দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সাংখ্যযোগ
দ্বিতীয় অধ্যায়
সাংখ্য যোগ
সঞ্জয় ঊবাচ
তম্ তথা কৃপয়া আবিষ্টম অশ্রুপুর্ন আকুল ঈক্ষনম্ ।
বিষীদন্তম ইদম্ বাক্যম্ উবাচ মধুসুদনঃ ॥১
অর্থ-সঞ্জয় বললেন অর্জুনকে এইভাবে অনুতপ্ত ব্যাকুল এবং অশ্রুশিক্ত দেখে কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসুদন শ্রীকৃষ্ণ বন্ধুভাবে অতি মিষ্টি স্বরে এই কথাগুলি বললেন।
ভগবান উবাচ
কুতঃ ত্বা কশ্মলম ইদম্ বিষমে সমুপস্থিতম্ ।
অনার্য্য জুষ্টম্ অস্বর্গ্যম্ অকীর্তি করম্ অর্জুনঃ ॥২
অর্থ-ভগবান বললেন প্রিয় অর্জুন এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধেস্থলে যারা প্রকৃত জীবনের মুল্য বোঝেনা সে সব অনার্যের মত শোকানল তোমার হৃদয় কিভাবে প্রজ্জলিত হল। এই রকমের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নিত করবে না। পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট হবে।
ক্লৈব্যম মা স্ম গমঃ পার্থ ন এতত্ ত্বয়ি উপপদ্যতে ।
ক্ষুদ্রম্ হৃদয় দৌর্বল্যম্ ত্যাক্তা উত্তিষ্ঠ পরম তপ ॥৩
অর্থ-হে পার্থ এই অসন্মান জনক ক্লীবত্তের বশোবর্তি হয়োনা এই ধরনের আচরন তোমার পক্ষে অনুচিত্। হেপরন্তপ হৃদয়ের দুর্বলতা পরিত্যাগ করে উঠে দাড়াও।
অর্জুন উবাচ
কথম ভীস্মম্ অহম্ সংখ্যে দ্রোনম্ চ মধুসুদন ।
ইষুভিঃ প্রতিযোত্স্যামি পূজা অর্হৌ অরিসুদন ॥৪
অর্থ-অর্জুন বললেন হে মধুসুদন এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্ম এবং দ্রোনের মত পরম পূজনীয় ব্যাক্তিদের কেমন করে আমি বানের দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
গুরুন্ অহত্বা হি মহা-অনুভাবান
শ্রেয়ঃ ভোক্তুম্ ভৈক্ষ্যম্ অপি ইহ লোকে ।
হত্বা অর্থ কামান্ তু গুরূন ইহ এব
ভূঞ্জীয় ভোগান রুধীর প্রদিগ্ধান্ ॥৫
অর্থ-আমার মহানুভব শিক্ষাগুরুদের জীবন হানি করে এই জগত্ ভোগ করার থেকে বরং ভিক্ষাকরে জীবন ধারন করা ভাল।তারা জড়জাগতিক লোভার্থী হলেও আমার গুরুজন। তাদের হত্যা করা হলে যুদ্ধলব্ধ ভোগ যে রক্ত মাখা হবে।
ন চ এতত্ বিদ্মঃ কতরত্ ন গরিয়ঃ
যত্ বা জয়েম যদি বা নঃ জয়েয়ু ।
যান এব হত্বা ন জিজী বিষামঃ
তে অবস্থিতাঃ প্রমুখে ধার্তরাষ্ট্রাঃ ॥৬
অর্থ-তাদের জয়করা ভাল না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া ভাল। তাও আমি বুজতে পারছি না।এই রনাঙ্গনে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ধৃতরাষ্টের যে পুত্রেরা তাদের হত্যা করা হলে আমাদের আর বেচে থাকতে ইচ্ছা করবে না।
কার্পন্য দোশ উপহত স্বভাবঃ
পৃচ্ছামি ত্বাম ধর্ম সমূঢ় চেতাঃ ।
যত্ শ্রেয় স্যাত্ নিশ্চিতম্ ব্রুহি তত্ মে
শিষ্যঃ তে অহম্ শাধিমাম তাম প্রপন্নম ॥৭
অর্থ-কার্পন্য জনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়েছি আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি,এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর। এখন আমি তোমার শিষ্য, সর্বত ভাবে তোমার শ্বরনাগত, দয়াকরে তুমি আমাকে শিক্ষা দাও।
ন হি প্রপশ্যামি মম অপনুদ্যাত্
যত্ শোকম উচ্ছোষনম্ ইন্দ্রিয়ানাম্ ।
অবাপ্য ভূমৌ অসপত্বম ঋদ্ধম্
রাজ্যম্ সুরানাম্ অপি চ অধিপত্যম্ ॥৮
অর্থ-আমার ইন্দ্রিয় গুলিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যে শোক তা যে কিভাবে আমি দুর করব তা আমি জানি না।স্বর্গের দেবতাদের মত আধিপত্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না।
সঞ্জয় উবাচ
এবম্ উক্তা হৃষীকেশম্ গুড়াকেশঃ পরন্তপঃ ।
ন য্যোত্স্য ইতি গোবিন্দম্ উক্তা তুঞ্চিম বভূবহ ॥৯
অর্থ-সঞ্জয় বললেন এই ভাবে তার মনোভাব ব্যাক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন,হে গবিন্দ,আমি যুদ্ধ করব না ,এই বলে তিনি মৌন হলেন।
তম্ উবাচ হৃষীকেশঃ প্রহসন্ ইব ভারত ॥
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে বিষীদন্তম্ ইদম্ বচঃ ॥১০॥
অর্থ-হে ভারত বংশীয় ধৃতরাষ্ট্র সে সময় স্মিত হেসে শ্রীকৃষ্ণ উভয় পক্ষেও সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদ গ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন।
অশোচ্যান অন্বশোচঃ ত্বম প্রজ্ঞাবাদান চ ভাষসে ।
গত অসুন অগত অসুন চ ন অনুশোচন্তি পন্ডিতাঃ ॥১১
অর্থ-ভগবান বললেন তুমি প্রজ্ঞের মত কথা বলছ অথচ যে বিষয়ে শোককরা উচিত্ নয় সে বিষয় শোক করছ। যারা যথার্থই পন্ডিত তারা কখনো জিবীত বা মৃত কারোর জন্য শোক করে না।
ন তু এব অহম্ জাতু ন আসম ন ত্বম্ ইমে জনঅধিপা ।
ন চ এব ভবিষ্যাম্ সর্বে বয়ম্ অতঃ পরম্ ॥১২
অর্থ-এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি,তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও দেহী কখনো আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না ।
দেহীনঃ অস্মিন যথা দেহে কৌমারম্ যৌবনম্ জরা ।
তথা দেহান্তর প্রাপ্তিঃ ধীরঃ তত্র ন মুহ্যতি ॥১৩
অর্থ-দেহী যে ভাবে কৌমার যৌবন এবং জরার মাধ্যমে দেহের রুপ পরিবর্তন করে চলে মৃত্যু কালে ঐ দেহী এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহন-রীত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পন্ডিতেরা কখনো এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হয় না ।
মাত্রা স্পর্শাঃ তু কৌন্তেয় শীত উষ্ণ সুখ দুঃখদাঃ ।
আগম অপায়িনঃ অনিত্যাঃ তান তিতিক্ষস্য ভারত ॥১৪
অর্থ-হে কৌন্তয় ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্ত সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় সেগুলি যেন শীত এবং গৃস্ম ঋতুর গমনা গমনের মত। হে ভরত কুল প্রদীপ সেই ইন্দ্রিযাত অনুভূতির দ্বরা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলির সহ্য করার চেষ্টা কর।
যম হি ন ব্যাথয়ন্তি এতে পুরুষম্ পুরুষ ঋৃষভ ।
সম দুঃখ সুখম্ ধীরম্ সঃ অমৃতত্বায় কল্পতে ॥১৫
অর্থ-হে পুরুষ শ্রেষ্ট যে জ্ঞানি ব্যক্তি সুখ ও দুঃখ শীত উষ্ণ আদিদন্ধে বিচলিত হন না তিনি অমৃত তত্তের প্রকৃত অধিকারি হন।
ন অসতঃ বিদ্যতে ভাবঃ ন অভাবঃ বিদ্যতে সতঃ ।
উভয়ো অপি দৃষ্টাঃ অন্তঃ তু অনয়োঃ তত্ত দর্শিভিঃ ॥১৬
অর্থ-যারা তত্তদ্রষ্টা তারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্ত জড়বস্তুর স্থয়িত্ব নেই এবং নিত্তবস্তুর আত্মার কখন বিনাশ হয় না। তত্ত্ব দ্রষ্টাগন উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরুপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে।
অবিনাশি তু তত্ বিদ্ধি যেন সর্বম্ ইদম্ ততম্ ।
বিনাশম অব্যয়স্য তস্য ন কশ্চিত্ কর্তুম্ অর্হতি ॥১৭
অর্থ-সমস্ত শরিরে পরিব্যপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা যেনেরেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
অন্তবন্তঃ ইমে দেহাঃ নিত্যস্য উক্তাঃ শরীরিণ ।
অনাশিনঃ অপ্রমেয়স্য তস্মাত্ যুধ্যস্ব ভারত ॥১৮
অর্থ-এই সমস্ত শরির অনিত্ত কিন্তু শরীরী আত্মা অবিনাশী। সেই আত্মার অতি সুক্ষ্মত্ব হেতু অপরিমেয়। অতএব হে ভারত তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।
যঃ এনম্ বেত্তি হন্তারম্ যঃ চ এনম মন্যতে হতম্ ।
উভৌ তৌ ন বিজানীত ন অয়ম্ হন্তি ন হন্যতে ॥১৯
অর্থ-যিনি জীব সত্তাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন তারা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরুপ জানেনা। কারন আত্মা কাউকে হত্মা করে না বা কারোর দ্বারা নিহত হন না।
ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিত্
ন অয়ম্ ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ।
অজঃ নিত্য শাশ্বতঃ অয়ম্ পুরানঃ
ন হন্যতে হন্যমানে শরিরে ॥২০
অর্থ-আত্মার কখনো জন্ম হয়না বা মৃত্যু হয় না। অথবা পুনঃ পুনঃ তার উত্পত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্ত এবং নবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্ম কখনো বিনষ্ট হয় না।
বেদ অবিনাশিনম্ নিত্যম যঃ এনম্ অজম্ অব্যয়ম্।
কথম্ সঃ পুরুষঃ পার্থকম্ ঘাতয়তি হন্তিকম্ ॥২১
অর্থ-হেপার্থ যিনি এই আত্মাকে অবিনাশি, নিত্য, শাশ্বত, জন্ম-রহিত ও অক্ষয় বলে জানেন তিনি ভাবে কাউকে বধ বা হত্যা করতে পারে।
বাসাংসি জীর্নানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্নাতি নরঃ অপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণানি
অন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥২২
অর্থ-মানুষ যেমন জীর্ন বস্ত্র পরিত্যাগ করে নুতন বস্ত্র পরিধান করে দেহীও তেমনই জীর্ন শরির ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারন করে।
ন এনম ছিন্দন্তি শাস্ত্রানি ন এনম্ দহতী পাবকঃ ।
ন চ এনম ক্লেদয়ন্তি আপঃ ন শোষয়তি মারুতঃ ॥২৩
অর্থ-আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না আগুনে পোড়ান যায় না জলে ভেজান যায় না অথবা হাওয়ায় শুকানোও যায় না।
অচ্ছেদ্যঃ অয়ম অদাহ্যঃ অয়ম অক্লেদ্যঃ অশোষ্যঃ এব চ ।
নিত্য সর্বগত সর্ব-গতঃ স্থাণুঃ অচলঃ অয়ম্ সনাতনঃ ॥২৪
অর্থ-এই আত্মা অচ্ছেদ্য অদাহ্য অক্লেদ্য এবং অশোষ্য। তিনি চিরস্থায়ি সর্ব ব্যপ্ত অপরিবর্তনীয় অচল এবং সনাতন।
অব্যক্তঃ অয়ম অচিন্ত্যঃ অয়ম অবিকার্যঃ অয়ম উচ্যতে ।
তস্মাত্ এবম বিদিত্বা এনম ন অনুশোচিতুম্ অর্হসি ॥২৫
অর্থ-এই আত্মা অব্যক্ত অচিন্ত ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরুপ অবগত হয়ে তুমি দেহীদের প্রতি শোক পরিত্যাগ কর।
অথ চ এনম্ নিত্যজাতম্ নিত্যম্ বা মন্যসে মৃতম্ ।
তথাপি ত্বম মহাবাহো ন এনম শোচিতুম অর্হসি ॥২৬
অর্থ-হে মহাবাহো আর তুমি যদি মনে কর যে আত্মার বার বার জন্ম হয় বা মৃত্যু হয় তা হলেও তোমার শোক করার কোন কারন নেই।
জাতস্য হি ধ্রুবঃ মৃত্যু ধ্রুবম্ জন্ম মৃতস্য চ ।
তস্মাত্ অপরিহার্যে অর্থে ন ত্বম্ শোচিতুম অর্হসি ॥২৭
অর্থ-যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবি এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত্ নয়।
অব্যক্ত-আদীনি ভূতানি ব্যক্ত মধ্যানি ভারত ।
অব্যক্ত নিধনানি এব তত্র কা পরিবেদনা ॥২৮
অর্থ-হে ভারত সমস্ত জীব উত্পন্ন হওয়র আগে অপ্রকাশিত ছিল। তাদের স্থিতি কালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং সেজন্য শোক করার কি কারন।
আশ্চর্য্য বত্ পশ্যতি কশ্চিত্ এনম্
আশ্চর্য-বত্ বদতি তথা এব চ অন্যঃ ।
আশ্চর্য-বত্ চ এনম্ অন্য শৃনোতি
শ্রুত্বা অপি এনম্ বেদ ন চ এব কশ্চিত্ ॥২৯
অর্থ-কেউ আত্মাকে আশ্চার্যবত্ দর্শন করেন,কেউ আশ্চর্য ভাবে বর্ননা করেন আবার কেউ আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবন করেন আর কেউ জেনে শুনেও বুজতে পারে না।
দেহী নিত্যম অবধ্যঃ অয়ম্ দেহে সর্বস্য ভারত ॥
তস্মাত্ সর্বানি ভূতানি ন ত্বম শোচিতুম অর্হসি ॥৩০॥
অর্থ-হে ভারত প্রানিদের দেহে অবস্তিত আত্মা সর্বদাই অবধ্য।সেজন্য কোন প্রাণীর দেহ ত্যাগে তোমার শোক করা উচিৎ নয়।
স্বধর্মম অপি চ আবেক্ষ্য বিকম্পিতুম অর্হসি ।
ধর্মাত্ হি যুদ্ধাত্ শ্রেয়ঃ অন্যাত্ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে ॥৩১
অর্থ-ক্ষত্রিয় রুপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করেও তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত্ নয়। কারন ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করা থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নাই।
যদৃচ্ছয়া চ উপপন্নম স্বর্গদ্বারম্ ন করিষ্যসি ।
সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধম্ ঈদৃশম্ ॥৩২
অর্থ-হে পার্থ স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তারা সুখী হন।
অথ চেত্ ত্বম ইমম ধর্মম সংগ্রামম ন করিষসি ।
ততঃ স্বধর্মম কীর্তিম্ চ হিত্বা পাপম্ অবাস্প্যসি ॥৩৩
অর্থ-কিন্তু তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তা হলে তোমার স্বীয়কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে।
অকীর্তিম্ চ অপি ভূতানি কথয়িষ্যন্তি তে অব্যয়ম্ ।
সম্ভাবিতস্য চ অকীর্তিঃ মরণাত্ অতিরিচ্যতে ॥৩৪
অর্থ-সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষে মৃত্যু অপেক্ষাও অত্যন্ত ক্ষতিকর এই অমর্যাদা।
ভয়াত্ রনাত্ উপতরম্ মত্স্যন্তে ত্বাম্ মহাঃরথাঃ ।
যেষাম চ ত্বম বহুমতঃ ভূত্বা যাস্যসি লাঘবম্ ॥৩৫
অর্থ-সমস্ত মহারথীরা মনে করেন যে তুমি ভয়পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানিত ছিলে তারা তোমাকে তুচ্ছ তাছিল্য জ্ঞান করবে।
অবাচ্য বাদান বহুন বদিষ্যন্তি তব অহিত্যাঃ ।
নিন্দন্তঃ তব সামর্থন ততঃ দুঃখতরম্ নু কিম্ ॥৩৬
অর্থ-তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখকর তোমার পক্ষে কি হতে পারে।
হতঃ বা প্রাপ্সসি স্বর্গম্ জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম ।
তস্মাত্ উত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃত নিশ্চয়ঃ ॥৩৭
অর্থ-হে কুন্তীপুত্র এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্র্গ লাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্য সুখ ভোগ করবে অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।
সুখ দুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ ।
ততঃ যুদ্ধায় যুজ্যস্ব ন এবম্ পাপম্ অবাপ্সসি ॥৩৮
অর্থ-সুখ-দুঃখ লাভ ক্ষতি জয় পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে যুদ্ধ করলে তোমাকে পাপ ভোগী হতে হবে না।
এষা তে অবিহিতা সাংখ্যে বুদ্ধিঃ যোগে তু ইমাম্ শৃনু ।
বুদ্ধাঃ যুক্তঃ যয়া পার্থ কর্মবন্ধম্ প্রহাসসি ॥৩৯
অর্থ-হে পার্থ আমি তোমাকে সাংখ্য যোগের কথা বললাম এখন ভক্তি যোগ সম্বন্ধিনী বুদ্ধির কথা শ্রবন কর যার প্রভাবে তুমি কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্ত হবে।
ন ইহ অভিক্রম্ নাশ অস্তি প্রত্যবায়ঃ ন বিদ্যতে ।
স্বল্পম্ অপি অস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতঃ ভয়াত্ ॥৪০
অর্থ-ভক্তি য়োগের অনুশিলন কখনো ব্যর্থ হয় না এবং তার কোন ক্ষয় নাই। তার সল্প অনুষ্ঠান ও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররুপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
ব্যবসায়াত্মিকা বূদ্ধিঃ এক ইহ কুরু নন্দন ।
বহু শাখা হি অনন্তাঃ চ বুদ্ধয়ঃ অব্যবসায়িনাম ॥৪১
অর্থ-যারা এই পথ অবলম্বন করছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরু নন্দন অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহুশাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী।
যামিমাম পুস্পিতাম্ বাচম্ প্রবদন্তি অবিপশ্চিতঃ ।
বেদ বাদরতাঃ পার্থ ন অনাত্ অস্তি ইতি বাদিনঃ ॥৪২
কামাত্মানঃ সর্গপরাঃ জন্মকর্ম ফল প্রদাম ।
ক্রিয়াবিশেষ বহুলাম্ ভোগ ঐশ্বর্য্য গতিম প্রতি ॥৪৩
অর্থ-বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের পুস্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে সর্গ সুখ ভোগ উচ্চকুলে জন্ম ক্ষমতা লাভ ইত্যাদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয় সুখভোগ এবংঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে তার উর্ধ্বে আর কেউ নাই।
ভোগ ঐশ্বর্য প্রশক্তানাম তয়া অপহৃত চেতসাম্।
ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধি সমাধৌ ন বিধিয়তে ॥৪৪
অর্থ-যারা ভোগ ঐশ্বর্য্য সুখে আসক্ত সেই সমস্ত বিবেক বর্জিত ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাত্ ভগবানের একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।
ত্রৈগুন্য বিষয়াঃ বেদাঃ নিস্ত্রৈগুন্যঃ ভব অর্জুন ।
নির্দ্বন্দ্ব নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্যোগক্ষেমঃ আত্মবান ॥৪৫
অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুন সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন তুমি সেই গুন গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুনস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।
যাবান অর্থ উদপানে সর্বতঃ সংপ্লুতোদকে ।
তাবান সর্বেষু বেদেষু ব্রাহ্মনস্য বিজনতঃ ॥৪৬
অর্থ-ক্ষুদ্র জলাশয় যে সমসস্ত কার্য্য সাধিত হয় সে গুলি যেমন বৃহত্ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়। তেমনই ভগবানের উপসনার মাধ্যমে যিনি পরব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন তার কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য স্বাধিত হয়েছে।
কর্মনি এব অধিকতরঃ তে মা ফলেষু কদাচন ।
মা কর্মফল হেতুঃ ভূঃ মা তে সঙ্ঘ অস্ত অকর্মনি ॥৪৭
অর্থ-স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্ম ফলের হেতু মনে করো না এবংকখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।
যোগস্থঃ কুরু কর্মানি সঙ্গম্ ত্যাক্তা ধনঞ্জয় ।
সিদ্ধ্যসিদ্ধৌঃ সমঃ ভূত্বা সমত্বম্ যোগঃ উচ্যতে ॥৪৮
অর্থ-হে অর্জুন ফল ভোগের কামনা পরি ত্যাগ করে ভক্তি যোগস্থ্য হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্মাচরন কর। কর্মের সিদ্ধি অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমবুদ্ধি তাকেই যোগ বলা হয়।
দুরেন হি অবরম্ কর্ম বুদ্ধি-যোগাত্ ধনঞ্জয় ।
বুদ্ধৌ শরনম্ কর্ম অন্বিচ্ছ কৃপনাঃ ফল হেতবঃ ॥৪৯
অর্থ-হে ধনঞ্জয় বুদ্ধি যোগ দ্বারা ভক্তির অনুশিলন করে সকাম কর্ম থেকে দুরে থাক। যারা কর্মের ফল ভোগ করতে চায় তারা কৃপন।
বুদ্ধিযুক্তঃ জহাতি ইহ উভে সুকৃত-দুস্কৃতে ।
তস্মাত্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসু কৌশলম্ ॥৫০
অর্থ-যিনি ভগবত্ ভক্তির অনুশিলন করেন তিনি এই জীবনেই পাপ পুন্য উভয় থেকে মুক্ত হন। সুতরাং হে অর্জুন তুমি নিস্কাম কর্ম যোগের অনুশিলন কর সেটাই হল সর্বাঙ্গিন কর্ম কৌশল।
কর্মজম্ বুদ্ধিযুক্তাঃ হি ফলম্ ত্যক্তা মনিষিনঃ ।
জন্মবন্ধ বিনিমুক্তাঃ পদম্ গচ্ছন্তি অনাময়ম্॥৫১
অর্থ-মনিষিগন ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের শ্বরনাগত হন। কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন।এইভাবে তারা সমস্ত দুঃখ দুর্দ্দশা থেকে মুক্ত হন।
যদ তে মোহ কলিলম্ বুদ্ধিঃ ব্যতিতরিষ্যতি ।
তদা গন্তাসি নির্বেদম্ শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ ॥৫২
অর্থ-এইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের অর্পিত নিস্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে তোমার বুদ্ধি মোহরুপ গভীর অরন্যকে সম্পুর্নরুপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ সেই সবের প্রতি সম্পুর্ণরুপে নিরপেক্ষ্য হয়ে বিশুদ্ধ ভক্তি সাধনে প্রবৃত্ত হবে।
শ্রুতি বিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা ।
সমাধৌ অচলা বুদ্ধি তদা যোগম্ অব্যপ্সসি ॥৫৩
অর্থ-তোমার বুদ্ধি যখন বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তি যোগে অধিষ্ঠিত হবে।
অর্জুন উবাচ
স্থীত প্রজ্ঞস্য কাভাষা সমাধিস্থস্য কেশব ।
স্থীতধীঃ কিম্ প্রভাষেত কিম্ আসিত ব্রজেত্ কিম্ ॥৫৪
অর্থ-অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন-হে কেশব স্থিতপ্রজ্ঞ অর্থাত্ অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষন কী? তিনি কিভাবে কথা বলেন কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি আচরন করেন।
ভগবান উবাচঃ
প্রজহাতি যদা কামান সর্বান পার্থ মনোগতান ।
আত্মনি এব আত্মনা তুষ্টঃ স্থীতপ্রজ্ঞঃ তদা উচ্যতে ॥৫৫
অর্থ-ভগবান বললেন-হে পার্থ মানুষ যখন মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভুত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন আত্মাতেই পুর্ন পরিতৃপ্তি লাভ করে তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞা বলা হয়।
দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ ।
বীত রাগ ভয় ক্রোধঃ স্থিতধীঃ মুনিঃ উচ্যতে ॥৫৬
অর্থ-ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যার মন উদ্বিগ্ন হয় না,সুখ উপস্থিত হলেও যার স্পৃহা হয়না এবং যিনি অনুরাগ ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত তিনিই স্থিতধী অর্থাত্ স্থিতপ্রজ্ঞ।
যঃ সর্বত্র অনভিস্নেহঃ তত্ তত্ প্রাপ্য শুভ অশুভম ।
অভিনন্দতি ন দেষ্টি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৭
অর্থ-জড় জগতে যিনি সমস্থ জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত যিনি পৃয় বস্তু লাভে আনন্দিত হয় না এবং অপৃয় বিষয় উপসতহলে দুঃখিত হন না তার চেতন পুর্ন জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যদা সংহরতে চ অয়ম্ কুর্মঃ অঙ্গানি ইব সর্বশঃ ।
ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৫৮
অর্থ-কুর্ম যেমন তার অঙ্গসমুহ তার কঠিন বহিরাবরনের মধ্যে সংঙ্কুচিত কওে, তেমনই যে ব্যাক্তি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন তার চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।
বিষয়াঃ বিনিবর্তন্তে নিরাহারস্য দেহিনঃ ।
রস বর্জম্ রস অপি অস্য পরম দৃষ্টা নিবর্ততে ॥৫৯
অর্থ-দেহবিশিষ্ট জীব ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ থেকে নিবৃত হতে পারে কিন্তু তবুও ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের আসক্তি থেকে যায়। কিন্তু উচ্চতর স্বাধ আস্বাদন করার ফলে সে বিষয়-তৃষ্ণা তিনি চিরতরে নিবৃত্ত হন।
যততঃ হি অপি কৌন্তেয় পুরুষস্য বিপশ্চিতঃ ।
ইন্দ্রিয়ানি প্রমাথীনি হরন্তি প্রসভম্ মনঃ ॥৬০
হে কৌন্তেয় ইন্দ্রিয় সমুহ এত বলবান এবং ক্ষোভকারি যে তারা অতি যত্নশিল বিবেক সম্পন্ন পুরুষের মনকেও বল পুর্বক ষিয়াভিমুখে আকর্ষন করে।
তানি সর্বনি সংযম্য যুক্তঃ আসীত মৎপরাঃ ।
বশে হি যস্য ইন্দ্রিয়ানি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬১
অর্থ-যিনি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পুর্ন রুপে বশীভুত করে আমার প্রতি উত্তমা ভক্তিপরায়ন হয়ে তার ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পুর্নরুপে বশীভুত করেছেন তিনিই স্থিতিপ্রজ্ঞ।
ধ্যায়তঃ বিষয়ান পুংসঃ সংঙ্গ তেষু উপজায়তে ।
সংঙ্গাত্ সঞ্জায়তে কামঃ কামাত্ ক্রোধঃ অভিজায়তে ॥৬২
ক্রোধাত্ ভবতী সম্মোহঃ সম্মোহাত্ স্মৃতি বিভ্রমঃ ।
স্মৃতিভ্রংশাত্ বুদ্ধিনাশঃ বুদ্ধিনাশাত্ প্রনশ্যতি ॥৬৩
অর্থ-ইন্দ্রিয় বিষয় চিন্তা করতে করতে মানুষের আশক্তি জন্মায় আশক্তি থেকে কামনার উদয় হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উত্পন্ন হয়। ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতি বিভ্রম, স্মৃতি বিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ হওয়র ফলে সর্বনাশ হয়। এবং মানুষ পুনরায় জড় জগতের অন্ধকুপে পতিত হয়।
রাগ দ্বেষ বিমুক্তৈঃ তু বিষয়ান ইন্দ্রিয়ৈ চরন ।
আত্মবশ্যৈঃ বিধেয়াত্মা প্রসাদম্ অধিগচ্ছতি ॥৬৪
অর্থ-সংযত চিত্ত মানুষ প্রিয় বস্তুতে স্বাভবিক আশক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে তার বশিভুত ইন্দ্রিয় দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশিলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করে।
প্রসাদে সর্ব দুঃখানাম হানিঃ অস্য উপজায়তে ।
প্রসন্নচেতসঃ হি আশু বুদ্ধিঃ পরি অবতিষ্ঠতে ॥৬৫
অর্থ-চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তখন তার জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না এইভাবে প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি স্থির হয়।
নাস্তি বুদ্ধি অযুক্তস্য ন চ অযুক্তস্য ভাবনা ।
ন্ চ অভাবয়তঃ শান্তি অশান্তস্য কুতঃ সুখম্ ॥৬৬
অর্থ-যে ব্যক্তি কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত নন তার চিত্ত সংযত নয় এবং তার পরমার্থিক বুদ্ধি থাকতে পারে না। আর পরমার্থ চিন্তাশুন্য ব্যক্তির বিষয় তৃষ্ণার বিরতি নেই। এই রকম বিষয়-তৃষ্ণাক্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত সুখ কোথায়।
ইন্দ্রিয়ানাম্ হি চরতাম্ যত্ মনঃ অনুবিধিয়তে ।
তত্ অস হরতি প্রজ্ঞাম্ বায়ুঃ নাবম্ ইব অম্ভসি ॥৬৭
অর্থ-প্রতিকুল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে তেমনই সদা বিচরনকারি যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষনেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরন করতে পারে।
তস্মাত্ যস্য মহাবাহো নিগৃহীতানি সর্বশঃ ।
ইন্দ্রিয়ানি ইন্দ্রিয়ার্থেভ্যঃ তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬৮
অর্থ-সুতরাং হে মহাবাহো যার ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে সর্ব প্রকার নিবৃত্ত হয়েছে তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।
যা নিশা সর্ব ভূতানাম্ তস্যাম্ জাগর্তি সংযমী ।
যস্যাম্ জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতঃ মুন্যেঃ ॥৬৯
অর্থ-সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রি স্বরুপ স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরীত থেকে আত্মবুদ্ধিনিষ্ঠ আনন্দকে সাক্ষাত্ অনুভব করেন। আর যখন সমস্ত জীবেরা জেগে থাকে স্থিতপ্রজ্ঞা ব্যক্তির কাছে তা রাত্রি স্বরুপ।
আপুর্যমানম্ অচল প্রতিষ্ঠম
সমুদ্রম আপঃ প্রবিশন্তি যদ্বত্ ।
তদ্বত্ কামাঃ যম্ প্রবিশন্তি সর্বে
সঃ শান্তিম্ আপ্নোতি ন কামকামী ॥৭০
অর্থ-বিষয় কামি ব্যক্তি কখনো শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সদা পরিপুর্ন সমুদ্রে প্রবেশ করেও তাকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমুহও তেমন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে প্রবিষ্ট হয়েও তাকে বিক্ষুব্ধ করতে পারেনা অতএব তিনিই শান্তি লাভকরে,
বিহায় কামান যঃ সর্বান পুমান চরতি নিঃস্পৃহঃ ।
নির্মমঃ নিরহঙ্কারঃ সঃ শান্তিম্ অধিগচ্ছতি ॥৭১
অর্থ-যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিঃস্পৃহ হয়ে নিঃরহঙ্কার এবং মমত্ত্ব বোধ রহিত হয়ে বিচরন করেন তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করে।
এষা ব্রাহ্মী স্থিতিঃ পার্থ ন এনাম্ প্রাপ্য বিমুহ্যতি ।
স্থিত্বা অস্যাম্ অন্তকালে অপি ব্রহ্মনির্বানম্ ঋচ্ছতি ॥৭২
অর্থ-এই প্রকার স্থিতিকেই ব্রহ্মস্থিতি বলে। হেপার্থ যিনি এই স্থিতি লাভ করেন তিনিমোহ প্রাপ্ত হন না ।জীবনের অন্তিম সময় তিনি এইজড় জগতের বন্ধন মুক্ত হয়ে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করেন।
ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
সাংখ্যযোগো নাম দ্বিতীযোঽধ্যাযঃ ॥২॥
বাংলা অনুবাদ ছাড়া শুধু সংস্কৃত শ্লোক,বেশীরভাগ মানুষ কিচ্ছু বুঝতে পারবেনা।
ধীরে ধীরে বাংলা যোগ করা হবে।
খুব ই ই ভাল লাগল এ রখম একটা সাইট পেয়ে।
ধন্যবাদ
লব কুশ নামে হবে সীতার নন্দন।
উভয়ে শিভাবে তুমি বেদ রামায়ণ।।
এগার সহস্র বর্ষ পালিবেন ক্ষিতি।
পুত্রে রাজ্য গিয়া স্বর্গে করিবেন গতি।।
এতদিন পরে আর উত্তর পাওয়ার কোন প্রয়োজন বা ইচ্ছা আপনার আছে কিনা জানি না, কিন্তু মনে হল উত্তরটা দেওয়া দরকার। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে ১০৮টি নীলপদ্মে দেবী দুর্গার পূজা করলে মনস্কামনা পূর্ণ হতে বাধ্য। রামায়ণে আছে রামচন্দ্র রাবণবধের মানসে ১০৮ টি নীলপদ্মে দেবীর পূজার ব্রত নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ১০৬টির বেশি জোগাড় করতে পারেন নি। তখন নিজের নীলপদ্মতুল্য চোখদুটি উপড়ে তিনি দেবীর পূজা করেন। দেবী সন্তুষ্টা হয়ে তাঁর চোখদুটি ফিরিয়ে দেন এবং রাবণবধের উপায় বলে দেন। এখানেও এক দেবীর সন্তুষ্টি বিধায় আর নিজের মনোকামনা পূরণের ইচ্ছার কথা রয়েছে, সম্ভবত তাই ১০৮ পদ্মের কথা এসেছে। 🙂
very nice…………….aro new kicu add korle valo hoy
আমার শ্রী ভগবতগীতা জানার খুব ইচ্ছে,