বর্ণ ও বর্ণসঙ্কর

চার রকম বর্ণের কথা মহাভারতে উল্লেখ করা হয়েছে: ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শুদ্র। বর্ণ হিসেবে ব্রাহ্মণদের স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে সবচেয়ে উপরে, আর শুদ্রদের স্থান সবচেয়ে নিচে। যে বর্ণ নিয়ে মানুষের জন্ম হতো সেই বর্ণ নিয়েই তার মৃত্যু হত। সারা মহাভারতে এর দুয়েকটা ব্যতিক্রম শুধু দেখা যায়, যেমন ক্ষত্রিয় বিশ্বামিত্রের ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্তি। মানুষের পরজন্মের বর্ণ নির্ভর করত কর্মফলের ওপরে। সদাচারে নিরত হলে শুদ্রের পক্ষে ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মানো যেমন সম্ভবপর ছিল, তেমনি সম্ভব ছিল কদাচারী ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব হারানো। উচ্চবর্ণের পুরুষরা নিম্নবর্ণের নারীদের বিবাহ করতে পারলেও, নিম্নবর্ণের পুরুষদের উচ্চবর্ণের নারীদের বিবাহ নিয়মসিদ্ধ ছিল না (পিতৃতন্ত্র যে সেই সময়ে ভালোরূপেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো – তার আরেকটি প্রমাণ)। ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের স্ত্রী-পুরুষের মিলনে বর্ণসঙ্করের উৎপত্তি হত। যেমন, শুদ্রার গর্ভজাত ব্রাহ্মণের সন্তানদের বলা হত পারসব। বিদুর ছিলেন পারসব। ক্ষত্রিয় পিতা আর শুদ্রা মাতা হলে সন্তান হত উগ্র। যুযুৎসু ছিলেন উগ্র – যদি আমরা ক্ষেত্রজ পুত্র ধৃতরাষ্ট্রকে ক্ষত্রিয় হিসেবে ধরি। সাধারণভাবে উচ্চবর্ণের পুরুষ ও নিম্নবর্ণের স্ত্রীদের মিলনে যে সন্তান হত তাদের অপদ্ধংস সন্তান বলা হত। আর নিম্নবর্ণের পুরুষ আর উচ্চবর্ণের স্ত্রীদের মিলনে যে সন্তান হত – তাদের অপসদ সন্তান বলা হত। অপসদ সন্তানদের স্থান ছিল সমাজের সবচেয়ে নিচে। পারসব হয়েও বিদুর ভীষ্মের স্নেহ ও অনান্য সবার কাছে সন্মান পেয়েছেন। কিন্তু বিদুরের মাতা শুদ্রা না হয়ে যদি পিতা শুদ্র হতেন এবং পিতা ব্রাহ্মণ না হয়ে যদি মাতা ব্রাহ্মণ হতেন। তাহলে মহামতি ভীষ্মের বিচারে তিনি হতেন চণ্ডাল ও কুলের কলঙ্ক। ওঁকে নগরের বহির্ভাগে বাস করতে হত!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *