রাত্রে সারারাত্রি হাজারি ঘুমাইতে পারিল না। অতসীর মত বড়ঘরের সুন্দরী মেয়ের স্নেহ আদায় করার মধ্যে একটা নেশা আছে, হাজারিকে সে নেশায় পাইয়া বসিল। তাহার জীবনের এক অদ্ভুত ঘটনা।
সকালে উঠিয়া সে রাণাঘাটে রওনা হইল। বেশী নয় পাঁচ ছ’ মাইল রাস্তা, হাঁটিয়া বেলা সাড়ে আটটার সময় স্টেশনের নিকটে সেগুন-বনে গিয়া পৌঁছিল।
রেল-বাজারের মধ্যে ঢুকিতেই তাহার ইচ্ছা হইল একবার তাহার পুরাতন কৰ্মস্থানে উঁকি মারিয়া দেখিয়া যায়। আজ প্রায় পাঁচ মাস সে রাণাঘাট ছাড়া। দূর হইতে বেচু চক্রবর্ত্তীর হোটেলের সাইনবোর্ড দেখিয়া তাহার মন উত্তেজনায় ও কৌতূহলে পূর্ণ হইয়া উঠিল। গত ছয় বৎসরের কত স্মৃতি জড়ানো আছে ওই টিনের চালওয়ালা ঘরখানার সঙ্গে।
হোটেলের গদিঘরে ঢুকিয়া প্রথমেই সে বেচু চক্কত্তির সম্মুখে পড়িয়া গেল। বেলা প্রায় সাড়ে দশটা, খরিদ্দার আসিতে আরম্ভ করিয়াছে, বেচু চক্কত্তি পুরোনো দিনের মত গদিঘরে তক্তপোষের উপর হাতবাক্সের সামনে বসিয়া তামাক খাইতেছেন।
হাজারি প্রণাম করিয়া দাঁড়াইতেই তিনি বলিলেন–আরে এই যে হাজারিঠাকুর! কি মনে করে? কোথায় আছ আজকাল? ভাল আছ বেশ?
হাজারি এক মুহূর্তে আবার যেন বেচু চক্রবর্তীর বেতনভুক রাঁধুনী বামুনে পরিণত হইল, তেমনি ভয়, সঙ্কোচ ও মনিবের প্রতি সম্ভ্রমের ভাব তার সারা দেহমনে হঠাৎ কোথা হইতে যেন উড়িয়া আসিয়া ভর করিল।
সে পুরোনো দিনের মত কাঁচুমাচু ভাবে বলিল–আজ্ঞে তা আপনার কৃপায় এক রকম– আজ্ঞে, তা বাবু বেশ ভাল আছেন?
–আজকাল আছ কোথায়?
–আজ্ঞে গোপালনগরে কুণ্ডুবাবুদের বাড়ীতে আছি।
–বাড়ীর কাজ? কদ্দিন আছ?
–এই চার মাস আছি বাবু।
–তা বেশ, তবে সেখানে মাইনে আর কত পাও? হোটেলের মত মাইনে কি করে দেবে গেরস্ত ঘরে?
বেচু চক্কত্তির এই কথার মধ্যে হাজারি এক ধরণের সুরের আঁচ পাইল। ব্যাপার কি? বেচু চক্কত্তি কি আবার তাহাকে হোটেলে রাখিতে চান? তাহার কৌতূহল হইল শেষ পর্যন্ত দেখাই যাক না কি দাঁড়ায়।
সে বিনীত ভাবে বলিল–ঠিক বলেছেন বাবু, তা তো বেশী নয়। গেরস্তবাড়ী কোথা থেকে বেশী মাইনে দেবে?
–তারপর কি এখন আমাদের এখানে এসেছ ঠাকুর?
–আজ্ঞে হ্যাঁ, বাবু।
–কি মনে করে বলো তো? থাকবে এখানে?
হাজারি কিছুমাত্র না ভাবিয়াই বলিল–সে বাবুর দয়া।
–তা বেশ বেশ, থাকো না কেন, পুরোনো লোক, বেশ তো। যাও কাজে লেগে যাও। তোমার কাপড়-চোপড় এনেছ? কই?
–না বাবু, আগে থেকে কি করে আনি। সে সব গোপালনগরে রয়েছে। চাকুরিতে দয়া করে রাখবেন কি না রাখবেন না জেনে কি করে সে-সব–
–আচ্ছা আচ্ছা, যাও ভেতরে যাও। রতন ঠাকুরের অসুখ করেছে, বংশী একা আছে, তুমি কাজে লাগো এবেলা থেকে। ভাঙা ভাংটো এ মাসের ক’টা দিনের মাইনে তুমি আগাম নিও।
হাজারি কৃতজ্ঞতার সহিত বেচু চক্কত্তিকে আর একবার ঘাড় খুব নীচু করিয়া হাত জোড় করিয়া প্রণাম করিয়া কলের পুতুলের মত রান্নাঘরের দিকে চলিল।
সামনেই বংশীঠাকুর।
তাহাকে দেখিয়া বংশী অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল।
হাজারি বলিল–বাবু ডেকে বহাল করলেন যে ফের! ভাল আছ বংশী? তোমার সেই ভাগ্নেটি ভাল আছে?
বংশী বলিল–আরে এস এস হাজারি-দা! তোমার কথা প্রায়ই হয়। তুমি বেশ ভাল আছ? এতদিন ছিলে কোথায়?
–ডেকে কি চাপিয়েছ? সরো, হাতাটা দাও। এখনও মাছ হয়নি বুঝি? যাও, তুমি গিয়ে মাছটা চড়িয়ে দাও! তেলের বরাদ্দ সেই রকমই আছে না বেড়েচে?
বংশী বলিল–একবার টেনে নিও একটু। অনেক দিন পরে যখন এলে। দাঁড়াও ডালটায় নুন দেওয়া হয়নি এখনও–দিয়ে দাও।
বলিয়া সে দরমার আড়ালে গাঁজা সাজিতে গেল।
চুপি চুপি বলিল–তোমায় বহাল করেছে কি আর সাধে? এদিকে তুমি চলে যাওয়াতে হোটেলের ভয়ানক দুর্নাম। সেই কলকাতার বাবুরা দু’তিন দল এসেছিল, যেই শুনলে তুমি এখানে নেই–তারা বল্লে সেই ঠাকুরের রান্না খেতেই এখানে আসা। সে যখন নেই, আমরা রেলের হোটেলে খাবো। হাটুরে খদ্দেরও অনেক ভেঙ্গে গিয়েছে–যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলে। তোমায় বাবু বহাল করলেন কেন জান? যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলে তোমাকে পেলে লুফে নেয় এক্ষুনি। তোমার অনেক খোঁজ করেছে ওরা।
বংশীর হাত হইতে গাঁজার কলিকা লইয়া দম মারিয়া হাজারি কিছুক্ষণ চক্ষু বুজিয়া চুপ করিয়া রহিল। কি হইতে কি হইয়া গেল! চাকুরি লইতে সে তো রাণাঘাট আসে নাই। কিন্তু পুরাতন জায়গায় পুরাতন আবেষ্টনীর মধ্যে আসিয়া সে বুঝিয়াছে এতদিন তাহার মনে সুখ ছিল না। এই বেচু চক্কত্তির হোটেল, এই দরমার বেড়া দেওয়া রান্নাঘর, এই পাথুরে কয়লার স্তূপ, এই হাতাবেড়ি এই তার অতি পরিচিত স্বর্গ। ইহাদের ছাড়িয়া কোথায় সে যাইবে? ভগবান এমন সুখের দিনও মানুষের জীবনে আনিয়া দেন?
বংশীর হাতে কলিকা ফিরাইয়া দিয়া সে খুশির সহিত বলিল–নাও, আর একবার টান দিয়ে নাও। ডালে সম্বরা দিই গে–এবেলা এখনও বাজার আসে নি নাকি?
বংশী বলিল–মাছটা কেবল এসেছে। তরকারিপাতি এল বলে, গোবরা গিয়েছে। গোবরা নতুন চাকর–বেশ লোক, আমার ওপর ভারি ভক্তি। এলে দেখো এখন।
এই সময় তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট লইয়া জন দুই খরিদ্দার খাইবার ঘরে ঢুকিতেই হাজারি অভ্যাস মত পুরাতন দিনের ন্যায় হাঁকিয়া বলিল–বসুন বাবু, জায়গা করাই আছে–নিয়ে যাচ্ছি। বসে পড়ুন। মাছ এখনও হয়নি এত সকালে কিন্তু–শুধু ডাল আর ভাজা–বংশী ভাত নিয়ে এস হে–ডালটায় সম্বর দিয়ে নিই– বেলাও এদিকে প্রায় দশটা বাজে। কেষ্টনগরের গাড়ী আসবার সময় হোল। আজকাল ইষ্টিশনের খদ্দের আনে কে?
হাজারি যেন দেহে-মনে নতুন বল ও উৎসাহ পাইয়াছে। হাজার হোক, শহর বাজার জায়গা রাণাঘাট, কত লোকজন, গাড়ী, হৈ হৈ, ব্যস্ততা, রেলগাড়ী, গাড়ী-ঘোড়া –এখানে একবার কাটাইয়া গেলে কি অন্য জায়গা কারো ভালো লাগে? একটা জায়গার মত জায়গা।
এমন সময় একজন কালোমত ছোকরা চাকর তরকারি বোঝাই ঝুড়ি মাথায় রান্নাঘরে নীচু হইয়া ঢুকিল–পিছনে পিছনে পদ্মঝি।
পদ্মঝি বলিতে বলিতে আসিতেছিল–বাবাঃ, বেগুন আর কেনবার জো নেই রাণাঘাটের বাজারে। আট পয়সা করে বেগুনের সের ভূভারতে কে শুনেছে কবে–যত ব্যাটা ফড়ে জুটে বাজার একেবারে আগুন করে রেখেচে–সব চল্লো কলকেতা, সব চল্লো কলকেতা–তা গরীর গুরবো লোক কেনেই বা কি আর খায়ই বা কি–ও বংশী, ঝুড়িটা ধরে নামাও ওর মাথা থেকে–দরজার চৌকাঠে পা দিয়াই সে সম্মুখে থালায় অন্নপরিবেশনরত হাজারিকে দেখিয়া থমকিয়া দাঁড়াইয়া একেবারে যেন কাঠ হইয়া গেল।
হাজারি পদ্মঝিকে দেখিয়াই থতমত খাইয়া গেল। তাহার পুরাতন ভয় কোথা হইতে সেই মুহূর্তেই আসিয়া জুটিল। সে কাষ্ঠ হাসি হাসিয়া আমতা আমতা সুরে বলিল–এই যে পদ্মদিদি ভাল আছ বেশ? হে-হে-আমি–
পদ্মঝি বিস্ময়ের ভাবটা সামলাইয়া লইয়া বংশী ঠাকুরের দিকে চাহিয়া বলিল–ঝুড়িটা নামিয়ে নেও না ঠাকুর? ও সঙের মত দাঁড়িয়ে রইল ঝুড়ি মাথায়–মাছ হোল? তারপর হাজারির দিকে তাচ্ছিল্যের ভাবে চাহিয়া বলিল–কখন এলে?
–আজই এলাম পদ্মদিদি।
–আজ এবেলা এখানে থাকবে?
বংশী ঠাকুর বলিল–হাজারিকে যে বাবু বহাল করেছেন আবার। ও এখানে কাজ করবে।
পদ্মঝি কঠিন মুখে বলিল–তা বেশ। রান্নাঘরে আর না দাঁড়াইয়া সে বাহিরে চলিয়া গেল।
বংশী ঠাকুর অনুচ্চস্বরে বলিল–পদ্মদিদি চটেছে–বাবুর সঙ্গে এইবার একচোট বাধবে–
পদ্মকে সারাদুপুর আর রান্নাঘরের দিকে দেখা গেল না। হাজারির মন ছটফট করিতে ছিল, কতক্ষণে কাজ সারিয়া কুসুমের সঙ্গে গিয়া দেখা করবে। সে দেখিল সত্যই হোটেলের খরিদ্দার কমিয়া গিয়াছে–পূর্বে যেখানে বেলা আড়াইটার কমে কাজ মিটিত না, আজ সেখানে বেলা একটার পরে বাহিরের খরিদ্দার আসা বন্ধ হইয়া গেল।
হাজারি বলিল–হ্যাঁ বংশী, থার্ড ক্লাসের টিকিট মোট ত্রিশখানা! আগে যে সত্তর-পঁচাত্তর খান একবেলাতেই হোত? এত খদ্দের গেল কোথায়?
বংশী বলিল–তবুও তো আজকাল একটু বেড়েছে। মধ্যে আরও পড়ে গিয়েছিল, কুড়িখান থার্ড ক্লাসের টিকিট হয়েছে এমন দিনও গিয়েছে। লোক সব যায় যদু বাঁড়ুয্যের হোটেলে। ওদের এবেলা একশো ওবেলা ষাট-সত্তর খদ্দের। হাটের দিন আরও বেশ। আর খদ্দের থাকে কোথা থেকে বলো! মাছের মুড়ো কোনোদিন খদ্দেররা চেয়েও পাবে না। বড় মাছ কাটা হোলেই মুড়ো নিয়ে যাবেন পদ্মদিদি। আমাদের কিছু বলবার জো নেই। তার ওপর আজকাল যা চুরি শুরু করেছে পদ্মদিদি–সে সব কথা এরপর বলবো এখন। খেয়ে নাও আগে।
হোটেল হইতে খাওয়া-দাওয়া সারিয়া হাজারি বাহির হইয়া মোড়ের দোকানে এক পয়সার বিড়ি কিনিয়া ধরাইল। চূর্ণীর ধারে তাহার সেই পরিচিত গাছতলাটায় কতদিন বসা হয় নাই–সেখানে গিয়া আজ বসিতে হইবে। পথে রাধাবল্লভতলায় সে ভক্তিভরে প্রণাম করিল। আজ তাহার মনে যথেষ্ট আনন্দ, রাধাবল্লভ ঠাকুর জাগ্রত দেবতা, এমন দিনও তাহাকে জুটাইয়া দিয়াছেন! আজ ভোরে যখন বাড়ী হইতে বাহির হইয়াছিল, সে কি ইহা ভাবিয়াছিল? অস্বপনের স্বপন। চোর বলিয়া বদনাম রটাইয়া যাহারা তাড়াইয়াছিল, আজ তাহারাই কিনা যাচিয়া তাহাকে চাকুরিতে বহাল করিল।
চূর্ণী নদীর ধারে পরিচিত গাছতলাটায় বসিয়া সে বিড়ি টানতে টানিতে এক পয়সার বিড়ি শেষ করিয়া ফেলিল মনের আনন্দে। কুসুমের বাড়ী এখন সব ঘুমাইতেছে, গৃহস্থ বাড়ীতে দেখাশুনা করিবার এ সময় নয়–বেলা কখন পড়িবে? অন্ততঃ চারটা না বাজিলে কুসুমের ওখানে যাওয়া চলে না। এখনও দেড় ঘণ্টা দেরি।
গোপালনগরের কুণ্ডুবাড়ী হইতে তাহার কাপড়ের পুঁটুলিটা এক দিন গিয়া আনিতে হইবে। গত মাসের মাহিনা বাকি আছে, দেয় ভালো, না দিলে আর কি করা যাইবে?
আজ একটু রাত থাকিতে উঠিবার দরুন ভাল ঘুম হয় নাই–তাহার উপরে অনেক দিন পরে হোটেলের খাটুনি, পাঁচক্রোশ পায়ে হাঁটিয়া স্বগ্রাম হইতে রাণাঘাট আসা প্রভৃতির দরুন হাজারির শরীর ক্লান্ত ছিল–গাছতলার ছায়ায় কখন সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। যখন ঘুম ভাঙিল তখন সূর্যের দিকে চাহিয়া তাহার মনে হইল চারিটা বাসিয়া গিয়াছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে সে কুসুমের বাড়ীর দরজায় গিয়া কড়া নাড়ল।
কুসুম নিজে আসিয়াই খিল খুলিল এবং হাজারিকে দেখিয়া অবাক হইয়া বলিল–জ্যাঠা মশায়! কোথা থেকে? আসুন—আসুন–
তার পরেই সে নীচু হইয়া হাজারির পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করল। হাজারি হাসিমুখে বলিল–এস এস মা, কল্যাণ হোক। ছেলেপিলে সব ভাল তো? এত রোগা হয়ে গিয়েছ, ইস। তোমার কাকার মুখে তোমার বড্ড অসুখের কথা শুনলাম।
কুসুম বাড়ীর মধ্যে তাহাকে লইয়া গিয়া ঘরের মেঝেতে শতরঞ্জি পাতিয়া বসাইল। বলিল–ভয় নেই জ্যাঠামশায় মরচি নে অত শীগগির। আপনি সেই যে গেলেন, আর কোনো খবর নেই। অসুখের সময় আপনার কথা কত ভেবেছি জানেন জ্যাঠামশায়? মরেই যদি যেতাম, দেখা হোত আর? অখদ্দে আপদ না হোলে মরেই তো–
–ছি ছি, মা, ও রকম কথা বলতে আছে?
–কোথায় ছিলেন এতদিন আপনি? আজ কোথা থেকে এলেন?
–এঁডোশোলা থেকে।
কুসুম ব্যস্ত হইয়া বলিল–হেঁটে এসেছেন বুঝি? খাওয়া হয়নি?
হাজারি হাসিয়া বলিল–ব্যস্ত হয়ো না মা। বলচি সব। সকালে বেরিয়েছিলাম এঁড়োশোলা থেকে, বলি যাই একবার রাণাঘাট, তোমার সঙ্গে দেখা করবার ইচ্ছে খুব হোল। বেল বাজারে যেমন বাবুর হোটেলে দেখা করতে যাওয়া, অমনি বাবু বহাল করলেন কাজে। সেখানে কাজ সাঙ্গ করে চূর্ণীর ধারে বেড়িয়ে এই আসছি।
–ওমা আমার কি হবে? ওরা আবার আপনাকে ডেকে বহাল করেছে। তবে মিথ্যে চুরির অপবাদ দিয়েছিল কেন? পদ্ম আছে তো?
–পদ্ম নেই তো যাবে কোথায়? আছে বলে আছে! খুব আছে।
পরে গর্বের সুরে বলিল–আমায় না নিলে হোটেল যে ইদিকে চলে না। খদ্দেরপত্তর তো আদ্ধেক ফর্সা। সব উঠেছে গিয়ে বাঁডুয্যে মশায়ের হোটেলে।
হাজার হোক, হোটেলের মালিক, সুতরাং তাহার মনিবের সমশ্রেণীর লোক। হাজারি যদু বাঁড়ুয্যের নামটা সমীহ করিয়াই মুখে উচ্চারণ করিল।
কুসুম যেন অবাক হইয়া খানিকটা দাঁড়াইয়া রহিল। পরে হঠাৎ ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া বলিল–বসুন, জ্যাঠামশায়, আসছি আমি–
–না, না, শোনো। এখন খাওয়া-দাওয়ার জন্যে যেন কিছু কোরো না
–আপনি বসুন তো। আসছি আমি–
কোনো কথাই খাটিল না। কুসুম কিছুক্ষণ পরে এক বাটি গরম দুধ ও দু-খানি বরফি সন্দেশ রেকাবিতে করিয়া আনিয়া হাজারির সামনে রাখিয়া বলিল–একটু জল সেবা করুন।
–ওই তো তোমাদের দোষ, বারণ করে দিলেও শোনো না—
কুসুম হাসিমুখে বলিল–কথা শুনবো এখন পরে–দুধটা সেবা করুন সবটা–ভালো দুধ–বাড়ীর গরুর। ঘন করে জ্বাল দিয়েছি, দুপুর থেকে আকার ওপর বসানো ছিল।
–তুমি বড় মুশকিলে ফেললে দেখচি মা!…নাঃ
হাজারিকে পান সাজিয়া দিয়া কুসুম বলিল–জ্যাঠামশায় হোটেল ভাল লাগছে?
–তা মন্দ লাগছে না। আজ বেশ ভালই লাগলো। তবে ভাবছি কি জানো মা, এই রেল বাজারে আর একটা হোটেল বেশ চলে।
–শুধু বেশ চলে না। জ্যাঠামশায়, খুব ভাল চলে। আপনার নিজের নামে হোটেল দিলে সব হোটেল কানা পড়ে যাবে।
–তোমার তাই মনে হয় মা?
–হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়। খুলুন আপনি হোটেল।
–আর একজনও একথা বলেছে কালই। তোমার মত সেও আর এক মেয়ে আমার। আমাদের গাঁয়েই–
–কে জ্যাঠামশায়?
–হরিবাবুর মেয়ে, অতসী ওর নাম, টেঁপির বন্ধু। খুব ভাব দুজনে। সে আমায় কাল বলচিল–
আমাদের বাবুর মেয়ে? আমি দেখিনি কখনো। বয়েস কত?
–ওরা নতুন এসেছে গাঁয়ে, কোথা থেকে দেখবে। বয়েস ষোল-সতেরো হবে। বড় ভাল মেয়েটি।
–সবাই যখন বলছে, তাই করুন আপনি। টাকা আমি দেব–
–অতসীও দেবে বলেছে। দু-জনের কাছে টাকা নিলে জাঁকিয়ে হোটেল দেবে। কিন্তু ভয় হয় তোমার ব্যাঙের আধুলি নিয়ে শেষে যদি লোকসান যায়, তবে একুল ওকূল দুকুল গেল। বরং অতসী বড় মানুষের মেয়ে–তার দুশো টাকা গেলে কিছু তার আসে যাবে না–
–না, আমার টাকাও খাটিয়ে দিতে হবে। সে শুনছি নে।
–আমি দুজনের টাকাই নেবো। কাল থেকে জায়গা দেখছি রও। তবে টাকা গেলে আমায় দোষ দিও না।
–জ্যাঠামশায়, আপনি হোটেল খুললে টাকা ডুববে না–আমি বলচি। এর পরেও যদি ডোবে, তবে আর কি হবে। আপনার দোষ দেবো না।
উঠিবার সময় কুসুম বলিল, জ্যাঠামশায়, পরশু সংক্রান্তির দিন বাড়ীতে সত্যনারায়ণের সিন্নি দেবো ভাবছি, আপনি এখানে রাত্রে সেবা করবেন।
–তা কি করে হবে মা? আমি রাতে বারটার কম ছুটি পাবো না!
–তবে তার পর দিন দুপুরে? বেলা একটার সময় আসবেন। আমি লুচি ভেজে রাখবো, আপনি এসে তরকারি করে নেবেন। কথা রইলো, আসতেই হবে কিন্তু জ্যাঠামশায়।
হোটেলে ফিরিয়া সে বড় ডেকে রান্না চাপাইয়া দিল। বংশী ঠাকুর এবেলা এখনো আসে নাই, হাজারি অত্যন্ত খুশির সহিত চারদিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিল–সেই অত্যন্ত পরিচিত পুরাতন রান্নাঘর, এমন কি একখানা পুরানো লোহার খুন্তি পাঁচমাস আগে টিনের চালের বাতার গায়ে সেই গুঁজিয়া রাখিয়া গিয়াছিল এখনও সেখান সেই স্থানেই মরিচা-পড়া অবস্থায় গোঁজাই রহিয়াছে। সেই বংশী, সেই রতন, সেই পদ্মদিদি।
বংশী আসিয়া ঢুকিল। হাজারি বলিল–আজ পেঁপে কুটিয়ে দাও তো বংশী, একবার পেঁপের তরকারী মন দিয়ে রাঁধি অনেক দিন পরে। একদিনে বাঁড়ুজ্যে মশায়ের হোটেল কানা করে দেবো।
গদির ঘরে পদ্মঝিয়ের গলার আওয়াজ পাইয়া বংশী বলিল–ও পদ্মদিদি, শোনো ইদিকে–ও পদ্মদিদি—
পদ্মঝি থার্ডক্লাসের খাওয়ার ঘর পার হইয়া রান্নাঘরের মধ্যে আসিয়া ঢুকিয়া বলিল–কি হয়েছে?
বংশী বলিল–কি কি রান্না হবে এবেলা? হাজারি বলেছে পেঁপের তরকারি রাঁধবে ভাল করে। দু-একটা ভালমন্দ আমাদের দেখাতে হবে আজ থেকে। পেঁপে তো রয়েছে কি বল?
পদ্মঝি বলিল–না পেঁপে কাল হবে। আজ এবেলা বিলিতি কুমড়ো হোক। আর কুচো মাছের ঝাল করো। সাত আনা সের চিংড়ি ওবেলা গিয়েছে–এবেলা দেখি কি মাছ পাওয়া যায়।
হাজারি বলিল–পদ্মদিদি, আজ একটু মাংস হোক না?
পদ্মঝি এতক্ষণ পর্যন্ত হাজারির সঙ্গে সরাসরিভাবে বাক্যালাপ করে নাই। সারাদিনের মধ্যে এই প্রথম তাহার দিকে চাহিয়া বলিল–মাংস বুধবার হয়ে গিয়েছে। আজ আর হবে না–বরং শনিবার দিনে হবে।
হাজারি অত্যন্ত পুলকিত হইয়া উঠিল পদ্ম তাহার সহিত কথা বলাতে এবং পুলকের প্রথম মুহূর্ত কাটিতে না কাটিতে তাহাকে একেবারে বিস্মিত ও চকিত করিয়া দিয়া পদ্মঝি জিজ্ঞাসা করিল–এতদিন কোথায় ছিলে ঠাকুর?
হাজারি সাগ্রহে বলিল–আমার কথা বলছ পদ্মদিদি?
–হ্যাঁ।
–গোপালনগরে কুণ্ডুবাবুদের বাড়ী। আমি ছুটি নিয়ে বাড়ী এসেছিলাম–তারপর রাণাঘাটে আজ এসেছিলাম বেড়াতে। তা বাবু বল্লেন–
–হুঁ, বেশ থাকো না। তবে বাইরে জিনিসপত্তর নিয়ে যেতে পারবে না বলে দিচ্ছি। ওসব একদম বন্ধ করে দিয়েছেন বাবু। যা পারো এখানে খেও–বুঝলে?
–না বাইরে নিয়ে যাবো কেন পদ্মদিদি? তা নিয়ে যাবো না।
–তোমার সেই কুসুম কেমন আছে? দেখা করতে যাওনি? পদ্মঝিয়ের কণ্ঠস্বরে বিদ্রূপ ও শ্লেষের আভাস।
হাজারি লজ্জিত ও অপ্রতিভভাবে উত্তর দিল–কুসুম? হ্যাঁ তা কুসুম—ভালই–
পদ্মঝি অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া বোধ হয় যেন হাসিল। অন্ততঃ হাজাবির তাহাই মনে হইল। পদ্মঝি ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইতেই বংশী বলিল–যাক চাকরি তোমার পাকা হয়ে গেল হাজারিদা–দুপুরের পর আমরা চলে গেলে বোধ হয় কৰ্ত্তা-গিন্নীতে পরামর্শ হয়েছে–চলো এক ছিলিম সাজা যাক।
হাজারি হাসিল। সব দিকেই ভালো, কিন্তু পদ্মদিদি কুসুমের কথাটা তুলিল কেন আবার ইহার মধ্যে? ভারি ছোট মন—ছিঃ।
বংশী বাহির হইতে চাপা গলায় ডাকিল–ও হাজারিদা, এসো–-টেনে নাও একটান–
গাঁজায় কষিয়া দম মারিয়া হাজারি আসিয়া আবার রান্নাঘরে বসিতেই হঠাৎ অতসীর মুখখানা তাহার চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিল। দুর্গা-প্রতিমার মত মেয়ে অতসী। কি মনটি চমৎকার। তাহার কাকাবাবু গাঁজা খায়, অতসী যদি দেখিত। ওই জন্যেই তো গ্রামে সে কখনো গাঁজা খায় না। ছেলেপিলের সামনে বড় লজ্জার কথা।
অতসী টাকা দিতে চাহিয়াছে, হোটেল তাহাকে খুলিতে হইবেই। কথাটা একবার বংশীকে বলিবে? বংশী ও রতন ভাল লোক দু-জনেই, তাহাদের বিশ্বাস করা যায়। দুজনেই তাহাকে ভালবাসে।
বংশীকে বলিল–আজকাল রাত্তিরে টক হয়?
–সব দিন হয় না। এখন নেবু সস্তা, নেবু দেওয়া হয়। পয়সায় ছ’সাতটা পাতিনেবু।
-একটা কিছু করে দেখাতে হবে তো? বড়ির টক্ করবো ভেবেছিলাম–
–তুমি ভাবলে কি হবে? পদ্মদিদি পাস করলে তবে তো হাঁড়িতে উঠবে। ভুলে গেলে নাকি আইনকানুন, হাজারি?
হাজারি হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। বলল–বংশী, একটু চা করে খেয়ে নিলে হোত না? আছে তোড়জোড়?
বংশী বলিল–খাবে? আমি দিচ্ছি সব ঠিক করে। ডাল চড়িয়ে গরম জল এই ঘটিতে কেটে রেখো হাতা দিয়ে। চিনি আছে, চা আনিয়ে নিচ্ছি–মনে আছে আর বছর আমাদের চা খাওয়া? আদার রস করেও দেবে এখন–
আধঘণ্টার মধ্যে হাজারি ও বংশী মনের আনন্দে কলাইকরা বাটি করিয়া চা খাইতেছিল। ভূতগত খাটুনির মধ্যেও ইহাতেই আনন্দ কি কম? হাজারি একদৃষ্টে আগুনের দিকে চাহিয়া চিন্তিত মুখে বলিল–যেখানেই যার মন টেকে, বুঝলে বংশী। গোপালনগরে সন্দেবেলা রোজ ওদের মন্দিরে ঠাকুরের শেতল হয়–তার সন্দেশ, ফল কাটা, মুগের ডাল ভিজে খেতে দিত আমাকে। চা আমি করে নিতাম উনুনে। কিন্তু তাতে কি এমন মজা ছিল। একা একা বসে রান্নাঘরে চা আর খাবার খেতাম, মন হু হু করতো। খেয়ে সুখ ছিল না–আজ শুধু চা খাচ্ছি, তাই যেন কত মিষ্টি!
রাত হইয়াছে, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একখানা গাড়ীর আওয়াজ পাইয়া হাজারি বলিল–ও বংশী, কেষ্টনগর এলো যে। ডালে কাঁটা দিয়ে নাও–
সঙ্গে সঙ্গে গোবরা চাকর খাবার ঘর হইতে হাঁকিল–থাড কেলাস দু-থালা–উত্তেজনায় হাজারির সারাদেহ কেমন করিয়া উঠিল। কি কাজের ভিড়, কি লোকজনের হৈ চৈ, কি ব্যস্ততা–ইহার মধ্যেই তো মজা। তা নয়, গোপালনগরের মত পাড়াগাঁ জায়গায় কুণ্ডুদের বৃহৎ নিস্তব্ধ অট্টালিকার মধ্যে নিস্তব্ধ রান্নাঘরের কোণে বসিয়া কড়িকাঠ গুনিতে গুনিতে আর বাড়ীর পিছনের বাগানের তেঁতুল গাছে বাদুড় ঝোলা ডালপালার দিকে চাহিয়া চাহিয়া রান্না করা–সে কি তাহার পোষায়! সে হইল শহরের মানুষ।
.
সংক্রান্তির পরের দিন কুসুমের বাড়ী বেলা প্রায় বারোটার সময় সে নিমন্ত্রণ রাখিতে গেল। বংশী ঠাকুরকে বলিয়া একটু সকাল সকাল হোটেল হইতে বাহির হইল।
কুসুম গোয়ালঘরের নতুন উনুনে আলাদা করিয়া কপির ডালনা রাঁধিতেছে–একখানা কলার পাতায় খানকতক বেগুন ভাজা ও একটা পাথরের খোরায় ছোলার ডাল। শুদ্ধাচারে সব করিতে হইতেছে বলিয়াই পাথরের খোরা ও কলাপাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা–হাজারি দেখিয়া মনে মনে হাসিয়া ভাবিল–কুসুমের কাণ্ড দ্যাখো! থাকি হোটেলে–কত ছোঁয়ালেপা হয়ে যায় তার নেই ঠিক–ও আবার নেয়ে ধুয়ে ধোয়া কাপড় পরে গুরুঠাকুরের মত যত্ন করে রাঁধতে বসেচে।
কুসুম সলজ্জ হাসিয়া বলিল–জ্যাঠামশায়, এখনও হয়নি। একটু দেরি আছে–আমি কিন্তু তরকারি সব রেঁধেছি–আপনি শুধু বসে যাবেন–
হাজারি বলিল–তুমি তরকারি রাঁধলে যে বড়! সে কথা তো ছিল না। আমি তোমার তরকারি খাবো কেন?
–ঠকাতে পারবেন না জ্যাঠামশাই। কোনো তরকারিতে নুন দিইনি। নুন না দিলে খেতে আপনার আপত্তি কি? ভাবলাম আপনি অত বেলায় এসে তরকারি রাঁধবেন সে বড় কষ্ট হবে–লুচি ভাজা আর কি হাঙ্গামা, দেরিই তো হবে তরকারি রাঁধতে। তাই নিয়ে এসে–
–নুন দাওনি। না মা তুমি হাসালে দেখচি। আলুনি তরকারি খাওয়াবে তোমার বাড়ী?
–আর গোয়ালার মেয়ে হয়ে আমি নিজের হাতের রান্না তরকারি খাইয়ে আপনার জাত মেরে দেবো–নরকে পচতে হবে না আমাকে তার জন্যে?
হাজারি হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল! বলিল, দাও ময়দাটা। মেখে নিই ততক্ষণ–
–সব ঠিক আছে জ্যাঠামশাই। কিছু করতে হবে না আপনাকে। আপনি বরং শুধু নেচি কেটে লুচিগুলো বেলে দিন–কপিটা হয়ে গেলেই চাটন রাঁধব–তারপর লুচি ভেজে গরম গরম–ওতে কি জ্যাঠামশায়? ও কি?
হাজারি গায়ের চাদরের ভিতর হইতে একটা শালপাতার ঠোঙা বাহির করিতে করিতে আমতা আমতা করিয়া বলিল–এই কিছু নতুন গুড়ের সন্দেশ–আজ পয়লা তারিখে ও মাসের ক’দিনের মাইনেটা দিলে কি না–তাই ভাবলাম একটুখানি মিষ্টি–
কুসুম রাগ করিয়া বলিল–এ আপনার বড্ড অন্যাই কিন্তু জ্যাঠামশায়। আপনার এই সবে চাকুরির মাইনে–আমার জন্যে খরচ করে সন্দেশ না কিনলে আর চলতো না? আপনার দণ্ড করতে আমার এখানে সেবা করতে বলেছি?…না, এসব কি ছেলেমানুষী আপনার–
হাজারি শালপাতার ঠোঙাটি দাওয়ার প্রান্তে অপরাধীর মত সঙ্কোচের সহিত নামাইয়া রাখিয়া বলিল–আমার কি ইচ্ছে করে না মা, তোমার জন্যে কিছু আনতে? বাবা মেয়েকে খাওয়ায় না বুঝি?
হাজারির রকম-সকম দেখিয়া কুসুমের হাসি পাইলেও সে হাসি চাপিয়া রাগের সুরেই বলিল–না ভারি চটে গিয়েছি–-পয়সা হাতে এলেই অমনি খরচ করার জন্যে হাত সুড়সুড় করে বুঝি? ভারী বড়লোক হয়েছেন বুঝি? ও মাসের সাতটা দিন কাজ করে কত মাইনে পেয়েছেন যে এক ঢাকার সন্দেশ আনলেন অমনি? হাজারি চুপ করিয়া অপ্রতিভ মুখে বসিয়া রহিল।
–আসুন ইদিকে, এই আসনখানায় বসুন, ময়দাটা নেচি করুন এবার—
মা কাহাকে অত বকিতেছে দেখিতে কুসুমের ছেলে মেয়ে কোথা হইতে আসিয়া সামনে উঠানে দাঁড়াইতেই হাজারি ঠোঙা হইতে সন্দেশ লইয়া তাহাদের হাতে কিছু কিছু দিয়া বলিল যাক, নাতিনাতনী তো আগে খাক–মেয়ে খায় না খায় বুঝবে পরে–
পরে কুসুমের দিকে ফিরিয়া বলিল–নাও হাত পাতো, আর রাগ করে না—
কুসুম এবার আর হাসি চাপিয়া রাখিতে পারিল না। বলিল–আমি রাঁধতে রাঁধতে খাব?
–কেন আলগোছে?
–না।
–কেন?
–আমি বুড়ো মাগী, ভোগের আগে পেসাদ পেয়ে বসে থাকি আর কি!
হাজারি বুঝিল তাহার খাওয়া না হইয়া গেলে কুসুম কিছুই খাইবে না। সে বিনা বাক্য ব্যয়ে লুচির ময়দা লইয়া বসিয়া গেল।……
কুসম বলিল–হোটেল খুলবার কি করলেন?
–গোপাল ঘোষের তামাকের দোকানের পাশে ওই ঘরখানা ন’টাকা ভাড়া বলে। দেখেচ ঘরখানা?
কুসুম উৎফুল্ল হইয়া বলিল–কবে খুলবেন?
–সামনের মাসে। টাকা দেবে তো?
কুসুম গলার সুর নীচু করিয়া বলিল–আস্তে আস্তে। কেউ শুনবে–
–তোমার শাশুড়ী কই?
–আমি যেতে পারলাম না বাইরে, তাই দুধ নিয়ে বেরিয়েছে–এল বলে।
–বাত সেরেছে?
–মরচের মাদুলী নিয়ে এখন ভাল আছে। আগে মধ্যে দিনকতক পঙ্গু হয়ে পড়েছিল– তার চেয়ে ঢের ভাল। আপনার জায়গা করে দিই–ওগুলো ভেজে ফেলুন–গরম গরম দেবো–
হাজারি খাইতে বসিল। কুসুম কাছে বসিয়া কখনও লুচি, কখনও তরকারি দিতে দিতে বলিল–আপনি তরকারিতে বেশী করে নুন মেখে খান–
–রান্না চমৎকার হয়েছে মা–
–থাক আপনার আর–
–হোটেল যেদিন খুলবো, সেদিন তোমায় নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াবো–
–না। ও সব করতে দেবে না। বুঝেসুঝে চলতে হবে না? টাকা নিয়ে ভূতোনন্দি কাণ্ড করবেন?
–কি করবো না! তুমি চেন না আমায়।
–আমার জন্যে এক পয়সা খরচ করতে পাবেন না আপনি বলে দিচ্ছি। তাহলে আপনার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেবো–ঠিক।
.
পনেরো দিন পরে হাজারি গ্রামে সংসারের খরচপত্র দিতে গেল। বৈকালে হরিবাবুর বাড়ী বেড়াইতে গিয়া দেখিল হরিবাবু বৈঠকখানায় আরও দুটি অপরিচিত ভদ্রলোকের সহিত বসিয়া কথা বলিতেছেন। তাহাকে দেখিয়া বলিলেন–এই যে এস হাজারি, বসো বসো। এরা এসেছেন কলকাতা থেকে অতসীকে দেখতে–তুমি এসেছ ভালই হয়েছে। রাত্রে আমার এখানে খেও আজ–
অতসীর তাহা হইলে বিবাহ? যদি ইতিমধ্যে তার বিবাহ হইয়া যায়, সে শশুরবাড়ী চলিয়া গেলে টাকাকড়ির ব্যাপার চাপা পড়িয়া যাইবে। হাজারি একটু দমিয়া গেল।
আধঘণ্টা পরে হরিবাবু বলিলেন–আমি সন্ধ্যাহ্নিকটা সেরে আসি–আপনাদের ততক্ষণ চা দিয়ে যাক।
ভদ্রলোক দুইজন বলিলেন–তিনি ফিরিয়া আসিলে একত্রে চা খাওয়া যাইবে। তাঁহারা ততক্ষণ একবার নদীর ধারে বেড়াইয়া আসিবেন।
অল্পক্ষণ পরেই অতসী আসিয়া বৈঠকখানায় বাড়ীর ভিতরের দিকের দরজা হইতে একবার সন্তর্পণে উঁকি মারিয়া ঘরের মধ্যে ঢুকিল।
–এসো, এসো মা। ভাল আছ?
–আপনি ভাল আছেন কাকাবাবু? গোপালনগর থেকে আসছেন?
–না মা। আমি গোপালনগরে আর নেই তো? রাণাঘাটের সেই হোটেলে কাজ আবার নিয়েছি যে। ওরা ডেকে বহাল করলে।
–করবে না? আপনার মত লোক পাবে কোথায়? আমায় এবার একটা কিছু শিখিয়ে দিয়ে যান, কাকাবাবু। আপনার নাম করবো চিরকাল।
–মা, এ হাতেকলমের জিনিস। বলে দিলে তো হবে না, দেখিয়ে দিতে হবে। তার সুবিধে হবে কি? আমি এর আগেও তোমাকে তো বলেছি একথা।
–কাল আপনার বাড়ী যাবো এখন। টেঁপিকে বলবেন। তাকে নিয়ে এলেন না কেন? তাকে নিয়ে আসবেন, সেও আমাদের এখানে রাত্রে খাবে।
অতসী একটু পরেই চলিয়া গেল, কারণ আগন্তুক ভদ্রলোক দুটির গলার আওয়াজ পাওয়া গেল বাড়ীর বাহিরে রাস্তার দিকে।
পরদিন সকালে টেঁপির মা উঠান ঝাঁট দিতেছে এমন সময়ে অতসী বাড়ীর উঠানের মাচাতলা হইতে ডাকিল–টেঁপি, ও টেঁপি–
টেঁপির মা তাড়াতাড়ি হাতের ঝাঁটা ফেলিয়া সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। জমিদারের মেয়ে অতসী গ্রামের কাহারও বাড়ী বড় একটা যায় না, তাহাদের মত গরীব লোকের বাড়ী যে যাতায়াত করিতেছে–ইহা ভাগ্যের কথাও বটে, গৰ্ব্ব করিয়া লোকের কাছে পরিচয় দিবার মত কথাও বটে।
হাসিয়া বলিল–টেঁপি বাসন নিয়ে পুকুরে গিয়েছে–এসো বসো মা।
–কাকাবাবু কোথায়?
হাজারি কাল রাত্রে অতসীদের বাড়ী গুরুতর আহার করিলেও আজ হাঁটিয়া তিন ক্রোশ পথ রাণাঘাট যাইবে, এই ওজুহাতে বড় এক বাটি চালভাজা নুন লঙ্কা সহযোগে ঘরের ওদিকে দাওয়ায় বসিয়া চৰ্বণ করিতেছিল–অতসী পাছে এদিকে আসিয়া পড়ে এবং তাহার চালভাজা খাওয়া দেখিয়া ফেলে সেই ভয়ে বাটিটা সে তাড়াতাড়ি কোঁচার কাপড় দিয়া চাপা দিল।
অতসী আসিয়া বলিল–কই কাকাবাবু কোন্ দিকে বসে?
ওঃ, খুব সময়ে চালভাজার বাটি ঢাকিয়া ফেলিয়াছে সে।…অতসী তাহাকে রাক্ষস ভাবিত–রাত্রের ওই ভীষণ খাওয়ার পরে সকাল হইতে না হইতেই–
–এই যে মা–কি মনে করে এত সকালে?
–আপনি আমাদের বাড়ী দুপুরে খাবেন তাই বলতে বলে দিলেন বাবা–
–না মা আমি এখুনি বেরুচ্ছি রাণাঘাট–ছুটি তো নেই–আর কাল রাতে যে খাওয়া হয়েছে তাতে–
–তবে টেঁপি আর খুড়ীমা খাবেন–ওঁদের নেমন্তন্ন–আমি বলে যাচ্ছি ওঁদের। বলিয়া অতসী দাওয়ায় উঠিয়া নিজেই পিড়ি পাতিয়া বসিয়া গেল দেখিয়া হাজারি প্রমাদ গণিল। একে সময় নাই, দশটার মধ্যে হোটেলে পৌঁছিয়া রান্না চাপাইতে হইবে। এক বাটি চালভাজা চিবাইতেও তো সময় লাগে! হতভাগা মেয়েটা সব মাটি করিল!…বাটিটা লুকাইয়া বসিয়া থাকাই বা কতক্ষণ চলে?
অতসী বলিল–কাকাবাবু, আমার সঙ্গে যদি আপনার আর দেখা না হয়?
–কেন দেখা হবে না?
অতসী লাজুক মুখে বলিল–ধরুন যদি আমি–এখান থেকে যদি–
–বুঝেছি মা, ভালই তো, আনন্দের কথাই তো।
–আপনারা তাড়াতে পারলে বাঁচেন তা জানিই। মার মুখেও সেই এক কথা, বাবার মুখেও সেই এক কথা। সে যা হয় হবে আমি তা বলচি নে। আমি বলচি আপনি আজ থেকে যান, আমি যে কথা দিয়েছিলাম আপনার কাছে–সেই টাকা, মনে আছে তো? আপনাকে তা আজ দিয়ে দিই। যদি বলেন তো এখুনি আনি। আমার মনের ভার কমে যায়, তারপর যেখানে আপনারা আমায় বিদেয় করে দেন দেবেন
–ওকি মা। বিদেয় তোমায় কেউ করচে না। অমন কথা বলতে নেই।… কিন্তু টাকা নিতান্তই দেবে তাহলে?
–যখন বলেছি, তখন আপনি কি ভেবেছিলেন কাকাবাবু আমি মিথ্যে বলছি?
–তা ভাবিনি–-আচ্ছা ধরো এমন তো হতে পারে, আমি হোটেল খুলে লোকসান দিলাম, তখন তোমার টাকা তো শোধ দিতে পারবো না?
–আমি তো বলেছি, না দিতে পারেন তাই কি?…আপনি বসুন, আমি টাকা নিয়ে আসি।
আধঘণ্টার মধ্যে অতসী ফিরল। সন্তর্পণে আঁচলের গেরো খুলিয়া তাহাকে দুইশত টাকার খুচরা নোট গুনিয়া দিতে দিতে বলল–এই রইল। আমার টাকা ফেরত দিতে হবে না। টেঁপির বিয়ে দেবেন সে টাকায়। আমি যাই, লুকিয়ে চলে এসেছি, বাবা খুঁজবেন আবার।
.
রাণাঘাট যাইতে সারাপথ হাজারি অন্যমনস্কভাবে চলিল…
বেশ মেয়ে অতসী, ভগবান ওর ভাল করুন। তাহার মন বলিতেছে ওর হাত দিয়া যে টাকা আসিয়াছে–সে টাকায় ব্যবসা খুলিলে লোকসান খাইবে না। স্বয়ং লক্ষ্মী যেন তাহার হাতে আসিয়া টাকা গুঁজিয়া দিয়া গেলেন।…
হোটেলে পৌঁছিয়া সে দেখিল রান্নাঘরে বংশী ঠাকুর ডাল চাপাইয়া একা বসিয়া। তাহাকে দেখিয়া বলিল–আরে এসো হাজারি-দা, বড্ড বেলা করলে যে! বড় ডেকে ভাতটা চাপাও– নেবে নাকি একটু দম দিয়ে?
–তা নাও না? সাজো গিয়ে–আমি ডাল দেখচি—
একটু পরে গাঁজার কলিকাটি হাজারির হাতে দিয়া বংশী বলিল–একটা বড় কাজেয় বায়না এসেছে, নেবে? আন্দুলের ঘোষেদের বাড়ী রাস হবে-সাতদিনের ঠিকে কাজ। বঁদে ভিয়েন, সন্দেশ ভিয়েন, রান্না এই সব। দু’টাকা মজুরি দিন–খোরাকি বাদে।
হাজারি বলিল–বংশী একটা কথা বলি তোমায়। আমি হোটেল খুলছি রাণাঘাটের বাজারে। কাউকে বোলো না কথাটা। তোমাকে আসতে হবে আমার হোটেলে।
কথাটা ঠিক শুনিয়াছে বলিয়া বংশীর যেন মনে হইল না। সে অবাক হইয়া উহার দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিল–হোটেল খুলবে? তুমি।?
–হাঁ, আমি না কে? তোমার বেহাই?
বংশী বলিল–কি পাগলের মত বলছ হাজারি-দা? কলকে রাখো, আর টান দিও না। রেলবাজারে একটা হোটেল খুলতে কত টাকা লাগে তুমি জানো?
–কত টাকা বলে তোমার মনে হয়?
–পাঁচশো টাকার কম নয়।
–চারশোতে হয় না?
–আপাততঃ চলবে–কিন্তু কে তোমায় চারশো টাকা–
উত্তরে কোঁচার কাপড়ের গেরো খুলিয়া হাজারি বংশীকে নোটের তাড়া দেখাইয়া বলিল এই দেখছো তো দুশো টাকা এতে আছে। যোগাড় করে এনেছি। এখন লাগো গাছকোমর বেঁধে–তোমার অংশ থাকবে যদি প্রাণপণে চালাতে পারো–তোমায় ফাঁকি দেবো না। আজ থেকেই বাড়ী দেখ–পনেরো টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেবো–আর দুশো টাকাও যোগাড় আছে।
বংশী ঠাকুর মুখের মধ্যে একটা অস্পষ্ট শব্দ কবিয়া বলিল–ভ্যালা আমার মানিক রে। হাজারি-দা, এসো তোমায় কোলে করে নাচি। এক অস্ত্রে বেচু চক্কত্তি বধ, পদ্মদিদি বধ, যদু বাঁড়ুয্যে বধ–
–চুপ, চুপ,–চলো ছুটির পর দুজনে ঘর দেখা যাক। তামাকের দোকানের পাশে ওই ঘরখানা ন’টাকা ভাড়া বলে। জায়গাটা ভাল। আচ্ছা, বাজার কেমন, বংশী?
–বাজার ভালো। নতুন আলু সস্তা হোলে আরও সুবিধে হবে। নতুন আল উঠলো বলে। কেবল মাছটা এখনও আক্রা–
–ঘর দেখার পর একটা ফর্দ করে ফেলা যাক এসো। থালা বাসন, বালতি, জালা, শিলনোড়া, বঁটি–
–আজ খাওয়াও হাজারি-দা। মাইরি, একটা কাজের-মত কাজ করলে। আচ্ছা টাকা পেলে কোথায় বল না?
–পরে বলব সব। তার ঢের সময় আছে। এখন আগেকার কাজ আগে করো।
পদ্মঝি হঠাৎ রান্নাঘরে ঢুকিয়া বলিল–বেশ তো দুটিতে বসে খোসগল্প চলছে। উদিকে মাছ ডাঙায়, তরকারি ডাঙায়–এখুনি লোক খেতে আসবে—
গোবরা চাকর হাঁকিল–থাড কেলাস একথালা–
পদ্মঝি বলিল—ওই! এলো তো? এখন মাছ ভাজা পৰ্যন্ত হোল না যে তাই দিয়ে ভাত দেবে। এদিকে গাঁজার ধোঁয়ায় তো রান্নাঘর অন্ধকার–সব তাড়াতে হবে তবে হোটেল চলবে। কর্তার খেয়েদেয়ে নেই কাজ তাই যত হাড়হাভাতে উনপাঁজুরে গাঁজাখোর আবার জুটিয়ে এনে হাতাবেড়ি হাতে দিয়েছে–
বংশী ঠাকুর বলিল–রাগ করো কেন পদ্মদিদি, কাল রাতের বাসি মাছ ভেজে রেখেছি– থাড কেলাসের খদ্দের যারা সকালে খায়, তাই চিরকাল খেয়ে আসছে।
হাজারি বংশীর দিকে চাহিয়া বলিল–না বংশী দই এনে দাও সেও ভাল। বাসি মাছ দিও না–ওতে নাম খারাপ হয়ে যায়–ও থাক।
পদ্মঝি ঝাঁজের সহিত বলিল–দইয়ের পয়সা তুমি দিও তবে ঠাকুর। হোটেল থেকে দেওয়া হবে না। তুমি বেলা করে বাড়ী থেকে এলে বলেই মাছ হোল না। বংশী ঠাকুর একা কত দিকে যাবে?
হাজারি চুপ করিয়া রহিল।
হোটেলের ছুটির পর হাজারি চূর্ণীঘাটে যাইবার পথে রাধাবল্লভতলায় বার বার নমস্কার করিয়া গেল। ঠাকুর রাধাবল্লভ এতদিন পরে যেন মুখ তুলিয়া চাহিয়াছেন। তাহার সেই প্রিয় গাছটির তলায় বসিয়া হাজারি কত কি কথা ভাবিতে লাগিল। অতসী টাকা দিয়া দিয়াছে, তাহার বাড়ী বহিয়া আসিয়া টাকা দিয়া গিয়াছে–হয়তো সে হোটেল খুলিতে দেরি করিত, কিন্তু আর দেরি করা চলিবে না। অতসী-মায়ের কাছে কথা দিয়াছে, সেকথা রাখিতে হইবেই তাহাকে।
রাণাঘাট বেশ লাগে তাহার, বেচুবাবুর হোটেল তো একমাত্র জায়গা যেখানে তাহার মন ভাল থাকে, জীবনটা শান্তিতে কাটাইতেছি বলিয়া মনে হয়। এই রাণাঘাটের রেলবাজার ছাড়িয়া সে কোথাও যাইতে পারিবে না। এখানেই হোটেল খুলিবে, অন্যত্র নয়।
বৈকালের দিকে সে কুসুমের বাড়ী গেল। কুসুম বলিল–আজকে এলেন? আসুন, বসুন।
হাজারি হাসিমুখে বলিল–একটা জিনিস রাখতে হবে মা।
–কি?
হাজারি পেট-কোঁচড় হইতে দু’শো টাকার নোট বাহির করিয়া বলিল–রেখে দাও।
কুসুম অবাক হইয়া বলিল–কোথায় পেলেন?
–ভগবান দিয়েছেন। হোটেল খুলবার রেস্ত জুটিয়ে দিয়েছেন এতদিন পরে–এই দু’শো, আর তোমার দু’শো, সামনের মাসেই খুলবো ভাবছি।
–এ টাকা কে দিলে জ্যাঠামশায় বললেন না আমায়?
–তোমার মত আর একটি মা।
–আমি চিনিনে?
–আমাদের গাঁয়ের বাবুর মেয়ে অতসী। বলবো সে সব কথা আর একদিন, আজ বেলা যাচ্ছে, আমি গিয়ে ডেক চাপাই গে–টাকা রেখে দাও এখন।
হোটেলে আসিয়া বংশীকে বলিল–তোমার ভাগ্নেটিকে চিঠি লিখে আনাও বংশী। তাকে গদিতে বসতে হবে। লেখাপড়ার কাজ তো আমায় বা তোমায় দিয়ে হবে না।
বংশী বলিল–সে তো বসেই আছে হাজারি-দা। একটা কাজ পেলে বেঁচে যায়। আমি আজই লিখছি আর ঘর আমি দেখে এসেছি–তামাকের দোকানের পাশে ঘরটা ভাল–ওইটেই নাও। লেগে যাও দুর্গা বলে।