একটি নারীর পুনর্জন্ম – উপন্যাস – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এই স্টেশনে কখনও এত ভিড় থাকে না। ছোট, নিরিবিলি স্টেশন, কোনও রকম কলকারখানা কিংবা বাণিজ্যের কেন্দ্রও নয়। শীতকালে বাইরে থেকে কিছু মানুষ হাওয়া বদল করতে আসে, অনেক সপ্তাহ থেকে যায়, কিন্তু এখনও তো শীত পড়েনি, সে-রকম কোনও লম্বা ছুটিরও সময় নয়।
তবু ট্রেন আসার পর জানলা দিয়েই অতনু দেখতে পেল, প্ল্যাটফর্ম একেবারে লোকে লোকারণ্য। তারা কিন্তু হুড়োহুড়ি করে কামরায় উঠছে না, সবাই উৎসুক ভাবে ট্রেনের দিকে চেয়ে আছে। প্রতীক্ষা করছে কারওর জন্য।
ওপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে অতনু দরজার কাছে এসে দাঁড়াল। রবি নিশ্চয়ই নিতে আসবে। সব কিছু ব্যবস্থা করে রাখার জন্যই তো আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রবিকে। ভিড়ের মধ্যে রবিকে খুঁজতে খুঁজতে সে রবিকে দেখতে পেল না। কিন্তু হঠাৎ যেন তার দিব্যদর্শন হল।
দরজার কাছে না দাঁড়িয়ে অতনু যদি নেমে পড়ত প্ল্যাটফর্মে, তাহলে তার এ দৃশ্য দেখার সুযোগ হত না। ওপর থেকে এক সঙ্গে অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখা যায়।
খুব দূরে নয়, আর দু-তিনটে কামরার পরে দরজার কাছে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোদ্দো পনেরো জন নানা বয়েসের নারী। তারা লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা, মৃদু স্বরে কিছু একটা গান গাইছে, তাল দিচ্ছে হাতচাপুড়ি দিয়ে, কারওর কারওর শরীরও দুলছে নাচের ভঙ্গিতে। মনে হয় এরা কোনও আশ্রম-টাম থেকে এসেছে। এদের মধ্যে এক জনের দিকে অতনুর দৃষ্টি আটকে গেল। ধক করে উঠল বুক। মানুষ এত সুন্দর হয়? মফস্সল শহরের আশ্রমে এ যেন এক স্বর্গচ্যুত দেবদূতী। শ্বেত ও রক্তচন্দন মেশানো গায়ের রঙ, টানা টানা চোখ, গভীর ভুরু, আবেশমাখা মুখ, পাতলা ঠোঁটের গড়ন দেখলেই বোঝা যায়, বেশ শিক্ষা-দীক্ষা আছে। মানুষের শিক্ষার ছাপ বেশি করে পড়ে ঠোঁটে। নামতে ভুলে গেল অতনু, তাকিয়েই রইল।
পর পর দুটি চিন্তা এল তার মনে।
এমন একটি রূপসী তরুণী আশ্রমে যোগ দিয়েছে কেন?
তার পরই সে ভাবল, এ মেয়ের সঙ্গে কি পরিচয় করা সম্ভব? অন্তত একবার কথা বলতে না পারলে তার জীবনটাই যেন ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এই সময় আরও অনেকে মিলে যেন একটা জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল।
ভিড় ঠেলেঠুলে রবি কাছে এসে বলল, কী রে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ব্যাগটা দে।
ঘোর ভেঙে গেল অতনুর। প্ল্যাটফর্মে নেমেই সে একটা সিগারেট ধরাল। আজকাল ট্রেনেও ধূমপান নিষেধ, গলা শুকিয়ে এসেছিল।
এত ভিড় কেন রে রবি?
রবি বলল, সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে ভরলি কেন? দে…। কী যেন একটা আশ্রম হয়েছে এখানে। এই ট্রেনে তাদের গুরু আসবে। সব সাইকেলরিকশা, টাঙ্গা বুক্ড। তোকে কিন্তু হেঁটে যেতে হবে। অবশ্য মালপত্তর তো বেশি নেই।
অতনু দাঁড়িয়েই রইল। এখান থেকে তরুণীটিকে ভাল দেখা যাচ্ছে না, লোকের আড়াল পড়ে গেছে, তবু তার দৃষ্টি উৎসুক।
এবারে একটা কামরা থেকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে যাঁকে নামানো হল, সবাই আবার জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল, তিনি পুরুষ নন, এক জন প্রৌঢ়া মহিলা। গুরু নন, গুরুমা।
আজকাল মাঝে মাঝেই এ-রকম গুরুমাদের কথা শোনা যায়। এটা নারীশক্তির এক প্রকার জয় বলতে হবে। পুরুষদের বদলে মহিলারা বসছে গুরুর আসনে।
অতনু বলল, রবি, ওই গুরুমার ডান পাশের মেয়েটিকে দেখ। মাথার চুল চুড়ো করে বাঁধা।
আগেই দেখেছি। কী সাংঘাতিক রূপ রে! আগুন। কাছে গেলেই যেন হাত পুড়ে যাবে।
ওদের আশ্রমটা কোথায় রে? দেখতে যাওয়া যায় না?
অমনি বুঝি মনে কুচিন্তা জেগেছে? সাবধান বন্ধু। ওই আশ্রম খুব বড়লোকদের ব্যাপার।
তা বলে দেখতে যাওয়া যায় না বুঝি? আমি ওই গুরুমা সম্পর্কে ইন্টারেস্টেড, কথা বলে দেখতে চাই, কীভাবে একজন মহিলা এতগুলো লোকের মাথা নুইয়ে দিতে পারেন। নিশ্চয়ই কিছু ম্যাজিক আছে। হিপনোটিজম?
মাস হিপনোটিজম বলে কিছু হয় না। ওটা গাঁজাখুরি ব্যাপার। ম্যাজিশিয়ান পিসি সরকার সম্পর্কে একটা গল্প আছে। এক দিন তার ম্যাজিক শো শুরু হবার কথা ছটায়, হল ভরতি, হাউজফুল, উনি এসে পৌঁছোননি। যখন পৌঁছলেন, তখন সাড়ে ছটা। স্টেজে এসেই উনি বললেন, আমি কি দেরি করে ফেলেছি? আমার ঘড়িতে তো দেখছি ছ’টা বাজতে তিন মিনিট বাকি। আপনাদের ঘড়িতে কটা বাজে দেখুন তো। সবদর্শক দেখল, তাদের ঘড়িতেও ছটা বাজতে তিন মিনিট বাকি। শুনেছিস গল্পটা? ওই ব্যাপারটা কিন্তু কোনও দিনই ঘটেনি। পিসি সরকারের পাবলিসিটি ম্যানেজারই গল্পটা রটিয়েছিল। অনেক লোক বিশ্বাসও করে। পৃথিবীর কোনও ম্যাজিশিয়ানেরই সাধ্য নেই, এক সঙ্গে বহু লোককে হিপনোটাইজ করার।
অতনু ভুরু কুঁচকে বলল, তাহলে এই সব গুরু এত লোককে বশীভূত করে কী করে?
রবি হেসে বলল, মার্কস না লেনিন কে যেন বলেছিলেন, ধর্ম হচ্ছে জনগণের আফিম। এই লোকেরা নিশ্চয়ই আফিম গোলা জল খায়।
ওই মেয়েটির কত বয়েস হবে? বড় জোর তিরিশ। অমন রূপ, ও কেন লাল পাড় শাড়ি পরে আশ্রম-বালিকা হবে? ও তো অনায়াসে সিনেমা স্টার হতে পারত, অথবা, মানে, অনেক কিছু। ওর পক্ষে ধর্মকে আঁকড়ে ধরা কি স্বাভাবিক?
গুরুমাকে নিয়ে সবাই বেরিয়ে গেছে। এখন প্ল্যাটফর্ম খালি। ওরা বাইরে এসে দাঁড়াল, সত্যিই একটাও রিকশা বা টাঙ্গা বা গাড়ি-টাড়ি কিছু নেই। রবি অতনুর ব্যাগটা নিয়েছে, ব্যাগটা বেশ ভারি, ভেতরে কয়েকটি বোতল আছে।
অতনু বলল, ব্যাগটা আমাকে দে।
রবির একটা পা বেশ খোঁড়া। ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়, তবে সে দুটোর বদলে একটা ক্রাচ নেয়। সে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে ফেলেছে, দিল না।
এখন পরিপক্ক বিকেল, সন্ধে হতে কিছুটা দেরি আছে। এই সময়কার আলো বেশ নরম। স্টেশনের পেছনেই পটভূমিকায় একটা পাহাড়। এ-দিককার সব পাহাড়ের ওপরেই একটা করে মন্দির।
অতনু এই দ্বিতীয় বার এল মহুলডেরায়। একটা প্রধান পিচের রাস্তা ছাড়া আর সব রাস্তার রঙ লাল। কোনও বাড়িই ঘেঁষাঘেঁষি নয়, কোথাও এমনই ফাঁকা জমি পড়ে আছে। কোথাও এক সঙ্গে বেশ কয়েকটা লম্বা শালগাছ। শহর থেকে এসে এ-সব রাস্তায় হাঁটলে চোখের আরাম হয়।
অতনু জিজ্ঞেস করল, গেস্টহাউসটা ক’দিনের জন্য বুক করেছিস?
রবি বলল, গেস্টহাউস নয়, ওসমান সাহেব নিজের বাড়িতে ব্যবস্থা করেছেন। এক রকম জোর করেই।
অতনু ভুরু কুঁচকে বসল, বাড়ির মধ্যে? কোনও অচেনা পরিবারে আমি থাকা পছন্দ করি না।
বাড়ির কম্পাউন্ডের মধ্যে, কিন্তু ফ্যামিলির সঙ্গে নয়। কম্পাউন্ডের মধ্যে কয়েকটা আলাদা কটেজ আছে। সব ব্যবস্থা আলাদা।
ওখানে ড্রিঙ্ক করা যায়? অনেক সময় বাড়ির লোক পছন্দ করে না।
ওসমান সাহেব নিজেই রোজ ড্রিঙ্ক করেন। কাল তো উনিই আমাকে খাওয়ালেন।
আর রান্না-বান্না?
একজন লোক আছে। আমার জন্য অবশ্য কাল রাতে বাড়ির ভেতর থেকেই বিরিয়ানি এসেছিল। তোকে বলছি অতনু, এত চমৎকার স্বাদের বিরিয়ানি আমি জীবনে খাইনি।
তুই তো খেয়ে নিয়েছিস। রোজ নিশ্চয়ই বিরিয়ানি রান্না হবে না। আমার ভাগ্যে জুটবে না।
বলে দেখতে পারি।
না, কিছু বলাবলির দরকার নেই। আমাদের বাড়িটার কী অবস্থা?
এখনও রিপেয়ারিঙের কাজ চলছে। থাকার মতো হয়নি। আমি অবশ্য বলেছি, একটা ঘর আর বাথরুম অন্তত আগে তৈরি করে দিতে হবে। আমরা এক রাত্রি ওখানে থাকব। একটা কি ব্যাপার জানিস, স্থানীয় লোকজনদের ধারণা, ওটা নাকি ভূতের বাড়ি। মিস্ত্রিরাও কীসব শব্দটব্দ শোনে, ভয় পায়। সন্ধের পর কেউ থাকতে চায় না।
অতনু হেসে বলল, এ-রকম গুজব থাকা ভাল। বাইরের লোক কাছে ঘেঁষবে না। ওই জন্যই বাড়িটা কিছুটা সস্তায় পেয়েছি।
মিনিট দশেক হাঁটার পর একটা জিপ গাড়ি উলটো দিক থেকে এসে ওদের কাছে ব্রেক কষে দাঁড়াল।
ড্রাইভারের আসন থেকে মুখ বাড়ালেন এক জন হৃষ্টপুষ্ট ব্যক্তি, দাড়ি নেই, শুধু গোঁফ আছে, জুলপি দুটোও নিচে নেমে এসেছে অনেকখানি, গোঁফের প্রান্ত ছুঁয়েছে।
তিনি বললেন, আরে ছি ছি, আপনাদের হেঁটে আসতে হল। আমাকে বললেই আমি গাড়ি নিয়ে স্টেশনে যেতাম।
অতনু বলল, হাঁটতে ভালই লাগছে। কলকাতায় তো বিশেষ হাঁটা হয় না। কেমন আছেন ওসমান সাহেব? খবর সব ভাল তো?
ওসমান বললেন, জি, সব ভাল, উঠুন, গাড়িতে উঠে পড়ুন। রবিবাবুর হাঁটতে কষ্ট হয়।
রবি বলল, তা একটু কষ্ট হয় বটে, কিন্তু একেবারে না হাঁটলে যে অথর্ব হয়ে যাব। তাই অভ্যেস রাখতে হয়।
জিপে ওঠার পর ওসমান জিজ্ঞেস করলেন, ট্রেন ঠিক সময়ে এসেছে?
অতনু বলল, দশ মিনিট লেট, এমন কিছু না।
ওসমান বললেন, দশ মিনিট আমরা ধরিই না। গত কাল ছিল আড়াই ঘণ্টা লেট।
এইসব ছোট জায়গায় কুশল সংবাদের চেয়েও জরুরি ট্রেন বিষয়ে আলোচনা। ট্রেন-নির্ভরজীবন। ট্রেনে খবরের কাগজ আসে, বাইরের মানুষ আসে।
অতনু জিজ্ঞেস করল, আজকের ট্রেনে কে একজন গুরুমা এলেন। আমি আগে যেবার এসেছিলাম, আমি তো এখানে কোনও আশ্রমের কথা শুনিনি।
ওসমান বললেন, আগে ছিল একটা ছোটখাটো। ছ’মাস আগে সেটাকে খুব বড় করা হয়েছে। কী একটা বেদান্ত সংঘ, একটা চেইনের মত, আরও অনেক জায়গায় লোক আছে। অনেক টাকাওয়ালা লোক আছে এর মধ্যে মনে হয়। বিউটিফুল বাড়িটা বানিয়েছে। দেখবার মতো।
অতনু বলল, একবার দেখতে যেতে হবে।
রবি আপন মনে অনুচ্চ গলায় হেসে উঠল।
ওসমান বললেন, অবশ্যই যাবেন। আমিও দেখে এসেছি। তবে একটা ব্যাপার ঠিক বুঝলাম না। বেদ তো আপনাদের ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু বেদান্ত কী?
অতনু বলল, সেটা আমিও জানি না ঠিক, তবে রবি নিশ্চয়ই জানে, ও অনেক পড়াশুনো করে। কিন্তু ওকে জিজ্ঞেস করলেই ও একটা লম্বা লেকচার দেবে। আপনি বরং পরে শুনে নেবেন।
রবি বলল, না আমি লেকচার দেব না। শুধু এই কথাটা বলতে পারি, মিস্টার অতনু মজুমদার এর আগে কখনও মন্দির কিংবা আশ্রম দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এমনিতে উনি ঘোর নাস্তিক।
অতনু বলল, নাস্তিক হলেও মন্দির-টন্দিরের যদি সুন্দর স্ট্রাকচার হয়, ঐতিহাসিক মূল্য থাকে, তাহলে আগ্রহ থাকবে না কেন? কোনারক মন্দিরে গেছি, দিল্লির জামে মসজিদে, সে বিশাল ব্যাপার, দশ হাজার লোক এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারে, সেটা একটা দেখার মতো ব্যাপার নয়? আর একবার মনে পড়ে, টুয়েন্টিফোর্থ ডিসেম্বর রাত বারোটার সময় সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালে গিয়েছিলাম। অর্গান বাজিয়ে কী অপূর্ব গান হচ্ছিল, এ-সব আমার ভাল লাগে।
ওসমান বললেন, ওই আশ্রমেও প্রত্যেক সন্ধেবেলা গান হয়। আর একটা ভাল ব্যাপার কি জানেন, এখানে তো হাসপাতাল ছিল না, চিকিৎসার জন্য যেতে হত আসানসোলে, এই আশ্রমের সঙ্গে একটা হাসপাতাল হয়েছে, ছোট হলেও খুব মডার্ন, হিন্দু-মুসলমান কোনো বাছবিচার করে না। আমার ছেলের কিডনিতে স্টোন হয়েছিল, ওনারাই তো সারিয়ে দিলেন, অপারেশনও করতে হল না।
ওসমান সাহেব, রবির কাছে শুনলাম, আপনার বাড়িতেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। সেজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের কেনা বাড়িতেও আমরা দু-এক রাত কাটিয়ে যেতে চাই। সে-রকম তৈরি করা যাবে তো?
আর দুদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। পাম্পে পানি উঠেছে। আলো এসে গেছে। শুধু বাথরুমের কাজ কিছুটা বাকি আছে।
আলো এসে গেছে মানে? আগে তো ইলেকট্রিসিটি ছিল না।
এই তো ছ’মাস আগে কানেকশন পেয়েছি, সে-ও ওই বেদান্ত আশ্রমের জন্য। অনেক মন্ত্রী-টন্ত্রি আসে, আগে কত দরবার করেও আমরা বিদ্যুৎ পাইনি। আশ্রমের জন্য সাধারণ মানুষেরও অনেক উপকার হয়েছে, থানাটাকেও বড় করা হয়েছে। এদিকে মাওবাদীদের উপদ্রব শুরু হয়েছে জানেন তো, জঙ্গলের মধ্যে তাদের ডেরা, প্রায়ই খুন-টুন হয়। অবশ্য এই দিকে তারা এখনও আসেনি, গ্রামে গ্রামেই ওরা প্রচার করে।
ওদের তো ঝগড়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। আপনি কোনো রাজনৈতিক দলে আছেন নাকি?
আমি ব্যবসা করে খাই। কোনও দলেই নেই, আবার সব পলিটিশিয়ান পার্টির সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক রাখতে হয়। সব দলকেই চাঁদা দিই। এমনকী ওই মাওবাদীদেরও চাঁদা দিয়েছি।
কত চাঁদা দিয়েছেন!
চেয়েছিল কুড়ি হাজার। রফা করেছি দু’হাজারে। দেখুন, ওই মাওবাদীদের একটা অনেস্টি আছে। চাঁদার রসিদ দেয়। আর একবার রফা হয়ে গেলে পরে আর হাঙ্গামা করে না। বলেই দিয়েছে আর এক বছরের মধ্যে কিছু চাইবে না।
আপনি ক্যাশ টাকা চেয়েছিলেন। আমি বাকি টাকা এবার সঙ্গে নিয়ে এসেছি। আপনার বাড়ি পৌঁছেই সব টাকা আপনার কাছে জমা করে দেব। আমার কাছে এত টাকা রাখতে চাই না।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, রেজিস্ট্রেশনের সব কাগজপত্রও তৈরি। এই শীতকাল থেকেই আপনারা লোক পাঠাতে পারবেন। একজন কেয়ারটেকার রাখতে হবে। সেজন্য একজন লোকও দেখে রেখেছি।
রবি বলল, আমাকে কেয়ারটেকার রাখলে কেমন হয়? আমি এখানেই থেকে যাব ভাবছি।
অতনু বলল, তুই একে খোঁড়া, তার ওপর ইনটেলেকচুয়াল, তুই কেয়ারটেকার হবার একেবারেই অনুপযুক্ত।
খোঁড়াকে খোঁড়া বলতে নেই, তা জানিস না?
নিজের বন্ধুকে সব কিছু বলা যায় রে শালা!
ওসমান সাহেবের বাড়ির গেটের দু’দিকে দুটো বাতি জ্বলছে। বাড়ির সব ক’টা ঘরে আলো জ্বলা। নতুন ইলেকট্রিসিটি এসেছে বলেই যেন এই আলোর উৎসব।
.
০২.
রাত্তিরটা আড্ডা ও পানাহারে বেশ ভালই কাটল।
বাইরে এলে সবাই সাধারণত কিছুটা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। স্বাস্থ্য-বায়ুগ্রস্তরা ভোরে উঠে হাঁটতে বেরোয় কিংবা জগিং করে, অতনুর ও-সব বাতিক নেই।
তবু তার ঘুম ভেঙে গেল বেশ সকালেই। কিছুক্ষণ বিছানায় গড়িমসি করে সে উঠেই বসল। আর ঘুমের আশা নেই।
পাশের খাটে অঘোরে ঘুমোচ্ছ রবি। গা থেকে চাদরটা সরে গেছে, পাজামা পরা, খালি গা। অতনু লক্ষ্য করল, বেশ রোগা হয়ে গেছে তার বন্ধুটা। গাড়ির অ্যাকসিডেন্টে একটা পায়ের পাতা ছেঁচে যাবার পর থেকেই রবির চেহারা ও স্বভাবে অনেক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। কিন্তু পা খোঁড়া হবার সঙ্গে রোগা হওয়ার সম্পর্ক কী? আগে রবির প্রায় কথাতেই নানা রকম রসিকতা থাকত, এখন এসেছে সূক্ষ্ম বিদ্রুপের ভাব। সব কিছুই সে বাঁকা চোখে দেখে। আগে তার অনেক মেয়ে বন্ধু টন্ধু ছিল, এক জনের সঙ্গে তো বিয়ে প্রায় ঠিকঠাক, অ্যাকসিডেন্ট হবার পর সে নিজেই সেই মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল, আর কোনও মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও করে না।
রবিকে একটা ধাক্কা দিয়ে অতনু বলল, এই, আর কতক্ষণ ঘুমোবি? আমরা বেড়াতে বেরোব।
রবি উঠে বসে চোখ কচলাল। তারপর বলল, বেড়াতে? অর্থাৎ প্রথমেই সেই বেদান্ত সংঘের আশ্রমে। তাই না?
অতনু বলল, তার কোনও মানে নেই। এ-দিক ওদিক ঘুরে ভাল করে দেখতে হবে না জায়গাটা? আমাদের গেস্টহাউসটার জন্য একটা পাবলিসিটি ফোল্ডার বানাতে হবে।
রবি জিজ্ঞেস করল, তোর সঙ্গে মেয়েটার একবারও চোখাচোখি হয়েছিল?
কোন মেয়েটা?
যার কথা বলছি, তুই ঠিকই বুঝেছিস। ওই যে কালকের দেখা, মাথায় চুল চুড়ো করে বাঁধা, রূপের ছটায় ধাঁধানো মেয়েটা।
না, চোখাচোখি হয়নি। আমাকে সে দেখতেও পায়নি।
তবু তুই মদনবাণে বিদ্ধ হয়ে গেছিস, বোঝাই যাচ্ছে। রাত্তিরে ওকে স্বপ্ন দেখেছিলি?
যাঃ, কাল অত নেশা করা হয়েছে, তারপরে আর স্বপ্ন দেখা যায়?
খানিক বাদে ওরা দু’জন তৈরি-টেরি হয়ে বেরোবার উপক্রম করছে, ওসমান সাহেব এসে বললেন, এ কী, এত সকাল সকাল কোথায় চললেন? নাস্তা তৈরি হচ্ছে, খেয়ে যাবেন তো?
অতনু বলল, এই সব জায়গায় এলে রাস্তার ধারের দোকানে কচুরি আর জিলিপি কিনে তেলেভাজা চপটপ খেতে আমার ভাল লাগে। বাড়ির নাস্তা তো রোজই খাই।
রবি জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ির নাস্তায় নিশ্চয়ই কিছু মাংস থাকে?
ওসমান বললেন, হিন্দু বাড়িতে কিন্তু সকালে মাংস খাওয়া হয় না। বড় জোর ডিম। তা-ও কোলেস্টেরলের ভয়ে অনেকে ডিমও বাদ দেয়।
অতনু বলল, হিন্দুরা তো ভাল করে মাংস রান্না করতেই জানে না। মুসলমানরা আবার মাছটা তেমন ভাল পারে না। হিন্দুরা জানে না মাংসে ঠিক কীভাবে মশলা মেশাতে হয়, আর মুসলমানরা জানে না মাছ ভাজার আর্ট।
ওসমান সাহেব বললেন, দুপুরে তাড়াতাড়ি ফিরুন, আজ চিতল মাছের পেটি খাওয়াব। দেখবেন, আমার স্ত্রী কেমন মাছ রান্না করেন। কচুরি-জিলিপি যদি খেতে চান, তাহলে ইস্কুল-মোড়ে চলে যান, ওখানে একটা দোকানে ও-সব ভাল পাওয়া যায়।
রাস্তায় এসে ওরা একটা সাইকেলরিকশা থামাল।
উঠে বসার পর অতনু কিছু বলার আগেই রবি বলল, বেদান্ত আশ্রমে আমাদের নিয়ে চলো তো ভাই, যেটা নতুন হয়েছে।
অতনু বলল, আগে জিলিপি-টিলিপি খাব না?
খাওয়ার চিন্তা আর কামের চিন্তা, এর মধ্যে কোনটা বেশি জোরালো?
যাঃ, তুই কী-সব কাম-টামের কথা বলছিস? আমি মোটেই সেরকম কিছু ভাবিনি। মেয়েটিকে আর একবার দেখার ইচ্ছে হয়েছে ঠিকই।
দেখার ইচ্ছেটাও এক ধরনের কাম তো বটেই। হিন্দিতে সব কাজকেই বলে কাম। বাঙালরাও বলে। ঠিকই বলে। সব কাজের মূলেই তো কাম। দেরি করে গেলে আশ্রমে ভিড় হয়ে যাবে। সকাল সকাল যাওয়াই ভাল। খাওয়া-টাওয়া পরে হবে।
একটুখানি যাবার পর অতনু বলল, কাল রাত্তিরে ওসমান সাহেব কত কী ব্যবস্থা করেছিলেন। তিন-চার রকমের কাবাব, আমি বোতল এনেছি, তবু নিজের ড্রিঙ্কস খাওয়ালেন জোর করে। বাড়িটা কেনার সময় কী দরাদরিই না করতে হয়েছে। এখন আমাদের জন্য দু’হাতে পয়সা খরচ করছেন। নিজের গাড়িতে জঙ্গলে বেড়াতে নিয়ে যাবেন বললেন।
ব্যবসা আর আতিথেয়তা, দুটো আলাদা ব্যাপার। আতিথেয়তায় এরা সব সময় ওয়ান আপ।
আমরা বাড়িটা শেষ পর্যন্ত যে-দামে পেয়েছি, তা সস্তাই বলতে হবে। তুই অন্য দু’একটা বাড়ি দরদাম করে দেখেছিস এর মধ্যে?
হ্যাঁ। এটা ডেফিনেটলি সস্তা। তার একটা কারণ ভূতের বাড়ির বদনাম। একবছর ও-বাড়ি ভাড়াই হয়নি। দ্বিতীয় কারণ, উনি একটা ফলের বাগান নিবেন, তার জন্য ক্যাশ দরকার। এখন ফলচাষ খুব লাভজনক। আসানসোলে একটা ফুড প্রসেসিং সেন্টার হচ্ছে।
আমরা ভূতের বাড়ির গুজবটা চেপে না গিয়ে বরং পাবলিসিটি দেব। কলকাতার অনেকে ভূত দেখার জন্যই আসবে। এমনকী দু’একটা গ্যাজেট লাগিয়ে অলৌকিক শব্দ-টব্দের ব্যবস্থা করলে মন্দ হয় না।
এখানে বাড়ি কিনে গেস্টহাউস বানাবার আইডিয়াটা তোর না চন্দনার?
চন্দনারই বলতে পারিস। গত বছর বেড়াতে এসেছিলাম, কেউ এক জন সাজেস্ট করেছিল, জায়গাটা চন্দনার খুব পছন্দ হয়ে গেল। চন্দনাই প্রথম বলল, এখানে একটা বাড়ি করলে হয় না? আমরা মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকব। তখন আমি বললাম, নিজেদের জন্য বাড়ি কেনার কোনও মানে হয় না। কত দিনই-বা থাকব। তার চেয়ে কোম্পানির জন্য একটা গেস্টহাউস বানানোই ভাল। ভাড়া দিয়ে ক্যাপিটালটা উঠে আসবে, ইচ্ছে করলে, আমরাও এখানে এসে থাকবে পারব।
ভাগ্যিস এবার চন্দনা তোর সঙ্গে আসেনি।
ভাগ্যিস কেন? এলে কী হত?
তাহলে চন্দনার ভয়ে এই অপরূপা সুন্দরীকে তোর দেখতে যাওয়া হত না।
যাঃ! শুধু দেখায় কী দোষ? মুখে কিছু বলতাম না। চন্দনা নিজেই গরজ করে আশ্রমে যেতে চাইত। ও পুজো-টুজো দিতে ভালবাসে। আমার মতো নয়।
বেদান্ত আশ্রমটি মহুলডেরার একেবারে অন্য প্রান্তে। ফাঁকা জায়গা, আশ্রমভবন ছাড়া কাছাকাছি অন্য পাকাবাড়ি নেই। এক পাশে এত গাছপালা যে মনে হয় জঙ্গলের মতো।
আগেকার দিনে ধর্মস্থানগুলি থাকত অবারিত দ্বার। এখন দিনকাল বদলেছে। চোর-ডাকাতরা ধর্ম মানে না, তাদের পাপের ভয়ও নেই। মন্দিরের মূর্তির গলায় সোনার হার চুরি যায়। এমনকী দামি ধাতুর মূর্তি হলে পুরো মূর্তিটি কেউ চুরি করে পালিয়ে যায়, কিন্তু কোনও দিন শোনা যায়নি সেই চোর দেবতার অভিশাপে ভস্ম হয়ে গেছে। চোরেরাও সেটা জানে। পুলিশ ধরতে না পারলে তারা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। সব দেশই ধরা-না-পড়া চোরে ভর্তি।
এখন আশ্রমের সামনে লোহার গেট, দুপাশে দু’জন পাহারাদার। দিনেরবেলা গেট অবশ্য খোলা থাকে।
রবি ঠিকই বলেছে, এখনও এখানে তেমন ভিড় জমেনি। গেট থেকে সোজা এ-দিকে গেলে শ্বেতপাথরের মন্দির। কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়। সব কিছু বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
মন্দিরের একেবারে ভেতরের দিকে কীসের একটা মূর্তি রয়েছে, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বাইরের লোক মূর্তির খুব কাছে যেতে পারে না, একটা কাঠের জালির বেড়া রয়েছে। মাঝখানের অনেকটা অংশ ফাঁকা, বোধহয় পুজো-টুজোর সময় ওইখানে আশ্রমবাসীরাই বসে।
সামনের অংশে চার-পাঁচ জন লোক বসে আছে হাত জোড় করে। অতনু আর রবি তাদের পাশে গিয়ে বসল, হাত জোড় করল না। ভেতরে মূর্তিটার কাছে ওদের দিকে পেছন ফিরে বসে আছে তিনটি রমণী, সেই অবস্থাতেই বোঝা যায় তাদের মধ্যে এক জন কালকের সেই অতুলনীয়।
পুজো শুরু হতে দেরি হচ্ছে, ওই তিন রমণী মূর্তিটিকে ফুল-টুল দিয়ে সাজাল।
অতনু ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল, বেদান্ত ব্যাপারটা কী, খুব সংক্ষেপে আমাকে বুঝিয়ে দে তো।
রবি বলল, তুই বেদ পড়েছিস কখনও?
অতনু বলল, ওরে বাবা, সে তো খুব শক্ত বই। সংস্কৃত পড়তে গেলে দাঁত ভেঙে যায়। না, আমি কখনও চেষ্টা করিনি পড়ার।
রবি বলল, বাংলা অনুবাদেও পাওয়া যায়। যাই হোক, বেদের অন্ত, মানে শেষ দিকের অংশটাকে বলে জ্ঞানকাণ্ড। তাতে একটা দর্শনের কথা আছে। মূল কথাটা হচ্ছে জীবাত্মা আর পরমাত্মার মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়া।
অতনু বলল, ও-সব আমার মাথায় ঢুকবেনা। পরমাত্মা মানে কি পরম ব্রহ্ম? তার কোনও মূর্তি থাকে?
রবি বলল, না। হিন্দুদের পরমব্রহ্মাও নিরাকার ঈশ্বর। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা বুঝবে না কিংবা কল্পনায় ঠিক করতে পারবে না বলে একটা না-একটা দেবদেবীর পুজো হয়। এই সব দেব-দেবীই পরমব্রহ্মের অংশ। এখানে মনে হচ্ছে একটা কৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে। কৃষ্ণ তো আসলে একটা মিথ।
অতনু একটু অস্থির ভাবে বলল, মেয়েগুলো একবারও এ-দিকে ফিরছেনা কেন?
রবি বলল, ধৈর্য ধরো বৎস। একটু কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।
অন্য ভক্তরা ওদের দিকে আড়চোখে চাকাচ্ছে। তারা সবাই বুড়ো বুড়ি। এরা দু’জন যুবক, দেখলেই বোঝা যায় স্থানীয় নয়, এ-রকম কেউ সচরাচর এত সকালে আসে না। তাছাড়া এই ভাবগম্ভীর পরিবেশে সবাই চুপ করে থাকে, এরা দু’জন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে।
একটু পরে সেই তিন রমণী উঠে গিয়ে মূর্তিটার পেছন দিকে দাঁড়াল। সেখানেও কী-সব সাজাচ্ছে।
এবার দেখা যাচ্ছে তাদের মুখ ও সম্মুখ শরীর। আজও লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা। আঁচল কাঁধে জড়ানো। অন্য মেয়ে দু’টির সাধারণ চেহারা, মাঝখানের মেয়েটি সত্যিই অসাধারণ রূপসী। রঙ ও শরীরের গঠনে তো বটেই, মুখশ্রীতে রয়েছে এমন একটা গভীর নিবিষ্টতার ভাব, যা খুবই দুর্লভ।
অতনু দারুণ তৃষ্ণার্তের মতো চেয়ে রইল তার দিকে।
সেই তিন রমণী বাইরের লোকেদের দিকে একবারও দৃষ্টিপাত করল না। একটু পরেই চলে গেল ভেতরের দিকে।
ওরা দু’জন আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রইল। এক জন পুরুত টাইপের লোক এসে ঘণ্টা বাজানো শুরু করল, মেয়ে তিনটি আর ফিরল না।
অতনু রবিকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
বাইরে এসে রবি বলল, কী রে, সাধ মিটেছে?
অতনু বলল, সাধ কি আর মেটে? আরও তৃষ্ণা বেড়ে যায়। একবার অন্তত কথা বলারও চান্স পাওয়া যাবেনা? ওর গলার আওয়াজটা শুনতাম।
নিশ্চয়ই বাইরের লোকদের সঙ্গে এদের কথা বলা নিষেধ।
এরা কনভেন্টের নানদের মতো? একা একা দোকান-বাজারও করতে যায় না?
মোস্ট প্রোবেব্লি, নো।
কী দারুণ সেক্সি চেহারা! এ-রকম আগে আর দেখিনি।
সেক্সি! তা হবে! তোর মতো যার মাথায় সব সময় সেক্স ঘোরে, তার ও-রকম মনে হবেই।
শালা, তোর মাথায় সেক্স নেই? এ-রকম একটি রমণীরত্ন সংসারধর্ম পালন না করে কেন এ-রকম একটা আশ্রমে ঢুকে বসে আছে, তা তোর জানতে ইচ্ছে করে না?
যে-কোনও মানুষের জীবনেই একটা করে গল্প থাকে। একটি সুন্দরী মেয়ের জীবনের গল্প বেশি আকর্ষণীয় হবেই। তবে, সন্ন্যাসিনীরা আগেকার জীবনের কথা কিছুই বলে না।
ইস, যদি মেয়েটার নামটাও জানতে পারতাম।
এবারে রবি রহস্যময় ভাবে হেসে বললেন, ওর নাম আমি জানি।
অতনু সিঁড়িতে থেমে গিয়ে বলল, তুই ওর নাম জানিস? সত্যি?
রবি বলল, হ্যাঁ জানি। ওরনাম শকুন্তলা। আর দু’পাশের দুটি মেয়ের নাম অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা।
তুই বানাচ্ছিস।
আর তুই হচ্ছিস রাজা দুষ্মন্ত। আমি কে জানিস? দুষ্মতের এক জন বিদূষক ছিল, আমি হচ্ছি সে। আমি তোকে ভাল ভাল পরামর্শ দিতে পারি, কিন্তু তা শুনবি না।
কী পরামর্শ দিবি, শুনি।
সখা, আগেকার দিনের রাজাদের পাঁচটা-দশটা বউ থাকত, তা ছাড়াও রাজারা যে-কোনও মেয়েকে ইচ্ছে করলেই ভোগ করতে পারত। সেই সব রাজা-টাজার দিন শেষ। এখন কোনও বিবাহিত লোক অন্য মেয়ের সঙ্গে অ্যাফেয়ার করতে গেলে তাকে বলে ব্যভিচার। ধরা না পড়লে ঠিক আছে, সুতরাং, ও-মেয়েটির দিক থেকে মন ফেরাও। মন থেকে মুছে ফেলো। নতুন ব্যবসা বাড়াচ্ছ, তাই নিয়ে থাকো।
ধ্যাত। ব্যভিচার-ট্যাভিচারের কথা আসছে কেন? এমনিই কারওকে ভাল লাগলে আলাপ করা যায় না? দেখিস, ওর সঙ্গে এক দিন আমি আলাপ করবই করব।