১৫.
বাড়িটার চেহারা দুঃস্বপ্নের মতন। কলকাতার এ অঞ্চলে জরাগ্রস্ত বাড়ির কমতি নেই, কিন্তু এ যেন একেবারে সৃষ্টিছাড়া। শুধু জীর্ণ শ্রীহীন নয়, প্রায় ভগ্নস্তূপ। পলেস্তারা কবেই খসে পড়েছে, সর্বাঙ্গে টেরাবাঁকা অজস্র ফাটল, ভাঙাচোরা লাল ইট টাটকা ঘায়ের মতো গাময় দাঁত ছিরকুটে আছে। দেখেই বোঝা যায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এ বাড়ি স্নেহস্পর্শ পায়নি। ফাটলের খাঁজখোঁজ ফুঁড়ে ইতিউতি বট অশ্বত্থের শিকড়। তাদের বামনাকার শরীর ঝুলছে বাইরের দেওয়ালে।
এমন একটা বাড়িতে থাকে হেমেনমামা!
মোটা কাঠের প্রকাণ্ড সদর হাট করে খোলা। সামান্য দ্বিধা নিয়ে কড়া নাড়ল অদিতি। সাড়া নেই কারও। ভেতরে দেখা যায় এক চৌকো চাতাল, মেঝেতে তার পাথর ছিল এক সময়ে, এখন যত্রতত্র পুরু শ্যাওলার আস্তরণ। ভরা দুপুরেও চাতাল ছায়াছন্ন, স্যাতঁসেঁতে। এক প্রান্তে বিশাল উঁচু এক চৌবাচ্চা, চাতাল ঘিরে বর্গাকার বারান্দা, বারান্দার গায়ে সার সার কোটর। কোনও কোনও কোটর থেকে আচমকা মহিলাকণ্ঠ ছিটকে আসছে, তারপরই অন্দর সম্পূর্ণ নীরব। কে যেন কাকে খুব জোরে বকে উঠল। একটা বাচ্চা কাঁদছে।
অদিতি অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছিল। কেউ বেরোয় না কেন? ভুল বাড়িতে এল নাকি? ঠিকানাটা বোধহয় ছোটমামার কাছ থেকে ঠিকঠাক জেনে এলেই ভাল হত। ভুলই বা কী করে হয়! হেমেনমামা যে রকম বলেছিল তাতে তো এই বাড়িই হওয়া উচিত। হাতিবাগানে নেমে বাঁ ফুটপাত ধরে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এর দিকে এগোলে বাঁ দিকের প্রথম রাস্তা, রাস্তার বাঁ দিকের দ্বিতীয় গলি। গলিতে ঢুকে ডান হাতের চারটে বাড়ি ছেড়ে পঞ্চম বাড়িটাই তো..!
হৃদয়ের উত্তেজনা অদিতিকে তাড়িয়ে এনেছে আজ, কিন্তু কেন এল অদিতি? সুপ্রতিমের হয়ে ক্ষমা চাইতে? হেমেনমামা ক্ষমা করলেই কি সুপ্রতিমের দোষ মুছে যাবে? নাকি হেমেনমামার সামনে হাউহাউ করে কাঁদবে অদিতি? সেটা কি বেশি মেলোড্রামাটিক হয়ে যাবে না?
ফিরে যাবে অদিতি? এতটা পথ উজিয়ে এসে?
অদিতি আবার কড়া নাড়ল। এবার বেশ জোরে।
সাড়া মিলেছে। এক প্রৌঢ়া। চাতালে। ভারী শরীরটি ইটচাপা ঘাসের মতো সাদাটে। গোলাকার মুখমণ্ডল বিরক্তিতে ভরপুর। হাত নেড়ে বলল, —আমাদের কিছু লাগবে না বাপু।
অদিতি সামান্য ঘাবড়ে গেল। কালো জরিপাড় ক্রিম রঙের তাঁতের শাড়ি পরে আছে, বেশ দামি শাড়ি, গায়ে কাশ্মীরি শাল, কাঁধে ভ্যানিটি ব্যাগ, ঝোলা নয়। তাও মহিলা তাকে সেলস্গার্ল ভেবে বসল!
অদিতি মরিয়া হয়ে বলল, —না, মানে আমি একটা দরকারে এসেছিলাম।
প্রৌঢ় যেন বধির। অদিতির দিকে পিছন ফিরে উঁচু দড়ি থেকে শাড়ি নামাচ্ছে। শুঁকল শাড়িটা, কাঁধে ফেলল। ঘরের দিকে এগোতে এগোতে ঘাড় ঘুরিয়েছে, —দাঁড়িয়ে কেন? বললাম তো কিছু নেব না।
অদিতি ঠোঁট নাড়ার আগেই এবার উল্টো দিকের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে এক তরুণী। তুলতুলিরই বয়সী। ফুরফুরে রঙিন প্রজাপতির মতো হাবভাব, ঘড়ি বাঁধছে হাতে, মুখচোখে ভীষণ তাড়া। বারান্দা বেয়ে তরতরিয়ে অদিতির সামনে চলে এল মেয়েটা, —কী আছে, কী আছে? চটপট দেখান।
অদিতি গম্ভীরমুখে বলল, —আমি একজনকে খুঁজতে এসেছি, তুমি আমাকে একটু হেল্প করতে পারো?
—ও, তাই বলুন। মেয়েটা যেন একটু হতাশ, —কাকে খুঁজছেন?
—হেমেন্দ্রনারায়ণ মল্লিক। বহতা পত্রিকার সম্পাদক। এই বাড়িতেই থাকেন কি?
মেয়েটা রীতিমতো চমকেছে। হাঁ করে দেখছে অদিতিকে, —আপনি ছোটদাদুকে খুঁজছেন!
অদিতি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। আন্দাজে আসাটা ভুল হয়নি।
মেয়েটা অপসৃত প্রৌঢ়ার দরজার দিকে তাকিয়ে নিল একবার, —উনি কিছু বললেন না?
অদিতির ভুরুতে ভাঁজ বাড়ছিল, —না। কেন?
—ওই রকমই স্বভাব। সেদিন আমার কলেজের একটা বন্ধু এসে ফিরে গেছে।
অন্য দিন হলে মেয়েটার কথা শুনে হয়তো হাসত অদিতি, আজ কেজো স্বরে বলল, —হেমেনমামা মানে হেমেনবাবু কি আছেন?
—ছোট্দাদু আপনার মামা!
—হ্যাঁ। আছেন উনি?
—কে জানে, ছোটদাদু কখন বাড়িতে থাকে, কখন থাকে না। হালকাভাবে কথাটা বলে কী ভাবল মেয়েটা, —এক কাজ করুন, সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে যান। ডান হাতের তিনটে দরজা ছেড়ে ফোর্থ ঘরটা দেখবেন, যদি তালা ঝোলে তো নেই।
ক্ষয়াটে উঁচু উঁচু ধাপ। নড়বড়ে রেলিঙ্। সাবধানে উঠছিল অদিতি। ছোটমামা বলত, হেমেনদের বাড়ি দেখে মাথা ঘুরে যায়। ঘোরেই বটে। এই সিঁড়ির কথাই কি বলেছিল ছোটমামা!
চতুর্থ দরজার সামনে পৌঁছে বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল অদিতির। তালাই ঝুলছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে অদিতি তবু দাঁড়িয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড।
এক বৃদ্ধা বেরিয়ে এসেছেন পাশের ঘর থেকে, পিটপিট চোখে দেখছেন অদিতিকে।
অদিতি আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল, হেমেনমামা এই ঘরেই থাকেন তো?
লোলচর্ম বৃদ্ধার দন্তহীন মুখে আরও খানিক ভাঙচুর, —কে মামা? —হেমেন মল্লিক। —অ। ঠাকুরপো এখন ভাগ্নীও জোটানো শুরু করেছে! এতদিন তো হাঁটুর বয়সী সব ভাইদেরই দেখতাম! বৃদ্ধার মুখে নিঃসীম অবজ্ঞা, —তা বাছা, সে তো নেই।
—কখন ফিরবেন? অদিতিও গলাটাকে একটু কড়া করেছে এবার।
বৃদ্ধা আপাদমস্তক জরিপ করলেন অদিতিকে। তারপর হাত নেড়ে বললেন, —বলতে পারব না। সে কি কাউকে কিছু বলে যায়?
—একটা খবর দিয়ে দিতে পারবেন? বলবেন সেলিমপুর থেকে অদিতি মজুমদার এসেছিল।
—পারব না। চিরকুট লিখে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে যাও।
অদিতির বিষণ্ণ মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল, —পাশের ঘরে থাকেন, কথা শুনে মনে হচ্ছে বউদি, একটা খবর পর্যন্ত দিতে পারবেন না?
—পাশের ঘরে থাকি বলে কি অপরাধ করেছি বাছা? সে তো আমাদের সংসারের লোক নয়। বিভুই থেকে যখন ফিরল কত আদর করে বললাম, ঠাকুরপো তুমি আমাদের সংসারে থাকো, পেনশনের টাকা থেকে যা পারো দিয়ো। দু মাস খেয়েই বাবু রাগ দেখিয়ে হোটেলে খাওয়া শুরু করলেন। অমন লোকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী বাছা! কাজের মধ্যে কাজ তো গুষ্টির পিণ্ডি লেখা, তাও তত শুনি নিজে এখন লেখে না, অন্যের জন্য কাগজ বার করে। এই ভাবে পেনশনের টাকাগুলো তুই ওড়াবি, আর আমরা কিছু বলতে পারব না! লোকের পোঁদে টাকা উড়িয়ে কি অমন রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিম হলি রে তুই! আমরা বাছা থাকার ঠাঁই পাই না, বাবু একটা আস্ত ঘর বই খাতায় বোঝাই করে বসে আছেন! মেজ তরফ সেজ তরফ তো তাক করে আছে কাকা মরলেই ঘরটা নেবে। আমার ছেলে বলে দিয়েছে ওটি হচ্ছে না। ছোটকাকার ঘরের ওপর আগে তার…
অদিতি ক্লান্ত পায়ে নেমে আসছিল। কী ক্রূর এক পরিবেশে বাস করে হেমেনমামা, অথচ একবারও তাকে হাসিমুখ ছাড়া দেখা যায় না! হেমেনমামা একা থাকে জানত অদিতি, কিন্তু এত একা! আর এই সাহিত্যপ্রাণ মানুষটিকে অবলীলায় অপমান করে দিল সুপ্রতিম! হেমেনমামা বলে আমার মধ্যে সেই তীব্র অনুভূতিটাই নেই অদিতি! যা লিখেছি সব বড় জোলো মনে হয়। তীব্র অনুভূতি কাকে বলে? এই যে হেমেনমামা নিজের জীবনটাকেই জলাঞ্জলি দিয়ে লেখক গড়ার নেশায় মেতে উঠেছেন, এই নিঃস্বার্থ পিপাসাকে তবে কী বলা যায়?
শীতের দুপুর দৌড়চ্ছে বিকেলের দিকে। হিমেল হাওয়া ঝাপটে আসে হঠাৎ হঠাৎ। রোদ্দুর বড় মলিন এখন। ম্রিয়মাণ।
অদিতি বাড়ি ফিরছিল। এক অন্য অদিতি।
.
১৬.
শ্রীচরণেষু হেমেনমামা,
আপনার কাছে এই আমার প্রথম চিঠি। সম্ভবত এই শেষ। সুপ্রতিমের আচরণের কৈফিয়ত দেওয়ার জন্য এ চিঠি লিখছি না। সুপ্রতিমের কাজের দায় সুপ্রতিমেরই, আমার নয়। এই চিঠি একান্তই আমার কথা।
আপনি আমার জীবনে এসেছিলেন এক ধূমকেতুর মতো। দিব্যি আধো ঘুমে আধো জাগরণে জীবনটা কেটে যাচ্ছিল আমার, আপনি এসে সব তছনছ করে দিলেন। কেন আমার মধ্যে ভাবতে শেখার নেশাটা ঢুকিয়ে দিলেন হেমেনমামা? আমার মতো এক অতি সাধারণ মেয়ে, বয়সের জন্য যাকে আপনি মহিলাও বলতে পারেন, তার তো জন্মই হয়েছে একটা খাতে বয়ে যাওয়ার জন্য। যেভাবে আরও আরও অসংখ্য মেয়েদের জীবন আদিগন্তকাল ধরে বয়ে চলেছে। স্বামী সন্তান সংসার, দেখতে দেখতে এক সময়ে একা হয়ে যাওয়া, বার্ধক্যের প্রতীক্ষা, মৃত্যুর জন্য বসে থাকা। আমিও তো তিল তিল করে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম স্বামী আর ছেলেদের মধ্যে। জানতাম এটাই নিয়ম, এটাই আমার বেঁচে থাকা। কেন আপনি শেখালেন নিজেদের কুচি কুচি করে সংসারে বিলিয়ে দিয়েও আরও কিছু পড়ে থাকে মেয়েদের? কেন আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বোঝালেন আমিও চেষ্টা করলে কিছু করতে পারি? আমিও দিব্যি আপনার চক্করে পড়ে ভাবতে শুরু করলাম আমিও একটা আস্ত মানুষ। ভাবতে পারি। দেখতে পারি। লিখতে পারি। কী বোকামি, কী বোকামি! ছেলেরা শিল্পী লেখক হতে গিয়ে যদি বোহেমিয়ান হয়ে যায়, সেও তো তাদের একটা গুণ, অথচ মেয়েরা লিখুক আঁকুক যাই করুক, তাদের কিন্তু থাকতে হবে এক লক্ষ্মণরেখার মধ্যে। সংসারের গণ্ডিটুকু আঁকড়ে ধরে। সেখানে কোনও বেচালপনা সহ্য করবে না কেউ। কেন যে আপনি কদিনের জন এ-সব কথা ভুলিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে! সুপ্রতিম একশো ভাগ পুরুষ, সে আমাকে ঠিক সময়ে সমঝে দিয়েছে কোথায় আমার সীমা।
একটা প্রশ্নের উত্তর শুধু ভীষণভাবে জানতে ইচ্ছে করে। অদিতি কে? সুপ্রতিম মজুমদারের স্ত্রী? পাপাই তাতাইয়ের মা? তাদের প্রয়োজনটুকুর জন্যই কি অদিতির নারীজন্ম? শুধু অদিতির কাছেই কি অদিতির কোনও অস্তিত্ব নেই?
সময় আমার চলে গেছে হেমেনমামা। যেটা পাঁচে হওয়ার কথা, সেটা পঞ্চাশে আর জোর করে হয় না। হওয়াতে গেলে যে জটিলতা আসে তাকে কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা আমাদের মতো সাধারণ মহিলাদের নেই। দুপুর আমার আসবে, গড়িয়ে পারও হয়ে যাবে। আমার এক বন্ধু সুজাতা বলে সংসার হল গিয়ে দড়ির ওপর হাঁটা। আমার সামনের ফ্ল্যাটের এক বৃদ্ধা দিনরাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন, রোদ্দুর আলো বাতাসের গন্ধ নেন। পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা সুযোগ পেলেই পরের ঘরের কেচ্ছা শোনায়। আশীবাদ করুন, আমিও যেন এদের মতোই এবারকার ভোঁতা জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি।
আমি আর লিখব না হেমেনমামা। চেনা সংসারে অচেনা মানুষদের নিয়ে জীবন কাটানোই আমার নিয়তি। আপনি দূরে থাকুন, ভাল থাকুন।
কীসের যেন একটা শব্দ হচ্ছে। প্যাসেজে। অদিতি কান পাতল। এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল টিয়ার!
সুপ্রতিম অকাতরে ঘুমোচ্ছে। উষ্ণ লেপে নিজেকে পুরোপুরি মুড়ে। শীতের ভোরে এই ঘুমটা বড় প্রিয় সুপ্রতিমের।
অদিতি টেবিল ল্যাম্প নেবাল। পায়ে পায়ে বেরিয়ে এসেছে বন্ধ ঘর থেকে। কোত্থেকে এক চিলতে প্রভাতী কিরণ এসে পড়েছে অদিতির নিঝুম ফ্ল্যাটে। সেই আলোটুকুর দিকে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে আছে টিয়া। অস্ফুট স্বরে ডাকছে, কঁক কঁক।
অদিতির এতটুকু মায়া জাগল না পাখিটাকে দেখে। ব্যালকনির দরজা খুলল, ভাল করে গায়ে শাল জড়িয়ে খাঁচা নিয়ে এসেছে বাইরে।
সামনে এক নির্দয় শীতের ভোর, কুয়াশাহীন। আকাশে এখনও চাঁদ দেখা যায়, পাণ্ডুর এক ক্ষয়-রুগীর মতো বিরাজ করছে একা একা। ভয়ানক ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে গেছে পৃথিবী।
অদিতি টিয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসল, —কীরে, ওড়ার শখ হচ্ছে?
টিয়া আওয়াজ করল, —কঁক কঁক।
—ডানায় জোর আছে তোর? উড়তে পারবি?
টিয়া একটু নেচে উঠল, —কঁক কঁক।
অদিতি খাঁচার দরজা খুলল। ঝটকা টানে বার করল পাখিকে। সঙ্গে সঙ্গে কোমল উত্তাপ চারিয়ে গেছে শরীরে।
টিয়া ডেকে উঠল, —খুকু। খুকু।
অদিতি হিংস্র চোখে তাকাল, —খুকু মরে গেছে। তুইও মর্। বলেই পাখিটাকে ছুড়ে দিয়েছে গ্রিলের বাইরে।
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে পড়ছে পাখি। টলতে টলতে উড়ছে। ভূমির কাছে গিয়েও নিজেকে টেনে নিয়ে গেছে কার্নিশে।
অদিতি দাঁতে দাঁত ঘষল। বিড়বিড় করে বলল, —খাক্, তোকে বেড়ালে খাক্।
পাখি কি শুনতে পেল? কার্নিশ ছেড়ে সাঁ করে উড়ে গেল সামনের ফ্ল্যাটের ছাদে, বসেছে টিভির অ্যান্টেনায়। দূর থেকে একবার ঘাড় ফেরাল অদিতির দিকে, তারপর মুখ ঘুরিয়ে নেমে এল গুলমোহর গাছে। সেখান থেকে উড়ে যাচ্ছে আবার।
উড়ছে। উড়ছে। দেখতে দেখতে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল পাখি।
অদিতির শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। উড়ে গেল পাখিটা! দুর্বল ডানা নিয়ে! একি পাখিরই ক্ষমতা, নাকি মুক্তির সম্মোহনী টান!
পাখির গতিতে টেবিল থেকে চিঠিটা নিয়ে এল অদিতি। দু হাতে কুটি কুটি করে ছিঁড়ল। ভাসিয়ে দিল বাইরে।
এক অদিতি লক্ষ অদিতি হয়ে ভাসছে শূন্যে। ভাসছে।
***