রথ দেখা ও কলাবেচা
পুরীর জগন্নাথদেব বুদ্ধমূর্তির রূপান্তর এবং রথযাত্রাও বৌদ্ধগণের রথোৎসবের অনুকরণ বলে মনে করেন অনেক পণ্ডিত। বুদ্ধদেবের একটি দাঁত দীর্ঘদিন পূরীতে সংরক্ষিত ছিল এবং পরে তা শ্রীলঙ্কায় প্রেরণ করা হয় বলে অনেকের অভিমত। একথা ঠিক যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সিংহভাগই এসেছে মহাযানী বৌদ্ধদের হাত ঘরে। কারণ আজকের বাঙালির পূর্বপুরুষদের সেই ধারা বহন করছে ধর্মীয় আদর্শের দিক থেকে আপাত পৃথক বলে গণ্য হলেও।
প্রাচীন ধারার অনুকরণে আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে সনাতনপন্থী হিন্দুরা জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করে। প্রাচীন স্মৃতি-জাগানিয়া রথ বা শকটযান সাজিয়ে সেখানে স্থাপন করা হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। রথের দড়ি টানা পুণ্যের কাজ বলে মনে করেন ভক্তরা। রথে উপবিষ্ট দেবতাদের উদ্দেশে রাস্তার দুপাশ থেকে ভক্তরা নিবেদন করে কলা, পান, চিনি। অর্থাৎ এগুলোই হলো দেবতার উদ্দেশে ভক্তের দান। প্রাচীনকাল থেকে এ ধারা চলে আসছে এদেশে।
রাস্তা দিয়ে যখন রথকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তখন রীতিমতো জমজমাট থাকে সে এলাকা। বিশাল মেলা হয়ে ওঠে সেখানে। সে মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় কলা, পান ও চিনি। একজন ব্যক্তি রথ দেখার পুণ্য অর্জনের পাশাপাশি মেলায় যদি কলা বিক্রি করে তবে তার দুদিক থেকে লাভ। সে যেমন পরকালের জন্য পুণ্য অর্জন করছে, ঠিক তেমনি জাগতিক মঙ্গলের কাজ সেরে নিচ্ছে কলা বিক্রির লভ্যাংশ থেকে।
এ কারণে যদি কেউ একই সঙ্গে উপভোগ ও অর্থ অর্জন এই উভয়বিধ উদ্দেশ্য সাধন করে তবে রথদেখা ও কলাবেচা প্রবাদটি প্রযুক্ত হয়। ইংরেজিতে বলা হয়- Killing two birds with one stone বা এক ঢিলে দুই পাখি মারা।