৩০. পার্কিং লটে কয়েকশো গাড়ি

৩০.

পার্কিং লটে কয়েকশো গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, মাঝখানের ফাঁক দিয়ে ছুটছে পিটের স্টাজ। স্পীড ঘণ্টায় পঞ্চাশ মাইল, সাদা লিমুসিন থেকে বিশ সেকেন্ড পিছিয়ে রয়েছে ওরা।

হর্নের বোমাটা টিপে রেখেছে পিট। তবে বেশিরভাগ দর্শক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা দেখছে, পার্কিং লট প্রায় নির্জনই বলা যায়। কোন বিপদ ঘটল না, রাস্তায় নেমে এল স্টাজ।

রাগে উন্মাদ হয়ে আছে পিট। সাদা লিমুসিনকে দাঁড় করিয়ে লরেনকে উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। বড় আকারের ডি-এইচ এঞ্জিন থাকায় স্টাজের চেয়ে দ্বিগুণ হর্সপাওয়ার রয়েছে লিমুসিনের। ও জানে, এটা ঠিক ক্রিমিন্যাল কিডন্যাপিং নয়, তারচেয়ে মারাত্মক কিছু। কিডন্যাপাররা লরেনকে মেরে ফেলবে বলে ভয় পাচ্ছে ও।

হাইওয়েতে উঠে এল ওদের গাড়ি।

ওরা আমাদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে আছে, ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো হতাশ গলায় বললেন।

দেখা যাক ধরতে পারি কিনা, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ একটা ভাব ফুটে রয়েছে পিটের চেহারায়। সাইড রোড থেকে একটা গাড়ি উঠে এল হাইওয়েতে, দ্রুত হুইল ঘুরিয়ে সংঘর্ষ এড়াল ও ওরা জানে না আমরা ধাওয়া করছি, কাজেই টহল পুলিশের ভয়ে স্পীড লিমিটের বাইরে যাবে না। স্টেট, পুলিশ বাধা না দেয়া পর্যন্ত ওটাকে আমি শুধু দৃষ্টি সীমার মধ্যে রাখতে চাই।

পিটের গাড়িটার সাথে কথা বলছে পিট, অনুরোধ করছে আরও জোরে ছোটার। ওর মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। যেন ওর অনুরোধে সাড়া দিয়েই স্পীড বেড়ে গেল স্টাজের। ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো দেখলেন স্পীড মিটারের কাটা নব্লুইয়ের ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন অবস্থায়ও গাড়িটা এত জোরে ছোটেনি। একের পর এক কার, ট্রাক, ট্রেইলারকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে পিট। বাঁক নেয়ার সময়ও গতি কমাল না। গাড়িটা রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ছে না দেখে বিস্মিত হলেন। ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। এঞ্জিনের আওয়াজকে ছাপিয়ে উঠল অন্য একটা শব্দ, জানালা দিয়ে বাইরে মাথা বের করে আকাশের দিকে তাকালেন তিনি। হেলিকপ্টার।

পুলিশ?

 কোন ছাপ নেই। দেখে যেন হচ্ছে কমার্শিয়াল।

 রেডিও না থাকলে কত যে অসুবিধে।

লিমুসিনের দুশো মিটার পিছনে চলে এসেছে ওরা, এই সময় সামনের গাড়ির লোকজন স্টাজের অস্তিত্ব টের পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেল স্পীড, দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে।

সমস্যা সৃষ্টি করল বড় একটা ডজ পিকআপ ট্রাক। ক্লাসিক কারটাকে দেখে খুব মজা পেল ড্রাইভার, কৌতুক করার লোভ সামলাতে পারল না। যতবার পাশ কাটাবার চেষ্টা করছে পিট, ডজের ড্রাইভার যতবার বাধা দিচ্ছে, বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে সে। জানালা দিয়ে মাথা বের করে ভেঙাচ্ছে পিটকে।

হোলস্টার থেকে খুদে অটোমেটিকটা বের করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। দেব নাকি ব্যাটার ক্যাপটা উড়িয়ে?

আমি একটু চেষ্টা করে দেখি, বলল পিট। ডজে ডান দিকে সরে ও, পরমুহূর্তে বাম দিকে একবার ডানে, তারপরই বামে, বারবার। বাধা দেয়ার জন্যে ডজের ড্রাইবারও দ্রুত ডানে বামে সরে যাচ্ছে। পিট কোন দিকে আছে দেখার জন্যে জানালা দিয়ে ঘন ঘন পিছন দিকে তাকাচ্ছে লোকটা। জানে না, কাজটা ওকে পিটই করাচ্ছে।

সামনে বাঁক, কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই লোকটার। রাস্তার ধারে নিচু পাঁচিল, বাঁক নিতে দেরি করায় ধাক্কা খেল ডজ, পাঁচিল ভেঙে ঢালের কিনারায় চলে গেল। ঢাল বেয়ে নেমে যাচ্ছে, ভাগ্য ভাল উল্টে পড়ল না ট্রাকটা। পাশ কাটাবার সময় লোকটার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল পিট। হাসছে ও।

 বাঁক ঘুরতেই নিভে গেল মুখের হাসি। পরবর্তী বাঁকের মুখে একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে, তেলের তিনটে ড্রাম পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর, তার মধ্যে একটা গড়াগড়ি খাচ্ছে। শেষ ড্রামটা ফেটে গেছে, হড়হড় করে বেরিয়ে আসছে চকচকে তেল। সাদা লিমুসিন। কোন রকমে সংঘর্ষ এড়াল, তবে তেলের মধ্যে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। কোন বিরতি ছাড়াই তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরে বৃত্ত রচনা করল দুবার। অলৌকিক ক্ষমতায় ড্রাইভার আবার সিধে করে নিল গাড়ি, ছুটে গেল সামনের দিকে।

 গতি কমাবার সময় পাওয়া গেল না, ব্রেক করলে উল্টে যাবে গাড়ি, প্রায় আত্মহত্যার ঝুঁকি নিয়ে পিটও ঝাঁপ দিল তেলের মধ্যে। এই সময় পিছু হটতে শুরু করল ট্রাক। সংঘর্ষ অনিবার্য, দুহাতে সিট আঁকড়ে ধরে তৈরি হলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। একেবারে শেষ মুহূর্তে গাড়িটাকে কাত করে ফেলল পিট, এক দিকের দুটো চাকা প্রায় শূন্যে উঠে পড়ল, অপর দিকের চাকা দুটো পিছলাতে শুরু করেছে। তেলের মধ্যে পড়ল গাড়ি ব্রেক করেনি পিট, শুধু ক্লাচ ঠেলে দিল, তেলের উপর দিয়ে নিজের খুশি মত ছুটতে দিল গাড়িটাকে। তারপর ঘাস মোড়া রাস্তার কিনারায় চলে এল ও, যতক্ষণ চাকায় তেল থাকল ততক্ষণ আর রাস্তায় উঠল না।

 দুটো গাড়ির মাঝখানে দূরত্ব এখন খুব সামান্যই। হেলিকপ্টার? জানতে চাইল পিট।

জানালা দিয়ে মাথা বের করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। আছে। লিমুসিনের ওপর, ডান দিকে।

আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, দুটো একই দলের।

ফড়িংটার গায়ে কোন ছাপ না থাকাটা সন্দেহজনক, একমত হলেন ম্যানকিউসো।

ওদের কাছে অস্ত্র থাকলে আমরা গেছি।

আকাশ থেকে অটোমেটিক অ্যাসল্ট উইপন ব্যবহার করা হলে আমার খুদে কোল্ট কোন কাজে আসবে না।

কিন্তু কয়েক মাইল আগেই গুলি করে আমাদেরকে অচল করে দিতে পারত। দেয়নি কেন?

পানি নেই, রেডিয়েটরের দিকে আঙুল তাক করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো।

 ফিলার ক্যাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে।

লিমুসিনের পিছনের সীটে, কল্পনার চোখে দেখতে পেল পিট, হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে লরেন। ভয় ও দুচিন্তায় হিম বাতাসের মত ঝাপটা মারল ওর মনে। কিডন্যাপাররা এরই মধ্যে তাকে মেরে ফেলেছে কিনা কে জানে। চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিয়ে ভাবল, লরেনকে জিম্মি রেখে মুক্তিপণ চাওয়ার সুযোগটা ওরা হাতছাড়া করবে না। তবে লরেনের যদি কোন ক্ষতি করে, ওদের সব কটাকে মরতে হবে, যেন মনে প্রতিজ্ঞা করল ও।

ভূতে পাওয়া মানুষের মত, যেন একটা ঘোরের মধ্যে ধাওয়া করছে পিট। যেভাবেই হোক লরেনকে মুক্ত করতে হবে। ঘোয়ারের মত লিঙ্কনটাকে ধাওয়া করে যাচ্ছে।

স্পীড বাড়িয়ে পালাতে পারছে না ওরা, ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো এক সময় বললেন।

ওরা আমাদের সাথে খেলছে, বলল পিট, তাকিয়ে আছে পঞ্চাশ মিটার দূরের সাদা লিমুসিনের দিকে। ইচ্ছে করলেই আমাদেরকে পেছনে রেখে চলে যেতে পারে ওরা।

হতে পারে ওদের এঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

 আমার তা মনে হয় না। ড্রাইভার লোকটা প্রফেশন্যাল। তেলের উপর দিয়ে আসার পর একই গতিতে ছুটছে সে।

রাস্তার পাশের গাছপালার ফাঁক দিয়ে রোদ এসে চোখে লাগছে। হাতঘড়ি দেখলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো।স্টেট পুলিশ আসছে না কেন?

আশপাশের সমস্ত রাস্তা চষে ফেলছে। কোথায় রয়েছি আমরা,অ্যাল তা জানে না।

এই গতি খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন না আপনি।

অ্যাল ঠিকই আমাদেরকে খুঁজে নেবে, দৃঢ়কণ্ঠে বলল পিট, পুরানো বন্ধুর ওপর ওর আস্থার কোন অভাব নেই।

 নতুন আরেকটা শব্দ ঢুকল কানে, মাথাটা জানালা দিয়ে আবার বের করলেন ম্যানকিউসো। তারপর শরীরের প্রায় অর্ধেকটাই বের করে আনলেন। হাত দুটো উন্মাদের মত নাড়ছেন।

 কি ব্যাপার? জানতে চাইল পিট, তীক্ষ্ণ একটা বাঁক ঘুরে দেখল সামনে ছোট একটা ব্রিজ, নিচে সরু খাল।

আরেকটা হেলিকপ্টার, রুদ্ধশ্বাসে বললেন ম্যানকিউসো।

 কোন ছাপ আছে?

ব্রিজ পেরিয়ে এল গাড়ি, রাস্তার দুপাশে এখন আর কোন গাছ নেই। যতদূর দৃষ্টি যায় খেত, মাঠ, খাল আর প্রকাণ্ড আকারের কংক্রিটের সাইলো।

দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটা একদিকে কাত হলো, ফলে গায়ের লেখাগুলো পরিষ্কার পড়তে পারলেন ম্যানকিউসো। হেনরিকো কাউন্টি শেরিক ডিপার্টমেন্ট। রোটর ব্লেডের শব্দকে ছাপিয়ে উঠল তার চিৎকার। পরমুহূর্তে অ্যাল জিওর্দিনোকে চিনতে পারলেন তিনি, হেলিকপ্টারের খোলা দরজা থেকে হাত নাড়ছে। সময়মতই। পৌঁছেছে সে, বুড়ি স্টাজের দশ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।

দ্বিতীয় হেলিকপ্টারকে বেধে ফেলেছে প্রথমটার পাইলট। হঠাৎ করে দিক বদলাল সে, অনেকটা নিচে নেমে দ্রুতবেগে ছুটল উত্তরপূর্ব দিকে। ফসল ঢাকা একটা মাঠের শেষ মাথায় সারি সারি গাছ দাঁড়িয়ে আছে, আড়াল পাবার জন্যে পালাচ্ছে সেদিকে।

ধীরে ধীরে রাস্তার একপাশে সরে গেল সাদা লিংকন। আঁতকে উঠল পিট, দেখল রাস্তার কিনারা থেকে নিচের দিকে খসে পড়তে যাচ্ছে গাড়িটা। ছোট একটা গতে পড়ল সাদা লিমুসিন,তারপর ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল খেতের দিকে, যেন হেলিকপ্টারের পিছু নিতে চায়।

 দ্রুত চোখ বুলিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিল পিট, হুইল ঘুরিয়ে অনুসরণ করল লিমুসিনকে। শুকলো ও ভঙ্গুর আঘাত করল উইন্ডস্ক্রীনে, তাড়াতাড়ি মাথাটা গাড়ির ভেতর টেনে নিলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো।

সাদা গাড়িটাকে ধাওয়া করছে স্টাজ। সামনে ধুলোর পাহাড়। প্রায় কিছুই দেখতে পাচ্ছে না পিট, তবু গণি একটু কমাল না।

 কাঁটাতারের একটা বেড়া ফুঁড়ে বেরিয়ে এল ওরা। বুঝতে পারেনি পিট, যাচ্ছে। তীর বেগে ছুটে এসে সরাসরি কংক্রিটের একটা সাইলোর সাথে ধাক্কা খেল লিঙ্কন।

 ওহ গড! আঁতকে উঠলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো, বুঝতে পাচ্ছে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব নয়।

সংঘর্ষ এড়াবার জন্যে মরিয়া হয়ে ডান দিকে হুইল ঘোরাল পিট, সাইলোর কোণ ঘেষে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা। স্টাজ ঘুরতে শুরু করল, পিছনটা বাড়ি খেল বিধ্বস্ত লিংকনের সাথে। খানিক দূরে এগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ওদের গাড়ি।

গাড়ি দাঁড়াবার আগেই নেমে পড়েছে পিট, লিমুসিনের দিকে ছুটছে। বাঁক ঘুরতেই ছ্যাৎ করে উঠল বুক, দুমড়ে মুচড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে লিংকন। এ ধরনের সংঘর্ষের পর কারও পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ফ্রন্ট-সিট ভেঙে বেরিয়ে এসেছে এঞ্জিন, ছাদে ঠেকে রয়েছে স্টিয়ারিং হুইল। ড্রাইভারকে কোথাও না দেখে পিট ধরে নিল, গাড়ির অপর দিকে ছিটকে পড়েছে লোকটা।

 প্যাসেঞ্জার সিট বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই, ছাদের সাথে জোড়া লেগে গেছে। দরজাগুলো তুবড়ে ডেবে গেছে ভেতর দিকে। জানালার কাঁচ যেটুকু অবশিষ্ট আছে, লাথি মেরে ভেঙে ফেলল পিট, ভেতরে মাথা গলালো।

ভেতরে কেউ নেই।

সমস্ত অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে পিটের, বিধ্বস্ত গাড়িটার চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু কোথাও কোন লাশ পড়ে নেই। কিছুই পেল না ও, একটু রক্ত বা এক টুকরো ছেঁড়া কাপড়ও নয়। তারপর ডেবে যাওয়া ড্যাশবোর্ডের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ভৌতিক গাড়িটায় কেন কেউ নেই। ইলেকট্রিক্যাল কানেক্টর থেকে ছোট্ট একটা ইন্সট্রুমেন্টে খুলে নিয়ে পরীক্ষা করল ও, রাগে লালচে হয়ে উঠল চেহারা।

তখনও বিধ্বস্ত গাড়িটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে পিট, নেমে আসা হেলিকপ্টার থেকে ছুটে এল অ্যাল। স্টাজ থেকে নেমে তার সাথে এলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসোও।

লরেন? ব্যাকুল কণ্ঠে জানতে চাইল অ্যাল।

মাথা নেড়ে হাতের ইন্সট্রুমেন্টটা অ্যালের দিকে ছুঁড়ে দিল পিট। আমাদেরকে বোকা বানানো হয়েছে, বলল ও। গাড়িটা ছিল টোপ। অপারেট করেছে একটা ইলেকট্রনিক রোবট ইউনিট, ঢালানো হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে, রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে।

উদভ্রান্তের মত লিমুসিনের চারদিকে তাকালেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। আমি… আমি নিজের চোখে মিস লরেনকে চড়তে দেখেছি ওটায়।

আমিও দেখেছি, তাকে সমর্থন করল অ্যাল।

 সেটা অন্য গাড়ি, শান্ত গলায় বলল পিট।

 কিন্তু এটা তো একবারও আমাদের চোখের আড়ালে যায়নি।

গেছে। চিন্তা করে দেখুন। আমারা ধাওয়া করি বিশ সেকেন্ড পর। পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে আসারও বেশ খানিক পর এটাকে আমরা দেখতে পাই। গাড়ি বদলের ঘটনা ঘটেছে পার্কিং লটে।

কয়েক মুহূর্তে কথা বলল না কেউ। তারপর নিস্তব্ধতা ভাঙল অ্যাল। লরেন ওদের হাতে, যেন ব্যথায় কাতরে উঠল সে। ছাই হয়ে গেছে মুখের চেহারা। গড হেলপ আস, লরেন ওদের হাতে।

লিমুসিনের দিকে তাকিয়ে আছে পিট, হাত দুটো মুঠো করা, কিছুই দেখছে না। লরেনকে আমি উদ্ধার করব, বলল ও, গলার স্বর বরফের মত ঠাণ্ডা। ওর কোন ক্ষতি হলে ওদেরকে আমি ছাড়ব না।

.

তৃতীয় পর্ব

আজিমা দ্বীপ

অক্টোবর ১২, ১৯৯৩, বিলফিল্ড, পশ্চিম জার্মানি।

৩১.

কাঠের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে খেতের উপর নিয়ে ঢাল ও বনভূমির দিকে তাকাল অগাস্ট ক্লওসেন। গোটা উপত্যকা জুড়ে তার ফার্ম, উপত্যকটাকে ঘিরে রেখেছে আঁকাবাঁকা একটা পাহাড়ী নদী। কিছুদিন হলো নদীতে একটা বাঁধ দিয়েছে সে। কোটের বোতামগুলো লাগিয়ে গোলাবাড়ির দিকে এগোল, আজ তাকে ট্রাক্টর নিয়ে কাজে যেতে হবে।

শক্ত-সমর্থ ক্লওসেনের বয়স চুয়াত্তর হলেও ভোর থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে সে। তার পরিবার পাঁচ পুরুষ ধরেই এই ফার্মের মালিক। দুই মেয়ে আছে তার, কোন ছেলে নেই, মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাবার পর স্বামী-স্ত্রী একা হয়ে গেছে। ফসল কাটার সময় কাজের লোক রাখতে হয়, বছরের বাকি সময়টা নিজেরা খাটে। গোলাবাড়ি থেকে ট্রাক্টর নিয়ে বেরিয়ে এল সে, মেঠো পথ ধরে এগোল দূর প্রান্তের একটা খেতের দিকে। খেতের ফসল কাটা হয়ে গেছে, এক কোণে ছোট একটা গর্ত আজ তাকে মাটি ফেলে ভরতে হবে। কাল বিকেলে ট্রাক্টরের সামনের অংশে একটা যান্ত্রিক কোদাল অর্থাৎ স্কুপ লাগিয়ে রেখেছে সে, ওটার সাহায্যে মাটি বয়ে এনে গর্তের ভেতর ফেলবে। যুদ্ধের সময়কার একটা কংক্রিট ব্যাংকারের পাশে উঁচু ঢিবি আছে, কাজেই মাটি পাওয়া কোন সমস্যা নয়।

ক্লওসেনের জমির একটা অংশ লুফটভাফ ফাইটার স্কোয়াড্রন-এর এয়ারফিল্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যুদ্ধের সময়। যুদ্ধের সময় জার্মানি ছেড়ে পালিয়েছিল সে, ফিরে এসে দেখে তার খেতগুলোর ছড়িয়ে আছে পোড়া ও ভাঙাচোরা প্লেন, মোটরগাড়ি, জীপ ইত্যাদি। বেশিরভাগই বাতিল লোহা-লক্কড় হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে সে।

 মেঠো পথ ধরে দ্রুত এগোচ্ছে ট্রাক্টর। দুহপ্তা বৃষ্টি হয়নি, খটখট করছে মাটি। গর্তটার কাছে এসে ট্র্যাক্টর থামাল সে, নেমে এসে কিনারায় দাঁড়াল। কৌতুক বোধ করল রয়টার, কাল যেমন দেখেছিল আজ যেন তার চেয়ে একটু বেশি গভীর দেখাচ্ছে গর্তটাকে গর্তের নিচে, মাটির তলায় পানি থাকতে পারে, ভাবল সে। যদিও মাটিতে ভেজা কোন ভাব নেই।

ট্রাক্টরে আবার চডল কওসেন, কংক্রিট বাংকারের পাশে মাটির ঢিবির কাছে চলে এল। জায়গাটা গাছপালা দিয়ে ঢাকা, আশপাশের খেতে কেউ থাকলেও তাকে দেখতে পাচ্ছে না। স্কুপে মাটি ভরে গর্তের কিনারায় চলে এল সে। স্কুপের মাটি গর্তের মধ্যে ফেলতে যাবে, হঠাৎ লক্ষ করল ট্রাক্টরের সামনের অংশ নিচের দিকে ডেবে যাচ্ছে। প্রথম অবাক হলো কওসেন, তারপর আতঙ্কিত। ট্রাক্টরের সামনের চাকা মাটির তলায় সেঁধিয়ে যাচ্ছে।

কিনারা থেকে তলা পর্যন্ত ফাঁক হয়ে যাচ্ছে গর্তটা, সদ্য তৈরি বিশাল একটা হাঁ-র ভেতর ডাইভ দিচ্ছে ট্রাক্টর। আতঙ্কে, অবিশ্বাসে স্থির পাথর হয়ে গেল কওসেন। তাকে নিয়ে নিচের অন্ধকারে তলিয়ে গেল ট্রাক্টর। হুইলটা দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধাতব মেঝেতে বসে পড়ল কওসেন। প্রায় বারো মিটার খসে পড়ল ট্রাক্টর,ছলাৎ করে আওয়াজ হলো। পাতালে জমে থাকা পানির মধ্যে পড়েছে সে। শুধু ট্রাক্টর নয়, তার সাথে ধুলোর মেঘ নেমে এল পানিতে, ঝাপসা হয়ে গেল চারদিক। পানিতে পড়েও খানিকদূর এগোল ট্রাক্টর, থামার পর দেখা গেল পিছনের উঁচু চাকাগুলো প্রায় পুরোটাই ডুবে গেছে পানিতে।

পতনের ঝাঁকি খেয়ে দম ফুরিয়ে গেছে মার্কের। পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করল সে। শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙ্গে গেছে বলে সন্দেহ হলো তার। দুটো পাঁজরের দাঁড়াও ভেঙেছে, স্টিয়ারিং হুইলটা বুকের সাথে ধাক্কা খাওয়ায়। ধড়ফড় করছে বুক, ব্যথায় গোঁড়াচ্ছে। বুকের কাছে পানি উঠে আসছে দেখে আতঙ্কে কান্না পেল তার।

 তবু ভাগ্য ভাল যে ট্রাক্টরটা উল্টে যায়নি বা কাত হয়ে পড়েনি। সেক্ষেত্রে চিড়ে-চেপটা হয়ে মারা যেত সে। মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকাল কওসেন, খাদের কিনারা এত খাড়া আর উঁচু যে একার চেষ্টায় ওপরে উঠার কোন প্রশ্নই উঠে না। চারপাশে চোখ বুলাল সে।

 ট্রাক্টরটা লাইমস্টোন-এর প্রকাণ্ড এক গুহার ভেতর পড়েছে। গুহার একটা দিকে পানি আছে, অপর দিকটা ক্রমশ উঁচু হয়ে উঠে গেছে চওড়া এক সুড়ঙ্গে। গুহার অপর দিকেও একটা সুড়ঙ্গ রয়েছে, তবে মুখের কাছটা পানিতে ডোবা। দুটো সুড়ঙ্গই ছয় মিটারের মত উঁচু। মসৃণ ও সমতল সিলিঙ দেখে বোঝা যায়। লাইমস্টোন কেটে টানেলগুলো তৈরি করা হয়েছে ভারী ইকুইপমেন্টের সাহায্যে।

দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করছে কওসেন, হামাগুড়ি দিয়ে ও সাঁতার কেটে ঢাল বেয়ে উঠে এল শুকনো সুড়ঙ্গের মুখে। টানেলের ভেতর আলো খুব কম, সব কিছু ঝাপসা লাগল চোখে, তবু পরিচিত আকৃতিগুলো দেখেই চিনতে পারল সে। টানেলের ভেতরটা চওড়া হয়ে গেছে, চারদিকে সারি সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো প্লেন। দুচারটে নয়, ডজন ডজন! চিনতে পারল কওসেন, লুফটভাফ এর প্রথম টার্বোজেট এয়ারক্রাফট এগুলো। প্রায় পঞ্চাশ বছর কোন যত্ন নেয়া হয়নি, অথচ দেখে মনে হচ্ছে সবগুলো উড়তে পারবে। চ্যাপ্টা হয়ে আছে টায়ারগুলো, অ্যালুমিনিয়ামে সামান্য মরচে ধরেছে, বোঝা যায় অনেকদিন কারও হাত পড়েনি। মিত্র বাহিনী পৌঁছানোর আগেই সম্ভবত এই গোপন এয়ার বাস খালি করা হয়, সীল করে দেয়া হয় প্রবেশপথগুলো। তারপর এটার অস্তিত্ব ভুলে যাওয়া হয়।

এতই বিস্মিত ও উত্তেজিত হয়ে পড়েছে কওসেন, প্রায় কোন ব্যথাই অনুভব করছে না। প্লেনগুলোর মাঝখান দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে সে। ইতোমধ্যে চোখে সয়ে গেছে অন্ধকার। ফ্লাইট কোয়ার্টার ও মেইন্টেন্যান্স রিপেয়ার শেড-এ চলে এল সে। প্রতিটি জিনিস সাজানো অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে, দ্রুত পলায়নের কোন লক্ষণ চোখে পড়ে না।

এসব রয়েছে তার জমিনের নিচে, সেই এগুলোর মালিক। চিন্তাটা আরও উত্তেজিত করে তুলল কওসেনকে। সংগ্রাহকদের কাছে এসব প্লেন বেঁচতে পারলে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাবে।

ধীর পায়ে গুহার কিনারায় ফিরে এল কওসেন। শুধু ট্রাক্টরের স্টিয়ারিং হুইল আর ওপরের টায়ারগুলো ভেসে আছে পানির ওপর। মুখ তুলে আবার আকাশের দিকে তাকালো সে। না, একা তার পক্ষে ওঠা সম্ভব নয়।

 ভয়টা দূর হয়ে গেছে, কারণ কওসেন জানে তার ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখলে বউ তাকে খুঁজতে আসবে। প্রতিবেশীদের সাহায্যে এই গুহা থেকে তাকে উদ্ধার করবে সে।

টানেলের ভেতর নিশ্চয়ই কোথাও একটা জেনারেটর আছে, ভাবল কওসেন। খুঁজে দেখতে হয়। ভাগ্য ভাল হলে ছোট একটা উনন জ্বালতে পারবে সে, তাতে করে আলোও পাওয়া যাবে। হাতঘড়ি দেখল কওসেন। ঘণ্টা চারেকের মধ্যে তাকে খুঁজে বের করে ফেলবে তার স্ত্রী, ধারণা করল সে। গুহার উল্টোদিকে তাকাল, ভাবল ওদিকের টানেলে কি আছে কে জানে।

.

৩২.

পাবলিক যদি জানত সরকার কত কি গোপন রাখে, ওয়াশিংটনে আগুন ধরিয়ে দিত। তারা, বললেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। ভার্জিনিয়ার শহরতলি দিয়ে ছুটছে বাস, জানালা-দরজার কাঁচগুলো রঙিন ও বুলেটপ্রুফ। বিখ্যাত একটা বাস সার্ভিসের গাড়িতে রয়েছে ওরা, এটাকে নুমার মোবাইল কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সন্দেহ নেই আমরা একটা কঠিন যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছি, বললেন ডোনাল্ড কার্ন, টিমগুলোর ডেপুটি ডিরেক্টর অভ অপারেশনস।

 এক ধরনের যুদ্ধ, সমর্থনের সুরে বলল পিট। লরেন ও সিনেটর ডিয়াজকে একই দিনে কিডন্যাপ করা হয়েছে, এর চেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার আর কি হতে পারে। তথ্যটা নির্ভুল তো, মি. ডোনাল্ড?

সিনেটর তার ফিশিং লজ থেকে আজ সকালে বোটে চড়েন। লেকের মাঝখানে আক্রান্ত হন তিনি। আশপাশে দুজন জেলে ছিল, তারা সব দেখেছে। একটা লঞ্চ এসে সিনেটরকে জোর করে তুলে নেয়। লোকগুলো জাপানি। দুঘন্টা পর এফবিআই একটা টেলিফোন পায়। কিডন্যাপিঙের কৃতিত্ব দাবি করেছ ব্লাড রেড ব্রাদারহুড।

 কুখ্যাত টেরোরিস্ট অর্গানাইজেন, মন্তব্য করল পিট, তারপর জানতে চাইল, লিমুসিনকে যে হেলিকপ্টারটা নিয়ন্ত্রণ করছি, সেটার কোন খবর জানেন?

 হাম্পটন বোড পর্যন্ত দেখা গেছে ওটাকে, তারপর আকাশেই বিস্ফোরিত হয়ে পড়ে গেছে পানিতে। এই মুহূর্তে নেভীর একটা স্যালভেজ টিম ডাইভ দিচ্ছে…

 কোন লাশ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয় গাড়িটা পাওয়া গেছে, যেটায় লরেন ছিল?

মাথা নাড়লেন ডোনাল্ড কার্ন। কংগ্রেস সদস্য মিস লরেনকে সম্ভবত তৃতীয় কোন গাড়িতে তুলে নেয় ওরা, দ্বিতীয় গাড়িটাকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।

তল্লাশি করছে কারা?

এফবিআই।

আপনার ধারণা, গাড়ি-বোমার সাথে এই কিডন্যাপিঙের সম্পর্ক আছে? জানতে চাইল অ্যাল। অনুস্থর থেকে পিট, ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো ও অ্যালকে বাসে তুলে নিয়েছেন ওঁরা।

এমন হতে পারে, ওরা আমাদেরকে আগে না বাড়ার জন্যে সাবধান করে দিতে চাইছে, বললেন ডোনাল্ড কার্ন। কিংবা হয়তো চাইছে সিনেট সাব-কমিটি বাতিল হয়ে যাক। সাব-কমিটি তদন্ত করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি পুঁজি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা উচিত কিনা। মিস লরেন ও মি. ডিয়াজ, দুজনেই নিষিদ্ধ করার পক্ষে।

 প্রেসিডেন্ট পড়েছেন উভয় সঙ্কটে, বললেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। ওদের কিডন্যাপিং সম্পর্কে নিউজ মিডিয়াকে কিছু জানাতে নিষেধ করেছেন তিনি, তার ধারণা সবাই জেনে ফেললে কিডন্যাপাররা ওদেরকে মেরে ফেলতে পারে। আবার ভয় পাচ্ছেন, কংগ্রেস ও পাবলিক জেনে ফেললে কি কান্ডই না বেধে যায়।

আমার ধারণা, ব্লাড রেড ব্রাদারহুডের কাজ নয় এটা, বলল পিট। ওদের সংগঠন অতটা শক্তিশালী নয়।

তাহলে? জানতে চাইল অ্যাল।

ডোনাল্ড কার্ন বললেন, আমরা যতদূর জানি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী বা তার মন্ত্রিসভার কোন সদস্য জড়িত নন। তাঁদের অগোচরে কি ঘটছে, তাঁরা বোধহয় কোন খবরই রাখেন না। এ ধরনের ঘটনা জাপানি রাজনীতিতে দুর্লভ নয়। আমরা একটা অত্যন্ত গোপন সংগঠনকে সন্দেহ করছি। একদল উগ্র জাতীয়বাদী শিল্পপতি ও আন্ডারওয়ার্ল্ড লিডার, জাপানের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। টিম হোন্ড যে তথ্য পাঠিয়েছে, তা থেকে মনে হয় হিদেকি সুমা নামে এক বাস্টার্ড এই গোপন সংগঠনের নেতা। গাড়ি-বোমার পিছনে যে সুমা আছে, এ ব্যাপারে মার্ভিন শওয়াল্টার নিশ্চিত।

হিদেকি সুমা, বললেন অ্যাডমিরাল। গত তিন দশক ধরে আড়াল থেকে জাপানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।

তার আগে নিয়ন্ত্রণ করত সুমার বাবা, বললেন ডোনাল্ড, তাকালেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসোর দিকে। মি. ম্যানকিউসো সুমার ব্যাপারে একজন এক্সপার্ট। হিদেকি পরিবারের একটা ফাইল তৈরি করেছেন তিনি।

একটা সিগারেট ধরিয়ে ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসে জিজ্ঞেস করলেন, ঠিক কি জানতে চান আপনারা?

সংগঠনটার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বললেন কাঁপারফিল্ড।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি সৈন্যরা প্রথমে মাঞ্চুরিয়া ও কোরিয়ায় লুটপাট চালায়, তারপর একে একে চীন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, মালয়, সিঙ্গাপুর, ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ ও ডেইলাইন থেকে সোনা, পাথর, মূর্তি ইত্যাদি সরিয়ে আনে। সব মিলিয়ে চলতি বাজারে ওগুলোর দাম হবে দুশো বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

মাথা নাড়লেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। তা কি করে হয়।

শুধু সোনাই ওরা লুট করেছে সাত হাজার টনের ওপর।

সব তারা জাপানে নিয়ে যায়? জানতে চাইল অ্যাল।

উনিশশো তেতাল্লিশ সাল পর্যন্ত। তারপর ওদের জাহাজগুলোকে আমাদের সাবমেরিন বাধা দিলে স্রোতটা মন্থর হয়ে আসে। রেকর্ড দেখে অনুমান করা হয়, লুটের অর্ধেক মাল ফিলিপাইনে পাঠানো হয়, পরে টোকিওতে নিয়ে যাবার জন্যে। তবে যুদ্ধের শেষদিকে বিভিন্ন দ্বীপে গোপনে পুঁতে ফেলা হয়।

এসবের সাথে হিদেকি পরিবারের সম্পর্ক কি? জানতে চাইল পিট।

বলছি, সিগারেটে টান দিলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। চলতি শতাব্দীর প্রথম দিকে জাপানের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করত ব্ল্যাক স্কাই নামে একটা ক্রিমিন্যাল অর্গানাইজেশন। পরে ব্ল্যাক স্কাই-এর দুজন এজেন্ট গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলে, নাম দেয় গোল্ড ড্রাগন। দুজনের একজন হলো কোরোরি ইয়োশিশু, অপরজন হিদেকি সুমার বাবা।

কোরোরি ইয়োশিশুর বাবা ছিল কাঠমিস্ত্রী। দশ বছর বয়েসে তার বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ব্ল্যাক স্কাই-এর যোগ দেয় সে। অল্পদিনে নামও করে। উনিশশো সাতাশ সালে,তার বয়েস যখন আঠারো ব্ল্যাক স্কাই-এর লীডাররা তাকে আর্মিতে পাঠায়। রাজকীয় সেনাবাহিনী মারিয়া দখল করল, ইয়োশিশু ইতোমধ্যে ক্যাপটেন হয়েছে। মাঞ্চুরিয়ায় গোপনে হিরোইন ব্যবসা শুরু করল সে, তার এই অপারেশন থেকে ব্ল্যাক স্কাই কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।

 এক মিনিট, বলল অ্যাল। আপনি বলতে চাইছেন জাপানি সেনাবাহিনী ড্রাগ বিজনেসের সাথে জড়িত ছিল?

 ছিল না মানে! যুদ্ধের সময় যেখানে গেছে ওরা সেখানেই আফিম আর হিরোইনের ব্যবসা করেছে। শুধু তাই নয়, ওদের দখল করা প্রতিটি দেশে কালোবাজারীদের হাট বসে যেত। গুন্ডাপাণ্ডাদের ডেকে লটারির আয়োজন আর জুয়ার আসর বসাতে বলেছে…।

মাই গড।

হিদেকি সুমার বাবা আর কোরোরি ইয়োশিশু এক বয়েসী। প্রথমে রাজকীয় নৌ-বাহিনীতে ভর্তি হলেও, পালিয়ে গিয়ে নাম লেখায় ব্ল্যাক স্কাই-এর। গ্যাঙ লিডাররা তার রেকর্ড-পত্র মুছে ফেলার ব্যবস্থা করে, আবার নৌ-বাহিনীতে ভর্তি করে দেয় তাকে, এবার অফিসার হিসেবে। দুজনে একই সংগঠনের সদস্য, কাজেই একসাথে কাজ শুরু করল ওরা। একজন ড্রাগ ব্যবসা ধরল, অপরজন দায়িত্ব নিল লুট করা সোনা রাজকীয় জাহাজে তুলে দেয়ার।

 লুট করা সোনার কত ভাগ জাপানে পৌঁছায়? জানতে চাইল পিট। চেয়ার, থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙল ও, বাসের সিলিঙে ঠেকে গেল আঙুলগুলো।

 জাপানের ইমপেরিয়াল ওঅর ট্রেজারিতে খুব সামান্যই জমা পড়ে। বেশিরভাগই সাবমেরিনে করে টোকিওতে পাঠিয়ে দেয় ওরা, বিশেষ করে মূল্যবান পাথর ও প্রাটিনিয়াম। গ্রামের দিকে, এক বনভূমিতে, মাটির তলায় লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আর সোনার বেশিরভাগটাই রয়ে যায় পুজোর-এর মূল দ্বীপে। কয়েকশো মিটার লম্বা টানেলে রাখা হয় ওগুলো। টানেলগুলো কাটানো হয় মিত্রবাহিনীর বন্দী সৈনিকদের দিয়ে। কাজ শেষ হলে, মেরে ফেলা হয় সবাইকে। আমি কোরিগিদর-এ একটা টানেল আবিষ্কার করি, লাশ পাই তিনশো বন্দীর। ওদেরকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হয়েছিল।

এসব ঘটনার কথা প্রকাশ করা হয়নি কেন? জানতে চাইল পিট।

কাঁধ ঝাঁকালেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। তা বলতে পারব না। শুধু জানি, চল্লিশ বছর পর দুএকটা বইতে কিছু কিছু আভাস দেয়া হয়েছে মাত্র।

নাৎসী অপরাধীদের এখনও ধরে ধরে বিচার করা হচ্ছে, বলল পিট। কিন্তু জাপানি আর ক্রিমিন্যালরা বেঁচে গেল কেন?

 সে সময় যারা বিশ্বকে নেতৃত্বে দিয়েছেন, তারা দায়ী, বললেন অ্যাডমিয়াল। নাৎসীদের নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে ওঠে সবাই যে জাপানিদের কথা কারও মনেই পড়েনি।

 গম্ভীর স্বরে অ্যাল জানতে চাইল, যুদ্ধের পর জাপান কি ও-সব উদ্ধার করেছে?

কিছু উদ্ধার করে জাপানি ঠিকাদার কোম্পানিগুলো। ডেইলাইনকে শিল্পসমৃদ্ধ দেখে পরিণত করবে, এই আশ্বাস দিয়ে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে দেশটার ভেতর ঢোকার সুযোগ করে নেয়। কিছু উদ্ধার করেন ফার্দিনান্দ মার্কোস। কিছু মানে কয়েকশো টন। সবই তিনি দেশের বাইরে পাচার করেন। বিশ বছর পর বাকিটুকু উদ্ধার করে কোরোরি ইয়োশিশু আর হিদেকি পরিবার। তারপরও লুট করা সম্পদের প্রায় অর্ধেক রয়ে গেছে মাটির তলায়, তা আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

যুদ্ধের পর কি হলো ওদের? জানতে চাইল পিট।

ভারি চালাক, উনিশশো তেতাল্লিশ সালেই বুঝে ফেলে যুদ্ধে জাপান জিততে পারবে না। যুদ্ধে প্রাণ হারানোর বা জাপানি স্টাইলে দলবেঁধে আত্মহত্যার করার কোন ইচ্ছে ওদের ছিল না। একটা সাবমেরিন নিয়ে চিলিতে পালিয়ে যায় ওরা, সাথে ছিল বিপুল ধন-সম্পদ। ওখানে পাঁচ বছর কাটিয়ে ফিরে আসে জাপানে, গড়ে তোলে নিজেদের সংগঠন। পরবর্তী দশ বছরের আন্ডারগ্রাউন্ডে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অজেয় শক্তিতে পরিণত হয়।

হিদেকি সুমার বাবা লাঙ ক্যান্সারে মারা যায় উনিশশো তিয়াত্তর সালে। কোরোরি ইয়োশিশু আর হিদেকি সুমা বিশাল সংগঠনের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেয়। ইয়োশিশু নিয়ন্ত্রণ করে জাপানের আন্ডারওয়ার্ল্ড, শিল্প ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সুমা।

টিম হোভার রিপোর্ট অনুসারে, ওদেরকে জানালেন ডোনাল্ড কার্ন, ইয়োশিশু আর সুমা নিউক্লিয়ার উইপনস প্ল্যান্ট ও কেইটেন প্রজেক্ট সফল করার জন্যে নিজেদের সমস্ত শক্তি এক করেছে।

কেইটেন প্রজেক্ট? পুনরাবৃত্তি করল পিট।

গাড়ি-বোমা অপারেশন-এর কোড নেম।

কিন্তু জাপান সরকার পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের বিপক্ষে, বলল পিট। সরকারের সাহায্য ছাড়া ওরা নিউক্লিয়ার উইপনস ফ্যাসিলিটি তৈরি করেছে, এ কি বিশ্বাস করার মত একটা কথা?

রাজনীতিকরা জাপানকে চালায় না। আমলাদের পিছনে বসে প্রভাবশালী মহল সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। জাপান একটা লিকুইড মেটাল ফাস্ট রিডার রিয়্যাক্টর তৈরি করল, আমরা সবাই তা জানি। তবে খুব কম লোকই জানে যে, রিয়্যাক্টরটা পুটোনিয়ামও তৈরি করে, লিথিয়ামকে রূপান্তরিত করে ট্রিটিয়াম-এ। দুটো থার্মোনিউক্লিয়ারের জন্যে জরুরি উপাদান। আমার ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ব্যাপারে জাপানকে প্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পেলে খুশিই হবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তবে কেইটেন প্রজেক্ট সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলেই আমার ধারণা।

টিম হোন্ডা উইপনস প্ল্যান্ট-এর সন্ধান করতে পেরেছে? জানতে চাইল পিট।

 পাতাল শহর এডোর ষাট বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও, ওদের ধারণা।

কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না?

জিম হানামুরার ধারণা, এডো সিটির সাথে ফ্যাসিলিটির টানেল যোগাযোগ আছে। দারুণ একটা কাভার। সন্দেহ করার মত মাটির উপর কোন বিল্ডিং বা রোড নেই। এভোয় কয়েক হাজার লোক বসবাস করে, তাদের জন্যে নিয়মিত সাপ্লাই যাচ্ছে, বেরিয়ে আসছে আবর্জনা। নিউক্লিয়ার ইকুইপমেন্ট বা মেটেরিয়াল গোপনে আনা-নেয়া করা সম্ভব।

ডিটোনেশন কমান্ড সম্পর্কে কোন তথ্য? জিজ্ঞেস করল অ্যাল।

ড্রাগন সেন্টার?

ওরা ওটার ওই নাম দিয়েছে?

হ্যাঁ। হাসলেন ডোনাল্ড কার্ন। না, নিরেট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। রয় ওরশিয়ার শেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সে একটা সূত্র পেয়েছে। একটা পেইন্টিং।

পেইন্টিং মানে? বিরক্ত মনে হলো অ্যালকে।

বাসের পিছনের একটা দরজা খুলে গেল, কমিউনিকেশন কমপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে এক লোক ডোনাল্ডের হাতে কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে দিল।

মেসেজটা পড়ছেন, চেহারা কঠিন হয়ে উঠল ডোনাল্ডের। শেষ পাতাটা পড়ার সময় চেয়ারের হাতল ধরা হাতটা কাঁপতে শুরু করল। ওহ মাই গড।

তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়লেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। কি ব্যাপার?

পালাউ থেকে মেল পেনারের স্ট্যাটাস রিপোর্ট। মার্ভিন শওয়াল্টারকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, দূতাবাসের কাছাকাছি একটা রাস্তা থেকে।

বলে যান।

 রয় ওরশিয়া মেল পেনারকে রিপোর্ট করেছে, সে নিশ্চিতভাবে জেনেছে মাটির দেড়শো মিটার নিচে রয়েছে ওদের উইপনস প্ল্যান্ট। মেইন অ্যাসেম্বলি এরিয়া এড়ো সিটির সাথে সংযুক্ত, চার কিলোমিটার উত্তরে। সংযোগ রক্ষা করছে একটা ইলেকট্রিক রেলওয়ে। অনেকগুলো টানেলের ভেতর দিয়ে ওই একই রেললাইন চলে গেছে অস্ত্রাগার, ওয়েস্ট ডিসপোজাল পিট ও এঞ্জিনিয়ারিং অফিসে।

আর কিছু? জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল।

 জিম হানামুরা জানিয়েছে, একটা সূত্র ধরে ড্রাগন সেন্টারে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে সে। এইটুকুই।

রয় ওরশিয়া সম্পর্কে কোন খবর নেই? জানতে চাইল পিট।

একবার শুধু তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

 তার মানে সে-ও গায়েব নাকি?

না, মেল পেনার সেরকম কিছু বলেনি। শুধু জানিয়েছে, ওরশিয়া চাইছে অনুকূল পরিবেশের জন্যে অপেক্ষা করতে।

আমরা পিছিয়ে পড়ছি, বলল পিট, অনেকটা আপনমনে। তিনজন কিডন্যাপ হয়ে গেল, উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা করতে পারছি না। প্রতিপক্ষ আমাদের পরিচয় জানে, জানে আমরা কি খুঁজছি।

মি. রেইমন্ড জর্ডানকে খবর দিচ্ছি আমি, বললেন ডোনাল্ড কার্ন। তিনি প্রেসিডেন্টকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাবেন।

জেয়ারে হেলান দিয়ে পিট বলল।হোয়াই ব্রাদার?

বুঝলাম না।

 ভয় পাবার কোন কারণ দেখছি না।

কি বলছেন! গোটা দুনিয়া নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেইলিঙের শিকার হতে যাচ্ছে। আশঙ্কা করছি মিস লরেন ও মি. গ্রাফটনের জন্যে মুক্তিপণ চাওয়া হবে। আপনি বুঝতে পারছে না, হিদেকি সুমা যে-কোন মুহূর্তে মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মারবে?

না, মারবে না। অন্তত এখুনি নয়।

 আপনি কিভাবে জানলেন? কঠিন সুরে প্রশ্ন করলেন ডোনাল্ড কার্ন।

কিছু একটা ঠেকিয়ে রেখেছে সুমাকে। বহু দেশে অসংখ্য গাড়ি-বোমা লুকিয়ে রেখেছে সে, ইচ্ছে করলেই দুএকটা ফাটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তা না ফাটিয়ে কি করছে সে? নোংরা কিডন্যাপের ভূমিকায় নেমেছে। তার মানে কি? সুমা এখনও প্রস্তুত নয়। তার আরও সময় দরকার।

মি. পিটের কথায় যুক্তি আছে, বললেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। এমন হতে পারে, ডিটোনেশন কমান্ড সম্পূর্ণ তৈরি হবার আগেই সুমার এজেন্টরা গাড়ি বোমাগুলোকে পজিশনে পাঠিয়ে দিয়েছে।

হতে পারে, বললেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। ওটাকে অচল করার জন্যে নতুন একটা টিম পাঠানোর সময় হয়তো এখনও আমাদের হাতে আছে।

 এই মুহূর্তে সব কিছু নির্ভর করছে হানামুরার ওপর, ইতস্তত করে বললেন ডোনাল্ড। ড্রাগন সেন্টারে পৌঁছাতে গিয়ে সে যদি সুমার সিকিউরিটি ফোর্সের হাতে ধরা পড়ে যায়, তাহলে সব ভেস্তে যাবে।

অ্যাডমিরাল বললেন, হানামুরা একা কতটুকু কি করতে পারবে জানি না। দ্বিতীয় একটা টিমের কথা সিরিয়াসলি ভাবছি আমি।

.

৩৩.

জিম হানামুরা আত্মহত্যা করল, নাকি খুন হলো, বলা কঠিন। সম্ভবত দুটোই সত্যি।

তার প্ল্যানটা ভালই ছিল। সুমার এক স্ট্রাকচারাল এঞ্জিনিয়ার, মারু নাগাওয়াকির সিকিউরিটি ক্লিয়ারান্স পাস জাল করে সে। শারীরিক কাঠামো ও চেহারা দুজনের প্রায় একই রকম। এদা সিটিতে ঢুকতে কোন অসুবিধে হয়নি, চেকপয়েন্টগুলো পেরিয়ে ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন ডিপার্টমেন্টে চলে আসে সে। গার্ডরা জানে, অফিস টাইমের পরও স্টাফরা কাজ করে রাত দুপুর পর্যন্ত। ইলেকট্রনিক আইডেনটিটি কমপিউটারে পাসটা ঢোকাল হানামুরা, সঙ্গে সঙ্গে বেল বেজে উঠল, সন্তুষ্ট হয়ে পথ ছেড়ে দিল গার্ডরা।

 দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিনটে অফিসে তল্লাসি চালাল হানামুরা। অবশেষে এক ড্রাফটসম্যান-এর দেরাজে খুঁজে পেল একটা গোপন স্থাপনার খসড়া স্কেচ। স্কেচগুলো নষ্ট করে ফেলা উচিত ছিল, সম্ভবত ড্রাফটসম্যান গুরুত্ব দেয়নি। মেশিনে ঢুকিয়ে কপি করল ওগুলো, আসলগুলো রেখে দিল আগের জায়গায়, কপিগুলো এনভেলাপে ভরে টেপ দিয়ে আটকালো হাঁটুর পিছনে।

পাৰ্গদের পিছনে রেখে বেরিয়ে এল হানামুরা, আনন্দে আত্মহারা। বিশাল এক কংক্রিটের মাঠে অপেক্ষা করছে সে, এলিভেটরে চড়ে পার্কিং লেভেলে উঠবে, ওখানে সে তার মুরমটো গাড়িটা রেখে এসেছে। এলিভেটরে চড়ল সে, তার সাথে চড়ল আরও প্রায় বিশজন। তার দুর্ভাগ্য, সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিল সে। এলিভেটর থামতেই বেরিয়ে এল, বেরিয়েই পড়ে গেল এক লোকের সামনে। লোকটা আর কেউ নয়, এঞ্জিনিয়ার মারু নাগাওয়াকি, তারই সিকিউরিটি ক্লিয়ারান্স পাস জাল করে ভেতরে ঢুকছিল সে। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাশের এলিভেচন থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকটা। হানামুরার বুকে নিজের পাস আটকে আছে দেখে প্রথমে অবাক হয়ে গেল সে, তারপর চিৎকার করে গার্ডকে ডাকল। তাকে প্রচণ্ড এক ঘুসি মেরে গাড়ির দিকে ছুটল হানামুরা।

সশস্ত্র গার্ডরা টানেলের মুখে বাধা দিল তাকে। ব্যারিয়ার ভেঙে টানেলে ঢুকল হানামুরা, ক্ষতি হলেও চালু থাকল গাড়ি, তবে তিনটে গুলি খেল সে বাম হাত ও বাম কাঁধে। টানেলেই এক আমেরিকানের সাথে দেখা হয়ে গেল সে তার। এঞ্জিনে কিছু হয়েছে, নিজেই চেষ্টা করছে সারাবার। গাড়ি থামিয়ে এনভেলাপটায় কিছু লিখল হানামুরা, অনুরোধ করল মার্কিন দূতাবাসে পৌঁছে দিতে। লোকটাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আবার ছেড়ে দিল গাড়ি।

টানেল থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের দিকে ছুটল হানামুরার গাড়ি। শহরের রাস্তায় থাকলে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হবে, জানে সে। মাইল দশেক এগোবার পর জ্ঞান হারাল সে, গাড়িটা ধাক্কা খেল এক বাড়ির পাচিলে। ঝাঁকি খেয়ে জ্ঞান ফিরল তার। গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটার পিছনের উঠানে ঢুকল, এই সময় শুনতে পেল আশপাশের বাড়ি লোজন চারদিক থেকে ছুটে আসছে। কোনরকমে পাঁচিল টপকে পালাল হানামুরা। দশ মিনিট পর একটা নর্দমার শেষ মাথায়, মাঝারি একটা গর্তের ভেতর পড়ে গেল সে। প্রায় আধ ঘণ্টার মত কাদা-পানিতে ডুবে থাকল, ইতোমধ্যে বার তিনেক সামনের রাস্তা দিয়ে পুলিশের গাড়িগুলোকে ছুটোছুটি করতে দেখেছে। খানিক পর আবার এল ওরা, এবার গর্তের কিনারায় থামল। একটা গাড়ি থেকে নেমে এল এক লোক, হাতে চকচক করছে খাপমুক্ত তলোয়ার। হেডলাইটের আলোয় রয় ওরশিয়াকে দেখে হাসল সে। আরে, এ যে দেখছি আমাদের বিখ্যাত আর্ট ডিলার আশিকাগা ইনশু!

কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে জিম হানামুরা, রাগে থরথর করে কাঁপছে।

এডো সিটিতে কি পেলে তুমি? জানতে চাইল মুরো কামাতোরি।

জবাব না দিয়ে জিভের ধাক্কায় নকল দাঁতটা মাড়ি থেকে ছাড়াল হানামুরা। গো টু হেল, বলে পিলটা ভেঙে ফেলল সে। মুখের ভেতর তরল বিষ ছড়িয়ে পড়ল। টিস্যুর মাধ্যমে শরীরের ভেতর ঢুকে যাবে বিষ, ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মারা যাবে সে। কি ঘটছে আন্দাজ করতে পারল কামাতোরি, তলোয়ারটা উঁচু করে নামিয়ে আনল হানামুরায় গলায়।

উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল মুরো কামাতোরি, শালা আমাকে ফাঁকি দিতে পারেনি।

তলোয়ারের নিখুঁত কোপে ধড় থেকে আলাদা হয়ে গেছে হানামুরার মুণ্ডু।

.

৩৪.

 সেমি-ট্রেইলরে সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে চারটে ব্রাউন রঙের মুরমটো। জর্জ ফুরোকাওয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবল, এটাই শেষ চালান। বরাবরের মত সে তার স্পোর্টস কারের ফ্রন্ট সীটের তলায় রিলিজ ডকুমেন্টগুলো পেয়েছে, সাথে একটা চিরকুট, তাতে লেখা, প্রজেক্টে তার ভূমিকা এখানেই শেষ হলো। চিরকুটে একটা নির্দেশও দেয়া হয়েছে, গাড়িগুলোতে হোমিং ডিভাইস আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ফেডারেল ইনভেস্টিগেটররা কোন কারণে গাড়িগুলোকে সন্দেহ করছে হয়তো। চিন্তাটা তার মনে ভয় ধরিয়ে দিল। হাতে একটা ইলেকট্রনিক ইউনিট, রেডিও সিগন্যাল ডিটেক্ট করতে পারে। ব্যস্তভাবে চারটি গাড়িই চেক করল সে, চোখ থাকল ডিজিটাল রিড়আউট-এর ওপর। কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই, কাজেই ড্রাইভার আর তার হেলপারকে ট্রেইলরের গাড়িগুলো তোলার নির্দেশ দিল সে, তারপর এগোল নিজের স্পোর্টস কারের দিকে।

কোন বিপদ ছাড়াই তার অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হয়েছে, সেজন্যে খুশি জর্জ ফুরোকাওয়া। ভিনসেন্ট ল্যাবরেটরিজ-এর তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট-এর পদটা কোন হুমকির মুখে পড়েনি। হিদেকি সুমা এই কাজের জন্যে তাকে যে মোটা টাকা দিয়েছে সেটা আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত এক জাপানি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবে সে। গেটের কাছে এসে গাড়ি থামাল একবার, রিলিজ ডকুমেন্টগুলো গার্ডের হাতে ধরিয়ে দিল। একবারও পিছন ফিরে তাকাল না, রওনা হলো নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে। গাড়িগুলোর গোপন গন্তব্য সম্পর্কে যে আগ্রহ ছিল মনে, সেটা মরে গেছে।

হেলিকপ্টারের সাইড ডোর সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে কন্ট্রোল কেবিনে। ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখলেও স্টেসি ফক্সের মুখের সামনে চুলগুলো উড়ছে। তার কোলের ওপর একটা ভিডিও ক্যামেরা সেটা তুলে টেলিফটো লেন্স অ্যাডজাস্ট করল। ডক ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে মুরমটো স্পোর্টস কারটা।

লাইসেন্স নম্বর দেখতে পেয়েছেন? জানতে চাইল সোনালিচুলো পাইলট।

হ্যাঁ, দারুণ হয়েছে ছবিটা। ধন্যবাদ।

আপনি বললে আরও একটু কাছাকাছি যেতে পারি আমি।

না, যথেষ্ট দূরে থাকুন! নির্দেশ দিল স্টেসি, ওরা কথা বলছে হেডসেট মাইক্রোফোনে। ওদের মনে সন্দেহ হয়েছে, তা না হলে হোমিং ডিভাইসের জন্যে গাড়িগুলো চেক করত না।

ভাগ্য ভাল যে ড. টিমোথি ওয়েদারহিল সে-সময় ট্রান্সমিট করছিলেন না।

বিল ম্যাককারির দিকে তাকালেই কৌতুক বোধ না করে উপায় নেই স্টেসির। কিনারা ভেঁড়া স্ট্রম্প শর্টস পরেছে সে, গায়ের টি-শার্টে মেক্সিকান বিয়ারের বিজ্ঞাপন, পায়ে জুতোর বদলে স্যান্ডেল। এই আজব চিড়িয়াটাকে আজই প্রথম দেখে স্টেসি, দেখে বিশ্বাস করতে পারেনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির একজন দক্ষ অপারেটর হতে পারে ছোকরা।

বাঁক নিয়ে হারবার ফ্রিওয়েতে উঠে যাচ্ছে ট্রেইলার, বলল স্টেসি। পিছিয়ে পড়ুন, তা না হলে ড্রাইভার দেখে ফেলবে আমাদের হেলিকপ্টার। আমরা ওয়েদারহিলের বীম অনুসরণ করব।

নির্দেশ পালন করল বিল ম্যাককারি।

এই সময় ড. টিমোথি ওয়েদারহিলের গলা ভেসে এল এয়ারফোনে। আকাশে আছ তো, টিম বুইক?

আপনার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি, মি. ওয়েদারহিল, বলল বিল।

ট্রান্সমিট করা নিরাপদ?

মন্দ লোকেরা হোমিং ডিভাইস আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখেছে, বলল স্টেসি। তবে এখন ট্রান্সমিট করতে কোন অসুবিধে নেই।

ফলস প্যানেল সরিয়ে ব্যাক সিট ও পিছনের জানালার মাঝখানে, লাগেজ রাখার ঘেরা জায়গাটায় উঠে এলেন ড. টিমোথি ওয়েদারহিল। কাস্টমস এজেন্টদের একটা বিশেষ টিম মুরমটো গাড়িটার ভেতর তাঁকে লুকিয়ে পড়তে সাহায্য করে, ট্রেইলার নিয়ে জর্জ ফুরোকাওয়া পৌঁছানোর চার ঘণ্টা আগে। ফলস প্যানেলের নিচে কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়েছিলেন তিনি, ব্যথায় টন টন করছে সারা শরীর, দরদর করে ঘামছেন। ট্রেইলারের ভেতরটা অন্ধকার, দশ মিনিট বিশ্রাম নেয়ার পর পরনের ইউনিফর্ম থেকে একটা টর্চ বের করে জ্বাললেন। তিন নম্বর। মুরমটো থেকে নেমে প্রথমটার কাছে চলে এসে হুড খুললেন, পাউচ থেকে বের করলেন ছোট একটা রেডিয়েশন অ্যানালাইজার। গাড়ির এয়ারকন্ডিশনিং কমপ্রেসর-এর চারদিকে ঘোরালেন ওটা, রিডআউটে চোখ। হাতের উল্টোপিঠে রিডিং লিখলেন। তারপর ফেন্ডারের ওপর সাজিয়ে রাখলেন কমপ্যাক্ট-এর চারদিকে ঘোরালেন ওটা, রিডআউটে চোখ। হাতের উল্টোপিঠে রিডিং লিখলেন। তারপর ফেন্ডারের উপর সাজিয়ে রাখলেন কমপ্যাক্ট টুল-এর একটা সেট। কথা বললেন রেডিওতে। হ্যালো, বুইক টিম।

কাম ইন, সাড়া দিল স্টেসি।

অপারেশন শুরু করছি।

স্ট্যাডিং বাই।

পনেরো মিনিটের মধ্যে কমপ্ৰেসর কেস খুলে। বোমাটাকে অকেজো করলেন টিমোথি ওয়েদারহিল। এখনও আছ, টিম বুইক?

আছি, সাড়া দিল স্টেসি।

 আমি কোথায়?

ওয়েস্ট কোভিনায়। পূর্ব দিকে যাচ্ছে ট্রেইলার।

একটার কাজ শেষ, বাকি আছে তিনটে।

গুড লাক।

এক ঘন্টা পর চার নম্বর অর্থাৎ শেষ গাড়িটার হুড বন্ধ করলেন টিমোথি ওয়েদারহিল। স্বস্তিতে নেতিয়ে পড়ল তার শরীর। সব কয়টা বোমা অকেজো করে দিয়েছেন তিনি। জাপান থেকে যতই সিগন্যাল পাঠানো হোক, কোনটাই ফাটবে না। রেডিওর সাহায্যে স্টেসির সাথে আবার যোগাযোগ করলেন তিনি। স্টেসি পরামর্শ দিল, ট্রেইলার থেকে নামার জন্যে পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে তাকে।

করার কিছু নেই, টিমোথি ওয়েদারহিলকে একঘেয়েমিতে পেয়ে বসল। গ্লাভ কমপার্টমেন্ট খুলে গাড়ির ওয়ারেন্টি পেপার ও মালিকের ম্যানুয়াল বের করলেন তিনি। ভেতরের আলো জ্বেলে ম্যানুয়ালের পাতা ওল্টালেন অলস ভঙ্গিতে। তার বিষয় মিউক্লিয়ারফিজিক্স হলেও, ইলেকট্রনিক্স-এও তার আগ্রহ আছে। মুরমটোর ইলেকট্রিক্যাল ডায়াগ্রাম দেখার ইচ্ছে হলো, কিভাবে ওয়্যারিং করা হয়েছে দেখবেন। কিন্তু ম্যানুয়ালের পাতায় ইলেকট্রনিক্যাল ওয়্যারিয়ের চিহ্ন মাত্র নেই। আছে ম্যাপ, আর কিছু নির্দেশ_নির্দিষ্ট পজিশনে কিভাবে নিয়ে যেতে হবে গাড়িটাকে, তারপর কিভাবে ডিটোনেশন করতে হবে।

ড. টিমোথি ওয়েদারহিল আতঙ্ক বোধ করলেন। জাপানের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্যে গাড়ি-বোমাগুলোকে হুমকি হিসেবে ব্যবহার করা হবে, ব্যাপারটা শুধু তা-ই নয়। আসলেও ব্যবহার করা হবে ওগুলো।

.

৩৫.

 শেষবার কবে এভাবে অনধিকার অনুপ্রবেশ করেছেন, মনে করতে পারলেন না ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির ডিরেক্টর রেইমন্ড জর্ডান। দশ বছর আগে ফিল্ড এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন, মনে থাকার কথাও নয়। হঠাৎ খেয়াল চেপেছে, আগের সেই দক্ষতা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখবেন।

হ্যাঙ্গারের সিকিউরিটি অ্যালার্ম সিস্টেমের তারে ছোট্ট একটা কমপিউটার পোব ঢোকালেন তিনি, বোতাম টিপতেই কমবিনেশন নাম্বার চলে এল পোবে। কোডটা চিনতে পারল অ্যালার্ম বক্স, পরিবেশন করল একটা এলইডি ডিসপ্লেতে। এরপর বোতাম টিপে অ্যালার্ম সিস্টেম অফ করা পানির মত সহজ হয়ে গেল। দরজার তালা খুলে হ্যাঙ্গারের ভেতর ঢুকে পড়লেন তিনি।

হ্যাঙ্গারের এক প্রান্তে, স্টাজ-এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পিট, তার দিকে পিছন ফিরে। একটা হেডলাইট মেরামত করছে ও।

স্থির দাঁড়িয়ে থেকে ক্ল্যাসিক গাড়িগুলোর উপর চোখ বুলালেন রেইমন্ড জর্ডান। বিস্মিত ও মুগ্ধ হলেন তিনি। অ্যাডমিরাল স্যানডেকারের মুখে পিটের কালেকশন সম্পর্কে শুনেছেন বটে, তবে আশা করেননি এত সব দুর্লভ গাড়ি দেখতে পাবেন এখানে। নিঃশব্দ পায়ে প্রথম সারির গাড়িগুলোর পিছনে চলে এলেন তিনি, এগোলেন অ্যাপার্টমেন্টের দিক থেকে। এটা একটা পরীক্ষাই দেখা যাক দুহাত দুর থেকে হঠাৎ একজন আগন্তুককে দেখে কি প্রতিক্রিয়া হয় পিটের।

 পিটের পিছনে, দুহাত দূরে দাঁড়িয়ে পড়লেন রেইমন্ড জর্ডান। স্টাজের গায়ে অনেক আঁচড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে। ফেটে গেছে উইন্ডস্ক্রীনের কাঁচ, বাম দিকের হেডলাইট তারের মাথায় ঝুলছে।

সাধারণ একটা ট্রাউজার ও হাতে বোনা সোয়েটার পরে আছে পিট। ব্যাকব্রাশ করা চুল, তবে এলোমেলো হয়ে আছে। একটা ক্রোম রিমে হেডলাইটের লেন্স ক্রু দিয়ে আটকাচ্ছে ও।

 কথা বলতে যাবে রেইমন্ড জর্ডান, তার আগে পিটই মুখ খুলল, আগের মতই পিছন ফিরে রয়েছে। গুড ইভনিং, মি. জর্ডান। আপনি আসায় আমি খুশি হয়েছি।

 হতভম্ব হয়ে গেলেন রেইমন্ড জর্ডান। আগের মতই নির্লিপ্ত ও ব্যস্ত পিট, এখনও আগন্তুকের দিকে তাকায়নি।

আমার নক করা উচিত ছিল, বললেন রেইমন্ড জর্ডান।

 কি দরকার। আপনি যে এসেছেন, আমি জানতাম।

 অতীন্দ্রিয় কোন ব্যাপার, নাকি মাথার পিছনে দুটো চোখ আছে?

জানতে চাইলেন রেইমন্ড জর্ডান, সাবধানে পিটের দৃষ্টিপথে চলে আসছেন।

মুখ তুলে নিঃশব্দে হাসল পিট। পুরানো হেডলাইটের রিফ্লেক্টরটা তুলে সামান্য নাড়ল ও, রূপালি গায়ে জর্ডানের ছবি ফুটে উঠল।

 হ্যাঙ্গারের ভেতর আপনার বেড়ানোটা দেখে ফেলেছি আমি। ঢোকার কৌশলটাও ছিল প্রফেশনালদের মত।

তার মানে ব্যাক-আপ ক্যামেরাটা আমার চোখে পড়েনি।

রাস্তার ওপারে। টেলিফোন পোলের মাথায় ছোট একটা বাক্স। ইনফ্রারেড। দরজার কাছে কেউ এলেই অস্পষ্ট অ্যালার্ম বাজে।

আপনার কালেকশন অদ্ভুত, কত বছর লেগেছে?

গত দশ বছরে গাড়ির সংখ্যা দ্বিগুণ করেছি আমি। হাতের কাজ শেষ করে সিধে হলো পিট। বলুন, কফি না অন্য কিছু?

কিছুই নয়। আপনাকে আমি ডিসটার্ব করলাম না তো?

 উপরে আসুন, প্লীজ, বলে সিঁড়ির দিকে এগোল পিট। ডেপুটি ডিরেক্টরকে না পাঠিয়ে হেডম্যান স্বয়ং চলে এসেছেন দেখে নিজেকে আমি সম্মানিত মনে করছি।

পিটের পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় রেইমন্ড জর্ডান বললেন, মনে হলো কথাটা আমার নিজেরই আপনাকে জানানো উচিত। মিস লরেন ও মি. ডিয়াজকে দেশ থেকে বের করে নিয়ে গেছে ওরা।

 ঝট করে ঘুরে দাঁড়াল পিট, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল, হঠাৎ স্বস্তি ফুটে উঠল চেহারায়। লরেন বেঁচে আছে!

ওরা উন্মাদ একদল টেরেরিস্ট নয়, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। অপহরণের জন্যে যে বিরাট আয়োজন করা হয়েছিল, তা থেকেই আমি বুঝে নিয়েছি ওদেরকে অত্যন্ত যত্ন করে রাখা হবে।

এত বাধা পেরিয়ে ওরা বেরিয়ে গেল কিভাবে?

নিউপোর্ট নিউজ, ভার্জিনিয়া এয়ারপোর্ট থেকে একটা প্রাইভেট জেটে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওদেরকে। জেটটার মালিক সুমার একটা আমেরিকান করপোরেশন। এক হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার সবগুলো এয়ারপোর্টে খোঁজ নিতে হয় আমাদের, প্রতিটি প্লেনের রেজিস্ট্রেশন চেক করে দেখতে হয়। সুমার একটা প্লেন পাওয়া গেল বটে, স্যাটেলাইটের সাহায্যে আমরা সেটার ফ্লাইট পথ-ও আবিষ্কার করলাম, কিন্তু ততক্ষণে সেটা জাপানের উদ্দেশ্যে বেরিং সী-তে রয়েছে।

আপনাদের কোন একটা বিমান ঘাঁটি থেকে সামরিক প্লেন পাঠিয়ে বাধা দেয়া গেল না?

জাপানের এয়ার সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স-এর এক স্কোয়াড্রন এফ এস এক্স ফাইটার জেট ওটাকে এসকর্ট করে নিয়ে যায়।

তারপর? সিঁড়ির মাথায় উঠে এসে জানতে চাইল পিট।

ওদেরকে আমরা হারিয়ে ফেললাম।

প্লেন ল্যান্ড করার পর?

হ্যাঁ, টোকিও ইন্টারন্যাশনালে। পিটের পিছু পিছু স্টাডিতে ঢুকে ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন রেইমন্ড জর্ডান।

কেন, জাপানে আপনাদের লোকজন কি করছিল? ভদ্রলোকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পিট।

মার্ভিন শওয়াল্টার ও জিম খুন হওয়ার পর…।

 দুজনেই ওরা মারা গেছে?

টোকিও পুলিশ রয় জিমের লাশ পেয়েছে একটা নর্দমায়, গলা কাটা অবস্থায়। মার্ভিনের মাথা পাওয়া গেছে দূতাবাসের কাঁটাতারে আটকানো অবস্থায়, ধড়ের কোন চিহ্ন নেই। কয়েক ঘণ্টা আগে। আরও খারাপ খবর হলো, রয় ওরশিয়াকে স্লিপার বলে সন্দেহ করছিল। প্রথম থেকেই আমাদের সব তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছিল সে। ঈশ্বরই বলতে পারবে সুমা কতটুকু কি জানে। ক্ষতির পরিমাণ কোনদিনই হয়তো জানা যাবে না।

 মার্ভিন শওয়াল্টার আর জিম হানামুরাকে এভাবে কেন খুন করা হলো? কে দায়ী?

প্রাচীন জাপানে এভাবে খুন করা হত। পুলিশের প্যাথলজিস্ট বলছে, ওদের মাথা কাটা হয়েছে সামুরাই তলোয়ার দিয়ে। সুমার ডান হাত ও প্রধান খুনী প্রাচীন মার্শাল আর্টের ভক্ত বলে শোনা যায়, কিন্তু প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে সে-ই ওদেরকে মেরেছে।

ধীরে ধীরে একটা চেয়ারে বসল পিট। জাপানে তাহলে কাজ করার মত কেউ থাকল না।

 খুন হবার আগে মস্ত একটা উপকার করে গেছে হানামুরা। একটা সূত্র দিয়ে গেছে সে, ওটা ধরে ডিটোনেশন সেন্টারে হয়তো পৌঁছানো যাবে।

শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে গেল পিটের। ডিটোনেশন সেন্টারের লোকেশন জানা গেছে? | সুমার কনস্ট্রাকশন ডিজাইনারের অফিসে ঢুকে পড়ে হানামুরা, একটা ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সেন্টারের খসড়া স্কেচ বের করে আনে। দেখে মনে হয় ওটা পাতালে, যেতে হয় টানেলের ভেতর দিয়ে।

কোথায়?

এক আমেরিকান টুরিস্টকে স্কেচ ভরা খামটা দেয় সে, দূতাবাসে পৌঁছে দিতে বলে। তাড়াহুড়ো করে খামের উপর যা লিখেছে, অর্থ উদ্ধার করা কঠিন।

কি লিখেছে?

 লিখেছে, আজিমা দ্বীপে খোঁজ করুন।

 সামান্য কাঁধ ঝাঁকাল পিট। তাহলে সমস্যাটা কি?

আজিমা বলে কোন দ্বীপের অস্তিত্ব নেই, হতাশ সুরে বললেন রেই ট্যাবট। চোখ ফিরিয়ে ট্রফি ভর্তি কাঁচের শো-কেসটার দিকে তাকালেন। আমেরিকান ফেনসিং ক্লাব-এর দুটো ট্রফি দেখে বিস্মিত হলেন তিনি।

আপনি ফেনসার নাকি?

সময় পেলে একটু চর্চা করি, বলল পিট। অস্তিত্ব নেই, এমন একটা দ্বীপের কথা কেন বলবে হানামুরা? জিজ্ঞেস করল ও। কন্ট্রোল সেন্টারটা ওখানেই, সম্ভবত এ-কথাই বলতে চেয়েছে সে।

প্রাচীন পেইন্টিং সম্পর্কে তার আগ্রহ ছিল। জাপানি আর্ট সম্পর্কে তার জ্ঞান আছে দেখেই সুমার অফিসে মাইক্রোফোন রেখে আসার প্ল্যানটা করা হয়। মাসাকি শিমজুর পেইন্টিং সংগ্রহ করে সুমা, এ আমি জানতাম। সেজন্যেই শিমজুর একটা পেইন্টিং নকল করে জিমকে দিয়ে পাঠানো হয়। দ্বীপের উপর আঁকা শিমজুর সব পেইন্টিংই সুমার কাছে আছে, নেই শুধু আজিমা। শুধু এই একটাই যোগাযোগ দেখতে পাচ্ছি আমি।

তাহলে আজিমার অস্তিত্ব না থেকে পারে না।

আমারও তাই বিশ্বাস, কিন্তু আজিমা নামে কোন দ্বীপ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাচীন ও আধুনিক কোন চার্টেই নেই ওটা। এমন হতে পারে, নামটা আসলে আর্টিস্টের দেয়া, মাসাকি শিমজুর। ওই নামটাই ক্যাটালগে রাখা হয়েছে।

হানামুরার ছারপোকা থেকে কিছু পাওয়া গেল?

সুমা, তার কসাই মুরো কামাতেরি, বুড়ো কোরোরি ইয়োশিশু আর ধনকুবের ইচিরো সুবোই একসাথে বসে আলোচনা করছিল, অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।

 ইচিরো সুবোই, সিকিউরিটি ও এসপিওনাজ জগতের কিং বলা হয় তাকে, সেও হাত মিলিয়েছে সুমার সাথে? জানতে চাইল পিট।

গলায় গলায় ভাব দুজনের, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। জাপানি রাজনীতিকদের গোপন করে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির জন্যে কিভাবে ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছে, আলোচনার সময় ব্যাখ্যা করছিল সে। সাংকেতিক নাম কেইটেন প্রজেক্ট সম্পর্কেও এই প্রথম জানতে পারলাম আমরা।

চেয়ারে নড়েচড়ে বসল পিট। আপনি আমাকে শুধু কয়েকটা তথ্য দিতে এসেছেন, মি. জর্ডান? বিশ্বাস হয় না।

 আমি আমার অসহায়ত্বের কথা জানাতে এসেছি আপনাকে, মি. ডার্ক পিট। মিস লরেন ও মি. ডিয়াজকে উদ্ধার করব, আবার একই সাথে কেইটেন প্রজেক্ট ধ্বংস করব, এত লোকবল আমার নেই।

কোনটাকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি দিচ্ছেন? জানতে চাইল পিট।

প্রেসিডেন্ট প্রথমে চান, কেইটেন প্রজেক্ট ধ্বংস করা হোক। তারপর ওদেরকে উদ্ধার করা যাবে।

 তার মানে আবার রহস্যময় আজিমা দ্বীপে ফিরে আসছি আমরা, কর্কশ স্বরে বলল পিট। শিল্পীর শুধু এই ছবিটাই সুমার কাছে নেই, বলছেন?

হ্যাঁ, ওটার জন্যে সে পাগল।

কোন সূত্র আছে, কোথায় ওটা পাওয়া যেতে পারে?

আজিমা পেইন্টিং শেষবার দেখা গেছে বার্লিনের জাপানি দূতাবাসে, জার্মানির। পতনের ঠিক আগে। পুরানো ওএসএস রেকর্ড দেখা যায়, ইটালি থেকে যে-সব শিল্প লুট করেছিল নাৎসীরা, আজিমাকে সেগুলোর সাথে রাখা হয়, তারপর ট্রেনে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় জার্মানির উত্তর-পশ্চিমে, রাশিয়ানদের ভয়ে। তারপর ওটা ইতিহাস থেকে গায়েব হয়ে গেছে।

আজিমা দ্বীপ পাওয়া যাচ্ছে না, ছবিটাও নিখোঁজ, বলল পিট। কাজেই সূত্রই কোন কাজে আসছে না। তবে আপনাদের স্পাই প্লেন আর স্যাটেলাইটের সাহায্যে সুমার গোপন আস্তানার খোঁজ পাওয়া সম্ভব। একটা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট ছোটখাট কোন ব্যাপার নয়।

প্রধান দ্বীপ জাপানের চারটে হোনস, কাউউশু, হোক্কাইডু আর শিকোক। সবগুলোকে ঘিরে আছে প্রায় এক হাজার ছোটখাট দ্বীপ। নির্দিষ্ট দ্বীপটা খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়।

 তীর থেকে দশ মাইল বা আরও বেশি দূরে, এ-ধরনের দ্বীপগুলোকে প্রথমেই বাদ দিয়ে বাকিগুলোর ওপর নজর রাখা হয়েছে। কিন্তু কোন সন্দেহজনক তৎপরতা বা কাঠামো চোখে পড়েনি। স্বাভাবিক, কারণ আমাদের ধারণা গোটা স্থাপনাই মাটির তলায়। আরও একটা কথা প্রায় সব কয়টা দ্বীপই ভলকানিক ব্লক-এ তৈরি, আমাদের সেনসর পেনিট্রেট করতে পারে না। আমি কি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি?

পিট বলল, মাটি ও পাথর না তুলে টানেল তৈরি করা সম্ভব নয়।

জাপানিদের দ্বারা সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয়। স্যাটেলাইট ফটো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, টানেল তৈরির জন্যে কোথাও মাটি বা পাথর কাটা হয়নি, এমন একটা রাস্তার চিহ্নও পাওয়া যায়নি যেটা কোন প্রবেশ পথের দিকে গেছে। এক সেকেন্ড চুপ করে থেকে খুক করে কাশলেন রেইমন্ড জর্ডান। কাজেই, চারদিকে অন্ধকার দেখছি আমি।

আপনি আমার কাছ থেকে খানিকটা আলো পাবার আশা নিয়ে এসেছেন? জানতে চাইল পিট।

রেইমন্ড জর্ডান হাসলেন না। শুধু বললেন, আপনি বুদ্ধিমান মানুষ।

আপনি চান জাপানে যাই আমি, দ্বীপগুলোয় ঘুরঘুর করি?

না, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। আপনাকে আমি জার্মানিতে যাবার অনুরোধ করছি। একটা লুফটফ বাংকারে ডাইভ দেয়ার জন্যে।

.

৩৬.

ডাইভ দেয়ার পর স্রেফ গায়েব হয়ে গেছে ওরা।

মাটিতে একটা হাঁটুগেড়ে পুকুরের কালো পানির দিকে তাকাল পিট।

আধ ডোবা ট্রাক্টরটা ছাড়া আর কিছু দেখতে পেল না।

ওদেসেফটি লাইন ছিঁড়ে গেছে, আবার বলল অফিসার। জার্মান ন্যাভাল ডাইভ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে সে, একটা নাইলন লাইন উঁচু করে দেখাল পিটকে। দেখে মনে হলো, ধারালো ক্ষুর দিয়ে কাটা হয়েছে ওটা। কিভাবে ছিঁড়ল? আমরা জানি না!

 কমিউনিকেশন লাইনও? জানতে চাইল পিট। ছোট একটা নুড়ি পাথর কুড়িয়ে নিয়ে ছুঁড়ে দিল ও, ছলকে ওঠা পানি ও খুদে ঢেউগুলো দেখছে।

 লিড ডাইভারের সাথে ফোন ছিল, সেটাও ছিঁড়ে গেছে। প্রথমে দুজন লোকের একটা টিম পুকুরটায় নামে। একটু পরই একটা আন্ডারওয়াটার টানেল পায় ওরা, পশ্চিম দিকে চলে গেছে। সাঁতরে নব্বই মিটারের মত এগোয় তারা, তারপর রিপোর্ট করে ছোট একটা চেম্বারের সামনে শেষ হয়েছে টানেল, দরজাটা স্টীলের। এর খানিক পর ফোন লাইন আর সেফটি লাইন ঢিলে হয়ে গেল। কি হয়েছে দেখার জন্যে আরেকটা টিম পাঠালাম আমি। প্রথমটার মত এটাও গায়েব হয়ে গেল।

মাথা ঘুরিয়ে জার্মান নেভির ডাইভ টিমের দিকে তাকাল পিট। বন্ধুদের হারিয়ে শোকে কাতর সবাই। পোর্টেবল কমান্ড পোস্ট-এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা। ফোল্ডিং চেয়ারে বসে রয়েছে পুলিশ বিভাগের আন্ডারওয়াটার রেসকিউ ডাইভাররা। ইউনিফর্ম ছাড়াও তিনজন লোককে দেখা গেল, ওরা সরকারী অফিসার, ওদের সাথেই এখানে পৌঁছেছে পিট ও নেভির দল। শেষ লোকটা কখন নেমেছে? জানতে চাইল ও।

 আপানারা পৌঁছানোর চার ঘণ্টা আগে, ন্যাভাল টিমের লীডার জবাব দিল। লেফটেন্যান্ট হেলমুট রেইনহার্ট বলে নিজের পরিচয় দিয়েছে সে। আমার বাকি লোকেরা নিচে নামার জন্যে অস্থির হয়ে আছে, অনেক কষ্টে ঠেকিয়ে রেখেছি ওদের। কি ঘটছে ওখানে না জেনে আর কাউকে পাঠাতে পারি না। কিন্তু ওই ব্যাটা হাঁদারাম পুলিশের লোকগুলো নিজেদেরকে অমর বলে মনে করে। আমার কথা শুনবে না, নিজেদের একটা টিম পাঠাবার প্ল্যান করছে।

 কোন কোন লোক জন্মই নেয় আত্মহত্যার করার জন্যে, বলল অ্যাল। এই যেমন আমি।

জ্বী? হাঁ করে তাকিয়ে থাকল লেফটেন্যান্ট।

ওর কথায় কান দেবেন না, বলল পিট। মাঝে মধ্যে মতিভ্রম ঘটে ওর। পুকুরের কিনারা থেকে সরে এল পিট, ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, বুবি-ট্র্যাপ।

মাথা ঝাঁকালেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। আমার তাই ধারণা। ফিলিপাইনের ট্রেজার টানেলের মুখে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল, মাটি খুঁড়তে শুরু করলেই ফেটে যাবে। পার্থক্য হলো, আবার ফিরে গিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করার প্ল্যান ছিল জাপানিদের, আর নাৎসীদের বুবি-স্ট্র্যাপ মানে হলো সার্চ টিমের সাথে গুপ্তধন ধ্বংস করা।

আমার লোকজন যেভাবেই মারা যাক, অন্তত বোমায় মারা যায়নি, বলল লেফটেন্যান্ট রেইনহার্ট।

কি করা যায় ফ্রেডি ম্যানকিউসের সাথে পরামর্শ করছে পিট, দুটো দলের মধ্যে তর্কযুদ্ধ বেধে গেল। পুলিশের ডাইভাররা পুকুরে নামবে, নেভির লোকেরা বাধা দিচ্ছে।

 ইতোমধ্যে দুপক্ষই জেনেছে, জার্মানির শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে ডার্ক পিটের নেতৃত্বে নুমার এই বিশেষ দলটির আগমন ঘটেছে। ওদের আগমনের কারণটাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে সবিস্তারে।

যুদ্ধের পরপর বহু নাৎসী অফিসারকে ইন্টারোগেট করা হয়, তার রেকর্ড বার্লিন আর্কাইভ ও যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অভ কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে। সে-সব রেকর্ড থেকে জানা যায়, পাতালের একটা গোপন এয়ারফিল্ডে আঠারো হাজার মূল্যবান শিল্পকর্ম লুকানো আছে। আলোচ্য পুকুরটি সেই গোপন এয়ারফিল্ডের প্রবেশপথ হলেও হতে পারে, পানির তলায় গোপন টানেল থাকা সম্ভব।

দুপক্ষের ঝগড়া থামাবার জন্যে একটা আপোস প্রস্তাব দিল পিট। লেফটেন্যান্ট হেলমুট বলল, শুনতে আপত্তি নেই।

সাতজনের একটা টিম গঠন করব আমরা, বলল পিট। আমরা থাকব তিনজন। কারণ, মি, ম্যানকিউসো একজন মাইনিং এঞ্জিনিয়ার, টানেল কনস্ট্রাকশন–এর এক্সপার্ট। আমি আর মি. অ্যাল আন্ডারওয়াটার স্যালভেজ-এর অভিজ্ঞ। দুজন থাকবেন লেফটেন্যান্ট রেইনহার্ট-এর লোক, বোমা বা বিস্ফোরক অকেজো করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। বাকি দুজন থাকবেন পুলিশের লোক, রেসকিউ ডাইভার ও মেডিকেল ব্যাকআপ হিসেবে।

সঙ্গত প্রস্তাব, কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। লেফটেন্যান্ট রেইনহার্ট ইতস্তত না করে রাজি হয়ে গেল। পরিষদের একজন অফিসার জানতে চাইল, কে আগে নামবে?

আমি, ইতস্তত না করে বলল পিট।

উপস্থিত সবাই শ্রদ্ধা মেশানো নতুন দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে।

এয়ার ট্যাঙ্কের সাথে জোড়া লাগানো মাইক্রোইলেকট্রনিক কমপিউটারে সময় বেঁধে নিল পিট, তারপর শেষ বারের মত চেক করল রেগুলেটর ও বয়অ্যানসি কমপেনসেটর। কৃষক কওসেনের খেত থেকে মই বেয়ে নিচে নামার পর এবার নিয়ে চারবার কালো পানির দিকে তাকাল ও। না, পানিতে নামতে ভয় পাচ্ছে না। ভাবছে, অর্ধেক দুনিয়া পাড়ি দিয়ে এসে, এত ঝুঁকি নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন লাভ হবে কিনা। আঠারা হাজার শিল্পকর্ম, তার মধ্যে মাসাকি শিমজুর আঁকা আজিমা দ্বীপ সত্যি কি আছে?

আপনার কি মনে হয়, পানির তলায় কি ঘটছে? জিজ্ঞেস করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো।

 ধাঁধার অর্ধেক সমাধান করতে পেরেছি বলে মনে হয়, বলল পিট। কিন্তু লাইন কাটছে কিভাবে? এটা একটা রহস্যই বটে।

আত্মহত্যা যখন করতেই হবে, দেরি কিসের? জানতে চাইল অ্যাল।

লেফটেন্যান্ট রেইনহার্টের দিকে তাকাল পিট। রেডি, জেন্টেলমেন? সবাই যে যার সামনের লোকের দুমিটারের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করবেন, প্লীজ। আমার টিম আপনাদের সাথে আকুসটিকস স্পীকারের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখবে।

পিটের বক্তব্য জার্মান ভাষায় অনুবাদ করল লেফটেন্যান্ট, তারপর সামরিক কায়দার স্যালুট করল পিটকে, বলল, আফটার ইউ, স্যার।

আমি মাঝখানে থাকব, বলল পিট। মি. ম্যানকিউসো দুমিটার পিছনে, আমার বাম দিকে। অ্যাল, আমার ডান দিকে। পাঁচিল থেকে অস্বাভাবিক কোন মেকানিজম বেরিয়ে এসেছে কিনা, নজর রাখবে।

ডাইভ লাইট অন করল পিট, সেফটি লাইন ঠিকমত আটকানো আছে কিনা দেখে নিল টান দিয়ে, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পানিতে।

 ঠাণ্ডা পানি। কমপিউটারের ডিজিটাল রিডআউট-এর দিকে তাকাল পিট। পানির তাপমাত্রা ১৪ সেলসিয়াস বা ৫৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কংক্রিটের মেঝেতে কাদা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে। সতর্ক থাকল পিট, জমে থাকা কাদায় যেন ফিনের বারি না লাগে। পানি ঘোলা হয়ে গেলে পিছনের লোকজন সামনের দৃশ্য দেখতে পাবে না।

ডাইভ লাইট উপর দিকে তাক করল পিট, বাংকারের সিলিঙের দিকে তাকাল। নিচের দিকে ঢালু হয়ে নেমে গেছে ওটা, ক্রমশ পুরোপুরি ডুবে গেছে, সরু হতে হতে পরিণত হয়েছে একটা টানেলে। সাবধান হওয়া সত্ত্বেও ঘোলা হয়ে গেল পানি, তিন মিটারের ওদিকে দৃষ্টি চলে। দাঁড়াল পিট, সঙ্গীদের আরও কাছাকাছি থাকতে বলল। তারপর আবার এগোল।

 আরও বিশ মিটার এগিয়ে আবার থামল পিট, শরীর মুচড়ে ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো আর অ্যালের খোঁজে পিছন দিকে তাকাল। ম্লান আভার মত দেখা গেল ওদের লাইট। কমপিউটার চেক করল ও। প্রেমার রিডআউট-এ দেখা গেল মাত্র ছয়মিটার গভীরে রয়েছে ও।

আরও খানিক এগোবার পর আন্ডারওয়াটার টানেল সরু হতে শুরু করল, একই সাথে উঁচু হয়ে যাচ্ছে মেঝেটা। সাবধানে এগোল পিট, ঘোলা পানিতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় টান পড়ছে চোখের চারপাশের শ্রেণীতে। খালি হাতটা মাথার ওপর লম্বা করল, পানির ওপর উঠে যাওয়ায় বাতাস লাগল আঙুলে। চিৎ হলো ও আলোটা তাক করল উপর দিকে। পাতালের আজব এক প্রাণীর মত পানি উপর ছোট একটা চেম্বারে উঠে মাস্ক ও রেগুলেটারসহ রাবার হেলমেট পরা পিটের মাথাটা। ফিন পরা পা দুটো হালকাভাবে নাড়ল পিট, মৃদু ধাক্কা খেল কংক্রিটের একটা সিঁড়িতে। হামাগুড়ি দিয়ে সমতল একটা মেঝেতে উঠে এল।

যা দেখবে বলে ভয় করেছিল, অন্তত এখুনি সেরকম কিছু চোখে পড়ল না। জার্মান নেভি টিমের লাশগুলো কোথাও নেই। কংক্রিটের মেঝেতে শ্যাওলা জমেছে, শ্যাওলার ওপর তাদের ফিনের দাগ দেখা গেল। কিন্তু লোকগুলোর কোন চিহ্ন নেই।

চেম্বারের দেয়ালগুলো সাবধানে পরীক্ষা করল পিট। বিপজ্জনক কিছু পেল না। দূর প্রান্তে, ডাইভ লাইটের আলোয় দেখা গেল একটা মরচে রঙা ধাতব দরজা। ফিন পরে থাকায় আড়ষ্ট ভঙ্গিতে হাঁটছে। দরজার গায়ে হেলান দিল। কব্জাগুলো সহজেই সচল হলো, ভেতর দিকে খুলে যাচ্ছে কবাট দুটো। কাধ সরিয়ে নিতেই আবার দ্রুত বন্ধ হয়ে গেল, প্রীঙের চাপে।

হ্যালো, কি পেলাম এখানে আমরা? আকুসটিকস স্পীকার থেকে ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসোর কণ্ঠস্বর ভেসে এল।

দরজার ওদিকে কি আছে বলতে পারলে তিন দিনের বেতন পুরস্কার পাবেন, বলল অ্যাল।

পায়ের ফিন খুলে দরজাটা আবার খানিকটা খুলল পিট, নিচের চৌকাঠ পরীক্ষা করল। ধাতব চৌকাঠ ধারাল ছুরির মত, মরচে ধরে গেছে। ফোন আর সেফটি লাইন কেন ছিঁড়েছে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।

মাথা ঝাঁকাল অ্যাল। ডাইভাররা ভেতরে ঢোকার পর স্ত্রীঙের টানে আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায় দরজা, ধারাল চৌকাঠ ও কবাটের মধ্যে পড়ে ছিঁড়ে গেছে।

পিটের দিকে তাকালেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। আপনি তখন বলছিলেন, ধাঁধার অর্ধেক সমাধান করে ফেলেছেন।

হ্যাঁ, বলছিল। জবাব দাও, সবজান্তা। নেভির ডাইভাররা মরল কিভাবে? নাকি তারা মরেনি?

গ্যাস, বলল পিট। পয়জন গ্যাস, দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার সঙ্গে, সঙ্গে আক্রান্ত হয় ওরা।

পানি থেকে উঠে এল টিমের বাকি সদস্যরাও।

 মি. ম্যানকিউসো, বলল পিট, আপনার কাজ, কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেবেন না। শুধু আমি আর অ্যাল ঢুকব। যাই ঘটুক, লক্ষ রাখবেন সবাই যেন শুধু ট্যাংকের বাতাসে শ্বাস নেয়। কোন অবস্থাতেই রেগুলেটর ভোলা চলবে না।

মাথা ঝাঁকিয়ে সিঁড়ির দিকে এগোলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো।

পিটের মত অ্যালও তার পায়ের ফিন খুলে ফেলল। কোন কথা হলো না। দরজাটা ঠেলে অর্ধেকটার মত খুলল পিট, এমন হালকা পায়ে ভেতরে ঢুকল যেন রশির উপর দিয়ে হাঁটছে। চেম্বারের বাতাস শুকনো, হিউমিডিটি নেই বললেই চলে। ভেতরে ঢুকে থামল পিট, আলো ফেলল চারদিকে, সাবধানে খুঁজছে কিছু। সরু তার থাকতে পারে, পায়ে বাধলে হোঁচট খেতে হবে। থাকতে পারে কেবল, চলে গেছে এক্সপ্লোসিভ ডিটোনেটারে বা পয়ঃজন গ্যাস কন্টেইনারে। ওর প্রায় পায়ের সামনেই পড়ে রয়েছে ধূসর রঙের একটা সরু ফিশ লাইন, ছিঁড়ে দুটুকরো হয়ে গেছে। অস্পষ্ট আলোয় কোন রকমে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

এক প্রস্থ লাইনকে অনুসরণ করল আলোটা। ওটার গায়ে লেখা রয়েছে ফসজীন। ভাগ্যকে মনে মনে ধন্যবাদ দিল পিট। ফসজীন বিপজ্জনক, তবে শুধু ফুসফুসে প্রবেশ করলে।

তোমার কথাই ঠিক, বলল অ্যাল। গ্যাসই।

আমাদের মত সাবধান হলে নেভির লোকগুলো মরত না।

আরও চারটে পয়ঃজন গ্যাস বুবি ট্র্যাপে পেল পিট, দুটো ক্যানিস্টারের মুখ খোলা। ঠিকমতই কাজ করেছে গ্যাস। কয়েক ফুট ব্যবধানে পড়ে রয়েছে কুণ্ডলী পাকানো নেভি ডাইভারদের লাশগুলো। সবাই তারা যার যার এয়ার টাংক ও ব্রিদিং রেগুলেটর খুলে ফেলেছিল। কারও পালস দেখতে গিয়ে সময় নষ্ট করল না পিট, মুখের নীলচে রঙ আর দৃষ্টিহীন বিস্ফারিত চোখই বলে দিচ্ছে মারা গেছে তারা।

লম্বা একটা গ্যালারিতে আলো ফেলল পিট, পরমুহূর্তে স্থির হয়ে গেল। ওর চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী, মাথাটা একদিকে সামান্য কাত করে তাকিয়ে আছে, দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা শ্বাসরুদ্ধকর। তুলনাহীন সৌন্দর্যের আধার ওই মুখ, ঠোঁটে মিষ্টি হাসি লেগে রয়েছে।

মেয়েটি একা নয়। তার পাশে ও পিছনে আরও কয়েকটি নারীদের দেখা গেল, তাদের নিস্পলক দৃষ্টি যেন সরাসরি পিটের ওপরই নিবদ্ধ। সবাই ওরা নগ্ন, আবরণ বলতে শুধু প্রায় হাঁটু পর্যন্ত লম্বা বেণী করা চুল।

 মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, ঘোষণা করল অ্যাল। সুন্দরীদের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।

 উত্তেজিত হয়ো না, সাবধান করল পিট। রঙ করা মূর্তি ওগুলো। প্রমাণ আকৃতির নারীমূর্তিগুলোর মাঝখানে হাঁটাহাঁটি করছে ও। তারপর মাথার ওপর ভাইভ আলোটা তাক করল। সোনার চকচকে একটা সাগর দেখতে পেল ও। গিলটি করা ছবির ফ্রেম ওগুলো। যতদূর আলো পৌচেছে, তারপর আরও অনেক দূর পর্যন্ত, সারির পর সারি শুধু র‍্যাক আর র‍্যাক, প্রতিটি র‍্যাকে অসংখ্য দামী পেইন্টিং, মূর্তি, ভাস্কর্য শিল্প, ধর্মীয় নিদর্শন, দুপ্রাপ্য বই, প্রাচীন ফার্নিচার, অ্যার্কিওলজিক্যাল আন্টিকস ইত্যাদি।

আমার মনে হয়, বিড়বিড় করল পিট। এইমাত্র জাদুর কাঠি আবিষ্কার করেছি আমরা।

.

৩৭.

 দক্ষতা জার্মানদের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য। চার ঘণ্টার মধ্যে ডিকনটামিনেশন এক্সপার্টরা পৌঁছে গেল, দূষিত বাতাস পাম্প করে ভরে ফেলল একটা কেমিক্যাল ট্যাংক ট্রাকে। সাফ-সুতরোর কাজ চলছে, রেইনহার্টের লোকজন ফসজিন রিলিজ মেকানিজম ডিঅ্যাকটিভেট করে ক্যানিস্টারগুলো ডিকনটামিনেশন ক্রুদের হাতে তুলে দিল। সবশেষে লাশগুলো তোলা হলো অ্যাম্বুলেন্সে।

পাতালের পানিও পাম্প করে কাছাকাছি একটা নদীতে ফেলার কাজ শুরু হয়ে গেছে। শ্রমিকরা মাটি কাটছে, বাংকারে নামার আসল পথটা উন্মুক্ত করার জন্যে, যুদ্ধের পরপরই ওটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পুরো সময়টা কৃষক কওসেনের বাড়িতে ঘুমিয়ে কাটাল অ্যাল। মিসেস কওসেন নুমার পুরো টিমটাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ভাল করে খাইয়ে দিল।

বিখ্যাত কয়েকজন রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তার একটা দল, নামকরা শিল্পী বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও টিভি ক্রুরা। মন্ত্রী মহোদয় নির্দেশ দিলেন, সব কিছু ভাল করে সার্ভে না হওয়া পর্যন্ত নিউজ মিডিয়াকে কোন তথ্য দেয়া যাবে না।

ধাতব দরজার কাছ থেকে শুরু, তারপর গ্যালারিটা লম্বা প্রায় এক কিলোমিটার। টানেলে পানি থাকলেও, দরজাটা ছিল এয়ার টাইট, গ্যালারির ভেতর জলীয় বাষ্প ঢোকেনি, ফলে প্রতিটি শিল্পকর্ম অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। জার্মান বিশেষজ্ঞরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটা ল্যাবরেটরি ও একটা ওয়ার্কশপ খাড়া করে ফেলল। রেকর্ড করার জন্যে ফেলা হলো আলাদা তাঁবু।

জার্মান অফিশিয়ালের সঙ্গে আলাপ করল পিট। বার্লিনের জাপানি দূতাবাস থেকে যে শিল্পকর্ম সরানো হয়েছিল, আমরা শুধু সেগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী, তাঁকে জানাল ও।

আপনার ধারণা ওগুলো এখানে আছে?

জাপানে পাঠানোর সময় ছিল না, ব্যাখ্যা করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। রাশিয়ানরা শহরটাকে ঘিরে রেখেছিল। অ্যামব্যাসডর বাড়িটায় তালা দিয়ে স্টাফদের নিয়ে কোনরকমে জান বাঁচিয়ে পালান সুইজারল্যান্ডে। রেকর্ড বলছে, দূতাবাসের সমস্ত শিল্পকর্ম নাৎসীদের হাতে তুলে দেয়া হয় নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্যে। তারা সেগুলোর একটা এয়ারফিল্ডে লুকিয়ে রাখে।

কিন্তু আমেরিকান সরকার জাপানি শিল্প সম্পর্কে এত আগ্রহী কেন?

দুঃখিত, বলল পিট। এই কারণটা বলা যাবে না। তবে এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, জার্মান সরকারের কোন ক্ষতি আমরা করব না।

আমি জাপানিদের কথা ভাবছি। ওরা তাদের জিনিস ফেরত চাইবে।

আমরা কোন জিনিস নিচ্ছি না, শুধু কয়েকটার ফটো তুলব। তবে যদি দুএকটা খুব বেশি পছন্দ হয়ে যায়, আপনার কাছ থেকে চাইলে আপনি কি আর

এক সেকেন্ড চিন্তা করলেন অফিসার। চ্যান্সেলর স্বয়ং নির্দেশ দেওয়ায় নুমার দলটাকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনিয়েছেন তিনি। আগেই তার সন্দেহ হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু একটা খুঁজছে ওরা, সেটা পেলে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইবে। কাঁধ ঝাঁকালেন তিনি, বললেন, ঠিক আছে, সে দেখা যাবে।

.

নারীমূর্তিগুলোর পঞ্চাশ মিটার পিছনে জাপানি দূতাবাসের কনটেইনারগুলো পাওয়া গেল। বাক্সগুলো চিনতে পারা গেল সহজেই, জাপানি হরফ দেখে। কি লেখা রয়েছে? ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসোকে জিজ্ঞেস করল পিট।

চার নম্বর বাক্স, অনুবাদ করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। জাপান সম্রাটের সম্পত্তি।

 সাবধান খোলা হলো বাক্সটা। ঢাকনি তোলার পর দেখা গেল ভাঁজ করা একটা পর্দা, কয়েকটা পাহাড়চূড়ার আশপাশ দিয়ে পাখিরা উড়ে যাচ্ছে। অবশ্যই দ্বীপ নয়, কাঁধ ঝাঁকাল পিট।

আরও দুটো বাক্স খোলা হলো। ভেতর থেকে অনেক পেইন্টিংই বেরল, কিন্তু কোনটাই ষোড়শ শতাব্দীর নয়, আরও প্রাচীন যুগের। বাকি বাক্সগুলোয় অন্যান্য শিল্পকর্ম রয়েছে, কোন পেইন্টিং নেই। অবশেষে বাকি থাকল শুধু একটা বাক্স, আকার দেখে মনে হলো ভেতরে কোন পেইন্টিং থাকলেও থাকতে পারে।

ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসোর চেহারায় উত্তেজনার ছাপ। কপালে চকচক করছে ঘাম। শেষ বাক্সটাও খুলল পিট। পানি দেখতে পাচ্ছি, বলল ও। সম্ভবত সাগরের দৃশ্য। আরে, সত্যি সত্যি একটা দ্বীপ দেখছি।

থ্যাঙ্ক গড। বের করুন, বের করুন।

সাবধানে পেইন্টিংটা বের করা হলো। পকেট থেকে ছোট একটা ক্যাটালগ বের করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। মাসাকি শিমজুর শিল্পকর্মের কালার প্লেট রয়েছে। ওটায়। ক্যাটালগের পাতা ওল্টাচ্ছেন তিনি। আমি এক্সপার্ট না, তবে দেখে মনে হচ্ছে স্টাইলটা শিমজুরই।

ছবিটা উল্টো করল পিট। এদিকে কি যেন লেখা রয়েছে।

ঝুঁকে লেখাটা পড়ার চেষ্টা করলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। আজিমা আইল্যানড, বাই মাসাকি শিমজু। উত্তেজনায়, উল্লাসে তার গলা কেঁপে গেল, পেয়ে গেছি, সুমার কমান্ড স্টোরের হদিস পেয়ে গেছি। এখন শুধু স্যাটেলাইট ফটোর সাথে তীরের রেখাগুলো মেলাতে হবে।

সাড়ে চারশো বছর আগে আঁকা আজিমা নামে দ্বীপটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পিট। দ্বীপটা কোনদিনই টুরিস্টদের আকৃষ্ট করবে না। সফেন সাগর থেকে খাড়া আকাশের দিকে উঠে এসেছে পাহাড়ের পাথুরে প্রাচীর। সৈকতের কোন চিহ্নমাত্র নেই কোথও, গাছপালাও নেই বললে চলে। গোটা দ্বীপটা গম্ভীর দর্শন, পরিত্যক্ত ও নির্জন। কারও চোখে ধরা না পড়ে আকাশ বা সাগর থেকে দ্বীপটায় পৌঁছানোর কোন উপায় নেই। বলা যায়, প্রকৃতির তৈরি একটা দুর্গ। ঘাঁটি হিসেবে ভাল জায়গাই বেছে নিয়েছে হিদেকি সুমা।

 ওই পাথরের রাজ্যে ঢোকা অসম্ভব একটা ব্যাপার, চিন্তিত স্বরে বলল পিট। কেউ চেষ্টা করলে স্রেফ মারা পড়বে।

চেহারা থেকে উল্লাসের ভাবটুকু মুছে গেল, পিটের দিকে ঝট করে তাকালেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। ও কথা মুখেও আনবেন না, বিড়বিড় করলেন তিনি। এমনকি চিন্তাও করবেন না।

 মাইনিং এঞ্জিনিয়ারের চোখের দিকে তাকাল পিট। কেন? ওখানে তো আর আমাদেরকে যেতে হচ্ছে না।

 আপনার ভুল হচ্ছে, হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো। বুইক ও টিম হোন্ডা অকেজো হয়ে যাবার পর মি, রেইমন্ড জর্ডান আমাদেরকে ছাড়া আর কাদের পাঠাবেন? চিন্তা করে দেখুন।

কথাটা ঠিক, ভাবল পিট। হঠাৎ করে জর্ডানের উদ্দেশ্যটাও পরিষ্কার হয়ে গেল। ওদের তিনজনকে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ না দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন তিনি, প্রয়োজনের সময় সুমার নিউক্লিয়ার বা ডিটোনেশন সেন্টারে পাঠাবেন বলে।

.

৩৮.

ডেস্কের ওপর খোলা ফাইলটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন প্রেসিডেন্ট। তারপর মুখ তুলে যখন তাকালেন, চেহারা সম্পূর্ণ ভাবশূন্য। আসলেই ওরা ওগুলো ফাটিয়ে দেবে? ব্যাপারটা কোন রকম ধোকা নয়?

না, ওরা ধোকা দিচ্ছে না, রেইমন্ড জর্ডান মাথা নাড়লেন।

এ কল্পনার অতীত একটা ব্যাপার। কিন্তু কেন? এমন তো নয় যে আমাদের যুদ্ধজাহাজ ওদের দ্বীপগুলোকে ঘিরে রেখেছে।

 কাল্পনিক আতঙ্ক থেকে এ এক ধরনের আত্মরক্ষার চেষ্টা, ডোনাল্ড কার্ন বললেন। চীন ও রাশিয়ায় গণতন্ত্র আসতে যাচ্ছে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো স্বাধীনতা পাচ্ছে, কালোদের দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, শান্তি আসছে মধ্যপ্রাচ্যে, কাজেই দুনিয়ার দৃষ্টি এখন শিল্প সমৃদ্ধ জাপানের ওপর। ওদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য ও বাণিজ্য নীতিই সবার একমাত্র আলোচ্য বিষয়। ওদের আচরণে অনেকেই অসন্তুষ্ট, অনেকেরই চোখ টাটাচ্ছে। আবার এ-ও সত্যি, একের পর এক যতই মার্কেট দখল করছে জাপানিরা, ততই গোঁয়ার হয়ে উঠছে।

ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওরা কোন নীতি মেনে চলে না, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। লাভটাই আসল কথা। এ কথা শুধু জাপানিদের বেলায় সত্যি নয়, আমেরিকান ব্যবসায়ীদের বেলায়ও সত্যি। তবে জাপানিদের কাছে আমেরিকানরা। মার খাচ্ছে, ওদের মত বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারছে না। জাপানিদের সঙ্গে কেউই পারছে না। ফলে সবাই মিলে জাপানি পণ্য বর্জন করার জন্যে চাপ দিচ্ছে সরকারগুলোকে। ট্রেড এমবারগো আরোপ করার জন্যে কংগ্রেস সুপারিশ করতে যাচ্ছে, প্রস্তাব তোলা হবে জাপানি করপোরেশনগুলো জাতীয়করণ করার। টোকিও আপোষে রাজি হবে বলে মনে হয়, কিন্তু হিদেকি সুমা ও জাপানের বেশিরভাগ শিল্পপতি পাল্টা আঘাত হানতে চাইবে।

কিন্তু তাই বলে নিউক্লিয়ার গ্রেট…।

ওরা আসলে সময় পাবার জন্যে খেলছে, ব্যাখ্যা করলেন রেইমন্ড জর্ডান। ওদের মূল প্ল্যানটা বিশাল, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলাটা সেই প্ল্যানের অংশবিশেষ। জাপানের সবগুলো দ্বীপের ডাঙা বা মাটি এক করলে আকারে সেটা আমাদের ক্যালিফোর্নিয়ার সমান হবে, তা-ও বেশিরভাগটা পাহাড়ী এলাকা। ওইটুকু জায়গায় বাস করে সাড়ে বারো কোটি মানুষ। ওদের আসল উদ্দেশ্য হলো, নিজেদের সুশিক্ষিত লোকজনকে অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে কলোনি গড়ে তোলা, যারা জাপানের প্রতি অনুগত থাকবে। ব্রাজিলের দিকে তাকান, এরই মধ্যে একাধিক

কলোনি তৈরি করেছে তারা। তাকান ক্যালিফোর্নিয়া ও হাওয়াই-এর দিকে, একই অবস্থা। অস্তিত্ব রক্ষাটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় জাপানিরা, আর ওদের বৈশিষ্ট্য হলো ভবিষ্যতের প্ল্যান করে কয়েক দশক আগে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাহায্যে গোটা দুনিয়ায় নিজেদের একটা সমাজ গড়ে তুলতে চেষ্টা করছ ওরা, যে সমাজ শুধু জাপানি শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চা করবে। বেশিরভাগ জাপানি যেটা বোঝে না তা হলো, দুনিয়াজোড়া সেই জাপানি সমাজের অধিপতি হতে চায় সুমা।

খোলা ফাইলের ওপর আবার একবার চোখ বুলালেন প্রেসিডেন্ট। অন্যান্য দেশে অ্যাটম বোমা পাঠিয়ে তা কি সম্ভব? জাপানিরা বোকা নাকি!

 জাপানের সরকার বা সাধারণ জাপানিদের দোষ দিতে পারি না, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। আমি প্রায় নিশ্চিত, ওদের প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। অসৎ ও উচ্চাভিলাষী শিল্পপতি, বিবেকবর্জিত ফাইন্যান্সার আর আন্ডারওয়ার্ল্ডের। লীডাররা যে গোপনে অ্যাটম বোমা বানিয়ে ফেলেছে, এ-খবর তার জানা নেই।

তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে মিটিঙে বসতে হয় আমাকে, বললেন প্রেসিডেন্ট। আমরা কি জানতে পেরেছি, তাকে বলি।

মাথা নাড়লেন রেইমন্ড জর্ডান। এখনি সে ধরনের কোন পরামর্শ আমি দেব না, স্যার। তার আগে কেইটেন প্রজেক্টটা ধ্বংস করতে চাই আমরা।

শেষবার যখন কথা হলো, ওদের কমান্ড সেন্টারের লোকেশন আমরা জানতাম না।

নতুন তথ্য পেয়েছি আমরা, কমান্ড সেন্টারের অস্তিত্ব খুঁজে নেব।

 জানা গেছে, ডিটোনেশনের জন্যে গাড়ি-বোমাগুলো কোথায় পাঠানো হবে?

ইয়েস, স্যার, জবাব দিলেন ডোনাল্ড কার্ন। আমাদের একটা টিম গাড়ির একটা চালান অনুসরণ করে জানতে পেরেছে।

নিশ্চয়ই ওগুলো জনবহুল এলাকায় পাঠানো হবে?

জী-না, স্যার। পাঠানো হবে এমন সব জায়গায়, বিস্ফোরণে যাতে খুব কম লোক মারা যায়।

মানে?

যুক্তরাষ্ট্র ও শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলোর, ব্যাখ্যা করলেন ডোনাল্ড, এমন সব এলাকায় ফাটানো হবে ওগুলো, যেখানে লোকবসতি নেই বললেই চলে। ফাটানো হবে সবগুলো প্রায় একসাথে। ফলে মাটিতে একটা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালনস সেট অভ করবে, যেটা উঠে যাবে অ্যাটমসফেয়ার-এর। এতে সৃষ্টি হবে ছাতা আকৃতির চেইন রিয়্যাকশন, ফলে দুনিয়া জোড়া স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম অচল হয়ে পড়বে।

সমস্ত রেডিও, টেলিভিশন ও ফোন নেটওঅর্ক স্রেফ অস্তিত্ব হারাবে, যোগ করলেন রেইমন্ড জর্ডান। ফেডারেল ও লোকাল গভর্নমেন্ট, মিলিটারি কমান্ড, পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, অ্যাম্বুলেন্স, পরিবহন, সবই অচল হয়ে পড়বে, কারণ কানে কিছু না শুনতে পেলে কাজ করা সম্ভব নয়।

যোগাযোগবিহীন বিশ্ব, বললেন প্রেসিডেন্ট। কল্পনা করা যায় না।

পরিস্থিতি আরও খারাপ, মি. প্রেসিডেন্ট বললেন ডোনাল্ড কার্ন। আপনি জানেন, স্যার, কমপিউটার ডিস্কের সামনে একটা ম্যাগনেট ধরলে কি হয়?

সব মুছে যায়।

মাথা ঝাঁকালেন ডোনাল্ড কার্ন। পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে যে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক পালস সৃষ্টি হবে সেটাও তাই করবে। প্রতিটি বিস্ফোরণের চারদিকে কয়েকশো মাইল পর্যন্ত প্রতিটি কমপিউটারের মেমোরি সম্পূর্ণ মুছে যাবে।

চোখে অবিশ্বাস, ডোনান্ডের দিকে তাকিয়ে থাকলেন প্রেসিডেন্ট। মাই গড।

জ্বী, স্যার, গোটা দেশ অচল হয়ে যাবে। কমপিউটার ব্যবহার করছে এমন প্রতিটি ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সুপারমার্কেট, ডিপার্টমেন্ট স্টোর-তালিকাটা অসম্ভব লম্বা_ সব বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রতিটি ডিস্ক, প্রতিটি টেপ?

সমস্ত বাড়ি ও অফিসে, বললেন রেইমন্ড জর্ডান। আধুনিক মোটরগাড়িতে কমপিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে, ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রেনে ও প্লেনে। বিশেষ করে প্লেনগুলো হঠাৎ বিপদে পড়তে পারে। ক্রুরা ম্যানুয়াল কমান্ড গ্রহণ করার আগেই মাটিতে খসে পড়বে। অচল হয়ে পড়বে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার, যে-কোন সিকিউরিটি সিস্টেম। আমরা কমপিউটার চিপস-এ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, কিন্তু কখনও ভেবে দেখিনি যে ওগুলো কি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

হাতের কলমটা ডেস্কের উপর বার কয়েক ঠুকলেন প্রেসিডেন্ট। তারপর বললেন, সেক্ষেত্রে সিরিয়াস না হয়ে উপায় নেই আমার। ওদের পরমাণবিক অস্ত্রের গুদাম ও কমান্ড সেন্টারে আঘাত হানব আমরা নিউক্লিয়ার, ইফ নেসেসারি।

আমি আগেই বলেছি, মি. প্রেসিডেন্ট, শান্তকণ্ঠে বললেন রেইমন্ড জর্ডান, সে পরামর্শ আপনাকে আমি দেব না। তবে যদি দেখি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন অবশ্য আলাদা কথা।

 প্রেসিডেন্ট জানতে চাইলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, কি করে বুঝব?

 আরও এক হপ্তা সুমার কমান্ড সেন্টার কাজ শুরু করতে পারবে না। আমাদের একটা পেনিট্রেমন প্ল্যান রয়েছে, ভেতরে ঢুকে সব গুঁড়িয়ে দেয়া সম্ভব। অপারেশনটা সফল হলে, আন্তর্জাতিক নিন্দা এড়াতে পারব আমরা। জাপানে আমরা একবার অ্যাটম বোমা ফেলেছি, দুনিয়ার লোক সে-কথা আজও ভুলতে পারেনি। যে কারণেই হোক, আবার যদি ফেলি, মানুষ কি ভাববে সহজেই তা অনুমান করা যায়। তাছাড়া, জাপান এখন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, ভুলে গেলে চলবে না।

আরও ত্রিশ মিনিট আলোচনার পর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন প্রেসিডেন্ট। চারদিন। আপনাদের আমি ছিয়ানব্বই ঘণ্টা সময় দিলাম।

 দুজনের মুখই গম্ভীর হাসি, ডোনাল্ড কার্ন ও রেইমন্ড জর্ডান পরস্পরের দিকে তাকালেন। ওঁরা ওভাল অফিসে আসার আগেই সুমার ওপর হামলার পরিকল্পনা করে এসেছেন। শুধু একটা ফোন করলেই অপারেশনের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

.

৩৯.

 উডমটর, মেরিল্যান্ড। ভোর চারটে, গভর্নমেন্ট রিজার্ভেশন-এর কাছে ছোট একটা ল্যান্ডিং স্ট্রিপ, দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত। ভোরের নিস্তব্ধতাকে চুরমার করে দিয়ে একটা জেট ট্রান্সপোর্টার প্লেন এসে নামল। তিন মিনিটের মধ্যে প্যাসেঞ্জার ডোর খুলে বেরিয়ে এল দুজন আরাহী, প্রত্যেকের হাতে একটা করে সুটকেস। রানওয়ের শেষ মাথা পর্যন্ত হেঁটে এল তারা। ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। পিট ও অ্যালের সাথে হ্যান্ডশেক করলেন তিনি।

কংগ্রাচুলেশন্স, বললেন তিনি। অত্যন্ত সফল একটা অপারেশনের জন্যে।

রেজাল্ট কি এখনও তা আমরা জানি না, বলল পিট। ফ্রাঙ্ক ম্যানকিউসো পেইিটিং-এর যে ছবি ট্র্যান্সমিট করে পাঠালেন, তার সাথে কোন দ্বীপের মিল পাওয়া গেছে?

যায়নি মানে! দ্বীপটাকে আজিমা বলতে স্থানীয় জেলেরা, অনেক কাল আগে। কিন্তু চার্টে ওটা আছে সোসেকি আইল্যান্ড হিসেবে। আজিমা নামটা লোকে ভুলেই গেছে।

কোথায় সেটা? জানতে চাইল অ্যাল। অ্যাডমিরালের পিছু পিছু হেঁটে এসে একটা সেশন ওয়াগনে উঠল ওরা। ড্রাইভিং সীটে বসল পিট, ওর পাশে অ্যাডমিরাল। অ্যাল বসল ব্যাকসীটে।

এডো সিটির পূর্ব দিকে, তীর থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে।

 হঠাৎ পিটের চেহারায় উদ্বেগের ছায়া পড়ল। লরেনের কোন খবর, অ্যাডমিরাল?

মাথা নাড়লেন অ্যাডমিরাল। আমরা শুধু জানি মিস লরেন ও মি. ডিয়াজ বেঁচে আছেন, ওঁদেরকে গোপন একটা আস্তানায় আটকে রাখা হয়েছে?

 উদ্ধার করার কোন চেষ্টা হচ্ছে না? বাঁক নিয়ে ওয়াশিংটনের রাস্তাটি ধরল পিট।

 গাড়ি-বোমার হুমকি যতক্ষণ থাকবে, প্রেসিডেন্টের হাত বাঁধা।

ঘুমাব, মুখের সামনে হাত তুলে হাই তুলল অ্যাল, আসলে প্রসঙ্গ বদলে পিটকে শান্ত করতে চাইছে সে। আমার সাঙ্তিক ঘুম পেয়েছে।

ম্যানকিউসো জার্মানিতে রয়ে গেলেন কেন? জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার।

 জাপানি দূতাবাসের পেইন্টিংগুলো টোকিওতে পৌঁছে দেবেন উনি, বলল পিট। ডোনাল্ড কার্ন ফোনে তাঁকে সে নির্দেশ দিয়েছেন।

মুচকি হাসলেন স্যানডেকার। জার্মানদের তাই বোঝানো হয়েছে। আসলে ম্যানকিউসো ওগুলো ওয়াশিংটনে নিয়ে আসছেন। সময় ও সুযোগ মত প্রেসিডেন্ট ওগুলো শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে জাপানিদের উপহার দেবেন।

কোথায় যাচ্ছি আমরা, জানতে চাইল পিট।

চুপ করে থাকলেন অ্যাডমিরাল, কি যেন ভাবছেন। ডার্কের মনে হলো, শুনতে না পাবার ভান করছেন ভদ্রলোক। প্রশ্নটা আবার করল ও। কোথায় যাচ্ছ? শুনে খুশি হবে বলে মনে হয় না। আবার প্লেনে চড়তে হবে তোমাদের।

মানে? কোথায়?

 প্রথমে লস এঞ্জেলসে। তারপর প্যাসিফিকে।

লস এঞ্জেলসে কেন? প্যাসিফিকের ঠিক কোথায়?

লস এঞ্জেলসে স্টেসি ফক্স তোমার পার্টনার। তারপর পালাউ-এ যাচ্ছ। মেল পেনারের সাথে দেখা করতে।

কখন প্লেনে চড়ব আমরা?

 হাতঘড়ি দেখলেন অ্যাডমিরাল। এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট পর তোমাদের ফ্লাইট। ডালেস থেকে একটা কমার্শিয়াল এয়ারলাইনের প্লেনে…।

 তাহলে তো ওখানেই ল্যান্ড করলে পারতাম আমরা, বললল পিট। গাড়িতে উঠতে হত না।

সিকিউরিটির কথা ভেবে এই ব্যবস্থা, বললেন অ্যাডমিরাল ডোনাল্ড কার্ন চাইছেন আর সব সাধারণ প্যাসেঞ্জারের মত টিকেট কেটে প্লেনে চড়ো তোমরা।

কিন্তু আমাদের কাপড়চোপড় দরকার…।

এয়ারপোর্টে এতক্ষণে পৌঁছে গেছে দুটো সুইকেস।

অসহায়ভাবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে রিভার ভিউ মিররে তাকাল পিট। বেল্টওয়েতে উঠে আসার পর থেকে একজোড়া হেডলাইট অনুসরণ করছে ওদেরকে। শেষ কয়েক কিলোমিটার একই দূরত্ব বজায় রাখছে আলো দুটো। গতি সামান্য বাড়ালো ও। পিছিয়ে পড়ল জোড়া হেডলাইট, তারপর আবার এগিয়ে এল।

কি ব্যাপার, পিট? জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল।

ফেউ।

ঘাড় ফিরিয়ে পিছন দিকে তাকাল অ্যাল। একাধিক গাড়ি। তিনটে ভ্যানের একটা কনভয় দেখতে পাচ্ছি আমি।

 পিট চিন্তিত, তাকিয়ে আছে মিররে। যারাই পিছনে লাগুক, কোন ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। গোটা একটা প্লাটুন পাঠিয়েছে।

 ছোঁ দিয়ে কার ফোনের রিসিভার তুলে নিলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার, লাইনটা নিরাপদ। সঙ্কেতের ধার ধরলেন না, রিসিভারে বললেন, দিস ইজ অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। আমরা বেল্টওয়েতে রয়েছি, যাচ্ছি দক্ষিণে, মর্নিং সাইড এর দিকে। আমাদের পিছনে ফেউ লেগেছে…।

বলুন ধাওয়া করছে, বাধা দিল পিট। দ্রুত চলে আসছে ওরা।

অকস্মাৎ এক পশলা বুলেট এসে লাগল গাড়ির ছাদে। কারেকশন, অদ্ভুত শান্ত গলায় বলল অ্যাল জিওর্দিনো। ধাওয়ার বদলে বলুন হামলা।

সিট থেকে মেঝেতে নেমে গেলেন অ্যাডমিরাল, দ্রুত কথা বলছেন মাউথপীসে। অ্যাকসিলারেটরে পা চেপে ধরেছে পিট। বেল্টওয়ে ধরে ঘণ্টায় একশো পঞ্চাশ কিলোমিটার গতিতে ছুটল স্টেশন ওয়াগন।

 ডিউটিতে রয়েছে একজন এজেন্ট, অ্যাডমিরাল জানলেন। হাইওয়ে পেট্রলকে মেসেজ পাঠাচ্ছে সে।

তাড়াতাড়ি করতে বলুন, আবেদন জানায় পিট, শত্রুপক্ষের লক্ষ্য ব্যর্থ করার জন্যে হাইওয়েরে তিনটে লেনের একটা থেকে আরেকটায় চলে যাচ্ছে দ্রুত।

আরও এক পশলা গুলি হলো। সিটগুলোর মাঝখানে আগেই বসে পড়েছে অ্যাল। পিছনের জানালার কাঁচ ভেঙে গেল, বুলেটগুলো ছুটল তার মাথার উপর দিয়ে, ভেঙে ফেলল সামনের উইন্ডস্ক্রীনের অর্ধেকটা। এটাকে ঠিক ফেয়ার প্লে বলা যায় না। ওদের কাছে অস্ত্র আছে, আমাদের কাছে নেই, অ্যালের সুরে অভিযোগ।

 চট করে ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকাল পিট। বসে না থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে চিঠি লেখো।

সামনে বাক, সতর্ক করলেন অ্যাডমিরাল।

রিয়ার ভিউ মিররে তাকাল পিট। ভ্যানগুলো অ্যাম্বুলেন্সের মত রঙ করা। লাল ও নীল আলোও জ্বলছে-নিভছে। তবে সাইরেন বাজছে না। কালো পোশাক পরা লোকগুলোকে দেখতে পেল ও, জানালা দিয়ে অটোমেটিক উইপন বের করে রেখেছে। প্রতিটি ভ্যানে সম্ভবত চারজন করে লোক। সব মিলিয়ে বারো জন।

সামনের বাঁকটা এখনও দুশো মিটার দূরে। ওখানে পৌঁছানোর আগেই কিছু একটা করা দরকার, কারণ পরবর্তী বুলেটের ঝাঁকগুলো রাস্তা থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে ওদেরকে। শত্রুপক্ষকে কিছু বুঝতে না দিয়ে অকস্মাৎ দ্রুত হুইল ঘোরাল পিট, দুটো রাস্তা পেরিয়ে উঠে এল গ্লাস মোড়া কিনারায়। সময়ের হিসেবটা নিখুঁত হয়েছে। এক ঝাঁক বুলেট ছুটে এল, কিন্তু একটাও লাগল না। রাস্তার কিনারা থেকে ঢাল বেয়ে নেমে এল স্টেশন ওয়াগন, অগভীর একটা গর্তে পড়ল ওরা, গর্তের ভেতরে পানি। দুতিনবার পিছনে গেল চাকা, তারপর গর্তের আরেক প্রান্ত দিয়ে উঠে এল বেল্টওয়ের সমান্তরাল অপর একটা রোডে।

ঘটনা দ্রুত মোড় নেয়ায় শত্রুপক্ষ হতভম্ব হয়ে পড়ল, গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো তারা, ফলে সময় নষ্ট হলো। আবার এক হয়ে ধাওয়া শুরু করল তারা, তবে ইতোমধ্যে দশ-বারো সেকেন্ড এগিয়ে গেছে পিট।

লম্বা একটা এভিনিউ পেরিয়ে এসে আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ল স্টেশন ওয়াগন। তীক্ষ্ণ কয়েকটা বাঁক ঘুরল পিট, ভাঙা উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে ভোরের ঠাণ্ডা বাতাস এসে আঘাত করছে মুখে। দুবার বাম দিকে, তারপর ডান দিকে ঘুরল ও। আবাসিক এলাকা, কাজেই ভ্যান থেকে গুলি হচ্ছে না। আবার বাক নেয়ার সময় পিছনে তাকিয়ে পিট দেখল, ভ্যানগুলোকে দেখা যাচ্ছে না। বাঁক ঘুরেই হেডলাইট অভ করে দিল ও, গাড়ি চালাচ্ছে অন্ধকারে। জানা সমস্ত কৌশল কাজে লাগাবার চেষ্টা করছে। মাঝে মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে মাত্র, কিন্তু খসাতে পারছে না।

আরেকটা বাঁক ঘরে শহরের প্রধান এভিনিউয়ের দিকে ফিরে যাচ্ছে পিট। দ্রুত পিছিয়ে গেল একটা গ্যাস স্টেশন, থিয়েটার, কয়েকটা মুদি দোকান। হার্ডওয়্যার স্টোর খুঁজছি আমরা, দেখতে পেলে বললেন, বাতাস আর টায়ারের শব্দকে ছাপিয়ে উঠল ওর কণ্ঠস্বর।

কি খুঁজছি? অ্যাডমিরালের গলায় অবিশ্বাস।

হার্ডওয়্যারের দোকান। এটা শহর, না থেকে পারে না।

অসকার ব্রাউনস্ হার্ডওয়্যার এমপোরিয়াম, ঘোষণা করল অ্যাল। বেল্টওয়ে থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসার সময় সাইনবোর্ডটা দেখেছি আমি।

 যে প্ল্যানই করে থাকো, থমথমে গলায় বললেন অ্যাডমিরাল, জলদি ম্যানেজ করো। গ্যাস গজের লাল আলো জ্বলতে দেখলাম এইমাত্র।

 ড্যাশ ইন্সট্রুমেন্টের দিকে তাকাল পিট। এমটি লেখা ঘরে কাঁপছে কাঁটা। তার মানে ফুয়েল ট্যাঙ্ক সেলাই করেছে ওরা।

রাস্তার ডান দিকে ব্রাউন এমপোরিয়াম এগিয়ে আসছে, বলল অ্যাল, খোলা উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে হাত লম্বা করে দেখাল।

আপনার কাছে টর্চ আছে? অ্যাডমিরালকে জিজ্ঞেস করল পিট।

গ্লাভ কমপার্টমেন্ট।

 বের করুন।

ভিউ মিররে তাকাল পিট। দুই ব্লক পিছনে বাঁক ঘুরছে প্রথম ভ্যানটা। রাস্তার বাম দিকে নর্দমার ঢাকনির উপর গাড়ি তুলল ও, তারপর ভন ভন করে ডান দিকে হুইল ঘোরাল।

আড়ষ্ট হয়ে গেলেন অ্যাডমিরাল।

 কর্কশ আওয়াজ বেরুল অ্যালের গলা থেকে, ওহ, নো!

একপাশে কাত হলো স্টেশন ওয়াগন, পরমুহূর্তে ফুটপাথের উপর দিয়ে ছুটল, প্লেন গ্লাস ভেঙে ঢুকে পড়ল হার্ডওয়্যার স্টোরে। প্রথমে বিধ্বস্ত হলো সামনের কাউন্টার, দেরাজ থেকে অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ল খুচরো পয়সা আর টাকা। দাতাল রেদা ভর্তি একটা র‍্যাক ধরাশায়ী হলো। একটা প্যাসেজে ঢুকে পড়ল গাড়ি, দুপাশের র‍্যাক থেকে বুলেটের মত ছুটল নাট-বল্টু, পেরেক, স্ক্রু আর গজাল।

প্যাসেজে চলে এল ও, কি যেন খুঁজছে। একটা তার ছিঁড়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে কর্কশ শব্দে বেজে উঠল সিকিউরিটি অ্যালার্ম।

সামনে একটা ডিসপ্লে কেস দেখে ব্রেক করল পিট, পরমুহূর্তে সামনের কাঁচ চুরমার হয়ে গেল। গাড়ির একটা মাত্র হেডলাইট মিটিমিট করে জ্বলছে, তার আলোয় দেখা গেল বিধ্বস্ত ডিসপ্লেতে বিশ কি ত্রিশটা হ্যান্ডগান ছড়িয়ে রয়েছে, পাশের বড় একটা কেবিনেটে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি রাইফেল ও শটগান।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *