শতাব্দী

চার দিকে নীল সাগর ডাকে অন্ধকারে, শুনি;
ঐখানেতে আলোকস্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে ঢের
একটি-দুটি তারার সাথে — তারপরেতে অনেকগুলো তারা;
অন্নে ক্ষুধা মিটে গেলেও মনের ভিতরের
ব্যথার কোনো মীমাংসা নেই জানিয়ে দিয়ে আকাশ ভ’রে জ্বলে;
হেমন্ত রাত ক্রমেই আরো অবোধ ক্লান্ত আধোগামী হয়ে
চলবে কি না ভাবতে আছে — ঋতুর কামচক্রে সে তো চলে;
কিন্তু আরো আশা আলো চলার আকাশ রয়েছে কি মানবহৃদয়ে।
অথবা এ মানবপ্রাণের অনুতর্ক; হেমন্ত খুব স্থির
সপ্রতিভ ব্যাপ্ত হিরণগভীর সময় ব’লে
ইতিহাসের করুণ কঠিন ছায়াপাতের দিনে
উন্নতি প্রেম কাম্য মনে হলে
হৃদয়কে ঠিক শীত সাহসিক হেমন্তলোক ভাবি;
চারি দিকে রক্তে রৌদ্রে অনেক বিনিময়ে ব্যবহারে
কিছুই তবু ফল হল না; এসো মানুষ আবার কেখা যাক
সময় দেশ ও সন্ততিদের কী লাভ হতে পারে।
ইতিহাসের সমস্ত রাত মিশে গিয়ে একটি রাত্রি আজ পৃথিবীর তীরে;
কথা ভাবায়, ভ্রান্তি ভাঙে, ক্রমেই বীতশোক
করে দিতে পারে বুঝি মানবভাবনাকে;
অন্ধ অভিভুতের মতো যদিও আজ লোক
চলছে, তবু মানুষকে সে চিনে নিতে বলে:
কোথায় মধু–কোথায় কালের মক্ষিকারা — কোথায় আহ্বান
নীড় গঠনের সমবায়ের শান্তি-সহিষ্ণুতার—
মানুষও জ্ঞানী; তবুও ধন্য মক্ষিকাদের জ্ঞান।
কাছে-দুরে এই শতাব্দীর প্রাণনদীরা রোল
স্তব্ধ করে রাধে গিয়ে যে-ভূগোলের অসারতার পরে
সেখানে নীলকন্ঠ পাখি ফসল সূর্য নেই,
ধূসর আকাশ — একটি শুধু মেরুন রঙের গাছের মর্মরে
আজ পৃথিবীর শূণ্য পথ ও জীবনবেদের নিরাশা তাপ ভয়
জেগে ওঠে — সুর ক্রমে নরম — ক্রমে হয়তো আরো কঠিন হতে পারে;
সোফোক্লেস ও মহাভারত মানবজাতির এ ব্যর্থতা জেনেছিল; জানি;
আজকে আলো গভীরতর হবে কি অন্ধকারে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *