালের মধ্যে শ্যাং সাম্রাজ্যের পতন হয়।

দীর্ঘ ৬০ বছর রাজত্ব করার পর উ টিং তার ছেলের কাছে সিংহাসনের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তারপরও কয়েক বছর শ্যাং-রাজত্ব বজায় থাকে। ভাই থেকে ভাই, বাবা থেকে ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে শান্তিপূর্ণভাবেই কেটে যায় এই বছরগুলো। শ্যাং সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে ছিল ইয়েলো বা হোয়াংহো নদী। শ্যাং রাজত্বের রাজধানীও ইন শহরে স্থিতিশীল থাকে।

পৃথিবীর একপ্রান্তে মেসোপটেমিয়ার রাজত্বগুলো যখন কাঁপছিল, তখন চীনের শাসকরাও ঝামেলায় ছিলেন।

তবে তাদের সমস্যাগুলো রাজা প্রথম নেবুচাদনেজার বা তিগলাথ- পিলেসারের মতো ছিল না। শ্যাং রাজা ও তাদের লোকজন অজ্ঞাত বিদেশি গোত্রের আক্রমণের শিকার হননি, বরং তাদের নিজেদের মানুষই তাদের শত্রু ছিল।

শ্যাংদের ভূখণ্ডের ঠিক পশ্চিমে ওয়েই নদীর উপত্যকায় ছিল ঝৌ-গোত্রের বসবাস। তারা শ্যাং রাজার ‘সরাসরি’ প্রজা ছিলেন না। তবে তাদের নেতা, যাকে ‘পশ্চিমের অধিপতি’ বলা হত, তিনি মুখেমুখে শ্যাং রাজার আধিপত্য মেনে নিয়েছিলেন। ঝামেলা এড়াতেই মূলত তিনি এ কৌশল অবলম্বন করেন। তাদের বসবাসের এলাকাগুলো শ্যাং রাজধানী ইন থেকে অন্তত ৪০০ মাইল দূরে ছিল। শ্যাং রাজপ্রাসাদ ও পশ্চিমের অধিপতির মধ্যে বার্তা বিনিময় হত, কিন্তু ঝৌ-এর অভিজাত পরিবারগুলো তাদের নিজেদের প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। দূরবর্তী শ্যাং রাজার বিষয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না। এ অবস্থায় সে-অঞ্চলে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়লে তারা নির্দেশের জন্য শ্যাং রাজা নয়, বরং পশ্চিমের অধিপতির দিকেই মুখ তুলে চাইলেন।

প্রাচীন লিপিতে একটি বিষয় খুবই পরিষ্কার। শ্যাং রাজারা নিজেরাই এই বিদ্রোহের জন্য দায়ী ছিলেন। দীর্ঘ সময় রাজত্ব চালানোর পর জ্ঞানচর্চার ওপর থেকে গুরুত্ব কমিয়ে দেন এবং এটাই তাদের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উ-টিং-এর জীবনাবসানের পর পঞ্চম রাজা হিসেবে দেশ শাসন করছিলেন উ-ই। সিমা কিয়ানের বর্ণনায়, এই উ-ই হচ্ছেন প্রথম রাজা, যার মধ্যে পদস্খলনের প্রথম চিহ্ন দেখা দেয়। সিমা কিয়ানের বর্ণনায়, তিনি দেবতাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অন্যায় আচরণ করেন। তিনি কতগুলো মূর্তি বানিয়ে সেগুলোকে ‘স্বর্গীয় দেবতা’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি এসব মূর্তির সঙ্গে বাজি ধরে জুয়া খেলতে শুরু করেন। যখনই তিনি জিতে যেতেন, তখনই তিনি এই মূর্তিগুলোকে ‘অকর্মণ্য জুয়াড়ি’ বলে হাসি-ঠাট্টা করতেন।

এই আচরণ তার রাজকীয় দায়িত্বের বড় ধরনের লঙ্ঘন ছিল। সে আমলে রাজসভাই ছিল পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জীবিতদের কাছে স্বর্গীয় তথ্য উন্মোচনের মাধ্যম।

পূর্বপুরুষদের কাছে রাখা সকল প্রশ্নের উত্তর আসত রাজার নামে। তিনিই ছিলেন স্বর্গীয় বাণী বহন করে আনার মাধ্যম। এরকম গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ যখন স্বর্গীয় ক্ষমতা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা শুরু করে, তা মেনে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী শাস্তিও পান উ-ই—শিকার করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। এরপর ক্ষমতায় বসেন তার ছেলে, এবং পরবর্তীতে, তার নাতি। সিমা কিয়ান জানান, এই দুই শাসকের হাতে দেশটি আরও দুর্দশায় পতিত হয়। এরপর তার প্রপৌত্র চোউ ক্ষমতা দখলের পর একপর্যায়ে শ্যাংদের আধিপত্য পুরোপুরি ধসে পড়ে।

চোউ-এর বেশ ভালো কিছু গুণাবলি ছিল। তিনি শক্তিশালী, বুদ্ধিমান, প্রজ্ঞাবান ও চিন্তাশীল ছিলেন, কিন্তু তিনি তার এইসব ভালো গুণ অসৎ উদ্দেশে ব্যবহার করেন।

চোউ-এর ব্যাপারে সিমা কিয়ান বলেন, ‘তিনি সবাইকে তার চেয়ে নিচু মনে করতেন। তিনি মদে আসক্ত ছিলেন, নানা রকমের আমোদ-প্রমোদে মত্ত থাকতেন এবং তার চারপাশে নারীর অভাব ছিল না।’

চোউ-এর আমোদপ্রমোদ ও মদের প্রতি ভালোবাসার কারণে জীবনযাপনের খরচ অনেক বেড়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে আয়ের উৎস তৈরি করতে প্রজাদের ওপর নতুন নতুন কর আরোপ করতে শুরু করেন। তাই চি নামের এক নারীর প্রতি তিনি অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তিনি শুধু তার কথাই শুনতে পছন্দ করতেন। একপর্যায়ে তিনি একটি হ্রদ তৈরি করে সেটা মদ দিয়ে ভরাট করেন। এর পর পুরো হ্রদের চারপাশে মাংস ঝুলিয়ে রেখে তিনি হ্রদ ও সংলগ্ন জঙ্গলে ‘নগ্ন নারী ও পুরুষকে একে অপরের পেছনে দৌড়াতে বাধ্য করেন।’

এ-ধরনের বিচিত্র ও বিকৃত ব্যবহারের পাশাপাশি তিনি একনায়কসুলভ আচরণেও পিছিয়ে থাকেননি। কোনো অভিজাত বংশীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবিশ্বস্ততার অভিযোগ এলে তাদেরকে তিনি উত্তপ্ত ও জ্বলন্ত লাল ইটের ওপর শুইয়ে রেখে নির্যাতন করতেন। একবার চোউ রাজসভার এক কর্মকর্তাকে তিনি জনসম্মুখে বেত্রাঘাত করান। অপর একজনকে কেটে টুকরো টুকরো করেন এবং মাংসগুলোকে ঝুলিয়ে শুকাতে দেন। তার চাচা এসব আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানালে চোউ মন্তব্য করেন, যেহেতু একজন জ্ঞানী ব্যক্তির হৃদয়ে ৭টি প্রকোষ্ঠ থাকে, তাকে তার (চাচার) উপদেশ শোনার আগে হৃদয় পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এবং তিনি এই হুমকি বাস্তবায়ন করে দেখান। তবে চাচার হৃদয় খুলে দেখার পর তিনি বেঁচে ছিলেন কি না, তা অবশ্য আমরা আর জানতে পারিনি।

তার নির্দয় আচরণের কোনো ‘সীমা’ ছিল না। দেশের ১০০টি অভিজাত পরিবারের সকলেই চোউকে ঘৃণা করতেন।

অবশেষে, চোউ-এর অদ্ভুত আচরণ সব সভ্যতা-ভব্যতাকে ছাড়িয়ে যায়। ঝৌদের নেতা ও পশ্চিমের অধিপতি ওয়েন ব্যক্তিগত কাজে রাজধানীতে এসেছিলেন। চোউ তার পেছনে গুপ্তচর লেলিয়ে দেন এবং তাদের নির্দেশ দেন ওয়েনকে অনুসরণ করতে। যখন গুপ্তচররা খবর আনল, ওয়েন চোউ-এর কোনো এক আচরণে ‘গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন, তখন তাকে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় কয়েদ করা হল।

যখন ঝৌ-গোত্রের বাকি সদস্যরা জানতে পারলেন, তাদের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তখন তারা চোউকে খুশি করতে পারে এরকম উপঢৌকন নিয়ে রাজধানীতে হাজির হলেন। বলাই বাহুল্য, তাদের সঙ্গে ছিল মূল্যবান উপহার সামগ্রী ও সুন্দরী নারী।

স্বভাবতই চোউ মুগ্ধ হলেন এবং ওয়েনকে মুক্তি দিলেন। তবে পশ্চিমের অধিপতি এত সহজে ঘরে ফিরতে চাইলেন না। তিনি রাজার নির্দয় আচরণের হাত থেকে নিরীহ প্রজাদের রক্ষা করার চেষ্টা চালালেন। তিনি চৌউকে একটি প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন, চোউ যদি প্রতিশ্রুতি দেয় যে আর কখনো প্রজাদের গরম ইটের ওপর শুইয়ে রেখে নির্যাতন করবেন না, তাহলে ওয়েন তাকে লো নদীর আশেপাশের উর্বর ফসলি জমি উপহার দেবেন। চোউ এই লোভনীয় প্রস্তাব মেনে নিয়ে ঝৌদের মালিকানায় থাকা সে জমি বুঝে নিলেন এবং ওয়েন সসম্মানে নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন।

তবে এই চুক্তিটি ভুল ছিল। ওয়েন তার নিজ দেশে একজন যোদ্ধা-রাজা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। পশ্চিমে ফিরে তিনি ধীরে ধীরে রাজার বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চয় করতে লাগলেন। কিয়ান বলেন, ‘বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রামের নেতা তার পক্ষে চলে এলেন।’ এছাড়াও চোউ-এর সভার ধর্মীয় নেতারাও তার পক্ষে চলে এলেন। স্বভাবতই, চোউ-এর উদ্ভট আচরণে তারা বিরক্ত ছিলেন।

তবে ততদিনে ওয়েনের বয়স ১০০ ছাড়িয়েছে। তিনি তার পক্ষে জনমত জোগাড় করলেও শ্যাং রাজধানীতে অভিযান চালানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।

পরবর্তীকালে ছেলে উ তার দেখানো পথে হাঁটেন। ৮০০ জন সামন্ততান্ত্রিক প্রভু তার পেছনে ছিলেন। প্রত্যেকের ছিল নিজস্ব সেনাবাহিনী। ৫০ হাজার সদস্যের ঝৌ-সেনাদল ইনের শ্যাং রাজপ্রাসাদের দিকে যাত্রা শুরু করে। চোউ তার ৭ লাখ সদস্যের সেনাবাহিনীকে আক্রমণের মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন।

রাজধানী ইন থেকে ২০ মাইল দূরে মুয়ের যুদ্ধে দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাজকীয় বাহিনীর জন্য ঝৌ-এর ৫০ হাজারের ক্ষুদ্র বিদ্রোহীবাহিনীকে পিষে মেরে ফেলা কোনো ব্যাপার হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এক্ষেত্রে ঝৌ-এর দুইটি সুবিধা ছিল। প্রথমটি ছিল কৌশলগত। ঝৌ-এর অভিজাত পরিবার থেকে ৩০০টি যুদ্ধরথ পেয়েছিলেন উ, কিন্তু রাজকীয় বাহিনীর কোনো রথ ছিল না। দ্বিতীয় সুবিধাটি ছিল, ঝৌ-এর বাহিনীর দৃঢ় মনোবল ও তাদের নেতার প্রতি অগাথ বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা। এগুলোর কোনোকিছুই চোউ-এর বাহিনীর মধ্যে উপস্থিত ছিল না। রাজার বাহিনী ততদিনে তাদের নেতার নির্দয় আচরণে চরম বিরক্ত। খুব সহজেই চোউ-এর বাহিনীর একটি বড় অংশ যুদ্ধক্ষেত্রেই পক্ষ পাল্টে ঝৌ-এর সঙ্গে যোগ দিল। ফলে অপরদিকে থেকে আসা রাজার বাকি বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

অনিবার্য পরাজয়ের মুখে চোউ তার রাজপ্রাসাদে ফিরে যান। সেখানে তিনি জেড-পাথরের তৈরি বর্ম পরে শেষ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত হন। তবে ঝৌবাহিনী সে ঝামেলায় না যেয়ে পুরো রাজপ্রাসাদ জ্বালিয়ে দেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে করতে তরবারির আঘাতে নয়, বরং আগুনের লেলিহান শিখায় এই অত্যাচারী রাজার জীবনাবসান হয়। যেই আগুন তিনি ব্যবহার করতেন মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতে ও তাদের হত্যা করতে, সেই আগুনেই তার কাল হলো।

ওয়েনের বিদ্রোহের গল্পটি কিছুটা অস্বস্তিকর।

প্রাচীন ইতিহাসবিদরা স্বৈরাচারী রাজার উৎখাত নিয়ে কোনো উদ্‌যাপনের কথা জানায়নি। উ তার ক্ষমতা দখল নিয়ে কোনো ধরনের গর্ব করেননি। এ বিষয়ে কোনো গল্প, উপাখ্যান বা কবিতার কথাও জানা যায় না। তিনি শত্রুদের কাটা-মাথা ফটকের দরজায় ঝুলিয়ে রাখার মতো কোনো কাজও করেননি। তিনি যুদ্ধকৌশলের জন্য নয়, দেশে নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রশংসিত।

ঝৌদের বিদ্রোহটা ঠিক প্রজাদের অবাধ্যতার উপাখ্যান নয়। বিদ্রোহের আগে থেকেই ঝৌদের ওপর শ্যাং রাজার আধিপত্য কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ওয়েন নিজেই একপ্রকার রাজার মতো তাদের শাসন করতেন। তবে তা সত্ত্বেও শ্যাং রাজা তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে উপঢৌকন আদায় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। অপরদিকে, যখন ওয়েন চোউকে উপহার হিসেবে ভূখণ্ড দিতে চাইলেন, রাজা তা খুশিমনে উপহার হিসেবে গ্রহণ করলেন—একবারের জন্যেও তিনি বলেননি যে এই ভূখণ্ড তিনি ইতোমধ্যেই শাসন করছেন।

তবে কোনো এক বিচিত্র কারণে প্রাচীন ইতিহাসবিদরা ঝৌদের কার্যক্রমের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। ঝৌ ও শ্যাং ছিল এক অর্থে সহোদর সংস্কৃতি এবং তাদের মাঝে সংঘাতগুলো প্রাচীন যুগে মিশরের সেত ও ওসাইরিসের মধ্যে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কের মতো চিন্তার উদ্রেককারী ছিল। ঝৌদের প্রথম রাজা যে একজন দুর্বত্ত নন, নীতিবান মানুষ ছিলেন—এ বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুদ্ধে জয়ী উ নন, তার পিতা ওয়েনের আমল থেকেই ঝৌদের ইতিহাসের শুরু। তিনিই সে ব্যক্তি, যে তার দেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য কারাবরণ করেছিলেন এবং নিজের দখলে থাকা ভূখণ্ড বিলিয়ে দিয়েছিলেন অকাতরে।

অর্থাৎ শ্যাং রাজত্বের অবসান ঘটে যুদ্ধবাজ উ’র হাতে নয়, বরং ওয়েনের আমলেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। চোউ নিজেই তার পতন ও মৃত্যুর জন্য দায়ী।

তবে ঝৌদের অধিপতি উ তার রাজত্ব কায়েম করার জন্য চোউ’র মাথায় বর্শা ঢুকিয়ে দেন এবং ইন শহরের ফটকের সামনে তার কাটা-মাথা ঝুলিয়ে রাখেন, যাতে সবাই তা দেখে শিক্ষা নিতে পারে। এভাবেই পুরনো রাজত্বকে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নিয়ে নতুন সূর্যের উদয় ঘটে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *