যা উপনিষদ, তাই কোরান – সুবোধ সরকার
প্রথম সংস্করণ: জানুয়ারি ২০০৬
শঙ্খ ঘোষ, আপনাকে
সুজলাং সুফলাং একজিট পোল
এসো পান, এসো পাত্র, এসো মুখ, ধরো
এসো বীর, এসো ভোগ্যা, এসো ভোগ করো।
তুমি না করিলে ভোগ ওরা দেবে উলু
রাষ্ট্র বাঁচে যদি বাঁচে হাতকাটা দুলু।
এসো চন্দ্র যাও বাবু এসো হতাহত
এসো বজ্র, মহাদ্রুম, দলিত অক্ষত।
হাতে হাতে মোবাইল, ধানক্ষেতে হুস্
বেহুলা বোতলসম কলেজে বেহুঁশ।
বাজে কথা বলছেন: বোতল নির্দোষ
বোতল করে না পান, করে আপসোস।
এসো কীর্তি, এসো নাশ, যাও অনশন।
এসো বন্ধ, খোলো দ্বার, শত কারখানা
এসো বর্ম, এসো ব্যাঙ্ক, বুর্জোয়ার খানা।
এসো বীজ, এসো ধান, এসো মা মৃত্তিকা
ধানক্ষেতে শুতে এসো প্রোষিতভর্তৃকা।
যে দেশে কৃষক আজ আত্মহত্যা করে…
আজ থাক ইস্যুটাকে তোলা হবে পরে।
এসো তেল, এসো অগ্নি, পেট্রোলিয়াম
রেশন কার্ডের লোভে জন্মেছিলাম।
দাও পুত্র, ঢালো বিষ, মধুপাত্র শেষ।
যাও ধর্ম, জাতে ওঠো, যাও জল অচল
চণ্ডাল লিখুক কাব্য বিন্ধ্য হিমাচল
যাও থুতু, যাও বিষ্ঠা, যাও ক্যাবিনেট
ভুল অর্থনীতি যাও ঋণং পিবেত।
এসো ধান এসো দূর্বা, লক্ষ্মী নীলাম্বরে
কেন রে বাস্টার্ড, চাষি আত্মহত্যা করে?
সুরম্য হর্ম্যরাজি চলে ককটেল
ভারতবর্ষ তোলে খাবার অঢেল।
চলিতেছে রণতরী, গমের জাহাজ
আমরা ইতালি যাব, গ্রীস যাব আজ।
জাভা আর সুমাত্রায় গিয়াছেন ওরা
করেছিস কার্গিল, সিয়াচেন তোরা।
জলে ভাসমান দ্বীপ, দ্বীপে হলাহল
তার ঘরে নাচ হবে, যার ঘরে বল।
বল কই, বল কই? বল কার ঘরে?
আমেরিকা বল সুদ্ধ নগ্ন ধরা পড়ে।
মৃদুমন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস।
চোখে চোখে তৈরি হয় যখন বিদ্যুৎ
নীচের তলার ঘরে ঢোকে রাজদূত।
নীচের তলায় যদি শিকড় না থাকে
ভালবাসা দিতে নেই একে ওকে তাকে।
শিকড় যদি না পায় জল আর মাটি
কোথায় গড়িয়া আর কোথায় বিরাটি?
এত রূপ, এত দাহ, হঠকারী হিয়া
ভালবেসে অন্ধ হও ওগো বড়েমিঁয়া।
এসো ভূমিহারাদের পুণ্য গো-বলয়।
দলিত কেউ না আজ পোড়াও উষ্ণীষ
ক্যাবিনেটে গঙ্গাবক্ষে ঘুষ নিয়েছিস।
কফিনের কেলেঙ্কারি, উঠে বসে মৃতা
কে যে তার সহোদর, কে যে পারমিতা?
তবু আছে একজন, খুশি হবে বলে
ধান থেকে অন্ন থেকে পরমান্ন হলে।
স্বাতী আর কৃত্তিকাও যদি পড়ে খসে
মুদির দোকানে আমি চন্দ্রাহতসম
বোঝা যায় কেন দেশ গণেশায় নমঃ।
বসে আছি সমুদ্রের মাছের আড়তে
এত জল, তবু এত পিপাসা ভারতে!
এনে দিতে পারলে না ঘরে ঘরে চাঁদ?
গোলা ভরা ধান হত, শিল্প গঙ্গাতীরে
বঙ্গ হত সুজলাং, বঙ্গ হত হিরে।
গণতন্ত্র মূষিকের স্বপ্নে পাওয়া ফল।
কে যে কার সঙ্গে আছে কে যে কার বাবা
সব পাখি উড়ে যাবে ইদ্দিস আবাবা।
তবু বসি মুখোমুখি, নাটোরের মেয়ে
ঘাটে বসে আছ তুমি কার পথ চেয়ে?
রাজপুত্র বলেছিল থেকো অপেক্ষায়
ঘাটে বসে আছে মেয়ে দিনরাত্রি যায়।
বিশ্বায়ন উপনীত ‘বন্দরের নীড়ে’
ভারত তিমিরে আজো ছিল যে তিমিরে।
চেয়ে চেয়ে মেয়ে আজ বসুন্ধরা নিজে।
যদি প্রেম সত্যি হয়, থাকে ভালবাসা
সব নদী, রাজ্য, নারী ফিরে পাবে ভাষা।
কোয়ালিশনের জল যেন পায় চাষি
নাটোরের মেয়েটিকে আমি ভালবাসি।
খসিয়া পড়িল মিথ
পঙ্কে পড়িল হাতি, লোকাল মাস্তান
ব্যাঙ এসে মেরে গেল লাথি আয়ুষ্মান।
ব্যাঙ ছিল ভিটেহারা, প্রলেতারিয়েত
লিঙ্গ হল ভগবান, ভগবতী পেট।
লোকাল মাস্তান মানে হাতকাটা বিশু
যোজনায় খোঁজ নাই মিনিবাস ইস্যু।
কাঞ্চন যতটা ভাল, ততটা কোকেন।
মধুচক্রে-ধরা-পড়া হোটেল-মালিক
কোকিল শ্রাবণদিনে হয়েছে শালিখ।
বাড়াভাতে ছাই দিতে ঢুকেছে পুলিশ
সংসদে অনাহার-ইস্যুটা তুলিস।
খসিয়া পড়িল মিথ, খসিল আগল
বসিয়া পড়িল পার্টি, বসিল মিটিং
বাছুর কহিল, বৃষ, ভেঙে ফ্যালো শিং
কানকাটা, হাতকাটা, শিঙভাঙা বিশু
পুলিশ কমিশনার তার কাছে শিশু।
দড়ি বেঁধে হাতি তোলে লোকাল কমিটি
লোকে বলে নেকসাস পাড়ায়-পাড়ায়
এইভাবে মাস্তানের বাড় বেড়ে যায়।
তিলে-তিলে কলকাতা তিলোত্তমা যবে
প্রকৃত গরিব কবে বড়লোক হবে?
ওঁ, জবাকুসুম
আমি তোমার দালাল নই, সূর্যাস্ত
আমি তোমার গোপন মারুবেহাগ।
মিসিসিপির জলে আমার রাগ।
জলকে আমি বলতে আসি
আমি তোমার তারিফ করি ম্যানহাটান।
আমেরিকার নুন খেয়েছি, নুন কী অভিমান?
দেশ ছেড়েছে বলেই ওরা নিজের দেশ পেলো।
মিসিসিপির জলে আমার রাগ।
জলের নীচে আমার দুটো কবিতা আর্বিতে
রক্তলাল হবে সেদিন আমেরিকার নদী।
চেক রিপাবলিকের কমিউনিস্ট সুন্দরীকে
দুদিকে তার রোদ পড়ে না
একদিকে সে হাসতে পারে
একদিকে সে হাসে না।
এখন সে এক মরা নদীর চর।
ক্যাসিনো জুড়ে একদিকে সে হারে
একদিকে সে হারে না।
সে নয় আর রাশিয়া-নির্ভর।
একদিকে সে বলতে পারে
একদিকে সে বলে না
সেবার বলে হারিয়েছিল ঘর।
একদিকে সে চুল খুলে দেয়
একদিকে সে খোলে না।
নিজের লোক হয়েছে আজ পর।
তুমি যেমন একটা দিকে ভাল
একটা দিকেই যদি আগুন জ্বালো
কপাল দেখি, কমেনি দুই জ্বর।
একদিকে আমি বলতে পারি
একদিকে যে পারি না।
ভল্গা থেকে গঙ্গা, তুমি বিরাট চর।
মাফিয়া
তোমার বাবা তোমাকে যদি চড় মারেন
তুমি কি তাকে পাল্টা চড় মারতে পারো?
আরেক গালে চড় মারো।’
আজকে তুমি আমেরিকায়, কালকে তুমি যাচ্ছ চিনে
আদিবাসীদের উস্কে দিয়ে
রাজভবনে মিটিঙ সারো।
যখন পড়ে, বামাল সহ পড়ে
পড়েই, উঠে দাঁড়ায়, চুল আঁচড়ে নিয়ে বলে
লোভ কী ভাব অত সহজে মরে?
বলতো ভাই, মারবে কাকে?
কপালে আজ যা থাকে
মুণ্ডু যার উড়তে গেছে
বন্ধ্ ডেকেছে কালকে যার ধড়…
কে তাকে ভার দিয়েছে চড় মারার?
মার খেয়েছি, মাফিয়া হব, আর কিছু নেই আমার।
শশিভূষণ রায়
মারের আগে উঠে দাঁড়াই
মারের পরে বসি
দরজা খোলে শশী।
সেই আমাকে বাঁচাতে পারে
মঞ্চ
মঞ্চে
একরকম মদ থাকে।
যারা
মঞ্চে ওঠেন তারাই শুধু
সেই মদ পান করেন।
একটা পরিষ্কার গ্লাসে
পরিষ্কার জল রাখা থাকে।
ওটা মদ
মন্ত্রী
কবি
আমলা
ভাইস-চ্যান্সেলর
সবাই ওই মদ পান করেন।
কী বললেন, বিশ্বায়ন?
আমি আমেরিকায় গিয়ে শুনে এলাম
লোকে ওখানেও বলছে:
দিনকাল যা পড়েছে
তুমি তোমার খাবারের কাছে ঠিক সময়ে
পৌঁছতে না পারলে
অন্য একজন পৌঁছে যাবে।
গরিব লোকেরা করত।
এখন বছরে তিনবার ধান হয় বলে
একজন ভিখিরি, একজন পাগলের খাবার
কেড়ে নেওয়ার আগে দুবার ভাবে।
মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করতেন অংশুমান রায়
কী ভাল, তার অফিস তাকে সপরিবারে
মরিশাস পাঠাল বেড়াতে।
দশদিন বাদে ফিরে এসে দেখল
তার চেয়ারে বসে আছে তার থেকে একটু ফর্সা
তার থেকে একটু লম্বা
তার চেয়ে একটু ঘন চুল অন্য এক
অংশুমান রায়।
ওই তো
ওই তো, উঠে দাঁড়াল যার শুয়ে থাকার কথা।
যার ওদিকে, যার এদিকে ফেউ
তাকে কী করে অনেকে ভালবাসে?
বারো ইঞ্চির সত্য
বেনারসী পড়লে কোন মেয়েকে ভাল দেখায় না
ন্যাতা পড়লে দেখায়।
বাংলা খেলে দেখায়।
মোবাইল মানায়।
ফুকো দেরিদা পড়ে।
ভোট দেব কাকে?
আলো কেমন লাগে আপনার?
বাড়িতে অসুখ।
কেন হলুদ হয় জানেন?
কী করে এই বারো ইঞ্চির সত্যকে মেনে নেবেন আপনি?
সব বিষয়ে কথা বলবেন না
আনন্দবাজার আর আলিমুদ্দিন একসঙ্গে হয় না— কেন, হচ্ছে তো?
তেলের খনিতে জল ঢুকেছে— তাই নাকি গো?
একদিন রায়চক সিঙ্গাপুর হবে— কী ভাল, কী ভাল
ঘুড়ি কখনো পৃথিবীতে থাকতে চায় না— যাচ্চলে!
প্রেমে পড়লে টুথপেস্ট বেশি লাগে— লাগবে না?
কার্ল মার্কস বাঙালির ঘরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে— উনি কি তালগাছ?
সব বিষয়ে মন্ত্রীরা কথা বলবেন না— এই তুমি মন্ত্রী?
শঙ্খ ঘোষ আর বাদল বসুকে কালো জামা পড়াতে পারবেন?
আমি কাউকে রেয়াৎ করি না— কী কইলেন, ঘোড়ায় হাসব।
নোরা জোন্স না অনুষ্কা কে ভাল, চেপে যা পণ্ডিতজী বকবেন।
বড় গিরগিটি ছোট গিরগিটিদের খেয়ে ফেলে— নমঃ বিষ্ণু, নমঃ
আমরা ডাক্তার নই, আমরা অসুখ— ইতি একজন ফুচকাঅলা।
আপনার পাপ আপনার হিপ পকেটে রাখুন
আপাতত সব চিহ্ন মুছে ফেলতে হলে
গুলি করতে হবে পাঁচবার
মানে, একটু খরচা আছে।
দুটো গুলি করবেন স্তনে
প্রথমে বাঁদিকে
অর্থাৎ সুজলাং ফেটে ছাতু হয়ে যাবে
তারপর ডানদিকে
সুফলাং হয়ে যাবে চাকদহ।
ওটা উপত্যকা
আপেল চাষিদের ভোরবেলা।
দুপায়ের ফাঁকে ওই তমসাপ্রধান
দেদীপ্যমান রজনীতে
দুটো গুলি করবেন।
আপনার পাপের।
ওটা আপনার হিপ পকেটে রাখুন
এবং টেবিলে রাখুন একটা পাঁইট।
আপনার ১৯ বছরের মেয়ে যদি তিন্নির সঙ্গে করা হয়, কেমন লাগবে?
বুরুদ্বীপে ১৪ হাজার কমিউনিস্ট বন্দি
ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের স্পিডে
গাড়ির সামনে এসে হরিণ দাঁড়ালে
যেভাবে বিদ্যুৎ বেগে গাড়ি থেমে যায়…
দুপুরে খবর পেয়ে, মনটা খারাপ হয়ে গেল।
চায়ের সুন্দর কাপে কে যেন মিশিয়ে দিল তিতো
এখনো অনেকগুলো সই বাকি আছে
জরুরি মিটিঙ আছে আরো
প্রেস মিট আছে
আমি সব পারব তো, হাত কাঁপবে না?
কে পৌঁছে দিয়ে গেল? কেন দিয়ে গেল?
কী আর করতে পারি আমি?
আমারও বাঁদিকে আছে ছোট্ট ডাইনামো
বামপন্থী হোক, আগে সে হৃদয়।
আমার চোখের পাতা কাঁপল দুবার
কেউ যেন বুঝতে না পারে
কলম শক্ত করে ধরি, সই করতে হবে
এ কী? এটা কি আমার সই?
বাংলায় লেখা এ তো চারটে অক্ষর?
একে সই বলে?
বুরুদ্বীপ ঠিক কোনদিকে?
ইন্দোনেশিয়ার ঠিক কোনখানে?
ম্যাপ পেলে ভাল হত।চাইব নাকি? না থাক।
আমিও পালিয়ে বেরিয়েছি।
খাবার জোটেনি
জঙ্গলে জঙ্গলে আমরা দিন কাটাতাম
তবু সেটা ছিল
স্বপ্নের দিন
চা-বাগানের দিন, কয়লাখনির
কবিতার দিন
গোপন বাড়ির ছাদে আসল আকাশ
প্রচুর কাঁকড়াবিছে? সুতাশঙ্খ সাপ?
তিলের মতন পোকা? কানে ঢুকে ব্রেন খেয়ে নেয়?
আমার চোখের শিরা দপদপ করে। শিরদাঁড়া দিয়ে জল নেমে যায়
বমি হবে না তো?
এরা কারা? এত লোক; হাতে হাতে ঘুরছে ফাইল
এরা কারা মানে?
আমি কি জানি না এরা কারা?
এদের আমরা দেব গ্রাম
এরা দেবে মাল্টি-ন্যাশনাল।
উড়াল-সরণি দেবে, করে দেবে বিমান বন্দর
আমরা বারুইপুর দেব
এরা দেবে সিঙ্গাপুর, সোনার হরিণ
আমরা শিয়ালডাঙা দেব
এরা দেবে আমাদের চাষিকে দোতলা।
আমরা কবরডাঙা দিলে
নক্ষত্রের সহোদর এনে দেবে ওরা।
একেই তো বলে ‘হুস’—
তিনশো বছর ধরে চাষি কেন কৃষক থাকবে?
আপনার বাবা ছিল গরিব মাস্টার
আপনি অধ্যাপক আজ
চাষির ছেলেটি কেন ভিসা কার্ড নিয়ে
রায়চকে শপিং সেন্টারে
জিন্স কিনবে না?
চিনে যদি দেখা যায় এই দৃশ্য, এখানে হবে না?
এই বাসে আমাদের উঠতেই হবে
না হলে মরতে হবে চিংড়িডাঙায়।
ধ্রুবতারা হো হো করে হাসবে আকাশে।
কিন্তু আমার মন বলছে:
এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?
এ কোন কাগজে সই করছি?
আমার নিজের সই আমাকে বুঝতে পারে আর?
কোথায় লুকোনো ব্যথা, কোনখানে অসহ্য সন্তাপ
মধ্যযামে পেরেকের খোঁচা?
উটে বসে মার্কোয়েজ পড়ি।
সই না করতে পারি যদি, শেষ হয়ে যাব আমি
পারাপার বন্ধ হয়ে যাবে
মাঝিমাল্লা চাষাভুষো খাদান মজুর মরে যাবে
উদ্ভিদ হবে না
তবে আর কাকে নিয়ে ধ্রুবতারা হবে?
গরিব চাষির ছেলে পার্ক স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে বলছে:
এই কল্লোলিনী আজ আমিও, আমারও
কত স্বর্ণমুদ্রা চাও?চেক কেটে দেব?
আমি ভোগ করব এখন
একদিন তোমরা করেছ
চাষির ছেলেরও চাই তিল থেকে তিলে তিলে তীব্র তিলোত্তমা।
এইবার বুরুদ্বীপে যাব।
বিবিসি না কি সিএনএন
কোরান বলছে:
ছোট্ট ছোট্ট সোনা বন্ধুরা
তোমরা
পরস্ত্রীকে নিয়ে
পালিয়ে যেয়ো না।
আগুন দিয়ো না
চার-চারটে
বউ রেখো না।
ধান কেটে নিয়ে যেয়ো না।
থেকে নিজের বউকে
ফোন কোরো না।
ওঁ স্বাহা, কারোর পকেট মেরো না
আলো এসে পড়ুক
অগ্নি আমার সাক্ষী
অরণি আমার প্রাণ
গোরুদান, অন্নদান আমার বৃত্তি
বায়ু আমার পিত্তনাশক
এলে উপনিষদ
একটা SMS পাঠাতো:
যা বিবিসি তাই সিএনএন।
নগ্ন উপাসনা
১
তোমার দীঘিতে নামি রাত বারোটায়
কী করে পৃথক করি বৃন্তে ও বোঁটায়?
২
কল ঢুকে যায় মুখে, ঢোকে ব্ল্যাকহোলে
ওঁ স্বাহা, ভালো হত আমি ভালো হলে।
৩
সোনা পাব বলে, মাটি তুলে দেখি হিরে
রাজা ও ভিখিরি একইভাবে আসে ফিরে।
৪
থরো থরো কল, করো যা যা তুমি পারো
বাঁচাও, না হলে, কল খুলে দিয়ে মারো।
৫
রাখো বৃষ্টি, রাখো মদ, রেখে দাও তোমার শর্বরী
উনিশ মুদ্রায় এসো গান্ধীর পায়ের কাছে মরি।
৬
দুপায়ের ফাঁকে পেতেছি কান
যা উপনিষদ, তাই কোরান।
৭
ক্লিটোরিস, তুমি ছিলে ঘোষ বোস গুহ
এখন পদবি নেই, নীল চক্রব্যূহ।
৮
ইরাক জুড়ে লিঙ্গ খোঁজে যোনি
এখন এলে, কেন যে তুমি আগে খোঁজনি?
৯
যা তুমি ধরতে পারো, ধরো
কৃষিকাজ নিয়ে কেন খালি তর্ক করো?
১০
ধান দুগ্ধ যোনি
তুমি কি ভালবাসনি?
ওয়ান ফর দ্য রোড
সাদা না কালো?
বেড়াল সাদা না কালো, কী দরকার, ইঁদুর ধরতে পারে কি?
কবিতা
হালিশহরের গঙ্গার মতে, মাঝের চরে মানুষ থাকে।
এতদিন?
সে ছিল, সে ছিল না, কিন্তু তার চায়ের কাপ পড়ে রয়েছে সতেরো বছর।
কিক
বেঁচে থাকা মানে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের মাঝখানে একটা ফ্রি কিক।
আগুন লাগলেও
আমি আমার ছেলেকে বলব না, ‘আমি না ফেরা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকো’।
বিশ্ব
মাওবাদীদের সঙ্গে স্নান, আমেরিকায় বিয়ার খান।
মাতাল
মাতালের সবুজ ব্যাগে ক্যালকুলেটর থাকে।
ভোরবেলা
বিশ্বাসঘাতক, হাঁপানির রোগী এবং খুন হতে পারে যারা তারা মুরগি ডাকার আগে উঠে পড়ে।
আইডেনটিটি কার্ড
আমি হলাম ককটেল ক্যাবিনেটের নীচে একটা ছোট্ট টিকটিকি, সভ্যতার সমকক্ষ।
প্রেম অথবা রিভলভার
একটি ভুল প্রেমের কবিতা
নাভির নীচে তুমি যখন পিঁপড়েটাকে থাকতে দিলে
সেটাই আমি
তোমার ঘরে হঠাৎ ঢুকে বেরিয়ে গেল একটা লোক
সেটাই আমি
স্বপ্নে তুমি দেখতে পেলে গলার কাছে রিভলভার
সেটাই আমি
পতন আর পাপ জমেছে দীর্ঘ পাঁচ মাইল পথে
সেটাই আমি
তোমার পিঠে হাড়ের নীচে যে কামড়াল
সেটাই আমি
শূন্য থেকে তোমাকে তুলে যে বলে এসো শূন্যে মরি
সেটাই আমি
যে পিঁপড়েটা এখানে ছিল, গেল কোথায়?
হ্যাঁ, বলছি তো, সুখের চেয়ে, সোনার চেয়ে
পিঁপড়ে ছিল অনেক দামি।
আমেরিকা, এ পরবাসে রবে কে!
আর কদিন এ পরবাস কত হাজার মাইল দূরে
পকেটে রাখা চিরুনি থেকে কার চুলের গন্ধ পাই
আমাকে আর বনের বাঘ খায় না তেমন
মনের বাঘ কুক্রে খায়।
অনেক পাতা ঝরা
এত খাবার, কিন্তু জিভে আহার নেই, তৃষ্ণা নেই গলায়
আমার চাই আমার ঘর, চাই না সসাগরা।
দু’মাস আমি দেখিনি তোমার খোলা কোমর গঙ্গা
দারুণ গাড়ি, দারুণ বাড়ি, দারুণ সব মেয়ে
তার ভেতরে ঘুমিয়ে পড়ি, রাত্রে ফেরে সংজ্ঞা
সহ্য করি কঠিন পরবাস
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও, যেমন করে পুজোয় ফেরে
ঢাকির সঙ্গে বালক, আর মাঠের ধারে কাশ।
আমি অনেক দোষ করেছি, প্রেমিক ঘুণধরা
একটুখানি আকাশ চাই ভালবাসার
নিজের ঘর, কী হবে দিয়ে বড় বসুন্ধরা?
বিরহ ছাড়া বাঁচতে পারে কেউ?
দুপুরবেলা আঁধার করে এল যখন কলকাতা
লোকটি বলে, শোনো…
ভালবাসার কাঙাল আমি
ভালবেসেও তোমাকে আমি পাব না কক্ষনও
কিন্তু সেই বুকের পাটা কই?
বলতে পারে ‘দরজা খোলা, আমি তোমার
অন্য উপনিষদ লেখা বই।’
আছে অমোঘ টান
কে চায় আর কোর্টে যেতে, ঘুমের দফারফার শেষে
বাসন খানখান!
গাছ কি আর উপড়ে ফেলা সহজ
বন্ধু এসে বলল শোন, দারুণ খেলা, তাহলে চোখ বোজ
যা মেঘ, হুস, আন তো ধরে ওকে
ধরব কাকে? সূর্যোদয় না অস্ত-কে?
কী করে বেঁচে থাকি?
মেয়েটি ভাবে চাকরি ছেড়ে কুচবিহারে
চাকরি নেবে নাকি?
চুরি না করে চোরের মতো
নিজের হিরে
নিজের ঘরে হারানো।
লোকটি বলে শোনো…
ধরো আমায়, ছেড়ো না কক্ষনও
মেয়েটি ধরে, এই তো হাত, এই তো ঘাড়
কোমর, বুক
এই ধরেছি শিরদাঁড়ার হাড়
মানুষ, আমি কষ্টে থাকা অশোকবনে
সে মেয়ে আর নই।
তোমার মতো ভালবাসেনি আমাকে একজনও
কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়াই
বাঁচতে চাই আরও
আজ বসন্ত
আজ বসন্তের ইউটোপিয়া থেকে রেড রোডের দিকে যাচ্ছিলাম
বেহুলা পায়ে পায়ে হাঁটছিল
মেয়েরা হাঁটতেই চায় না, হাঁটলেই, বলবে কোলে নাও
কলাপাতার মতো দু’হাতে বেহুলাকে তুলেছি
বলেছি,শোনো আমি ঘুমোতে পারছি না, ঘুম দাও।
বসন্তের দিনে টাইট জিনসের কোমর ধরে বলি, ‘গিভ মি রেড’
আজ বসন্তের গঙ্গাপারে শুনি বিশ্বায়ন নাকি এসেছিল
বসেও ছিল নাকি বেহেড
বেহুলা পাশে পাশে, ‘স্কচের পর তুমি, এসো না চুমু খাই, থানার সামনেই
বাধবে, বাধা দিলে, চুমুটা কেড়ে নিলে আর কী থাকে পোড়া বসন্তের?
সমাজ সংসার রাগছিল
আজ বসন্তের সন্ধ্যা সাতটায় এল যে এস. এম. এস.
সেখানে লেখা আছে: ‘তোমাকে ছাড়া আমি কি করে একা ঘরে থাকি?’
তোমরা দল বেঁধে ডিনার ককটেলে যাবে
কিন্তু মনে রেখো ভিক্টোরিয়া ছেড়ে তিনটে ইট পাতা উনুনে
তোমার বাবা-মার মুখ।
আরে, ছো, গুলি মারো, সবাই ভাল আজ, বসন্তের রাতে সব ভাল
আকাশ থেকে নামি, পাতাল থেকে উঠি,
কবিতা আলো দেয়? কবিতা পড়তেও লাগে আলো।
হিরে
কারা কারা ভালবেসেছিল?
সুজাতা শরৎ সীমা আলি নিশা নারা
কার ঘরে হিরে এসেছিল?
সেই হিরে হাতে নিয়ে আমি দিশাহারা।
শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট
তোমাকে প্রথমে ভেবেছিলাম শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট।
তুমি রেড রোড তুমি ফোর্ট উইলিয়মে ঢুকে
বেরিয়ে এসেছ।
তুমি আসলে শের শাহের জি. টি. রোড
বাবরের মসজিদ।
তুমি সেই অগম্য সিল্ক রুট
রেশমে ঢাকা তোমার পালকি।
আমার নাম শ্রী অতীশ দীপঙ্কর।
আমি ভারতবর্ষে এসেছি
রাত্রি বারোটায়
ফুট
কিন্তু তার অনেক বহু
তল
উনুন ছিল একতলার
নীচে
বারোতলায় বসানো হল
জল।
ফুট
ছ’ফুট হয়ে দাঁড়াতে হলে
চাই
চওড়া বুক, হৃদয় বারো
তলা
হবে কি দেখা রাত্রি বারো-
টায়?
পা
তোমার পায়ে যে দোল দোল পূর্ণিমায়
চুমু খেলাম
তোমার পায়ে পাঁচ আঙুলে পাঁচমারিতে মুহুর্মুহু
ভীষণ অমাবস্যা হল সেদিন রাত
অনেক হল যখন
আমি দারুণ টালমাটাল কী বেয়াদপ
তোমার পায়ে
গোটা শরীর
তিলেই এসে মিশেছে না কি অভ্র না কি
নূপুর
ছলছলাৎ
গঙ্গা এসে হারিয়ে গেল যে বিন্দুতে, উঠুক বেজে
মারুবেহাগ
তোমার পায়ে, তোমার মলে, মলের ধাতু, আমার ধাতু
রিভলভার
ঘুরে বেড়াই, মাথায় হ্যাট, ওভারকোট
পাড়ার নাম সিরিটি
এক পকেটে রিভলভার
এক পকেটে তোমার লেখা পঁচিশতম চিঠি।
রিভলভার যদি কখনো ছোটে
ছুটবে গুলি এ কান থেকে ও কান
দুপুরবেলা কলেজষ্ট্রিটে আমরা হব দুজনে খানখান।
সিন্ধুপ্রদেশের মেয়ে
ছেলেটা তোমাকে একবার দেখেছিল
ছেলেটা তখন বিখ্যাত এক কবি
হঠাৎ বিকেলে বোরখা সরালে যেই
কবি অভিভূত, দাঁড়িয়ে পড়ল রাস্তায়।
তরুণ কবির দাঁড়িয়ে থাকাই ভাল
তরুণ কবির দুচোখে সিন্ধুপ্রদেশ
এখনো দাঁড়িয়ে, তার পাশ দিয়ে বাস যায়।
দুহাত ভরেছে রডোডেনড্রন গুচ্ছে
ভাল না বাসলে কী করে রাত্রি জাগবে?
ভুলে গিয়েছিলে কেউ একজন দাঁড়িয়ে।
কিন্তু বিকেলে রেডিও বাজল ঘরে ঘরে
তরুণ কবির কণ্ঠে একটি কবিতা
কবিতা চলল সিন্ধুপ্রদেশ ছাড়িয়ে।
কী করে পারল এমন কবিতা লিখতে!
জাহিরা, তোমাকে বেত মারা হল একশো
কাকে কবি বলে? পরপুরুষের কাব্য?
গলা টিপে ধরে বর বাবা দাদা সব্বাই
ভাবিনি কখনো রডোডেনড্রন কার নাম
কবিকে ভাবিনি, এখন তাহলে ভাবব।
তরুণ কবিরা দেশে দেশে আজো পুড়ছে।
আমাদের বিয়ে দিয়েছিল প্রজাপতি
কোন কোন বিয়ে অমরাবতীতে হয়
ছাদনা তলায় ছোট আঙারিয়া নয়।
পাতায় মোড়ানো পাতা কুড়ুনিকে খোলো।
আহত ছেলেটি মেয়েটিকে বিয়ে করে
নিঃস্ব এসেছে নিঃস্বকে ভালবেসে।
তিস্তার ধারে শুধু রেডবুক দিয়ে।
বিয়ে করে নিল ভিসা পাওয়া যায় বলে।
বধূ হত্যার গোধূলি বন্ধ হোক।
বিয়ে না করেও টুগেদার আজীবন।
এক ভরি সোনা, দশ ভরি ছিল রতি।
সই করতে না পাকা জহুরির মতো।
বিশ্বাস নেই, সুতরাং, না-আঁচালে।
এসে দেখে বউ এক কলাপাতা হিরে।
পালিয়ে এসেছ, এসো পালকিতে বসি।
সোনা মুখে খাব যদি জোটে নুন ভাত।