বন্যেরা বনে সুন্দর…

বন্যেরা বনে সুন্দর

তখনও পুরো জ্ঞান ফেরেনি, দুটো চোখই বন্ধ করে আছে। একটু আচ্ছন্নের ভাব কিন্তু তবু ব্যথায় কাতরাচ্ছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। চোখে দেখা যায় না। জয় এর দাদা বৌদি আর ছোড়দির চোখে জল এসে যায়। ডাঃ সেন সকালে বলেছেন, ক্রাইসিস ইজ ওভার কিন্তু তবু ওদের ভয়ের শেষ নেই। একটা অজানা আশঙ্কায় সবারই বুক কাঁপে কিন্তু মুখে কেউই তা প্রকাশ করেন না।

শীলা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে স্বামীকে বলে, এ কষ্ট চোখে দেখা যায় না। তুমি একবার সিস্টারকে বলো না।

হ্যা যাচ্ছি।

অজয় এক মুহূর্ত দেরি না করে সাত নম্বর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই শীলা বলে, আমি যে জয়কে কতদিন বলেছি অত স্পীডে মোটর সাইকেল না চালাতে, তার ঠিক ঠিকানা নেই কিন্তু

ছোড়দি বললেন, আমিও ওকে হাজারবার বারণ করেছি কিন্তু সব সময় ওর এক কথা, ছোড়দি, এটা সাইকেল না, মোটর সাইকেল। আস্তে চালালে এর জাত যাবে

হ্যাঁ, সব সময় ওর মুখে এক কথা। শীলা একটু থেমে একটু হেসে বলে, আমাকে নিয়ে বেরুলে তত বেশি জোরে চালাতে পারতো না। তাই সব সময় আমাকে বলতো, তুমি এবার থেকে জীন্স পরে আমার মোটর সাইকেলে উঠবে, নয়তো জোরে চালানো যায় না।

অজয় পর্দা সরিয়ে কেবিনে ঢুকতেই শীলা আর ছোড়দি প্রায় এক সঙ্গেই জিজ্ঞেস করে, সিস্টার আসছে?

অজয় অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে জবাব দেয়, মহারাণী বললেন, ব্যথা তো করবেই।

ব্যস! ছোড়দি অবাক হয়ে বলে, তাই বলে ওদের কিছু করণীয় নেই?

তুমি ভাবতে পারবে না ছোড়দি, এই সিস্টার কী বিচ্ছিরিভাবে কথাবার্তা বলে।

অজয় একটু থেমে একবার ভালো করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, এই রকম একটা সিরিয়াস অ্যাকসিডেন্ট কেসের পেসেন্টের জ্ঞান ফেরার সময় সে ব্যথায় ছটফট করবে, তা সবাই জানে কিন্তু ওষুধ ইনজেকশন তো আছে।

মেজদি বলে, সে তো একশবার।

তাছাড়া কথা বলারও একটা ধরন আছে তো! এই ভদ্রমহিলা এমন বিচ্ছিরিভাবে কথাবার্তা বলেন যে…

স্বামীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই শীলা বলে, অথচ সকালে যে সিস্টার ডিউটিতে ছিলেন, তার ব্যবহার কথাবার্তা কী সুন্দর।

অজয় বলে,হা,হা, ঐ মেয়েটির ব্যবহার কত ভালো। আজ তিনদিন ধরে তো দেখছি..

জয়এর কত জায়গায় যে কেটেকুটে গেছে, তার ঠিকঠিকানা নেই কিন্তু সব চাইতে বেশি চোট লেগেছে ডান হাতে আর ডান পায়ে। ডান পায়ের নীচের দিকে দু জায়গায় ফ্রাকচার হয়েছে। ডান হাতের কনুইয়ের একটু উপরই হাড় ভেঙেছে। তাছাড়া ডানদিকে উরুর ওখানটা দারুণভাবে কেটে গেছে। শুধু ওখানেই চোদ্দটা স্টিচ হয়েছে। ভাগ্যক্রমে মাথায় বা বুকে তেমন কিছু চোট লাগেনি। তবে দুচারটে করে স্টিচ শরীরের অনেক জায়গাতেই করতে হয়েছে। জয়এর প্রায় সারা শরীরটাই ব্যান্ডেজ আর প্লাস্টার দিয়ে ঢাকা। হঠাৎ দেখলে চমকে উঠতে হয়। ওকে যখন অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে আনে, তখন তো ওকে দেখে সবার মাথা ঘুরে গিয়েছিল। ডাঃ সেন অবশ্য বলেছিলেন, আই থিঙ্ক হি উইল বী অল রাইট তবে টাইম লাগবে কিন্তু তবু আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউই নিশ্চিন্ত হতে পারেননি। মনে মনে সবাই আশঙ্কা করেছিলেন এমন সিরিয়াস অ্যাকসিডেন্টের পর পেসেন্টের অবস্থা কখন কী হয় কিছু বলা যায় না। আজ সকালে ডাঃ সেনের কথা শুনে সবাই অনেকটা আশ্বস্ত হলেও কেউই ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। অজয় তো ওর বাবাকে শুধু বলেছে, পায়ে একটা ফ্রাকচার হয়েছে আর দু একটা জায়গায় সামান্য কেটেকুটে গেছে। উনি হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ওকে বলা হয়েছে, শুধু শুধু আপনি কেন কষ্ট করবেন? জয় তো ভালোই আছে। ভাগ্য ভালো ওদের মা এখন দিল্লিতে বড় মেয়ের কাছে বেড়াতে গিয়েছেন। উনি এখানে থাকলে কী যে হতো তা ভাবা যায় না।

ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হবার ঘণ্টা বেশ কিছুক্ষণ আগেই বেজেছে কিন্তু ওরা তিনজনে এখনও জয়এর কাছে রয়েছে। বেচারা ব্যথায় এত কাতরাচ্ছে যে ওরা ওকে ছেড়ে যেতে পারছেন না। হঠাৎ সিস্টার ইনজেকশন দেবার জন্য কেবিনে ঢুকে ওদের দেখেই অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, এ কি! আপনারা এখনও রয়েছেন? ডাক্তাররা রাউন্ডে এসে আপনাদের দেখলে আমাদেরই বকুনি খেতে হবে।

অজয় বলে, আমরা যাচ্ছি।

হ্যা যান। সিস্টার আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না কবে জয়এর হাতে সিরিঞ্জের নিডলটা ঢুকিয়ে দেয়। ছোড়দি কেবিন থেকে বেরিয়েই শীলাকে বলে, কী নির্মমভাবে ছুঁচটা ঢোকাল দেখলে?

এর কথা আর বলো না। একে দেখলে আমার গা জ্বলে যায়।

পরের দিন সকালে গিয়ে শীলা সেই ভালো নাসটির সঙ্গে দেখা হতেই বলল, বিকেলের দিকে যে সিস্টারটি ডিউটিতে থাকেন, তাকে দেখলেই আমাদের ভয় করে।

কেন? উনি হেসে জিজ্ঞেস করেন।

ভাই, ওর বড্ড মেজাজ।

উনি আবার হেসেই জবাব দেন ও একটু কড়া আছে ঠিকই কিন্তু ও সত্যি খুব ভালো নার্স।

তা হতে পারেন কিন্তু ওর কথাবার্তা শুনলে পেসেন্টদের আত্মীয়স্বজনদের খুব খারাপ লাগে।

দেখছেন তো আমাদের কত পরিশ্রম করতে হয়। সব সময় মেজাজ ঠিক রাখাও যায় না। সিস্টার জয়এর টেম্পারেচার দেখতে দেখতে বলেন, যাই হোক, কিছু মনে করবেন না। তাছাড়া আপনার দেওর তো আস্তে আস্তে ভালোই হচ্ছেন।

শীলা একটু হেসে বলে, ভাই, আপনি একটু দেখবেন। আমরা কিন্তু আপনাকেই বিরক্ত করব।

, না, বিরক্ত হবার কী আছে? যতটা পারবো নিশ্চয়ই করবো। সিস্টার একটু থেমে শীলার দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন তাহলে এখনই আমি ড্রেস করে দিতাম।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি যাচ্ছি। শীলা একটু হেসে বলে, তাছাড়া টাইমও তো হয়ে গেছে। প্লাস্টার আর ব্যান্ডেজে জয়এর প্রায় সারা শরীরটা ঢেকে গেছে। কোনো জামা কাপড় পরাবার উপায় নেই। গলা পর্যন্ত একটা চাদর দিয়ে ঢাকা আছে! সিস্টাররা চাদর একটু সরিয়ে স্টিচের জায়গাগুলো ড্রেস করেন। সময়ও লাগে প্রায় ঘণ্টা খানেক। জয়এর জ্ঞান ফিরলেও এখনও বেশ আচ্ছন্নে ভাব। কানের কাছে মুখ নিয়ে বার কয়েক ডাকাডাকি করলে চোখ বুজেই জবাব দেয়। কদাচিৎ কখনও দু একটা কথা বলে। তার বেশি কিছু নয়। সিস্টাররা কখন ওকে ওষুধ খাওয়াচ্ছে বা ড্রেস করছে, তা ও জানতেও পারে না।

এই ভাবেই আরো কটা দিন কেটে গেল। জয়এব পুরোপুরি জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার সিস্টার বা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে বেশ কথাবার্তাও বলে। ডাক্তার সিস্টারদের সঙ্গে বাড়ির লোকজনদেরও বেশ হৃদ্যতা হয়েছে। ডাঃ সেন তো কালকে অজয় আর শীলার সামনেই জয়কে বললেন, প্রথম তিন চারদিন তো আপনার দাদাবৌদি আমার কথার উপরও আস্থা রাখতে পারেননি। এখন আপনিই ওদের বলে দিন কেমন আছেন।

আমরা তো লে-ম্যান, ই…। অজয় আমতা আমতা করে বলে।

এখন ভালো নার্স কেবিনে ঢুকলেই শীলা বলে, ভাই বাসন্তী, আমাদের হিরো বাড়ি ফিরলে তোমাকে কিন্তু আমাদের বাড়িতে আসতে হবে।

বাসন্তী হেসে বলে, আমরা হাসপাতালের মানুষ হাসপাতালেই থাকি। কোনো পেসেন্টের বাড়ি যাইনি।

না, না, বাসন্তী, ওসব কোনো ওজর আপত্তি আমরা শুনব না।

ছোড়দি বলে, না গেলে আমি পাকড়াও করে নিয়ে যাবো

জয়কে ওষুধ দিয়ে বাসন্তী হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হবার ঘণ্টাখানেক পর বাসন্তী আবার সাত নম্বর কেবিনে আসে জয়কে ইনজেকশন দেবার জন্য। ওকে দেখেই জয় জিজ্ঞাসা করে, শতখানেক ইনজেকশন তো নিলাম। আর কত ইনজেকশন দেবেন?

বাসন্তী একটু হেসে বলে, আপনি যত স্পিডে মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলেন, তার চাইতে কম ইনজেকশনই দেওয়া হয়েছে।

জয় একটু হেসে বলে, দেখছি, মোটর সাইকেলটার উপর আপনারও যথেষ্ট রাগ।

হবে না? কী সুন্দর অবস্থায় এসেছিলেন, তা তো জানেন না। বাসন্তী ইনজেকশনটা দিয়ে বলে, আর জীবনে মোটর সাইকেল চড়বেন না।

চড়ব না?

নেভার।

কেন?

কেন জানি না। চড়তে বারণ করলাম, চড়বেন না। বাসন্তী কথাটা শেষ করেই কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

জয় শুয়ে শুয়ে কত কী ভাবে। হাসপাতালে কত অ্যাকসিডেন্ট কেসই তো আসে কিন্তু কোনো পেসেন্টকে কোনো নার্স কী এই ধরনের পরামর্শ দেয়? না, কখনও তো শুনিনি। পেসেন্টদের পরামর্শ দেওয়া তো নার্সদের কাজ না। তবে কী…

একটু পরেই বাসন্তী আবার ওর কেবিনে আসে। জিজ্ঞেস করে, আপনার কাছে অনেক বই আর ম্যাগাজিন আছে। কাল আমার অফ ডে। একটা বই দেবেন?

কাল অফ ডে?

হা; পরশু থেকে নাইট ডিউটি।

কাল মর্নিং এ কার ডিউটি?

নমিতার।

বিকেলে? জয় সঙ্গে সঙ্গে বলে, গীতাদির?

হ্যাঁ।

কয়েকটা মুহূর্ত কেউই কোনো কথা বলে না। তারপর জয় জিজ্ঞেস করে, আজ রাত্তির নটা-সাড়ে নটায় যাবেন আর পরশু দিন সেই রাত্তিরে আসবেন?

হা; কেন? বাসন্তী একটু হেসে জিজ্ঞেস করে।

আপনমনে কী একটু ভেবে জয় প্রশ্ন করে, কাল সারাদিনের মধ্যে একবারও আসবেন না?

ডিউটি না থাকলে আসবো কেন?

পরের দিন অফ ডিউটি থাকলেও বাসন্তীকে আসতে দেখেই গীতাদি জিজ্ঞেস করেন, কিরে তুই এখন?

সাত নম্বর কেবিনে এই বইটা ফেরত দিতে এলাম।

ও! গীতাদি আর কোনো কথা না বলে দুনম্বর কেবিনে যান।

বাসন্তীকে কেবিনে ঢুকতে দেখেই জয় এক গাল হাসি হেসে বলে, দেখছি আমার সত্যিই উইল পাওয়ার আছে।

তার মানে?

তার মানে আর শুনতে হবে না।

বাসন্তী একটু চাপা হাসি হেসে বলে, আজ নিশ্চয়ই অনেকে দেখতে এসেছিলেন?

হ্যাঁ, আজ রবিবার বলে অন্তত পঁচিশতিরিশ জন আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব এসে হাজির।

ঐ চাপা হাসি হাসতে হাসতেই বাসন্তী বলে, তবু উইল পাওয়ার পরীক্ষার দরকার হল?

জয় ওর দিকে মৃদু দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।

আমি পাঁচ বছর এই হাসপাতালে চাকরি করছি। আজই প্রথম অফ ডিউটিতে ওয়ার্ডে ঢুকলাম।

জয় খুশির হাসি হেসে বলল, যাক, রোগটা তাহলে শুধু আমার না।

***

জয় ডিসচার্জ হবার পর রোজই বাসন্তী ভাবে, ওদের বাড়িতে যাওয়া কী ঠিক হবে? হাজার হোক এরা সবাই বেশ উচ্চ শিক্ষিত এবং বেশ পয়সাওয়ালা। আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে তো কাউকেই সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মনে হয়নি। আর আমি? আমি সরকারি হাসপাতালের একজন সাধারণ নার্স। মাইনে পাবার পরের অফ ডেতেই আমাকে হাওড়া থেকে কাটোয়া লোক্যালে চেপে জিরাট যেতে হয় মার হাতে টাকা পৌঁছে দেবার জন্য।

বাসন্তী মনে মনে আরো কত কী ভাবে। নিজের মনেই নিজেকে বোঝায়, আমি তো নিজে চাইনি। ওরা সবাই তো হাজার বার আমাকে যেতে বলেছে। না গেলে নাকি ওরা..

শেষ পর্যন্ত পরের অফ ডেতে বাসন্তী জয়দের বাড়িতে না গিয়ে পারলনা। একটা চাকর এসে দরজা খুলে ড্রইংরুমে বসতে দিয়ে বলল, আপনি বসুন। আমি উপরে খবর দিচ্ছি।

পাঁচসাত মিনিট পর শীলার গলা ভেসে আসে, ছোড়দি, হাসপাতালের সেই নার্স নাকি সত্যি সত্যিই এসে হাজির হয়েছে।

তুই যা; আমি এখন যেতে পারবো না।

ছোড়দির জবাবটা স্পষ্ট শুনতে পায় বাসন্তী। পিঠে যেন পর পর দুটো চাবুকের আঘাত পড়ল। না, বাসন্তী আর এক মুহূর্ত দেরি না করে নিঃশব্দে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়। রাসবিহারী এভিন্যুর ট্রাম স্টপেজের কাছাকাছি হঠাৎ জয়ের সঙ্গে দেখা। সঙ্গে তিনচারজন বন্ধুবান্ধব। জয় ওকে দেখেই অবাক হয়ে বলে, আরে, আপনি এ পাড়ায়!

হ্যাঁ, এক বন্ধুর বাড়ি এসেছিলাম।

ভালো আছেন তো?

হ্যা; আপনি?

জয় এক গাল হাসি হেসে বলল, হ্যাঁ, পারফেক্টলি অল রাইট।

হঠাৎ একটা মিনিবাস আসতেই বাসন্তী তাতে উঠে পড়ে।

***

সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের ঐ অন্ধ গলিটার শেষ বাড়ির দরজায় খট খট করে কড়া নাড়তেই ভিতর থেকে একজন মহিলা প্রায় চিৎকার করে বললেন, যাই।

এক মিনিট পর বৃদ্ধা দরজা খুলতেই বাসন্তী তাকে প্রণাম করে।

বৃদ্ধা দুহাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে এক গাল খুশির হাসি হেসে বললেন, এতদিন পর আমাকে মনে পড়ল?

বাড়ির উঠানে পা দিয়েই বাসন্তী বলে, কী করব মাসীমা? সারা সপ্তাহ ডিউটি করার পর অফ ডেতে আর বিশেষ বেরুতে ইচ্ছে করে না।

জানি মা; তোমাদের বড্ড খাটুনি। থোকার কাছে তো সব শুনি।

মেশোমশাই আর সন্তোষদা বাড়ি আছে তো?

না মা; তোমার মেসোমশাই গতকাল বড় মেয়ের বাড়ি গিয়েছেন। আজ রাত্তিরেই ফিরে আসবেন। আর খোকাকে একটু দোকানে পাঠিয়েছি। এখুনি এসে যাবে।

সত্যি মিনিট খানেকের মধ্যেই সন্তোষ ফিরে আসে। রান্নাঘরের দোর গোড়ায় মোড়ার উপর বাসন্তীকে বসে থাকতে দেখেই চিৎকার করে, মা, মোড়ার উপরে কী ভূত বসে আছে?

বাসন্তী একটু হেসে বলে, না, পেত্নী।

একটু কাছে এসে সন্তোষ বলে, হাসপাতালের প্যাথোলজি ডিপার্টমেন্টের এক সামান্য কর্মচারীর বাড়িতে তুমি আসতে পারলে?

আমি কী মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট?

সন্তোষের মা কড়ায় তরকারি চাপাতে চাপাতেই বলেন, ও এই বাড়িতে আসবে না মানে? এইটাই তো ওর আসল বাড়ি। বৃদ্ধা আপনমনেই একটু হেসে বলেন, সামনের অঘ্রানেই ওকে আমি এ বাড়িতে পাকাপাকিভাবে নিয়ে আসছি।

লজ্জায় বাসন্তীর মুখ লাল হয়ে ওঠে। ও একটু সামলে নিয়েই সন্তোষকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা সঞ্জীব চ্যাটার্জীর কোন বইতে যেন আছে বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে?

পালামৌ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *