সঞ্চয় (আজি পড়ে মনে)

সঞ্চয়

আজি পড়ে মনে
মুখর নদীর তটে, মর্মরিত দেওদারবনে,
কোনও এক নিদাঘের জনশূন্য দিনে
সদ্যস্নাত দেহ রাখি তৃণে,
বলেছিলে অকপটে, হে লীলাসঙ্গিনী,
আপনার অতীত কাহিনী।
উপেক্ষি মিনতি,
হানি মোর চুম্বনে বিরতি,
বলেছিলে সে-নিকুঞ্জে কী মহার্ঘ দান
পেয়েছে তোমার কাছে মোর পূর্বে কত ভাগ্যবান।।

তার পরে বিশ্বস্ত নয়ানে
চেয়েছিলে মুখপানে; বেজেছিল অকস্মাৎ কানে,
অধরার আকৃতির মতো,
তোমার সংযমগত
প্রিয়সম্বোধন।
তবু মোর অভিমানী মন,
মার্জনায় অপারগ, ভেবেছিল ভবিষ্যতে নাই
কৃতজ্ঞ স্বীকৃতি কিংবা স্মৃতির বালাই,
চেয়েছিল প্রমাণিতে নিদারুণ মোর দস্যুতার
নির্বিকার
ক্ষেত্র-মাত্র তুমি,—
কীর্তির সমাধিস্তূপ, স্বত্বশূন্য, মুক্ত মরুভূমি,
যার ’পরে
অবৈধ প্রবৃত্তি মোর অবাধে বিচরে
অবলুপ্ত ধন-রত্ন-আশে;
রিক্ত যৌবনের পূর্তি ঘটায়ে প্রবাসে,
ঘরে ফিরে, যথারুচি অপচয় করিব সে-ধন।।

বুঝিনি তখন
আত্মপ্রসাদের শত্রু, সেই ইতিহাস
অনাগত সর্বনাশে হবে মোর অনন্য আশ্বাস।
তোমার নয়নে
অতীতের ছায়া অবলোকি,
শুধায়েছিলাম তাই, ঈর্ষায় কণ্টকি,
“কেন রবে মনে?
আমি নিমেষের সখা, শুধু তব চাঞ্চল্যের সাথী,
চ’লে যাব স্বল্পপ্রাণ নিদাঘের শেষে
নিরুদ্দেশ থেকে নিরুদ্দেশে।
স্বপ্নাদ্য প্রেমের কলি জাগাল যে-রবির প্রভাতী,
প্রথমে যে-অলি
উচ্ছল হৃদয়সুধা ল’য়ে, গেল চলি,
স্থান তব তাদের স্মরণে।
লাঞ্ছিত ভ্রমর,
মলয়ের ভ্রষ্ট অনুচর,
অকারণে
মধুরিক্ত কমলেরে করিলাম আমি প্রদক্ষিণ॥”

বিগত সে-দিন;
সে-মৎসর অহংকার চিহ্নহীন অক্ষম ধিক্কারে;
রুদ্র কালবৈশাখীর প্রহারে প্রহারে
অপর্ণ সে-উপবন, যার মাঝে নষ্টনীড় স্মৃতি
ঘুরে মরে নিতি,
আর মানে নিরুপায়ে জীবনের পরম সঞ্চয়
নিক্রোধ নয়নে তব ব্যথিত বিস্ময়।।

১০ ডিসেম্বর ১৯২৯

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *