মাছি মারা কেরানি
ভুলত্রুটির দিকে খেয়াল না করে যদি কেউ কোনো কাজ হুবহু অনুকরণ করে তাকে সাধারণত মাছি মারা কেরানি নামে অভিহিত করা হয়। নকলনবিশ ব্যক্তি কোনো লেখা যথাযথভাবে নকল করে, অর্থাৎ যেখানে যে অবস্থায় আছে সেখানে অর্থাৎ কপিতেও সে অবস্থাই রাখে তবে তাকে ঠাট্টা করে মাছি মারা কেরানি বলা হয়।
কোম্পানি আমলের কথা। সে সময় একজন কেরানিকে দায়িত্ব দেয়া হয় একটি খাতা থেকে হুবহু পৃষ্ঠা নকল করতে। খাতা দেখে যথারীতি সে নকল করে যাচ্ছে। একস্থানে গিয়ে সে থেমে গেল। কারণ মূলখাতায় লেখার মধ্যে একস্থানে একটি মরা মাছি আটকে আছে। কী করা যায়! তাকে তো হুবহু নকলের কাজ করতে হবে। অর্থাৎ মূলে যা আছে তা থেকে তো আর ভিন্ন কিছু করা যায় না! অনেক ভেবে চিন্তে কেরানিসাহেব ফয়সালা বের করলো। সে অনুরূপ একটি মাছি মারলো এবং মূল লেখায় যেখানে যেভাবে মরা মাছি আটকে আছে ঠিক তেমনিভাবে তা লাগিয়ে দিল কপি করা কাগজের লেখার যথাস্থানে।
ভালোমন্দ বিবেচনা না করে অন্ধের মতো অবিকল অনুসরণ করার মানুষ এদেশে অনেক আছে। আর সে কারণে মাছি মারা কেরানি প্রবাদের সৃষ্টি। কিন্তু গল্পটি থেকে প্রবািদ নাকি প্রবাদ থেকেই গল্পের উৎপত্তি—সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য আমাদের হাতে নেই। সংস্কৃতে আছে— ‘যথা দৃষ্টং তথা লিখিতং’ বা ‘যদ্দষ্টং তল্লিখিতং’ অর্থাৎ যা দেখেছি তাই লিখেছি। মূলে ভুল থাকলে নকল করার সময়ও সেই ভুল রাখলে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয় আজো।