বিভক্তি

বিভক্তি

ব্যাকরণে বর্ণিত একটি সংজ্ঞাবাচক শব্দ । ইংরেজি : inflection, inflexion।

সংস্কৃত ব্যাকরণে পাঁচ প্রকার প্রত্যয়ের একটি হলো- বিভক্তি। এই প্রত্যয়গুলি ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয়ে কাল ও পুরষভেদে ক্রিয়াপদ সৃষ্টি করে এবং বাক্যস্থ পদের সাথে যুক্ত হয়ে বাক্যের অন্যান্য পদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। প্রাথমিকভাবে বিভক্তিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলি হলো-

  1. ক্রিয়া বিভক্তি
  2. শব্দ বিভক্তি

১. ক্রিয়া বিভক্তি :

যে বিভক্তি ক্রিয়ামূলের সাথে যুক্ত হয়ে কাল ও পুরষভেদে ক্রিয়াপদ সৃষ্টি করে। যেমন-

  • √কর্ (করা) + ইয়াছিলাম=করিয়াছিলাম>করেছিলাম।
  • এখানে ইয়াছিলাম ক্রিয়া বিভক্তি।

বাংলা ভাষায় সাধু রীতির ক্রিয়াপদের বিভক্তিগুলি ক্রিয়াপদ তৈরির পর, বিভক্তির রূপ পাল্টে যায় না। কিন্তু চলতি রীতিতে ক্রিয়াপদ তৈরির সময় অনেক ক্ষেত্রেরই ক্রিয়ামূল এবং বিভক্তির রূপ পাল্টে যায়। যেমন-

  • খা +ইয়াছিলাম= খাইয়াছিলাম [সাধু রীতি]
  • খা +ইয়াছিলাম= খাইয়াছিলাম>খেয়েছিলাম [চলতি রীতি]

চলিত বাংলায় যে ভাবেই বিভক্তির রূপান্তর ঘটুক না কেন। আমরা রূপান্তরিত রূপটিকেই বাংলা ক্রিয়া-বিভক্তি হিসাবে গ্রহণ করবো। নিচ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সকল ক্রিয়া-বিভক্তিকে এবং এর বিভিন্ন রূপান্তরের নমুনা দেখানো হলো।

বিভক্তি ক্রিয়াপদ সাধু রূপক্রিয়াপদের চলতি রূপচলিত রীতিতে  ক্রিয়াবিভক্তির গ্রাহ্য রূপ
অংশা +০=অংশাঅংশা +০= অংশা
অংশা +ই= অংশাইঅংশা +ই= অংশাই
ইওঅংশা +ইও= অংশাইওঅংশা +ইও= অংশাইও>অংশাও
ইছক +ইছ=কইছইছ
ইছিক +ইছি=কইছিইছি
ইছিসক +ইছিস=কইছিসইছিস
ইছেক +ইছে=কইছেইছে
ইছেনক +ইছেন=কইছেনইছেন
ইতেছঅংশা +ইতেছ= অংশাইতেছঅংশা +ইতেছ= অংশাইতেছ>অংশাচ্ছচ্ছ
ইতেছিঅংশা +ইতেছি= অংশাইতেছিঅংশা +ইতেছি= অংশাইতেছি>অংশাচ্ছিচ্ছি
ইতেছিসঅংশা +ইতেছিস= অংশাইতেছিসঅংশা +ইতেছিস= অংশাইতেছিস>অংশাচ্ছিসচ্ছিস
ইতেছেঅংশা +ইতেছে= অংশাইতেছেঅংশা +ইতেছ= অংশাইতেছ>অংশাচ্ছেচ্ছে
ইতেছেনঅংশা +ইতেছেন= অংশাইতেছেঅংশা +ইতেছে= অংশাইতেছে>অংশাচ্ছেনচ্ছেন
ইয়াঅংশা +ইয়া=অংশাইয়াঅংশা +ইয়া=অংশাইয়া>অংশে
ইয়াছঅংশা +ইয়াছ=অংশাইয়াছঅংশা +ইয়াছ=অংশাইয়াছ>অংশেছএছে
ইয়াছিঅংশা +ইয়াছি= অংশাইয়াছিঅংশা +ইয়াছি= অংশাইয়াছি>অংশেছিএছি
ইয়াছিসঅংশা +ইয়াছিস=অংশাইয়াছিসঅংশা +ইয়াছিস=অংশাইয়াছিস>অংশেছিসএছিস
ইয়াছেঅংশা +ইয়াছে=অংশাইয়াছেঅংশা +ইয়াছে=অংশাইয়াছে>অংশেছেএছে
ইয়াছেনঅংশা +ইয়াছেন=অংশাইয়াছেনঅংশা +ইয়াছেন=অংশাইয়াছেন>অংশেছেনএছেন
ইতঅংশা +ইত=অংশাইতঅংশা +ইত=অংশাইত>অংশাতক + ইত=কইততইত
ইতামঅংশা +ইতাম=অংশাইতামঅংশা +ইতাম=অংশাইতাম>অংশাতামক + ইতাম=কইতামতামইতাম
ইতিসঅংশা +ইতিস=অংশাইতিসঅংশা +ইতিস=অংশাইতিস>অংশাতিসক + ইতিস=কইতিসতিসইতিস
ইতেঅংশা +ইতে=অংশাইতেঅংশা +ইতে=অংশাইতে>অংশাতেক + ইতে=কইতেতেইতে
ইতেছিলঅংশা +ইতেছিল=অংশাইতেছিলঅংশা +ইতেছিল=অংশাইতেছিল>অংশাচ্ছিলক + ইতেছিল=কইতেছিলচ্ছিলইতেছিল
ইতেছিলামঅংশা +ইতেছিলাম=অংশাইতেছিলামঅংশা +ইতেছিলাম=অংশাইতেছিলাম>অংশাচ্ছিলামক + ইতেছিলাম=কইতেছিলামচ্ছিলামইতেছিলাম
ইতেছিলিঅংশা +ইতেছিলি=অংশাইতেছিলিঅংশা +ইতেছিলি=অংশাইতেছিলি>অংশাচ্ছিলিক + ইতেছিলি=কইতেছিলিচ্ছিলিইতেছিলি
ইতেছিলেঅংশা +ইতেছিলে=অংশাইতেছিলেঅংশা +ইতেছিলে=অংশাইতেছিলে>অংশাচ্ছিলেক + ইতেছিলে=কইতেছিলেচ্ছিলেইতেছিলে
ইতেছিলেনঅংশা +ইতেছিলেন=অংশাইতেছিলেনঅংশা +ইতেছিলেন=অংশাইতেছিলেন>অংশাচ্ছিলেনক + ইতেছিলেন=কইতেছিলেনচ্ছিলেনইতেছিলেন
ইতেনঅংশা +ইতেন=অংশাইতেনঅংশা +ইতেন=অংশাইতেন>অংশাতেনতেন
ইবঅংশা +ইব=অংশাইবঅংশা +ইব=অংশাইব>অংশাব
ইবিঅংশা +ইবি=অংশাইবিঅংশা +ইবি=অংশাইবি>অংশাবিবি
ইবেঅংশা +ইবে=অংশাইবেঅংশা +ইবে=অংশাইবে>অংশাবেবে
ইবেনঅংশা +ইবেন=অংশাইবেনঅংশা +ইবেন=অংশাইবেন>অংশাবেনবেন
ইয়াছিলঅংশা +ইয়াছিল=অংশাইয়াছিলঅংশা +ইয়াছিল=অংশাইয়াছি>অংশেছিলএছিল
ইয়াছিলামঅংশা +ইয়াছিলাম=অংশাইয়াছিলামঅংশা +ইয়াছিলাম=অংশাইয়াছিলাম>অংশেছিলামএছিলাম
ইয়াছিলিঅংশা +ইয়াছিলি=অংশাইয়াছিলিঅংশা +ইয়াছিলি=অংশাইয়াছিল>অংশেছিলিএছিলি
ইয়াছিলেঅংশা +ইয়াছিলে=অংশাইয়াছিলেঅংশা +ইয়াছিলে=অংশাইয়াছিলে>অংশেছিলে
ইয়াছিলেনঅংশা +ইয়াছিলেন=অংশাইয়াছিলেনঅংশা +ইয়াছিলেন=অংশাইয়াছিলেন>অংশেছিলেনএছিলেন
ইয়োঅংশা +ইয়ো=অংশাইয়োঅংশা +ইয়ো=অংশাইয়ো>অংশায়োয়ো
ইলঅংশা +ইল=অংশাইলঅংশা +ইল=অংশাইল>অংশালক + ইল=কইললইল
ইলামঅংশা +ইলাম=অংশাইলামঅংশা +ইলাম=অংশাইলাম>অংশালামক + ইলাম=কইলামলামইলাম
ইলিঅংশা +ইলি=অংশাইলিঅংশা +ইলি=অংশাইল>অংশালিক + ইলি=কইলিলিইলি
ইলেঅংশা +ইলে=অংশাইলেঅংশা +ইলে=অংশাইলে>অংশালেক + ইলে=কইলেলেইলে
ইলেনঅংশা +ইলে=অংশাইলেনঅংশা +ইলেন=অংশাইলেন>অংশালেনক ++ইলেন=কইলেনলেনইলেন
ইসঅংশা +ইস=অংশাইসঅংশা +ইস=অংশাইস>অংশাস
উকঅংশা +উক=অংশাউকঅংশা +উক=অংশাউক>অংশাকক + উক=কউককউক
উনঅংশা +উন= অংশাউনঅংশা +উন= অংশাউন>অংশানক + উন=কউননউন
ল +ও=লওল +ও=লও
ল +ন=লনল +ন=লন
য়অংশা +য়= অংশায়অংশা +য়= অংশায়য়
য়েছক +য়ে=কয়েছয়েছ
য়েছিক +য়েছি=কয়েছিয়েছি
য়েছিলক + য়েছিল=কয়েছিলয়েছিল
য়েছিলামক + য়েছিলাম=কয়েছিলাময়েছিলাম
য়েছিলেক + য়েছিলে=কয়েছিলেয়েছিলে
য়েছিলেনক + য়েছিলেন=কয়েছিলেনয়েছিলেন
য়েছিসক +য়েছিস=কয়েছিসয়েছিস
য়েছেক +য়েছে=কয়েছেয়েছে
য়েছেনক +য়েছেন=কয়েছেনয়েছেন
ল +স= লসল +স= লস

২. শব্দবিভক্তি :

ক্রিয়াপদ ছাড়া অন্য পদের সাথে যে সকল বিভক্তি যুক্ত হয় এবং বাক্যস্থ একটি পদের সাথে অন্যান্য পদের সম্পর্ক স্থাপন করে বা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বচন প্রকাশ করে বা নির্দেশবাচক ভাব প্রকাশে সহায়তা করে, তাদেরকে শব্দ বিভক্তি বলা হয়। যেমন-
শিশুকে, পাখিটি, হাতটা ইত্যাদি শব্দে ব্যবহৃত কে, টি, টা গুলি শব্দবিভক্তি।

প্রকারভেদ

সংজ্ঞানুসারে শব্দবিভক্তির প্রয়োগ অনুসারে চারটটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলি হলো-
কারক বিভক্তি, সমষ্টিবাচক বিভক্তি, নির্দেশক বিভক্তি, পদান্তর বিভক্তি।

২.১ কারক বিভক্তি :

ক্রিয়া পদের সাথে অন্যান্য পদের সম্পর্ককে কারক বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল বিভক্তি ক্রিয়াপদের সাথে অন্যান্য পদের সম্পর্ক স্থাপন করে তাদেরকে কারক বিভক্তি বলা হয়। যেমন-
ভিক্ষুককে টাকা দাও। এখানে ‘কে’ কারক বিভক্তি

বাক্যের একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য শব্দগুলোর সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত করতে হয়। এই শব্দাংশগুলোকে বলা হয় বিভক্তি।

মা শিশু চাঁদ দেখা।

উপরের বাক্যটিতে কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করা হয়নি। ফলে বাক্যের শব্দগুলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি, এবং এগুলো বাক্যও হয়ে উঠতে পারেনি। এখন শিশু’র সঙ্গে কে বিভক্তি আর দেখা’র সঙ্গে চ্ছেন’ বিভক্তি যোগ করলে বাক্যটি হবে-

মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

অর্থাৎ, শব্দগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে একটি বাক্য সম্পূর্ণ হলো এবং এখন আর এগুলো শব্দ নয়, এগুলো প্রত্যেকটি একেকটি পদ।

শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তখন সেগুলোকে বলা হয় পদ। বাক্যে বিভক্তি ছাড়া কোন পদ থাকে না বলে ধরা হয়। তাই কোন শব্দে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন না হলেও ধরে নেয়া হয় তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এবং এই বিভক্তিটিকে বলা হয় শূণ্য বিভক্তি। উপরের বাক্যটিতে ‘মা’ ও ‘চাঁদ’ শব্দদুটির সঙ্গে কোন বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে এই শব্দদুটির সঙ্গে শূণ্য বিভক্তি যোগ হয়ে এগুলো বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এবং এই দুটিও এখন পদ।

মৌলিক বাংলা শব্দ বিভক্তিগুলো হলো- শূণ্য বিভক্তি (০), এ, য়, তে, কে, রে, র(এর)। তবে এছাড়াও কিছু কিছু অব্যয় শব্দ কারক সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো হলো- দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হতে, থেকে, চেয়ে, ইত্যাদি।

কারকে সাত প্রকার বিভক্তিকে স্বীকার করা হয়। প্রতিটি বিভাগ একবচন ও বহুবচনে বিভক্ত এবং প্রতিটি ভাগে রয়েছে একাধিক বিভক্তি। নিচে এই বিভক্তি গুলির তালিকা তুলে ধরা হলো-

বিভক্তিএকবচনবহুবচন
প্রথমা০, এ, অ (য়), তে, এতেরা, এরা, গুলি, গুলো, গণ, বৃন্দ
দ্বিতীয়া০, কে, রে, এরে, এ য়, তেদিগকে, দেরকে, গুলিকে, গুলাকে, বৃন্দকে
তৃতীয়া০, এ, য়, য়ে, তে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃকদিগের দিয়া, দের দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক, গুলির দ্বারা, গুলিকে দিয়া, গুলো দিয়ে, গুলি কর্তৃক, দের দিয়ে
চতুর্থী০, কে, রে, এরে, এ য়, জন্যে, তরে, তে,দের তরে দের জন্যে, দিগে, দিগকে, দিগেরে, দের, গুলিকে, গুলাকে, বৃন্দকে
পঞ্চমী০, এ, য়ে, য়, হইতে, থেকে, চেয়ে, হতেদিগ হইতে, দের হইতে, দিগের চেয়ে, গুলি হইতে, গুলির চেয়ে, দের হতে, দের থেকে, দের চেয়ে, গণ হইতে, বৃন্দ হইতে।
ষষ্ঠীর, এর, কার, কেরদিগের, দের, গুলির, গণের, গুলোর, গণের, বৃন্দের
সপ্তমী০, এ, য়, য়ে, তে, এতে, কাছে. মধ্যেদিগেতে, গুলিতে, গণে, গুলির মধ্যে, গুলোতে, গুলোর মধ্যে, গণের মধ্যে, দিগের মধ্যে।

উপরের তালিকার ভিতরে কিছু কিছু বিভক্তি শব্দের সাথে যুক্ত না হয়ে পৃথকভাব বসে। যেমন- তাকে দিয়ে এ কাজ হবে না। এখানে ‘দিয়ে’ কারকে বিভক্তি হিসাবে বিবেচিত হলেও- বিযুক্ত থাকার কারণে এই জাতীয় বিভক্তিকে অনুসর্গ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। এই জাতীয় অনুসর্গবাচক বিভক্তি গুলি হলো-

তৃতীয়া বিভক্তি : দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক, দিগের দিয়া, দের দিয়া, দিগকে দ্বারা, দিগ কর্তৃক, গুলির দ্বারা, গুলিকে দিয়া, গুলো দিয়ে, গুলি কর্তৃক, দের দিয়ে।
চতুর্থী বিভক্তি : দের তরে দের জন্যে
পঞ্চমী বিভক্তি : হইতে, থেকে, চেয়ে, হতে, দিগ হইতে, দের হইতে, দিগের চেয়ে, গুলি হইতে, গুলির চেয়ে, দের হতে, দের থেকে, দের চেয়ে, গণ হইতে, বৃন্দ হইতে।
সপ্তমী বিভক্তি : গণের মধ্যে, দিগের মধ্যে

এই সকল অনুসর্গবাচক বিভক্তিকে বাদ দিলে অন্যান্য যে বিভক্তি পাওয়া যায়, তার তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।

বিভক্তি নামব্যবহারিক নমুনা
শূন্য (প্রথমা)বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
প্রথম (একবচন)পাগলে কিনা বলে
সপ্তমী (একবচন)বিপদে মোরে রক্ষা কর
এরষষ্ঠী (একবচন)নিজের চেষ্টা, অপরের টাকা (সম্বন্ধবাচক)
এরাপ্রথমা (বহুবচন)ছেলেরা খেলা করছে
কেদ্বিতীয় (একবচন)আমাকে যেতে হবে
কেচতুর্থী (একবচন)ভিক্ষুককে যেতে হবে
গণপ্রথমা (বহুবচন)শিক্ষকগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন
গণেসপ্তমী (বহুবচন)শিক্ষকগণে বনিবনা হইল না
গণেরষষ্ঠী (বহুবচন)শিক্ষকগণের সিদ্ধান্তই বহাল রহিল
গুলো/গুলি/গুলাপ্রথমা (বহুবচন)পাখিগুলি আকাশে উড়ছিল
গুলোকে/গুলাকে/গুলিকেদ্বিতীয়া (বহুবচন)পাখিগুলিকে খাবার দাও
গুলোতে/গুলাতে/গুলিতেসপ্তমী (বহুবচন)আমগুলিতে পোকা ছিল
গুলোর/গুলার/গুলিরষষ্ঠী (বহুবচন)পাখিগুলির দানাপানি দেওয়া হয় না
দিগকেদ্বিতীয়া (বহুবচন)আমাদিগকে তিনি প্রত্যখ্যান করিলেন
দিগেতেসপ্তমী (বহুবচন)আমাদিগেতে তোমাদিগেতে কোনো প্রভেদ রহিল না
দিগেরষষ্ঠী (বহুবচন)তাহাদিগের কথা আমাকে বলিও না
দেরষষ্ঠী (বহুবচন)তাহাদের কথা আমাকে বলিও না
দেরকেদ্বিতীয়া (বহুবচন)আমদেরকে তিনি আপ্যায়ন করলেন
তেপ্রথমা (একবচন)গরুতে গাড়ি টানে
বৃন্দপ্রথমা (বহুবচন)ছাত্রবৃন্দ কোলাহল করিতেছিল
বৃন্দকেদ্বিতীয়া (বহুবচন)ছাত্রবৃন্দকে তিনি পরামর্শ দিলেন
বৃন্দেরষষ্ঠী (বহুবচন)ছাত্রবৃন্দের আবেদন বাতিল হইয়া গেল
য়প্রথমা (একবচন)ঘোড়ায় গাড়ি টানে
য়সপ্তমী (একবচন)টাকায় কি না হয়।
ষষ্ঠী (একবচন)রাজার ছেলে, বাঙালির মেয়ে (সম্বন্ধবাচক)
ষষ্ঠী (একবচন)আমার খাওয়া হলো না (কারক)
রাপ্রথমা (বহুবচন)আমরা সেখানে যাব না
রেদ্বিতীয় (একবচন)আমারে তুমি অশেষ করেছে
  • চতুর্থী বিভক্তি শুধুমাত্র সম্প্রদান কারকে যুক্ত হয়।
  • বচনভেদে বিভক্তির আকৃতি পরিবর্তিত হয়। তবে কোন বিভক্তি চিহ্নিত করার জন্য উপরের বিভক্তির তালিকাটি মনে রাখলেই চলবে।
  • বিভক্তির নাম লেখার সময় কখনো সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা যাবে না। অর্থাৎ দ্বিতীয়া বিভক্তিকে কখনোই ২য়া বিভক্তি লেখা যাবে না।
  • বিভক্তির তালিকাটি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে, প্রয়োজন হলে মুখস্থ করতে হবে।

২.২ সমষ্টিবাচক বিভক্তি :

একই জাতীয় বস্তু বা বিষয়ের সমষ্টিগত রূপ প্রকাশের জন্য যে বিভক্তি ব্যবহৃত হয়, তদেরকে সমষ্টিবাচক-বিভক্তি বলা হয়।। ব্যক্তি, প্রাণী, উদ্ভিদ, বস্তু, অবস্তু ইত্যদির বিচারে সমষ্টিবাচক শব্দের প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। নিচে এর পূর্ণ তালিকা তুলে ধরা হলো।

শব্দের প্রকৃতিব্যবহারিক নমুনা
আবলী/আবলিঅপ্রাণিবাচকদীপাবলী, বিষয়াবলী, রচনাবলী, রত্নাবলী
উচ্চয় প্রাণিবাচকপুষ্পোচ্চয়, শিলোচ্চয়
কুলপ্রাণিবাচকঅলিকুল, জীবকুল
কূটবস্তুবাচকঅন্নকূট, তৃণকূট, অভ্রকূট
গণব্যক্তিসত্তাবাচকঐতিহাসিকগণ, দেবগণ, বন্ধুগণ,
গুচ্ছপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকপুষ্পগুচ্ছ, কেশগুচ্ছ, সূত্রগুচ্ছ,
গ্রামঅপ্রাণিবাচকগুণগ্রাম
চয় প্রাণী বা অপ্রাণিবাচকপুষ্পচয়, বুধচয়
জালঅপ্রাণিবাচকঅংশুজাল, বিপজ্জাল, মেঘজাল, শরজাল
দলপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকশ্রমিকদল, ফুলদল
দামঅপ্রাণিবাচকশৈবালদাম
নিকরঅপ্রাণিবাচককমলনিকর
নিচয়প্রাণী বা অপ্রাণিবাচকপুষ্পনিচয়, বুধনিচয়
পালপ্রাণীবাচকপশুপাল, মৃগপাল
পুঞ্জপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকপ্রাজ্ঞপুঞ্জ, মেঘপুঞ্জ
বর্গপ্রাণীবাচকপণ্ডিতবর্গ, বন্ধবর্গ
বৃন্দপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকবীরবৃন্দ, প্রজাবৃন্দ
ব্রজঅপ্রাণিবাচকভূধরব্রজ
ব্রাতপ্রাণিবাচকমধুকরব্রাত
মণ্ডলপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকআবহমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, সুধীমণ্ডল
মণ্ডলীপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকনক্ষত্রমণ্ডলী, সুধীমণ্ডলী
মহলপ্রাণিবাচকগুণীমহল, মহিলামহল
মালাঅপ্রাণিবাচকমেঘমালা, পর্বতমালা, আলোকমালা
মিথুনপ্রাণিবাচকহংসমিথুন
যূথপ্রাণিবাচকগজযূথ, মৃগযূথ
রাজিঅপ্রাণিবাচকবনরাজি, তারকরাজি
রাশিঅপ্রাণিবাচকপুষ্পরাশি, জলরাশি
শ্রেণীপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকবৃক্ষশ্রেণী, দ্বিজশ্রেণী
সকলপ্রাণিবাচকলোকসকল
সঙ্ঘপ্রাণিবাচকবিদ্বৎসঙ্ঘ
সবপ্রাণিবাচকপাখিসব, ভাইসব
সমাজপ্রাণিবাচকপণ্ডিতসমাজ, পল্লিসমাজ
সমূহপ্রাণী বা অপ্রাণিবাচকজাতিসমূহ, বিহগসমূহ

২.৩ নির্দেশক বিভক্তি :

যে বিভক্তির দ্বারা শব্দ বা শব্দাবলী নির্দেশিত হয়ে থাকে। এর সমতূল্য ইংরেজি হলো- article। তবে ইংরেজির মতো বাংলাতে এই বিভক্তিগুলি শব্দের পূর্বে না বসে শব্দের পরে সংযুক্ত অবস্থাব ব্যবহৃত হয়। বাংলাতে ব্যবহৃত এই নির্দেশক বিভক্তি হলো- টি, টা, খানা, খানি, গুলা.গুলি, গুলো, গুছা, গুছি, টুকু।

নির্দেশক বিভক্তি এককভাবে বা যৌগিকরূপে ব্যবহৃত হতে পারে। এই বিচারে নির্দেশক বিভক্তিকে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-

২.৩.১ একক নির্দেশক বিভক্তি : এই বিভক্তি শব্দের সাথে এককভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- পাখিটি, দুধটুকু ইত্যাদি।

২.৩.২ যৌগিক নির্দেশক বিভক্তি : একাধিক বিভক্তি একত্রে বসে নির্দেশক ব্যবহৃত হয়। যেমন- পাখিটিকে, মানুষটাও ইত্যাদি।

একক নির্দেশক বিভক্তির তালিকা

বিভক্তিশব্দের প্রকৃতিব্যবহারিক নমুনা
বিশেষভাবে নির্দেশ অর্থে ব্যবহৃততিনিই, বাঘই
বিশেষভাবে নির্দেশ অর্থে ব্যবহৃতবাবাও, নদীও
খানাঅপ্রাণিবাচক একবচন ব্যবহৃতআধখানা, চাঁদখানা
খানিঅপ্রাণিবাচক একবচন ব্যবহৃতএকখানি, আকাশখানি
গাছ/গাছা/গাছিবস্তুবাচক সমষ্টিবাচক ব্যবহৃতদড়িগাছি
গুচ্ছবস্তুবাচক সমষ্টিবাচক ব্যবহৃততারকাগুচ্ছ, পুষ্পগুচ্ছ
গুছা, গুছিবস্তুবাচক সমষ্টিবাচক ব্যবহৃতদড়িগুছা, দাড়িগুছা
গুলা/গুলি/গুলোসকল সমষ্টিবাচক ব্যবহৃতচিন্তাগুলা, মাছগুলা
জনমানববাচক নাম-নির্দেশকলোকজন, মানুষজন
টা/টিগণনযোগ্য বস্তুবাচক বা অবস্তুবাচকচিন্তাটা, পুকুরটা, মানুষটা
টুকুঅগণযোগ্য তরল ও পদার্থের অল্পত্ববাচকজলটুকু, দুধটুকু।
আদর, স্নেহের আতিশয্যেআদরটুকু, স্নেহটুকু
টুকুনঅল্পার্থে, আদর, স্নেহের আতিশয্যেএতটুকুন তেল, এতটুকুন ছেলে

যৌগিক নির্দেশক বিভক্তির তালিকা

যৌগিক নির্দেশক বিভক্তি অন্য যেকোন শব্দের সাথে ব্যবহৃত হতে পারে। সেই কারণে এর তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘতর হতে বাধ্য। তাই নিচে প্রতিটি শুধুমাত্র যৌগিক নির্দেশক বিভক্তির একটি মাত্র উদাহরণ দেওয়া হলো।

বিভক্তিশব্দের প্রকৃতিব্যবহারিক নমুনা
খানা/খানি-কেখানা/খানি +কেআধখানাকে, আধখানিকে
খানা/খানি-কেইখানা/খানি +কে+ইআধখানাকেই
গাছ/গাছা//গাছিকেগাছি+কেদড়িগাছিকে
গাছ/গাছা/গাছিকেইগাছি+কে+ইদড়িগাছিকেই
গুচ্ছকেগুচ্ছ +কেপুষ্পগুচ্ছকে
গুচ্ছকেইগুচ্ছ +কে+ইপুষ্পগুচ্ছকেই
গুছা/গুছি-কেগুছা+কে, গুছি+কেদড়িগুছাকে, দাড়িগুছাকে
গুছা/গুছি-কেইগুছি+কে+ইদড়িগুছাকেই
গুলা/গুলি/গুলো-কে(গুলা, গুলি, গুলো) +কেচিন্তাগুলাকে, মাছগুলাকে
গুলা/গুলি/গুলো-কেই(গুলা, গুলি, গুলো) +কে+ইমাছগুলিকেই
জনকেজন +কেমানুষজনকে
জনকেইজন +কে+ইমানুষজনকেই
জনকেওজন +কে+ওমানুষজনকেও
টা/টিইটা/টি+ইপাখিটাই, পাখিটিই
টা/টিওটা/টি+ওপুকুরটাও, মানুষটিও
টা/টিকেটা/টি+কেমানুষটাকে, মানুষটিকে
টা/টিকেইটা/টি+কে +ইপাখিটাকেই, পাখিটিকেই
টুকুকেটুকু+কে দুধটুকুকে
টুকুকেইটুকু+কে+ই দুধটুকুকেই
টুকুতেটুকু+তেজলটুকুতে, দুধটুকুতে
টুকুতেইটুকু+তে +ইজলটুকুতেই, দুধটুকুতেই

২.৪ পদান্তর বিভক্তি :

যে বিভক্তির দ্বারা কোন পদকে অন্যপদে পরিণত করে। যেমন-

বিশেষণ {ভাব-বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ}

  • অকপটচিত্ত +এ =অকপটচিত্তে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *