ভূমিকা
মানুষ এবং পশুর মধ্যে বড় একটা পার্থক্য হচ্ছে, পশু একমাত্র বর্তমানকেই দেখে, মানুষ দেখে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে এক সঙ্গে বিচেনা করে। যখন কোন ব্যক্তি এবং সমাজ একমাত্র বর্তমানের মধ্যেই আবর্তিত হতে থাকে তখন সর্বনাশের ইশারা প্রকট হতে থাকে।
বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসের বোধ করি সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে তার সংগ্রামের কালগুলো। এবং এক্ষেত্রে উজ্জ্বলতম ঘটনা হচ্ছে, ১৯৭১-এ পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অসাধারণ লড়াই। এ ছিল সমগ্র জাতির একতাবদ্ধ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংগ্রাম। আমাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য, আমাদের বর্তমানের গৌরব এবং আমাদের ভবিষ্যতের প্রেরণা বাঙালির এ সংগ্রামের ইতিহাস।
অত্যন্ত শঙ্কিত চিত্তে লক্ষ্য করার মত ব্যাপার হচ্ছে, আমরা এটাকে যেন ভুলে যেতে বসেছি। যেসব লক্ষ্য নিয়ে আমাদের লড়াই তাকে বাস্তবে রূপায়িত করার ব্যর্থতা থেকেই। এ বিস্মৃতির সূত্রপাত হচ্ছে। কিন্তু ব্যর্থ বর্তমান তো কোন জাতিরই চিরকালের সত্য ইতিহাস নয়, সত্য অনুভূতিও নয়। যে আবেগ এবং অনুভূতি চক্রান্তের ধূর্তচক্রে আচ্ছন্ন হচ্ছে, তাকে উজ্জীবিত করার জন্যই দরকার সংগ্রামের কালের মানুষের মহান ত্যাগ এবং নিষ্ঠাকে বারংবার স্মরণ করা। তার থেকেই আসবে কুশায়াকে দূর করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা। আমাদের চিত্তের পবিত্রতা রক্ষা পাবে।
সেকালের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের মধ্যে বসে লেখা আমাদের সমগ্র ইতিহাসে একটি মাত্র উপন্যাসই পাওয়া যায়—এ উপন্যাসই হচ্ছে “রাইফেল রোটি আওরাত”। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাস এর রচনাকাল। লেখক শহীদ আনোয়ার পাশা নিহত হলেন ১৯৭১ সালেরই ১৪ই ডিসেম্বর। স্বাধীনতা লাভের মাত্র দুদিন আগে তিনি যে অমর কাহিনী। উপন্যাসে বিধৃত করেছেন নিজেই হয়ে গেলেন তারই অঙ্গ চিরকালের জন্য।
আনোয়ার পাশার উপন্যাসটি একদিক দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বসে একজনের প্রতিটি মুহূর্তের কাহিনী। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে সৃষ্ট এ শিল্পকর্ম কতটা সত্যনিষ্ঠা লেখকের জীবনের পরিণতিই তার মহান সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন–জীবনে জীবন যোগ করা
না হলে, কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা।
আনোয়ার পাশার উপন্যাস, তাঁর শেষ উচ্চারণ : নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভা। সে আর কতো দূরে। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে।” তার এবং আমাদের সকলের কামনা ও প্রত্যাশারই অভিব্যক্তি। শিল্পী তার জীবনকে আমাদের জীবনের মধ্যে পরিব্যাপ্ত করে দিয়েছেন। রাইফেল রোটি আওরাত আনোয়ার পাশার শহীদ আত্মার আকাঙ্ক্ষাকেই যেন আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে চলেছে নিরন্তর এবং অম্লান।
কাজী আবদুল মান্নান
বৈশাখ, ১৩৯৪
রাজশাহী।
পরিচিতি
এ গ্রন্থের লেখক আনোয়ার পাশা আজ আমাদের মধ্যে নেই, হারিয়ে গেছেন তিনি। চিরকালের জন্য। অসহ্য এক বেদনার ভার বুকে নিয়ে তার নামের আগে এখন কিনা যোগ করতে হচ্ছে শহীদ কথাটা। আনোয়ার পাশাত শহীদ হতে চাননি, অমন পবিত্র শব্দাবলীর প্রতি তার বিন্দু মাত্রও লোভ ছিল না। জীবনকে তিনি ভালোবাসতেন, তার সমস্ত ভালোবাসা নিবেদিত ছিল জীবন আর শিল্পের প্রতি। তিনি ছিলেন সর্বতোভাবে জীবন প্রেমিক শিল্পী। জীবনকে ভালোবাসা ছাড়া শিল্পী হওয়া যায় না এ তিনি জানতেন, মানতেনও। চেয়েছিলেন জীবনকে সুন্দর করে গড়তে এবং সে সঙ্গে শিল্পোত্তীর্ণ করে প্রকাশ করতে—এ ছিল তার জীবনের ব্রত। আনোয়ার পাশা বাঁচতে চেয়েছিলেন শিল্পী হিসেবে। জীবনের সে দুর পিপাসা, তার আকুল ব্যাকুলতা তার এ অন্তিম বচনায়ও ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র।
মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে এ অসামান্য বইটি তিনি লিখে রেখে গেছেন আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের জন্য। মৃত্যুর মাঝখানে দাড়িয়ে মৃত্যু-বিভীষিকার এমন ছবি আঁকা সত্যই দুঃসাধ্য। আনোয়ার পাশা তেমন এক দুঃসাধ্য কাজ করে গেছেন। তাঁর শিল্পী-প্রতিভার এ এক নিঃসন্দেহ প্রমাণ। বাংলাদেশের মাটিতে আগামীতে যারা জন্মগ্রহণ করবে, তারা এ দেশের ইতিহাসের এক দুঃসহ ও নৃশংসতম অধ্যায়ের এ নির্ভেজাল দলিল পাঠ করে নিঃসন্দেহে শিউরে উঠবে। অবশ্য সে সঙ্গে আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেমের নজীরহীন দৃষ্টান্তে সগৌরব আনন্সও যে তারা বোধ করবে তাতেও সন্দেহ নেই। নিজের দেশ আর দেশের মানুষের সম্বন্ধে তাদের আস্থা, এ বই পড়ার পর দৃঢ়তর না হয়ে পারে না।
এ শুধু একাত্তরের বাংলাদেশের হাহাকারের চিত্র নয়, তার দীপ্ত যৌবনেরও এ এক প্রতিচ্ছবি। এ গ্রন্থের নায়ক সুদীপ্ত শাহিন বাংলাদেশ আর বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংকল্প প্রত্যয় আর স্বপ্ন-কল্পনারই যেন প্রতীক। একাত্তরের মার্চের সে ভয়াবহ কটা দিন আর এপ্রিলের প্রথমার্ধের কালো দিনগুলির মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সংকীর্ণ পরিধিটুকুতেই এ বই-র ঘটনাপ্রবাহ সীমিত, কিন্তু এর আবেদন আর দিগন্ত এ সময়-সীমার আগে ও পরে বহু দূর বিস্তৃত। বাঙালির দুঃখ-বেদনা আর আশা-এষণার এ এমন এক শিল্পরূপ যা সব সময় সীমাকে ডিঙিয়ে এক দীর্ঘস্থায়ী অপরূপ সাহিত্য-কর্ম হয়ে উঠেছে।
ভেবে অবাক হতে হয় নির্মম ঘটনাবলীর উত্তপ্ত কড়াইয়ের ভিতর থেকেও লেখক কি করে তার উর্ধ্বে উঠে এতখানি নির্লিপ্ত হতে পারলেন। রাখতে পারলেন মনকে সংযত ও সংহত যা শিল্পীর জন্য অপরিহার্য। সদ্য এবং সাক্ষাৎ ঘটনার এমন অপরূপ শিল্পরূপ কদাচিৎ দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ যে একবার লিখেছিলেনঃ “কোন সদ্য আবেগে মন যখন কানায় কানায় ভরিয়া উঠিয়াছে তখন যে লেখা ভালো হইবে এমন কোন কথা নাই। তখন গদগদ বাক্যের পালা।” সুখের বিষয় আনোয়ার পাশার এই বই কোন অর্থেই গদগদ বাক্যের পালা হয় নি। এ এক সংহত সংযত, নির্লিপ্ত শিল্পী মনেরই যেন উৎসারণ। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এ সাবধান বাণীটুকুও উচ্চারণ করেছিলেনঃ “প্রত্যক্ষের একটা জবরদস্তি আছে— কিছু পরিমাণে তাহার শাসন কাটাইতে না পারিলে কল্পনা আপনার জায়গাটি পায় না।” কথাটা। সত্য, কিন্তু আনোয়ার পাশা এ আশ্চর্য দক্ষতায় এ সত্যকে অন্তত এ গ্রন্থে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছেন। প্রত্যক্ষের জবরদস্তির শিকার তিনি হন নি, সে জবরদস্তির শাসন কাটিয়ে তিনি তার শিল্পী-কল্পনার যথাযথ স্থান খুঁজে নিতে পেরেছেন এ বইতে। চোখের সামনে ঘটা টাটকা ঘটনাবলীর উত্তাপ তাঁর শিল্প-সত্তাকে কেন্দ্রচ্যুত করেনি কোথাও, লেখকের জন্য এর চেয়ে প্রশংসার কথা আর হতে পারে না।
উচ্চতর শিল্পকর্মের জন্য স্থান-কালের দূরত্বের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। আশ্চর্য, আনোয়ার পাশার জন্য তার প্রয়োজন হয় নি। যথার্থ শিল্পী বলেই এ হয়তো তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ঘটনাকে ছাড়িয়ে পৌঁছতে পেরেছেন ঘটনার মর্মলোকে।
এ তাঁর শেষ বই, জীবনের শেষ বই—প্রত্যক্ষ আর সাক্ষাৎ ঘটনাবলীকে তিনি উপন্যাসের রূপ দিয়েছেন এ গ্রন্থে। ঢাকায়, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে, যে। বিশ্ববিদ্যালয় এদেশের সব রকম প্রগতি আন্দোলনের উৎস, তার এমন নিখুঁত দুবি, এমন শিল্পোত্তীর্ণ রূপায়ণ আর কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ইতিহাসের দিক দিয়েও এ বই-এর মূল্য অপরিসীম।
এ বই-র ভাষা আর রচনাশৈলী এমন এক আশ্চর্য শিল্পরূপ পেয়েছে যে পড়তে বলে কোথাও থামা যায় না। এ কারণেও, আমার বিশ্বাস বইটি দীর্ঘকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আনোয়ার পাশার জন্ম পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। লেখাপড়া করেছেন উভয় বঙ্গে। তিনি বি. এ. পাস করেছেন রাজশাহী কলেজ থেকে এবং বাংলায় এম, এ, পাস করেছেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জীবিকার জন্য বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। বেশ কয়েক বছর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনা করার পর চলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিবেদিত, পরিশ্রমী ও দক্ষ শিক্ষক হিসেবে তার সুনাম শুনেছি অনেকেরই মুখে। ছাত্র শিক্ষকদের কাছে তিনি শুধু প্রিয় ছিলেন না, শ্রদ্ধেয়ও। আজকের দিনে যা দুর্লভ সৌভাগ্য! শিক্ষকতার বাইরে তার প্রধানতম নেশা ছিল সাহিত্য। কবিতা আর গদ্যে তার সমান দক্ষতা দেখে আমরা বিস্মিত না হয়ে পারতাম না। সমালোচনায় তিনি যে অসাধারণ গ্রহণশীলতা আর বিশ্লেষণী শক্তির পরিচয় দিয়েছেন তারও নজির খুব বেশি নেই। বিশেষ করে তাঁর রবীন্দ্র ছোট গল্প সমীক্ষা আমাদের সমালোচনা সাহিত্যের মানকে যে উন্নত করেছে তাতে সন্দেহ নেই। নীড় সন্ধানী আর নিষুতি রাতের গাঁথা নামে তার দুটি উপন্যাস আর নদী নিঃশেষিত হলে নামে একটি কবিতার বই বহু আগেই প্রকাশিত হয়েছে। তদুপরি বহু পরিশ্রমে তিনি আমার মতো নগণ্য লেখকের উপরও একটি বড় বই লিখেছেন। এতে অন্য যা প্রমাণিত হোক না কেন, অন্তত স্বদেশের সাহিত্য আর সাহিত্যিকের প্রতি তাঁর যে আন্তরিক অনুরাগ আর আস্থা রয়েছে সে সম্বন্ধে আমরা নিঃসন্দেহ হতে পারি।
আলোচ্য গ্রন্থের আগাগোড়া যে স্বাধীনতার স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, যার প্রতীক্ষায় তিনি প্রহর গুণছিলেন, সে স্বাধীনতার শুভলগ্নের মাত্র দিন দুই আগে পাক হানাদারদের দোসরেরা নিজের পেশা আর আদর্শে আত্মনিবেদিত প্রাণ এ নিরলস শিল্পীকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তবুও মনে জিজ্ঞাসা জাগেঃ শিল্পীকে কি হত্যা করা যায় যায়। শিল্পীকে হত্যা করা যায় কিন্তু শিল্পকে হত্যা করা যায় না। শিল্পকে হত্যা করা মানে মানুষের। আত্মাকে হত্যা করা, তা করা দুনিয়ার কোন ঘাতকের পক্ষেই সম্ভব নয়। লাইফ ইজ সর্ট আর্ট ইজ লংঘাতকের অস্ত্র আনোয়ার পাশার মর-জীবনকে সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছে সত্য কিন্তু তাঁর রচিত গ্রন্থের পাতায় পাতায় ফুল হয়ে ফুটে রয়েছে। তাকে হত্যা করবে কে? শিল্পীকে হত্যা করা যায়—শিল্পকে হত্যা করা যায় না তার অবিসম্বাদিত প্রমাণ এ বই—’রাইফেল রোটি আওরাত। এর প্রতি ছত্রে ঘাতকদের প্রতি ধিক্কার ধ্বনি যেমন আমরা শুনতে পাই তেমনি শুনতে পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের উদয় মুহূর্তে নব জীবনের আগমনীও।
“পুরোনো জীবনটা সেই পঁচিশের রাতেই লয় পেয়েছে। আহা তাই সত্য হোক। নতুন মানুষ নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কত দূরে? বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এ রাতটুকু তো। মা ভৈঃ। কেটে যাবে।”
এ অমোঘ ভবিষ্যৎ বাণীটি উচ্চারণ করেই তিনি তাঁর জীবনের শেষ লেখাটি শেষ। করেছেন। যে নব প্রভাতের জন্য এত দুর্ভোগ, এত আশা, এতখানি ব্যাকুল প্রতীক্ষা তা সত্য সত্যই এলো কিন্তু আনোয়ার পাশা তা দেখে যেতে পারলেন না। তাঁর অন্তিম রচনার সঙ্গে দেশবাসীর এ বেদনাটুকুও যুক্ত হয়ে থাক।
এ বই একাধারে ঐতিহাসিক দলিল আর সার্থক সাহিত্য-সৃষ্টি। এ বই পড়ে অভিভূত হবেন না এমন পাঠক আমি কল্পনা করতে পারি না।
আবুল ফজল ২৮শে মে, ১৯৭৩
সাহিত্য কেতন চট্টগ্রাম।
প্ৰকাশকের কথা
শহীদ আনোয়ার পাশা ১৩৩৫ সালের ২রা বৈশাখ মুর্শিদাবাদ জেলার কাজী শাহ গ্রামে জনুগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলায় এম. এ. পাস করেন। ঐ বছরেই তিনি নদীয়া জেলার পালিতবেঘিয়া গ্রামের জনাব হেকমত আলী মণ্ডলের কন্যা মসিনা বেগমকে বিয়ে করেন।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ২রা মার্চ পাশা সাহেব পাবনা জেলার এডওয়ার্ড কলেজে বাংলার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। পরে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন এবং শহীদ হওয়ার আগে পর্যন্ত ঐ বিভাগেই অধ্যাপনা করে গেছেন। কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, সমালোচনা প্রভৃতি সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তিনি আমৃত্যু অনলস লেখনী চালনা করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর তিনি আল-বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ও নিহত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর। তিনি স্ত্রী এবং দুই ছেলে রেখে গেছেন। এদের নাম মাসারুল আফতাব ও রবিউল আফতাব।
“রাইফেল রোটি আওরাত” উপন্যাসের রচনাকাল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল থেকে জুন মাস। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে তিনি বেশ কিছু সংখ্যক কবিতা এবং একটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস রচনা করেন।
আমাদের জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য “রাইফেল রোটি আওরাত” একটি অতি মূল্যবান দলিল। এ গ্রন্থ প্রকাশনার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লার কাছে আমি তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
০১.
বাংলাদেশে নামল ভোর। ভোরেই ঘুম ভাঙ্গে সুদীপ্তর। আজো তার ব্যতিক্রম হল না। হতে পারতো। কতো রাত অবধি ঘুম হয় নি। আজো তো সারারাতেই মাঝে মাঝেই গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। আর ভয় হয়েছে। মৃত্যুভয় নয়। মৃত্যুকে ভয় আর লাগে না। তবে যদি বেঁচে থাকতে হয় তখন? এমনি আগুন আর গুলি-গোলা নিয়ে কি মানুষ বাঁচে। অতএব এলোমেলো নানা চিন্তা হয়েছিলো মনে, ঘুম এসেছিলো অনেক দেরিতে। ঘুমের আর দোষ কি? শুধুই আগুন আর গুলি-গোলা আর আতঙ্ক? এর কোনোটা না থাকলেও তো নতুন জায়গায় সহসা ঘুম আসার কথা নয়। তবু সুদীপ্তর ঘুমের ব্যাঘাত যেটুকু হয়েছিলো তা ঐ গুলি-গোলার জন্যই। নতুন জায়গার কথা মনেই ছিলো না। সে কথা মনে হল এখন, ঘুম ভাঙ্গার পর। তেইশ নম্বরের সেই পরিচিত মুখ চোখে পড়ল না। সেই সাজানো বইয়ের শেলফগুলি, সেই টেবিল-চেয়ার আলনা—কেউ একটি নতুন দিনের সূচনায় সুদীপ্তকে অভ্যর্থনা জানাল না। অবশ্যই তাদের মুখ মনে পড়ল সুদীপ্তর। এবং মনে পড়ল ফিরোজের কথা। তিনি এখন বন্ধু ফিরোজের বাড়িতে। মহীউদ্দিন ফিরোজ। এককালে পত্র পত্রিকার পৃষ্ঠায় নামটি চালু ছিল। কবিতা লিখতেন।
এই প্রথম রাত্রি তার কাটল বন্ধুর বাড়িতে। উনিশ শো একাত্তর খৃষ্টাব্দের সাতাশে মার্চের দিনগত রাত্রি পার হয়ে আটাশে মার্চের ভোরে এসে পৌঁছলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহিন। ঠিক এর আগের দুটো রাত? পঁচিশ ও ছাব্বিশ তারিখের দিন পেরিয়ে যে-দুই রাতের সূচনা হয়েছিলো তাদের কথা সুদীপ্ত স্মরণ করলেন। সে কি মাত্র দুটো রাত। দুটো যুগ যেন। পাকিস্তানের দুই যুগের সারমর্ম। বাংলাদেশ সম্পর্কে পাকিস্তানীদের বিগত দুই যুগের মনোভাবের সংহত প্রকাশমূর্তি। শাসন ও শোষণ। যে কোন প্রকারে বাংলাকে শাসনে রাখ, শোষণ কর। শশাষণে অসুবিধা হলে? শাসন তীব্র কর। আরো তীব্র শাসন। আইনের শাসন যদি না চলে? চালাও রাইফেলের শাসন, কামান-মেশিনগানের শাসন। কামান-মেশিনগানের সেই প্রচন্ড শাসনের রাতেও তিনি বেঁচে ছিলেন।
আশ্চর্য, এখনো তিনি বেঁচে আছেন। কিন্তু মরে যেতে পারতেন।
অনেকেই অনেক কাজ আমরা পারি নে। যেমন ইচ্ছে করলেই সুদীপ্ত সি. এস, পি, হতে পারতেন না। ব্যবসায়ে নেমে বড়ো লোক হতেই কি পারতেন? না। অনেকে এমন কি একটা বিয়ে করতেও পারে না। তবে ঐ একটা ব্যাপার আছে যা সকলের জন্যই নিশ্চিত-সকলেই মরে। তাই সুদীপ্ত ভাবতেন— একটা কাজ সকলেই পারে, সকলেই মরে। একটুও চেষ্টা করতে হয় না— দিব্যি খেয়ে দেয়ে ফূর্তি করে বেড়াও, একবারও কিছু ভাববার দরকার পর্যন্ত নেই, অথচ সেই কাজটি এক সময় নির্ঘাৎ সম্পন্ন করে ফেলবে তুমিকেমন দিব্যি তুমি মরে যাবে। তোমার আত্মীয় বন্ধুদের সামনে তখন অনেকগুলো কাজ এসে পড়বে। কাফন-দাফন, ফাতেয়াখানি, শোক-প্রকাশ, গুণকীর্তন, শেষাবধি তোমার পরিত্যক্ত বিষয় সম্পদের হিসেব-নিকেশ-কতো কাজ। কিছুদিন অন্ততঃ তোমার প্রিয়জনদের কাজ নেই বলে আফসোস করার কিছুই থাকবে না। তুমি একাই অনেক কটি চিত্তকে কয়েকটা দিন আচ্ছন্ন করে থাকবে। এতো সব তোমার দ্বারা সম্ভব হবে সেরেফ বিনা চেষ্টায়।
কিন্তু না। সুদীপ্তর এতো সব ধারণা সেদিন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিলো। মৃত্যু অত্যন্ত সহজ এবং স্পর্শযোগ্য ছিল, তা হলেও সেদিন তার মৃত্যু হয় নি। কেন তিনি মরলেন না, তিনি জানেন না। অমন সহজ মৃত্যুটি তার ভাগ্যে ছিল না বোধ হয়। কত হাজার হাজার লোক সেদিন কত সহজে কাজটি করতে পারল–পারলেন না সুদীপ্ত। তিনি মরতে পারলেন না। অতএব সুদীপ্তকে এখন ভাবতেই হচ্ছে—মরে যাওয়াটা অত সহজ নয়।
সহজ নয়? সুফিয়া মরে নি? তোমার হাজার হাজার ভাই বন্ধু সেদিন কেমন করে মরে গেল তুমি দেখ নি? হাঁ, তিনি দেখেছেন। কিন্তু নিজের জীবনে তো এটাও তিনি দেখলেন যে, মরে যাওয়া অত সোজা নয়। মেরে ফেলা তো আরো কঠিন। তুমি কাকে মারবে? বিশ্বাসকে কখনো মারা যায় না। হ্যাঁ তো, সহস্র প্রাণের সেই দীপ্ত পাপড়ি—সেই প্রেম-ভালোবাসা-বিশ্বাস এক চুলও মরেনি।
এবং মরেন নি সুদীপ্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ঐ নামের কোনো অধ্যাপক আছেন নাকি! কখনো ছিলেন না।
হাঁ ছিলেন না। এবং নেই, তাও ঠিক। তবে এ-ও ঠিক যে, সুদীপ্ত শাহিন নামে যে ভদ্রলোক বন্ধু মহলে পরিচিত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক এবং ইংরেজি বিভাগেই। কিন্তু অন্য নামে। কেননা পাক ওয়াতানে ওই নাম চলে না। সুদীপ্ত শাহিন!—এই নাম নিয়ে বহাল তবিয়তে বিরাজিত থাকবেন পাক ওয়াতানে? এই জন্যেই পাকিস্তান বানানো হয়েছিলো নাকি! ও সব চলবে না।
সুদীপ্ত শাহিন নাম পাকিস্তানে চলবে না। পাকিস্তানে পা দিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই সুদীপ্ত কথাটা বুঝেছিলেন। পঞ্চাশের দাঙ্গার পর পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ঢাকায় এসেছিলেন সুদীপ্ত। প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীন এবং তাঁর দল মুসলিম লীগ তখন বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাচ্ছিলেন।
একটা পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল বটে উনিশ শশী সাত-চল্লিশের চৌদ্দই আগষ্ট। সেটা পাকিস্তানের রাজনৈতিক সত্তা, সেটা দেই। রাষ্ট্রের প্রাণ হচ্ছে তার অর্থনীতি, এবং তাঁর চিন্ময় সত্তার অভিব্যক্তি সাংস্কৃতিক বিকাশের মধ্যে। ঐখানেই ছিল গন্ডগোল। হাজার মাইলের ব্যবধানে বিরাজিত দুটো অংশের মধ্যে একটা অর্থনীতি গড়ে উঠলে তাতে একটা অংশের দ্বারা অন্য অংশের শশাষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই, অর্থনীতির ক্ষেত্রে একাংশের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে অন্য অংশের উপর। মুসলিম লীগ প্রাণপনে সেই অর্থনীতিক। প্রাধান্য দেশের পশ্চিমাংশে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে উঠে-পড়ে লেগেছিল। মুসল মান হিসেবে সেইটেই কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়েছিল তাঁদের কাছে। কেননা মুসলমানের দৃষ্টি সব সময়ে হতে হবে কেবলাহমুখি, আমাদের কেবলাহ পশ্চিমদিকে। অতএব দেশের পশ্চিমাংশ অধিকতর পবিত্র অংশ। সেটা যে কাবাশরীফের নিকটতর এটা তো অস্বীকার করতে পারে না। মুসলিম লীগ বাংলার নাদান মুসলমানদের দৃষ্টি পশ্চিমমুখি করার জন্যে দেশের আর্থনীতিক প্রাণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন পশ্চিম পাকিস্তানে। আর বাঙলার গঞ্জে, রেল স্টেশনে সর্বত্র তারা একটা করে দিকনির্দেশক খুঁটি পুঁতে দেয়, তার তীরের মতো ছুঁচলো মুখটা থাকে পশ্চিম দিকে—তাতে উর্দু ও বাংলা হরফে লেখা কেবলাহ্। তোমরা কেবলামুখি হও। কেবল অর্থনীতি ক্ষেত্রেই নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এতো বিশাল ব্যবধানে অবস্থিত ভৌগোলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি দেশের একই সংস্কৃতি কোনো বাতুলেও চিন্তা করবে না। কিন্তু, একই সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা—এ কথা সত্য না হলে পাকিস্তানের চিন্ময় সত্তার অস্তিত্ব থাকে কোথায়? লোকে শুনলে বলবে কী? অতএব বল, আমাদের সাংস্কৃতিক সত্তা অভিন্ন। এক ধম, এক ধ্যান, এক প্রাণ, এক ভাষা। এ সব না হলে একটা আধুনিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হয় কী করে? অপূর্ব সব কান্ড সুদীপ্ত দেখেছিলেন প্রথম পাকিস্তানে এসে। হাজার মাইলের ব্যবধানে দুটি দেশকে সর্বাংশে এক করে তোলার জন্য একটা দেশের অর্থনীতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে মুছে ফেলার চক্রান্ত তখন সবে শুরু করেছে মুসলিম লীগ সরকার, সেই তখনি সুদীপ্ত এসেছেন পাকিস্তান। হয়ে গেল একুশ বছর। সেদিনের সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুরা আজ অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সুদীপ্তর ছাত্র।
ছাত্র অবস্থায় সুদীপ্তর অসুবিধা খুব একটা হয় নি। হতে পারত। তখনি কথাটা উঠতে পারত-সুদীপ্ত শাহিন নাম মুসলিম সমাজে চলবে না। কিন্তু সে সময় ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল একজন ইংরেজ অধ্যাপিকার উপর। ইংরেজ অধ্যাপিকা পাকিস্তানের রহস্য ঠিক জানতেন না। অতএব সুদীপ্ত ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হতে পেরেছিলেন। এবং এম. এ. ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে কিছুকাল একটা ইংরেজি পত্রিকায় চাকরিও করেছিলেন। তার পরেই শুরু হয়েছিল সেই কান্ডটা। পাস করে সুদীপ্ত কলেজে চাকরির চেষ্টা করলে তখনি উঠেছিল কথাটা–
আপনি সুদীপ্ত শাহিন? এমন নাম তো শুনি নি।
না শুনে থাকলে এখন শোন—বলতে ইচ্ছে করেছিল সুদীপ্তর। কিন্তু বলেন। নি। কারণ চাকরিটার দরকার ছিল তাঁর। অতএব ঐ বেয়াড়া প্রশ্নটাকে তিনি হজম করেছিলেন। তবু রেহাই মেলে নি। আবার একটা প্রশ্ন হয়েছিল।
কি জাতের মানুষ? হিন্দু? না ক্রিশ্চান?
আমার দরখাস্তেই সে কথার উল্লেখ আছে।
খুব ছোট করে একটা উত্তর দিয়ে সুদীপ্ত থেমেছিলেন। কিন্তু সে কথায় প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো অনেকখানি–
মনে তো লয় যে, দরখাস্তে আপনি মিছা কথা বানাইছেন। সুদীপ্ত কি কখনো মুসলমানের নাম হয়?
কথা হচ্ছিল ইন্টারভিউয়ের সময়। ইন্টারভিউ বোর্ডের অন্য এক সদস্য দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন—
সুদীপ্ত কথাডার মানে কি?
ততক্ষণে সুদীপ্ত বুঝে ফেলেছেন তার চাকরিটা হচ্ছে না। তিনি বললেন
উত্তমরূপে দীপ্যমান যাহা।
এ তো তবে বাংলা কথা হৈল সাব। আপনি তবে হিন্দু হইবার চান?
কেন? হিন্দু হব কেন?
তা নয়ত কি হইবেন? বাংলা হৈলে তো সব হিন্দু হৈয়া গেল। আর হিন্দু হৈলে দ্যাশও তো হিন্দুস্তান হৈয়া যাইব। আপনারা পাকিস্তানে সব হিন্দুস্তানের চর আইছেন।
ঠিক কইছ হাওলাদার বাই। এই যে ভাষা-আন্দোলন হৈল, এ সব তো এনাদের জন্যই। এনারাই আমাগো ছাওয়ালদের মাথা বিগরাইয়া দিছে।
মাথা বিগড়ে গিয়েছিল সুদীপ্তরও। পর পর তিনবার ইন্টারভিউ দেবার সময় প্রতিবারই নামের জন্য নিন্দা হল তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা চাকরি তিনি পেলেন। ঢাকা থেকে বহু দূরের একটি মফঃস্বল কলেজে কোনো ইংরেজির অধ্যাপক পাওয়া যায় না। সেখানেই সুদীপ্তর অধ্যাপক জীবনের সূত্রপাত। সেই কবে ১৯৫৩-র কথা সেটা। আজ সুদীপ্ত সুদীর্ঘ আঠারো বছরের অভিজ্ঞ অধ্যাপক। ধাপে ধাপে উন্নতিও অনেক হয়েছে তার। সেই মফঃস্বল। কলেজ থেকে ঢাকা শহরের জগন্নাথ কলেজ। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একটা যেন নেশায় পেয়ে বসেছিল সুদীপ্তকে। উপরে উঠার নেশা। আরো উপরে। আরো উপরের নেশা সংক্রামক। ঐ সংক্রামক নেশাটা ক্রমে ক্রমে তখন সারা পাকিস্তানকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। সদ্য তখন হিন্দু মধ্যবিত্তের। একটা বিপুল অংশ দেশ ত্যাগ করে চলে গেছেন। মাঠ ফাঁকা। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারলে কে আর কষ্ট করে খেলা শেখে? এবং কোন খেলা না। শিখেই খেলায় জয়লাভ চাইলে চরিত্র হারাতে হয়। চরিত্রহীনের সম্বল তোষামোদ, আর দালালি। পাকিস্তানে এখন দালালির জয়জয়াকার, প্রচন্ড নির্লজ্জ দালালি—তোষামোদ আর উৎকোচ। সুদীপ্তর এখন প্রবল আফসোস হয়। তিনি কেবলি কবিতা লিখতে শিখেছিলেন। গল্প লিখতে পারলে? তোষামোদ ও দালালির যতো বিচিত্র চেহারা তিনি দেখেছেন তা সব যদি তিনি। গল্পে লিখতে পারতেন। বিশ্ব সাহিত্যে তার দ্বিতীয় মেলা ভার হত। বেশি দূরে যাবার দরকার তাঁর ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কয়েক জন সহকর্মীর জীবনবৃত্ত নিছক ইতিহাসের মতো বলে গেলেও বিস্ময়কর উপন্যাসের কাহিনী হয়ে যাবে। সবি জানেন সুদীপ্ত। কিন্তু উপায় নেই। তিনি গল্প কিংবা উপন্যাস লিখতে পারেন না।
দালালিও পারেন না। তবে একটি কাজ তিনি করেছিলেন। তা করেছিলেন ঐ উন্নতির নেশাতেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে ঢোকার জন্য এফিডেভিট করে নাম পালটিয়েছিলেন। কিন্তু তা কেবল ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতাপত্রের। জন্যেই। অন্য সর্বত্রই তিনি এখনো সুদীপ্ত শাহিনই আছেন। ঐ নামেই এখনো কবিতা লেখেন।