রক্ত-তিলক
শত্রু-রক্তে রক্ত-তিলক পরিবে কারা?
ভিড় লাগিয়াছে – ছুটে দিকে দিকে সর্বহারা।
বিহগী মাতার পক্ষপুটের আড়াল ছিঁড়ে
শূন্যে উড়েছে আলোক-পিয়াসি শাবক কি রে!
নীড়ের বাঁধন বাঁধিয়া রাখিতে পারে না আর,
গগনে গগনে শুনেছে কাহার হুহুংকার!
কাঁদিতেছে বসি জনক-জননী শূন্য নীড়ে,
চঞ্চল-পাখা চলেছে শাবক অজানা তীরে।
সপ্ত-সারথি-রবির অশ্ব বল্গা-হারা
পশ্চিমে ঢলি পড়িছে; যথায় সন্ধ্যাতারা
ম্লান মুখে কাঁদে হৃত-গৌরব ভারত-সম,
ফিরাবে রবিরে – আজি প্রতিজ্ঞা দারুণতম।
দেখাইছে পথ বজ্র জ্বালিয়া অনল-শিখা,
বিজয়-শঙ্খ বাজায় স্বর্গে জয়ন্তিকা।
পশ্চিম হতে আনিবে পূর্বে রবির চাকা,
বিধুনিত করে বিপুল শূন্যে চপল পাখা।
কণ্ঠে ধ্বনিছে মারণ-মণ্ত্র শত্রুজয়ী,
পার্শ্বে নাচিছে দানব-দলনী শক্তিময়ী।
রিক্ত-ললাট চলেছে মৃত্যু-তোরণ-দ্বারে,
রাঙাবে ললাট শত্রু-রক্তে মরণ-পারে।
শত্রুরক্তে-চর্চিতভালে তিলকরেখা,
পরাধীনতার অমা-যামিনীতে চন্দ্রলেখা।
সাত্ত্বিক ঋষি বৃথা হোমানলে আহুতি ঢালে,
যত মরে তত বাঁচে গো দৈত্য সর্বকালে।
দধীচির হাড়ে লাগিয়াছে ঘুণ অনেক আগে,
বজ্রে কেবলই সৃষ্টি-কাঁদন-শব্দ জাগে!
ইন্দ্র, চন্দ্র, বরুণাদি দেব বীর্যহারা,
তেমনই কাঁদিছে দৈত্য-প্রহরী বিশ্ব-কারা।
শ্মশান আগুলি জাগে একা শিব নির্নিমিখ,
আঁধার শ্মশান, শবে শবে ছেয়ে দিগ্বিদিক।
কোথা কাপালিক, ভীমা ভৈরবী-চক্র কই,
নাচাও শ্মশানে পাগলা মহেশ তাথই থই!
মহাতান্ত্রিক! রক্ততিলক পরাও ভালে,
কী হবে লইয়া জ্ঞান-যোগী-ঋষি ফেরুর পালে!
শবে ছেয়ে দেশ, শব-সাধনার মন্ত্র দাও,
তামসী নিশায়, জামসিক বীর, পথ দেখাও!
কাটুক রাত্রি, আসুক আলোক, হবে তখন
নতুন করিয়া নতুন স্বর্গ-সৃষ্টি-পণ।
তামসী নিশার ওরে শ্মশানের শিবার দল!
শব লয়ে তোর কাটিল জনম; বল কী ফল
ঝিমায়ে ঝিমায়ে ভবিষ্যতের হেরি স্বপন?
আজ যদি নাহি বাঁচিলি, বাঁচিবি বল কখন?
আজ যদি বাঁচি, কী ফল আমার স্বর্গে কাল?
আজের মর্ত্য সেই সে স্বর্গ সর্বকাল!
আহত মায়ের রক্ত মাখিয়া লভি জনম
পুণ্যের লোভে হবি বকধার্মিক পরম?
রক্তের ঋণ শুধিব রক্তে, মন্ত্র হোক!
হস যদি জয়ী, পূজিবে রে তোরে সর্বলোক।
না দেয় দেবতা আশিস, না দিক, ভয় কী তোর?
কী হবে পূজিয়া পাষাণ-দেবতা পুণ্য-চোর?
জন্মেছি মোরা পাপ-যুগে এই পাপ-দেশে,
করিবি ক্ষালন এ মহাপাপেরে ভালোবেসে?
আঁধার-কৃষ্ণ-মহিষ-অসুর বধিতে কৃষ্ণ খড়গ ধরো,
শবের-শ্মশানে হয়তো উদিবে সেদিন শুভ্র গৌরী-হর!