মার্জনা
ক্ষমা? ক্ষমা? কেন চাও ক্ষমা?
নিরুপমা,
আমি তো তোমার ‘পরে করিনি নির্মাণ
অভ্রভেদী স্বর্গের সোপান;
স্থাপিনি অটল আস্থা বিদায়ের দিব্য অঙ্গীকারে;
ভাবিনি তোমারে
নিষ্ঠার প্রস্তরমূর্তি, অমানুষ, স্থবির, নিষ্প্রাণ;
ভুলিনি তো তুমি মুগ্ধ নিমেষের দান।।
তোমার আহ্বান,
মোর স্তব্ধ ভবিতব্য হানি,
উন্মত্ত উৎসবরাতে পঙ্গু বক্ষে দিয়েছিল আনি
চপলার উতল উল্লাস।
ভালো লেগেছিল ওই উদ্দাম, উড্ডীন কেশপাশ
মলয়ের তপ্ত স্পর্শে, ধান্যসম, কেলিপরায়ণ,
লক্ষ লক্ষ মধুপের মদির গুঞ্জন
তব ক্ষিপ্র কণ্ঠের আড়ালে।
সে-দিন তুমি যে এসে সম্মুখে দাঁড়ালে,
উৎসরি অচ্ছোদ নেত্রে যৌবনের উন্মুক্ত ফোয়ারা,
মূর্তিমান বিপর্যয়-পারা।।
চেও না, চেও না তবে ক্ষমা।
নব বসন্তের প্রাতে অশোকের উদ্বেল সুষমা
কখনও কি ক্ষমা মাগে বন্ধ্যা ফণিমনসার কাছে?
ক্ষত পদে ফিরে এসে পাছে,
চাহে কি উধাও যাত্রী হিমসুপ্ত শিলার মার্জনা?
নিষ্কারণ ও-অনুশোচনা
আমার নিরিক্ত মর্মে বিষাক্ত শেলের মতো বাজে;
কিছুতে ভুলিতে পারি না যে
সংকীর্ণ বিশ্বের কোণে আও কথা জুড়ে আছি ঠাঁই
সহজ প্রগতি তব বাধা পায় তাই,
থাকি থাকি
লক্ষ্যহারা হয়ে যায় তোমার করুণাপ্লুত আঁখি;
তাই বারে বারে,
ব্যাজজীবী স্মরণের লুব্ধ অত্যাচারে
আত্মারে গচ্ছিত রেখে, আপনারে ভাবো চিরঋণী,
ক্ষমাভিখারিনী।।
৯ মার্চ ১৯৩১