ভেড়াকান্ত
অত্যন্ত নিরীহ ও বোকা জন্তু হিসেবে এদেশে ভেড়া বা মেষ পরিচিত। ভেড়াকান্ত হচ্ছে বোকার সেরা বা শ্রেষ্ঠ বোকা। কান্ত শব্দে বুঝায় স্বামী, পতি ইত্যাদি। সুতরাং যে মানুষ নির্বোধের মতো অন্যের কথায় চলে, নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারে না—তার প্রতি ভেড়াকান্ত প্রবাদ প্রযোজ্য হয়। আবার একইভাবে যদি কেউ এ ধরনের নির্বোধকে নিজের আয়ত্তে বা বশে রেখে ইচ্ছেমাফিক চালায় সেক্ষেত্রে বলা হয় ভেড়া করে রাখা। শ্লেষোক্তি করে নির্বোধ মানুষকে আমরা ভেড়া বলে অভিহিত করি।
সামান্য ব্যতিক্রম বাদে সাধারণত এদেশে বৌমার প্রতি শাশুড়ির এবং ভাই-বৌয়ের প্রতি ননদের কিছুটা ঈর্ষাভাব লক্ষ করা যায়। স্বামী তার স্ত্রীর কোনো আবদার পূরণ করতে অগ্রসর হলে কিংবা স্ত্রীর মতামত নিয়ে কাজ করতে গেলে মাঝে মাঝে বিপত্তি দেখা দেয় শাশুড়ি বা ননদের কারণে। সদাসন্ত্রস্ত থাকতে হয় স্বামীকে। তারপরও বৌয়ের কথামতো চললে কিংবা তার আগ্রহ ও মতামতের গুরুত্ব অধিক বলে মনে হলে স্বামীকে ভেড়াকান্ত আখ্যা পেতে হয়। কেউ শ্বশুরবাড়ির মতামতের ওপর নির্ভর করে চলে মনে করেও বলা হয় ভেড়াকান্ত। কিংবা বৌ অথবা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে (স্বামীকে) ভেড়া বানিয়ে রেখেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
একই অবস্থা অন্যের ওপর নির্ভরশীল ও অনুগত লোকদের প্রতি প্রযোজ্য হতে দেখা যায় আমাদের সমাজে। নিরীহ মেষ বা ভেড়ার সাথে এ ধরনের তুলনা এদেশের মানুষ অহরহ করে থাকে। ভেড়ার মতো নির্বুদ্ধিতাকে ভেড়ামি বলা হয়। ব্যক্তিত্বহীন কাপুরুষ বা স্ত্রৈণ (স্ত্রীর অনুগত) হিসেবে বিবেচিত পুরুষকে ভেড়ুয়া বা ভেড়ো কিংবা ভেড়ের ভেড়ে হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। বুদ্ধিহীন মানুষ অন্যের বশবর্তী হয়ে অন্যের দেখাদেখি একইভাবে চললে সে চালচলনকে ভেড়ার চাল বলা হয়। একজন যা বলে অন্যেও নিজস্ব বুদ্ধিবিবেচনা না করে সেই কথামতো চললে এমন প্রবাদের প্রসঙ্গ আসে। একই রকম প্রবাদ হলো মেড়াকান্ত। আলঙ্কারিক অর্থে মেড়া অর্থও ভেড়া (মেঢ্র > মেড়া + মেষ)।