2 of 3

শাপে বর

শাপে বর

শাপ অর্থ অভিশাপ বা অভিসম্পাত অর্থাৎ কারো উদ্দেশে অমঙ্গলসূচক বাক্য প্রয়োগ। বর শব্দের অর্থ আশীর্বাদ, অভীষ্ট বা দেবতার কাছে যাচিত বস্তু। কেউ কারো অমঙ্গল ঘটার জন্য অভিশাপ দেবার পর যদি বিপরীত ফল হয় অর্থাৎ তার মঙ্গল ঘটে যায় তবে তাকে শাপে বর বলে।

অযোধ্যার সূর্যবংশীয় রাজা দিলীপের পুত্র রঘু, রঘুর পুত্র অজ এবং অজের পুত্র দশরথ। রাজা অজের ঔরসে ইন্দুমতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন দশরথ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর অজ তার রাজ্যের ভার দশরথকে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দশরথের তিন প্রধান রাণী হলেন কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। দীর্ঘকাল দশরথ অপুত্রক ছিলেন বলে তার মনে স্বস্তি ছিল না।

অপুত্রক রাজা দশরথ মৃগয়া করতে বনে গেছেন। সরযূ নদীর তীরে সেই বন। সেখানে ছিল অন্ধকমুনির আশ্রম। অন্ধক ও তার স্ত্রী (অন্ধক বৈশ্য ছিলেন এবং তার স্ত্রী শূদ্রকন্যা) দুজনেই অন্ধ ছিলেন। তাদের একমাত্র পুত্র সিন্ধু।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে বনভূমিতে। অন্ধকমুনির পুত্র সিন্ধু ঐ সময় নদীতীরে কলসিতে জল ভরছিলেন। দশরথ ভাবলেন বিশাল এক হাতি যেন নদীতীরে জলপান করছে। রাতের অন্ধকারে ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই মুনিকুমারকে হাতি ভেবে নিক্ষেপ করলেন শব্দভেদী বাণ। সিন্ধুর আর্তনাদে দশরথ ছুটে গিয়ে প্রকৃত অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।

সিন্ধুর অনুরোধে অন্ধকমুনি ও তার স্ত্রীকে আনা হলো ঘটনাস্থলে। সিন্ধুই অন্ধ মা-বাবার দেখাশুনা করতেন। সেখানেই সিন্ধুর মৃত্যু হলো এবং তার মা-বাবাও শোকের জ্বালা সইতে না পেরে পুত্রের জ্বলন্ত চিতায় নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিলেন।

চিতারোহণের পূর্বে বৃদ্ধ মুনি দশরথকে তার মতো পুত্রশোকে মৃত্যুর অভিশাপ দেন। এই অভিশাপ দশরথের জন্য তেমন ক্ষতির কারণ হয়নি কারণ তিনি তখনও অপুত্রক। পুত্র না থাকায় পুত্রশোকে মৃত্যুর প্রশ্ন আসে না। সে কারণে প্রকারান্তরে রাজা দশরথ অন্ধকমুনির কাছে পুত্রলাভের বরই পেয়ে গেলেন।

পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ করি যে, রাজা দশরথ ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির দ্বারা পুত্রেষ্টি-যজ্ঞ সম্পাদন করান পুত্র লাভের জন্য। অতঃপর কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে যমজ সন্তান লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন জন্মগ্রহণ করেন।

অন্ধকমুনির অভিশাপ রাজা দশরথের পুত্রলাভে সহায়ক হয়েছিল। এরূপ অনিষ্টের মধ্যে ইষ্ট লাভ হলে শাপে বর প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *