2 of 3

মারের ওপর ওষুধ নাই

মারের ওপর ওষুধ নাই

আমাদের দেশে প্রবাদটি বেশ চালু। সহজভাবে কোনো মানুষকে সুবিবেচক করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে পথে আনা বিষয়ে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর সংস্কৃতরূপ এ রকম—

হবিবিনা হরিযাতি বিনা পীঠেন মাধবঃ।
কদন্নৈঃ পুণ্ডরীকাক্ষঃ প্রহারেণ ধনঞ্জয়ঃ ॥

সুবলচন্দ্র মিত্র (১৮৭২-১৯১৩ খ্রি.) এ প্রসঙ্গে যে উৎস বর্ণনা করেছেন তা সহজভাবে উপস্থাপন করছি।

এক ব্রাহ্মণের চার মেয়েজামাই—হরি, মাধব, পুণ্ডরীকাক্ষ ও ধনঞ্জয়। শ্বশুরের বাড়িতে মহাসুখে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে তারা। বিনা পরিশ্রমে আদর-যত্নে তাদের দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু শ্যালকেরা ভগ্নিপতিদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছে না। নানা কৌশলেও বাড়ি ছাড়া করা যাচ্ছে না জামাইদের। ফন্দি আঁটতে থাকে শ্যালকেরা।

একদিন খাবার সময় জামাইরা দেখলো যে, তাদের পাতে ঘি (হবি ) পড়েনি। বড় জামাই হরি এতে অপমানিত বোধ করলেও অন্যরা তেমন কিছু মনে করলো না। হরি অসন্তুষ্ট হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়লো। থাকলো অন্য তিন জামাই। আরেকদিন খাবার সময় আসন বা পিঁড়ি (পীঠ) দেয়া হলো না জামাইদের। এতে অপমানিত বোধ করে চলে গেল দ্বিতীয় জামাই মাধব। আরেকদিন খাদ্যসামগ্রী ছিল নিকৃষ্টমানের। মনের দুঃখে তৃতীয় জামাই পুণ্ডরীকাক্ষ ত্যাগ করলো শ্বশুরালয়।

কিন্তু চতুর্থ জামাই ধনঞ্জয় আর যায় না। যত অপমানজনক ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন কোনোটিই তাকে টলাতে পারে না। মহাসঙ্কটে পড়ে শ্যালকেরা তাকে একদিন আচ্ছামতো লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দিল। প্রবাদটি সংক্ষেপে প্রহারেণ (প্রহারের দ্বারা) ধনঞ্জয়ঃ বলা হয়। অর্থাৎ মারের দ্বারাই ধনঞ্জয় শ্বশুরবাড়ি ছাড়ে। আমাদের বাংলাদেশেও নানা আলোচনায় ত্যাঁদড় বা বেহায়াকে সোজা করার মোক্ষম ওষুধ হিসেবে শেষ সম্বল মার বা মাইরকে বেছে নেওয়ার জন্য অভিমত দেয়া হয়। সে কারণে বলা হয় এই প্রবাদ বাক্যটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *