1 of 2

৪১. মেসোপটেমিয়ার অন্ধকার যুগ

অধ্যায় ৪১ – মেসোপটেমিয়ার অন্ধকার যুগ

খ্রিস্টপূর্ব ১১১৯ থেকে ১০৩২ সালের মাঝে হিট্টিটদের পতন হয় এবং অ্যাসিরীয়া ও ব্যাবিলন বিবর্ণ হয়ে পড়ে।

মাইসেনীয়রা তাদের শহরগুলো ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ডোরিয়ানরা সেগুলো দখল করে নেয়। ইতোমধ্যে ট্রয় ছাড়িয়ে আরও পূর্বে হিট্টিটদের ভূমিতেও গোলযোগ দেখা দেয়। ততদিনে যুদ্ধবিধ্বস্ত ট্রয় পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু শহরটি তার আগের সমৃদ্ধিশালী রূপ আর ফিরে পায়নি কখনোই।

হিট্টিটদের অবস্থাও তখন করুণ। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও তুধালিয়া চতুর্থ র আমলের বিদ্রোহ ও বিক্ষোভ দেশটিকে দীনহীন অবস্থায় নিয়ে গেছিল। উপরন্তু, সিংহাসনের দখল নিয়ে হানাহানিও থামেনি। মাইসেনীয়দের পতনের সময় চতুর্থ তুধালিয়ার ছোটছেলে তার বড়ছেলের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয়।

তিনি নিজেকে দ্বিতীয় সুপ্পিলুলিউমা হিসেবে অভিহিত করেন, যাতে তার নাম শুনে সবার ১৫০ বছর আগের মহান সম্রাট সুপ্পিলুলিউমার কথা মনে পড়ে যায়।

দ্বিতীয় সুপ্পিলুলিউমার শিলালিপিগুলোতে সমুদ্র থেকে আসা শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। তিনি এশিয়া মাইনরের উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌযুদ্ধে মাইসেনীয় শরণার্থী ও ভাড়াটে সেনাদের পরাজিত করেন বলে দাবি করা হয়। এমনকি কিছুটা সময়ের জন্য তিনি তার দক্ষিণ উপকূলে আগ্রাসন ঠেকাতে সক্ষম হন। তবে তিনি হিট্টিটদের সোনালি যুগ ফিরিয়ে আনতে পারেননি, যখন অপর সুপ্পিলুলিউমা ‘প্রায়’ তার নিজের এক সন্তানকে মিশরের সিংহাসনে বসিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সেই একই যাযাবর লোকেরা, যারা মিশরের দিকে আগাচ্ছিলেন, যারা দুর্ভিক্ষ, মহামারি বা অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যা থেকে পালিয়ে এসেছেন, বা যাদের নিজেদের দেশে যুদ্ধ চলছিল— তারাই এশিয়া মাইনরে ঢুকে পড়ছিলেন। কিছু মানুষ ট্রয়ের দিক থেকে এজিয়ান সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এশিয়া মাইনর ও হিট্টিটদের ভূমিতে চলে আসলেন। অন্যেরা আসতেন সমুদ্র থেকে। হিট্টিট উপকূলের দক্ষিণে অবস্থিত সাইপ্রাস থেকে নিয়মিত আগ্রাসনের মুখোমুখি হত হিট্টিটরা। দ্বিতীয় সুপ্পিলুলিউমা লিখে রেখে গেছেন, “আমি তাদের ধ্বংস করেছি, তাদের জাহাজ দখল করে নিয়ে সমুদ্রের মাঝে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছি। তবুও আমার বিরুদ্ধে লড়তে সাইপ্রাস থেকে ঝাঁকেঝাঁকে শত্রু এসেছে।”

গ্রিক উপদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত গ্রেইস নামের অঞ্চল থেকে বসফরাসের সংকীর্ণ প্রণালি পেরিয়ে ‘ফ্রিজিয়ান’ নামের গোত্র থেকেও কিছু লোক সেখানে এসেছিলেন।

এরকম বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, আর হিট্টিটদের বাহিনীও অনেকটাই ছোট ছিল। নবাগতরা সুপ্পিলুলিউমার বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দিল আর রাজত্বের একেবারে অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ল। রাজধানী শহর হাউসাস শিগগির পুড়ে ছাই হয়ে গেল। মানুষ পৈতৃক প্রাণ নিয়ে চম্পট দিল আর রাজকীয় সভা ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

রাজধানীর পতন হলেও হিট্টিটদের মুখের ভাষা তাদের পুরনো সাম্রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তের কিছু শহরে বেঁচে থাকে, যার মধ্যে কার্চেমিশ ছিল সবচেয়ে বড়। সর্বশেষ এই ঘাঁটিগুলোতে কোনোমতে হিট্টিটদের দেবতারা মাথা-গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পেয়েছিলেন। তবে যে রাজত্ব ও এর বাসিন্দারা তাদের উপাসনা করতেন, তারা ততদিনে গত হয়েছেন।

হিট্টিট, মাইসেনীয় ও মিশরীয় সভ্যতার সূর্য একদিকে অস্ত যাচ্ছিল, আর অপরদিকে, পূর্বের শক্তিগুলো হঠাৎ করেই খুব শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। কয়েকটি বছরে যাযাবর ভ্রমণকারী ও সামুদ্রিক মানুষরা পশ্চিমকে ব্যতিব্যস্ত রাখছিল আর এসময় অ্যাসিরীয়া ও ব্যাবিলনের ঐশ্বর্য ফিরে আসে।

অ্যাসিরীয়াতে রাজা তিগলাথ-পিলেসার হাউসাস ধ্বংস হওয়ার অল্পদিন পরেই সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার পূর্বপুরুষরা সবাই অ্যাসিরীয়ার মূল ভূখণ্ড শাসন করেন। এই উলটো করে বসানো ত্রিভুজাকৃতির সাম্রাজ্যের একেবারে নিচের অংশে ছিল আসসুর, আর এর পশ্চিমে প্রাচীন এরবিলা ও পূর্বে নিনেভেহ শহর ছিল। এই এলাকাটি খুবই সমৃদ্ধশালী ছিল এবং একে খুব সহজেই সুরক্ষিত রাখা যেত। এটি ছিল সমগ্র মেসোপটেমিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় গম-উৎপাদনের এলাকা। তিগলাথ-পিলেসার পূর্বসূরি তিন রাজাই এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।

তবে তিগলাথ-পিলেসারের চাহিদা আরও বেশি ছিল। ৮ প্রজন্ম ও ১০০ বছর আগে শাসন করা রাজা শালমানেসারের পর তিনিই ছিলেন প্রথম রাজা, যার মাঝে যুদ্ধংদেহী মনোভাব ছিল।

৪০ বছরের কিছু সময় পর অ্যাসিরীয়া আবারও তাদের আগের শানশওকতের কিছুটা হলেও ফিরে পেতে সক্ষম হয়।

ফ্রিজিয়ানরা হিট্টিটদের এলাকার ভেতর দিয়ে তেড়েফুঁড়ে ঢুকে পড়ার পর ধীরে ধীরে উত্তর-পশ্চিমে অ্যাসিরীয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। প্রথমদিকের এক যুদ্ধে তিগলাথ-পিলেসার ফ্রিজিয়ানদের পরাজিত করে দূরে হটিয়ে দিতে সক্ষম হন। তার শিলালিপিতে তিনি ২০ হাজার ফ্রিজিয়ান (তিনি তাদেরকে ‘মুশকি’ বলে অভিহিত করেন) সেনাকে তাইগ্রিসের উত্তরাঞ্চলের উপত্যকায় পরাজিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি গিরিখাতের মধ্যদিয়ে এবং পাহাড়ের চূড়া থেকে তাদের রক্ত প্রবাহিত করি।’

‘আমি তাদের মাথা কেটে শস্যের মতো করে স্তূপ করে রাখি’, যোগ করেন তিগলাথ-পিলেসার।

এরপর তিনি যুদ্ধ করতে করতে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে আগাতে থাকেন।

টানা ৩৮ বছর তিগলাথ-পিলেসার যুদ্ধ করলেন। একের পর এক শহর তার পদতলে এল। অ্যাসিরীয় প্রাসাদে এই শহরগুলো থেকে অগুনতি কর্মী ও করের অর্থ আসতে লাগল। এ শহরগুলোর কারচেমিশও ছিল। তিগলাথ-পিলেসার (তার নিজের লেখানো শিলালিপি অনুযায়ী) এ শহরটি ‘এক দিনে’ দখল করেছিলেন। অন্যান্য শহরগুলো যুদ্ধ ছাড়াই তিগলাথ-পিলেসারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে লাগল। তিগলাথ-পিলেসারকে বাহিনীকে নিয়ে আগাতে দেখে তারা তার পায়ের কাছে ঝাঁপিয়ে পড়ে চুমু খেয়ে তার শাসন মেনে নেয়।

এভাবে তিগলাথ-পিলেসার স্বয়ং ভূমধ্যসাগরের উপকূলে পৌঁছে গেলেন। সেখানে তিনি নৌকা নিয়ে ডলফিন শিকারে গেলেন। বর্শা দিয়ে ডলফিন মারার সময় তার সঙ্গী ছিলেন তারই বাহিনীর নাবিকরা। এ পর্যায়ে মিশরের ফারাও (৮ রামসেস ফারাওর একজন) তাকে উপহার হিসেবে একটি কুমির পাঠালেন। এই কুমিরটিকে তার ‘শিকারের’ নিদর্শন হিসেবে আসসুরে নিয়ে যান রাজা তিগলাথ- পিলেসার। তিনিও অনেক মন্দির, মিনার ও দুর্গ তৈরি করে নিজেকে আরও একজন মহান রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন।

ব্যাবিলনেও একই সময় একজন মহান রাজার আবির্ভাব ঘটে।

বার্নাবুরিয়াশের আমলের পর থেকে ব্যাবিলন ও এর চারপাশের এলাকাগুলো অজ্ঞাতনামা শাসকরা শাসন করে আসছিলেন। ২০০ বছর আগে বার্নাবুরিয়াশ মিশরের রাজা তুতানখামেনের সঙ্গে চিঠি আদানপ্রদান করেছিলেন। তিগলাথ- পিলেসার আসসুরের সিংহাসনে বসার ৩-৪ মাসের মধ্যে ইসিনের দ্বিতীয় রাজবংশে নেবুচাদনেজার নামের এক রাজার আবির্ভাব ঘটে।

তিগলাথ-পিলেসার পশ্চিম ও উত্তরে রাজত্ব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন আর নেবুচাদনেজার পূর্বদিকে রওনা হলেন। তখনই মারদুকের মূর্তি সুসার এলামাইটদের দখলে ছিল। ঐশ্বরিক ক্ষমতার এই নিদর্শন দখলের পর পেরিয়ে গেছে ১০০ বছর, কিন্তু একে ফিরিয়ে আনার মতো প্রতাপ কোনো ব্যাবিলনীয় রাজা তখনও দেখাতে পারেননি।

এলাম শহরে নেবুচাদনেজারের প্রথম আগ্রাসন রুখে দেয় এলামাইট সেনাদের তৈরি রক্ষাব্যূহ। তিনি অবস্থা বেগতিক দেখে নিজ সেনাবাহিনীকে পিছিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় হামলার জন্য তিনি একটি বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা আঁটেন। নেবুচাদনেজার তার সেনাবাহিনীকে গ্রীষ্মকালে হামলার জন্য নিয়ে আসেন। সূর্যের তাপ যখন সবচেয়ে প্রখর, তখন কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের সেনাপ্রধান তাদের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধযাত্রায় নিয়ে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না—এটাই ছিল সবার ধারণা। কিন্তু এলামের সীমান্তে আসা ব্যাবিলনীয় সেনারা সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় এবং কেউ কোনো ধরনের বিপদ সংকেত দেওয়ার আগেই তারা সুসা শহরে পৌঁছে যায়। খুব সহজেই নেবুচাদনেজারের বাহিনী শহরটি লুটে নেয়। তারা মন্দিরের দরজা ভেঙে মারদুকের মূর্তি বের করে নিয়ে আসে এবং বিজয়ীর বেশে ব্যাবিলনে ফিরে যায়।

কালবিলম্ব না করে নেবুচাদনেজার মারদুককে উদ্ধার করে নিয়ে আসার বিজয়ের উপাখ্যান নিয়ে গল্প ও কবিতা লেখার জন্য একদল লেখক ও কবিকে নিয়োগ দিলেন। রাজপ্রাসাদ থেকে মারদুকের মন্দির পর্যন্ত এসব গল্প ও কবিতা ছড়িয়ে পড়ল এবং একপর্যায়ে ব্যাবিলনের মন্দিরে মারদুকের মূর্তিটিকে বসানো হল। অর্থাৎ রাজা নেবুচাদনেজার প্রথমের আমলেই মারদুক ব্যাবিলনীয়দের মূল উপাস্যে পরিণত হয়।

সে-যুগের অন্য অনেক রাজার মতো, একই যুক্তিতে নেবুচাদনেজারও দাবি করলেন, যেহেতু তিনি ব্যাবিলনের মূল দেবতাকে উদ্ধার করেছেন, ব্যাবিলনের মূল দেবতা প্রত্যুত্তরে তার ওপর ঐশ্বরিক বদান্যতা অর্পণ করেছেন। ফলে দ্বিতীয় রাজবংশের শুরুটা খারাপভাবে হলেও রাজা প্রথম নেবুচাদনেজারের হাত ধরে তারা ব্যাবিলন শাসনের ঐশ্বরিক ক্ষমতা পেল।

ব্যাবিলন ও অ্যাসিরীয়ার এই দুই শক্তিশালী রাজার কল্যাণে এই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় ছিল। কালেভদ্রে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ থেকে সামরিক সংঘাতের সূচনা হত। ব্যাবিলনের সেনারা একপর্যায়ে অ্যাসিরীয়ার সীমান্তবর্তী ২/৩টি শহরে লুটতরাজ ও চালিয়েছিল। তবে তিগলাথ-পিলেসার এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেননি। প্রতিশোধ নিতে তিনি ব্যাবিলন পর্যন্ত এসে রাজার প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেন।

বর্ণনা শুনে বিষয়টাকে যতটা ভয়ংকর মনে হচ্ছে, আদতে ব্যাপারটা মোটেও সেরকম ছিল না। ব্যাবিলনে অ্যাসিরীয় সীমান্তের এতটাই কাছে ছিল যে, ইতোমধ্যে ব্যাবিলনের বেশিরভাগ সরকারি কার্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শহরটি ততদিনে পবিত্রভূমি হিসেবে বিবেচিত হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল না। আর তিগলাথ-পিলেসারও যা বোঝানোর বুঝিয়ে সৈন্যসামন্ত নিয়ে নিজের দেশে ফিরে গিয়েছিল। তিনি ব্যাবিলনের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে চাননি। দুই রাজত্বের শক্তিমত্তা একইরকম ছিল এবং নিজেদের মধ্যে হানাহানি করার চেয়ে বড় চিন্তার কারণেরও অভাব ছিল না তাদের।

উত্তর ও পশ্চিম থেকে অনাহূত অতিথিদের আনাগোনা তখনও থামেনি।

প্রায় এক হাজার বছর আগে অ্যামোরাইটরা যেরকম নাছোড়বান্দা ছিল, ঠিক একইভাবে এই নব্য যাযাবররা বারবার সীমান্তে হামলা চালিয়ে তিগলাথ- পিলেসারকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল। অ্যাসিরীয়রা এই যাযাবরদের নাম দেয় আরামিয়ান। তিগলাথ-পিলেসারের নিজের বর্ণনায়, তিনি প্রায় ২৮ বার পশ্চিমে অভিযান চালান; এই আরামিয়ানদের পুরোপুরি পরাস্ত করার উদ্দেশে।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ব্যাবিলন ও অ্যাসিরীয়াও খরা ও দুর্ভিক্ষের হাত থেকে মুক্ত ছিল না। তিগলেথ-পিলেসারের সভাসদদের রেখে যাওয়া বর্ণনায় জানা যায়, তার রাজত্বের শেষ কয়েকটি বছর অ্যাসিরীয়ার লোকজন ক্ষুধার্ত ও মরিয়া অবস্থায় কাটিয়েছে। এ সময় তারা আশেপাশের পর্বতগুলোতে ছড়িয়েছিটিয়ে খাবারের খোঁজ করতে বাধ্য হয়।

ব্যাবিলনের অবস্থায় খারাপ হয়ে গেছিল। নেবুচাদনেজারের ২০ বছরের রাজত্বের শেষভাগে নাগরিকরা বেশ ভালো পরিমাণ দুর্ভোগ পোহান। শহরের দুর্দশার বিস্তারিত বর্ণনা আছে এররাস এপিক নামে একটি কবিতায়। এই দীর্ঘ কবিতায় দেবতা মারদুক অভিযোগ করেন, তার মূর্তি ঝেড়েপুছে পরিষ্কার রাখা হয়নি এবং তার মন্দিরের অবস্থাও শোচনীয়। কিন্তু তিনি খুব বেশি সময়ের জন্য ব্যাবিলন ছেড়ে এসব সমস্যার সমাধান করতে যেতে পারছেন না, কারণ যক্ষুনি তিনি ব্যাবিলন ত্যাগ করেন, তক্ষুনি শহরটির ওপর বড় ধরনের কোনো একটি বিপর্যয় নেমে আসে। বর্তমান ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য তিনি ‘এররা’ নামে অপর এক দেবতাকে দায়ী করেন। তার স্বভাবের কারণে এররা শহরটির ক্ষতি না করে থাকতে পারে না। এররা বলেন, ‘আমি এই ভূখণ্ড ধ্বংস করে দেব এবং এটিকে ধ্বংসস্তূপ হিসেবে বিবেচনা করব। আমি সব গবাদি পশু ও মানুষকে হত্যা করব।’

কবিতায় শুষ্ক ভূমি ও ফসল নষ্ট হওয়ার কথা বলা হয়েছে। রোগ-শোক ও ক্ষুধার কারণে দুই শহরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। যখন তিগলাথ- পিলেসারের ছেলে সিংহাসনে আরোহণ করলেন, ততদিনে আরামিয়ান সংক্রান্ত সমস্যা এতটাই প্রকট হয়েছে যে তিনি ব্যাবিলনের নতুন রাজার সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হলেন। এককালের দুই শক্তিশালী রাজ্য মিলে উভয়ের জন্য সমভাবে পীড়াদায়ক এই শত্রুকে বিতাড়ন করার সংকল্প করল।

তবে এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আরামিয়ানরা অ্যাসিরীয়ার বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়। শুধু সাম্রাজ্যের একেবারে কেন্দ্রের অংশটুকু ছাড়া বাকি পুরো অঞ্চলই তাদের কুক্ষিগত হয়। তারা ব্যাবিলনেও হামলা চালায় এবং একজন আরামিয়ান নেবুচাদনেজারের ছেলেকে উৎখাত করে সিংহাসনের দখল নেন।

মিশরের দখল নেওয়া ডোরিয়ানদের মতো এই আরামিয়ানদেরও লেখালেখির অভ্যাস ছিল না। ফলে মিশর থেকে শুরু করে গ্রিক উপদ্বীপ পর্যন্ত এই সুবিশাল এলাকা প্রায় ১০০ বছরের জন্য অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে। ইতিহাসের পাতায় এই সময়টির তেমন কোনো উল্লেখ নেই বললেই চলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *