৩১ আগস্ট। আজ রবিবার। প্রাতঃকালে উঠে উপরের ডেকে চৌকিতে বসে সমুদ্রের বায়ু সেবন করছি, এমন সময় নিচের ডেকে খ্রীস্টানদের উপাসনা আরম্ভ হল। যদিও জানি এদের মধ্যে অনেকেই শুষ্কভাবে অভ্যস্ত মন্ত্র আউড়িয়ে কলটেপা আর্গিনের মতো গান গেয়ে যাচ্ছিল– কিন্তু তবু এই যে দৃশ্য, এই যে গুটিকতক চঞ্চল ছোটো ছোটো মনুষ্য অপার সমুদ্রের মাঝখানে স্থির বিনম্রভাবে দাঁড়িয়ে গম্ভীর সমবেত কণ্ঠে এক চির-অজ্ঞাত অনন্ত রহস্যের প্রতি ক্ষুদ্র মানবহৃদয়ের ভক্তি-উপহার প্রেরণ করছে, এ অতি আশ্চর্য।
কিন্তু এর মথ্যে হঠাৎ এক-একবার অট্টহাস্য শোনা গেল। গতরাত্রের সেই ডিনার-টেবিলের নায়িকাটি উপাসনায় যোগ না দিয়ে উপরে ডেকে বসে তাঁরই একটি উপাসক যুবকের সঙ্গে কৌতুকালাপে নিমগ্ন আছেন। মাঝে মাঝে উচ্চহস্য করে উঠছেন, আবার মাঝে মাঝে গুন গুন স্বরে ধর্মসংগীতেও যোগ দিচ্ছেন।
আজ আহারের সময় একটি নূতন সংবাদের সৃষ্টি করা গেছে। ছোটো টেবিলটিতে আমরা তিন জনে ব্রেকফাস্ট খেতে বসেছি। একটা শক্ত গোলাকার রুটির উপরে ছুরি চালনা করতে গিয়ে ছুরিটা সবলে পিছলে আমার বাম হাতের দুই আঙুলের উপর এসে পড়ল। রক্ত চার দিকে ছিটকে পড়ে গেল। তৎক্ষণাৎ আহারে ভঙ্গ দিয়ে ক্যাবিনে পলায়ন করলুম। ইতিহাসে অনেক রক্তপাত লিপিবদ্ধ হয়েছে– আমার ডায়ারিতে আমার এই রক্তপাত লিখে রাখলুম; ভারী বঙ্গবীরদের কাছে গৌরবের প্রার্থী নই, বর্তমান বঙ্গাঙ্গনাদের মধ্যে কেউ যদি একবার “আহা’ বলেন।