শাদি মোবারক
[গজল-গান]
মোদের নবি আল-আরবি সাজল নওশার নওল সাজে ; সে রূপ হেরি নীল নভেরই কোলে রবি লুকায় লাজে॥ আরাস্তা আজ জমিন আশমান হুরপরি সব গাহে গান, পূর্ণ চাঁদের চাঁদোয়া দোলে, কাবাতে নৌবত বাজে॥ কয় ‘শাদি মোবারক বাদি’ আউলিয়া আর আম্বিয়ার, ফেরেশতা সব সওদা খুশির বিলায় নিখিল ভুবন মাঝে॥ গ্রহ তারা গতিহারা চায় গগনের ঝরোকায়, খোদার আরশ দেখছে ঝুঁকে বিশ্ব-বধূর হৃদয়-রাজে॥ আয়রে শাপী দুঃখী তাপী আয় হবি কে বরাতী, শাফায়তের শিরীন শিরনি পাবি না আর পাবি না যে॥
বিপুল বিত্ত-শালিনী ‘খদিজা’ ছিল আরবের চিত্ত-রানি,
রূপ আর গুণে পূজিত তাহায় মুগ্ধ আরব অরর্ঘ্য দানি।
স্তুতি গাহি তার যশ মহিমার হার মেনে যেত কবির ভাষা,
শুভ ভাগ্যের সায়র-সলিলে সে ছিল সোনার কমল ভাসা!
শুদ্ধাচারিণী সতী সাধ্বী সে ছিল আজন্ম, তাই সকলে
শ্রদ্ধা ভক্তি প্রীতি-ভরা নামে ডাকিত তাহারে ‘তাহেরা’ বলে।
হজরতের আর খদিজার ছিল একই গোষ্ঠী বংশ-শাখা,
আরব-পূজ্য যশোমণ্ডিত ত্যাগ-সুন্দর গরিমা-মাখা।
বীর ‘আবুহানা’ বিবি খদিজার আছিল প্রথম জীবন-সাথি,
মৃত্যু আসিয়া হরিল তাহারে, খদিজার প্রাণে নামিল রাতি।
বিধবার বেশে রহি কতকাল বরিল খদিজা ‘আতীক’ বীরে,
জীবনের পারে সে-ও গেল চলি, আসিল শোকের তিমির ঘিরে।
সে শোকের স্মৃতি শিশুদের বুকে চাপি ভুলে রয় বুকের ব্যথা,
দ্বি-বিংশতি গো বৎসর গেল কাটি জীবনের, কেমন কোথা।
এমন সময় এল আহমদ তরুণ অরুণ ভাগ্যাকাশে,
পাণ্ডুর নভ ভরিল আবার আলো-ঝলমল ফুল্ল হাসে।
পঁচিশ বছরি যুবক তখন নবি আহমদ রূপের খনি,
সারা আরবের হৃদয়-দুলাল কোরেশ-কুলের নয়ন-মণি।
‘সাদিক’ – সত্যবাদী বলে তারা ডাকিত নবিরে ভক্তিভরে,
যুবক নবিরে ‘আমিন’ বলিয়া ডাকিত এখন আদর করে।
বিশ্বাস আর সাধুতায় তাঁর মক্কাবাসীরা গেল গো ভুলি
মোহাম্মদের আর সব নাম ; কায়েম হইল ‘আমিন’ বুলি।
‘আমিন’ ‘তাহেরা’ সাধু ও সাধ্বী, ইঙ্গিতে ওগো খোদারই যেন
আরববাসীরা না জানিয়া এই নাম দিয়েছিল তাদেরে হেন!
মহান খোদারই ইঙ্গিতে যেন ‘সাধু’ ও সাধ্বী’ মিলিল আসি,
শক্তি আসিয়া সিদ্ধির রূপে সাধনার হাত ধরিল হাসি।
গিরি-ঝরনার স্রোতোবেগে আসি যোগ দিল যেন নহর-পানি,
ঊষর মরুর ধূসর বক্ষে বান ডেকে গেল উদার বাণী!
মরুর আকাশে ঘনাল যে ছায়া, বক্ষ ছাইল যে শীতলতা,
সুজলা সুফলা ধরা যুগে যুগে হেরেছে স্বপ্নে ইহারই কথা।