১০০
কোস্টগার্ডের ডলফিন হেলিকপ্টারটা এখনও গয়ার অবস্থান থেকে দু’মাইল দূরে আছে। সেটা ৩০০০ ফিট উপর দিয়ে উড়ছে। টোল্যান্ড চিৎকার করে পাইলটকে ডাকলো।
“আপনাদের এখানে কি নাইট-সাইট রয়েছে?
পাইলট সায় দিলো। “আমরা উদ্ধারকারী ইউনিট।”
টোল্যান্ডও ঠিক এরকমটি প্রত্যাশা করেছিলো। নাইট-সাইট হলো রে-থিওন মেরিন থার্মাল ইমেজিং সিস্টেম। অন্ধকারেও ধ্বংসস্তূপ বা ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেতে এটা সাহায্য করে থাকে। কেউ পানিতে সঁতরে থাকলে, সঁতারুর মাথা থেকে যে উত্তাপ বের হয় সেটা এই যন্ত্রে কালো সমুদ্রের উপর লাল বিন্দু হিসেবে ধরা পড়ে।
“সেটা চালু করেন।” টোল্যান্ড বললো।
পাইলট দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তাকালো। “কেন? কিছু হারিয়েছেন কি?”
“না। আমি সবাইকে একটা জিনিস দেখাতে চাচ্ছি।”
“এতো উপর থেকে আমরা কিছুই দেখতে পাবো না, যদি না কোনো তেল ট্যাংকারে আগুন লেগে থাকে।”
“শুধু একটু ছাড়ন,” টোল্যান্ড বললো।
পাইলট একটু অবাক হয়ে যন্ত্রটা চালু করে দিলো। একটা এলসিডি পর্দা তার ড্যাশ বোর্ডে রাখা, সেটা চালু হয়ে গেলে একটা ছবি দেখা ভেসে উঠলো।
“আরে বাবা!” পাইলট অবাক হয়ে চমকাতেই হেলিকপ্টারটি দুলে উঠলো। তারপর সে সামলে নিয়ে পর্দার দিকে তাকালো।
রাচেল আর কর্কি সামনের দিকে ঝুঁকলো, তারাও বিস্মিত হলো ছবিটা দেখে। কালো রঙের সাগরের প্রেক্ষাপটে বিশাল একটা লাল রঙের কুণ্ডুলী দেখা যাচ্ছে।
রাচেল সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে টোল্যান্ডের দিকে তাকালো। “এটা মনে হচ্ছে সাইক্লোন।”
“তাই,” টোল্যান্ড বললো। “উষ্ণ স্রোতের সাইক্লোন। আধমাইল জুড়ে বিস্মৃত।”
পাইলট মাথা নেড়ে সায় দিলো। “এটা খুবই বড়। আমরা এটা হরহামেশাই দেখি, কিন্তু এখনও এসবের কবলে পড়িনি।”
“গত সপ্তাহে পৃষ্ঠে উঠে এসেছে,” টোল্যান্ড বললো। “সম্ভবত, আর কয়েকদিনের বেশি টিকবে না।”
“এটা হবার কারণ কি?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। এটা দেখে বোধগম্য কারণেই সে হতবিহ্বল হয়ে গেছে।
“ম্যাগমা ডোম,” পাইলট বললো।
রাচেল উদ্বিগ্ন হয়ে টোল্যান্ডের দিকে চাইলো। “আগ্নেয়গিরি?”
“না,” টোল্যান্ড বললো। “পূর্ব উপকূলে সাধারণত আগ্নেয়গিরি থাকে না। কিন্তু প্রায়ই আমরা ম্যাগমার পকেট খুঁজে পাই, সেটা সমুদ্র তলদেশের অনেক নিচে, উত্তপ্ত এলাকা। উত্তপ্ত এলাকাটি বিপরীত তাপামাত্রার মিশ্রনে থাকে– গরম পানি নিচে এবং ঠাণ্ডা পানি উপরে। এর কারণেই এই বিশাল স্রোতের কুলীর জন্ম হয়। তাদেরকে বলে মেগাপ্লাম। তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে চক্কর খাবার পর মিইয়ে যায়।”
পাইলট এলসিডি পর্দার দিকে আবার তাকালো। “এগুলো মনে হয় এখনও শক্তিশালীই আছে।” সে একটু থেমে অবস্থানটা জেনে নিয়ে অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো, “মি: টোল্যান্ড, মনে হচ্ছে আপনার গয়া এই জায়গার মাঝখানেই পার্ক করা আছে।”
টোল্যান্ড সায় দিলো।”কেন্দ্রের দিকে স্রোতের বেগ একটু কমই থাকে। আঠারো নট।”
“যিশু,” পাইলট বললো। “আঠারো নট স্রোতের বেগ? ওখানে পড়ে যাবেন না যেন!” সে হেসে উঠলো।
রাচেল হাসলো না। “মাইক, তুমি কিন্তু মেগাপ্লাম, ম্যাগমা ডোম, উষ্ণ স্রোত, এসব আগে বলোনি।”
সে আশ্বস্ত করার জন্য তার হাঁটুতে হাত রাখলো।”এটা খুবই নিরাপদ, বিশ্বাস রাখো।”
রাচেল ভুরু কুচকালো। “তাহলে তুমি এখানে এসেছ ম্যাগমা ডোমের ওপর প্রামান্যচিত্র। বানাতে?”
“মেগাপ্লাম এবং ফিরনা মোকারান।”
“বেশ। এটা তুমি আগে বলেছিলে।”
টোল্যান্ড একটু মুচকি হাসলো। “রিনা মোকারান গরম পানি পছন্দ করে।”
“স্কিরনা মোকারান জিনিসটা কী?”
“সমুদ্রের সবচাইতে কুৎসিত মাছ।”
রাঘব বোয়াল?”
“টোল্যান্ড হেসে উঠলো। “গ্রেট হ্যামারহেড হাঙ্গর।”
রাচেল একটু কুকড়ে গেলো যেনো। “তোমার জাহাজের চারপাশে হাঙ্গর রয়েছে?”
টোল্যান্ড মুচকি হাসলো। “চিন্তার কিছু নেই, তারা বিপজ্জনক কিছু নয়।”
“তারা বিপজ্জনক না হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তুমি একথা বলতে পারো না।”
টোল্যান্ড আবারো মুচকি হাসলো। “আমার মনে হয়, তুমি ঠিকই বলেছে।” টোল্যান্ড অতি নাটকীয় ভঙ্গীতে পাইলটকে বললো, “এই যে, আপনারা শেষ কতদিন আগে হ্যামার হেডের আক্রমন থেকে কাউকে উদ্ধার করেছেন?”
পাইলট কাঁধ ঝাঁকালো। “আরে আমরা বিগত এক দশকে কাউকে হ্যামার হেডের আক্রমণ থেকে উদ্ধার করিনি।”
টোল্যান্ড রাচেলের দিকে ফিরে বললো, “দেখেছে। একদশক। কোনো চিন্তা নেই।”
“আরে রাখো, রাচেল বললো। “আপনি বললেন আপনারা এক দশকে কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি!”
“হ্যাঁ,” পাইলট জবাব দিলো। “কাউকেই না। সাধারণত আমরা দেরি করে ফেলি। আর এই বানচোতগুলো খুব দ্রুতই খেয়ে ফেলে যে।”
১০১
শূন্য থেকে, গয়ার অবয়বটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। আধমাইল দূর থেকেও টোল্যান্ড। জাহাজের ডেকে জ্বালিয়ে রাখা বাতিটা দেখতে পেলো। সেটা তার ক্রু সদস্য জাভিয়া জ্বালিয়ে রেখেছে। আলোটা দেখে তার একটু স্বস্তিবোধ হলো।
“আমার মনে হয় তুমি বলেছিলে জাহাজে একজনই আছে,” রাচেল বললো, সবগুলো বাতি জ্বালানো দেখে সে অবাক হলো।
“তোমরা যখন বাড়িতে একা থাকো তখন কি সব আলো জ্বালিয়ে রাখো না?”
“একটা বাতি জ্বালিয়ে রাখি। পুরো বাড়ির বাতি নয়।”
টোল্যান্ড হাসলো। সে জানে রাচেল হালকা চালে কথা বললেও সমুদ্রের কাছাকাছি এসে আসলে সে ঘাবড়ে গেছে। তার কাঁধে একটা হাত রেখে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলো সে। “বাতিগুলো নিরাপত্তার কারণে জ্বালানো আছে, এতে করে জাহাজটাকে কর্মচঞ্চল দেখায়।”
কর্কি মুখ টিপে বললো, “জলদস্যুদের ভয়ে, মাইক?”
“না। বড় বিপদটা হলো, সেইসব গর্দভদের কারণে, যারা রাডারের ভাষা পড়তে জানে না। কারো সাথে ধাক্কা খাবার হাত থেকে বাঁচার জন্য সেরা কাজ হলো সব বাতি জ্বালিয়ে রাখা।”
কোস্টগার্ড হেলিকপ্টারটা ধীরে ধীরে উজ্জ্বল আলোর জাহাজের কাছে নামতে শুরু করলো। ডেকের হেলিপ্যাডের দিকে পাইলট সুকৌশলে কপ্টারটা ল্যান্ড করতে শুরু করলো। উপর থেকে টোল্যান্ড দেখতে পেলো গয়া স্রোতের বিরুদ্ধে নোঙরটার কারণে আটকে আছে। যেনো শেকলে বাঁধা কোনো পশু।
“সে দেখতে আসলেই খুব সুন্দর, পাইলট হেসে বললো।
টোল্যান্ড জানে মন্তব্যটা টিটকারি টাইপের। গয়া দেখতে কুসত। “পাছামোটা কুৎসিত,” এক টেলিভিশন রিপোর্টারের মন্তব্য অনুসারে। SWATH জাহাজের মাত্র সতেরোটি মডেল তৈরি করা হয়েছিলো। গয়া হলো তাদেরই একটি। গয়ার ছোট ওয়াটার প্লেন এরিয়াটার দুটো হাল আর যাইহোক সুন্দর নয়।
জাহাজটার প্লাটফর্ম বিশাল, সেটা সমুদ্র থেকে ত্রিশ ফুট উঁচুতে। দূর থেকে জাহাজটাকে তেল খনন করার প্রাটফর্মের মতো দেখায়। কাছে এলে দেখা যায় এটার প্লাটফর্মে রয়েছে কুদের কোয়ার্টার, গবেষণাগার এবং নেভিগেশন ব্রিজ। ঝুলন্ত প্লাটফর্মটা ছবি তোলার কাজের উপযোগী। এনবিসি টোল্যান্ডকে নতুন জাহাজ দেবার কথা বলে যাচ্ছে, কিন্তু টোল্যান্ড রাজি হয়নি। সে জানে এর চেয়ে ভালো আর আধুনিক জাহাজ থাকলেও এই জাহাজটাতে টোল্যান্ড এক দশক ধরে বাস করছে, তাই এটা সে ছাড়তে রাজি হয়নি। এই জাহাজেই সিলিয়ার মৃত্যুর পর টোল্যান্ড কাজে ফিরে এসেছিলো শোক-তাপ ভুলে। রাতে কখনও কখনও সে এই জাহাজে সিলিয়ার কণ্ঠও শুনতে পায়। এই আত্মা যদি উধাও হয়ে যায় কেবল তবেই টোল্যান্ড নতুন জাহাজ নেবার কথা ভাববে।
এখন নয়।
***
চপারটা অবশেষে হেলিপ্যাডে নামলে রাচেল কেবল অর্ধেক স্বস্তি পেলো। সুসংবাদটা হলো তাকে আর সমুদ্রের ওপর দিয়ে উড়তে হচ্ছে না। দুঃসংবাদটা হলো তাকে সমুদ্রের ওপরেই থাকতে হচ্ছে।
টোল্যান্ড তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। “আমি জানি,” সে বললো। সমুদ্রের গর্জনের শব্দের বিরুদ্ধে বলার জন্য তাকে জোরে জোরে বলতে হলো। “টেলিভিশনে এটাকে খুব বড় দেখায়।”
রাচেল সায় দিলো। “আর খুব বেশি সুস্থির।”
“সমুদ্রে এটা হলো সবচাইতে নিরাপদ জাহাজ।” টোল্যান্ড তার কাঁধে হাত রেখে তাকে ডেক থেকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো।
তার আন্তরিক ব্যবহার আর উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেয়েও রাচেলের ভীতি কাটলো না। আমরা মেগাপ্লাম-এর ওপরে আছি, সে ভাবলো।
.
ডেকের সামনে রাচেল দেখতে পেলো একটা এক মনুষ্যবিশিষ্ট ট্রাইটন সাবমার্সিবল হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা আছে। ট্রাইটন হলো গৃক সমুদ্র দেবতার নাম। দেখতে অবশ্য সেরকম কিছু লাগছে না।
“জাভিয়া সম্ভবত হাইড্রোল্যাবে রয়েছে,” টোল্যান্ড বললো। এদিকে আসো।”
রাচেল আর কর্কি তাকে অনুসরণ করলো। পাইলট তার ককপিটেই থাকলো, তাকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে রেডিও ফোন ব্যবহার না করার জন্য।
“এটা একটু দেখো,” টোল্যান্ড বললো, জাহাজের রেলিংয়ের দিকে নির্দেশ করলো সে।
ইতস্তত ক’রে রাচেল রেলিংয়ের কাছে গেলো। সেখান থেকে ত্রিশ ফুট নিচে পানি। তারপরও পানির উত্তাপ রাচেল টের পেলো।
“এটা গোসলের গরম পানির তাপমাত্রার কাছাকাছি।” পানির স্রোতের দিকে তাকিয়ে বলে সে রেলিংয়ের সুইচ বক্সের কাছে গেলো। “এটা দেখো।” সে একটা সুইচ টিপলো।
জাহাজের পেছনের পানির নিচ থেকে একটা আলো জ্বলে উঠলো। এমনভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো যেনো একটা আলোকিত সুইমিংপুল। রাচেল এবং কর্কি একসাথে আতকে উঠলো।
জাহাজের চারপাশে পানিতে কয়েক ডজন ভুতুরে ছায়া দেখা গেলো। উজ্জ্বল পানির কয়েক ফুট নিচে তারা ভেসে বেড়াচ্ছে। তাদের সম্মুখভাগটা দেখে না চেনার কোনো উপায় নেই।
“ঈশ্বর, মাইক, কর্কি বললো। “এগুলো আমাদেরকে দেখানোর জন্য আমরা খুব আনন্দিত।”।
রাচেলের শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেলো। সে রেলিং থেকে সরে যেতে চাইলেও সরতে পারলো না। সে একেবারে জমে গেছে।
“অবিশ্বাস্য, তাই না?” টোল্যান্ড বললো। তার হাত আবারো রাচেলের কাঁধে। “তারা গরম পানির খোঁজ পেয়ে এক সপ্তাহ ধরে এখানে এসে জড়ো হয়েছে। সাগরে তাদের নাকই সবচাইতে সেরা। তারা একমাইল দূর থেকেও রক্তের গন্ধ পেয়ে থাকে।”
কর্কিকে সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো। “তাই নাকি?”
“বিশ্বাস করছো না?” টোল্যান্ড তার ক্যাবিনে গিয়ে একটা মৃত মাছ নিয়ে ফিরে এলো। সে একটা চাকু দিয়ে মাছটা কেটে ফেললে সেটা থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলো।
“মাইক, ঈশ্বরের দোহাই,” কর্কি বললো। “এটা জঘন্য।”
টোল্যান্ড মাছটা ত্রিশ ফিট নিচে ফেলে দিলো। যেনো মূহুর্তে মাছটা পানিতে পড়লো, ছয় থেকে সাতটি হাঙ্গর মাছ সেখানে দ্রুত ছুটে এলো। তাদের রূপালি দাঁতে মাছটা ক্ষতবিক্ষত হলো। মূহুর্তেই মাছটা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
দৃষ্টিটা সরিয়ে নিয়ে রাচেল টোল্যান্ডের দিকে তাকালো। সে আরেকটা মাছ হাতে নিয়েছে। একই রকমের। একই আকারের।
“এবার কোনো রক্ত নয়, টোল্যান্ড বললো। মাছটা না কেটেই সে পানিতে ছুঁড়ে মারলো। মাছটা পানিতে পড়লেও কিছুই হলো না। হ্যামারহেড হাঙ্গরগুলো মনে হলো কিছুই লক্ষ্য করলো না।
“তারা কেবল গন্ধ শুঁকেই আক্রমণ করে,” টোল্যান্ড বললো।
তাদেরকে রেলিং থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলো। “সত্যি বলতে কী, তুমি এখানে পুরোপুরি নিরাপদে সাঁতার কাটতে পারবে– তোমার কোনো জখম বা কাটা ফাটা থাকতে পারবে না।”
কর্কি তার গালের কাটা জায়গাটার সেলাইগুলোর দিকে ইঙ্গিত করলো।
টোল্যান্ড ভুরু তুললো। “একদম ঠিক। তোমার জন্য সাঁতার কাঁটা নিষেধ।”
১০২
গ্যাব্রিয়েল এ্যাশের ট্যাক্সিটা একটুও নড়ছে না।
এফডিআর মেমোরিয়ালের রোডব্লকের সামনে তার ট্যাক্সিটা থেমে আছে। সে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের ছোটাছুটি। রেডিওতে বলা হচ্ছে, বিস্ফোরিত গাড়িতে নাকি উচ্চ পদস্থ কোনো কর্মকর্তা ছিলো।
সেলফোনটা বের করে সে সিনেটরকে ফোন করলো। তিনি অবশ্যই গ্যাব্রিয়েলের দেরি হবার জন্য চিন্তিত হয়ে থাকবেন।
লাইনটা খুবই ব্যস্ত।
গ্যাব্রিয়েল দেখতে পেলো আশপাশের কিছু গাড়ি মোড় ঘুরিয়ে বিকল্প রাস্তার দিকে চলে যাচ্ছে।
ড্রাইভার তাকে বললো, “আপনি কি অপেক্ষা করতে চান?”
গ্যাব্রিয়েল দেখতে পেলো অনেক কর্মকর্তাদের গাড়ি এসে পড়ছে এখানে। “না। অন্য দিক দিয়ে যান।”
ড্রাইভার মাখা দোলাতে দোলাতে গাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে বিকল্প পথের দিকে ছুটলো। গ্যাব্রিয়েল আবারো সেক্সটনকে ফোন করার চেষ্টা করলো।
এখনও ব্যস্ত আছে।
কয়েক মিনিট বাদে গ্যাব্রিয়েল দেখতে পেলো সি স্টটের অদূরে ফিলিপ এ হার্ট অফিস ভবনটা। তার ইচ্ছে ছিলো সোজা সিনেটরের এপার্টমেন্টে যাবে, কিন্তু কি যেনো মনে করে সে ড্রাইভারকে থামতে বললো।”এখানেই রাখুন, ধন্যবাদ।”
গাড়িটা থেমে গেলো।
গ্যাব্রিয়েল মিটারে যা ভাড়া এলো তার চেয়েও ১০ ডলার বেশি দিলো ড্রাইভারকে।
“আপনি কি দশ মিনিট অপেক্ষা করতে পারবেন?”
ড্রাইভার টাকার দিকে চেয়ে ঘড়ি দেখলো। “তার চেয়ে এক মিনিট যেনো বেশি দেরি না হয়।”
গ্যাব্রিয়েল দ্রুত চলে গেলো। আমার পাঁচ মিনিটও লাগবে না।
সিনেট অফিসটা এই সময়ে একেবারেই ফাঁকা থাকে। গ্যাব্রিয়েল দ্রুত চার তলার উদ্দেশ্যে ছুটলো। সিনেটর সেক্সটনের পাঁচ ঘরের অফিসে এসে গ্যাব্রিয়েল তার কি-কার্ডটা ব্যবহার করলো। ফয়ারটা পেরিয়ে সে নিজের অফিসে চলে এলো। বাতি জ্বালিয়ে ফাইল ক্যাবিনেটটা খুললো সে। নাসার আর্থ অবরজারভিং সিসটেমের বাজেটের ওপরে তার কাছে পুরো একটা ফাইল রয়েছে। তাতে পিওডিএস সম্পর্কেও অনেক তথ্য আছে। সেক্সটনকে সে হার্পারের কথাগুলো বলার পর সিনেটরের অবশ্যই এই তথ্যগুলো দরকার পড়বে।
নাসা পিওডিএস-এর ব্যাপারে মিথ্যা বলেছে।
গ্যাব্রিয়েল ফাইল খুঁজতে যেতেই তার সেলফোনটা বেজে উঠলো।
“সিনেটর?” সে জবাব দিলো।
“না, গ্যাব। আমি ইয়োলান্ডা।” তার বন্ধুর কণ্ঠটা কেমন যেনো অদ্ভুত কোনোচ্ছ। “তুমি কি এখনও নাসা’তেই আছ?”
“না। আমার অফিসে।”
“নাসা’তে কিছু খুঁজে পেলে?”
তুমি চিন্তাও করতে পারবে না। গ্যাব্রিয়েল জানে, সে ইয়োলান্ডাকে সেক্সটনের সাথে কথা বলার আগে এসব বলতে পারবে না। সিনেটর খুব ভালো করেই জানেন এ ধরনের তথ্য কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। “আমি তোমাকে সেটা বলবো সিনেটরের সঙ্গে কথা বলার পর। আমি তার কাছেই যাচ্ছি।”
ইয়োলান্ডা একটু চুপ থাকলো। “গ্যাব, তুমি জানো, তুমি সিনেটরের ক্যাম্পেইনের টাকা পয়সা আর এসএফএফ সম্পর্কে যে বলছিলে?”
“আমি তোমাকে তো বলেছিই আমি ভুল বুঝেছিলাম–”
“আমি আমাদের দু’জন রিপোর্টারের কাছ থেকেও একই রকম কথা শুনলাম।”
গ্যাব্রিয়েল খুবই অবাক হলো। “তার মানে?”
“আমি জানি না। কিন্তু এসব রিপোর্টার খুবই ভালো। তারা বেশ নিশ্চিত যে সেক্সটন স্পেস ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে অবৈধ টাকা নিয়েছেন। আমার মনে হলো কথাটা তোমাকে জানাই। আমার মনে হয় আমি জানি না, সিনেটরের সঙ্গে কথা বলার আগে হয়তো তাদের সাথে কথা বলে দেখতে পারো।”
“তারা যদি এতোটাই নিশ্চিত হয়ে থাকে, তবে তারা কেন খবরটা প্রেসে দিচ্ছে না?” গ্যাব্রিয়েল বললো।
“তাদের কাছে শক্ত কোনো প্রমাণ নেই। মনে হয় সিনেটর লুকোছাপার ব্যাপারে খুবই
বেশিরভাগ রাজনীতিকই সেরকম। “এসব কিছুই নয়, ইয়োলান্ডার। আমি তোমাকে বলেছি তো, তিনি এসএফএফএর কাছ থেকে অনুদান নেবার কথা আমার কাছে স্বীকার করেছেন।”
“সেটা আমি জানি, তিনি তোমাকে কী বলেছেন। কোনোটা সত্য, কোনোটা মিথ্যা আমি জানি না। আমি কেবল তোমাকে নিশ্চিত হতে বলছি।”
“এই রিপোর্টাররা কারা?” গ্যাব্রিয়েল একটু রেগে গেলো যেনো।
“কোনো নাম বলা যাবে না। আমি কেবল একটা মিটিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারি। তারা খুবই স্মার্ট। তারা ক্যাম্পেইন ফিনান্স ল’য়ের ব্যাপারে ভালো জানে …” ইয়োলান্ডা দ্বিধাগ্রস্ত হলো। “তুমি জানো, এইসব লোক বিশ্বাস করে যে, সেক্সটনের টাকা পয়সা তেমন নেই– দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন।”
গ্যাব্রিয়েলের মনে পড়ে গেলো টেঞ্চের কথাটি। সেও একই কথা বলেছিলো তাকে।
“আমার লোকেরা তোমার সঙ্গে কথা বলতে পছন্দই করবে,” ইয়োলান্ডা বললো।
আমি বাজি ধরে বলতে পারি তারা সেটা করবেই। গ্যাব্রিয়েল ভাবলো।
“আমি তোমাকে ফোন করছি।”
“তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার কথায় তুমি রাজি নও।”
“তোমার সাথে কখনও না, ইয়োলান্ডা। তোমার বেলায় নয়। ধন্যবাদ।” গ্যাব্রিয়েল ফোনটা রেখে দিলো।
.
সিনেটর সেক্সটনের ওয়েস্টব্রুক এপার্টমেন্টের হলোওয়েতে বসে থাকা সিকিউরিটি গার্ড তার সেলফোনটা বাজতেই ঝিমুনি অবস্থা থেকে জেগে উঠলো।
“হ্যাঁ?”
“ওয়েন, আমি গ্যাব্রিয়েল।”
সেক্সটনের গার্ড তার কণ্ঠটা চিনতে পারলো। “ওহ্, হাই।”
“সিনেটরের সাথে আমার কথা বলার দরকার। তুমি তার দরজায় নক্ করবে একটু? তাঁর লাইনটা খুব ব্যস্ত আছে।”
“দেরি হয়ে গেছে।”
“তিনি সজাগ আছেন। আমি এতে নিশ্চিত।” গ্যাব্রিয়েলকে খুব উদ্বিগ্ন বলে মনে হলো। “এটা খুবই জরুরি।”
“আরেকবার?”
“তাকে কেবল ফোনটা ধরতে বলো, ওয়েন। তাকে আমার কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে।”
গার্ড দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। “ঠিক আছে। আমি নক করছি।” সে সিনেটরের দরজার কাছে গেলো। “কি আমি এটা কেবল এজন্যে করছি যে, আপনাকে এর আগে ঢুকতে দিয়েছি বলে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। সে দরজায় নক করতে গেলো।
“তুমি কী বললে?” গ্যাব্রিয়েল জানতে চাইলো।
গার্ড নক্ করতে যেতেই থেমে গেলো।
“আমি বলেছি যে সিনেটর খুব খুশি হয়েছিলেন আপনাকে ভেতরে যেতে দিয়েছি বলে। আপনি ঠিকই বলেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি।”
“তুমি এবং সিনেটর এ নিয়ে কথা বলেছ?” গ্যাব্রিয়েলের কণ্ঠটাতে বিস্ময়।
“হ্যাঁ। তাতে কি?”
“না, আমি ভাবিনি …”
“আসলে, সেটা এক রকম অদ্ভুতই ছিলো। আপনি যে ভেতরে গেছেন এটা মনে করতে সিনেটরের কয়েক সেকেন্ড লেগেছিলো। আমার মনে হয় তারা খুব বেশি খেয়েছে।”
“তোমরা দু’জন কখন কথা বলেছিলে?”
“আপনার চলে যাবার ঠিক পরেই। কেন কিছু হয়েছে কি?”
একটু নিরবতা নেমে এলো। “না না। কিছু না। এবার শোনো, আমার মনে হচ্ছে এখন সিনেটরকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আমি তার বাড়ির ফোনে চেষ্টা করবো। যদি তাতে না পাই, তবে আবার তোমাকে ফোন করে তাকে ডাকতে বলবো।”
গার্ডের চোখ দুটো বড় হয়ে গেলো। “আপনি যেমনটি বলেন, মিস অ্যাশ।”
“ধন্যবাদ, ওয়েন। তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।”
“কোনো সমস্যা নেই।” গার্ড ফোন রেখে দিলো। চেয়ারে ফিরে গিয়ে আবার ঝিমোতে লাগলো।
নিজের অফিসে গ্যাব্রিয়েল একা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। সেক্সটন জানে আমি তাঁর এপার্টমেন্টে গিয়েছিলাম… আর একথাটা সে আমাকে বলেনি?
তাহলে সিনেটর তাকে ফোন করে একটু আগে যেসব স্বীকার করেছেন সেগুলো স্বেচ্ছায় নয়? ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্যই সব স্বীকার করেছেন।
অল্প টাকা, সেক্সটন বলেছিলেন। একেবারে বৈধ।
আচমকাই, সেক্সটন সম্পর্কে গ্যাব্রিয়েল যেসব বাজে ধারণা করেছিলো, সেগুলো আবার ফিরে এলো একসাথে।
বাইরে, ট্যাক্সিটা হর্ন বাজাচ্ছে।
১০৩
গয়ার বৃজটা প্লেক্সিগ্নাসের, সেটা প্রধান ডেকেরও দু’তলা ওপরে অবস্থিত। এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য দেখা যায়, চারপাশের অন্ধকার সমুদ্র।
টোল্যান্ড এবং কর্কি জাভিয়াকে খুঁজতে গেলে রাচেল পিকারিংকে ফোন করার চেষ্টা করলো। সে ডিরেক্টরের কাছে প্রতীজ্ঞা করেছিলো পৌঁছাবার পরই তাকে ফোন করবে। সে এখন খুবই উদগ্রীব এটা জানতে যে মারজোরি টেঞ্চের সাথে পিকারিংয়ের মিটিংটার খবর কী।
গয়ার SHINCOM 2100 ডিজিটাল কমিউনিকেশন সিস্টেমের সাথে রাচেল পরিচিত। সে জানে কলটা খুব সংক্ষেপে করতে হবে আর যোগাযোগটা নিরাপদ রাখতে হবে।
পিকারিংয়ের নাম্বারটা ডায়াল করে রাচেল প্রত্যাশা করলো প্রথম রিং হতেই পিকারিং সেটা ধরবে। কিন্তু রিং হতেই লাগলো।
ছয়টা রিং। সাতটা রিং। আটটা রাচেল অন্ধকার সাগরের দিকে তাকালো। নয়টা রিং। দশটা রিং। তোলেন।
সে পায়চারী করতে লাগলো। কী হচ্ছে কী? পিকারিং সবসময়ই নিজের সঙ্গে ফোন রাখে। আর সে নিজেই রাচেলকে ফোন করতে বলেছে।
পনেরো রিংয়ের পর, সে ফোনটা রেখে দিলো।
উদ্বিগ্ন হয়ে সে সিনম’টাতে আবারো একটা নাম্বার ডায়াল করলো।
চারটা রিং। পাঁচটা রিং…
সে কোথায়?
অবশেষে একটা ক্লিক করে শব্দ হলে রাচেল একটু স্বস্তি পেলো। কিন্তু সেটা খুবই সাময়িক। অপরপ্রান্তে কেউ নেই। শুধু স্তব্ধতা।
“হ্যালো,” সে বললো। “ডিরেক্টর?”
তিনটি দ্রুত ক্লিক্ হলো।
“হ্যালো?” রাচেল বললো।
ইলেক্ট্রনিক নয়েজ আর দোমড়ানো মোচড়ানোর শব্দ কোনো গেলো। সে তার কান থেকে রিসিভারটা সরিয়ে ফেললো। এরপর সব শব্দ থেমে গেলে কিছু লোকের কথাবার্তা শুনতে পেলো সে। রাচেলের দ্বিধা খুব দ্রুত বদলে গেলো, সে বুঝতে পেওে ভীত হয়ে উঠলো।
“ধ্যাত!”
সে রিসিভারটা রেখে দিলো। কয়েক মূহুর্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ভাবলো ফোনটা করলেই ভালো হোতো। জাহাজের মাঝখানে, দুই ডেক নিচে, গয়ার হাইড্রো-ল্যাবটা অবস্থিত। খুবই ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতিতে সেটা ঠাসা। সবধরণের যন্ত্রপাতিই রয়েছে সেখানে।
কর্কি আর টোল্যান্ড যখন ঢুকলো, গয়ার ভূ-তত্ত্ববিদ জাভিয়া তখন একটা টিভির সামনে ঝুঁকে কী যেনো দেখছিলো। সে এমনকি ঘুরেও তাকালো না।
“তোমাদের বিয়ার কেনার টাকা কি শেষ হয়ে গেছে?” সে ঘাড় বেঁকিয়েই বললো। বোঝাই যাচ্ছে সে ধরে নিয়েছে তার ক্রুদের কেউ ফিরে এসেছে।
“জাভিয়া,” টোল্যান্ড বললো, “আমি মাইক।”
ভূ-তত্ত্ববিদ চম্কে ঘুরে তাকালো। খেতে থাকা স্যান্ডউইচের অর্ধেকটা মুখে ঢুকিয়ে হা করে রইলো কিছুক্ষণ। “মাইক?” সে বিস্ময়ে বললো। তাকে দেখে একেবারে ভড়কে গেছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে স্যান্ডউইচটা চিবোতে চিবোতে কাছে এলো। “আমি ভেবেছিলাম ওরা বুঝি বিয়ার নিতে ফিরে এসেছে। তুমি এখানে কী করছো?” জাভিয়ার খুবই ভারি গড়নের আর কৃষ্ণবর্ণের এক মেয়ে, তার কণ্ঠ তীক্ষ্ণ। সে টেলিভিশনের দিকে ঘুরে সেদিকে ইঙ্গিত করলো, সেখানে এখনও দেখানো হচ্ছে টোল্যান্ডের প্রামান্যচিত্রটা। “তুমি আইস শেলফে বেশিক্ষণ ছিলে না, তাই না?”
টোল্যান্ড বললো, “জাভিয়া, আমি নিশ্চিত কর্কি মারলিনসনকে তুমি চেনো।”
জাভিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো, “সেটাতো আমার জন্য সম্মানের, স্যার।”
কর্ক তার হাতের আধ খাওয়া স্যান্ডউইচের দিকে তাকালো। “এটা তো ভালোই আছে এখনও।”
জাভিয়া তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো।
“আমি তোমার মেসেজটা পেয়েছি,” টোল্যান্ড জাভিয়াকে বললো। “তুমি বলেছিলে আমি আমার প্রামান্যচিত্রে একটা ভুল করেছি? আমি তোমার সাথে এ নিয়ে কথা বলতে চাই।”
ভূ-তত্ত্ববিদ তার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসিতে ফেটে পড়লো। এজন্যে তুমি ফিরে এসেছে? ওহ্ মাইক, ঈশ্বরের দোহাই, আমি তোমাকে তো বলেছিই সেটা তেমন কিছু না। আমি কেবল তোমার চেনটা ধরে টান দিয়েছি। নাসা অবশ্যই তোমাকে কিছু পুরনো ডাটা দিয়েছিলো। অপর্যাপ্ত। সত্যি বলতে কী, এই পৃথিবীর তিন কি চার জন ভূ-তত্ত্ববিদ এটা খেয়াল করেছে!”
টোল্যান্ড একটা দম নিয়ে বললো, “এটা কি কন্ড্রুইল সংক্রান্ত কিছু?”
জাভিয়ার আতংকিত হয় গেলো, “হায় ঈশ্বর, ইতিমধ্যে তাদের কেউ তোমার সাথে যোগাযোগও করে ফেলেছে দেখি?”
টোল্যান্ড খেদোক্তি করলো। কন্ড্রুইল। সে কর্কির দিকে চেয়ে আবার জাভিয়ারের দিকে ফিরলো। “জাভিয়া আমি চাই তুমি কইলের ব্যাপারে কী জানো সব আমাকে খুলে বলো। আমার ভুলটা কী ছিলো?”
জাভিয়ার তার দিকে চেয়ে রইলো। এবার সে বুঝতে পারলো মাইক খুবই সিরিয়াস। “মাইক, এটা তেমন কিছুই না। কিছুদিন আগে ট্রেড জার্নালে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না তুমি এটা নিয়ে এতোটা পেরেশান কেন?”
টোল্যান্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “জাভিয়া কথাটা খুব অদ্ভুত কোনোবে, আজ রাতের ঘটনাসমূহ তুমি যতো কম জানো ততোই ভালো হয়। আমি কেবল তোমার কাছ থেকে জানতে চাই কন্ড্রুইল সম্পর্কে তুমি কি জানো, তারপর আমাদের কাছে থাকা পাথরের নমুনাটা পরীক্ষা করবো।”
জাভিয়া রহস্যে পড়ে গেলো। “চমৎকার, সেই আর্টিকেলটা তোমাকে দেয়া যাক তাহলে। এটা আমার অফিসে রয়েছে।” সে স্যান্ডউইচটা রেখে অফিসের দিকে চলে গেলো।
কর্কি তাকে পেছন থেকে ডাকলো। “আমি কি এটা খেতে পারি?”
অবিশ্বাসে জাভিয়া থেমে গেলো। “আপনি আমার স্যান্ডউইচটা খেতে চাচ্ছেন?”
“না মানে, আমি ভাবলাম তুমি যদি–”
“নিজের স্যান্ডউইচ খান,” জাভিয়া চলে গেলো।
টাল্যান্ড মুখ টিপে হেসে একটা ছোট শেলফের দিকে তাকালো। “শেলুফের নিচের দিকে দেখো, কর্কি।”
ডেকের বাইরে রাচেল বৃজ থেকে হেলিপ্যাডের দিকে গেলো। পাইলট একটু ঝিমুচ্ছিলো, কিন্তু রাচেলকে আসতে দেখে উঠে বসলো।
“শেষ করে ফেলেছেন?” সে জিজ্ঞেস করলো। “খুব জলদিই হয়ে গেলো মনে হয়।”
রাচেল মাথা ঝাঁকালো। “আপনি কি রাডারটা চালু করতে পারেন?”
“অবশ্যই। দশ মাইল পরিধির।”
“দয়া করে সেটা চালু করেন।”
পাইলট একটু হতভম্ব হয়ে রাডারটা চালু করলো।
“কিছু পাওয়া গেলো?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো।
‘কয়েকটা ছোট ছোট জাহাজ আছে আশপাশে, কিন্তু তারা আমাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। আমরা নিরাপদেই আছি। চারদিকে পানি আর পানি।”
রাচেল সেক্সটন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যদিও সে খুব একটা স্বস্তি পেলো না। আমার জন্য একটা কাজ করুন, কোনো কিছু যদি আমাদের দিকে আসতে দেখেন– নৌকা, জাহাজ, এয়ারক্রাফট, যাইহোক– আপনি কি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন?”
“অবশ্যই। সব কিছু কি ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ। আমি কেবল জানতে চাচ্ছি কেউ আমাদের দিকে আসছে কিনা।”
পাইলট কাঁধ ঝাঁকালো। “কিছু হলেই সবার আগে আপনি জানবেন।”
রাচেল হাইড্রোল্যাবের দিকে যাবার সময় একটু দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলো। সে ঢুকে দেখলো কর্কি আর টোল্যান্ড একটা কম্পিউটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারা স্যান্ডউইচ খাচ্ছে।
কর্কি খাবার মুখে নিয়েই রাচেলকে বললো, “কি হবে? ফিশ না চিকেন, নাকি ফিশ বোলোগনা, কিংবা ফিশ এগ সালাদ?”
রাচেল প্রশ্নটা শুনতে পেলো বলে মনে হলো না। “মাইক আমরা কতো দ্রুত এই খবরটা পাবো আর এই জাহাজ থেকে চলে যেতে পারবো?”
১০৪
টোল্যান্ড হাইড্রোল্যাবে পায়চারী করতে লাগলো। রাচেল আর কর্কিকে নিয়ে জাভিয়ার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছে সে। কইলের খবরটার মতোই রাচেলের পিকারিংয়ের সাথে যোগাযোগ করার খবরটাও অস্বস্তিকর।
ডিরেক্টর কোনো জবাব দেননি।
কেউ গয়া’র অবস্থান জানার চেষ্টা করেছিলো।
“শান্ত হও,” টোল্যান্ড সবাইকে বললো। “আমরা নিরাপদেই আছি। পাইলট রাডার দেখছে। সে আমাদেরকে অনেক আগেভাগেই কারো আসার খবরটা দিতে পারবে।”
রাচেল তার সাথে একমত হয়ে সায় দিলেও তাকে খুব বিচলিত মনে হলো।
“মাইক, এটা আবার কী?” ককি কম্পিউটার মনিটরের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলো। একটা অদ্ভুত ছবি দেখা যাচ্ছে, সেটা এমনভাবে স্পন্দিত হলো যেনো জীবন্ত কিছু।
“একুয়েস্টিক ডপলার কারেন্ট প্রোফাইল,” টোল্যান্ড বললো।”এটা স্রোতের আভ্যন্তরীণ ছবি।”
রাচেল তাকিয়ে রইলো। এজন্যেই আমরা এটার ওপরে নোঙর করেছি?”
টোল্যান্ডকে স্বীকার করতেই হলো, ছবিটা ভীতিকর। যেনো সমুদ্রের নিচে কোনো সাইক্লোন ঘুরপাক খাচ্ছে।
“এটাই হলো মেগাপ্লাম,” টোল্যান্ড বললো।
কর্কি আতকে উঠলো। “দেখে তো মনে হচ্ছে পানির নিচে টর্নেডো।”
“একই জিনিস। সমুদ্রের নিচে সাধারণত শীতল এবং ঘনত্ব বেশি থাকে। কিন্তু এখানে গতিবিদ্যাটি বিপরীতধর্মী হয়ে থাকে। গভীর পানির নিচে উত্তাপ বেশি হয়ে যায় আর হালকাও হয়, এতে করে সেটা উপরের দিকে উঠতে থাকে। এই ফাঁকে উপরের দিকের পানি ভারি হয়, তাই সেটা নিচের দিকে যেতে থাকে। একটা কুণ্ডলীর তৈরি হয়।
“সমুদ্রের উপরে এটা আবার কি?” কর্কি সমুদ্রের ওপরে একটা ফুলে ওঠা অংশের দিকে ইঙ্গিত করলো। সেটা বিশাল একটা বুদবুদের মতো।
“ফুলে ওঠাটাই হলো ম্যাগমা ডোম।” টোল্যান্ড বললো। “এখানেই লাভা নিচ থেকে ওপরের দিকে ওঠার জন্য ধাক্কা দিতে থাকে।”
কর্কি মাথা নাড়লো। “বিশাল একটা বুদবুদের মতো।”
“অনেকটা সেরকমই।”
“এটা যদি উৎক্ষিপ্ত হয়?”
“আটলান্টিকের ম্যাগমা ডোম উৎক্ষিপ্ত হয় না।” টোল্যান্ড বললো। “ঠাণ্ডা পানি গরম ম্যাগমাকে কঠিন করে ফেলে। ফলে আস্তে আস্তে ম্যাগমাগুলো পাথরে পরিণত হয়ে কুণ্ডলীটা উধাও হয়ে যায়। মেগাপ্লাম সাধারণত বিপজ্জনক হয় না।”
কর্কি কম্পিউটারের পাশে রাখা একটা পুরনো ম্যাগাজিনের দিকে নির্দেশ করে বললো, “তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছো সাইন্টিফিক আমেরিকান মনগড়া কথা ছাপায়?”
টোল্যান্ড কভারটা দেখে ভুরু কুচকালো। কেউ ওটা গয়ার আর্কাইভ থেকে এখানে এনে রেখেছে। এটা একটা পুরনো ম্যাগাজিন, সাইন্টিফিক আমেরিকান, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯। কভারের ছবিতে একটা বিশাল কুণ্ডলী সমুদ্র থেকে খুঁসে উঠছে, সঙ্গে অগ্ন্যুৎপাত। শিরোনামটি হলো : মেগাপ্লাম- গভীর সমুদ্রের দানবীয় খুনি?
টোল্যান্ড এতে হেসে ফেললো। “একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। এই প্রবন্ধে যে মেগাপ্লামের কথা বলা হয়েছে সেটা ভূমিকম্প জোনের, এটা হলো জনপ্রিয় বামুদা ট্রায়াঙ্গলের হাইপোথিসিস, জাহাজ উধাও হবার ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। আসলে এরকম কিছু এই সমুদ্রে নেই, তোমরা তো জানেনাই …”
“না, আমরা জানি না, কর্কি বললো।
টোল্যান্ড কাঁধ ঝাঁকালো। “উপরে ফুলে ওঠে।”
“খুব ভালো। আমাদের এখানে এনেছে বলে খুব খুশি হয়েছি।”
জাভিয়ার পেপারটা নিয়ে ফিরে এলো। “মেগাপ্লমের প্রশংসা করা হচ্ছে?”
“ওহ্, হ্যাঁ,” কর্কি ব্যঙ্গ করে বললো। “মাইক আমাদেরকে এই ছোট্ট জিনিসটা বোঝাচ্ছিলো যে আমরা একটা বিশাল ঘুর্নির মধ্যে আছি। সেটা নিচের একটা নর্দমায় আমাদের টেনে নিয়ে যাবে।”
“নর্দমা?” জাভিয়ার শীতলভাবে হাসলো। “আসলে পৃথিবীর সবচাইতে বড় টয়লেট ফ্লাশ।”
.
গয়ার ডেকের বাইরে, কোস্টগার্ড হেলিকপ্টারের পাইলট রাডারের পর্দার দিকে চেয়ে আছে। সে সবার চোখে বিশেষ করে রাচেলের চোখে এক ধরণের ভীতি দেখেছে।
সে কী ধরণের অতিথির প্রত্যাশা করছে? সে অবাক হয়ে ভাবলো।
রাডারে কিছুই দেখতে পেলো না সে। আট মাইল দূরে একটা মাছ ধরার নৌকা। একটা বিমান তাদের অনেক দূর দিয়ে চলে গেলো। সেটা সাধারণ ব্যাপার।
পাইলট দীর্ঘশ্বাস ফেললো, এবার সে বাইরের সমুদ্রের দিকে তাকালো।
সে আবার রাডারের পর্দার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য রাখতে শুরু করলো।
১০৫
গয়ার ভেতরে টোল্যান্ড রাচেলের সঙ্গে জাভিয়ারের পরিচয় করিয়ে দিলো। জাভিয়ার তার সামনে দাঁড়ান রাচেলকে দেখে হতভম্ব হলো একটু। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্রুত করে এই জাহাজ থেকে চলে যাবার জন্য রাচেলের তাড়নায় জাভিয়ার একটু অস্বস্তিবোধ করলো।
সময় নিয়ে করো, জাভিয়া, টোল্যান্ড তাকে আকারে ইঙ্গিতে বললো। আমাদেরকে সব কিছুই জানতে হবে।
জাভিয়া এবার কথা বললো, তার কণ্ঠে আড়ষ্টতা। “তোমার প্রামান্যচিত্রে, মাইক, তুমি বলেছে পাথরের ঐসব ছোট ছোট ধাতব-বিন্দুগুলো কেবলমাত্র মহাশূন্যেই তৈরি হয়।”
টোল্যান্ড কথাটা শুনে একটু কেঁপে উঠলো। কন্ড্রুইল কেবল মহাশূন্যেই হয়। এটাই নাসা আমাকে বলেছিলো।
“কিন্তু এই লেখাটা মতে,” একটা পাতা বের করে জাভিয়া বললো, “এই কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়।”
কর্কি গর্জে উঠলো।”এটা একেবারেই সত্য!”
জাভিয়া কর্কির দিকে কটমট করে তাকিয়ে পাতাটা দেখালো। “গতবছর, লি পোলক নামের এক তরুণ ভূ-তত্ত্ববিদ এক ধরণের নতুন মেরিন রোবট ব্যবহার করে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর তলদেশে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে কিছু পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছিল, যেগুলোতে এমন কিছু ছিলো যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। ঐ জিনিসগুলো দেখতে ঠিক কইলের মতোই।”
কর্কি ঢোক গিললো। কিন্তু জাভিয়া তাকে পাত্তাই দিলো না। “ডক্টর পোলক বলেছেন যে, সাগরের সুগভীর তলদেশে যেখানে সীমাহীন চাপে পাথরখণ্ড রূপান্তরিত হয়ে যায়, এবং এর ভেতরে ধাতব-বিন্দুর জন্ম নেয়।”
টোল্যান্ড কথাটা বিবেচনা করলো। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ সাত মাইল গভীরে, পৃথিবীর এমন এক জায়গা যেখানে কেউ কখনও যায়নি। কেবলমাত্র কিছু অত্যাধুনিক সাব-রোবট অভিযান চালিয়েছে ওখানে। আর তাদের বেশিরভাগই প্রচণ্ড চাপে ভেঙে পড়েছে তলদেশে পৌঁছার আগে। ওখানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৮০০০ পাউন্ড চাপ সৃষ্টি হয়। যেটা সমুদ্র পৃষ্ঠে মাত্র ২৪ পাউন্ড। সমুদ্রবিজ্ঞানীরা এখনও এই স্থান সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না। “তাহলে, এই পোলক সাহেব মনে করেন যে, মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পাথরে ভেতরে কন্ড্রুইল তৈরি করতে পারে?”
“এটা খুবই অস্পষ্ট একটি তত্ত্ব,” জাভিয়া বললো। “সত্যি বলতে কী, এটা কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিতও হয়নি। আমি পোলকের নিজের ওয়েবসাইটে ঢুকে এ সম্পর্কিত তার নোট দেখেছি, গত মাসে।”
“তত্ত্বটা কখনই প্রকাশিত হয়নি, কর্কি বললো। কারণ এটা হাস্যকর। কন্ড্রুইল তৈরি করতে হলে তোমার দরকার উত্তাপের। পানির চাপে এরকম ক্রিস্টাল বিন্দু তৈরি হবে না।”
“চাপ,” জাভিয়া পাল্টা বললো, “আমাদের এই গ্রহে একক বৃহত্তম শক্তি যা ভৌত পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। এটাকে বলে রূপান্তরিত শিলা? ভূতত্ত্ব ১০১?”
কর্কি ভ্রূ কুচকালো।
টোল্যান্ড বুঝতে পারলো জাভিয়ার কথাতে যুক্তি আছে। যদিও উত্তাপ পৃথিবীর অনেক ভৌত পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে, তার পরও বেশিরভাগ শিলার রূপান্তরই ঘটে থাকে প্রচণ্ড চাপে। তারপরও ডক্টর পোলকের তত্ত্বটি এখনও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি।
“জাভিয়া,” টোল্যান্ড বললো। “আমি কখনও শুনিনি পানির চাপে শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তুমি হলে ভূতত্ত্ববিদ, তোমার মত কি?”
“আচ্ছা,” সে বললো, তার হাতে ধরা কাগজটাতে টোকা মেরে। “এটা পড়ে মনে হচ্ছে কেবল পানির চাপই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়।” জাভিয়া একটা অধ্যায় পড়ে কোনোলো। “মারিয়ানা ট্রেঞ্চের সামুদ্রিক পাথর তৈরি হয়েছে পানির চাপ এবং ঐ এলাকার টেকটোনিক প্লেটের চাপে।”
অবশ্যই, টোল্যান্ড ভাবলো। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এ এরকম টেকটোনিক জোন রয়েছে।
জাভিয়া পড়তেই থাকলো। “পানির চাপ এবং টেকটোনিক প্লেটের যৌথ চাপে শিলার অভ্যন্তরে কন্ড্রুইল তৈরি হতে পারে, যা পূর্বের ধারণা মতে কেবল মহাশূন্যেই ঘটা সম্ভব।”
কর্কি তার চোখ বড় বড় করে ফেললো। “অসম্ভব।”
টোল্যান্ড কর্কির দিকে তাকালো। “ডক্টর পোলকের পাওয়া পাথরে যে কভুইল পাওয়া গেছে সেটার কি অন্য কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে?”
“খুব সহজ, কর্কি বললো। “পোলক আসলে সত্যিকারের একটি উল্কাখণ্ডই পেয়েছে। উল্কাখণ্ড বেশিরভাগ সময়ই সমুদ্রে পড়ে থাকে। পোলক সেটাকে উল্কাখণ্ড বলে মনে করেনি কারণ দীর্ঘদিন পানিতে থাকার ফলে ফিউশন ক্রাস্টটা ক্ষয়ে গিয়েছিলো, এতে করে তিনি মনে করেছেন সেটা সাধারণ কোনো পাথরই। কর্কি জাভিয়ার দিকে তাকালো। আমার মনে হয় না পোলকের নিকেল উপাদান হিসেব করার মতো মস্তিষ্ক রয়েছে, আছে কি?”
“সত্যি বলতে কী, হ্যাঁ, আছে,” জাভিয়া পাল্টা বললো। হাতে ধরা কাগজটা আবারো তুলে ধরল তার সামনে। “পোলক লিখেছে: আমি সেই নমুনাতে নিকেলের উপাদান মাঝারি স্তরে খুঁজে পেয়েছি। যা আমাকে অবাক করেছে, কেননা পার্থিব শিলায় এমনটি সাধারণত হয় না।”
রাচেলকে খুব বিচলিত বলে মনে হলো। “সমুদ্রের শিলাটি কি আসলে উল্কা হবার সম্ভাবনা রয়েছে?”
জাভিয়াকেও বিচলিত মনে হলো। “আমি কোনো পেট্রোলজিস্ট নই, কিন্তু এটা বুঝি পোলকের পাওয়া শিলার সাথে সত্যিকারের উস্কাপিণ্ডের অনেক পার্থক্য রয়েছে।”
“পার্থক্যগুলো কী?” টোল্যান্ড চাপ দিলো।
জাভিয়া তার হাতে ধরা পৃষ্ঠায় একটা গ্রাফের দিকে দৃষ্টি দিলো। একটা পার্থক্য হলো কইলের রাসায়নিক গঠনের পার্থক্য। এতে দেখা যাচ্ছে টাইটানিয়াম/জিরকোনিয়ামের অনুপাতে ভিন্নতা রয়েছে। সামুদ্রিক শিলার কইলের টাইটানিয়াম/জিরকোনিয়াম অনুপাত কেবলমাত্র এক মিলিয়নে দুই অংশ।”
“দুই পিপিএস?” কর্কি জোরে বললো। “উল্কাখণ্ডের এটার চেয়ে হাজারগুণ বেশি থাকে।”
“একদম ঠিক,” জাভিয়া জবাব দিলো। “যার জন্য পোলক মনে করেছেন যে তার নমুনাটির কন্ড্রুইল মহাশূন্য থেকে আসেনি।”
টোল্যান্ড কর্কির কাছে ঝুঁকে নিচু স্বরে বললো, “নাসা কি মিলনের শিলার টাইটানিয়াম/জিরকোনিয়াম অনুপাত মেপে দেখেছিলো?”
“অবশ্যই না।” কর্কি বললো। “কেউ সেটা মাপতে পারে না, মাপেও না। এটা মনে হবে যে কেউ তার গাড়ির চাকার টায়ারের রাবারের উপাদান দেখে নিশ্চিত হওয়া যে গাড়িটাই দেখা যাচ্ছে।”
টোল্যান্ড একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাভিয়ার দিকে তাকালো। “আমরা যদি তোমাকে একটা কন্ড্রুইলবিশিষ্ট পাথর দেই তুমি কি পরীক্ষা করে বলতে পারবে সেটা উল্কাও নাকি পোলকের সামুদ্রিক পাথর?”
জাভিয়া কাঁধ ঝাঁকাল। “মনে হয় ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কোপে সেটা কাছাকাছি ধরা যাবে। এসব কেন করা হচ্ছে, বলতে পারো?”
টোল্যান্ড কর্কির দিকে তাকালো। “তাকে ওটা দিয়ে দাও।”
কর্কি অনিচ্ছা সত্ত্বেও উখিণ্ডের নমুনাটি পকেট থেকে বের করে তাকে দিয়ে দিলো। সে ফিউশন ক্রাস্টের দিকে চেয়ে ফসিলের দিকে তাকালো।
“হায় ঈশ্বর?” সে বললো, তার মাথাটা যেনো ঘুরে গেলো। “এটা সেই পাথরের অংশ তো …?”
“হ্যাঁ,” টোল্যান্ড বললো।দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো সেটাই।”
১০৬
গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ নিজের অফিসের জানালার সামনে একা দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে এরপর সে কী করবে। সে নাসার ওখান থেকে প্রবল উত্তেজনা নিয়ে ফিরে এসেছে এই আশায় যে পিওডিএস এর জালিয়াতি সম্পর্কে সিনেটরকে জানাবে।
এখন, সে অতোটা নিশ্চিত নয়।
ইয়োলান্ডার মতে, এবিসি’র দু’জন রিপোর্টারও সেক্সটনের এসএফএফ ঘুষ সম্পর্কে সন্দেহ করছে। তারচেয়েও বড় কথা, গ্যাব্রিয়েল এই মাত্র জানতে পেরেছে যে, সেক্সটন জেনে গেছেন, গ্যাব্রিয়েল তার ফ্ল্যাটে ঢুকে সব দেখে ফেলেছে। তারপরও তিনি তাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি?
গ্যাব্রিয়েল দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার ট্যাক্সিটা অনেক আগেই চলে গেছে, তাকে এখন আরেকটা ডাকতে হবে। সে জানে তার আগে তাকে একটা কিছু করতে হবে।
আমি কি সত্যি এটা চেষ্টা করে দেখবো?
গ্যাব্রিয়েল অবাক হয়ে ভাবলো। এ ছাড়া তার আর কোনো উপায়ও নেই। সে জানে না কাকে বিশ্বাস করবে।
তার অফিস থেকে বের হয়ে সে সেক্সটনের অফিসের দিকে গেলো। সেক্সটনের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দরজার মধ্যে দুটো পতাকা লাগানো আছে– ডানদিকে ওল্ডগ্লোরি এবং বাম দিকে ডেলাওয়ার পতাকা। তার দরজাটা আর সব সিনেটরের দরজার মতোই স্টিলের তৈরি, নিরাপত্তামূলক। তাতে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক কি-প্যাড। আর একটা এলার্ম সিস্টেম।
সে জানে, সে যদি কয়েক মিনিটের জন্যও ভেতরে যেতে পারতো, তাহলে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতো। এই দরজা দিয়ে ভেতরে যাবার কোনো ভ্রান্তি বিলাস তার নেই। তার অন্য একটা পরিকল্পনা আছে।
সেক্সটনের অফিসের দশ ফিট দূরে, একটা লেডিস রুমে গ্যাব্রিয়েল ঢুকে পড়লো। ভেতরের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
তুমি কি নিশ্চিত, এটা করার জন্য তুমি প্রস্তুত?
গ্যাব্রিয়েল জানে সেক্সটন তার কাছ থেকে পিণ্ডডিএস-এর খবর জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। দুঃখের বিষয় হলো, সে এখন বুঝতে পেরেছে সেক্সটন তাকে বোকা বানিয়েছে। গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ এটা পছন্দ করেনি। সিনেটর আজ রাতের ঘটনা তার কাছে থেকে গোপন রেখেছেন। প্রশ্ন হলো কতোটা গোপন রেখেছেন, উত্তরটা নিহিত আছে তার অফিসের ভেতরে, ঠিক এই দেয়ালের ওপাশেই।
“পাঁচ মিনিট, গ্যাব্রিয়েল সশব্দেই বললো, নিজেকে গুছিয়ে নেবার জন্য।
সে বাথরুমের সাপ্লাই ক্রোসেটের দিকে গেলো। দরজার ফ্রেমের উপরে হাতড়ালে একটা চাবি ফ্লোরে পড়ে গেলো। এটা হলো জরুরি কাজের জন্য রাখা একটা চাবি। এ খবর জানে কেবল হাতে গোনা কয়েকজন। ভাগ্য ভালো যে, গ্যাব্রিয়েল তাদের মধ্যে একজন।
সে ক্লোসেটটা খুলে ফেললো।
ভেতরটা গুমোট, পরিস্কার করার সরঞ্জামে ঠাসা। একমাস আগে গ্যাব্রিয়েল পেপার টাওয়েল খোঁজার জন্য এখানে এসে একটা জিনিস আবিষ্কার করতে পেরেছিলো। পেপার না পেয়ে সেটা খোঁজার জন্য টপ শেলফের সিলিং-টাইল খুলে দেখতে গেলে সে অবাক হয়ে শুনতে পেয়েছিলো সেক্সটনের অফিস থেকে তাঁর কণ্ঠটা কোনো যাচ্ছে।
একেবারে পরিস্কার।
এখন, আজ রাতে সে এখানে এসেছে টয়লেট পেপারের খোঁজে নয়। গ্যাব্রিয়েল জুতা খুলে শেফের ওপরে উঠে পড়লো। ছাদের ফাইবার বোর্ড টাইলসটা খুলে ফেলে সে উঠে গেলো ওখানে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অনেক বেশিই হয়ে গেছে। সে ভাবলো। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো কতোগুলো স্টেট এবং ফেডারেল আইন সে লঙ্ঘন করেছে।
নিচু হয়ে সে সেক্সটনের প্রাইভেট গেস্ট-রুমের দিকে যেতে লাগলো। গ্যাব্রিয়েল তার পা-দুটো চিনামাটির সিঙ্কে রেখে নেমে পড়লো সেক্সটনের প্রাইভেট অফিসের ভেতর।
তার প্রাচ্যদেশীয় কার্পেটটা নরম আর উষ্ণ বলে মনে হলো তার কাছে।
১০৭
ত্রিশ ফুট দূরে, একটা কালো কিওয়া গানশিপ দক্ষিণ ডেলাওয়ার-এর পাইনগাছের সারির ওপর এসে থামলো। ডেল্টা-ওয়ান অবস্থান চিহ্নিত করে অটো নেভিগেশন সিস্টেমটা লক করে ফেললো।
যদিও রাচেলের জাহাজের ট্রান্সমিশন যন্ত্রটি এবং পিকারিংয়ের সেলফোন, দুটোই এনক্রিপ্ট করা, যাতে যোগাযোগের বিষয় সুরক্ষিত থাকে, তারপরও ডেল্টা-ওয়ান যে রাচেলের ফোন ইন্টারসেপ্ট করেছে তার লক্ষ্য কিন্তু তাদের কথাবার্তা আঁড়িপেতে কোনো নয়। রাচেলের ভৌগলিক অবস্থান জানাই আসল লক্ষ্য।
ডেল্টা-ওয়ান সবসময়ই এটা ভেবে খুব মজা পায় যে, বেশিরভাগ সেলফোন গ্রাহকই জানে না যে, তারা প্রতিবারই কল করার সাথে সাথে সরকারের লিসেনিং পোস্ট তাদের অবস্থান একেবারে নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করতে পারে। এই ছোট্ট ব্যাপারটিই কোনো সেলফোন কোম্পানি বিজ্ঞাপন করে না। আজ রাতে, ডেল্টাফোর্স পিকারিংয়ের সেলফোনে আসা ইনকামিং কলের ভৌগলিক অবস্থান নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে।
তাদের টার্গেটের দিকে তারা ছুটে যাচ্ছে। বিশ মিনিটের মধ্যেই তারা পৌঁছে যেতে পারবে। “ছাতা প্রস্তুত?” সে জিজ্ঞেস করলো ডেল্টা-টুকে, সে রাডার এবং ওয়েপেন সিস্টেমটা ঠিকঠাক করছে।
“হ্যাঁ, প্রস্তুত। পাঁচ মাইল রেঞ্জের মধ্যে।”
পাঁচ মাইল, ডেল্টা-ওয়ান ভাবলো। কপ্টারটা রাডার ফাঁকি দিয়ে টার্গেটের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে। সে জানে গয়ার যাত্রীদের কেউ কেউ উৎকণ্ঠার সাথে আকাশের দিকে লক্ষ্য রাখছে। যেহেতু ডেল্টা ফোর্সের উদ্দেশ্য হলো তাদের টার্গেটকে কোনো রকম রেডিও যোগাযোগ করতে না দিয়েই শেষ করা, তাই নিঃশব্দেই তারা এগিয়ে গেলো।
পনেরো মাইল দূরে, এখনও তার রাডার রেঞ্জের বাইরে আছে। ডেল্টা-ওয়ান কিওয়াকে ৩৫ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে পশ্চিম দিকে চলে গেলো। সে ৩০০০ ফুট উপরে ওঠে গেলো তারা– ছোট প্লেনের রেঞ্জ এটা –আর তার গতি ১১০ নট ঠিক করে নিলো।
.
গয়ার ডেকে কোস্টগার্ড হেলিকপ্টারের পাইলট রাডার পর্দায় ছোট একটা বিপ শুনে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো। দশ মাইল সীমানার মধ্যে একটা কিছু ঢুকেছে। পাইলট সোজা হয়ে বসলো। জিনিসটা মনে হলো ছোট্ট একটা কার্গো প্লেন, পশ্চিম উপকূলের দিকে যাচ্ছে।
হয়তো নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।
প্লেনটার গতি ১১০ নট হবে। আর সেটা তাদের জাহাজ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।
৪.১ মাইল।৪.২ মাইল।
পাইলট হাফ ছেড়ে বাচলো। স্বস্তিবোধ করলো। তারপরই অদ্ভুত ব্যাপারটা ঘটলো।
“ছাতা মেলে ধরা হয়েছে,” ডেল্টা-টু বললো। “নয়েজ অফ করা হয়েছে, পালস সক্রিয় আছে।”
ডেল্টা-ওয়ান একেবারে ডান দিকে বাঁক নিয়ে নিলো। ক্রাফটা সরাসরি গয়ার দিকে মুখ করে ছুটতে লাগলো। এই কৌশলটার জন্য জাহাজের রাডারে কিছুই ধরা পড়বে না।
রাডার ফাঁকি দেয়ার কৌশলটা আবিস্কৃত হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে। এক বৃটিশ পাইলট তার প্লেন থেকে খড়ের বস্তা ফেলতে শুরু করে বোমা হামলার সময়ে। জার্মান রাডারে এতগুলো বস্তু ধরা পড়ে যে তারা ভেবেই পেলো না কোনোটাকে গুলি করবে। এই কৌশলটাই তারপর থেকে উন্নত টেকনিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
কিওয়া’র ‘ছাতা রাডার ফাঁকি দেবার সবচাইতে অত্যাধুনিক মিলিটারি যুদ্ধাস্ত্র। এতে করে সব ধরণের রাডারে ফাঁকি দেয়া যায়। তাছাড়াও আশপাশের সব ধরণের রেডিও যোগাযোগ অথবা মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম অচল হয়ে যায়– অবশ্য সলিড টেলিফোন লাইন বাদে। যদি কিওয়া গয়া’র কাছে এসে পড়ে তবে সেখানকার সব ধরণের যোগাযোগ সিস্টেম অচল হয়ে পড়বে।
নিখুঁত বিচ্ছিন্নতা, ডেল্টা-ওয়ান ভাবলো। তাদের আত্মরক্ষার কোনো কিছুই নেই।
তাদের টার্গেটরা মিলনে আইস শেলফ থেকে ভাগ্যক্রমে এবং কিছুটা চালাকি করেই পালাতে পেরেছে। কিন্তু এবার সেটার পুনরাবৃত্তি হবে না। উপকূল ছেড়ে সমুদ্রে আসাটা রাচেল আর টোল্যান্ডের নেয়া সর্বশেষ বাজে সিদ্ধান্ত, এটাই হবে তাদের জীবনের শেষ বাজে সিদ্ধান্ত।
.
হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট জাখ হার্নি নিজের বিছানায় টেলিফোন ধরে বিমূঢ় হয়ে বসে আছেন। “এসময়? এক্সট্রম আমার সাথে এখন কথা বলতে চাচ্ছে? হানি বিছানার পাশে রাখা ঘড়িটার দিকে তাকালো। টা ১৭ মিনিট।
“হ্যাঁ, মি: প্রেসিডেন্ট, কমিউনিকেশন অফিসার বললো। “তিনি বলেছেন এটা নাকি খুবই জরুরি।”
১০৮
কৰ্কি আর জাভিয়া যখন কইলের জিরকোনিয়াম উপাদান মাপার জন্য মাইক্রোপ্রোবের সামনে ব্যস্ত, রাচেল তখন টোল্যান্ডের সাথে পাশের ঘরে চলে গেলো। সেখানে টোল্যান্ড আরেকটা কম্পিউটার চালু করলো। বোঝাই যাচ্ছে সমুদ্রবিজ্ঞানী আরেকটা জিনিস চেক করে দেখতে চাইছে।
কম্পিউটারটা চালু হতেই টোল্যান্ড রাচেলের দিকে তাকালো। সে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো।
“কী হয়েছে?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। তার সান্নিধ্যে আসলে রাচেলের কী রকম জানি শারীরিক অনুভূতির সৃষ্টি হয় এই কথাটা ভেবে অবাক হলো সে।
“আমি তোমার কাছে একটু ক্ষমা চাচ্ছি, টোল্যান্ড বললো। তাকে খুব বিনয়ী মনে হচ্ছে।
“কিসের জন্য?”
“ডেকে? হ্যামার হেড নিয়ে? আমি খুব বেশি উত্তেজিত ছিলাম। কখনও কখনও আমি ভুলে যাই অনেকের কাছে সমুদ্র কী রকম ভীতিকর হতে পারে।”
তার সঙ্গে মুখোমুখি হলে রাচেলের মনে হয় একজন টিনএজার তার ছেলে বন্ধু নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। “ধন্যবাদ, সেটা কোনো ব্যাপার না। সত্যি বলছি।” তার মন কেন জানি বলছে টোল্যান্ড তাকে চুমু খেতে চাচ্ছে।
একটু বাদেই সে লজ্জায় সরে গেলো। আমি জানি। তুমি তীরে যেতে চাচ্ছো। আমাদেরকে কাজটা করতে হবে আগে।”
“এখনই।” রাচেল আলতো করে হাসলো।
“এখনই, টোল্যান্ড কথাটা আবারো বললো, কম্পিউটারের সামনে বসে পড়লো সে।
রাচেল তার পেছনেই বসলো। সে দেখলো টোল্যান্ড কতোগুলো ফাইল খুলে দেখছে। “আমরা কি করছি?”
“সমুদ্রের বড় বড় উকুনের ডাটাবেস চেক করে দেখছি। আমি দেখতে চাচ্ছি সেখানে এমন কিছু পাই কিনা– যা দেখতে নাসার ফসিলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়।” মেনুতে খোঁজ করে দেখলে টোল্যান্ড। এখানে সমুদ্রের সাম্প্রতিকতম খবরাখবর থাকে। কোনো মেরিন বায়োলজিস্ট নতুন কোনো প্রজাতি অথবা ফসিল পেলে সেটার তথ্য এবং ছবি ডাটা ব্যাংকে দিয়ে দেয়।”
রাচেল টোল্যান্ডের দিকে চেয়ে বললো, “তাহলে তুমি ওয়েব-এ ঢুকেছো?”
“না। সমুদ্রে থেকে ইন্টারনেটে ঢোকা খুবই কঠিন কাজ। আমরা এইসব ডাটা এখানেই একটা অপটিক্যাল ড্রাইভে সংরক্ষণ করে থাকি। পাশের ঘরেই সেটা আছে। যখনই আমরা বন্দর বা পোর্টে নামি ডাটাগুলো আপডেট করে নেই। এভাবে আমরা ইন্টারনেট ছাড়াই ডাটাগুলোতে একসেস করতে পারি।” টোল্যান্ড কী যেনো টাইপ করতে লাগলো। সে মুখ। টিপে হাসছে। “তুমি সম্ভবত বিতর্কিত মিউজিক ফাইল ডাউন লোড কক্স ন্যাপস্টার-এর নাম শুনেছো?”
রাচেল সায় দিলো।
আমাদের এই ডাটাব্যাংক ড্রাইভার সিস্টেমকেও বায়োলজিস্টদের ন্যাপস্টার বলা হয়। আমরা অবশ্য এটাকে বলি LOBSTER, অনলি ওশানিক বায়োলজিস্ট শেয়ারিং টোট্যালি। এসেনট্রিক রিসার্চ।”
রাচেল হেসে ফেললো। এরকম কঠিন সময়েও টোল্যান্ড হাস্যরস করে রাচেলের ভয়। কিছুটা কমিয়ে দিতে পারছে।
“আমাদের ডাটাবেসটা কিন্তু খুবই বিশাল।” টোল্যান্ড বললো! “প্রায় দশ টেরাবাইট বর্ণনা আর ছবি এতে রয়েছে। এখানে এমন কিছু তথ্য আছে যেটা কেউ কখনও দেখেনি সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা খুবই বিশাল।” সে সার্চ বাটনে ক্লিক করলো। “দেখা যাক, আমাদের ক্ষুদে মহাশূন্য ছারপোকার ফসিলের মতো সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো সামুদ্রিক ফসিল কেউ পেয়েছে কিনা।”
এরপর, একেরপর এক ছবি আর বর্ণনা পর্দায় ভেসে আসতে লাগলো। টোল্যান্ড প্রতিটা তালিকাই পরখ করে দেখলো। কিন্তু মিলনে-তে পাওয়া ফসিলের মতো কোনো কিছু পেলো না।
টোল্যান্ড ভুরু কুচকে বললো, “অন্যভাবে চেষ্টা করে দেখি।” সে ফসিল’ শব্দটা বাদ দিয়ে দিলো কি-ওয়ার্ডের তালিকা থেকে।
“আমরা সব জীবিত প্রাণীর মধ্যে খুঁজে দেখি। হয়তো সেখানে কিছু পেতে পারি।” পর্দাটা রিফ্রেশ হলো।
আবারো টোল্যান্ড ভুরু কুচকালো। কম্পিউটার শত শত এন্ট্রি নিয়ে হাজির হয়েছে। সে তার গাল চুলকালো। “এটা অনেক বেশি হয়ে গেছে। সার্চটা একটু সংক্ষিপ্ত করা যাক।”
রাচেল দেখতে পেলো সে মেনুতে হ্যাবিটাট’ শব্দটিতে মার্ক দিয়ে ক্লিক করলো। এবার সে তালিকাটি এলো সেটা সীমাহীন : টাইডপুল, মার্স, লাগুন, বিফ, সালফার ভেন্ট ইত্যাদি। টোল্যান্ড তালিকাটার নিচে গিয়ে একটা অপশন বাছাই করলো :
ওশানিক ট্রেঞ্চ
স্মার্ট, রাচেল মনে মনে বললো। টোল্যান্ড তার সার্চটা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট একটা জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেললো যেখানে কন্ডুইল হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবার পর্দায় যেটা ভেসে উঠলো সেটা দেখে টোল্যান্ড হাসলো। “ভালো খবর, কেবল তিনটা এন্ট্রি।”
রাচেল প্রথম এন্ট্রিটার দিকে তাকালো।লিমুলাস পলি… এরকমই কিছু।
টোল্যান্ড এন্ট্রিটাতে ক্লিক করলে একটা ছবি ভেসে উঠলো। প্রাণীটাকে দেখে মনে হলো একটা বিশাল আকারের লেজবিহীন হর্স-সুকাঁকড়া।
“না, টোল্যান্ড বললো। আগের পাতাতেই ফিরে গেলো সে।
রাচেল দ্বিতীয় আইটেমটার দিকে লক্ষ্য করলো। শ্রিম্পাস আগলিয়াস ফ্রম হোস। সে দ্বিধাগ্রস্তভাবে বললো, “এটা কি আসলেই কোনো নাম?”
টোল্যান্ড হাসলো। “না। এটা নতুন প্রজাতি, যার নাম এখনও দেয়া হয়নি। যে লোকটা এটা আবিষ্কার করেছে তার রসবোধ রয়েছে।”
সে শেষ এন্ট্রিটার দিকে গেলো এবার। “শেষেরটা দেখি কি হয় …” সে তৃতীয় আইটেমটা ক্লিক করলো। সেই পাতাটা ভেসে এলো।
“বাথিনোমাস জাইগানতিয়াস…” টোল্যান্ড লেখাটা জোরে জোরে পড়লো। ছবিটা ভেসে এলো পর্দায়। রঙ্গীন ছবি।
রাচেল লাফিয়ে উঠলো। “হায় ঈশ্বর?”
টোল্যান্ড একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো। “ওরে বাবা। এটাকে তো চেনা চেনা লাগছে।”
রাচেল সায় দিলো। নির্বাক সে। বাথিনোমাস জাইগানতিয়াস। প্রাণীটা দেখে মনে হচ্ছে বিশাল সামুদ্রিক উকুন। নাসার পাওয়া পাথরের ফসিলের সাথে এটার খুব মিল রয়েছে।
“এখানে খুব কমই পার্থক্য রয়েছে, টোল্যান্ড বললো। “কিন্তু এটা খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষ করে এটা বিবেচনায় নিলে যে, এটা একশত নব্বই মিলিয়ন বছরেরই পুরনো প্রজাতি।”
খুবই কাছাকাছি, রাচেল ভাবলো।
খুব কাছাকাছি।
টোল্যান্ড পর্দায় থাকা বিবরণটা পড়লো : “মনে করা হয় এটা সমুদ্রের সবচাইতে পুরনো প্রজাতি। বাৰ্থিনোমাস জাইগানতিয়াস একটি বিরল প্রজাতির গভীর সমুদ্রের আইসোপোড জাতীয় গুটি পোকা। দৈর্ঘ্যে দুই ফিটের মতো। এটার মাথার কঙ্কাল খুব শক্ত, এর রয়েছে। এন্টেনা এবং স্থলভাগের পোকা মাকড়ের মতোই জটিল প্রকৃতির এক জোড়া চোখ। এরা বাস করে এমন পরিবেশে, আগে মনে করা হতো সেসব জায়গাতে কোনো প্রাণী থাকা সম্ভব নয়। টোল্যন্ড মুখ তুলে তাকালো। যা অন্যসব ফসিলগুলোতেও ব্যাখ্যা করতে পারে।”
রাচেল পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলো। উত্তেজিত বোধ করলেও সে বুঝতে পারছে না এসবের মানে কী?”
“কল্পনা করো,” টোল্যান্ড উত্তেজিতভাবে বললো। “একশত নব্বই মিলিয়ন বছর আগে এরকম বাথিনোমাস সমুদ্রের গভীরে ভূমিধ্বসে চাপা পড়ে গেলো। কাদাগুলো পাথর হয়ে গেলে ছারপোকাগুলো পাথরের ভেতরে ফসিল হয়ে যায়। একই সঙ্গে সমুদ্রের তলদেশের প্লেটের সঞ্চারণের ফলে সেটা ট্রেঞ্চের কাছাকাছি চলে আসে, ফসিলযুক্ত পাথরটা এসে পড়ে উচ্চ-চাপযুক্ত এলাকাতে, যেখানে কইলের জন্ম হয়।” টোল্যান্ড এবার খুব দ্রুত বলতে লাগলো। ট্রেঞ্চের আশেপাশে এই পাথরের টুকরো খুঁজে পাওয়াটা একেবারে বিরল ঘটনা নয়।”
“কিন্তু নাসা যদি …” রাচেল থেমে গেলো একটু। “মানে বলতে চাচ্ছি, এটা যদি সম্পূর্ণ মিথ্যে হয়ে থাকে, নাসা অবশ্যই জানে আজ হোক কাল হোক কেউ না কেউ ঠিকই খুঁজে পাবে
যে, এই ফসিলটা সামুদ্রিক প্রাণীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তাই না? যেমন আমরা খুঁজে পেলাম!”
টোল্যান্ড বাথিনোমাস-এর ছবিটা লেজার প্রিন্টারে প্রিন্ট করে নিলে “আমি জানি না। কেউ যদি আগ বাড়িয়ে এসে বলে যে সামুদ্রিক উকুনের সঙ্গে নাসার ফসিলের মিল রয়েছে, তারপরও তাদের ফিজিওলজি তো পরিচিতিজ্ঞাপক নয়। এটা নাসার কেসটাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।”
রাচেল আচমকাই বুঝতে পারলো। পাস্পারমিয়া। পৃথিবীতে জীবনের আর্বিভাব হয়েছে মহাশূন্যের বীজ থেকে।
“একদম ঠিক। মহাশূন্যের প্রাণীদের সাথে পৃথিবীর প্রাণীদের সাদৃশ্য চমৎকার বৈজ্ঞানিক ধারণা তৈরি করবে। এই সামুদ্রিক উকুনটি নাসার কেসটাকে আরো বেশি শক্তিশালী করবে।”
“কেবলমাত্র যদি উস্কার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।”
টোল্যান্ড সায় দিলো। “একবার যদি উল্কাপিণ্ডটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ে তবে সব কিছুই ভেঙে পড়বে। সামুদ্রিক উকুনটা নাসার বন্ধু থেকে শক্রর পরিণত হয়ে যাবে।”
রাচেল নিজেকে বোঝাতে লাগলো এটা নাসার একটি নির্দোষ ভুল। কিন্তু তার যুক্তি বলছে তা নয়। কারণ যারা অজান্তে ভুল করে তারা মানুষ খুন করতে যাবেনা।
আচমকাই কর্কির নাকি সুরের কঠটা প্রতিধ্বনিত হলো ল্যাবে। “অসম্ভব!”
টোল্যান্ড এবং রাচেল দুজনেই ঘুরে দেখলো।
“অনুপাতটি আবারো হিসেব করে দেখা হলো! এতে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না!
জাভিয়াও সেখানে দ্রুত ছুটে এলো হাতে একটা প্রিন্ট-আউট নিয়ে। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। “মাইক, আমি জানি না কীভাবে বলবো …” তার কণ্ঠ কাঁপা কাঁপা। ‘টাইটানিয়াম/জিরকোনিয়াম অনুপাতটি, এই নমুনার, দেখেছি। এটা নিশ্চিত, নাসা একটা বিশাল ভুল করেছে। তাদের উল্কাপিণ্ডটি আসলে সামুদ্রিক পাথর।”
টোল্যান্ড আর রাচেল একে অন্যের দিকে তাকালো কিন্তু কিছুই বললো না। তারা এটা জানে। যেনো সব সন্দেহ আর দ্বিধা এক নিমিষেই সরে গেলো। একটা মূল বিন্দুতে এসে পৌঁছেছে।
টোল্যান্ড সায় দিলো, তার চোখে বেদনা। “হা। ধন্যবাদ। জাভিয়া।”
“কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না,” জাভিয়া বললো। “ফিউশন ক্রাস্ট … বরফের নিচে তার অবস্থান–”
“আমরা এটা তীরে পৌঁছে ব্যাখ্যা করবো,” টোল্যান্ড বললো। “আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি।”
রাচেল দ্রুত যাবতীয় কাগজপত্র যোগাড় করে হাতে নিয়ে নিলো। এসবে রয়েছে কীভাবে নাসা এই আবিষ্কারটা সাজিয়েছে। আর এই সিদ্ধান্তে আসা গেছে যে, পুরো ব্যাপারটিই জালিয়াতি।
টোল্যান্ড রাচেলের হাতে থাকা কাগজপত্রগুলোর দিকে বিষণভাবে তাকিয়ে বললো, “তো, পিকারিংয়ের জন্য সব প্রমাণই আছে এখানে।
রাচেল মাথা নেড়ে সায় দিলো, অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো পিকারিং কেন তার ফোনে জবাব দিলো না।
টোল্যান্ড একটা ফোন তুলে নিয়ে তার দিকে বাড়িয়ে দিলো। “তুমি এখান থেকে আবার চেষ্টা করে দেখবে?”
“না, চলো, জলদি চলে যাই। আমি কপ্টার থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবো।” রাচেল মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে, সে যদি পিকারিংয়ের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে, তবে কপ্টারটা নিয়ে সোজা এনআরও- তে চলে যাবে।
টোল্যান্ড ফোনটা রাখতে গিয়ে থেমে গেলো। সে রিসিভারে কী যেনো শুনে ভুরু কুচকালো। “আজব তো। কোনো ডায়াল টোন নেই।”
“কী বললে?” রাচেল বললো, তাকে এখন বিচলিত মনে হচ্ছে।
“আজব,” টোল্যাড বললো। “সরাসরি COMSAT লাইন কখনও এরকম করে না তো (বইয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ নয়)
“মি: টোল্যান্ড?” পাইলট ল্যাবে ছুটে এসে বললো, তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
“কি হয়েছে?” রাচেল জানতে চাইলো। “কেউ কি আসছে?”
“সেটাই তো সমস্যা, পাইলট বললো। আমি জানি না। আমাদের সব কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি আর রাডার বন্ধ হয়ে গেছে।”
রাচেল কাগজগুলো তার শার্টের ভেতরে গুঁজে রেখে দিলো।”হেলিকপ্টারে আসো আমরা এক্ষুণি চলে যাবো। এক্ষুণি!”
১০৯
সিনেটর সেক্সটনের অন্ধকার অফিসে ঢুকে গ্যাব্রিয়েলের হৃদস্পন্দনটা বেড়ে গেলো। ঘরটা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি অভিজাত– কাঠের নক্সা করা দেয়াল। তৈলচিত্র, ইরানী কার্পেট, বিশাল মেহগনি কাঠের ডেক্স। ঘরটার একমাত্র আলো হলো সেক্সটনের কম্পিউটার মনিটরের হালকা আলোটা।
গ্যাব্রিয়েল তাঁর ডেস্কের দিকে গেলো।
সিনেটর টেক্সটন তার অফিসের যাবতীয় নথিপত্র, ফাইল, সব দলিল-দস্তাবেজই বড় বড় ফাইল ক্যাবিনেট আর ড্রয়ারে না রেখে ডিজিটালি সংরক্ষণ করেন– কম্পিউটারে। আর এই। অফিসটা তিনি সব সময়ই তালা মেরে রাখেন নিরাপত্তার কারণে। তিনি কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ পর্যন্ত দেননি যাতে হ্যাকাররা তাঁর তথ্য চুরি করতে না পারে।
ওয়াশিংটনে এসে গ্যাব্রিয়েল একটা কথা শিখেছে। তথ্যই শক্তি। গ্যাব্রিয়েল জানতে পেরেছে রাজনীতিবিদরা তাদের সব ধরণের অবৈধ অনুদানই রেকর্ড করে রাখে। কথাটা শুনতে বোকামী মনে হলেও আসলে এর পেছনে রয়েছে একটা নিরাপত্তাজনিত কারণ। এটাকে ওয়াশিংটনে বলা হয় সিয়ামিজ ইস্যুরেন্স’। ডোনারের হাত থেকে প্রার্থীকে রক্ষা করার জন্য এটা করা হয়। যারা মনে করে যে ডোনাররা পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপ দিতে পারে প্রার্থীকে, যদি কোনো ডোনার খুব বেশি দাবিদাওয়া চেয়ে বসে তবে প্রার্থী অবৈধ ডোনেশনের কাগজপত্র বের করে দেখায় এবং স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাড়াবাড়ি করলে উভয়ের জন্যই। ক্ষতি হবে। আমরা দুজনেই সংযুক্ত আছি– সিয়ামিজ যমজের মতো।
গ্যাব্রিয়েল সিনেটরের ডেস্কের পেছনে বসে পড়লো। সে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে কম্পিউটারের দিকে তাকালো। সিনেটর যদি এসএফএফ-এর কাছ থেকে কোনো ঘুষ নিয়েই থাকেন, তবে তার প্রমাণ এখানে থাকবেই।
সেক্সটনের ক্রিনসেভারে লেখা আছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেজউইক সেক্সটন..
গ্যাব্রিয়েল মাউস নাড়ালে একটা সিকিউরিটি ডায়ালগ বক্স পর্দায় ভেসে এলো।
এন্টার পাসওয়ার্ড :
সে এটাই প্রত্যাশা করলো। এটাতে কোনো সমস্যা হবে না। গত সপ্তাহে, গ্যাব্রিয়েল সিনেটরের অফিসে ঢুকে দেখতে পেয়েছিলো সিনেটর কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন। সে তাকে দেখতে পেয়েছিলো একটা কি-তেই তিনবার চাপ দিলেন।
“এটাই পাসওয়ার্ড?” সে ঢুকতে ঢুকতে বলেছিলো।
সেক্সটন তার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, “কি?”
“তোমার পাসওয়ার্ড কেবলমাত্র তিনটি অক্ষরে? আমার মনে হয় টেকনিশিয়ানরা আমাদেরকে কমপক্ষে ছয়টা অক্ষর ব্যবহার করতে বলেছিলো।”
“আরে, ওরা হলো ছোরা ছেলে। ওরা যখন চল্লিশের ওপর হবে তখন ওরাও ছয়টি অক্ষর মনে করতে বেগ পাবে। তাছাড়া, দরজাতে এলার্ম আছে। কেউ এখানে আসতে পারবে না।”
গ্যাব্রিয়েল তার কাছে গিয়ে একটু হেসে বললো, “তুমি যখন বাথরুমে থাকো, তখন যদি কেউ এসে পড়ে, তখন কি হবে?”
“আর পাসওয়ার্ডটা মেলাবে?” তিনি একটা সন্দেহগ্রস্তভাবে হাসলেন। “আমি বাথরুমে খুব দেরি করি, কিন্তু অতোটা দেরি নিশ্চয় করি না।”
“আমি তোমার পাসওয়ার্ডটা দশ সেকেন্ডে যদি বের করতে পারি তবে কি বে ডেভিডে ডিনার খাওয়াবে?”
সেক্সটনকে কৌতূহলেী বলে মনে হলো। “তুমি ডেভিডে খাওয়ানোর ক্ষমতা রাখে না, গ্যাব্রিয়েল।”
“তাহলে তুমি বলছো তুমি একজন কাপুরুষ?”
অবশেষে সেক্সটন চ্যালেঞ্জটা গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল জানে কোনো তিনটি অক্ষর হবে। এটা খুবই সোজা। সেক্সটন তার নামের অনুপ্রাসটি খুবই পছন্দ করেন। সিনেটর সেজউইক সেক্সটন।
একজন রাজনীতিবিদের ইগোকে খাটো করে কখনও দেখবে না।
সে এসএসএস টাইপ করেছিলো। সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনসেরভারটা চলে গিয়েছিলো। এটা দেখে সেক্সটনের মুখ হা হয়ে গেলো।
সেটা অবশ্য গত সপ্তাহের কথা। এখন গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো সেক্সটন তো নতুন পাস ওয়ার্ডও তৈরি করে নিতে পারে। কেন সে ওটা করবে? সে আমাকে খুবই বিশ্বাস করে।
সে এসএসএস টাইপ করলো।
কিন্তু তাতে হলো না- পাসওয়ার্ডটা ভুল।
গ্যাব্রিয়েল ভড়কে গেলো।
বোঝাই যাচ্ছে সিনেটর যে তাকে কতোটা বিশ্বাস করে সে ব্যাপারে সে একটু বেশিই ধারণা করে ফেলেছিলো।