স্থির হয়ে বসে আছি

স্থির হয়ে বসে আছি, তবু কলরোল।
মাছি জানে, ছাই-হওয়া সিগারেট জানে, কতখানি স্থির।
করতলে ভাগ্যরেখা, ইতিহাসে রাজার গৌরব, মাটিতে সমাধি
জলের ভিতরে গুড় আত্মহত্যা শুয়ে থাকে যতখানি স্থির,
মানুষের ছা-পোষা সংসারে
বদ্ধমূল নানাবিধ ভ্রানি-র মতন স্থির হয়ে বসে আছি, তবু কলরোল।
কাউকে দেখিনা, শুধু জনশূণ্য পথে একা হাওয়া হাঁটে, গাছ মাথা নাড়ে
কাউকে দেখি না, শুধু বিমানের সাদা ডানা, বিধ্বস্ত গর্জনে
লজ্জিতা নারীর মতো মেঘ সরে যায়, ঘন ছায়া নামে বনে
পৃথিবী হঠাৎ
দরিদ্রের মতো ম্লান, কাক কেঁদে ওঠে।
লিখি না, আঁকি না, কোনো ভাঙাগড়া খেলাধূলা নেই
তবু কলরোল।
ডাকাডাকি আকাশে মাটিতে, ক্রমাগত অনবরতই
সভাসমিতির খাম, আমন্ত্রন ও অভিবাদনে ক্রমাগত অনবরতই
দাঁড়ানো, দৌড়ানো, ছুটোছুটি
দোলাদুলি ঢেউয়ে লোকালয়ে।
ট্রেনের টিকিট যারা কেটে আনে কাউকে চিনি না।
রিজার্ত কামরার সুখ, অতিথিশালার চাবি, আয়না, বাথরুম
যথেচ্ছ ভ্রমণ সেরে ভোরবেলা না-ভাঙার ঘুম, দীর্ঘ স্বপ্নের তালিকা
ক্রমাগত অনবরতই কেউ ডাকে, করস্পর্শে মনে হয় আত্মীয়স্বজন
যেতে হয়, থেকে যাই, কার কাছে থাকি তা জানি না।
যে সম্রদ্রে কোনদিন ওলোট-পালোট হয়নি চুল
যে পাহাড় বহুদিন বিবাগী বন্ধুর মতো দুরদেশে ছিল
তারই কাছে স্টপেজ, স্টেশন, মেলামেশা, অঢেল আমোদ।

মধ্যরাতে ছৌ-নাচ, মানুষের ভগ্ন দেহে দেবতার মুখোশ পেখম
কাড়া-নাকড়ার শব্দে কেঁপে ওঠে দশদিক, চতুর্থ প্রহর
মন্দিরে মন্ত্রের মতো ধ্বনি জাগে, যাগযজ্ঞে আছি মনে হয়
ঝর্ণা নামে রক্তস্রোতে, অব্যক্ত ও অব্যাহতিহীন কলরোল শুধু কলরোল।
আত্মপ্রকাশের এক গাঢ় ইচ্ছা
হটাৎ আকাশ ছুঁয়ে ফুটে উঠবার এক গাঢ়তর অসুখ ও জ্বর
বুকের ভিতরে এনে জড়ো করে ক্রমাগত, অনবরতই,
রাশীকৃত গাছপালা, শুকনো হাড়, শিকড়-বাকড়,
নৌকোর ভাঙা দাঁড়, অফুরন্ত কালো জল ও সুর্যকিরণ।

স্থির হয়ে বসে আছি তবু কলরোল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *