ভারতবর্ষের উপহার
হৃদয়ে ভারতবর্ষ ছিল,
তা সয়নি ভারতবর্ষের,
সয়নি বলে শাস্তি দিল আমাকে,
শাস্তি হৃদরোগ।
চোখে ভারতবর্ষের স্বপ্ন ছিল আমার,
তা সয়নি ভারতবর্ষের,
সয়নি বলে শাস্তি দিল আমাকে,
শাস্তি অন্ধত্ব।
আমি যেন হৃদয়ে রোগ
ছাড়া আর কিছু লালন করতে না পারি,
চোখে যেন অন্ধত্ব ছাড়া আমার আর না থাকে কিছু।
এত বড় শাস্তি আজ অবধি কেউ আমাকে দেয়নি,
পৃথিবীর সমস্ত ধর্মান্ধ মৌলবাদী মিলেও
যত ক্ষতি আমার ভারতবর্ষ করেছে গত সাড়ে সাত মাসে,
তার এক তিলও করতে পারেনি দীর্ঘ দুযুগ ধরে।
বাংলাদেশ আমাকে দেশ ছাড়া করেছে,
কষ্ট পেয়েছি খুব, দেশ দেশ করে কেঁদেছি,
সেই দেশও আমাকে এত তিল তিল করে হত্যা করেনি,
সেই নিষ্ঠুর দেশও আমাকে মৃত্যুর মতো কঠিন শাস্তি দেয়নি।
ভারতবর্ষকে ভালোবাসার শাস্তি
নিজের জীবন দিয়ে পেতে হল।
এই জীবন থেকে নিবে গেল সমস্ত আলো,
প্রাণরস শুকিয়ে জীবন এখন বাতিল খড়কুটো,
এখন কাঁধের ওপর ভীষণ শকুনের মতো বসে আছে মৃত্যু,
এখন চোখের সামনে দাঁত কপাটি মেলে বীভৎস মৃত্যু,
ভারতবর্ষকে ভালোবাসার
সর্বোচ্চ উপহার।
চেয়েছিলাম মানুষের অন্ধত্ব দূর করতে,
চেয়েছিলাম মানুষের মোহর
করা হৃদয় থেকে
বৈষম্যের, হিংসের, অন্ধকারের আর অসুস্থতার
শেকড় উপড়ে ফেলে ভালোবাসা
রোপন করতে।
আমার চাওয়ার শাস্তি আমাকে দিয়েছে প্রিয় ভারতবর্ষ।
এত বড় মৃত্যু পৃথিবীর শক্তি হয়নি আমাকে দেয়,
গোটা পৃথিবীর চেয়েও
বেশি শক্তিমান একা ভারতবর্ষ।
এই শক্তিকে নতমস্তকে পুজো করো তোমরা,
এই ক্ষমতাকে আশীর্বাদ করো দীর্ঘজীবী হতে।
আমি পরাজিত হলে যত জয় ধর্মান্ধের হবে,
তার চেয়ে বেশি হবে ভারতবর্ষের।
আমার আজ মৃত্যু হলে যত জয় ধর্মান্ধের হবে,
তার চেয়ে বেশি হবে ভারতবর্ষের।
আজ জয়ধ্বনি করো ভারতবর্ষ,
আজ সময় হয়েছে জয়ধ্বনি করার,
এক অনাথ অসহায় লেখককে,
এক মানবিক মানুষকে
এক উচ্ছল উজ্জ্বল জীবনকে
মৃত্যু উপহার দিয়ে সাড়ে সাত মাসের লড়াইয়ে
তুমি ভয়ংকরভাবে জিতে গেছো ভারতবর্ষ,
তোমাকে অভিবাদন।
১৬.০৩.২০০৮