সিজিপিএ আসলে কতটা প্রয়োজন?
সিজিপিএ হচ্ছে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার একাডেমিক সাফল্যের প্রমাণ। সিজিপিএর অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আমরা যখন এসএসসি দিয়ে কলেজে ওঠার ভর্তিযুদ্ধে প্রবেশ করি, তখন ভালো কলেজ পেতে হলে কিন্তু এসএসসির রেজাল্টটাই দেখা হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় সেই এইচএসসির নম্বরটাও কিন্তু যোগ করা হয় ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের সাথে, আর সেটা বড় একটা ভূমিকা রাখে নম্বরে। ঠিক একইভাবে তোমার প্রথম জবে সিজিপিএ-ও ভালোই ভূমিকা রাখবে। কারণ যারা জব দেবে, তারা তোমাকে চেনে না, জানে না তোমার প্রতিভা আর কৃতিত্বের কথা। তারা তখন তোমার সিজিপিএ দিয়েই তোমাকে মূল্যায়ন করবেন। প্রথমবারের এই ঝক্কিঝামেলার পর থেকে পরের সব জবে তোমার অভিজ্ঞতা আর কর্মক্ষমতাই তোমার হয়ে কথা বলবে। এ বিষয়ে চলো আরো কিছু আলোচনা করি–
১. সিজিপিএ বনাম অন্যান্য :
চাকরির শুরুতেই সিজিপিএর এমন দরকার দেখে অনেকেই হয়তো মনে করছো, তাহলে কি সিজিপিএই সব? অন্যান্য কাজ, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি, এতশত ক্লাবে কাজ করা কি বৃথা? আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়। হ্যাঁ ভালো একটা জব পেতে হলে সিজিপিএটা দরকার, কিন্তু তার পাশাপাশি দরকার হয় অভিজ্ঞতারও। ভালো সিজিপিএ আছে অনেকেরই, কিন্তু কোন ইভেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা, কিংবা হঠাৎ করে কোনো অবস্থা সামলাতে পারার ক্ষমতা আছে কজনের?
সিজিপিএর পেছনে ছোটার পাশাপাশি এগুলো করলেও কিন্তু তুমি এগিয়ে থাকতে পার অন্য সকলের থেকে। একটা রুমে যদি দুজন ক্যান্ডিডেট থাকে, যাদের একজনের অনেক ভালো সিজিপিএ কিন্তু বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা আর অন্যজনের মোটামুটি ভালো সিজিপিএর সাথে আছে অভিজ্ঞতার ঝুলি, দ্বিতীয়জনের দিকেই কিন্তু জবের পাল্লাটা ঘুরে যায়। তাই অন্য সবার থেকে তোমাকে এগিয়ে রাখতে দরকার একটুখানি অভিজ্ঞতার ঝলক!
কিন্তু কী করলে অর্জন করা যাবে এসব অভিজ্ঞতা? কীভাবে অভিজ্ঞতার বলে এগিয়ে থাকা যাবে বাকিদের থেকে? এর জন্যে আসলে কোনো শর্টকাট নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছরটায় কিন্তু পড়ালেখা কিছুটা শিথিলভাবে চলে। এটাই হচ্ছে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে সেরা সময়। শিথিলতাটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই করে ফেলতে পার তোমরা। যেমন :
২. এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটি
বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার বছরগুলি কেটে যাবে একের পর এক অনুষ্ঠান আর আয়োজনে। তুমি গান গাইতে পার? তোমারই সুযোগ নিজের পরিচিতি বাড়ানোর এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে। তুমি নাচতে বা অভিনয় করতে পার? অন্যান্য প্রতিভা আছে তোমার? সেগুলো দেখিয়ে দেবার শ্রেষ্ঠ সময় এটিই। শুধু বাসায় বসে পড়াশোনা না করে এমন প্রতিভার বিকাশ তোমার অভিজ্ঞতা আর পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করবে। তাছাড়া লেখালেখির অভ্যেস থাকলে সেটাও কাজে লাগাতে পার তুমি। আমাদের ১০ মিনিট স্কুল এর ইমেইলে লেখা দিয়ে তুমি হয়ে যেতে পার আমাদের বস্মগের একটা অংশ!
৩. প্রতিযোগিতা
ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিতর্ক ভালোবাসলে আছে নানা বিতর্ক প্রতিযোগিতা। আছে বিজনেস কম্পিটিশন, যেখানে ভালো করলে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ থাকে, সুযোগ থাকে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে সেখানে চাকরি করারও! আরও আছে MUN, যাকে এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা বললে একটুও ভুল হবে না! MUN এ ভালো করতে পারলে সেটি নিঃসন্দেহে তোমার সিভিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে থাকবে!
৪. ক্লাব
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রকম ক্লাব থাকে। ডিবেট ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব আরো কত কি? তুমিও যোগ দিতে পার এসব ক্লাবে। ক্লাবগুলো থেকে বিভিন্ন দিবসে ইভেন্ট আয়োজন করা হয় সেগুলোয় অংশ নিয়ে কিংবা ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেও তুমি অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পার! পড়ালেখার ফাঁকে ভিন্ন কিছু করলে মন্দ হয় না কিন্তু!
৫. পার্ট টাইম জব
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্যে পার্ট টাইম জব অসাধারণ একটি মাধ্যম। এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে যারা পার্ট টাইম জবের সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের। এদের মধ্যে কোনো কোনোটা অবৈতনিক, আবার কোনোটা থেকে উপার্জন করাও সম্ভব। নিজে টাকা উপার্জন করলে কেমন একটা আনন্দ হয় না? তার সাথে যদি যোগ হয় অফুরন্ত অভিজ্ঞতা, ব্যাপারটা তখন সোনায় সোহাগা হয়ে দাঁড়ায়!
৬. ইন্টার্নশিপ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করার স্বপ্ন দেখাটাও অনেকটা দুঃসাহসের মতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন কোম্পানিতেও তোমরা কাজ করতে পরো ইন্টার্ন হিসেবে! এমন সব কোম্পানিগুলো প্রায়ই ইন্টার্ন চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয় খবরের কাগজে। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে এমন কোনো কোম্পানির ইন্টার্ন হতে পারলে তুমিও পাবে সেই অভিজ্ঞতা আর সিভিতে যোগ হবে আরেকটি শক্তিশালী কৃতিত্ব!
৭. ভার্চুয়াল সুপারহিরো
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে থাকতেই তুমি শিখে ফেলতে পারো পাওয়ার পয়েন্ট আর ডিজাইনিং নিয়ে নানা কিছু শিখে সেগুলো প্রয়োগ করতে পারলে সেটি তোমার স্কিলের একটি অংশ হয়ে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়া কাজে লাগিয়ে তুমি শুরু করতে পার ইউটিউবিং আর সেগুলো প্রয়োগ করে হয়ে উঠতে পার অভিজ্ঞ আর পরিচিত!
এতকিছু বলার কারণ হচ্ছে যে, সিজিপিএই সব এ ধারণা দূর করতে পারলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে। আজ আমরা চাই সবাই সিজিপিএর পাশাপাশি অন্যান্য কাজও করবে, তাহলে তোমাদের জীবন হবে আরো রঙ্গিন। কীভাবে করতে হবে সেটা? উত্তর একটাই এ লেখাটি পড়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবেই স্বপ্নের জগতে পাড়ি দেয়া সম্ভব হবে!
.
মন ভালো করার টোটকা
আমরা সবাই কিন্তু শারীরিক ভাবে সুস্থ্য হলেও মানসিকভাবে কমবেশী অসুস্থ।
শুনে হয়তো আমাকেই পাগল ভাবছো অনেকে, সবাই কী করে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়? কিন্তু, কথাটার সত্যতা আছে। এই যে আমাদের নতুন প্রজন্ম ভুগছে ভাল্লাগে না রোগে, এটি কি অসুস্থতা নয়? কাজ করতে ভাল্লাগে না, ঘুমাতে ভাল্লাগে না, খেতে ভাল্লাগে না, পড়তে ভাল্লাগে না ভালো না লাগার পাল্লাই ভারি তাদের জীবনে। আবার অনেকেই আছে ডিপ্রেশন জোনে। আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, আমার জীবন রেখে কী। লাভ, সমাজের কাছে বোঝা আমি। এমন সব চিন্তায় প্রতিনিয়ত ডিপ্রেসড হচ্ছে অনেকেই।
ডিপ্রেশন এমন একটি ব্যাধি, যা আক্রমণ করে সবাইকে। আমার নিজেরও ডিপ্রেশন আসে, আমিও বেশ হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু তখনই মনে হয় ডিপ্রেশন আমাকে পেয়ে বসার আগে আমি ডিপ্রেশনকে হারিয়ে দেবো! এই চিন্তাটা থাকার কারণে ডিপ্রেশন জিনিসটা আর জেঁকে বসতে পারে না। ডিপ্রেসড হয়ে বসলে আমি বেশকিছু কাজ করতে থাকি, যতক্ষণ না এই ডিপ্রেশন ব্যাটা হার না মানে! আজ তোমাদের এই কাজগুলো নিয়েই বলি
১. কাউকে খুশি করার চেষ্টা কর
খেয়াল করে দেখবে, তুমি ডিপ্রেসড থাকলে তোমার মধ্যে একটা ধারণা চলে আসে, তুমি কোন কাজের না, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। এই সময়টায় যদি তুমি চেষ্টা কর অন্য কারো মুখে হাসি ফোঁটানোর, তাহলে দেখবে অন্যরকম একটা তৃপ্তি আসবে তোমার মনে। এর কারণ দুটো। একটা হলো, তোমার কারণে কেউ আনন্দ পেল, এতে তোমার ডিপ্রেশনটা ধারে কাছে আসতে পারলো না। আরেকটা হলো, তুমি কোনো কাজের না এই ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হলো তোমার নিজের কাছেই!
২. নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করা বন্ধ কর
ডিপ্রেশনে পড়লে আরেকটা খুব কমন ব্যাপার ঘটে, অন্যান্য সুখী এর সাথে আমরা নিজেদের তুলনা করা শুরু করি। তাতে আরো বেশি ডিপ্রেসড হয়ে পড়ি সবাই। তাই এমন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সবার আগে অন্যদের সাথে তুলনা বন্ধ করে নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করতে হবে।
৩. উদার মানসিকতা বজায় রাখো
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির আরেকটি অস্ত্র হলো উদার মানসিকতার প্রকাশ। ভেবে দেখ তো, যদি তোমার রাগ দুঃখ সব একাকার হয়ে যায় তাহলে ডিপ্রেশন কি আরো বেশি বাড়বে না? তাই সুন্দর ও উদার মানসিকতা দেখাতে পারলে ডিপ্রেশন ধারে কাছে ভিড়তে সাহস পাবে না!
৪. নিজেকে নিয়ে আশাবাদি থাকো
নিজেকে নিয়ে আশাবাদি থাকাটা হতাশা থেকে দূরে থাকার একটি দরকারী কৌশল। ডিপ্রেশন সবার আগে আঘাত করে আত্মবিশ্বাসে, আশাবাদ কমিয়ে দেয় গোড়া থেকেই। তাই মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে যদি তুমি একবার প্রতিজ্ঞা করে উঠতে পার–আমার উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তাহলেই কেল্লাফতে! ডিপ্রেশন আর তোমাকে ছুঁতেও পারবে না।
৫. মন থেকে ঈর্ষা দূর করে ফেলল
আমরা নিজেদের যতই উদারমনা মনে করি না কেন, অপরের সাফল্য মেনে নিতে সবারই কষ্ট হয়। ডিপ্রেশনে থাকার সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এই ঈর্ষা দূর করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার। শুধুমাত্র তখনই ভিপ্রেশনের ভয়কে জয় করা যাবে, অন্যের সাফল্য যখন তোমার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াবে না।
৬. নেতিবাচক মানুষদের এড়িয়ে চলল
ডিপ্রেশনের সময়গুলোতে কেন যেন নেতিবাচক মনের মানুষগুলোর সাথেই লেখা হয়ে যায়। এই নেতিবাচক মানুষগুলোর কথায় আশার আলো পাওয়া তো যায়ই না, বরং তাদের সমালোচনার চোটে হতাশা কাটিয়ে ওঠার আশাগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। এরকম হতাশা উদ্রেগকারী মানুষদের যথা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে যেতে হবে।
এ কাজগুলো শুধুমাত্র ডিপ্রেশনের সময়গুলোতেই নয় অন্যান্য সৎ করতে থাকলে দেখবে আর কখনো ডিপ্রেশন তোমার ধারেকাছেও তাস পারবে না! তাই এগুলোকে অভ্যাসে পরিণত কর, সুখী সুন্দর জীবন তোমার নিশ্চিত হবেই!
.
একজন বৃক্ষমানবের গল্প
ফরিদপুরের ছোট্ট একটা গ্রাম। ভগণডাঙ্গা নাম। কাকডাকা ভোর। দূরে দেখা যাচ্ছে একটা রিকশা এগিয়ে আসছে। রিকশার চালকের বয়স হয়েছে। রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখাও দেখা যাচ্ছে। রিকশায় কিন্তু মানুষ নেই। একটা গাছের চারা। মানুষটা পরিশ্রম করে একটা গাছের চারা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে? একটু পরেই মিলল সে প্রশ্নের উত্তর। রাস্তার এক পাশে অদ্ভুত মায়ার সাথে পুঁতে দিলেন তিনি গাছের চারাটা। কিন্তু কে এই শুশ্রুমন্ডিত মানুষটি? কেনই বা এমন কাজ করছেন?
কাছে গিয়ে দেখা গেল, ইনি তো ফরিদপুরের বিখ্যাত সামাদ চাচা! ষাটোর্ধ্ব মানুষটি পরিশ্রমে ক্লান্ত, কিন্তু তার চোখেমুখে খুশির আভাস দেখা যাচ্ছে। আরো একটি দিন তো তিনি গাছ লাগাতে পেরেছেন! প্রশ্ন আসে, কে এই সামাদ চাচা! কেন একজন সাধারণ রিকশাচালককে একটা জেলার সবাই চেনে? উত্তর সেই গাছেই।
একজন বৃক্ষমানব
ফরিদপুরের এই পৌঢ় মানুষটি গত আটচল্লিশ বছর ধরে প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও গাছ লাগিয়েছেন। সেই ছোটবেলা থেকে শুরু, এখনো বিপুল উদ্যমে তিনি বৃক্ষরোপণ করেই চলেছেন! এখন পর্যন্ত এই মানুষটি সতেরো হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন!
সামাদ চাচার এই দারুণ কাজ চোখ এড়ায়নি এলাকাবাসীর। সেই থেকেই প্রবীণ এই রিকশাচালককে সবাই চেনে বৃক্ষ সামাদ হিসেবেই। তার ভাষ্যমতে, গাছ না লাগালে নাকি তার ঘুম হয় না! একবার ভাবো তো, একজন মানুষ, যার দৈনিক আয় একশ টাকাও হয় না অনেক সময়, তিনি প্রতিদিন একটি করে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ উন্নত করছেন। আর আমরা কী করছি?
সত্যিকারের সুপারহিরো
ছোটবেলায় আমার শখ ছিল, যখন যেই ট্রেন্ড চলে, তার সাথে তাল মিলিয়ে চলা। তাতে নিজেকে অনেক কুল ভাবা যেত! একদম ছোটবেলায় দেখতাম সবাই ব্যাগি প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াতো, আব্বুর সাথে বাজারে গেলে তাই প্রতিনিয়ত ব্যাগি প্যান্টের খোঁজে অস্থির হয়ে যেতাম। আর খেলতাম পোকেমন কার্ড, সবাই যাতে বলে–আরে! আয়মান ছেলেটার তো অনেক ভাব!
একটু বড় হয়ে দেখলাম যে এসব আর কুল নয়, কুল হলো স্পাইক করা চুল নিয়ে ঘোরা। যেই ভাবা সেই কাজ, লেগে পড়লাম চুল স্পাইক করার মিশনে। এখনো মনে আছে, গোসল করে মাথায় টুপি পরে ঘুরতাম যাতে চুলগুলো স্পাইক করা থাকে! বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে দেখি আরেক কাহিনি। এখন ইংরেজিতে কথা বলা, ইংরেজি মুভি দেখে সেই নিয়ে বকবক করাটা অনেক কুল, তাই সেটা শুরু করলাম।
পড়ালেখা শেষ করে এখন বুঝতে পারছি, সত্যিকারের কুল আসলে কী। না, এতে কোনো ভাব নেই। বলছি সামাদ চাচার কথা। এই মানুষটি সত্যিকারের কুল, তিনিই আসল সুপারহিরো। বাস্তবের সুপারহিরোরা আলখেল্লা পরে পৃথিবী বাঁচায় না, একজন রিকশাচালকও তার সামর্থের সবটুকু দিয়ে গাছ লাগিয়ে পৃথিবী বাঁচাতে পারেন।
ডেইলি স্টার ও সামাদ চাচা :
সামাদ চাচার খবর এখন আর পৃথিবীর অজানা নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই এখন তাকে চেনেন। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর একটি, The Daily Star এর ২৬ বছর পূর্তিতে সামাদ চাচাকে ঢাকায় এনে সংবর্ধনা দেয়া হলো। ভাগ্যক্রমে আমিও সেখানে ছিলাম, তাই এমন। একজন মাটির মানুষের সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।
দেখলাম, সামাদ চাচার মুখ ভার। তার মুখে হাসি নেই। সবাই জিজ্ঞেস করছে তাকে, কিছু লাগবে কি না, তিনি কিছু খাবেন কি না। তবুও তাকে চিন্তাগ্রস্ত লাগে। অবশেষে একসময় সত্য জানা যায়। উনি ঢাকায় এসে আজ একটা গাছও লাগাতে পারেননি, তাই তার মন খারাপ।
তৎক্ষণাৎ একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, সামাদ চাচাকে গাছের চারা এনে দেয়া হলো, তিনি মহাব্যস্ত হয়ে গাছ লাগালেন। তার মুখে হাসি ফিরে এলো। তিনি স্বস্তি পেলেন, একদিনের জন্যেও গাছ লাগানো মিস হলো না! আর আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবলাম, এ কেমন মহামানুষ?
সামাদ চাচার মতো চার যুগ ধরে গাছ লাগানোর মত প্রায় অসম্ভব কাজ বা হয়তো কেউই পারব না। কিন্তু আমরাও কিন্তু চাইলেই প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করতে পারি। সেটা হতে পারে এলাকার বৃদ্ধ এবং বড় কোনো মানুষকে একবেলা ভরপেট খাওয়ানো, কিংবা পথশিশুদের জামাকাপড় কিনে দেয়া ইত্যাদি অনেক কিছু! সবকিছুই করা সম্ভব, যদি তোমার সেই সদিচ্ছাটুকু থাকে।
.
সময় বাঁচানোর শতভাগ কার্যকর কৌশল
বর্তমান প্রজন্মের বড় একটা সমস্যা হলো যে তারা এত বেশি আর ভিন ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে যে, প্রায়ই দেখা যায় কোনো না কোনো কাজ করার জন্যে সময় জোগাড় করাই যায় না। শুধু সেটাই না, এই কাজগুলো আর পরে করার সময় পাওয়া যায় না। ডেডলাইন মিস হয়, জমা হয় আক্ষেপ। পরমুহূর্তেই আবার নতুন নতুন ডেডলাইন আসে, নতুন কাজের নিচে চাপা পড়ে যায় না করা কাজগুলো। এভাবে একবার না করা কাজগুলো আর কোনোদিনই করা হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততা সেগুলোয় আর হাত দিতে দেয় না, একসময় ফুরিয়ে যায় তার প্রয়োজনীয়তা।
আমারও ঠিক এরকমই হতো কাজ করার সময়। একগাদা কাজের ভিড়ে পুরনো কাজ খুঁজে পেতাম না, সেগুলো আসলেই আর করা হতো না কোনোদিনই। এরকম সময়ে সন্ধান পেলাম দারুণ একটা ট্রিকের। এটাকে বলা হয় Time hack! খুব বেশি সাধারণ এই পদ্ধতিটা অবলম্বন করার পর থেকে সময়ের কাজ সময়ে করে ডেডলাইন পার করতে আর কোনো অসুবিধা হয়নি আমার। ভালোভাবেই করে ফেলেছি সব কাজ!
এই পদ্ধতিটা কয়েক ধাপে করে এগোতে হয়। সবগুলো ধাপ শেষ করার পর দেখবে যেকোনো ডেডলাইনের আগেই তোমার কাজ প্রস্তুত! দেখে নাও সে ধাপগুলো :
ধাপ-১ : প্রথমেই তোমাকে কাগজে একটা লিস্ট করতে হবে। লিস্টে থাকবে পরের দিন যে কাজগুলো করবে, সেগুলোর নাম আর বিবরণ। এ কাজটা করতে হবে ঘুমাতে যাবার ঠিক আগে, কারণ তাতে নতুন কোনো কাজ যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
তোমার হয়তো মনে হবে, কাজ লিস্টে লিখে কী লাভ, এমনিতেই তো মনে থাকে! সত্যিটা হলো, এগুলো আসলে মনে থাকে না। ঠিক যেমন ক্লাসের পড়ার নোট না নিলে দুই দিন পর ক্লাসে কী হয়েছে সেটা আর মনে থাকে না, কাজের ক্ষেত্রেও তাই। এজন্যেই লিস্টে সুনির্দিষ্ট করে সবগুলো কাজের নাম লিখতে হবে।
ধাপ-২ : দিনের শুরু থেকেই লিস্টের কাজ একে একে শেষ করতে হবে। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, দিনের শুরু হলেই আমাদের নিজের কাজ বাদে অন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে, কারো হয়তো ইউটিউবে গান শুনতে ইচ্ছা করে, কারো একটু ফেসবুকিং করতে। কিন্তু এগুলো করার আগে লিস্টের কাজ শেষ করার দিকে মন দিতে হবে। লিস্টের কাজ শেষ হয়ে গেল কোনো সমস্যাই নেই, কিন্তু শেষ করার আগে অপ্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ না করাই ভালো।
ধাপ-৩ : এক একটা কাজ শেষ করবে, এবং তারপর সেগুলো এক এক করে কেটে দিবে। হ্যাঁ, তোমার মনে হতে পারে কাজ শেষ হলে সেটা তো মনেই থাকবে, কাটার কি দরকার। কিন্তু এই যে একটা কাজ শেষ করে কেটে দিলে যে একরকম বিজয়ের আনন্দ মেলে, এটা আর কোথাও পাবে না তুমি। তাই কাজ শেষ করা মাত্র সবগুলো কেটে দেবে।
ধাপ-৪ : সবগুলো কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে প্রতিদিন। হ্যাঁ, তোমার হয়তো অনেক ব্যস্ততা থাকতে পারে, অন্য কিছুতে তুমি ব্যস্ত থাকতেই পার, কিন্তু লিস্টের কাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তাই চেষ্টা করবে দিনের কাজ সব দিনেই শেষ করে ফেলতে।
ধাপ-৫ : এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে তুমি প্রতিদিন লিস্টের সব কাজ শেষ করতে পারবে না। বিভিন্ন বিচিত্র কারণে তুমি দেখা গেল আটকে গেলে, লিস্টের কাজ শেষ হলো না। তাহলে উপায়?
উপায় অতি সহজ। যেদিন লিস্টের কাজ শেষ হবে না কিন্তু দিন ফুরিয়ে যাবে, তুমি সেদিন বাদ পড়া কাজগুলোকে পরের দিনের লিস্টের লিখে ফেলবে! তাহলেই বাদ গেলেও বন্ধ হবে না কাজ, পরের দিন করা হবে সেই কাজটি!
ধাপ-৬ : সারাদিন কী কী করলে তার একটা লিস্ট করে ফেলতে পার। এতে এক৯ উপকার হবে; লিস্টের কাজগুলো সব করা হয়েছে কিনা, সেটা চেক করে নিতে পারবে এর মাধ্যমে। বলা যায় না, অসাবধানে কোনো কাজ না করা হয়ে থাবলে এই লিস্টে সেটা ধরা পড়বেই!
ধাপ-৭ : মানুষের ব্যস্ততা সবসময় একরকম থাকে না। জীবনে এমনও সময় আসতে পারে, যখন কাজের চাপ এত বেশি বড় হয় যে লিস্ট করেও কুলিয়ে ওঠা যায় না। এরকম সময়ে লিস্ট বাড়িয়ে ফেলতে হয়। বিশাল বড় একটা লিস্ট, সেখানে সব কাজ থাকবে। তাহলেই যত বেশি কাজই হোক না কেন, সামলে নেয়া সম্ভব হবে।
সময়কে হার মানানো খুব বেশি সহজ কাজ নয়। কিন্তু নিয়মিত একটা সময় ধরে কাজ করলে যেকোনো কাজ শেষ করাটা আর কোনো সমস্যাই নয়।
.
ফেসবুক সদ্ব্যবহারের ৩ টি কার্যকরী আইডিয়া
২০১৬ বছরটা আমার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর ছিল। অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি, স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। আর পেয়েছি ফেসবুককে কাজে লাগানোর দারুণ তিনটা আইডিয়া। ফেসবুককে শুধুই একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে না দেখে, এটাকে ব্যবহার করে ঘটিয়ে দেয়া যায় অসাধারণ কিছু পরিবর্তন!
আইডিয়া ১ : Bio তে রক্তের গ্রুফ লেখা
Bio তে নিজের রক্তের গ্রুপ রক্ত সংগ্রহ হোক আরো সহজ! এই আইডিয়াটা ব্লাড গ্রুপ নিয়ে। আমাদের আশপাশে এমন অনেক সংস্থা আছে যারা এই রক্ত সংগ্রহের জন্যে, মুমূর্ষ রোগীদের একটুখানি বাঁচার সুযোগ করে দেবার জন্যে দিন রাত খেটে চলেছে। এমনই একটা সংস্থার একজন আমাকে একটা আইডিয়া দেয়। খুব সহজ কিন্তু দারুণ কার্যকরী একটা আইডিয়া।
আমাদের সবারই কিন্তু একটা সোশ্যাল আইডি কার্ড আছে। তার নাম সোশ্যাল মিডিয়া, যাকে ফেসবুক বললে ভুল হবে না। এই ফেসবুকে প্রোফাইল অংশটায় ছোট্ট একটা Bio অংশ আছে। সেখানে আমরা নিজের পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি যদি নিজের বস্নাড গ্রুপটাও দিয়ে দেই, তাহলে এই রক্ত সন্ধানীদের জন্যে অনেক সুবিধা হয়ে যায়, তাই না? এতে আরো দ্রুত রক্ত সংগ্রহ করা যাবে, হয়তো বাঁচানো সম্ভব হবে আরো কিছু প্রাণ!
আইডিয়া ২ : ফেসবুকেই হোক গ্রুপ স্টাডি
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় সব ব্যাচেরই নিজেদের জন্যে একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেখানে তারা ডিপার্টমেন্টের নানা খবর, নোটিশ নিয়ে পোস্ট করে। আমার ছোটভাইকে সেদিন দেখলাম এরকম গ্রুপ আর ফেসবুক লাইভকে ব্যবহার করে চমৎকার একটা কাজ করছে। পরীক্ষার আগের রাতে সে তাদের ফেসবুক গ্রুপে লাইভে গিয়েছে, এবং সেখানে সে পরীক্ষা নিয়ে তার বন্ধুদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দিচ্ছে, কোন্ চ্যাপ্টারের কোথায় কী পড়তে হবে সব বলে দিচ্ছে সে।
আমার নিজের ফাস্ট ইয়ারের কথা মনে হয়। আমরা তখন পরীক্ষার আগে যে বন্ধুটা সবচেয়ে ভালো পড়া পারে, তাকে ঘিরে বসে পড়া বুঝে নিতাম। এই সমস্যার কি সুন্দর ডিজিটাল সলিউশান হয়ে গেল এভাত, তোমাদের মধ্যে যে ভালো পড়া পারো, সেটা যে বিষয়েই হোক, তা নিয়ে যদি তোমরা এভাবে তোমাদের গ্রুপে লাইভে যাও, কি দারুণ হবে না ব্যাপারটা? এতে যে বন্ধুটা পড়াশোনায় দুর্বল তার যেমন উপকার হবে, তেমনি ভালো ছাত্রদেরও ঝালাই করে নেয়া হবে তাদের পড়াগুলো!
আইডিয়া ৩ : একটি শেয়ারেই হবে স্বপ্নপূরণ
এই আইডিয়া আমি পাই একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ, আরিফ আর হোসাইনের একটা স্ট্যাটাস থেকে!
একটা স্কুল বানানো হচ্ছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে কাজটা আর এগোচ্ছিল না। আরিফ ভাইয়া একটা স্ট্যাটাস দিলেন। খুব সহজ কাজ। স্কুলটার জন্যে সবাইকে বললেন একটা করে শেয়ার কিনতে। ৩০০ টাকার একটা শেয়ার। কিছুদিনের মধ্যেই প্রচুর মানুষ এই শেয়ার কিনে জোগাড় করে ফেললেন স্কুলের টাকাটা! একবার ভাবুন তো? আপনার শেয়ারের কারণে কত শিশুর মুখে হাসি ফুটছে? মনটাই ভালো হয়ে যায় না ভাবলে? এইভাবে একটা শেয়ার কেনার ভালো কাজের মাধ্যমে বিশাল একটা ভালো কাজের অংশ হয়ে গেলেন আপনিও! আর ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে এখানেও ঘটে গেল ছোটখাটো একটা বিপ্লব।
আবার ফেসবুকে অনেকেই অনেক কিছু নিয়ে পোস্ট করে, সেগুলোর কোনো কোনোটা এতই অজনপ্রিয় হয় যে পোস্টদাতার ফেসবুক জীবন বিষিয়ে ওঠে! এই ব্যাপারটার একটা সমাধান আছে। মনে করুন, আপনি একটা চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে। এখন চৌরাস্তার মাঝে কিন্তু আপনি কাউকে গালিগালাজ করতে পারেন না, নিজের ব্যক্তিগত তথ্য বলে বেড়াতে পারেন না। কারণ সেখানে পরিচিত অপরিচিত অনেকেই আপনাকে দেখছে। ফেসবুক অনেকটা এই চৌরাস্তার মতোই। তাই এরপর থেকে যখন ফেসবুকে কোনোকিছু নিয়ে পোস্ট করবেন বা লাইভে যাবেন, একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন যে, চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কি এই কথাগুলো বলতে পারতেন আপনি? যদি পারেন, তাহলে করে ফেলুন পোস্ট। না পারলে দয়া করে করবেন না, কারণ সেটিই হতে পারে আপনার ফেসবুক একাউন্টের মৃত্যুর কারণ!
২০১৮-নতুন এই বছরটি হোক আপনার পরিবর্তনের বছর। ফেসবুক ব্যবহার করুন সঠিক নিয়মে, এটাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করুন দারুন কিছুর! স্বপ্ন দেখতে শিখুন, স্বপ্ন দেখলে সাফল্য আসবেই!
.
ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের ১০টি উপায়
ছাত্রজীবনটা শুধু নাক মুখ গুঁজে পড়ালেখা করে কাটিয়ে দেবার জনম পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য অর্থ উপার্জরের কার্যক্রমে অংশ নি একদিকে যেমন নতুন কিছু করার জন্য তোমার কাছে অর্থের শক্তি থাকবে তেমনি অন্যদিকে বৃদ্ধিপাবে আত্নবিশ্বাস, প্রকাশ ক্ষমতা, নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠালাভের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন থেকেই অর্থ উপার্জনের কথা ভাবতাম, কারণ এতে ছাত্রজীবনেই স্বনির্ভরশীল। হবার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। আজ তাই ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জন করার দারুণ ১০টি টিপস বলবো, যেগুলোর যেকোনো একটি অনুসরণ করলেও এই উপার্জনের ব্যাপারটা অনেক বেশি সহজে হয়ে যাবে।
১. খুঁজে নাও টিউশনি
আমি আমার লাইফের প্রথম টাকা উপার্জন শুরু করি টিউশনি করে। আমার এখনো মনে আছে, তিন হাজার টাকার একটি টিউশনি পেয়েছিলাম ৪র্থ শ্রেণীর এক ছাত্রকে পড়িয়ে। যেখান থেকে শুরু করি ব্যাচ পড়ানো এবং এভাবে তা আরো বাড়তে থাকে! আজ তোমরা যে ১০ মিনিট স্কুল দেখছো, তার প্রাথমিক খরচগুলো কিন্তু আমার টিউশনির টাকা থেকেই দেয়া হয়েছিল। তাই আজ থেকেই টিউশনি শুরু করে দিতে পারো!
প্রশ্ন আসবে কিন্তু আমি যে টিউশনি পাই না? আমার কী হবে? এক্ষেত্রে আমার প্রথম টিউশনির গল্প বলি। আমরা চার বন্ধু মিলে একটা লিফলেট বানিয়েছিলাম, পড়াতে চাই লিখে। সেগুলো আমাদের এলাকার দেয়ালগুলোয় সেঁটে দিয়েছিলাম সবাই মিলে। শুনতে অবাক লাগবে, কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা সবাই নিজ নিজ টিউশনি পেয়ে গিয়েছিলাম! তুমিও একই কাজ করতে পার, সাফল্য আসবেই!
২. ডিজাইনিং এর দক্ষতা কাজে লাগাও
এটা আমার অনেক পছন্দের একটি কাজ। আমি আমার ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষ থেকেই ডিজাইনের কাজ শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পর খেয়াল করে দেখি প্রচুর ডিজাইনিং এর কাজ পাওয়া যাচ্ছে। এখন তো একজন ভালো ডিজাইনারের ডিমান্ড আরো বেশি! তাই তুমি যদি ভালো ডিজাইনিং করতে পার তবে বসে কেন? আজ থেকেই তুমি উপার্জন শুরু করে দিতে পার, শুধু নিজের সামর্থের পরিচয় দেবার অপেক্ষা!
৩, এডিটিং স্কিলের সঠিক ব্যবহার কর :
ভিডিও এডিটিং এর ধারণাটি খুব বেশি পুরনো না হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। তোমরা যারা টেন মিনিট স্কুলের ভিডিওগুলো দেখ তারা খেয়াল করবে, প্রতিটি ভিডিও এডিট করা। এই এডিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বর্তমান যুগে সবাই উন্নতমানের ভিডিও চায় কিন্তু ভালো ভিডিও এডিটর পায় না। তাই তোমরা যারা ভালো এডিটিং পার তোমাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ অর্থোপার্জনের!
৪. লেখার হাত ঝালাই করে নাও
লিখতে আমরা সবাই পারি। কিন্তু কজনই বা পারি তার লেখাটা খবরের কাগজে ছাপাতে? তোমার লেখার হাত যদি ভালো হয় তাহলে তোমার সামনে সুবর্ণ সুযোগ! বাংলা কিংবা ইংলিশ যে ভাষাই হোক, চলবে। প্রচুর বস্নগিং সাইট আছে, নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে যে সব জায়গায় প্রচুর রাইটারের প্রয়োজন এমন কি ১০ মিনিট স্কুলেও। তাই যারা লেখালেখিতে ভালো, এই গুণটি কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের পন্থা খুঁজে নিতে পারো!
৫. ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচাইতে আলোচিত একটি শব্দ ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। অন্যভাবে বলা যায় নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা কে ফ্রিল্যান্সিং বলে। আমার মনে হয় এ কাজটির মানে তোমরা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছ।
কোনো একটা বাইরের কাজ তুমি ফ্রিল্যান্সার হয়েই করে দিচ্ছো। ধরো তুমি ডিজাইনিং এ পারদর্শী, কেউ বা আবার ওয়েব ডেভেলপমেন্টে! এমন আরো অনেক কাজ করে দিতে পারছো ফ্রিল্যান্সার হয়েই। তুমি বাংলাদেশে বসে আমেরিকার যে কারো কাজ করে দিতে পারবে। এমন হাজার হাজার কাজ আছে আপওয়ার্কে গেলেই তুমি সে সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে!
৬. কাজ কর এজেন্সির হয়ে
এটি এক ধরনের কোম্পানি যে কোম্পানিগুলো বড় বড় কোম্পানি, ভিডিও এডিটিং করে দেয় ডিজাইনিং করে দেয় প্রেজেন্টেশন তৈরি করে কর্পোরেট ইভেন্ট নামিয়ে দেয়। তুমি যদি এরকম কোনো কাজে পট হয়ে থাকো তাহলে অনেক কোম্পানি তোমাকে খুঁজে নিবে তাদের কাজের জনে। এমন কী চাইলে তুমিও যোগ দিয়ে ফেলতে পার যেকোন এজেন্সিতে!
৭. শখ যখন অর্থ উপার্জনের সহায়ক (ফটোগ্রাফি)
এটি বিশাল এক সুযোগের হাতছানি শিক্ষার্থীদের জন্য। যারা ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি পারো তাদের হয়তো বিস্তারিত বলার দরকার নেই যে কত ধরনের সুযোগের হাতছানি তাদের সামনে!
Wedding Photography, Corporate Photography, Event Photography ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ তাদের জন্যে খোলা রয়েছে। তোমরা যারা ১০ মিনিট স্কুলের ভিডিওগুলো দেখ সেগুলোর পেছনের কলাকুশলীরাও কিন্তু ফটোগ্রাফাররাই! তাই যারা এসবে অনেক পারদর্শী তাদের জন্য বেশ ভালো একটা উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে ফটোগ্রাফি।
৮. ছোটখাট ব্যবসা শুরুর জন্যে ছাত্রজীবন দারুণ সময়
আমাদের নতুন যে টি শার্টগুলো দেখছ তার ডিজাইনটি আমাদের হলেও আমাদের এক ছেলে তার নতুন করা কোম্পানি থেকে আমাদের এই টি শার্টগুলো বানিয়ে দিয়েছে। এমন আরো অনেক ছোট ছোট আইডিয়ার মাধ্যমে শুরু হতে পারে তোমাদের ছোট ব্যবসার পথচলা যা কিনা হয়ে উঠতে পারে তোমার স্বপ্নের চেয়েও বড়।
৯. ডিজিটাল যুগে কোডারের জুড়ি নেই
আইসিটির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। তুমি যদি কোডিংয়ে ভালো হও তাহলে তুমি এ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করতে পার, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে পার, এমন কি হতে পারে তুমি কোনো একটা বড় কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছো! ১০ মিনিট স্কুলে আমরা ডিজাইনার খুঁজি, এনিমেটর খুঁজি এবং অনেক কোডারও খুঁজছি যারা কিনা আমাদের জন্যে নতুন নতুন ফিচার তৈরি করতে পারবে। তাহলে আর দেরি কেন? কোডার হয়ে থাকলে কাজে লাগাও তোমার দক্ষতাকে!
১০. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞ হও
আমরা অনেকেই অনেক ধরনের ইভেন্টে যাই। আমার অনেক বন্ধুই এই ধরনের ইভেন্টে কাজ করছে। হতে পারে ফুড ফেস্টিভাল, কর্পোরেট ইভেন্ট, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এমন আরো অনেক কিছু যা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে পরিচালনা করাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলোর কাজ। তোমার যদি এই ব্যাপারে দক্ষতা থাকে তাহলে এমন অনেক ম্যানেজমেন্ট ফার্ম আছে যেখানে তুমি তাদের সাথে কাজ করতে পারো, কিংবা বন্ধুদের নিয়ে নিজেই একটা ফার্ম খুলে ফেলতে পারো!
তাহলে আর দেরি কেন? দ্রুত কাজে লাগাও এই টিপসগুলোকে, খুঁজে নাও তোমার পছন্দের কাজ, আর ছাত্রজীবনেই শুরু কর অর্থ উপার্জন!
.
ডিজিটাল ওরিয়েন্টেশন ও একটি স্বপ্নের কথকতা
আমার এক বন্ধু সেদিন আমাকে বলল, জানিস আয়মান? আমরা না শিক্ষিত হবার আগেই ডিজিটাল হয়ে গিয়েছি। শুনে অবাকই হলাম। প্রশ্ন করলাম, এর মানে কী? উত্তরে সে যা বলল, সেটা অনেকদিন আমার মাথায় থাকবে। বন্ধুটি বলেছিল, আমরা সবাই কিন্তু স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু তে ওরিয়েন্টেশন বা পরিচিতি পেয়েছি। কী করতে হবে, কী করতে হবে না, এসব জ্ঞানও বলতে গেলে সেখান থেকেই জেনেছি আমরা। কিন্তু এই যে ডিজিটাল লাইফে চলে এলাম সবাই, যেমন ফেসবুকের জগতে প্রবেশ করার সময় কোনো ওরিয়েন্টেশন কি পেয়েছি আমরা?
একটু থেকে লম্বা একটা দম নিয়ে আবার বলা শুরু করল বন্ধুটি। আমি ততক্ষণে আশ্চর্য হয়ে ভাবছি আরে আসলেই তো! বন্ধু বলে উঠল, ফেসবুক একটা ভার্চুয়াল জগৎ, তাই বলে যা খুশি তা কিন্তু করা উচিত না। এখানে। কিন্তু আমরা কী করি? মার্ক জাকারবার্গের লাইভ ভিডিওতে গিয়ে সুন্দরমত কমেন্ট করে আসি, ভাই চিকন পিনের চার্জার হবে? ব্যাপারটা কিন্তু নেহাতই রসিকতার পর্যায়ে থাকে না আসলে। কারণটা জানিস?
আমি তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওর কথা শুনছি। কোনোমতে বললাম, নাহ! শুনি কী কারণ! বন্ধুর উত্তর, এই যে বাঙ্গালিদের এরকম কমেন্ট, এগুলো কিন্তু শুধু একজন মানুষকে রিপ্রেজেন্ট করে না। এগুলো একটা দেশকেও রিপ্রেজেন্ট করে। এসব দেখে বিদেশের মানুষেরা মনে করতেই পারে, বাঙ্গালিরা হচ্ছে বোকা, তারা জানেও না কোথায় কী কমেন্ট করতে হয়। একবার ভেবে দেখেছিস ব্যাপারটা আমাদের দেশের জন্য কী সাংঘাতিক অপমানজনক?
ওর কথা শুনে চিন্তা করে দেখলাম একশো ভাগ সত্যি কথা বলেছে বন্ধুটি। একেবারে মানসম্মানের ব্যাপার দেখছি! ভাবলাম কী করা যায় এটা নিয়ে। তখনই মাথায় আসল, আমি নিজেই একটা ডিজিটাল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে ফেলি না কেন! যেই ভাবা সেই কাজ, শুরু করে দিলাম এই নিয়ে একটা ভিডিও বানানো!
ফেসবুককে কিন্তু আমাদের ডিজিটাল প্রোফাইল বলা যেতে পারে। তোমার বাস্তব জীবনের চেনা মানুষগুলো থেকে এই ভার্চুয়াল জগতের চেনা মানুষের সংখ্যা কিন্তু বেশি। তাই তোমার ডিজিটাল ওরিয়েন্টেশন হবে ফেসবুক প্রোফাইল আর তার ব্যবহারগুলো নিয়েই। ফেসবুককে সঠিকভাবে ব্যবহার করার সবচেয়ে দরকারি ব্যাপারগুলো নিয়ে বলা যাক তাহলে :
১. ফেসবুক আইডি
আমরা আমাদের পরীক্ষার সার্টিফিকেটে আমাদের পুরো নামটাই দেই, তাই না? ফেসবুককে যেহেতু আমাদের ভার্চুয়াল প্রোফাইল বলা হচ্ছে তাই ফেসবুকেও তোমার পুরো নামটা দেয়া উচিত। তোমার নাম সত্যিই যদি অদ্ভুত বালক, এঞ্জেল কণ্যা বা ড্রিম বয় রিফাত না হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো বাদ দিয়ে তোমার ফেসবুক আইডির নাম দিতে হবে আসল নাম দিয়ে। নইলে কোনো একদিন ফেসবুক সিদ্ধান্ত নেবে, এমন মিথ্যা নামের কারো থাকার সম্ভাবনা নেই, তাই গায়েব হয়ে যাবে তোমার ফেসবুক প্রোফাইল।
২. প্রোফাইল পিকচার
তুমি যদি তোমার প্রোফাইল পিকচারে সালমান খান বা একটা গোলাপ ফুলের ছবি দাও, তখন মানুষ স্বভাবতই মনে করবে যে তুমি তো সালমান খান নও, আর গোলাপ ফুল তো আর ফেসবুক আইডি খুলতে পারে না, তাই তোমার নিশ্চয়ই কোনো কু-মতলব আছে! এরকম অহেতুক সন্দেহ থেকে বাঁচতে নিজের প্রোফাইল পিকচারে নিজেরই একটা ছবি দিয়ে ফেলো, যদি না অন্য কোনো সমস্যা না থেকে থাকে।
৩. ফেসবুক পোস্ট
ফেসবুকের নিউজ ফিডকে বলা যায় ভাচুয়াল জগতের চৌরাস্তা। তুমি কি চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে ইচ্ছেমতো যা মন চায় উল্টোপাল্টা সব বলতে পারবে? পারবে না। সেজন্যে ফেসবুকে কোনো পোস্ট করার আগে একটু ভেবে নেবে, চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে কি এরকম কোনো কাজ করতে পারতে তুমি? না পারলে দয়া করে এমন কোনো পোস্ট করো না যেগুলোর জন্যে তোমার তো বটেই, তোমার ফেসবুক বন্ধুদেরও মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়!
ধরো, বাইরে অনেক রোদ। এখন তুমি যদি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দাও যে, বাইরে তীব্র রোদ, Feeling ঘাম ঘাম, তাহলে কিন্তু বাকিরা তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। তোমার কোনো কথাকেই তারা আর গুরুত্বের সাথে নেবে না। তাই ফেসবুকে কিছু পোস্ট করার আগে একটু ভেবে নিলেই দেখবে আর কোনো সমস্যা হবে না!
৪. কমেন্ট
এটাকে বলা যায় সবচেয়ে দরকারি লেসন। আমরা ছোটবেলায় বাবা-মার কাছ থেকে সবাই এই শিক্ষাটা পেয়েছি যে, অপিরিচিত মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয়। আদবের সাথে কথা বলতে হয় সবার সাথেই। বাস্তব জগতের এই ভদ্রতাটা কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কেউ একজন কিছু একটা পোস্ট করলো, তাতে আক্রমণাত্মক কমেন্ট, গালাগালি করা কিংবা হুমকি দেয়া কিন্তু একেবারেই ঠিক না! তুমি হয়তো ভাবছ এ তো সামান্য ফেসবুক, এখানে একটু মারামারি করলে এমন আর কী হবে। কিন্তু এটা ফেসবুক বলেই তোমাকে খুব সহজে ট্র্যাক করা যাবে, ধরে ফেলা যাবে। তাই কমেন্ট করার সময় একটু ভেবেচিন্তে করলেই দেখবে তোমার ভার্চুয়াল লাইফ কত সুন্দর হয়ে গিয়েছে। আমি জানি, তোমরা যারা এই লেখাটা পড়ছে বা নিয়ে ভিডিওটা দেখেছ তোমরা সবাই ফেসবুকের এসব নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। তাই আমি আশা করব তোমরা তোমাদের বন্ধুদেরকেও এই লেখাটার মাধ্যমে জানাবে একটা সুন্দর ভার্চুয়াল লাইফ হবার কথকতাগুলো!
তাতে যেটা হবে, সারা বাংলাদেশ একসময় ঠিকভাবে ফেসবুক ব্যবহার করতে শিখবে। আমাদের একটা সুন্দর ভার্চুয়াল লাইফ হবে। হয়তো মার্ক জাকারবার্গের পরের লাইভ ভিডিওতে চিকন পিন নিয়ে নয়, সায়েন্টিফিক দুর্দান্ত কোনো প্রশ্ন করবে বাঙালিরা, আর বিশ্ব অবাক তাকিয়ে বলবে, শাবাশ! বাংলাদেশ!
.
শিক্ষাজীবনে যে ১০টি কাজ না করলেই নয়
শিক্ষাজীবনে শুধু অন্ধের মত পড়ালেখা করলে যে খুব বেশি দূর যাওয়া যায় না, সেটি আমরা সবাই জানি। পড়ালেখা করে অনেকেই, কিন্তু জীবনে সফলতা পেতে হলে এর পাশাপাশি বেশ কিছু কৌশল জানতে হয়, কিছু কাজে পারদর্শী হতে হয়। তবেই না সফল একজন ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা যায়।
এমন কিছু কাজ আছে, যেগুলো শিক্ষাজীবনের এই দীর্ঘ সময়টায় না করলে বলা যায় শিক্ষাজীবনই বৃথা। এই কাজগুলোয় নিজেকে পারদর্শী করে তুললে শিক্ষা-পরবর্তী জীবনে সাফল্য পেতে কোনো সমস্যাই হবে না। কারণ এগুলো তোমাকে গড়ে তুলবে একজন অভিজ্ঞ কুশলী হিসেবে, আর চাকরিদাতাদের তো এমন একজনকেই দরকার! আজ এমনই ১০টি কাজের কথা বলব, যেগুলো করলে তুমি খুশি মনে বলতে পারবে, যাক, শিক্ষাজীবনটা বৃথা গেল না তাহলে!
১. Keep the Networking Alive : নেটওয়ার্কিং বলতে বোঝানো হচ্ছে তুমি যে ক্ষেত্রে কাজ করবে, সে ক্ষেত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে পরিচয় রাখা। এতে করে যেকোনো দরকারে তাদের কাছ থেকে সহায়তা পেতে পার তুমি, পরামর্শ পেলে সেটিই বা কম কিসের? ছাত্রজীবন থেকেই নেটওয়ার্কিংটা বাজায় রাখতে হবে। তুমি যে বিষয়ে কাজ করতে চাও, সেই বিষয়ের এক্সপার্টদের সাথে সুসম্পর্ক মাখার চেষ্টা করবে। তাহলেই না এগিয়ে যাওয়া যাবে সাফল্যের অভিযাত্রায়।
আমাদের ক্ষুদ্র এ জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটে যায় ছাত্রাবস্থায় এই সময়টাকে কাজে না লাগাতে পারলে বাকি জীবনে হতাশা আর আক্ষেপে কেটে যাবে। সাফল্যের আশাটা ঢেকে যাবে সংশয়ের দোলাচলে। তাই সময় থাকতেই তোমাদের উচিত এ দশটি কাজ সেরে ফেলা। সুন্দর একটি অবষ্যতের জন্যে এটুকু তো করাই যায় তাই না?
২. Use Your Digital Profile : আমাদের সবারই একটা ডিজিটাল প্রোফাইল আছে। সেটি অযথা এ তুলে নষ্ট না করে কাজে লাগাতে হবে। তোমার প্রোফাইল যেন না হয়ে কথা বলে, সেভাবেই সাজাতে হবে সেটি। ধরো, তুমি খুব ভাল। এনিমেশনের কাজ পার। তোমার সেরা কিছু কাজ যদি তোমার ডিজিটাল প্রোফাইলে থাকে, তাহলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান যারা ভালো এনিমেটর খুঁজছে, তোমার প্রোফাইল দেখেই তোমাকে পছন্দ করে ফেলতে পারে। এভাবে ভবিষ্যতে এই প্রোফাইলই তোমাকে তোমার কর্পোরেট জীবনে সহায়তা করবে।
৩. Learn a New Language : আধুনিক বিশ্বে সফলতার সূত্র হলো পুরো বিশ্বের সাথে কানেক্টেড থাকা। আর সেটি করতে হলে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি বিদেশি এক দুইটা ভাষা শিখতেই হবে। ইংরেজি তো আবশ্যক, পাশাপাশি তোমার কার্যক্ষেত্র অনুযায়ী আরেকটা ভাষার বেসিক জ্ঞান নিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে তা দারুণ কাজে লাগতে পারে! আর কিছু না হোক, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতেই হবে এই ছাত্রজীবনে!
8. Get Used to the Presentation : প্রেজেন্টেশন নিয়ে আমাদের ভয়টা পুরনো। ডায়াসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে শখানেক প্রেজেন্টেশন দেয়া মানুষটিরও গলা শুকিয়ে যায়, বুক কাঁপে একটু হলেও। এটি থাকবেই। কিন্তু তাই বলে প্রেজেন্টেশন তো খারাপ করা যাবে না! একটি ভালো প্রেজেন্টেশন চাকরিজীবনে সাফল্য পেতে বেশ কাজে দেবে! এজন্যে এটিকে ভয় না পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে চললে প্রেজেন্টেশনের ভয়টা আর থাকবে না!
৫. Solve Your Own Problems : আমাদের আরেকটা সাধারণ অভ্যাস হচ্ছে যেকোনো সমস্যায় পড়লে সেটির সমাধান না করে সমস্যাটি কে করেছে, কেন হয়েছে এরকম নানাবিধ প্রশ্ন করতে থাকি। কিন্তু কথা হলো যে, সমস্যা যেটাই হোক, যেভাবেই হোক, সমাধান করতে হবে তোমাকেই। সমস্যা দেখে সেটি নিয়ে প্রশ্ন না করে বুদ্ধিমানের মতো সেটির সমাধান করে ফেললেই জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়।
৬. Start Writing Your Own CV : আমাদের সমস্যাটা হলো যে, আমরা মনে করি সিভি জিনিসটা পড়ালেখার পাট চুকিয়ে চাকরিতে ঢোকার সময় লিখলেই হয়। এটি একটি ভুল ধারণা। পড়ালেখা শেষ করে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই সিভি লেখার অভ্যাস করতে হবে এবং প্রতি সেমিস্টার শেষে নিজের সিভি আপডেট করতে হবে। এতে যে লাভটা হয় পুরো সেমিস্টারে কোনো কাজের কাজ করেছ কি না সেটির প্রমাণ পাবে সিভি আপডেট করার সময়। এভাবে পুরো সেমিস্টারে তোমার কৃত কাজের একটা প্রতিফলন পাবে! তাই আর দেরি না করে ঝটপট শুরু করে দাও সিভি লেখা!
৭. Focus on Corporate Grooming : কর্পোরেট জগতটা খুব সহজ কোনো জায়গা না। তুমি কাজ করতে না জানলে, পরিস্থিতির সাথে না মানাতে পারলে এখানে আর তোমার জায়গা হবে না। তাই এই জগতের একজন হতে চাইলে আশেপাশে পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। এই পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে নেয়াটাই হলো গ্রুমিং। কর্পোরেট জগতে টিকে থাকার জন্যে তাই এই কর্পোরেট গ্রুমিং অতি দরকারি।
৮. Take Part in Extra-Curricular Activities : সহশিক্ষা বা এক্সট্রা কারিকুলার কাজ করতে হবে। সেটি হতে পারে কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতা, হতে পারে কোনো বিজনেস কম্পিটিশন কিংবা MUN। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করতে চাইলে এগুলোর ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে পার তুমি। এছাড়া নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে, তবেই না নিজেকে আদর্শ একজন ছাত্র হিসেবে দেখাতে পারবে!
৯. Find Your Own Mentor : নিজের একজন মেন্টর বা গুরু খুঁজে নিতে হবে যিনি তোমাকে সাফল্যের পথ দেখাবেন, যার কাজে তুমি হবে অনুপ্রাণিত। এই মেন্টর হতে পারেন
এলাকার বড় ভাই, যিনি পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। পারেন কোনো ইন্টারনেট সেলিব্রিটি, যার ভিডিও দেখে তাঁর মতো ভয় জীবন ধারনের চেষ্টা করছ তুমি! যে-ই হোক নিজের গুরুকে নিজেই খুঁজে নিতে হবে!
১০. Become a Software Maestro : সফটওয়্যার নিয়ে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। দক্ষ হতে হবে Powerpoint. Excel ও Word এ। শিক্ষাজীবন থেকে বের হয়ে চাকরির প্রায় সব সেক্টরে এই দক্ষতাটি দারুণ কাজে দেবে। হাজারো চাকরিপ্রার্থীর সাথে তোমার পার্থক্য গড়ে দেবে এই একটি কাজের দক্ষতাই!
.
প্রতিনিয়ত করে চলেছি যে ৪টি ভুল!
ঈদের ছুটিতে বসে বসে আত্মউন্নয়ন বা Self-development-এর কয়েকটা বই পড়ছিলাম। বইগুলো পড়ে মনে হলো, আমি আসলে প্রতিনিয়ত নিজের জীবনে বেশকিছু ভুল করে যাচ্ছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আরে, এটাই তো ঠিক! কিন্তু বাস্তবে, এই কাজগুলো আসলে ভুল। অন্তত ৪ রকম ভুল আছে যেগুলো বলতে গেলে অজান্তেই করে ফেলি আমরা সবাই। এসব ভুলের ভুল হবার কারণগুলো জেনে নেয়া দরকার, তাই না?
১. ভাবিয়া বলিও কথা, বলিয়া ভাবিও না
বেশ কিছুদিন আগে আমরা টেন মিনিট স্কুলের সবাই মিলে কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। গভীর রাত, আমি আর আমার বন্ধু শুভ একটা বিষয় নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুরু করেছি। খেয়াল করে দেখলাম, আমি আসলে আমার মতামতগুলোকেই বারবার ডিফেন্ড করে যাচ্ছি, আর শুভ তার চিন্তা চেতনার সপক্ষে কথা বলে যাচ্ছে।
মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টার কাঁটায় আটকে যায়, আমাদের বিতর্ক আর থামে না। একটা পর্যায়ে এসে দেখা যায়, এই আলোচনায় আমাদের কেউই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না, পুরো বিতর্কের কোনো ফলাফলই নেই! দৈনন্দিন জীবনের ৪টি ভুলের মধ্যে এটাকে বলা যায় প্রথম ভুল।
এখান থেকে একটা বিষয় খেয়াল করলাম, যে নিজের যুক্তিতে অনড় থেকে অন্যের কথাগুলো ঠিকমত না শুনলে আসলেই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় না। কোনো ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই জানতে হয় অন্যজনের কথা, মন দিয়ে শুনে নিতে হয়। তাই কোনো কথা বলার আগে অন্যরা কি বলছে সেটা শুনে তারপরই কথা বলা উচিত।
২. লেখার আগে একবার ভাবো
আমাদের লেখালেখির অনেকটাই এখন হয়ে গেছে মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় লেখালেখি করেই আমরা ব্যস্ত থাকি। এই সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখার আগে একটা জিনিস মাথায় রাখা খুব জরুরি। সেটা হলো, তুমি যাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখছো বা বলছো, তোমার লেখা পড়ে তার মনে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে রাখতে হবে।
অতি সম্প্রতি দেখলাম কোনো এক বিউটি কনটেস্টের বিজয়ীকে নিয়ে মানুষের একের পর এক নেগেটিভ কমেন্ট আর পোস্ট। সেগুলোর বেশিরভাগই অশ্রাব্য, তাতে ওই বিজয়ীর কোনো দোষকে নিয়ে সমালোচনার বদলে ঢালাওভাবে গালমন্দ করা হয়েছে বলতে গেলে। এই কাজটা করা উচিত নয়। তুমিই বলো, এই অকারণ অপমান কি মানুষটির জীবনে কোনো ভ্যালু এনে দিয়েছে? তার ভুলগুলো কি শোধরানোর কোনো সুযোগ দেয়া হয়েছে?
একজন মানুষের সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজ সম্মান রয়েছে। তার কোনো ভুল, তাকে নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে সেটি তুমি অবশ্যই বলবে, কিন্তু সেটি হতে হবে সমালোচনার মধ্য দিয়ে। Constructive Criticism বা গঠনমূলক সমালোচনা কর, তাতে কার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অকারণে মানুষকে ট্রল করা বা অপমান করা- এগুলোতে কিন্তু তোমার নিজেরই সম্মানহানি হয়, অন্যের নয়।
৩. হারার আগেই হেরে যাবে না
আমরা প্রায়ই কোনো কাজ শুরু করার আগেই হা-হুঁতাশ শুরু করে দেই। টিমমেট নেই, যারা আছে তারা ভালো না, আইডিয়া ভালো না, টাকা নেই, সময় নেই- এরকম হাজারটা অজুহাতের ভিড়ে তোমার কাজের সফলতা কোথায় যে লুকিয়ে যায়! শেষমেষ আর তোমার কাজ করাই হয়ে ওঠে না। এমন অবস্থা হয়, তোমার কাজ শুরু করার আগে কাজে ব্যর্থতার ভীতিহ তোমাকে আর এগোতে দেয় না।
এই ভয়টাই ঝেড়ে ফেলে দেয়া দরকার। আমার খুব প্রিয় একজন বক্তা, টনি রবিন্স একটা কথা বলেছিলেন। তাঁর কথা হলো যে, রিসোর্স না থাকাটা কোনো সমস্যা নয়। আমরা যে রিসোর্সফুল নই, সেটাই একটা সমস্যা। আসলেই তাই, সব কাজে একটু রিসোর্সফুল হতে পারলেই সাফল্য আসবে।
৪. জীবনকে উপভোগ কর কাজের মধ্যে
মত্যশয্যায় যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার জীবন নিয়ে কি তোমার কোনো আক্ষেপ আছে? বেশিরভাগ উত্তরই হ্যাঁ বোধক আসে। সবাই বলে, তার জীবনে কোনো একটা কাজ না করে যাওয়ার হতাশাটা তার মধ্যে এখনো আছে। এই আক্ষেপ বুকে নিয়েই তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।
ওই মৃত্যু পথযাত্রীদের আর করার কিছু নেই। কিন্তু তোমার করার আছে অনেক কিছু। এমনভাবে কাজ শুরু কর, যাতে তোমাকেও ওই মানুষগুলোর মতো শেষ সময়ে এসে হা-হুঁতাশ করতে না হয়। জীবনে কোনো আক্ষেপ রাখার চেষ্টা করবে না। কোনো কাজ করার ইচ্ছা থাকলে শুরু করে দাও কাজ। বাধা বিপত্তি আসতেই পারে, সেগুলো পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়াই তো বীরের লক্ষণ!
একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত আমাদের সবার। আমরা ভুল করি প্রতিনিয়ত, করতেই পারি। কিন্তু এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে গেলে ওই ভুলটা আর কখনোই করি না আমরা। তাই এই শিক্ষা মাথায় রেখে এগিয়ে চলা উচিৎ কোনোরকম আক্ষেপ আর আফসোস ছাড়াই। কারণটা আমরা সবাই জানি– Life is too short to live with regrets.
.
বিনোদনের ফাঁকে ফোকাস করে নিজের উন্নতি
একটা বড় সাদা কাগজ নাও। একটা বলপয়েন্ট কলম নিয়ে কাগজের ঠিক মাঝখানটায় একটা গোল ডট দাও। এবার চোখের সামনে মেলে ধরা কাগজটা। কী দেখতে পাচ্ছ? চোখের সামনে বারবার ওই কালো ডটটাই পড়ছে? যেদিক থেকেই তাকাও, কালো ডট তোমার চোখ থেকে কিন্তু সরছেই না!
এর কারণ কি জানো? এর কারণ হলো ফোকাস। বিশাল সাদা কাগজে যখনই কালো একটা ডট আঁকা হলো, তোমার ফোকাস তখন ঠিক সে জায়গাটিতেই পড়ল। আর এজন্যেই চাইলেও আর মাথা থেকে সেই কালো ডটটাকে সরানো যায় না!
আমাদের জীবনে আমরা এমন অনেক কিছুই করি, যেগুলোর কারণে আমাদের সময় নষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। কোনো ভ্যালু যোগ হয় না এসব কাজ করে, তবুও নিজের বিনোদন বলো, বা পারিপার্শ্বিক কারণে বলো- কাজগুলো করেই থাকি আমরা। আজ তাই এরকম কিছু কাজ নিয়ে কথা বলব, যেগুলোয় ঠিক জায়গাটায় ফোকাস করতে পারলে নিজের অনেক বেশি উন্নতি করতে পারবে।
১. ফেসবুক
ফেসবুককে বলা যায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ। সকল বয়সের, সকল মানসিকতার সবার ফোনেই এখন ফেসবুক, তাই এই সামাজিক মাধ্যমটি থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় নেই বললেই চলে! সমস্যা হলো, প্রতিদিন ফেসবুক তোমার জীবন থেকে বেশ অনেকটা সময় কেড়ে নিচ্ছে অকারণেই!
কার্যকর লেখা বা তথ্যের কথা মানলাম, কিন্তু অযথা চ্যাটিং করা কিংবা অকারণে মানুষের পোস্টে কমেন্ট করে যে সময়টা নষ্ট হচ্ছে, সেটার কী হবে? এই সমস্যার সমাধান করতেও দরকার ফোকাস। অবাক লাগছে? ভাবছো, ফোকাস করে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে? আসলে ঠিক জায়গায় ফোকাস করতে পারলে ফেসবুক থেকেই অনেক উন্নতি করে নিতে পার নিজের। ফেসবুকে দেখবে অনেক শিক্ষামূলক পেজ রয়েছে, যেখান থেকে শেখা যায় অনেক কিছুই! ফেসবুক যে ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে আছে, সেই কমিউনিকেশন নিয়েই না হয় শিখে নিলে নিজের মতো করে! অযথা চ্যাটিংয়ে ফোকাস না করে ঠিক এই শেখার জায়গায় ফোকাস কর, ফেসবুক তোমাকে শেখাবে অনেক কিছুই!
২. ইউটিউব
খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আরেকটা সাইট হচ্ছে ইউটিউব। ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, কিন্তু তবুও ভিডিও দেখার এই সাইটটিতে প্রতিদিন একবারও প্রবেশ করে না এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। তরুণ প্রজন্ম দিনে এক ঘণ্টা নিশ্চিত করেই ব্যয় করে ইউটিউবের পেছনে। এই সময়টাতে ঠিক দিকে ফোকাস করলে কিন্তু ইউটিউবকেও নিজের কাজে লাগানো যায়!
ইউটিউবে কিন্তু শুধু ফানি বাংলা ভিডিওই নেই। এখানে শেখার মতো অনেক কিছুই আছে, আছে জানার অনেক কিছু। তুমি তোমার ইউটিউবের সময়টা যদি ফোকাস কর এই শেখার দিকে, তাহলেই কিন্তু সেটা অনেক কাজে লেগে যায়! কমিউনিকেশন টিপস কিংবা অন্যান্য স্কিল ডেভলাপমেন্ট নিয়ে কিছু ভিডিও দেখলে, তোমার এক ঘণ্টা মহা কাজে লেগে গেল!
৩. টেলিভিশন
টিভি দেখে দিনের একটা সময় ব্যয় করে না এমন মানুষ পাওয়া বেশ কঠিন। হ্যাঁ, ফেসবুক-ইউটিউবের যুগে টিভির জনপ্রিয়তা কিছু কমেছে, কিন্তু প্রজন্মের টিভি দেখা কমেনি। দিনের একটা বড় সময় টিভির সামনে কাটালে নিশ্চিত করেই সময় নষ্ট হয়, আর তাই এই সময় নষ্ট হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে টিভির প্রোগ্রামের দিকে ফোকাস করতে পার। টিভিতে সংবাদ পাঠক পাঠিকারা বলতে গেলে সব থেকে শুদ্ধ করে বাংলা আর ইংরেজি পড়েন। তুমি তাদের বাচনভঙ্গি দেখে সেভাবে কথা বলা শিখতে পার।
টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠান দেখে রান্নাটা না হয় একটু শিখে নিলে! ইংরেজি সিনেমা দেখে ইংরেজি উচ্চারণের দক্ষতাও বাড়িয়ে নিতে পার। দরকার শুধু বিনোদনের পাশাপাশি এই শেখার দিকটায় ফোকাস করা।
৪. ট্রাফিক জ্যাম
সূর্য যেদিক দিয়েই উঠুক, দিনের শেষে রাত আসুক বা না আসুক, ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকবেই- এ যেন এক অমোঘ সত্য। আর এই সত্যকে মেনে নিয়ে জ্যামে বসে বিরক্ত না হয়ে আর জ্যামের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার না করে সময়টা কাজে লাগানোর দিকে ফোকাস করলে কিন্তু অনেক কাজে লাগে সেটা!
এক কাজ করতে পারো। আগের রাতেই ফোনে ইউটিউবে পডকাস্ট সেভ করে রাখতে পার। ডাউনলোড করে নিতে পার অডিওবুক। সত্যিকারের বই পড়ার সময় না থাক, অডিওবুক কানে একটা হেডফোন লাগিয়েই শুনে নিতে পার! তাতে সময়ও বাঁচল, বই পড়াটাও হলো!
আমাদের জীবনে সময় নষ্ট করে এমন বিষয়ের কমতি নেই। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে থেকে যদি আমরা শেখার বিষয়গুলো বের করে আনতে পারি, সেখানেই ফোকাস করি, তাহলে কিন্তু এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে গেল! বিনোদনও হলো, সাথে শেখাও!