উপন্যাস
গল্প
1 of 2

ভূত মানে ভূত

ভূত মানে ভূত

আয়, একটা ভীষণ ভূতের গল্প বলি।

আমি ভূত মানি না।

তবে যা–তোর শুনে কাজ নেই।

 না–না বল, শুনি, কত বাজে গপ্পো বানাতে পারিস তুই।

আমি গল্প বানাই না। সদা সত্য কথা বলে থাকি। অবিশ্বাস হলে উঠে যা না, কে তোকে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে বলেছে?

না–মানে সত্যি কথা বললে আর অবিশ্বাস করব কেন? তুই বল।

অ–ইদিকে ভূত মানি না, ওদিকে ভূতের গল্প শুনলেই জাঁকিয়ে বসা? আছিস বেশ।

মানে শুনতে বেশ মজা লাগে কিনা, তাই

মজা লাগে? এমন সত্যি ঘটনা বলব না যে শুনে তোর গায়ে কাঁটা দেবে।

নাকি? তবে বলে যা ভাই।

শোন আমাদের গাঁয়ে একটা বেজায় পাজি বুড়ো থাকত। লোকে বলত, উপোস-মামা। মানে মুখ দেখলে উপোস করতে হয়–অ্যায়সা কিপটে। মস্ত একটা পোড়োমতন বাড়িতে একা থাকত–চারদিকে তার আম কাঁঠালের ঘন বাগান। এমন জায়গা যে দিনের বেলা গেলেও গা ছমছম করতে সেখানে। বুড়োর কেউ ছিল না বুড়ি মরে গিয়েছিল–মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছিল, তিন ছেলে চাকরি নিয়ে পালিয়েছিল এখানে-ওখানে। ছেলেমেয়েরা কেউ বুড়োর কাছে আসত না–কার দায় পড়েছে কচু ঘণ্ট আর লাল চালের ভাত খেতে?

সে যা হোক–উপোসমামা তো প্রায় উপোস করেই মারা গেল একদিন। ছেলেরা এল, শ্রাদ্ধটাদ্ধ করে টাকা পয়সা ভাগ করে নিয়ে জমি-টমি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেল যার যেদিকে খুশি। পড়ে রইল জংলা বাগানের ভেতর সেই পোড়ো বাড়িটা।

আর লোকে বলতে লাগল, ওই বাড়িতে উপোসমামা ভূত হয়ে আছে। জষ্ঠিমাসের হাওয়ায় পাকা আম পাড়লেও কেউ তা কুড়োতে যেত না ওখানে, শেয়ালে-টেয়ালে খেত।

বাঃ, খাসা ভূতের বাড়ি বানালি দেখছি।

বানালুম? উঠে যা–ততার গল্প শুনে কাজ নেই।

না–না, চটিসনি। মানে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে কিনা। বলে যা তাই– প্লিজ।

সেবার দেশে গিয়ে ঠিক করলুম—কাল অমাবস্যার রাত আছে–ঠিক বারোটার সময় ওবাড়িতে ভূত দেখতে যাব। সবাই বারণ করলে– উপোসমামা ধরে ঘাড় মটকে দেবে। বললুম-বেঁচে থেকে তো রোগাপটকা ছিল–আমি জিমনাস্টিক করি–জোরে পারবে কেন? দেখিই না–ভূত হয়ে উপোসমামার কী রকম তাগদ হয়েছে গায়ে।

গেলি?

কেন যাব না? ঠিক বারোটায় পৌঁছে গেলুম। একে অমাবস্যা, তায় মেঘ করেছে আবার। বাগানটায় ঢুকতে-সত্যি বলতে কি ভাই–গা ছমছম করতে লাগল। যেই খানিক এগিয়েছি, ঝড় ঝড় ঝড়াৎ।

অ্যাঁ–কী?

টর্চের আলোয় দেখি, হাওয়ায় একটা শুকনো ডাল খসে পড়েছে।

অ।

মন খারাপ হল বুঝি? শোন না-আসল রোমাঞ্চই তো বাকি রয়েছে।

বল ভাই। একটু কাছে ঘেঁষে বসছি, কিছু মনে করিসনি।

না–না, মনে করব কেন? তুই তো আর ভূতে বিশ্বাস করিস নে। তারপর শোন গুটিগুটি তো গিয়ে উঠেছি সেই পোড়ো বাড়িতে। বাপস্ কী অন্ধকার, আর চারদিকে চামচিকে আর কী সবের কী বিচ্ছিরি গন্ধ।

তারপরে?

যেই বারান্দা ধরে একটু এগিয়েছি না–ঝটপট ঝটপট

অ্যা, কী ঝটপট?

কিছু না। বাদুড়।

অ।

দাঁড়া না, আরও আছে। বাদুড় তো পালাল কিন্তু একটা দরজা-ভাঙা খালি ঘরে যে ঢুকেছি না–

কী?

দুটো চোখ। জ্বলজ্বল করছে।

হ্যাঁ। হিংস্রভাবে জ্বলছে। যেন প্রেতলোকের বিভীষিকা। কাছে আসছে–এগিয়ে আসছে–আরও আসছে–আঃ, জাপটে ধরছিস কেন? টর্চের আলোয় দেখি

ক– কী?

একটা হুলো বেড়াল। হাঁ, স্রেফ হুলো বেড়াল। মুখে নেংটি ইঁদুর নিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গেল।

ধেৎ।

দমিসনি-দমিসনি–আরও আছে।

তারপর?

ঘরের বারান্দায় শুনি কে যেন আসে। পা টিপে টিপে-সাবধানে। বুক চমকে উঠল। কে–কে আসে অমন করে? কার পদধ্বনি? এত রাতে–এই অন্ধকারে এই পোড়োবাড়িতে–কে আসে এত সাবধানে? সে কি ভূত? সে কি হত্যাকারী? কে?

কে?

একটা শেয়াল আসছিল। যেই বলেছি ভাগ্-দৌড়ে হাওয়া।

যাঃ।

ঘাবড়াসনি। আরও আছে। তারপর

তারপর?

ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।

তারপর?

ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।

তারপর—

ঘুরঘুট্টি

আঃ, জ্বালালি। তোর ঘুরঘুট্টির নিকুচি করেছে। কী হল তাই বল না।

কী আর হবে? হয়রান হয়ে বাড়ি চলে এলুম।

 আর ভূত?

ভূতই তো। ভূত মানে ভূত। মানে অতীত। মানে উপোসমামা অতীত হয়ে গেছেন তিনি আর বর্তমান নেই। তাই তাঁর বাড়িতে আর তাঁকে দেখতে পেলুম না।

এই তোর ভূতের গপ্পো?

এই তো আসল ভূতের গল্প। ভূত মানে ভূত–মানে অতীত। মানে উপোসমামা আর বর্তমান নেই।

ইস্টুপিড! যা যা– ভাগ এখান থেকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *